instruction
stringclasses
5 values
input
stringlengths
53
24.4k
output
stringlengths
18
162
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
মালয়েশিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। বেশ কয়েক সপ্তাহজুড়ে অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে টালমাটাল অবস্থার পর মালয়েশিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। রাজনীতিতে তার যাত্রা ছিল সাধাসাধি। ২০১৬ সালে ক্ষমতা হারানো ইউনাইটেড মালেজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ইউএনএমও থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। এরপর তিনি মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক মাহাথির মোহাম্মদ এবং আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে হাত মেলান। যার ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটা জাতিসত্তা ও দলের সংমিশ্রণে 'পাকাটান হারাপান' নামে একটি দল। মালয়েশিয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেসময় যে ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়েছিল সেটি তারা কাজে লাগিয়েছিলেন। ইউএনএমও'র নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আসীন বারিসান ন্যাশনাল জোটের পতন ঘটিয়ে দেন তারা। কিন্তু রাজনীতি উত্থান, পতন, মারপ্যাঁচের খেলা। গত কয়েক সপ্তাহে সেই খেলা বেশ ভালই দেখিয়েছেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। ৩০ জন এমপি নিয়ে সরকার থেকে বের হয়ে যান এবং তার পুরনো দলের সাথে জোট গড়ে তুলে পুরোপুরি পট পরিবর্তন করে দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে দেশটিতে যে নবযুগের সূচনা হয়েছিল, মুহিদ্দিন ইয়াসিনের দাবার গুটির চাল তা চুরমার করে দেয়। রাজনীতিতে নতুন মোড় মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। "আমি ব্যর্থতার জন্য আমি দু:খিত। আমি চেষ্টা করেছি, আমি সত্যিই ওদের থামাতে চেষ্টা করেছি", এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন সাঈদ সাদিক, তরুণ রাজনৈতিক যিনি ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে সবাইতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাকে বলা হচ্ছিল পরিবর্তনের প্রতীক। মুহিদ্দিন ইয়াসিনের দলের সদস্য সাঈদ সাদিক এখন তার সাথে আবার যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মুহিদ্দিন ইয়াসিন যেভাবে সরকার গঠন করেছেন তাকে পেছনের দরজার কারসাজি বলে সমালোচনা করে তার সরকারকে আখ্যা দেয়া হচ্ছে 'ব্যাকডোর গভর্নমেন্ট '। আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট ফাদিয়া নাদওয়া বলেছিলেন, "পুরো বিশ্বাসঘাতকতা। জনগণ এর জন্য আপনারা দয়া করে ভোট দেবেন না।" বলা হচ্ছিল 'পাকাটান হারাপান' এক অনন্য জোট যাতে ছিল আনোয়ার ইব্রাহিমের সংস্কারপন্থী দল কিদালিন, মালয়েশিয়ার চীনা জাতিগোষ্ঠীর দল দ্যা ড্যাপ এবং ইউএনএমও বিরোধী দুটি মালে জাতিগোষ্ঠীর দল আমানাহ এবং বারসাতু। শেষ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ঝানু রাজনীতিবিদ মাহাথির মুহাম্মদ। তার পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ক্ষমতাসীন দলকে বর্জনের শক্তি পেয়েছিল মালে জাতিগোষ্ঠী। মালয়েশিয়ার সুশীল সমাজের গঠিত বেশ কিছু সংস্থার সমর্থনও পেয়েছিল 'পাকাটান হারাপান'। আরো পড়ুন: মাহাথিরের হঠাৎ পদত্যাগ, বাদ পড়বেন আনোয়ার? মাহাথিরকে টপকে যেভাবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হলেন মুহিইদ্দিন মালয়েশিয়ার ইউএনএমও দলের দীর্ঘ ষাট বছরের ক্ষমতাকালীন দেশটিতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিপক্ষে ছিলেন সেখানকার সুশীল সমাজ। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত ছিলেন না যে 'বারিসান' জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে। তবে এক ধরনের উত্তেজনার পরিবেশ অনুভূত হচ্ছিল। মাহাথির মোহাম্মদ তার প্রচারণায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী রোজমাহকে রীতিমতো 'চোর জুটি' বলে আখ্যা দিয়েছেন। প্রভাবশালী রাজনৈতিক মাহাথির মোহাম্মদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। দেশটিতে জীবনধারণের খরচ বৃদ্ধি পাওয়া বিশেষ করে পণ্য বিক্রির উপরে একটি বিশেষ কর আরোপ করার বিষয়টি বিরোধীরা খুব ব্যবহার করেছেন। সাধারণত সরকারপন্থী মালে জাতিগোষ্ঠীর ভোট পাকাটান, বারিসান ও ইসলামিক পার্টির মধ্যে তিনভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ভোটকেন্দ্রে তখন অনেকেই ইউএমএনও দলের কার্ড দেখালেও তারা বিরোধীদের ভোট দেবে জানাচ্ছিল। সেসময় বুঝেছিলাম বাতাস কোনদিকে বইছে। পরদিন নাজিব রাজাক যখন হারলেন তখন আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তিনি তার দলের হেরে যাওয়া প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দুই বছরের পাকাটান সরকারে পতন হল কেন? পাকাটান জোটের যাত্রা যে কিছুটা অস্বস্তির হবে সেটি বোঝাই যাচ্ছিল। বিশেষ করে মাহাথির মোহাম্মদ এবং আনোয়ার ইব্রাহিমরে মধ্যে ৩০ বছরের একটি জটিল ইতিহাস রয়েছে। আনোয়ার ইব্রাহিম একসময় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদের শিষ্য। মনে করা হতো তিনিই হবেন মাহাথির মোহাম্মদের উত্তরসূরি। কিন্তু মি. ইব্রাহিম তার পাঁচ বছরের কারাবাসের জন্য মাহাথির মোহাম্মদকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু পাকাটান জোটের জন্য তারা দুজন বিভেদ ভুলে আবার একত্রিত হন। তারা একমত হন যে মাহাথির মোহাম্মদ নির্বাচনী প্রচারণার নেতৃত্ব দেবেন, জয়ী হলে প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকবেন এবং তারপর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। মালয়েশিয়ার বাদশাহ আব্দুল্লাহ মি. মুহিদ্দিন ইয়াসিনকে নতুন সরকার গঠনের আহবান জানান। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় সেটি হবে সিনেয়ে কথাবার্তা হয়নি। একই সাথে দেশটিতে চলমান বৈরী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবো পাকাটান জোট সেনিয়ে তাদের মতবিভেদ ছিল। "অনেক দেশের মতো আমাদের মধ্যেও একধরনের অসন্তোষের সমস্যা রয়েছে," বলছিলেন মারদেকা সেন্টার ফর অপিনিয়ন রিসার্চ সংস্থার ইব্রাহিম সুফিয়ান। "আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আছে কিন্তু জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বাড়েনি। বিশেষ করে মালে জনগোষ্ঠী ও তরুণ প্রজন্মের।", তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন। "আবার ভাল বেতন মেলে যথেষ্ট পরিমাণে তেমন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছিল না। জোটের সামনে সেটি একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। তারা যখন ক্ষমতা নেয় তখন তারা আবিষ্কার করে যে সব তহবিল শূন্য এবং তাদের বিশাল অংকের ঋণের বোঝা টানতে হবে।" ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে মালয়েশিয়াকে সবসময় বলা হয়ে থাকে নানা জাতিসত্তার দেশ। মালে উপদ্বীপ ও বোর্নিও অঞ্চলের কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠী আর মালে জাতিগোষ্ঠীকে বলা হয় 'বুমিপুতেরা' যারা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ। সংখ্যালঘুদের মধ্যে সবচেয়ে সফল হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে মালয়েশিয়ায় আসা চীনা বংশোদ্ভূতরা। ১৯৬৯ সালে এক দাঙ্গার পর তৎকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে রাষ্ট্রীয় নীতিমালাগুলো 'বুমিপুতেরা' বিশেষ করে মালে সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতমূলক হওয়া জরুরী। ইউএমএনও দলটি নিজেদেরকে মালে জাতিগোষ্ঠীর অভিভাবক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। চীনাদের তুলনায় মালে জাতিগোষ্ঠী ছিল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশক পর্যন্ত মাহাথির মুহাম্মদের ২২ বছরের শাসনকালে এই নিতির ব্যত্যয় হয়নি। রাজনীতি উত্থান, পতন, মারপ্যাঁচের খেলা। তাদের জন্য হাতে নেয়া হয়েছিল বড় তহবিলের নানা রকম রপ্তানিমুখি প্রকল্প। কিন্তু বড় সমস্যা ছিল স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি। কিন্তু মালেরা তাদের প্রতি সরকারি উদারতা চলমান থাকবে বরে আশা করে আসছিল। বেশ ভাল চীনা অংশীদারিত্ব সম্বলিত পাকাটান জোট হয়ত সেই উদারতায় রাশ টেনে ধরতে পারে তেমন আশংকা তৈরি হয়েছিলে মালেদের মধ্যে তাই পাকাটানদের প্রতি তাদের সমর্থনেও ক্ষয়ের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। কুয়ালামপুর শহরের কাছে নিম্ন আয়ের মানুষদের আবাসস্থল গোমবাক এলাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে গিয়ে পাকাটান সম্পর্কে তাদের মনের ধোঁয়াশা কেটে যাওয়ার একটি চিত্র পাওয়া গেল। ছোট একটি ক্যাফের মালিক মোহাম্মদ আমিন বলছিলেন তার মতো মালেদের আগের মতো দেখভাল করা হচ্ছে না। এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ তারমিজি বলছিলেন, দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে গরীবদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদিও বিশাল অংকের অর্থ তহবিল এধার ওধার হওয়ার খবরে ইউএমএনও'র সুখ্যাতি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে অর্থের একটি অংশের গন্তব্য ছিল নাজিব রাজাকের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। কিন্তু পাকাটান সম্পর্কে মালেদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হচ্ছিল আর অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি কাজে লাগাতে মোটেও দেরি করেন নি ইউএমএনও। পাকাটান ইতিমধ্যেই জোহর অঞ্চলে ছয়টি উপ নির্বাচনের পাঁচটিতেই হেরেছে। তবে সংকট শুরু হয় ক্ষমতার উত্তরাধিকার নিয়ে। মাহাথির মোহাম্মদের এই দফায় প্রধানমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আনোয়ার ইব্রাহিমের সমর্থকেরা উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানান। নাজিব রাজাক যখন হারলেন তখন আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। মাহাথির মোহাম্মদ তাতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে অবশ্য মি. আনোয়ারের সমর্থকেরা পিছু হটেন। কিন্তু পাকাটান জোটের মধ্যে বিভেদ ও উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে মুহিদ্দিন ইয়াসিন ৩০ জন এমপি নিয়ে জোট সরকার থেকে বের হয়ে আবার পুরনো দলে যোগ দেন। গত চল্লিশ বছর ধরে মানুষজন যেভাবে ভেবেছে, এবারো অনেকে মনে করেছে মাহাথির মুহাম্মদই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। কিন্তু তিনি নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়ে সবাইকে হতবিহবল করে দেন। মাহাথির মুহাম্মদের প্রতি যদিও অনেকে সমর্থন দিয়েছেন এমনকি আনোয়ার ইব্রাহিমও। তবে মুহিদ্দিন ইয়াসিনের ভূমিকাকে তিনি জোটের মধ্যে অভ্যুত্থান বলে আখ্যা দেন। তবে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে ৯৪ বছর বয়সী ঝানু রাজনীতিবিদ মাহাথির মোহাম্মদ হিসেবে কিছু গোলমাল করেছেন। সাংবিধানিক দায়িত্ব বলে মালয়েশিয়ার বাদশাহ আব্দুল্লাহ মি. মুহিদ্দিন ইয়াসিনকে নতুন সরকার গঠনের আহবান জানান। এরপরই তিনি মুহিদ্দিন ইয়াসিন দেশটির অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মাহাথির মোহাম্মদ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তী সংসদ অধিবেশন শুরু হলে নতুন সরকারের পতনের জন্য কাজ করবেন। কিন্তু রাজপ্রাসাদের সমর্থন মুহিদ্দিন ইয়াসিনের জন্য এখন বড় আশীর্বাদ। অন্যদিকে মাহাথির মুহাম্মদের সাথে মালয়েশিয়ার সুলতানদের বিবাদের ইতিহাস রয়েছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র বাবার সময়ে মাহাথির মুহাম্মদ রাজপরিবারের ক্ষমতা সীমিত করার সাংবিধানিক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, বলছিলেনে নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাইভ কেসলার। হয়ত বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র সিদ্ধান্ত সেকারণেই মুহিদ্দিন ইয়াসিনের পক্ষে প্রভাবিত হয়েছে। মি. কেসলার বলছেন, "স্মৃতি ও মনের ক্ষোভ এত দ্রুত মিলিয়ে যায় না।" সব মিলিয়ে দুই বছর পর মুহিদ্দিন ইয়াসিনের সাথে হাত মিলিয়ে আবারও ক্ষমতায় ইউনাইটেড মালেজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন। আনোয়ার ইব্রাহিমের যেমন আবারও আশাভঙ্গ হল তেমনি মাহাথির মোহাম্মদের সামনেও আর কোন রাস্তা খোলা আছে বলে মনে হচ্ছে না। অন্যান্য খবর: যে পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে করোনাভাইরাস পাকিস্তানে 'বাঙালি হওয়া একটা অপরাধ' কেন পুতিনকে প্রয়োজন এরদোয়ানের?
কীভাবে দুই বছরে মালয়েশিয়ায় সরকার পতন হল
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
ক্রাইস্টচার্চের বোটানিক গার্ডেনে শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়ে বার্তা পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেছেন মৃতদেহ এখনো হস্তান্তর করা হয়নি কারণ কর্মকর্তারা প্রত্যেক আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়ার পর মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেক আসা এবং তাদের অনেকেই শরণার্থী ছিলেন যারা ভেবেছিলেন নিউজিল্যান্ডে তাদের একটি নিরাপদ আশ্রয় মিলেছে। এখানে এরকম বেশ কয়েকজনের সম্পর্কে তুলে ধরা হচ্ছে যারা মৃত কিংবা নিখোঁজ হিসেবে ধারনা করা হচ্ছে- মুসাদ ইব্রাহীম, বয়স ৩ মোবাইল ফোনে দাউদ নবীর ছবি ডিনস অ্যাভিনিউ মসজিদে হামলার পর থেকে মুসাদকে আর দেখা যায়নি। সে তার ভাই আবদিসহ তাদের বাবার সাথে বেরিয়েছিল, তারা দুজন পালিয়ে বাঁচতে পেরেছে। পরিবারটি বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু তার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। "মসজিদের ভেতর যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে সেও একজন বলে এখন আমাদের মনে হচ্ছে...এই পর্যায়ে এসে সবাই বলছে সে মারা গেছে" মুসাদের ভাই আবদি স্থানীয় খবরের সাইট স্টাফকে এমনটাই বলেছে।" "এটা বেশ কঠিন, অনেক মানুষ আমাকে ফোন করে জানতে চাইছেন কোনও ধরনের সাহায্য প্রয়োজন কী-না। এটা এই মুহূর্তে খুবই কঠিন। আমরা কখনো এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।" সে জানায়, তার ভাই ছিল "প্রাণশক্তিতে ভরপুর, আমুদে এবং হাসি-খুশি থাকতে খুব পছন্দ করতো"। আরো পড়ুন: ক্রাইস্টচার্চ হামলার ভিডিও তুলে নেয়া যাচ্ছে না কেন ব্রেন্টন টারান্ট পাকিস্তান সফরে গিয়ে যা বলেছিলেন ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারীর নানা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' পুলিশ শুধুমাত্র যেটুকু নিশ্চিত করেছে সেখানে তারা বলেছে, কমপক্ষে একটি শিশু নিহত হয়েছে এবং অনেকেই আহত হয়েছে। কারো নামই উল্লেখ করেনি তারা। ক্রাইস্টচার্চের কাশমিরি হাইস্কুল জানিয়েছে যে, তাদের বর্তমান শিক্ষার্থী এবং একজন স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী নিখোঁজ আছে। আরও একজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে আছে। সম্পর্কিত খবর: নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে যা বললেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক-দেখুন ভিডিওতে- ‘কী দেখেছি তা বর্ণনা করার মতো না’ দেশে ফিরে বললেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দাউদ নবী, বয়স ৭১ হতাহতদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাকে শনাক্ত করা হয়েছে তিনি দাউদ নবী। তার জন্ম আফগানিস্তানে। ১৯৮০ সালে সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে পালাতে পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ডে চলে আসেন। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী ছিলেন। নিজের অবসরের পর নিউজিল্যান্ডে একজন কমিউনিটি নেতা হয়ে ওঠেন। স্থানীয় আফগান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং অভিবাসীদের পরিচিত একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। হামলাকারী যখন বন্দুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন দাউদ নবী মসজিদের অন্যান্যদের রক্ষা করতে নিজে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ছেলে ওমর এনবিসি নিউজকে বলেছেন, "প্যালেস্টাইন, ইরাক, সিরিয়া যেখান থেকেই কেউ আসুক না কেন তিনিই (দাউদ নবী) প্রথম হাত বাড়িয়ে দিতেন"। সাইয়াদ মিলানে, বয়স ১৪ বছর বড় হয়ে ফুটবলার হতে চেয়েছিল কিশোর সাইয়াদ মিলানে। শুক্রবার আল নূর মসজিদে মায়ের সাথে ছিল সে। তার বাবা নিউজিল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমকে শনিবার বলেছেন, "সে মারা গেছে কি-না এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো আমরা কিছু শুনিনি, তবে আমি জানি সে চলে গেছে কারণ তাকে দেখা গেছে"। "আমি স্মরণ করতে পারি আমার বাচ্চাকে যাকে তার জন্মের সময় প্রায় হারিয়ে ফেলছিলাম...সে একজন ছোট্ট সাহসী যোদ্ধা। সে কাউকে বা কোন কিছুকে পরোয়া করতো না। তাকে এভাবে কারো বন্দুকের সামনে পড়ে যেতে দেখাটা-এটা খুবই কঠিন। সে কোথায় আছে আমি জানি, সে শান্তিতে আছে, আমি জানি।" তার একজন বোন ব্রাইডি হেনরি এর আগে রিপোর্টারদের বলেছেন, তাকে সর্বশেষ দেখা গেছে "মসজিদের ভেতর রক্তাক্ত মেঝেতে পড়ে থাকতে, শরীরের নিচের দিক থেকে রক্তপাত হচ্ছিল।" নাঈম রশিদ, বয়স ৫০ নাঈম রশিদ মূলত পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদ থেকে আসা। তিনি ক্রাইস্টচার্চের একজন শিক্ষক ছিলেন। আল নুর মসজিদে হামলার ভিডিওতে একটি অংশে দেখা গেছে আল-নূর মসজিদে গুলিবিদ্ধ হবার আগে নাঈম রশিদ হামলাকারীকে বাধা দেবার চেষ্টা করেন। তিনি গুরুতর-ভাবে আহত হয়েছিলেন । হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। মি. রশিদকে সবাই বীর হিসেবে দেখছেন। তার ভাই খুরশিদ রশিদ জানিয়েছেন ভিডিওটি দেখার পর তার সাহসী ভূমিকার জন্য তারা গর্বিত। "তিনি ছিলেন একজন সাহসী ব্যক্তি এবং আমি সেখানকার লোকজনের কাছে শুনেছি, সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেছেন যে তিনি সেই হামলাকারীকে থামানোর চেষ্টা করে কয়েকজনের জীবন বাঁচিয়েছিলেন।" পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে তাকে পাকিস্তানের নয়, ক্রাইস্টচার্চে সমাধিস্থ করা হবে। ব্রেন্টন টারান্টকে শনিবার ক্রাইস্টচার্চে এক আদালতে হাজির করা হয়। তালহা রশিদ, বয়স ২১ তালহা ছিলেন মিস্টার রশিদের বড় ছেলে। যখন পরিবারটি নিউজিল্যান্ডে চলে আসে তখন তালহার বয়স ১১ বছর। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মৃত্যুর খর নিশ্চিত করেছে। স্বজন ও বন্ধুদের কাছে জানা গেছে, তালহা সম্প্রতি নতুন একটি চাকরী পেয়েছিল এবং শিগগিরই তার বিয়ে করার কথা ছিল। যেখানে তাঁর বিয়ে নিয়ে আয়োজন শুরু হওয়ার কথা হচ্ছিল সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন আলোচনা চলছে এখন। লাহোর থেকে তালহার চাচা জানান, "অল্প কিছুদিন আগে যখন নাঈম রশিদের সাথে আমার কথা হচ্ছিল সে তার পাকিস্তান যাওয়ার পরিকল্পনা এবং ছেলেকে বিয়ে করানোর ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা বাবা ও ছেলে দুজনের মৃতদেহ পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আয়োজন করছি।" মিস্টার রশিদের আহত আরেক পুত্র চিকিৎসাধীন। ফারহাজ আহসান, বয়স ৩০ ভারতীয় নাগরিক ফারহাজ আহসান হায়দ্রাবাদ থেকে ১০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে আসেন এবং ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে যাদের একজন তিন বছর বয়সী কন্যা এবং আরেকজন ছয় মাস বয়সী ছেলে শিশু। তার ভাই কাশিফ জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার মৃত্যুর খবর জেনেছে পরিবারটি। বিবিসি তেলেগু সার্ভিসকে ফারহাজ আহসানের বাবা সাইয়েদউদ্দিন বলেছেন "নিউজিল্যান্ড যেটি একটি শান্তি-প্রিয় দেশ হিসেবে পরিচিত সেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি" । হোসনে আরা, বয়স ৪২ বছর নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ কনসাল অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন দুজন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। যদিও সংখ্যাটি নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে। শুরুতে নিহতের সংখ্যা তিনজন বলা হয়েছিল পরে কনসাল অফিসার শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বিবিসি বাংলাকে জানান, শনিবার পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত।তবে বিস্তারিত বলা হচ্ছেনা। অনেকে এখনো তাদের নিখোঁজ স্বজনের কোন খবর পাননি। হোসনে আরা আল নুর মসজিদে যখন বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পান সেসময় তিনি মেয়েদের জন্য নির্ধারিত অংশে ছিলেন বলে জানা গেছে। তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ায় হুইল চেয়ার ব্যবহার করতেন এবং তিনি ছিলেন পুরুষদের কক্ষে। "বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে তৎক্ষণাৎ তিনি তার স্বামীর খোঁজে ছুটে যান কিন্তু নিজেই গুলিবিদ্ধ হন এবং মারা যান" তার ভাতিজা বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক নিউএজকে বলেন। তার স্বামী বেঁচে আছেন বলে জানা গেছে। । খালেদ মুস্তাফা সিরিয়ান সলিডারিটি নিউজিল্যান্ড গ্রুপ বলছে, আল নুর মসজিদে হামলায় খালেদ মুস্তাফা মারা গেছেন। মিস্টার মুস্তাফা সিরিয়া যুদ্ধের পর আসা শরণার্থী ছিলেন এবং ২০১৮ সালে নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে বেছে নিয়ে পরিবারসহ সেখানে চলে আসেন। তার কিশোর বয়সী ছেলেদের একজন এখনো নিখোঁজ। আরেক পুত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে এবং তার শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আমজাদ হামিদ, বয়স ৫৭ পেশায় চিকিৎসক আমজাদ হামিদ প্রতি শুক্রবার আল নূর মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। হামলার ঘটনার পর থেকে তার কোনও খোঁজ নেই। তার পরিবার নিউজিল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তারা সব হাসপাতাল এবং সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছে, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। সে মারা গেছে বলেই তার পরিবার আশঙ্কা করছে। তার স্ত্রী নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছেন, "এটা ভয়াবহ...আমরা আমাদের এবং সন্তানদের জন্য আরও একটু ভালো ভবিষ্যৎ খুঁজে পাবো বলে প্রত্যাশা ছিল"। তিনি তার স্বামীকে "একজন অত্যন্ত দয়ালু" ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। ২৩ বছর আগে এই দম্পতি নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমায় এবং তাদের দুটো সন্তান হয়। মিস্টার হামিদ ক্যনবেরা জেলা স্বাস্থ্য বোর্ডের কার্ডিওরেসপাইরেটরি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তার পুত্র হুসাম হাসিদ বলেছেন, "এটি একটি নিরাপদ দেশ বলে মনে করা হতো নিউজিল্যান্ড চিরতরে বদলে যাচ্ছে"। আফগান নাগরিক যাদের নাম এবং বয়স অজানা খালেদ মুস্তাফা নিউজিল্যান্ডের আফগান অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, দ্বিতীয় আরেকজন আফগানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত। তাদের নাম এবং বয়স এখনো জানা যায়নি। হুসাইন আল-উমারি, বয়স ৩৫ প্রতি শুক্রবার হুসাইন আল উমারি আল নুর মসজিদে একবার যাবেনই। এরপর সেখান থেকে যেতেন তার বাবা-মায়ের সাথে ডিনারের জন্য। বৃহস্পতিবার বাবা-মার সাথে সর্বশেষ কথা বলেছেন তিনি। সে অনেক উচ্ছ্বসিত ছিল কারণ তারা সম্প্রতি নতুন একটি গাড়ি কিনেছে। তার াববা-মা জান্না ইযাত এবং হাযিম আল উমারি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৯৯০-র দশকে নিউজিল্যান্ডে আসেন। হামলার পর থেকে ছেলের কোন খবর পাচ্ছেন না বাবা-মা। লাইলিক আব্দুল হামিদ, বয়স অজ্ঞাত তিনি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ নামেও পরিচিত। এই হামলায় প্রথম কোনও ইন্দোনেশীয় ব্যক্তি হিসেবে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। যেদুটি মসজিদে হামলা হয়েছে সেখানে আরও সাতজন ইন্দোনেশীয় ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসে পাঁচজন তাদের নিরাপদে থাকার বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রদূত তানতোই ইয়াহিয়া জানিয়েছেন। আরও চারজন পাকিস্তানী নাগরিক, যাদের বয়স অজ্ঞাত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে যাদের নাম: সোহায়েল শাহীদ, সাইদ জাহানদাদ আলী, সাইদ আরীব আহমেদ এবং মাহবুব হারুন। তাদের বয়স জানা যায়নি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সালের বক্তব্য অনুসারে, আরও তিনজন নিখোঁজ তবে এখনো তাদের শনাক্তকরণ বাকি আছে। চারজন মিশরীয় মিশরের জনশক্তি ও অভিবাসন মন্ত্রনালয় চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ফেসবুক পোস্টে তাদের নাম মুনির সুলেমান, আহমেদ জামাল উদ্দিন আবদেল ঘানি, আশরাফ আল-মোরসি এবং আশরাফ আর-মাসরি। জর্ডানের চারজন জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের চারজন নাগরিকের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে তবে তাদের কারো নাম ঘোষণা করা হয়নি। আরও পাঁচজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিখোঁজ হিসেবে যাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে জর্ডান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ফিজি এবং সৌদি আরবের নাগরকরা রয়েছেন। সোমালিয়ার কমপক্ষে চারজন হামলায় নিহত হয়েছে। যে মসজিদ দুটোতে হামলা চালানো হয়েছিল তার একটি আল নুর যৌথভাবে পরিচালনার দায়িত্বে সোমালিয়া রয়েছে। অন্যান্য খবর: কম ঘুমে আয়ু কমে: রাতের ভালো ঘুম যেভাবে পাবেন শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলে কেন উদ্বিগ্ন সিলেটিরা? মাসুদ আজহারকে 'সন্ত্রাসী' ঘোষণায় চীনের বাধা কেন?
ক্রাইস্টচার্চ হামলা: হতাহতদের সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশই শিশু এ অবস্থায়, শিশুদের ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় মা-বাবা বা অভিভাবকদেরকেই সচেতনতার সাথে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে সামিয়া রহমানের দেড় বছরের শিশু। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন মৌসুমি জ্বর হয়েছে, কেননা ডেঙ্গু রোগের যেসব উপসর্গের কথা সচরাচর বলা হয়ে থাকে, তেমন কোন লক্ষণ তিনি তার বাচ্চার মধ্যে দেখতে পাননি। কিন্তু ৩-৪ দিনেও জ্বর না কমায় পরে তিনি তার বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে মেডিকেল পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। শুরুতে তিনি বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও তার ও চিকিৎসকদের পরিচর্যায় এখন সুস্থ হওয়ার পথে শিশুটি। এমন অবস্থায় মিসেস রহমান ডেঙ্গু রোগ প্রতিকারের পরিবর্তে প্রতিরোধের দিকে জোর দেয়ার তাগিদ দেন। শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় শিশুদের ডেঙ্গু রোগ হওয়া থেকে বাঁচাতে শুরুতেই এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যেন তাদের মশা না কামড়ায়। এ ব্যাপারে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু তালহা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। ১. প্রথম পরামর্শ হলো, এডিস মশার উৎস ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত গৃহস্থালির পরিষ্কার স্থির পানিতে জন্মে থাকে - যেমন ফুলের টব, গাড়ির টায়ার বা ডাবের খোলে বৃষ্টির জমা পানি ইত্যাদি। তাই এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ২. শিশুদের দিনে ও রাতে মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখা জরুরি। এছাড়া হাসপাতালে কোন শিশু যদি অন্য রোগের চিকিৎসাও নিতে আসে, তাহলে তাকেও মশারির ভেতরে রাখতে হবে। কেননা ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে এডিস মশা কামড়ে পরে কোন শিশুকে কামড়ালে তার শরীরেও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডেঙ্গু প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ৩. শিশুরা যে সময়টায় বাইরে ছুটোছুটি বা খেলাধুলা করে, সে সময়টায় তাদের শরীরে মসকুইটো রেপেলেন্ট অর্থাৎ মশা নিরোধীকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এবং কয়েক ঘণ্টা অন্তর পুনরায় এই রেপেলেন্ট প্রয়োগ করতে হবে। ৪. শিশু যদি অনেক ছোট হয় বা তাদের শরীরে ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা না যায়, তাহলে তাদের হাতে মসকুইটো রেপেলেন্ট বেল্ট বা পোশাকে প্যাচ ব্যবহার করা যেতে পারে। ৫. মশার কামড় প্রতিরোধে আরেকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হতে পারে শিশুদের ফুল হাতা ও ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখা। ৬. তবে মশা প্রতিরোধ অ্যারোসল, মশার কয়েল বা ফাস্ট কার্ড শিশু থেকে শুরু করে সবার জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, ইলেকট্রিক কয়েল, মসকুইটো কিলার ব্যাট, মসকুইটো রেপেলার মেশিন, মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ ইত্যাদির সাহায্যে নিরাপদে মশা ঠেকানো যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এই সরঞ্জামগুলো যেন শিশুর নাগালের বাইরে থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন মিস্টার তালহা। ৭. যদি শিশুর মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই ভাইরাসের কোন প্রভাব মায়ের বুকের দুধে পড়ে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। চারিদিকে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তাই এই সময়ে শিশুর জ্বর এলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকরা। শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সাধারণত ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা কামড় দেয়ার পর সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের চার থেকে ১০ দিনের মধ্যে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। তবে শিশুর জ্বর মানেই যে সেটা ডেঙ্গু এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। অবশ্য চারিদিকে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, তাই এই সময়ে শিশুর জ্বর এলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. আবু তালহা। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ আগের চাইতে এখন অনেকটাই বদলে গেছে। ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক কিছু লক্ষণের কথা তুলে ধরেন এই চিকিৎসক। ১. ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এই রোগে জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০১, ১০২ ও ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলেই যে তীব্র জ্বর থাকবে, এমনটা নয়। জ্বর ১০০ এর নীচে থাকা অবস্থাতেও অনেক শিশুর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। মূলত ডেঙ্গুর এই জ্বরকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন ডা. আবু তালহা। মিস্টার তালহা অ্যাফেব্রাইল ফেজে অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে বলেছেন। কেননা, এই ক্রিটিকাল ফেজে শিশুর জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পর রোগটি সংকটপূর্ণ অবস্থায় চলে যেতে পারে। এই সময়ে রোগীর শরীরে প্লাজমা লিকেজ হয়ে বিভিন্ন অংশে জমা হয়ে থাকে। এ কারণে রোগীর পেট ফুলে যায় বা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দেয় এবং যার কারণে শিশুদের শক সিনড্রোম হতে পারে। তাই জ্বর সেরে যাওয়ার দুই থেকে তিন দিন শিশুকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. আবু তালহা। ডেঙ্গু হলে শিশু স্বাভাবিক চঞ্চলতা ভুলে প্রচুর কান্নাকাটি করে থাকে। ২. শিশুর মধ্যে স্বাভাবিক চঞ্চলতা থাকে না - শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং ঝিমাতে থাকে। অযথা কান্নাকাটি করে। ৩. শিশুর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, কিছুই খেতে চায় না। বমি বমি ভাব হয় বা কিছু খেলেই বমি করে দেয়। ৪. ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর প্রস্রাব না হওয়া ডেঙ্গুর মারাত্মক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি। ৫. শরীরে লালচে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। ৬. মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটে ব্যথা হতে পারে। ৭. হতে পারে পানি শূন্যতা এবং পাতলা পায়খানাও। ৮. চোখ লাল হয়ে যাওয়া, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হওয়া। এটা মূলত অ্যাফেব্রাইল স্তরে বেশি হয়ে থাকে। ৯. পরিস্থিতি গুরুতর হলে অর্থাৎ ডেঙ্গুর কারণে শিশুর শকে যাওয়ার অবস্থা হলে তার পেট ফুলে যেতে পারে বা শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেমন রক্তবমি, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি। শিশুর ডেঙ্গু শনাক্ত হলে বারবার তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা কেমন হয়ে থাকে মেডিকেল পরীক্ষায় যদি শিশুর ডেঙ্গু ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে ডেঙ্গু হলেই যে শিশুকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে বিষয়টা এমন নয়। ডা: তালহা বলছেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে তাহলে বাড়িতে রেখে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব। শিশুর মধ্যে যদি বিপদ চিহ্ন দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকরাই তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেবেন। শিশুর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকরা সাধারণত কয়েক ধরণের রক্তের পরীক্ষা দিয়ে থাকেন - এগুলো হল কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি), এনএস ওয়ান অ্যান্টিজেন, এফজিপিটি এবং এফজিওটি। এসব পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলে প্রতিদিন একবার সিবিসি পরীক্ষার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নতি নাকি অবনতি হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। শিশুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিচের কয়েকটি উপায়ে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন ডা. আবু তালহা। ১. শিশুর শরীরে যদি জ্বর থাকে, তাহলে পানি দিয়ে শরীর বার বার স্পঞ্জ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ২. শিশুকে পানি ও মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে তরল খাবার, বিশেষ করে খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের শরবত, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ৩. ডেঙ্গুর ধরণ বুঝে চিকিৎসকরা শিশুদের প্যারাসিটামল অথবা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকেন। ৪. রক্তচাপ অস্বাভাবিক থাকলে স্যালাইন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। শিশুর শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য মেডিকেল পরীক্ষা দেয়া হয়। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: এডিস মশা সম্পর্কে যেসব তথ্য জেনে রাখা ভাল ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি তথ্য জেনে নিন পেঁপে পাতার রস, নারিকেল তেল ডেঙ্গু নিরাময়ে উপকারী? ৫. যদি শরীরে প্লাজমা লিকেজের কারণে ফ্লুয়িড জমতে থাকে, তাহলে স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে অ্যালবোমিন প্রয়োগ করা হয়। রোগী শক সিনড্রোমে চলে গেলে এই চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। ৬. এছাড়া শিশুর শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। ৭. শিশুর রক্তে প্লেটলেট যদি ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ এর নীচে চলে আসে বা রক্তরক্ষণ হয়, তাহলে শিশুকে আইসিইউ-তে রেখে প্লেটলেট দেয়ার প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাধারণত চারজন ডোনার থেকে এই প্লেটলেট সংগ্রহ করা হয়। তাই শিশুর শারীরিক পরিস্থিতি গুরুতর হলে অন্তত কয়েকজন রক্তদাতাকে প্রস্তুত রাখতে হবে। একজন ডোনার থেকে প্লেটলেট সংগ্রহ করা গেলেও তার খরচ কয়েক গুন বেশি পড়ে যায়। ৮. রোগীর পরিস্থিতি গুরুতর হলে রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি বুকের এক্স রে, পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি, ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এছাড়া প্রস্রাব না হলে ক্রিয়াটিনিনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। রোগীর লক্ষণের ওপর এই পরীক্ষাগুলো নির্ভর করে বলে জানান মিস্টার তালহা।
শিশুদের ডেঙ্গু: কিভাবে বুঝবেন, বাবা-মায়ের করণীয় কী, চিকিৎসকরা কী করবেন
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
সিলেটে মেয়র নির্বাচনের প্রচারণা। জাতীয় নির্বাচনের কয়েকমাস আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে দলগুলো। তবে, গাজীপুর এবং তার আগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে ধরণের কারচুপির অভিযোগ উঠেছে, তার ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট বা সন্দেহ কি আরও বাড়বে? সেই প্রশ্ন এখন উঠছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি নিজেই বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে নানা অনিয়ম দেখেছিলাম। গত ২৬শে জুন অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে আমি যে কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছিলাম, তার অনেক কেন্দ্রে বিরোধী দল বিএনপি'র মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না। একটি কেন্দ্রে বিএনপি'র মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টকে বের করে দেয়ার পর তারা সেখানে প্রতিবাদ করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারার ঘটনা দেখারও অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটি কেন্দ্রে আমার সাংবাদিক পরিচয় বুঝতে পেরে কয়েকজন যুবক সিল মারা ব্যালটগুলো একসাথে বাক্সে ভরে দ্রুত কেন্দ্র ত্যাগ করেছিল। এর আগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়েও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীদল বিএনপি। এখন তিনটি সিটি কর্পোরেশন রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালে ৩০শে জুলাই যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে। কিন্তু বিএনপিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ বা আস্থার সংকট বেড়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, ক্ষমতাসীনরা সচেতনভাবেই নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে বিতর্কিত নির্বাচন করছে। "নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই নির্বাচন কমিশন কোনো দায়িত্বই পালন করতে পারে না। এবং তারা কিছুই করতে পারে না।একটা ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। আমরা বার বার অভিযোগ করার পরও বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে গাজীপুরে তারা কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।প্রত্যেকটি জায়গায় একই ঘটনা ঘটছে। কেন্দ্রগুলো দখল করে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এজেন্টদের থাকতে দিচ্ছে না।" "এ সরকার তো অত্যন্ত সচেতনভাবে এই প্রতিষ্ঠানটিকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা আর কখনও সুস্থ হবে বলে আমাদের মনে হয়না।" বিবিসি বাংলায় আরো খবর: গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনার পর হোয়াটসএ্যাপে কড়াকড়ি ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কী হবে? 'কীভাবে আবিষ্কার করলাম যে আমার স্বামীর আরেকটি স্ত্রী আছে' প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাদের অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নির্বাচন নিয়ে অভিযোগগুলো আমলে নিতে চাইছেন না। তাদের একটা বড় অংশ নির্বাচনগুলোতে প্রতিপক্ষকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থেকেও অনেকটা দূরে সরে এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটেই নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতার দাপট খাটানোর অভিযোগ‌ও উঠছে। কিন্তু তা মানতে রাজী নন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি মনে করেন, কোনো নির্বাচন হলেই বিএনপি তাকে বিতর্কিত করছে। "গাজীপুর এবং খুলনা নির্বাচন নিয়ে যে কেউ কেউ বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে, সেটা সমীচীন নয়। কারণ আমরা যদি ভোটের গড় হার দেখি, দুই জায়গাতেই ৬০শতাংশের নীচে ভোট পড়েছে। আমরা যদি আমাদের দেশের যে কোনও নির্বাচনের ভোটের হারের সাথে তুলনা করি, তাহলে এই নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে।" "যত নির্বাচনই আসুক, যখনই বিএনপি বিরোধীদলে থাকে, তখন সব নির্বাচনকেই তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যেমন বিএনপি শাসনামলে কোনো উপনির্বাচনে আমরা কখনও বিজয়ী হইনি। কিন্তু আমাদের সময় বিএনপি বগুড়ায় জিতেছে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এমনকি বিএনপির লিস্ট থেকেও কমিশনার হয়েছে। কিন্তু কমিশনে শুরু থেকেই বিএনপি সবকিছুকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।" গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি, বিশ্লেষকদের অনেকে তা মনে করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)। কারণ হিসেবে তারা দেখেন, মামলা বা গ্রেফতারের ভয়ে নির্বাচনী মাঠে বিরোধী দল বিএনপির নেতা কর্মীরা সেভাবে থাকতে পারেনি। এরপরও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলো যে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাসীনরা খুশি বলে মনে হয়। কিন্তু নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ফেমা'র প্রধান মুনিরা খান মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে আস্থার সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। "জাতীয় নির্বাচন তো একেবারেই কাছে। তো নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা সবার জন্য প্রযোজ্য। এটা শুধু দলগুলোর কথা বলবো না। আমি বলবো, দল, প্রার্থী এবং ভোটার সবার কাছেই কিন্তু দেখবার বিষয়। এবং এটা একটা নির্বাচন কমিশনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ যে, এই তিনটা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করলে তাদের প্রতি সবার একটা আস্থা গড়ে উঠবে।" মুনিরা খান যেমনটা মনে করছেন, সামনের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার মধ্যদিয়ে একটা আস্থার পরিবেশ তৈরি সুযোগ এখনও রয়েছে। আরও পড়ুন: বিবিসির চোখে: কেমন হলো গাজীপুরের নির্বাচন সিলেট নির্বাচন: আলোচনায় 'জামায়াত-বিএনপি বিরোধ' একইভাবে পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা। "পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে কিন্তু যে জিনিসটা দেখেছি, জনগণের মধ্যে প্রশ্ন আছে। কোনো কারণে যদি এগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে জনগণের মাঝে আস্থার জায়গায় একটা সংকট তৈরি হয়। সুতরাং জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখন আগামী নির্বাচনগুলোতে যদি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরতে পারে। তাহলে জনগণের মাঝে আস্থার যে একটা সংকট তৈরি হচ্ছে, সেই জায়গা থেকে কিন্তু সরকার বেরিয়ে আসতে পারবে।" বিএনপি বিভিন্ন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছে। সাধারণত এটাকে রাজনৈতিক অঙ্গনের বিতর্ক দেখা হয়। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। ফেমার প্রধান মুনিরা খান। তবে একথা মানতে রাজি নয় নির্বাচন কমিশন। তারা মনে করছে, কমিশন মানুষের আস্থার জায়গাতেই রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেটা বিবেচনা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। "নির্বাচনে অনিয়ম হতে পারে। যারা অনিয়ম করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রয়োজনে কেন্দ্র বন্ধ করা সহ প্রশাসনিক সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। সব ধরণের বিতর্কের ঊর্ধ্বে নির্বাচন হবে,কেউ বিতর্ক করবে না, এটা যারা বিতর্ক করবে তাদের ব্যাপার। আমাদের দায়িত্ব হলো, সংবিধান, আইন বা বিধান সব প্রয়োগ করে আমরা নির্বাচন করবো।" আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার দাবি বিএনপি এখনও তুলছে। কিন্তু দলটির নেতৃত্বের একটা অংশ মনে করছে, আওয়ামী লীগ সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। সেই প্রেক্ষাপটে তাদের দলের প্রস্তুতি নেয়ার একটা চেষ্টা রয়েছে। সিলেটে কেন বিএনপির পাল্টা প্রার্থী দিল জামায়াত? ভোট ডাকাতির নতুন কৌশল প্রয়োগ হয়েছে, দাবি বিএনপির আর এর অংশ হিসেবে তারা সিটি নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমস্যাগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাইছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে একটা সমাধানে আসার চেষ্টা শেষমুহুর্ত পর্যন্ত তারা করে যাবেন। "আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, আমরা ভাবছি, এ সরকারের অধীনে কখনও নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। আমরা একথা বলছি। একটা গণতান্ত্রিক পার্টি আর কি করতে পারে। একটা গণতান্ত্রিক পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, ব্যাপারটা খুব অসম লড়াই হয়।তারপরও একথাগুলো আমরা বলে যাচ্ছি। আমরা জেলে যাচ্ছি। আমাদের নেত্রী এখন জেলে। হাজার হাজার নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা।আমরা আমাদের চেষ্টাতো করছি। এখন জনগণের দায়িত্ব রয়েছে তাদের অধিকার আদায় করে নেয়া।" জাতীয় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে,সেই প্রেক্ষাপটে যে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের সম্ভাবনাকে সরকার সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলেও মনে হয়েছে যে, বিএনপি বড় কোনো আন্দোলন বা রাজনৈতিক কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে, সেটা তারা মনে করেন না। তোফায়েল আহমেদ সেকারণে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট থাকতে পারে, তা বিশ্বাস করতে চান না ক্ষমতাসীনরা। তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সন্দেহ দূর করা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন। "কোনও কিছু করেই বিএনপিকে আস্থায় আনতে পারবেন না। বিএনপি সবকিছু নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখে।" "জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রশাসনের কর্তৃত্ব থাকবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। প্রধানমন্ত্রী শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।বিএনপি যদি সুস্থ রাজনীতি করতে চায়, তাহলে এখনই তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতো।কিন্তু তারা সেটা করবে না। তারা যখন করবে, তখন সময় থাকবে না।" কিন্তু সামনের তিনটি সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কি মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারবে? এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। মুনিরা খান মনে করেন, সরকার সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে চললে আইনে নির্বাচন কমিশনের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। "সংবিধানে এবং আইনে নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেয়া আছে, তাতে তারা কিন্তু একদমই সুষ্ঠু ও ভাল নির্বাচন করতে পারে।" প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাও দাবী করেন, তাদের উপর কোনো চাপ নেই। তিনটি সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার মাধ্যমে তারা জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা। ঢাকার নিউমার্কেটের সামনে রাস্তায় আমি এখন সাধারণ মানুষের কয়েকজনের সাথে কথা বলছি। তাদের অনেকে বলছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাদের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরিজীবী মো: আব্দুল্লাহ বলেছেন, ভোট দিয়ে কী হবে, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে তার মনে।সেজন্য তিনি তার এলাকার পৌর নির্বাচনে ভোট দেননি। এই একই ধারণা হয়েছে চাকরিজীবী আঞ্জুমান আরার। "আমি ভোট কেন্দ্রে যাব কিনা বা ভোট দিলে কী হবে? আমিও ব্যাপারটা নিয়ে সন্দিহান।" বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী বলছিলেন, "দেখা যাচ্ছে যে নির্বাচনে ভোট কারচুপি হচ্ছে।আমরা কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই আমাদের ভোট দিয়ে দিচ্ছে। আমরা সব মেনে নিচ্ছি। এর প্রভাব কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে পড়বে।" একদিকে বিরোধীদলকে দুর্বল হিসেবে দেখা, অন্যদিকে খুলনা ও গাজীপুরের সাফল্যকে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের মানদণ্ড হিসেবে নেয়ার যে ঝুঁকি, সে সম্পর্কে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন। কিন্তু ভোটের দিনে সাধারণ মানুষ যদি ব্যালট বাক্স পর্যন্ত পৌঁছুতে না পারেন, তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার তাদের হারানো বিশ্বাস রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে ফিরিয়ে আনবে, তার জবাব নেই কারও কাছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আস্থার সংকট কি বাড়ছে?
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
হ্যাকাররা কি এ যুগের রবিনহুড হতে চাইছে? 'ডার্কসাইড হ্যাকার্স' নামের এই গোষ্ঠীটি হ্যাকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে এ পর্যন্ত লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে এই হ্যাকাররা এখন বলছে, বিশ্বকে তারা আরও বাসযোগ্য করতে চায়। ডার্ক ওয়েবে এক পোস্টে তারা জানিয়েছে, দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তারা বিটকয়েনে দশ হাজার ডলার দান করেছে। এই দানের রসিদও তারা সেখানে পোস্ট করেছে। তবে দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের একটি, 'চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল' জানিয়েছে, তারা এই অর্থ নেবে না। এই ঘটনাটি একেবারেই অদ্ভূত এবং বেশ চিন্তিত হওয়ার মতো ব্যাপার- নৈতিক এবং আইনগত, দু'দিক থেকেই। গত ১৩ই অক্টোবর এক ব্লগ পোস্টে ডার্কসাইড হ্যাকার্স দাবি করেছে যে তারা কেবল বড় বড় লাভজনক কোম্পানিকে টার্গেট করে তাদের 'র‍্যানসমওয়্যার' দিয়ে। র‍্যানসমওয়্যার মূলত এমন ধরণের কম্পিউটার ভাইরাস, যার মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের আইটি সিস্টেমকে জিম্মি করে রাখা হয় মুক্তিপণ না দেয়া পর্যন্ত। দশ হাজার ডলার দানের ট্যাক্স রসিদ হ্যাকাররা আবার অনলাইন পোস্ট করেছে। ডার্কসাইড হ্যাকার্স এই ব্লগপোস্টে লিখেছে, "আমরা মনে করি, বিভিন্ন কোম্পানি যে অর্থ দিয়েছে, তার একটা অংশ দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দেয়া উচিৎ, এটাই ন্যায্য। "আমাদের কাজকে আপনারা যতটা খারাপ বলেই ভাবুন না কেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা কোন একজনের জীবন বদলাতে সাহায্য করেছি। আজ আমরা আমাদের প্রথম দানের অর্থ পাঠিয়েছি।" এই সাইবার অপরাধীরা বিটকয়েনে তাদের অর্থ দান করে 'দ্য ওয়াটার প্রজেক্ট' এবং 'চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল' নামে দুটি দাতব্য সংস্থাকে। তারা দান করেছে শূন্য দশমিক ৮৮ বিটকয়েন। দান করার পর তারা যে ট্যাক্স রসিদগুলো পেয়েছে, সেগুলোও পোস্ট করেছে। চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল মূলত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। ভারত, ফিলিপাইন, কলম্বিয়া, জাম্বিয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কাজ আছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, "এই দানের অর্থ যদি কোন হ্যাকারের কাছ থেকে এসে থাকে, আমাদের কোন ইচ্ছে নেই সেই অর্থ নেয়ার।" অন্য দাতব্য সংস্থা, দ্য ওয়াটার প্রজেক্ট এখনো এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলক সাব-সাহারান আফ্রিকায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে। হ্যাকারদের দান করা অর্থের আরেকটি রসিদ। একটি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি 'এমসিসফট‌ের' বিশ্লেষক ব্রেট ক্যালো বলেন, "এভাবে অর্থ দান করে এই অপরাধীরা আসলে কী অর্জন করতে চায়, তা পরিস্কার নয়। হয়তো তাদের মধ্যে যে অপরাধবোধ কাজ করছে, সেটি কাটাতে চায়? অথবা হয়তো তারা একধরণের অহমিকা থেকে এটা করছে। নিজেদেরকে তারা হয়তো বিবেকহীন চাঁদাবাজের পরিবর্তে রবিনহুডের মতো কেউ বলে ভাবছে।" "তাদের উদ্দেশ্য যাই হোক, এটা খুবই অস্বাভাবিক এক ঘটনা। আমার জানা মতে এই প্রথম কোন র‍্যানসমওয়্যার হ্যাকার গোষ্ঠী এভাবে তাদের আয় করা অর্থ কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করলো।" ডার্কসাইড হ্যাকার্স তুলনামূলকভাবে নতুন এক গোষ্ঠী। তবে ক্রিপটো-কারেন্সি মার্কেট বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এরা তাদের ভিক্টিমদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করছে। তবে অন্যান্য সাইবার অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে বলেও প্রমাণ আছে। এরকম একটি সাইবার অপরাধী গোষ্ঠী গত জানুয়ারীতে ট্রাভেলেক্সের ওপর হামলা চালিয়েছিল, র‍্যানসমওয়্যার দিয়ে তাদের প্রায় অচল করে দিয়েছিল। এই হ্যাকাররা যেভাবে দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ দান করেছে, সেটিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে চিন্তায় ফেলেছে। সাইবার অপরাধীরা এজন্য ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সেবা, 'দ্য গিভিং ব্লক।' বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৬৭টি সংস্থা এই সেবা ব্যবহার করে। এদের মধ্যে আছে 'সেভ দ্য চিলড্রেন', 'রেইনফরেস্ট ফাউন্ডেশন' এবং 'শী ইজ দ্য ফার্স্টে'র মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠান। গিভিং ব্লক এই দান সম্পর্কে নিজেরাও টুইট করে ঘোষণা দিয়েছিল, পরে এটি তারা ডিলিট করে ফেলে দ্য গিভিং ব্লক দাবি করে, তারাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের মাধ্যমে ক্রিপটো-কারেন্সি দিয়ে অর্থ দান করা যায়। দু'হাজার আঠারো সালে এই প্রতিষ্ঠানটির শুরু। তারা ক্রিপটো-কারেন্সির মাধ্যমে যারা কোটিপতি হয়েছে, তাদেরকে ক্রিপটোকারেন্সীতে অর্থ দানের সুযোগ করে দেয়, যেটি তাদের করের দায় কমাতেও সাহায্য করবে। দ্য গিভিং ব্লক বিবিসিকে জানিয়েছে, এই অর্থ যে সাইবার ক্রিমিনালরা দান করেছে, সেটা তাদের জানা ছিল না। তারা বলেছে, "আমরা এখনো খোঁজ নিয়ে দেখছি এই অর্থ আসলেই চুরি করা কীনা।" "যদি দেখা যায় যে এই অর্থ আসলে চুরি করা, আমরা তখন এই অর্থ যাদের, তাদের ফেরত দেয়ার কাজ শুরু করবো।" তবে কোম্পানিটি এটা স্পষ্ট করেনি, তারা কি এই অর্থ সাইবার অপরাধীদের কাছেই ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলছে, নাকি এই অপরাধীদের শিকার হয়েছিল যারা, তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলছে। দ্য গিভিং ব্লক ক্রিপটো-কারেন্সির বড় সমর্থক। তারা আরও বলেছে, "ওরা যেহেতু ক্রিপটো-কারেন্সিতে অর্থ দান করেছে, তাই তাদের ধরাটা বরং সহজ, কঠিন নয়।" দ্য গিভিং ব্লকের মাধ্যমে ক্রিপটো-কারেন্সীতে দান গ্রহণ করে ৬৭টি সংস্থা তবে দাতাদের ব্যাপারে দ্য গিভিং ব্লক কী ধরণের তথ্য সংগ্রহ করে, তার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল কারেন্সি কেনা-বেচা করে, তারা ব্যবহারকারীদের পরিচয় যাচাই করে। কিন্তু দ্য গিভিং ব্লকের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়েছে কীনা, তা নিশ্চিত নয়। বিবিসি পরীক্ষামূলকভাবে পরিচয় প্রকাশ না করে দ্য গিভিং ব্লকের অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে কিছু দান করতে চেয়েছিল, সেখানে দাতার পরিচয় যাচাই করার জন্য কোন প্রশ্ন করা হয়নি। ফিলিপ গ্রাডওয়েল কাজ করেন 'ক্রিপটো-কারেন্সি অ্যনালিসিস' নামের একটি প্রতিষ্ঠানে, তিনি ক্রিপটো-কারেন্সির বিষয়ে তদন্ত করেন। "আপনি যদি মুখোশ পরে কোন চ্যারিটি শপে যান এবং তাদেরকে নগদ ১০,০০০ পাউন্ড দান করেন, তারপর একটি রসিদ দাবি করেন, তখন আপনাকে সম্ভবত অনেক প্রশ্ন করা হবে- এক্ষেত্রেও কোন ব্যতিক্রম নেই।" আরও পড়ুন: "এটা সত্য যে গবেষকরা এবং আইন প্রয়োগকারীরা ক্রিপটো-কারেন্সি অর্থ কোত্থেকে কোথায় যাচ্ছে তা খুঁজে বের করতে এখন অনেক বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছেন। কারণ এই ক্রিপটো-কারেন্সি এখন হাতবদল হয়ে ঘুরছে বিশ্বের নানা জায়গায়। তবে প্রতিটি ক্রিপটো-কারেন্সি ওয়ালেটের আসল মালিক কে, সেটি খুঁজে পাওয়া অনেক বেশি জটিল কাজ। অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনকে যখন সম্ভাব্য অবৈধ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ এভাবে দান করতে দেয়া হচ্ছে, তা কিন্তু অর্থ পাচারের জন্য দরোজা খুলে দেয়ার বিপদ তৈরি করছে।" "সব ক্রিপটো-কারেন্সি ব্যবসাতেই কিন্তু বহু ধরণের 'এন্টি-মানি লন্ডারিং' পদক্ষেপ নিতে হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে 'নো ইউর কাস্টমার‌' (কেওয়াইসি), অর্থাৎ আপনার গ্রাহককে জানুন। এর মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হয়, যাতে করে কোন লেন-দেনের পেছনের ব্যক্তিটি আসলে কে, সেটা বোঝা যায়।" দ্য গিভিং প্রজেক্টের মাধ্যমে আরও যেসব দাতব্য প্রতিষ্ঠান অনুদান নেয়, তাদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। সেভ দ্য চিলড্রেন বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা কখনোই জেনেশুনে এমন দানের অর্থ নেয় না, যা অপরাধের মাধ্যমে অর্জন করা। মেয়ে শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করে 'শী ইজ দ্য ফার্স্ট‌'। তারা বলেছে, অজ্ঞাতপরিচয় এবং সম্ভাব্য অপরাধমূলক উৎস থেকে আসার অনুদান তারা নিতে স্বস্তিবোধ করবে না। সংস্থাটি বলেছে, এটি খুবই লজ্জার ব্যাপার যে খারাপ কিছু লোক ক্রিপটো-কারেন্সির মাধ্যমে দান করার এই সুযোগটি অপব্যবহার করছে। আমরা আশা করবো নামপরিচয় গোপন রাখতে চান এমন দাতারাও যেন আমাদের সমাজের মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।" বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: ভোটের সংকট: দায় কার? নির্বাচন কমিশন, নাকি দলের? কৃষ্ণাঙ্গের সন্তান গর্ভে ধারণ করায় ঘরছাড়া বাঙালি মেয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি করতে দোকানিদের কৌশল
একালের রবিনহুড? হ্যাকাররা চুরি করা অর্থ কেন দান করছে
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
সারা বছর এই ধরণের খাবার ততোটা গুরুত্ব না পেলেও, বাংলাদেশের সব বাড়িতেই ইফতারের প্রধান আকর্ষণ নানারকম ভাজা-পোড়া খাবার। শুধুমাত্র বাড়িতেই নয়, এই সময় খাবারের দোকানগুলোতেও এরকম মশলাদার ইফতারি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। রমজানের পুরো মাসজুড়ে এই রকম মুখরোচক খাবার খাওয়া হলেও বছরের অন্য সময় এভাবে নিয়মিতভাবে খাওয়া হয় না। ধর্মীয় বিধিবিধানেও ইফতারে এরকম মুখরোচক খাবারের রীতির উল্লেখ আছে বলে শোনা যায় না। তাহলে বাঙ্গালির ইফতারের প্লেটে এরকম মুখরোচক ভাজা-পোড়া খাবার জায়গা করে নিলো কীভাবে? ইসলামের ইতিহাসবিদরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে এই উপমহাদেশে আসা এবং শাসন করা নানা জাতি গোষ্ঠীর নানা ধরনের সংস্কৃতির মতো খাবারও এখন এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্য তালিকায় মিশে গেছে। সেভাবেই ইফতারের এই খাবারের তালিকায় ছাপ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাবারের সংস্কৃতির। ইফতারে নানা জাতিগোষ্ঠীর খাবার ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নুসরাত ফাতেমা বিবিসি বাংলা বলছেন, ''আমাদের ইফতারে যেসব খাবার খাওয়া হয়, তার বড় অংশটি এসেছে পার্সিয়ান বা মুঘল খাবারের তালিকা থেকে। এক সময় মুঘলরা ভারতবর্ষ শাসন করতো। তারা যখন ঢাকা শাসন করেছেন, তাদের সেই খাদ্য তালিকা তখনকার ঢাকার লোকজন গ্রহণ করেছে। এরপর আস্তে আস্তে সেটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।'' ''আপনি যখন এমনিতে খাবেন, তখন হয়তো ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাচ্ছেন। কিন্তু যখন ইফতারির প্রসঙ্গে যাবেন, তখন দেখবেন, সেখানে নানা জাতিগোষ্ঠীর খাবার মিশে গেছে।'' তিনি বলছেন। তিনি কয়েকটি খাবারের উদাহরণ দিচ্ছেন: খেজুর: ইসলামের নবী ইফতারের সময় খেজুর খেতেন। ফলে ইফতারের সময় খেজুর খাওয়াকে সুন্নত বলে মনে করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের থেকে এই রীতিটি সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বেই ইফতারের সময় খেজুর অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বলে মনে করা হয়। ইসলামিক সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম খাদেমুল হক বিবিসিকে বলেন, এটা তো রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। "হযরত মোহাম্মদ (সা.) রোজা খোলার সময় অর্থাৎ ইফতারে খেজুর খেতেন। সে কারণে মনে করা হয় এটা ভালো অনুষঙ্গ। সেজন্যই বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ইফতারিতে সুন্নত হিসেবে খেজুর খাওয়া"। মোঘলদের দেখে কাবাব, মাংসের খাবার ইফতারিতে যুক্ত হয়েছে, বলছেন ইতিহাসবিদরা ছোলা: এটা আফগানদের প্রিয় খাবার, তাদের কাছ থেকে ভারতবর্ষের, বাংলাদেশের মুসলমানরা গ্রহণ করেছে। তারা কাবুলি চানা বা কাবুলি ছোলা খেয়ে থাকে। সেখান থেকেই এটা খাওয়ার চল এসেছে। শবেবরাতের সময় যে বুটের হালুয়া তৈরি করা হয়, সেটার আসল নাম যেমন হাবশি হালুয়া, এটাও আফগানদের একটা খাবার। তবে ভারত বা বাংলাদেশে এসে সেটা আরও মশলা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে মুখরোচক করে রান্না করা হয়ে থাকে। সেটার সাথে মুড়ি খাওয়ার চলও এই অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব উদ্ভাবন। কাবাব, হালিম, বিরিয়ানি: মুঘল খাবারের মধ্যে পারসিক খাবারের প্রভাবটা অনেক বেশি ছিল। তারাই ইফতারে বিরিয়ানি, কাবারের মতো খাবার খেতো। সেটা দেখে এই অঞ্চলের বনেদি মানুষজনও খেতে শুরু করে, বলছেন ড. নুসরাত ফাতেমা । এখনো ইরান, আরব আমিরাত, সৌদি আরব ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ইফতারির সময় কাবাব সহযোগে বিরিয়ানি বা পোলাও খাওয়ার চল রয়েছে। পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ: এটা উত্তর ভারত থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এলাকার খাবারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বলছেন ড. ফাতেমা। ''এই অঞ্চলে ইসলাম ছড়ানোর সময় অ্যারাবিক প্রভাব ছিল, পার্সিয়ান প্রভাব ছিল, পরবর্তীতে সেটা একপ্রকার ভারতীয়করণও হয়। ভারতে এসে, মূলত উত্তর ভারত থেকে ইফতারের সময় মুখরোচক খাবারের অংশ হিসাবে নানা রকমের ভাজাপোড়া খাওয়ার চল যোগ হয়েছে। তখন পেঁয়াজু, বেগুনি, নানা ধরনের চপ খাওয়ার চল যুক্ত হলো। সেটাই পরবর্তীতে আমরাও গ্রহণ করেছি,'' তিনি বলছিলেন। শরবত: ইফতারে শরবত খাওয়ার রীতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে রয়েছে। পানির পিপাসা থেকে স্বাদ, মিষ্টি ও সুগন্ধি শরবত খাওয়ার চল চালু হয়েছে বলে মনে করেন ইসলামী ইতিহাসবিদরা। আরও পড়ুন: বাংলাদেশে রোজা পালনকারীর জন্য জরুরী ১১টি পরামর্শ রোজা: ছয়টি অতি পরিচিত ভুল ধারণা রোজায় বাংলাদেশে খেজুর কেন এতো জনপ্রিয়? রমজানে খাদ্যাভাস: ভাজা-পোড়ার বিকল্প কি আছে? করোনাভাইরাস সংক্রমণ আর লকডাউনের কারণে এই বছর চকবাজারে ইফতারির বিশাল পসরা দেখা যায়নি বাংলাদেশে কি বরাবরই তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার দিয়ে ইফতারি করা হতো? ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এখন যেভাবে ইফতারে নানারকমের মুখরোচক খাবার, মাংস, জিলাপি বা ভাজাপোড়া খাওয়া হয়ে থাকে, সেটা মাত্র কয়েকশো বছরের পুরনো। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলছেন, বাঙালি সংস্কৃতিতে ইসলামে ইফতারির সময় কয়েকশো বছর পূর্বের বর্ণনাতেও এরকম ভাজাপোড়া খাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায় না। সুতরাং বলা যায়, কয়েকশো বছর আগেও এগুলো ছিল না। ''কোন এক সময় মুঘলদের কাছ থেকে ঢাকার লোকজন এরকম বিরিয়ানি, কাবাব, ভাজাপোড়া খাওয়া গ্রহণ করে। তাদের কাছ থেকে সেটা আস্তে আস্তে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা যায়,'' বলছিলেন মি. মামুন। তিনি বলছেন, ''উনিশ শতকের দিক থেকে এরকম খাবার এই অঞ্চলের মানুষজন খেতে শুরু করেছে বলে ধারণা করা যায়। কারণ এর আগে বইপত্রে এরকম রকমারি খাবারের বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং সেই সময় মানুষ ইফতারে ভাত খেতে বলেই তথ্য পাওয়া যায়।'' অধ্যাপক ড. নুসরাত ফাতেমাও বলছেন, ভারতবর্ষে আরব, পার্সিয়ান, আফগান ইত্যাদি বিভিন্ন জাতির শাসকদের কারণে তাদের খাবার আর সাধারণ মানুষের মধ্যে খাবারের পার্থক্য ছিল। তবে পরবর্তীতে আস্তে আস্তে তাদের এসব খাবার এখানকার স্থানীয় মানুষ গ্রহণ করতে শুরু করে। এভাবেই স্থানীয় খাবারের সঙ্গে তাদের খাবারের রীতি মিশে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ ইউসুফ বলছেন, ''ছোলা, পেঁয়াজু, কাবাব ইত্যাদি কিন্তু আমরা সারা বছরই কম বেশি হালকা নাস্তা হিসাবে খাওয়া হয়। কিন্তু রমজানের সময় এটা মজাদার বা মুখরোচক খাবার হিসাবে যুক্ত হয়ে গেছে। সারাদিন অভুক্ত থেকে সন্ধ্যায় এরকম মজাদার খাবার খেতে ভালো লাগে।''' এর সঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের কোন সম্পর্ক নেই বলে তিনি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহিন বলছেন, যদিও বিশেষ কোন কারণ বা পুষ্টিমাণের ব্যাপার নেই। তবে এই অঞ্চলের মানুষ একটু মুখরোচক, তেলেভাজা খাবার খেতে পছন্দ করে। এই কারণে ইফতারির মধ্যেই সেটা যুক্ত হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশে এখনো বিভিন্ন এলাকায় ইফতারির খাবারেও রকমফের রয়েছে। অনেক এলাকায় পেঁয়াজু বা বেগুনির বদলে সন্ধ্যায় খেজুর ও শরবত খেয়ে ইফতারি করার পরপরই ভাত বা খিচুড়ি খাওয়ারও চল রয়েছে। ইফতারির সময় খেজুর খাওয়াকে সুন্নত বলে করেন ইসলামীবিদরা ইসলামে ইফতারে খাবার সম্পর্কে কি বলা হয়েছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ ইউসুফ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''ইফতারে ইসলামের নবী খেজুর খেতেন, মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতেন। বাকি যে খাবারগুলো আছে, সেগুলো বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা যে সমস্ত খাবার পছন্দ করে, সেগুলো খেয়ে থাকে।'' ''ইফতারে বাংলাদেশি বা পাকিস্তানের লোকজন বুট, মুড়ি, ছোলা-যেগুলো ভাজাপোড়া বলা যায়, সেগুলো খেয়ে থাকে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের মানুষজন কিন্তু এগুলো খায় না। তারা বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট বা ফ্রাই খায়, সাথে খেজুর খায়।'' ''ইফতারে সুন্নত বলতে একটা মিষ্টি খাবার, খুরমা বা খেজুর বুঝি। বাকি খাবারের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। যার যার রুচি অনুযায়ী, সংস্কৃতি অনুযায়ী এই খাবার গ্রহণ করে থাকে,'' তিনি বলছেন। পুষ্টিবিদরা মনে করেন, ইফতারির খাদ্য তালিকায় এমন খাবার থাকা উচিত, যা সহজে শরীরে পুষ্টি, পানি ও শক্তির যোগান দেবে ইফতারে কি ধরণের খাবার খাওয়া ভালো? ইফতারে মুখরোচক হলেও তেলে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ততোটা ভালো নয় বলেই মনে করেন পুষ্টিবিদরা। পুষ্টিবিদরা মনে করেন, ইফতারির খাদ্য তালিকায় এমন খাবার থাকা উচিত, যা সহজে শরীরে পুষ্টি, পানি ও শক্তির যোগান দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''তেলে ভাজা খাবার সবার শরীরের জন্য ঠিক নয়। যেগুলো ডিপ ফ্রাই হয়, অনেক বেশি ভাজাপোড়া, সেগুলো অনেকের জন্য অ্যাসিডিটি, পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে।'' অনেকদিন ধরেই পুষ্টিবিদরা এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। ''বিশেষ করে বাইরে থেকে যেসব খাবার কিনে এনে রমজানের সময় খাওয়া হয়, তার অনেক খাবার খোলা অবস্থায় বিক্রি করা হয়, তৈরির সময়ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। ফলে এসব খাবার বরং শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।'' তিনি বলছেন। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, ছোলাটা শরীরের জন্য খারাপ নয়। সেই সঙ্গে খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখা উচিৎ। তবে প্রতিদিন তেলে ভাজা খাবার না খেয়ে তার বদলে চিড়া, ফলমূল জাতীয় খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো হবে।
রমজান: রোজার সময় ইফতারে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনির মত মুখরোচক খাবারের রীতি এলো যেভাবে
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
প্রায় দু বছর ধরে ভালদিমির সাদা এই তিমিটি নরওয়ের উপকূলে বসবাস করছে কারণ বেলুগা প্রজাতির ঐ তিমির গলায় ক্যামেরা এবং চিপ বসানো রুশ একটি বেল্ট পরানো ছিল। ধারণা জন্মে তিমিটি হয়তো সাগরে রাশিয়ার একটি গুপ্তচর। কিন্তু কে কোন উদ্দেশ্যে তিমিটির গলায় বেল্ট পরিয়ে দিয়েছিল সেই রহস্যের কোনো কূলকিনারা গত দু বছরেও হয়নি। প্রাণী অধিকার কর্মীরা এখন অবশ্য তিমিটির ভালোমন্দ, নিরাপদ আশ্রয় নিয়েই উদ্বিগ্ন। আমেরিকান একজন চলচ্চিত্রকার এখন সাদা ঐ তিমিটির জন্য একটি অভয়াশ্রম তৈরি করতে তৎপর। নরওয়ে সরকারের সাহায্য চাইছেন তিনি। ভালদিমিরের গায়ে প্যাচানো বেল্টের সাথে ছিল একটি ক্যামেরা এবং রাশিয়ায় তৈরি একটি ইলেকট্রনিক চিপ একই ধরনের খবর: তিমিটি প্রথম চোখে পড়ে ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে। নরওয়ের ইনগোইয়া এবং রোলভসিয়া দ্বীপের কাছে জেলে নৌকার পাশে হঠাৎ হঠাৎ সাদা রংয়ের কোন একটি প্রাণীর মাথা ভেসে উঠতে দেখা যায়। দৃশ্যটি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে কারণ সাদা রঙের বেলুগা তিমি দক্ষিণ আর্কটিক সাগরের এই অংশে দেখা যায়না। বিস্ময় আরো বাড়ে যখন দেখা যায় তিমিটির শরীরে শক্ত করে একটি বেল্টের মত বস্তু প্যাঁচানো। জেলেদের কাছে প্রথম মনে হয়েছিল তিমিটি যেন বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছে। জোয়ার হেস্টেন নামে এক জেলে ছবি তুলে সেটি অউডান রিকার্ডসেন নামে একজন সমুদ্র জীববিজ্ঞানীর কাছে পাঠান। ঐ বিজ্ঞানী তখন সাহায্যের জন্য নরওয়ের মৎস্য বিভাগের শরণাপন্ন হন। বিষয়টি তদন্তের জন্য ইয়োর্গেন রি উইগ নামে একজন বিশেষজ্ঞকে পাঠানো হয়। মানুষের সাহচর্য পছন্দ করে ভালদিমির “আমি তিমিটিকে দেখলাম এবং আমার মনে হলো এটি সাধারণ কোনো তিমি নয়,“ বিবিসিকে বলেন মি. রি উইগ। “আমি জানতাম এটির সাথে অসামান্য কোনো কাহিনী জড়িয়ে আছে।“ পুতিনের নামে নাম একজন জেলে সাহস করে নিরাপদ পোশাক পরে বরফ-শীতল পানিতে নেমে তিমিটির শরীর থেকে বেল্টের মত জিনিসটি খুলে আনেন। তখন দেখা গেল যে ঐ বেল্টের সাথে একটি ক্যামেরা লাগানো এবং সেই সাথে রয়েছে একটি ইলেকট্রনিক চিপ। চিপের ওপর লেখা ‘সেন্ট পিটার্সবুর্গের তৈরি যন্ত্র‘। সাথে সাথে নরওয়ের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। তাদের পক্ষ থেকে বিবিসিকে বলা হয়, “তিমিটিকে খুব সম্ভবত রাশিয়া তাদের গবেষণার কাজে লাগাচ্ছিল।“ রাশিয়া বহুদিন ধরেই সামরিক উদ্দেশ্যে ডলফিনের মত সাগরের স্তন্যপায়ী প্রাণী ব্যবহার করছে। ব্যারেন্টস অবজারভার নামে নরওয়ের একটি ওয়েবসাইটে রাশিয়ার মুরমানস্ক নামে একটি জায়গার কাছে তিনটি রুশ নৌ ঘাঁটির কাছে তিমি আটকে রাখার খাঁচার অস্তিত্বের প্রমাণ হাজির করা হয়েছিল রাশিয়া বহুদিন ধরেই সামরিক উদ্দেশ্যে ডলফিনের মত সাগরের স্তন্যপায়ী প্রাণী ব্যবহার করছে। বেশ আগে ব্যারেন্টস অবজারভার নামে নরওয়ের একটি ওয়েবসাইটে রাশিয়ার মারমানস্ক নামে একটি জায়গার কাছে তিনটি রুশ নৌ ঘাঁটির কাছে তিমি আটকে রাখার খাঁচার অস্তিত্বের প্রমাণ হাজির করা হয়েছিল।কেন এসব খাঁচা, এগুলোর ভেতর তিমি কেন - এ নিয়ে রুশ সামরিক বাহিনী কখনই মুখ খোলেনি । রুশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ভিক্টর বারানেটস রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে রাশিয়ার উত্তরে বিজ্ঞানীরা “বেলুগা তিমি ব্যবহার করে বেসামরিক তথ্য সংগ্রহ করে, এর পেছনে সামরিক কোনো উদ্দেশ্য নেই।“ তিমিটির শরীরে রাশিয়ার তৈরি এই চিপটি বেল্টে দিয়ে লাগানো ছিল। ‘ভালদিমির‘ নামের সাদা তিমিটির উদ্ধারের ঘটনা নরওয়েতে দারুণ আগ্রহ তৈরি করেছিল। বিশেষ করে এটি গুপ্তচর হতে পারে এই ধারণা থেকে এটির একটি নামও দেওয়া হয়। নরওয়েজিয়ান ভাষায় তিমিকে বলা হয় ভাল। তার সাথে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নামের অংশবিশেষ যোগ করে তিমিটির নাম দেয়া হয় - ভালদিমির। উদ্ধারের কয়েকদিনের মধ্যে এটির আশ্রয়স্থল হয় হ্যামারফেস্ট নামে ছোটো একটি উপকূলীয় শহরের পোতাশ্রয় এলাকায়। প্রথম কয়েক সপ্তাহ তার খাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা হয়েছে। নিজে শিকার করে থেকে পারছিলনা। তখন ভালদিমিরকে বাঁচাতে নরওয়ের মৎস্য বিভাগ বিশেষ একটি কর্মসূচি নেয়। সিদ্ধান্ত হয় তিমিটির ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখা হবে , তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্পাই চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা মার্কিন চলচ্চিত্রকার রেজিনা কসবি, যিনি বছরের কিছু সময় নরওয়েতে থাকেন - পুরো বিষয়টির মধ্যে চলচ্চিত্র তৈরির সম্ভাবনা দেখতে পেলেন। তিমিটিকে নিয়ে একটি শর্ট ফিল্ম তৈরির পরিকল্পনা নেন, কিন্তু এখনো সে কাজ বেশিদূর এগোয়নি। “আমি প্রথমে যা মনে করেছিলাম আসল কাহিনী ঠিক তেমন নয়,“বিবিসিকে বলেন ঐ চলচ্চিত্রকার। “আমার ধারণা ছিল গল্পটি এমন হবে যে রুশ সামরিক বাহিনীর কব্জা থেকে একটি তিমি পালিয়ে এসেছে। ভেবেছিলাম এক সপ্তাহের মধ্যে আমি ছবিটি বানিয়ে ফেলবো। কিন্তু এখন দেখছি তিমিটির জন্য কারো তেমন কোনো আগ্রহ নেই।“ এর পর থেকেই রেজিনা কসবি তিমিটির কল্যাণ এবং নিরাপত্তার জন্য প্রচারণা শুরু করেন। বেলুগা তিমি বেশ সামাজিক একটি প্রাণী। মানুষ বা অন্য প্রাণীর কাছাকাছি ঘেঁষতে চায় তারা। ফলে, তাদের বিপদের ঝুঁকিও তাতে বাড়ে। মিস কসবি মনে করেন, সে কারণে ভালদিমিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তার সাথে যোগ দেন তিমি সংরক্ষণে উৎসাহী বেশ কিছু লোক। তারা ওয়ান-হোয়েল নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন। নৌকার প্রপেলার, মাছ ধরার জাল, এবং অতি উৎসাহী পর্যটক - এগুলো তিমির জন্য বড় ঝুঁকি। ফলে তারা ভালদিমিরের জন্য একটি অভয়াশ্রম তৈরির জন্য আন্দোলন শুরু করেন। সম্ভব হলে সেটিকে গভীর সমুদে ছেড়ে আসার কথাও তারা বলছেন। মিস কসবি এ নিয়ে প্রখ্যাত মার্কিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রাণী অধিকার কর্মী রিক ও‘ ব্যারির কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। রিক ও‘বেরি একসময় ডলফিন প্রশিক্ষক ছিলেন। তারপর গত কয়েক দশক ধরে তিনি জলজ প্রাণীকে আটকে রাখার বিপক্ষে আন্দোলন করছেন। জাপানের তাইজিতে ডলফিন হত্যা নিয়ে তৈরি ‘দি কোভ‘ নামে যে প্রামাণ্যচিত্রটি অস্কার পুরষ্কার পেয়েছে তাতে রিক ও‘বেরির কথা ও তার কাজ স্থান পেয়েছে। “যখনই কোনো ডলফিন বা তিমি হুমকিতে পড়ে, আমার টেলিফোন বেজে ওঠে, “ বিবিসিকে বলেন মি ও‘ ব্যারি। জুলাই ২০০০ সালে রেজিনা কসবির একটি ফোন কল পেয়ে তিনি নরওয়ের উদ্দেশ্যে বিমানে চেপে বসেন। এসে দেখেন ভালদিমিরের দেহে বড় একটি জখম। সম্ভবত কোনো নৌকার ধাক্কায় সেটি হয়েছিল।জরুরী ভিত্তিতে কিছু করার দরকার বলে মি ও‘ ব্যারির মনে হয়েছিল। ভালদিমিরের জন্য অভয়াশ্রম “আমি ভাবলাম তিমিটিকে কোনো ফিয়োর্ডের ভেতর নিয়ে যাওয়া দরকার। “সমুদ্রের সাথে যুক্ত লম্বা এবং সরু জলাশয়কে ফিয়র্ড বলা হয়। নরওয়ের উপকূলে এরকম বহু ফিয়র্ড রয়েছে। মি. ও‘ ব্যারি ভাবলেন এরকম একটি ফিয়র্ডের মুখ বন্ধ করে ভালমিদিরের জন্য নিরাপদ একটি অভয়াশ্রম তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো নরওয়ের সরকারকে রাজী করানো - যে দেশটির তিমি শিকারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কয়েক মাস ধরে মিস কসবি এবং ‘ওয়ান-হোয়েল‘ গোষ্ঠীর সদস্যরা ভালদিমির এবং জখম হওয়া সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য একটি ফিয়র্ডে অভয়াশ্রম তৈরি নিয়ে নরওয়ের সরকারের সাথে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, কমপক্ষে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এক কিলোমিটার প্রস্থের একটি ফিয়র্ডে এই আশ্রয়স্থল তৈরি করা সম্ভব। তেমন একটি ফিয়র্ডের মুখ লোহার জাল দিয়ে বন্ধ করা থাকবে। এবং সেখানে সর্বক্ষণ পাহারা থাকবে । ওয়ান-হোয়েল বলছে নরওয়ের উত্তরে দুটো এলাকা থেকে তাদের পরিকল্পনা নিয়ে ‘গভীর আগ্রহ‘ প্রকাশ করা হয়েছে। এরকম একটি অভয়াশ্রম তৈরি হলে পরিবেশের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে জন্য একটি সমীক্ষার জন্য তহবিল ছাড় করা হয়েছে। “এখন আমরা বলতে পারি যে সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেছে,“ বলেন মিস কসবি। তবে ফিয়র্ড ঘিরে ফেলে এমন অভয়াশ্রমের ধারণা সবাই পছন্দ করছেন না। যেমন, সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞ মি. রিকার্ডসেন বলছেন তিমিটি এখন সুস্থ, এবং আশপাশের মাছের খামার থেকে খাবার শিকার করে খাচ্ছে। “ নরওয়েতে ঐ তিমিটির স্বাধীন বিচরণের ওপর কোনো বাধা নেই," বলেন মি. রি উইগ যিনি উত্তর আটলান্টিক সাগরের স্তন্যপায়ী জীব বিষয়ক কমিশনের একজন পর্যবেক্ষক। “আমি মনে করি এখন যে অবস্থায় তিমিটি রয়েছে, সেটাই তার জন্য সবচেয়ে ভালো।“ মি. রি উইগের মতে, আবদ্ধ একটি ফিয়র্ডের মধ্যে একটি জীবকে আটকে রাখা “নরওয়ের রীতি নয়।“ তিমির জন্য একটি অভয়াশ্রম তৈরির জন্য নরওয়ের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুমোদন লাগবে। নরওয়ের মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে ওয়ার-হোয়েলের পরিকল্পনা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা চলছে, তবে তারা বিশ্বাস করে প্রাণের ঝুঁকি না থাকলে ভালদিমিরকে “তার নিজের মত করে মুক্ত একটি প্রাণী হিসাবে থাকতে দেওয়া উচিৎ।“ তবে মি. ও ব্যারি মনে করেন যে স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে তাতে কার্যত ভালদিমিরকে একটি নি:সঙ্গ জীবন যাপন করতে হবে। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে তিনি ডলফিনের জন্য যে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন সেখানে আটকে রাখা এবং জখম ডলফিনদের এনে রাখা হয়। ঐসব প্রাণী খোলা সমুদ্রে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। অক্ষম মনে করা হলে, ঐ অভয়াশ্রমেই তাদের রেখে দেওয়া হয়। এখন ভালদিমিরের বিশ্রাম এবং খাওয়ার জায়গা আশপাশে সাগরের ভেতর তৈরি মৎস্য খামারগুলোতে। তাদের খামারে ক্ষুধার্ত একটি তিমির বিচরণ খামার মালিকরা পছন্দ করছেন না। মানুষের সাহচর্য এখন ভালদিমিরের খুব পছন্দ। তাদের কাছ থেকে খাবার পায় সে। কিন্তু সেটা তিমিটির জন্য বড় একটি ঝুঁকি। পর্যটকদের সাথে তার ছবি সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হচ্ছে যা নিয়ে তিমি সংরক্ষণ আন্দোলনকারীরা উদ্বিগ্ন। ভালদিমিরের সুরক্ষা এবং কল্যাণের জন্য যারা লড়ছেন তারা মাঝেমধ্যেই তিমিটিকে দেখতে যান। মিস কসবি বিবিসিকে বলছিলেন একদিন তার নৌকাটি চলে আসার জন্য রওয়ানা হলে ভালদিমিরও পেছন পেছন অনেকটা দূর সাঁতরে আসে। বিবিসি বাংলায় আরো খবর:
‘রুশ গুপ্তচর‘ তিমির জন্য খোঁজা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ - তার শাসনামলে ভারতের সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে 'পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র' বলে যে ভারত গর্ববোধ করে - তাদের জন্য এটা উদ্বেগের খবর। সম্প্রতি বেশ কিছু সূচকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থান নেমে গিয়েছে। কি ঘটছে? এ মাসেরই প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজ এক বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে - যার বিষয় ছিল বৈশ্বিক রাজনৈতিক অধিকার ও স্বাধীনতা। এতে ভারতকে 'মুক্ত গণতন্ত্রের' তালিকা থেকে নামিয়ে দিয়ে 'আংশিক মুক্ত গণতন্ত্রের' তালিকায় স্থান দেয়া হয়। গত সপ্তাহেই সুইডেন ভিত্তিক ভি-ডেম ইনস্টিটিউট গণতন্ত্র বিষয়ে তাদের সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ভারত একটি 'নির্বাচন-ভিত্তিক স্বৈরতন্ত্রে' পরিণত হয়েছে। গত মাসেই আরেকটি রিপোর্টে ভারতকে বর্ণনা করা হয় 'ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র' হিসেবে এবং গণতান্ত্রিক সূচকে দুই ধাপ নিচে নেমে দেশটির স্থান হয় ৫৩ নম্বরে। এই রিপোর্টটি প্রকাশ করে ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট। 'দায়ী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি' এসব র‍্যাংকিং-এ গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে অধোগতির জন্য নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় পান এতে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের ভীতিপ্রদর্শন করা হচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিমদের ওপর অনেকগুলো আক্রমণ ঘটেছে। রিপোর্টগুলোতে বলা হয়, এর পরিণতিতে ভারতে রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা কমে গেছে। "বাংলাদেশ ও নেপালের চাইতেও খারাপ" ফ্রিডম হাউস বলছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নাগরিক স্বাধীনতার অবনতি হচ্ছে। তারা আরো বলেছে যে "মুক্ত রাষ্ট্রের উচ্চ কাতার থেকে ভারতের এই পতন" বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। ভি-ডেম বলেছে, মি. মোদীর শাসনকালে "মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তারা আরো বলছে - সেন্সরশিপের ক্ষেত্রে ভারত এখন পাকিস্তানের মতই স্বৈরাচারী, এবং বাংলাদেশ ও নেপালের চাইতেও সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ। ডেমোক্রেসি ইনডেক্স বলছে, কর্তৃপক্ষ গণতন্ত্রকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ায় এবং নাগরিক অধিকারের ওপর 'ক্র্যাকডাউন' হওয়ায় ভারতের র‍্যাংকিংএর অবনতি হয়েছে। এতে বলা হয়, মি. মোদীর নীতিসমূহ ভারতে মুসলিম-বিরোধী অনুভূতি এবং ধর্মীয় সংঘাত উস্কে দিয়েছে, এবং তা ভারতের গণতন্ত্রের কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকারের প্রতিক্রিয়া কী? এতে বিস্মিত হবার কিছুই নেই যে পর পর বেশ কিছু জরিপে ভারতের অবস্থান নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় তা মি. মোদীর সরকারকে বিব্রত করেছে, বিশ্বব্যাপি ভারতের গণতন্ত্রের যে ইমেজ ছিল তার ওপর একটা কালো ছায়া ফেলেছে। ফ্রিডম হাউজের রিপোর্টটির ব্যাপারে ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ভারতের প্রতিষ্ঠানসমূহ মজবুত এবং তার গণতান্ত্রিক রীতিনীতিও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত' এবং যারা তাদের মৌলিক বিষয়গুলোই ঠিক করতে পারেনি তাদের কাছ থেকে ভারতের কোন সদুপদেশ নেবার দরকার নেই। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ভয়ের কবলে 'গণতন্ত্রের উৎসব' চার বিচারকের বিদ্রোহে উত্তাল ভারতের বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের জন্যে কেমন ছিল প্রথম ভারতীয় পত্রিকার লড়াই যে দশ লক্ষণ দেখে বুঝবেন একটি দেশ গণতান্ত্রিক নয় ভারতে ‘মোদী ম্যাজিক’ কি আর কাজ করছে না ফ্রিডম রিপোর্টে ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ এসেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রিপোর্টটিতে যেসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে "তথ্যভিত্তিক নয় এবং বিকৃত।" পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু ভি-ডেমের রিপোর্ট সম্পর্কে একজন বিরোধীদলের এমপিকে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ দেন নি। তিনি বলেন, "যেসব দেশ ভারতকে নিয়ে মন্তব্য করছে তাদের উচিৎ আগে নিজেদের দিকে তাকানো - এবং তার পর ভারতকে নিয়ে মন্তব্য করা।" সবচেয়ে কড়া ভাষায় এসব রিপোর্টের সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। "আপনি গণতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রের বৈপরীত্যকে ব্যবহার করছেন। আপনি সত্য উত্তর চান... একে বলা হয় ভণ্ডামি। কারণ পৃথিবীতে একদল স্বনিয়োজিত মাতব্বর আছে - ভারত যে তাদের অনুমোদন চাইছে না এটা তারা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা যে খেলা চায় তা ভারত খেলতে রাজি নয়" - একটি সংবাদ নেটওয়ার্ককে বলেন মি. জয়শংকর। "কাজে তারাই তাদের নিয়মকানুন বা মানদণ্ড আবিষ্কার করছে, তারাই রায় দিচ্ছে, এবং এমন ভাব করছে যেন এটা এক ধরনের বৈশ্বিক কর্মকাণ্ড।" এসব র‍্যাংকিং কতটা নির্ভরযোগ্য? এটা ঠিক কথাই যে এসব র‍্যাংকিং একটা বৈশ্বিক ব্যাপারই বটে। রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা বিষয়ক ফ্রিডম হাউজের সর্বশেষ বৈশ্বিক রিপোর্টটিতে ১৯৫টি দেশ ও ১৫টি টেরিটরি বা স্বশাসিত অঞ্চলের তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। ভারতের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ জোরদার হয়েছে গণতন্ত্র বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উপাত্ত হাজির করেছে বলে দাবি করে থাকে ভি-ডেম। এতে ২০২টি দেশের ১৭৮৯ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়কালের তথ্য আছে। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের তৈরি গণতন্ত্রের সূচকে ১৬৫টি দেশ এবং দুটি স্বশাসিত অঞ্চলে গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এসব র‍্যাংকিংএর নিয়মকানুন ও মানদণ্ডও আছে। ভি-ডেম বলছে, তারা গণতন্ত্রের বিভিন্ন দিক যাচাই করতে প্রায় ৩ কোটি উপাত্তের উৎস, সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বিদ্বান ব্যক্তি ও একেকটি দেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে থাকে। ইকোনমিস্টের ডেমোক্রেসি ইনডেক্স তৈরি করতে নির্বাচনী ব্যবস্থা বহুত্ববাদ, সরকারের কর্মপদ্ধতি, রাজনৈতিক অংশগ্রহ,ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের মূল্যায়নকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। ফ্রিডম হাউস বলছে, তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে যাতে একেকটি দেশকে তার প্রতিটি রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক অধিকারের সূচকের জন্য পয়েন্ট দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ইয়োনাটান এল মোর্স বলছেন, এটা ঠিক যে গণতন্ত্র যাচাই করার ক্ষেত্রে কাজটা কে বা কারা করছেন তার কিছুটা প্রভাব পড়তেই পারে। ভারতে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৬০ কোটি লোক ভোট দিয়েছে অধ্যাপক মোর্স ভি-ডেমের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলছেন, এ সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠার জন্য নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্র, এবং পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের মূল্যায়নের লক্ষ্যে ভি-ডেম একটি ব্যাপকভিত্তিক প্রশ্নমালা তৈরি করেছে। প্রতিটি দেশের মূল্যায়ন করেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতের পার্থক্য হলে সেক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের কিছু মডেল ব্যবহার করা হয় - যাতে ফলাফলকে আরো বেশি নির্ভরযোগ্য করে তোলা যায়। তা ছাড়া বেশিরভাগ র‍্যাংকিং-এ গণতন্ত্রের কোন একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা চাপিয়ে দেয়া হয় না। বিশেষজ্ঞরা একমত যে একটি 'নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্র' হচ্ছে একেবারেই ন্যূনতম পূর্বশর্ত। ভারতের এই অবনতি কি অস্বাভাবিক? র‍্যাংকিং-এর দিক থেকে দেখতে গেলে বলতে হয়, মানুষের মনে এর আবেদন যতই দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন - সারা পৃথিবীতেই আসলে গণতন্ত্র এখন নানা সমস্যায় আক্রান্ত। ভি-ডেমের মতে, পৃথিবীর ৮৭টি দেশে এখন নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র চালু রয়েছে - এবং এই দেশগুলোতে বাস করে পৃথিবীর ৬৮% মানুষ। সংস্থাটি বলছে, লিবারেল বা উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা এখন কমে যাচ্ছে, এবং এসব দেশে বাস করে পৃথিবীর মাত্র ১৪% মানুষ। ফ্রিডম হাউসের মতে পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশেরও কম লোক এখন 'মুক্ত' দেশে বাস করে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে এই সংখ্যা এখন সবচেয়ে কম। তা ছাড়া ২০২০ সালের ডেমোক্রেসি ইনডেক্সে দেখা যায়, ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে মাত্র ৭৫টি- অর্থাৎ মাত্র ৪৪.৯% দেশকে এখন গণতান্ত্রিক বলে মনে করা হয়। অধ্যাপক মোর্স বলছেন, "কিন্তু যা অনেককে উদ্বিগ্ন করছে তা জলো প্রতিষ্ঠিত দেশে গণতন্ত্রের ভেঙে পড়া। হাঙ্গেরি এবং তুরস্কের পর ভারত হচ্ছে এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত।" "বিশেষ করে ভারতের দৃষ্টান্তটি চোখে পড়ার মত - কারণ এর জনসংখ্যার আকার এবং বহু-জাতিগোষ্ঠীর গণতন্ত্রের একটি সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে তার অতীতের রেকর্ডের নিরিখে।" তিনি বলছেন, গণতন্ত্রের ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে অন্য কিছু দেশে যা হয়েছে, ভারতে সেই একই প্যাটার্ন অনুসৃত হচ্ছে। "পপুলিস্ট নেতারা প্রথমে আমলাতন্ত্র বা বিচারবিভাগীয় নিয়োগগুলোকে রাজনীতিকীকরণ করার মত পদক্ষেপ নিয়ে রাষ্ট্রের 'গেটকিপারদের' কব্জা করে ফেলে। তার পর তারা মিডিয়া সেন্সরশিপ, একাডেমিক স্বাধীনতা সীমিত করা বা নাগরিক সমাজকে সংকুচিত করার মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করে।" "পপুলিস্ট নেতারা প্রায়ই সমাজে এমন মেরুকরণ ঘটায় যে রাজনৈতিক বিরোধিতা বৈধতা হরণ করা হয়, তাদেরকে প্রায়ই রাষ্ট্র বা জনগণের শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর পর যা হয় তা হলো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নষ্ট করা বা সরাসরি জালিয়াতির পথ নেয়া।" এসব র‍্যাংকিংএ কি ডানপন্থী সরকার-বিরোধী পক্ষপাত দেখা যায়? শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড ভারত সম্পর্কে ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত ভি-ডেমের ডেমোক্রেসি ইনডেক্সের মূল্যায়ন পরীক্ষা করে দেখেছেন। তিনি দেখেছেন ১৯৭০এর দশকে সাবেক কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন নাগরিক অধিকার স্থগিত করেছিলেন - তখন ভারতের র‍্যাংকিং এখনকার চাইতে খারাপ ছিল। দেখা যায় যে ১৯৫০ বা ৬০এর দশকের চাইতে ১৯৯০এর দশক অপেক্ষাকৃত বেশি গণতান্ত্রিক ছিল - এবং সেই দশকটিতে ছিল কংগ্রেসেরই প্রাধান্য। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের সময়ও ভারতের র‍্যাংকিংএর তেমন কোন অবনতি হয়নি। ভারতে সাংবাদিকদের ওপরে আক্রমণ বেড়েছে অধ্যাপক স্ট্যানিল্যান্ড বলছেন, "সুতরাং সরাসরি দক্ষিণপন্থা-বিরোধী পক্ষপাত আছে এমনটা বলা যায় না। এমনকি ২০০৫ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট ক্ষমতাসীন থাকার সময়ও সূচকে ভারতের অবস্থান সামান্য নেমে যেতে দেখা যায়।" "এসব র‍্যাংকিংএর সাথে একমত হতে কেউ কাউকে বাধ্য করছে না" - বলেন অধ্যাপক স্ট্যানিল্যান্ড - "তবে এমন মনে করার অনেক কারণ আছে যে এগুলোতে বৃহত্তর চিত্র বা গতিপথ ধরা পড়ে।" এসব র‍্যাংকিং কতটা কাজে লাগে? ইয়েল-এনইউএস কলেজের রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক রোহান মুখার্জি বলছেন, এসব র‍্যাংকিং নানা গবেষণায়, এবং বৃহত্তর প্রবণতা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কাজে লাগে। গণতন্ত্র বলতে আমরা কি বুঝি এবং গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করছেন - এসব প্রশ্নেও এরকম র‍্যাংকিংগুলো কাজ দেয়। অধ্যাপক মুখার্জি বলছেন, একাডেমিক ক্ষেত্রের বাইরের লোকেরা এ ব্যাপারটা পছন্দ করেন না যে একদল গবেষণা সহকারী ও বিশেষজ্ঞ মিলে একটি দেশকে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের তকমা দিচ্ছে - যার সাথে সেই দেশের কোটি কোটি মানুষ হয়তো একমত নয়। তার কথায়, "আসলে এটা একটা 'একাডেমিক' বিতর্ক - যা মানুষের জীবনের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার থেকে অনেকটা দূরের ব্যাপার।... কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তাদের অভিজ্ঞতা সঠিক নয় - কিন্তু এতে আবার এই সংযোগহীনতারও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।" বিবিসি বাংলায় আরো খবর: নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে ডান বাম উভয়ের প্রতিবাদ 'মওদুদ আহমেদ ছিলেন একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ' বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের যে তিন ঝুঁকি ছয় অভিন্ন নদী নিয়ে ঢাকা-দিল্লী বৈঠক আজ, নদীগুলোর কী অবস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পর্যালোচনা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ভারতের গণতন্ত্রকে কেন 'নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের' স্তরে নামিয়ে দিয়েছে কিছু সূচক
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর যে যন্ত্রটির কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে তা হলো ভেন্টিলেটর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এই যন্ত্রটি ‍খুবই জরুরি। আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর অবস্থা এমন এক ধাপে চলে যেতে পারে যে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে এই যন্ত্রটি ছাড়া। বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার জন। সমস্যা হচ্ছে, সারা পৃথিবীতেই এরকম একটি কঠিন সময়ে এই ভেন্টিলেটরের প্রচণ্ড অভাব পড়েছে। আমেরিকাসহ ইউরোপের উন্নত ও ধনী দেশগুলোতেও যথেষ্ট সংখ্যায় এই যন্ত্রটি নেই। একারণে ইতালিতে, যেখানে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিক, সেখানেও এই যন্ত্রটির অভাবে বহু মানুষকে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। সেখানে ডাক্তারদেরকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কোন রোগীকে এই যন্ত্রটি দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল থেকেও বলা হচ্ছে যে শুধুমাত্র ভেন্টিলেটর না থাকার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার জরুরি ভিত্তিতে ভেন্টিলেটর কিনতে চাইলেও সরবরাহের অভাবের কারণে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এই যন্ত্রটি কেনা সম্ভব হচ্ছে না। একটি টিউবের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে ভেন্টিলেটর সেকারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ধনী দেশগুলোর সরকার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো করে ভেন্টিলেটর উৎপাদনের কথা বিবেচনা করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন যেভাবে জরুরী ভিত্তিতে স্পিটফায়ার যুদ্ধবিমান তৈরি করেছিল, এখন ঠিক একইভাবে ভেন্টিলেটর উৎপাদনের কথাও বলা হচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইতোমধ্যেই গাড়ি নির্মাণকারী ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন জরুরী ভিত্তিতে ভেন্টিলেটর উৎপাদনের জন্য। নিসান, রোলস রয়েস, ফোর্ড, ম্যাকলারেন, টেসলা, হোন্ডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে তারা এই যন্ত্রটি উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিও-ও সতর্ক করে দিয়েছেন যে আগামী দশদিনের মধ্যে হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটরসহ চিকিৎসা সামগ্রী ফুরিয়ে গেলে পরিস্থিতি মারাত্মক দিকে চলে যেতে পারে। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে হ্যামিলটন মেডিকেল নামের একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী বলেছেন, বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের হাতে যথেষ্ট সংখ্যক ভেন্টিলেটর নেই। হ্যামিলটন মেডিকেল সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানি এবং সারা বিশ্বে যেসব প্রতিষ্ঠান ভেন্টিলেটর তৈরি করে তাদের মধ্যে এটি শীর্ষস্থানীয়। “ইতালিতেও আমরা সেটা দেখেছি, দেখেছি চীনেও। আমরা ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা দেখেছি,” বলেন তিনি। ভেন্টিলেটর কী? করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে, কখনও কখনও এমন অবস্থা তৈরি হয় যে রোগী ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারে না। এসময় রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে রোগীর মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গও অচল হয়ে যেতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভেন্টিলেটর। বর্তমান করোনাভাইরাস সঙ্কটে আরো বহু ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এই যন্ত্রটি তখন নাক কিম্বা মুখের ভেতর দিয়ে অথবা গলায় ছিদ্র করে লাগানো টিউবের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের কিরে নিয়ে আসে। কম্পিউটারের সাহায্যে এই যন্ত্রটি পরিচালনা করা হয়। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরস্থিতি গুরুতর হলে রোগীর নিউমোনিয়া হয়, ফলে তার ফুসফুসের নিচে অংশ পানি জমে যায় এবং তখন শ্বাস গ্রহণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভেন্টিলেটর ছাড়া ওই রোগী তখন আর শ্বাস নিতে পারে না। যন্ত্রটি তখন ফুসফুস থেকে পানি ও রোগীর দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে নিয়ে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে কৃত্রিমভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। রোগী যতক্ষণ পযন্ত স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস গ্রহণ করতে না পারে ততক্ষণ ভেন্টিলেটর লাগানো থাকে। এসময় তিনি কথা বলতে পারেন না, মুখ দিয়ে কিছু খেতেও পারেন না। সেসময় তাকে টিউবের সাহায্যে খাবার দেওয়া হয়। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পাঁচ শতাংশকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা দিতে হয়েছে এবং তাদের অর্ধেক সংখ্যক রোগীকে কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করতে হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে পানি জমে গেলে রোগী ভেন্টিলেটর ছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে না বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে যত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন তার ১০% থেকে ২০% রোগীকে আইসিইউতে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হতে পারে। এবং তাদের অনেকেরই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হবে এই ভেন্টিলেটরের। ভেন্টিলেটরের সংখ্যা কতো নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত হাসপাতালে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ভেন্টিলেটর আছে। জরুরী সময়ের জন্যে মজুত রাখা আছে আরো প্রায় ১২,৭০০ ভেন্টিলেটর। স্বাভাবিক সময়ে ভেন্টিলেটরের এই সংখ্যা যথেষ্ট কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সঙ্কটে এর চাইতেও আরো বহু ‍গুণে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন। আমেরিকান হসপিটাল এসোসিয়েশনের হিসেবে বিশ্ব-মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার মানুষের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হতে পারে। আর ব্রিটেনে এনএইচএসের হিসেবে সারা দেশে আছে ছয় হাজারের মতো ভেন্টিলেটর। তার মধ্যে বড়দের জন্য পাঁচ হাজার আর শিশুদের জন্যে আছে ৯০০। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে তাদের আরো ২০,০০০ ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। জার্মানির মিডিয়াতে বলা হচ্ছে, দেশটিতে বর্তমানে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ২৫,০০০। সরকার স্থানীয় একটি কোম্পানি ড্র্যাগারকে আগামী বছরের মধ্যে আরো ১০,০০০ ভেন্টিলেটর তৈরি করতে বলেছে। ইটালির সংবাদ মাধ্যমেও বলা হচ্ছে যে দেশটির হাসপাতালগুলোতে এই যন্ত্রটির বড় রকমের ঘাটতি রয়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে পশুর জন্যে তৈরি ভেন্টিলেটর মানুষের জন্যে কাজ করে কীনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। করোনাভাইরাস এলো কোত্থেকে, ছড়ালো কিভাবে- যতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব করোনাভাইরাস: শিশুদের কি বন্ধুদের সাথে খেলতে দেওয়া উচিৎ? করোনাভাইরাস গাইড: আপনার প্রশ্নের উত্তর কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় করোনাভাইরাস: লক্ষণ দেখা দিলে আলাদা থাকতে হবে কীভাবে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন যে পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে করোনাভাইরাস ইতালিতে সিয়ার নামের যে কোম্পানি ভেন্টিলেটর তৈরি করে তাদেরকে সহায়তা করার জন্যে সরকার ওই কোম্পানিতে প্রকৌশলী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দক্ষ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা পৃথিবীতে করোনাভাইাসের সংক্রমণ যে হারে ও যতো দ্রুত গতিতে বাড়ছে - তাতে ভেন্টিলেটরের এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। ভেন্টিলেটর কীভাবে তৈরি করা হয় জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর যন্ত্রটি খুবই জটিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকশো যন্ত্রাংশ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানি আলাদা আলাদাভাবে এসব যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে থাকে। ফলে ভেন্টিলেটরের উৎপাদন হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক ছোট্ট একটি কোম্পানি অ্যালাইড হেলথকেয়ার প্রডাক্টস, যারা বছরে এক হাজার ভেন্টিলেটর তৈরি করে, তার প্রধান নির্বাহী আর্ল রেফসলান্ড বলেছেন, “এসব ভেন্টিলেটর মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আমরা তো গাড়ির চাকা তৈরি করছি না। ফলে এর উৎপাদনে সময় লাগবে।” তাই কতোটা দ্রুততার সঙ্গে এই যন্ত্রটি তৈরি করা সম্ভব হবে তা নিয়ে অনেক কোম্পানি সংশয় প্রকাশ করেছে। কারণ এই যন্ত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়। এটি তৈরি করতে দক্ষতার প্রয়োজন। তৈরি করা হলেও সেটিকে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সেটি বাজারে ছাড়া হয়। ধারণা করা হয় একটি ভেন্টিলেটর তৈরি করে বাজারে ছাড়তে সাধারণত দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে। এর দামও হয় প্রচুর। একটি ভেন্টিলেটর কিনতে খরচ হয় পায় ৫০ হাজার ডলার। একারণেই অনেক কোম্পানি যাকে তাকে দিয়ে ভেন্টিলেটর তৈরির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
করোনাভাইরাস: আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সারা বিশ্বে যথেষ্ট ভেন্টিলেটর কি আছে?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০২ সালের ২০শে জুন। সেদিন খবরের কাগজ দেখে পাঠকদের অনেকেই চমকে উঠেছিলেন। আচমকা আসা ওই খবরটির জন্য অনেকেই হয়তো একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। বিভিন্ন খবরের কাগজে বড় বড় হরফে - কোথাও লাল কালি দিয়ে - শিরোনাম হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপর আস্থা নেই খোদ তাঁর দল বিএনপির সংসদ সদস্যদের। ঘটনা শুধু তাই নয়, বিএনপির সংসদীয় দলের যে বৈঠক আগের দিন থেকে শুরু হয়েছিল, সেই বৈঠকে অনেক সংসদ সদস্য দাবী তোলেন যে রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করুন। অন্যথায় তাকে ইমপিচ করার হুমকি দেন তাঁরা। বিএনপি সংসদীয় দলের সভা শুরু হয়েছিল ১৯শে জুন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর উপস্থিতিতে বিএনপি'র নবীন সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকে তাতে সমর্থন দেন, আবার নীরবও থেকেছেন অনেকে। ওই সভায় তাদের ক্ষোভের বিষয় ছিল মূলত দু'টি। প্রথমতঃ রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী কর্তৃক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না যাওয়া, আর দ্বিতীয়তঃ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা। এ খবরের পরেই রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবার জন্য মনস্থির করেন বি চৌধুরী। তখনকার খবরের কাগজ সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন স্থানীয় সরকার উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সভায় এ সংক্রান্ত আলোচনার সূত্রপাত করেন। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই সভায় বিএনপির ১৫ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য দিলেও সবাই একই সুরে কথা বলেছেন। আলোচনার সময় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ আনা হয়, সেগুলোর একটি হচ্ছে - তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার মুন্সিগঞ্জ সফরের সময় তাকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করেন রাষ্ট্রপতির ছেলে মাহী বি. চৌধুরী, যিনি সেখানকার একটি আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথম আলোর এক খবরে বলা হয়, সংসদীয় দলের সভায় বিএনপির একজন সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "প্রেসিডেন্টের পুত্র বিরোধীদলীয় নেত্রীর জন্য তোরণ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু আমরা যদি এ ধরণের তোরণ নির্মাণ শুরু করি তাহলে কেমন হবে?" সংবাদ মাধ্যমে ওই সভার খবর প্রকাশের পরপরই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। আরো পড়ুন: 'অযথা চাপ' তৈরি করছিল বিকল্পধারা: বিএনপি মহাসচিব বিএনপি কেন যোগ দিল আরো একটি জোটে বিএনপির সাথে অন্যদের 'ঐক্য' আটকে আছে যে কারণে এ খবরটি অনেকটা আকস্মিকভাবে এসেছিল এর পরদিন বিএনপির সংসদীয় দলের সভা শেষে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে সর্বসম্মতিক্রমে আহবান জানানো হয়। সেদিন তৎকালীন চীফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিলো, "১৯ এবং ২০শে জুন দলের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরে এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বিএনপি সংসদীয় দল মাননীয় প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপরে আস্থা হারিয়েছে বিধায় তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহবান জানানো হচ্ছে।" ২১শে জুন সবগুলো খবরের কাগজে প্রধান শিরোনাম হয় যে রাষ্ট্রপতি আজ পদত্যাগ করবেন। এর আগের দিন সংসদীয় দলের সভা চলার সময় রাষ্ট্রপতির ছেলে এবং সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরী বৈঠক থেকে বেরিয়ে টেলিফোনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সভার মনোভাব সম্পর্কে জানিয়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মাহী বি. চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, "আব্বা, তোমার পক্ষে কথা বলার কেউ নেই, তোমার পদত্যাগ করাই ভালো।" একই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, "রাষ্ট্রপতি দলের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন, তা ক্ষমাহীন ব্যাপার। ভুলেরও একটা মাত্রা আছে। তিনি সে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন।" বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপর বিএনপির ক্ষোভের নেপথ্যে মাত্র সাত মাস সাত দিনের মাথায় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে কেন বিদায় নিতে হয়েছিল, তার নানাবিধ কারণ উল্লেখ করে তখন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিদায়ের পর বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। যেসব কারণের কথা ওইসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে: * জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন না করা। * রাষ্ট্রপতির বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা। * বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুন্সিগঞ্জে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলে এবং সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরীর তোরণ নির্মাণ। * রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন বক্তব্যে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' ব্যবহার না করা, কারণ 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' বিষয়টি বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ধারণ করে। * ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমদকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা। অধ্যাপক আফতাব আহমদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতর অনুমোদন করেছিল। রাষ্ট্রপতি সেই ফাইলে স্বাক্ষর না করায় পরবর্তীতে আফতাব আহমদকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগমকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। * রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন 'বাংলাদেশ টেলিভিশনে' রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বেশি সময় পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন বিএনপির কিছু নেতা। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কভারেজ কমিয়ে দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিটিভিকে বলা হয়েছিল - এমন খবর সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরণের ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। * তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য এক মাস আমেরিকায় অবস্থান করে দেশে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি কোন খোঁজ-খবর নেননি। * দলের মনোনীত হয়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মি. চৌধুরীর নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়া। * রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ব্যয় বাড়ানো। * সেনাবাহিনীসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন রাষ্ট্রপতি। * রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বাইরে অধিক সংখ্যক জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া। * বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন নিয়ে সরকারের একটি মহল থেকে আপত্তি এলে তা পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তোলে। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, "আমি রাষ্ট্রপতি হবার পরে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে আবেদন জানালো আমি যেন চ্যান্সেলর হিসেবে সেখানে ডিগ্রীগুলো দিতে যাই। আমি সেগুলো করেছি কিছুদিন পরে, একজন মন্ত্রী আমার কাছে এলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে বললেন যে আমি যেন এত বেশি এক্সপোজড না হই অর্থাৎ এ ধরনের অনুষ্ঠান যেন আমি না করি।" বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন্তব্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বিএনপির সিনিয়র নেতা সাইফুর রহমান বলেন, স্রষ্টার সাথে সৃষ্টি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। কিন্তু তিনি (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) জিয়াউর রহমানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মি. রহমান মন্তব্য করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পদত্যাগের এক সপ্তাহ পর খালেদা জিয়া বক্তব্য। বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র নেতা কর্নেল (অব:) অলি আহমদ মন্তব্য করেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যেতে হবে, নইলে তাঁর বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপির নেতা আব্দুল মতিন চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা লিখেছে, "আমি আগেই বলেছিলাম তাকে প্রেসিডেন্ট বানানো ঠিক হবে না। আমার কথা ফলেছে।" এছাড়া বিএনপি নেতা ও তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদাও রাষ্ট্রপতির সমালোচনায় সরব ছিলেন। পদত্যাগের পর বদরুদ্দোজা চৌধুরী কী বলেছিলেন? বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেবার পর বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, সরকারের সাথে তার একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করেন যে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে কেউ কোন ব্যাখ্যা নেয়নি। মি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, "একজন সিনিয়র মন্ত্রীকে তো পাঠানো যেতো আসল ঘটনা জানার জন্য। আমি নিজেও দুবার প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেছিলাম। কিন্তু কোন কথা হয়নি।" বিএনপির সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে বদরুদ্দোজা চৌধুরী উল্লেখ করেন। পদত্যাগের পর বি চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, যদি তিনি পদত্যাগ না করতেন, তাহলে তাকে সংসদে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা যেতো না। মি. চৌধুরী বলেন যে তিনি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, "প্রথম কথা আমি দলের বিরুদ্ধে কোন কাজ করি নাই, আর দ্বিতীয়তঃ আমি তো দলে ছিলামই না! আমি তো নির্বাচনের আগেই পদত্যাগ করে এসেছি, সুতরাং আমি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেভাবে কাজ করা উচিত ছিলো সেভাবেই কাজ করেছি।" পদত্যাগের পর মি. চৌধুরী সাংবাদিকদের সাথে যে কথা বলেন, সেখানে তিনি নানা বিষয় তুলে ধরেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা প্রসঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, "মরহুম জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা সম্পর্কে আমি আমরা বাণীতে বলেছিলাম। আমি তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা সম্পর্কে বলেছি। এ ঐতিহাসিক ভূমিকা বলার ক্ষেত্রে দুটো বিষয় আছে। একটি ঘোষক এবং অপরটি যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে যুদ্ধ করা। আমি বরং অনেক বিস্তারিত বলেছি। আর এক কথা বারবার বলতে হবে কেন?" বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করতে চাননি খালেদা জিয়া ২০০১ সালে অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ছিনতাইকারী ধরে পুরস্কার পেলেন ঢাকার যে তরুণী ৩২ কিলোমিটার হেঁটে কাজে যোগদান, তারপর গাড়ি উপহার প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে মন্তব্য করায় আলোচনায় রাষ্ট্রপতি কেন বাংলাদেশের সিগারেটের বাজারে ঢুকছে জাপান রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে বেছে নিয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেও মেয়াদ শেষে সাহাবউদ্দিন আহমেদকে আরো ছয়মাস রাষ্ট্রপতি রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়। কিন্তু তিনি ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হবার পর বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনি এতে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল। মি. চৌধুরী অনেকটা প্রকাশ্যে রাষ্ট্রপতির হওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং আরো কিছু সিনিয়র নেতা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাঁর বিষয়ে অনাগ্রহী ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুতসই কোন প্রার্থী না পাওয়ায় অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বেছে নিতে বাধ্য হন খালেদা জিয়া - এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অধ্যাপক চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে ছাপিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন কোন কোন বিএনপি নেতা। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিদায়ের পর খালেদা জিয়ার বক্তব্যে তাঁর সম্পর্কে সমালোচনা এবং ক্ষোভের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০০২ সালের ২৯শে জুন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যে যত বড়ই হোক না কেন, ষড়যন্ত্র করে কেউ পার পাবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের শেকড় কেটে দেয়া হয়েছে।
যেসব কারণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সরে যেতে হয়েছিল
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি তার সমর্থকদের সামনে ভাষণ দিচ্ছেন ০৩/০/২০২১ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১২টির মত আবেদন হয়েছে। আবেদনগুলোতে অভিযোগ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে সংশোধিত সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট হয়ত সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত দিতে পারে। কিন্তু আদালতের রায়ে কি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে? অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করছেন, নেপালে নতুন একটি রাজনৈতিক সঙ্কটের যে সূচনা হয়েছে, আদালতের রায়ে তার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কাঠমান্ডুতে সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক কমল দেব ভট্টরাই মনে করেন, ২০১৭ সাল থেকে গত তিন বছর ধরে নেপালের সরকার এবং রাজনীতিতে বিরল যে স্থিতিশীলতা চলছিল সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তা চরম হুমকিতে পড়েছে। “ঘটনা কোন দিকে মোড় নেবে এখনই তা বলা মুশকিল, কিন্তু নেপাল যে আবারো নতুন একটি অস্থিতিশীল রাজনীতির আবর্তে পড়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই,'' মি ভট্টরাই বিবিসি বাংলাকে বলেনG ''আদালত যে রায়ই দিক না কেন তাতে এই সঙ্কটের সুরাহা হবে বলে মনে হয়না,“ তিনি বলেন। পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার প্রতিবাদে কাঠমান্ডুর রাস্তায় বিক্ষোভ, ০১/০১/২০২১ কমল দেব ভট্টরাই বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি কে পি অলির সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে তার নিজের দল নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের বড় একটি অংশ এবং প্রধান বিরোধী দলগুলো হয়তো মধ্যবর্তী নির্বাচন বয়কট করবে। আর যদি সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়, তাহলে মি অলির বিরুদ্ধে তার নিজের দলের একটি অংশই হয়তো অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে। “সুতরাং রায় যেটাই হোক হোক না কেন সঙ্কট তাতে মিটবে বলে আমি মনে করিনা,“ বলেন মি. ভট্টরাই। ক্ষমতাসীন দলে ভাঙন নেপালের নতুন এই রাজনৈতিক সঙ্কটের মূলে রয়েছে ক্ষমতাসীন নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টির দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব যা সাম্প্রতিক সময়ে চরমে পৌঁছেছে। “আপনি এখন পরিষ্কার বলতে পারেন নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টি ভেঙ্গে গেছে। মীমাংসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে সঙ্কটের আশু মীমাংসাও এখন সম্ভব নয়,“ বলেন কমল দেব ভট্টরাই। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: রোগীরা গরীব, তাই প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার হাসপাতাল বিল মওকুফ ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা বলছেন নোয়াখালীর সেই আ. লীগ নেতা কাতারের সাথে তিক্ত বিরোধের নিষ্পত্তি করছে সৌদি আরব আড়াই বছর ধরে ঢাকা মেডিকেলে মার্কিন নাগরিকের লাশ ধর্ম নিয়ে সংশয় শেষে গতি হলো চাকমা কিশোরীর মরদেহের নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টির বিদ্রোহী নেতা পুষ্পা প্রচন্দ দাহাল নেপালের প্রধান যে দুই মাওবাদী দল সশস্ত্র আন্দোলন করে রাজতন্ত্র উৎখাত করেছিল এবং পরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভিন্ন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করে, তারাই এখন পরস্পরের প্রধান বৈরি হয়ে উঠেছে। দু'হাজার সতের সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কে পি অলির দল সিপিএন-ইউএমএল এবং পুস্পা প্রচন্দ কমল দাহালের সিপিএন (মাওয়িস্ট সেন্টার) একটি নির্বাচনী মোর্চা তৈরি করে।। দু'শ পচাত্তর আসনের পার্লামেন্টে মি অলির দল সবচেয়ে বেশি ১২১টি আসন জিতলে পুষ্পা দাহালের সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেন।পরপরই মূলত চীনের চেষ্টায় এই দুই মাওবাদী দল একত্রিত হয়ে নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টি (সিপিএন) নামে অভিন্ন দল তৈরি করে। মি অলি এবং মি দাহালের মধ্যে তখন চুক্তি হয় দলে এবং সরকারে তাদের ক্ষমতা সমানভাবে ভাগাভাগি হবে। কিন্তু মি. দাহাল, যিনি প্রচন্দ নামে বেশি পরিচিত, বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করছেন, মি. অলি তার কথা রাখেননি, এবং দলে ও সরকারে একচ্ছত্র প্রাধান্য তৈরির চেষ্টা করছেন। সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত জনসভায় পুস্পা কমল দাহাল। অনেক পর্যবেক্ষকের ধারণা যে মি দাহাল এবং তার অনুগতরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই প্রধানমন্ত্রী অলি সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছেন। সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও নেপালের অন্যত্র হাজার হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ তোয়াক্কা না করে মিছিল, সমাবেশ করছে। রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা বা নেপালকে আবারো হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার পক্ষের দল এবং গোষ্ঠীগুলোও এই সুযোগে সরব হয়েছে। তারাও এখন নতুন করে বিক্ষোভ জমায়েত করছে। চীনের উদ্বেগ নেপালে এই অস্থিরতার দিকে নেপালিদের যতটা নজর তাদের যতটা উদ্বেগ, প্রতিবেশী দুই জায়ান্ট চীন এবং ভারতের নজর-আগ্রহ তার বেশি ছাড়া কম নয়। কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, মূলত তিব্বতের কারণে চীনের কাছে নেপালের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান বৈরিতার প্রেক্ষাপটে সেই গুরুত্ব বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কে পি অলির সাথে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং পঞ্চাশের দশকের পর তিব্বতি বিদ্রোহীরা নেপালে আশ্রয় নিয়ে বহু বছর ধরে চীন বিরোধী তৎপরতা চালিয়েছে। চীন কোনোভাবেই চায়না নেপালের ভূমি আর কখনো চীন বিরোধী তৎপরতার জন্য ব্যবহার করা হোক। “গত বছরগুলোতে চীন যেভাবে নেপালে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে, কোনোভাবেই তা তারা নষ্ট করতে তারা চাইবে না'', ড আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন। ''নেপালে নতুন অবকাঠামোর প্রায় সবগুলোই এখন চীনের পয়সায় হচ্ছে,“ তিনি বলেন। সে কারণেই চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী উপ মন্ত্রী গুও ইঝাও, যিনি দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেখেন, ২৭ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুতে এসে কম্যুনিস্ট পার্টির দুই বিরোধী পক্ষের মধ্যে মীমাংসার একটি চেষ্টা করেন। চীনা কম্যুনিস্ট পারটির এই নেতাই ২০১৭ সালে নেপালের মাওবাদী দুই দলের মধ্যে ঐক্য তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু এ দফায় বিরোধ মেটাতে কোনো সাফল্য তিনি যে পেয়েছেন তার কোনো ইঙ্গিত নেই। নরেন্দ্র মোদী: ভারত সরকার নেপালে অলি সরকারের বিকল্প দেখতে চায়? কমল দেব ভট্টরাই বলেন, কম্যুনিস্ট পার্টির দুই প্রধান নেতার মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তা সহজে মেটার নয়। ড. মাহমুদ আলী মনে করেন নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টিতে এই ভাঙন চীনের জন্য বড় একটি ধাক্কা। “চীনই দুটো মাওবাদী দলকে একত্রিত করে ক্ষমতা নিতে সাহায্য করেছিল। এটা চীনের জন্য বড় একটি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সাফল্য ছিল,'' তিনি বলেন। ''কম্যুনিস্ট পার্টি ক্ষমতা নেয়ায় গত ক'বছরে নেপালে প্রাধান্য বিস্তারে অনেক সুবিধা চীনের হয়েছে। দলে ভাঙনে সেই সাফল্য অনেকটাই হুমকিতে পড়বে সন্দেহ নেই,“ ড. আলী বলেন। কিন্তু চীনের সামনে এখন বিকল্প কী? ড. আলী বলেন, কম্যুনিস্ট পার্টি ক্ষমতা হারালে যে দল বা জোট পরবর্তীতে নেপালের ক্ষমতায় আসুক তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করবে চীন। “চীনের সরকার এখন যতটা বাস্তববাদী ততটা আদর্শিক নয়। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তারা যে কোনো সরকারের সাথে সম্পর্কে প্রস্তুত। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তারা সেটাই করছে।“ অস্থির নেপালে ভারতের অঙ্ক নেপালের নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে দিল্লিতে মোদী সরকার নিশ্চুপ, কিন্তু ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টিতে ফাটলে ভারত যে খুশী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিরাপত্তা ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দিকে দিয়ে যে প্রতিবেশী দেশটির গুরুত্ব ভারতের কাছে অনেক, গত কয়েক বছরে তার সাথে সম্পর্ক ক্রমেই নষ্ট হয়েছে। এবং সেই সাথে, ভারতের বৈরি একটি দেশের সাথে নেপালের সম্পর্ক ক্রমে উষ্ণ হয়েছে। দিল্লিতে জওহারলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় ভরদোয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারত মনে করে কে পি অলির কম্যুনিস্ট সরকারের কারণেই নেপালের সাথে এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। “মি. অলি ২০১৫ সালে সীমান্ত অবরোধের সূত্র ধরে তখন থেকে নেপালে ভারত বিরোধী মনোভাব উসকে দিয়ে চলেছেন। সুতরাং অলি ক্ষমতা হারালে এবং তার দলে ভাঙন হলে ভারত খুশি,“ ড. ভরদোয়াজ বলেন। নেপালের নতুন যে মানচিত্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে কে পি অলির সরকার সেখানে ভারত নিয়ন্ত্রিত বেশ বড় একটি এলাকাকে নেপালের অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে চরম নাখোশ ভারত। ড. ভরদোয়াজ বলেন, ভারত চাইবে কম্যুনিস্ট পার্টির বদলে নেপালি কংগ্রেসের মত গণতান্ত্রিক কোনো দল বা সমমনা দলগুলোর মোর্চা নেপালে ক্ষমতায় আসুক। “এমনকি প্রচন্দ কম্যুনিস্ট হলেও ভারতের ব্যাপারে অনেক সহনশীল। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দুবার ভারত সফর করেছেন। আমি মনে করি ভারত বিশেষভাবে চায় অলি যেন নেপালে ক্ষমতায় না থাকেন,“ তিনি বলেন। অর্থনৈতিক স্বার্থ এক নম্বর স্বার্থ তবে নেপালে কে পি অলির সরকার ক্ষমতা হারালে বা কম্যুনিস্টরা ক্ষমতার বাইরে চলে গেলেও কি নেপাল থেকে চীনকে পাততাড়ি গোটাতে হবে? কমল দেব ভট্টরাই বলেন, তেমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ যে এক নম্বর স্বার্থ তা নিয়ে নতুন সংবিধান তৈরির সময় থেকেই এক ধরনের ঐক্যমত্য নেপালের রাজনৈতিক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হয়েছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও সেই ঐক্যমত্য ভেঙ্গে পড়বে বলে তিনি মনে করেন না। “সে কারণেই চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদল নেপালের প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলে গেছে। সন্দেহ নেই চীন নেপালের ক্ষমতায় কম্যুনিস্টদের চায় এবং চাইবে, কিন্তু নেপালি কংগ্রেসের সাথে চীনের সম্পর্ক খারাপ - এ কথা বলা যাবেনা। “ কাঠমান্ডুর ক্ষমতায় এখন যারাই আসুন, চীনের লম্বা পকেট অগ্রাহ্য করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হবে।
অগ্নিগর্ভ নেপালে চীন ও ভারতের লাভ-ক্ষতির সমীকরণ
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
জামাল খাসোগজি মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে - যেখানে মি. খাসোগজি নিয়মিত লিখতেন - সাংবাদিক জন ওয়ারিক লিখছেন, আরবি সামাজিক মাধ্যমে জামাল খাসোগাজির সমালোচকের অভাব ছিল না। কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরের সেই বীভৎস হত্যাকাণ্ডের আগের কয়েক মাসে সেইসব পোস্টের ভাষা-মেজাজ বদলে যাচ্ছিল। "খাসোগজি, এটাই তোমার শেষের শুরু" - ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এক পোস্টে লেখা হয়েছিল - "জাতির বিরুদ্ধে তোমার উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের হিসাব রাখা হচ্ছে, খুব শিগগিরই তোমার শাস্তি হবে।" অনেক পোস্টেই তাকে প্রচ্ছন্নভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হতো। "ইনশাল্লাহ, তার মুখোশ খুলে যাবে, আমরা খাসোগজিকে হাতে পাবো" - এ কথা বলা হয় একটি পোস্টে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। একটি পোস্টে দেয়া হয় প্রতীকী অর্থপূর্ণ সৌদি রূপক কাহিনি। এটি একটি ষাঁড়ের গল্প - যে নিজের শিং দিয়ে মাটি খুঁড়ে একটি ছুরি তুলে আনে, আর তার মালিক সেই ছুরিটি দিয়েই তাকে জবাই করে। দৃশ্যত: এর অর্থ - মি. খাসোগজি নিজেই তার হত্যার জন্য কর্তৃপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। তার পর লেখা হয় "একটি ষাঁড় নিজের শিংএ নিজেই গেঁথে গেছে। " প্রভাবশালী সৌদিরা তাকে টুইটারে 'চরমপন্থী', 'অপরাধী' এবং একটি 'গাধা' বলে সম্বোধন করছিলেন। এসব পোস্ট তৎক্ষণাৎ অন্য টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে রিটুইট করা হতো, ছড়িয়ে পড়তো বহু লোকের মধ্যে - যার কোন কোনটি ছিল সৌদি কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্কিত। ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে ঢুকছেন মি. খাসোগজি, এর পর তাকে আর দেখা যায়নি মি. খাসোগজি নিজেও খেয়াল করেছিলেন যে তার ফেলে-আসা মাতৃভূমির দিক থেকে তার প্রতি মনোযোগের পরিমাণ হঠাৎ করেই যেন বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে তিনি যেসব নিবন্ধ লিখতেন - তার সমালোচনা করে যেসব কথাবার্তা লেখা হচ্ছিল তার ভাষা ক্রমশ:ই যেন আরো বেশি কর্কশ হয়ে উঠছে বলে দেখা যাচ্ছিল, দেখা যাচ্ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণ। অনেক বার্তায় জামাল খাসোগজিকে বর্ণনা করা হয় 'আরব ভিলেন' এবং 'দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাকারী' হিসেবে। অন্য কয়েকজন তাকে 'সন্ত্রাসবাদী', 'আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের সমর্থক', সৌদি আরবের প্রধান প্রতিপক্ষ কাতার এবং ইরানের 'বেতনভুক এজেন্ট' বলে বর্ণনা করেন। টুইটারে অন্য অনেক আরবি এ্যাকাউন্ট এসব পোস্ট রিটুইট করে সৌদি আরব এবং উপসাগরের অন্য সব দেশে ছড়িয়ে দিতো। কিছু একাউন্ট দেখেই বোঝা যেতো যে এগুলো ভুয়া স্বয়ংক্রিয় একাউন্ট - যাদের বলা হয় 'বট' এবং এগুলো সামাজিক মাধ্যমে বার্তা ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়, বলছেন জাক শুইটৎস্কি - যিনি এসব পোস্টে সাইবার-ফরেনসিক বিশ্লেষণের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এসব প্রচারণা শুরুর মাস দশেক পরেই খাসোগজিকে হত্যা করা হয়। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: 'জামাল খাসোগজিকে খুন করে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে' খাসোগজি হত্যাকাণ্ড: যে গল্পের শেষ নেই খাসোগজি হত্যাকান্ডের পর তার ছেলে সালাহ সৌদি যুবরাজ সালমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় দায়ে সৌদি আরবে এক বিচারের পর পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ড দেয় হয়। তবে সোমবার আদালত তাদের ভাষায় এক 'চূড়ান্ত রায়ে' সেই দন্ড পরিবর্তন করে তাদের ২০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। কাদেরকে বিচার করা হলো বা দন্ড দেয়া হলো - তা প্রকাশ করা হয় নি। তবে মনে করা হচ্ছে যে এরা সবাই সেই ঘাতক দলটির সদস্য - যারা এই হত্যাকান্ড ঘটাতে বিমানে করে ইস্তাম্বুল গিয়েছিল। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকান্ডের আদেশ দিয়েছিলেন এমন জোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। তবে যুবরাজ সালমান বারবারই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য, কিছু দুর্বৃত্ত কর্মকর্তা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। "খাসোগজি এসব পড়ে প্রতিদিন কাঁদতেন" জামাল খাসোগজি ২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে তার কলামগুলোতে খোলাখুলিই তার দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। সে সময়ই খাসোগজি তার বন্ধুদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন - সৌদি আরবের বিভিন্ন টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে কিভাবে তার উদ্দেশ্যে ঘৃণা, বিদ্রূপ ও হুমকি সম্বলিত নানা মন্তব্য ও বার্তা প্রকাশ করা হচ্ছে। খাসোগজি এতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত এবং তার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। "তিনি প্রতিদিন কাঁদতেন, তিনি বেদনার্ত হয়ে পড়েছিলেন" - জানান তার বিশ্বস্ত বন্ধু ম্যাগী মিচেল সালেম। ওই সময় মি. খাসোগজি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে অবস্থান করছিলেন। প্রতিদিন এই বিদ্বেষমূলক বার্তা এত বেড়ে যাচ্ছিল যে খাসোগজি ভাবতে শুরু করেছিলেন যে লেখা বন্ধ করে দেবেন কিনা - বলেন সালেম। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: জামাল খাসোগজিকে হত্যায় অভিযুক্তদের সাজা বদলে দিল সৌদি আদালত এমবিএসের দিন শেষ? অনেকেই এমন ভাবছেন। কিন্তু পরিস্থিতি কি বলে? খাসোগজি বন্ধুদের বলেছিলেন যে তার বিশ্বাস, অনলাইনে তার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের পেছনে আছেন সাউদ আল-কাহতানি - সৌদি প্রশাসনের মিডিয়া বিষয়ক পরামর্শদাতা। ক্ষমতাধর এই লোকটির কাজ ছিল সৌদি রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষা করা এবং এর সমালোচকদের কণ্ঠ রোধের প্রয়াস চালানো। মি. আল-কাহতানি ২০১৭ সালেই ঘোষণা করেছিলেন - যেসব লোক মোহাম্মদ বিন সালমান এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদের লক্ষ্য করে তিনি একটি "কালো তালিকা" বানিয়েছেন। মি.খাসোগজি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক কলামে লেখেন, আল-কাহতানিই হচ্ছে ভিন্নমতাবলম্বীদের গালাগালি ও ভীতিপ্রদর্শনের সৌদি নীতির বাস্তবায়নের প্রধান ব্যক্তি, এবং তিনি ওই কালো তালিকায় নাম যোগ করার জন্য সৌদিদের আহ্বান জানাচ্ছেন। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী আল-কাহতানি এক বিরাট নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দিতেন যার লক্ষ্য ছিল খাসোগজির সুনাম নষ্ট করা। এজন্য রিয়াদের একটি 'ট্রল ফার্ম'ও ব্যবহার করা হয়েছে - যাতে কিছু সৌদি সরকারি কর্মকর্তা বেনামী টুইটার একাউন্ট ব্যবহার করে মি. খাসোগজির নিবন্ধের সমালোচনা করতেন এবং তার চরিত্র হনন করতেন। তবে এসব তৎপরতা মূলত আরবি ভাষায় চলতো বলে তা পশ্চিমা বিশ্বের চোখে খুব একটা ধরা পড়তো না। এরকম বহু এ্যাকাউন্টই টুইটার পরে বন্ধ করে দিয়েছে। খাসোগজিকে কেন এভাবে টার্গেট করা হয়েছিল? জামাল খাসোগজি ২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে যেসব কলাম লিখছিলেন - তাতে তিনি খোলাখুলিই তার দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এতে আরব বিশ্বে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান খাসোগজি - আর সৌদি নেতারা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। খাসোগজিকে তারা দেখতে থাকেন একজন 'বিপজ্জনক, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী' হিসেবে। সৌদি প্রশাসনের এই অংশটি খাসোগজিকে এক বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে দেখতো। ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লেখাটাও তাদের নাখোশ করেছিল। খাসোগজিকে খুনের সাথে জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হয় তাদের কয়েকজন তার কলামগুলোতে মি. খাসোগজি প্রিন্স সালমানের কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি লেখেন, "যুবরাজ সালমান সৌদি আরবকে আরো উন্মুক্ত ও সহিষ্ণু দেশে পরিণত করার কথা বলেছিলেন, কিন্তু এখন সেখানে গ্রেফতারের পর গ্রেফতার চলছে ... তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তারা কাতারি অর্থ নিতেন এবং কাতার-সমর্থিত এক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন।" তিনি যুবরাজ সালমানের সামাজিক সংস্কারকে পুরোপুরি সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু ভিন্নমতের প্রতি তার অসহিষ্ণুতা ও কণ্ঠরোধ নিয়ে বিতর্কের ডাক দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ডেভি ওটাওয়ের মতে, এটা ছিল মি. খাসোগজির 'সবচেয়ে বড় অপরাধ।' মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস এক রিপোর্টে বলেছিল, মি. খাসোগজি নাকি ওই সময়টায় 'ডেমোক্র্যাসি ইন আরব ওয়ার্ল্ড নাও' বা 'ডন' নামে একটি এ্যাডভোকেসি সংগঠন গড়ে তোলার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন - যার লক্ষ্য ছিল আরব বসন্তের মত আন্দোলনকে সহায়তা দেয়া। অক্টোবর মাসে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পরই মি. খাসোগজি যখন নিখোঁজ হয়ে যান, তার এক সপ্তাহ পর ৯ই অক্টোবর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান - প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সাথে ফোনে কথা বলেছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্ট করেছিল যে সেই ফোনালাপের সময় প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছিলেন, খাসোগজি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন সদস্য। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের শাসকরাই মুসলিম ব্রাদারহুড নামের এই ইসলামপন্থী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনটিকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন। বিশেষ করে 'আরব বসন্ত' আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে। ওই সময় ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে সৌদি আরব। তবে খাসোগজির পরিবার একথা অস্বীকার করেছে। তার পরিবার এক বিবৃতিতে বলে, মি. খাসোগজি কোন বিপজ্জনক ব্যক্তি ছিলেন না এবং তিনি নিজেও একাধিকবার তার ব্রাদারহুডের সদস্য হবার কথা অস্বীকার করেছেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, "মুসলিম ব্রাদারহুডের কিছু লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ব্যাপারে তার সহমর্মিতা থাকলেও - সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থানের প্রশ্নে মি. খাসোগজি কড়া দ্বিমত পোষণ করতেন। " সৌদি আরব যখন ২০১৭ সালে কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তখনও তারা বলেছিল - কাতার ব্রাদারহুডের 'সন্ত্রাসীদের' আশ্রয় দিচ্ছে। সৌদি-মার্কিন সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে এসব প্রচারণা সংবাদদাতারা বলছেন, ওই হত্যাকান্ডের আগের মাসগুলোতে কিভাবে জামাল খাসোগাজিকে অনলাইনে পরিকল্পিতভাবে গালাগালি এবং ভীতিপ্রদর্শন করা হচ্ছিল - তা এখন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখছেন। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা বলছেন, অনলাইনে ওই প্রচারণা হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ করেছে এবং ওয়াশিংটন ও রিয়াদের সম্পর্কের ওপর তা গুরুতর প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। জামাল খাসোগজি খুনের ঘটনা নজিরবিহীন এক সংকট তৈরি করেছে এমবিএসের জন্য সৌদি আরবের সরকার জামাল খাসোগজির হত্যাকান্ড বা সামাজিক মাধ্যমে তার চরিত্র হননের প্রয়াস - এর কোনটির সাথেই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। যদি এটা প্রমাণ হয় যে সৌদি-কর্মকর্তারা সামাজিক মাধ্যমে মি. খাসোগজির বিরুদ্ধে প্রচারণার পেছনে ছিলেন, তাহলে তা সৌদি আরবে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে যেসব আইন-কানুন আছে তা লংঘনের শামিল হবে। মার্কিন কর্মকর্তা ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বাসিন্দাদের হয়রানি করে তাদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইনে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রাপ্ত বিদেশি ভিন্নমতাবলম্বীদের সুরক্ষা দেয়া। এখন, সৌদি আরব হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতাদের অন্যতম এবং প্রতি বছর শত শত কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় বিঘ্নিত হতে পারে অনলাইনে জামাল খাসোগজির বিরুদ্ধে চালানো হুমকি-হয়রানির কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনপ্রণেতা ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর হবার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।তাদের যুক্তি, শুধু জামাল খাসোগজির ক্ষেত্রেই অন্য কিছু সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী থেকে শুরু করে সৌদি নয়-এমন মাার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে সৌদি আরব সীমা লংঘন করেছে। এদের একজন - নিউজার্সির ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য টম মালিনোস্কি বলেন, "মোহাম্মদ বিন সালমানের মত স্বৈরাচারীরা যদি তাদের সমালোচকদের হত্যা বা ভীতিপ্রদর্শন করে পার পেয়ে যায় তাহলে তা হবে খুবই বিপদজনক।ৱ "যেসব সরকার এমন আচরণ করে - তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই আইনে। আমাদের সময় এসেছে এ আইনটি প্রয়োগ করার।" আরো পড়তে পারেন: 'সৌদি যুবরাজই খাসোগজিকে হত্যার নির্দেশ দেন ': সিআইএ সৌদি আরবের সাথে কী 'চাল' চালছে তুরস্ক? খাসোগজি হত্যা: কিভাবে সুর পাল্টেছে সৌদি আরব খাসোগজি হত্যা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি খাসোগজি হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন কারা এই ১৫ জন?
সৌদি সাংবাদিক খাসোগজিকে হত্যার অনেক আগে থেকেই যেভাবে অনলাইনে হুমকি দেয়া হচ্ছিল
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
কিন্তু মিঠুন সেটা মানতে নারাজ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে বিবিসি বাংলার সাথে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। আরো পড়ুন: ক্রিকেট বিশ্বকাপের সকল খবরাখবর পড়ুন এখানে কদেখে নিন বাংলাদেশের ম্যাচগুলো কবে, কখন নির্বাচকদের 'হতাশ করেনি মিঠুন', এখন সামনে চ্যালেঞ্জ কী?
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: মোহাম্মদ মিঠুন 'সব সময়ই চিন্তা করেন তিন অঙ্কে কিভাবে যাবেন'
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে চীনে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরও কম কাজের ব্যাপারে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ইমেল ব্যবহার করে। যখন আমি কোর্স শেষ করলাম, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা আমাকে বললেন তারা আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চান। তারা বললেন চীনা একটা অ্যাপ আমার কম্প্যুটারে ডাউনলোড করে নিতে, যার নাম QQ (কিউকিউ)। অনেকটা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মত এই অ্যাপ। আমি তাদের বললাম ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে (তখন চীনে ফেসবুক খোলা ছিল) আর আমাকে বন্ধু হিসাবে যোগ করে নিতে। আরও বললাম তোমাদের ইমেল করার ঠিকানাটাগুলোও দিও। কয়েকজন দিলেন। কিন্তু সেসব ইমেল ঠিকানা মনে রাখা খুব কঠিন, কারণ সেগুলো ছিল এরকম: [email protected]. আমার মনে হয়েছিল ইমেল ঠিকানাগুলো খুবই অদ্ভুত। তবে ২০০৮ সালে এমনকি যুক্তরাজ্যেও লোকে উদ্ভট সব নাম দিয়ে ইমেল পরিচিতি বা ঠিকানা তৈরি করত। কিন্তু এর বেশ কয়েক বছর পর আমি ফ্রিলান্স সাংবাদিক হিসাবে কাজ করতে বেইজিং গেলাম। তখনও দেখলাম চীনে প্রায় কেউই ইমেল ব্যবহারে আগ্রহী নন। চীনে যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় হল উইচ্যাট অ্যাপ প্রায়ই আমাকে খবর লেখার জন্য সংবাদ পাঠানো হতো আমার স্মার্টফোনের উইচ্যাট অ্যাপে। চীনে যোগাযোগের জন্য উইচ্যাট বিপুল জনপ্রিয় অ্যাপ। আমার খবর লেখা হলে, সেটাও আমি পাঠাতাম উইচ্যাটে। আমাকে লেখার জন্য পেমেন্টও দেয়া হতো উইচ্যাটের মাধ্যমে। এই মোবাইল অ্যাপ এতই কার্যকর এবং এত দ্রুত যে মনে হতো সব কিছু নিমেষে হয়ে যাচ্ছে। অ্যাপই প্রধান পশ্চিমের বহু দেশে বিশেষ করে কর্মস্থলে এবং যে কোন কাজের কারণে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে সবার উপরে রাখা হয় ইমেলকে। আমেরিকা এবং ব্রিটেনে অনলাইনে যেসব কাজকর্ম হয় তাতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা ইমেলে কাজকর্ম করেন তাদের সংখ্যা যথাক্রমে ৯০.৯% এবং ৮৬%। অনলাইন মানুষ যেসব কারণে ব্যবহার করে, যেমন কোন তথ্য, পণ্য এবং সেবা সম্পর্কে খোঁজখবর করা, ইন্টারনেটে ব্যাংকের লেনদেন, কেনাকাটা, ডিজিটাল ভিডিও দেখা, অডিও শোনা এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা- এই দুটি দেশে অর্থাৎ আমেরিকা ও ব্রিটেনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেখানে সবার উপরে রয়েছে ইমেলে যোগাযোগ। কিন্তু চীনে চিত্রটা পুরো আলাদা। আরও পড়তে পারেন: উইচ্যাট-এর মত অ্যাপগুলো দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। বাজারে কেনাকাটা করা সহ এই অ্যাপ ব্যবহার করে অনেক কিছু করা যায়। চীনের ভোক্তারা মোবাইল কী কাজে ব্যবহার করে, ডিলয়েট সংস্থা সে বিষয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল ২০১৮ সালে । তাতে দেখা গেছে চীনের মানুষ ইমেল খোলেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ২২% কম। চীনে উইচ্যাটই প্রধান। চীনে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের ৭৯.১% নিয়মিত এই অ্যাপ ব্যবহার করে। আর চীনে বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮৪.৫%ই ব্যবহার করে উইচ্যাট। চীনারা ব্যক্তিগত কারণে, দৈনন্দিন কাজেই যে শুধু উইচ্যাট ব্যবহার করে তা নয়, অফিসের কাজকর্মেও তারা উইচ্যাট ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে। উইচ্যাট অ্যাপটি তৈরি করেছে টেনসেন্ট নামে যে কোম্পানি তাদের গবেষণা বিভাগ পেঙ্গুইন ইন্টালিজেন্স বিশ হাজার ভোক্তার ওপর একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে প্রতিদিন কর্মস্থলে চীনের ৮৮% মানুষ উইচ্যাট ব্যবহার করছেন। ফোন, এসএমএস এবং টেক্সট তারা ব্যবহার করেন প্রায় ৬০% আর তৃতীয় স্থানে অর্থাৎ সবার নিচে আছে ইমেল - ২২.৬%। ইভা হ্যসু একটি ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং কোম্পানি চালান। তিনি তাইওয়ানিজ, তরুণ বয়সে কয়েক বছর কাটিয়েছেন আমেরিকায়, গত ছয় বছর কাজ করছেন সাংহাইতে। তিনি বলছেন, বিদেশে তার যেসব ক্লায়েন্ট আছেন তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য তিনি ইমেল বা লিংকডইন ব্যবহার করেন। কিন্তু চীনে যাদের সাথে ব্যবসা করেন, তাদের সাথে সব যোগাযোগ একদম আলাদা। "চীনা ক্লায়েন্টরা উইচ্যাটই ব্যবহার করেন। যত ফাইলপত্র সবই উইচ্যাটে পাঠান।" চীনে সাইবার ক্যাফের জনপ্রিয়তা বেড়েছে উইচ্যাট ব্যবহারের কারণে সাইবার ক্যাফে সংস্কৃতি চীনে ১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর জন্য উইচ্যাট একটি সুপারঅ্যাপ এবং এই অ্যাপ এখন চীনা জীবনের সবক্ষেত্রে। কিন্তু এই অ্যাপের প্রতি চীনের মানুষের নির্ভরতা এবং এর জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে সম্ভবত বেশ কয়েক বছর আগে। উনিশশো নিরানব্বই সালে, সেসময় চীনে গড়ে ওঠা নতুন প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট বাজারে একটি নতুন পণ্য ছেড়েছিল- নাম কিউকিউ। সেটি ছিল কম্প্যুটারে বার্তা আদানপ্রদানের একটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সেসময় চীনে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে মাত্র ১.২ জন মানুষের কম্প্যুটার ছিল। ওই সময় আমেরিকায় প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের কম্প্যুটার ছিল। কিন্তু ২০০০সাল থেকে চীনের সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠল ইন্টারনেট ক্যাফে। এবং সেখানে তরুণদের ভিড় উপছে পড়তে শুরু করল। চীনে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের জন্য কিউকিউ-এর মত প্রোগ্রাম ইমেলের চেয়ে অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠল। দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার যত প্রসার লাভ করতে শুরু করল, এর জনপ্রিয়তাও ততই বাড়তে থাকল। এসব ক্যাফে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মূলত কিউকিউ-এর কারণে। কিউকিউ-এ কম্প্যুটারে গেম খেলা যেত, গানবাজনা শোনা যেত এবং চীনে সেই প্রথমদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছোট ছোট ব্লগ লেখা যেত এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। কিউকিউ ইমেলের চেয়ে বেশি ও সহজে দ্রুত যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছিল মানুষকে। ইনস্টান্ট মেসেজিং বা অনলাইনে সরাসরি কথোপকথনের একটা পথ তখনই তৈরি করে দিয়েছিল কিউকিউ। ভবিষ্যতের চীনকে নিয়ে ২০০৮ সালে 'সুপারট্রেন্ডস অফ ফিউচার চায়না' বইয়ের লেখক জেমস ইউয়ান ও জেসন ইঞ্চ বলেছিলেন, চীনে কারো কিউকিউ নেই এটা ভাবাই যায় না। বড় বড় কোম্পানির ব্যবসায়ীরা তাদের বিজনেস কার্ডে কিউকিউ নম্বর ছাপাতেন। প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিউকিউ অ্যাকাউন্ট নম্বর ছিল। দু‌হাজার বারো সালের মধ্যে সক্রিয়ভাবে কিউকিউ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭৯ কোটি ৮০ লাখ, যা ছিল সেই বছর চীনের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। উইচ্যাটের উদ্ভাবক প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা মা হুয়াতেং। এই টেনসেন্ট কোম্পানিই ২০১১ সালে উদ্ভাবন করেছে উইচ্যাট অ্যাপ, যা চীনে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। একই সাথে চীনে কম্প্যুটার বিদায় নিচ্ছে, তার জায়গা নিচ্ছে স্মার্ট ফোন। চীনে ২০০৪ সাল থেকে ডিজিটাল উদ্ভাবন বিষয়ে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন ব্রিটেনের ম্যাথিউ ব্রেনান। তিনি বলছেন, বহু দেশে ইমেল ঠিকানা থাকাটা মানুষের পরিচিতির একটা অংশ, কারণ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে গেলে তার জন্য নথিভুক্ত হতে ইমেল ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু চীনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সব কিছু করা সম্ভব। 'উইচ্যাট' এবং আলিবাবার তৈরি অ্যাপ 'আলিপে'তে একবার লগ ইন করে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যায়, আলাদা আলাদা লগ ইন-এর প্রয়োজন হয় না-একটা অ্যাপের মাধ্যমেই অ্যাপয়েন্টমন্ট বুক করা থেকে শুরু করে, বাজার দোকান করা, অফিস বা ব্যবসা করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা সবই করা যায়- ইমেলের কোন প্রয়োজন হয় না। দ্রুত আদান-প্রদানের সংস্কৃতি চিউং কং গ্র্যাজুয়েট স্কুল ফর বিজনেসের অর্থনীতির অধ্যাপক ঝং লিং মনে করেন, চীনের কর্ম সংস্কৃতির সাথে উইচ্যাট খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলছেন, এই চ্যাট অ্যাপে যে কোন সময়ে, যে কোন জায়গা থেকে যে কোন কাজ করা যায় - আপনাকে ব্যবসা বা অফিসের কাজের জন্য অফিসের সময়ের ওপর নির্ভর করতে হবে না। কোন কিছু চাইলে তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, যা চাইছেন তা সাথে সাথে পাওয়া যাবে, যেটা চীনের সংস্কৃতি, মানসিকতা ও ব্যবসার পরিবেশের সাথে খুবই খাপ খায়। চীনে কাজের সময় আর ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে সীমারেখাাটা দুর্বল মিস ঝং বলছেন, চীনে মানুষের কাজের সময় আর ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে সীমানাটা বেশ দুর্বল। "ফলে চাকুরিদাতারা বা ম্যানেজাররা প্রায়ই কাজের সময়ের বাইরে প্রশ্ন জানতে চেয়ে কর্মচারীদের বার্তা পাঠান বা তাদের কাজ করতে বলেন। খুবই সামান্য একটা উত্তরের জন্যও তারা পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা পছন্দ করেন না।" ইমেলে বার্তা আদান প্রদান করতে যে সময়টা দিতে হয়, তাতে হয়ত একটা বিষয় নিয়ে কয়েকবার মেইল চালাচালির প্রয়োজন হয়, কিন্তু উইচ্যাটে খুব দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের মাধ্যমে কাজ করা যায়, বলছেন মিস ঝং। ফলে এই দ্রুত ও সহজ মেসেজিং অ্যাপ মানুষের ওপর সবসময় কাজ করার বাড়তি একটা চাপও তৈরি করেছে। ইনস্টান্ট মেসেজিংয়ে ইমেলের চেয়ে অনেক দ্রুত কথোপকথন সম্ভব দ্রুত উত্তরের যুগ যোগাযোগের একটা প্ল্যাটফর্ম যখন তৈরি হয় তখন তা ব্যবহারেরও একটা ধারা তৈরি হয়ে যায়। যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ - উইচ্যাটের মত এসব যোগাযোগ মাধ্যমেও কেউ কিছু জানতে চাইলে মানুষ সাথে সাথে উত্তর পাবে বলে আশা করে। মি. ব্রেনান বলছেন, ইমেল অনেকটা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যম - সেখানে মেইলের শুরুতে - প্রিয় বা সম্মানিত অমুক, ও শেষে- শ্রদ্ধান্তে বা শুভেচ্ছান্তে তমুক এবং এমনকী বয়ানেও অনেকটা পুরনো চিঠি লেখার স্টাইল অনুসরণ করা হয়। ফলে ইমেল লিখতে সময় লাগে। তিনি বলছেন, চীনে তো বটেই, এমনকি এশিয়ার অনেক দেশে এখন ইমেল বাদ দিয়ে চ্যাট অ্যাপ কাজের ক্ষেত্রে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। কারণ চ্যাট অ্যাপে আনুষ্ঠানিক হবার প্রয়োজন নেই। দ্রুত প্রশ্ন পাঠানো এবং দ্রুত তার জবাব পাওয়াটাই সেখানে মুখ্য। প্রফেট নামে একটি উপদেষ্টা সংস্থা যারা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজ করে, তার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যালান কেসি বলছেন, চীনের মতই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এখন কম্প্যুটার যুগকে পেছনে ফেলে মোবাইল ভিত্তিক অ্যাপের যুগে দ্রুত উত্তরণ ঘটাচ্ছে। এবং দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ফেসবুক, উইচ্যাট, লাইন, কাকাও টক এবং জেলোর মত বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। ব্যবসা বান্ধব অ্যাপ চীনে উইচ্যাট ছাড়াও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যারা আরও ব্যাপক পর্যায়ে কর্মীদের কাছ থেকে কাজ পেতে চান তাদের জন্য তৈরি হয়েছে ব্যবসা বান্ধব অ্যাপ। চীনে অনেক মানুষের ইমেল ঠিকানা আছে, কিন্তু তারা খুবই কালে ভদ্রে তাদের ইমেল অ্যাকাউন্ট খোলেন আলিবাবা তৈরি করেছে 'ডিংটক' বাইটডান্স তৈরি করেছে 'লার্ক', উইচ্যাটও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করেছে 'উইচ্যাট ওয়ার্ক'। এসব অ্যাপের মাধ্যমে উঁচু পর্যায়ের নিরাপত্তা বজায় রেখে বড় বড় নথি শেয়ার করা যায়, অনলাইনে নথি রদবদল করা যায়, মানুষের বেতন সংক্রান্ত কাজকর্ম করা যায়। ডিংটক অ্যাপে সরাসরি দেখা যায় আপনার পাঠানো মেসেজ যিনি পেয়েছেন তিনি পড়েছেন কিনা, না পড়লে তাকে পড়ার জন্য আবার মেসেজ করা যায়। পশ্চিমের অবস্থা তিরিশ বছর বয়সী হেইলান জিয়া একটি চীনা ক্রিপটোকারেন্সি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ ম্যানেজার। তার স্বামীর সঙ্গে থাকার জন্য ২০১৮ সালে তিনি বেজিং থেকে ইংল্যান্ডে চলে এসেছেন। তিনি বলছেন, ব্রিটেনে অনলাইন সেবা খুবই ছড়ানো। একেকটা কাজের জন্য আপনাকে অনলাইনে একেকটা সেবা প্রতিষ্ঠানে লগ ইন করতে হবে। কিন্তু চীনে উইচ্যাটে গেলে সব কিছু একসাথে এক জায়গায় আছে। "আপনার উইচ্যাট অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি সব রকম কাজ এক অ্যাপ থেকেই করতে পারবেন।" "ইংল্যান্ডে আমাকে অনবরত ইমেল চেক করতে হয়, চীনে আমি কখনও ইমেল খুলতাম না, কেউ সেখানে ইমেল দেখে না। ইমেলে জবাব দেবার জন্য কোন প্রত্যাশাও সেখানে নেই," বলেন হেইলান জিয়া। তবে চীনে কেউ ইমেল একেবারেই ব্যবহার করে না সেটা ঠিক নয়। অনেকেরই ইমেল অ্যাকাউন্ট আছে, কিন্তু তারা ইমেল খুলে তা দেখেন খুবই অনিয়মিতভাবে। মি. ব্রেনান বলছেন, বেজিং এবং সাংহাইতে যারা কাজ করেন তারা যেহেতু আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে বেশি পরিচিতি তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ইমেল খোলেন। চীনে কি ইমেল এখন অতীতের ফেলে আসা প্রযুক্তি? আমার পুরনো শিক্ষার্থীরা গোড়াতেই যে বলছিলাম আমি যখন চীনে ইংরেজি শিক্ষকতা শেষ করেছিলাম আমার পুরনো শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম যোগাযোগ রাখার জন্য তাদের ইমেল দিতে। এদের একজন ছিলেন ইয়াংশু লিলি ওয়াং। আমরা কিছুকাল ইমেলে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তারপর আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এখন তার বয়স ৩০। দক্ষিণ চীনে গুয়াংডং-এ তিনি থাকেন। বছর দুয়েক আগে তাকে আমি উইচ্যাটে খুঁজে পাই। এখন উইচ্যাটে আমাদের কথা হয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম পুরনো সেই ইমেল অ্যাড্রেসটা কি তার এখনও আছে? সে জানতে চাইল কোনটা? হেসে বলল, "আমার তো অনেকগুলো ঠিকানা ছিল ১৬৩, ১২৬, এমএসএন।" সে বলল, শেষ কবে যে সে ইমেল ব্যবহার করেছে তার মনে পড়ে না। "এখন আমি উইচ্যাট ব্যবহার করি। কিউকিউ খুব একটা ব্যবহার করি না, মাঝে মাঝে করি," সে বলল। চীনে লিলি ওয়াংয়ের মত বেশির ভাগ মানুষের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এখন উইচ্যাট। ইমেল তাদের জন্য অতীতের কোন একটা প্রযুক্তি।
চীন: বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত চীনে ইমেল ব্যবহার করা হয় না কেন?
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
কানাডায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই থাকেন টরন্টো এবং এর আশে-পাশের বিভিন্ন শহরে অনেকে এসেছেন বহুদূর থেকে কয়েক ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে। তাদের প্রতিবাদ বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে আসা কথিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, যারা নাকি সেখানে পাচার করা বিপুল সম্পদ দিয়ে আয়েশি জীবন-যাপন করছেন। হঠাৎ করে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কেবল কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে নয়, শোরগোল তুলেছে বাংলাদেশেও। টরন্টোতে বাংলাদেশি 'বেগমপাড়া' নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই অনেক কথাবার্তা চলছে। বলা হয় বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া বহু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন কানাডায়। তাদের নিয়েই গড়ে উঠেছে এই 'বেগমপাড়া'। কিন্তু আসলেই কি টরন্টো বা কানাডার অন্য কোন জায়গায় এরকম কোন 'বেগমপাড়া' আছে? বেগমপুরা থেকে বেগমপাড়া: টরন্টোর পাশে লেক অন্টারিওর তীরে আরেকটি শহর মিসিসাগা। শহরের একটি বড় কন্ডোমিনিয়াম হঠাৎ করেই কানাডার গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয় বছর দশেক আগে। সেই কন্ডোমিনিয়ামে মূলত থাকেন দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা বহু অভিবাসী পরিবার। এসব পরিবারের স্বামীরা কাজ করেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। স্বামীদের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীদের নিঃসঙ্গ জীবন এবং কঠিন জীবন সংগ্রাম নিয়ে এক ভারতীয় পরিচালক রশ্মি লাম্বা তৈরি করলেন একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম। নাম 'বেগমপুরা।' ভারতীয় পরিচালক রশ্মি লাম্বার ছবি 'বেগমপুরা' থেকেই এসেছে বেগমপাড়া নাম। 'বেগমপুরা' ছবি নিয়ে আলোচনা শুরু হলো কানাডার গণমাধ্যমে। আর এই ছবির সূত্র ধরে সেখানকার পত্র-পত্রিকাতেও প্রকাশিত হতে থাকলো অনেক ধরণের প্রতিবেদন। টরন্টো স্টারে ২০১১ সালে প্রকাশিত এরকম একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'কলোনি অব ওয়াইভস থ্রাইভস ইন মিসিসাগা।' বেগমপুরার আসল কাহিনি এরকম: মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে কাজ করেন ভারত বা পাকিস্তানের যেসব মানুষ, যাদের বেশিরভাগই মূলতঃ প্রকৌশলী, তারা জীবনের একটা সময় সপরিবারে কানাডায় চলে আসেন অভিবাসী হয়ে। কিন্তু এরা কানাডায় তাদের পেশাগত যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে না পেয়ে আবার ফিরে যান মধ্যপ্রাচ্যেই, তবে পরিবার রেখে যান কানাডায়। মধ্যপ্রাচ্যে তারা ভালোই আয় করেন। সেই অর্থ তারা কানাডায় স্ত্রীদের কাছে পাঠান পরিবারের ভরণপোষণের জন্য। মিসিসাগার কয়েকটি কন্ডোমিনিয়াম, যেখানে থাকতেন এরকম বহু পরিবার, সেগুলো পরিচিত হয়ে উঠে বেগমপুরা নামে। যেখানে স্বামীর অনুপস্থিতিতে বেগম বা স্ত্রীরাই পরিবারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন একা হাতে। কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর জানান, এই বেগমপুরার কাহিনি থেকেই মূলতঃ প্রথম বাংলাদেশি 'বেগমপাড়া'র কথা চালু হয়। তৃতীয় কোন দেশ হয়ে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অর্থ পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ শওগাত আলী সাগরই প্রথম 'বেগমপাড়া' কথাটি ব্যবহার করেছিলেন টরন্টো স্টারে প্রকাশিত বেগমপুরার কাহিনি তার এক লেখায় বর্ণনা করতে গিয়ে। এরপর বাংলাদেশের অনেকেই এই 'বেগমপাড়া' কথাটি ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিকদের কানাডায় পাড়ি জমিয়ে সেখানে দ্বিতীয় নিবাস স্থাপনের প্রতি ইঙ্গিত করে। শওগাত আলি সাগর বলেন, "বেগমপুরার যে বেগমরা, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কথিত বেগমপাড়ার বেগমদের অনেক তফাৎ। বেগমপুরার বেগমদের স্বামীরা পেশাজীবী, মধ্যপ্রাচ্যে কঠোর পরিশ্রম করে সেই অর্থ কানাডায় পাঠাচ্ছেন তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য। অন্যদিকে আমরা যে বেগমপল্লীর কথা বলি, সেটি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন অর্থে, যেখানে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ কানাডায় পাচার করে সেখানে আয়েশি জীবনযাপন করছে তারা সপরিবারে।" বেগমপাড়া আসলে কোথায় টরন্টোতে বা কানাডায় সেই অর্থে কী কোন সুনির্দিষ্ট এলাকা আছে, যেটিকে বেগমপাড়া বলা হয়? সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলছেন, এই বেগমপাড়া আসলে কানাডায় পাড়ি জমানো দুর্নীতিগ্রস্তদের স্ত্রীদের দ্বিতীয় নিবাস অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে এমন কোন সুনির্দিষ্ট এলাকা নেই, যেটিকে 'বেগমপাড়া' বলা হয়। সাজ্জাদ আলি, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট: "বেগমপাড়া যে শুধু কথার কথা, লোকমুখে শোনা ব্যাপার, তা নয়" এ নিয়ে কথা হয় টরন্টোর কয়েকজন বাংলাদেশি, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং আইনজীবীর সঙ্গে। সাজ্জাদ আলি টরন্টোতে একজন রিয়েলটর (রিয়েল এস্টেট এজেন্ট) হিসেবে কাজ করছেন কয়েক বছর ধরে। তার মতে, এরকম বেগমপাড়া নামে হয়তো কোন এলাকা নেই, কিন্তু এমন জায়গা বাস্তবে রয়েছে, যেখানে এধরণের বহু বাংলাদেশি গিয়ে বসতি গেড়েছেন। "বেগমপাড়া যে শুধু কথার কথা, লোকমুখে শোনা ব্যাপার, তা নয়। আমরা দেখি এখানে বাংলাদেশিরা অনেক সংখ্যায়, এমন সব জায়গায় বাড়িঘর কিনেছেন, যেটা একটু অভিজাত এলাকা। কিন্তু তাদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে তাদের এই সম্পদ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তারা এখানে তেমন কিছু করেন বলে তো আমরা দেখি না। কীভাবে তারা এক বা দুই মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কেনার ক্ষমতা রাখেন!" কানাডার সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধারণা, কানাডায় অর্জিত সম্পদ দিয়ে তারা এসব বাড়ি কেনেননি, এই অর্থ এসেছে বাংলাদেশ থেকে। অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কানাডায় বাংলাদেশিদের প্রতিবাদ সভার পোস্টার এরকম বাংলাদেশির সংখ্যা কতো? পুরো কানাডায় প্রায় আশি হাজার বাংলাদেশি আছেন বলে ধারণা করা হয়। এদের বেশিরভাগ থাকেন টরন্টো বা তার আশেপাশে। গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে বহু উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবী কানাডায় গেছেন অভিবাসী হয়ে। "২০০৮ হতে ২০১৪ সময়কালে বেশি গেছে ব্যবসায়ীরা। তখন ইনভেস্টমেন্ট ক্যাটাগরিতে একটি ভিসা দেয়া হতো, তখন কানাডায় একটি নির্দিষ্ট অংক বিনিয়োগ করে বা কানাডার সরকারের কাছে অর্থ জমা রেখে ইমিগ্রেশনের সুযোগ ছিল", বলছেন সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর। কিন্তু ২০১৪ সালে কানাডার সরকার এটি বন্ধ করে দেয়। এর অন্যতম কারণ নাকি ছিল এই ক্যাটাগরিতে আসা অভিবাসীদের কর পরিশোধের রেকর্ড। "দেখা গেল কানাডার একেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যে পরিমাণ কর দেয়, এদের দেয়া করের পরিমাণ তার চেয়েও কম। বা তারা একেবারেই কর দেয় না। তখন সরকার এই স্কিম বন্ধ করে দেয়", জানালেন শওগাত আলী সাগর। শওগাত আলী সাগর: 'বেগমপাড়া এখন দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থপাচারের প্রতীক হয়ে গেছে' ব্যাপকহারে এধরণের লোকজনের কানাডায় অভিবাসন প্রথম শুরু হয় ২০০৭-২০০৮ সালে যখন বাংলাদেশে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। "তখন বাংলাদেশ থেকে অনেক ব্যবসায়ীর একটি দল কানাডায় যায়। টরন্টোর বেলভিউ এলাকায় কিছু হাই রাইজ কন্ডোমিনিয়াম আছে। বেশ বিলাসবহুল। ডাউনটাউন থেকে বেশি দূরে নয়। প্রথম যে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন, তারা ওখানে উঠেছিলেন। তারপরে ঝাঁক ধরে যারা এসেছেন, তারাও ওখানেই গিয়েছেন"- বলছিলেন বহু বছর ধরে টরন্টোতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি। "টরন্টোর একেবারে প্রাণকেন্দ্র সিএন টাওয়ারের পাশে আরেকটি কন্ডোমিনিয়াম আছে, সেটি অনেক বেশি বিলাসবহুল। সেখানেও অনেক বাংলাদেশি রয়েছে। অনেকের কনডো সেখানে আছে। কিনে রেখে চলে গেছে। কারোটা হয়তো খালিও পড়ে আছে" বলছেন তিনি। "তবে এর পরে যারা এভাবে কানাডায় অভিবাসী হয়েছেন, তারা ছড়িয়ে পড়েছেন আরও বিভিন্ন জায়গায়। এদের পছন্দ ছিল এমন জায়গা, যেখানে সাধারণ বাংলাদেশিদের সঙ্গে তাদের মিশতে হবে না। এরা ছয়, সাত বা আট হাজার স্কয়ার ফিটের বড় বড় বাড়ি কিনেছে।" রিয়েল এস্টেট এজেন্ট সাজ্জাদ আলির অনুমান, যে কথিত অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে এখন প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, সেরকম খুবই বিত্তশালী বাংলাদেশির সংখ্যা বৃহত্তর টরন্টো এলাকাতেই দুশোর কম হবে না। কানাডায় সাধারণ মানুষের পক্ষে বাড়ি কেনা সেরকম কঠিন কোন কিছু নয়। পাঁচ শতাংশ ডিপেজিট দিয়েও বাড়ি কেনা সম্ভব যদি ভালো ক্রেডিট রেকর্ড এবং বাড়ির মর্টগেজ পরিশোধের সাধ্য থাকে। "কানাডায় অভিবাসী বাংলাদেশিদের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ হয়তো এখন বাড়ির মালিক। বাকী ৫০ ভাগও হয়তো আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাদের পরিশ্রমের সঞ্চয় দিয়ে কত তাড়াতাড়ি একটা বাড়ি কিনতে পারেন। কিন্তু যে বাংলাদেশিদের কথা নিয়ে এত শোরগোল, তারা তো আর এই সাধারণ বাংলাদেশিদের কাতারে নন, এরা এমন সব জায়গায় বাড়ি কিনেছেন, যেখানে বাড়ির দাম অনেক বেশি এবং সেই দামে বাড়ি কেনার মতো আয়-উপার্জন তারা কানাডায় করছেন, সেটি আমরা দেখছি না।" টরন্টো এবং নিকটবর্তী শহর রিচমন্ড হিল, মিসিসাগা এবং মার্কহামের অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশিরা এরকম দামি বাড়ি কিনেছেন বলে জানান সাজ্জাদ আলি। কানাডায় পাড়ি জমানো বিত্তশালীরা দামী দামী বাড়ি কিনেছেন অভিজাত এলাকায় কীভাবে এই অর্থ পাচার হচ্ছে মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কানাডার আইনকানুন যথেষ্ট কড়া। অর্থ পাচার এবং অবৈধ লেন-দেন বন্ধ করতে কানাডায় কাজ করে ফিনান্সিয়াল ট্রান্সেকশনস অ্যান্ড রিপোর্ট এনালিসিস সেন্টার অব কানাডা বা 'ফিনট্রাক।' এসব আইন-কানুনে কি এমন কোন ফাঁক আছে, যার সুযোগ নিচ্ছেন এই কথিত অর্থপাচারকারীরা? কানাডায় বহু বছর ধরে ইমিগ্রেশন আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন ব্যারিস্টার রেজাউর রহমান। একসময় বাংলাদেশের 'আইন-আদালত' নামের এক জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। তিনি বলছেন, যখন কেউ প্রথম কানাডায় আসেন, তখন তিনি যে কোন অংকের অর্থ নিয়ে আসতে পারেন, যেটা তার বৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বলে তিনি ঘোষণা করছেন। "এখন বৈধভাবে যিনি আসছেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চয়ই তিনি কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছেন- যে আমার এই অর্থ ছিল, আমার এই সম্পদ ছিল, সেটা বিক্রি করে, সেখানে কর প্রদান করে আমি এখানে আসছি। সেক্ষেত্রে কানাডার পক্ষে দেখা কঠিন, এই টাকা সত্যি সত্যি বাংলাদেশে বৈধভাবে অর্জিত হয়েছে কীনা।" আইনজীবী রেজাউর রহমান: 'অনেকের কাগজপত্রই জাল' বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকের ঋণ খেলাপি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় দুর্নীতিবাজরা যে অর্থ পাচার করে কানাডায় নিয়ে এসেছে বলে শোনা যায়, সেটা কানাডার পক্ষে বন্ধ করা কঠিন। এক্ষেত্রে বড় দায়িত্ব বাংলাদেশের, বলছেন তিনি। "কানাডা তো কানাডার দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তারা কীভাবে বের হয়ে আসলো? এবং কারা তাদেরকে সহায়তা করলো? কীভাবে করলো? সেটা কিন্তু দেখা প্রয়োজন।" রেজাউর রহমান জানান, পেশাগত জীবনে এমন অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে, যারা কানাডায় অভিবাসী হতে চেয়েছেন অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু তিনি কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছেন, তারা প্রচুর মিথ্যে তথ্য দিয়ে আর জাল কাগজপত্র তৈরি করে এই সুযোগ নিতে চেয়েছেন। "আমার কাছে যখনই কেউ বাংলাদেশ থেকে এধরণের আবেদন নিয়ে আসেন, তার কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আজ অবধি আমি কাউকে অভিবাসন দিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারিনি। কারণ তারা সেই যোগ্যতা অর্জন করেননি, তাদের কাগজপত্রে দারুণ ভেজাল ছিল। তবে আমি না করলেও তারা অন্য কারও কাছ থেকে এই সহায়তা পেয়েছেন । এরপর আমাকে এসে বলে গেছেন, আপনি তো করেননি, আরেকজন তো করে দিয়েছে।" রেজাউর রহমান বলেন, "যেটা আমি শুনতে পেয়েছি, বা আমাকে যেটা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তারা প্রথমে টাকা পাচার করে অন্যদেশে নিয়ে রাখে- যেমন মধ্যপ্রাচ্যে। এরপর সেই দেশের ব্যাংক থেকে টাকাটা ট্রান্সফার করেন কানাডায়। তারা দেখান যে, এই টাকা তারা বৈধভাবে অর্জন করেছেন। তারা যদি দেখান যে তাদের কাছে আয়কর প্রদানের কাগজ আছে, যে কাগজপত্র আসলে সম্পূর্ণ ভুয়া, তারা যদি দেখান যে তাদের সম্পত্তির মূল্য এত, যেটা আসলে সম্পূর্ণ ভুয়া, সেটা তো এখানে কারও পক্ষে যাচাই করা কঠিন।" কানাডায় অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ যেভাবে প্রতিবাদের শুরু: কানাডায় বাংলাদেশের 'করাপ্ট এলিট' বা দুর্নীতিগ্রস্ত বিত্তশালীদের অর্থপাচার এবং সেখানে দ্বিতীয় নিবাস গড়ে তোলা নিয়ে কানাঘুষো চলছে বহু বছর ধরেই। কিন্তু হঠাৎ করে কেন কানাডা প্রবাসী সাধারণ বাংলাদেশিরা এদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করলেন? "এসব নিয়ে ফিসফাস কথাবার্তা বরাবরই ছিল। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এরা দুবাই হয়ে টাকা নিয়ে আসছে। সিঙ্গাপুর থেকে টাকা নিয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি টরন্টোতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এবং ঢাকার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবর সবাইকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে", বলছেন শওগাত আলী সাগর। টরন্টোতে যারা এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন, তিনি তাদের একজন। "ঢাকার কাগজে যেসব ঋণ খেলাপিদের বড় বড় কেলেংকারি নিয়ে তোলপাড় চলছে, দেখা গেল তারা সবাই এখানে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বড় বড় সমাজসেবক, সংস্কৃতি-সেবক সেজে বসে আছেন। এরপর এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলো। ''তারা বলতে শুরু করলেন, বাংলাদেশের সব চোর-বাটপাররাই তো দেখছি এখানে এসে লাফালাফি করছে। একজন ঋণখেলাপি তো একদিন আমার সামনেই এখানে দম্ভ করে বলছিলেন, 'আমি কানাডিয়ান ব্যাংকারদের ঘুষ খাওয়া শেখাবো। ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হয় না। বাংলাদেশেও দিতে হয় না, কানাডাতেও না," জানান শওগাত আলী সাগর। একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে এই প্রতিবাদের শুরু। তবে দিনে দিনে এটি আরও সংগঠিত হয়েছে। সেখানে তারা মানববন্ধন করেছেন। প্রতিবাদী গান আর কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে এখন তারা বিষয়টি কানাডার রাজনীতিক, নীতিনির্ধারক এবং মূলধারার গণমাধ্যমের নজরে আনারও উদ্যোগ নিয়েছেন।
কানাডায় বাংলাদেশের অর্থপাচারকারী বিত্তশালীদের 'বেগমপাড়া' আসলে কোথায়?
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
লিটন দাস, যিনি ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন টেস্ট দিয়ে শুরু হয়েছে তাঁর ক্যারিয়ার। কিন্তু ধীরে ধীরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের উপযোগী হয়ে ওঠেন তিনি। ২৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে লিটন দাস ৫৮৪ রান তোলেন। সর্বোচ্চ ১২১ রান। পুরো ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি অর্ধশতক করেন। ২০১৮ সাল থেকে মূলত দলে নিয়মিত হয়েছেন এই ক্রিকেটার। কিন্তু তাঁর পারফরম্যান্স গ্রাফ বেশ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই গিয়েছে। আরো পড়ুন: বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে ইমরুল কায়েস নেই কেন? এশিয়া কাপ: বাংলাদেশের দল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন নিউজিল্যান্ড সফর কি বাংলাদেশের জন্য আসল পরীক্ষা? বছর অনুযায়ী লিটন দাসের পারফরম্যান্স বছর প্রতি লিটন দাসের রান ও গড় ২০১৬ সালে লিটন দাস কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এই তিনটি ম্যাচই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলেন। ২০১৮ সালে লিটন দাস জাতীয় দলে থিতু হন মূলত। যদিও গড় খুবই কম ছিল পুরোটা সময়জুড়ে। লিটনের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ১২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন ২০১৮ সালে। এসময় ৩৪০ রান তোলেন তিনি ২৮.৩৩ গড়ে। সর্বোচ্চ ১২১ রান তোলেন। মূলত এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার করা ১২১ রানের ইনিংসটিই তাকে দলে নিয়মিত করার খোরাক যোগায়। বাংলাদেশের হয়ে ২৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন লিটন দাস লিটন দাসের সিঙ্গেল ডিজিট ইনিংস এশিয়া কাপ ২০১৮ তে ৩০ গড়ে ৬ ম্যাচে ১৮১ রান তোলেন লিটন দাস। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮৩ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। কিন্তু তার ক্যারিয়ার জুড়ে এক অঙ্কের রান করা ইনিংসের কারণেই বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। লিটন দাসের ওয়ানডে গড় ২১ এর ওপর এর প্রভাব পড়েছে গড়েও লিটন দাসের ক্যারিয়ার গড় ২১.৬২। যেমন ২০১৯ সালে লিটন দাসের মোট রান ৪ ম্যাচে ৭৯, আর সর্বোচ্চ ৭৬। বাকি তিন ম্যাচে এক রান করে করেছেন লিটন দাস। ২৮ ইনিংসের ক্যারিয়ারে মোট ১৫টি ইনিংসে করেছেন তিনি ০-১০ এর ঘরের রান। ০-২০ এর ঘরে লিটন দাস রান করেছেন ১৮টি ইনিংসে। ৩০ এর বেশি রান করেছেন ৭টি ইনিংসে। লিটন দাস ব্যাটিং এর পাশাপাশি উইকেটরক্ষকের কাজও করে থাকেন দলের প্রয়োজনে ঘরোয়া ক্রিকেটে লিটন দাস ২০১৭ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লিটন দাসের রান ছিল ৭৫২। ৫৩.৭১ গড়ে এই রান তোলেন লিটন দাস যা এই ওয়ানডে আসরের সর্বোচ্চ রান ছিল। ২০১৪-১৫ মৌসুমেও ১৬ ম্যাচ ব্যাট করে ৬৮৬ রান তুলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন লিটন দাস। চলতি বছরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লিটন দাস ৮ ম্যাচ ব্যাট করে ২৮৭ রান তোলেন ৩৫.৮৭ গড়ে। লিটন দাস তার লিস্ট এ ক্যালিয়ারে ১০২ ইনিংস ব্যাট করে ৩৬৯৫ রান তুলেছেন, গড় ৩৭.৭০, সর্বোচ্চ ১৪৩ অপরাজিত। বিশ্লেষকরা কী বলছেন লিটন দাসকে নিয়ে সাথিরা জেসি, যিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের একজন ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক, তার মতে ঘরোয়া ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের এমন তারতম্য থাকাটাই স্বাভাবিক। "জাতীয় দলে যেটা হয় আপনি আপনার জায়গা নিয়ে নিশ্চিত নন, সেক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি প্রেসার নিতে হয়, মাথায় সেটা কাজ করে, কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে সহজে জায়গা হারায় না মোটামোটি ভালো ক্রিকেটাররা, এটা একটা বড় ব্যাপার, মানসিক চাপ নিয়ে যেকোনো জায়গায় খেলা কঠিন, তবে মানসিক চাপটা জয় করাটাও ভালো ক্রিকেটারের লক্ষণ," বলছিলেন সাথিরা জেসি। "নিজেদের পরিবেশ নিজেদের পরিচিতদের মধ্যে খেলাটা অনেক সহজ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম একটা খেলা।" বিবিসি বাংলার আরো খবর দারুণ খেলে শিরোপা খরা ঘুচালো বাংলাদেশ 'সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়াবহ' যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে পুরুষরা কথা বলে না বাংলাদেশের রাজধানী কি ঢাকার বাইরে নিতে হবে?
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লিটন দাসের তারতম্য কতটা?
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রয়াত নায়ক সালমান শাহকে স্মরণ সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। এই শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ঢাকার তৎকালীন সিনেমা জগতের সুপারস্টার সালমান শাহ। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ'র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না । নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, "বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)।" "উনি (সালমান শাহ'র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।" বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। কেমন ছিল পরিবেশ? টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। "খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।" "আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী। ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের দাবি বাংলাদেশে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম সিনেমা 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো তাঁর জীবনের রথও থেমে গিয়েছিল ওই ছবি করার ঠিক চার বছর পর। এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ। সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়। সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের। আরও প্রশ্ন সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সে বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডা. নার্গিস বাহার চৌধুরী। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক জাকির হোসেন রাজু তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "লাশটা আমি দেখেছি মরচুয়েরিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সদ্য সে মারা গেছে। এ রকম থাকলে তাঁর মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায়। আত্মহত্যার প্রত্যেকটা সাইন (চিহ্ন) সেখানে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ছিল। তাঁর শরীরে আঘাতের কোন নিশানা ছিল না।" দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়। সালমান শাহ'র পারিবারিক বন্ধু চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলছিলেন, শেষের দিকে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। সালমান শাহ'র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রযোজকরা লোকসান কমিয়ে আনতে সালমান শাহ'র মতো দেখতে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে অসমাপ্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। "পুরনো ঢাকার একটি ছেলেকে পেছন থেকে দেখতে সালমানের মতো মনে হয়। তার চুলের স্টাইল দেখতে পেছন দিকে থেকে সালমানের মতো। তখন তার ওপর পুরো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব পড়ে গেল। সালমানের অসমাপ্ত ছবিগুলোতে লং শট, ব্যাক টু ক্যামেরা, ওভার-দ্যা-শোল্ডার শটের মাধ্যমে সে ছেলেটাকে ব্যবহার করা শুরু হলো," বিবিসি বাংলাকে বলেন শাহ আলম কিরণ। সালমান শাহ'র মৃত্যুর সংবাদ দর্শকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে এত বছর পরেও অনেকে তার প্রিয় নায়ককে ভুলতে পারেননি। সালমানের মৃত্যুর দুই দশকের বেশী পরেও তাকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে আলোচনা থামেনি। কিন্তু সালমান শাহ'র বিশেষত্ব কী ছিল? কেন তিনি এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন? চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাকির হোসেন রাজু মনে করেন, সালমান শাহ যে সময়টিতে অভিনয়ে এসেছিলেন, তখন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পালাবদলের সময়। ১৯৯২ সালে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ। জনপ্রিয় একটি হিন্দি সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক ছিল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'। এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সালমান। পর্দায় তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়-দক্ষতা - সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে সময় লাগেনি এ নায়কের। সালমান শাহ পরবর্তী বাংলাদেশের সিনেমা খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের সিনেমায় তিনি 'রোমান্টিক হিরো' হিসেবে পরিচিত পান। পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলেন, "ও যাই করতো, সেটাই ভালো লেগে যেত। অল্প সময়ের মধ্যে এ ছেলেটা চলচ্চিত্রমোদীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।" মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে ১৯৯০'র দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আলোড়ন তুলেছিলেন নায়ক সালমান শাহ। সাতাশটি সিনেমার বেশিরভাগই ছিল আলোচিত এবং ব্যবসা সফল। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক জাকির হোসেন রাজু বলছিলেন, ১৯৭০-৮০'র দশকের নায়কদের পরে চলচ্চিত্রে সালমানের আবির্ভাব এক ধরণের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল। প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা নায়ক রাজ্জাক, আলমগীর এবং ফারুকের পর সে সময় নতুন একদল তরুণ অভিনেতার আবির্ভাব হয়েছিল ঢাকার সিনেমা জগতে। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যত নায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে সালমান শাহ সবচেয়ে প্রমিজিং (প্রতিশ্রুতিশীল) ছিলেন বলে উল্লেখ করেন জাকির হোসেন রাজু। তাঁর বর্ণনায়, সালমান শাহ'র অভিনয়ের মধ্যে দর্শক একটা ভিন্নধারা খুঁজে পেয়েছিল। অনেকে আবার সালমান শাহ'র মধ্যে বলিউড নায়কদের ছায়াও খুঁজে পেয়েছিলেন। সালমান শাহকে নিয়ে আলোচনা কখনোই থামেনি। মাত্র চার বছরের সিনেমা ক্যারিয়ারে সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অভিনয় জগতে নিজের এমন একটি স্থানটি করে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনো অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক - সবাই। এখনো প্রতি বছর সালমান শাহ'র মৃত্যু দিবসে তাঁর অনেক ভক্ত তাঁকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে। আর সালমানের অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে। আরও পড়তে পারেন: ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রির’ উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ মডেলকে অপহরণ কেন সংখ্যায় পিছিয়ে ল্যাটিন আমেরিকার মুসলমানরা বন্ধুত্ব ও সম্মান ছাড়া সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মানে হয়না: সুবর্ণা মুস্তাফা প্রথমবারের মতো স্বামীর নাম ধরে ডাকলেন যারা
নায়ক সালমান শাহ'র মৃত্যু: কী ঘটেছিল সেদিন
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বেগম রোকেয়া বাঙালির আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে নারীর নাম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় সেই নাম হচ্ছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন - বেগম রোকেয়া। বাঙালি সমাজ যখন ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিকৃৎ। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক অভিজাত পরিবারে। মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর পরিবার ছিল খুবই রক্ষণশীল। সেসময় তাঁদের পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোন চল ছিল না। আর তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় ঘরের বাইরে গিয়ে মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভেরও কোন সুযোগ ছিল না। স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়া তাই প্রথম জীবনে গোপনে দাদার কাছে একটু আধটু উর্দু ও বাংলা পড়তে শেখেন বেগম রোকেয়া। তাঁর বড় দুভাই কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে শিক্ষালাভ করেছিলেন। তাঁর বড় বোন করিমুন্নেসাও ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। শিক্ষালাভ ও মূল্যবোধ গঠনে বড় দুভাই ও বোন রোকেয়ার জীবনকে প্রভাবিত করলেও তাঁর আসল লেখাপড়া শুরু হয়েছিল বিয়ের পর স্বামীর সাহচর্যে। শিশু বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় বসবাসের সময় তিনি লেখাপড়ার যে সামান্য সুযোগ পেয়েছিলেন, তা সমাজ ও আত্মীয়স্বজনের সমালোচনায় বেশিদূর এগোতে পারেনি, যদিও ভাইবোনদের সমর্থন ও সহযোগিতায় তিনি অল্প বয়সেই আরবী, ফারসি, উর্দু ও বাংলা আয়ত্ত করেছিলেন। বিহারের ভাগলপুরে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ের পর তাঁর জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল। কলকাতায় অধ্যাপিকা, গবেষক ও রোকেয়া সাহিত্য সমগ্রের সম্পাদক ড. মীরাতুন নাহার বলেন বেগম রোকেয়া খুব সুন্দরী ছিলেন এবং তাঁর বিয়ে হয়েছিল খুব কম বয়সে। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন "তাঁর স্বামী ছিলেন খুব উদার মনের মানুষ এবং খুবই শিক্ষিত ব্যক্তি। বেগম রোকেয়া কিছুটা উর্দু তো আগেই শিখেছিলেন। বিয়ের পর সেই শিক্ষা তাঁর উর্দুভাষী স্বামীর সহায়তায় আরও প্রসার লাভ করল। এবং স্বামীর কাছ থেকে ইংরেজিতে খুব ভাল দক্ষতা অর্জন করলেন। সুন্দর ইংরেজি রচনা করতে পারতেন তিনি।" "তবে বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ছিল গভীর টান। বাংলা তিনি ছাড়লেন না। বাংলাতেই তিনি লেখালেখি শুরু করলেন," বলেছেন ড. মীরাতুন নাহার। বেগম রোকেয়ার সাহিত্যচর্চ্চার সূত্রপাতও হয়েছিল স্বামীর অনুপ্রেরণায়। তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯০২ সালে 'পিপাসা' নামে একটি বাংলা গদ্য রচনার মধ্যে দিয়ে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে ছিল প্রবন্ধ সংকলন 'মতিচুর' এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি 'সুলতানার স্বপ্ন'। তাঁর 'সুলতানার স্বপ্নকে' বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসাবে ধরা হয়। বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বেগম রোকেয়ার বিবাহিত জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। উনিশশ' নয় সালের তেসরা মে স্বামীর মৃত্যুর পর আত্মপ্রকাশ করলেন এক নতুন বেগম রোকেয়া। লেখালেখির বাইরে সমাজে বদল আনার দিকে এবং নারীশিক্ষার বিস্তারেও তিনি মন দিলেন। বেগম রোকেয়াকে নিয়ে প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাতা বাণী দত্ত বিবিসি বাংলাকে জানান কীভাবে কুসংস্কারের বেড়াজাল ডিঙিয়ে তিনি নারীদের শিক্ষাদানে ব্রতী হয়েছিলেন। "বেগম রোকেয়া নিজেই বলে গেছেন তাঁকে ৫ বছর বয়স থেকে পর্দা করতে হতো। সেই পর্দাকে পরিণত বয়সে মনের ভেতর থেকে তিনি কখনই সমর্থন করেননি। কিন্তু মেয়েদের অভিভাবকরা যাতে তাদের স্কুলে পাঠায় তার জন্য তিনি নিজে পর্দা করে, বোরখা পরে মেয়েদের বাড়ি বাড়ি যেতেন।" বাণী দত্ত বলেছেন বেগম রোকেয়া নিজের সব সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে তাঁর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি আজ কলকাতার একটি নামকরা মেয়েদের সরকারি স্কুল -সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল কয়েকবার স্থান বদল করে এখন কলকাতার লর্ড সিনহা রোডে প্রথম সারির সরকারি মেয়েদের স্কুল। স্কুলটি তিনি প্রথম শুরু করেন ভাগলপুরে ১৯০৯ সালের পয়লা অক্টোবর। তারপর পারিবারিক কারণে বেগম রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন এবং ১৯১১ সালের ১৬ই মার্চ কলকাতার ১৩ নং ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে নতুন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করেন 'সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল'। আটজন ছাত্রীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের যাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সোনিয়া আনিম বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন তিনি মনে করেন নারী হিসাবে মেয়েরা আজ যেখানে পৌঁছেছেন, তারা সেখানে পৌঁছতেন না, যদি নারীর উন্নতির জন্য বেগম রোকেয়ার মত মনীষীর অবদান না থাকত। ধর্ম এবং সমাজের অনেক রীতিনীতি বেগম রোকেয়া মেনে নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু একটা রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়ে ওঠার পরেও তিনি সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থাগুলোকে উপেক্ষা করে এগোতে পেরেছিলেন, বলেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আয়েষা খানম (বর্তমানে সংস্থার সভাপতি)। "তাঁর সমস্ত কিছুর মাঝে যে একটা প্রচণ্ড ধরনের বিদ্রোহ ছিল- প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, নারীর প্রচলিত অবস্থান, নারীর প্রতি তৎকালীন সমাজের প্রচলিত যে দৃষ্টিভঙ্গি -এসব কিছু নিয়ে সমাজের বিবেককে তিনি চাবুক দিয়ে কষাঘাত করেছিলেন।" "নারীর শিক্ষাগ্রহণ, নারীর বাইরে চলাফেরা এবং কাজের অধিকার, স্বাধীন চিন্তা-চেতনার অধিকার, এই বিষয়গুলো যে নারীর মুক্তির সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ সেসব কথা বেগম রোকেয়া সারা জীবন বলে এসেছেন," বলেন আয়েষা খানম। নারীর এগিয়ে চলার জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং নারী পুরুষের মধ্যে সমতার পক্ষে তিনি যুক্তি তুলে ধরেছেন তাঁর লেখা ও কাজে। সমাজে নারীর অসম অবস্থানের কথা সবসময়ে ফুটে উঠেছে তাঁর দৃপ্ত কলমে। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি কখনই সম্ভবপর নয়। সারা জীবন তিনি পিছিয়ে থাকা নারী সমাজকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে অধিকার সচেতন করে তোলার প্রয়াস নিয়েছিলেন। সারা জীবন নারী মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন বেগম রোকেয়া। ড. সোনিয়া আনিম মনে করেন তখন বাঙালির যে নবজাগরণ ঘটেছিল সেই প্রেক্ষাপটে বাংলার মুসলিম সমাজেও নবজাগরণের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। "সেখানে বেগম রোকেয়ার মত একজন মনীষীর প্রয়োজন ছিল বাঙালি নারীর নবজাগরণের পথ প্রশস্ত করার জন্য।" ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থানে ছড়িয়ে আছে বিশিষ্ট এই নারী শিক্ষাবিদের অবদানের স্মৃতিবহনকারী স্কুল সহ বহু প্রতিষ্ঠান। বিবিসি বাংলাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কেতকী কুশারী ডাইসন বলেছেন বাংলার নবজাগরণের মত বড় একটা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছিলেন বেগম রোকেয়া, কিন্তু নারী মুক্তির বাস্তব পথ দেখাতে তাঁর অবদান ছিল বিশাল। "তাঁর অর্জনের পেছনে ওই নবজাগরণ নি:সন্দেহে একটা বড় প্রেরণা ছিল। কিন্তু সে সময় আরও অনেকে হয়ত একইভাবে ভাবছিলেন, একইধরনের কর্মে আত্মনিবেদন করেছিলেন। কিন্তু বেগম রোকেয়ার যে কাজটা সবার থেকে আলাদা হয়ে উঠেছিল তা হলো মেয়েদের শিক্ষার জন্য তাঁর সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা, যেটা ছিল নারী শিক্ষার পথে একটা মস্ত বড় অবদান।" আয়েষা খানম মনে করেন শুধু কথা দিয়ে বা শুধু বুদ্ধিজীবী মহলে নিজের চিন্তাচেতনার কথা ছড়িয়ে দিয়েই থেমে থাকেননি বেগম রোকেয়া। "তিনি সমাজ গঠনে ব্রতী হয়েছিলেন। স্বল্প পরিসরে হলেও তিনি সংগঠন গড়ার একটা প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। সাধারণ মেয়েদের মাঝে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি কৌশলীও ছিলেন। তাঁর বাস্তব-বোধও ছিল অসামান্য। তিনি যখন দেখলেন স্কুলে মেয়েদের আনতে গেলে তারা বে-পর্দা হয়ে যাচ্ছে, মুসলিম পরিবারগুলো মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চাইছে না, তখন তিনি নিজেই কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে গেছেন।" সমাজের অনেক প্রচলিত রীতিনীতি মেনেই তিনি তাঁর কর্মযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময়েই তিনি নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং শুধু শিক্ষাগত মুক্তি নয়, সার্বিক মুক্তির কথা চিন্তা করেছেন। শুধু শিক্ষাগত মুক্তি নয়, নারীর সার্বিক মুক্তির কথা চিন্তা করেছিলেন বেগম রোকেয়া। নারী জাতি এবং অর্থনৈতিক সাবলম্বন বিষয়ে তাঁর এক প্রবন্ধে তিনি নারী পুরুষের সমকক্ষতার যে আর্দশের কথা লিখে গেছেন তা আজকের দিনে নারী সমাজের জন্য একটা আদর্শ। তিনি জন্মেছিলেন সময়ের অনেক আগে। "তাঁর অসামান্য একটা দূরদৃষ্টি ছিল। যার পরিচয় আমরা পাই তাঁর 'সুলতানার স্বপ্নে' যেখানে তিনি বলেছিলেন -যাহা যাহা পুরুষ পারিবে, তাহাই নারী পারিবে। সেখানে ছিল একটা অসাধারণ স্বপ্ন যে নারীরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে," বলেন আয়েষা খানম। তাঁর লেখায় বর্ণিত রণকৌশল, রান্নার কৌশল, যানবাহন সবই সময়ের তুলনায় ছিল অনেক এগিয়ে। "বেগম রোকেয়া বলেছিলেন মনে হয় ধর্ম গ্রন্থগুলো পুরুষের দ্বারা লিখিত। যা কিছু লেখা হয়েছে সবই নারীর বিপক্ষে। নীতি, প্রথা, দৃষ্টিভঙ্গি, আইন সর্বত্রই নারীর পক্ষে যে খুব কম কথা বলা হয়েছে সেটা তিনি তুলে ধরেছিলেন।" পুরুষশাসিত সমাজের আচার অনাচার কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন বেগম রোকেয়া। মুসলিম মেয়েদের প্রগতির জন্য তিনি সারা জীবন কাজ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন মেয়েদের সাবলম্বী হবার পথে, মুক্তির পথে শিক্ষার বিকাশই আসল রাস্তা। বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবনাবসান হয় ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে ষষ্ঠ স্থানে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন-নারী জাগরণের একজন পথিকৃৎ
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
এটা সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকেই হয়ে থাকে। মাইগ্রেন সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিবিসি নিউজ বাংলার আজকের পর্ব। আপনার স্বাস্থ্য বিবিসি বাংলার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত একটি ইউটিউব সিরিজ। ফেব্রুয়ারি জুড়ে প্রতি সোম এবং বুধবার এই সিরিজের পর্ব আপনারা পাবেন আমাদের চ্যানেলে। এই পর্বটি ইউটিউবে দেখতে ক্লিক করুন এখানে:
মাইগ্রেন কী, কেন হয়, চিকিৎসা আছে কি?
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
ইয়াহিয়া খান চারটের সময়ে জেনারেল হামিদ তার নিজের মিলিটারি জিপ চালিয়ে এসেছিলেন। জিপে তার পাশেই চড়ে বসেছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া। আর দুজন এডিসি পিছনের আসনে। বিপত্তি বাধল শুরুতেই। কোথা থেকে একটা বড় শকুন এসে জিপের সামনে বসে পড়ল। হর্ণ দেওয়া হল, কিন্তু তাতেও শকুনটার নড়ার কোনও লক্ষণ দেখা গেল না। ইয়হিয়া খান জিপ থেকে নেমে গিয়ে হাতের ব্যাটনটা দিয়ে শকুনটাকে সরানোর চেষ্টা করলেন। তা-ও সে নড়ে না! শেষমেশ বাগানে কাজ করা এক মালী দৌড়ে এসে হাতের কোদালটা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে খোঁচা দিয়ে শকুনটাকে সরালো ওখান থেকে। আরো পড়ুন : বইমেলায় বিক্রির শীর্ষে এখনো হুমায়ুন আহমেদ 'ডুব' ছবি নিয়ে বিতর্ক: এটি কি হুমায়ুন আহমেদের জীবনী? দেশে ফিরে যাচ্ছে কিছু রোহিঙ্গা, বলছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইন্টারনেট মাতলো ‘ক্ষুদ্রাকৃতির ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নিয়ে দুই জেনারেলকে নিয়ে জিপ এগুলো। তারা চারজন একটা ভবনের সামনে পৌঁছিয়েছিলেন কিছুক্ষণ পরে, যেটাকে বাইরে থেকে দেখলে গুদাম মনে হবে। হর্ণ বাজাতেই এক রক্ষী বাইরে এসে যখনই জেনারেল ইয়াহিয়াকে দেখল, সঙ্গে সঙ্গে স্যালুট করে দরজা খুলে দিল। ভবনের সামনেই অপেক্ষা করছিলেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল রহিম খাঁ। ওই ভবনটি আসলে ছিল পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর সদর দপ্তর - সাধারন মানুষের চোখের আড়ালে রাখা হয়েছিল সেটিকে। সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ভেতরে যখন বৈঠকে বসছেন সবাই, ততক্ষণে পাকিস্তানের এফ-৮৬ বোমারু বিমানগুলি ভারতের ওপরে হামলা করার জন্য উড়ে গেছে। আধঘন্টার বৈঠকের পরে যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ফিরে যাওয়ার সময় হল, তখনই বিমান হামলার সাইরেন বাজতে শুরু করল। জেনারেল খানের এডিসি আর্শাদ সামি বিবিসি হিন্দিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "দেখলাম খুব নিচু দিয়ে বেশ কয়েকটা যুদ্ধ বিমান উড়ে গেল। ইয়াহিয়া খান ড্রাইভারকে ইঞ্জিন বন্ধ করে, আলো নিভিয়ে দিতে বলেছিলেন। তখন উল্টোদিক থেকে আরও কয়েকটা বিমান উড়ে আসতে দেখলাম। ইয়াহিয়া খান বেশ গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন এগুলো আমাদের ইন্টারসেপ্টার বিমান।" আসলে ৭১-এর যুদ্ধটা তখন ইয়াহিয়া খানের প্রত্যাশার ঠিক উল্টো দিকে গড়াচ্ছিল। চারদিক থেকেই ব্যর্থতার খবর আসছে। চীন থেকে কোনও সাহায্য পাওয়ার আশা ত্যাগ করেছেন তিনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে ফোন করেছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া, কিন্তু নিক্সন তখন একটা বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। আর্শাদ সামি খাঁ বলছিলেন, "১৩ ডিসেম্বর রাত প্রায় দুটোর সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের টেলিফোন অপারেটর আমকে জানিয়েছিলেন যে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ফোন করেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। টেলিফোন লাইনটা খুব খারাপ ছিল। জেনারেল আমাকে ঘুম জড়ানো গলায় বলেছিলেন আমি যেন অন্য টেলিফোনে সব কথা শুনি আর লাইন যদি কেটে যায় তাহলে আমি-ই যেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাই।" প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কথার মূল বিষয়টা ছিল যে তিনি পাকিস্তানের সুরক্ষার জন্য খুবই চিন্তিত আর তাই সাহায্যের জন্য সেভেন্থ ফ্লিট বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা করিয়ে দিয়েছেন। "নিক্সনের ফোন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেনারেল ইয়াহিয়া আমাকে বললেন জেনারেল হামিদকে ফোন কর। হামিদ ফোনটা ধরতেই ইয়াহিয়া প্রায় চিৎকার করে বলেছিলেন, উই হ্যাভ ডান ইট। আমেরিকান্স আর অন দেয়ার ওয়ে," বলছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার আর্শাদ সামি খাঁ। সেভেন্থ ফ্লিট পরের দিন তো দূরের কথা, ঢাকার পতনের দিন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে পৌঁছয় নি। জেনারেল মানেকশ শেষমেশ দেশকে দুটুকরো করে 'নিজের ধার পরিশোধ' করতে হয়েছিল জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে! কোন ঋণ পরিশোধ করেছিলেন তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে দিয়ে? জেনারেল এস কে সিনহা তাঁর আত্মজীবনী 'আ সোলজার রিমেমবার্স'-এ লিখেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ-এর কাছে ইয়াহিয়া খানের সেই ধার নেওয়ার কাহিনি। ১৯৪৭ এ স্বাধীনতার সময়ে মানেকশ আর ইয়াহিয়া - দুজনেই দিল্লিতে সেনা সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ইয়াহিয়ার অনেক দিনের পছন্দ ছিল মানেকশ-এর লাল রঙের মোটরসাইকেলটা। ১৯৪৭-এ যখন ইয়াহিয়া পাকিস্তানে চলে যাচ্ছেন, তখন মানেকশ নিজের লাল মোটরসাইকেলটা ইয়াহিয়াকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ইয়াহিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে পাকিস্তানে পৌঁছিয়েই টাকাটা তিনি মানেকশ-কে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা তিনি ভুলে যান। ৭১-এর যুদ্ধের পরে মানেকশ মজা করে বলেছিলেন 'ইয়াহিয়া খানের চেক আসবে বলে ২৪ বছর অপেক্ষা করেছি, কিন্তু চেক আর আসে নি। সেই ৪৭-এ যে ধার করেছিলেন, নিজের দেশের অর্দ্ধেকটা দিয়ে সেই ধার শোধ করলেন ইয়াহিয়া।' সঙ্গীতশিল্পী নূরজাহান ইয়াহিয়া খানের যে শুধু মানেকশ-এর লাল মোটরসাইকেলের প্রতি নজর ছিল, তা না। তাঁর নারী প্রীতিও সবাই জানে। তাঁকে 'লেডিজ ম্যান' বলা হত। অনেক নারীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল - যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী 'মালিকা-এ-তরন্নুম' - নূরজাহান। জেনারেল ইয়াহিয়া নূরজাহানকে নূরি বলে ডাকতেন, আর তিনি ইয়হিয়াকে 'সরকার' বলে সম্বোধন করতেন। নূরজাহান আর ইয়াহিয়ার সম্পর্ক নিয়ে একটা গল্প শোনাচ্ছিলেন আর্শাদ সামি। "একবার করাচিতে ইয়াহিয়া তার বন্ধুদের সঙ্গে এক আসরে বসেছিলেন। বেশ অনেক রাতে আমাকে ডেকে বললেন, নূরজাহানের একটা নতুন গান বেরিয়েছে 'মেরি চিচি দা' নামে। বন্ধুরা বলছে এই গানটা সবেমাত্র বেরিয়েছে, এখনও নাকি বাজারে আসে নি। কিন্তু ইয়াহিয়া বন্ধুদের চ্যালেঞ্জ করে বলে দিয়েছেন যে তাঁর এডিসি, অর্থাৎ আমি, ওই গানের রেকর্ডটা যেভাবেই হোক যোগাড় করে আনতে পারব," বলছিলেন আর্শাদ সামি। সেদিনের কথা মনে করে স্কোয়াড্রন লিডার সামি বলছিলেন, "গানটার লাইন মনে করতে করতে আমার নিজের ঘরে পৌঁছলাম, কিন্তু ঘরে গিয়ে গানের কলিটা ভুলে গেলাম। আমার স্ত্রীকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম নূরজাহানের নতুন গানটার কথা ও জানে কী না, যেটা 'চ' দিয়ে শুরু হয়েছে! আমার স্ত্রী কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে দিল, 'মেরি চিচি দা'। ইয়াহিয়া খান এবার সেই গানের রেকর্ড খুঁজে বের করার পালা। রাত এগারোটায় গাড়ি আনিয়ে করাচির গোড়ি বাজার গেলেন আর্শাদ সামি। সব দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ গলি - ও গলি ঘুরে শেষমেশ একটা রেকর্ডের দোকান খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। দরজায় ধাক্কা দিয়ে মালিককে ঘুম থেকে তুলে বলেছিলেন নূরজাহানের নতুন রেকর্ডের কথা। সেই ভদ্রলোক জানিয়েছিলেন পরের দিন সকালে আসতে। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া বন্ধুদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসে আছেন যে তাঁর এডিসি ওই রেকর্ড নিয়ে আসবেই। আর্শাদ সামি সেই দোকানীকে বলেছিলেন, "না ভাই, কাল সকালে না, আজই লাগবে। একজনের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি যে আজকেই রেকর্ডটা যোগাড় করব। যা দাম চাইবেন, তাই দেব।" দোকানী হয়তো মি. সামিকে ভেবেছিল বিগড়ে যাওয়া কোনও নবাবপুত্তুর। দোকান খুলে রেকর্ডটা বার করে দিয়েছিল্ সেই সময়ে রেকর্ডের দাম ছিল পাঁচ টাকা। আর্শাদ সামি ৫০ টাকা ধরিয়ে দিয়েছিলেন দোকানীকে। সেই রেকর্ড নিয়ে গিয়ে ইয়াহিয়া খানের হাতে দিতেই তিনি খুশিতে ফেটে পড়েছিলেন। রিচার্ড নিক্সনের সাথে শুধু নারীতে নয়, সুরাতেও অসম্ভব আসক্ত ছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া। পার্টিতে যাওয়া ছিল তাঁর একটা অন্যতম শখ। একবার রাষ্ট্রপতি হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানে গিয়েছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া। সঙ্গে ছিলেন আর্শাদ সামি খাঁ। সামি বিবিসিকে বলছিলেন, "ইয়াহিয়া এক দিন সন্ধ্যায় আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পার্টিতে যাবে? আমি হ্যাঁ বলতেই তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমি কোন গাড়ি ব্যবহার করি। মার্সিডিজের কথা বলতেই তিনি বলেছিলেন আজ অন্য কোনও গাড়ি নাও। ড্রাইভারকে বলে দেবে তোমার ঘরের পাশে পার্ক করে রাখতে। ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিও। ঠিক রাত নটা পাঁচ মিনিটে পিছনের বারান্দার কাছে এসে গাড়ির লাইট নিভিয়ে দেবে, পেছনের দরজাটা খুলে রাখবে। আমি নটা ১৫-এ গাড়িতে উঠব। একটা চাদর দিয়ে ঢেকে দেবে আমাকে। কেউ যেন বুঝতে না পারে গাড়িতে কে আছে।" সেই মতোই জেনারেল ইয়াহিয়াকে নিয়ে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে বেরিয়েছিলেন আর্শাদ। তবে কিছুদূর গিয়েই পেছন থেকে চালকের পাশের আসনে চলে আসেন ইয়াহিয়া। আরও একটু পরে তিনি বলেন 'মিসেস খন্দকারের জন্য ফুল কিনতে হবে। বন্ধু মি. খন্দকারের বাড়িতে পৌঁছে নিজের হাতেই দরজায় বেল দিয়েছিলেন ইয়াহিয়া। "খন্দকার সাহেব তো দরজায় ইয়াহিয়া খানকে দেখে অবাক। তিনি ভাবতেও পারেন নি যে সাইরেন না বাজিয়ে, লোকলস্কর না নিয়ে চুপচাপ ইয়াহিয়া তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যাবেন! তবে ইয়াহিয়া অবাক হয়ে যাওয়া বন্ধুকে বলেছিলেন, 'কী কানু, তুমি ভেতরে যেতে বলবে না?' ভারী চেহারা নিয়েও পার্টিতে খুব ভাল নাচতে পারতেন ইয়াহিয়া। সেই রাতে মি. খন্দকারের পার্টিতে যতজন মহিলা ছিলেন, প্রত্যেকের সঙ্গে নেচেছিলেন ইয়াহিয়া। মাঝে মাঝে আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে আমার ঘুম পাচ্ছে কী না," বিবিসি হিন্দিকে বলছিলেন আর্শাদ সামি খাঁ। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ ইয়াহিয়ার আরেকটা শখ ছিল লোকজনকে উপহার দেওয়া। এডিসি আর্শাদকে প্রথম দিনেই বলে দিয়েছিলেন যে সবসময়ে যেন দেশ-বিদেশের অতিথিদের দেওয়ার জন্য কিছু উপহার মজুত থাকে। একবার বেগম ইয়াহিয়ার এক বান্ধবী ঢাকা থেকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ইসলামাবাদে গিয়েছিলেন। তাঁরা দুজনে চা খাচ্ছিলেন, আর জেনারেল গল্ফ খেলে ফিরেছিলেন তখন। আর্শাদ সামি বলছিলেন, "বেগম ইয়াহিয়া ফার্সিতে জেনারেলকে বলেছিলেন যে সেদিন তাঁর বান্ধবীর জন্মদিন। ইয়হিয়া জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি কী উপহার দিতে পারেন? ওই মহিলা খুব সঙ্কোচ নিয়ে বলেছিলেন, আপনার ব্যবহার করা কোনও কিছু দিন। ইয়াহিয়া বলেন ওই সময়ে তো গল্ফ টি শার্ট, প্যান্ট আর জুতো ছাড়া আর কিছু নেই! ওগুলো তো কোনও মহিলাকে দেওয়া যায় না!" "তারপরেই তাঁর খেয়াল হয় যে একটা তোয়ালে রুমাল আছে, ঘামে ভেজা। তবে পরক্ষণেই তিনি বলেন আরও একটা জিনিষ আছে। আপনি চোখ বন্ধ করে আমার দিকে হাত বাড়ান। ওই মহিলা চোখ বন্ধ করে হাত বাড়াতেই ইয়াহিয়া নিজের হাত থেকে সোনার রোলেক্স ঘড়িটা খুলে ওই মহিলার কব্জিতে পরিয়ে দেন। ভদ্রমহিলা চোখ খুলে ঘড়িটা দেখেই বলেন যে এটা তো খুব দামী জিনিষ, এটা আপনি ফিরিয়ে নিন। ইয়াহিয়া জবাব দিয়েছিলেন, একবার উপহার দেওয়া কোনও কিছু ফেরত নেওয়া যায় না," বলছিলেন আর্শাদ সামি। ৭১-এর যুদ্ধটাও যেন অনেকটা সেরকমই ছিল ইয়াহিয়া খানের কাছে। একবার হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পরে আর যুদ্ধটাকে নিজের কব্জায় ফিরিয়ে আনতে পারেন নি তিনি। তবে তার জন্য ইয়াহিয়া আর তাঁর অন্য জেনারেলদের অত্যধিক আত্মবিশ্বাস-ই অনেকটা দায়ী বলে মনে করেন সত্তরের দশকে পাকিস্তানের বিদেশ সচিব হিসাবে কাজ করা সুলতান মুহম্মদ খাঁ। তিনি নিজের আত্মজীবনী 'মেময়ার্স এন্ড রিফ্লেকশন অফ আ পাকিস্তানী ডিপ্লোম্যাট' বইতে লিখেছিলেন, "ইয়াহিয়া খান এটা বিশ্বাস করতে তৈরি ছিলেন না যে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে হস্তক্ষেপ করবে। সেই সময়ে পাকিস্তানের সেনা জেনারেলদের মধ্যেও এই ভুল ধারণা ছিল যে তাঁরা ছররা বন্দুক দিয়েই বাঙালিদের মাথা নত করিয়ে দিতে পারবে, কারণ বাঙালিরা যুদ্ধ করতে জানে না। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে তাঁরা কতটা ভুল ছিলেন।" আর্শাদ সামি খাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি হিন্দির রেহান ফজল।
একাত্তরে পরাজয়ের আগের দিনগুলোতে ইয়াহিয়া খান: নিক্সন, সপ্তম নৌবহর এবং নুরজাহান
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
ভারতের এই সম্প্রদায়ে বাবা মা তাদের কন্যা সন্তানকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে। দুর্ভাগ্যবশত, এই উদযাপনের পেছনে ছিল বিচিত্র একটি উদ্দেশ্য। হিনা দেশটির পশ্চাৎপদ বাচ্ছারা সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। এই সম্প্রদায়ে শত শত বছর ধরে এখন পর্যন্ত একটি প্রথা প্রচলিত আছে। যেখানে সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের পরিবারে জন্ম নেয়া সবচেয়ে বড় মেয়েকে পতিতাবৃত্তির দিকে ঠেলে দেয়। আর এই পতিতা বাণিজ্য শুরু হয় মেয়ের মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর বয়সেই। পরিবারের পুরুষ সদস্য থেকে শুরু করে বাকি সবার জীবন ওইটুকু মেয়ের আয়ের ওপরই নির্ভর করে। কয়েকটি ক্ষেত্রে মেয়েটির আপন বাবা অথবা ভাই দালাল হিসেবে কাজ করে। যখন এই মেয়েটির বয়স হয়ে যায়, তখন তার স্থলে জায়গা করে নেয় তারই ছোট বোন। এভাবেই এই প্রথা সম্প্রদায়ের সবার গ্রহণযোগ্যতার ওপর ভর করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পালন হয়ে আসছে। এই সম্প্রদায়ে বিয়েটাও হয় ভিন্নভাবে। এখানে বিয়ে দেয়ার সময় কনের পরিবার বরের পরিবারের কাছ থেকে বড় অংকের অর্থ দাবি করে। যেটাকে অনেকেই উল্টো যৌতুক হিসেবে আখ্যা দেন। আরও পড়তে পারেন: অমীমাংসিত দায়বদ্ধতা : লক্ষ্য যখন যৌনকর্মী যৌন শিক্ষা: বাংলাদেশে কী পড়ানো হচ্ছে শ্রেণীকক্ষে ভারতে এক গৃহকর্মীকে যৌন হয়রানির কাহিনী পোশাক শিল্পে যৌন হয়রানি: 'ওরা গায়ে হাত দেয়' হিনা ছোটবেলা থেকে তার সম্প্রদায়ের এই প্রথা দেখে বড় হয়েছেন। 'আমার আর কি বিকল্প ছিল?' হিনাকে জন্মের পর থেকে এই ধরণের জীবনের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং তারপরে খুব অল্প বয়সেই তাকে এই কাজে জোরপূর্বক ঠেলে দেয়া হয়। বিবিসি হিন্দিকে তিনি বলেন, "আমাকে যখন এই পেশায় ঠেলে দেয়া হয়। তখন আমার বয়স মাত্র ১৫ বছর। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে আমাকে আমার মা ও নানীর দেখানো পথেই চলতে হয়েছে।" প্রতিদিন তার কাছে গ্রামীণ ধনী থেকে শুরু করে ট্রাক চালক পর্যন্ত একাধিক খদ্দের আসতো। "১৮ বছর বয়সে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার সাথে কত অন্যায় হয়েছে এবং ভীষণ রাগও হয়েছিল তখন। কিন্তু এ ছাড়া আমার আর কি-ই বা করার ছিল? "যদি আমি এভাবে উপার্জন না করতাম তাহলে আমার পরিবার কীভাবে বাঁচত?" ভারতের বাচ্ছারা সম্প্রদায়ের মানুষেরা সাধারণত ভীষণ দারিদ্র্যপীড়িত। পরিবারের জন্য উপার্জন এবং আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে তারা নারী সদস্যদের ওপর নির্ভর করে। স্থানীয় এনজিওর সমন্বয়ক আকাশ চৌহানের মতে, " এই পেশার আসা এক তৃতীয়াংশের বেশি মেয়ে বয়সে অনেক ছোট।" বাচ্ছারা, একসময় যাযাবর উপজাতি গোষ্ঠী ছিল। পরে তারা কেন্দ্রীয় রাজ্য মধ্য প্রদেশের তিনটি জেলায় ছড়িয়ে যায়। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকা বা মহাসড়কের পাশে থাকে, যেখানে ট্রাক ড্রাইভাররা বিরতি নিয়ে থাকে। এই প্রথায় সম্পৃক্ত এক তৃতীয়াংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক, এনজিও'র তথ্য। যে কৌশলে চলছে এই বাণিজ্য: অল্প বয়সী মেয়েরা, যারা কিনা স্থানীয়ভাবে "খেলোয়াড়" হিসাবে পরিচিত, তারা দলবেঁধে না হলে একলা একলাই গ্রাহকদের অনুরোধ করার জন্য অপেক্ষা করে। এছাড়া পথের দুই পাশে প্রায়শই ছোট দোকানের মত বুথ থাকে, সেখানে মেয়েটির দালাল হিসেবে তার ভাই না হলে বাবা, খদ্দেরকে নিমন্ত্রণ জানায়। তারা চালকদের সাথে একটি চুক্তি করে, যা সাধারণত গ্রাহক প্রতি ১০০ থেকে ২০০ ভারতীয় রুপি হয়ে থাকে। ডলারের হিসাবে সেটা দেড় থেকে তিন ডলারেরও কম। স্থানীয়দের মতে, একটি কুমারী মেয়ের জন্য সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায়। খদ্দের প্রতি সেটা পাঁচ হাজার রুপি বা ৭২ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ নিয়ে বিবিসিকে হিনা বলেন, "প্রতিদিন, দিনের বেলা প্রায় চার থেকে পাঁচজন পুরুষ আসে। রাতের বেলা, আমরা হোটেল বা কাছাকাছি অন্য কোথাও যাই। সবসময় সংক্রমিত রোগে ভোগার ঝুঁকি ছিল," দ্য হিন্দু নামে ভারতের একটি জাতীয় পত্রিকা ২০০০ সালে এই ধরনের চিকিৎসার অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদন করে। তারা জানিয়েছে যে এই সম্প্রদায়ের সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্যকে পাওয়া গেছে যারা কিনা এইচআইভি পজিটিভ। শতাংশের হিসাবে এই আক্রান্তের হার সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যার ১৫%। এই মেয়েরা প্রায়ই রাস্তার পাশে বিভিন্ন দোকানের কাছে অপেক্ষা করে। এসব খেলোয়াড়দের অনেক মেয়েরা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এই পেশায় আসায় কয়েক বছরের মাথায় হিনা একটি মেয়ে শিশুর জন্ম দেয়। মা হওয়ার পরও তাকে আরও বেশি বেশি পরিশ্রম করার জন্য চাপ দেয়া হতো। "অনেক মেয়েরা এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লেও তাদের এই কাজ চালিয়ে যেতে হয়" "সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য আরও অর্থ উপার্জন করতে চাপ দেয়া হয় তাদের," জানান হিনা। একজন যৌনকর্মী হওয়ার অর্থ হচ্ছে যে সে তার সম্প্রদায়ের মধ্যে কাউকে বিয়ে করার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবশেষে, হিনা স্থানীয় এনজিও'র সহায়তায় এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। "এই জঘন্য প্রথার মধ্য দিয়ে যে মেয়েটি যায়,শুধুমাত্র সেই, এই সংগ্রামটা বুঝতে পারে। আমি জানি এটার অনুভূতিটা কেমন। তাই এই প্রথা চিরতরে উপড়ে দিতে আমি সহায়তা করে যাব।" সামাজিকভাবে অনুমোদিত এই প্রথার উৎস নিয়ে অনেক তত্ত্ব আছে। তাদের মধ্যে একজন জানায়, কিভাবে নরমেডিক উপজাতিদের বাহিরাগত হিসেবে অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। পরে তারা এই যৌন বাণিজ্যকে দরিদ্রতা কাটিয়ে ওঠার উপায় বলে মনে করতে থাকে। বেশিরভাগ সময় এই মেয়েরা রাস্তার পথিকদের খদ্দের বানিয়ে থাকে। ভারতের আইন কি বলে? ভারতে মেয়ের চাইতে ছেলে সন্তান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকায় দেশটিতে লিঙ্গের অনুপাতে ভয়াবহ অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। কিন্তু বাচ্ছারা সম্প্রদায়ে এই সমস্যাটি পুরোই উল্টো। আকাশ চৌহান বলেন, " এই সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৩ হাজার সদস্য রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৬৫% নারী।" বেশি সংখ্যক নারী হওয়ার একটি কারণ হল এই অঞ্চলে অল্প বয়সী মেয়েদের অবৈধভাবে পাচার করা হয়। পুলিশ সুপার মনোজ কুমার সিং বিবিসিকে জানান, গত কয়েক মাসে আমরা এই এলাকা থেকে প্রায় ৫০টি মেয়েকে উদ্ধার করেছে। "এমনকি আমরা দুই বছর বয়সী একটি মেয়েকেও খুঁজে পাই। তাকে এখন একটি শেল্টার হোমে পাঠানো হয়েছে।" মনোজ বলেন, তারা ঘন ঘন এ ধরণের আক্রমণ চালান কিন্তু গভীরভাবে প্রোথিত এই প্রথা শুধুমাত্র সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেই শেষ করা সম্ভব। এই প্রথার মধ্যে থেকে অনেকেই সন্তান ধারণ করেন। এবং মেয়ে সন্তান হলে তার ভাগ্যেও এমন পরিণতি হয়। মধ্যপ্রদেশের, যেখানে এই সম্প্রদায় বসবাস করে, সম্প্রতি একটি আইন পাস করে যেখানে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক কেউ, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক করলে তাদের কারাদণ্ড বাড়ানো হয়েছে। ভারতে সম্মতির জন্য ন্যূনতম বৈধ বয়স ১৮ বছর ধরা হয়। কিন্তু এই ধরনের পদক্ষেপ পরিস্থিতি পরিবর্তন আনতে পারেনি। সামনের পথটা কেমন বাচ্ছারাসদের এই পতিতাবৃত্তির প্রথা পরিহারের উদ্দেশ্যে ১৯৯৩ সালে একটি প্রকল্প চালু করা হয়। কিন্তু এটি এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা হয়নি। নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা রাজেন্দ্র মহাজন বলেন, "প্রতি বছর আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের মানদণ্ডগুলো পূরণ করতে পারে নি।" জাবালি নামের এই প্রকল্পটি মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সচেতনতার মাধ্যমে এই নারীদের পুনর্বাসনের উপর জোর দেবে। এতে সরকারের সাহায্যসহ বা ছাড়া, পরিবর্তন ধীরে ধীরে হলেও আসছে। এখন সম্প্রদায়ের অনেক অল্পবয়সী মেয়ে এই প্রথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্যত্র চাকরি খুঁজে নিচ্ছেন বা আরও শিক্ষা গ্রহণ করছে। এছাড়া স্থানীয় কিছু উদ্যোগও সাহায্য প্রদান করছে। হিনা মনে করেন, শিক্ষাই পারে মেয়েদের এ ধরণের প্রথা থেকে বের করে আনতে। হিনাও এখন এ ধরণের উদ্যোগের একটি অংশ- এই উদ্যোগের আওতায় তাকে ২০১৬ সালে উদ্ধার করা হয়েছিল। হিনা বলেন, "আমি অন্যান্য মেয়েদের বোঝাই যে তারা এখানে এলে সাহায্য পাবে এবং এই পেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। আমি এজন্য আমার সাধ্যমত যা পারি, করব।" অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। যেখানে ভিক্টিমদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। "এই মেয়েদের জোরপূর্বক এই পেশায় থাকতে বাধ্য হয়েছে কারণ তাদের চাকরির অন্য কোন উপায় নেই। "শুধু শিক্ষা তাদের অগ্রসর হতে সাহায্য করতে পারে।" বলছেন হিনা।
ভারতের যে সম্প্রদায়ে পতিতাবৃত্তিকে ঐতিহ্য ভাবা হয়
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
ফরাসী পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে জর্ডান, কাতার, কুয়েত ও সৌদি আরবসহ অনেকে দেশে। সর্বশেষ এমন আহ্বান জানিয়েছেন রস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান। বাংলাদেশেও ইসলামপন্থী দলগুলো ফ্রান্সের পণ্য বর্জন ও দেশটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তুলছে। কিন্তু ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিমরা পুরো বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন? ভিডিওটি বিবিসি বাংলার ইউটিউব চ্যানেলেও দেখতে পারেন এখানে ক্লিক করে।
বয়কট ফ্রান্স আন্দোলন ও নবীর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ফরাসী মুসলিমরা যা বলছেন
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
রবার্তো গার্সিয়া: 'আমি নিশ্চিতভাবেই বেঁচে আছি এবং জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছি' এই তথাকথিত 'মৃত ভোটারদের' একজন হচ্ছেন মারিয়া আরেডোনডো। আমরা যখন তাকে ফোন করলাম, তিনি আমাদের বললেন, "আমার বয়স হয়তো ৭২, কিন্তু আমি এখনো বেঁচে আছি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি। আমার মাথাও ঠিক মতো কাজ করছে এবং আমার স্বাস্থ্য বেশ ভালো।" মারিয়া আমাদের জানালেন, নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। তিনি যখন জানলেন, মিশিগানের কথিত মৃত ভোটারদের এক তালিকায় তার নামটিও আছে, মারিয়া খুবই অবাক হলেন। মারিয়ার মতো আরও অনেক মানুষ, যাদের নাম রয়েছে এই কথিত মৃত ভোটারদের তালিকায়, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এদের বেলাতেও আমরা মারিয়ার মতো একই ধরণের কাহিনী জানতে পেরেছি। যুক্তরাষ্ট্রের আগের নির্বাচনগুলোতেও এরকম ঘটনা ধরা পড়েছে যেখানে মনে হয়েছে যেন কোন মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়েছে। এরকম ঘটনা ঘটে মূলত সরকারি নথিপত্রের ভুলে। অথবা এই পরিবারে একই নামে থাকা আরেক ব্যক্তি যখন তাদের ব্যালট পাঠিয়ে ভোট দেন তখন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা অভিযোগ করছেন যে এবারের নির্বাচনে এটা ব্যাপক হারে ঘটেছে। তাদের এই দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ আছে কিনা সেটা জানতে আমরা অনুসন্ধান চালাই। মিশিগানে দশ হাজার 'মৃত অনুপস্থিত ভোটার' ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এক রাজনৈতিক কর্মী দশ হাজার লোকের নামের একটি তালিকা টুইটারে পোস্ট করেছিলেন। সেখান থেকেই এই বিতর্কের শুরু। দশ হাজার ‌‌'মৃত ভোটারের' তালিকা সহ ট্রাম্প সমর্থকের সেই টুইট এই তালিকাটি দেখে মনে হবে যেন এরা সবাই মারা গেছে, কিন্তু তাদের নামে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়া হয়েছে। মৃত লোকদের নামে ভোট দেয়ার এই দাবি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যারা এসব দাবি করেছেন তাদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধিও আছেন। টুইটারে শেয়ার করা দশ হাজার 'মৃত ভোটারের' তালিকায় তাদের নাম, পোস্ট কোড, এবং যে তারিখে তারা ব্যালট পেপার পেয়েছেন তার উল্লেখ আছে। এরপর সেখানে একটি সম্পূর্ণ জন্ম তারিখ এবং সম্পূর্ণ মৃত্যু তারিখ দেয়া আছে। তালিকা অনুযায়ী কেউ কেউ মারা গেছেন পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে। মিশিগানে এমন একটি ডেটাবেজ বা তথ্য ভাণ্ডার আছে যেখানে যে কেউ ঢুকে কারো নাম, পোস্ট কোড, জন্ম মাস, এবং জন্ম বছর দিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন, তারা এবছর 'অ্যাবসেন্টি ব্যালট', অর্থাৎ অনুপস্থিত ভোটার হিসেবে ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন কিনা। যুক্তরাষ্ট্রে এরকম কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে সব মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড বা নথিপত্র আছে। কিন্তু টুইটারে পোস্ট করা ১০ হাজার মানুষের এই তালিকায় একটা মৌলিক সমস্যা আছে। এসব তথ্যভাণ্ডার দেখে এভাবে একটা তালিকা তৈরির কাজ করতে গেলে একই নামের দুজন ভিন্ন মানুষকে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন, ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে জন্ম, এরকম এক ভোটার হয়তো মিশিগানে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোন জায়গায় হয়তো ঠিক একই নামে আরেকজন আছেন, যারও জন্ম ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে, কিন্তু যিনি এখন মৃত। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বড় দেশে এটা অহরহই ঘটে। কারণ দেশটির জনসংখ্যা হচ্ছে ৩২ কোটি ৮০ লক্ষ। এবং কিছু নাম আছে বহুল ব্যবহৃত, যে নামের অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে। এই কথিত 'মৃত ভোটারদের তালিকা' সঠিক না বেঠিক তা যাচাই করার জন্য আমরা দৈবচয়ন ভিত্তিতে ৩০টি নাম বাছাই করি। এরপর এই ৩০ জনের সঙ্গে আমরা যোগ করি তালিকার সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটির নাম। এই ৩১ জনের মধ্যে ১১ জন যে এখনো বেঁচে আছেন, আমরা তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমরা হয় তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছি অথবা কথা বলেছি তাদের পরিবারের কোনও সদস্য, কোন প্রতিবেশী বা তারা থাকেন এরকম বয়স্ক নিবাসের কর্মীর সঙ্গে। বাকী ১৭ জনের বেলায় আমরা দেখেছি, তারা যে মারা গেছেন এরকম কোন সরকারি রেকর্ড নেই। কথিত দশ হাজার মৃত ভোটারের তালিকায় যে তারিখে তারা মারা গেছেন বলে বলা হচ্ছে, আমাদের কাছে পরিষ্কার প্রমাণ আছে যে সেই তারিখের পরও তারা বেঁচে আছেন বা ছিলেন। এই অনুসন্ধান থেকে এটা একেবারে পরিষ্কার যে, কিছু মানুষের তথ্যের সঙ্গে অন্য কিছু ভুল তথ্য জুড়ে দিয়ে এই 'মৃত ভোটারদের' তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে লোকে বিক্ষোভ করেছে মিশিগানে তবে তালিকার তিন জন মানুষ আমরা পেয়েছি, যারা আসলেই মারা গেছেন। তবে এই তিনজনের ঘটনা আমরা পরীক্ষা করবো একটু পরে। অনুসন্ধানে আমরা যা পেয়েছি আমরা প্রথমেই যে কাজটা করেছি, তা হলো, মিশিগানের নির্বাচনী তথ্য ভাণ্ডার যাচাই করে দেখা। এই ৩১ জনের নামে আসলেই ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছিল কিনা। আমরা দেখেছি, আসলেই তাদের প্রত্যেকের নামে ব্যালট পাঠানো হয়েছিল। এরপর আমরা তাদের মৃত্যুর রেকর্ড যাচাই করে দেখেছি। আর তখনই খুব দ্রুত আমাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হলো। আমরা দেখলাম, এদের বেশিরভাগই আসলে মিশিগানে মারা যাননি। তারা মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোথাও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা দাবি, এটাই সেই মৃত ভোটারদের তালিকা তখন আমরা ভাবছিলাম, আমরা কি একই নামের লোক মিশিগানে খুঁজে পাবো, যারা এখনো বেঁচে আছেন? এরপর আমরা মিশিগানের পাবলিক রেকর্ড যাচাই করে তা মিলিয়ে দেখলাম ভোটারদের পোস্টাল কোডের সঙ্গে। যারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছেন, আমরা তাদের পূর্ণ জন্ম তারিখ খুঁজে পেলাম এভাবে। এবং আমরা যা ধারণা করেছিলাম তাই ঘটলো। 'মৃত ভোটারদের' তালিকায় দেয়া জন্ম তারিখের সঙ্গে এদের জন্ম তারিখ মিলছিল না। কাজেই আমরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি, মৃত ভোটারদের তালিকায় যাদের কথা আছে, আর যারা ভোট দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে, তারা আসলে একই ব্যক্তি নন। এদের নামটাই শুধু এক। কিন্তু এরপরও আমরা আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছি। 'আমি এখনো বেঁচে আছি' রবার্তো গার্সিয়া মিশিগানের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। আমরা তাকে ফোন করলাম। তিনি আমাদের বললেন, "আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি বেঁচে আছি এবং আমি জো বাইডেনকেই ভোট দিয়েছি। আমি মরে গেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারব না।" আমরা ১০০-বছর বয়স্ক এক নারীকেও খুঁজে পেলাম, যিনি এই মৃত ভোটার তালিকায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৮২ সালে মারা গেছেন। কিন্তু তিনি এখনো বেঁচে আছেন এবং মিশিগানের এক নার্সিংহোমে থাকেন। তবে আমাদের এই অনুসন্ধানের ফল সব সময় এত সোজাসাপ্টা ছিল না। আমরা আরেকজন শতবর্ষী মানুষের খোঁজ করছিলাম যিনি এই মৃত মানুষদের তালিকা অনুযায়ী ১৯৭৭ সালে মারা গেছেন। আমরা দেখলাম, সেপ্টেম্বর মাসে যখন তার ব্যালটটি ডাকযোগে পাঠানো হয়, তখনও তিনি বেঁচে ছিলেন। তবে একজন প্রতিবেশী জানালেন, তিনি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মারা গেছেন। এই কথার সমর্থনে আমরা একটি শোক সংবাদ খুঁজে পেলাম। একজন ভোটার তার ব্যালট পেপার ডাকযোগে আগেভাগে পাঠিয়ে দেয়ার পর নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনের আগেই যদি মারা যান, মিশিগানের আইন অনুযায়ী সেই ভোট তখন বাতিল হয়ে যাবে। তবে তার ব্যালটটি গোনায় ধরা হয়েছিল কিনা সেটা আমরা যাচাই করতে পারিনি। কারচুপির অভিযোগ যখন ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, তখনো ভোট গণনা চলছিল। যাদের সঙ্গে আমরা ফোনে যোগাযোগ করতে পারিনি তাদের বেলায় আমরা অন্য উপায়ে যাচাই করার চেষ্টা করেছি তারা আসলে বেঁচে আছেন কিনা। এর মধ্যে আছে রাজ্য সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পাবলিক রেকর্ডস যাচাই করা বা তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড খুঁজে দেখা। একজন নারী ২০০৬ সালে মারা গেছেন বলে দাবি করা হচ্ছিল 'মৃত ভোটারদের' তালিকায়। কিন্তু আমরা দেখলাম একটি কোম্পানির বার্ষিক বিবরণীতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতেও তার স্বাক্ষর আছে। আমাদের ৩১ জনের তালিকায় অন্য দুজন পুরুষ বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাদের নামে ভোট দেয়া হয়েছে। ভোটিং ডাটাবেজ অনুযায়ী তাদের পোস্ট কোড এবং জন্মতারিখ সঠিক। কিন্তু আমরা দেখলাম এই দু'জন আসলে এমন দুজন লোক, যাদের নাম হুবহু তাদের বাবার নামে এবং এরা তাদের প্রয়াত বাবার একই ঠিকানায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত। তবে এই দুটি ক্ষেত্রেই আসলে তাদের মৃত পিতার নামে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছিল। জো বাইডেনের জয়ের পর মিশিগানে সমর্থকদের উল্লাস স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন যে, এই দুটি ভোটের একটি গণনায় ধরা হয়েছে। তবে এরকম কোনও রেকর্ড নেই যে ছেলেটি ভোট দিয়েছে। অন্য ঘটনাটির বেলায় আসলে ছেলেটি ভোট দিয়েছে। কিন্তু এই ভোটটা রেকর্ড করা হয়েছে তার বাবার নামে। এটা হয়েছিল ভুলে। 'এটা আসলে একটা সহজ পরিসংখ্যানের ব্যাপার' দশ হাজার লোকের তালিকা থেকে আমরা মাত্র ৩১ জনের নাম বাছাই করেছিলাম। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে এটা স্পষ্টতই বেরিয়ে এসেছে যে ট্রাম্পের সমর্থকরা যে তালিকাটি শেয়ার করেছেন সেটিতে অনেক ত্রুটি আছে। আমাদের অনুসন্ধানে এটা পরিষ্কার আমরা যে ৩১ জনের ঘটনা যাচাই করে দেখেছি, তার প্রত্যেকটিতেই মিশিগানের প্রকৃত ভোটারদের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য জায়গায় মারা যাওয়া একই নামে, একই বছর একই মাসে জন্ম নেয়া লোকের তথ্যের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল তাদের একই লোক বলে দেখানো। আরও পড়ুন: প্রফেসর জাস্টিন লেভিট গণতান্ত্রিক আইন বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ। "যদি কেবল নাম আর জন্মতারিখের ভিত্তিতে এই দুটি তালিকা মেলানো হয়, মিশিগানের মতো একটি রাজ্যে আপনি নিশ্চিতভাবেই কিছু ভুয়া মিল খুঁজে পাবেন।" এই সমস্যাটাকে বলা হয় 'দ্য বার্থডে প্রবলেম।' একটি ক্লাসে একই নামের দুই জন শিক্ষার্থীর জন্মতারিখও যখন একই দিনে হয়, তখন এরকম একটা সমস্যা আমরা দেখি। কাজেই মিশিগানের লক্ষ লক্ষ ভোটারের তালিকাকে যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সব মৃত মানুষের ডেটাবেজের সঙ্গে মেলান, তখন আপনি নিশ্চিতভাবেই অনেক মিল খুঁজে পাবেন। বিশেষ করে ভোটার তালিকার তথ্যভাণ্ডারে যখন কোন মানুষের জন্ম-মাসটাই শুধু দেয়া আছে, জন্ম তারিখের উল্লেখ থাকে না। "এটা আসলে একটা পরিসংখ্যানগত ব্যাপার। আপনি যদি লক্ষ লক্ষ মানুষের রেকর্ড লক্ষ লক্ষ অন্য মানুষের রেকর্ডের সঙ্গে মেলান, আপনি বিরাট সংখ্যায় অনেক ভুয়া মিল খুঁজে পাবেন। আমরা এর আগেও এটা দেখেছি", বলছেন জাস্টিন লেভিট। তবে মারিয়া আরেডোনডো তার ভোট নিরাপদে ঠিকমতোই দিয়েছেন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের নতুন প্রশাসনের অপেক্ষায় আছেন। "ওবামার অধীনে তিনি একজন খুব ভালো ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমি খুবই খুশি। আমাদের কাঁধ থেকে একটা বোঝা নেমে গেছে।"
আমেরিকা নির্বাচন ২০২০: মিশিগানের যে 'মৃত ভোটাররা' এখনো জীবিত
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
চীন-ভারত দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এই দ্বন্দ্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এত তীব্র রূপ নিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে যারা গবেষণা করেন, এ বিষয়ে তাদের মধ্যেও ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কেবল এ সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান এ এনিয়ে দুটি লেখা প্রকাশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইস্ট এশিয়া ফোরামে'র প্রকাশিত নিবন্ধটির শিরোণাম, "চায়না এন্ড ইন্ডিয়া'স জিওপলিটিক্যাল টাগ অব ওয়ার ফর বাংলাদেশ"। অর্থাৎ বাংলাদেশ নিয়ে চীন এবং ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যুদ্ধ।" আর নিউইয়র্ক ভিত্তিক 'ওয়ার্ল্ড পলিসি রিভিউ' ঠিক এ বিষয়েই 'উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের' একজন গবেষকের অভিমত ছেপেছে। তাদের লেখাটির শিরোণাম, হোয়াই ইন্ডিয়া এন্ড চায়না আর কম্পিটিং ফর বেটার টাইস উইথ বাংলাদেশ।" অর্থাৎ বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে কেন ভারত আর চীনের মধ্যে এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা? দুটি লেখাতেই বাংলাদেশের সঙ্গে চীন এবং ভারতের সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, বাংলাদেশর রাজনীতি ও নির্বাচন এবং দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য এই দুই বৃহৎ শক্তির দ্বন্দ্বের বিষয়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ রয়েছে। কার অবস্থান কোথায়? বাংলাদেশে প্রভাব বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন ভারত এবং চীন, দুটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের রয়েছে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক এবং সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক। তবে এর মধ্যে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণে ভারতের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্কটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ইস্ট এশিয়া ফোরামে প্রকাশিত লেখায় ফরেস্ট কুকসন এবং টম ফেলিক্স জোয়েনক বলছেন, বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় দুটি দেশই মূলত বাণিজ্যকেই ব্যবহার করতে চাইছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুটি দেশই সুবিধেজনক অবস্থানে আছে। দুটি দেশেরই বিপুল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে বাংলাদেশের সঙ্গে। দুই দেশের বাণিজ্যের একটি তুলনামূলক চিত্র তারা তুলে ধরেছেন তাদের লেখায়। চীন বাংলাদেশে রফতানি করে প্রায় ১৬ হতে ১৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, অথচ বাংলাদেশে থেকে আমদানি করে মাত্র ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশকে তারা বছরে একশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৪ বিলিয়ন বা দুই হাজার চারশো কোটি ডলারের সাহায্য দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশে রফতানি করে বছরে প্রায় আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য। কিন্তু আমদানি করে মাত্র ২৬ কোটি ডলারের। কিন্তু দুদেশের মধ্যে অনেক 'ইনফরমাল ট্রেড' বা অবৈধ বাণিজ্য হয়, যা মূলত ভারতের অনুকুলে। এর পরিমাণ কমপক্ষে দুই হতে তিন বিলিয়ন ডলারের সমান হবে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশে যে ভারতীয়রা কাজ করেন তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও হবে দুই হতে চার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে ভারত যে বৈদেশিক সহায়তা দেয় বছরে তার পরিমাণ পনের কোটি ডলারের মতো। অবকাঠামো খাতে প্রতিযোগিতা দুটি দেশই বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে। বাংলাদেশে বড় আকারে রেল প্রকল্পে আগ্রহী দুটি দেশই। গভীর সমূদ্র বন্দর স্থাপনেও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে উভয় দেশের। কিন্তু এসব প্রকল্প খুব বেশি আগাচ্ছে না। ভারত বাংলাদেশের সুন্দরবনের কাছে যে কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পেয়েছে সেটি বেশ কিছু বাস্তব এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভারত-চীন প্রতিযোগিতার সুযোগ নিতে চাইছে বাংলাদেশ ফরেস্ট কুকসন এবং টম ফেলিক্স জোয়েনক বলছেন, অবকাঠামো খাতে চীন-ভারতের এই প্রতিযোগিতা থেকে বাংলাদেশ খুব একটা লাভবান হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ম্যানুফাকচারিং এবং জ্বালানি খাতে চীন বা ভারত, কেউই বড় কোন বিনিয়োগে যায়নি। যদিও তারা এধরণের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। চীন বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের সামরিক খাতে বড় সরবরাহকারী। ভারত এক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল, এখন তারা দ্রুত চীনকে ধরতে চাইছে। কিন্তু ভারতের সামরিক সরঞ্জামের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে বাংলাদেশের। চীনের তুলনায় ভারত যেদিকে এগিয়ে আছে, তা হলো বাংলাদেশের ওপর তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব। ফরেস্ট কুকসন এবং টম ফেলিক্স জোয়েনক বলছেন, এই প্রভাব খুবই ব্যাপক। দু্‌ই দেশের রয়েছে অভিন্ন ভাষা (বাংলা) এবং সংস্কৃতি, এবং এর একটি বড় কেন্দ্র এখনো কলকাতা। বাংলাদেশের অন্তত এক লাখ ছাত্র-ছাত্রী ভারতের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এর বিপরীতে চীনের সাংস্কৃতিক প্রভাব নগণ্য। ঢাকায় চীন একটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে চীনা ভাষা শেখানো হয়। আভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রশ্নে অবস্থান ফরেস্ট কুকসন এবং টম ফেলিক্স জোয়েনক বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বর্ণনা করছেন একটি 'ইসলামপন্থী এবং পাকিস্তানপন্থী' দল হিসেবে। তাদের মতে, ২০০১ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দলটি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন যা ঘটেছিল, সেটা ভারতের মনে আছে এবং তাদের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতি এবং ভাবনার গঠন সেটার ভিত্তিতেই। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসলে সেটা ভারতকে বিচলিত করবে। তাঁরা আরও বলছেন, এ বিষয়ে দিল্লির কৌশল একেবারেই স্বলমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গী দ্বারা তাড়িত। তাদের কৌশলটা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখা, সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব ঠেকিয়ে দেয়া। অন্যদিকে বাংলাদেশে চীন খেলছে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য সামনে রেখে। তারা এক দিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। অন্যদিকে, এই দুজনের ভাষায়, 'ভারত বিরোধী এবং সেনাপন্থী' বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে তারা একটা ভারসাম্য রাখছে। চীন দীর্ঘমেয়াদী কৌশল মাথায় রেখে কাজ করছে, বিএনপির সঙ্গেও সম্পর্ক রাখছে তারা। বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে দুই বৃহৎ শক্তির দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে বাংলাদেশ কিভাবে তার সুবিধা নিচ্ছে? ফরেস্ট কুকসন এবং টম ফেলিক্স জোয়েনক বলছেন, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ কোন নিস্ক্রিয় 'ভিক্টিম' নয়, বরং নিজের কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এটি আরও উস্কে দিচ্ছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে যে দুটি দেশই আসলে বাংলাদেশকে যা দেয়, তার উল্টো অনেক বেশি নিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের অবকাঠামো এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্রকল্পগুলি খুব নিম্নমানের (জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায়)। রোহিঙ্গা সংকটও বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে চীন এবং ভারত আসলে কেবল 'সুদিনের বন্ধু। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে যে কোন পদক্ষেপ চীন আটকে দিচ্ছে। এটাকে বাংলাদেশ বন্ধুত্বসুলভ কোন কাজ বলে মনে করে না। অন্যদিকে ভারতের অবস্থাও ভালো নয়। তারাও এই ইস্যুতে মিয়ানমারকে মদত দিয়ে যাচ্ছে। ফরেস্ট কুকসন এবং টম ফেলিক্স জোয়েনক তাদের উপসংহারে বলছেন, চীন আর ভারত সর্বোতভাবে চেষ্টা করবে বাংলাদেশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় কে কার আগে থাকতে পারে। কিন্তু তাদের উভয়েই ব্যর্থ হবে, কারণ বাংলাদেশও এখন এ নিয়ে এক দেশকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে খেলানোর মাধ্যমে এখান থেকে তাদের প্রাপ্য আদায়ের চেষ্টা করবে। তাহলে বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্বের ফল ভবিষ্যতে কী দাঁড়াবে? তারা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে দুই দেশের বাণিজ্য নীতি। দুটি দেশের কোনটিই বাংলাদেশকে রফতানির ক্ষেত্রে কোন ছাড় এখনো পর্যন্ত দিচ্ছে না। দুটি দেশই বাংলাদেশে রফতানির ক্ষেত্রে ব্যাপক 'আন্ডার ইনভয়েসিং' এর সুযোগ দিচ্ছে, যেটি কীনা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন। যত অর্থ তারা বাংলাদেশকে ঋণ দেয়, তার চেয়ে আরও অনেক বেশি অর্থ তারা নিয়ে নেয় এভাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে চীন আছে সুবিধেজনক অবস্থানে। তাদের অর্থনীতি ভারতের তুলনায় অনেক বড়। বাণিজ্যেও তারা এগিয়ে। কাজেই বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের জন্য চীন যদি কোনদিন তাদের বাজার খুলে দেয়, এই চীন-ভারত দ্বন্দ্বে সুস্পষ্টভাবেই চীন জয়ী হবে, বাংলাদেশ ঝুঁকে পড়বে তাদের দিকেই। বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জামের বড় সরবরাহকারী চীন 'প্রতিদ্বন্দ্বিতাই শেষ কথা নয়' যুক্তরাষ্ট্রের উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসে'র মাইকেল কুগেলম্যান অবশ্য বিষয়টিকে দেখেন ভিন্নভাবে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে নিয়ে চীন এবং ভারতের এরকম প্রতিযোগিতার কোন প্রয়োজনই নেই। দুটি দেশই আসলে একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে। এক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদাহারণ টেনেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের ঘনিষ্ঠতা বহু বছর ধরেই বাড়ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা হয়নি। তিনি আশা করছেন, দিল্লির এক সময় এই বাস্তবতা মেনে নেবে যে, ঢাকা অবশ্যই চীনের পুঁজি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করবে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চাইবে। তবে এক্ষেত্রে ভারত শুধু চীনের কাছ থেকে একটা নিশ্চয়তা চাইতে পারে—এই সহযোগিতা যেন কেবল অর্থনৈতিক খাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, তারা যেন বঙ্গোপসাগরে কোন ধরণের নৌ স্থাপনা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর না হয়। কিন্তু ভারতকে এরকম কোন নিশ্চয়তা চীন কি দেবে? সেটার কোন ইঙ্গিত কিন্তু এখনো নেই।
বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব: কী ঘটছে নেপথ্যে?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
সামাজিক মাধ্যমে নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অলিম্পিয়া তার এক বয়ফ্রেন্ড, যার সাথে ছয় বছর ধরে অলিম্পিয়ার সম্পর্ক ছিল, ভিডিও করলেও সেখানে শুধু অলিম্পিয়াকেই দেখা যায়। ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল শুধু তাদের দু'জনের জন্যই। অলিম্পিয়ার বয়ফ্রেন্ডও এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অলিম্পিয়ার নাম হয়ে যায় 'আবেদনময়ী মোটা মেয়েটি।' সেসময় সে বিষন্নতায় ভুগতে শুরু করে, আট মাস তার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় এবং এরমধ্যে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। তবে ধীরে ধীরে সে বুঝতে শুরু করে যে এই ঘটনায় সে আসলে দোষী নয় - সে ভুক্তভোগী। এরপর সে অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে যায় এবং সাইবার যৌন হয়রানি বিষয়ে মেক্সিকোর প্রধম আইনের প্রস্তাবটির খসড়া লেখেন যেটি সেখানে 'অলিম্পিয়া আইন' নামে পরিচিত। সাইবার যৌন হয়রানি সংক্রান্ত মেক্সিকোর প্রথম আইনকে 'অলিম্পিয়া আইন' বলা হয় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরা হলো এখানে... ১৮ বছর বয়সে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সেক্সটেপ তৈরি করি আমি। আমি জানি আমার নগ্ন ভিডিও - যেখানে আমার বয়ফ্রেন্ডকে চেনা যায় না - কীভাবে হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়লো। মানুষজন আমাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে এবং আমার বয়ফ্রেন্ডও বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। সে দাবি করে যে ঐ ভিডিওটিতে সে ছিল না। তখন মানুষজন জল্পনা শুরু করে যে আমি কার সাথে এই কাজ করতে পারি। স্থানীয় একটি পত্রিকা তাদের প্রথম পাতায় খবর ছাপায় যে আমি আগে সম্ভাবনাময় একটি মেয়ে ছিলাম কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বদনাম হয়ে গেছে। ঐ পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যায়, আমার শরীর নিয়ে আলোচনা করে তারা অর্থ উপার্জন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি প্রতিদিনই যৌন আবেদনে সাড়া দেয়ার অনুরোধ পেতে থাকি। আমি মেক্সিকোর যে অঞ্চল থেকে এসেছি তার সাথে মিলিয়ে তারা আমাকে ''হুয়াউচিনাঙ্গো'র মোটা আবেদনময়ী মেয়েটি' বলে ডাকা শুরু করে। যখন কাহিনী আরো ছড়িয়ে পড়ে তখন রাজ্যের নামটাও বাদ যা ন। আমার নাম হয়ে যায় 'পুয়েবলার আবেদনময়ী মোটা মেয়ে।' আমার মনে হতে থাকে যে আমার জীবনে আর কিছু বাকি নেই। আমি নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলি এবং আট মাস বাইরে যাওয়ার সাহস করিনি। তখন আমার বয়স কম ছিল, আমি জানতাম না আমি কার কাছে সাহায্য পাবো অথবা এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে কীভাবে জানাবো। তার ওপর পুরো ব্যাপারটাই ঘটে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়, যেকারণে মনে হতে থাকে যে এই ঘটনা আসলে ঘটেইনি। ১৫ বছরের বেশি বয়সী মেক্সিকোর দুই-তৃতীয়াংশ মেয়ে কোনো না কোনো ধরণের সহিংসতার শিকার হয় আমি যখন নিজের সিদ্ধান্তেই ভিডিও করেছি তখন নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করবো কীভাবে? তিনবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি। তার মধ্যে একবার আমি একটি ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন এবং ভাগ্যক্রমে এক বন্ধু গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে নেমে আসে এবং কথা বলে। আমি জানি না সে বুঝেছিল কিনা যে সে আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমার মা ইন্টারনেট ব্যবহার করতো না, তাই তিনি পুরো ঘটনাটা জানতেন না। আমি ভেবেছিলাম তার জানতে অনেক সময় লাগবে। আমি বলেছিলাম একটি ভিডিও নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে, কিন্তু জানাইনি যে সেটা আমার ভিডিও ছিল। হঠাৎ এক রবিবার আমার পুরো পরিবার যখন আমাদের বাড়িতে উপস্থিত ছিল, তখন আমার ১৪ বছর বয়সী ভাই ঘরে এসে সবার সামনে তার ফোন রেখে বলে, "আমার বোনের ভিডিও আসলে আছে।" আমার মা কাদঁতে শুরু করেন। আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন ছিল সেটি। আমি আমার মায়ের পায়ে আছড়ে পড়ি এবং তার কাছে ও আমার পুরো পরিবারের কাছে ক্ষমা চাই। আমি তাদেরকে বলি যে আমি মরতে চাই। আমি তাদের বলি আমাকে যেন মরতে সাহায্য করে তারা। তখনই আমার মা - যিনি একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠী থেকে এসেছেন, স্কুল শেষ করেননি এবং লিখতেও পারেন না - আমাকে চমকে দেন। তিনি আমার মাথা তুলে ধরে বলেন, আমরা সবাই যৌন সম্পর্কে জড়াই। তোমার বোন, তোমার খালা, আমি - সবাই। পার্থক্যটা হলো তারা তোমাকে এটা করতে দেখে ফেলেছে। এর মানে এই নয় যে তুমি খারাপ মানুষ বা অপরাধী। আমি বিস্মিত হয়ে যাই। অলিম্পিয়ার মতে, "প্রতিবার আরেকজনের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি বা ভিডিও যখন আরেকজনকে পাঠানো হয়, সেটি ধর্ষণের মত।" আমার বা বলতে থাকেন, তুমি অন্য যে কারো মত তোমার যৌনতা উপভোগ করছিলে - এবং সেটার প্রমাণ আছে। তুমি যদি কিছু চুরি করতে বা কাউকে খুন করতে বা এমনকি, একটি কুকুরকেও আঘাত দিতে, তাহলে সেটা খারাপ হতো। সেসময় প্রথমবার আমি নারীদের একাত্বতাবোধের বিষয়টি বুঝতে পারি। তখনই প্রথম বুঝতে পারি যে আমরা নারীরা একসাথে খুবই শক্তিশালী। আমি জানি যে সব কিশোরী আমার মায়ের মত সহিষ্ণু এবং সমঝোতাবোধসম্পন্ন মা পাওয়ার সৌভাগ্য পায় না। অধিকাংশ নারীই তাদের ব্যক্তিগত যৌনজীবনের বিষয়ে পরিবার, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মক্ষেত্রে সমর্থনের অভাব বোধ করেন। সেসময় আমার মা ঘরের ফোন এবং ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। আমাকে বোঝান যে বাড়িতে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু এরপরও অনেক মানুষ আমার বাড়িতে এসে বলার চেষ্টা করে যে তারা আমার একটি ভিডিওর কথা শুনেছে। আমি তাদের কাছ থেকেও লুকিয়ে যাই। 'এটি ধর্ষণের মত' মানুষের কোনো ধারণাই নেই এ ধরণের ঘটনার কী প্রতিক্রিয়া ভুক্তভোগীর ওপর পড়তে পারে। এর ফলে সব ধরণের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আপনার চলাফেরা, অন্তরঙ্গতার চেতনা, ব্যক্তিজীবন প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে এরকম একটি ঘটনা। আর আপনি ধীরে ধীরে এ ধরণের অনুভূতিকে গ্রহণ করা শুরু করেন আপনি মনে করছেন যে আপনিই দোষী। অলিম্পিয়া যখন জানতে পারেন আরো অনেক নারীই এমন অপরাধের শিকার, তখন তিনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিন্তা করেন এই কারণে বিচার পর্যন্ত যাওয়াটা এত কঠিন। এ ধরণের পোষ্টে প্রতিটি লাইক আগ্রাসনের মত। ভুক্তভোগীর ওপর আরেকটি আঘাত। প্রতিবার আরেকজনের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি বা ভিডিও যখন আরেকজনকে পাঠানো হয়, সেটি ধর্ষণের মত। তারা আমার সাথে সরাসরি সংস্পর্শে না এলেও তারা আমাকে ধর্ষণ করছে কারণ তারা অনুমতি ছাড়া আমার দেহ ব্যবহার করছে। ডিজিটাল জগতে, কিন্তু আমার দেহই তো। আমি ভেবেছিলাম যে আমি আর কখনোই বাড়ি থেকে বের হবো না। কিন্তু দুটি জিনিস আমাকে বের হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। প্রথম, যখন আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে বলে নারীদের তাচ্ছিল্য করে এমন কিছু ওয়েবসাইট দেখতে। সেগুলো দেখার কারণ হিসেবে আমার বন্ধু বলে, "যেন তুমি বুঝতে পারো যে তুমি একাই ভুক্তভোগী না। তারা শুধুমাত্র নিজেদের আনন্দের জন্য সবার সাথেই এমন করে। তোমার বাগ্মীতা আছে এবং তুমি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।" ভুক্তভোগী হয়েও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিচার পাওয়া সহজ হয়নি অলিম্পিয়ার আমি বুঝতে পারি যে অনলাইনে কোনো কারণ ছাড়াই নারীরা উপহাসের শিকার হচ্ছে। 'এরকম হতে দেওয়া যায় না' আমি সবচেয়ে বেশি ক্রুদ্ধ হই যখন দেখি ডাউন সিনড্রোমে ভুগতে থাকা এক মেয়ের ছবিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করে যে, মেয়েটি দেখতে যেমনই হোক না কেন তার সাথে যৌনতার সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই যে 'এরকম হতে দেওয়া যায় না।' দ্বিতীয় যে ঘটনা আমার মন পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে সেটি হলো আমার ভিডিওর খবর ছাপা পত্রিকাটি যখন আরেক নারীর বিষয়ে খবর ছাপে যে তিনি ৪০ জোড়া জুতা চুরি করেছেন। ঘটনাক্রমে, একদিন আমি যখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিলাম, ঐ মহিলাকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখি। চমৎকার একটি হলুদ পোশাক পড়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি, তাকে দেখতেও ভাল লাগছিল। কিন্তু রাস্তার সবাই তাকে বিদ্রুপ করছিল। এমনকী ফুল বিক্রেতা তাকে দেখে ফুল লুকিয়ে ফেলে, যেন তার সামনে পড়লে ফুলগুলো শুকিয়ে যাবে। আইনের প্রয়োগের চেয়েও এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন আইনের সমর্থকরা ঐ ঘটনা দেখে প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, আমি বাইরে গেলে আমার সাথেও সবাই ওরকম করবে। কিন্তু আমার মনে হয় "এই মহিলা যদি চুরি করেও রাস্তায় বের হতে পারেন, আমি কেন পারবো না?" সেদিনই আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে যাই। দ্বিতীয়বারের মত পরীক্ষা অলিম্পিয়া যখন জানতে পারেন আরো অনেক নারীই এমন অপরাধের শিকার, তখন তিনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিন্তা করেন , দ্বিতীয়বারের মত পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। দায়িত্বরত অফিসার শুরুতেই আমার ভিডিওটি দেখতে চায়। ভিডিও দেখার পর সে হাসিতে ফেটে পড়ে। তার বক্তব্য ছিল "আপনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন না, মাদকের প্রভাবেও ছিলেন না, কেউ আপনাকে ধর্ষণও করেনি। ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, এখানে কোনো অপরাধই হয়নি।" আমি ক্রুদ্ধ হয়ে ফিরে আসি। পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর আমার মাথায় আসে "কোনো অপরাধ হয়নি বলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি?" ইন্টারনেটে যারা এরকম হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমন নারীদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করি আমি। তাদেরকে আমি বলি, এই অপরাধ সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকলেও এর বিষয়ে কিছু একটা করতেই হবে আমাদের। ধীরে ধীরে এবিষয়ে ধারণা পরিস্কার হতে শুরু করে আমাদের। পুয়েবলা রাজ্যের জন্য আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করি আমরা। কয়েকবছর আইনটির বিষয়ে প্রচারণা চালানোর পর প্রস্তাবটি গৃহীত হয় অনেকেই আমাকে বোঝাতে চান যে আমার এই ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত না। কিন্তু এর মানে হতো পরাজয় মেনে নেয়া। সবাই এরই মধ্যে জেনে গেছে যে আমি কে এবং আমার শরীর দেখতে কেমন। আমি যা করতে যাচ্ছি তা আমাকে বিচার পাইয়ে দেবে না, কারণ আমার সাথে যা করা হয়েছে তা আর শোধরানোর উপায় নেই। কিন্তু আমি ঐসব মেয়েদের কথা ভেবেছি যারা একই ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে - যেসব মেয়েরা আত্মহত্যার কথা ভাবছে, যেমন আমি ভেবেছিলাম। সাইবার যৌন সহিংসতা নিরসনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা প্রস্তাবটি পুয়েবলার মেয়রের সামনে জনসম্মুখে উপস্থাপন করি আমি। আমি যখন মঞ্চে উঠি তখন সবাই কানাকানি করছিল। সময়টা ছিল ২০১৪'র মার্চ, আমার বয়স তখন ১৯। আমি শুরুতে বলি "আমি অলিম্পিয়া। ''হুয়াউচিনাঙ্গো'র মোটা আবেদনময়ী মেয়েটি।'" আমি তাদের আমার ভিডিওর কথা বলি। বলি যে আরও এমন অনেক মেয়ে আছে যারা এধরণের অপরাধের ভুক্তভোগী। তাদেরকে আমি স্ক্রিনশট দেখাই যে ঐ অনুষ্ঠানের বক্তাদের কয়েকজনও আমার ভিডিওতে 'লাইক' দিয়েছে এবং শেয়ারও করেছে। "আপনারা অপরাধী, আমি নই", তাদের বলি আমি। যেই ফেসবুক পেইজটি আমার ভিডিও শেয়ার করেছিল, সেটি পরে বন্ধ হয়ে যায়। তারা জানায় 'এক উন্মাদ মহিলা'র জন্য তারা পেউজ বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু তখনও বহুদূরের পথ বাকি ছিল। একজন সাংসদ তখন বলেছিলেন যে তিনি আমার প্রস্তাব সমর্থন করতে পারবেন না কারণ সেটি 'বেহায়াপনা অনুমোদন' করার শামিল হবে। প্রস্তাবটি আইনে রূপান্তরিত হয় ২০১৮'তে। আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত কোনো বিষয় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হলে সেটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। ২০১১ সালে আইনটি পুয়েবলায় কার্যকর হয় এবং বর্তমানে মেক্সিকোর ৩২টির মধ্যে ১১টি রাজ্যেই এর প্রণয়ন হয়েছে ইন্টারনেটে সাইবার হয়রানি বা যৌন সহিংসতার বিষয়গুলোও সংজ্ঞায়িত করা হয় আইনে। এই ধরণের অপরাধ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির বিষয়গুলোও জায়গা পায়। কয়েক বছরের আলোচনার পর পুয়েবলা রাজ্যে আইনটি পাস হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর ১১টি রাজ্যে এই আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। 'ইন্টারনেটে নিরাপত্তা চায় নারীরা' আইনের বাস্তবায়নের চেয়েও আমরা এর মূল প্রতিপাদ্যটি সম্পর্কে বেশি সচেতনতা চাই। এই ধরণের সহিংসতা রোধ এবং প্রতিকারের লক্ষ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চাই আমরা। নারীরা ইন্টারনেটে সচেতনতা চায়। একদল নারী মিলে আমরা ন্যাশনাল ফ্রন্ট ফর সরোরিটি তৈরি করি, যেই সংস্থা এই ধরণের ঘটনার বিষয়ে কাজ করে এবং ভুক্তভোগীদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা একা নয়। ডিজিটাল সহিংসতা এড়িয়ে চলতে এবং নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে নারীদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করি আমরা। এক সাংবাদিক তার প্রতিবেদনে আইনটিকে 'অলিম্পিয়া আইন' হিসেবে উল্লেখ করার পর থেকে সবাই ঐ নামেই ডাকা শুরু করে এটিকে। আমি এখন আর 'মোটা মেয়েটি' নই। ইন্টারনেটে হয়রানির শাস্তি দেয়, এমন একটি আইনের সাথে আমার নাম নেয়া হয়।
সাইবার হয়রানি: সেক্স ভিডিওর 'মোটা মেয়েটি' যখন আইন তৈরির অনুপ্রেরণা
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খান। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিল। টাইগার হিলের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন, কর্নেল শের খাঁয়ের বীরের মতো লড়াই দেখে ভারতীয় বাহিনীও মেনে নিয়েছিল যে তিনি সত্যিই এক 'লৌহপুরুষ'। সেদিনের ওই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া। "সেদিন যখন টাইগার হিলের লড়াই শেষ হয়েছিল, ওই পাকিস্তানি অফিসারের অসীম সাহসকে স্যালুট না করে উপায় ছিল না। আমি ৭১-এর যুদ্ধেও লড়াই করেছি। কিন্তু কখনও পাকিস্তানি বাহিনীর কোনও অফিসারকে একেবারে সামনে থেকে লড়তে দেখি নি।" "অন্য পাকিস্তানি সৈনিকরা কুর্তা-পাজামা পরে ছিলেন, কিন্তু এই অফিসার একাই ট্র্যাক-সুট পরে লড়ছিলেন," স্মৃতিচারণ করছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া। আরও পড়তে পারেন: একনজরে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ইতিহাস 'নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করছে ভারত' - পাকিস্তান ভারত পাকিস্তানের টিভি স্টুডিওতে যেভাবে যুদ্ধ হলো ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া সম্প্রতি কার্গিল যুদ্ধের ওপরে 'কার্গিল: আনটোল্ড স্টোরিজ ফ্রম দা ওয়ার' [কার্গিল: যুদ্ধ ক্ষেত্রে না বলা কাহিনী] নামের একটি বই লিখেছেন রচনা বিস্ত রাওয়াত। তিনি জানাচ্ছিলেন, "ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ পাকিস্তানি বাহিনীর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির সদস্য ছিলেন।" "টাইগার হিলের ৫টি জায়গায় তারা নিজেদের চৌকি তৈরি করেছিল। প্রথমে ভারতের ৮ নম্বর শিখ রেজিমেন্টকে ওই পাকিস্তানি চৌকিগুলো দখল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ব্যর্থ হয়। তারপরে ১৮ নম্বর গ্রেনেডিয়ার্সদেরও শিখ রেজিমেন্টের সঙ্গে পাঠানো হয়।" "তারা কোনওরকমে একটি চৌকি দখল করে। কিন্তু ক্যাপ্টেন শের খাঁ পাল্টা হামলা চালান পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে," জানাচ্ছিলেন মিজ. রাওয়াত। প্রথমবারের জবাবী হামলায় ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু সেনা সদস্যদের আবারও জড়ো করে দ্বিতীয়বার হামলা চালান তিনি। যারা ওই লড়াইয়ের ওপরে নজর রাখছিলেন, সকলেই বুঝতে পারছিলেন যে এটা আত্মহত্যার সামিল। সবাই বুঝতে পারছিল যে ওই মিশন কিছুতেই সফল হবে না, কারণ ভারতীয় সৈনিকরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। কার্গিল যুদ্ধের ওপর লেখা রচনা বিস্ত রাওয়াতের বই। মৃতদেহের পকেটে চিরকুট ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার কথায়, "ক্যাপ্টেন শের খাঁ বেশ লম্বা-চওড়া চেহারার ছিলেন। অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। আমাদের এক সৈনিক কৃপাল সিং আহত হয়ে পড়ে ছিলেন। হঠাৎই উঠে মাত্র ১০ গজ দূর থেকে একটা বার্স্ট মারেন। শের খাঁ পড়ে যান।" সেই সঙ্গেই পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার জোর ধীরে ধীরে কমে আসছিল। ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার বলেন, "ওই লড়াইয়ের শেষে আমরা ৩০ জন পাকিস্তানি সৈনিককে দাফন করেছিলাম। কিন্তু আমি অসামরিক মালবাহকদের পাঠিয়ে সেখান থেকে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের শবদেহ নীচে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। ব্রিগেড হেড-কোয়াটারে রাখা হয়েছিল তার দেহ।" ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ে মরদেহ যখন পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হল, তখন তার জামার পকেটে একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া। তাতে লেখা ছিল, 'ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অফ ১২ এন এল আই হ্যাজ ফট ভেরি ব্রেভলি এন্ড হি শুড বি গিভেন হিজ ডিউ' [অর্থাৎ, ১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাকে সম্মান জানানো উচিত]। বিবিসি স্টুডিওতে রেহান ফজলের সাথে লেখক রচনা বিস্ত। কে এই কর্নেল শের খাঁ? ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের জন্ম হয়েছিল উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের এক গ্রাম 'নওয়া কিল্লে'তে। তার দাদা ১৯৪৮ সালের কাশ্মীর অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পছন্দ ছিল উর্দি পরিহিত সৈনিক। যখন এক নাতি জন্মাল তার, নাম রাখলেন কর্নেল শের খাঁ। তখন অবশ্য তার ধারণাও ছিল না যে এই নামের জন্যই নাতির কোনও সমস্যা হতে পারে। কার্গিল যুদ্ধের ওপরে বিখ্যাত বই 'উইটনেস টু ব্লান্ডার - কার্গিল স্টোরি আনফোল্ডস'-এর লেখক কর্নেল আশফাক হুসেইন বলছেন, "কর্নেল শের খাঁ ওই অফিসারের নাম ছিল। এটা নিয়ে তার খুব গর্ব ছিল। তবে বেশ কয়েকবার এই নামের জন্য তাকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।" "অনেক সময়ে ফোন তুলে তিনি বলতেন, 'লেফটেন্যান্ট কর্নেল শের স্পিকিং', অন্য প্রান্তে থাকা অফিসারের মনে হতো যে কোনও লেফটেন্যান্ট কর্নেল র‍্যাঙ্কের অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। কমান্ডিং অফিসারকে যেভাবে স্যার সম্বোধন করে, সেইভাবেই কথা বলতে শুরু করতেন টেলিফোনের অন্য প্রান্তে থাকা অফিসার। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শের খাঁ হেসে বলতেন, যে তিনি লেফটেন্যান্ট শের খাঁ। কমান্ডিং অফিসার নন তিনি!" জানাচ্ছিলেন কর্নেল আশফাক। পাকিস্তানের সরকার ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের সম্মানে ডিজাইন করা স্মারক ডাক টিকেট। টাইগার হিলের 'শেষ যুদ্ধ' ১৯৯২ সালে পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন কর্নেল শের খাঁ। তার একবছরের জুনিয়ার, ক্যাপ্টেন আলিউল হুসেইন বলছিলেন, "পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমীতে সিনিয়ররা র‍্যাগিং করার সময়ে জুনিয়ারদের গালিগালাজ করতেন। কিন্তু শের খাঁর মুখে কোনদিন একটাও গালি শুনিনি আমি। ওর ইংরেজি খুব ভাল ছিল।" "অন্য অফিসারদের সঙ্গে নিয়মিত 'স্ক্র্যাবেল' খেলতে দেখতাম। সবসময়ে তিনিই জিতে যেতেন। আবার জওয়ানদের সঙ্গেও খুব সহজেই মিশতে পারতেন, ওদের সঙ্গে লুডো খেলতেন তিনি।" সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন শের খাঁকে ১৯৯৯ সালের চৌঠা জুলাই টাইগার হিলে পাঠানো হয়। সেখানে পাকিস্তানি বাহিনী ত্রিস্তরীয় রক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলছিলেন। তিনটে স্তরের সাংকেতিক নাম ছিল ১২৯ এ, বি আর সি। ভারতীয় সেনাবাহিনী ১২৯ এ আর বি চৌকিগুলোকে তছনছ করে দিতে পেরেছিল। ক্যাপ্টেন শের সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওখানে পৌঁছান। পরিস্থিতিটা বুঝে নিয়ে পরের দিন সকালে ভারতীয় বাহিনীর ওপরে হামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। কার্গিল যুদ্ধের ওপর লেখা বই। কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, "রাতে উনি সব সৈনিককে শহিদ হওয়ার সৌভাগ্য বর্ণনা করেন। ভোর ৫টায় নামাজ পড়েন। তারপরেই ক্যাপ্টেন উমরকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ের জন্য রওনা হন। তিনি যখন মেজর হাশিমের সঙ্গে ১২৯ - বি চৌকিতে ছিলেন, তখনই ভারতীয় বাহিনী পাল্টা হামলা চালায়।" বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে মেজর হাশিম নিজেদের বাহিনীর ওপরেই গোলাবর্ষণের অনুমতি চান। যখন শত্রু সৈনিক একেবারে কাছে চলে আসে, তখন তাদের হাতে যাতে ধরা না পড়তে হয়, সেজন্য এরকম করে থাকে। লাইন অব কন্ট্রোল। কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, "পাকিস্তানি আর ভারতীয় বাহিনীর লড়াইটা তখন সম্মুখ সমর। একেবারে হাতাহাতি লড়াই চলছে। তখনই এক ভারতীয় সেনার একটা পুরো বার্স্ট ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের গায়ে এসে পড়ে, তিনি নীচে পড়ে যান। নিজের সঙ্গীদের সঙ্গেই শের খাঁ-ও শহিদ হন।" অন্য পাকিস্তানি সৈনিকদের তো ভারতীয় বাহিনী দাফন করে দেয়। কিন্তু শের খাঁর মরদেহ প্রথমে শ্রীনগর, তারপরে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ (ছবির ডানে) মরণোত্তর সম্মান 'নিশান-এ-হায়দার' ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া বলছিলেন, "যদি আমি তার শব নীচে না নামিয়ে আনতাম বা জোর করে তার দেশে ফেরত না পাঠাতাম, তাহলে তার নামই হয়তো কোথাও উল্লেখিত হত না। তাকে পাকিস্তানের সব থেকে বড় সম্মান 'নিশান-এ-হায়দার' দেওয়া হয়েছিল, যেটা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরম বীর চক্রের সমান।" পাকিস্তানে যখন ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের দেহ পৌঁছিয়েছিল, তার পরে তার বড় ভাই আজমল শের বলেছিলেন, "আল্লাহর আশীর্বাদ, যে আমাদের শত্রু দেশেরও দয়া-মায়া আছে। কেউ যদি বলে তারা দয়া-মায়াহীন, আমার তাতে আপত্তি আছে। কারণ তারা ঘোষণা করেছে কর্নেল শের একজন হিরো।" শের খাঁ। শেষ বিদায় ১৮ই জুলাই ১৯৯৯। মাঝ রাতে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের শবদেহ গ্রহণ করার জন্য মলির গ্যারিসনের শত শত সৈনিক করাচী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন। তার গ্রাম থেকে ওর দুই ভাইও সেখানে ছিলেন। কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, "ভোর পাঁচটা এক মিনিটি বিমানটা রানওয়ে ছুঁয়েছিল। বিমানের পেছন দিক থেকে দুটো কফিন বের করা হল। একটায় ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের মরদেহ ছিল আর অন্যটায় যে কার দেহ ছিল, সেই পরিচয় এখনও জানা যায় নি।" কফিন দুটিকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হল যেখানে, সেখানে তখন হাজার হাজার সৈনিক আর সাধারণ মানুষ। বালুচ রেজিমেন্টের সৈনিকরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে দুটি কফিন নামিয়ে মানুষের সামনে রাখলেন। এক মৌলবি নামাজ-এ-জানাজা পাঠ করলেন। তারপরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটা বিমানে চাপানো হয়। ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের কফিনে কাঁধ দিয়েছিলেন কোর কমান্ডার মুজফফর হুসেইন উসমানী, সিন্ধ প্রদেশের গভর্নর মামুন হুসেইন আর সংসদ সদস্য হালিম সিদ্দিকি। ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের সমাধি। করাচী থেকে শবদেহ ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও একবার নামাজ-এ-জানাজা হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি রফিক তাড়ারও হাজির ছিলেন সেখানে। শেষে, ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের কফিনবন্দী দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বহু সদস্য শেষ বিদায় জানান এই সাহসী সৈনিককে।
কার্গিল যুদ্ধ: ভারতের সুপারিশে শীর্ষ বীরের সম্মান পেয়েছিলেন যে পাকিস্তানি সৈনিক
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
এবছর ইলিশের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বলে বলা হচ্ছে এবছরের ২০শে মে থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল জেলেদের ওপর। দীর্ঘ বিরতির পর মাছ ধরা শুরু হলে বিপুল পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়তে থাকে জেলেদের জালে। সেই ধারাবাহিকতায় বাজারে ইলিশের যোগান বাড়ার সাথে সাথে দামও তুলনামূলকভাবে কমতে থাকে। গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই গত কয়েক বছরের তুলনায় কম দামে ইলিশ পাওয়া গেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিন গুণ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান ধারণা করছেন যে, ইলিশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গত কয়েকবছর নেয়া পদক্ষেপগুলো আগামীতেও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং দামও কম থাকবে। আরো পড়তে পারেন: অস্বাভাবিক হারে ধরা পড়ছে ইলিশ, এটা কি নতুন মৌসুম? ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে? ইলিশ গাইড: নদীর ইলিশ যেভাবে চিনবেন বাংলাদেশে যেসব কারণে এখন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালকে ইলিশের মৌসুম হিসেবে মনে করা হয় কতদিন কম থাকবে ইলিশের দাম? বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালকে ইলিশের মৌসুম হিসেবে মনে করা হয়। অন্যান্য বছরের বর্ষাকালের তুলনায় এবছর ইলিশের উৎপাদন ও আহরণ বেশি হওয়ায় মাছের দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান মনে করছেন ইলিশের এই কম দাম পুরো অক্টোবর মাস পর্যন্ত উপভোগ করতে পারবে মানুষ। "সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ইলিশের জন্য ''হাই টাইম'' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময় সাগর থেকে মোহনা বেয়ে ডিম পাড়া ও খাদ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে বড় নদীর দিকে যাওয়া আসা করে ইলিশ। কাজেই এই সময়ে ইলিশ ধরাও পড়ে অনেক।" তবে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের দাম কমের দিকে থাকলেও নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইলিশের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মি. রহমান। "নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে ইলিশ কমে যায়। সে সময় ইলিশ কম ধরা পরে, তাই স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যায়।" বাজারে ইলিশের চাহিদা প্রচুর ইলিশ ধরায় আবার নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে কবে? বছরের বিভিন্ন সময়ে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইলিশের বংশবিস্তার, ডিম পাড়া ও প্রজননের সুবিধার্থে গত কয়েকবছরে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েকবছরের মত এবছরও অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে অন্তত ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে জানান ড. আনিসুর রহমান। "অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। প্রতিবারের মত একটি পূর্ণিমা ও একটি অমাবস্যা পড়বে এই সময়ের মধ্যে।" অমাবস্যা ও পূর্ণিমা শুরুর আগের দুইদিন এবং পরের তিনদিন এই সময়ে নদীতে ও নদীর মোহনায় পানির প্রবাহ বেশি থাকে, যে কারণে সে সময়ে সাগর থেকে মাছ বেশি আসে এবং মাছের চলাচলও এ সময় বেশি থাকে। মি. রহমান আশা প্রকাশ করেন ইলিশ সংরক্ষণে এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত থাকলে এবং কার্যকরভাবে সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হলে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
ইলিশ: বাংলাদেশে কতদিন কম দামে ইলিশ পাওয়া যাবে?
