content
stringlengths
0
129k
দু'আ কবুল হওয়ার বিশেষ কিছু সময়
১. প্রত্যেক ফরয নামাযের পর
বি.দ্র. প্রত্যেক ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব
তবে এই মুনাজাত নামাযের অংশ নয় এবং এখানে ইমামের ইত্তিবা' বা অনুসরণ নেই
সুতরাং যারা বলে, ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা আবশ্যক তাদের কথা যেমন সহীহ নয় তেমনি যারা দাবি করেন যে, ফরয নামাযের পর কোনো মুনাজাতই নেই তাদের কথাও সহীহ নয়
বিস্তারিত জানতে এ বিষয়ে আমার লেখা 'ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের শর'ঈ বিধান' কিতাবটি পড়ে নিতে পারেন
২. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে
(আবু দাউদ: ৫২১, তিরমিযী: ২১২)
৩. রাতের শেষভাগে
(তিরমিযী: ৩৪৯৯)
৪. জুমআর দিন খুতবার মাঝে কিংবা আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে
(বুখারী: ৯৩৫, মুসলিম: ৮৫২)
৫. যমযমের পানি পান করার সময়
(মুসনাদে আহমদ: ১৪৮৪৯, ইবনে মাজাহ: ৩০৬২)
৬. শরী'আত সম্মত যিকিরের মজলিসে থাকা অবস্থায়
(বুখারী: ৬৪০৮, মুসলিম: ২৭২৯)
৭. সিজদা অবস্থায়
মুমিন বান্দা এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার অতি নিকটে চলে যায়
(সহীহ মুসলিম: ৪৮২)
৮. অসুস্থ ব্যক্তির নিকট দু'আ করার সময়
কারণ তার নিকটে গিয়ে যা বলা হয় এর উপর ফেরেশতারা 'আমীন' বলতে থাকে
(সহীহ মুসলিম: ৯১৯)
৯. বৃষ্টির সময়
(মুস্তাদরাকে হাকেম: ২/১১৪)
১০. জিহাদের ময়দানে যুদ্ধরত অবস্থায়
(আবু দাউদ: ২৫৪০, সুনানে দারেমী: ১২০০)
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে দু'আর শর্ত ও আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে দু'আ কবুলের বিশেষ মুহূর্তগুলো সহ সব সময় বেশি বেশি দু'আ করার তাউফীক দান করুন
ওয়েব সাইট সম্পর্কীত
এই ওয়েবসাইটটি হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর পরামর্শে তার কতিপয় মুহিব্বীনদের দ্বারা পরিচালিত
সাইটের যেকোন কন্টেন্ট অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যবহার করবেন না
আপনার মতামত
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামতের দ্বারা আমাদের এই ক্ষুদ্র খেদমতের কাজকে আরো উৎসাহী এবং সচেতন করবে বলে আমরা আশাবাদী
ওয়েবসাইটের যেকোন ধরনের ভুল আপনার নজরে আসলে, দয়া করে আমাদেরকে জানাবেন
আমাদের এই সামান্য খেদমতের কাজে আপনার সহযোগিতা এবং প্রচার করার জন্য আমরা আপনার শুকরিয়া আদায় করি
জাযাকাল্লাহু খাইর
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين وبعد:
মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস
হিজরি সনের প্রথম মাস
এটি 'আশহুরে হুরুম' তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম
আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ ﴿36﴾[التوبة:36].
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন
এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন
সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না
{সূরা তাওবা:৩৬}
সাহাবি আবু বাকরাহ রা. নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী বলেন,
{السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ } [رواه البخاري 2958]
বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত
তিনটি পর পর লাগোয়া জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব
{বোখারি:২৯৫৮}
মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত
আল্লাহর বাণী ﴿فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ﴾ {তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না
} অর্থাৎ, এই সম্মানিত মাস সমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না
কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা " ﴿فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ﴾ {তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না
}'' এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, এই বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ো না
অত:পর তাহতে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন
তাদেরকে মহা সম্মানে সম্মানিত করেছেন
এসবের মাঝে সংঘটিত অপরাধকে অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করেছেন
আর তাতে সম্পাদিত নেক আমলকে বেশি সাওয়াব যোগ্য নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন
কাতাদাহ রা. " ﴿فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ﴾ {তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না
}'' আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যদিও জুলম সব সময়ের জন্য বড় অন্যায় তবে হারাম মাস চতুষ্টয়ে সম্পাদিত জুলুম অন্যান্য সময়ে সম্পাদিত জুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে আরও বেশি মারাত্মক অন্যায়
আল্লাহ তাআলা নিজ ইচ্ছা মাফিক যাকে ইচ্ছা বড় করতে পারেন
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ নিজ সৃষ্টি হতে খাঁটি ও উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেছেন; ফেরেশতাকুল হতে কতককে রাসূল হিসাবে বাছাই করেছেন অনুরূপ মানুষ থেকেও
কথা হতে বাছাই করেছেন তাঁর জিকিরকে
আর জমিন হতে বাছাই করেছেন মসজিদ সমূহকে
মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রমজান ও সম্মানিত মাস চতুষ্টয়কে
দিনসমূহ হতে বাছাই করেছেন জুমুআর দিনকে আর রাত্রসমূহ থেকে লাইলাতুল কদরকে
সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন তোমরা তাদের সম্মান প্রদর্শন কর
আর বুদ্ধিমান লোকদের মতে, প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত: সেসব জিনিসের মাধ্যমেই যেসব দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন
{সার সংক্ষেপ, তাফসির ইবন কাসির, সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬}
মুহররম মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজার ফজিলত
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
{ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ }
অর্থাৎ, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের রোজা)
{ সহিহ মুসলিম,১৯৮২}
شَهْرُ اللَّهِ বাক্যে شَهْر কে اللَّهِ -এর দিকে যে إضافة করা হয়েছে এটি إضافة تعظيم
অর্থাৎ, সম্মানের ইযাফত
আল্লামা ক্বারী রহ. বলেন, হাদিসের বাহ্যিক শব্দমালা থেকে পূর্ণ মাসের রোজা বুঝে আসে
তবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ব্যতীত আর কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখেননি, এটি প্রমাণিত
তাই হাদিসকে এ মাসে বেশি পরিমাণে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে বলে ধরা হবে
শা'বান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক রোজা রেখেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে
হতে পারে মুহররম মাসের ফজিলত সম্বন্ধে তাঁকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি
{ইমাম নববি, শারহু সহিহ মুসলিম}
আল্লাহ তাআলা স্থান ও কাল যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দিয়ে থাকেন
আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহ. বলেন, স্থান ও কালের একের উপর অপরের মর্যাদা দান দুই প্রকার
এক. পার্থিব
দুই. দ্বীনী, যা আল্লাহর দয়া ও করুণার উপর নির্ভরশীল
তিনি সেসব স্থান বা কালে ইবাদত সম্পন্নকারীদের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের উপর করুণা করেন
যেমন, অন্যান্য মাসের রোজার তুলনায় রমজানের রোজার মর্যাদা অনুরূপ আশুরার দিন..
এগুলোর মর্যাদা আল্লাহর দান ও ইহসানের উপর নির্ভরশীল
{কাওয়ায়েদুল আহকাম:১/৩৮}
ইতিহাসে আশুরা
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قال: قدم النبي - صلى الله عليه وسلم - المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: { مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قال: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ } [رواه البخاري 1865].
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে
নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন
এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন
তাই মুসা আ. রোজা পালন করেছেন
রাসূলুল্লাহ বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার