content
stringlengths 0
129k
|
---|
অত:পর তিনি রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন |
{বোখারি:১৮৬৫} |
বোখারির বর্ণনা, |
{ هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ } |
এটি একটি ভাল দিন |
মুসলিমের বর্ণনায় আছে, |
{ هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه وغرّق فرعون وقومه } |
এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তাআলা তাতে মুসা আ. ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন আর ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন |
বোখারির বর্ণনা, |
{ فصامه موسى } |
মুসা আ. রোজা পালন করেছেন |
ইমাম মুসলিম তার রেওয়ায়াতে সামান্য বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন, |
{ شكراً لله تعالى فنحن نصومه } |
আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় স্বরূপ তাই আমরাও রোজা পালন করি |
বোখারির অন্য রেওয়ায়াতে আছে, |
{ ونحن نصومه تعظيماً له } |
আর আমরা রোজা পালন করি তার সম্মানার্থে |
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন, |
{ وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً }. |
এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন রোজা রেখেছিলেন |
বোখারির বর্ণনা, |
{ وأمر بصيامه } |
এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন |
বোখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, |
{ فقال لأصحابه: أنتم أحق بموسى منهم فصوموا }. |
তিনি তাঁর সাহাবিদের বললেন, মুসা আ.-কে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার |
সুতরাং তোমরা রোজা রাখ |
আশুরার রোজা পূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল এমনকি রাসূলুল্লাহর নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে জাহেলি যুগেও আরব সমাজে তার প্রচলন ছিল |
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতে রোজা রাখত |
{ إن أهل الجاهلية كانوا يصومونه }.. |
জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতে রোজা রাখত |
ইমাম কুরতুবি রহ. বলেন, ] |
কোরাইশরা আশুরার রোজা প্রসঙ্গে সম্ভবত বিগত শরিয়ত যেমন ইবরাহীম আ.-এর উপর নির্ভর করত |
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরাত করার পূর্বেই মক্কাতে আশুরার রোজা রাখতেন |
হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার ইহুদিরা এদিনকে উদযাপন করছে |
তিনি কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উপরোল্লেখিত উত্তর দিল |
তখন নবীজী সাহাবাদেরকে ঈদ-উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে ইহুদিদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন |
যেমন আবু মুসা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, |
{ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا } |
অর্থাৎ, আশুরার দিনকে ইহুদিরা ঈদ হিসাবে গ্রগণ করেছিল |
মুসলিমের রেওয়ায়াতে এসেছে, |
{ كان يوم عاشوراء تعظمه اليهود تتخذه عيدا } |
আশুরার দিনকে ইহুদিরা বড় করে দেখত (সম্মান করত), একে তারা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল |
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, |
{ كان أهل خيبر ( اليهود ) يتخذونه عيدا، ويلبسون نساءهم فيه حليهم وشارتهم }. |
খায়বর অধিবাসীরা (ইহুদিরা) আশুরার দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল |
তারা এদিন নিজ স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত |
তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বললেন, |
{ فَصُومُوهُ أَنْتُمْ } |
তাহলে তোমরাও রোজা রাখ |
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এদিনে রোজা রাখার নির্দেশ দানের আপাত কারণ হচ্ছে, ইহুদিদের বিরোধিতা করা |
যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলমানগণ রোজা রাখবে |
কারণ ঈদের দিন রোজা রাখা হয় না |
{ সার-সংক্ষেপ, ফাতহুল বারি শারহুল বোখারি, আল্লামা ইবন হাজার আসকালানি} |
আশুরার রোজার ফজিলত |
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, |
{ مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ } |
আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি |
{বোখারি:১৮৬৭} |
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, |
{ صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله } |
আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন |
{সহিহ মুসলিম:১৯৭৬} |
এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা |
তিনি একটি মাত্র দিনের রোজার মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন |
সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা |
বছরের কোন দিনটি আশুরার দিন |
আল্লামা নববি রহ. বলেন, তাসুআ, আশুরা দু'টি মদ্দযুক্ত নাম |
অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ |
আমাদের সাথীরা বলেছেন, আশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন |
আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন |
জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন |
হাদিসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তাই |
ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ |
{আল-মজমূ} |
এটি একটি ইসলামি নাম, জাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না |
{কাশ্শাফুল কান্না' ২য় খন্ড, সওমুল মুহররম} |
ইবনু কোদামাহ রহ. বলেন, আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন |
এটি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব ও হাসান বসরি রহ.-এর মত |
কারণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, |
{ أمر رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بصوم يوم عاشوراء العاشر من المحرم }. |
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা-মুহররমের দশম দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন |
{বর্ণনায় তিরমিজি, তিনি বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহিহ} |
আশুরার সাথে তাসুআর রোজাও মুস্তাহাব |
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, |
{ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ". قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ }. |
অর্থাৎ, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন |
লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায় |
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ |
বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে |
{সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬} |
ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজাই মুস্তাহাব |
কেননা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন |
এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা |
এরচে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা রাখা |
এমনিভাবে মুহররম মাসে রোজার সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে |
তাসুআর রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত |
ইমাম নববি রহ. বলেন, তাসুআ তথা মুহররমের নয় তারিখ রোজা মুস্তাহাব হবার হিকমত ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, |
এক. এর উদ্দেশ্য হল, ইহুদিদের বিরোধিতা করা |
কারণ তারা কেবল একটি অর্থাৎ দশ তারিখ রোজা রাখত |
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.