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
দিল্লির বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রয়েছেন সব বয়সের নারীরা এর কয়েক মিনিট পরেই নতুন বছরের সূচনা হয়েছে, তখনো তারা ভারতের জাতীয় সংগীত গাইছিলেন। তাদের দাবি? নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বাতিল করা। ১১ই ডিসেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হয়েছে, যেখানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে, এটা সেসব দেশ থেকে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু সরকারি এসব বক্তব্য ভারতীয় মুসলমানদের কমই আশ্বস্ত করতে পারছে, যাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, এই আইনটি তাদের জন্য বৈষম্যমূলক হবে। এমনকি হয়তো তাদেরকে সেসব দেশে ফেরত পাঠানো বা বন্দিশিবিরে পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। আরো পড়ুন: নাগরিকত্ব আইন: মোদির বিরুদ্ধে লড়ছেন যে তিন নারী ভারতে থাকা 'অবৈধ বাংলাদেশীদের' ফেরানো হবে? বিক্ষুব্ধ ব্রহ্মপুত্র, কিন্তু বরাক কেন শান্ত বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে ইন্টারনেট বন্ধের রেকর্ড ''আমি খুব কমই একা বাসার বাইরে বের হয়েছি,'' বলছেন ফিরদাউস শাফিক, আন্দোলনকারীদের একজন। ''সবসময়ে আমার ছেলে বা স্বামী আমার সঙ্গে থেকেছে, এমনকি যখন আমি কাছাকাছি মার্কেটেও গিয়েছি। সুতরাং প্রথম এখানে যখন এলাম, সেটা একটু কষ্টকরই ছিল।'' ''কিন্তু আমি এটা বোধ করছিলাম যে, আমার প্রতিবাদ করা উচিত।'' ফিরদাউস শাফিক বলছেন, বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ জানাতে বাসা থেকে বাইরে আসতে হয়েছে অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, ফিরদাউস শাফিকের মতো শাহিন বাগের মতো আন্দোলন গড়ে তোলা বেশ ব্যতিক্রমী। দিল্লিভিত্তিক মুসলমান নারী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সায়েদা হামিদ বলছেন, ''এই নারীরা অ্যাকটিভিস্ট নন।'' বরং তারা সাধারণ মুসলমান নারী। তাদের অনেকেই গৃহিণী, যারা এই আন্দোলনের একেবারে মধ্যে দাঁড়িয়ে গেছেন। ''এই প্রথমবারের মতো তারা জাতীয় কোন ইস্যুতে সামনে এগিয়ে এলেন, যা ধর্মীয় বাধা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি মনে করি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এর সঙ্গে মুসলমানদের শিকার বানানোর একটা বিষয় জড়িত আছে, কিন্তু তারপরেও ইস্যুটি আসলে উদার দৃষ্টিভঙ্গির একটা বিষয়।'' যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন কতজন নারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সেটা বলা কঠিন, কিন্তু সংখ্যাটি খুব তাড়াতাড়ি বেড়েছে। তারা প্রথম বাইরে বেরিয়ে আসেন ১৫ই ডিসেম্বর রাতে-যখন দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একটি বিক্ষোভ পুলিশের সঙ্গে সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে যে, পরে পুলিশ অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করেছে। ওই রাতের পর বিক্ষোভটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ''আমাদের সন্তান পুলিশের গুলিতে মারা গেছে'' বলছেন বিক্ষোভে নিহত একজনের স্বজন যখন অনেক বিক্ষোভকারী এসেছেন এবং চলে গেছেন, কেউ কেউ সহিংসতায় নিহত হয়েছে, তখন শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীরা সেখানেই শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে রয়েছেন। কিন্তু এটা যেহেতু পূর্ব দিল্লি এবং নদীয়ার সীমান্তে, একটি উপশহর এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ফলে অনেকেই এই বিক্ষোভে খুশি নয়। স্থানীয় একজন দোকানদার বলছেন, ''এটা আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি করছে।'' নয়ডার একজন বাসিন্দা বলছেন, এর ফলে তাকে এখন কাজে যেতে হলে দ্বিগুণ পথ ঘুরে যেতে হয়। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা কারো জীবনযাপনে সমস্যা তৈরি করতে চান না, শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে থাকতে চান। তবে অনেক দোকানদার এই বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে সামনে এগিয়ে এসেছেন- অনেকে বিক্ষোভকারীদের খাবারদাবারও দিচ্ছেন। আসলে বিক্ষোভ যত বড় হচ্ছে, সারা শহর থেকে মানুষ এসে এর সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বক্তা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিক্ষোভকারী বলছেন, ''আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, এই আন্দোলনটি সহিংস হবে না। আমাদের বিরুদ্ধে শক্তি খাটাতে আমরা পুলিশকে কোন সুযোগ দিতে চাই না।'' মিজ শাফিক যোগ করছেন, ''সরকারের কারণেই আমরা বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছি। যদি আমরা আতাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, হয় আমাদের আটক কেন্দ্রে পাঠানো হবে নাহলে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। সুতরাং আমাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করতে হলে এখনি করা উচিত।'' দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শাহিন বাগে অবস্থান নিয়ে রয়েছেন বিক্ষোভকারী নারীরা তার এই বক্তব্য আরো অনেকের, যারা আশঙ্কা করছেন যে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন তাদের নাগরিকত্বকেই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যদি সেটা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োগ করতে শুরু করা হয়। এর কারণ হলো, নাগরিকপঞ্জীতে বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়। কিন্তু অমুসলমানদের কাগজপত্র না থাকলেও তারা অন্য দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসাবে নিজেদের দাবি করতে পারবেন। কিন্তু কাগজপত্র না থাকলে একজন মুসলমান সেই সুযোগ পাবেন না। ফলে তাকে আটক করা হতে পারে বা অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে। যদিও সরকার বলছে যে, এখনি দেশজুড়ে নাগরিকপঞ্জী তৈরির কোন পরিকল্পনা তাদের নেই, কিন্তু বিক্ষোভ চলছে। অনেক নারী এই আন্দোলনে এতটাই নিবেদিত যে, তারা তাদের কাজকর্মও বাদ দিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন রিজওয়ানা বানি। তিনি বলছেন, এখানে দিন রাত থাকার কারণে তার আয় রোজগার হচ্ছে না, কিন্তু তিনি তারচেয়েও বেশি ভয় পাচ্ছেন আইনটি তার নিজের এবং পরিবারের কতটা ক্ষতি করতে পারে, সে জন্য। ''আমরা জানি না কোথায় এবং কার কাছে ওসব কাগজপত্র পাওয়া যাবে, যা আমাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবে। শুধুমাত্র ধর্মের কারণে আমাদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। আমরা তো আসলে প্রথমে ভারতীয়, তারপরে হিন্দু অথবা মুসলমান।'' এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন সব বয়সী নারী। ''আমি কখনোই এই দেশে ছেড়ে যাবো না এবং একজন ভারতীয় হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে করতে মারাও যেতে চাই না,'' বলছেন সত্তর বছর বয়সী আসমা খাতুন, যিনি কয়েকদিন ধরেই এই বিক্ষোভ স্থানে রয়েছেন। ''এটা শুধুমাত্র আমার একার কথা নয়- আমার পূর্বপুরুষ, আমার ছেলেমেয়ে, আমার নাতিনাতনি- সবাই ভারতীয়। কিন্তু আমরা সেটা কারো কাছে প্রমাণ করতে চাই না।'' বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হুমাইরা সায়েদ বলছেন, ''আইনটি সংবিধানের লঙ্ঘন। এটার মাধ্যমে হয়তো এখন মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা নিশ্চিত, পর্যায়ক্রমে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে।'' বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করে এই আইনটিকে তারা দেখছেন, কিন্তু এটা আসলে সবার জন্যই হুমকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হুমাইরা সায়েদ বলছেন, ''আইনটি সংবিধানের লঙ্ঘন। এটার মাধ্যমে হয়তো এখন মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা নিশ্চিত, পর্যায়ক্রমে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে।'' ''একজন মুসলমান হিসাবে আমি জানি, এখানে আমার ভাইবোন, অন্য সম্প্রদায়, অন্য সবার জন্য আমাকে থাকতে হবে।''
নাগরিকত্ব আইন: দিল্লির শাহিন বাগের রুখে দাঁড়ানো নারীরা
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
মোহনদাস করমচাদ গান্ধীর সাথে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ মাউন্টব্যাটেন আর জিন্নাহর প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৪ঠা এপ্রিল। আর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল। তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হওয়ার ঠিক আগে এক ফটোগ্রাফার লর্ড এবং লেডি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে মি. জিন্নাহর একটা ছবি তুলতে চেয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে বলার জন্য মি. জিন্নাহ আগে থেকেই একটা লাইন মনে মনে তৈরি করে এসেছিলেন। তাঁর মাথায় ছিল যে হয়তো লেডি মাউন্টব্যাটেনকে মাঝখানে রেখে একদিকে তিনি এবং অন্যদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ছবি তোলা হবে। সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তিনি ওই 'পাঞ্চলাইনটা' তৈরি করেছিলেন। মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর জীবনীকার স্ট্যানলি ওয়াপার্টকে ১৯৭৮ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লর্ড মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন, "যখন আমি মি. জিন্নাহকে অনুরোধ করলাম যে উনি যেন আমার আর এডউইনার [লেডি এডউইনা মাউন্টব্যাটেন] মাঝখানে দাঁড়ান, তখন তিনি অত তাড়াতাড়ি নতুন কোনও লাইন ভেবে বার করতে পারেন নি বোধ হয়। তাই যে লাইনটা বলবেন বলে ভেবে এসেছিলেন, সেটাই বলে ফেললেন, - "আ রোজ বিটুইন টু থর্নস' - অর্থাৎ দুই কাঁটার মাঝে একটি গোলাপ।" ওই সাক্ষাতকারের বেশ কয়েক মাস পরে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ২রা জুন লন্ডন থেকে দিল্লি এলেন। 'নর্থ কোর্ট' ভবনে ভারতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীদের সঙ্গে এক বৈঠক ডাকলেন - দেশভাগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য। লর্ড মাউন্টব্যাটেন নেতাদের জানিয়েছিলেন, তাঁরা যেন মধ্যরাতের আগেই নিজের নিজের মতামত তাঁকে জানিয়ে দেন। বৈঠক থেকে মি. জিন্নাহ বেরিয়ে যাওয়ার পরে লর্ড মাউন্টব্যাটেন খেয়াল করেছিলেন যে মিটিং চলার সময়ে সামনে রাখা একটা কাগজে কিছু আঁকিবুঁকি কেটেছেন তিনি। কাগজে রকেট, টেনিস র‍্যাকেট, এইসব আঁকা ছিল আর বেশ বড় অক্ষরে লেখা ছিল দুটো শব্দ - 'গভর্নর জেনারেল'। তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে তিনি নিজের জন্য কোন পদের কথা ভাবছিলেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেন, তার দু পাশে মি. জিন্নাহ ও জওহরলাল নেহেরু ভারতের বৈদেশিক গুপ্তচর এজেন্সি রিসার্চ এন্ড অ্যানালিসিস উইং বা 'র'-এর প্রাক্তন বিশেষ সচিব ছিলেন তিলক দেভেশর। তাঁর বই, 'পাকিস্তান এট দা হেল্ম'- এ মি. দেভেশর লিখেছেন, "ভারত আর পাকিস্তানের স্বাধীনতার মাস খানেক আগে লর্ড মাউন্টব্যাটেন মি. জিন্নাহকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যাতে তিনি দুই দেশের যৌথ গভর্নর জেনারেল পদটা গ্রহণ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যদি মি. জিন্নাহ শুধুই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন, তাহলে তাঁর ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে।" মি. দেভেশরের কথায়, "তবে মি. জিন্নাহ লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন, আপনি সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার প্রধানমন্ত্রী সেটাই করবেন, যেটা আমি বলব। আমি তাকে উপদেশ দেব, আর সেটা পালন করা হবে।" আরো পড়তে পারেন: ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নাহর ছবি নিয়ে বিতর্ক ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নাহর ছবি নিয়ে বিতর্ক 'জিন্নাহর আদর্শই এখনও পাকিস্তানের ভিত্তি' তাঁর চেয়ার যেন মাউন্টব্যাটনের ওপরে থাকে মি. জিন্নাহ চেয়েছিলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে তাঁর বসার চেয়ারটা যেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের থেকে কিছুটা উঁচুতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার অবশ্য এই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছিল। মি. দেভেশর বলছেন, "ইংরেজরা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিল যে মি. জিন্নাহ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল তখনই হবেন, যখন ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। তার আগে পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক পদই নেই। তাই তাঁর চেয়ার লর্ড মাউন্টব্যাটেনের চেয়ারের ওপরে রাখা অনুচিত হবে। মি. জিন্নাহ কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও ইংরেজদের এই যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন।" 'স্টেনোগ্রাফারের সাহায্যে পাকিস্তান তৈরি করেছি' এটা একটা ঐতিহাসিক সত্য যে, মি. জিন্নাহ নিজে বিশ্বাস করতেন যে তিনিই পাকিস্তান তৈরি করেছেন। 'ফ্রম প্ল্যাসি টু পাকিস্তান'-গ্রন্থে হুমায়ূন মির্জা লিখছেন, "পাকিস্তানের এক সময়কার প্রতিরক্ষা সচিব ইসকান্দার মির্জা, যিনি পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন, তিনি মি. জিন্নাহকে বলেছিলেন, যে মুসিলম লীগ পাকিস্তান দিল, সেই দলটাকে যেন অবহেলা করা না হয়।" সঙ্গে সঙ্গে মি. জিন্নাহ পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন, "কে বলল মুসলিম লীগ আমাদের পাকিস্তান দিয়েছে? আমি পাকিস্তান বানিয়েছি, আমার স্টেনোগ্রাফারের সাহায্যে।" আমি জানি না কীভাবে নামাজ পড়তে হয় করাচীতে মি. জিন্নাহর দিনটা শুরু হত সকাল সাড়ে আটটার দিকে। একটা বড় টেবিলে তাঁর জন্য ফাইলবন্দী কাগজপত্রের একটা স্তূপ রাখা থাকত। পাশেই থাকত 'ক্রেভিন-এ' নামের সিগারেটের একটা বাক্স। তাঁর কাছে সুগন্ধি কিউবান সিগার থাকত। গন্ধে তাঁর ঘর সবসময়ে ম-ম করত। মি. জিন্নাহ নিজেকে মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা বলেই মনে করতেন। ধর্মীয় নেতা কখনও হতে চান নি তিনি। সেকারণে তাঁকে বেশ কয়েকবার ধর্ম-সঙ্কটেও পড়তে হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ আরো পড়তে পারেন: জিন্নাহর মেয়ে দিনা: এক বিরল সাক্ষাতের কাহিনী নেহেরু যে কারণে ভারত ভাগ করতে রাজী হলেন ভারত-ভাগের নাটকীয় ঘটনাবলী, শেখ মুজিবের বয়ানে প্রখ্যাত লেখক খালিদ লতিফ গৌবা এক জায়গায় লিখেছিলেন যে তিনি মি. জিন্নাহকে কোনও একটা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। "আমি জানি না কীভাবে নামাজ পড়তে হয়," জবাব দিয়েছিলেন মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ। মি. গৌবা বলেছিলেন, "মসজিদে অন্যরা যা করবে, আপনিও তাদের দেখাদেখি সেটাই না হয় করবেন।" মি. জিন্নাহর সহকারী ছিলেন মুহাম্মদ করিম চাগলা, যিনি পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি আত্মজীবনী 'রোজেস ইন ডিসেম্বর'-এ লিখেছেন, "একবার আমি আর মি. জিন্নাহ ঠিক করেছিলাম বোম্বের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ 'কর্ণগ্লিয়াজ'-এ খেতে যাব। উনি দু কাপ কফি, পেস্ট্রি আর শুয়োরের মাংসের সসেজ অর্ডার করলেন। আমরা বেশ তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছিলাম। হঠাৎই এক বয়স্ক দাড়িওয়ালা মুসলমান ব্যক্তি ওখানে হাজির হলেন, তাঁর সঙ্গে একটা বছর দশেকের বাচ্চা ছেলে।" "ওঁরা মি. জিন্নাহর বেশ কাছাকাছি বসেছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করলাম, ওই বাচ্চা ছেলেটি মি. জিন্নাহর সামনে রাখা সসেজের দিকে হাত বাড়াচ্ছে আর তারপরেই ছোট একটা টুকরো তুলে নিজের মুখে পুরে দিল। আমি এই বাচ্চাটার কাণ্ড দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলাম।" একটু পরে ওঁরা চলে গেলেন। তখন মি. জিন্নাহ আমার ওপরে বেশ রেগে গিয়ে বললেন, "চাগলা, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত। ওই বাচ্চা ছেলেটাকে শুয়োরের মাংসের সসেজ খেতে দিলে তুমি?" জিন্নাহর অসুস্থতা খুব কম লোকেই জানেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই মি. জিন্নাহর শরীরে বাসা বেঁধেছিল এক মারণ রোগ। ওঁর চিকিৎসক ডা. জাল প্যাটেল এক্সরে প্লেটে চোখ রেখেই দেখতে পেয়েছিলেন ফুসফুসে ছোপছোপ দাগ। কিন্তু তিনি সবার কাছ থেকে গোপন রেখেছিলেন ব্যাপারটা। মি. জিন্নাহ, মাউন্টব্যাটেন ও লেডি মাউন্টব্যাটেন আরো পড়তে পারেন: সাতচল্লিশে সিলেট কীভাবে পাকিস্তানের অংশ হল? তিলক দেভেশরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, যদি এটা জানাজানি হয়ে যেত যে মি. জিন্নাহর আয়ু আর খুব বেশী দিন নেই, তাহলে কি দেশভাগ আটকানো যেত? মি. দেভেশরের বক্তব্য ছিল, "ডাক্তার প্যাটেল খুবই পেশাদার চিকিৎসক ছিলেন। সেজন্যই কারও কানেই পৌঁছয় নি জিন্নাহর অসুস্থতার কথাটা। তবে আমার ধারণা লর্ড মাউন্টব্যাটেন জানতেন, সেজন্যই স্বাধীনতার তারিখটা ১৯৪৮ এর ফেব্রুয়ারি থেকে মাস ছয়েক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অতদিন দেরী করলে যদি মি. জিন্নাহ বেঁচে না থাকেন! যদি গান্ধী, নেহেরু বা সর্দার প্যাটেলদের কাছে জিন্নাহর অসুস্থতার খবর পৌঁছাত, ওঁরাও হয়তো নিজেদের নীতি বদলে ফেলে বিভাজনের জন্য আরও বেশী সময় চাইতেন।" "পাকিস্তান আন্দোলন আর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা একজন মাত্র ব্যক্তির ওপরেই নির্ভরশীল ছিল - তিনি হলেন মি. জিন্নাহ। লিয়াকত আলি আর মুসলিম লীগের অন্য নেতাদের সেই ক্ষমতাই ছিল না যে পাকিস্তানের দাবী নিয়ে এগিয়ে যাবেন," বিবিসিকে বলছিলেন মি. দেভেশর। শেষ সময়টায় খুব কষ্ট পেয়েছেন জিন্নাহ ১৯৪৮ এর মার্চ মাস থেকেই জিন্নাহর স্বাস্থ্য বেশ খারাপ হতে শুরু করেছিল। বোম্বে থেকে ওঁর এক পুরনো বন্ধু জামশেদ করাচী গিয়েছিলেন মি. জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করতে। সরকারি আবাসের বাগানে একটা চেয়ারে বসে ঢুলছিলেন মি. জিন্নাহ। চোখ খুলে পুরনো বন্ধুকে দেখতে পেয়ে মি. জিন্নাহ ফিসফিস করে বলেছিলেন, "জামশেদ, আমি খুব ক্লান্ত। ভীষণ ক্লান্ত।" তখন তাঁর বয়স ৭২ বছর। পেশায় ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মামলায় জয় পেয়েছেন ততদিনে। মুসলিম লীগের এক সভায় ভাষণ দিচ্ছেন মি. জিন্নাহ জীবিত থাকার লড়াইতেও নিজের সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মি. গান্ধীকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন। মি. গান্ধী ততদিনে নিহত হয়েছেন নাথুরাম গডসের গুলিতে। তাই শেষ সময়টায় কিছুটা আরাম করার সুযোগ ছিল মি. জিন্নাহর। তবে শেষ দিনে খুব কষ্ট পেতে হয়েছে তাঁকে। ১৯৪৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর মি. জিন্নাহকে কোয়েটা থেকে ভাইকিং বিমানে চাপিয়ে করাচী নিয়ে আসা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত পাকিস্তানের জনক - কায়েদ-এ-আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ওজন তখন মাত্র ৪০ কিলোগ্রাম। করাচীর মৌরিপুর বিমান বন্দরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন তাঁর সামরিক সচিব। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি। সামরিক সচিব ছাড়া অন্য কেউ বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন না। যে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে গভর্নর হাউসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, মাঝপথে সেটার পেট্রল শেষ হয়ে যায়। তিলক দেভেশর বলছেন, "এটা ভাবা যায় যে পাকিস্তানের জন্মদাতা, গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ওইরকম শারীরিক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের তেল শেষ হয়ে গেল মাঝপথে! সামরিক সচিব অনেক চেষ্টা করে ঘণ্টা-খানেক পরে একটা অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সেই মি. জিন্নার পালস কমে আসছিল। সেই রাতেই তিনি মারা যান।" ভনভন করছে মাছি ওই অ্যাম্বুলেন্স যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন ফাতিমা জিন্নাহ, তাঁর 'মাই ব্রাদার' বইতে। মিজ. ফাতিমা লিখেছেন, "অ্যাম্বুলেন্সের পিছনের দিকে আমি আর কোয়েটা থেকে আমাদের সঙ্গে যে নার্স এসেছিলেন, সেই ডনহেম বসেছিলাম। পিছনে আসছিল গভর্নর জেনারেলের নতুন ক্যাডিলাক লিমুজিন। চার-পাঁচ মাইল চলার পরেই হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটা দাঁড়িয়ে গেল। সেদিন করাচীতে প্রচণ্ড গরম ছিল। জিন্নাহর শরীরের ওপরে কত যে মাছি ঘুরছিল!" গর্ভনর জেনারেল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ "অন্য অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমি আর ওই নার্স ডনহেম পালা করে খবরের কাগজ দিয়ে বাতাস করছিলাম জিন্নাহর ওপরে। ক্যাডিলাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না, ওঁর স্ট্রেচারটা ওই গাড়িতে ঢুকত না। পাশেই রিফিউজিদের শত শত ঝুপড়ি ছিল। ওই রিফিউজিরা হয়তো জানতেই পারে নি, যে মানুষটা তাঁদের নিজের দেশ দিল, সেই 'কায়েদ' তাঁদের মাঝেই অসহায় অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে আছেন। আমার জীবনের সবথেকে লম্বা এক ঘণ্টা বোধহয় ওটাই ছিল," লিখেছিলেন ফতিমা জিন্নাহ। শেষমেশ সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে গভর্নর জেনারেল হাউসে পৌঁছলেন ওঁরা সবাই। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলেন .মি. জিন্নাহ। তারপর চোখ খুলে ফিসফিস করে ডেকেছিলেন, "ফাতি...." তারপরেই মাথাটা সামান্য ডানদিকে হেলে পড়ল আর তাঁর চোখ বন্ধ হয়ে গেল। রাত ১০টা ২০ মিনিটে কায়েদ-এ-আজম মুহম্মদ আলি জিন্নাহ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। একটা সাধারণ কফিনে পরের দিন করাচীতেই তাঁকে দাফন করা হয়। ইতিহাসের এক অসাধারণ আর রহস্যে ভরা মহারথীর পার্থিব শরীর আজও সেই জায়গাতেই কবর দেওয়া আছে। শুধু পরে তার ওপরে গোলাপী পাথরে তৈরি এক সুদৃশ্য গম্বুজওয়ালা মকবরা তৈরি করা হয়েছে।
যদি জিন্নাহর রোগের কথা জানা যেত, তাহলে কি ভারত-ভাগ আটকানো যেত?
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
সুন্দরবনের ত্রাস জাহাঙ্গীর বাহিনী এক দুপুরে মোস্তফা শেখের গ্যারেজে গিয়ে দেখা গেল আর পাঁচটা গ্যারেজের মতোই তা সাধারণ। দুজন কর্মচারি, থাকে সাজানো স্পেয়ার পার্টস, কম্প্রেসরের শব্দ, লুব্রিকেন্ট আর পোড়া তেলের গন্ধ। এলাকার লোকজন মোস্তফা শেখকে চেনে এই গ্যারেজের মালিক হিসেবে। কিন্তু তার আসল পরিচয় শুনলে অনেকেই চমকে যাবেন। কারণ এই মোস্তফা শেখই ছিলেন সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ জলদস্যু দল মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার। "আমাদের এখনকার জীবন তো বোনাস পাওয়া জীবন। আমাদের তো বেঁচে থাকারই কথা ছিল না। সরকার, র‍্যাব, মিডিয়া -- এদের জন্যেই আমরা এখন সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি," বলছিলেন মোস্তফা শেখ, "আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে, পরিবার - এদের সাথে থাকতে পারছি। সৎ পথে দুটো পয়সা রোজগার করে দু'মুঠো খেতে পারছি। আমার কাছে এর চেয়ে বড় শান্তি আর কিছু নেই।" স্বাভাবিক জীবনে এসে কী পাচ্ছি? বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনে কয়েক দশক ধরে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে যেসব জলদস্যু দল, সরকারের এক বিশেষ ক্ষমার আওতায় তারা এখন দলে দলে আত্মসমর্পণ করছে। ফিরে আসছে স্বাভাবিক জীবনে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ফরে আসছে শান্তি। এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যেসব জেলে, মৌয়াল, কাঁকড়া শিকারি - তারা এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন। বনের কাঠ চুরি কম হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বন কর্মকর্তারা। আর জলদস্যুদের সহায়তায় অবৈধ শিকার কমে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পাচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। গোপন আস্তানায় বিশ্রাম আরো দেখুন: জঙ্গল থেকে জীবনে পর্ব-২ শুধু প্রতিশ্রুতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে জলদস্যু দমন জঙ্গল থেকে জীবনে পর্ব-৩ সুন্দরবন দখল যাদের নিত্যদিনের লড়াই জঙ্গল থেকে জীবনে পর্ব-৪ সুন্দরবনে শান্তি ফেরালেন যে সাংবাদিক শুধু সুন্দরবনের অরণ্যই না, পূবে কক্সবাজার থেকে শুরু করে পশ্চিমে পাথরঘাটা, মংলা - এই বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে জলদস্যুরা একসময় জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো, জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতো, ট্রলার আটক করে অর্থ দাবি করতো - সেই সব কর্মকাণ্ড এখন থেমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। মোস্তফা শেখের গ্যারেজ থেকে একটু দূরেই তার বাসা। সেখানে থাকেন তার স্ত্রী, মা আর তার একমাত্র কন্যা। দেখে টের পাওয়া যায় সংসারে অর্থের বৈভব নেই। কিন্তু স্বস্তি আছে। কথা হলো মোস্তফা শেখের স্ত্রী হাসি বেগমের সাথে। তিনি বলছিলেন, স্বামীর পেশার কারণে পাড়াপ্রতিবেশিদের কাছ থেকে বহুদিন তাকে নানা ধরনের গঞ্জনা সইতে হয়েছে। নিকট আত্মীয় স্বজনেরা দূরে দূরে থেকেছে। "প্রতিবেশীরা নানা প্রশ্ন করতো। জিজ্ঞেস করতো স্বামী আসে না কেন। আমি বলতাম ব্যবসা করে তো, তাই তাকে বাইরে বাইরে থাকতে হয়", বলছিলেন হাসি বেগম, "আমার মেয়ে, মার্জিয়া, প্রশ্ন করতো সবার আব্বু সাথে থাকে, আমার আব্বু আমাদের সাথে থাকে না কেন? আমি জবাব দিতে পারতাম না।‍" জলদস্যু বউয়ের নিত্য বিড়ম্বনা জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের পর বদলে গেছে এই পরিবারগুলোর জীবনধারা। কিন্তু কোন কারণে সরকারের মনোভাবে যদি পরিবর্তন ঘটে, তাহলে তাদের কী হবে? এই প্রশ্ন নিয়ে তারা এখনই দুশ্চিন্তা করতে রাজি না। তারা তাদের নিকটজনকে কাছে পেয়েই খুশি। মোস্তফা শেখের বাড়িতেই কথা হলো ফজলু শেখ, শাহিন শেখ, মো. আরিফ বিল্লাল আর মোঃ. হারুনের সঙ্গে। এরা সবাই একসময় মাস্টার বাহিনীর দুর্ধর্ষ সদস্য ছিলেন। আত্মসমর্পণের পর এরা এখন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। কথায় কথায় তারা জানালেন, জঙ্গলের জীবন ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। লোকালয়ে র‍্যাব, পুলিশ, আর সাধারণ মানুষ -- যাদের হাতে ধরা পড়লে রেহাই নেই। অন্যদিকে, বনে আছে বাঘ, সাপ আর প্রতিদ্বন্দ্বী জলদস্যু দল, যাদের খপ্পরে পড়লেও নিশ্চিত মৃত্যু। "বনের মধ্যে বাঁচতে হলে হরিণের চেয়েও সতর্ক থাকতে হয়," বলছিলেন ফজলু শেখ, "মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রতিদিন তৈরি হতে হয়। প্রতিদিন নিজেকে বলতে হয় আজকেই বোধ হয় শেষ দিন।" জলদস্যু জীবনের অনেকটাই কাটে নৌকার ওপর। আত্মসমর্পণ করেছেন এমন প্রায় সব জলদস্যুর জীবনই একেকটি গল্পের মত। দু'একজন স্বীকার করেছেন, রোমাঞ্চের জন্যই তারা দস্যুদলে নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ জলদস্যুর দাবি, তারা ইচ্ছে করে এই পথে আসেননি। পরিস্থিতির চাপে এই পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। "আমি তো জন্মগতভাবে ডাকাত ছিলাম না। পাড়া-প্রতিবেশী, গ্রামের ক্ষমতাবান মানুষ আমাকে এই পথে ঠেলে দিয়েছে," বলছিলেন মোঃ হারুন। কিন্তু বাস্তবতা হলে এসব ঝুঁকি মাথায় নিয়েই মাস্টার বাহিনীর এসব সদস্য দীর্ঘদিন ধরে জলদস্যুতার সাথে যুক্ত ছিলেন। এর পেছনে তাদের মূল আকর্ষণ ছিল লক্ষ লক্ষ টাকা। মূলত: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই সুন্দরবন ক্রমশই সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চেলে যেতে শুরু করে। উনশিশো আশির দশকে গনি বাহিনীর হাতে সংগঠিত দস্যুতার সূচনা হলেও পরবর্তী এক দশকের মধ্যে প্রায় ডজন-খানেক জলদস্যু দল ভাগাভাগি করে পুরো অরণ্য এবং তার নিকটবর্তী উপকূল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। জলদস্যুদের উপদ্রবে ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবনে যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখন সরকার কিছুটা বাধ্য হয়েই একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। জলদস্যু দমনের বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয় এই টাস্কফোর্সকে। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এই টাস্কফোর্সে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, "১৯৮০'র দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শতাধিক জলদস্যু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গ সরাসরি সরাসরি বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।" সাগর বাহিনীর প্রধান সাগর "এদের মধ্যে শীর্ষ বাহিনীর প্রধান শীর্ষ, ফেরাউন বাহিনীর প্রধান বেল্লাল, কাসেম বাহিনীর প্রধান কাসেম উল্লেখযোগ্য।" কিন্তু টাস্কফোর্সের অভিযানের মুখে জলদস্যুদের আয় এবং তাদের তৎপরতার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে এলেও এদের পুরোপুরিভাবে দমন করা সম্ভব হয়নি। কারণ জলদস্যুতার চক্রটি শুধু জঙ্গলের ভেতরেই কাজে করে না। জঙ্গলের বাইরে - লোকালয়েও এই চক্রের একটি অংশ পর্দার পেছনে থেকে কাজ করতে থাকে। ফলে সময়ে সময়ে জলদস্যু নিহত হওয়ার খবর জানা গেলেও আত্মসমর্পণের খবর পাওয়া যায় কদাচিৎ। কিন্তু এই স্ট্যাটাস-কো বা স্থিতাবস্থার এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে ২০০৯ সালে। আর সেটা কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ঘটেনি। সেটা ঘটেছিল একজন সাংবাদিকের হাতে। মূলত তারই উদ্যোগে শুরু হয় জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া। (এ সম্পর্কে আলাদা প্রতিবেদন আসছে।) যমুনা টেলিভিশনের বর্তমান বিশেষ প্রতিবেদক মোহসীন-উল হাকিম তখন কাজ করতেন দেশ টিভিতে। দুহাজার নয় সালের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের উপকূলের ওপর। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সুন্দরবন অঞ্চল। আইলা সংবাদ সংগ্রহ করতে সুন্দরবন অঞ্চলে গেলে গ্রামের লোকজন তাকে বলেন, ঝড়ের ক্ষতির চেয়েও বড় ক্ষতি তাদের ঘটছে জলদস্যুদের হাতে। কথাটি তাকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে সমস্যাটি নিয়ে তিনি ভাবতে শুরু করেন। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো তিনি যোগাযোগ করেন মোতালেব বাহিনী দলনেতা মোতালেবের সাথে। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আত্মসমর্পণে রাজি করানোই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু তাতে খুব একটা সফল হননি তিনি। কিন্তু দমে না গিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে যান অন্য গ্রুপগুলোর সাথে। র‍্যাব-পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে জলদস্যুদের ক্রমাগত জায়গা বদল করতে হয়। "জলদস্যুদের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্সের অভিযানের মাঝেই ২০১৫ সালে মাস্টার বাহিনী প্রধান কাদের মাস্টারের সাথে আলোচনা শুরু করি," বলছিলেন মি. হাকিম, "তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড একটা আগ্রহ কাজ করছিল। কিন্তু তারা কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। আমার মনে হলো যোগাযোগের এই শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব।" এরপর মহসীন-উল হাকিম, র‍্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবীর এবং সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনার পথ ধরে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম জলদস্যুদল মাস্টার বাহিনীর প্রধান কাদের মাস্টার ২০১৬ সালের ৩১শে মে সুন্দরবন থেকে বেরিয়ে আসেন মহসীন-উল হাকিমের সঙ্গে । তার সাথে ছিল নয় জন অনুচর, ৫২টি অস্ত্র ও পাঁচ হাজার রাউন্ডেরও বেশি গুলি। পরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমর্পণ করে। "মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট কেস," স্মরণ করলেন মি. হাকিম। কারণ র‍্যাবের সঙ্গে আলোচনা এবং এই আত্মসমর্পণের পরিণতি কী হয় তা অন্যান্য গ্রুপগুলো সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করছিল। তাদের মনে একটা ভয় কাজ করছিল যে আত্মসমর্পণের পর তাদের মেরে ফেলা হবে। "কিন্তু সেটা যখন ঘটলো না। যখন বোঝা গেল সরকার সত্যিই আন্তরিকভাবে জলদস্যু সমস্যার সমাধান চাইছে, তখন অন্যান্য দলগুলো নিজেরাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করলো।" এরপর একে একে আত্মসমর্পণ করে আরও ১১টি দলের সদস্য ১৫০ জন জলদস্যু। র‍্যাবের কাছে জমা পড়ে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২৪৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। র‍্যাব মহাপরিচালকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দু'তিনটি বাহিনী এখনও সুন্দরবনে সক্রিয় রয়েছে। আত্মসমর্পণ কিংবা র‍্যাবের অভিযানের মাধ্যমে এই দলগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করছেন। (চলবে) মাস্টার বাহিনীর প্রধান কাদের মাস্টার ( আসল নাম মোস্তফা শেখ), আত্মসমর্পণের আগে।
প্রাণভয় আর ক্ষমা এই দুই তাগিদে সুন্দরবন ছাড়ছে জলদস্যুরা
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বাবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (মাঝখানে) এবং ফুপু ফাতিমার (বাঁয়ে) সঙ্গে দিনা ওয়াদিয়া (ডানে)। দিনা ওয়াদিয়া ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একমাত্র সন্তান। কিন্তু পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে তাঁর কন্যার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল যখন দিনা ওয়াদিয়া তাঁর বাবার মতোই এক অমুসলিমকে বিয়ে করেন। দিনা প্রবলভাবে প্রচার বিমুখ ছিলেন, মানুষের মনোযোগ এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে অনেক চেষ্টার পর ২০০২ সালে আমি নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন এভিনিউতে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছি নাইন ইলেভেনের প্রথম বার্ষিকীর খবর সংগ্রহ করতে। দিনা ওয়াদিয়া জানালেন আমি তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারি। তরুণ বয়সে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (বাঁয়ে) এবং স্ত্রী রতনবাঈ (ডানে)। তিনি এমন একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকেন, যেখানে আপনি অনাহুতভাবে লবি পর্যন্তও যেতে পারবেন না, অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়া তো আরও দূরের ব্যাপার। দিনা ওয়াদিয়া আমাকে জানিয়েছিলেন কোন সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা যাবে না, কোন কথা-বার্তাই 'অন-দ্য-রেকর্ড' নয়। ছবি তোলাও নিষেধ। যদিও আমার অনুরোধে যাওয়ার আগে শেষ পর্যন্ত তিনি তার একটি লাইফ সাইজ পোট্রেটের ছবি আমাকে তুলতে দিয়েছিলেন। তাঁর এই ছবিটি ১৯৪৩ সালে লন্ডনে আঁকা, যখন তিনি সন্তান সম্ভবা, ছেলে ব্যবসায়ী নুসলি ওয়াদিয়া তখন তাঁর পেটে। দিনা ওয়াদিয়ার মৃত্যুর পর এখন আমি সেই গোপনীয়তার বন্ধন থেকে মুক্ত। যদিও তার সঙ্গে আমার সেই সাক্ষাতে তিনি এমন কিছু বলেননি যা অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই, তারপরও আমি সেই সাক্ষাতের কথা এখন বলতে পারি। যখন তিনি দরোজা খুলেছিলেন, তখন আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম।একজন ছোটখাট গড়নের কিন্তু খুবই উচ্ছল বৃদ্ধা নারী। ঠোঁটে উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক। মুখের গড়ন, নাক, মুখের অভিব্যক্তি, সব মিলিয়ে বাবার সঙ্গে তাঁর চেহারার আশ্চর্য মিল। রতনবাঈ: পাকিস্তানের জাতীয় আর্কাইভে সংরক্ষিত ছবি আমি এখনো মনে করতে পারি প্রথম দেখায় আমার যে বিস্ময়, তিনি আসলেই বাবার মেয়ে! দিনা ওয়াদিয়া বেশ প্রাণবন্ত এবং বন্ধুবৎসল। তিনি আমাকে তার সুন্দরী মায়ের একটি ছবিও দেখালেন। রতনবাঈ, একজন পার্সি। যখন দিনার বয়স মাত্র নয়, তখন তিনি মারা যান।দিনা বড় হয়েছেন তার নানীর কাছে। তার টেবিলে বাবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি ছবি ছিল। বাবা জিন্নাহর কথা বললেন বেশ গর্বভরে। এটা সত্যি, দিনা যখন একজন পার্সি, নেভিল ওয়াদিয়াকে বিয়ে করেন, এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। নেভিল ওয়াদিয়া পরে খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষা নেন। কিন্তু পরে অবশ্য আবার বাবা-মেয়েতে মিলমিশ হয়েছে। তারা পরস্পরকে চিঠি লিখতেন, কথা বলতেন। আরও পড়ুন: মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে এক ষোড়শীর অজানা প্রেমকাহিনী মুসলিম লীগের দাবি অনুযায়ী যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিল ব্রিটিশরা, তখন দিল্লি থেকে মেয়েকে ফোন করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, "আমরা যা চেয়েছে তা পেয়ে গেছি"! দিনা জানালেন, তিনি ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্রে বাবার দিকটাই বেশি পেয়েছেন মায়ের দিকের চেয়ে। দিনা কখনো পাকিস্তানে গিয়ে থাকেন নি। তিনি আমাকে বললেন, বোম্বে হচ্ছে আমার শহর। যদিও জীবনের একটা বড় অংশ তিনি কাটিয়েছেন লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কে। দিনা ওয়াদিয়ার ছেলে নুসলি ওয়াদিয়া ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন পিতাকে মৃত্যুর পর শেষ বিদায় জানাতে। আরও দুবার পাকিস্তানে গেছেন তাঁর ফুপু ফাতিমাকে দেখতে। কিন্তু ১৯৬৭ সালের পর থেকে যখন আমাদের এই সাক্ষাৎ হয়, তখন পর্যন্ত তিনি আর পাকিস্তানে যাননি। বেনজির ভুট্টো এবং অন্য অনেকে বহু বার তাকে পাকিস্তানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, বললেন তিনি। কিন্তু তিনি প্রতিবারই এই আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি একটা পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে চান নি। তিনি অভিযোগ করলেন, পাকিস্তানকে লুন্ঠন করেছে দেশটির নেতারা এবং কোন মুসলিম দেশেই গণতন্ত্র সফল হয়নি বলে সতর্ক করে দিলেন। তবে আমাদের এই সাক্ষাতের দুবছর পর দিনা ওয়াদিয়া করাচীতে যান এবং তাঁর বাবার সৌধ পরিদর্শন করেন। করাচীতে জিন্নাহর সমাধি সৌধ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে অনেক স্মৃতির কথা উল্লে করেন তিনি। গান্ধীর সঙ্গে তার অনেক মধুর স্মৃতি, গান্ধীকে পছন্দ করতেন তার বাবা। সরদার প্যাটেল ছিলেন একেবারে সোজা কথার মানুষ। কিন্তু নেহেরু সম্পর্কে দিনার মন্তব্য, তাকে সহজে তোষামোদ করা যায় এবং নেহেরু আসলে তার পিতার সমকক্ষ নন। আর মাউন্টব্যাটেনকে তিনি বর্ণনা করেন এমন এক মানুষ হিসেবে যাকে বিশ্বাস করা যায় না। আর নিজের বাবা জিন্নাহ সম্পর্কে দিনা ওয়াদিয়ার মূল্যায়ন? যেভাবে পাকিস্তানে তার বাবাকে পুজা করা হয়, সেটা তিনি পছন্দ করেন না। এ কথার পর তিনি আমাকে দরোজার কাছে এগিয়ে দেন। কিন্তু এই সাক্ষাতের স্মৃতি এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। নিউ ইয়র্কে আমার হোটেল রুমে ফিরেই আমি তরতাজা এই সাক্ষাতের বিবরণ লিখে রেখেছিলাম। তার মৃত্যুর খবর শুনে খুব দুঃখ পেলাম। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার স্বাধীনতার যুগের নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ সংযোগ বুঝি ছিন্ন হয়ে গেল। (এন্ড্রু হোয়াইটহেডের এই লেখাটি তাঁর অনুমতি নিয়ে পুন:প্রকাশ করা হলো।)
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মেয়ে দিনা: এক বিরল সাক্ষাতের কাহিনী
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই বিক্ষোভ চলছে সেখানে সেখানাকার একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছে বিবিসি। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে যে তাদেরকে তার ও লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছে। অনেক গ্রামের বাসিন্দারাই বিবিসিকে ক্ষতচিহ্ন দেখান, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সাথে সেসব অভিযোগ সম্পর্কে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ভারতের সেনাবাহিনী এসব অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন ও প্রমাণসাপেক্ষ নয়' বলে দাবি করেছে। অগাস্টের ৫ তারিখ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কার্যত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে কাশ্মীর। কাশ্মীর অঞ্চলকে ধারণা করা হয় এমন একটি এলাকা হিসেবে যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সামরিক সদস্যদের অবস্থান রয়েছে, তার ওপর বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে আরো অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ভারত সরকার। কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, অ্যক্টিভিস্টসহ প্রায় তিন হাজার মানুষকে আটকও করা হয়েছে। অনেককেই রাজ্যের বাইরের কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব পদক্ষেপ শুধুই রাজ্যটির জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভারতের সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র জঙ্গিবাদ দমনে লড়াই করে যাচ্ছে। ভারতের অভিযোগ, ঐ অঞ্চলের জঙ্গিদের সহায়তা করে পাকিস্তান - যেই অভিযোগ কাশ্মীরের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করা পাকিস্তান সবসময়ই অস্বীকার করেছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার সিদ্ধান্তকে ভারতের বিভিন্ন অংশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী'র এই 'সাহসী' সিদ্ধান্তকে ভারতের গণমাধ্যমও সাধুবাদ জানিয়েছে। আরো পড়তে পারেন: কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের লড়াইয়ের কারণ কী? এক নজরে কাশ্মীর ও ৩৭০ অনুচ্ছেদের ইতিহাস কাশ্মীর: 'বাড়ি বাড়ি গিয়ে যুবকদের তুলে নেয়া হচ্ছে' কাশ্মীর: অন্যান্য রাজ্যের জন্যও কি একটি সংকেত? কাশ্মীর: অনুচ্ছেদ ৩৭০ কেন গুরুত্বপূর্ণ? একজন ভুক্তভোগীর পায়ে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন, ভারতীয় সেনাদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি সতর্কতা: নিচের বর্ণনা অনেক পাঠকের কাছে অস্বস্তির কারণ মনে হতে পারে আমি দক্ষিণ কাশ্মীরের অন্তত ৬টি গ্রামে ঘুরেছি, যেগুলো গত কয়েকবছরে ভারত বিরোধী সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থানের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো। সেসব গ্রামের সবগুলোতর বাসিন্দাদের কাছ থেকেই নির্যাতনের একই ধরণের বক্তব্য জানতে পারি। সেসব এলাকার ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি, তবে গ্রামবাসীরা আমাকে তাদের শরীরের ক্ষত দেখিয়ে দাবি করেছেন যে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারা। একটি গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন যে ভারতের সংসদে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের ঘোষণা আসার সাথে সাথে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনী। একটি গ্রামের দু'জন বাসিন্দা, যারা সম্পর্কে দুই ভাই, বলেন ঐদিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাড়ি থেকে জোর করে বের করে নিয়ে গিয়ে আরো কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে একসাথে দাঁড় করায়। অন্যান্যদের মত ঐ দুই ভাইও নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চায়নি। "তারা আমাদের ব্যাপক মারধর করে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করি: আমরা কী করেছি? কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথাই শোনেনি, কিছু বলেওনি, তারা আমাদের মারতেই থাকে," বলেন দুই ভাইয়ের একজন। "আমার শরীরের প্রতিটি অংশে তারা আঘাত করে। তারা আমাদের লাথি দেয়, লাঠি ও তার দিয়ে মারে, বৈদ্যুতিক শকও দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে যখন আমরা অজ্ঞান হয়ে যাই তখন বৈদ্যুতিক শক দিয়ে আমাদের জ্ঞান ফিরিয়ে আনে।" "লাঠি দিয়ে মারার সময় আমরা যখন চিৎকার করছিলাম, তখন আমাদের মুখ বন্ধ করার জন্য মুখে কাদা ভরে দেয়।" "আমরা তাদের বারবার বলতে থাকি যে আমরা নির্দোষ। তাদের জিজ্ঞাসা করি কেন আমাদের নির্যাতন করছে। কিন্তু তারা এসব কোনো কথাই শোনেনি।" একজন গ্রামবাসীর পিঠে নির্যাতনের ফলে হওয়া ক্ষতচিহ্ন "নির্যাতনের একপর্যায়ে তাদের বলি যে আমাদের মেরো না, এর চেয়ে গুলি করো। একপর্যায়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুনয় করি যেন আমাদের উঠিয়ে নেয়।" গ্রামের আরেকজন তরুণ জানান, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে কে কে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে তাদের নাম বলতে সেনা সদস্যরা তাকে বারবার চাপ দিতে থাকে। এই তরুণ ও কিশোররা বিগত কয়েকবছর ধরে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের প্রতিমূর্তি হিসেবে অনেকটাই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ঐ তরুণটি সেনা সদস্যদের বলেন যে, তিনি তাদের নাম জানেন না। তারপর সেনা সদস্যরা তার চশমা, জুতা ও কাপড় খুলতে নির্দেশ দেয়। "আমার গায়ের কাপড় খোলার পর তারা আমাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটায়, প্রায় দু'ঘন্টা যাবত। যখনই অজ্ঞান হয়ে যেতাম, তারা বৈদ্যুতিক শক দিতো আমার জ্ঞান ফেরানোর জন্য।" "তারা যদি আবারো আমার সাথে এরকম করে, তাহলে আমি যে কোনোভাবে এর প্রতিরোধ করবো। প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নেবো।" তরুণটি বলে, সৈন্যরা তাকে সতর্ক করে দেয় যে গ্রামের কেউ যদি কোনো ধরণের বিক্ষোভে অংশ নেয় তাহলে তাদের পরিণতিও একই হবে। গ্রামের মানুষ মনে করে সেনা সদস্যরা এরকম নির্যাতন করেছে যেন গ্রামবাসীরা কোনো ধরণের বিক্ষোভে অংশ নিতে ভয় পায়। নিরাপত্তারক্সীদের দিকে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়ে মারলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে আনা 'অভিযোগ অনুযায়ী কোনো নাগরিকের সাথে জবরদস্তি করেনি' তারা। "এধরণের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এই অভিযোগগুলো শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতা থেকে উদ্ধৃত," এরকম দাবি করেন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আমান আনন্দ। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হলেও 'সেনাবাহিনীর নেয়া পদক্ষেপের কারণে নিহত বা আহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি' বলে মন্তব্য করেন কর্নেল আনন্দ। আমরা বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখতে পাই যে সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। গ্রামবাসীদের ভাষায়, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা 'মুক্তিযোদ্ধা'। কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন কেেড়ে নেয়ার পর সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে শ্রীনগরের সৌরা এলাকায় কাশ্মীরের এই অঞ্চলের একটি জেলাতেই ফেব্রুয়ারিতে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। এই অঞ্চলেই ২০১৬ সালে জনপ্রিয় কাশ্মীরী জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানি নিহত হয়, যার পর কাশ্মীরী তরুণদের অনেকেই ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দেয়। কাশ্মীরের ঐ অঞ্চলে একটি সেনা ক্যাম্প রয়েছে এবং সেখানকার সেনা সদস্যরা নিয়মিত ভিত্তিতে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদদের খোঁজে ঐ গ্রামগুলোতে তল্লাশি অভিযান চালায়। তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রায়ই সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বন্দ্বের ভুক্তভোগী হতে হয় তাদেরকে। একটি গ্রামের একজন তরুণ জানায়, জঙ্গিদের খবর জোগাড় করে না দিলে তার নামে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করা হবে বলে তাকে হুমকি দিয়েছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এই কাজে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এমন নির্যাতন করা হয় যে দু'সপ্তাহ পরেও সে সোজা হয়ে বিছানায় শুতে পারছে না। "এরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবো আমি। তারা আমাদের এমনভাবে মারে যেন আমরা মানুষ না, পশু।" নির্যাতনের শিকার আরেকজন বলেন অন্তত ১৫-১৬ জন সেনা সদস্য তাকে মাটিতে ফেলে রড, লাঠি, তার দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। "আমার জ্ঞান প্রায় ছিলই না। তারা আমার দাড়ি ধরে এত জোরে টানে যে আমার মনে হচ্ছিল যে আমার দাঁত উপড়ে আসবে।" পরে জ্ঞান ফিরলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজনের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে একজন সৈন্য তার দাড়ি পুড়িয়ে দিতে চাইলেও আরেকজন সৈন্য বাধা দেয়ায় শেষপর্যন্ত তার দাড়ি পুড়ানো হয় নি। আগে থেকেই বিপুল পরিমাণ সেনা সদস্যের অবস্থান থাকা কাশ্মীরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত সেনা আরেকটি গ্রামে সংবাদদাতা সামির হাশমি এক তরুণের দেখা পান যার ভাই দু'বছর আগে ভারত শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা হিজবুল মুজাহিদিন গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। তরুণটি জানায়, একটি ক্যাম্পে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং সেখান থেকে সে পায়ে ফ্র্যাকচার নিয়ে বের হয়। "আমার হাত পা বেঁধে উপুর করে ঝুলায় তারা। এরপর দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে আমাকে মারতে থাকে।" কিন্তু সেনাবাহিনী কোনো ধরণের অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবিসিকে দেয়া বিবৃতিতে সেনাবাহিনী মন্তব্য করে যে তারা 'পেশাদার একটি সংস্থা যারা মানবাধিকারের বিষয়টি বোঝে এবং সম্মান করে' এবং তারা 'অভিযোগগুলো দ্রুততার সাথে তদন্ত করছে।' বিবৃতিতে তারা বলে যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গত পাঁচ বছরে আনা ৩৭টি অভিযোগের ২০টিই 'ভিত্তিহীন' হিসেবে পেয়েছে তারা। ঐ অভিযোগগুলোর মধ্যে ১৫টির তদন্ত হচ্ছে এবং 'শুধুমাত্র ৩টি অভিযোগ তদন্ত করার যোগ্য' বলে মন্তব্য করেছে তারা। ঐ বিবৃতিতে আরো জানানো হয় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। বিবিসি'র আমির পীরজাদা জানান শুরুতে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা উত্তপ্ত রুপ নেয় তবে গত তিন দশকে কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শতাধিক অভিযোগের সংকলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দু'টি কাশ্মীরী মানবাধিকার সংস্থা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্তের উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে। ঐ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে ৪৯ পাতার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। জাতিসংঘের ঐ প্রতিবেদনটিও প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের কর্তৃপক্ষ। কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসে মৃত্যুর অভিযোগ পরিবারের কাশ্মীরে আসলে কী হচ্ছে?
কাশ্মীর: সেনা অভিযানের মধ্যে নির্যাতনের অভিযোগ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সমর্থন অনেকের
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
সুয়েজ খালের বিটার লেক এলাকায় এভার গিভেন জাহাজটিকে নোঙর করে রাখা হয়েছে, আর তদন্ত শুরু করছে মিশর কিন্তু পরের ছয় দিন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চেষ্টায় জাপানি মালিকানাধীন জাহাজটিকে উদ্ধার করে বিশ্ব বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি চালু করার পর পাহাড় সমান লোকসানের হিসেব-নিকেশ শুরু হয়েছে। এভার গিভেন জাহাজটি আটকে রেখে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে মিশর। যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। জাহাজটি চালানোতে কোনো ভুল হয়েছিল কিনা, তা দেখা হচ্ছে। ক্যাপ্টেনকে জেরা করা হচ্ছে। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার করেছে যে তদন্তে সহযোগিতা না করলে জাহাজের ক্রুদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধে মামলা হবে। শুধু মিশর নয়, শত শত কোটি ডলার লোকসানের ভাগীদার হয়েছে ডজন ডজন দেশ এবং হাজার হাজার ব্যবসায়ী। সুয়েজ আটকানো জাহাজের ভারতীয় নাবিকরা কি কড়া শাস্তির মুখে? সুয়েজ খালে জাহাজটি ভেসেছে, কিন্তু কতটা মূল্য দিতে হলো এর কারণ লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সংযোগকারী ১২০ মাইল দীর্ঘ এই খাল দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ১২ শতাংশ পণ্য পরিবহণ হয়। বিশেষ করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ইউরোপের বাণিজ্যের একটি লাইফ-লাইন হলো মিশরের এই খালটি। মিশরের একটি টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষে চেয়ারম্যান ওসামা রাবি বলেছেন, জাহাজটিকে ভাসানোর খরচ এবং ছয় দিন ধরে খালটি বন্ধ থাকার জন্য ক্ষতির পরিমাণ “১০০ কোটি ডলার বা তারও বেশি হতে পারে।“ জাপানি জাহাজ মালিকের কাছ থেকে এই ক্ষতি দাবি করা হবে কিনা, তা অবশ্য খোলাসা করেননি মি. রাবি। কিন্তু টাকার এই লোকসানের চেয়ে অন্য আরেকটি বিষয় এখন হয়তো মিশরের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সেটি হলো, দুর্ঘটনার পর নতুন করে সুয়েজ খালের বিকল্প একটি খালের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা শুরু। বিকল্প খালের ম্যাপে ইসরায়েল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বিজনেস ইনসাইডার নামে একটি পত্রিকায় ১৯৬৩ সালের একটি গোপন সরকারি নথি প্রকাশ করা হয় যেখানে সুয়েজ খালের বিকল্প হিসাবে ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে একটি খাল তৈরির পরিকল্পনার কথা ছিল। আমেরিকার বাণিজ্য দপ্তরের গোপন ওই নথি ১৯৯৬ সালে আংশিকভাবে প্রকাশ করা হয়। সুয়েজ খালে ঢোকার জন্য লোহিত সাগরে সুয়েজ বন্দরের কাছে অপেক্ষা করছে বেশ কিছু জাহাজ আমেরিকার ওই গোপন পরিকল্পনায় ১৬০ মাইল লম্বা একটি খাল খননের জন্য ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমির তলায় ৫২০টি পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণ করার কথা বলা হয়েছিল। বিজনেস ইনসাইডারের রিপোর্টটি বিশেষ করে ইসরায়েলের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তেমন একটি খাল তৈরির সম্ভাব্যতা নিয়ে ইসরায়েলি মিডিয়ায় বিশ্লেষণ-মন্তব্য শুরু হয়েছে। এর মধ্যে লন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার তাদের এক রিপোর্টে ব্রিটেনের সরকারী সূত্র উদ্ধৃত করে বলছে যে সুয়েজ খালে দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল এবং মিশরের সীমান্ত দিয়ে নতুন একটি খাল তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে জাতিসংঘের বাণিজ্যিক-রুট সম্পর্কিত কমিটিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। গার্ডিয়ানের রিপোর্ট বলছে, কয়েক বছর আগে জাতিসংঘ টানেল তৈরিতে বিশেষজ্ঞ একটি কোম্পানিকে দিয়ে সুয়েজের বিকল্প একটি খালের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল, যেখানে ওই কোম্পানি বলেছিল যে পাঁচ বছরে এমন একটি কৃত্রিম খাল তৈরি করা সম্ভব। যে তিনটি বিষয় নিয়ে সঙ্কটে রয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি বলেন, সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ এবং তা সম্ভব না হলে বিকল্প একটি জলপথ তৈরির পরিকল্পনা ইসরায়েল বহুদিন ধরেই করছে। আর তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমেরিকা এবং পশ্চিমা অনেক দেশের। “১৯৫৬ সালে ইসরায়েল সুয়েজের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সমর্থন নিয়ে মিশরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। বাস্তবতার কারণে হয়তো বিষয়টি বারবার চাপা পড়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে ইসরায়েল কখনই সরেনি,“ বিবিসি বাংলাকে বলেন সামি হামদি। এইলাট রেলপথ খাল তৈরির বিকল্প হিসাবে ইসরায়েল সরকার ২০১২ সালে লোহিত সাগরে এইলাট বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগরে হাইফা বন্দর পর্যন্ত একটি রেললাইন প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরিকল্পনা ছিল - এশিয়া থেকে জাহাজ এসে তাদের পণ্য এইলাটে খালাস করবে, তারপর পণ্য ট্রেনে করে হাইফায় নিয়ে ইউরোপ-গামী জাহাজে তোলা হবে। কিন্তু জাহাজ ব্যবসায়ীরা দুইবার মাল ওঠানামার ঝামেলায় রাজী হবে কি-না, এবং সেই সাথে এইলাট বন্দর বাড়তি কর্মকাণ্ডের চাপ সহ্য করতে পারবে কি-না, সেই সন্দেহ থেকে ওই পরিকল্পনা চাপা পড়ে যায়। সামি হামদি বলেন, আরব বসন্তের পর মিশরের আনুগত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমেরিকার এবং সেই সাথে ইসরায়েলের মধ্যে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। লোহিত সাগরে ইসরায়েলি বন্দর এইলাট - সুয়েজ খালের বিকল্প পথ হিসাবে এই বন্দর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত একটি রেলপথের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলের “এখন মিশরের যে সরকার, তারা আমেরিকার অনুগত। কিন্তু এই আনুগত্য কতদিন স্থায়ী হবে এবং ভবিষ্যতে সুয়েজ খালকে মিশর কীভাবে ব্যবহার করবে তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই গেছে।“ এ কারণে, সামি হামদি বলেন, ২০১৬ সালেও সুয়েজ খালের বিকল্প জলপথ তৈরি নিয়ে জোরেশোরে কথা উঠেছিল, কিন্তু “ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং মিশরের স্পর্শকাতরতার“ কথা বিবেচনা করে আমেরিকা বিষয়টি চাপা দিয়ে দেয়। এরপর, গত বছর যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, তখন আবারও ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে সুয়েজ খালের বিকল্প একটি খালের কথা ওঠে। সামি হামদি বলেন, “ইউএই ওই খাল তৈরিতে বিনিয়োগ করার কথাও বলে। সাথে সাথে মিশরে লেখালেখি শুরু হয় যে ইউএই এই বিনিয়োগ করলে তা বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে। পরে আস্তে আস্তে চুপ করে যায় ইউএই।“ কেন 'শত্রু দেশ' ইসরায়েল গিয়েছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট সাদাত গত সপ্তাহে ছয় দিন ধরে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকার পর আবার উঠতে শুরু করেছে বিকল্প খালের কথা। “ইসরায়েল হয়তো এখন মনে করছে এই পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং গ্রহণযোগ্যতার যথার্থ সুযোগ তৈরি হয়েছে,“ বলেন মি. হামদি। তার কথায়: “পুরোপুরি ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে না নিয়ে বরং মিশর-ইসরায়েল সীমান্ত দিয়ে বিকল্প একটি খাল কাটার যে কথা হচ্ছে সেটি হয়ত একটি আপোষ ফর্মুলা। আসলে মূল লক্ষ্য হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথটির ওপর মিশরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা।“ “একটি কথা মনে রাখতে হবে যে সুয়েজের বিকল্প যে খাল ইসরায়েল চায়, তার পেছনে অর্থনৈতিক বিবেচনার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করছে ইসরায়েলের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ।” বিকল্প খাল, মিশর এবং আরব বিশ্ব কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মিশর সুয়েজের বিকল্প কোনো খাল তৈরিতে রাজী হবে কি-না? সামি হামদি - লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সুয়েজ খাল থেকে বছরে মিশরের প্রায় ৬০০ কোটি ডলার আয় হয়, যা দেশটির জিডিপির দুই শতাংশের মতো। তবে সামি হামদি মনে করেন, মিশরের কাছে সুয়েজ খালের অর্থনৈতিক গুরুত্বই একমাত্র বিবেচ্য নয়। আঞ্চলিক ইস্যুতে প্রভাব তৈরির ক্ষেত্রে যতটুকু অস্ত্র মিশরের রয়েছে, সুয়েজ খাল তার অন্যতম। অ।মেরিকা যেসব কারণে মিশরকে গুরুত্ব দেয়, সেটির পেছনেও রয়েছে সুয়েজ খাল। “সুতরাং বিকল্প একটি খাল এবং এই জলপথের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া হবে মিশরের জন্য একটি বিপর্যয়। মধ্যপ্রাচ্যে মিশরের প্রভাব এবং গুরুত্ব দারুণভাবে মার খাবে।“ মোহাম্মদ মোরসি: মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্টের উত্থান ও পতন এ কারণেই গত সপ্তাহের সঙ্কট দ্রুত নিরসনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল মিশর। একাধিক দেশ থেকে রাতারাতি বিশেষজ্ঞ উড়িয়ে আনা হয়েছিল। সারাক্ষণই আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে তারা জানিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে কতটা গুরুত্ব দিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সামি হামদি মনে করেন, সুয়েজ খালের ওপর মিশরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে শুধু মিশর নয়, আমেরিকার ওপর চাপ তৈরির অবশিষ্ট যে গুটিকয় অস্ত্র আরব বিশ্বের রয়েছে, তাও ভোঁতা হয়ে যাবে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের বাজারে আগুন, ৩ জনের মৃত্যু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউ'র জন্য হাহাকার লিবিয়ার ভৌতিক এক নগরীতে নিখোঁজ মানুষদের সন্ধানে
সুয়েজ খাল: মিশরের এই খালের বিকল্প নিয়ে ফের কথা, রুট-ম্যাপে ইসরায়েল
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান এবং ইউএইর যুবরাজ মোহামেদ বিন জায়েদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খুবই ঘনিষ্ঠ বারবার তার মোবাইল ফোনের দিকে তাকাচ্ছিলেন মাঝ চল্লিশের সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী এই রাজপুত্র। বলেন, “উইসকনসিনের ফলাফলের দিকে চোখ রাখছি।'' আট দিন আগের কথা এটি, যখন কেউই জানতেন না জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতায় কে বসছেন। তারপর জো বাইডেনকে যখন বিজয়ী ঘোষণা করা হলো, রিয়াদে সৌদি নেতৃত্ব সাড়া দিতে বেশ সময় নিয়েছেন। অথচ চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন জিতেছিলেন অভিবাদন জানাতে মুহূর্ত দেরি করেননি তারা। তবে বিবিসির ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন এতে বিস্ময়ের কিছু নেই কারণ “সৌদি নেতৃত্ব গত সপ্তাহে বিশ্বের অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন বন্ধুকে হারিয়েছে।'' জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সৌদি আরব এবং উপসাগরে তাদের অনুগত মিত্র দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিণতি অপেক্ষা করছে। কৌশলগত-ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের সাথে আমেরিকার সহযোগিতার সম্পর্ক ১৯৪৫ সাল থেকে। ওঠানামা থাকলেও এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে, কিন্তু তাতে পরিবর্তন আসন্ন এবং সেই পরিবর্তনের অনেক কিছুই উপসাগরীয় নেতাদের পছন্দ হবে না। বড় এক বন্ধুর প্রস্থান সৌদি রাজপরিবারের বড় একজন মিত্র এবং সমর্থক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৭ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তিনি সৌদি আরবকে দিয়ে। মি ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ক্ষমতাধর সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ২০১৮ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে যখন সিআইএসহ পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যুবরাজ মোহামেদকে সন্দেহ করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন। প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড সম্প্রতি প্রকাশিত তারা সাড়া জাগানো একটি বইতে লিখেছেন - তার সাথে সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গলা উঁচিয়ে বলেছিলেন তিনি সৌদি যুবরাজকে রক্ষা করেছেন। জামাল খাসোগজি হত্যাকাণ্ডের পর মার্কিন কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সৌদি আরব এবং ইউএই'র কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বে যুদ্ধ বন্ধে কংগ্রেসে এক প্রস্তাবে তিনি ভেটো দেন। ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, বোঝাই যায় যে কেন তারপর যুবরাজ মোহামেদের লোকজন বলেছিলেন: “ আর কোনো (খাসোগজি হত্যাকাণ্ড নিয়ে) চিন্তা নেই। আমরা ব্যবস্থা করে ফেলেছি।'' আরও পড়তে পারেন: ক্ষমতা নিয়ে তার প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুতরাং বলাই বাহুল্য যে সৌদি আরব, এবং সেই সাথে কিছুটা হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন হোয়াইট হাউজে তাদের বড় একজন মিত্র হারাতে বসেছে। তবে তাতে যে সবকিছুই বদলে যাবে তা হয়তো নয়, তবে কোথাও কোথাও বর্তমান পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ইয়েমেনের যুদ্ধ ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের যুদ্ধে এবং তার ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শেষ দিকে ক্রমেই অস্বস্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন। তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একই মত পোষণ করতেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন হোয়াইট হাউজ ছাড়েন, তখন ইয়েমেনের যুদ্ধের দু বছর পার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সামরিক কোনো সুফল তো আসেইনি, বরঞ্চ ইয়েমেনে জানমাল এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল। মার্কিন কংগ্রেসের ভেতর ইয়েমেনের যুদ্ধ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হতে শুরু করে যার ফলে প্রেসিডেন্ট ওবামা সৌদি আরবে সামরিক এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা কমিয়ে দেন। কিন্তু মি. ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সাথে সাথেই সেসব সাহায্য ফিরিয়ে তো আনেনই, বরঞ্চ তা বাড়িয়ে দেন। সেই চিত্র আবারো বদলে যেতে পারে। সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা কাউন্সিল অব ফরেন রিলেসন্সে এক বক্তৃতায় জো বাইডেন স্পষ্ট করে দেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বে “সর্বনাশা যুদ্ধে'' আমেরিকার সাহায্য বন্ধ করে দেবেন। শুধু তাই নয়, জো বাইডেন বলেন, “সৌদি আরবের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনার'' নির্দেশ দেবেন তিনি। সুতরাং ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরব এবং ইয়েমেনে তাদের মিত্রদের ওপর বাইডেন প্রশাসনের যে চাপ বাড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে, ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, সৌদি এবং এমিরেতিরাও সাম্প্রতিক সময়ে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে যুদ্ধ করে ইয়েমেনে জেতা সম্ভব নয়। “তারা মুখ রক্ষা করে সংঘাত থেকে বেরুনোর একটা রাস্তা খুঁজছে। তারা শুধু দেখাতে চায় যে ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরুর সময় হুতি বিদ্রোহীদের যে শক্তি ছিল, এখন তা আর তাদের নেই।'' ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির বারবারা প্লেট বলছেন, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বে যুদ্ধের প্রতি আমেরিকার সমর্থন প্রায় নিশ্চিতভাবে প্রত্যাহার করবেন জো বাইডেন। "বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু, মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ইয়েমেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।'' ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের মেরি ড্যানিয়েল প্লেটকা বিবিসিকে বলেন, “ মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে বিশাল কোনো পরিবর্তন হয়তো দেখা যাবে না, কিন্তু সৌদি আরবের কাছ থেকে একটু দূরে সরে যাওয়া এবং ইরানের সাথে আলাপ বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।'' ইরান প্রেসিডেন্ট ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতির সবচেয়ে বড় লেগাসি বা ছাপ ছিল ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি যেটি জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেপিসিওএ) নামে পরিচিত। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে সেদেশকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। তবে সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের এই চুক্তি নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল। তাদের যুক্তি ছিল- এই বোঝাপড়ার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখা যাবে না, বরঞ্চ নিষেধাজ্ঞা ওঠালে তাদের শক্তি বাড়বে। হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কাতাদের আমির শেখ তামিম আল থানি (ফাইল ফটো) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই যুক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করেন এবং, তার ভাষায়, “সর্বকালের সবচেয়ে জঘন্য চুক্তি“ থেকে একতরফা সিদ্ধান্তে তিনি আমেরিকাকে বের করে আনেন। এখন তার উত্তরসূরি জো বাইডেন ঐ চুক্তিতে আবারো অংশীদার হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আর এই সম্ভাবনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন সৌদি আরব। গত বছর সৌদি তেল স্থাপনায় রহস্যজনক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রিয়াদে সৌদি সরকারের এক সংবাদ সম্মেলনে সেদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর ইরান পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সৌদি মন্ত্রী বলেছিলেন, ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি সর্বনাশ ডেকে আনছে। কারণ, তার মতে, “এই চুক্তিতে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি, এবং সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাদের অনুগত মিলিশিয়াদের যেভাবে ইরান শক্তিশালী করে চলেছে তাও ভাবা হয়নি।'' আদেল আল জুবেইর বলেন, ইরানের সাথে আন্তর্জাতিক এই চুক্তি ওবামা প্রশাসনের “একটি ভ্রান্ত নীতি ছিল কারণ ঐ সরকার বুঝতে পারেনি যে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি মধ্যপ্রাচ্যে কতটা হুমকি তৈরি করেছে।'' জানুয়ারি মাসে যখন ইরাকে আমেরিকান ড্রোন হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অত্যন্ত ক্ষমতাধর কম্যান্ডার কাসেম সোলায়মানিকে হত্যা করা হয়, তখন সৌদি আরব এবং তার উপসাগরীয় মিত্ররা খুশি হয়েছে। ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন এখন এই দেশগুলো সত্যিই উদ্বিগ্ন যে তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে নতুন আমেরিকান প্রশাসন আবারো ইরানের সাথে মীমাংসা শুরু করবে। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিমান ঘাঁটিটি কাতারে। আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকেই পেন্টাগন সিরিয়া থেকে আফগানিস্তান এই পুরো অঞ্চলের বিমান অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু তারপরও, সৌদি আরব, ইউএই, মিশর এবং বাহরাইন কাতারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে। এই দেশগুলোর প্রধান অভিযোগ যে কাতার মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের মত ইসলামপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছে। ২০১৭ সালে রিয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরের পরপরই কাতারকে বয়কটের সিদ্ধান্ত জানায় এই চারটি দেশ, এবং তারা পরিষ্কার জানে যে তাদের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকার প্রশাসনের সমর্থন তারা পাবে। আসলে, ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেন, প্রথমদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বয়কট সমর্থন করলেও পরে তাকে বোঝানো হয় যে কাতারও আমেরিকার মিত্র এবং কাতারের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিটি আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জো বাইডেন এখন উপসাগরীয় অঞ্চলের এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য হয়তো চাপ দেবেন। কারণ এই কলহ আমেরিকার জন্য অস্বস্তিকর, এবং তাদের স্বার্থ বিরোধী। মানবাধিকার উপসাগরীয় দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সবসময় কম-বেশি উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনই এ নিয়ে মাথা ঘামাননি। তার কথা ছিল - সৌদি আরবে কারাবন্দী নারী অধিকার কর্মীদের ইস্যু বা কাতারে বিদেশী শ্রমিকদের কথিত নির্যাতন বা ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ড নিয়ে হৈচৈ করার চেয়ে উপসাগরে আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থ এবং ব্যবসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব বিষয় নিয়ে এইরকমভাবে যে চুপ থাকবেন না তা একরকম নিশ্চিত। তবে সৌদি আরব বা ইরান নিয়ে বাইডেন প্রশাসন কী করবে তা অনেকটাই স্পষ্ট হবে যখন তিনি তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া শুরু করবেন। কে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হবেন, কে পেন্টাগনের দায়িত্ব পাবেন, কে জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান উপদেষ্টা হবেন - তা থেকেই মি বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে অনেকটাই স্পষ্টভাবে ধারনা করা সম্ভব হবে।
জো বাইডেনের বিজয়: নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি উপসাগরীয় আরব নেতারা
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
অতীশ দীপঙ্করের এই প্রতিকৃতি তিব্বতের কদম্পা মঠ থেকে পাওয়া যা ক্রনস সংগ্রহশালা ১৯৩৩ সালে নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম আর্টকে উপহার দেয়। দার্শনিক অতীশ দীপঙ্কর, তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন - তিব্বত থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত। তিনি জন্মেছিলেন প্রায় এক হাজার ৪০ বছর আগে আজকের বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী গ্রামে। বাবা ছিলেন গৌড়ীয় রাজ পরিবারের রাজা কল্যাণশ্রী, মা প্রভাবতী। বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন চর্চ্চা এবং প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়া জুড়ে স্মরণীয় অতীশ দীপঙ্কর। তাঁর প্রভাব আজও বিরাজ করছে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে। পনের বছর আগে বিবিসি বাংলার এই অনুষ্ঠান তৈরির সময় ভিক্ষু শুদ্ধানন্দ মহাথেরো ছিলেন ঢাকার বৌদ্ধ মহাবিহারের আচার্য। "অতীশের বাস্তুভিটা নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৫২/৫৩ সালে কিছুটা চিহ্ণ সেখানে ছিল। আমরাও দেখেছি একটা মন্দির ছিল সেখানে," বলছিলেন শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। "উনি যখন সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, তখন তৎকালীন বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় ওনাকে নাস্তিক হিসাবে অভিহিত করা হয়। যেহেতু বৌদ্ধরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না।" দীপঙ্করের শিক্ষার শুরু হয় তন্ত্র চর্চ্চা দিয়ে। পরে তিনি বৌদ্ধ শাস্ত্র পাঠ করেন। হয়ত শৈশবেই তিনি ঘর ছেড়েছিলেন। নওগাঁতে পাহাড়পুরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। এই সোমপুর বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পালবংশীয় রাজা ধর্মপাল সপ্তম শতাব্দীতে। কিন্তু তান্ত্রিক আচারে আবদ্ধ না থেকে তিনি বৌদ্ধধর্মের হীনযান, মহাযান ও বজ্রযান শাখায় পূর্ণ জ্ঞান আয়ত্ত করেন। এক হাজার এগারো কি বারো সালে গভীরতর জ্ঞানের খোঁজে তিনি গেলেন সুবর্ণদ্বীপে যা সম্ভবত আজকের ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ। বারো বছর পর ভারতে ফিরে দীপঙ্কর নিযুক্ত হলেন ভাগলপুরে বিক্রমশীলা বিহারের আচার্য হিসাবে। ভারতের বিহার বা মগধ রাজ্যের রাজা তখন বৌদ্ধ পাল রাজবংশীয় নয়পাল। পাল সম্রাটরা বৌদ্ধধর্মের মহাযান ও তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের অনুগামী ছিলেন। খ্রিস্টীয় ৯বম শতাব্দীর প্রথম ভাগে পাল সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। ওই সময় পাল সাম্রাজ্যই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও পালির অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী বলছেন নয়পাল দীপঙ্করকে খুব সম্মান করতেন এবং দীপঙ্করের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলত। "বলা যায় তিনি অনেকটা রাজার উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেছেন। তবে যে ঘটনাটা খুব বড় ছিল মনে হয় সেটা হল নয়পালের সঙ্গে কলচুরি রাজ লক্ষ্মীকর্ণের যে যুদ্ধ হয়, দীপঙ্করের মধ্যস্থতায় তার অবসান ঘটে। এবং দুই রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়।" পাল রাজারা মগধে রাজত্ব করতেন। আর মগধের দক্ষিণ-পশ্চিমে নর্মদাতীরে ছিল চেদি রাজ্য, যেখানে রাজত্ব করতেন কলচুরি রাজ লক্ষ্মীকর্ণ। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল ত্রিপুরী। নয়পাল আর লক্ষ্মীকর্ণের মধ্যে বংশানুক্রমিক শত্রুতা ছিল। লক্ষ্মীকর্ণের পিতা গাঙ্গেয়দেব এবং নয়পালের পিতা মহীপাল অক্লান্তভাবে সারা জীবন পরস্পর যুদ্ধ করেছিলেন। বিহারে নালন্দা বৌদ্ধবিহার: নালন্দায় কিশোর বয়সে শ্রমণ হিসাবে দীক্ষা নেন দীপঙ্কর এবং সেখানে ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। প্রায় পনের বছর ভারতে অধ্যাপনার পর তিব্বতের রাজার বারবার অনুরোধে ষাট বছর বয়সে দীপঙ্কর তিব্বতে যান সেখানে বৌদ্ধধর্ম পুনরুদ্ধার করতে। সেখানে তখন বৌদ্ধধর্মের অনুসারীর সংখ্যা কমছিল। সেখানে তাঁকে বরণ করা হয়েছিল মহা আড়ম্বরে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস নিয়ে ঐতিহাসিক ড: দীনেশ চন্দ্র সেনের 'বৃহৎ বঙ্গ'-এ এর উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরঞ্জন অধিকারী। "ড: সেনের বইয়ে সেই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা আছে: 'এই স্থানে দীপঙ্কর রাজ প্রতিনিধির হাতে উপহার হিসাবে পাঠানো চা পান করিলেন। ইহাই বোধহয় বাঙালির প্রথম চা খাওয়া'। অর্থাৎ আমাদের প্রতিনিধি হয়ে অতীশ দীপঙ্করই প্রথম চা পান করেছিলেন।" তিব্বতবাসীদের দু:খকষ্টের বিবরণই দীপঙ্করকে সেদেশে যেতে রাজি করিয়েছিল। বাংলাদেশে অতীশ দীপঙ্করের জীবনীকার বিপ্রদাস বড়ুয়া। তিব্বতের লাসায় সাদা পিস প্যাগোডা এবং চাকপির পাহাড়ের মাথায় পোটালা প্রাসাদ। পোটালা তিব্বতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজপ্রাসাদ চত্বর। "অতীশ যেখানেই গেছেন, সেখানে সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখেছেন। যেখানে তিনি দেখেছেন চাষবাসের জন্য সুবিধা আছে, সেখানে তিনি একজন এনজিনিয়ারের মত বাঁধ দিয়ে ফসল ফলানোর জন্য মানুষকে একত্রিত করেছেন," বলেছেন বিপ্রদাস বড়ুয়া। "কোথাও রোগ, শোক, মহামারি দেখা দিয়েছে- অতীশ সেখানে ছুটে গেছেন। নিজে তো তিনি ডাক্তারিশাস্ত্র জানতেন। মানুষের তিনি সেবা করেছেন, একত্রিত হয়ে যেখানে কাজ করা দরকার, সেখানে তিনি মানুষকে জোটবদ্ধ করেছেন।" বিপ্রদাস বড়ুয়া বলেন অতীশ দীপঙ্করের চেষ্টায় শুধু যে তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম স্থায়ী রূপ পেয়েছিল তা নয়। "তাঁর ধর্মপ্রচারের ঐতিহ্য তিব্বত থেকে চীনে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে কোরিয়া হয়ে জাপানে ছড়িয়ে পড়েছিল অতীশের সুনাম। অতীশ দীপঙ্কর মহান হয়ে আছেন বহু দেশে। বুদ্ধের পরেই হচ্ছে অতীশের স্থান। আর অতীশের যে এত বই, এত টিকাটিপ্পনি তিনি নিজের হাতে লিখেছেন। পরের লেখা অনুবাদ করেছেন, এমনকী নিজের লেখাও অনুবাদ করেছেন তিব্বতী ভাষায়।" নেপালের ভক্তপুরে বৌদ্ধ ভক্তরা পঞ্চদান উৎসবে অতীশ দীপঙ্করের প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল বের করেন। তারা সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি কামনায় চাল, গম. লবণ, অর্থ এবং ফল দান করেন। তিব্বতীরা তাকে অতীশ উপাধিতে ভূষিত করেন, যার অর্থ 'শান্তি'। তিব্বতেই লাসার কাছে ১০৫৩ কিংবা ১০৫৪ সালে মারা যান অতীশ দীপঙ্কর । বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখার এই দার্শনিকের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল মানুষের কল্যাণ ও মানুষের মুক্তিসাধন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় উনিশতম স্থানে আসা জিয়াউর রহমানের জীবন কথা পড়তে এখানে ক্লিক করুন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় বিশতম স্থানে আসা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন কথা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে ১৮ নম্বরে অতীশ দীপঙ্কর
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
পার্কে বেড়াতে আসছেন ভারতশাসিত কাশ্মীরের লোকেরা ভারতশাসিত কাশ্মীরে এখন যে দম-আটকে-আসা অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে, তার মধ্যে মনটাকে একটু হালকা করার নানা উপায় বের করে নিয়েছেন সেখানকার লোকেরা। প্রধান শহর শ্রীনগরের পার্কগুলোতে দেখা যাচ্ছে - লোকের ভিড় বেড়ে গেছে। ছবির মতো সুন্দর ডাল লেকের পার ধরে অনেকে বসে গেছে মাছ ধরতে। অন্য অনেকে গাড়ি চালিয়ে শহরের নানা প্রান্তে যাচ্ছে, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করতে। অনেককে দেখা যায় রাস্তায় জটলা করতেও। শ্রীনগর শহরে এখন অনেক জায়গা থেকেই নিরাপত্তা ব্যারিকেড আর কাঁটাতারের বেষ্টনী সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্ল্যাকআউট বা রেশনে খাবার বিক্রিও আর নেই। দিনে কয়েক ঘন্টার জন্য খুলছে ছোট বাজারগুলোও। মনে হতে পারে যে - প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতশাসিত কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নেবার মাসখানেক পর মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটি যেন ধীরে ধীরে এক ধরণের 'স্বাভাবিক অবস্থায়' ফিরে আসছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রতিবাদে কাশ্মীরে বিক্ষোভ কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পদক্ষেপে কাশ্মীর ও জম্মুকে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে জারি করা হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরকারি চাকুরে আসমা কুরেইশি, তার পরিবারকে নিয়ে এসেছেন পার্কে বেড়াতে। মিজ কুরেইশি স্পষ্টই বললেন, কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে বলে তিনি মনে করেন না। 'উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ' গত সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে 'জাতীয় স্বার্থ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে' কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার জোর দিয়ে বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো কাজ করছে, ওষুধের দোকানগুলো খোলা। খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে, ক্যাশ মেশিনগুলো কাজ করছে। স্কুল খোলা, ল্যান্ডলাইন ফোন আবার কাজ করতে শুরু করেছে। সরকার এমনকি আপেল চাষীদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ফল কিনতে রাজি হয়েছে, স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞাপন - যাতে সোনালী ভবিষ্যৎ, কাজ ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তার পরেও মনে হতে পারে যে এই 'স্বাভাবিক অবস্থা' যেন একটা বিভ্রম। ডাল লেকে মাছ ধরছেন স্থানীয় লোকেরা ল্যান্ডলাইন ফোন এখন আবার চালু হচ্ছে, কিন্তু বেশির ভাগ লোকই এখনো ফোন সংযোগ পাচ্ছে না। কিছু সরকারি অফিস খোলা, কিন্তু তাতে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। সহিংসতার ভয়ে অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। বেসরকারি স্কুলগুলো অভিভাবকদের বলছে, তারা যেন ফ্ল্যাশড্রাইভে করে পাঠদানের ভিডিও এবং পড়ার বইপত্র সংগ্রহ করে নেন। ফলে এ অঞ্চলের শিশুকিশোররা এখন বাড়িতে বসে টিভি দেখছে, বাড়ির বাগানে 'পাথর ছোঁড়া' খেলছে। 'ভারত কাশ্মীরের প্রতি যে অন্যায় করেছে' তা নিয়ে চমৎকার কথা বলতেও শিখেছে তারা। একজন স্কুল শিক্ষক বললেন, "আমাদের জীবনের পরিসর ছোট হয়ে গেছে, আমাদের মনটাই যেন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।" রাস্তায় বেরুলে দেখা যায়, ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। কড়া নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে এখন যেন চেনাই যায় না। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং অর্ধিকারকর্মী সহ প্রায় ৩ হাজার লোক এখন কারারুদ্ধ। নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা বন্দীদের ওপর প্রহার-নির্যাতন চালাচ্ছে, তবে ভারত এসব অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে অভিহিত করেছে। পুরো রাজ্যই কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়া, এবং তাতে এটা নিশ্চিত হয়েছে যে বড় আকারের কোনো সহিংস ঘটনা ঘটে নি। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছে, 'স্বাভাবিক অবস্থার' আবরণের নিচে টগবগ করে ফুটছে হতাশা আর ক্ষোভ। "লোকজন ক্রুদ্ধ, অপমানিত এবং বিচ্ছিন্ন, এমন কোন নেতা নেই যে তাদের কিছু করার আদেশ দেবে। আর ভারতের কথা এখন ভুলে যান, ভারতের ওপর আর কোনই আস্থাই অবশিষ্ট নেই" - বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা। বড় শহরে এরকম কাঁটাতারের বেড়ার অনেকগুলোই সরিয়ে নেয়া হয়েছে তার কথায় - "এখন যে অবস্থা দেখছেন তাকে আমার মনে হচ্ছে ঝড়ের আগের শান্ত পরিস্থিতির মতো। তবে তফাৎ হলো, পরবর্তী প্রতিরোধ আন্দোলন ঠিক কোথা থেকে সৃষ্টি হবে - তা এবার আমরা বুঝতেও পারছি না।" এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে, ২০০৮, ২০১০ এবং ২০১৬ সালে কাশ্মীরী তরুণরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল - যা অনেক সহিংসতা এবং অনেক মৃত্যু ডেকে এনেছিল। তিন বছর আগের বিক্ষোভের সময় জঙ্গী নেতা বুরহান ওয়ানি নিহত হবার পর "জনগণের ক্রোধ নতুন জঙ্গীবাদকে অনুমোদন দিয়েছিল" - বলছিলেন ডেভিড দেবাবাস, যিনি 'দি জেনারেশন অফ রেজ' নামে একটি বই লিখেছেন কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে। তার কথায়: "২০১০ সালেল বিক্ষোভ ছিল নিরপরাধ মানুষের হত্যার বিরুদ্ধে, কিন্তু ২০১৬ সালে রাষ্ট্রের বৈধতাকে প্রত্যাখ্যান করাটাই ছিল বিক্ষোভে মূল সুর।" তবে এবার যে বিক্ষোভের খবর গোপন করা যায় নি তা ছিল শ্রীনগরের সুরা এলাকার। সেসময় হাজার হাজার লোক রাস্তায় বিক্ষোভ করে, এবং তার ওপর পুলিশ গুলি চালায়, টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। কয়েক সপ্তাহ পর আরেক দফা সহিংসতা হয় - যাতে আহত হয়েছিল কমপক্ষে দু'জন লোক। 'কারাগারের মধ্যে বসবাস' আগে ভাবা না গেলেও সুরা এলাকাটি হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে যুবকরা পরিখা খনন করেছে, এলাকাটিতে ঢোকার তিনটি পথই পাথর, তার, কাঠ, আবর্জনা বহনের পাত্র, ইট বা নানা ধাতব জিনিস দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একজন বিখ্যাত মুসলিম সাধকের মাজার এখন পরিণত হয়েছে বিক্ষোভকারীদের জমায়েতের জায়গায়। এখানকার সরু সরু রাস্তা আট টালির ছাদওয়ালা বাড়িগুলোর ওপর উড়ছে নজরদারির ড্রোন। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: এক নজরে কাশ্মীর ও ৩৭০ অনুচ্ছেদের ইতিহাস যেভাবে বদলে যাবে ভারতের অধীন কাশ্মীর যেভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কাশ্মীরের তরুণরা এখন পর্যন্ত যেসব বিক্ষোভ হয়েছে তা মূলত বিক্ষিপ্ত রাত হলেই ক্রুদ্ধ যুবকরা হাতে লাঠি বা পেরেক লাগানো মাছধরার ছিপ হাতে নিয়ে নৈশ টহল দিতে বেরোয়। উদ্দেশ্য, নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাও অভিযান ঠেকানো । দোকানগুলো শাটারের ওপর লাগানো বুরহান ওয়ানির ছবিওয়ালা পোস্টার। দেয়ালে আঁকা বন্দুকের ছবি, বা পাকিস্তান-পন্থী নানা রকম শ্লোগান। "আমরা বাস করছি একটা কারাগারের মধ্যে। কিন্তু আমরা এখানে নিরাপত্তা বাহিনীকে ঢুকতে দেবো না" - বললেন, এক হাইস্কুলের ছাত্র যিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছেন। অন্য জায়গাগুলোতে গেলে হয়তো এই হতাশা অতটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। কিন্তু তিন দিন ধরে দক্ষিণ কাশ্মীরের নানা জায়গায় ঘুরে আমি এমন একজনকেও পাইনি যিনিভারতের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। বেশির ভাগ কাশ্মীরীই বলেছেন, তারা এতে ক্ষুব্ধ এবং অপমানিত হয়েছেন। তবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কথা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি সম্প্রতি কাশ্মীরে দু সপ্তাহ কাটানোর পর সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরীই ৩৭০ ধারা বাতিলকে পুরোপুরি সমর্থন করে। এখানকার লোকদের সবচেয়ে বেশি ভয় বাইরের লোকেরা তাদের জমি নিয়ে যাবে এবং কাশ্মীর তার 'মুসলিম আত্মপরিচয়' হারিয়ে ফেলবে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি শেষ পর্যন্ত মাসলিংম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির জনসংখ্যার বিন্যাস বদলে দিতে চায়। ভারত বলছে, তাদের পদক্ষেপের উদ্দেশ্যই শুধুই এ অঞ্চলের উন্নয়ন। 'বাঁচা-মরার প্রশ্ন' শোপিয়ানের এক দোকানদার শিরাজ আহমেদের সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, "আমাদের কিছু করতে হবে নয়তো মরতে হবে - ব্যাপারটা এখন এরকমই।" "বিক্ষোভের সুনামি আসছে, আমাদের ভেতরে আগুন জ্বলছে। ভারত আমাদের মর্মাহত করেছে, প্রতারণা করেছে। আমরা স্বাধীনতা চাই" - বলছিলেন ব্যবসায়ী আশিক হোসেন। 'আমরা স্বাধীনতা চাই' - শহরের রাস্তায় দেয়াল লিখন কিন্তু গবেষকরা বলছেন. কাশ্মীরে এই আজাদী বা স্বাধীনতা কথাটার অনেকরকম অর্থ হতে পারে। কাশ্মীরের ছ'টি জেলায় যুবকদের ওপর ২০১১ সালে এক জরিপ চালিয়েছিলেন নভনিতা চাধা বেহরা - যিনি ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একজন ভিজিটিং স্কলার। 'ডিমিস্টিফাইং কাশ্মীর' নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি। তিনি দেখেছেন, এখানকার ৫৪ শতাংশ লোক 'আজাদী' চান। তাদের বেশির ভাগ্ই বলেছেন, তারা চান স্ব-শাসন, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, নিজস্ব সরকার এবং স্বায়ত্বশাসন। পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চান মাত্র ১ শতাংশ লোক। কাশ্মীরে এর পর এমন কিছু হয় নি যাতে এ মনোভাব পাল্টে গেছে বলে মনে করা চলে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আগামীতে কাশ্মীরে কি ঘটবে তা বলা কঠিন। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনেকে মনে করেন, কাশ্মীরীরা সহিংসতায় ক্লান্ত হয়ে গেছে, এবং একসময় তারা মি. মোদীর কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের অঙ্গীকারকেই স্বাগত জানাবে। কিন্তু কাশ্মীরে খুব কম লোকই এ কথা সমর্থন করেন। কাশ্মীরে ১৯৯০ সালের পর থেকে বিদ্রোহে নিহত হয়েছে ৪০ হাজার লোক। এই বিদ্রোহের কি এখন সমাপ্তির দিন শুরু হলো? নাকি এখন আবার নতুন করে আরেক দফা রক্তাক্ত বিদ্রোহ শুরু হতে যাচ্ছে? অতীতে দেখা গেছে, কাশ্মীরে কোন একটা ঘটনা ঘটার বেশ কয়েক বছর বড় মাত্রার অভ্যুত্থান ঘটে থাকে। যেমন ১৯৬৩ সালের বিদ্রোহ ঘটেছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহর বরখাস্ত এবং গ্রেফতারের ১০ বছর পরে। তেমনি, ১৯৮৯ সালের জঙ্গী তৎপরতা শুরু হয়েছিল বিতর্কিত স্থানীয় নির্বাচনের দু বছর পরে। লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সে আন্তর্জাতিক ও তুলনামূলক রাজনীতির অধ্যাপক সুমন্ত বোস বলছিলেন, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির বিস্ফোরক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আগেকার ঘটনাগুলোর চাইতে বেশি। সত্যি তাই হয় কিনা তা শুধু সময়ই বলতে পারবে। আরো পড়তে পারেন: কাশ্মীরকে চূড়ান্ত সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভারত? আমার চোখে বিশ্ব: 'ভূস্বর্গ' কাশ্মীরে নারীরা আবার হুমকির মুখে? কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের লড়াইয়ের কারণ কী? কাশ্মীর: অনুচ্ছেদ ৩৭০ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কাশ্মীর: এখন কি সেখানে 'ঝড়ের আগের শান্ত অবস্থা' চলছে?
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
ভাস্কর্যগুলো ক্লাসরুমের বাইরে সংলগ্ন খোলা জায়গায় রাখা ছিল কারা এ কাজ করেছে, সেটি জানা যায়নি। ঘটনার প্রতিবাদে সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহীর সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমু বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী চারুকলা ইন্সটিটিউটে এসে দেখতে পান যে, শিক্ষার্থীদের বানানো কয়েকশো ভাস্কর্য, যেগুলো ক্লাসরুমের পাশেই খোলা জায়গায় রাখা ছিল, সেগুলো উপড়ে এলোপাথাড়িভাবে মাটিতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু ফেলে রাখা হয়েছে শিক্ষকদের রুমের সামনে। কারা ভাস্কর্য তছনছ করেছে জানা যায়নি পরে ঐ কর্মচারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের খবর দেন। এরপর সকাল থেকেই সেখানে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইন্সটিটিউটে শিক্ষার্থীদের বানানো ভাস্কর্য তছনছ
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
৪২ হাজার ফুট উঁচুতে জন্ম হয় শিশু কাদিজুর। এ কাজে সহায়তা করেন কেবিন ক্রু ও যাত্রীরা। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নাফি দায়াবি নামে একজন গর্ভবতী নারী (গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ চলছিল) বিমানে ওঠার পর তার প্রসববেদনা শুরু হয়। শিশুটি এবং তার মা সুস্থ আছেন। এরপর তাকে প্রসবকাজে সহায়তা করেন কেবিন ক্রু এবং কয়েকজন যাত্রী। জন্ম হয় শিশু 'কাদিজু'র। বোয়িং ৭৩৭ বুর্কিনা ফাসোতে অবতরণের পরে মা ও নবজাতক দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা দুজনেই কিছুটা ক্লান্ত হলেও সুস্থ রয়েছে। আরও পড়ুন: 'মুফতি হান্নানের ভাবান্তর নাই' মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ হলো বাংলা বর্ষবরণ উৎসব?
৪২ হাজার ফুট উঁচুতে যে শিশুর জন্ম
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়কারী ইটালীর কোস্ট গার্ড বলছে, এ পর্যন্ত তারা সাগর থেকে চারশো মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে। লিবিয়ার উপকুল থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে এসে এই মাছ ধরা নৌকাটি খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে। নৌকাটি থেকে পাঠানো বিপদ সংকেত পেয়ে চারটি জাহাজ ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়। তিনটি হেলিকপ্টারও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে অভিবাসীরা সবাই নৌকার একদিকে জড়ো হওয়ার পর এটি উল্টে যায়। এ বছর ভূমধ্যসাগরে এরকম অভিবাসী বহনকারী নৌকা ডুবে এপর্যন্ত অন্তত দুহাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
লিবিয়ার উপকুলে সাতশো অভিবাসী বোঝাই নৌকাডুবি
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
পড়াশোনা ছিল নাঈমার কাছে একইসঙ্গে আতঙ্ক আর বিলাসিতার মতো। কিন্তু সেখানকারই এক মেয়ে সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। এখন তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন একজন সাংবাদিক হওয়ার জন্য। বিবিসির সংবাদদাতাকে তিনি জানান তার সেই সংগ্রামের গল্প। "আমি আমার শৈশব আতঙ্কে কাটিয়েছি," বলেন, কোয়েটার সরদার বাহাদুর খান উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাঈমা জেহরি। "এখনও এটা নিয়ে ভাবলে আমার মেরুদণ্ড কেঁপে ওঠে।" পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের খুজদার জেলার জেহারি জামশার একটি উপজাতি গ্রামে বেড়ে ওঠেন নাঈমা। তিনি বলেন, তার শৈশব একটি সময়ে হয়, যখন তার অঞ্চলে আইনহীনতা শিখরে ছিল। গণমাধ্যমের খবর জুড়ে শুধুই ছিল বেলুচ পুরুষদের ওপর লক্ষ্য করে বিভিন্ন পরিকল্পিত হামলা, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা। ভয়, পক্ষপাত, এবং অস্ত্র ছিল সর্বত্র। বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে গরীব প্রদেশ। এটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সহ্য করেছে। এই প্রদেশের দূরবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে, জনজীবন সাধারণত দুর্বিসহ, বিশেষ করে নারীরা ভুক্তভোগী সবচেয়ে বেশি। বলেন নাঈমা। "আমার শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে। আমরা সাত ভাইবোন এবং আমার বাবা আমাদের ফেলে রেখে অন্য একজন নারীকে বিয়ে করেছিলেন। আমার মা শিক্ষিত ছিলেন না, তাই আমাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারিবারিক দান খয়রাতের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। "শিক্ষা ছিল একটি বিলাসিতা, যা আমরা বহন করতে পারিনি।" নাঈমা বর্তমানে কোয়েটার একটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নাঈমার জন্য, শিক্ষা অর্জনই ছিল একটি সংগ্রামের মতো। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি গ্রামে সরকার পরিচালিত মেয়েদের অবৈতনিক মানে বিনা খরচে পড়াশোনা করা যায় এমন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন। কিন্তু স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি বলেন, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতা সমর্থিত দুষ্কৃতিকারীরা ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল স্কুলটি দখল করে রাখে। এবং তারা মেয়েদের ওই স্কুলভবন থেকে দূরে রাখার জন্য স্কুলটির প্রবেশদ্বারে বড় ধরণের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। বিবিসি স্বাধীনভাবে এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। কিন্তু বেলুচিস্তানে এই ধরনের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক কিছু না। "পুরো এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছিল। সেখানে সবসময় ছয় থেকে আটজন সশস্ত্র ব্যক্তি পাহারায় থাকতো। মনে আছে, ছোটবেলায় প্রতিদিন এমন দৃশ্যের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতাম। সশস্ত্র ব্যক্তিরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমরা ভয় পেতাম। আমি সবসময়ই ভয়ে থাকতাম যে তারা আমাকে যেকোনো সময় বুঝি গুলি করবে।, "বলেছেন নাঈমা। "ওই ব্যক্তিরা শালওয়ার কামিজ অর্থাৎ ঢোলা পাঞ্জাবি আর ঢোলা পায়জামা পরে থাকতো। তাদের হাতে বন্দুক ছিল। তাদের মুখ সবসময় রুমাল দিয়ে ঢাকা থাকতো। শুধুমাত্র তাদের চোখ দেখা যেতো।" 'তোমাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠিও না' নাঈমা বলছেন, সশস্ত্র পুরুষরা কখনোই বাচ্চাদের হুমকি দেয়নি। তবে তারা দুটি উদ্দেশ্য ধারণ করতো। প্রথমত, মেয়েদের শিক্ষা থেকে দূরে রাখা, যেন নৃগোষ্ঠী প্রধানের সশস্ত্র বাহিনী মেয়েদের স্কুল ক্যাম্পাসকে তাদের গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। " মানুষের কাছে তাদের এটি পরিষ্কার বার্তা ছিল, আর সেটা হল আপনার মেয়েরা স্কুলে পাঠাবেন না।" গ্রামের এর প্রভাব ছিল ভয়াবহ, বিপর্যয়কর। কেননা সরকারি শিক্ষকরা এমন পরিবেশে কাজ করার সাহস পেতেন না। নাঈমা এবং অন্য কয়েকজন মেয়েকে কাছাকাছি গ্রামের আরেকটি স্কুলে ভর্তি করা হয়, কিন্তু এটি ছিল শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা। বাবা মায়েরা তাদের মেয়েদের ওইসব স্কুলে পাঠাতেন বিনামূল্যে রান্নার তেল পাওয়ার জন্য। - যা একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সরবরাহ করতো। বেলুচিস্তানের সমাজ কঠোরভাবে পিতৃতান্ত্রিক। যেন ওই এলাকায় মেয়েদের স্কুলে আসার হার বাড়ানো যায়- কিন্তু পড়ালেখা শেখানোর বিষয়টি কোন গুরুত্ব পেতো না। মেয়েরা তাদের উপস্থিতি রেজিস্টার খাতায় লিখে যার যার বাড়ি ফিরে যেতো। পড়ালেখার কিছুই হতো না। নাঈমা বলেন, শিক্ষকরা একদিকে যেমন ভয়ে থাকতেন। আবার অনেকে আংশিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্তও ছিলেন। তিনি বলেন, "আমাদের এই এলাকায় এমন অনেক স্কুলের কথা উল্লেখে আছে, যা শুধুই রয়েছে কাগজে কলমে। এসব স্কুলে শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়, এবং এজন্য তারা নিয়মিত বেতনও পান। - কিন্তু এসব স্কুল সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর।" এরিমধ্যে, বেলুচিস্তান তার চিরাচরিত সহিংস রূপে ফিরে যায়। যার মূল্য দিতে হয় নাঈমার পরিবারকে। এক বছরের মধ্যেই নাঈমার দুই মামার অপহরণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নাঈমা বলেন, যে তার দুই মামা হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যান, এক মাস পর তাদের বুলেট-বিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আরও পড়তে পারেন: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন এত প্রধানমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ৬৫ শতাংশ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মাদ্রাসা নয়, সাধারণ শিক্ষা থেকেই জঙ্গি হয়েছে বেশি "আমি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ছিলাম। তারা বয়স কম ছিল, পূর্ণ জীবনী শক্তির দুজন মানুষ। আমি তাদের মৃত্যুর শোক অনেক দিনেও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।" কিন্তু এই দুর্ঘটনা, নাঈমাকে তার শিক্ষা চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগায়। মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার পর তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও, তিনি সেই বাধা তার পড়ালেখায় আসতে দেননি। "আমার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো সাধ্য আমার পরিবারের ছিলনা।, এবং তারা সবসময় গ্রামবাসীদের চাপে থাকতো।" কারণ স্থানীয় মেয়েদের স্কুলে পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়নি, তিনি বলেন - হয় তারা মাদ্রাসায় পড়বে নাহলে বাড়ির কাজকর্ম করবে। এর বাইরে কিছুনা। "এদিকে আশেপাশে ভণ্ডামিও কম ছিলনা। নারীদের শিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না ঠিকই, কিন্তু ক্ষেতে চাষাবাদের কাজে পুরুষদের সাহায্য করার সময়, কোন বাধা নেই। যারা বাসায় থাকে, তারা সূচিকর্মের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করেন - কিন্তু নারীরা এই কাজের জন্য কিছুই পেতো না। নারীদের কাজ থেকে উপার্জিত মজুরি পুরুষরাই দখল করে খরচ করতো।" নাঈমা বাড়ি থেকেই তার পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং প্রাইভেট ক্যান্ডিডেট হিসাবে পরীক্ষায় অংশ নেন। এভাবে যখন তিনি হাইস্কুল শেষ করেন, তখন কিছু সময়ের জন্য তার শিক্ষা বাধার মুখে পড়ে, কারণ তার ভাইরা এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তার মামাদের খুনের ঘটনা তাকে তার জীবনের নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে নিতে সাহায্য করে। তিনি উল্লেখ করেন যে এসব ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সম্পূর্ণ নীরবতা ছিল, এবং এটি তার মনের উপর একটি দাগ ফেলে যায়। তিনি বলেন, "বেলুচরা কি মানুষ না? তাদের জীবনকে কেন গণ্য করা হবেনা? আমি এতে অনেক দু:খ পেয়েছিলাম। মানুষ আর কবে বেলুচদের প্রতি তাদের সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতা দেখাবে?"- এমন অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান। পড়াশোনা শেষে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন নাঈমা। 'আমার মানুষদের গল্প বলতে চাই' আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর বেলুচিস্তান থেকে রিপোর্ট করার অনুমতি নেই। যদি না তাদের কাছে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয় - যা তারা খুব কমই পায়। এই প্রদেশের সহিংসতার বিষয়ে যেকোনো প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ওপরেও ছিল গোপন নিষেধাজ্ঞা। নাঈমা যখন বেলুচিস্তানের একমাত্র মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানতে পারেন, তখন তিনি তার পরিবারকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। তার ভাইয়েরা এই প্রস্তাবের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিলেন। শুধুমাত্র একজন চাচা/মামা তাকে সমর্থন দেন এবং এক বছরের জন্য তার পড়াশোনার ফি পরিশোধ করেন। তারপরে, তার খরচ চালানোর মতো আর কেউ ছিল না। কোন ব্যবস্থাও ছিল না। এমন অবস্থায় তিনি দাতব্য সংস্থা ইউএসএইড- এর স্পন্সরকৃত স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। এখন তার শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে চলছে। নাঈমা বলেন, "আমি একজন সাংবাদিক হতে চাই, যেন আমি আমার মানুষ গল্প বলতে পারি, বেলুচিস্তানের মানুষদের"। এবং আমি তোমাদের বলতে চাই যে আমি ভয় পাব না ... আমি সবসময় সত্যের সাথেই দাঁড়াবো।"
পাকিস্তান: কীভাবে একটি মেয়ে সশস্ত্র বাধার মুখেও সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বিষয়টি নিয়ে শিশুদের সাথে কথা বলা কঠিন এর মধ্যে ৩৯ টিই ছিল ধর্ষণের ঘটনা। উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এই তথ্য দিচ্ছে। শিশুদের প্রতি এমন নির্যাতনের সংখ্যা হঠাৎ করে বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। যারা এসব ঘটনার শিকার, অর্থাৎ সেই শিশুদের যৌন নির্যাতন কাকে বলে, আর তাদের নিজের প্রতি তা ঘটছে কিনা, সেটি শিশুরা কীভাবে চিহ্নিত করবে? এমন স্পর্শকাতর বিষয় অভিভাবকেরা ছোট শিশুদের কীভাবে শেখাতে পারেন? বিষয়টা জানানো দরকার কিন্তু তা কতটা মুশকিল? কয়েকজনের মায়ের কথা কর্মজীবী এক মা। অফিসে থাকলেও মাথার মধ্যে সারাদিন ঘুরতে থাকে তার সাত আর দশ বছর বয়সী দুটি কন্যা শিশুর কথা। কি করছে তারা সারাদিন? বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মা। সেই উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলছিলেন, "চারপাশে আজকাল যা ঘটে তা খুবই ভীতিকর। যেমন কিছুদিন আগে ডেমরায় দুটো বাচ্চা খেলা করছিলো। ওদের লিপস্টিক কিনে দেবার কথা বলে নিয়ে গিয়েছে। তারপর রেপ করে মেরে ফেলেছে। এই খবরটা যখন দেখলাম তখন সাথে সাথেই আমার নিজের বাচ্চা দুটোর চেহারা ভেসে উঠলো। এইগুলোর কারণেই আমি সবসময় একটা টেনশনে থাকি।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: আফসান চৌধুরীর শৈশবের যৌন নিপীড়নের কষ্টের স্মৃতি কেন আড়ালে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশে ছেলে শিশুদের উপর চালানো যৌন নির্যাতন? ষাট দশকের 'যৌন বিপ্লব চার্চে শিশু নিপীড়নের কারণ' এই মা বলছেন সন্তানকে তিনি সেভাবেই প্রস্তুত করছেন। তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু যৌন নির্যাতন কাকে বলে, সেটি শিশুরা কীভাবে চিহ্নিত করবে, সাত ও দশ বছর বয়সী ছোট শিশুদের এমন জটিল বিষয় তিনি কীভাবে জানাচ্ছেন? তিনি বলছেন, "আমি ওদের শিখিয়েছি কোন স্পর্শটা ভালো আর কোনটা খারাপ। আমি আমার বাচ্চাদের সাথে একটা ওপেন রিলেশনশিপ তৈরি করার চেষ্টা করেছি। যাতে ওরা আমাকে সব কিছু বলতে পারে। তারা নিজেরাই নিচে খেলতে যায়। তাদের শিখিয়েছি কেউ যদি তোমাকে বলে আমার সাথে আসো, তোমাকে খেতে দেবো, তোমার মা বলেছে। তুমি কখনোই যাবে না।" ছেলে শিশুদের কথা অনেকেই ভাবেন না। ছেলে বাচ্চাকে নিয়েও ভাবা দরকার নানা উদ্বেগের কারণে সাত বছর বয়সী ছেলের দেখভালের জন্য মাহিন চৌধুরী তার চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন। বলছিলেন তাকে চোখের আড়াল হতে দেন না প্রায় কখনোই। কিন্তু ছেলে সন্তান বলে তার প্রতি যৌন নির্যাতনের কোন ঘটনা যে ঘটতে পারে তিনি সেটা ঠিক ভাবেন না। তিনি বলছেন, "সত্যি কথা বলতে কি আমার যদি মেয়ে বাচ্চা হতো তাহলে অনেক বেশি এ ব্যাপারে চিন্তিত হতাম। কিন্তু যেহেতু আমার ছেলে বাচ্চা, তুলনামূলকভাবে কিন্তু ওই চিন্তাটা একটু কমই আসে। টেনশনটা কম হয়। কিন্তু তারপরও বাচ্চার কথা চিন্তা করেই আমি চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি।" বিষয়টি নিয়ে কথা বলা কঠিন কিন্তু তিনিও তার বাচ্চাকে এই বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একটি শিশুর মাথায়, যৌন নির্যাতনের ধারণাটা অনুপস্থিত। আপত্তিকর বিষয়টিও সে বোঝে না। তাকর কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা কঠিন বলে জানালেন মাহিন চৌধুরী। তিনি বলছেন, "একটি ছোট বাচ্চাকে বিষয়টি বোঝানো খুব কঠিন। আর সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ তো আমাদের নেই। দেশের বাইরে দেখি মা বা অভিভাবকদের ট্রেইন করা হয়। সচেতনতামূলক অনেক বার্তা থাকে। আমি ছেলেকে ভালো আদর, খারাপ আদর বিষয়টির পার্থক্যটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি।" বাবাদের জন্য বিষয়টি কি বেশি কঠিন? তামিম হাসানের স্ত্রী মারা গেছেন দুই বছর আগে। তিনি একজন ''সিঙ্গেল প্যারেন্ট''। এরপর থেকে সাড়ে তিন বছরের সন্তানকে বড় করতে তিনি তার পরিবারের সহায়তা পাচ্ছেন। মায়ের উপরে তিনি অনেকটাই নির্ভরশীল। কিন্তু শিশুটির প্রতি তিনি বাড়তি মনোযোগ দেন, কারণ তার মা নেই। তাই ছেলের ব্যাপারে তার উদ্বেগ আরও বেশি। তবে তার মতে বাবাদের জন্য শিশুদের এই বিষয়ে শেখানো বেশ কঠিন, কারণ বাংলাদেশের সমাজে বাবাদের সেভাবে তৈরি করা হয় না। সন্তানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার ধরন ভিন্ন। শিশুরা এমন প্রসঙ্গ বোঝার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু তবুও তাকে জানাতে হবে। তিনি বলছেন, "একজন মা যেভাবে বাচ্চাদের সাথে মিশতে পারে, একজন বাবা সেভাবে পারেন না। বাবাদের সাথে ছেলেমেয়েদের একটু দূরত্ব থাকে। বাবারা অফিসের কাজে বাইরে থাকেন বেশি। তাই ততটা সময় দিতে পারেন না। আর সিঙ্গল মায়ের থেকে সিঙ্গল বাবাদের জন্য বিষয়টাতো আরও কঠিন।" একজন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর দেয়া টিপস্ শিশুদের এরকম একটি বিষয়ে কীভাবে জানানো যায় সে প্রস্গে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ডাঃ ইশরাত শারমিন রহমান বলছেন একটি শিশু এমন প্রসঙ্গ বোঝার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু তবুও তাকে জানাতে হবে। আর তার জন্য কি করা যেতে পারে সে ব্যাপারে তিনি কয়েকটি টিপস দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, "একটি শিশুকে তার শরীরের তিনটি জায়গা সম্পর্কে জানাতে হবে। তার ঠোঁট, গোপনাঙ্গ ও পায়ুপথ। তাকে জানাতে হবে এই তিনটা তার বিশেষ জায়গা। এখানে বাবা মা গোসল করানো বা পরিষ্কার করার সময় ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। কেউ সেটি করলে সে কি করবে সেটিও তাকে জানানো। সেটা বাবা মাকে যে জানাবে সেটি শেখাতে হবে। এতে বাচ্চারা সচেতন থাকবে।" শিশুদের কি ভয় বাড়িয়ে দেয়া হবে? ডাঃ ইশরাত শারমিন বলছেন, বিষয়টি জানানোর কাজ সঠিকভাবে করার জন্য অভিভাবকদের আগে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। জিনিসটা করতে হবে একটু খেলার ছলে, ছবি এঁকে অথবা গল্প করে ধীরে ধীরে ধারণাটা তার মাথায় দিয়ে দিতে হবে। বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখে বলা যেতে পারে। কিন্তু শিশুরা সবকিছু ভুলে যায়। তাদের মধ্যে সন্দেহ কম, তাই তাদের বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে হবে। তিনি বলছেন, "শিশুর আচরণ পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে। বাচ্চার আচরণ থেকেও অনেক সময় অনেক কিছু বোঝা যায়। সে যদি কাউকে দেখে ভয় পায়, কারো কোলে যেতে না চায়, তাকে জোর করা উচিৎ নয়। যে বাচ্চা বিছানা ভেজানো বন্ধ করে দিয়েছে, সে যদি হঠাৎ আবার তা করে। সে যদি ভয় পেয়ে চমকে ওঠে বা রাতে দু:স্বপ্ন দেখছে, এমন পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে।" শিশুর কথা শুনতে হবে ও তাকে বিশ্বাস করতে হবে বাংলাদেশে শিশুদের কথা না শোনার একটি প্রবণতা রয়েছে। আরো পড়ুন: শিশুশিক্ষায় বইয়ের বোঝা কেন? 'রোগে-শোকে নয়, শিশুরা বেশি মরছে পানিতে ডুবে' আদালতে আড়াই মাসের শিশু, আইন বদলানোর আদেশ শিশুদের প্রতি নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। ডাঃ ইশরাত শারমিন বলছেন, "বাচ্চারা যদি এই বিষয়ক কিছু কখনো বলে সেটিকে সিরিয়াসলি নিতে হবে, বাবামাকে বিশ্বাস করতে হবে। কারণ বাচ্চারা যতরকম গল্প বানিয়ে বলুক না কেন এই বিষয়ে বানিয়ে কথা বলার ক্ষমতা তার থাকার কথা নয়।" তিনি বলছেন, "আমার ক্লায়েন্টদের দেখে বলছি, অনেক বাবা মা বিষয়টি বিশ্বাস করতে চান না, মানতে চান না। অনেক সময় বলেন তুমি বানিয়ে বলছ। এরকম হলে শিশুরা তার বলার জায়গাটি হারিয়ে ফেলে। এতে নির্যাতক ব্যক্তি আরও সুযোগ পায়।" সামাজিক সম্পর্কের কথা কতটা ভাববেন? ডাঃ ইশরাত শারমিন বলছেন, শিশুকে কার কাছে দিচ্ছেন, বাবা মায়েদের সেদিকে নজর রাখা উচিত। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা ঘনিষ্ঠদের দ্বারাই যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। কিন্তু হঠাৎ করে বাচ্চাদের সচেতন করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্য অথবা আত্মীয়দের সন্দেহ করা শুরু করবেন কিনা সে ব্যাপারেও ভাবেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলছেন, "সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট করার ভয়ে অনেক সময় এগুলো নিয়ে সবাই চুপ করে থাকে। কিন্তু এগুলোকে নিয়ে পরিবারের সবাইকে একসাথে বসে কথা বলতে হবে যে আমাদের শিশুরা কারো কাছে নিরাপদ নয়।" তিনি বলছেন, "আপনি কেন ভাবতে যাবেন আপনার ভাইকে বা বাবাকেও আপনার সন্দেহ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই আলোচনাটা যদি পরিবারে খাবার টেবিলে হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু সকলেই এই বিষয়টা সম্পর্কে সচেতন থাকে।" অন্যান্য খবর: ফেসবুকে নারীদের মত প্রকাশ কতটা নিরাপদ? বাংলাদেশের পাট নিয়ে ভারত কিভাবে লাভ করছে? ৫০ বছর পরও যে সিনেমা ঘিরে অনেক রহস্য
যৌন নির্যাতন: শিশুদের কীভাবে সচেতন করবেন
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (ফাইল ফটো) বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমদ কখনও নন্দিত, কখনও সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রকৃত অর্থেই একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন বলে তাঁর সহকর্মীরা মনে করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন মওদুদ আহমদ। পরে তিনি জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সরকারেও ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন। জেনারেল এরশাদের সরকারে থাকলেও পরে তিনি আবার বিএনপির রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তার সহকর্মীরা উল্লেখ করেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান যেমন ছিলেন, তেমনি তিনি আইন পেশাতেও সফল ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতির বিভিন্ন পর্ব নিয়ে তাঁর লেখা একাধিক বই প্রশংসিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ছাত্রজীবনেই রাজনীতির মাঠে মওদুদ আহমদ ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় ঐ কলেজের ছাত্র সংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ফরমান উল্লাহ খানের প্রতিষ্ঠিত খেলাফত রব্বানীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির সাথে জড়িত হয়েছিলেন। এর আগে স্কুলের ছাত্র থাকার সময় বাংলা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে তিনি জেল খেটেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করার পর তিনি লন্ডনে বার-অ্যাট-ল পড়তে যান। সেখানে তার পরিচয় হয়েছিল একই বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী আমীর উল ইসলামের সাথে। এখন সিনিয়র আইনজীবী আমীর উল ইসলাম বলেছেন, তিনি এবং মওদুদ আহমদ বার-অ্যাট-ল শেষ করে ৬০ এর দশকের মাঝামাঝি দেশে ফেরেন। তখন ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করলে তারা তার সমর্থনে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামেন। বিএনপি ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের জোট করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সংলাপে জোটের নেতাদের সাথে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আলোচিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি দেশে ফেরার পরই হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তখন মওদুদ আহমদ তাঁর জুনিয়র হিসাবে কাজ শুরু করেন। ব্যারিস্টার ইসলাম বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি শাসকদের করা যে মামলা 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল এবং যে মামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল - সেই মামলায় তিনি এবং মওদুদ আহমদ আইনজীবী হিসাবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় মওদুদ আহমদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করেছিল। যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে শেখ মুজিবের সাথে ছিলেন মওদুদ আহমদ। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকদেরও অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার সাথে মওদুদ আহমদের একজন ঘনিষ্ঠ আত্নীয় জানিয়েছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সে সময় ব্যারিস্টার আহমদ আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে আটক রাজনীতিকদের জন্য আইনী লড়াই চালানোসহ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৭৫ সালে পট পরিবর্তনের পর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি মওদুদ আহমদকে উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিলেন ১৯৭৭ সালে। বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে জিয়াউর রহমান জাগদল গঠন করেছিলেন। সেই জাগদলের ১৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মওদুদ আহমদ। পরে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠার সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে ১৯৭৯ সালে উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন মওদুদ আহমদ। তবে বিএনপির একজন নেতা বলেন, উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরের বছরই ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান তাঁকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। পরে সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারে ব্যারিস্টার আহমেদ প্রথমে মন্ত্রী, তারপর উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৮৯ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এরশাদ সরকারের পতনের সময় পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারেও তিনি আইনমন্ত্রী ছিলেন। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: 'গুলশানের বাড়ি ছাড়তে হবে মওদুদ আহমদকে' 'দাবি আদায়ের কৌশল আওয়ামী লীগই শিখিয়েছে' 'সর্বদলীয় সরকার নয়, নির্দলীয় সরকার চাই' বিএনপির নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্যারিস্টার আহমদ। (ফাইল ফটো) বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টি হয়ে আবার বিএনপিতে জিয়াউর রহমানের জাগদল এবং পরে বিএনপি প্রতিষ্ঠার সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার আহমদ। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৯৮৫ সালে তাঁকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। সে বছরই তিনি জেনারেল এরশাদের সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অন্যতম একজন ছিলেন মওদুদ আহমদ। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে অংশ নিয়ে এমপি হন। তিনি ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে ফিরে আসেন। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সরকার-তিনটি সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এবং বিভিন্ন সময় দলবদল নিয়ে অনেক সময় তিনি সমালোচিত হয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলের সাথে ছিলেন। তবে মাঝপথে তিনি যে এরশাদ সরকারে যোগ দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে তার যুক্তি ছিল যে, তিনি গণতন্ত্রের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বিএনপিতে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।" মি: আলমগীর মনে করেন, রাজনীতিতে ব্যর্থতা-সফলতা থাকতে পারে। সেখানে মওদুদ আহমদ রাজনীতিতে সফল ছিলেন। "ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গণতন্ত্রের জন্যই কাজ করেছেন তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে। সেখান থেকে তিনি বিচ্যূত হননি" - বলেন মি. আলমগীর। "সেজন্য তাঁকে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জেল খাটতে হয়েছে এবং নির্যাতিত হয়েছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও তিনি নিগৃহীত হয়েছেন"- মন্তব্য করেন মি: আলমগীর। জেনারেল এরশাদের সরকারে মওদুদ আহমদের সহকর্মী ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। পরে মি: হোসেনও বিএনপিতে যোগ দেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, "এক সময় সরকারে একসাথে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছি। কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসাবে সম্পর্কটা ঠিক ছিল।" পার্লামেন্টারিয়ান মওদুদ তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী হিসাবে ১৯৭৯ সালে তাঁর এলাকা নোয়াখালী-৫ আসন থেকে। জেনারেল এরশাদের শাসনের সময় ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালের সংসদের তিনি জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালের সংসদে তিনি সংসদ নেতাও ছিলেন। ১৯৯১ সালে সব দলের অংশগ্রহণে যে নির্বাচন হয় - তাতে তিনি জাতীয় পার্টি থেকেই এমপি হয়েছিলেন। আবার বিএনপির প্রার্থী হিসাবে এমপি হয়েছিলেন তিনি ২০০১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে। সংসদে সাংবিধানিক কোন ইস্যুতে আলোচনায় বিএনপি ব্যারিস্টার আহমদের ওপর বেশি নির্ভর করতো বলে দলটির নেতারা বলেছেন। রাজনীতিক যখন লেখক মওদুদ আহমদ ডজন খানেক বই লিখেছেন। 'ডেমোক্রেসী অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট', 'এ স্টাডি অব পলিটিক্স অ্যান্ড মিলিটারী ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ,' এবং 'এরা অফ শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ কনস্টিটিউশনাল কোয়েস্ট ফর অটোনমি'- এসব শিরোনামে লেখা তাঁর তিনটি বই ব্যাপক আলোচিত। এছাড়া 'বাংলাদেশের গণতন্ত্র ১৯৯১ থেকে ২০০৬, 'কারাগারে যেমন ছিলাম ২০০৭-২০০৮' - এই দু'টি শিরোনামের দু'টি বইও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। বিএনপি নেতারা মনে করেন, তাঁর লেখা বইগুলোতে ইতিহাস ও সমসাময়িক রাজনীতি উঠে এসেছে। তবে গণতান্ত্রিক আদর্শ ছিল তাঁর লেখার মূল ভিত্তি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের রাজনীতিতে থাকলেও মওদুদ আহমদ তাঁর লেখা বইগুলোতে নিরপেক্ষভাবে ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরেছেন এবংএই বইগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেছেন, রাজনীতি, আইন পেশা, লেখালেখি এবং বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো- এই ক্ষেত্রগুলোতে অবাধ বিচরণ ছিল ব্যারিস্টার আহমদের। তবে রাজনীতিবিদের পরিচয়কেই তিনি বেশি উপভোগ করতেন। মি. আহমদ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এর ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যারয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং বিদেশি আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ছিলেন তিনি। মওদুদ আহমদ জন্ম কোম্পানীগঞ্জে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালের ২৪শে মে। তাঁর পিতা মরহুম মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং মাতা বেগম আম্বিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে ব্যারিস্টার আহমদ ছিলেন চতুর্থ। তাঁর সংসার তাঁর স্ত্রী হাসনা জসীমউদদীন মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং তিনিও এরশাদ সরকারের সময়ে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হয়েছিলেন। তাঁর দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। বড় ছেলে আসিফ মওদুদ অল্প বয়সেই মারা যান অনেক আগে। আর দ্বিতীয় সন্তান আমান মওদুদ প্রতিবন্ধী ছিলেন এবং তিনিও মারা যান ২০১৫ সালে। তাঁর পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, ছেলেদের মৃত্যুর সেই কষ্টের কথা তিনি সবসময় আত্নীয়স্বজনের কাছে প্রকাশ করতেন। তাঁর মেয়ে আনা আসপিয়া মওদুদ স্বামীসহ থাকেন নরওয়েতে। ব্যারিস্টার আহমদের শ্বশুর পল্লীকবি জসীমউদদীন। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের যে তিন ঝুঁকি ছয় অভিন্ন নদী নিয়ে ঢাকা-দিল্লী বৈঠক আজ, নদীগুলোর কী অবস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পর্যালোচনা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
মওদুদ আহমদ: মুজিবনগর সরকারের পোস্টমাস্টার জেনারেল, জিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী, এরশাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, খালেদা জিয়ার মন্ত্রী, দক্ষ পার্লামেন্টেরিয়ান ও সফল আইনজীবী
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
নন্দাদেবী শৃঙ্গ এ কথা যদি আড়াইশ' পরিবারের ছোট্ট গ্রাম রাইনির লোকদের জিজ্ঞেস করেন - তাহলে এক অদ্ভূত জবাব শুনতে পাবেন আপনি। গত ৭ই ফেব্রুয়ারি হিমবাহ ধসের ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি লোক নিহত হন। তবে এর কারণ সম্পর্কে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সেই বিচিত্র ধারণা প্রচলিত আছে কয়েক প্রজন্ম ধরেই। তারা মনে করেন - সেখানে বরফের নিচে লুকিয়ে রাখা আছে কিছু পারমাণবিক অস্ত্র, এবং সেই বোমাগুলোর কোনো একটি বিস্ফোরিত হয়েই ওই ধসের ঘটনা ঘটেছিল। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, চামোলি জেলায় হিমালয়ের নন্দাদেবী শৃঙ্গের কাছে হিমবাহের একটি অংশ হঠাৎ ভেঙে পড়েছিল - এবং তার ফলে অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গা নদীতে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয় যা অনেক বাড়িঘর ও স্থাপনা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু রাইনির লোকজনকে যদি আপনি এ গল্প বলতে যান - তাহলে দেখবেন অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করছে না। "আমাদের মনে হয় লুকানো বোমাগুলোর একটা ভুমিকা আছে। শীতকালে একটা হিমবাহ কিভাবে ভেঙে পড়তে পারে? আমরা মনে করি সরকারের উচিত ব্যাপারটার তদন্ত করা এবং বোমাগুলো খুঁজে বের করা," বলছিলেন সংগ্রাম সিং রাওয়াত, রাইনির গ্রাম প্রধান। তাদের এই ধারণার পেছনে আছে স্নায়ুযুদ্ধের যুগের এক বিচিত্র কাহিনি। চীনের বিরুদ্ধে নজরদারি করতে ভারত-মার্কিন গোপন তৎপরতা উনিশশ' ষাটের দশকে এই এলাকাটিতে কিছু বিচিত্র গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা ঘটেছিল। এতে জড়িত ছিল তৎকালীন কিছু শীর্ষ পর্বতারোহী, ইলেকট্রনিক স্পাইং সিস্টেম চালানোর জন্য তেজষ্ক্রিয় পদার্থ, এবং কিছু গুপ্তচর। সে সময় চীন পারমাণবিক বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মালিক হবার জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিল। আর তার ওপর নজর রাখতে ১৯৬০-এর দশকে ভারতের সাথে সহযোগিতা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা চীনের পারমাণবিক পরীক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ওপর নজরদারি করতে হিমালয় এলাকায় পরমাণু শক্তিচালিত কিছু যন্ত্র স্থাপনের কাজে ভারতের সাহায্য নিয়েছিল। এ্যাপোলো ১৩-র কম্যান্ডার জিম লোভেল এক প্রশিক্ষণের সময় প্লূটোনিয়াম ব্যাটারি বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন । এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লেখালিখি করেছেন পিট তাকেডা - যিনি যুক্তরাষ্ট্রের 'রক এ্যান্ড আইস ম্যাগাজিনের' একজন প্রদায়ক-সম্পাদক। "স্নায়ুযুদ্ধের যুগের সন্দেহবাতিক তখন চরমে উঠেছে। কোন পরিকল্পনাকেই তখন পাগলামি বলে উড়িয়ে দেয়া হতো না, যত অর্থই লাগুক তা পেতে অসুবিধা হতো না, এবং এ জন্য যে কোন পন্থা নিতে কেউ দ্বিধা করতো না" - বলছিলেন তিনি। সাতটি প্লুটোনিয়ম ক্যাপসুল চীন তার প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় ১৯৬৪ সালে। তার বছরখানেক পরের কথা। উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের অক্টোবর মাসে একদল ভারতীয় ও আমেরিকান পর্বতারোহী সাতটি প্লুটোনিয়াম ক্যাপসুল এবং নজরদারির যন্ত্রপাতি নিয়ে নন্দাদেবী শৃঙ্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। প্লুটোনিয়াম ক্যাপসুলগুলোর ওজন ছিল প্রায় ৫৭ কেজি। এর সাথে ছিল দুটি রেডিও কমিউনিকেশন সেট, আর একটি ছয় ফুট লম্বা এ্যান্টেনা। কথা ছিল যে - পর্বতারোহীরা সেগুলো নিয়ে ২৫,৬৪৩ ফিট উঁচু নন্দাদেবী শৃঙ্গের ওপর স্থাপন করবেন। এই শৃঙ্গের অবস্থান চীন সীমান্তের কাছেই। কিন্তু দলটির যখন শৃঙ্গের কাছাকাছি এসে গেছেন - তখনই বাধলো বিপত্তি। হঠাৎ শুরু হলো প্রচণ্ড তুষার ঝড়। পর্বতারোহী দলটি তাদের যাত্রা বন্ধ করতে বাধ্য হলো। যন্ত্রপাতিগুলো একটা মাচার মত প্ল্যাটফর্মের ওপর রেখে তারা তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় পর্বতারোহী ক্যপ্টেন এম এস কোহলি একটি সাময়িকীর রিপোর্ট অনুযায়ী, তারা এগুলো রেখে এসেছিলেন পর্বতের গায়ে একটা খাঁজের মধ্যে। "আমরা নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম - না হলে অনেকেই মারা পড়তো," বলেন ভারতীয় পর্বতারোহীদের নেতা এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্মী মনমোহন সিং কোহলি। 'ডিভাইসগুলো উধাও হয়ে গেল' পরের বছর বসন্তকালে পর্বতারোহীরা আবার ফিরে এলেন। তারা ভেবেছিলেন, যন্ত্রপাতিগুলো খুঁজে বের করে তা শৃঙ্গে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছে দেখলেন, যন্ত্রপাতিগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর পর ৫০ বছরেরও বেশি পার হয়ে গেছে। নন্দাদেবী শৃঙ্গে একাধিক দল আরোহণ করেছেন। কিন্তু ক্যাপসুলগুলোর কি হলো -তা আজও কেউ জানেন না। মি. তাকেডা বলছেন, "হয়তো সেই হারানো প্লুটোনিয়াম কোন হিমবাহের নিচে চাপা পড়ে আছে, হয়তো ভেঙেচুরে ধুলোয় মিশে গেছে , এবং ভাসতে ভাসতে তা গঙ্গার উৎসমুখের দিকে যাচ্ছে।" অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলেন, এটা অতিরঞ্জিতও হতে পারে। বিবিসি বাংলায় এ নিয়ে আরও খবর: এটা ঠিক যে প্লুটোনিয়াম হচ্ছে পারমাণবিক বোমার একটা প্রধান উপাদান। কিন্তু ব্যাটারিতে আসলে প্লুটোনিয়াম-২৩৮ নামে একটা আইসোটোপ বা বিশেষ ধরনের প্লুটোনিয়াম ব্যবহৃত হয়। এর 'হাফ লাইফ' (যতদিনে একটা আইসোটোপ তার তেজষ্ক্রিয়তা অর্ধেক হারিয়ে ফেলে) হচ্ছে ৮৮ বছর। এই অভিযান নিয়ে নানা রকম গল্প নন্দাদেবী নিয়ে একটি বই লিখেছেন ব্রিটিশ লেখক হিউ টমসন। তিনি লিখেছেন, স্থানীয় লোকেরা যাতে সন্দেহ না করে সে জন্য আমেরিকান পর্বতারোহীদের চামড়ার রঙ তামাটে করার ক্রিম লাগাতে বলা হয়েছিল। তাদের অভিযানের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল - অত উঁচুতে উঠলে অক্সিজেনের অভাবে মানবদেহে কি প্রতিক্রিয়া হয় তা পরীক্ষা করতেই এ অভিযান। সাথে যে কুলিরা পারমাণবিক যন্ত্রপাতি বহন করছিলেন তাদের বলা হয়েছিল - এতে সোনা বা ওই জাতীয় কোন ধনরত্ন আছে। ১৯৭৮ সালের আগে এ অভিযানের কথা কেউ জানতো না ভারতে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই ব্যর্থ অভিযানের কথা গোপন রাখা হয়েছিল। সে সময় ওয়াশিংটন পোস্ট এক রিপোর্টে জানায়, সিআইএ কিছু অভিজ্ঞ আমেরিকান পর্বতারোহী ভাড়া করে হিমালয়ের দুটি শৃঙ্গে পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারির যন্ত্র বসিয়েছিল - যার লক্ষ্য ছিল চীনের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করা। ওয়াশিংটন পোস্টের সেই রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৬৫ সালে প্রথম অভিযানটি ব্যর্থ হয় এবং যন্ত্রপাতি হারিয়ে যায়। তবে দু বছর পর আরেকটি অভিযানে সিআইএ'র মতে "আংশিক সাফল্য" পাওয়া গিয়েছিল। নন্দাকেট পর্বতশৃঙ্গ। শেষ পর্যন্ত এই শৃঙ্গের ওপর কিছু নজরদারির যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল। এরপর ১৯৬৭ সালে নন্দাদেবীর কাছে নন্দাকোট নামে আরেকটি শৃঙ্গের ওপর নতুন এক সেট গুপ্তচরবৃত্তির যন্ত্রপাতি সফলভাবে বসানো হয়। এ জন্য ১৪ আমেরিকান পর্বতারোহীকে তিন বছর কাজ করতে হয়। তাদের প্রতি মাসে ১,০০০ ডলার দেয়া হয়েছিল। পার্লামেন্টে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই ১৯৭৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই পার্লামেন্টে জানান যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে নন্দাদেবী শৃঙ্গে পারমাণবিক শক্তিচালিত যন্ত্র বসানোর কাজ করেছে। তবে এ মিশন কতটা সফল হয় তা মি. দেশাই জানাননি। সে সময় দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে এর প্রতিবাদে ছোট একটি বিক্ষোভ হয়েছিল বলে সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন গোপন দলিলপত্রে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল "সিআইএ ভারত ছাড়ো" এবং "সিআইএ আমাদের পানি দূষিত করছে"। যন্ত্রগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছে? কেউ জানে না সেই হারানো পারমাণবিক যন্ত্রগুলোর কি হয়েছে। আমেরিকান সেই পর্বতারোহীদের একজন জিম ম্যাককার্থি মি. তাকেডাকে বলেছিলেন, "হ্যাঁ সেই যন্ত্রগুলো ধসের মধ্যে পড়ে কোন হিমবাহে আটকে গেছে।" "এর কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা শুধু ঈশ্বরই জানেন।" পর্বতারোহীরা বলেন, রাইনিতে একটি ছোট স্টেশন আছে যেখানে নিয়মিত নদীর জল ও বালুতে কোন তেজষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। তবে এরকম দূষণের কোন প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। আউটসাইড সাময়িকীর রিপোর্টে বলা হয়, "ব্যাটারির প্লুটোনিয়াম পুরোপুরি নষ্ট হতে কয়েক শতাব্দী লাগতে পারে।" "ততদিন হয়তো এটা একটা ভয়ের কারণ হয়েই থাকবে যে - হিমালয়ের বরফের মাধ্যমে ভারতের নদীগুলোতে তেজষ্ক্রিয় উপাদান মিশে যেতে পারে।" বিবিসি বাংলায় আরো খবর: কক্সবাজারে হঠাৎ পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়, দুর্ভোগের কারণ কী? আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে মামলায় চ্যানেল 'উদ্বিগ্ন' ভাষা আন্দোলন কীভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা
পারমাণবিক গুপ্তচরবৃত্তির যন্ত্রে বিস্ফোরণই কি নন্দাদেবী পর্বতের হিমবাহ ধসের কারণ?
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
সম্রাট নিরো। সম্রাট নিরো ছিলেন অত্যন্ত বেহিসাবি। বিশাল আকারের একটি প্রাসাদ নির্মাণ করতে গিয়ে তার পেছনে উড়িয়েছেন অঢেল অর্থ। একই সাথে তিনি খেলাধুলারও আয়োজন করতেন। আয়োজন করতেন রথ দৌড় প্রতিযোগিতা। মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে অভিনয়ও করতেন তিনি এবং নিজেকে দাবি করতেন একজন শিল্পী হিসেবে। ইতিহাসে বলা হয়, রোম নগরী যখন আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল তখন সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপও ছিল না। বরং সেসময় বাঁশি বাজাচ্ছিলেন নিরো। ইতিহাসের এই ঘটনাটির কথা আজকের দিনেও উল্লেখ করা হয়। স্বৈরশাসকেরা যখন জনগণের বিক্ষোভ প্রতিবাদ উপেক্ষা করে রাষ্ট্র পরিচালনা অব্যাহত রাখেন তখন নিরোর সাথে তুলনা করে বলা হয়: "রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল।" নিরোর এই ভীতিকর ইমেজ কি আসলেই সত্য? ইতিহাসের কুখ্যাত এই রোমান শাসক সম্পর্কে এখানে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরা হলো: ১. মাত্র ১৬ বছর বয়সে সম্রাট নিরো ক্ষমতায় আসেন ৫৪ খৃস্টাব্দে। সেসময় রোমান সাম্রাজ্য খুব বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্য ছিল পশ্চিমে স্পেন থেকে উত্তরে ব্রিটেন পর্যন্ত। আর পূর্ব দিকে ছিল সিরিয়া। সম্রাট নিরোর শাসনকালের প্রথম পাঁচ বছরকে দেখা হয় রোমান জনগণের 'স্বর্ণযুগ' হিসেবে। সেনেটের হাতে তিনি অনেক ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। রোমের সেনাবাহিনীকে এক পাশে সরিয়ে রাখেন এবং খেলাধুলার মতো নানা ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে সাধারণ লোকজনের কাছে তিনি খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। কিন্তু এই অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। ভয়ঙ্কর সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতা তার এই সাফল্যকে অচিরেই ম্লান করে দেয়। এই নিষ্ঠুরতা তার শাসনকালের বাকিটা সময়জুড়েই অব্যাহত ছিল। নিরোর প্রাসাদ। শিল্পীর চোখে। ২. মায়ের কারণে সম্রাট বলা হয় নিরোর ক্ষমতালোভী মা-ই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। এটাই ছিল তার সম্রাট হওয়ার পেছনে মূল কারণ। নিরোর মা এগ্রিপিনা তার চাচা সম্রাট ক্লডিয়াসকে বিয়ে করেন। পরে চাচাতো বোনের সাথে নিরোর বিয়েরও ব্যবস্থা করেন তিনি। এটা তিনি করেছিলেন পরিবারের ভেতরে তার ছেলে নিরোর ক্ষমতাকে আরো পোক্ত করার জন্য। সম্রাট ক্লডিয়াসের পুত্র সন্তান থাকা সত্ত্বেও মা এগ্রিপিনা তার ছেলেকেই সম্রাট ক্লডিয়াসের উত্তরসূরি বানাতে চেয়েছিলেন। বলা হয় যে এগ্রিপিনা সম্রাট ক্লডিয়াসকে এক প্লেট বিষাক্ত মাশরুম খাইয়ে তাকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু এই তথ্য কতোটা সত্য সেটা যাচাই করে দেখার কোন উপায় নেই। ৩. মাকে হত্যা নিরোর ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দিকে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য উপদেষ্টা ছিলেন তার মা এগ্রিপিনা। সেকারণে রোমান মুদ্রায় তার ছবির সাথে এগ্রিপিনার মুখের ছবিও খোদাই করা ছিল। কিন্তু নিরো পরে আরো বেশি ক্ষমতা ও স্বাধীনতার জন্যে তার মাকেও হত্যা করেন। মাকে হত্যার জন্যে নিরোর প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। সমুদ্রের তীরে একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন নিরো যেখানে তিনি তাকে মাকেও আমন্ত্রণ জানান। তার পর তাকে এমন একটি জাহাজে করে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন তিনিযেটি ভেঙে ডুবে যাওয়ার মতো করেই তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই চেষ্টায় তার মা বেঁচে গিয়েছিলেন। ফলে তিনি মায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তোলেন এবং তাকে হত্যা করার জন্যে লোক পাঠান। ৪. রোমে আগুন ও নিরো ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ৬৪ খৃস্টাব্দে রোমের বেশিরভাগ এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। একটা গুজব আছে যে নিরোই নাকি এই আগুনটা লাগিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পরে এও দাবী করা হয় যে রোম নগরী যখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি বেহালা বাজাচ্ছিলেন। এই তথ্য সঠিক হতে পারে না। কারণ রোমান সাম্রাজ্যের আমলে বেহালার অস্তিত্ব ছিল না। তবে নিরো বীণাজাতীয় বিশেষ একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো উপভোগ করতেন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন রোমের অগ্নিকাণ্ডের জন্যে নিরো দায়ী নন। কারণ এই আগুনে নিরোর নিজের প্রাসাদও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, অগ্নিকাণ্ডের পর তিনি রোম নগরীর বড় ধরনের উন্নতিও সাধন করেছিলেন। খ্রিস্টানদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। শিল্পীর চোখে। ৫. বলির পাঁঠা খ্রিস্টান নিরো অভিযোগ করেন যে খ্রিস্টানরাই এই আগুন লাগিয়েছিল। এটা তিনি করেছিলেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। ওই সময়ে রোমে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তারা ছিল প্রান্তিক এবং অজনপ্রিয়। বলা হয়, শহরে আগুন দেওয়ার শাস্তি হিসেবে খ্রিস্টানদের অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন নিরো। তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, বন্য জন্তু দিয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়, এবং তাদের শরীরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এখানেই শেষ নয়, এসব শাস্তি দেওয়ার সময় উৎসবও করা হতো। লোকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হতো এসব প্রত্যক্ষ করার জন্য। ৬. নিরোর বিশাল প্রাসাদ ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পর নিরো দুটো পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল একটি প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। বলা হয় সেখানে সোনার তৈরি একটি ঘর ছিল। ওই ঘরের ভেতরে ছিল ঘূর্ণায়মান টেবিল এবং ঘরের দেওয়ালগুলোতে পাইপ বসানো ছিল যা দিয়ে সুগন্ধি প্রবাহিত হতো। এ‌ প্রাসাদ নির্মাণের পেছনে ব্যয় করা হয়েছিল প্রচুর অর্থ। কিন্তু এই কাজ কখনোই শেষ হয়নি। গোটা শহর যখন আগুনের ধ্বংসস্তুপ থেকে পুনরায় জেগে ওঠার চেষ্টা করছিল, তখন শহরের লোকজন দেখছিল তাদের সামনে এমন বিলাসবহুল একটি প্রাসাদ তৈরি করা হচ্ছে। তবে বলা হয় যে রোমের লোকজন যাতে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেন সেজন্যে এই প্রাসাদটি খুলে দেওয়ার কথা ছিল। ৭. স্ত্রী হত্যা সম্রাট নিরোর প্রথম স্ত্রী ছিলেন ভিক্টোরিয়া। তাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান নিরো এবং শাস্তি হিসেবে তাকে নির্বাসনে পাঠান। তারপর তার পেছনে খুনি লেলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এর পর নিরো পপ্পেয়াকে বিয়ে করেন। তার প্রেমেও পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি যখন গর্ভবতী হয়ে পড়েন তখন তার উপর ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তাকে ছুঁড়ে ফেলেন। তাকে লাথি মেরে হত্যা করেন তিনি। তার যে স্ত্রীকে তিনি হত্যা করেছিলেন, বলা হয়, মঞ্চে বসে বিয়োগাত্মক সঙ্গীত বাজানোর সময় তিনি তার মুখোশ পরে থাকতেন। এথেকে ধারণা করা হয় যে তিনি হয়তো অপরাধবোধ ও শোকে ভেঙে পড়েছিলেন। রোম নগরী পুড়ে যাওয়ার সময় নিরো। শিল্পীর চোখে। ৮. অভিনেতা নিরো নিরো থিয়েটার করতে খুব পছন্দ করতেন। তিনি বীণা জাতীয় বিশেষ একটি বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন, গান গাইতেন, কবিতা লিখতেন এবং মঞ্চে অভিনয়ও করতেন। এসব বিষয়ে একজন রোমান সম্রাটের আগ্রহকে খুব ভালোভাবে দেখেনি সেনেট। তারা মনে করতেন এটা খুবই লজ্জার ও মানহানিকর। তারপরেও নিরো থিয়েটারে অভিনয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্যে গ্রিসে এক বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। বিভিন্ন খেলাধুলাতেও অংশ নিতেন তিনি। বলা হয় যে ১০টি ঘোড়া টেনে নিয়ে যায় এরকম রথ চালনায় খুব দক্ষ ছিলেন তিনি। ৯. নাটকীয় মৃত্যু নিরোর বয়স ৩০ হতে হতেই তার বিরুদ্ধে বিরোধিতা চরমে পৌঁছায়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সেনেট তাকে 'জনগণের শত্রু' হিসেবে ঘোষণা করে। এর অর্থ হচ্ছে নিরোকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই তাকে হত্যা করা হবে। এর পর নিরো মফস্বলের মতো একটি জায়গায় পালিয়ে গিয়ে সেখানকার একটি ভিলাতে আশ্রয় নেন। রক্ষীরা যখন তার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন তিনি আত্মহত্যা করেন। বলা হয়, মারা যাবার সময় তিনি 'কোয়ালিস আর্টিফেক্স পেরেও' বলে চিৎকার করছিলেন। এটা বলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন সেটা পরিষ্কার নয়। কারণ এই কথার নানা রকমের অর্থ হতে পারে। এর একটা হতে পারে: "আমার মৃত্যুর সময়ে আমি কী দারুণ এক শিল্পী', 'আমার সাথে কী এক শিল্পীর মৃত্যু হচ্ছে' অথবা 'আমি একজন বণিকের মতো মারা যাচ্ছি।' অর্থ যা-ই হোক না কেন মৃত্যুর আগে তার এই শেষ উচ্চারণ তার জীবনের মতোই নাটকীয় ছিল। আরো পড়তে পারেন: মার্গারেট থ্যাচার: যেভাবে রাজনৈতিক জীবনের ইতি আফগানিস্তানে কিভাবে ঢুকেছিল সোভিয়েত বাহিনী
রোম নগরী পুড়ে যাওয়ার সময় সম্রাট নিরো কি আসলেই বাঁশি বাজাচ্ছিলেন?
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
গত ফিফা বিশ্বকাপে যে উত্তেজনা ছিল সে তুলনায় এখন অনেকটাই কম। ইংল্যান্ডের ৫ম ও সব মিলে দ্বাদশ বিশ্বকাপ আসর এটি। তবে খুব বেশি বুঝার উপায় নেই সেখানে বিশ্বকাপের আসর বসেছে। কতটা জমে উঠবে এই আসর - দেখুন ভিডিওতে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯: ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে জমবে তো?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
লুসিয়েন গ্রিভস(সর্ব ডানে) নিজের পরিবারের সুরক্ষায় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করেন শয়তানের মন্দির নিয়ে তৈরি নতুন একটি তথ্যচিত্রে এমনটাই অন্তত প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। নামে কিছুটা মিল থাকলেও শয়তানের মন্দির আসলে শয়তানের গির্জা থেকে ভিন্ন। ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে শয়তানের গির্জা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চ্যাট শো সেলিব্রেটি অ্যান্টন ল্যাভে। শয়তানের উপাসনাকারীরা কি মানব বলি দেয়? এটা ভুল। তারা কি রক্তপান করে? সেটাও ভুল। ব্ল্যাক ম্যাস বা কালো পোশাকে সমাবেশ করে? সেটা কিছুটা ঠিক। শয়তানের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৩ সালে। পরে এক বিবৃতিতে তুলে ধরা হয় মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যসমূহ। বলা হয়, সব মানুষের মধ্যে দয়া এবং সহানুভূতি জাগিয়ে তোলা, অত্যাচারী কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করা, বাস্তবিক সাধারণ জ্ঞান এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করা, এবং মানুষের মনের ইচ্ছানুযায়ী মহৎ সাধনা অনুসরণের জন্য মানব বিবেক দ্বারা পরিচালিত হওয়াই এর উদ্দেশ্য। শয়তানের মন্দিরের সদস্যরা জানায় তারা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সেক্যুলার দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে লড়াই করছে 'হেল স্যাটান?' - এই নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা পেনি লেন। তিনি এই চলচ্চিত্রে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে, রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্ম মার্কিনীদের জীবনে কথিত যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, তা কমিয়ে আনতে শয়তানের মন্দির কিভাবে কাজ করছে। এই তাত্ত্বিক বিশ্বাস থেকেই, ওকলাহোমা সিটির ওকলাহোমা স্টেট ক্যাপিটাল ভবনের সামনে 'টেন কমান্ডমেন্টস' বা দশ প্রতিজ্ঞা'র একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির প্রস্তাব আসে। এ বিষয়ে মন্দিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, শয়তান দেবতা বাফোমেটের মূর্তি প্রতিষ্ঠার স্থান বরাদ্দ দেয়ার মাধ্যমে মহাজাগতিক ধর্মীয় ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। সেই সাথে সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে একটি মতবাদ প্রচার করাও সম্ভব হবে। এ নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের ট্রেইলারটিতে মন্দিরের মুখপাত্র লুসিয়েন গ্রিভস বলেন, "আমরা চাই যে যুক্তরাষ্ট্র একটি খ্রিস্টান জাতি কিনা তা মানুষ পুর্নমূল্যায়ন করুক। কারণ আসলে এটি নয়।" চলচ্চিত্রের নির্মাতা পেনি লেন বলেন, "ওকলাহোমায় থাকার সময়ে যখন এর অনুসারীরা তাদের প্রচারণা চালাচ্ছিল তখনই মন্দিরটি সম্পর্কে জানতে পারি আমি।" "প্রথম দিকে আমার মনে হয়েছিলো যে তারা হয়তো মজা করার জন্য এ ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি যে, তাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার সদস্য রয়েছে," লেন বলেন। আরো পড়তে পারেন: রোহিঙ্গারা 'সুখে খুব বেশিদিন থাকবে না' পরমাণু অস্ত্রের নীতি কেন বদলাতে চায় ভারত? রোহিঙ্গারা কি আদৌ ফিরবে? উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা ব্ল্যাক ম্যাস অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য যা মঞ্চায়িত হয়েছিলো "আমি যতই এটি সম্পর্কে যত জানছিলাম, ততই এটি আরো বেশি সমৃদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, উত্তেজক এবং আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল।" পুরো চলচ্চিত্রটি আসলে নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরের মুখপাত্র বুদ্ধিমান ও চতুর গ্রিভস এবং তার অনুসারী শয়তান পূজারীদের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে। তারা মানুষকে রক্তদান করে, গৃহহীনদের জন্য মোজা সংগ্রহ করে, সমুদ্র সৈকতের আবর্জনা পরিষ্কার করে, স্কুলগামী শিশুদের জন্য ছুটির পরে যাওয়ার মতো ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। এসব ক্লাবে মন্দিরের মতবাদ শিক্ষা দেয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে- •যৌক্তিক কারণ মেনে সব সৃষ্টির প্রতি সমবেদনা এবং সহানুভূতি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে, •মানুষ মাত্রই ভুল করে। তবে আমরা যদি ভুল করি তাহলে তা সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর মাধ্যমে কারো ক্ষতি হলে তা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। হেল স্যাটান ছবির একটি দৃশ্য যদিও শয়তানের আরাধনা হিসেবে বিভিন্ন নাটক এবং সিনেমায় ব্ল্যাক ম্যাস বা কালো পোশাক পরে শয়তানের পূজার রীতিকে অশুভ হিসেবেই তুলে ধরা হয়, শয়তানের এই উপাসকরা অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তারা কেউই শয়তানকে আধ্যাত্মিক কোন সত্ত্বা হিসেবে বিশ্বাস করেন না। বরং হিব্রু ভাষায় স্যাটান বা শয়তান বলতে যে অর্থ বোঝানো হয় অর্থাৎ "বিরোধী" বা "বিপক্ষের শক্তি" হিসেবেই মনে করেন তারা। লেন বলেন, "তারা যে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসটাকে একটা বিমূর্ত কিংবা কাল্পনিক চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছে, এই বিষয়টিকে আমার কাছে অতটা জটিল বা কঠিন মনে হয় না।" "এটা আসলে মন ভোলানো কোন চমক নয়। বরং এটা এক ধরণের স্বীকারোক্তি যে, ধর্ম হচ্ছে এমন একটা বিষয় যেটিকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে হয়, কিন্তু প্রমাণ করা যায় না।" "আমি বুঝতে পেরেছি যে, কোন কিছু গুরুত্বপূর্ণ এটা বোঝার জন্যই জোর করে কোন কিছুতে বিশ্বাস করা দরকার নেই। আমার মনে হয় মানবাধিকারটা মৌলিক বিষয়। আমি অন্যদের মানবাধিকার রক্ষায় জীবনও দিতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় না যে, পৃথিবীতে মানবাধিকারই একমাত্র আক্ষরিক বস্তু।" "মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় যেমন, ভালোবাসা, অধিকার, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা-এগুলো আসলে বস্তুগত কোন বিষয় নয় বরং এগুলো সবই ধারণা মাত্র।" তথ্যচিত্রটিতে প্রাধান্য পেয়েছে শয়তান দেবতা বাফোমেটের মূর্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে চিত্রিত করা, তারপরও এটিতে "শয়তানী আতঙ্ক" এর বিষয়টিও দেখানো হয়েছে। ৮০ এবং ৯০ এর দশকে এই আতঙ্ক পুরো যুক্তরাষ্ট্রে গান, ভিডিও গেমসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো। কট্টর ডানপন্থী খ্রিস্টান সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষ প্রায় সবখানে এবং সবকিছুতেই শয়তানের উপস্থিতির চিহ্ন দেখতে পায়। "গত ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও এক ধরণের বিশ্বাস ছিলো যে, শয়তানের পূজারীরা সংঘবদ্ধ, গুপ্ত এবং তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে বেড়ায়, তারা শয়তানের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম যেমন মানুষ হত্যা, পশু নির্যাতন এবং শিশু ধর্ষণ করে থাকে," লেন ব্যাখ্যা করে বলেন। হেল স্যাটান ছবির একটি দৃশ্য "এর কারণে অনেকেরই জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি অনেককে দীর্ঘ সময় ধরে কারাভোগ করতে হয়েছে।" "কিন্তু এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে যে, শয়তানের পূজারী বলতে আসলে কেউ নেই। নেই কোন গুপ্ত সংগঠনও। বরং আসল শয়তান লুকিয়ে ছিলো শয়তান ধরার কার্যক্রমে। সেসময় আসলে সমাজের অংশ হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হয়েছে যে মানুষের সক্ষমতা কতখানি," লেন বলেন। তিনি বলেন, "অবশ্য এ নিয়ে জনসম্মুখে কোন আলোচনা হয়নি। অনেকটা আড়ালেই তার শুরু এবং শেষ হয়েছে। আমার মনে হয় যে, শয়তানের মন্দির চায় যে মানুষ সে সময়টাকে মনে রাখুক যে তখন আসলে কি হয়েছিলো।" গ্রিভস নিজেও হত্যার হুমকির শিকার হয়েছেন এবং মূর্তি উদ্বোধনের দিন বুলেট প্রতিরোধী ভেস্ট পড়েছিলেন তিনি। লেন বলেন, "বোঝাই যাচ্ছিল যে নিজের পরিবারের পরিচয় গোপন রাখতে বেশ সচেতন থাকেন তিনি।" "আমার মনে হয় যে এটা কোন গর্হিত কাজ নয় কারণ, অনেক মানুষ রয়েছে যারা শুধু মজা করার জন্য হলেও আপনার পরিবারকে ভয় দেখাতে পারে।" লেন বলেন, "আমার চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছে তাদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত আমি। কারণ আমার ছবিতে অভিনয় করে বাইরের বিশ্বে নিজেদের প্রতি হুমকি ডেকে এনেছে তারা। এটা আমি ভালো করেই জানি এবং এ নিয়ে আমি চিন্তিত।" "ধর্ম বিশ্বাসীদের নিয়ে আমি সারা জীবনই খুব দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতাম। আমি জানি যে এটা শুনতে খুব খারাপ শোনায়, তবে আমি বলতে চাই। আমার মনে হয়েছে যে, ধর্ম হচ্ছে মানুষের এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা যার চিকিৎসা জরুরী। আমি এটা বুঝিনি। আমি আসলে জন্মেছি নাস্তিক হয়ে," লেন বলেন।
হেইল সেটান?: মুক্ত ধর্মচর্চার অধিকার চায় শয়তানের পূজারীরা
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
সিলেট শহরের একটি এলাকা ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, "বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ বার কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি হলো ৪.১, ৪, ৩ এবং ২.৮ মাত্রার। কোন কোনটি এতো মৃদু যে সব স্টেশনে মাত্রা মাপাও যায়নি"। মিস্টার ইসলাম বলছেন সিলেটে এমন আর কখনো হয়নি যদিও সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে। সিলেটের জৈন্তায় আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে সবগুলোই ছোটো ধরণের ভূমিকম্প। "কিন্তু ভূমিকম্পের প্রিশক ও আফটারশক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তারপর ছোট ছোট কম্পন হয়। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে"। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ভূমিকম্প মোকাবেলা: প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার ফারাক ভূমিকম্প সম্পর্কে ১২টি বিস্ময়কর তথ্য কেন বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ? বাংলাদেশে সুনামি হওয়ার কতটা ঝুঁকি আছে? বাংলাদেশের দুটি বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে বলে বলছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বাংলাদেশের ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সিলেটে ৪.১ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্পটি প্রথমবার অনুভূত হয়েছে। পরে বেলা ২টা ৩৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় বলে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদ নূর বিবিসিকে বলছেন সকাল থেকে বেলা দুটো পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আর্থ অবজারভেটরি। আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন সকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেটেরই জৈন্তা এলাকা। "সিলেটের জৈন্তা এলাকার ডাউকি ফল্টেই সকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে আমাদের কেন্দ্রে আমরা চিহ্নিত করেছি। ডাউকি ফল্ট পূর্ব পশ্চিমে প্রায় তিনশ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই পলিমাটি দিয়ে ঢাকা," বলছিলেন তিনি। অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার ভূমিকম্পের প্রবণতা নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা করছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তার গবেষণা মডেল বলছে ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি জানান, বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। তবে আজকের প্রথম ভূমিকম্পটি ভালোভাবে বোঝা গেলেও পরেরগুলো ছিলো আরও মৃদু কম্পন অর্থাৎ খুবই হালকা ধরণের। "কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি অঞ্চলে যেভাবে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে বহুকাল ধরে তাতে আট মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে যদি একবারে হয়। হলে একবারেও হতে পারে আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে বা দফায় দফায়ও হতে পারে। কিন্তু কোন মাত্রার হবে এটা আগে থেকে অনুধাবন সম্ভব না"। মিস্টার আখতার বলেন, "বারবার যেভাবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরণের কম্পনও অনুভূত হতে পারে। আবার নাও হতে পারে"।
ডাউকি ফল্ট: সিলেটে বারবার ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল জৈন্তা, সতর্ক থাকার পরামর্শ
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২: ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রশ্নে পুরাতন কলাভবন প্রাঙ্গণে আমতলায় ঐতিহাসিক ছাত্রসভা। বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত ভাষা শহীদদের অবদান কতটুকু সেটা হয়ত আজ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম দেখলেই বোঝা যায়। একটি স্ফুলিঙ্গ যেমন একটি দাবানল সৃষ্টি করতে পারে, তেমনি পূর্ব পাকিস্তানের গণআন্দোলনের ওপর পুলিশের গুলির্ষণ থেকে ১৯৫২ সালে সৃষ্টি হয়েছিল একটি দাবানল। উনিশশ সাতচল্লিশ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হবার পর ৪৮য়ে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছিল যে, ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয়। দানা বেঁধে ওঠে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে এক জনসভায় ঊর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। এই ধারাবাহিকের অন্যান্য পর্বগুলো: বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৬-মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৭ নম্বরে বিবেকানন্দ বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৮নম্বরে অতীশ দীপঙ্কর বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান বিবিসির জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ২০তম স্থানে সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকায় এক ভাষণে ঘোষণা করেন "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা" আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি ক'রে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা ছাত্রসভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দশজন দশজন করে স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পেরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল এগোতে থাকে অ্যাসেম্বলি ভবনের দিকে। শুরু হয় লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস। কিন্তু পুলিশ পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। ফলে গুলি চলে। এর পরের কথা বলেছিলেন চারুশিল্পী মুর্তজা বশীর, যিনি সেদিনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। "হঠাৎ গুলি চলা শুরু হলো। গুলি চলার পর আমরা দেখলাম একটা জটলা এগিয়ে আসছে। পিঁপড়ে যেমন করে আসে, ওইরকম। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলাম। দেখলাম একটি ছেলে - পেটের নিচ দিয়ে রক্ত পড়ছে- কল খুললে যেমন পানি পড়ে - ওভাবে। সে বলল, আমার বাড়িতে খবর দেবেন। আমার নাম আবুল বরকত।" ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২: পুরাতন কলাভবন প্রাঙ্গণ, ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রাক্কালে মি. বশীর হাসপাতালে পৌঁছে দেখেছিলেন আরও লাশ। "ওকে নিয়ে যখন আমরা মেডিকেল কলেজে গেলাম, সেখানে ওকে রাখার পর আরেকটা লাশ দেখলাম, যার মাথার খুলিটা নেই। আরেকজনের লাশ আসল, যার পায়ের গোড়াটা ফাটা বাঁশের মত ফেটে ফাঁক হয়ে রয়েছে। পরে শুনেছিলাম মাথার মগজ বেরিয়ে গেছে যার, তার নাম রফিক আর দ্বিতীয়জন জব্বার।" ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের শেষ পর্বের ছাত্র বরকত ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পাশ করেন। রফিকউদ্দিন ছিলেন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের আই.কমের ছাত্র। আরেকটি নাম ছিল জব্বার। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জব্বার। শফিউর রহমান ঢাকার হাইকোর্টে হিসাব-রক্ষণ শাখায় চাকরি করতেন। ২২শে ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকার নবাবপুর রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে সন্ধ্যে সাতটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। আব্দুস সালাম ছিলেন নোয়াখালি জেলার ফেনী মহকুমার লক্ষ্মণপুর গ্রামের সালাম ঢাকায় এসেছিলেন চাকরির সূত্রে। সরকারি অফিসে পিওন ছিলেন তিনি। থাকতেন নীলক্ষেত ব্যারাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটেয় মেডিকেল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৭ই এপ্রিল মারা যান। ছাব্বিশ বছরের এক সুঠাম যুবক আব্দুল আওয়াল ২২শে ফেব্রুয়ারি শহীদ হন। রিক্সাচালক আব্দুল আওয়াল বাবা, মা, স্ত্রী এবং ছয় বছরের কন্যার সাথে বাস করতেন ঢাকার হাফিজুল্লাহ রোডে। ওহিউল্লাহর বয়স ছিল মাত্র আট কিংবা নয়। সম্ভবত কনিষ্ঠতম ভাষা শহীদ। ২২ তারিখে নবাবপুর রোডের খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে পাকিস্তানি শাসকচক্রের বুলেট রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের শিশুপুত্র ওহিউল্লার মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল। তার লাশটাও গুম করে ফেলা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের সেরামিক মিউরাল ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন সেটা যেন ছিল মৃত্যুর প্রতিযোগিতা। "কে জীবন দেবে? তখন তো জীবন দেওয়ার প্রতিযোগিতা। এরা প্রাণ দিয়েছিল। এবং সেই প্রাণ দেওয়ার যে ইমপ্যাক্ট হয়েছিল, সেটা আমরা পরে বুঝতে পেরেছিলাম। বুঝেছিলাম মানুষের এতে বিরাট সমর্থন আছে। ''আমরা মিছিল বের করলাম। মিছিলের ওপর গুলি হল, মিছিল ছত্রভঙ্গ হল। আবার সমবেত হল। মিছিল আবার এগলো। এগোতে এগোতে শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার দিকে দেখা গেল লাখ খানেক লোক সমবেত হয়েছে। সেটাই তখন অভ্যুত্থানে পরিণত হল," বলেছিলেন আব্দুল মতিন। "এরা যদি আত্মাহুতি না দিতো, তাহলে এই অভ্যুত্থান হতে পারতো না।" এ ঘটনার অভিঘাতে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। ২২ ও ২৩শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করেছিল এবং সভা ও মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিল। ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই মিনার পুনর্নিমিত হয় ১৯৭২ সালে। ভাষা শহীদদের আত্মদানের স্ফুলিঙ্গ থেকে যে দাবানল জ্বলে উঠছিল, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে গণআন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল, তার কাছে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে সেখানে বাংলা ও ঊর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই দাবানলই একে একে দেশটির স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। ওই ভাষা আন্দোলনে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, তারা এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে ১৫ নম্বরে ভাষা আন্দোলনের শহীদ
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
ড্যান প্রাইস পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে সেই ঘটনার পর, এখনো তিনি ঐ একই বেতন পাচ্ছেন এবং জানিয়েছেন যে উদ্দেশ্যে তিনি এ নিয়ম চালু করেছিলেন সে উদ্দেশ্য বিফলে যায়নি। ড্যান প্রাইস একদিন বন্ধু ভ্যালেরির সঙ্গে পাহাড়ে হাইকিং করতে গিয়ে এক অস্বস্তিকর সত্য বুঝতে পারেন। হাটতে হাটতে ভ্যালেরি বলছিলেন, তার বাড়িওয়ালা হঠাৎই ২০০ ডলার বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে, আর তার ফলে ভ্যালেরির সবকিছুর খরচ বেড়ে গেছে। শুনে প্রাইসের রাগ হলো। প্রাইসের তৎকালীন বান্ধবী ভ্যালেরি ১১ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, এর মধ্যে দুই দফা ইরাকে কাজ করেছেন। এখন দুইটি প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টা করে কাজ করেন, তবু সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন ভ্যালেরি। প্রাইস বলেন, "ও ছিল এমন একজন যে নিজেকে কাজ, সম্মান আর কঠোর পরিশ্রম এসব দিয়ে একজন মানুষকে বিচার করে।" যদিও সেসময় ভ্যালেরি বছরে ৪০ হাজার ডলারের মত রোজগার করতো, কিন্তু সিয়াটলে ভদ্রস্থ একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকার জন্য সে রোজগার একেবারে যথেষ্ঠ ছিল না। পৃথিবীর মানুষে মানুষে অসমতার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রাইসের তখন ভীষণ রাগ লাগছিল। আর তক্ষুনি হঠাৎ তার মনে হয়েছিল সে নিজেও ওই অসমতার অংশ। ৩১ বছর বয়সেই প্রাইস তখন একজন মিলিয়নিয়ার। কৈশোরে বানানো তার কোম্পানি গ্র্যাভিটি পেমেন্টসের তখন প্রায় দুই হাজার গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ডলার। প্রাইস যদিও নিজে বছরে এক মিলিয়ন ডলার রোজগার করত, ভ্যালেরি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তার নিজের প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মীদের অনেকেই হয়ত অর্থাভাবে কষ্ট করছেন। সেই মুহূর্তে প্রাইস অবস্থা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। আরো পড়ুন: চাকরিতে বস 'ভয়াবহ' হলে কী করবেন? বসের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক বাড়াতে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি কর্মচারীর প্রেমে পড়ে চাকরি গেল ম্যাকডোনাল্ডস বসের মেশিন হবে আপনার বস, ছাঁটাই করবে চাকুরি থেকে গ্র্যাভিটির অনুষ্ঠানে ড্যান প্রাইস আইডাহোর গ্রামাঞ্চলে এক খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রাইস নম্র, ভদ্র এবং কর্মীদের প্রতি সদয় একজন মানুষ। ক্রমে তিনি মার্কিন সমাজে অর্থনৈতিক অসমতার বিরুদ্ধে হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা। "কারো চাকরী চলে যাচ্ছে, কেউ খালি পেটে ঘুমাতে যাচ্ছে কিংবা কেউ অন্যের কাছ থেকে বেআইনি সুবিধা নিচ্ছে, শুধুমাত্র যাতে আরেকজন নিউইয়র্কে বিশাল কোন টাওয়ারে আরেকটা তলা বাড়াতে পারে কিংবা সোনার চেয়ারে বসতে পারে।" "মানুষের লোভকে নানান নাম দিয়ে আমরা মহিমা-মণ্ডিত করে তুলে ধরি। এর সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ হচ্ছে ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা ধনীদের তালিকা। অর্থবিত্তে বিল গেটস জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে গেছে---তাতে কার কী এসে যায়?!" মায়ের সঙ্গে ড্যান প্রাইস ১৯৯৫ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক মানুষ মিলে দেশটির এক শতাংশ ধনী মানুষের চেয়ে বেশি রোজগার করতেন। কিন্তু ওই বছর প্রথমবারের মত দেখা যায়, এক শতাংশ ধনীরা দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের চেয়ে বেশি আয় করেন। কিন্তু এর পর থেকে সেই বিভাজন বেড়েই চলেছে। বিবিসি বাংলার অন্যান খবর: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সই করার পর এখন তালেবান কী করবে? বাংলাদেশে আটটি রং ফর্সাকারী ক্রিম নিষিদ্ধ ঢাকার বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যপরীক্ষা: বিবিসি সংবাদদাতাদের চোখে ধরা যাক আপনি করাচীতে থাকা এক বাঙালি ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সিইও অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা একজন সাধারণ শ্রমিকের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বেতন পেতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই পাল্টে গেছে যে এখন সাধারণ শ্রমিকের তুলনায় অন্তত ৩০০গুণ বেশি বেতন পান একজন শ্রমিক। ব্রিটেনের প্রধান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা এখন গড়ে শ্রমিকদের তুলনায় ১১৭ গুণ বেশি বেতন পান। পাহাড়ে বসে মাথায় নতুন 'আইডিয়া' ভ্যালেরির সাথে পাহাড় চূড়ায় বসে প্রাইসের মাথায় এক দারুণ আইডিয়া এলো। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেমান এবং অ্যাঙ্গাস ডিটনের করা এক গবেষণার শিরোনাম ছিলো 'একজন অ্যামেরিকান নাগরিকের সুখী হবার জন্য কত টাকা প্রয়োজন'—সেটা পড়া ছিলো প্রাইসের। তৎক্ষণাৎ তিনি ভ্যালেরিকে প্রতিশ্রুতি দেন, নিজের প্রতিষ্ঠানে তিনি বেতন বৈষম্য কমাবেন, এবং গ্র্যাভিটির কর্মীদের নূন্যতম বেতন বাড়াবেন। হিসেব-নিকেশ করে প্রাইস যে অঙ্কে পৌঁছুলেন, সেটা ছিল ৭০ হাজার ডলার। রোজিটা বার্লো দেখা গেল সেজন্য কেবল নিজের বেতন কমালেই হচ্ছে না, সঙ্গে নিজের দুইটি বাড়ি বন্ধক রাখতে হচ্ছে, পুঁজিবাজারে তার সব শেয়ার এবং নিজের সঞ্চিত সব অর্থ কোম্পানিতে ঢালতে হচ্ছে। একদিন সব কর্মীকে ডেকে তিনি নিজের পরিকল্পনা জানালেন। প্রাইস আশা করেছিলেন, সবাই খুশী হবে। কিন্তু প্রথম ঘোষণার পর দেখা গেল, ঘটনা উল্টো ঘটছে। ঘটনা পুরোপুরি সবাইকে বোঝানোর জন্য কয়েকবার বিষয়টি খোলাসা করতে হয়েছিল তাকে। পাঁচ বছর পর ড্যান বলছেন, তিনি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদের গবেষণার একটি মূল ব্যাপার ভুলে গিয়েছিলেন। গবেষণার ফলে দেখানো হয়েছিল, সুখী হবার জন্য ৭৫ হাজার ডলার দরকার ছিলো সবার। কিন্তু তারপরেও নতুন নিয়মে প্রতিষ্ঠানের এক তৃতীয়াংশ লোকের বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। গ্র্যাভিটি বদলে যায় এরপর নতুন নিয়ম চালুর পর গ্র্যাভিটি আমূল বদলে যায়। লোকবল দ্বিগুণ হয়েছে গত পাঁচবছরে, এবং প্রতিষ্ঠানের আয়ের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার কোটি ডলারের ওপরে উঠেছে। কিন্তু এসব আর্থিক হিসাবের বাইরেও পরিবর্তন হয়েছে। প্রাইস বলেন, "নতুন নিয়ম চালুর আগে বছরে কর্মীদের গড়ে বাচ্চা নেয়ার হার ছিল শূন্য থেকে দুইজন। কিন্তু গত সাড়ে বছরে আমাদের কোম্পানির কর্মীদের ৪০ টির বেশি শিশু জন্ম নিয়েছে।" গ্র্যাভিটির কর্মীরা গাড়ী উপহার দেয় প্রাইসকে প্রতিষ্ঠানের ১০ শতাংশের বেশি কর্মী যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল শহরে নিজেরা বাড়ি কিনেছেন। পুরনো নিয়মে এ হার ছিল এক শতাংশের কম। নিজেদের পেনশন ফান্ডে কর্মীদের রাখা সঞ্চয়ের হার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে, এবং ৭০ শতাংশের বেশি কর্মী নিজেদের ব্যক্তিগত ঋণ শোধ করেছেন এই সময়ের মধ্যে। সমালোচনা কিন্তু এসব অগ্রগতির পরেও প্রাইসকে বহু সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তার সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়ে শত শত লোকের লেখা চিঠি পেয়েছেন প্রাইস, 'অ্যামেরিকার সেরা বস' আখ্যা দিয়ে বহু ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে। তবে, গ্র্যাভিটির অনেক গ্রাহক হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়ে প্রাইসের উদ্যোগকে 'রাজনৈতিক পদক্ষেপ' বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ঐ সময়ে সিয়াটলে নূন্যতম মজুরী ১৫ ডলার করা নিয়ে বিতর্ক চলছিল, বলা হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রে সেটাই হবে সবোর্চ্চ নূন্যতম মজুরী। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা তাতে রাজি হচ্ছিল না, তাদের দাবি এর ফলে তারা ব্যবসা হারাবেন। প্রাইসের প্রিয় রেডিও প্রেজেন্টার ও ডানপন্থী রাজনীতি বিশ্লেষক রাশ লিমবাগ, ছোটবেলায় রোজ যার অনুষ্ঠান মন দিয়ে শুনতেন, তিনি তাকে 'কম্যুনিস্ট' আখ্যা দেন, এবং ভবিষ্যৎ বাণী করেন যে প্রাইসের প্রকল্প ব্যর্থ হবে। গ্র্যাভিটির দুইজন সিনিয়র কর্মীও পদত্যাগ করেন। জুনিয়র কর্মীদের বেতন রাতারাতি বেড়ে যাওয়া তারা মেনে নিতে পারেননি, তাদের বক্তব্য ছিল এর ফলে কর্মীরা অলস হয়ে পড়বে এবং কোম্পানি ক্রমে অলাভজনক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি রোজিটা বার্লো গ্র্যাভিটির বিপণন বিভাগের পরিচালক, তিনি বলছেন, বেতন বাড়ার পর থেকে জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে উদ্যম বহুগুণ বেড়েছে। সিনিয়র কর্মীদের কাজের ভার কমেছে, কাজের চাপ অনেক কমেছে, এবং তারা এখন বছরের সব ছুটি কাটিয়ে ফেলার সাহস করতে পারেন। প্রাইস একজন কর্মীর গল্প বলছিলেন, যিনি রোজ দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অফিসে আসতেন, কিন্তু তার গাড়ির টায়ার ফেটে যেতে পারে এই আশংকায় মানসিক চাপে ভুগতেন, আবার দুর্বল টায়ার বদলে ফেলার মত যথেষ্ট টাকাকড়িও ছিল না তার। "কিন্তু নতুন নিয়মে যখন তার বেতন বাড়লো, এরপর সে অফিসের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। এখন সে নিজের স্বাস্থ্যের যত্নে অনেক বেশি খরচ করে, রোজ ব্যয়াম করে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খায়।" প্রাইস বলছেন, এমন আরো অনেক উদাহরণ আছে। "বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন কর্মীদের স্বাধীনতা অনেক বেড়ে গেল, আর এ কারণেই গ্র্যাভিটি এত ভালো করেছে। কারণ টাকাকড়ি নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলে লোকের কঠোর পরিশ্রম করার সামর্থ্য বাড়ে।" এত উদার ছিলেন না প্রাইস বার্লো বলছেন প্রাইস এত উদার ছিলো না আগে। ২০০৮ সালে যখন বৈশ্বিক মন্দা শুরু হল, তখন প্রাইস টাকাকড়ি সঞ্চয় করতে চাইত। সে সময় গ্র্যাভিটির রোজগার ২০ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের ৩৫জন কর্মীর মধ্যে ১২জনকেই ছাটাই করা হয়েছিল। যদিও কয়েক মাস পরেই আবার লাভের মুখ দেখতে শুরু করে গ্র্যাভিটি, কিন্তু প্রাইস তখনো খরচ বাঁচাতে কম বেতন দিতেন। বার্লো নিজে বাড়তি রোজগারের জন্য নিয়মিত অফিসের পর ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করতেন। কিন্তু পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাবার পর প্রাইস তার বেতন বাড়িয়ে ৪০ হাজার ডলার করে দেন। কিন্তু মূল পরিবর্তন আনার জন্য প্রাইসের আরো কয়েক বছর লেগেছিল। "অনেকেই সমস্যা সমাধানের জন্য আমার কাছে আসতো না, বলতো না কম বেতনের জন্য কত সমস্যায় রয়েছে তারা।" তবে ২০১৫ সালের আগেই গ্র্যাভিটি কর্মীদের ২০ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছিল, কিন্তু ভ্যালেরির সাথে পাহাড় চূড়ায় সেই কথোপকথনের আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ ভাবনা চিন্তাই করছিলেন। প্রাইসের উদ্যোগে উৎসাহী হয়েছেন অনেকেই। আর প্রাইসের উদ্যোগে চমকিত কর্মীরা তাকেও চমকে দিয়েছে অনেকবার। যেহেতু কর্মীদের বেতন বাড়ানোর জন্য প্রাইসকে তার বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে দিতে হয়েছে, কর্মীরা একবার তাকে একটি গাড়ি কিনে উপহার দিয়েছিলেন। প্রাইস বলছেন, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের মত বিত্তবান হতে ইচ্ছে করে তারও। "ফোর্বস এবং টাইম ম্যাগাজিনের কাভারে নিজের চেহারা দেখতে ইচ্ছা করে আমারো। সব কিছু হঠাৎ ছেড়ে দেয়া সহজ কাজ নয়, কিন্তু আমার জীবন আগের চেয়ে অনেক ভালো এখন।"
বস যখন নিজের বেতন মিলিয়ন ডলার কমিয়ে দিলেন
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
পুতিন ও এরদোয়ান দু’‌হাজার এগারো সালে লিবিয়ার শাসক কর্ণেল গাদাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হবার পর দেশটির রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়েছে, চলছে গৃহযুদ্ধ – যাতে জড়িয়ে পড়েছে বিদেশী শক্তিগুলোও। ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সেরাজের সরকার ক্ষমতাসীন কিন্তু তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে লিবিয়ার নানা অংশ নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। গত বছর থেকেই লিবিয়ার পূর্বাংশ নিয়ন্ত্রণকারী সামরিক নেতা জেনারেল খলিফা হাফতার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ত্রিপোলি দখল করার – কিন্তু তার বাহিনী এখন ত্রিপোলির সরকারের আক্রমণের মুখে পিছু হটছে। ত্রিপোলি সরকারের সমর্থনে এখন সেনা সহায়তা দিচ্ছে তুরস্ক, এবং এই সৈন্যদের মধ্যে আছে সিরিয়ার তুরস্ক-সমর্থিত বাহিনীর যোদ্ধারা । অন্যদিকে জেনারেল হাফতারের বাহিনীতে আছে কয়েক হাজার রুশ ভাড়াটে সৈন্য। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে দেশটির বেসামরিক জনগণ আগামীতে একটা শান্তিপূর্ণ সময় প্রত্যাশা করতে পারে। দেশটির রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়েছে। একসময় মনে হচ্ছিল লিবিয়ার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল অথচ এমনকি কর্ণেল গাদাফি পতনের পরও একটা সময় পর্যন্ত মনে হচ্ছিল - দেশটির সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তেল এবং গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ লিবিয়া। পর্যটকদের জন্যও দেশটি হতে পারতো আকর্ষণীয় গন্তব্য। লিবিয়ার আছে ২০০০ কিলোমিটার ভূমধ্যসাগরতীবর্তী সৈকত। সেখানে রোমান যুগের এমন সব পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে – যা ইতালির সমকক্ষ বলে দাবি করা চলে। জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশটির পক্ষে তার নাগরিকদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নত জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করা অসম্ভব নয়। কিন্তু এখন তাদের এগুলো কিছুই নেই, নেই জীবনের নিরাপত্তাও। কোভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যে দেশটির হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। পশ্চিম লিবিয়ার ২ লক্ষ লোক ইতিমধ্যেই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। লিবিয়ার শহরগুলো এখন এক একটি নগররাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বিদ্রোহী মিলিশিয়ারা যারা গাদাফির শাসকচক্রকে মোকাবিলা করেছিল – তারা তার পতনের পর ক্ষমতার মজা পেয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব এজেন্ডা আছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না। জাতিসংঘের উদ্যোগে কূটনীতিকরা চেষ্টা করেছেন তাদের মধ্যে সংলাপ ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার – কিন্তু তা সফল হয় নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হানান সালেহ বলছেন, গৃহযুদ্ধরত সব পক্ষই বেসামরিক মানুষদের প্রতি একই রকম নির্মম আচরণ করেছে, তবে বিশেষ করে খলিফা হাফতারের বাহিনী এমন সব অত্যাচার-নির্ডাতন চালিয়েছে যা যুদ্ধাপরাধ বলেও বিবেচিত হতে পারে। ত্রিপোলি সমর্থক বাহিনী হটিয়ে দিয়েছে হাফতার সমর্থক বাহিনীকে। বিদেশী শক্তিগুলো লিবিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে লিবিয়ার দ্বিতীয় প্রধান শহর বেনগাজির ইসলামী উগ্রপন্থীদের তাড়িয়ে জেনারেল খলিফা হাফতারের উত্থান ঘটে ২০১৪ সালে। জেনারেল হাফতার লিবিয়ায় সুপরিচিত কর্নেল গাদাফির সাথে তার বৈরিতার জন্য। তিনি নির্বাসিত হিসেবে অনেক বছর আমেরিকা ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে কাটিয়েছেন। এই শহরেই মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর প্রধান দফতর। এখানে বসেই গাদাফির পতনের ছক আঁটতেন জেনারেল হাফতার। এখন তিনি বেনগাজির নিয়ন্ত্রক এবং ত্রিপোলিতে অভিযান চালিয়ে তিনি চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফায়েজ আল সেরাজের সরকারকে উৎখাত করে লিবিয়াকে আবার এক রাষ্ট্রে পরিণত করতে। তখন থেকেই এটা স্পষ্ট ছিল যে এখানে বিদেশী শক্তি জড়িয়ে পড়বে। দেশটির নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নেই । বিদেশী শক্তিগুলো কী চায়? নিয়ন্ত্রণকামীদের কাছে লিবিয়া এক আকর্ষণীয় দেশ। জনসংখ্যা ৭০ লাখেরও কম, কিন্তু আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেল-গ্যাসের রিজার্ভ আছে এখানে। এর অবস্থান ইউরোপের ঠিক উল্টো দিকেই। এখানকার হাইড্রোকার্বন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সরাসরি রপ্তানি হতে পারে। অন্যদিকে উপসাগরীয় এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বী তেল-গ্যাস উৎপাদকদের জাহাজগুলোকে আসতে হয় বিপজ্জনক সমুদ্রপথ দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল সেরাজকে সমর্থন করছে তুরস্ক, কাতার ও ইতালি। জেনারেল হাফতারকে সমর্থন করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডন, মিশর, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য একেক সময় একের রকম রাজনৈতিক সংকেত দিয়েছে। কখনো মি. সেরাজ, কখনো জেনারেল হাফতারকে উৎসাহ দিয়েছে। আবার যখন নাগালে পেয়েছে তখন ইসলামী উগ্রপন্থীদের ওপর বোমা হামলা চালিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো লিবিয়ায় নিজের প্রভাব কায়েম করবেন, ঠিক যেভাবে তিনি সিরিয়ায় করেছেন। ত্রিপোলি সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল সেরাজ (বামে) ও জেনারেল খলিফা হাফতার। লিবিয়ার সাথে সিরিয়ার অনেক মিল দেখা যাচ্ছে লিবিয়ার যুদ্ধের সাথে সিরিয়ার অনেক মিল দেখা যাচ্ছে। সিরিয়ায় যেমন, ঠিক তেমনি লিবিয়ারও ভবিষ্যৎ ভাগ্যের নিয়ন্তা হয়ে উঠছেন সেই একই বিদেশী নেতারা। অনেক দিক থেকেই সিরিয়ার প্রক্সি যুদ্ধের ধারাবাহিকতাতেই যেন চলছে লিবিয়ার যুদ্ধ। তুরস্ক এবং রাশিয়া – দু পক্ষই লিবিয়ায় নিয়ে গেছে সিরিয়ান মিলিশিয়াদের – যারা নিজেদের দেশের এক দশকব্যাপি গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দক্ষ যোদ্ধা হয়ে উঠেছে। এটা হতেই পারে যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় করা চুক্তিগুলোরই একটা সংস্করণ লিবিয়ার ওপর প্রয়োগ করছেন। জেনারেল হাফতারের পক্ষে যে রাশিয়ান ভাড়াটে সৈন্যরা যুদ্ধ করছে তারা এসেছে ওয়াগনার গোষ্ঠী নামে একটি সংগঠন থেকে। এটি চালান প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। এই ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদেরকে সিরিয়াতেো ব্যবহার করা হয়েছে। এটা লক্ষ্য করার বিষয় যে ত্রিপোলি থেকে রাশিয়ানদের প্রত্যাহার করে নেবার সময় তুরস্ক তাদের সামরিক ড্রোনগুলো ব্যবহার করে তাদের হয়রানি করেনি। তা ছাড়া রাশিয়ানরা লিবিয়াতে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানও লিবিয়ায় নিয়ে গেছে। দু’‌হাজার এগারো সালে ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হন লিবিয়ার শাসক কর্ণেল গাদাফি। পরবর্তী বড় যুদ্ধ তাহলে কী? প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান হয়তো জেনারেল হাফতারের ত্রিপোলি অভিযান বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন – যাতে তারা যুদ্ধ থেকে পাওয়া সুবিধাগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। লিবিয়ার ভেঙে পড়া নিয়ে একটি বই লিখেছেন জার্মান শিক্ষাবিদ ওলফ্রাম লাশার । তিনি বলছেন, হয়তো দুটি বিদেশী শক্তি লিবিয়ায় নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের সীমারেখা চিহ্নিত করে নিয়েছে। এমনও হতে পারে যে এই ব্যবস্থাটা হয়তো দীর্ঘদিন জারি থাকবে। তবে লিবিয়ায় সক্রিয় অন্য বিদেশী শক্তিগুলো এবং লিবিয়ার জনগণ এটা মেনে নেবে কিনা তাতে সন্দেহ আছে। হয়তো ত্রিপোলি থেকে ৫৫ মাইল দূরের তারহুনা শহরটি নিয়েই হতে পারে পরবর্তী বড় যুদ্ধ। পশ্চিম দিকের এই শহরটি জেনারেল হাফতারের ঘাঁটি, এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করে আল-কানিয়াত নামে একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী যা প্রধানত গাদাফি সরকারের অনুগতদের নিয়ে গড়া। এ মুহূর্তে ত্রিপোলি সরকারের অনুগত বাহিনী তারহুনার দিকে এগুচ্ছে – যারা একসময় ছিল গাদাফি সরকারের বিরোধী। বোঝা যাচ্ছে, লিবিয়ার বিরামহীন গৃহযুদ্ধে গাদ্দাফির সমর্থকদের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
লিবিয়াতেও কি 'সিরিয়ার খেলা' খেলছেন পুতিন আর এরদোয়ান?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বিপিএলের শুরুতে অধিনায়কদের ফটোসেশনে এক দলের অধিনায়ক নেই বিপিএলের খেলা কবে বা বিপিএলের কখন কোন দলের খেলা এনিয়ে কোনো বিজ্ঞাপন বা কোনো প্রচার প্রচারণা চোখে পড়েনি এই ক্রিকেট ভক্তের। যিনি নিয়মিত চোখ রাখেন ক্রিকেটের মাঠে। যে বিপিএল আসর শুরু হয়েছে সেখানে ম্যাচ শুরুর সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল দুপুর সাড়ে ১২টা ও সন্ধ্যা পাঁচটা ২০ মিনিটে। এরপর বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস গণমাধ্যমে জানান, দর্শকের কথা ভেবে সময় পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন ম্যাচ শুরু হয় দুপুর দেড়টা ও সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ নিয়মিত বিকেল সাড়ে তিনটা ও রাত সাড়ে আটটায় শুরু হয়। এটা একটা দর্শক টানার উপায়ও বলা যায়, যেহেতু পুরো মাসজুড়ে চলা একটি টুর্নামেন্টে কর্মজীবী দর্শক টানার ক্ষেত্রে শুধু ক্রিকেট যে উপকরণ হবে সেটা বলা মুশকিল, এক্ষেত্র ক্রিকেটের বাইরে ম্যাচ শুরুর সময় ও বিনোদনের উপকরণগুলো বেশ কাজে দেয়। আবার আইপিএল যেহেতু আটটি ভেন্যুতে হয় সেক্ষেত্রে প্রতিটি ভেন্যুতে নির্দিষ্ট কিছু ম্যাচ হয় তাই দর্শক উপচে পড়ে ভারতের সেই রাজ্যের ভেন্যুতে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ভেন্যু তিনটি, যেখানে ৪৬টি ম্যাচের ২৮টি ম্যাচ হবে একই ভেন্যুতে। এসব কিছুই দর্শক ধরে রাখার একটা অন্তরায়। ক্রিকেট নিয়ে কিছু খবর: নিজের বয়স নিয়ে যা বললেন আফগান বোলার রশিদ খান আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের নেপথ্যে ক্রিকেট বিনোদনের খোরাক মেটাতে ব্যর্থ বিপিএল? দর্শক ধরে রাখাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একমাত্র লক্ষ্য নয়। কারণ যে অর্থ বিনিয়োগ করা হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে, তার সিংহভাগ উঠে আসে টেলিভিশন স্বত্ত্ব ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের কপিরাইট বিক্রি করে। তবে কখনো কখনো সেই প্রচার মাধ্যমের সম্প্রচারের মান নিয়েও সমালোচনা শোনা যায়, কারণ এই ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ অন্যান্য লিগ যেমন বিগ ব্যাশ, আইপিএল এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তান সুপার লিগ বা টি-টেনের মতো টুর্নামেন্ট থেকেও পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক নিজামুদ্দিন চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, গত আসরে সম্প্রচারে যেসব গাফেলতি বা ভুল ছিল সেগুলো এবার থাকছে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের অধীনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়। এনিয়ে মোট দুটো বোর্ড বিপিএল চালাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি, সবগুলো বিপিএল সাংবাদিক হিসেবে কাভার করেছেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিপিএল নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট চিন্তা-ভাবনা ছিল না। একটা সময় বিপিএল এর কর্মকর্তারা বলতেন বিপিএল থেকে তারা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার তুলে আনতে চান। আবার গেল দুই মৌসুম ধরে বিপিএল শুরুর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড ও বিপিএল সংশ্লিষ্টরা বলেন ক্রিকেটার তুলে আনার মূল মঞ্চ এটা নয়। মি: রনি মনে করেন, বিগ ব্যাশ বা আইপিএলের একটা ব্র্যান্ড ইমেজ আছে যেটা বিপিএল কখনোই ধরতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের যখন একেকটি মৌসুম আসে তখন গণমাধ্যমে একই কথাগুলো ঘুরে ফিরে আসে। যেমন ভেন্যু বৃদ্ধি করা, মানসম্মত আন্তর্জতিক ক্রিকেটারের অভাব, দর্শককে টানার মতো উপকরণ না থাকা, টেলিভিশন সম্প্রচার নিয়ে নানা অভিযোগ। কিন্তু এসব সমালোচনা এবং তা নিয়ে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ যতদিন বিপিএল চলে ঠিক ততদিনই থাকে, এরপর বছরব্যাপী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিপিএল নিয়ে কোনো আলাদা পরিকল্পনা দেখা যায় না কিছু বোর্ড বৈঠক ও তারিখ ঠিক করা ছাড়া। আরিফুল ইসলাম রনি বলেন, "ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি কখনো বিপিএল।" এর একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিপিএল কোনদিকে আগাচ্ছে তার কোনো দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি নেই। বিপিএল মানেই একটা নেতিবাচক ভাবনা চলে আসে দর্শক ও ক্রিকেট নিয়ে যারা ভাবেন তাদের মনে। তবে মি: রনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সম্ভাবনা ও ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে বলেন, কিছু ক্রিকেটার আছে যারা মানসম্পন্ন ঘরোয়া লেভেলে ওদের ফাইন টিউনিং বিপিএল থেকে হয়। তবে ক্রিকেটের উন্নতির আরো বড় একটা মঞ্চ হতে পারতো। যেটা আদতে সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে লাভ করার সম্ভাবনা নেই বলছে বিসিবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের লক্ষ্য ও বাস্তবতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ যখন শুরু হয় তখনকার সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। বিপিএল নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রাথমিক ভাবনা জানতে তার সাথে কথা বলি। তিনি বলেন, একমাত্র মাঠ নিয়ে যে সংকট ছিল সেটায় খানিকটা উন্নতি হয়েছে। মি: লিপু মনে করেন, ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো একেবারেই সফল হয়নি বলে কিছু জায়গায়। "ফ্র্যাঞ্চাইজির কাজ ছিল তারা তাদের স্ব স্ব অঞ্চলের ক্রিকেট এগিয়ে নিতে কিছু পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, কিন্তু সেটা দেখা যায়নি। তাদের কাজ হওয়ার কথা সারা বছর জুড়ে।" কিন্তু বাস্তবতা বলছে ফ্র্যাঞ্চাইজগুলোর কাজ থাকে বিপিএলের মাসে এবং যেদিন খেলোয়াড় নিলাম হয় সেদিন। বিপিএল আইপিএলের যে ব্যবসায়িক মডেল সে অনুযায়ীই আসার কথা কিন্তু বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে সেটা পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন লিপু। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, "স্পন্সরশিপ থেকে দলগুলোর লাভবান হয়নি, ক্ষেত্র বিশেষে দুইএকটা দল লাভ করেছে কিন্তু অধিকাংশ দল পকেট থেকে ভর্তুকি দিয়েছে। বাকিটা ভর্তুকি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।" তবে বিপিএল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য অর্থ উপার্জনের একটা বড় জায়গা তৈরি করেছে বলে মনে করেন মি: লিপু। "বিদেশি ক্রিকেটারদের সাথে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের আয়ের একটা বৈষম্য আছে। সেটা ঘোচানোর ক্ষেত্রে বিপিএল কাজ করেছে বেশ। কারণ বাংলাদেশের যে ৫০ থেকে ৬০জন ক্রিকেটার ভালো খেলে, তারা সবাই কোনোভাবেই জাতীয় দলে খেলতে পারবেন না, সেইক্ষেত্রে বিপিএল একটা জায়গা যেখানে তারা আয় রোজগার করতে পারে।" বিপিএলের প্রথম দিন ফাঁকা গ্যালারি আজ সপ্তম আসরে লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আর্থিক লাভের সম্ভাবনা নেই বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়ার কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস। মি: জালাল ইউনুস বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এটা জেনেই সবাই এসেছে, এটা একটা বিশেষ এডিশন। এখানে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজ নেই, আগেও যারা ছিলেন তারাও যে খুব লাভ করতো তা নয়।" জালাল ইউনুস বলছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অর্থ উপার্জনের একটা বড় উৎস বিপিএল। আমরা সম্প্রচার স্বত্ত্ব বিক্রি করে আয় করি। তবে মি: জালাল ইউনুস মনে করেন, প্রচার প্রচারণার কোনো কমতি নেই। যেসব বিভাগের নাম নিয়ে খেলছে, তাদের বিভাগের সমর্থন আহ্বান করেছেন তিনি। "এর আগে ছুটির দিন বাদে খুব বেশি দর্শক হতো না, তবে ঢাকায় আমরা তেমন দর্শক আসা করি না। সপ্তাহের মাঝে যেসব খেলা হয় আট-দশ হাজার দর্শক যথেষ্ট।" লাভের প্রশ্নে মুখোমুখি বোর্ড ও ফ্র্যাঞ্চাইজ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন আব্দুল আউয়াল বুলু। তার সেই দল এখন আর বিপিএলে খেলে না, এমনকি বিপিএলে বরিশালের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো দলই নেই এখন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা কখনো লাভের চিন্তাই করিনি, এমনকি বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। মালিকদের মধ্যে অনেকে আছেন শখের বশে এটা করেন।" তার মতে, বিপিএল এখনো ওভাবে পৃষ্ঠপোষক পায়নি কখনো। অধিকাংশ মালিকদের ক্ষতির অঙ্ক গুণতে হয়েছে বলছেন মি: বুলু। "আমরা দুই বছর এই দলের দায়িত্বে ছিলাম। অনেক ক্রিকেটারকে আমরা আনতে চেয়েছি কিন্তু তারা অনেকেই আসতে চাননা। যেমন বিগ ব্যাশ হয়, আবার দুবাইতে একটা প্রোগ্রাম (সম্প্রতি শেষ হওয়া টি-টেন) হচ্ছে।" এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে বিপিএলের লভ্যাংশ থেকে যে আয় হয় সেটার ভাগ চায় ফ্র্যাঞ্চাইজগুলোর মালিকরা। বিপিএলের চলতি আসরে যে ফ্র্যাঞ্চাইজ থাকবে না এটা যেদিন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সেদিন তিনি বলেন, "রেভেনিউ শেয়ার'করা সম্ভব নয়। আমাদের ৮০ কোটি টাকা দিক, আমরা ৪০ কোটি দিয়ে দেব। আগে ৮ কোটি টাকা করে নিত। আমরা সাত কোটি ছেড়েই দিয়েছি। মাত্র এক কোটি নিচ্ছি।" বিবিসি বাংলায় আরো যা পড়তে পারেন: হেগের আদালতে শুনানি শুরু, রোহিঙ্গা শিবিরে দোয়া যুক্তরাজ্য নির্বাচন: ইসলাম ও ইহুদি বিদ্বেষ যখন ইস্যু ১৫ মাসের জন্য বাংলাদেশে এসে ৫০ বছর কাটালেন
বিপিএল: বাণিজ্য ও ক্রিকেটের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে?
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন বিকালে ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে সেই দলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যেভাবে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের উত্থান নিয়ে একটি বই লিখেছেন লেখক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলছেন, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হওয়ার পরে ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরাম খান এবং খাজা নাজিমুদ্দিন। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী যে প্রোগ্রেসিভ [উদারপন্থী) নেতারা ছিলেন, তারা তখন সেখানে নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোঘলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা চিন্তা করছিলেন। কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে যুক্ত হন। তখন টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করার কারণে শূন্য হওয়া একটি উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক। কিন্তু তাদের দুজনের নির্বাচনী ফলাফলই অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তখন তারাও এসে এই মুসলিম কর্মীদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবতে শুরু করেন। তারা একটি সভা ডাকেন। সেই সভা ডাকার প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান। কিন্তু সেই সভা করার জন্য কোন অডিটোরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহবান জানান। সেখানেই ২৩শে জুন বিকালে আড়াইশো-তিনশো লোকের উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় 'নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ', যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আরো পড়ুন: শেখ হাসিনা যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হলেন সমালোচনা সত্ত্বেও শেখ হাসিনায় আস্থা কেন পশ্চিমাদের? ফিরে দেখা : ৬৮ বছরে আওয়ামী লীগের উত্থানপতন বিশ্লেষণ: যে কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী যারা ছিলেন নবগঠিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নতুন দল গঠনের পর মওলানা ভাসানীকে দায়িত্ব দেয়া হয় একটি নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করার জন্য। তিনি অন্যদের সাথে পরামর্শ করে একটি কমিটি ঘোষণা করেন। সেই নতুন কমিটির সভাপতি হলে মওলানা ভাসানী। সহ-সভাপতি হলেন আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আহমেদ আলী খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান। সাধারণ সম্পাদক হলেন শামসুল হক। ট্রেজারার হন ইয়ার মোহাম্মদ খান, যার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে প্রথম সভার আয়োজন হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে আটক থাকলেও তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এভাবেই প্রথম ৪০ জনের কমিটি গঠিত হয়। তবে পরবর্তীতে তাদের অনেকে আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকেননি। পরের দিন, ২৪শে জুন আরমানিটোলা ময়দানে একটি জনসভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম লীগের কর্মীরা সেই সভায় হামলা করেছিলেন। লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ''অলি আহাদের বইতে একটি ভাষ্য পাওয়া যায় যে, রোজ গার্ডেনের সভায় কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন এ কে ফজলুল হক। তিনি তখন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল পদ)। কিন্তু সরকারি পদে থাকার কারণে তিনি কিছুক্ষণ পরেই সেখান থেকে চলে যান।'' বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: ইরানের ওপর 'গুরুতর' নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ট্রাম্পের ট্রাম্পের কাছ থেকে 'চমৎকার চিঠি' পেয়েছেন কিম জং-আন মাদ্রাসা নয়, সাধারণ শিক্ষা থেকেই জঙ্গি হয়েছে বেশি অ্যালার্জির কারণে আজ আমি বিউটি ফার্মের মালিক আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে দলের নামের পরিবর্তন লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ''দলের নামের সঙ্গে মুসলিম শব্দটি থাকায় পরবর্তীতে কেউ কেউ আপত্তি করছিলেন। এ নিয়ে দলে বেশ একটি বিরোধ তৈরি হয়েছিল, যে মুসলিম শব্দটি থাকবে নাকি থাকবে না।'' তখন হিন্দু এবং মুসলিম আসনে আলাদাভাবে নির্বাচন হতো। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় একটা সমঝোতা হয়েছিল যে, এই দলটি একটি অসাম্প্রদায়িক দল হবে। ওই নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পায় যুক্তফ্রন্ট, যা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল, পাকিস্তান খেলাফত পার্টি আর নেজামে ইসলামী পার্টির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। আওয়ামী মুসলিম লীগ পেয়েছিল ১৪৩টি আসন। যুক্তফ্রন্টের প্রধান তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ''যদিও মওলানা ভাসানী দলকে অসাম্প্রদায়িক করতে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়ার জন্য জোর দিচ্ছিলেন, কিন্তু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চাইছিলেন যে মুসলিম শব্দটি থাকুন। কারণ তার ভয় ছিল, এটা বাদ হলে পশ্চিম পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা কমে যাবে,'' বলছেন মি. আহমদ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ আওয়ামী মুসলিম লীগে যে কাউন্সিল হয়, সেখানে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। ফলে অমুসলিমরাও এই দলে যোগ দেয়ার সুযোগ পান। তবে পূর্ব পাকিস্তান শব্দ দুইটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার হতে শুরু করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের প্রথম ভাঙন মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ''১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।'' পরবর্তীতে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মত-পার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে এই রাজনৈতিক দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়। লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ''তখন আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সরকারে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কয়েকটি সামরিক চুক্তি হয়। সিয়াটো এবং সেন্টো সামরিক জোটে পাকিস্তান সদস্য ছিল।" "মওলানা ভাসানী এবং দলের মধ্যে থাকা বামপন্থীরা চাপ দিচ্ছিলেন যাতে আওয়ামী লীগ মার্কিন সামরিক জোট থেকে বেরিয়ে আসে। সোহরাওয়াদীকে মার্কিন চুক্তির সমর্থক বলে মনে করা হতো।'' পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি করছিলেন মওলানা ভাসানী, কিন্তু তাতে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী। ওই বিরোধের একটা পর্যায়ে এসে টাঙ্গাইলের কাগমারিতে দলের যে সম্মেলন হয়, সেখানে মওলানা ভাসানীর প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে হেরে যায়। এরপর ১৮ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন মওলানা ভাসানী। সেই বছর ২৫শে জুলাই তিনি ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে অনেক নেতা তার নতুন দলে যোগ দেন, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়ার মোহাম্মদ খানও। তখন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে থাকেন শেখ মুজিবুর রহমান। বড় মেয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমান আওয়ামী লীগ ১৯৬৪ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ আবার পুনর্গঠন করা হয়। লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ''আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে অনুরোধ করেছিলেন শেখ মুজিব। কিন্তু মানিক মিয়া তাতে রাজি হননি, কারণ তিনি লেখালেখি নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। জাস্টিস মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামের সাবেক একজন মন্ত্রীকেও অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনিও সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। '' ''তখন ১৯৬৪ সালের কাউন্সিল সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে পুরোপুরি সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক থেকে যান।'' ''কিন্তু ১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচী ঘোষণা করার পর মাওলানা তর্কবাগীশসহ অনেকেই তার বিরোধিতা করেন।'' ''ওই বছর মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। যারা ছয় দফার বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের অনেক নেতাই আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।'' সেই নেতৃত্বের হাত ধরেই বাংলাদেশ পরবর্তীতে স্বাধীন হয়, বলছেন মি. আহমেদ।
আওয়ামী লীগের ৭১ বছর: যেভাবে জন্ম হয়েছিল দলটির
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ: অসুস্থতা কতটা গুরুতর? আপনাদের দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কেন সামরিক হাসপাতালে? উনি রুটিন চেক-আপের জন্য হাসপাতালে গেছেন। উনি নিয়মিতই যান। হাসপাতাল থেকে উনি কালও চলে আসতে পারেন। দু'এক দিন দেরিও হতে পারে। হাসপাতালের সব বড় বড় কর্মকর্তারা সেখানে উনার দেখাশোনা করছেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল পদমর্যাদার লোকজন। উনার কি কোন বিশেষ শারীরিক অসুবিধা আছে? না, স্বাভাবিক চেক আপ। ব্লাড সুগার, হার্ট, প্রেশার এসব। ব্লাড সেলগুলোও দেখা হচ্ছে। রেগুলার চেক-আপই যদি হবে, উনাকে ভর্তি হতে হলো কেন? আরও পড়ুন: দিল্লিতে এরশাদ: ভারতের কাছে তার গুরুত্ব কী এরশাদের পতন: পর্দার আড়ালে যা ঘটেছিল বাংলাদেশে নির্বাচন: ভারত কি তার কৌশল পাল্টেছে? এরশাদ যেভাবে রাজনীতিতে টিকে গেলেন শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরি এবং এইচ এম এরশাদ। এবারের নির্বাচনেও কি তারা এক নৌকায়? না, উনি প্রায়শই এরকম গিয়ে এক-আধ দিন থাকেন। উনি তো সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ক্যান্টনমেন্ট তারও একটা আস্থার জায়গা। বাসার চেয়ে কম না। উনি সেখানে এক আধ দিন থাইকা আবার চলে আসেন। কবে নাগাদ উনি হাসপাতাল থেকে চলে আসবেন বলে আশা করছেন? দু'এক দিনের মধ্যেই আসবেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তো উনাকে এভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল? (হেসে) দিন তো একভাবে যায় না। সবসময় কি একই রকম যায়? সব সময় তো একই রকম যায় না। অনেকে এটাকে গায়েবি অসুস্থতা বলছেন, এটি তা নয় আসলে? না, অসুস্থতা না। উনি একটু গেছেন, দু্'এক দিন থাকার পর আবার আসবেন। আপনি যদি দু'একদিন পর আমার সঙ্গে কথা বলেন, এটা লাউড এন্ড ক্লিয়ার হবে। আপনি কি উনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন, দলের নেতারা কি উনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন? আমি নিজে তো দুপুরে আসলাম। আবার একটু আগে কথা বলেছি। কোন অসুবিধা নাই তো। যেটা আপনাদের ভাবনা, তা নয়। যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। বিভ্রান্তিকর। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা। উনি জাতীয় নেতা। দলের চেয়ারম্যান। সাবেক রাষ্ট্রপতি। সাবেক সেনা প্রধান। এখন একটা নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। এখন এ ধরনের বক্তব্য আসাটা অনাকাঙ্খিত। আমরা নির্বাচনে আছি। এবং উনি নির্বাচনে গুলশান থেকে, রংপুর থেকে নির্বাচন করবেন। আরও দুটি আসনেও কথা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এবারও কি জাতীয় পার্টিকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া চলছে? আপনারা যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবেন, সেই আলোচনা কি শেষ করে ফেলেছেন? কে কত আসনে নির্বাচন করবেন? আলোচনা খুব স্বাভাবিক এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন। সেরকম কোন প্রতিকুল অবস্থা নেই। আমরা শুরু করেছি। আমরা অনেকদূর এগিয়ে আছি। এটা স্পষ্ট হবে। দু'চারদিনের মধ্যে জানাতে পারবো। আপনাদের ওপর কি সরকারের দিক থেকে এমন কোন চাপ আছে, যে তাদের সঙ্গেই থাকতে হবে, বিএনপি বা আর কারও সঙ্গে যেতে পারবেন না? হ্যাঁ চাপ আছে। সেটা হলো, ভালোবাসার চাপ। আস্থার চাপ। বিশ্বাসের চাপ। সেটা তো উপেক্ষা করা যায় না। আপনি বলছেন যে আপনাদের দলের চেয়ারম্যান ভালো আছেন, তিনি নিজের ইচ্ছাতেই হাসপাতালে গেছেন, তাকে জোর করে সেখানে নেয়া হয়নি? না, না, নেয়া হয়নি। আপনি ভালো থাকবেন। (এরপর উনি ওবায়দুল কাদের সাহেব ফোন করেছেন বলে লাইন কেটে দেন)। যা ঘটেছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। শুরুতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা থাকলেও ৩রা ডিসেম্বর হঠাৎ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির এই সিদ্ধান্ত তখন আওয়ামী লীগ সরকারকে ভীষণ বিপাকে ফেলেছিল। তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচন যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে। এরকম এক পটভূমিতে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে র‍্যাব আটক করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয় ঢাকার পত্রিকায়। তবে র‍্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, তিনি আটক হননি, তাকে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে দলের কোন কোন নেতা তখন দাবি করেছিলেন, এরশাদ অসুস্থ নন। এরপর বেশ কিছুদিন এরশাদকে সামরিক হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ ছিল। তবে 'অসুস্থ' অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও এরশাদকে গলফ খেলতে দেখা গেছে বলেও সেসময় পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি নেতা এরশাদ কেন আবারও হাসপাতালে: যা বলছেন দলের মহাসচিব
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
এককালের 'তলাবিহীন ঝুড়ি' ২০৩৫ সালে হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। পরিবারে বাবা নেই। জায়গা-জমি কিংবা সম্পদও নেই। অগত্যা কৃষি কাজে দিনমজুরিই একমাত্র ভরসা। অন্যের জমিতে আহসান উল্লাহ'র ভাষায় "কামলা দিয়ে" সংসার চালাতে থাকেন তিনি। কিন্তু পঞ্চাশ বছর পর আহসান উল্লাহ এখন এলাকায় বেশ স্বচ্ছল হিসেবে পরিচিত। ১৮ একর জমিতে করছেন আলু চাষ করেন। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন কৃষি বীজের ব্যবসা। মুন্সীগঞ্জ ছাড়িয়ে যেটি বিস্তৃত হয়েছে অন্যান্য জেলাগুলোতেও। আহসান উল্লাহ তার গল্প বলতে শুরু করলেন। "শুরুটা করেছিলাম অল্প কিছু জমি লিজ নেয়ার মাধ্যমে। তখন সরিষা, গম এসব আবাদ হইতো। ৮০ সালের পর শুরু করলাম আলু চাষ। নতুন জাতের আলু'র বীজ, আধুনিক সার ব্যবহার শুরু করলাম। অন্যদের চাইতে ফলন বেশি হইতে থাকলো। লাভও বাড়তে থাকলো। এইভাবে বলতে পারেন তিলেতিলে আজকের এই অবস্থায়।" গত পঞ্চাশ বছরে কৃষক আহসান উল্লাহ'র নিজের যেমন উন্নয়ন হয়েছে তেমনি কৃষি খাতেও নতুন নতুন জাতের ফলন শুরু হয়েছে। গতানুগতিক ধান, গম, আলু, ভুট্টা ছাড়াও ক্যাপসিকাম, ড্রাগন ফল কিংবা স্ট্রবেরির মতো নতুন কৃষি পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়েছে। যেগুলোতে অনেক কৃষক যেমন লাভবান হয়েছেন, তেমনি কর্মসংস্থানও হয়েছে। উৎপাদন বাড়ায় দেশটি এখন খাদ্যেও স্বয়সম্পূর্ণ। যদিও কৃষি নির্ভর অর্থনীতির দেশ হয়েও স্বাধীনতার পরে খাদ্য ঘাটতি ছিলো ব্যাপক। সেই সময়ে দারিদ্র এবং ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণেও বিশ্বে আলোচনায় ছিলো দেশটি। বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য করা হতো 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলে। যে চার নেতা বদলে দিলেন ১৯৪৭-পরবর্তী পূর্ব বাংলার রাজনীতি যে বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ভাষা আন্দোলন কীভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা ছয় দফা ঘোষণা করে যেভাবে নেতা হয়ে ওঠেন শেখ মুজিব বাংলাদেশের অর্থনতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাতের বড় ভূমিকা আছে। যেভাবে বদলেছে অর্থনীতি মোটাদাগে কয়েকটি সূচকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অর্থনীতির চিত্র বোঝা যায়। বিবিএস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিলো মাত্র ২৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেসময় জিডিপি'র আকার ছিলো ৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় মাত্র ১২৯ ডলার। দারিদ্রের হার ৭০ শতাংশ। পঞ্চাশ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে রফতানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২০ সালের হিসেবে যা ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপি আকার ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে বেড়েছে ৩৬৯ গুণ। পরিমাণে যা প্রায় ২৭ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। অর্থাৎ ২,০৬৪ ডলার। দারিদ্রের হার কমে হয়েছে ২০.৫ শতাংশ। একসময় যে দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছেলো এখন বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ভুট্টো যেভাবে পাকিস্তানে ক্ষমতার ভাগ চেয়েছিলেন পঁচিশে মার্চের হত্যাযজ্ঞের পর যেভাবে এল স্বাধীনতার ঘোষণা ইন্দিরা গান্ধী যেদিন তাজউদ্দীনকে প্রবাসে সরকার গঠনের পরামর্শ দিলেন শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভূক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভূক্ত হতে ৩টি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ৩টি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও ৩টি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ সেই সুপারিশ পেয়েছে। জাতিসংঘের ৩টি শর্তের প্রথমটি হচ্ছে, মাথাপিছু আয়। এরপর অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং সবশেষে মানবসম্পদ উন্নয়ন। মাথাপিছু আয়ে জাতিসংঘের শর্ত পূরণে ন্যনতম দরকার এক হাজার ২শ ৩০ ডলার। বাংলাদেশে সেখানে ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলার। অর্থনৈতিক ঝুঁকি কতটা আছে, সেটা নিরূপণে ১০০ স্কোরের মধ্যে ৩২ এর নিচে স্কোর হতে হয়। বাংলাদেশ সেখানে নির্ধারিত মানের চেয়েও ভালো করেছে। অর্থাৎ ২৫.২ স্কোর করেছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন যোগ্যতায় দরকার ৬৬'র উপরে স্কোর। বাংলাদেশ সেখানে পেয়েছে আরো বেশি ৭৩.২ স্কোর। কিন্তু এসব সূচকে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নতি করলো? অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদশকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রফতানি আয় বেড়েছে। রেমিটেন্স বেড়েছে। কৃষি-শিল্পের উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান বেড়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নও হয়েছে। মূলতঃ প্রান্তিক পর্যায়ে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন, রফতানি বৃদ্ধি -সবমিলিয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে। শুরুতে কৃষি খাত এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখলেও ৮০'র দশক থেকে সেখানে মূল ভূমিকা রাখতে শুরু করে শিল্প খাত। আরো নির্দিষ্ট করে বললে তৈরি পোশাক খাত। রফতানি এবং কর্মসংস্থান দুটো ক্ষেত্রেই তৈরি পোশাক খাতের বড় ভূমিকা আছে। বাংলাদেশ রফতানি করে এখন যে আয় করে তার ৮৩ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। অন্যদিকে এ খাতে কাজ করে লাখ লাখ শ্রমিক যাদের সিংহভাগই নারী। তাদেরও জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেছে। ঢাকার অদূরে সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কথা হয় এরকমই একজন শ্রমিক সুলতানার সঙ্গে। উত্তরাঞ্চলের দারিদ্রপীড়িত অঞ্চল থেকে কাজের সন্ধানে ৭ বছর আগে সাভারে আসেন তিনি। পরে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। সুলতানা বলছেন, পোশাক কারখানায় কাজ করেই তার পরিবারে দারিদ্রের অবসান হয়েছে। "যখন গ্রামে ছিলাম, তখন বাবা'র পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না। পরে ঢাকায় এসে গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি নিলাম। সাত বছর পর এখন আমার পরিবার ভালোই আছে। মাসে মাসে টাকা পাঠাই বাড়িতে। কিছু জায়গা কেনা হয়েছে, গরু কেনা হয়েছে। অল্প কিছু টাকাও জমাতে পেরেছি।" সুলতানা'র একটি কন্যা সন্তান আছে। তিনি বলছেন, ভবিষ্যতে তার কন্যা যেনো স্কুলে পড়ালেখা করে ভালোকিছু হতে পারে সেটাই তার মূল লক্ষ্য। এছাড়া ভবিষ্যতে গ্রামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাও আছে তার। "আমি কিছু টাকা জমিয়েছি। আরো কয়েকবছর চাকরি করে আরো কিছু টাকা জমাতে চাই। এরপর গ্রামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সেখানে গিয়ে একটা গরুর খামার দিবো, মুদি দোকান দিবো। নিজেই কিছু করার চেষ্টা করবো।" মানবসম্পদ সূচকে অগ্রগতি শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, বাংলাদেশ গত পঞ্চাশ বছরে মানবসম্পদ সূচকেও গুরুত্বপূণ উন্নতি করেছে। জাতিসংঘের সূচকে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৭৩.২ শতাংশ। এই সূচকের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মূলতঃ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১৫৩ জন। যেটি ২০১৮ সালে এসে প্রতি হাজারে মাত্র ২২ জনে নেমে আসে। এছাড়া বিবিএস ১৯৮১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দিয়েছে প্রতি হাজারে ২শ ১২ জন। যেটি ২০১৮ সালে হয়েছে প্রতি হাজারে ২৯। ১৯৯১ সালে মাতৃ মৃত্যুর হার ছিলে ৪.৭৮ শতাংশ। সেটি এখন ১.৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অপুষ্টি এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেখানে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া এবং সেবা নিতে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সরকারের সঙ্গেও আর্থিক কিংবা অন্যান্য সুবিধা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানবসম্পদ সূচকে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নিরেট অর্থনৈতিক সক্ষমতাও এমনভাবে বেড়েছে যেখানে বিদেশি ঋণ সহায়তা নির্ভর উন্নয়নে অভ্যস্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে ত্রিশ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট পদ্মাসেতু। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেটি গেলো পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তরের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
স্বাধীনতার ৫০ বছর: 'তলাবিহীন ঝুড়ি' থেকে যেভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
প্রিন্স সুলতান বিন তুরকি, মাঝখানে কয়েকজন পশ্চিমা সাক্ষী এই বিষয়ে কথা বলেছেন। এরা গত বছর প্রিন্স সুলতান বিন তুর্কী বিন আব্দুল আজিজের এক সফরের সঙ্গী ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন বিমানে চড়ে তারা ফ্রান্স থেকে মিশরে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রাইভেট জেট বিমান অবতরণ করে সৌদি আরবে। এরপর থেকে যুবরাজের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এই অভিযোগের ব্যাপারে সৌদি সরকার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বিবিসির সংবাদদাতা রেদা আল মাওয়ি বলছেন, ইউরোপে বাস করতেন এমন তিনজন সৌদি যুবরাজ গত দু'বছরে নিখোঁজ হয়েছেন। এরা তিনজনই সৌদি সরকারের সমালোচক ছিলেন। এমন প্রমাণ আছে যে এই তিনজনকেই অপহরণ করা হয়েছে এবং বিমানে করে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে - এবং তার পর থেকে এদের কোন খোঁজখবর পাওয়া যায় নি। জেনেভা শহরের উপকণ্ঠে ২০০৩ সালের ১২ই জুন একজন সৌদি প্রিন্সকে গাড়িতে করে একটি প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। আরো পড়ুন: বিটিআরসি কেন মোবাইলের কলরেট বাড়াতে চায়? শেখ মুজিব হত্যার পর ৩২নং রোডের বাড়ী কেমন ছিল? শেখ মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন প্রিন্স তুরকি বিন বান্দার, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীর সাথে এই প্রিন্সের নাম সুলতান বিন তুরকি বিন আবদুলআজিজ। প্রাসাদটি হচ্ছে তার চাচা প্রয়াত বাদশাহ ফাহদের । আর যিনি এই প্রিন্সকে প্রাতরাশের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তিনি হলেন বাদশাহ ফাহদের প্রিয় পুত্র প্রিন্স আবদুলআজিজ বিন ফাহদ। আবদুলআজিজ সুলতানকে বললেন, সৌদি আরবে ফিরে যেতে - কারণ সুলতান সৌদি নেতৃত্বের যে সমালোচনা করেছেন তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে এবং তার নিষ্পত্তি করতে হবে। সুলতান তা মানলেন না। এর পর প্রিন্স আবদুলআজিজ একটা ফোন করতে ঘরের বাইরে গেলেন। তার সাথেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী শেখ সালেহ আল-শেখ। কয়েক মুহূর্ত পরই ঘরে ঢুকলো মুখোশধারী কয়েকজন লোক। তারা সুলতানকে মারধর করলো, তার হাতে পরিয়ে দিল হাতকড়া। এর পর তার ঘাড়ে ঢুকিয়ে দেয়া হলো একটা ইনজেকশনের সূঁচ। প্রিন্স সউদ বিন সাইফ আল-নাসর সুলতান সংজ্ঞা হারালেন। তাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হলো জেনেভা বিমানবন্দরে। সেখানে অপেক্ষা করছিল একটি বিমান। অনেক বছর পর সুলতান সুইজারল্যান্ডের এক আদালতে এ ঘটনার বর্ণনা দেন। প্রিন্সি সুলতান কি করেছিলেন যে তার পরিবারের লোকেরাই তাকে এভাবে অপহরণ করলো? এর আগের বছর ইউরোপে চিকিৎসার জন্য এসে প্রিন্স সুলতান সৌদি সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড, যুবরাজ ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সমালোচনা করে কিছু সাক্ষাৎকার দেন, এবং কিছু সংস্কারের আহ্বান জানান। সৌদি আরবে ১৯৩২ সালে বাদশাহ আবদুলআজিজ ইবনে সৌদ ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই দেশটি একটি রাজতন্ত্র এবং এখানে ভিন্নমত সহ্য করা হয় না। রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে প্রভাবশালী প্রিন্স তুরকি বিন বান্দার এর আগে জেল খেটেছেন। ছাড়া পাবার পর তিনি প্যারিসে পালিয়ে যান এবং সৌদি আরবে সংস্কার দাবি করে ইউটিউবে ভিডিও ছাড়েন। তখন তার ওপর চাপ দেয়া হয় দেশে ফেরার জন্য। তাকে ফোন করেন ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ আল-সালেম। সেই টেলিফোন আলাপ রেকর্ড করে রাখেন প্রিন্স, এবং পরে তা অনলাইনে প্রকাশ করেন। আলাপটি ছিল এইরকম: "সবাই আপনার প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে। জাযাকআল্লাহ খায়ের।" "আমার ফেরার জন্য? তোমার অফিসাররা যে আমাকে চিঠি লিখেছে 'বেশ্যার সন্তান, তোকে আমরা সুলতান বিন তুরকির মতো টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবো।'" "ওরা আপনার গায়ে হাত দেবে না"- ডেপুটি মন্ত্রী আশ্বাস দিলেন। তুরকি বললেন, "না, ওরা তোমারই লোক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওদের পাঠায়।" প্রিন্স তুরকি ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ভিডিও পোস্ট করেন। তার কিছুদিন পরই তিনি হঠাৎ উধাও হয়ে যান। সৌদি ব্লগার ওয়ায়েল আল-খালাফ বলেন, "পরে আমি একজন কর্মকর্তার কাছে শুনেছি যে তুরকি বিন বান্দার তাদের সাথেই আছেন। তার মানে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে মরক্কোর এক পত্রিকায় দেখেছি তাকে মরক্কোতেই গ্রেফতার করা হয়, এবং সৌদি আরবের অনুরোধে সেথানে পাঠিয়ে দেয়া হয়।" একই সময় প্রিন্স সৌদ বিন সাইফ আল-নাসর নামের আরেক জন যুবরাজেরও একই পরিণতি হয়। তিনি ইউরোপের ক্যাসিনো এবং ব্যয়বহুল হোটেল পছন্দ করতেন। ২০১৪ সালে তিনি সউদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করে টুইট করতে শুরু করেন। তার ভাষায় যেসব সৌদি কর্মকর্তা মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোরসিকে উৎখাত করায় সমর্থন দিয়েছিলেন - তাদের বিচার দাবি করেন তিনি। এর পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আরো দুঃসাহসিক কাজ করেন। বাদশাহ সালমানকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়ে দুটি চিঠি লেখেন এক অজ্ঞাত যুবরাজ, এবং প্রিন্স আল-নাসর তাকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানান। রাজপরিবারে কেউ এর আগে এ কাজ করেন নি, এবং এটা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এর কয়েকদিন পরই তার টুইটার একাউন্টটি নিরব হয়ে যায়। প্রিন্স খালেদ বিন ফারহান নামে আরেকজন ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি যুবরাজ খালেদ বিন ফারহান ২০১৩ সালে জার্মানি পালিয়ে যান। কিন্তু সেখান থেকে তাকে কৌশলে রিয়াদে নিয়ে যায় সম্ভবত সৌদি গোয়েন্দারা - বলেন ব্লগার আল-খালাফ। ইতিমধ্যে বন্দী অবস্থায় প্রিন্স সুলতান অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০১০ সালে রাজপরিবার তাকে আমেরিকার বস্টন শহরে চিকিৎসার জন্য যাবার অনুমতি দেয়। আর সেখান থেকেই প্রিন্স সুইস কোর্টে এক মামলা ঠুকে দেন - এবং তাতে তিনি তাকে অপহরণের জন্য প্রিন্স আবদুলআজিজ বিন ফাহদ, এবং শেখ সালেহ আল-শেখকে দায়ী করেন। প্রিন্স খালেদ তবে সুইস সরকার এ মামলায় তেমন কোন উৎসাহ দেখায় নি। কিভাবে সুইস বিমানবন্দর থেকে তাকে বিমানে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো তার তেমন কোন তদন্তও হয় নি। গত বছর জানুয়ারি মাসে সুলতান ছিলেন প্যারিসের একটি হোটেলে। তিনি কায়রোতে তার পিতাকে দেখতে যাচ্ছিলেন। তখন সৌদি কনস্যুলেট তার যাত্রার জন্য একটি প্রাইভেট জেট বিমান দেবার প্রস্তাব দেয়। ২০০৩ সালের ঘটনা সত্বেও প্রিন্স তা গ্রহণ করেন। তার সাথে ছিলেন তার নিজস্ব ডাক্তার এবং প্রায় ইউরোপীয় ও আমেরিকান দেহরক্ষী সহ ১৮ জন লোক। পরে - নাম প্রকাশ না করার শর্তে - ওই দলের দুজন বর্ণনা করেছেন যে বিমানে কি হয়েছিল। "আমরা একটি বিশাল বিমানে উঠলাম, তার গায়ে সৌদি আরবের নাম লেখা ছিল। আমরা দেখলাম তাতে প্রচুর ক্রু আছেন, এবং তারা সবাই পুরুষ। আমাদের কেমন যেন লাগলো।" "বিমানের ভেতরে মনিটরে দেখা যাচ্ছিল আমরা কায়রো যাচ্ছি। কিন্তু আড়াই ঘন্টা পর মনিটরগুলো অন্ধকার হয়ে গেল।" "প্রিন্স সুলতান ঘুমোচ্ছিলেন, তবে ল্যান্ডিংএর এক ঘন্টা আগে তিনি জেগে উঠলেন। জানলা দিয়ে তাকালেন। তাকে উদ্বিগ্ন মনে হলো।" "আরোহীরা যখন বুঝতে পারলেন যে তারা সৌদি আরবে অবতরণ করতে যাচ্ছেন, তখন সুলতান ককপিটের দরজায় বার বার করাঘাত করতে লাগলেন, সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগলেন। ক্রুদের একজন প্রিন্সের সঙ্গীদের সিটে বসে থাকতে বললো।" অভিযোগের ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করে নি বিমান নামার পর রাইফেলধারী কিছু লোক বিমানটি ঘিরে ফেললো। সৈন্য এবং কেবিন ক্রুরা মিলে সুলতানকে বিমান থেকে টেনে হিঁচড়ে নামালো। তিনি চিৎকার করে তার দলকে বলছিলেন আমেরিকান দূতাবাসে ফোন করতে। প্রিন্স এবং তার চিকিৎসকদের একটি ভিলায় নিয়ে সশস্ত্র প্রহরায় আটকে রাখা হলো। তার সফর সঙ্গীদের তিনদিন হোটেলে আটকে রাখার পর যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হলো। এ ঘটনার পর থেকে প্রিন্স সুলতানের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। এই অপহরণের অভিযোগের ব্যাপারে সৌদি সরকার মন্তব্য করতেও অস্বীকার করে। প্রিন্স খালেদ যিনি এখনো জার্মানিতে আছেন, আশংকা করছেন তাকেও একদিন জোর করে রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হবে। তার কথা, সৌদি রাজপরিবারের সমালোচনা করেছে এমন ওই পরিবারের চারজন সদস্য ইউরোপে ছিল। তিনি বলেন, "তিনজনকে অপহরণ করে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধু আমিই বাকি।" এর পর কি তার পালা? "আমি নিশ্চিত যে তাই। অনেক দিন ধরেই। তারা যদি পারতো এতদিনে কাজটা করেও ফেলতো। আমি খুবই সাবধানে থাকি, তবে এটা আমার স্বাধীনতার মূল্য।"
অপহরণের পর নিখোঁজ তিন সৌদি যুবরাজ: কোথায় এরা?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে নিকি ব্রায়ান্ট এখন যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশনের আশ্রয় নিয়েছেন। বলছিলেন ২৫ বছর বয়সী নিকি ব্রায়ান্ট। তিনি কার্ডিফে একটি জিমের ম্যানেজার। তিনি জানান, শিশু বয়সেই তার পর্নোগ্রাফি দেখা শুরু হয়েছিল। নিকি বলেছেন, পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে পরবর্তী জীবনে সেক্স সম্পর্কে তার মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। একই সাথে নিজের শরীর সম্পর্কে তার যে অনুভূতি ছিল সেটাও "ধ্বংস" হয়ে গেছে। শুধু নিকি একা নন, তার মতো এরকম আরো অনেকেই পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার পর তাদের জীবনের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাজ্যে শিশুদের নিয়ে কাজ করে এরকম একটি দাতব্য সংস্থা প্ল্যান ইউকে এবং ইন্সটিটিউট অফ সাইকোসেক্সুয়াল মেডিসিন শিশুদের ওপর পর্নোগ্রাফির এই প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে পরবর্তীতে কী ধরনের বিপদ হতে পারে সে বিষয়ে স্কুলে পড়ানো উচিত। যুক্তরাজ্যে ওয়েলসের, নিকি ব্রায়ান্ট যে অঞ্চলের, সেখানকার স্থানীয় সরকার বলেছে, কীভাবে পর্নোগ্রাফির মতো বিষয়কে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তারা এখন সেই উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। সারা ব্রিটেনে ২০১৯ সালে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী লোকজনের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৭% পুরুষ এবং ৪৭% নারী বলেছে যে জরিপের আগের মাসে তারা পর্নোগ্রাফি দেখেছে। তবে তাদের বেশিরভাগই বলেছে, পর্নোগ্রাফিতে যে সেক্স দেখানো হয় তার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সেক্সের কোন সম্পর্ক নেই। তিন চতুর্থাংশ নারী পুরুষ বলেছেন, পর্নে যেভাবে সেক্স দেখানো হয় সেটা একেবারেই ভিন্ন। অনেকেই বলেছেন পর্নোগ্রাফি তাদের জীবনের একটি অন্ধকার দিক। আরো পড়তে পারেন: নারীর ওপর পর্নোগ্রাফির কী ধরনের প্রভাব পড়ে? কেরালায় বিয়ের ছবি থেকে পর্নো, স্টুডিও মালিক আটক পর্ন তারকা রন জেরেমির বিরুদ্ধে আরও ধর্ষণ ও যৌন হামলার অভিযোগ জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৬০ শতাংশ এবং পুরুষদের ৪৯ শতাংশ বলেছেন, পর্নোগ্রাফিতে যা দেখানো হয় সেটা "অসম্ভব।" ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে জিম ম্যানেজার নিকি ব্রায়ান্ট বলেন, "আমার মনে হতো সেক্স খুব নোংরা, অপ্রীতিকর এবং বাতিকগ্রস্ত বিষয়। কিন্তু পর্নোগ্রাফিতে যেসব সেক্স দেখানো হয় সেটা খুব পরিকল্পিত, সাজানো গোছানো এবং নিখুঁত।" "পর্নোগ্রাফি দেখলে মনে হয় সেক্স যেন শুধু পুরুষের জন্য। আমার যতোটুকু সেক্সের অভিজ্ঞতা হয়েছে, পর্নোগ্রাফির সঙ্গে তার কোন মিল খুঁজে পাইনি। ফলে আমি ভেবেছিলাম যে আমার হয়তো কোন সমস্যা আছে।" এখন বড় হওয়ার পর নিকি বলছেন, সেক্সের বিষয়ে তিনি কখনো কারো কাছ থেকে "স্বাভাবিক ব্যাখ্যা" পাননি বরং "এবিষয়ে তার অনেক লজ্জা ছিল।" যেভাবে আসক্তির শুরু নিকি ব্রায়ান্ট প্রথম পর্নোগ্রাফি দেখেন যখন তার বয়স ১১। সেটি তিনি দেখেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি সাইটে। কিন্তু সেসময় তিনি বুঝতে পারেননি এই পর্নোগ্রাফি পরে তার জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। "পর্নোগ্রাফিতে নারীকে যেভাবে তুলে ধরা হয় সেটা দেখে মনে হয় নারীরা যেন পুরুষের অনুগত। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর।" নিকি বলেন, "আমি দেখলাম পর্নোগ্রাফিতে আমি যা দেখেছি সেসব আমি আমার জীবনেও অনুকরণ করছি। সেগুলো চেষ্টা করে দেখছি। অভিনয় করছি। কারণ আমি ভেবেছিলাম সেটাই হয়তো ঠিক। পুরুষরা হয়তো আসলে এরকমই চায়।" বাস্তব জীবনের সেক্সের সঙ্গে কোন মিল নেই পর্নোগ্রাফির। পর্নোগ্রাফিতে তিনি যেসব নারীদের দেখতেন তাদের তুলনায় তার নিজের শরীরকে "অস্বাভাবিক" বলে মনে হতো। এজন্য তিনি তার যোনিতে কসমেটিক সার্জারির কথাও ভেবেছিলেন। শেষ পর্যন্ত "খুব বেশি ভীত" হয়ে পড়েছিলেন নিকি। এক পর্যায়ে তিনি পর্নোগ্রাফি দেখা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য তিনি সেক্সুয়াল থেরাপি, যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশনের আশ্রয় নেন। "শিশু কালে আমি যেসব পর্ন দেখেছি সেটা পরবর্তীতে আমার জীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। নিজের শরীর বা সেক্স সম্পর্কে আমার যেসব ধারণা ছিল, পর্নোগ্রাফির কারণে সেসব ধ্বংস হয়ে যায়।" তিনি বলেন, "পর্নোগ্রাফি আমার মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছিল, যার ফলে সেক্স থেকে যেটুকু আনন্দ উপভোগ করতে পারবো বলে আশা করেছিলাম সেটা আমি করতে পরিনি।" "আমি যদি তখনই সেসব দেখা বন্ধ করে না তাহলে আমার জীবনে আরো অনেক হতে পারতো," বলেন তিনি। শিশুদের মধ্যে পর্ন দেখার অভিজ্ঞতা এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ বোর্ড অফ ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন এবিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় অনলাইন পর্নোগ্রাফি থেকে শিশুসহ অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। সমীক্ষাটি পরিচালনা করতে গিয়ে ১,১০০ শিশুর সাথে কথা বলা হয় যাদের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৭। এই জরিপে যা পাওয়া গেছে: ড. কেট হাওয়েলস বলছেন পর্নোগ্রাফি থেকে অনেকেই ভুল শিক্ষা নিয়ে থাকে। মালিক নামের (আসল নাম নয়) আরেকজন বলেছেন তার জীবনেও পর্নোগ্রাফির মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল। তিনি বলেন, ১৭ থেকে ২০ বছর বয়সে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে তিনি হয়তো পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। "এক পর্যায়ে পর্নোগ্রাফি দেখে প্রতিদিন সকালে হস্তমৈথুন করতাম যাতে সারাদিন আমার মধ্যে যৌন উত্তেজনা তৈরি না হয়। পরে এটা আমার যৌন জীবনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। ওসব দেখে সেক্সের ব্যাপারে আমার মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল সেটা বাস্তবসম্মত ছিল না," বলেন মালিক। পর্ন আসক্তি আমার জীবনের অন্ধকার দিক ওয়েনের বয়স এখন ২০। এটা তার আসল নাম নয়। কিশোর বয়সে তিনি পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং এবিষয়ে তিনি এখন অনেক লজ্জিত। তিনি যখন কলেজে পড়েন তখন তার এই আসক্তির শুরু। ওয়েন বলেন, "শুরুটা হয়েছিল সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে দেখা গেল যে এর পেছনে আমার অনেক সময় চলে যাচ্ছে।" "কিছু দিনের জন্য কারো সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল না। তখন আমার আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেসময় পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে আমি বাস্তব জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিলাম।" একঘেয়েমি জীবন ও আত্মবিশ্বাসের অভাব- এই দুটো মিলিয়ে ওয়েন আক্রান্ত হয়েছিলেন বিষণ্ণতায়। "এর কয়েক বছর পরে, আমার তখন চাকরি হয়েছে, সামাজিক জীবনও বেশ ভাল, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্যকর, তার পরেও এই পর্নোগ্রাফির কারণে আমি উৎফুল্ল হতে পারিনি। এটা আমার জীবনের অন্ধকারময় একটি দিক। আমার আগের সম্পর্কের ওপরেও এর প্রভাব পড়েছিল। এতে আমি আরো বেশি বিষণ্ণ হয়ে পড়ি।" "আমি তখনও আসক্ত ছিলাম। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এটা নিয়ে কথা বলার জন্য কেউ ছিল না। কারণ এনিয়ে কথা বললে লোকেরা নিশ্চয়ই আমাকে অনেক খারাপ ভাববে," বলেন ওয়েন। অনলাইনে এখন খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে পর্নোগ্রাফি। কার্ডিফের জিম ম্যানেজার নিকি ব্রায়ান্ট বলেন, "আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আমাদের জীবনের ওপর অনলাইনের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। সেখানে আমরা যা দেখি সেটা আমাদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।" পর্ন অতিরঞ্জিত কার্ডিফের জিম ম্যানেজার নিকি ব্রায়ান্ট একাই এই সমস্যায় পড়েননি। তার মতো আরো অনেকেই পর্নোগ্রাফিতে এতোটা আসক্ত হয়ে পড়ছেন যে তাদেরকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হচ্ছে। ওয়েলসে সাইকোসেস্কুয়াল ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের বেশিরভাগের বয়স ২৫ এর মতো। যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ এবং ইন্সটিটিউট অফ সাইকোসেক্সুয়াল মেডিসিনের সদস্য ড. কেট হাওয়েলস বলেছেন, "অনেকেই যৌনতার বিষয়ে শিক্ষা নেওয়ার জন্য পর্নোগ্রাফি দেখে থাকেন।" এবিষয়ে ২০১৯ সালে সারা ব্রিটেনে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারী পুরুষের ওপর যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাতে দেখা গেছে, ৫৫% পুরুষ এবং ৩৪% নারী বলেছেন যে পর্নোগ্রাফিই ছিল তাদের যৌন শিক্ষার মূল উৎস। তাদের ৫০% নারী মনে করেন এসব পর্নোগ্রাফিতে নারীকে "অমানবিক" করে তোলা হয়েছে। "কিন্তু এটাই তাদের জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ পর্ন হচ্ছে এমন এক বিষয় যেখানে ভালোবাসা থেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। সেখানে সবকিছু অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। স্বাভাবিক সেক্সের চেয়ে এটি একেবারেই আলাদা," বলেন ড. কেট হাওয়েলস। তার মতে এর ফলে তরুণ তরুণীদের ওপর অনেক বেশি চাপ তৈরি হয়। এজন্য তারা শরীরে অনেক রকম সার্জারি করতেও উদ্যোগী হয়। পর্নোগ্রাফি দেখে তাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয় সেখানে সে যা দেখেছে সেটাই হয়তো স্বাভাবিক। তিনি বলেন, যৌন স্বাস্থ্য এবং শরীর সম্পর্কে তাদরে যে ধারণা তার ওপরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। পর্নোগ্রাফিতে নারীকে এমনভাবে দেখানো হয় যেন সে পুরুষের বশ্যতা স্বীকার করেছে। কেট হাওয়েলস বলেন, "বেশিরভাগ পর্নোগ্রাফি পুরুষ-কেন্দ্রিক। পুরুষের আনন্দই সেখানে মুখ্য বিষয়। অনেক সময় যৌন সম্পর্কের বিষয়ে নারীর অনুমতিও নিতে হয় না।" "পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে প্রশ্ন করতে গিয়ে ভয় পাওয়া চলবে না। তারা কী দেখে, কতোটুকু দেখে এবং কখন তারা দেখে এসব জানা দরকার। এ বিষয়ে আমাদের অনেক শিক্ষার প্রয়োজন। বিশেষ করে যৌন শিক্ষা এবং সেখানে পর্নোগ্রাফিকেও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। সম্পর্ক কিম্বা নারী ও পুরুষের ক্ষমতায়নের ওপর এর কী ধরনের প্রভাব পড়ে এসব বিষয়ে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।" বলা হচ্ছে, ২০২২ সাল থেকে ওয়েলসের পাঠ্যসূচিতে এসব বিষয় অনেক গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ইউকের রোজ ক্যাল্ডওয়েল বলেছেন, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে পর্নোগ্রাফিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেটি হবে বড় ধরনের অগ্রগতি। তিনি বলেন, "স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ যৌনতা ও সম্পর্কের জন্য এই শিক্ষা তাদেরকে প্রস্তুত করবে। শিক্ষকদেরকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।" ওয়েলশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নতুন পাঠ্যসূচিতে সম্পর্ক ও যৌনতার ওপর শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে তাতে পর্নোগ্রাফিকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেটি এখন বিবেচনা করে দেখা হবে।
পর্নোগ্রাফির প্রভাব: 'পর্ন আসক্তি জীবনের এক অন্ধকার দিক'
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
কিন্তু এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ব নারীদের আবিষ্কারক চিন্তার পুরোপুরি এখনো ব্যবহার করতে পারছে না। যুক্তরাজ্যের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বিষয়ক দপ্তর (আইপিও) এর এক গবেষণা বলছে, সারা বিশ্বে পেটেন্ট আবেদনের মাত্র ১৩% আসে নারীদের কাছ থেকে। কিন্তু এক সময়, প্রতি সাত জন আবিষ্কারকের মধ্যে এক জনই ছিলেন নারী। এবং যদিও এখন পেটেন্ট আবেদনে নারীদের হার বাড়ছে তবুও এই বিষয়ে লিঙ্গ সমতা আনা ২০৭০ সালের আগে সম্ভব নয়। তাহলে, আবিষ্কারের দুনিয়ায় নারীদের সংখ্যা এতো কম কেন? গবেষকরা বলছেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতে যা একত্রে সংক্ষেপে স্টেম নামে পরিচিত তাতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের ফাঁক থাকাটাই এর জন্য দায়ী। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিষয়ক আইনি প্রতিষ্ঠান পাওয়েল এন্ড গিলবার্টের অংশীদার পেনি গিলবার্টের মতে, এটা একটি পাইপলাইন ইস্যু মাত্র। আরো পড়ুন: চারবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এক নারীর রেকর্ড চারবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এক নারীর রেকর্ড আফগানিস্তানে নারীবাদী রেডিও চালান সাহসী যে নারী "আমরা যদি নারীদের পেটেন্ট আবেদন বাড়াতে দেখতে চাই, তাহলে আরো বেশি নারীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্টেম বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে এবং তাদেরকে গবেষণাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে," তিনি বলেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের স্টেম শিল্পের কর্মীদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ নারী। এছাড়া মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে খুব কম সংখ্যক মেয়ে এবং নারীরা এ ধরণের বিষয়ে পড়াশুনা করে। যদিও এই বৈষম্য দূর করে ভারসাম্যের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্টেমের দুই-তৃতীয়াংশ এখনো পুরুষ সাধারণত, কোন কিছুর আবিষ্কারককেই সেই পণ্যের পেটেন্ট দেয়া হয়। যা ওই পণ্যের আবিষ্কারক বা মালিকদের তাদের পণ্য অন্যদের ব্যবহার করতে দেয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ দেয়। একটি "আবিষ্কার" এর পেটেন্ট পাওয়ার যোগ্য হতে হলে, নতুন একটি ব্যবহারযোগ্য চিন্তা থাকতে হবে- যা ওই ক্ষেত্রে একজন দক্ষ মানুষের জানা থাকবে না। কোন একক ব্যক্তি বা আবিষ্কারকের একটি দল এই আবেদন করতে পারবে। আবিষ্কারকদের মধ্যে লিঙ্গ সমতার পার্থক্য আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন নারীদের আবিষ্কারের বিষয়টি একটি পুরুষ-শাসিত দলে একমাত্র সদস্য হিসেবে কোন নারী থাকে। পেটেন্টের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই পুরুষদের দল কিংবা কোন একক পুরুষ আবিষ্কারকের দখলে। আর সেখানে মাত্র ৬% একক নারী আবিষ্কারক থাকেন। আবিষ্কারক কোন দলের সব সদস্য নারী-এমনটা দেখা যায় না বললেই চলে। আইপিওর মতে, নারীদের দলের আবিষ্কারক হিসেবে পেটেন্টের জন্য আবেদন করার হার মাত্র ০.৩%। তবে পেটেন্টের জন্য আবেদন করলেই যে নারীরা পেটেন্টের অনুমোদন পায় তা নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা পেটেন্ট আবেদন নিয়ে চালানো এক গবেষণা বলেন, কোন আবেদনে নারীর নাম থাকলে পেটেন্টের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে তার সম্ভাবনা কম থাকে। এবং অবশ্যই, আবিষ্কারের সাথে জড়িত সবাইকে তো আর পেটেন্ট দেয়া হয় না। বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিষয়ক একটি সংস্থার আগের পরিচালিত একটি গবেষণা বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, নিজেদের গবেষণার জন্য পেটেন্টের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের সম্ভাবনা পুরুষের তুলনায় অর্ধেক কম। এতে বলা হয় যে, নারীরা পুরুষের মতো তার পণ্যকে বাণিজ্যিক করার বিষয়ে তেমন আগ্রহী নয়। বায়োটেক বা জৈবপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি লিঙ্গ সমতা রয়েছে ১৯৯১ সালে, আন সুকামোতো স্টেম সেলগুলি আলাদা করার একটি উপায় তৈরি করেন। তার উদ্ভাবনের মাধ্যমে ক্যান্সারের রোগীদের রক্ত-ব্যবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন ঘটেছিল এবং এটি রোগের প্রতিকার খুঁজে বের করাটাকে সম্ভব করতে যাচ্ছিল। ডাঃ সুকামোতো, যিনি বর্তমানে স্টেম সেল বৃদ্ধির বিষয়ে আরও গবেষণা করছেন, এটি ছাড়াও তিনি আরও সাতটি আবিষ্কারের সহ-পেটেন্টি ছিলেন। জৈবপ্রযুক্তি, ওষুধ এবং খাবারের মতো দরকারি পণ্য তৈরিতে জীবিত প্রাণীর ব্যবহারের গবেষণার খাতটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী আবিষ্কারক জড়িত। প্রায় 53% জৈব প্রযুক্তি সম্পর্কিত পেটেন্টগুলিতে কমপক্ষে একজন নারী উদ্ভাবক রয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে, ফার্মাসিউটিক্যাল সম্পর্কিত পেটেন্টগুলির 52% এর মধ্যে কমপক্ষে একজন মহিলা উদ্ভাবক রয়েছে। এই তালিকার সবচেয়ে নিচে ছিল বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিষয়টি। প্রতি ১০টি পেটেন্ট আবেদনের মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী আবিষ্কারক ছিল। ২০৭০ সাল নাগাদ সমতা গত ২০ বছরে নারী আবিষ্কারকদের পেটেন্ট গ্রহণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আইপিও বলছে, ১৯৯৮ সালে এই হার ৬.৮% থেকে বেড়ে ২০১৭ সালে এই হার দাঁড়ায় ১২.৭% এ। একই সময়ের মধ্যে, কোন পেটেন্ট আবেদন যাতে অন্তত একজন নারী আবিষ্কারক রয়েছেন, এমন আবেদনের সংখ্যা ১২% থেকে বেড়ে ২১% হয়। মিস গিলবার্ট বলেন, নারীদের শিক্ষাগত এবং পেশাগত পছন্দ নিয়ে যে সাধারণীকরণ প্রচলিত আছে তা দূর করতে হলে নারীদের স্টেম বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ বিষয়ে নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে এবং নারী রোল মডেল তৈরি হলে তার যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। "আমাদের এই বিষয়টির প্রশংসা করতে হবে যে, ইতিহাসে মহান কিছু বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারক নারী ছিলেন-ম্যারি কুরি এবং রোলিন্দ ফ্রাঙ্কলিন থেকে শুরু করে গ্রেস হপার যিনি প্রোগ্রামিং আবিষ্কার করেছিলেন তিনি এবং কেবলারের আবিষ্কারক স্টিফানি কোলেকের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য," তিনি বলেন। "আমাদের উচিত তাদের গল্পগুলো সামনে নিয়ে আসা।" তালিকার শীর্ষে রাশিয়া ১৯৯৮ সালে যেখানে ৮% ছিল তা থেকে ২০১৭ সালে ১১% এ এসে ঠেকেছে এবং যদিও যুক্তরাজ্যে নারী আবিষ্কারকের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে কিন্তু অনেক দেশই আসলে এদিক থেকে যুক্তরাজ্যের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। গত ২০ বছর ধরে জমা পড়া পেটেন্ট আবেদনগুলোর মধ্যে ১৭% আবেদনে অন্তত এক জন নারী থাকায় এই তালিকায় সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি নারী আবিষ্কারক রয়েছেন। এই তালিকার ১০টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান রয়েছে ফ্রান্স। এর ঠিক বিপরীতে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ২০টি পেটেন্ট আবেদনের মধ্যে একটিরও কম আবেদনে নারী আবিষ্কারক জড়িত থাকার তথ্য জানা যায়। কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল? সাধারণত পেটেন্ট আবেদনে আবিষ্কারকের লিঙ্গের উল্লেখ থাকে না।তাই আইপিও আবেদনে আবিষ্কারকের নামের প্রথম অংশ থেকে লিঙ্গ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এর জন্য ইউরোপীয় পেটেন্ট অফিস যা বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর পেটেন্টের পরিসংখ্যানগত তথ্য রাখে তাদের সহায়তা নেয়। আবিষ্কারকের নামের সাথে তার লিঙ্গের মিল রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা হয় যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর এবং মার্কিন সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের কাছ থেকে জন্ম বিষয়ক তথ্য থেকে। এসব তথ্যে জন্ম নেয়া শিশুর নাম, ছেলে এবং মেয়ে শিশুর সংখ্যার উল্লেখ থাকে। এছাড়া একই সাথে ফেসবুক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে নামের সাথে লিঙ্গের মিল কতটা থাকে তা থেকেও তথ্য ও সহায়তা নেয়া হয় বড় তথ্য তালিকা তৈরির সময়। এক্ষেত্রে সেসব নামই নেয়া হয়েছে যেগুলো ৯৫% ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে ব্যক্তির লিঙ্গ নিশ্চিত করে। ছেলে বা মেয়ে যে কারো হতে পারে এমন নাম যেমন 'রবিন' তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৭৫% ক্ষেত্রে নামের সাথে লিঙ্গের মিল পাওয়া গেছে। যদিও দেশ ভেদে এই সাফল্যের হারে পার্থক্য রয়েছে। ব্যবহৃত নামের তালিকা গুলোতে পশ্চিমা নামের দিকে ঝোঁক বেশি ছিল, যার কারণে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে সফলতার হার সবচেয়ে বেশি, যেখানে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনে এই হার সবচেয়ে কম। ১০০ নারী কী? বিবিসি ১০০ নারীর নামের তালিকায় প্রতি বছর বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী এবং অনুপ্রেরণায়ময় নারীর নাম এবং তাদের গল্প প্রকাশ করা হয়। #100Women এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে এই তালিকা পাওয়া সম্ভব। ভিডিও দেখুন: বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চায় নারীদের যত চ্যালেঞ্জ বিজ্ঞান চর্চায় কতটা আগ্রহী নারীরা বিবিসি বাংলার অন্যন্য খবর: নতুন সৌদির ক্ষমতাধর নেতা এমবিএস লোকটি কেমন? সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার যত সুফল এবং কুফল নারীবিদ্বেষ ও বর্ণবাদ: গান্ধীর যতো বিতর্কিত দিক
বিশ্বে নারী আবিষ্কারকদের সংখ্যা কম কেন?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
তিব্বতে পাহাড়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে চীনা সেনাবাহিনী ওই বৈঠকের পর দু'সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সীমান্তে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ নেই। দু'পক্ষের কেউই সৈন্য সরায়নি। বরং রসদ এবং সমরাস্ত্র জড়ো করার মাত্রা বেড়েছে বলে জানা গেছে। মস্কোতে সমঝোতার পরও সীমান্তে গুলি করার অনুমোদন দেওয়াসহ ভারতের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য নিয়ে চীনের ভেতর ক্ষোভ এবং সন্দেহ তৈরির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। চীনা সরকারের মুখ থেকে এখনও সরাসরি কিছু শোনা না গেলেও, সরকারি মুখপাত্র বা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত মিডিয়াগুলোতে ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। চীন আর ভারত হঠাৎ করে শান্তি ফিরিয়ে আনলো কীভাবে? চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধের পেছনে যেসব কারণ 'ভারত-চীনের সীমান্ত পুরোটাই মায়া, এলএসি আছে অন্তত চারটে' চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসাবে পরিচিতি ইংরেজি দৈনিক গ্লোবাল টাইমসে শনিবার তিন-তিনটি উপ-সম্পাদকীয়তে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে ভারতকে নিয়ে চীনের মধ্যে অবিশ্বাস-অনাস্থা দিনদিন শক্ত হচ্ছে। একটি উপ-সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল এমন - 'কপট ভারতের ব্যাপারে শক্ত হওয়ার সময় এসেছে'। ‘সাংহাইয়ের ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ'-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান লিউ জং ই তার ওই বিশ্লেষণে খোলাখুলি লিখেছেন যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের কোনো সদিচ্ছা ভারতের নেই। “ভারতের মনোভাব এখন এমন যে তারা যা চায়, চীনকে তা মুখ বুজে মেনে নিতে হবে।“ ভারত কি প্রথম গুলি চালাবে? সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে সোমবার সেনা কমান্ডার পর্যায়ে ষষ্ঠ দফা বৈঠকের পর ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক 'দ্যা হিন্দু' উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে লেখে যে নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মনে করলে এখন থেকে ভারতীয় সৈন্যরা চীনা সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে দ্বিধা করবে না। চীনকে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। হিন্দুর ওই রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে লিউ জং ই বলেছেন, ভারত প্রথম গুলি চালাতে পারে, সে সম্ভাবনা এখন আর কোনোভাবেই নাকচ করা যায় না। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমসে ভারতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান চেয়ে একটি উপ-সম্পাদকীয়, ২৬ সেপ্টেম্বর চীনা এই বিশ্লেষক লেখেন, "ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি অংশ এখন কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ। সেই কট্টর অংশের কেউ কেউ এখন যুদ্ধের প্ররোচনা দিচ্ছে।" তিনি আরও লেখেন, “চীনকে এখনই শক্ত হতে হবে। এখনই যদি এর প্রতিকার চীন না করে, তাহলে মাঝে-মধ্যেই সীমান্তে সংঘাত নতুন একটি বাস্তবতা হয়ে দেখা দেবে।“ লিউ জং ই মনে করেন, চীনকে হটিয়ে বিশ্বে শিল্পপণ্যের প্রধান একটি সরবরাহকারী দেশ হওয়ার জন্য ভারতের ভেতর অদম্য আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, এবং সেজন্য চীনের সাথে সমস্যা সমাধানে ভারতের কোনো আগ্রহ নেই। চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক ইন্সটিটিউটের গবেষক কিয়াং ফেং মনে করেন, চীনের ব্যাপারে নীতি নিয়ে ভারতের মধ্যে অব্যাহত 'অস্পষ্টতা, পরস্পর-বিরোধিতার' কারণে তাদের সাথে কোনো সমঝোতায় চীন এখন আর আস্থা রাখতে পারছে না। শনিবার গ্লোবাল টাইমসে এক বিশ্লেষণে মি. কিয়াং লেখেন, “ভারতে সরকারের মধ্যেই একেকজন একেক সময় একেক কথা বলছেন, পররাষ্ট্র দপ্তরের কথার সাথে সেনা দপ্তরের কথার কোনো মিল নেই। অনেক সময় তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। সরকারের নীতির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।“ চীনের সাথে বিরোধে ভারতে উঠতি বহু ব্যবসার চোখে অন্ধকার চীনের সাথে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কতটুকু ভারতের এ প্রসঙ্গে চীনা ওই গবেষক উল্লেখ করেন, ১০ই সেপ্টেম্বর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি সমঝোতা করলেন, কিন্তু পরের দিন ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত বিবৃতি দিলেন যে সীমান্ত যে কোনো পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় সেনারা প্রস্তুত। ভারত অবশ্য সব সময় বলছে যে সীমান্ত পরিস্থিতির দায় একমাত্র চীনের। চীনই এখানে আগ্রাসীর ভূমিকায় এবং ভারত শুধু তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করছে। ভেঙ্গে পড়ছে ৩০ বছরের সমঝোতা কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, চীন ও ভারতের মধ্যে অনাস্থা এবং অবিশ্বাসের মাত্রা এখন এতই প্রবল হয়ে উঠছে যে কথাবার্তা চালিয়ে তেমন কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, চীনের ভেতর আশঙ্কা বাড়ছে যে ভারত হয়ত একটি যুদ্ধ চাইছে। "ভারতকে তারা এখন একেবারেই বিশ্বাস করছে না।" চীন সীমান্তে ভারত রাস্তা নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ড. আলী মনে করেন, ১৯৮৮ সালে প্রয়াত রাজীব গান্ধীর বেইজিং সফরের পর গত ৩০ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে অব্যাহতভাবে যে স্থিতিশীলতা চলছিল, তা একের পর এক ভেঙ্গে পড়ছে। “সীমান্তে রক্তপাতের বিরুদ্ধে যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল, জুন মাসে তা ভেঙ্গে পড়েছে। সীমান্তে গুলি ব্যবহারের বিরুদ্ধে যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল তাও ভেঙ্গে পড়েছে, কারণ গত দুই মাসে দুই পক্ষ কমপক্ষে তিনবার ফাঁকা গুলি ছুড়েছে ।“ ড. আলী বলেন, “এখন যদি ভারতীয়রা তাদের দেওয়া হুমকি-মত চীনা সৈন্যদের দিকে গুলি ছুড়ে বসে, তাতে আমি অবাক হবো না।“ তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে বিশেষ করে লাদাখ সীমান্তে ভারত যেভাবে ধীরে ধীরে অবকাঠামো গড়ে তুলছে, সেটাকে চীন ১৯৮৮-তে করা সমঝোতার বরখেলাপ হিসাবে বিবেচনা করে। “সত্যি কথা বলতে কী, বর্তমান সঙ্কটের শুরু সেটা নিয়েই।“ পাশাপাশি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান সামরিক এবং রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বেইজিংকে ভারতের ব্যাপারে আরো সন্দিহান করে তুলেছে। ড. মাহমুদ আলী বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক নীতি-নির্ধারকের মধ্যে একটি বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে যে চীনকে রুখতে যদি কোনো যুদ্ধ করতেই হয়, তাহলে এখনই করতে হবে। তিনি বলেন, “তারা মনে করছেন, আরও আট-দশ বছর দেরি হলে, সেটা আর হয়ত কখনই সম্ভব নাও হতে পারে।“ “আমি মনে করি ভারতও হয়ত এখন তেমনটাই ভাবছে। তারাও হয়ত ভাবছে, যদি কখনও চীনের সাথে সংঘাতে যেতেই হয়, এখনই মোক্ষম সময় - কারণ ভারত জানে, চীনের শত্রুদের কাছ থেকে তারা সাহায্য পাবে।“ মস্কোতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই‘র মধ্যে বৈঠকের আগে তাদের নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাবরভ ফলে. ড. আলী বলেন, চীনও ভাবছে তাদেরকেও এখন ব্যবস্থা নিতেই হবে। “তাদের কাছে তেমন কোনো বিকল্প এখন আর নেই।“ সে কারণে, উপরে উপরে যত কথাবার্তাই দু'পক্ষের মধ্যে হোক না কেন, তাতে বিপদ কমছে বা কমবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন না। তার ইঙ্গিতও স্পষ্ট। প্রতি বছরই শীতের সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত লাদাখে দুই দেশের সৈন্যরা পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসে। কিন্তু ভারত এবার জানিয়ে দিয়েছে এই শীতে সৈন্যরা পাহাড়েই থাকবে। ভারত সেটা করলে চীনকেও একই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু চীনা বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণেই ভারত যে নাগরিকদের বন্দী করেছিল ড. আলী মনে করেন, দু'পক্ষই সম্ভাব্য একটি সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞ সং ঝং পিং শনিবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, কোভিড মহামারিসহ তাদের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য সংকটের কারণে চীনের সাথে একটি যুদ্ধের জন্য ভারত যে কোনো সময় উস্কানি তৈরি করতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধ হয়েছিল শীতকালে। এবারের শীতেও তেমনটি যে হবে না, সে সম্ভাবনা তিনি নাকচ করেননি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: চাঁদের বুকে প্রথম নারী পা রাখবেন ২০২৪ সালের মধ্যে নারীর যোগ্যতা, মেধা ও কাজ যখন চাপা পড়ে পোশাক বিতর্কে
ভারত-চীন উত্তেজনা: দিল্লিকে নিয়ে বেইজিং এর অনাস্থা-অবিশ্বাস-সন্দেহ বিপজ্জনক রূপ নিচ্ছে
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
জিয়াউর রহমান: রাজনীতিতে এসেছিলেন সামরিক বাহিনী থেকে ১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, "আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক।.... রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।" এরপর ১৯৭৬ সালের মে মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, "আমি একজন শ্রমিক।" একজন 'শ্রমিক' ও 'সৈনিক' কিভাবে একের পর এক সিঁড়ি পেরিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে চলে যেতে পারেন, তার একটা চিত্রনাট্য আগেই লিখে রেখেছিলেন পাকিস্তানের সেনাপতি আইয়ুব খান। জেনারেল জিয়া এ চিত্রনাট্য ধরেই এগুতে থাকেন এবং অবশেষে গন্তব্যে পৌছে যান। জিয়াউর রহমান স্বভাবে ছিলেন ধীর-স্থির। তিনি এক-পা, দুই-পা করে এগুচ্ছিলেন। তিনি মনে করলেন, তাঁর একটা ঘোষণা-পত্র বা কর্মসূচী থাকা দরকার। উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২২শে মে 'আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে' জেনারেল জিয়া ১৯দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি তখনো একজন সামরিক শাসক। সেনাবাহিনীতে দৃশ্যত তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ ছিলনা। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক বিরোধীরা বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং দিশেহারা। তারপরেও জিয়াউর রহমানকে প্রমাণ করতে হবে, তাঁর পেছনে জনসমর্থন আছে; শুধু বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসেননি। তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য হ্যাঁ-না ভোট নেয়া হলো। নির্বাচন কমিশন জানাল, দেশের ৮৮.৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৯৮.৯ শতাংশ হ্যাঁ ভোট দিয়েছে। ভোটার উপস্থিতির এ হার মোটেও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। গণভাটের মাধ্যমে রাজনৈতিক বৈধতার একটি ছাড়পত্র তৈরি করলেন জিয়াউর রহমান। জেনারেল জিয়া তাঁর উপদেষ্টামন্ডলীতে অসামরিক কিছু তারকা যোগ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ শামসুল হক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৈয়দ আলী আহসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ অন্যতম। জিয়াউর রহমান ইতোমধ্যে রাজনীতিবিদদের যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তিনি যাঁদের সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাসানী-ন্যাপের সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়া। ১৯৭৫ সালে যারা ঢাকঢোলা পিটিয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন, মধ্য আগস্টে গণেশ উল্টে যাওয়ায় তাদের অনেকেই বাকশালের গালমন্দ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, নতুন শাসকদের কৃপা পাওয়া। জিয়াউর রহমান এসব রাজনীতিবিদকে দেখতেন কিছু করুণা আর কিছু ঘৃণা নিয়ে। প্রয়াত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া জেনারেল জিয়ার কাছে যারা ভিড়েছিলেন বা ভিড়তে চেয়েছিলেন, তাদের কারও কারও অভিজ্ঞতা ছিল বেশ তেতো। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ছাত্র লীগের সাবেক নেতা এবং প্রথম জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিন বর্তমানে বিএনপি নেতা। খন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে ডেমোক্রেটিক লীগ নামে যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, শাহ মোয়াজ্জেম সে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান যখন রাজনীতিবিদদের সাথে যোগাযোগ করছিলেন, এক পর্যায়ে শাহ মোয়াজ্জেমের সাথেও তাঁর কথা হয়। খন্দকার মোশতাক তখন জেলে। ঠিক হয় ডেমোক্রেটিক লীগের পক্ষ থেকে শাহ মোয়াজ্জেম, মোহাম্মদ উল্লাহ, অলি আহাদ এবং কে এম ওবায়দুর রহমান বঙ্গভবনে জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করবেন এবং কথাবার্তা বলবেন। কিন্তু নিমিষেই শাহ মোয়াজ্জেমের স্বপ্নের বেলুন ফুটো হয়ে যায়। শাহ মোয়াজ্জেমকে একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ তার বইতে লিখেছেন, " বঙ্গভবনে যাচ্ছি বলে আনন্দিত হয়েই গাড়িতে গিয়ে বসলাম। বসে বসে ভাবছিলাম আলাদা কী আলোচনা করতে পারেন প্রেসিডেন্ট সাহেব! ওয়ারী থেকে বঙ্গভবন পাঁচ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু দশ মিনিটের ওপর হয়ে গেল গাড়ি চলছেই। বিষয় কী? বাইরে তাকাতেই বুঝতে পারলাম, বঙ্গভবনের রাস্তা এটা নয় - অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, আমার তো বঙ্গভবনে যাবার কথা, আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? তারা এবার আর মিথ্যার আশ্রয় নিল না। বলল, স্যার, যাবেন আপনি ঠিকই, তবে বঙ্গভবনে নয়। আপাতত ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে। ঘৃণায় তাঁদের দিকে ফিরেও তাকালাম না। এ ঘৃণা সে লোকটির জন্য যে এতো বড় উচ্চাসনে অবস্থান করেও এমনই নিচু স্তরের প্রবঞ্চনা এবং অহেতুক নিপীড়নের পন্থা বেছে নিতে পারে.. " জিয়া রাজনৈতিক দল তৈরির আগেই একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের চিন্তা করেন, যাতে করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটা বিস্তৃত প্লাটফর্ম বানানো যায়। একটা নির্দিষ্ট দর্শন ও কর্মসূচীর চেয়ে তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পাল্টা একটা বড়সড় মঞ্চ তৈরী করা। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল তৈরির প্রক্রিয়াটিতে বৈচিত্র্য ছিল। তিনি সব কটি ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে চাননি। দল তৈরির কাজে অনেক ব্যক্তি ও মাধ্যমকে ব্যবহার করেছন। তখনকার সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশুর অফিসে রাতের বেলায় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আসতেন এবং কথাবার্তা বলতেন। জিয়া কখনে-সখনো সেখানে উপস্থিত থাকতেন। জিয়ার একান্ত সচিব কর্ণেল অলি আহমদের সাথে মাঠ পর্যায়ের অনেক লোকের যোগাযোগ ছিল। অলি আহমেদ ২০০৬ সালে বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করেন। জিয়াউর রহমান একদিকে 'সমমনা' রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট তৈরির কাজ করছেন, অন্যদিকে তিনি নিজস্ব একটা রাজনৈতিক দল তৈরির বিষয়টিও খুব গুরুত্বের সাথে দেখলেন। তাঁর মনে হলো জোটের মধ্যে শতভাগ অনুগত একটা দল না থাকলে জোটকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সে লক্ষে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ' জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল' বা 'জাগদল' নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরির ঘোষণা দেন। তিনি নিজে থাকলেন নেপথ্যে। জাগদল রাজনীতিতে তেমন ঢেউ তুলতে পারেনি। রাজনৈতিক মাঠের চেনা মুখগুলো জাগদলে খুব কমই যোগ দিয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ২৮ এপ্রিল জিয়াইর রহমান নিজেই নিজেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নোতি দিলেন। ১৯৭৮ সালের ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' ঘোষণা করা হলো। জিয়া যদিও সেনাবাহিনীর প্রধান, তিনি পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে গেলেন। জিয়াউর রহমান: আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট একসময় তিনি বলেছিলেন, " আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট"। অর্থাৎ তিনি রাজনীতি কঠিন করে দেবেন। নানা বিধি নিষেধের বেড়াজালে অনেকের জন্যই রাজনীতি কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু জিয়া রাজনীতিতে তাঁ উত্তরণ ঘটান সহজেই। রাজনীতিবিদ হতে হলে মাঠে-ঘাটে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে হয়। হাতের তর্জনী তুলে গর্জন করতে হয়। জিয়া এ বিষয়ে একেবারেই নবিশ। অথচ রাজনীতিতে পারঙ্গম হতে হলে জনগণের সাথে মিশে যেতে হবে। মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ভাই মোখলেসুর রহমানের (সিধু ভাই)একটি সাক্ষাতকারকে উদ্ধৃত করে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, "জিয়া বাংলা লিখতে-পড়তে জানতেন না। প্রথম দিকে তিনি বাংলায় যে বক্তৃতা দিতেন, সেগুলো উর্দুতে লিখতেন। তারপর সেটি দেখে বক্তৃতা দিতেন। তিনি ভালো করে বক্তৃতা দিতে পারতেন না। দিতে গেলে খালি হাত-পা ছুঁড়তেন।" মোখলেসুর রহমানের সাক্ষাতকার গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর বইতে এভাবে তুলে ধরেছেন, "এসব দেখেটেখে যাদু একদিন আমাকে বললো যে, এ রকম হলে কী করে তাঁকে আমি চালিয়ে নেব?আমি বললাম, দেখো জিয়া বক্তব্য দিতে পারেন না ঠিক আছে। তিনি সবচেয় ভালো-ভাবে কী করতে পারেন, সেটা খুঁজে বের করো। জবাবে যাদু বললেন, হাঁটতে পারেন এক নাগাড়ে ২০ থেকে ৩০ মাইল পর্যন্ত। আমি বললাম এইতো পাওয়া গেল সবচেয়ে ভালো একটা উপায়, তুমি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পাড়াগাঁয়ে হাঁটাও। .... গাঁও গেরামের রাস্তা দিয়ে যাবে আর মানুষজনকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছেন? প্রেসিডেন্ট দেশের মিলিটারী লিডার, তিনি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কানাকানচি দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন আর লোকজনের ভালো-মন্দের খোঁজ খবর করছেন, তাতেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। মোখলেসুর রহমানের ভাষ্য হচ্ছে, এভাবে দেখতে দেখতে জিয়াউর রহমান বক্তব্য দেয়াটাও রপ্ত করে ফেললেন। যেখানে কোনদিন ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও যাননি, সেখানে খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট যাচ্ছেন। সেটা এক বিশাল ব্যাপার। "এসব দেখে গ্রামের লোকজন ভাবল, জিয়াউর রহমান এমন লোক, যিনি আমাদের খোঁজ খবর রাখেন," মোখলেসুর রহমানের সাক্ষাতকার এভাবেই উঠে এসেছে মহিউদ্দিন আহমদের বইতে। ১৯৭৮ সালের ২৮শে এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হলো। জুন মাসে অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে জিয়াউর রহমান ৭৬.৩৩ ভাগ ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় 'সিনিয়র মিনিস্টার' নিয়োগ করা হয়। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গ্রুপের একটা প্ল্যাটফর্ম।তাঁদের একতার একটাই ভিত্তি ছিল, তারা সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এককাট্টা। নানান মত ও পথের এ ফ্রন্ট নিয়ে জিয়াউর রহমান স্বস্তিতে ছিলেন না। তিনি 'একমনা' লোকদের নিয়ে আলাদা দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। দল তৈরির জন্য যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছিল, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি দলের নাম 'জাস্টিস পার্টি' রাখার প্রস্তাব করেন। নামটি কিছুটা পানসে হওয়ায় সেটি গ্রহণযোগ্য হয়নি। দলের নামের সাথে জাতীয়তাবাদী থাকাটা জরুরী ছিল। শেষমেশ স্থির হয়, দলের নাম হবে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল'। জিয়াউর রহমান নিজেই দলের নামকরণ করেছিলেন। ১৯৭৮ সালের ২৮ আগষ্ট 'জাগদল' বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁ প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রধান হিসেবে দলের নাম, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচী আনুষ্ঠানিক দল ঘোষণা করেন। বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন নয়জন । তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছাড়া যুক্ত ছিলেন বিচারপতি সাত্তার, নাজমুল হুদা, মওদুদ আহমদ এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী অন্যতম। গবেষক মহিউদ্দন আহমদ তাঁর বইতে লিখেছেন, বিএনপি এমন একটি দল, যার জন্ম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। এই অঞ্চলে সব দলের জন্ম হয়েছে ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে, রাজপথে কিংবা আলোচনার টেবিলে। বিএনপি সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। দলটি তৈরি হলো ক্ষমতার শীর্ষে থাকা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারা, যিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি রাজনীতি করবেন। (লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের বই 'বিএনপি সময়-অসময়' থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।)
জিয়াউর রহমান: জাগদল থেকে যেভাবে বিএনপি গড়েন, রাজনীতিতে যেভাবে তার উত্থান হয়
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
লালন ফকির যাঁকে 'বাউল সম্রাট' ও 'বাউল গুরু' হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। লালন ফকির ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক। তাঁর গানের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় এক বিরল মানব দর্শনের। লালন শাহ, যিনি লালন ফকির বা লালন সাঁই নামেও পরিচিত, তিনি মৃত্যুর ১২৯ বছর পর আজও বেঁচে আছেন তাঁর গানের মাঝে। তাঁর লেখা গানের কোন পাণ্ডুলিপি ছিল না, কিন্তু গ্রাম বাংলায় আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তাঁর রচিত গান ছড়িয়ে পড়ে লোকের মুখে মুখে। লালন ফকিরকে "বাউল-সম্রাট" বা "বাউল গুরু" হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তাঁর গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি প্রায় দু হাজার গান রচনা করেছিলেন বলে লালন গবেষকরা বলেন। লালন ফকিরের সঠিক জন্ম ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোন কোন লালন গবেষক মনে করেন তেরশ' চুয়াত্তর সালে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ভাড়ারা গ্রামে লালন জন্মগ্রহণ করেছিলেন সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। বাবা মাধব কর ও মা পদ্মাবতীর একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। কিন্তু এ বিষয়ে দ্বিমতও আছে। কেউ বলেন তাঁর জন্ম ঝিনাইদহে, কেউ বলেন যশোরে। কথিত আছে শৈশবে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অল্প বয়সেই তাঁর ওপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ তাঁর হয়নি। কোন কোন গবেষকের বিবরণ অনুযায়ী প্রতিবেশী বাউলদাস ও অন্যান্য সঙ্গীদের নিয়ে "পুণ্যস্নান" বা তীর্থভ্রমণ সেরে ঘরে ফেরার পথে লালন বসন্তরোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন। বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৩- সত্যজিৎ রায় বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৪- অমর্ত্য সেন বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৫-ভাষা শহীদ লালনের লেখা গানের কোন পাণ্ডুলিপি ছিল না, কিন্তু গ্রাম বাংলায় আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তাঁর রচিত গান ছড়িয়ে পড়েছিল লোকের মুখে মুখে। রোগ বৃদ্ধি পেলে অচৈতন্য লালনকে মৃত মনে করে সঙ্গীরা কোনরকমে তার মুখাগ্নি করে তাঁকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এক মুসলমান রমণী নদীকূল থেকে লালনের সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার করে সেবাশুশ্রূষা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এই গবেষণার তথ্যমতে, এরপর বাড়ি ফিরে গেলে সমাজপতি ও আত্মীয়স্বজন মুসলমানের গৃহে অন্নজল গ্রহণ করার অপরাধে তাঁকে সমাজে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ব্যথিত লালন চিরতরে গৃহত্যাগ করেন। বলা হয় এই ঘটনা সমাজ-সংসার, শাস্ত্র আচার এবং জাতধর্ম সম্পর্কে তাঁকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। এবং এখান থেকেই হয় তাঁর নতুন জন্ম। বাউল গুরু সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা নেওয়ার পর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে আখড়া স্থাপন করে তাঁর প্রকৃত সাধক জীবনের সূচনা হয়। "যা আছে ভাণ্ডে, তাই আছে ব্রহ্মাণ্ডে" - এই ছিল লালনের দর্শন। বৈষ্ণব সহজিয়া, বৌদ্ধ সহজিয়া ও সুফিবাদের সংমিশ্রণে মানবগুরুর ভজনা, দেহ-কেন্দ্রিক সাধনাই লালন প্রদর্শিত বাউল ধর্মের মূলমন্ত্র। লালন ফকির বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যেই বাস করে এক 'মনের মানুষ'। আর সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় আত্মসাধনার মাধ্যমে। দেহের ভেতরেই সেই মনের মানুষ বা যাকে তিনি 'অচিন পাখি' বলেছেন, তার বাস। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় আজও প্রতিবছর বাউল সাধকরা লালন ফকিরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লালন উৎসব পালন করেন। লালন ফকিরের যখন আর্বিভাব ঘটেছিল সেই সময়টা বাঙালির জীবনের এক ক্রান্তিকাল। পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীনতার সূর্য তখন অস্তমিত। গ্রামীণ সমাজ নানাভাবে বিভক্ত। ধর্ম জাত-পাত ইত্যাদি নিয়ে সমাজে ছিল বিভিন্ন সমস্যা। লালন এই জাত-পাত ও ধর্ম বর্ণ-বিভেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন একটি জাত ধর্ম বর্ণ গোত্রহীন সমাজ গড়ে তুলতে। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় লালনের জীবদ্দশায় তাঁকে কোনধরনের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতেও দেখা যায়নি। নিজের সাধনা দিয়ে তিনি হিন্দুধর্ম এবং ইসলামধর্ম উভয় শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর রচিত গানে এর প্রচুর নিদর্শন রয়েছে। তিনি শুধু জাত-পাতের বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন না, লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন সামাজিক অনাচার, বিভেদ বৈষম্য এবং সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। "শিলাইদহের ঠাকুর জমিদাররা যখন প্রজাপীড়ন আরম্ভ করলেন তখন কুমারখালির কাঙাল হরিনাথ তার 'গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকায় ঠাকুর জমিদারদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করেন। এতে ঠাকুর জমিদাররা কাঙাল হরিনাথকে শায়েস্তা করার জন্য গুণ্ডা নিয়োগ করেন। লালন ফকির তখন তাঁর এই বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে জমিদারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।" এইভাবে লালন ফকির তাঁর সময়ে সমাজে সামন্ত শোষণ, সামাজিক অনাচার ও ভেদ-বিচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বলে জানান আবুল আহসান চৌধুরী। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় ঠাকুর জমিদারদের পরিবারের অনেকের সঙ্গে লালন ফকিরের ভাল সম্পর্ক ছিল, যদিও ঠাকুরদের সঙ্গে প্রজা-পীড়নের অভিযোগ নিয়ে লালনের সংঘাত হয়। বলা হয় উনিশ শতকের শিক্ষিত সমাজে লালনের প্রচার ও গ্রহণযোগ্যতার পেছনে ঠাকুর পরিবারের ভূমিকা ছিল। লালনের জীবদ্দশায় তাঁর একমাত্র স্কেচটি তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। লালনের মৃত্যুর বছরখানেক আগে ৫ই মে ১৮৮৯ সালে পদ্মায় তাঁর বজরায় বসিয়ে তিনি এই পেন্সিল স্কেচটি করেন- যা ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৬-মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৭ নম্বরে বিবেকানন্দ বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৮নম্বরে অতীশ দীপঙ্কর কুষ্টিয়ায় ফকির লালন শাহ্-র মাজার "লালন চেয়েছিলেন একটি অখণ্ড মানব-মণ্ডলী গড়ে তুলতে। তাঁর সময়ে তিনি নিজেকে বিকশিত করেছিলেন সমাজ-বিদ্রোহী, ভাব-বিদ্রোহী, মরমী একজন সাধক হিসাবে," বলেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। তিনি বলেন প্রকৃতপক্ষে লালন ছিলেন মানবতাবাদী। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং ধর্ম, জাত, কূল, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদি অনুসারে মানুষের ভেদাভেদে তিনি বিশ্বাস করতেন না। কুমারখালির ছেউড়িয়ায় নিজের আখড়ায় ১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর, বাংলা ১২৯৭ সালের পয়লা কার্তিক ১১৬ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন মহাত্মা ফকির লালন শাহ। বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান বিবিসির জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ২০তম স্থানে সোহরাওয়ার্দী
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে ১২ নম্বরে বাউল সাধক ফকির লালন শাহ
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
কিং কোবরা বা শঙ্খচূড় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্টে এ তথ্য দেখা গেছে। দেখা গেছে, প্রতি বন্যার সময় অর্থাৎ মে, জুন এবং জুলাই---এই তিন মাস সাপের দংশন এবং তার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে। বন্যপ্রাণী বিশেষ করে সাপ এবং সাপের দংশনজনিত মৃত্যু এবং শারীরিক ও মানসিক আঘাত নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড় এবং তা থেকে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। বাংলাদেশে কোন সাপ বেশি বিষধর? বাংলাদেশে ৮০টি প্রজাতির সাপ রয়েছে। সাপ ও সাপের বিষ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির প্রধান অধ্যাপক এমএ ফায়েজ বিবিসিকে বলেছেন, দেশে যেসব সাপ রয়েছে, তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। সাপে কাটার ঘটনা গ্রামাঞ্চলে, এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশি ঘটে থাকে। স্থলভূমিতে থাকা সাপ পায়ে বেশি দংশন করে। আরো পড়তে পারেন: স্বেচ্ছায় ২০০ বিষধর সাপের কামড় খেয়েছেন যিনি ছোবল খেয়ে সাপকেই কামড়ে টুকরা করলেন যুবক অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া গেল তিন-চোখওয়ালা সাপ সাপের কামড়: কত ভয়ানক হুমকি? চেরা-আঁশযুক্ত বোরা সাপ সামুদ্রিক সাপও অত্যন্ত বিষাক্ত হয়। বাংলাদেশে ২৩ ধরণের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে, সেগুলো মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের দংশন করে। তবে সমুদ্রের গভীরে তাদের অবস্থান হওয়ায় সাধারণত এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যত মানুষ সাপের দংশনে মারা যায়, তার চারগুণ মানুষের নানা রকম অঙ্গহানি ঘটে, কেউ শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে যান, এবং কেউ দীর্ঘদিন মানসিক ট্রমা ভোগ করেন। বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী যে সাত প্রজাতির বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়: ১. নায়া নায়া এটি কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ, এর বৈজ্ঞানিক নাম নায়া নায়া। এটি স্থলভূমির সাপ, এটি ফণা তোলে এবং এর ফণায় চশমার মত দুইটি বলয় থাকে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: চীনের কনস্যুলেট ছাড়ছেন মার্কিন কূটনীতিকরা ভারত সীমান্তে কংক্রিটের খুঁটি পুঁতে নিজেদের জমি দাবি করল নেপালিরা পরীক্ষামূলক টিকা নেয়া বাংলাদেশি রাহাত আহমেদের অভিজ্ঞতা কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা ও নির্দেশনায় এসেছে পরিবর্তন বান্দরবনে এই সাপটি ২০০৭ সালে ধরা পড়ে দেশের পশ্চিম অংশেই অর্থাৎ রাজশাহী অঞ্চলের দিকে প্রধানত এ সাপের বসবাস। ২. নায়া কাউচিয়া এটিও গোখরা প্রজাতির সাপ, স্থানীয়ভাবে একে জাতি সাপ বা জাত সাপও বলে থাকে। এই সাপটিকে জউরা নামেও ডাকা হয়। এ সাপ ফণা তোলে। এটি মূলত দেশের পূর্ব অংশ অর্থাৎ সিলেট, নোয়াখালী এলাকায় বেশি থাকে। দেশে যত সর্প দংশনের ঘটনা ঘটে, এর কামড়ে ঘটে সর্বোচ্চ। ৩. কিং কোবরা বা শঙ্খচূড় একে রাজ গোখরাও বলা হয়। ভয়াবহ বিষধর এই শঙ্খচূড় অন্য গোখরার তুলনায় আকৃতিতে বেশ লম্বা। এর ফণায় অন্য গোখরার মতো চশমার মত বলয় থাকে না। শঙ্খচূড় বাংলাদেশ, ভুটান, বার্মা, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এসব দেশে বেশি দেখা যায়। সমুদ্রের সাপ অত্যন্ত বিষাক্ত হলেও সাধারনত এরা মানুষের সংস্পর্শে আসে না এই সাপ ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকায় থাকতে পছন্দ করে। ৪. ক্রেইট বা শঙ্খিনী এই সাপকে শঙ্খিনী এবং শাঁকিনী সাপ নামেও ডাকা হয়। পৃথিবীতে ক্রেইট বা শঙ্খিনী জাতের সাপের মোট ৮টি প্রজাতি রয়েছে, এর মধ্যে ৫টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এই ক্রেইট জাতের সাপকে স্থানীয়ভাবে কেউটেও বলা হয়। এ সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে শুকনো জায়গায় থাকে। ৫. কালো নাইজার এটিও শঙ্খিনী জাতের সাপ এবং বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যায় রয়েছে এই সাপ। এটি চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, নোয়াখালী এবং সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায় বেশি। ৬. চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার চন্দ্রবোড়ার আরেক নাম উলুবোড়া। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপটি প্রায় একশো বছর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, অর্থাৎ পরপর কয়েক দশকে এর কোন একটি সাপেরও দেখা মেলেনি। কিন্তু গত ১০/১২ বছর আগে থেকে আবার এই সাপে দংশনের ঘটনা ঘটার প্রমাণ দেখা যায়। টক্সিকোলজি সোসাইটির অধ্যাপক ফায়েজ বলছিলেন, প্রথমে রাজশাহী অঞ্চলে এই সাপের অস্তিত্বের প্রমাণ মিললেও, এখন এই সাপ বেড়ে ক্রমে ফরিদপুর অঞ্চল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই সাপ হঠাৎ করে কেন আর কিভাবে ফেরত এসেছে, তা নিয়ে এখন বাংলাদেশে গবেষণা চলছে। এই সাপ কাটলে স্নায়ু অবশ হয়ে আসে, রক্ত জমাট বেধে যায়। ৭. সবুজ বোড়া সবুজ বোড়া বা গ্রিন ভাইপার সাপকে স্থানীয়ভাবে গাল টাউয়া সাপও বলে। এর মাথার অংশ মোটা বলে এই নামকরণ। এই জাতের মোট ছয়টি প্রজাতি বাংলাদেশে দেখা যায়। এই সাপ সুন্দরবন এবং পাহাড়ি এলাকার জঙ্গলে থাকে বলে এটি মানুষের মুখে মাথায় এবং গায়ে দংশন করে। সাপের পেট থেকে গিলে খাওয়া তোয়ালে যেভাবে বের করলেন ডাক্তাররা এর দংশনে স্নায়ু ও মাংসপেশীতে রক্তপাত হয়, এবং মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। সাপে কাটার প্রতিকার সাপে কাটলেই মানুষের মৃত্যু হবে এমন একটি প্রচলিত ভুল ধারণা চালু আছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ সর্প দংশনের ক্ষেত্রে সাপ থাকে নির্বিষ। ফলে সাপে কাটলেই মৃত্যু হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। তবে, সাপ যদি দংশন করে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সাপে কামড়ানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা মূলত ভারতের তামিলনাড়ু থেকে আসে। অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. হাবিবুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বছরে পাঁচ কোটি টাকার কিছু বেশি পরিমাণ অ্যান্টিভেনম আমদানি করা হয় দেশে। তবে, এই অ্যান্টিভেনম 'অনুপযুক্ত'এবং 'অপ্রয়োজনীয়' --- এমন সমালোচনা রয়েছে। টক্সিকোলজি সোসাইটির অধ্যাপক ফায়েজ বলছিলেন, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, সেটি মূলত চারটি সাপের বিষের একটি 'ককটেল' বা মিশ্রণ, যা কিছু সাপের দংশন নিরাময়ে কাজ করে। বাকি ক্ষেত্রে সেগুলো আংশিক কাজ করে। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের একটি ব্ল্যাক মাম্বা "এটি একেবারেই যথার্থ নয়। তামিলনাড়ু স্থানীয় সাপের বিষ দিয়ে তারা তাদের অ্যান্টিভেনম তৈরি করে থাকে। সেখানকার সাপ এবং সাপের বিষের সাথে আমাদের দেশের সাপের বিষে ফারাক আছে। ভারত থেকে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, তার মাত্র ২০ শতাংশ বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে।" এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে, যেখানকার মানুষকে সাপ কেটেছে, সেখানকার স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করে চিকিৎসা দিতে হবে। না হলে তা কার্যকর হয় না। তবে, প্রতি বছর বন্যার সময় বিশেষ করে সাপে কাটার প্রচুর ঘটনা ঘটলেও এখনো অ্যান্টিভেনম কেবলমাত্র জেলা শহর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সদর হাসপাতালে থাকে। প্রয়োজন এবং চাহিদা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে সরবারহ করা হয়। সাপে কাটলে কী করবেন? চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ যিনি সাপের দংশন এবং অ্যান্টিভেনম নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি বলছিলেন, সাপ কাটলে কী করতে হবে, তার সঙ্গে কী করবেন না---দুইটাই জেনে রাখতে হবে। তার পরামর্শ হচ্ছে--- কী করবেন * দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন * হাত বা পা ভাঙলে যেমন করে শক্ত কিছু দিয়ে কাপড় দিয়ে হলকা করে বাধা হয়, সেভাবে বাধুন * সাপে কাটা পেশী যতটা কম সম্ভব নড়াচড়া করুন, পেশীর নড়াচড়া যত কম হবে, বিষ তত কম ছড়াবে। কী করবেন না * আতংকিত হওয়া যাবে না * ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের অপেক্ষা করে কালক্ষেপণ করবেন না * চিকিৎসক দেখার আগ পর্যন্ত কিছু খাওয়া উচিত না * কোন মলম বা মালিশ লাগানো উচিত না * সাপে কাটা জায়গায় শক্ত করে বাঁধা, কারণ রক্ত জমে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালে অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জার্মানির গ্যেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এর আগে ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ঘোষ এই অ্যান্টিভেনম প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর, তিনি বলছিলেন প্রকল্পের জরিপের কাজ অর্থাৎ দেশি সাপের প্রায় সব ধরণের প্রজাতির ওপর জরিপ চালানো শেষ হয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে বিষধর সাপের প্রজাতি সংগ্রহ এবং সেগুলোর লালনপালনের জন্য লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এ ধরণের কাজ চলছে। বিষধর সাপের জীবনযাপন ও দংশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে পুরোপুরি জানার পরই অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজটি সফল হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
যে সাত সাপ সবচেয়ে বিষধর, সাপে কাটলে যে তিনটি কাজ করবেন, যে পাঁচটি কাজ করবেন না
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
মেডিক্যাল ছাত্ররা সহ মিয়ানমারের সর্বস্তরের মানুষ এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। গত পয়লা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী দেশের পুরো ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। গত বছরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী এই অভ্যুত্থান ঘটায়। বিক্ষোভকারীরা চাইছে তাদের গণতান্ত্রিক-ভাবে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে পুনর্বহাল করা হোক। জাতিসংঘের হিসেবে, গত পয়লা ফেব্রুয়ারি আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত ১৪৯ জন নিহত হয়েছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে। মিয়ানমারে প্রতিদিন যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন, এখানে তাদের কয়েকজনের কাহিনী: কন্যার ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন যে নারী ন হচ্ছেন জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিজ নামে একটি সংগঠনের নেতা। তিনি বলছেন, নিজের এক বছর বয়সী কন্যার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তিনি বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। তিনি তার কন্যার জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ আশা করেন। আমি মিয়ানমারের সংখ্যালঘু কারেন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। কাজেই এরকম বিক্ষোভ আমার কাছে নতুন কিছু নয়। আজকের বিক্ষোভকারীরা স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের মুক্তি এবং ২০২০ সালের ভোটের ফল বহাল করার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ, আমাদের দাবিগুলো আরও গভীরতর। আমরা এমন এক ফেডারেল গণতান্ত্রিক দেশ চাই, যেখানে মিয়ানমারের সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জায়গা থাকবে। সামরিক বাহিনী বহু বছর ধরেই মিয়ানমারের মানুষকে বিভক্ত করে শাসনের কৌশল নিয়েছিল, কিন্তু এখন আমরা সব জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ এক হয়েছি। আমার এক বছর বয়সী একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। আমার কাজের কারণে ওকে ভুগতে হোক এটা আমি চাই না। আমি এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছি, কারণ আমি চাই না যেরকম স্বৈরতন্ত্রের অধীনে আমরা বেড়ে উঠেছি, ওর বেলাতেও সেটাই ঘটুক। এই বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আগে এটা নিয়ে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আমার স্বামীকে বলেছি, যদি আমাকে গ্রেফতার করা হয় বা এই বিক্ষোভে আমার মৃত্যু হয়, ও যেন আমাদের মেয়েকে দেখাশোনা করে, যেন জীবন চালিয়ে নেয়। আমরা আমাদের জীবনেই এই বিপ্লব শেষ করে যাব এবং আমাদের সন্তানদের জন্য এই কাজ রেখে যাব না। ডাক্তারদের পালাতে সাহায্য করছেন যে মেডিক্যাল কর্মকর্তা নন্দ কাজ করেন মায়িক শহরের এক হাসপাতালে। তিনি মিয়ানমারের এই বিক্ষোভের একেবারে সামনের কাতারে সামিল হয়েছেন। কিন্তু নন্দ বলছেন, সামরিক বাহিনী ধরে নিয়ে যেতে পারে এমন ভয়ে মায়িকের বিক্ষোভকারীদের লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ৭ই মার্চের সেই সন্ধ্যায় তখন কারফিউ বলবৎ হতে যাচ্ছে। আমি আমার গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি, গাড়ির জানালায় কালো কাঁচ। আমি একজন অর্থোপেডিক সার্জন, তার স্ত্রী, এক চিকিৎসক এবং তার পরিবারকে তুলে নেই। রাতের অন্ধকারে আমরা তাদের ব্যাগ গাড়িতে তুলি এরপর একটা নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেই। এর মাত্র একদিন আগে সরকারি কর্মকর্তারা মায়িকের হাসপাতালগুলোতে এসে বিক্ষোভে অংশ নেয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার এবং নার্সদের নাম জানতে চায়। তখন আমাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এরা কেন সবার নাম জানতে চাচ্ছে? যদি কর্মকর্তাদের কাছে এদের ডাক পড়ে, তখন কি হবে? যেসব ডাক্তার সরকারি চাকরি করেন, তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, সবাই আত্মগোপনে যাবেন। ধরা পড়লে কি ঘটবে সেটা নিয়ে তাদের মনে অনেক শঙ্কা। আমার ওপর দায়িত্ব পড়লো কিছু ডাক্তারকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার। আমার গাড়ির ভেতরে তখন থমথমে পরিবেশ। যা ঘটছে তা কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না, সবাই তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছে। একজন ডাক্তার বলছিলেন, "ওরা যখন তাদের ইচ্ছেমত যা খুশি করে যাচ্ছে তখন আমাদের মতো লোকজনকে (ডাক্তার এবং মেডিকেল কর্মী) কেন অপরাধীদের মতো লুকিয়ে থাকতে হবে।" আমি কোনদিন ভাবিনি আমাকে কোনদিন এভাবে ডাক্তারদের লুকিয়ে রাখতে হবে, যারা কেউ কোন অপরাধ করেনি। আগামীকাল থেকে মায়িকের মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কেবল অল্প কয়েকজন চিকিৎসকই থাকবেন। সেনাবাহিনীর লোকজন পিটিয়ে যেসব বিক্ষোভকারীদের আঙ্গুল বা হাত ভেঙ্গে দিচ্ছে, মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে, তাদের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় সার্জন হাসপাতালে থাকবে না। মায়িকের হাসপাতালে একজনও শিশু চিকিৎসক বা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ থাকবে না। এই আন্দোলনের এক বড় শক্তি ছিল মেডিকেল কর্মীরা। এখন তাদেরও চলে যেতে হলো। ক্যামেরার পেছনের মানুষটি মং একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, ইয়াঙ্গনে থাকেন। যখন বিক্ষোভ শুরু হলো,তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রতিটি দিন তিনি ধরে রাখবেন, যাতে করে বোঝা যায় কীভাবে এই আন্দোলন গড়ে উঠছে। ২৮শে ফেব্রুয়ারির সেই দিনটা ছিল অবিস্মরণীয়। সেদিন আমি ছিলাম ইয়াঙ্গনের বারগায়া স্ট্রিটে, ব্যারিকেডের পেছনে একেবারে সবার সামনের কাতারে। আমি আমার ফোন দিয়ে ভিডিও করছিলাম। শত শত বিক্ষোভকারী তখন শ্লোগান দিচ্ছে, এবং বোতল এবং ক্যান বাজিয়ে শব্দ করছে। হঠাৎ প্রায় একশো জনের মতো লোক আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। আমি বুঝতে পারছিলাম না এরা পুলিশ নাকি সেনা সদস্য। কোন সতর্কতা ছাড়াই তারা আমাদের দিকে সাউন্ড বোমা, গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে শুরু করলো। ছবি তোলা শুরু করার আগেই আমি পালানোর একটা পথ ঠিক করে রেখেছিলাম। আমি সেই রাস্তাটার দিকে দৌড়ে গেলাম, তবে একই সঙ্গে আমি আমার ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে যাচ্ছিলাম। আমাদের বেশিরভাগই সেদিন পালাতে পেরেছিলাম। এখন আমি যখন কোন বিক্ষোভে যাই, আমাকে সাথে আগুন নিরোধী দস্তানা এবং একটা হেলমেট সাথে রাখতে হয়। আমরা পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাস সুযোগ পেলে পাল্টা তাদের দিকেই ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করি। অনেক সময় আমরা কাঁদানে গ্যাসের শেল বিকল করতে এর ওপর ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেই এবং তারপর পানি ঢেলে দেই। অনেকে সস্তা গ্যাস মাস্ক পরে, তবে গ্যাস থেকে তা পুরোপুরি রক্ষা করতে পারে না। আমরা দেখেছি, মুখে গ্যাস লাগলে তা ধুয়ে ফেলতে ঠাণ্ডা পানীয় কোক খুব কাজ দেয়। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং বিক্ষোভকারী হিসেবে আমি প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রতিদিনই একটি শর্ট ফিল্ম বানানোর সিদ্ধান্ত নেই। এখন যখন আমি এসব ভিডিও দেখি, তখন আমি বুঝতে পারি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ এখন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, আমাদের জীবনের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি আসলে একটি ফিল্মের চেয়েও বেশি অদ্ভুত। সামরিক বাহিনীর ফাঁদে আটকে পড়া এক নারী ফিও একজন গবেষক। আরও দুশ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে তিনি ইয়াঙ্গনের দক্ষিণের এক জেলা সানচুয়াংয়ে এক বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিলেন। তখন তাদের কোণঠাসা করে ফেলে সামরিক বাহিনী। তাদেরকে সেখান থেকে যেতে দেয়া হচ্ছিল না। সেখান থেকে অন্তত ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন ছিল ৮ই মার্চ, যখন নিরাপত্তা বাহিনী এলো তখন দুপুর প্রায় দুইটা। ওরা এসে আমাদের আটকে ফেললো। তখন আমরা দেখলাম, বিভিন্ন বাড়ির লোকজন দরজা খুলে এবং হাত নেড়ে তাদের ওখানে যেতে বলছে। নিরাপত্তা বাহিনী বাইরে অপেক্ষা করছিল কখন আমরা বেরুবো। আমরা একটা বাড়িতে সাত জন ছিলাম। ছয় জন নারী, একজন পুরুষ। বাড়িতে লোকজন ছিল বেশ দয়ালু, ওরা আমাদের খাবার খেতে দিল। আমরা ভেবেছিলাম কয়েক ঘণ্টা পরে বেরুলে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু সাড়ে ছয়টা নাগাদ আমরা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আরো পড়ুন: সেনাবাহিনীর শক্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে কেন বের হতে পারছে না মিয়ানমার? মিয়ানমার অভ্যুত্থান: সেনাবাহিনীর হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় লাখো মানুষ মিয়ানমারের নাগরিকদের বহিষ্কার করলো মালয়েশিয়া আমরা বুঝতে পারলাম, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন সেখান থেকে যাবে না। তখন আমরা পরিকল্পনা করছিলাম কীভাবে পালানো যায়। বাড়ির লোকজন আমাদের বলল, কোন রাস্তা দিয়ে নিরাপদে লুকিয়ে পালানো যাবে, কোথায় কোথায় লুকিয়ে থাকা যাবে। আমরা আমাদের জিনিসপত্র প্রথম আশ্রয়দাতা বাড়ির মালিকের কাছে রেখে গেলাম। আমি একটা সারং পড়লাম যাতে আমাকে দেখতে স্থানীয় কোন মানুষের মতো লাগে, তারপর ঘর থেকে বেরুলাম। আমি আমার ফোন থেকে অনেক অ্যাপ আন-ইনস্টল করলাম। কিছু নগদ টাকা নিলাম। আমরা একটা পুরো রাত আরেকটা নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলাম। সকালে আমরা শুনলাম নিরাপত্তা বাহিনী আর সেখানে নেই। ছবি এঁকেছেন বিবিসির ডেভিস সুরিয়া (নিরাপত্তার স্বার্থে এই প্রতিবেদনে অনেকের নাম বদলে দেয়া হয়েছে এবং বক্তব্য সুস্পষ্ট করতে সাক্ষাৎকার সম্পাদনা করা হয়েছে।)
মিয়ানমার সামরিক অভ্যুত্থান: রাজপথের আন্দোলনে আত্মত্যাগ আর আতংকের কাহিনী
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
অনেকে বিভিন্ন ভুল পদ্ধতির কারণে দৌড়াতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। কীভাবে এ অভ্যাস ধরে রাখা যায় এবং ইঞ্জুরি মুক্ত থাকা যায়? পরামর্শ দিয়েছেন ৬৮ বছর বয়সী বাংলাদেশের আল্ট্রা-ম্যারাথনার নৃপেন চৌধুরী:
দৌড়ানোর টিপস: কী করবেন, কী করবেন না
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশটিতে দশ লাখের বেশি মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে। পরিবার তার জন্য যে পাত্রকে ঠিক করেছিলো - জামিলা (ছদ্ম নাম) তার জন্য ছয় বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। "সে তার বোন আর মাকে নিয়ে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। ছয় বছর পর আমি তো আর আগের মতো খুকি নই। কিন্তু সে এতদিন পরে বলছে, যে সে কোন বিয়ের অনুষ্ঠান চায় না। কারণ সে চায়না কেউ জানুক আমি তার স্ত্রী", বলছিলেন জামিলা। তার মনে হয়েছে এই ছেলেটি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। "আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনি। তাই ইঁদুর মারার বিষ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম।" তার মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। শুধু ২০১৭ সালেই চোদ্দশ নারী সেখানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। এটি আফগানিস্তানের একটি মাত্র ঘটনা । হেরাতের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসেবে শুধু ২০১৭ সালেই আঠারোশ' মানুষ সেখানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। এর মধ্যে চোদ্দশ'ই নারী। আত্মহত্যায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এই সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৬ সালে এক হাজারের মতো মানুষের আত্মহত্যার চেষ্টা রেকর্ড করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। শুধু হেরাত প্রদেশের নয়, পুরো আফগানিস্তান জুড়েই এমন প্রবণতা লক্ষণীয় বলে জানিয়েছে আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন। তারা বলছে, দেশটিতে বছরে তিন হাজারের মতো মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে - যার আশি শতাংশই নারী। তবে হেরাতেই এর অর্ধেক ঘটনা ঘটছে। এই সংখ্যা বেশিও হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল সমাজে অনেক ঘটনা হয়ত পুলিশ বা হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ায় না। কিন্তু কেন মেয়েরা এই পথ বেছে নিচ্ছেন? দারিদ্র, অধিকারের অভাব আর বেকারত্ব বিষয়টিকে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। জোর করে বিয়ে দেয়া এটি সম্ভবত একটি কারণ। আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশনের হাওয়া আলম নুরিস্তানি বলছেন, "জোর করে বিয়ে দেয়া, পারিবারিক নির্যাতন, মানসিক সমস্যাসহ বহুবিধ কারণে আফগান নারীরা মারাত্মক চাপে রয়েছে। হেরাত হল বড় প্রদেশ এবং একটু সেকেলে" আফগানিস্তানে মানসিক রোগ সম্পর্কে সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশটিতে দশ লাখের বেশি মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে। আর বারো লাখ মানুষ উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে ভুগছে। ৪০ বছর ধরে সশস্ত্র সংঘাত চলছে দেশটিতে। মানসিক ব্যাধি সেখানে প্রাধান্য পায়না। তাই সেখানে আসল সংখ্যা বের করা মুস্কিল। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতা মাত্রা ভয়াবহ হয়ত সেটিও একটি কারণ। জাতিসংঘের হিসেবে অন্তত ৮৭ শতাংশ আফগান নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার শিকার। তবে জোর করে বিয়ে দেয়াকে আত্মহত্যার একটি বড় কারণ মনে করা হচ্ছে। দেশটির এক তৃতীয়াংশ মেয়েরই ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। যার মাধ্যমে অসুখী বিয়ে থেকে হয়ত মুক্তি পেতে চেয়েছেন এই নারীরা। নুরিস্তানি বলছেন, "নারীদের আত্মহত্যার মুল কারণই হল নির্যাতন। যেমন ধরুন জোর করে বিয়ে দেয়া। তার কোন মতে গুরুত্ব না দেয়া। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া" জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, দেশটির এক তৃতীয়াংশ মেয়েরই ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। আর এসব কারণের পাশাপাশি দারিদ্র্য একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইঁদুর মারা বিষের সহজলভ্যতা এটিও সম্ভবত একটি বড় কারণ। হেরাতের চিকিৎসকেরা বিবিসিকে জানিয়েছেন গত এক বছরে যারা আত্মহত্যার চেষ্টায় সফল হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করেছেন নিজেকে গুলি করা, কোন ঔষধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহার বা ওভারডোজিং এবং ইঁদুর মারা বিষ। আগে নিজের গায়ে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া ছিল প্রধান পদ্ধতি। আগে নিজের গায়ে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া ছিল প্রধান পদ্ধতি। হেরাতের প্রধান হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিক সিরাজি বলছেন, "গত কয়েক বছরে পশু চিকিৎসকদের ব্যবহৃত ঔষধ বা ইঁদুর মারা বিষ অনেক বেশি সাধারণ মানুষজনের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। যেকোনো দোকানে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে" বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ২০১৭ সালের স্বাস্থ্য গবেষণা কীটনাশক বা এমন বিষ দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে। ভারতেও দরিদ্রদের মধ্যে আত্মহত্যায় এমন বিষ ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। জাতীয় পরিকল্পনা আত্মহত্যা প্রবণতা ঠেকাতে আফগানিস্তানে পুরো দেশব্যাপী ব্যবস্থা না নিলে তা রোধ করা যাবে না বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ৪০ বছর ধরে সশস্ত্র সংঘাত চলা দেশটিতে মানসিক ব্যাধি প্রাধান্য পায়না। ডঃ নাবিল ফাকিরিয়ার তাদের একজন। তিনি বলছেন, "দেশব্যাপী একটি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং আত্মহত্যার কারণগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে" কাবুলে আফগান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এরকম একটি জাতীয় পরিকল্পনা তারা হাতে নিয়েছেন। দেশটির সহকারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিদা মোহাম্মদ পাইকান স্বীকার করেছেন, আত্মহত্যা দেশটির জন্য একটি সমস্যা । তিনি বলছেন, "আপাতত উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেটির উপর ভিত্তি করে কর্মপন্থা ঠিক করা হবে" আর হাওয়া আলম নুরিস্তানি বলছেন, কোথায় গেলে সাহায্য পাওয়া যাবে তা মানুষকে আরো বেশি করে জানাতে হবে।
আফগানিস্তানে কেন রেকর্ড পরিমাণে নারীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন?
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাথলিক চার্চের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে ওই অনুষ্ঠানের পর আরো অনেকেই তাদের একই রকম অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে শুরু করেন। পরে এরই সূত্র ধরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ক্যাথলিক চার্চের ভেতরে শিশুদের যৌন নিপীড়নের বহু কাহিনী প্রকাশ পায়। তৎকালীন পোপ বেনেডিক্টকেও এজন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হয়। যে অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেই টিভির অনুষ্ঠানটি করেছিলেন সেই ক্রিস মোর তার কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের ব্যাপারে চীনের হঠাৎ আগ্রহ কেন ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসের শুরু। বেলফাস্টের ইউটিভি নামের টিভি চ্যানেলের কাউন্টারপয়েন্ট অনুষ্ঠানে একটি রিপোর্ট প্রচার হলো - যা ছিল ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেবার মতো ঘটনা। আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক চার্চের ভেতরে কি হারে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে তা এই অনুষ্ঠানে ফাঁস হলো -এবং এটা ছিল বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের সবচেয়ে হতবাক করার মত ঘটনাগুলোর একটি। বিভিন্ন দেশে যাজকদের যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিচার হয়েছে সাফার লিটল চিল্ড্রেন নামের ওই অনুষ্ঠানটিতে ছিল - একজন ক্যাথলিক যাজকের গল্প যিনি একজন শিশুকামী - যিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। এই শিশুদের মধ্যে কারো কারো বয়স ছিল মাত্র ৬ এবং তাদের মধ্যে ছেলেশিশু এবং মেয়েশিশু - উভয়েই আছে। ওই অনুষ্ঠানে একজন ভিকটিম বলেন, "আমার পরনে ছিল স্কার্ট - যা স্কুলের পোশাক। তিনি বললেন, তোমার স্কার্ট তোলো । আমি ভয় পেয়ে গেলাম - বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। তিনি বললেন, এসো আমার হাঁটুর ওপর বসো। তারপর আমি অনুভব করলাম, তার হাতটা আমার পা বেয়ে উঠছে -আমার স্কার্টের ভেতরে। আমি কাঁদছিলাম। এক সময় তিনি আমার দেহের গোপন অংশে হাত দিলেন।" তিনি বলেন, অনুষ্ঠানটি প্রচার হবার আগে পর্যন্ত আমি বুঝতে পারি নি যে এসব ঘটনা কত ব্যাপক । এটার গুরুত্ব যে কত - তাও বুঝিনি। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটি একটা অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দিয়েছিল, একটা বন্ধ দরজা খুলে গিয়েছিল।" তারকা খেলোয়াড়দের কিছু অদ্ভুত কুসংস্কার ক্রিস মোর ছিলেন একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তার কর্মস্থল ছিল বেলফাস্টে। তবে তার তৈরি করা ওই অনুষ্ঠানটি উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র দু-জায়গাতেই প্রচার হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সাথে সাথেই, এবং তা হয়েছিল সুদূর প্রসারী। শুধু ক্যাথলিক চার্চই নয়, গোটা দেশ, এবং শিশুদের যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে সারা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও এর প্রভাব পড়েছিল। অনুষ্ঠানটি প্রচার হবার কয়েকদিন পরই ডাবলিনে ধর্ষণের শিকারদের সহায়তা দেবার যে কেন্দ্র ছিল -তাদের কাছ থেকে একটি ফোন পেলেন ক্রিস মোর। তাদের কাছে তখন বানের জলের মতো ফোন আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে যাজকদের যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিচার হয়েছে "যে মহিলাটি আমাকে ফোন করেছিলেন, তিনি বললেন, অনুষ্ঠান প্রচারের পর থেকেই তাদের কাছে অসংখ্য ফোন আসছে, এবং সেই কলাররা সবাই তাদের নিজেদের যৌন নির্যাতনের শিকার হবার কথা বলছেন। তারা বলছেন, তারা এতদিন এসব কথা গোপন রেখেছিলেন, দশকের পর দশক ধরে। একজন ফোন করেছিলেন তার বয়স এখন তিরাশি। তিনি তার শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং তা তিনি এতদিন কাউকে বলেন নি। তার কাহিনি শুনে আমাদেরই চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তখনই আমি বুঝতে পারলাম যে একটা বড় ঘটনা ঘটে গেছে।" ক্রিসের এ নিয়ে রিপোর্ট করার ভাবনা মাথায় এসেছিল এক বড়দিনের পার্টিতে একজন মহিলার সাথে পরিচয়ের পর। তিনি ফাদার বেন্ডন স্মিথ নামে একজন ক্যাথলিক যাজকের যৌন নিপীড়নের কথা সবাইকে জানিয়ে দিতে চাইছিলেন। মহিলাটির অভিযোগ ছিল, তাকে এবং তার বোনকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন ফাদার স্মিথ। শুধু তাই নয়, বেলফাস্টের একই পরিবারের অন্য কয়েকটি শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি এর পর আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের ডাবলিনে চলে যান - তাই তাকে গ্রেফতার করা যায় নি, এবং তাকে বিচারের জন্য ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছিল। পোপ বেনেডিক্ট পরে এসব ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন যে পরিবারটি এই ফাদার স্মিথের বিরুদ্ধে প্রথম পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে তার সাথে দেখা করলেন ক্রিস মোর। তিনি জানতে পারলেন এই ফাদার স্মিথ শুধু যে তাদের গির্জার পুরোহিত ছিলেন তাই নয়, তাদের একজন পারিবারিক বন্ধুও ছিলেন। তিনি বলেন, "এই পরিবারটিই প্রথম তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ আনে। কারণ তাদের পরিবারের চারটি শিশু এমন একজনের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় - যিনি তাদের বাড়িতে আসতেন, একজন পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। যখন পরিবারের বড়রা খাবার টেবিলে, ডিনার করছে, তখন ওই শিশুরা তাদের বেডরুমে খেলছিল। তিনি সেই ঘরে ঢুকে তাদের যৌন নিপীড়ন করেন। তাদের কয়েকজন আত্মীয়ও একই ভাবে নিপীড়নের শিকার হয়।" "তারা অনেক বছর এ ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। তারা চার্চ ও পুলিশের কাছেও গিয়েছিলেন, এবং তাদের বারবার আশ্বাস দেয়া হয় - এমন আর ঘটবে না। কিন্তু তারপরও এটা বন্ধ হয় নি। এরকম ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে - শত শত, হাজার হাজার । মনে হয়, সবখানেই এমন হচ্ছে," বলেন ক্রিস মোর। এর পর অন্য আরো ক্যাথলিক যাজকদের ঘটনা বের হতে লাগলো - যাদের হাতে শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে। যাজকদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের মধ্যে কারো কারো বয়স ছিল মাত্র ৬ এবং তাদের মধ্যে ছেলেশিশু এবং মেয়েশিশু অনুষ্ঠানটি প্রচারের পর এসব ঘটনার শিকার হয়েছিলেন এমন অনেকেই ক্রিসের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে চাইলেন। "আমি ভাবলাম, এটা আমার কর্তব্য অন্যদের কথা শোনা। আমি কাউকে ফিরিয়ে দেই নি। তারা নিজে থেকেই ওই সব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, অনেকে কেঁদেছেন। তাদের কথা শুনে আমার নিজেকে সামলে রাখা সহজ ছিল না। কিন্তু বাড়ি ফিরে , একান্তে আমার স্ত্রীকে যখন আমি এসব কথা বলেছি, তখন আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নি। এতই ভয়াবহ সে সব ঘটনা।" ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এসব ঘটনার কথা শোনার প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ক্রিসের নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। "যখন আমার প্রথম নাতির জন্ম হলো - তার পর বেশ কয়েকবার সে আমাদের বাড়িতে ছিল। একবার আমার স্ত্রী আমাকে বললো, আমি লক্ষ্য করেছি তুমি কখনো ওর ন্যাপি পাল্টে দাও না। কারণটা কি? আমি বলেছিলাম আমার সমস্যা হয়। আমি যেসব ভয়াবহ গল্প শুনেছি, তার পর তাকে আমি স্পর্শ করতে চাই না। তখন আমার স্ত্রী বললো, তোমার সাহায্য দরকার।" "আমার সাহায্য নিতে হয় নি, তবে এর পর থেকেই আমি যৌন নিপীড়নের শিকারদের ফোন ধরা বা তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। আমি আর এসব নিতে পারছিলাম না। তাদের বেদনা উপশম করার ক্ষমতা আমার আর ছিল না। আমি অনুভব করছিলাম,আমি শক্তিহীন হয়ে পড়ছি।" আয়ারল্যান্ডের এই ঘটনার পর, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশেও অনেকেই যাজকদের যৌন নিপীড়নের শিকার হবার ঘটনা ফাঁস করে দিতে লাগলেন। ক্যাথলিক চার্চ একটা সংকটে পড়ে গেল। ক্রিস নিজেও কিছুদিনের বিরতির পর আবার এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করলেন। তার অনুসন্ধানের এবারের বিষয় হলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে চার্চ নিজেই। তারা এসব ঘটনার ব্যাপারে কতটুকু জানতো? কেন তারা এসব থামাতে ব্যর্থ হলো? এসব প্রশ্নই তুলতে লাগলেন ক্রিস । "চার্চ এ সম্পর্কে বহু কিছুই জানতো। তারা যাজকদের অবাধে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে দিয়েছে। চার্চগুলোর গোপন ভল্টে এমন সব কাগজপত্র পাওয়া গেছে যাতে দেখা যায় - তারা নির্যাতনকারী যাজকদের সম্পর্কে বিশদ তথ্যসমৃদ্ধ দলিলপত্র রাখতো। নির্যাতনের শিকাররা যেসব কথা তাদের বলেছে, সেসব খুঁটিনাটি তথ্যও তারা সংরক্ষণ করেছে। পরে এসব তথ্য পুলিশের জন্য অনেক কাজে লেগেছে। কারণ এতে নিশ্চিত হয়েছে যে চার্চ এ বিষয়ে জানতো এবং নিপীড়নের শিকাররা যা বলেছিল তাও এসব দলিল থেকে নিশ্চিত করা গিয়েছিল। এসব কথা তাদের নিজেদের হাতেই লেখা ছিল । তারপরেও তারা এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। চার্চের সুনাম রক্ষাই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।" তখন ক্রিস যা উদঘাটন করলেন, তা ছিল অত্যন্ত গুরুতর। একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকলে এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয় তিনি বলেন, "আমি কখনোই মনে করি না যে সব যাজকই এমন । কিন্তু শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা যারা জেনেও গোপন রেখেছে. এবং নির্যাতনকারীদের আইনের হাতে তুলে দেয় নি - তারাও একই অপরাধে অপরাধী।" ক্রিস বরাবর বলে এসেছেন যে এসব ঘটনাকে 'ধর্ষণ এবং এক ধরণের অত্যাচার বলে অভিহিত করা উচিত । "হ্যাঁ। সংবাদ মাধ্যমে এসব ঘটনাকে যাজকদের যৌন নিপীড়ন বলা হয় - এটা ঠিক নয়। আমাদের এসব ঘটনাকে এভাবে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে উপস্থাপন করা উচিত নয়, ক্যাথলিক চার্চের জন্য ব্যাপারটাকে সহজ করে দেয়া উচিত নয়। এগুলো যা - ঠিক সেভাবেই তাকে বর্ণনা করা উচিত। আমাদের বলা উচিত - এরা হচ্ছে ধর্ষণকারী যাজক। এটা এমন কোন ঘটনা নয় যেখানে একজন নির্দোষ যাজক একটি মেয়ের পা স্পর্শ করছে। এটা হচ্ছে একজনের নিজ দেহের সম্ভ্রমকে লঙ্ঘন করা," বলেন তিনি। পরে ফাদার ব্রেন্ডন স্মিথের কারাদণ্ড হয়। আয়ারল্যান্ডে যৌন নিপীড়নকারী যাজকদের সংখ্যা এবং কয়েক দশকেও যে এসবের কোন শাস্তি হয় নি- এটা প্রকাশ পাবার পর ২০১০ সালে পোপ বেনেডিক্ট এ জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। ক্রিস মোর বলেন, "যারা এসব ঘটনার কথা বলতে এগিয়ে এসেছেন -তারা আমাকে বিস্মিত করেছে। আর ক্যাথলিক চার্চের প্রেস অফিস যেভাবে এসব অস্বীকার করতে চেষ্টা করেছে - তাও আমাকে অবাক করেছে।" "তারা আমাকে বলতো কিভাবে আপনি রিপোর্ট করছেন, তাতে কি বলছেন তা নিয়ে সাবধান থাকবেন। তারা বলতো, এতে অনেক ভালো মানুষ আহত হবেন। আমি জবাবে বলেছি, অনেক ভালো মানুষ ইতিমধ্যেই আহত হয়েছে। আপনাদের বরং সেটা নিয়েই ভাবা উচিত। এখানে তো আপনাদের উচ্চ নৈতিক অবস্থানের কোন সুযোগ নেই। লোকে এখন তার গোপন কথা আরেকজন জেনে যাবে - এই ভয়ে ভীত নয়।" ক্রিস মোর এখনও বেলফাস্টেই থাকেন এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তিনি একাধিক বইও লিখেছেন।
ক্যাথলিক চার্চে যাজকদের হাতে শিশুদের যৌন নির্যাতনের কাহিনি
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
আরএসএস-এর হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের আদর্শ নিয়ে আমি শঙ্কিত, কারণ এটা নাৎসিদের আদর্শের মত - ইমরান খান মোদী সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের সাথে হিটলার এবং নাৎসিদের তুলনা করছেন। সোমবার টুইটারে ইমরান লিখেছেন, "কারফিউ, কঠোর বিধিনিষেধ, এবং ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে আসন্ন গণহত্যা আরএসএস-এর (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং-সেবক সংঘ) আদর্শ, যে আদর্শ নাৎসিদের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। জাতিগত শুদ্ধির মাধ্যমে কাশ্মীরের জনসংখ্যার অনুপাত বদলের চেষ্টা চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মিউনিখে হিটলারকে যেভাবে তোষণ করা হয়েছিল, বিশ্ব কী এবারও তেমনই ভূমিকা নেবে?" তার আগে আরেকটি টুইটে ইমরান খান লেখেন, "আরএসএস-এর হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের আদর্শ নিয়ে আমি শঙ্কিত, কারণ এটা নাৎসিদের আদর্শের মত।" "ভারত শাসিত কাশ্মীরে এই আদর্শ প্রতিহত করতে হবে। না হলে ভারতে মুসলিম নির্যাতন বাড়বে এবং একসময় পাকিস্তানকেও টার্গেট করা হবে। হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদ হিটলার-শাহিরই একটি সংস্করণ।" আরএসএস ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মূল আদর্শিক সংগঠন। শ্রীনগরে হাজার লোকের বিক্ষোভের ছবি বিবিসির হাতে অবরুদ্ধ কাশ্মীরে ঈদ: 'ঈদ নয়, এটা এবার শোক' টুইটারে ভারতের কট্টর হিন্দু সংগঠন আরএসএস-কে নাৎসিদের সাথে তুলনা করেছেন ইমরান খান নাৎসিদের সাথে তুলনা বোঝাই যায়, ভারতের সরকারি দলের সাথে হিটলার এবং নাৎসিবাদের সাথে তুলনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন ইমরান খান। ফেব্রুয়ারিতে ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের সাথে যুদ্ধ প্রায় প্রায় বেধে গিয়েছিল। ক'মাস যেতে না যেতেই কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বিলোপের ভারতের এই অকস্মাৎ সিদ্ধান্তের প্রচণ্ড এক ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে তাকে। মিডিয়া রিপোর্ট এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য থেকে এটা কম-বেশি স্পষ্ট যে, সোমবার যেভাবে ভারত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন অবসান করে, তাতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেহমুদ কোরেশি সেদিনই জিও টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে কার্যত স্বীকার করেন, তিনি ভারতের এই পদক্ষেপে তিনি হোঁচট খেয়েছেন। পরপরই পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে একের এক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। পরিবেশ রক্ষার জন্য 'একদিন পর পর মলত্যাগ করুন' রক্ত ধোয়ার পানি কি ডেঙ্গুর জন্য বিপজ্জনক পাকিস্তানের কোয়েটায় কাশ্মীরের সমর্থনে সমাবেশ কূটনীতিই কি পাকিস্তানের একমাত্র পথ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দফায় দফায় সরকারী মন্ত্রী এবং সেনা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলছেন। ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসাথে দিল্লিতে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সোমবারই এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের মানুষের প্রতি দায়বোধ পালনে তারা যে কোনো পথ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সাথে আরেকটি যুদ্ধের মতো চরম কোনো পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা পাকিস্তানের? এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মহল থেকে কার্যত সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে। সামরিক পথে যাওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন জাতিসংঘে পাকিস্তানের দূত মালিহা লোধী। শুক্রবার সিএনএন সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক পথে এগুনোর বহু রাস্তা পাকিস্তানের সামনে খোলা, এবং সেই পথেই তারা এগুবে। দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা বিষয়ের বিশ্লেষক ড সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসিকে বলেন, কাশ্মীরের সর্ব-সাম্প্রতিক এই ইস্যুটিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যাওয়া ছাড়া পাকিস্তানের সামনে এখন তেমন কোনো বিকল্প নেই। "জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি প্রস্তাব রয়েছে। ভারতের সিদ্ধান্তে ঐ সব প্রস্তাব অকার্যকর হয়ে যায়নি। জাতিসংঘ এবং একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যেতে হবে পাকিস্তানকে। জুলাইতে পেন্টাগনে পাকিস্তান ও মার্কিন সেনাপ্রধান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কতটা গুরুত্ব দিতে পারে ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য উন্মুখ এবং সেজন্য তালেবানের সাথে তারা একটি শান্তি মীমাংসা করছে। এই প্রচেষ্টায় সাফল্যের পাকিস্তানের সহযোগিতা আমেরিকার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ। ড. আলী বলেন, ইমরান খান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া ভালো - যেটা হয়তো পাকিস্তান কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। "ট্রাম্প ও ইমরানের সম্পর্ক বহুদিনের, ২৫ বছর ধরে তারা পরস্পরকে চেনেন, যোগাযোগ আছে।" পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দি ডেইল টাইমস পত্রিকা এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, আমেরিকা এবং নেটো যদি জাতিসংঘ প্রস্তাব মেনে চলার জন্য ভারতের ওপর চাপ তৈরি না করে, তাহলে পাকিস্তানের উচিৎ আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া। আফগানিস্তান-ভারতের বাণিজ্য পথ এবং পাকিস্তানের আকাশ ভারতের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করছেন পাকিস্তানের কেউ কেউ। চীনের ওপরও চাপ তৈরির কথা লিখেছে ডেইলি টাইমস - "চীন যদি চায় চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নিরবিচ্ছিনভাবে চলুক, তাহলে চীনকে পাকিস্তানের সাথে কাঁধ মেলাতে হবে।" পাকিস্তানের সাবেক একজন কূটনীতিক এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শামসাদ আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, পাকিস্তানের সরকারের উচিৎ প্রভাবশালী দেশেগুলোতে গিয়ে গিয়ে বলা যে ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের কত বড় হুমকি তৈরি হয়েছে। "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন কাশ্মীর প্রসঙ্গে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব করলেন, পরপরই ভারত কাশ্মীরে এই কাণ্ড করলো..এখানে পাকিস্তানের কোনো ভূমিকাই নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানকে এই বিষয়টিকেই বোঝাতে হবে।" কাশ্মীরিরা এখনও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চায়। শ্রীনগরে একটি সমাবেশ (ফাইল ফটো) পাকিস্তানের আরেক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব নাজমুদ্দিন শেখ বলেন, আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তান, তবে কোনো ভাবেই পাকিস্তানের উচিৎ হবেনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টিকে শর্ত হিসাবে তুলে ধরা। "পাকিস্তানের এখন উচিৎ হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রদের কাছে গিয়ে বলা যে, আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার সার্থে পাকিস্তান এবং ভারতের সংঘাতের সমাধান হওয়া প্রয়োজন।। কিন্তু আফগান শান্তি প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা একবারেই ঠিক হবেনা।" কাশ্মীরে বিদ্রোহে অস্ত্র বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি মাথা গলানোর কোনো চেষ্টা থেকেও পাকিস্তানের বিরত থাকা উচিৎ বলেও মনে করেন নাজিমুদ্দিন শেখ। "ভারত সবসময় দেখাতে চায় পাকিস্তান কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারাই সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঢুকিয়ে দেয় কাশ্মীরে। সুতরাং এখন এমন কিছু করা পাকিস্তানের জন্য ঠিক হবেনা যাতে ভারত কোনো অজুহাত পেতে পারে।" এপ্রিলে চীন সফরের সময় ইমরান খান ও শি জিন পি এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত - পাকিস্তান সেই পথেই যাচ্ছে। ইমরান খানের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং টুইটগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি কাশ্মীরের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পথই নিচ্ছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি জেদ্দায় গিয়ে ইসলামি ঐক্য সংস্থা বা ওআইসির কাছে গিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। শুক্রবার তিনি চীনে গেছেন। চীন কতটুকু এগুতে পারে? শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক হয়েছে। পরে পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে চীন। লাদাখের কিছু কিছু এলাকার মালিকানা দাবি করে চীন, ফলে ইতিমধ্যেই তারা লাদাখকে ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছে। চীনা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তবে শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা সামলাতে হচ্ছে বেইজিংকে। ফলে কাশ্মীরিদের ব্যাপারে তারা পাকিস্তানকে কতটা জোরালো সমর্থন জোগাবে, তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞেরই সন্দেহ রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্য স্থায়ী সদস্যদের পক্ষ থেকেও ভারতের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে শোনা যায়নি।
কাশ্মীর: কী করতে পারে পাকিস্তান, ক্ষমতা কতদূর
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
দোকানে বিক্রি হচ্ছে ফেয়ার এন্ড লাভলির সামগ্রী। একই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যাদের গায়ের রঙ একটু ফর্সা বা হালকা তারা একটু বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় সব সমাজে এর মারাত্মক প্রভাব থাকলেও এনিয়ে আলোচনা খুব কমই হয়। হার্ষারিন কাউর বেড়ে উঠেছেন নিউজিল্যান্ডে। বড় হয়ে প্রথমবারের মতো তার পূর্ব পুরুষের দেশ ভারতে বেড়াতে গিয়ে একটা জিনিস দেখে তিনি খুবই অবাক হন। আর সেটা হলো গায়ের রঙ পরিবর্তন করার ব্যাপারে সামাজিক চাপ। চারপাশে সিনেমার যেসব বিলবোর্ড লাগানো সেসব দেখে মনে হয় যাদের গায়ের রঙ ফর্সা বা হালকা শুধু সেসব নারী পুরুষরাই যেন এই শিল্পে সফল হতে পেরেছে। টেলিভিশনেও ত্বকের যত্ন নেওয়ার যেসব সামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় সেগুলোতে জোর দিয়ে বলা হয় যেসব নারীর গায়ের রঙ ফর্সা তারা চাকরি, স্বামী ও সুখ খুঁজে পায়। "নিউজিল্যান্ডে আমি কখনো গার্নিয়ে কিম্বা ল'রিয়াল কোম্পানিকে কখনো তাদের পণ্যের প্রচারণা চালাতে দেখিনি। কিন্তু ভারতে এনিয়ে সবখানেই বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে," বলেন কাউর, যিনি ইন্সটাগ্রামে দ্য ইন্ডিয়ান ফেমিনিস্ট নামে জনপ্রিয় একটি পাতা পরিচালনা করেন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ল'রিয়াল কোম্পানি ২০২০ সালের জুন মাসে ঘোষণা করে যে তারা ত্বক সংক্রান্ত তাদের সকল পণ্য থেকে "শাদা", "ফর্সা" এবং "হালকা" এই শব্দগুলো তুলে নেবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গায়ের রঙ ফর্সা করার কথা বলে এসব পণ্যের বড় আকারের বাজার গড়ে উঠেছে। এসব দেশের মানুষের গায়ের রঙ সাধারণত একটু কালো হয়। বিষুবরেখার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে গায়ের এই রঙ প্রয়োজনীয়। বৈষম্য ও কালারিজম একই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যাদের গায়ের রঙ ফর্সা বা হালকা তাদের সঙ্গে বাকিদের যে বৈষম্য তাকে বলা হয় কালারিজম। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। তবে দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে এটা নিয়ে তেমন কথাবার্তা হয় না, যদিও এসব দেশে গায়ের রঙ নিয়ে অনেকে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। আরো পড়তে পারেন: রং ফর্সা করার মূল্য কীভাবে দিচ্ছেন লাখ লাখ নারী গায়ের রং ফর্সা করার 'বর্ণবাদী' অ্যাপ নিয়ে বিতর্ক নাম পাল্টাবে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে কি? কালো কিংবা মোটা শরীর নিয়ে তিক্ত যত অভিজ্ঞতা আইভোরি কোস্টে রঙ ফর্সা করার বিজ্ঞাপন। তবে ২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং বর্ণবাদ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সমাজেও লোকজন গায়ের রঙ সংক্রান্ত বৈষম্য বা কালারিজম নিয়ে আলোচনা করছে। নেটফ্লিক্সের নতুন একটি রিয়েলিটি সিরিজ 'ইন্ডিয়ান ম্যাচ-মেকিং' নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে যেখানে কাঙ্ক্ষিত পাত্র পাত্রী খুঁজতে গিয়ে ফর্সা পাত্রপাত্রীকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিবাদের মুখে লোকজন এখন এধরনের পণ্যের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরো বেশি সোচ্চার হয়েছে। 'ফেয়ার এন্ড লাভলি' কোন কোন কোম্পানি এসব প্রতিবাদে সাড়া দিয়েছে। ফেয়ার এন্ড লাভলি ব্র্যান্ডের মালিক কোম্পানি ইউনিলিভার ঘোষণা করেছে ত্বক সংক্রান্ত তাদের যেসব পণ্য আছে সেগুলো থেকে "সুন্দর", "ফর্সাকারী" এবং "রঙ হালকা করে" এধরনের কথা সরিয়ে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ফেয়ার এন্ড লাভলির নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হবে গ্লো এন্ড লাভলি। কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলছেন, ব্রান্ডের নাম পরিবর্তনের জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো ইতোমধ্যেই করা হচ্ছিল কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে এই প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। এর মধ্যে ফেয়ার এন্ড লাভলির পণ্য দোকানের শেল্ফ থেকে সরিয়ে নেয়ারও আবেদন জানিয়েছে অনেকে। এই মর্মে একটি পিটিশনও শুরু হয়েছে। এধরনের পণ্য বিক্রি অব্যাহত রেখে বর্ণবাদের সমালোচনা করায় ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেন জোপেরও নিন্দা জানানো হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়। উল্লেখ্য যে ইউনিলিভার তাদের পণ্য বিক্রি করে বছরে আড়াইশো মিলিয়ন পাউন্ড আয় করে থাকে। একই সাথে ফেয়ার এন্ড লাভলির নাম পরিবর্তন করে গ্লো এন্ড লাভলি করার সিদ্ধান্তে ইউনিলিভারের প্রশংসাও করছে কেউ কেউ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নাম পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। কারণ এই পণ্যগুলো এখনও বাজারে রয়ে গেছে। নতুন নামেরও সমালোচনা "আমি জানি না এটি ভিন্ন কিছু কিনা। আমি তাদের প্রশংসা করি কারণ তারা নাম বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্ভবত এটিই সবচেয়ে পরিচিত ব্র্যান্ড। তবে আমি নতুন নাম গ্লো এন্ড লাভলি দেখে হতাশ হয়েছি। কারণ গ্লো হচ্ছে ফর্সাকারীর মতোই আরেকটি শব্দ," বলেন নিক্কি খান্না, ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক, যিনি গায়ের রঙ এর কারণে বৈষম্য নিয়ে ২০ বছর ধরে গবেষণা করছেন। "গ্লো শব্দটি বলতে যা বোঝায় এবং বছরের পর বছর ধরে তারা যেসব বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে তার অর্থ একই। এতে রঙ ফর্সা করাকেই বোঝানো হচ্ছে। আমি আশা করবো তারা এতে পরিবর্তন আনবে। এই পরিবর্তন মানে এসব পণ্য পুরোপুরি সরিয়ে ফেলা।" কালারিজমের পরিণতি এবিষয়ে যদিও খুব বেশি গবেষণা হয়নি, তার পরেও কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে কালারিজমের ফলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পড়ে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে এশীয়-আমেরিকান নারীদের বিষণ্ণতার সাথে গায়ের রঙ কালো হওয়ার কুসংস্কারের সম্পর্ক রয়েছে। দোকানে সজ্জিত প্রসাধনী সামগ্রী। "ইতিহাসে দেখা যায় যে অনেক সমাজেই গায়ের রঙ কালো হওয়াকে খারাপ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ধরে নেওয়া হয় যে তারা 'নোংরা' এবং 'কম শিক্ষিত।' সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই ধারণাই চলে এসেছে," বলেন এলিজিয়া ট্র্যান, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং এই গবেষণার সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। "দক্ষিণ এশীয় সমাজে এরকম বহু বছর ধরেই চলে আসছে। সেখানে জাতপাতের সাথে সামাজিক অবস্থানের একটা সম্পর্ক রয়েছে।" ভারতীয় বিয়ে শাদি ভারতীয় সমাজে গায়ের রঙ নিয়ে এই বৈষম্য অনেক বেশি প্রকাশ পায় বিয়ে শাদির ঘটনায়। এসময় সাধারণত মুরুব্বিরা গায়ের রঙ-এর বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাধারণত পিতামাতারা তাদের সন্তানদের বিয়ে ঠিক করেন। সম্ভাব্য পাত্র পাত্রী ও তাদের পরিবার দেখেই তারা বর ও কণে পছন্দ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অনুমতির পরেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে এখন তরুণ তরুণীদের নিজেদের পছন্দে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে, যাকে বলা হয় লাভ ম্যারেজ বা প্রেম করে বিয়ে। কখনও কখনও এনিয়ে পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধের ঘটনাও ঘটে। ভারতে পারিবারিক-ভাবে যেসব বিয়ে হয় তার ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে যে হবু শাশুড়িরা যেসব মেয়ের গায়ের রঙ কালো তাদেরকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে চান না। ঘরে তোলার জন্য তারা ফর্সা রঙের মেয়েদেরকেই প্রাধান্য দেন। পারিবারিক বিয়ের বিজ্ঞাপন গবেষণার এসব ফলাফলে বিস্মিত হওয়ার মতো কিছু নেই। পরিবারের উদ্যোগে যেসব বিয়ে হয় এবং তার জন্য পত্রিকায় দেওয়া 'পাত্র চাই' 'পাত্রী চাই' বিজ্ঞাপনের মধ্যেও সেটা পরিষ্কার। সেখানে দশকের পর দশক ধরে ফর্সা মেয়েদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পাত্রীর পরিবার থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপনেও মেয়ের রঙ যে ফর্সা সেটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। পাত্র পাত্রী সন্ধান করার যেসব ওয়েবসাইট আছে সেখানেও ত্বকের রঙ এর কথা উল্লেখ করে ফিল্টার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে জানতে চাওয়া হয় আপনি 'ফর্সা', 'গমের মতো' নাকি 'শ্যামলা' কোন ধরনের পাত্রী চান। এসব সিলেক্ট করে করে আপনি আপনার পছন্দের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। বলিউড মুভির পোস্টারে ফর্সা নায়ক নায়িকা। আরো পড়তে পারেন: বাংলাদেশে আটটি রং ফর্সাকারী ক্রিম নিষিদ্ধ রং ফর্সাকারী ক্রিম কি আসলেই ফর্সা করে? প্রতিবাদের মুখে রং ফর্সা করার ফিল্টার সরালো ঘটকালির ওয়েবসাইট স্কিন ফিল্টার "পত্র পত্রিকার বিজ্ঞাপনে গায়ের রঙ এর কথা উল্লেখ করা হতো পাত্র-পাত্রী বাছাইর এর ক্ষেত্রে ফিল্টারিং এর জন্য। তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মানুষের মতো কোম্পানিরও পরিবর্তন ঘটেছে। চার থেকে পাঁচ বছর আগে আমরা এই স্কিন ফিল্টার পরিহারের সিদ্ধান্ত নেই," বলেন আধিশ জাভেরি, শাদিডটকমের মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক। কিন্তু স্কিন ফিল্টারের এই ছায়া ওয়েবসাইটে রয়ে গেছে: ব্যবহারকারীরা সেখানে গিয়ে পাত্র পাত্রীর স্কিন টোন বা গায়ের রঙ সিলেক্ট করতে পারেন। এই খবরটি যখন উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় নারীদের একটি ফেসবুক গ্রুপের কাছে গিয়ে পৌঁছালো তারা বিষয়টি শাদিডটকমের নজরে আনার জন্য সাথে সাথেই এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে শুরু করে দিল। "২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা দেড় হাজার স্বাক্ষর পেয়ে গেলাম," বলেন হেতাল লাখানি, টেক্সাসে ডালাসের একজন বাসিন্দা যিনি এই পিটিশন শুরু করেছিলেন। "এর পর শাদিডটকম ফিল্টারটি উঠিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।" সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অতীতে গায়ের রঙ নিয়ে বৈষম্য বা কালারিজমের বিষয়ে খুব একটা নজর দেওয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমানে সোশাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের কারণে এই মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটছে। পুরুষদের টার্গেট করেও বাজারে এধরনের পণ্য ছাড়া হচ্ছে। এবিষয়ে একটি বই লিখেছেন ভারতীয়-আমেরিকান নারী নিক্কি খান্না: এশিয়ান আমেরিকান উইমেন অন স্কিন কালার এন্ড কালারিজম। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন নারীর এসংক্রান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছেন, "কালারিজমের মতো বিষয়ের ওপর আলোচনা আজকের ডিজিটাল জগতে কীভাবে বদলে যাচ্ছে তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই বই।" সোশাল মিডিয়ায় প্রচারণা নিক্কি খান্না এই প্রকল্পটি শুরু করেছিলেন ২০১৭ সালে ফেসবুকে এসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করার আহবান জানিয়ে। তিনি বলেন, "সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমি আমি আমার নিজের নেটওয়ার্কের বাইরের নারীদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।।" নিক্কি খান্না জানান, শুরুতে তিনি অবাক হয়েছিলেন কালারিজম যে এশীয় নারীদের জন্য একটি সমস্যা সেবিষয়ে তাদের কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু পরে এই ধারণায় পরিবর্তন ঘটেছে। তাতে বড়ো ধরনের ভূমিকা রেখেছে সোশাল মিডিয়াতে চলা বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা। তার মধ্যে রয়েছে ডার্ক ইজ বিউটিফুল বা কালোই সুন্দর এবং হ্যাশট্যাগ দিয়ে ব্রাউন ইজ বিউটিফুল - এধরনের ক্যাম্পেইন। সেখানে দক্ষিণ এশীয় নারীরা এবিষয়ে কথা বলার সুযোগ পায় এবং এক পর্যায়ে নিরবতা ভেঙে তারা মুখ খুলতে শুরু করে। সোশাল মিডিয়া যে শতাব্দী-প্রাচীন এসব বিশ্বাস ভেঙে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেবিষয়ে এলিজিয়া ট্র্যানও একমত। কালারিজমের কথা যারা তুলে ধরছেন তাদের বেশিরভাগই নতুন প্রজন্মের। তারা বুঝতে পারছেন গায়ের রঙ নিয়ে যে বৈষম্য তাতে জেনারেশন গ্যাপের ভূমিকা রয়েছে। "সামান্য একটু আলোচনা, অল্প কিছু কথাবার্তা- এসব অনেক বড় বিষয়। এসবের মাধ্যমে আমরা সমাজের অনেক কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসতে পারবো," বলেন এলিজিয়া ট্র্যান।
'রঙ ফর্সা না কালো' : গাত্রবর্ণ নিয়ে নিজ জাতির কাছেই যারা বৈষম্যের শিকার
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
মানুষের কম্পিউটার গ্রাফিক্স "আমি আর পারছিনা. আমি সব ছেড়ে দিচ্ছি।" লিখেছিলো সে। এর কিছুক্ষণ পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে ঋণগ্রস্ত ছিল। এছাড়া মায়ের সাথে বিবাদ চলছিল এবং চরম বিষণ্ণতায় ভুগছিল সে। তার বিশ্ববিদ্যালয় নানজিং থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আমস্টারডামের একটি কম্পিউটারে চলমান এক প্রোগ্রামে শনাক্ত করা হয় চীনের এই শিক্ষার্থীর পোস্টটি। ওই কম্পিউটার প্রোগ্রামটি মেসেজটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে চীনের বিভিন্ন এলাকায় থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের নজরে আনে যাতে তারা দরকারি ব্যবস্থা নিতে পারে। যখন তারা এত দূর থেকে মিস্টার লিকে জাগিয়ে তুলেতে সক্ষম হল না তখন স্থানীয় পুলিশের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানায় এবং এরপর তারা এসে তাকে বাঁচায়। আরো পড়ুন: সাগরদ্বীপে উপকুল অতিক্রম করেছে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল কেন মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট? উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব কার শুনতে নিশ্চয়ই এটা খুব বিস্ময়কর বা অসাধারণ শোনাচ্ছে কিন্তু ট্রি হোল রেসকিউ টিমের সদস্যদের আরও অনেক সাফল্যের কাহিনীর মধ্যে এটা একটি মাত্র। এই উদ্যোগের প্রধান ব্যক্তিটি হচ্ছেন হুয়াং ঝিশেং, যিনি ফ্রি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের একজন শীর্ষ আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স(কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) গবেষক। গত ১৮ মাসে চীন-জুড়ে ছয়শও স্বেচ্ছাসেবক তার এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছে, যারা বলছে প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি মানুষকে তারা বাঁচিয়েছে। "এক সেকেন্ড যদি আপনি ইতস্তত করেন, অনেক প্রাণ শেষ হয়ে যাবে"-বিবিসি নিউজকে বলছিলেন মিস্টার হুয়াং। "প্রতি সপ্তাহে, প্রায় ১০জনকে আমরা প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম"। প্রথম রেসকিউ অপারেশন চালানো হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল। চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শ্যানডং প্রদেশের ২২ বছর বয়সী আরেক তরুণী তাও ইয়ো, উইবোতে লিখেছিল যে দুইদিন পরে নিজেকে শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। চাইনিজ একাডেমী অব সায়েন্স-এর স্বেচ্ছাসেবক পেং লিং নামে এবং আরে কয়েকজন বিষয়টিতে বিচলিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। মিজ পেং বিবিসিকে বলেন, তারা আগের এক পোস্ট থেকে ওই শিক্ষার্থীর একজন বন্ধুর ফোন নম্বর পান এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। আমি ঘুমানোর আগে তাকে মেসেজ করার চেষ্টা করি এবং বলি যে আমি তাকে তুলতে পারবো। তার উইচ্যাট মেসেজ গ্রুপের একজন বন্ধু হিসেবে সে আমাকে যুক্ত করে এবং ধীরে ধীরে শান্ত হয়। তখন থেকে তার দিকে আমি নজর রাখতাম যেমন সে খাচ্ছে কি-না। আমরা সপ্তাহে একবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাকে একগুচ্ছ করে ফুল কিনে দিতাম" এই সাফল্যের পরে এই উদ্ধার দলের সদস্যরা একজন পুরুষকে উদ্ধার করে যিনি একটি ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিল এবং একজন নারীকে বাচায় যে কিনা যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পর নিজেকে হত্যা করতে চেয়েছিল। "উদ্ধারের জন্য দরকার ভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা দুটোই।" বলেন বেইজিং এর একজন মনোবিজ্ঞানী লি হং যিনি এই প্রোগ্রামের সাথে একবছর ধরে জড়িত আছেন। তিনি স্মরণ করেন কিভাবে তিনি এবং তার সহকর্মীরা চেং-ডুর আটটি হোটেলে পরিদর্শন করেন, আত্মহননে চেষ্টাকারী একজন নারীকে খুঁজতে একটি রুমও বুকিং দেন। মিজ লি বলেন, "সব হোটেলের অভ্যর্থনা-কর্মীরা সবাই বলতো তারা ্ওই নারীর সম্পর্কে কিছু জানেনা। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করছিলেন । তখন আমরা ধরে নিলাম যে এটা নিশ্চয়ই সেই হোটেল -এবং তাই ছিল। এই উদ্যোগের প্রধান ব্যক্তি হুয়াং ঝিশেং, যিনি ফ্রি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের একজন শীর্ষ আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স(কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) গবেষক। কিভাবে কাজ করে এই প্রক্রিয়া? জাভা-বেজড এই প্রোগ্রামটি উইবোতে কিছু 'ট্রি হোলস" মনিটর করে এবঙ সেখানে পোস্ট করা কিছু বার্তা বিশ্লেষণ করে থাকে। একটি "ট্রি হোল" হচ্ছে ইন্টারনেটে যেসব জায়গায় লোকজন অন্যদের পড়ার জন্য গোপনে পোস্ট করে তার একটি চীনা নাম। এই নামকরণে পেছনে রয়েছে আইরিশ কাহিনী যেখানে একজন ব্যক্তি তার সব গোপন কিছু একটি গাছের কাছে গিয়ে বলতেন"। জোও ফানের দেয়া পোস্ট এর একটি উদাহরণ, ২৩ বছর বয়সী এই চীনা শিক্ষার্থী ২০১২ সালে আত্মহত্যার আগে উইবোতে একটি মেসেজ লেখেন। তার মৃত্যুর পর দশ হাজারের বেশি অন্যান্য ব্যবহারকারী তা পোস্টে মন্তব্য করেন, তাদের নিজেদের নিজস্ব সমস্যাগুলো তলে ধরে। এভাবে মূল মেসেজটি একটি ট্রি হোল হিসেবে রূপ নেয়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ ধরনের কোন পোস্ট শনাক্ত করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে র‍্যাংক দেয়া হয়। র‍্যাংক এ-নাইন বা নয় হলে বুঝতে হবে খুব শিগগিরই একটি আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো হবে। এ-টেন বা ১০ নম্বর র‍্যাংকিং মানে হল, ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকরা সরাসরি পুলিশকে খবর দেয়, সেইসাথে ্ওই ব্যক্তির পরিবার, আত্মীয় স্বন বা বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করা হয়। মনোবিজ্ঞানী লি হং বলেন তিনি অন্তত ৩০ ব্যক্তিকে সহাযতা দিয়েছেন। কিন্তু যদি র‍্যাংকিং ৬এর নিচে থাকে- তার মানে কেবল নেতিবাচক কথাবার্তা শনাক্ত করা হয়েছে-স্বেচ্ছাসেবকরা সাধারণত হস্তক্ষেপ করেন না। এসব ঘটনায় যেসব ইস্যুর মধ্যে একটি হল বিষণ্ণতা সম্পর্কে বয়স্ক আত্মীয়দের মনোভাব যে, এটা "বড় কিছু" না। মিস্টার লি বিবিসি নিউজকে বলেন, "আমি জানি যখন হাই স্কুলে ছিলাম আমার মধ্যে বিষণ্ণতার সমস্যা ছিল কিন্তু আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, এটা "একেবারে অসম্ভব-এ সম্পর্কে আর কখনোই কছু ভাববে না" এই প্রোগ্রামে একজন তরুণীর পোস্ট শনাক্ত হয় যেখানে সে লিখেছে, আমি নিজেকে হত্যা করবো যখন নত্তুন বছর আসবে"। কিন্তু যখন স্বেচ্ছাসেবকরা তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করে তখন তিনি বলেন, " আমার মে এই মুহূর্তে খুবই আনন্দিত ছিল। আপনার কত বড় সাহস যে বলছেন, সে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছে?" এমনকি স্বেচ্ছাসেবকরা তার মেয়ের বিষণ্ণতার বিষয়ে প্রমাণ তুলে ধরার পরেও তার মা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। দীর্ঘ যাত্রা এর সফলতা সত্ত্ব্ওে, মিস্টার হুয়াং তার প্রকল্পের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কারণ উইবোর পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা প্রতিদিন কেবল তিন হাজার পোস্ট একত্র করতে পারেন। আমার জীবনের বেশিরভাগই এখন এই উদ্ধার হওয়া মানুষের জন্য কেটে যায়, বলেন মিজ লি। কখনো কখনো তিনি ভীষণ ক্লান্ত বোধ করেন। তিনি জানান এই মুহূর্তে তিনি আটজন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রাখছেন যাদের উদ্ধার করা হয়েছে। "সুতরাং একদিনে আমরা গড়ে কেবল একটি বা দুটি পোস্ট সেভ করতে পারি এবং সবচেয়ে জরুরি ঘটনা যেটি সেখানেই আমরা মনোযোগ দেই। " অনেক সদস্য অফলাইনে সহায়তা করেন। তবে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, আত্মহত্যার চিন্তা বা ইচ্ছা আবার ফিরে আসতে পারে। উদ্ধার হ্ওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে মাসের পর মাস খোঁজ খবর রাখতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। মিজ পেং একজন খুবই অল্পবয়সী একজনের উদাহরণ তুলে ধরেন যাকে উদ্ধার করার পর প্রতিদিন বেশ ভালো বলে মনে হতো, কিন্তু সে এরপর আত্মহত্যা করে। " সে আমাকে বলছিল শুক্রবার নতুন একটি ফটো পোট্রেট পাওয়ার বিষয়ে"। দুই দিন পরে তার মৃত্যু। "একজন মানুষের সাথে একটা দীর্ঘ সময় ধরে আমি আছেন এবং হঠাৎ করে সে নেই এটা আমার জন্য বিশাল এক ধাক্কা" -বলেন মিজ পেং। কিন্তু এর বিপরীতে মিস্টার লি যার কথা শুরুতে বলা হয়েছিল, সে কিন্তু বেশ সুস্বাস্থ্যের সাথে বেঁচে আছে এবং এখন একটি হোটেলে কাজ করে। সে জানায় তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে, "আমি এই কাজ পছন্দ করি কারণ বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে আমার যোগাযোগ হয়। যখন তিনি উদ্ধারকর্মী দলের প্রশংসা করছিলেন তখন আরও বলেন, এটা সব ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে দীর্ঘ-মেয়াদী সমাধান খুঁজে বের করা। "নানা ধরনের মানুষের আনন্দ-বেদনা সম্পূর্ণভাবে সম্পর্কযুক্ত নয়। আপনার অবশ্যই নিজেকে সফল করতে হবে"।
চীনে আত্মহত্যা চেষ্টা ঠেকাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
আমি কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবো? উপসর্গ বা লক্ষণগুলো কী? আইইডিসিআর-এর এই হটলাইন নম্বর অথবা অন্য নম্বরগুলোতে ফোন করুন সাহায্যের জন্য। অসুস্থ বোধ হলে কী করবো? করোনাভাইরাস সম্পর্কে আরো কী জানা প্রয়োজন আমার? কোয়ারেন্টিন কী , কেন, কীভাবে করা হয়? করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরী মাস্ক? করোনাভাইরাস: লক্ষণ ও বাঁচার উপায় কী?
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস: বিশ্ব মহামারী বা প্যানডেমিক রোগটি থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখতে পারেন
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে শনিবার রাতে সাড়ে দশটার দিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে দেখা গেছে রোজকার মতই অফিসগামী মানুষের ব্যপক উপস্থিতি। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ীর উপস্থিতিও দেখা গেছে পর্যাপ্ত। তবে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি উপস্থিতি রয়েছে। দেশের কোথাও এখন পর্যন্ত কোনও সহিংসতা বা সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সোমবার দেশব্যাপী সকাল ছ'টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল ডাকে।
ঢিলেঢালাভাবে চলছে জামায়াতের হরতাল
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
বিএসএফ বলছে, গলায় কলাগাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলছে ভারত থেকে গরুপাচার আর এমনটা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে দেশী বোমা ফেটে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বি এস এফ জানিয়েছে। তারা পাচার করার আগে গরুর গলায় বোমা বেঁধে দেওয়ার নতুন একটি পদ্ধতির কথা বলছে, যেটা করতে গিয়ে ওই বিস্ফোরণ হয়। তবে সীমান্ত অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরব, এরকম একটি সংগঠন বলছে নদীর ঘাট দখল করা নিয়ে দুই দুষ্কৃতি দলের সংঘর্ষের সময়েই বোমা ফাটে। আরো পড়ুন: সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার যত সুফল এবং কুফল বন্যার কারণে আগেই বেচে দিচ্ছেন কোরবানির গরু সরকারের কিছু করার থাকবে না, সাকিব প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বোমা যাতে সহজে নজরে না আসে, তার জন্য অনেক সময় গাছের পাতা দিয়ে বোমা ঢেকে দেওয়া হয় বিএসএফ বলছে, "সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে ফরাজিপাড়া গ্রামে যখন সন্দেহভাজন পাচারকারীরা গরুগুলিকে সীমানা পার করানোর ব্যবস্থা করছিলেন, সেই সময়েই তাদের সঙ্গে একটি বালতিতে থাকা হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়।" দুই মধ্যবয়স্ক আর একজন ১৪ বছর বয়সী কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর একজন নারীও আহত হন। নিহত এবং আহতদের স্থানীয় সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেছে জলঙ্গী থানার পুলিশ। তবে সীমান্ত অঞ্চলে কর্মরত মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর প্রধান কিরীটী রায় বলছিলেন, "পাচারের সময়ে বোমা ফেটে মৃত্যু হয় নি। ওই এলাকায় পদ্মা নদীতে যেসব বেআইনি ঘাট আছে, সেরকমই একটি ঘাটের দখল কে নেবে, তা নিয়ে দুই দল দুষ্কৃতির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যারা মারা গেছেন, তারাও একটি দুষ্কৃতি দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানতে পেরেছি।" ওইসব বেআইনি ঘাট দখল করার জন্য প্রচুর অর্থের লেনদেন হয় বলেও মি. রায় জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে গরু পাচারের এই অভিনব পদ্ধতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল গরুর গলায় বোমা বেঁধে রাখার কারণ কি? কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে গরু পাচারের এই অভিনব পদ্ধতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এস এস গুলেরিয়া বিবিসিকে বলেন, "এখন দেখা যাচ্ছে ওইভাবে গরু পাচারের সময়ে গরুগুলির গলায় বোমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, যাতে সীমান্তরক্ষীরা গরুগুলিকে আটক করে কলার ভেলা থেকে সেগুলিকে উদ্ধার করতে গেলেই বোমা ফেটে যায় এবং বি এস এফ সদস্যরা আহত হন।" ওই গ্রামটির গরু পাচারের জন্য দুর্নাম রয়েছে বলেও মি. গুলেরিয়া জানিয়েছেন। বিএসএফ বেশ কিছু ছবি দিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কলার ভেলার ওপরে শুধু গরুর মাথা ভেসে আছে আর সেগুলির ঘাড়ের কাছে পাটের দড়ি দিয়ে বোমা বাঁধা আছে। কখনও আবার বোমা যাতে সহজে নজরে না আসে, তার জন্য গাছের পাতা দিয়ে বোমা ঢেকেও দেওয়া হচ্ছে। "এই পদ্ধতি নিঃসন্দেহে সীমান্তরক্ষীদের আঘাত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে। যে প্রান্তেই গরুগুলি ধরা পড়ুক না কেন, সীমান্তরক্ষীরা সেগুলি উদ্ধার করে গলা থেকে দড়ি খুললেই সেটা ফেটে যাবে। আঘাত তো লাগবেই, মৃত্যুও হতে পারে," বলছিলেন মি. গুলেরিয়া। সীমান্ত এলাকার মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পদ্মা নদীতে থাকা বেআইনি ঘাটের দখল নিয়ে প্রায়ই প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয় গরু পাচার বন্ধে বি এস এফ এবং ভারত সরকার এবং যে রুট দিয়ে গরু আনা হয় পশ্চিমবঙ্গ আর উত্তর ভারত থেকে, সেখানকার সরকারগুলিও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে যার ফলে চার-পাঁচ বছর আগে যে হারে গরু পাচার হত, তার থেকে কিছুটা কমেছে। কিন্তু গরু পাচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয় নি। এখনও নিয়মিতই সীমান্ত অঞ্চলে পাচারের সময়ে গরু ধরা পড়ে। পাচারকারীরা নানা নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে গরু পাচার করতে। একটা যেমন কলাগাছে ভেলা বানিয়ে তাতে গরু বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, আবার কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে বাঁশ দিয়ে ক্রেনের মতো বানানো হচ্ছে - যাতে একদিকে গরু বেঁধে ক্রেন দিয়ে সেটিকে সীমান্তের অপর পারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার কাঁটাতারের বেড়ার নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটার ঘটনাও জানা গেছে বেশ কিছু সীমান্তে - যার মাধ্যমে একদিক থেকে গরুর পাল ভেতরে ঢুকিয়ে দিলে তারা সীমান্তের নীচ দিয়ে অন্য দিকে বেরিয়ে যেতে পারে। বিবিসি বাংলার আরো খবর: মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যাত্রার চুক্তি ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ কোরান শিক্ষক, ফুটবলার, খলিফা - বাগদাদির বিচিত্র জীবন মাদ্রাসার ছদ্মবেশে নির্যাতন কেন্দ্র : ভয়ঙ্কর সব তথ্য
সীমান্তে গরু পাচার: পাচারকারীরা গরুর গলায় বেঁধে দিচ্ছে বোমা, বলছে বিএসএফ
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
রামুতে নর্বনির্মিত বিহার উদ্ধোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টির নানান উদ্যোগ সত্ত্বেও বিষয়টি তাদের মধ্যে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বিষয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। এদিকে ঐ ঘটনার স্মরণে রোববার কালো পতাকা উত্তোলন, শান্তি মিছিলসহ সারাদিনিই বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয় স্থানীয় লোকজনের পক্ষ থেকে। স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন নেতা এবং রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধবিহারের পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়ুয়া বলছেন, ''ঐ ঘটনায় যারা নেতৃত্ব দান করেছিল তারা এখনও প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। এদেরকে এখনও পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি।'' ''আমরা বা সরকার কেউই তাদের শাস্তি এখনো দিতে পারিনি। আমরা শঙ্কিত। যদি এরকম ঘটনার বিচার না হয় ভবিষ্যেতে আবারো এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি।'' আক্রান্ত মানুষদের মনের শঙ্কা দূর করা সম্ভব হয়নি শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনই নয় স্থানীয় সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও এমনটাই মনে করছেন। রামুর একজন বাসিন্দা মোজাফ্ফর আহমাদ বলছিলেন, তার জীবনে এই ধরনের ঘটনা ঐ অঞ্চলে তিনি আর কখনও দেখেননি। ধীরে ধীরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরে এলেও, মূল অপরাধীরা শাস্তি পেলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে চূড়ান্ত স্বস্তি ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন। ''মানুষ এখন আগের সম্প্রীতির অবস্থায় ফিরে আসছে। তাদের ক্ষোভটা প্রশমিত হয়ে গেলে, সঠিক অপরাধীরা বিচার পেলে আর নিরপরাধ মানুষগুলো নিষ্কৃতি পেলে, উভয়পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্য আরো বেড়ে যাবে।'' সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগে গত বছর সাম্প্রদায়িক হামলার এই ঘটনা ঘটে। পরে তা উখিয়া ও টেকনাফে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির এবং তাদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা হয় যার মধ্যে এখন পর্যন্ত সাতটাতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আখতার বলেন, নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবেই তারা এগুতে পারছেন না। এখনো অনেকগুলো মামলার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। পুলিশ বলছে, এ পর্যন্ত মোট ৫২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে তাদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে আসছেন। আরও পাঁচটি মামলার তদন্তের কাজ শেষের দিকে। আক্রান্ত বৌদ্ধবিহার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করেন, বহু নিরীহ লোক গ্রেপ্তার হচ্ছেন এবং তারা জামিনে বেরিয়ে এলে তাদের রোষানলে পড়ছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। ফলে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় অনেকেই সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসছে না বলে জানান কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারি পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। উত্তম বড়ুয়া নামে যে তরুনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবি পোস্ট করাকে ঘিরে গতবছর ঔ ঘটনার সূত্রপাত সেই তরুণের কোনও খোঁজ প্রশাসন এখনও পর্যন্ত বের করতে পারেনি। ঐ হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধমন্দিরগুলো সরকারি উদ্যোগে পুননির্মাণ করা হয়, যেগুলো চলতি মাসের শুরুতেই উদ্বোধন করা হয়েছে।
বছর পেরোলেও রামুর বৌদ্ধরা এখনো শঙ্কিত
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
সুদানে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। সুদানে বড়ো ধরনের এই রাজনৈতিক সঙ্কট, যার জের ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, শুরু হয়েছে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে। ৩রা জুন বিক্ষোভকারীদের উপর সরকারি বাহিনীর আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই দেশটি এরকম এক অরাজকতায় ডুবে গেছে। বিরোধীদলের সমর্থকরা বলছেন, গত কদিনে ১১৩ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু সরকার ৪৬ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে। সুদানের রাজধানী খার্তুমের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগের সাথেই চোখ রাখছে বিশ্বের বড় বড় কয়েকটি শহর- রিয়াদ থেকে কায়রো এবং আঙ্কারা থেকে মস্কো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে সুদানের রাজধানী যখন উত্তাল তখন দেশটিকে ঘিরে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর এই আগ্রহের পেছনে কারণ কী। মক্কায় জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সাথে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠক। সৌদি-আমিরাত-মিশর মধ্যপ্রাচ্য-জুড়ে সংঘাতের পেছনে যেসব বিষয় ও দেশের ভূমিকা রয়েছে, সুদানের সঙ্কটেও আছে সেসব দেশ। বিশেষ করে, সৌদি আরব ও তার মিত্র উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে তুরস্ক ও কাতারের বিরোধ। সৌদি আরবসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সুদানের প্রতিবেশী দেশ মিশর খার্তুমের সামরিক শাসককে বড় ধরনের সমর্থন দিচ্ছে। এই তিনটি দেশই চেষ্টা করেছে ওই অঞ্চলে আরব বসন্তের মতো জনপ্রিয় আন্দোলন ঠেকাতে। চেষ্টা করেছে এই আন্দোলনের কোন প্রভাবই যাতে তাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। বিশেষ করে ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে দমন করার ব্যাপারে তারা খুবই সতর্ক থেকেছে। তারা প্রত্যেকেই মনে করে এই আন্দোলন এবং মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের মতো স্বৈরাচারী সরকারের জন্যে বড় ধরনের হুমকি। সুদানের সামরিক বাহিনীকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিচ্ছে রিয়াদ এবং আবুধাবি। দেশটির বেসামাল অর্থনীতিকে সামাল দিতে ইতোমধ্যেই তারা তিনশো কোটি ডলার ঋণ দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছে। এমাসের শুরুর দিকে বিরোধীদের উপর সরকারি দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার আগে সুদানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় জেনারেলরা রিয়াদ, আবুধাবি ও কায়রো সফর করেছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিলো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছেন সেগুলোতে এসব দেশের সমর্থন নিশ্চিত করা। গত এপ্রিল মাসে সুদানে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা উমর আল-বাশিরের পতনের পর দেশটিতে এসব দেশের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সাথে সুদানের ওমর আল-বাশির, ২০১৭ সালে। তুরস্ক ও কাতার সুদানের বিষয়ে সৌদি আরব, আমিরাত ও মিশরের অবস্থানের বিপরীতে আছে তুরস্ক ও কাতার। খার্তুমের সাথে তাদেরও আছে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। আফ্রিকার এই দেশটিতে কৃষি ও খাদ্য খাতে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছে কাতার। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং উমর আল-বাশিরের শাসনামলেও সুদান ও তুরস্কের মধ্যে নতুন করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গড়ে উঠেছে। আরো পড়তে পারেন: সুদানে বহু বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি, সঙ্কট বাড়ছে সুদানে যেভাবে জনতার উত্থানে স্বৈরতন্ত্রের পতন যেভাবে সুদানের ৩০ বছরের শাসকের উত্থান ও পতন লোহিত সাগরে এক সময় অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে ছিল এমন একটি বন্দর সুয়াকিনের উন্নয়নের জন্যে তুরস্ক ও সুদানের মধ্যে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চারশো কোটি ডলারের একটি চুক্তি সই হয়েছিল। সমঝোতা হয়েছিল যে সেখানে তুর্কী নৌবাহিনীর ছোটখাটো একটি স্থাপনাও নির্মাণ করা হবে। উমর আল-বাশির তার দীর্ঘ তিন দশকের শাসনামলে এই দুটো পক্ষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। এটা তিনি করতে পেরেছিলেন ইসলামপন্থীদের দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে। ইয়েমেনে ইরানপন্থী হুতি মিলিশিয়াদের সাথে যুদ্ধে তারা সৌদি আরবকে সৈন্য পাঠিয়েও সহযোগিতা করছে। ওমর আল-বাশির হঠাৎ করেই ইরানের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেন। সুদানে ইরানের যতো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল সেগুলো আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেন। এর পর পরই ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরব সফর শেষে তিনি সৌদি আরবের কাছে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই সৌদি আরবের সাথে সুদানের বর্তমান সামরিক শাসকেরও রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক কাউন্সিলের প্রধান লে. জেনারেল আব্দুল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি লে. জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর সম্পর্কও ভালো। আল-বাশিরের পদত্যাগের দাবিতে গত এপ্রিলের বিক্ষোভের ছবি। আফ্রিকান ইউনিয়ন সৌদি আরব, আমিরাত ও মিশর এবং কাতার ও তুরস্ক এই দুটো পক্ষের কারো সাথেই সুদানের সরকারবিরোধীদের সম্পর্ক নেই। সুদানে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তারা কেউই আগ্রহী নয়। বর্তমানে দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবীতে যে আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে তাতে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন। এদের মধ্যে মধ্যপন্থী, বামপন্থী এবং প্যান-আরব দলগুলিও রয়েছে। সমর্থন রয়েছে দক্ষিণ সুদানের বিদ্রোহীদেরও। এই আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন। সুদানের সদস্যপদ ইতোমধ্যেই স্থগিত করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং দেশটিতে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দিলে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথাও জানিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর এই জোট। কিন্তু এই জোটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিশরের সাথেই সুদানের সামরিক কাউন্সিলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সমর্থন। এই সঙ্কটে মধ্যস্থতা করতে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদ শুক্রবার খার্তুমে এসে পৌঁছেছেন। বিরোধীরা ইতোমধ্যেই তার দেওয়া সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কথা হলো সামরিক বাহিনী এর আগেও তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ফলে তাদেরকে আর বিশ্বাস করা যায় না। এরই মধ্যেই ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করার অভিযোগে বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকেও সামরিক সরকার আটক করেছে। সুদানের একটি বন্দর, অনেক দেশের জন্যেই যা গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সুদানের উপর কিছু চাপ সৃষ্টি করেছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্যে। তবে সুদানের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ তেমন একটা নেই বললেই চলে। গত জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটন সুদানের উপর আরোপ করা কিছু অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে দাফুরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সুদানের সামরিক বাহিনী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন এবং ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসীদের স্রোত ঠেকানোর জন্যে। রাশিয়া এবং চীনও এখন ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। গত কয়েক দশক ধরেই মস্কো সুদানের কাছে সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বিক্রি করে আসছে। এই বিক্রির উপর জাতিসংঘের তরফে ২০০৫ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরেও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছে খার্তুম সরকার। সুদান ২০১৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এসইউ-৩৫ কিনেছে। এর ফলে আরব দেশগুলোর মধ্যেই সুদানই প্রথম দেশ যাদের এই যুদ্ধবিমান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বাণিজ্যিক কিছু স্বার্থ- বেশ কিছু রুশ কোম্পানি সুদানের আকর্ষণীয় কিছু খাতে, বিশেষ করে, স্বর্ণ ও তেলের ব্যবসায় বড় আকারের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। চীনের সাথেও সুদানের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। সুদানের তেল-ক্ষেত্রের উন্নয়নে বড় ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে চীন। বর্তমানে দেশটিতে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণেও বেইজিং সহযোগিতা করছে। এই নারী কি সুদানের বিক্ষোভের প্রতীক? আরো পড়তে পারেন: যেসব ভুলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারলো বাংলাদেশ গুপ্তচর হিসেবে কেমন হবে জলজ প্রাণী তিন নম্বরে ব্যাট করা নিয়ে যা বললেন সাকিব
সুদান সঙ্কট: খার্তুম নিয়ে কেন আগ্রহ রিয়াদ থেকে কায়রো এবং আঙ্কারা থেকে মস্কোর
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা। কিন্তু দুর্গম এই দ্বীপে এসে অনেকেই আশাহত হয়েছেন। ভাসান চরের প্রথম শিশু হালিমার যখন প্রসব বেদনা উঠলো, তখন রাত প্রায় এগারোটা। বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে নতুন জেগে উঠা দ্বীপটিতে তার মাত্র আগের দিন এসে নেমেছেন তিনি। "প্রথম যেদিন এই দ্বীপে পা দেই, আমার কেমন যে লেগেছে আপনাকে বলতে পারবো না। এখানে মানুষ নেই, জন নেই। শুধু আমরা," বলছিলেন তিনি। সন্ধ্যার পর ভাসানচর যেন এক মৃত-পুরী। তখন পর্যন্ত যে প্রায় সাত হাজার শরণার্থীকে এই দ্বীপে থাকার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল, রাতে ক্যাম্পে তাদের কোলাহল থেমে যাওয়ার পর নেমে এসেছিল ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা। হালিমা এর আগে আরও দুটি সন্তান জন্ম দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানেন প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পর কী ঘটতে যাচ্ছিল। ভাসানচরে অত রাতে ডাক্তার দূরে থাক, একজন নার্স বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। "আমার তখন নিজেকে নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল। আতংকিত হয়ে আমি আল্লাহকে ডাকছিলাম।" ক্যাম্পে নিজের রুমের মেঝেতে মাদুর পেতে বিছানা করে তাতে শুয়ে পড়লেন হালিমা। আর তার স্বামী এনায়েত দৌড়ে গেলেন তাদের ক্যাম্পেই এক রোহিঙ্গা নারীর কাছে, যার ধাত্রী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। "সন্তান হতে সাহায্য করার কেউ না থাকলে আল্লাহ তাকে সন্তান দেবেন না, এমন কথা তো তিনি বলেননি," বলছিলেন হালিমা। "আল্লাহর হুকুম ছিল, তাই আমার বাচ্চা হয়ে গেল। আমার ভাগ্য ভালো।" হালিমার ভাগ্য আসলেই ভালো। সেই রোহিঙ্গা ধাত্রী আরও তিন নারীকে সাথে নিয়ে হালিমার সন্তান প্রসবে সাহায্য করলেন। এটি ছিল ভাসানচরের মাটিতে জন্ম নেয়া প্রথম শিশুদের একটি। ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা এখানে আসার আগে হালিমা বেগম ছিলেন কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক নৃশংস অভিযান শুরুর পর যে প্রায় দশ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, তাদের বেশিরভাগকেই আশ্রয় দেয়া হয়েছে এই শিবিরে। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যেদিন ভাসানচরের উদ্দেশে হালিমা বেগম, তার স্বামী এবং দুই সন্তানকে গাড়িতে তোলা হয়, তার দুদিন আগেও তিনি জানতেন না, তাকে এখানে আনা হবে। "আমার স্বামী আমাকে না জানিয়ে ভাসানচর যাওয়ার জন্য গোপনে নাম লিখিয়ে এসেছিল," বলছিলেন তিনি। "তার দুদিন পরই আমাদের এখানে আনার জন্য গাড়িতে তোলা হয়।" দ্বীপে ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে যাতে আশ্রয় নিতে পারবে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ। যে কোন সময় প্রসব বেদনা উঠতে পারে এমন এক গর্ভবতী এক নারীর জন্য এটি ছিল এক কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা। তাদের প্রথম বাসে করে নেয়া হয় চট্টগ্রামে। পরদিন সকাল দশটায় তাদের তোলা হয় একটি জাহাজে। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে তিনটি জাহাজে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এসে পৌঁছান ভাসানচরে। যাত্রাপথে গাড়িতে এবং জাহাজে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হালিমা। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, তার সঙ্গে বমি শুরু হলো । বমি থামাতে জাহাজের কর্মীরা তাকে ট্যাবলেট এনে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের জাহাজ এসে ভিড়লো ভাসানচরে। নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি হালিমার ক্ষেত্রে ভাসানচরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন তার স্বামী, এনায়েত। তার স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় কী ভেবে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন? "আমাদের বলা হয়েছিল পরিবার পিছু আড়াই কানি (এক একর) জমি দেবে, চাষবাস করে জীবন চলবে। এক জোড়া গরু-মহিষ দেবে। যতদিন চাষবাস করতে না পারছি, ততদিন সরকার খাওয়াবে। তারপর বলেছিল ঋণ দেবে, যাতে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে।" এনায়েতের ভাষ্য অনুযায়ী ক্যাম্পের দুজন মাঝি (রোহিঙ্গাদের দলনেতা) তাকে প্রথম ভাসানচরে আসার প্রস্তাব দেয়। তারাই এসব কথা জানিয়েছিল। "ওরা আমাদের বলে, আমাদের কথা তোমাদের বিশ্বাস না হলে উখিয়ায় আমাদের মিটিং এ আসো। উখিয়ার মিটিং এ গেলাম। সেখানে সরকারের মোট তিনজন লোক ছিল। মাঝিরা আমাদের যা যা বলেছিল, ওরাও সেটাই বললো। আমরা এক সঙ্গে দশজন লোক সেখানে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে আটজন ভাসানচরে আসার জন্য নাম লেখাই, দুই জন রাজী হয়নি।" "আমার স্ত্রীর যে বাচ্চা হবে, সেটা সরকারি লোকজন জানতো। আমার স্ত্রীর অবস্থা জেনে ওরা বলেছিল, কোন সমস্যা নেই। তাকে আমরা আরামে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।" সেই যাত্রায় হালিমা একা নন, তার মতোই এরকম আরও অন্তত তিনজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে। বিতর্কিত প্রকল্প স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে ভাসানচর এবং সেখানে নির্মিত ক্যাম্প। দ্বীপটি কতটা মানববসতি স্থাপনের উপযোগী তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ভাসানচরের এই শরণার্থী শিবির শুরু থেকেই এক বিতর্কিত প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকার যখন কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল, তখন তার বিরোধিতা করেছিল জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা। তাদের মূল আপত্তি এই দ্বীপ কতটা মানব বসতির উপযোগী তা নিয়ে। ভাসানচর জেগে উঠেছে মাত্র গত দেড় দশকে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে এক লাখ শরণার্থীর জন্য বিরাট স্থাপনা গড়ে তোলার আগে পর্যন্ত কোন মানববসতিই ছিল না। বঙ্গোপসাগরের যে স্থানে এই দ্বীপটি, সেখানে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যা থেকে শরণার্থীরা কতটা নিরাপদ সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তারপরও সরকার গত বছরের মে মাস হতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করে। শরণার্থীদের জন্য এই আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমোডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বেগের জবাবে তিনি বিবিসিকে বলেন, "ভাসানচরে সাইক্লোনের মতো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেরকম ভালো ব্যবস্থা আছে, আশে-পাশের কোন দ্বীপেই সেরকম ব্যবস্থা নেই। হাতিয়া, সন্দ্বীপের মানুষকেও আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের, যেখানে এক লাখ বিশ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।" গত বর্ষা মওসুমের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, "ক্যাম্পের স্থাপনা ঘিরে যে নয় ফুট উচ্চতার বাঁধ, সেখানে চার পাঁচ-ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পানি উঠেছিল। আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি।" অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ আরও কিছু মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছিল, অনেক শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এই শিবিরে নেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী তা অস্বীকার করে বলেন, শরণার্থীরা সবাই নিজের ইচ্ছায় এসেছে। তিনি দাবি করেন, আরও বহু শরণার্থী ভাসানচরে আসার জন্য স্বেচ্ছায় নাম লেখাচ্ছে। বাড়ছে অসন্তোষ সরকারের তরফ থেকে ভাসানচরের শরণার্থীদের জীবনের যে ছবি তুলে ধরা হয়, সেটা সেখানে গিয়ে স্বাধীনভাবে যাচাই করার কোন সুযোগ এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা বা মানবাধিকার কর্মীরা পাননি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজে নিজের মুরগী কোলে এক রোহিঙ্গা নারী। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি যে চিত্র পেয়েছে তা বহুলাংশেই সরকারের দাবির বিপরীত। রোহিঙ্গারা বলেছেন: প্রথম প্রতিবাদ শরণার্থীদের মধ্যে ভাসান চরের পরিস্থিতি নিয়ে যে ক্ষোভ বাড়ছে তার প্রথম প্রকাশ দেখা গেছে দু সপ্তাহ আগে। একজন শরণার্থী জানিয়েছেন, প্রতি মাসের জন্য নির্ধারিত রেশনে যে পরিমাণ খাবার দাবার দেয়ার কথা ছিল, সেদিন তার চেয়ে কম দেয়ায় কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ জানায়। "রেশন নিয়েই গণ্ডগোল হয়েছে। প্রথম দিচ্ছিল ১৩ কেজি করে চাল। এখন দিচ্ছে ৮ কেজি করে। এটা নিয়ে গণ্ডগোল। কিছু লোক বলেছে, আমরা রেশন খাব না, দরকার হলে উপোষ থাকবো। এরপর ওরা রেশন না নিয়ে চলে এসেছে।" ক্যাম্পের জীবনকে অনেকে তুলনা করেছেন পুরো পরিবার নিয়ে জেলখানায় থাকার মতো অভিজ্ঞতা বলে। এ ঘটনার কয়েকদিন পর ভাসান চরে প্রায় শখানেক শরণার্থী আরেকটি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করার দাবিতে। বিক্ষোভের একটি ভিডিও চিত্র বিবিসির হাতে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী এবং পুরুষরা উত্তেজিত ভঙ্গীতে কোথাও যাচ্ছেন। তাদের কয়েক জনের হাতে লাঠি। তাদের সঙ্গে অনেক শিশু কিশোরও রয়েছে। তবে নিরপেক্ষভাবে এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। শরণার্থীদের অভিযোগ, সরকারের তরফ থেকে রেশনের নামে যে চাল-ডাল-তেল-লবণ দেয়া হয়, কেবল সেটি খেয়ে বাঁচা যায় না। তাদের কাঁচা তরিতরকারি, মাছ-মাংসের দরকার হয়। সংসারে আরও টুকি-টাকি অনেক কিছু কিনতে হয়। তার জন্য টাকা লাগে। কিন্তু সেখানে তাদের আয়-উপার্জনের কোন ব্যবস্থাই নেই, যা করে তারা এই অর্থ জোগাড় করতে পারেন। একজন শরণার্থী বলেন, "আমাদের এখানে আনার সময় মাথাপিছু ৫ হাজার করে টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা এখানে প্রথম ধাক্কাতেই ফুরিয়ে গেছে। এটা কেনা লাগছে, ওটা কেনা লাগছে। এখন এখানে কেউ কেউ আন্দোলন করছে, আমাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করো, নইলে আমাদের ফেরত পাঠাও।" 'কোয়ারেন্টিনের নামে নির্বাসন' গত বছরের মে মাসে ভাসানচরে প্রথম যাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদের একজন দিলারা। এই রোহিঙ্গা তরুণী তার পরিবারের আরও দুই সদস্যের সঙ্গে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রায় তিনশো রোহিঙ্গাকে বহনকারী নৌকাটি মালয়েশিয়ায় পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। বঙ্গোপসাগর থেকে মে মাসে এই শরণার্থী বোঝাই নৌকাটি উদ্ধারের পর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা বলে নিয়ে যায় ভাসানচরে। কিন্তু দিলারার এখন মনে হচ্ছে তাকে যেন এখানে সারাজীবনের মত নির্বাসন দেয়া হয়েছে। "আমাদের বলেছিল, করোনাভাইরাসের কারণে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য আমাদের এখানে আনা হচ্ছে, ১৪ দিন পর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু আনার পর থেকে এই ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে কোথাও যেতে দিচ্ছে না। তারপর থেকে এখানেই আছি।" দিলারা আগে থাকতেন কক্সবাজারের বালুখালি ক্যাম্পে। তার বাবা-মা এবং পরিবারের বাকী সদস্যরা সেখানেই আছেন। দিলারা অবিবাহিতা, ক্যাম্পে যে ঘরে তাকে থাকতে দেয়া হয়েছে, সেখানে থাকতে তিনি নিরাপদ বোধ করেন না। বিশেষ করে যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে। দিলারার মতে, ভাসান চরে এসে তার জীবনটা এমন এক ফাঁদে আটকে পড়েছে, যেখান থেকে মুক্তির কোন উপায় তিনি দেখছেন না। ক্যাম্পের ভেতর ছোটখাট দোকান দিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী। শরণার্থীরা তাদের সাক্ষাৎকারে ক্যাম্প জীবনের যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে বোঝা যায়, সেখানে তাদের জীবন সাংঘাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত। হালিমা জানান, "আমরা ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারি না, নিষেধ আছে। সাগর তীরে যেতে পারি না। পুলিশ পাহারা দেয়। এখানে কিছু নোয়াখালির মানুষ আছে। ওদের গলায় কার্ড ঝোলানো। যাদের কার্ড আছে তারা যেখানে খুশি যেতে পারে। আমাদের কার্ড নাই, আমরা পারি না।" আরেকজন শরণার্থী সালাম বলেছেন, "আমার জীবনে এরকম দ্বীপে আমি কোনদিন থাকিনি। এখানে একেবারে নিঝুম জায়গা। কোন আওয়াজ নেই। চারিদিকে রাতে-দিনে পাহারা দেয়। যারা বেপারি, জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসে, তাদেরকেও সন্ধ্যার আগে বাইরে চলে যেতে হয়।" "রাস্তায় মাথায় মাথায় পুলিশ আছে। ওরা রাস্তায় চেয়ার নিয়ে বসে থাকে। আমাদের জিজ্ঞেস করে, আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমাদের ভাসান চরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি এখনো দেয়নি।" বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যা বলছে ভাসান চরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য অসন্তোষের খবর সরাসরি অস্বীকার করলেন বাংলাদেশ সরকারের রিফিউজি রিলিফ এন্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনার দফতরের (আরআরআরসি) প্রধান শাহ রেজওয়ান হায়াত। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখাশোনার দায়িত্ব এই সরকারী সংস্থার। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই যে তারা অখুশি।" দশই ফেব্রুয়ারি ভাসান চরে ক্যাম্পের ভেতর শ'খানেক রোহিঙ্গার প্রতিবাদের একটি ভিডিও চিত্র বিবিসির কাছে এসেছে, একথা জানানোর পর তিনি বলেন, "এটা ঠিক বিক্ষোভ নয়। ওরা এসেছিল মাসিক রেশন নেয়ার জন্য। ওরা রেশন নেয়ার জন্য এক সঙ্গেই আসে, গ্রুপ করে। তখন ওরা ওদের জীবিকার বিষয়টি তুলেছিল।" ভাসানচরের সুযোগ সুবিধা কক্সবাজারের শিবিরের তুলনায় অনেক ভালো বলে বর্ণনা করছেন কর্মকর্তারা। শরণার্থীদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, তারা এমন কোন প্রতিশ্রুতি তাদের দেননি যে যেটা রাখা হয়নি। ''শরণার্থীদের হালচাষের জন্য কৃষি জমি দেয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। তবে তারা যদি হাঁসমুরগি-গবাদিপশু পালন করতে চায়, সেই সুযোগ আছে। যদি মাছ চাষ করতে চায়, অনেক পুকুর আছে, সেগুলোতে তারা করতে পারবে।" ''কৃষিকাজের জন্য সবাইকে জমি দেয়া হবে, সেটা তো সম্ভব না। তবে তারা যাতে বাগান করতে পারে, সেটার জন্য তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে," মি. হায়াত বলেন। আরও পড়ুন: দারুণ সুযোগ-সুবিধার যে ভাসানচর রোহিঙ্গাদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ খোদেজার দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রা: ‘রাতে জানাজা পড়ে লাশ ফেলা হতো সাগরে’ রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান দুই মানবাধিকার সংস্থার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দিন, উন্নয়ন সংস্থার নিন্দা তিনি আরও বলেন, শরণার্থীদের জন্য সেখানে লাইভলিহুড প্রোগ্রামের আওতায় কাজের ব্যবস্থা করতে সময় লাগবে। কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অনেক দেশি এনজিও সেখানে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়ে আবেদন করেছে। ভাসান চরে যাওয়ার জন্য শরণার্থীদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। ''যে টাকার কথা বলা হচ্ছে সেটা তাদের কিছু কাজের বিনিময়ে মজুরি, এটা সেরকম কিছু। তাদের সেখানে যাওয়ার সময় পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি।" ভাসান চরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকার কথাও তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সন্তান জন্ম দেয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কাছে প্রশিক্ষিত ধাত্রী ছিল। একজনকে বিশেষ ব্যবস্থায় নোয়াখালি সদর হাসপাতালে পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে সর্বশেষ আরও দুহাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে আনা হয়েছে। 'ফিরে যেতে চাই' ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের জীবনের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে পরিবারের বাকী সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। দ্বীপে প্রথম দলে আসা রোহিঙ্গাদের একজন দিলারা বলছেন, ১৪ দিনের কথা বলে এনে তাকে যেন এখানে সারাজীবনের জন্য বন্দী করে ফেলা হয়েছে। "আমি ভাসান চরে থাকতে চাই না, আগে যেখানে ছিলাম সেখানে যেতে চাই। এখানে থাকতে চাই না বলেই আমার বাবা-মাকে এখানে আনিনি। যদি থাকতে চাইতাম, আমার বাবা-মাকে এখানে চলে আসতে বলতাম। এখানে দরকার হলে আমরা একা একাই বৃদ্ধ হবো, মারা যাব, তারপরও ওদেরকে এখানে আসতে বলবো না।" হালিমাও তার বাবা-মাকে এই ভাসানচরে আনার বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে একে একে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে এখানে চলে আসতে হয়েছে। সন্তান জন্ম দেয়ার পর যখন তিনি খুবই অসুস্থ, তখন দ্বীপে কোন ঔষধ পথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির থেকে তার বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ভাসানচরে যাবেন বোনের জন্য ঔষধ-পথ্য নিয়ে। গত সোমবার হালিমার আরও দুই বোনও তাদের পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন ভাসানচরে। সাথে বাধ্য হয়ে এসেছেন তাদের বাবা-মা। সবাইকে কাছে পেয়ে হালিমা খুশি। "শুধু একটা জিনিসই ভালো লাগে না, এখানে আমাদের কোন আয়-উপাার্জন নেই। আমার স্বামী যদি কোন দিনমজুরি করতে পারতো, কোন কাজ করতে পারতো, কোন চাকুরি পেত, তাহলে এখানে নিশ্চিন্তে থাকতাম। আমার স্বামী কোন কাজ-কর্ম করতে পারছে না, বাচ্চাদের খাওয়াবে কেমন করে, বউ-বাচ্চাকে পালবে কেমন করে? ভাসানচরের ক্যাম্পে আসা অনেকে এখন আবার ফিরে যেতে চাইছেন। দ্বীপে আসার পরদিনই হালিমা যে শিশুটির জন্ম দিয়েছিলেন, সেটির বয়স এখন আড়াই মাস। প্রথম দুই সপ্তাহ তিনি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পেরেছিলেন, কিন্তু তারপর বুকের দুধ শুকিয়ে গেলে টিনের দুধ খাওয়াতে শুরু করেন। "বাচ্চাকে প্রথম যেদিন টিনের দুধ খাওয়াই, ওর পেটে অসুখ হয়েছে, বদ হজম হয়েছে। ডাক্তার বলেছে তিন বা ছয় মাসের কম বয়সী বাচ্চার জন্য যে টিনের দুধ, সেটা খাওয়াতে। কিন্তু সেটা এখানে পাওয়া যায় না।" তার নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি শঙ্কিত, তবে বেশি ভয় সাইক্লোন নিয়ে। "আমার সবচেয়ে ভয় ঝড়-তুফান নিয়ে। এরকম জায়গায় আমি কোনদিন থাকিনি।" "আমাকে যেতে দিলে চলে যাবো। কিন্তু যেতে না দিলে তো যেতে পারবো না। কারণ আমরা তো আসলে এখানে একরকম বন্দী হয়ে আছি, কোনদিকে যেতে পারি না।" হালিমার স্বামী এনায়েতেরও একই মত। "কেউ যখন আমার কাছে জানতে চায় এখানে আসবে কীনা, আমি তাদেরকে আসতেও বলি না, নিষেধও করি না। আমি সবাইকে বলি, পুরো পরিবার নিয়ে একটা বিরাট জেলখানায় থাকলে যেরকম জীবন হবে, এখানকার জীবনটা সেরকম।" (শরণার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই প্রতিবেদনে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে)।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা: 'সরকার কথা রাখেনি, আমরা ফিরে যেতে চাই‌'
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
রোবট এসে দখল করে করে নিচ্ছে শ্রমিকদের জায়গা এখনো হয়তো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ বা চট্টগ্রামের বড় বড় কারখানায় এমন দৃশ্য দেখা যাবে। কিন্তু দশ বছর পরের দৃশ্য কল্পনা করা যাক। কেমন হবে তখন বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানা? নিউইয়র্কের শিমি টেকনোলজি নামের একটি প্রযুক্তি কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সারাহ ক্রেসলির কাছে ভবিষ্যতের ছবিটা পরিস্কার। "দশ বছর পরের পোশাক কারখানায় খুব অল্প শ্রমিকই আসলে কাজ করবে। রোবটিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি তখনো আমরা হয়তো কিছু কর্মীকে কাজ করতে দেখবো। কারখানা জুড়ে তখন বেশি থাকবে নানা ধরণের স্বয়ংক্রিয় রোবটিক যন্ত্রপাতি। থাকবে অনেক কম্পিউটার। কারখানার বড় অংশ জুড়ে থাকবে ডিজাইন রুম। বেশিরভাগ কর্মী কাজ করবে এই ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে।" সারাহ ক্রেসলি এর আগে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল বা গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে। যেভাবে অটোমেশন গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে পাল্টে দিয়েছে, এবার পোশাক শিল্পে তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে বলে মনে করেন তিনি। যে শিল্পে বাংলাদেশে কাজ করে প্রায় চল্লিশ লাখ মানুষ, গত কয়েক দশক ধরে যে খাতে তৈরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি কাজ, তার অবস্থা তাহলে কী দাঁড়াবে? "এদের ৬০ হতে ৮৮ শতাংশ তাদের কাজ হারাবে অটোমেশনের কারণে। অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হবে। এটা আমার হিসেব নয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসেব", জানালেন সারাহ ক্রেসলি। তার মতে, বাংলাদেশের সামনে বিপদ অনেক রকমের। প্রথমটা হচ্ছে এই অটোমেশন, যেটা ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে বদলে যাওয়া ফ্যাশন ট্রেন্ড, যেটা বিরাট প্রভাব ফেলছে পোশাকের ব্রান্ডগুলোর ওপর। আর সবশেষে আছে অটোমেশনের চূড়ান্ত ধাপে পোশাক শিল্পের 'রিশোরিং' বা 'নিয়ারশোরিং।' অর্থাৎ যেখান থেকে এই পোশাক শিল্প বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এসেছে, এই শিল্পের সেখানেই ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি। রোবট এসে পাল্টে দেবে পোশাক কারখানার এই দৃশ্য ভবিষ্যৎ কী যে দেশের অর্থনীতির প্রধান ইঞ্জিন হয়ে উঠেছে এই পোশাক শিল্প,তার ভবিষ্যৎ তাহলে কী? ব্যাপারটা নিয়ে কি আসলেই নড়ে-চড়ে বসার সময় এসেছে? বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন ফজলুল হক। বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি। পোশাক শিল্প খাতে অটোমেশনের যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে, সেটিকে তিনি বিপদ হিসেবে দেখতে রাজী নন। তবে অটোমেশন যে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে, সেটা স্বীকার করলেন তিনি। "একটা মাঝারি আকারের কারখানার কাটিং সেকশনে দেড়শো-দুশো লোক লাগতো। সেখানে এখন অটোমেটিক কাটিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে শ্রমিক লাগে দশ থেকে বারো জন। অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ লোক লাগে। এরকম অটোমেশন কিন্তু চলছেই। আগামী দশ বছরে এই শিল্পে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।" তবে ফজলুল হক বলছেন, বাংলাদেশে অটোমেশনের কারণে যত লোক কাজ হারাচ্ছেন, তাদের আবার এই শিল্পেই কোন না কোনভাবে কর্মসংস্থান হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশে এখনো এই শিল্পের আকার বাড়ছে। এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করলেন গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। ট্রেড ইউনিয়ন করতে প্রতিদিন নানা ধরণের কারখানায় তার যাতায়াত। অটোমেশন যে শ্রমিকদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে, সেটা তিনি নিজ চোখেই দেখতে পান প্রতিদিন। রোবট আসছে! "বাংলাদেশে এখন যত বড় ফ্যাক্টরি আছে, বিশেষ করে এ এবং বি ক্যাটাগরির যত ফ্যাক্টরি, সেখানে অনেক নতুন মেশিন আনা হয়েছে। এসব মেশিনে এমন বহু কাজ হচ্ছে, যেগুলো আগে শ্রমিকদের করতে হতো।" "সূতা কাটা, আয়রন করা, কাটিং, ড্রয়িং, লে-আউট, লোডিং-আনলোডিং - কোন কাজই এখন মেশিন করছে না। বিভিন্ন ধরণের মেশিন চলে আসছে, যেখানে আর আগের মতো শ্রমিকের দরকার হচ্ছে না," বলছেন তিনি। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে এই পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে তিন-চার বছর আগে থেকে। এই খাতের একজন শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা ফজলুল হক জানালেন, তিনি নিজের কারখানাতেও এরকম প্রযুক্তি চালু করেছেন। শ্রমিকদের হাতের কাজ কেড়ে নিচ্ছে মেশিন "কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের প্রতিটি কারখানায় বেশিরভাগ মেশিনে দুজন করে লোক লাগতো। একজন মেশিনটি চালাতেন, আরেকজন উল্টোদিকে বসে সাহায্য করতেন। গত তিন চার বছরে পর্যায়ক্রমে হেল্পারের পদ খালি হয়ে গেছে। মেশিন ঐ জায়গা দখল করে নিয়েছে।" একটি মাঝারি মাপের কারখানার কাটিং বিভাগে আগে প্রায় দেড়শো-দুশো কর্মীর দরকার হতো। সেখানে এখন অটোমেটিক কাটার মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে যেখানে মাত্র দশ-বারোজন লোক দিয়েই কাজ চালানো যায়। অর্থাৎ দশ ভাগের একভাগ লোক দিয়েই এখন কাজ চালানো যায়। ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি কারখানাই এখন কম-বেশি এরকম অটোমেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে কী ধরণের মেশিন বা যন্ত্রপাতি আমদানি করা হচ্ছে, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। প্রতিষ্ঠানটির ফেলো অর্থনীতিবিদ ড: মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, একটা পরিবর্তন যে শুরু হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। "আগে যে ধরণের মেশিন আমদানি করা হতো, তার চেয়ে অনেক ভিন্ন ধরণের মেশিন এখন আনা হচ্ছে। অনেকে রোবটও আনছেন। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।" ডঃ রহমানের মতে, এর একটা কারণ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসলে তখন আর বিনা শুল্কের সুবিধা আর পাবে না। তখন তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। তখন কারখানা মালিকরা প্রযুক্তির দিকেই ঝুঁকবেন। চীনের একটি কারখানা। শুধুই রোবট, খুব বেশি কর্মীর দরকার হয় না এমন কারখানায়। কমছে নারী শ্রমিক গার্মেন্টস নেত্রী নাজমা আক্তার বলছেন, মালিকরা নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারে এত আগ্রহী হওয়ার কারণ, এটি তাদের আরও বেশি মুনাফার সুযোগ করে দিচ্ছে। "গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে যখন আমরা কথা বলি, তারা বলে চারটা লোক যে কাজ করে, একটা মেশিনেই এখন সেই কাজ হয়। একজন শ্রমিককে ন্যূনতম আট হাজার টাকা মজুরি দিতে হয়। চারজন শ্রমিকের পেছনে যায় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু এখন নাকি আট হাজার টাকাতেই একটি মেশিন পাওয়া যায়। কাজেই মালিকরা সেই পথেই যাচ্ছেন।" নাজমা আক্তারের মতে, অটোমেশনের প্রথম শিকার হচ্ছেন কারখানার নারী শ্রমিকরা। "অনেক কারখানাতেই যেখানে এক হাজার শ্রমিক ছিল। এখন সেখানে হয়তো বড়জোর তিনশো শ্রমিক আছে। বেশিরভাগ জায়গায় নারী শ্রমিকরাই কাজ হারাচ্ছেন।" গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে পোশাক শিল্পে। এখন সেটি স্তিমিত হয়ে আসছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ছাঁটাই শুরু হয়েছে বলে দেখেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ড: মুস্তাফিজুর রহমান। "এর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা নারী কর্মীদের ওপরই পড়ছে। প্রথাগতভাবে এই শিল্পে নারী কর্মীরাই বেশি কাজ করেন। একসময় পোশাক শিল্পে আশি বা নব্বু্ই শতাংশই ছিলেন মহিলা কর্মী। এখন সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে সেটা কমে ষাট শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। এটা আরও কমবে। কারণ অনেক উদ্যোক্তা মনে করেন মহিলার প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন না। সেজন্যে নতুন মেশিনে কাজ করার জন্য ছেলেদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।" বাংলাদেশে এরই মধ্যে কাজ হারাতে শুরু করেছে বহু শ্রমিক। অফশোরিং বনাম নিয়ার শোরিং বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল আশির দশকের মাঝামাঝি। শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে এধরণের শিল্প যখন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল তখন তার নাম দেয়া হয়েছিল অফশোরিং। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসি কনসালটেন্সি তাদের এক রিপোর্টে বলছে, অটোমেশনের ফলে এসব শিল্প এখন অনশোরিং, অর্থাৎ আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা নিয়ারশোরিং, অর্থাৎ কাছাকাছি কোন দেশে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা ফজলুল হক মনে করেন, এরকম আশংকা তিনি দেখছেন না। "যেটা বলা হচ্ছে রোবট এসে সব দখল করে নেবে এবং এর ফলে এই শিল্প আর বাংলাদেশে থাকবে না, ইউরোপ-আমেরিকাতেই ফিরে যাবে। কিন্তু এই কথার মধ্যে আমি একটা ফাঁক দেখছি। মানুষের জায়গায় রোবট বসালে তার খরচ কী দাঁড়াবে এবং সেই বিনিয়োগ সবাই করতে পারবে কীনা বা এই রোবটের অপারেশনাল খরচ কী হবে- এগুলোর কোন পরিস্কার জবাব কিন্তু এখনো আমি কোন স্টাডিতে দেখিনি।" অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমানও মনে করেন, এই শিল্পকে বাংলাদেশে ধরে রাখার সুযোগ এখনো আছে। ড: মুস্তাফিজুর রহমান: 'একটা পরিবর্তন শুরু হয়েছে' "আমি আবার এধরণের আশংকাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চাই না কয়েকটি কারণে। এই শিল্প বাংলাদেশে থাকবে কি থাকবে না, সেটা শেষ বিচারে উৎপাদনশীলতা এবং খরচ কী পড়বে, তা দিয়েই নির্ধারিত হবে। এটা এখনো শ্রমঘন শিল্প। এরকম শিল্প নিয়ারশোরিং করতে গেলে সেটা একটা বিরাট বড় চ্যালেজ্ঞ। কারণ এত বিপুল পরিমাণে তৈরি পোশাক সরবরাহ করা কিন্তু সহজ নয়, সেই সক্ষমতা গড়ে তোলা অনেক সময়ের ব্যাপার।" আরেকটি বিষয়ের প্রতি তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। বিশ্ব বাজারে পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে চীন আছে শীর্ষস্থানে। তারা মোট চাহিদার তিরিশ শতাংশ সরবরাহ করে। আর এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ সরবরাহ করে মাত্র ছয় শতাংশ। "আমি মনে করি বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়ানোর অনেক সুযোগ এখনো রয়ে গেছে। ঠিক কৌশল নিতে পারলে বাংলাদেশের সুযোগের সীমা কিন্তু এখনো অনেক দূর বিস্তৃত করা সম্ভব।" কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ কিন্তু এই যে বিরাট প্রযুক্তিগত পরিবর্তন গার্মেন্টস শিল্পকে আমূল বদলে দিচ্ছে, সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ? শিমি টেকনোলজিসের সারাহ ক্রিসলি বলছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কোন বিকল্প নেই। তার আশংকা, যদি এর পেছনে সত্যিকারের কোন বিনিয়োগ করা না হয়, বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। তখন এসব প্রতিষ্ঠান অন্যান্য পোষাক রফতানিকারক দেশে চলে যাবে। নাজমা আক্তার: অটোমেশনের প্রথম শিকার নারী শ্রমিকরা "কিন্তু আমি আসলে চাই না এটা ঘটুক। আমি দেখেছি, বাংলাদেশ গত পাঁচ বছরে কত ধরণের কাজ করেছে। আমি গত ছয় বছর ধরে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করছি। কারখানাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য তারা কত কাজ করেছে, সেটা আমি দেখেছি। আমি চাই বাংলাদেশ পোশাক সরবরাহকারী দেশের শীর্ষে থাকুক। কিন্তু সেজন্যে এই বিষয়টাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং আমি আশা করি তারা সেই সিদ্ধান্ত নেবে।" সারাহ ক্রেসলির প্রতিষ্ঠান মূলত গার্মেন্টস শিল্পকে অটোমেশনের যুগের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। গত প্রায় ছয় বছর ধরে এ কাজেই তিনি বাংলাদেশে যাতায়ত করছেন। সেখানে তার প্রতিষ্ঠান পাঁচটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ সফর থেকে নিউইয়র্কে ফেরার পর তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল টেলিফোনে। সারাহ ক্রেসলি: গার্মেন্টস শ্রমিকদের নতুন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। "আমরা নিজেদেরকে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের অবস্থানে রেখে কল্পনা করে এই কর্মসূচী তৈরি করেছি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ গার্মেন্টস শ্রমিকের খুব কমই আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আছে। আমরা আমাদের লার্নিং টুলগুলো তৈরি করেছি একটা গেমের মতো করে। আমরা একটা ভিডিও গেমের মতো ইন্টারফেস তৈরি করেছি, তার সঙ্গে যোগ করেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।" "এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাংলা শেখানো হবে। ফলে কারখানার কর্মীরা বাংলায় কথা বলে তাদের নির্দেশ দিতে পারবে। এবং হাতের স্পর্শ দিয়েও এসব মেশিন চালানো যাবে।" শিমি টেকনোলজিসের পাইলট প্রকল্পে গার্মেন্টসের নারী কর্মীরা ডিজিটাল প্যাটার্ন মেকিং এর বেসিকস শিখছে। শিখছে আরও নানা কিছু। এর মাধ্যমে গার্মেন্টস কর্মীরা ডিজিটাল যুগের জন্য তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। প্রযুক্তি ভিত্তিক যে নতুন শিল্পবিপ্লবের ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশে, তার ধাক্কায় গার্মেন্টস শিল্প যে আমূল বদলে যেতে চলেছে, তা নিয়ে এই খাতের কারও মনেই কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রোবটিক প্রযুক্তি যে লাখ লাখ কর্মীর কাজ নিয়ে নেবে, তার কর্মসংস্থান কোথায় হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
আসছে রোবট প্রযুক্তি: বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কি টিকে থাকতে পারবে?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
যৌনকর্মীরা অপেক্ষা করছেন কখন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের খাবার বিলি করতে আসবে। তারা এখন অপেক্ষা করছেন কখন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের খাবার বিলি করতে আসবে। ওই এলাকাতেই যৌনকর্মী হিসেবে তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন সীমা নামের এক নারী। তিনি টেলিফোনে বলছিলেন, "আমরা যে কী অবস্থায় পড়েছি, বিশ্বাস করতে পারবেন না। একটাও খদ্দের নেই আজ কয়েক সপ্তাহ। তাদের আসার উপায়ই তো নেই। একটা পয়সা রোজগার নেই - দুই ছেলে, পুত্রবধূ, তার দুটো বাচ্চাকে নিয়ে কী করে বাঁচব কে জানে! শুধু আমার না, হাজার হাজার মেয়েদের একই অবস্থা এখানে।" করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপদেশ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে সব বিশেষজ্ঞই। কিন্তু মিজ সীমাদের পেশাটা এমনই, যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভবই নয়। কিন্তু তার মধ্যেও করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা চেষ্টা করেছেন কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে। আবার তারা যখন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে শুকনো চাল-ডাল অন্যান্য রসদ নিচ্ছেন, তখনও তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছে। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? কলকাতার সোনাগাছি এলাকার যৌনকর্মীদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে সমস্যা তৈরি হয়েছে মিজ সীমা বলছিলেন, "করোনা যখন থেকে শুরু হয়েছে, তখন থেকেই আমরা খদ্দের এলেই তাকে ওই সাবানের মতো কী একটা বেরিয়েছে (সম্ভবত হ্যান্ড স্যানিটাইজের কথা বোঝাচ্ছিলেন), সেটা দিয়ে হাত ধুইয়ে তার পরে ঘরে ঢোকাচ্ছিলাম।" "আবার বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে আরও একবার হাত ধুয়ে তারপর বের হতে হচ্ছি। আর কারও যদি শরীর খারাপ থাকে, জ্বর, সর্দি-কাশি, তাহলে তাকে ঘরে আসতে দিচ্ছিলামই না। তবে এখন তো আর খদ্দের আসছেই না।" সোনাগাছিসহ রাজ্যের নানা যৌনপল্লীর নারীদের নিজেদেরই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে - দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা স্মরজিৎ জানা বলছিলেন তারা কিছু কিছু খাদ্যদ্রব্য যোগাড় করতে পারছেন, সেটাই বিলি করা হচ্ছে সোনাগাছির বিভিন্ন অঞ্চলে। "এক তো যৌনপল্লীতে খদ্দের আসছেন না, তাই যৌনকর্মীদের রোজগার শুন্যে নেমে এসেছে। তারা নিজেরা তো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেনই। এছাড়া ৮০ শতাংশ যৌনকর্মীই তাদের এক বা দুজন সন্তানকে নিজের বাবা-মায়ের কাছে রেখে দেন পল্লীর বাইরে", বলছিলেন স্মরজিৎ জানা। "এক-দুজন সন্তান অবশ্য মায়েদের সঙ্গে থাকে। বাবা-মায়ের কাছেও খরচ পাঠাতে পারছেন না যৌনকর্মীরা - তাই সেই সব পরিবারগুলোও বিপদের মুখে পড়েছে।" তার কথায়, "পাড়ার কিছু ক্লাব বা কোনও সংগঠন এবং পুলিশের তরফ থেকেও মাঝে মাঝে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। আর আমরা রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রমের মতো সংগঠনগুলোর কাছ থেকে চাল-ডাল, আলু-পেঁয়াজ এসব যোগাড় করেছি। সেগুলোই প্যাকেট করে ওদের বিলি করছি যাতে অন্তত কাউকে না খেয়ে থাকতে না হয়।" সংঘবদ্ধ যৌনপল্লীগুলির বাইরে যারা পথচলতি বা ভাসমান যৌনকর্মী, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। এদের প্রায় কেউই নিজের পরিচয় তুলে ধরতে চান না। পথচলতি বা ভাসমান যৌনকর্মীদের অবস্থা সংঘবদ্ধ ডৌনপল্লীদের কর্মীদের চেয়ে শোচনীয়। এদের মধ্যে যেমন আছেন নারীরা, তেমনই আছেন রূপান্তরিত নারী, পুরুষ এবং হিজড়ারা। রূপান্তরকামীদের একটি সংগঠনের প্রধান রঞ্জিতা সিনহা বলছিলেন, "প্রথম দিন থেকেই আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য প্রচুর আবেদন আসছে, ফোন আসছে। কিন্তু আমরা তো সীমিত কিছু জায়গায়, কলকাতা আর আশপাশের অঞ্চলে যেতে পারছি।" "রাজ্যের বাকি অঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতদের তো আলাদা কোনও পেশা নেই - এরা বেশিরভাগই হয় যৌন পেশায় যুক্ত অথবা রাস্তায় ভিক্ষা করেন, অথবা হিজড়া প্রথায় জড়িত। লকডাউনের ফলে রোজগার পুরোপুরি বন্ধ এদের সকলের।" যে সময়ে শারীরিকভাবে যৌনপেশা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না কারও পক্ষেই, অনেকেই সম্ভবত ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই পেশায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। যদিও কতজন অনলাইনে যৌনপেশা চালাচ্ছেন, তার কোনও পরিসংখ্যান এখনও তৈরি করতে পারে নি কোনও সংগঠনই। তাদের কাছে এখন প্রাধান্য পাচ্ছে, যৌনকর্মীরা অন্তত যেন নিয়মিত খাবারের নিশ্চয়তা পান।
করোনাভাইরাস: 'খদ্দের নেই, না খেয়ে মরার অবস্থা', বলছেন কলকাতার সোনাগাছির এক যৌনকর্মী
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
শুধু সোশ্যাল মিডিয়া যে গোপনে সর্বদা আপনার কার্যক্রম অনুসরণ করছে তা নয়। কিন্তু শুধু এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টই যে গোপনে সর্বদা আপনার কার্যক্রম অনুসরণ করছে তা নয়। আরও ডজন-খানেক কোম্পানি আমাদের ডিজিটাল ভুবনে ঘোরাফেরার নানা তথ্য সংগ্রহ করছে এবং সারাক্ষণ মনিটর করে চলেছে কয়েক ডজন কোম্পানি বা ট্র্যাকার। সাধারণত যেসব ওয়েবসাইটে বেশি যাওয়া হয় এবং যেসব অ্যাপস সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো ব্যবহারকারীর সম্পর্কে তথ্য নিয়ে নিচ্ছে। অনেক মানুষই এ বিষয়ে সচেতন নয় যে কিভাবে তাদের ওপর "নজরদারি" করা হচ্ছে এবং কাদের এসব তথ্য দেখার ক্ষমতা আছে। যদি আপনি জানতে চান যে ইন্টারনেটে কে আপনাকে অনুসরণ করছে, তাহলে বেশিরভাগ ইউজারের জন্যই উত্তরটি হচ্ছে, সেটা যে কেউ হতে পারে। যেভাবে আমাদের ডিজিটাল জীবনকে প্রতিনিয়ত নজরদারি করা হচ্ছে লোকজনের ডিজিটাল জীবনের বিচরণ ট্র্যাক করতে চাইলে নানান উপায় রয়েছে। আরও পড়ুন: ফেসবুকের ভুল স্বীকার করলেন জাকারবার্গ গতবছর পর্যন্ত গুগল জিমেইল ব্যবহারকারীদের ইনবক্স স্ক্যান করে তথ্য নিয়েছে। ওয়েব ব্রাউজিং ইতিহাস নিবিড়ভাবে মনিটর করতে পারে এমন টুলসকে বলা হয় "স্নুপিং আর্সেনাল। গণহারে তথ্য সংগ্রহের এই অস্ত্রটি মানুষের কর্মকাণ্ডের ব্যাপক তথ্য মজুদ করে। যেমন কোন ধরনের ওয়েবসাইটে আমরা বেশি যাচ্ছি কিংবা কি ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছি ইত্যাদি। কোনও ওয়েবসাইটের ডজন ডজন ট্র্যাকার থাকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। একটি টুল হয়তো সাইটের মালিককে ট্রাফিক ভলিউম বা ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা দেবে। কিন্তু কোম্পানিগুলো অধিকাংশই তাদের ব্যবহারকারী কারা, বয়স কেমন, কোথায় থাকে, কি পড়ছে, কোন বিষয়গুলোতে আগ্রহ ইত্যাদি জানার জন্য এসব টুলস ব্যবহার করে। ২০১০ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, আমেরিকার জনপ্রিয় ৫০টি ওয়েবসাইটের গড়ে ৬৪ ট্র্যাকার রয়েছে। কেন এত দীর্ঘ সংখ্যা? কারণ এসব তথ্য তারা পণ্যদ্রব্য হিসেবে বিক্রী করতে পারে, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে, এমনকি সরকারের কাছেও। আরও পড়ুন: ইন্টারনেটে কীভাবে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করবেন কোটা সংস্কার: ঢাবি ক্যাম্পাসে এখনো উত্তেজনা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য অজান্তেই চলে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতা, বিভিন্ন কোম্পানি এমনি সরকারি কর্তৃপক্ষের হাতেও। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহের আরেকটি পন্থা হচ্ছে ফ্রি ইমেইল সার্ভিস থেকে তাদের ইনবক্স স্ক্যান করার মাধ্যমে, যেমন গুগলের জিমেইল। ইমেইল আদান-প্রদানের জন্য জনপ্রিয় জিমইল। গত জুনে গুগল কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা এই ধরনের চর্চা বন্ধ করবে।। বেশিরভাগ সময়ই এসব কাজ আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় কিন্তু ট্র্যাকারদের খুঁজে বের করা সহজ যদিও একেবারে প্রথম দিকে তাদের সন্দেহজনক মনে নাও হতে পারে। কখনো কি কোনও পেজে লেখা দেখেছেন "টুইট দিস" কিংবা "ফলো মি অন টুইটার"? তাহলে নিশ্চয়ই সেটা কোনও ট্র্যাকার। ইন্টারনেট কুকিজ যে কাউকে অনুসরণ করতে পারে। গতবছর টুইটার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয় যে, তারা 'ডু নট ট্র্যাক ইনিশিয়েটিভ' এ তাদের সমর্থন তুলে নিয়েছে। ওই ইনিশিয়েটিভ ছিল ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীদের অনলাইন গতিবিধি অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখার একধরনের পলিসি। কোনও কোনও ট্র্যাকার আঠার মতো লেগে থাকে এবং সর্বদা ইন্টারনেটে কার্যকলাপ নজরদারি করে। নানা ধরনের অ্যাপস বর্তমান সময়ে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বেশি ব্যবহার করে থাকেন। গতবছর যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক শিক্ষাবিদ নার্সেও ভ্যালিনা রদরিগেজ এবং শ্রীকান্ত সুন্দারসানের একটি গবেষণা প্রকাশনায় দাবি করা হয় যে, ১০টির মধ্যে ৭টির বেশি স্মার্টফোন অ্যাপস ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিচ্ছে তৃতীয় কোনও পক্ষের কাছ । তারা লেখেন, "যখন মানুষ কোনও নতুন অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইও-এস অ্যাপস ইন্সটল করে তখন সেটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি চায়। যথাযথভাবে কাজ করার স্বার্থে কিছু কিছু তথ্য অ্যাপসগুলোর প্রয়োজনও হয়। জিপিএস ডাটা ব্যবহার করে লোকেশন খুঁজে বের করতে না পারলে লোকেশন ম্যাপ ঠিকমতো কাজ করতে পারবেনা। কিন্তু একবার একটি অ্যাপ সেই তথ্য নেয়ার অনুমতি পেয়ে গেলে সেটি আপনার তথ্য অ্যাপ ডেভেলপার চাইলে যে কারও সাথে শেয়ার করতে পারবে। যেমন তৃতীয় কোনও পক্ষ ট্র্যাক করতে পারবে আপনি কোথায় আছেন, কত দ্রুত সরে যাচ্ছেন, এবং আপনি কি করছেন।" ইন্টারনেট সার্ভিস নেয়ার বা পণ্য কেনার সময় হাজার হাজার শব্দে লেখা শর্তাবলী পড়তে চান না অনেক মানুষ। হাজার হাজার শব্দের শর্তাবলী অনলাইনে বিভিন্ন কম্পানির প্রাইভেসি পলিসি সংক্রান্ত বিবরণ থাকে হাজার হাজার শব্দে লেখা এবং ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন। কে সেসব পুরোটা পড়তে চায়? ২০১১ সালে ব্রিটিশ এক জরিপে দেখা গেছে, যখন কেউ ইন্টারনেটে কোনও পণ্য বা সেবা কেনেন তার কেবল ৭% গ্রাহক অনলাইন টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস (বিভিন্ন শর্তাবলী) পড়েন। লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখলেও আপনি কোথায় আছেন তা খুঁজে বের করা সম্ভব মোবাইল ট্র্যাক করে। মোবাইল ফোন এবং ট্যাবলেট ক্রমাগতভাবে আমাদের অবস্থান অনুসরণ করতে পারে এবং কার্যকর-ভাবে তা শেয়ারও করতে পারে। গ্রাহক তাদের জিপিএস ডাটায় উদাহরণ স্বরূপ ম্যাপ সিলেক্ট করলো, নিয়মিতভাবে ভিজিট করা জায়গাগুলো মনিটর করার অপশনটি বন্ধ করে দিল সেইসাথে লোকেশন অপশনও বন্ধ করে দেয়া হল। প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই এগুলো বন্ধ রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদিও এতকিছুর পরও আপনার মোবাইল ফোনটি কিন্তু জানান দিয়ে দেবে আপনি আসলে কোথায় আছেন। গবেষণা সেটাই বলছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একটি দল পরীক্ষা করে দেখেছে এবং লোকেশন, জিপিএস এবং ওয়াইফাই বন্ধ রাখার পর একটি মোবাইল ফোনকে তারা ট্র্যাক করে তার অবস্থান বের করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কারও কারও মত এসব অ্যাপ থেকে দূরে থাকতে পারলেই মুক্তি ব্যক্তিগত তথ্য চুরি থেকে। কোড লাইব্রেরি তথ্য সংগ্রহ করার পদ্ধতিগুলো জটিল। অনেক ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস তৈরি হয়, অন্য কোম্পানিগুলোর তৈরি করা বিভিন্ন প্রোগ্রামের সমন্বয়ের মাধ্যমে করে যা শূন্য থেকে নতুন কিছু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং অর্থ খরচ বাচায় । সেগুলো সংরক্ষণ করা হয় ডিজিটাল লাইব্রেরিতে। এইসব প্রোগ্রাম স্পর্শকাতর অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের বিস্তারিত তথ্য-সমেত ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করতে পারে তাদের কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই। কিভাবে? ডিজিটাল লাইব্রেরি কোম্পানিগুলো অনেক ক্লায়েন্টের কাছে এসব তথ্য দিতে পারে। এর মানে এমন হতে পারে যে, আমাদের লোকেশন চাইছে যে অ্যাপটি, তার নির্মাতা এবং আমাদের ফোনের কন্টাক্ট নাম্বার চাইছে যে অ্যাপ নির্মাতা -তারা উভয়ই একই ডিজিটাল লাইব্রেরির ওপর নির্ভর করছে। ইউজাররা কখনোই জানতে পারবে না কারণ অ্যাপস গুলোর কোনও প্রয়োজন পড়ছে না তারা কোন সফটওয়্যার লাইব্রেরি ব্যবহার করছে তা মোবাইল ইউজারকে জানানোর, বলেন গবেষক দুজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব নজরদারি বা অনুসরণের ঘটনার পেছনে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি রয়েছে কিন্তু যারা এই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন তাদের জন্য এটি কমানোর ব্যবস্থাও আছে। সবার আগে দরকার "ডু নট ট্র্যাক" ফিচার সচল করা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটকে বলে দেয়া যে, আপনাকে অনুসরণ করা হোক সেটি আপনি চাইছেন না। ব্রাউজারের ক্ষেত্রে ট্র্যাকারদের ওপর নজর রাখবে এমন সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। তবে অ্যাপসের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। স্পর্শকাতর তথ্য ব্লক করার ফলে অ্যাপস ব্যবহারের পারফর্ম্যান্স বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক আসলি ওমুর এর এ বিষয়ে যে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখান থেকেই বলা যায়- "সত্যিই যারা প্যারানয়েড, তারা সব ধরনের প্রযুক্তি ত্যাগ করুন। কেবল ব্যবহার করুন কাগজ, কলম, টাইপ রাইটার এবং সেই প্রাচীন ফ্যাশনের মতো নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত আলাপ ও ছবি আদান প্রদান চালাতে থাকুন।"
ফেসবুকে তথ্য কেলেঙ্কারি: ইন্টারনেটে কে আপনাকে অনুসরণ করছে?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
ব্রিটেনে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে আলাদা করে রাখা হচ্ছে। "প্রতি বছরের শুরুতে আমার বাবা ইটালিতে বেড়াতে যান দুই-তিন সপ্তাহের জন্য। এটা তার একটা প্রিয় বেড়ানোর জায়গা। কারণ বহু বছর তিনি ইটালিতে ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইটালি আসেন। তখন তিনি বয়সে তরুণ। উত্তর ইটালির যে শহরে আমরা থাকতাম সেটা মিলান থেকে ৫০ মাইল দূরে। সেখান থেকে সুইটজারল্যাণ্ডের সীমান্তও বেশি দূরে নয়। বহু বছর আমরা সেখানে ছিলাম। আমার জন্ম সেখানেই। বড় হয়েছি সেখানে। পাঁচ-ছয় বছর আগে আমরা পাকাপাকিভাবে ব্রিটেনে চলে আসি। আমরা থাকি ম্যানচেস্টারের কাছে। কিন্তু আমার বাবা ইটালিতে বেড়াতে যেতে পছন্দ করতেন। আমরাও প্রতি বছর গ্রীস্মে পরিবারের সবাই মিলে সেখানে বেড়াতে যেতাম। তবে বাবা প্রতি বছরের শুরুতে নিয়ম করে বেড়াতে যেতেন ইটালিতে তার পুরোনো শহরে । এবছরও গিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি সেখানে যান। তখনও ইটালিতে করোনাভাইরাস এত ব্যাপকভাবে ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। কিন্তু তিনি যে দুই সপ্তাহ ইটালিতে ছিলেন, তার মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। ব্যাপকভাবে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। নর্থ ম্যানচেস্টার জেনারেল হাসপাতালে মারা যান এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ বাবা ফিরে আসলেন ইটালি থেকে। তখনও তিনি সুস্থ। কিন্তু তিন দিন পর সব যেন ওলট-পালট হয়ে গেল। মার্চের তিন তারিখ, মঙ্গলবার। সেই মঙ্গলবারটা ছিল আর যে কোন দিনের মতোই। আমাদের বাড়ির কাছে যে হেলথ সেন্টার, বাবা সেখানে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। বাবার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার নানা ধরনের অসুস্থতা ছিল, যা নিয়ে তিনি বেশ ভুগছিলেন। কোলেস্টরেল, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট। তবে এসবের পরও তিনি মোটামুটি ভালোই ছিলেন। তিনি একশোভাগ সুস্থ ছিলেন, এটা বলা যাবে না, কিন্তু মোটামুটি ভালো ছিলেন। করোনাভাইরাস নিয়ে যেহেতু আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই আমি কিছু মাস্ক কিনেছিলাম। আমি আমার মা-বাবাকে বললাম, বাইরে যাওয়ার সময় যেন তারা মাস্ক পরে বের হন। গত মঙ্গলবার বাড়ির কাছের হেলথ সেন্টারে যখন বাবা গেলেন, তখন ডাক্তার এবং নার্সরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। তিনি বললেন, মাত্র দুদিন আগে তিনি ইটালি থেকে এসেছেন। ইটালির মিলানে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস সাথে সাথে সেখানে আতংক ছড়িয়ে পড়লো। তাকে আলাদা করে ফেলা হলো। নর্থ ম্যানচেষ্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটা জরুরি দল চলে এলো। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। তার সঙ্গে আমাদের সেদিনই শেষ দেখা। আমরা বুঝতে পারিনি যে আর কোনদিন তার সঙ্গে আর দেখা হবে না। হাসপাতালে প্রথম কয়েকদিন তিনি বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু তারপর ডাক্তাররা বলছিলেন, তার রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছে না। তার হার্টবিট অনিয়মিত। এভাবেই চলছিল কয়েকদিন। তারপর রোববার তিনি মারা গেলেন। ব্রিটেনের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এদিকে বাড়িতে আমাদেরও রীতিমত আলাদা করে রাখা হয়েছিল। আমরা ঘর থেকে বেরুতে পারছিলাম না। কোথাও যেতে পারছিলাম না। বাবার খবরাখবর আমরা পেতাম টেলিফোনে। যে ওয়ার্ডে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে আমরা ফোন করতাম। সেখান থেকেই আমরা খবর পেতাম। আমরা তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারতাম না। গতকাল রোববার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন এলো আমাদের কাছে। তারা বললো, আধ ঘন্টা আগে বাবা মারা গেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খবরটা শুনে ধাতস্থ হতে আমার কয়েক ঘন্টা সময় লেগেছিল। আমার বাবাকে আমি আর কোনদিন দেখতে পাবো না! আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস: যাদের স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদের কী করতে হবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস: আপনার প্রশ্নের উত্তর এরকম একটা খবর যখন আপনি পান, সেটা বুঝতেই আপনার অনেক সময় লেগে যায়। আমি ছিলাম শোকাহত। আমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল। বাবার মৃত্যুর খবর পেলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না, কোথাও যেতে পারছি না। কারণ আমাদের সবাইকে 'আইসোলেশনে' রাখা হয়েছে। প্রতিদিন পাবলিক হেলথ ইংল্যাণ্ড থেকে আমাদের সবার কাছে টেক্সট আসে। তারা জানতে চায়, আমাদের সব ঠিক আছে কীনা। আমাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন লক্ষণ আছে কীনা। প্রতিদিন আমাদের সেই টেক্সটের জবাব দিতে হয়। এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই। উত্তর ইটালি জুড়ে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মানুষকে এখন কোয়ারানটিনে রাখা হয়েছে আমরা এক সপ্তাহ এই অবস্থায় আছি। আরও এক সপ্তাহ থাকতে হবে। আমরা যেহেতু আইসোলেশনে আছি, তাই আমার বাবার জানাজা বা দাফন কোন কিছুই করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা লাশ আরও কিছুদিন মর্গে রেখে দেবে । আরও এক সপ্তাহ পর যখন আমাদের মুক্তি মিলবে, তখন আমরা বাবার জানাজা, দাফন এগুলোর আয়োজন করতে পারবো। আমরা এখনো জানি না, তার জানাজা-দাফন এগুলো আমরা স্বাভাবিকভাবে করতে পারবো কিনা। কারণ তিনি তো স্বাভাবিকভাবে মারা যাননি। পাবলিক হেলথ ইংল্যাণ্ড যা বলে, সেই মতই আমাদের কাজ করতে হবে। মাত্র দু'মাস আগেও আমরা জানতাম না করোনাভাইরাস জিনিসটা কী, এই ভাইরাসটাই ছিল না। এখন এই ভাইরাস আমার বাবাকে কেড়ে নিল।"
করোনাভাইরাস: ব্রিটেনে এক বাংলাদেশির মৃত্যু, যেভাবে আক্রান্ত হন তিনি
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
দেশের ভেতরে প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা থাকলেও পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন হারিয়েছেন অং সান সু চি। খোলামেলাভাবে বলতে গেলে তাদের জন্য কিছু মানুষের ভালবাসা আছে। তবে সারা বিশ্ব যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা - যা গণহত্যা হিসেবেও অভিযোগ উঠেছে- এবং এই জনগোষ্ঠীকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করলো, তার এক বছর পর ২০১৮ সালে অং সান সু চি তার মন্ত্রণালয়ে জেনারেলদের থাকার বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, "এটা ভালো একটা ব্যাপার।" এর তিন বছর পর, সামরিক এক অভ্যুত্থানে তাকে যখন আবার খুব দ্রুত গৃহবন্দী করা হলো, তখন মনে হবে যে সেনাবাহিনীর পক্ষে তার বক্তব্য দেওয়া, সেটা ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক কিম্বা দেশপ্রেম যে কারণেই হোক না কেন, সেই সিদ্ধান্ত খুব খারাপ ছিল। অং সান সু চির সমর্থকরা বলবেন যে তিনি খুব কঠিন এক অবস্থায় ছিলেন এবং তিনি যদি কঠোর ব্যবস্থা নিতেন তাহলে তাকে আরো আগেই জেলে যেতে হতো। কিন্তু তার সমালোচকদের কথা হলো- যে পরিস্থিতিতেই তিনি থাকুন না কেন, নির্যাতিত মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি সামান্য পরিমাণে হলেও তিনি সহানুভূতি দেখাতে পারতেন। তবে সব বিবেচনাতেই অং সান সু চি এবং মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন বলেই মনে হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অং সান সু চির যে বলয় রয়েছে সেটা হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষ এখনও তাকে ভালোবাসে। তার এই জনপ্রিয়তা অতিরঞ্জিত কিছু নয়। নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি বা এনএলডি ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান: নির্বাচন কেন্দ্র করে কেন এই ক্যু? আপনি যদি ইয়াঙ্গন শহরের ভগ্নপ্রায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, যার মাথার উপরে বিদ্যুতের তারের জাল এবং কখনো কখনো পায়ের কাছে বিড়ালের সমান বড় বড় ইঁদুর এসে পড়বে, সেই শহরের কোন বাড়ির দরজা দিয়ে উঁকি মারেন, তাহলে সেখানে হয়তো আপনি একটি মুখই দেখতে পাবেন এবং তিনি হলেন অং সান সু চি। আপনি দেখবেন যে বাড়িতে লাগানো পোস্টার, আঁকা ছবি কিম্বা ক্যালেন্ডার থেকে 'মা সু' আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন। এখন রাতের বেলায় এই একই রাস্তায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ও বিনাবিচারে আটক তাদের এই নেত্রীর সমর্থনে হাড়ি পাতিল পেটানোর আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়। "সাধারণত অশুভ শক্তিকে তাড়াতে আমরা এধরনের শব্দ করে থাকি," সোশাল মিডিয়াতে একথা লিখেছেন মা খিন, "এখন আমরা সামরিক বাহিনীকে তাড়াতে চাই যাতে করে অং সান সু চি মুক্তি পেতে পারেন।" রাতের বাতাসে এখন এই হাড়ি পাতিলের শব্দের পাশাপাশি কিছু গানও শোনা যায়। এসব গান শোনা যেত ১৯৮৮ সালে সামরিক শাসনবিরোধী উত্তাল আন্দোলনের সময়েও। সেসময় দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অং সান সু চির উত্থান ঘটে। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন ওয়ে ওয়ে নু। তিনি রাজপথে এরকম এক বিক্ষোভের ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছেন। তার ক্যাপশনে লিখেছেন, "এরকম দেখতে পাওয়া খুব দুঃখজনক।" তিনি বলেছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে তিনি যখন কারাগারে বন্দী ছিলেন তখন তারা এধরনের বিপ্লবী গান গাইতেন। অং সান সু চির পিতা জেনারেল অং সান ছিলেন আধুনিক বর্মী সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। আরো পড়তে পারেন: এই ভিডিও ফুটেজে অং সান সু চির পিতা জেনারেল অং সানের একটি ছবি ছিল যা মোবাইল ফোনের আলোতে দেখা গেছে। মিয়ানমারে তিনি এখনও একজন শ্রদ্ধেয় নেতা হিসেব বিবেচিত। বার্মাকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার পথে পরিচালিত করার আগে ১৯৪৭ সালে তাকে হত্যা করা হয়। আধুনিক বর্মী সেনাবাহিনীরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এই বাহিনী টাটমাডো নামে পরিচিত ছিল। সেই একই বাহিনী এখন তার কন্যাকে স্বাধীনতা থেকে এবং তার দেশকে তাদের নেতা থেকে আবারও বঞ্চিত করেছে। সেই মোবাইল ফোন, যা তার পিতার স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে ধরে রেখেছে, সেটিও এখন অং সান সু চিকে অন্ধকারে পথ দেখাতে পারে। মিয়ানমারে এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০৭ সালে যে আন্দোলন হয়েছে (জাফরান বিপ্লব) তা ছিল মূলত রাজপথে। আর এবারের আন্দোলন হচ্ছে অনলাইনে। মূলত ফেসবুকে, যা মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষ সংবাদ ও তাদের মতামত আদান প্রদানে ব্যবহার করে থাকে। তবে এটা নির্ভর করে সেনাবাহিনী এই সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে রাখার ব্যাপারে কতোটা অটল থাকে তার ওপর। এই মিডিয়ার শক্তি সম্পর্কে সামরিক বাহিনী অবগত রয়েছে। তাদের অনেক শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার ফেসবুকে নিষিদ্ধ কারণ তারা জাতীয়তাবাদী চেতনা উস্কে দিতে ফেসবুকের মাধ্যমে জাতিবিদ্বেষ প্রসূত ঘৃণা ছড়িয়েছেন। এই মাধ্যমটিকে তারা এখন ভয়ও পান। আর কারো পক্ষে বর্মী সেনাবাহিনী টাটমাডোর বর্বরতা ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন। স্বাধীনতা দাবি করায় তারা তাদের নিজেদের লোক, শিক্ষার্থী এবং ভিক্ষুদেরও হত্যা করেছে। অং সান সু চি এবং তার সমর্থকদের জন্য সমস্যা হলো এই ডিজিটাল শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহবান জানিয়ে তিনি যে খোলামেলা চিঠি লিখে গেছেন তাতেও অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কেউ কেউ ভয় পেয়েছেন যে এটা হয়তো প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতার করার জন্য সামরিক বাহিনীরই পাতা কোন ফাঁদ। অং সান সু চির নামে রাজপথে নেমে আসার ঘটনা হয়তো সারা বিশ্বের সোশাল মিডিয়া ও টেলিভিশন সংবাদের কাছে পরিষ্কার ছবি ও শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে পারে। একজন সৈন্য প্রহরা দিচ্ছেন রাজপথে। কিন্তু ১৯৮৮ সালের বিভিন্ন চিত্র মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতাকামী আন্দোলন দমন করতে সেনাবাহিনী সেসময় যে দমন-পীড়ন চালিয়েছিল তাতে এসব রাজপথ রক্তে ভেসে গিয়েছিল। আমি নতুন কিছু দেখতে পাচ্ছি না যার ফলে মিয়ানমারের বড় বড় শহরে টাটমাডো এধরনের হত্যাকাণ্ড চালানো থেকে বিরত থাকতে পারে। দেশটির সর্বশেষ পরিস্থিতিতে আরেকটি বিষয় আছে যা আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও সত্য-বর্জিত নয়। অং সান সু চির মুক্তি পাওয়ার সুযোগ এবং ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নির্ভর করছে "আন্তর্জাতিক সমাজ" কী করে, না করে তার ওপর। পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সু চি ছিলেন আজীবনের প্রেসিডেন্ট। নির্বাচিত নেতারা যেসব মূল্যবোধের কথা বলে থাকেন তিনি যেন ছিলেন তাদের কাছে সেরকমই এক আলোক-বর্তিকার মতো। তবে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা অথবা তাদেরকে সমর্থন দিতেও অস্বীকৃতি জানানোর কারণে পরে তিনি তাদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান তাকে দেওয়া সম্মান, পুরস্কার, উপাধি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও তিনি বিচলিত হন নি। এই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাওয়ার একটি উদাহরণ হিসেবে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা যেতে পারে। অং সান সু চির ১৫ বছরের গৃহবন্দী থাকার সময়ে বিবিসি ছিল তার বিশ্বস্ত সঙ্গী। তবে ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে বর্বরতার পর সবকিছু বদলে গেছে। অন্যান্য পশ্চিমা মিডিয়ার মতো আমিও তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে বারবার চিঠি পাঠিয়ে কোন উত্তর পাইনি। অং সান সু চির মতে যারা তার দেশের জটিল পরিস্থিতি কখনো উপলব্ধি করতে পারবে না তাদের সাথে কথা বলার কী দরকার! আমি যে দু'বছর মিয়ানমারের বিষয়ে কাজ করেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে কাছে থেকে তার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলাম যখন তিনি দ্যা হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগের জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়েছিলেন। "মিস সু চি, আপনি কি কখনো দুঃখ প্রকাশ করবেন?" তিনি যখন গাড়ি থেকে নামছিলেন তখন আমি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলাম। কোন উত্তর ছিল না। এমন না যে আমি কোন উত্তর আশা করেছিলাম। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অং সান সু চি। অং সান সু চি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মিয়ানমারে জবাবদিহিতা-বিহীন সেনাবাহিনী যেসব অপরাধ করছে তিনি সেগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষ বিরাগ থাকা সত্ত্বেও এর ফলে দেশের ভেতরে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সম্মান রক্ষা করার কারণে তিনি প্রশংসিতও হয়েছেন। কিন্তু এখন অনেকেই বিশ্বাস করেন সামরিক স্বৈরশাসনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য যে আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে তাতে অং সান সু চির প্রতীক হয়ে ওঠার কোন কারণ নেই। "বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যেভাবে সাড়া দিচ্ছে তাকে অং সান সু চিকে সাহায্য করুন - এরকম সরুভাবে দেখা উচিত নয়," বলেন ইয়াঙ্গন-ভিত্তিক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সি। "এটা হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রিয় এক সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ ও তাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সমর্থন," বলেন তিনি। অন্যরা আরো স্পষ্টবাদী। জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন বিল রিচার্ডসন। অং সান সু চির একজন বন্ধু ছিলেন তিনি। কিন্তু তাদের সেই সম্পর্ক পরে টিকে থাকে নি। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে কিছু করার জন্য তিনি অং সান সু চিকে ব্যর্থ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। "নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি তার অনেক বড় ভক্ত ছিলাম," বলেন তিনি। মি. রিচার্ডসন বিশ্বাস করেন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির এখন নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা উচিত। অং সান সু চির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে তার কারাদণ্ড হতে পারে। এর ফলে তিনি হয়তো নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না এমন পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সারা বিশ্বে বিক্ষোভ হয়েছে। জেনারেলরা বলছেন জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে তারা নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটা ক্ষতিসাধন করতে চায় যে ব্যবস্থা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, গণতন্ত্রের পথে সেনাবাহিনীর সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে গুড়িয়ে দেবে। কিন্তু অং সান সু চি যদি মাসের পর মাস কিম্বা বছরের পর বছর কারাবন্দী থাকেন তাহলে কী হবে? তার ২০ বছরের সাবেক বন্ধু মি. রিচার্ডসন বলছেন, "আমার মনে হয় তিনি অনুধাবন করতে পারবেন যে সামরিক বাহিনী, যাদেরকে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন, তারা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তার অবস্থা খুব অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে আমি আশা করি তারা তার ক্ষতি করবে না অথবা তাকে চিরকালের জন্য চুপ করিয়ে দেবে না।" আর অং সান সু চিকে যদি আবার কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয় তখন? "তিনি যদি আবার কথা বলতে পারেন এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধ করা হয়েছে সেগুলো স্বীকার করে নেন, তাহলে আন্তর্জাতিক সমাজ তাকে বিশ্বাসযোগ্য ও সৎ বলে মনে করবে। এখনও খুব বেশি দেরি হয়ে যায় নি। তখনই বিশ্ব সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে," বলেন তিনি। "এটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে আগেও তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন।"
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর অং সান সু চির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
ইয়াবা ট্যাবলেট- বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ ইয়াবাসেবী। ২৮ শতাংশ আসক্ত ফেনসিডিল এবং হেরোইনে। গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে ইয়াবা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে যখন টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মিয়ানমার থেকে এই ট্যাবলেট আসতে শুরু করে। তারপর এটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন। তারও আগে আশির দশকে ফেনসিডিল, সেটি নব্বই এর দশকেও ছিল। ঢাকায় মুক্তি নামের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে বেডের সংখ্যা ১০০। এই কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চিকিৎসার জন্যে তাদের কাছে যতো রোগী আসেন তার ৮০ শতাংশই এখন ইয়াবাসেবী। হেরোইন ও ফেনসিডিলের চল এখনও আছে, কিন্তু সীমিত পর্যায়ে। পুলিশের উদ্ধার করা মাদক। ইয়াবার জনপ্রিয়তার পেছনে দুটো কারণকে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা। মুক্তির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কনসালটেন্ট ড. আলী আসকার কোরেশী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "ইয়াবা গ্রহণ করলে সেটি শুরুতেই মানুষকে চাঙ্গা করে তোলে। আর সব মানুষই নিজেকে চাঙ্গা দেখতে ভালোবাসে। একারণে তারা ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।" "এটি অত্যন্ত ছোট্ট একটি ট্যাবলেট। ওয়ালেটে এবং নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগেও এটি সহজে বহন করা যায়। অনলাইনে অর্ডার দিলে পৌঁছে যায় বাড়িতে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া যায়। কিন্তু ফেনসিডিলের জন্যে বড় বোতল লাগে। সেটা বহন করা, খাওয়ার পর ফেলা অনেকের জন্যেই ঝামেলার। এছাড়াও এটি অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয়," বলেন মনোবিজ্ঞানী ড. মোহিত কামাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেনটাল হেলথের সাইকোথেরাপির অধ্যাপক তিনি। গবেষকরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে তাদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সেটা বলা কঠিন। "মনে রাখতে হবে ছেলেরা যতো সংখ্যায় চিকিৎসা নিতে আসে, মেয়েরা কিন্তু অতোটা আসে না। সামাজিক কারণেই তাদের নেশা সংক্রান্ত সমস্যা পরিবার থেকে গোপন রাখা হয়। ফলে এটা বোঝা একটু কঠিন যে মেয়েরা কি পরিমাণে আসক্ত," বলেন মি. কোরেশী। নারীরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। মনোবিজ্ঞানী ড. কামাল জানিয়েছেন, মেয়েদের ইয়াবার নেশা শুরু হয় ঘুমের বড়ি থেকে। নানা ধরনের মানসিক যন্ত্রণার কারণে তারা যখন রাতে ঘুমাতে পারে না তখন তারা ঘুমের বড়ির আশ্রয় নেয়। তারপর ধীরে ধীরে ইয়াবার মতো অন্যান্য মাদকেও আসক্ত হয়ে যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের আইন অনুসারে হেরোইন হচ্ছে 'ক শ্রেণি'র মাদক আর ফেনসিডিল ও ইয়াবা 'খ শ্রেণি'র। কোন ধরনের মাদক? ইয়াবা হচ্ছে এমফিটামিন জাতীয় ড্রাগ- মেথাএমফিটামিন। অনেকের মধ্যেই এটি সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে। তারা মনে করেন, ইয়াবা ট্যাবলেটের মতো গিলে খাওয়া হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। হেরোইনের মতো করেই খেতে হয় ইয়াবা। এলোমুনিয়ামের ফয়েলের উপর ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে নিচ থেকে তাপ দিয়ে ওটাকে গলাতে হয়। তখন সেখান থেকে যে ধোঁয়া বের হয় সেটা একটা নলের মাধ্যমে মুখ দিয়ে গ্রহণ করা হয়। তখন সেটা মুহূর্তের মধ্যেই সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রে গিয়ে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। ইয়াবাকে বলা হয় 'আপার ড্রাগ' কারণ এটি গ্রহণ করলে শুরুতে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। হেরোইন ও ফেনসিডিল হচ্ছে ইয়াবার বিপরীতধর্মী ড্রাগ। এগুলো নারকোটিক এনালজেসিক। অর্থাৎ ব্যথানাশক ওষুধ। এটিকে বলা হয় 'ডাউনার ড্রাগ' কারণ এটি খেলে সে ঝিম মেরে থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই দুটো একই ধরনের মাদক। হেরোইন হচ্ছে ওপিয়ামের একটি প্রাকৃতিক ডেরিভেটিভ আর ফেনসিডিল সিনথেটিকের। এই দুটো ড্রাগের মধ্যে যে রাসায়নিকটি থাকে সেটি হচ্ছে কোডিন ফসফেট। হেরোইনের মধ্যে এটি একটু বেশি পরিমাণে থাকে। কোডিন ফসফেট খেলে মানুষ স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করে। নিজেকে রাজা বাদশাহ ভাবতেও অসুবিধা হয় না। বাংলাদেশে চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। শরীরের উপর প্রভাব মুক্তির চিকিৎসক আলী আসকার কোরেশী বলেন, " ইয়াবা খেলে শরীরে উত্তেজনা আসে। ফলে ঠিকমতো ঘুম হয় না। এক নাগাড়ে দুই তিনদিনও না ঘুমিয়ে জেগে থাকতে পারে। মনে করে যে সে ভীষণ কাজ কর্ম করবে কিন্তু আসলে কোন কাজই হয় না। কেউ হয়তো মনে করে যে আমি আজকে রাতে পড়ে কাল পরীক্ষা দেব, কিন্তু সে সারা রাত ধরে একটা পাতাও উল্টাতে পারে না, এক পাতাতেই বসে থাকে।" আবার যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আবার এক নাগাড়ে দুই তিনদিন ঘুমাতে থাকে। অন্যদিকে, ফেনসিডিল ও হেরোইন খেলে শরীরে ঘুম ঘুম ভাব আসে। তন্দ্রার মতো হয়। "একটা জায়গায় বসে তারা ঝিমুতে থাকে। সিগারেটের পর সিগারেট, চায়ের পর চা খেতে থাকে। এবং তখন সে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে।" মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসে ইয়াবা। মোহিত কামাল বলছেন, "যতো মাদক আছে সেগুলোর সবই মানুষের 'মস্তিষ্কের পুরষ্কারতন্ত্রের' মাধ্যমে কাজ করে। কারণ উদ্দীপ্ত হলে মানুষ একই কাজ বারবার করতে বাধ্য হয়। ব্রেনের ভেতরে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটে। সেটা শরীরের ভেতরে একটা উত্তেজনা তৈরি করে। সব মাদকের বেলাতেই মোটা-দাগে প্রভাবটা এরকম।" "যখন নেয় তখন শরীরে একটু ফুরফুরা ভাব কাজ করে। কিন্তু যখন নেয় না তখন শরীরে ব্যথা করে। মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। হাড়ের ভেতরে শিরশির করতে থাকে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তারা আবারও মাদক নিতে বাধ্য হয়," বলেন তিনি। তিনি বলেন, "যেখানে যাকে যেভাবে মোটিভেশন করা দরকার তার কাছে সেভাবেই ইয়াবা তুলে দেওয়া হচ্ছে। যেমন শিক্ষার্থীদেরকে বলছে যে, এটা খেলে তুমি রাত জেগে পড়তে পারবে। কেউ মোটা হলে তাকে বলা হচ্ছে শরীর শুকিয়ে যাবে। গানের শিল্পীকে বলছে, ইয়াবা খেলে গলার কাজ ভালো হবে।" চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়াবার কারণে পুরোপুরি বদলে যায় মানুষের জীবন ধারা। এই পরিবর্তনটা হয় খুব দ্রুত গতিতে। "দিনে সে ঘুমাচ্ছে, রাতে জেগে থাকছে। পরপর কয়েকদিন সে ঘুমাচ্ছে না কিন্তু আবার একটানা ঘুমাচ্ছে। ফলে মেজাজ অত্যন্ত চরমে উঠে যাচ্ছে," বলেন মি. কোরেশী। তিনি বলছেন, কয়েকদিন পর দেখা যায় পরিবারের সবার সাথে তার ঝগড়াবিবাদ গণ্ডগোল লেগে যায়। আশেপাশের আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সাথেও তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। তার মনে হয় সবাই খারাপ। তিনি একাই শুধু ভালো। "কিছুদিন পর দেখা যায় যে প্যারানয়েড হয়ে গেছে। সে ভাবতে থাকে যে সবাই তার শত্রু বা সবাই তার পেছনে লেগেছে। সে সন্দেহ করতে শুরু করে যে তাকে কেউ মেরে ফেলবে, বিষ খাওয়াবে। তারপর ধীরে ধীরে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।" ফাইল ফটো, র‍্যাবের হাতে আটক কয়েকজন সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী। মোহিত কামাল বলেন, "ইয়াবা খেয়ে শিক্ষার্থীরা রাতে বেশিক্ষণ জেগে থাকলেও কোন লাভ হয় না। কারণ পড়ালেখায় তার মনোযোগ থাকে না। মোটা মানুষকে ইয়াবা চিকনও করে না। এটা খেলে তার খিদে কমে যায়। তখন সে কম খায়। তার পেশীকে ক্ষয় করে ফেলে। মাংসপেশি শুকিয়ে গেলে একটু শুকনা মনে হয়, গাল ভেঙে যায়। কিন্তু চিকন হওয়ার তথ্য পুরোপুরি ভুল।" স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকে ইয়াবা গ্রহণ করে যৌন উদ্দীপক হিসেবে। প্রথম দিকে সেটা কাজ করে যেহেতু এটা খেলে শারীরিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার যৌন ক্ষমতা একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়। শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যায়। মেয়েদের মাসিকেও সমস্যা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, কিডনি থেকে শুরু করে শরীরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ইয়াবা খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। লিভার সিরোসিস থেকে সেটা লিভার ক্যান্সারেও পরিণত হতে পারে। মোহিত কামাল বলেন, "ইয়াবা খেলে মস্তিষ্কের সরু রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তপাতও হওয়ার ঘটনাও আমরা পেয়েছি। ব্রেইন ম্যাটার সঙ্কুচিত হয়ে যায়। সেটা যদি ১৫০০ গ্রাম থাকে সেটা শুকিয়ে এক হাজার গ্রামের নিচে নেমে যেতে পারে। জেনেটিক মলিকিউলকেও নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে পরবর্তী প্রজন্মও স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে থাকে।" চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়াবা খেলে শরীরে একটা তাপ তৈরি হয় যা কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে। যেহেতু এটিকে ধোঁয়া হিসেবে নেওয়া হচ্ছে তাই ফুসফুসে পানিও জমে যেতে পারে। ভারতে তৈরি কফ সিরাপ 'ফেনসিডিল' বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে নেশার দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। "রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নিষ্ঠুর নির্মম হয়ে যায়। আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল একটি লোপে যেখানে বিচার বিবেচনার বোধ তৈরি হয়, যেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেই, পরিকল্পনা করি সে জায়গাটা কাজ করতে পারে না। ফলে মানুষ পাষণ্ড হয়ে যায়, হিংস্র হয়ে যায়। মায়ের গলায় ছুরি ধরে টাকার জন্যে। মা বাবার বুকে বসে ছুরি চালাতে তার বুকও কাঁপে না," বলেন ড. কামাল। চিকিৎসকরা বলছেন, ফেনসিডিল ও হেরোইনের বেলাতেও দ্রুত গতিতে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। কারণ তারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে পারে না। তাদের খাওয়ার প্রয়োজনও খুব একটা পড়ে না। কারণ হেরোইন কিম্বা ফেনসিডিল খেলে ক্ষুধা কেটে যায়। ফলে তাদের সাধারণ পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয় না। যার কারণে তাদের শরীরে সব ধরনের ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। হেরোইন ও ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু ইয়াবার ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা তৈরি হতে সময় লাগে না। "ইয়াবা হচ্ছে অনেক বেশি মানসিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল ড্রাগ যেখানে হেরোইন আর ফেনসিডিল শারীরিকভাবে নির্ভরশীল," বলেন ড. কোরেশী। বাংলাদেশে হেরোইন জনপ্রিয় ছিল নব্বই-এর দশকে। হেরোইন ও ফেনসিডিল গ্রহণ করলেও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। ড. কোরেশী বলেন, "এদুটো নেশাও প্রাথমিকভাবে যৌন উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করে কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এসবও যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। একজন ৩০ বছরের যুবক পরিণত হয় ৮০ বছরের বৃদ্ধ মানুষে।"
ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন খেলে কী হয়
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
ভূমিকম্পের কারণে সড়ক ভেঙে পড়েছে নেপালের ওই ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশে সরকারী ভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয়েছিলো। কিন্তু এ সম্পর্কিত নীতিমালা কোনোদিনই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যদিও ২০০৪ সালেই জাতিসংঘের সহায়তায় সরকার ও কিছু সংস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছিলো এবং সেই পরিকল্পনায় ভূমিকম্পের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। পরে ২০০৯ সাল নাগাদ দেখা যায় ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় প্রয়োজনীয় জনবল ও উপকরই নেই ফায়ার সার্ভিস বিভাগের। এখন কর্তৃপক্ষ বলছেন ফায়ার সার্ভিস এখন অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। ভূমিকম্প জনিত আগুন বা অন্য বিপর্যয়ে তারা আরও বেশি সক্রিয়তা দেখাতে পারবে। প্রায় এক লাখ স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে যাতে প্রয়োজনের সময় তারাও কাজ করতে পারেন। কি কি করার প্রতিশ্রুতি ছিল নেপালের ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় তখন বাংলাদেশ জুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিলো। কারণ এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিলো। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো 'ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার' প্রতিষ্ঠার। সিদ্ধান্তটি এখনো বাস্তবায়িত না হলেও এ সম্পর্কিত কিছু কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ওই বৈঠকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এনডিএমআইএস) নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন । বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে তরল মাটিতে ডুবে যাবে ঢাকার বাড়িঘর? ''দুটো বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে'' ভূমিকম্প সম্পর্কে ১২টি বিস্ময়কর তথ্য ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই ঢাকা শহরে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সেটিও এখনো হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা বলছেন, এমন অনেক বিষয়েই এখনো কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হলেও সেগুলোর গেজেট হয়নি। "বিল্ডিং কোড সহজবোধ্য করে মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার ছিলো যাতে করে ভবন নির্মাণের সময় মানুষ সত্যিকার অর্থেই সতর্ক হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারে। কিন্তু এ কাজটিও করা হয়নি এখনো। আবার প্রস্তুতি বা যা কাজ হচ্ছে তার লক্ষ্য শহর এলাকা। কিন্তু ভূমিকম্পের জন্য শহর ও গ্রাম এলাকায় সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত।" তিনি বলেন, একটা কক্ষ কতটুকু বড় হলে দরজার সংখ্যা বাড়ানো দরকার যাতে দুর্যোগ জনিত আগুনের সময় সহজেই মানুষ বের হয়ে আসতে পারে - এ ধারণাটি এখনো জনপ্রিয় হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ড: হাফিজা খাতুন বলছেন সচেতনতা তৈরির মতো রুটিন কিছু কাজ চলছে ভূমিকম্প বিষয়ে এবং এর বাইরে বড় ধরণের কাজ বলতে ফায়ার সার্ভিসের কিছু যন্ত্রপাতি দেখা যাচ্ছে। "আসলে যখন ঘটনা ঘটে নানা উদ্যোগ নেই আমরা যা পরে ভুলে যাই। রুটিন কাজ হলো সচেতনতা । এটি নিয়ে অনেক কাজ হয়। এমনকি বিল্ডিং কোডের পরিবর্তনগুলোও এখনো চূড়ান্ত করে মানুষকে জানানো হয়নি"। বিশেষজ্ঞদের আশংকা ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট এবং চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকার অগ্রগতি হয়েছে কি? জানা গেছে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বিশ্বব্যাংক ও জাইকার সহায়তা বাংলাদেশে ভবন পর্যবেক্ষণ ও অবস্থা যাচাই করার জন্য বেশ বড় ধরণের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। যার আওতায় সরকারি ভবন বিশেষ করে স্কুল, হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস ভবনগুলো পর্যবেক্ষণের কাজ শুরুর পাশাপাশি রাজউকের মাধ্যমে প্রাইভেট ভবনগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়ে। এসব প্রকল্পের সাথে জড়িত আছেন বুয়েটের শিক্ষক মেহেদী হাসান আনসারী। মি. আনসারী বিবিসিকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় রাজউকের আওতাধীন ভবন এসেসমেন্ট কাজ চলছে আর জাইকার অর্থায়নে সরকারি ভবনগুলো নিরীক্ষা করা ও মজবুত করার কাজ চলছে। জানা গেছে শুধু ঢাকাতেই প্রায় পাঁচ হাজার হাসপাতাল, স্কুল, ফায়ার সার্ভিস ভবনসহ সরকারি ভবনগুলো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মি.আনসারীর মতে এসেসমেন্ট প্রতিবেদন কয়েক মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে, তবে প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্প ও ভূমিকম্প জনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই এই ভবনগুলো। তিনি বলেন ৬০০ স্কুলকে টার্গেট করা হয়েছে এসেসমেন্টের জন্য এবং এর মধ্যে দুশো স্কুলের এসেসমেন্ট শেষ হয়েছে। মি.আনসারী বলেন মোট চারটি বিষয়কে সামনে রেখে ভূমিকম্প জনিত দুর্ঘটনা থেকে ভবন ও জানমাল রক্ষার কাজ চলছে। এগুলো হলো : ১. রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো। এজন্য প্রশিক্ষণ ও কমিউনিকেশন শক্তিশালী করণের পাশাপাশি ব্যাকআপ কমিউনিকেশন তৈরি করা। যাতে করে ভূমিকম্প হলে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে গেলেও ব্যাক-আপ সক্রিয় থাকে। ২. একটি জরুরি সমন্বয় অপারেশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। আপাতত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ, ফায়ার সার্ভিস এবং সিলেট সিটিতে এটা করা হচ্ছে। এই সমন্বয় কেন্দ্রগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবনে থাকবে যাতে বিপযর্য়কালে এর কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর এখান থেকেই দুর্যোগ পরবর্তী সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সব ধরণের তথ্য এখানেই আসবে এবং এখান থেকে দেয়া হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখান থেকেই কাজ করবেন। সর্বশেষ সব তথ্য এসব কেন্দ্রর স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক দেখানো হবে। ফায়ার সার্ভিসের একটি ভবনই করা হচ্ছে ভূমিকম্প প্রতিরোধ উপযোগী করে। ৩. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়ানো। এজন্য সেখানে একটি ইন্সটিটিউট হবে এবং একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তৈরি হবে এই ইন্সটিটিউটেই। ৪. পুরো কাজগুলো ঠিক মতো হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করবে পরিকল্পনা কমিশন। মি. আনসারী অবশ্য জানান সরকারি অর্থায়নে অন্তত একশ কোটি টাকা খরচ করে ফায়ার সার্ভিসের জন্য নানা উপকরণ কেনা হয়েছে যেগুলোর খুব প্রয়োজন ছিলো ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। ভূমিকম্পের পর লিকুইফেকশন বা মাটির তরলীকরণ। পূর্বাঞ্চলে হচ্ছে জরুরি কেন্দ্র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: শাহাদৎ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন বিল্ডিং কোডকে শক্তিশালী করা হয়েছে এবং ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেয়া হয়েছে। "আমরা একই সাথে পূর্বাচলে তিন একর জায়গায় মানবিক সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ করছি। যাতে বড় দুর্যোগ হলে সেখান থেকেই জরুরি অপারেশন্স চালানো সম্ভব হয়। আর এয়ারপোর্টের কাছে বিবেচনায় সেখানে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি নিয়ে এখন কাজ চলছে"। "আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো বিশেষ করে স্কুল, ঘরবাড়িকে ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলার সংস্কৃতি তৈরি করা। সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে।" পরিবর্তন কতটা? বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তুপ। এমন ভয়াবহ আশংকার বিপরীতে প্রস্তুতি কতটা সম্পন্ন হয়েছে জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ড: আদিল মোহাম্মদ খান বিবিসিকে বলেন, ঘরবাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। "এখন অনেকেই ভূমিকম্প বা এ ধরণের দুর্যোগের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকৌশলীদের সহায়তা নিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণে উৎসাহিত হচ্ছে। এ ধরণের ভবন গত দশ বছরে অনেকে বেড়েছে"। যদিও এরপরেও দেশে বিপুল সংখ্যা অনিরাপদ হাউজিং আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় করণীয় হলো বিদ্যমান ভবনগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা। "এটি অল্প সংস্কার ও অল্প ব্যয়েই সম্ভব। কিন্তু এজন্য সরকারিভাবেই প্রচার ও সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় এখনো বহু মানুষ ঝুঁকিতেই থেকে যাবে"।
ভূমিকম্প মোকাবেলা: প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার ফারাক
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
খুরাম বাট। দু'বছর আগে, ২০১৭ সালের ৩রা জুন চালানো ওই হামলায় মোট আটজন নিহত এবং আরো ৫০ জনের মতো আহত হয়। পরে পুলিশের গুলিতে ওই তিন তরুণও প্রাণ হারায় এবং দেখা যায় তারা ভুয়া বিস্ফোরক ভেস্ট পরিহিত ছিল। রিংলিডার খুরাম বাট তার কিশোর বয়সেও ছোটখাটো নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। তার মধ্যে ছিল গাজা খাওয়াও। বড় হওয়ার পরেও তার চরিত্রের এসব কিছুই অটুট ছিল বলে নিহতদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের তদন্তে দেখা গেছে। পাকিস্তান থেকে ব্রিটেনে খুরাম বাটের জন্ম পাকিস্তানের ঝেলুমে, ১৯৯০ সালে। তার আরো একটি বড় ভাই (সাদ) ও বোন (হালিমা) আছে। তার পিতা আসবাবপত্রের ব্যবসা চালাতেন। বাটের বয়স যখন মাত্র আট তখন তারা পর্যটক ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে ব্রিটেন এসেছিলেন। এই পরিবারটি বসবাস করতো পূর্ব লন্ডনের ফরেস্ট গেট এলাকায়। তিনটি সন্তানই সেখানকার স্কুলে লেখাপড়া করেছে। এবং তারা সবাই পড়ালেখায় মোটামুটি ভাল ছিল। পরিবারটি প্রথমে ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিল যা প্রত্যাখ্যাত হয়। কিন্তু পরে ২০০৮ সালে হার্ট অ্যাটাকে পিতার মৃত্যুর পর খুরাম বাটকে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। স্কুলের পরে সে একটি পিৎজার দোকানে ক্যাশিয়ারের কাজ করতো। পরে সে লন্ডনের ব্যস্ততম শপিং এলাকা অক্সফোর্ড স্ট্রিটে টপশপ নামের একটি দোকানে চাকরি পায়। তার বয়স যখন ১৮ তখন বন্ধুর পেমেন্ট কার্ড ব্যবহার করে যানবাহনে চড়ার কারণে পুলিশ তাকে প্রথমবারের মতো সতর্ক করে দিয়েছিল। খুরাম বাট। আরো পড়তে পারেন: লন্ডন ব্রিজে হামলা: তৃতীয় হামলাকারীর নাম প্রকাশ লন্ডন হামলার তদন্তে পাওয়া নতুন কিছু তথ্য মাদক ও যৌনতা কিশোর বয়সে বাট বিভিন্ন ক্লাবে যাওয়া আসা করতো, মাদক গ্রহণ করতো, যৌন কাজেও লিপ্ত ছিল। তখন থেকেই মনে করা হতো সে যেন একজন 'গ্যাংস্টার হয়ে উঠছে।' আরো পরে, ২০০৯ সালে, সে একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। পূর্ণকালীন চাকরি করার সময়েও সে বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো অপরাধমূলক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকে। ২০১০ সালে, তার বয়স যখন ২০, তখন একটি শপিং সেন্টারে দেহরক্ষীর উপর হামলা করার কারণে পুলিশ তাকে দ্বিতীয়বারের মতো সতর্ক করে দেয়। এর দুবছর পর তার বোন হালিমার বিয়ে হয়ে যায়। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে তার সাথে হাশিম রহমান নামের এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। হাশিমের চাচা বাটের পিতার সাথে কাজ করতেন। এর পর থেকে খুরাম বাট তার সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করে। সেসময় সে ইসলামি বই পড়তে শুরু করে। তখন সে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সেসময় খুরাম বাটের একজন বান্ধবী ছিল। কিন্তু সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় বাট ওই সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। হাশিম রহমান পুলিশকে জানিয়েছেন যে ইসলামি বইপত্র পড়ার পর খুরাম বাট অনেক বদলে যায়। শুরুর দিকে সে খুব নরম মনের মানুষ ও বিনয়ী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। বাটের বিয়ে খুরাম বাট পরে হাশিম রহমানের বোন জারাহকে বিয়ে করে। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার আগ্রহের শুরুর দিকে সে নিয়মিত মসজিদে যেত এবং সেখানে অবস্থান করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা চরমপন্থি চিন্তাভাবনার দিকে মোড় নিতে শুরু করে। জারাহর সাথে বিয়ের দিন খুরাম বাট বলেছিল যে তাকে বোরকা পরতে হবে এবং তাকে এমনভাবে থাকতে হবে যাতে একমাত্র সে-ই তাকে দেখতে পারে। খুরাম বাটের ফ্ল্যাট। বিয়ের পর খুরাম বাট স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে পাকিস্তান বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার পর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে একটি বাড়িতে ওঠে যেখানে তার মা এবং ভাই ও ভাই-এর স্ত্রী বসবাস করতো। খুরাম বাটের ভাই সাদ বলেছেন, তার ভাই নববিবাহিত স্ত্রীকে বাড়িতেও পুরো মুখ ঢেকে রাখার নিকাব এবং হাতে গ্লাভস পরতে বলতো। "এ থেকেই সব বোঝা যায়। সে সবকিছুই ১০০% করতো। আগে সে যার তার সাথে যৌন সম্পর্ক করতো, অনেক বান্ধবী ছিল, মাদক গ্রহণ করতো। পরে যখন সে ধর্মের দিকে চলে গেল তখনও সেটাও সে ১০০% করতে চাইতো," তদন্তকারীদের কাছে একথা বলেন খুরাম বাটের ভাই। সাদ বলেন, তার ভাই-এর এই চরমপন্থি মনোভাব তার ভাল লাগতো না। তিনি জানান, সে তার বোনের সাথেও রাগারাগি করতো। সে যখন হিজাব না পরে বাড়িতে আসতো তখনও সে রাগ দেখাতো। তিনি জানিয়েছেন, বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানের যে ভিডিওতে খুরাম বাটকে নাচতে দেখা যায় সেটা সে তার বোনকে ডিলিট করে দিতে বলেছিল। পরে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুরাম বাট তার স্ত্রীকে নিয়ে পূর্ব লন্ডনের বার্কিং এলাকায় এক বেডরুমের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে চলে যায়। খুরাম বাট ওই ফ্ল্যাটের হলওয়েতে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দেয় যাতে অন্যেরা তার স্ত্রীকে দেখতে না পারেন। "বন্ধুদের সাথেও সে ১০০% কড়া আচরণ করতো। তারা আমাকে দেখুক এটা সে চাইতো না," বলেন খুরাম বাটের স্ত্রী। তার বাড়িতে প্রায়শই বন্ধুদের আড্ডা বসতো। খুরাম বাটের স্ত্রী তাদের জন্যে রান্না করতেন। পরে স্বামীর বন্ধুরা কখনো কখনো সারা রাত থেকে যেত এবং তিনি শোওয়ার ঘরে ল্যাপটপে টেলিভিশন দেখতে দেখতে বাকি রাত কাটিয়ে দিতেন। সিরিয়ার যুদ্ধ তিনি জানান যে ২০১৪ সালে তাদের একটি বাচ্চা হয়। তখন কিছুটা সময় খুরাম বাট বাচ্চাকে নিয়ে থাকতো। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই তার সব মনোযোগ চলে যায় সিরিয়ার যুদ্ধের দিকে। খুরাম বাট যে কেএফসিতে কাজ করতো তার ম্যানেজার জানিয়েছেন যে তারাও তার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন। তখন বাট তার মাথা ন্যাড়া করে ফেলে। দাড়ি রাখতে শুরু করে। খুরাম বাট যখন লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ করতো। বাটের এক সহকর্মী জানান, তার সাথে একবার ব্রিটিশ সৈন্য লী রিগবিকে হত্যার ঘটনা নিয়ে কথা হয়েছিল। সেসময় বাট বলেছিল এটা হচ্ছে "চোখের বদলে চোখ নেওয়ার" মতো প্রতিশোধমূলক ঘটনা। 'খাঁচার বাইরে সিংহের মতো' খুরাম বাটের স্ত্রী জানান, ২০১৪ সালের শেষের দিকে তার স্বামী অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর কারণে অত্যন্ত পরিচিত আঞ্জেম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে। সেসময় তিনি তার স্বামীকে এধরনের লোকজন থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি জানান যে খুরাম বাট এসব কথা কানেই নিতো না। লোকজনের কথাকে সে পাত্তা দিতো না। সে যা ভালো মনে করতো সেটাই সে করতো। তিনি আরো জানান যে তার স্বামী পরে মি. চৌধুরীর সাথে দেখা করেন। এর পর থেকে সে ইউ টিউবে মি. চৌধুরীর বক্তৃতা শুনতো এবং একবার সে তাকে বাড়িতেও দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছিল। খুরাম বাটের একজন বন্ধু জানিয়েছেন, আঞ্জেম চৌধুরীর সংস্পর্শে সে খুব 'চাঙ্গা' হয়ে ওঠে। এই বন্ধুটি তাকে "খাঁচার বাইরে থাকা সিংহের" সাথে তুলনা করেন। ইসলামের প্রতি গভীর আগ্রহের পরেও সে মাদক গ্রহণ ও অন্যান্য ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখে। 'জিহাদি নেক্সট ডোর' তার আরেক আত্মীয় ওসমান দার ২০১৫ সালে এন্টি-টেররিস্ট হট-লাইনে ফোন করে খুরাম বাটের ব্যাপারে রিপোর্ট করেছিলেন। কারণ ইসলামিক স্টেটের জিহাদিরা যখন জর্ডানের একজন পাইলটকে খাঁচার ভেতরে আটকে তাকে আগুন দিয়ে হত্যা করেছিল তখন খুরাম বাট এই হত্যাকে সমর্থন করেছিল। বাটের সাথে তার স্ত্রীর বড় রকমের ঝগড়া হয় ২০১৫ সালের শেষের দিকে যখন সে আরো একটি বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে। সেসময় রাগ করে তার স্ত্রী এক মাসের জন্য বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। সেসময় চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে 'জিহাদি নেক্সট ডোর' নামে একটি তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ চরমপন্থির কথা তুলে ধরা হয়। তাতে খুরাম বাটকে দেখা যায় লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক পুলিশের সাথে তর্ক করতে। বাটের স্ত্রী জানান, তার বাবা মায়ের বাড়িতে অবস্থানের সময় তিনি এই তথ্যচিত্রটি দেখেছিলেন। তার স্বামী তাকে এবিষয়ে কিছু বলেনি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে খুরাম বাটের মধ্যে পশ্চিমা-বিরোধী কড়া মনোভাব গড়ে ওঠে। হোয়াটস্যঅ্যাপে সে শিরশ্ছেদের ভিডিও শেয়ার করতো। এবং মসজিদ থেকেও তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ফিটনেস সেন্টারের বাইরে খুরাম বাট। সিসিটিভি ক্যামেরায় তোলা। গোপনে পরিকল্পনা তার বড় ভাই সাদ বলেন, "পররাষ্ট্র নীতি, যুদ্ধ, বিদেশিদের প্রতি অবিচার এসব বিষয় নিয়ে খুরাম বাট ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল।" তিনি জানান, এসব নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়াও হয়েছিল। এবং এরপর থেকে বাট তাদের সাথে সিরিয়া বিষয়ে কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। সেসময় পরিবারের সদস্যরা মনে করেছিল যে হয়তো বাটের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সে তখন আসলে গোপনে গোপনে সন্ত্রাসী হামলারই পরিকল্পনা করছিল। এর কয়েক মাস পরেই খুরাম বাট তুরস্কে যাওয়ার টিকেট কাটলে তার স্ত্রীর পরিবার তাদের পাসপোর্ট সরিয়ে নেয়। বাটের স্ত্রী তার পিতামাতাকে জানান যে তার স্বামী ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ার জন্যে তাকে ও তার সন্তানকে সিরিয়াতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে তিনি সন্দেহ করছেন। পরে তার পিতা তাদের ডকুমেন্ট ধ্বংস করে ফেলেন। খুরাম বাট ২০১৬ সালে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে কাস্টমার সার্ভিস সহকারী হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। তার স্ত্রী ও পরিবার এতে খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই সে অসুস্থতার কথা বলে অর্থ দাবি করতে থাকে। তার স্ত্রী বলেন, "তার কোন অসুস্থতা ছিল না। আসলে সে কোন কাজ করতে চাইতো না।" কিন্তু খুরাম বাট তার এক আত্মীয়ের সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সময় তাকে বলেছিল সে এই কাজ করতে চায় না কারণ গ্রীষ্মকালে চারপাশে অনেক নগ্ন নারী চলাফেরা করে।" হামলায় এই আটজন নিহত হয়। পরে তাকে ওই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সেসময় যখন সে বাড়িতে ফিরতো তখন তার গা থেকে গাজার গন্ধ পাওয়া যেত। কোরান শিক্ষক খুরাম বাটের স্ত্রী জানান, তার স্বামী যখন অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে ছিল তখন সে একটি ফিটনেস সেন্টারে যেত। ওই সেন্টারটি যারা চালাতো তাদের একজন পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ড এলাকায় আদ-দ্বীন প্রাইমারি স্কুলের হেডটিচার হিসেবে কাজ করতেন। খুরাম বাটকে তারা অনুরোধ করেছিল ওই স্কুলে বাচ্চাদের কোরান পড়াতে। সে তখন ছয় থেকে সাতজন বাচ্চাকে পড়াতে শুরু করে। প্রত্যেকদিন দুপুরে সে দু'ঘণ্টা করে পড়াতো। পরে স্কুলটি ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যায়। লন্ডন ব্রিজে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহ আগে খুরাম বাট আরো এক সন্তানের পিতা হন। কিন্তু তার স্ত্রী জানান এসময় স্ত্রী কিম্বা পরিবারের ব্যাপারে বাটের কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি জানান, তার দ্বিতীয় সন্তানের যখন জন্ম হলো তার কয়েক মিনিট পরেই বাট জিমে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, হামলায় আরো যারা অংশ নিয়েছিল সেদিন সে তাদের সাথে মিটিং করতে গিয়েছিল। তার স্ত্রী তাকে বাড়িতে সময় দিতে বারবার অনুরোধ করেছিল কিন্তু খুরাম বাট তাতে কোন কান দেয়নি এবং ২০১৭ সালের ৩রা জুন, শনিবার সে বাড়ি থেকে শেষবারের মতো বের হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের কাউকে বিদায় না জানিয়ে, বাচ্চাদের চুমু না খেয়ে, সেদিন সে বের হয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। পরে তার নেতৃত্বে চালানো সেদিনের ওই হামলায় আটজন নিহত হয়। আরো পড়তে পারেন: প্লাস্টিক ব্যাগের বাচ্চাটিকে নিতে আগ্রহী শত পরিবার সড়ক দুর্ঘটনা: হাসপাতালে নেয়ার পথে এত মৃত্যু কেন? তীব্র দাবদাহ যেভাবে মৃত্যুরও কারণ হতে পারে
লন্ডন ব্রিজ হামলা: গাজা খাওয়া, যৌন সম্পর্ক করা থেকে যেভাবে ইসলামপন্থী জঙ্গি হয়ে উঠলো খুরাম বাট
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
প্রিন্স ফিলিপ রানিকে সবচেয়ে ভাল চিনতেন তাদের বিয়ে ছিল প্রেমের। তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দেখা হয়েছিল বিয়ের অনেক আগেই। ডার্টমথ নেভাল কলেজে ১৯৩৯ সালে তোলা ছবি দেখে বোঝা যায় রাজকীয় এই প্রেম-প্রণয়ের সূচনা তখন থেকেই। প্রিন্স ফিলিপ তখন ১৮ বছরের সুদর্শন চনমনে নেভাল ক্যাডেট। বাবা-মার সাথে ঐ কলেজ সফরে গিয়ে ১৩ বছরের রাজকুমারী এলিজাবেথের নজর কাড়েন তিনি। কৈশোরের সেই আকর্ষণ ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। দুজন দুজনকে চিঠি লিখতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাৎ মাঝেমধ্যে দেখাও হতো দুজনের। প্রিন্স ফিলিপ যখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তরুণী রাজকুমারী তার ঘরে প্রিন্স ফিলিপের একটি ছবি রেখেছিলেন। যাযাবর রাজকুমার, লাজুক রাজকুমারী গ্রিস এবং ডেনমার্কের এই রাজকুমারের ছেলেবেলা ছিল অনেকটা যাযাবরের মত। তার জন্ম গ্রিসের রাজপরিবারে, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় ইউরোপের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে হয়েছে তাকে। এ কারণে অল্প বয়স থেকে তিনি ছিলেন অনেক স্বাবলম্বী এবং শক্ত মনের। রাজকুমার হলেও রাজপ্রসাদের ছায়া তার ওপর ছিল না। রাজকুমারী এলিজাবেথ ছিলেন তার বিপরীত। তার জন্ম এবং বড় হওয়া ছিল রাজপ্রাসাদের সুরক্ষিত বেষ্টনীর ভেতর। বাইরের জীবনের বাস্তবতার সাথে তার পরিচয় ছিল খুব সামান্য। চুপচাপ লাজুক স্বভাবের ছিলেন তিনি। যে কোন বিষয় নিয়ে অনেক ভাবতেন। ফলে ভিন্ন প্রকৃতির হলেও তারা দুজন এক অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন। ডার্টমুথে রয়াল নেভাল কলেজের চ্যাপেলে বাবা মায়ের সাথে রাজকুমারী এলিজাবেথ (বাম থেকে তৃতীয়), ডান থেকে দ্বিতীয় স্থানে দাঁড়িয়ে গ্রিস ও ডেনমার্কের যুবরাজ ফিলিপ - যিনি তখন ওই কলেজে ক্যাডেট- জুলাই ১৯৩৯ পৌত্র যুবরাজ উইলিয়াম তার দাদা-দাদীর সম্পর্ক নিয়ে একবার বলেছিলেন: “দাদা আমার দাদীকে অনেক হাসাতে পারেন। কারণ, দাদা এমন কিছু কথা বলেন, এমন কিছু কাজ করেন এবং জীবনের অনেক বিষয়ের ওপর তার যে দৃষ্টিভঙ্গি তার সাথে দাদীর দৃষ্টিভঙ্গির বেশ তফাৎ। ফলে তারা দুজন দারুণ এক দম্পতি।" আরও পড়তে পারেন: 'প্রেমে পুরোপুরি নিমজ্জিত' রাজকুমারীর যখন বিশ বছর, প্রিন্স ফিলিপ বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার এক বছর পর ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের ২১তম জন্মদিনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাগদানের কথা প্রকাশ করা হয়। প্রিন্স ফিলিপ, তার মা গ্রিসের রাজকুমারী এলিসের মাথার টিয়ারা থেকে নেয়া হীরার টুকরো দিয়ে নিজে বাগদানের আংটির নকশা করে দিয়েছিলেন। বিয়ের আগে তিনি এলিজাবেথের মায়ের কাছে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, এলিজাবেথের প্রতি ''শতভাগ দ্বিধাহীন প্রেমে নিমজ্জিত তিনি।'' ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জায় দুই হাজার অতিথির সামনে তাদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র দু বছর আগে। ব্রিটেন তখনও সেই ধাক্কা সামলাতে বিপর্যস্ত। সেই কঠিন সময়ে ঐ বিয়ে নিয়ে অনেকদিন পর ব্রিটিশরা উৎসব করেছিলেন। উইনস্টন চার্চিল ঐ বিয়ে সম্পর্কে বলেছিলেন, “এই কঠিন সময়ে এ যেন রঙের এক ঝলকানি।'' প্রিন্স ফিলিপ এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নভেম্বর ১৯৪৭এর বিয়ের সেই দিনটি বিয়ের পরের বছর জন্ম হয় প্রথম ছেলে চার্লসের। তারপর জন্ম নেয় মেয়ে অ্যান। প্রিন্স ফিলিপ তখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে তরতর করে ওপরে উঠছেন। যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস চেকার্সে কাজ করার সূত্রে বৌ-সন্তান নিয়ে তিনি তখন মল্টায় থাকেন। রাজপ্রসাদের বাইরে সেই দাম্পত্য জীবন ছিল অনেক স্বাভাবিক, স্বাচ্ছন্দ্যের এবং উচ্ছলতায় ভরা। সে সময়কার ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ দেখলে বোঝা যায় রুটিন রাজকীয় দায়-দায়িত্বের চাপ থেকে দূরে নতুন দম্পতি কিভাবে মল্টার উষ্ণ আবহাওয়া এবং একে অন্যের সান্নিধ্য উপভোগ করছেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজা ষষ্ঠ জর্জের অসময়ে মৃত্যুতে সবকিছু রাতারাতি বদলে যায়। রানি এলিজাবেথের বয়স তখন মাত্র ২৫। প্রিন্স ফিলিপ ৩০ বছরের। তারা জানতেন রাজকুমারী একসময় রানি হবেন, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তাকে সিংহাসনে বসতে হবে তা তারা ভাবেননি। স্ত্রীর সিংহাসনে আরোহণে প্রিন্স ফিলিপকে নৌবাহিনী ছাড়তে হলো। যে মানুষটি যুদ্ধ জাহাজের কম্যান্ডার ছিলেন, হঠাৎ করে সেই পেশা ত্যাগ করে রানির সঙ্গীর ভূমিকা নেয়া সহজ ছিল না প্রিন্স ফিলিপের জন্য। সময়টা ভুললে চলবে না। এই পরিবর্তন ঘটছে ১৯৫০ এর দশকে, যখন কোনো পুরুষের জন্য স্ত্রীর উচ্চতর আর্থ-সামাজিক মর্যাদা মেনে নেওয়ার চল ছিল না বললেই চলে। বিয়ের পর বাকিংহাম রাজপ্রাসাদের ব্যালকনিতে রানি এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ অন্যদিকে মাত্র ২৫ বছর বয়সী রাজকুমারী ,যিনি সবে মা হয়েছেন, ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের দায়িত্ব নেওয়া তার জন্যও সহজ কোনো বিষয় ছিলনা। 'দ্বৈত ভূমিকা' ভূমিকার এই বদলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে কোনো সমস্যা দেখা দিলেও তা কখনই ঘরের চার দেয়ালের বাইরে বের হয়নি। সম্রাজ্ঞী স্ত্রীর কনসর্ট অর্থাৎ জীবনসঙ্গীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে এবং তাতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লেগেছিল প্রিন্স ফিলিপের। রাজপ্রাসাদের কর্মচারীদের সাথে এ নিয়ে কম-বেশি বিরোধও হয়েছে তার। ১৯৫৬ সালে, তিনি একা চার মাস বিভিন্ন কমনওয়েলথ দেশে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন যা নিয়ে তখন স্ত্রীর প্রতি তার দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর যখন দুজন নতুন জীবনে, নতুন ভূমিকায় অভ্যস্ত হয়ে যান, পরের কয়েক দশক সেই তালে আর কোনো ছ্দে পড়েনি। রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালনে রানিকে সাহায্য করেছেন ডিউক। অন্যদিকে পরিবারের প্রধানের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের হাতে। প্রিন্স ফিলিপ ও রানি এলিজাবেথ, ২০০৯ সালে বাইরের বিশ্বের কাছে রানি ছিলেন বস - কর্ত্রী। কিন্তু রাজপরিবারের ভেতর চিত্র ছিল আলাদা। প্রিন্স ফিলিপ পারিবারিক বার-বি-কিউয়ের দায়িত্বে থাকতেন, আর নোংরা বাসন-চামচ ধুতেন রানি। ১৯৬০ সালে রাজপরিবারের ওপর এক তথ্যচিত্রে দেখা গেছে এসব। জাতীয় সমস্ত বড় বড় অনুষ্ঠানে সবসময় রানির সাথে থাকতেন ডিউক। বিদেশ সফরেও স্ত্রীর সাথে যেতেন। এসব অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যায় হঠাৎ দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হচ্ছে, এবং হলেই দুজনের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে, রানি সামনে আসার আগে ডিউক অতিথিদের সাথে বা জড় হওয়া মানুষজনের সাথে কথা বলছেন, হাস্যরস করছেন। ফলে, স্ত্রীর আগমনের আগেই অনুষ্ঠানে তার এই ‘বরফ গলানো‘ ভূমিকা খুবই কাজে লাগতো। সম্পর্ক শক্ত থাকার অন্য আরেকটি কারণ তারা দুজন অনেকসময় নিজের নিজের পছন্দমত আলাদা সময় কাটাতেন। ডিউক একবার বলেছিলেন, “দুজনের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ থাকা সুখী দাম্পত্য জীবনের গোপন রহস্য।'' রানী কুকুর এবং ঘোড়া খুব পছন্দ করেন। ফলে, অবসর সময়ে তার ঘোড়দৌড় প্রশিক্ষকের সাথে অনেক আলাপ পরামর্শ করতেন তিনি। প্রিন্স ফিলিপের পছন্দ ছিল খেলাধুলো। এছাড়া, রাজপরিবারের সম্পত্তি জমিদারি দেখভাল করতে পছন্দ করতেন তিনি। জীবনের শেষ দিকে তাকে প্রায়ই দেখা যেত উইন্ডসর পার্কে বা সানড্রিংহাম প্রাসাদের পাশে এস্টেটে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে ঘুরছেন। ২০১২ সালে প্রিন্স হ্যারি বলেছিলেন, “যতই মনে হোক যে আমার দাদা নিজের খেয়ালখুশি মতে একা একা অনেক কিছু করছেন - অনেকটা নদীর মাছের মত সাঁতরে বেড়ানোর মত - কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে তাকে ছাড়া আমার দাদী চলতে পারেন বলে আমার মনে হয়না।'' প্রিন্স ফিলিপ এবং রানী এলিজাবেথ ২০১৭ সালে প্রিন্স ফিলিপ রাজকীয় দায়-দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। ফলে তখন থেকে বহু অনুষ্ঠানেই রানিকে হয় একা অথবা রাজপরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে নিয়ে হাজির হতে দেখা যায়। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ডিউককে প্রায়ই দেখা যেত সানড্রিংহাম প্রাসাদ সংলগ্ন উড ফার্মে। শেষের দিনগুলো একসাথে আনুষ্ঠানিকতা, রাজকীয় কায়দা কানুন তেমন পছন্দ করতেন না প্রিন্স ফিলিপ। রাজকীয় পোশাক পরে কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে দু-চারটে কথা বলার বাইরে তিনি পড়তে এবং লিখতে পছন্দ করতেন। ছবিও আঁকতেন। দায়িত্বের কারণে রানিকে অধিকাংশ সময় লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে থাকতে হতো। সন্দেহ নেই যে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, কিন্তু অধিকাংশ সময় দুজনে দুই জায়গায় থাকতেন। কিন্তু কোভিড প্যানডেমিক শুরুর পর দুজনকে উইন্ডসর প্রাসাদে একসাথে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। অল্প কজন ঘনিষ্ঠ কর্মচারী এবং সহযোগীকে তাদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যারা এখন এইচএমএস বাবল (বুদবুদ) নাম পরিচিত। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিউকের প্রয়াণের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ বিবাহিত জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্যানডেমিকের কারণে তারা সর্বক্ষণ একসাথে কাটিয়েছেন। প্রসাদের চার দেয়ালের মধ্যে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের নানা স্মৃতি নিয়ে জাবর কাটার সময় পেয়েছেন। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুজন দুজনের সাথী ছিলেন। ফলে প্রিন্স ফিলিপকে সন্দোহাতীতভাবে সাংঘাতিক মিস করবেন রানি। কখনই তারা নিজেদের ভালোবাসা লোকসমক্ষে দেখাননি- কিন্ত ইতিহাসে রানিএলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ অসামান্য এক রাজকীয় প্রেমের উপাখ্যান হয়ে থাকবেন।
রানি এবং প্রিন্স ফিলিপ: দীর্ঘ এক রাজকীয় প্রেম কাহিনি
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায় সেদিকেও অনেকের নজর রয়েছে। যদিও দুই বাহিনীর প্রধান এরই মধ্যে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হবার বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব আলোচনার ভিড়ে অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে নিহত সিনহা রাশেদের সাথে থাকা তিন শিক্ষার্থীর কথা। সিনহা মো. রাশেদ খানের সাথে কক্সবাজারে ডকুমেন্টারি তৈরির সময় যে তিনজন সাথে ছিলেন তাদের মুক্তির দাবিতে সহপাঠিরা নানা কর্মসূচী পালন করছে। তিন শিক্ষার্থীর কী অবস্থা? এই তিনজন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা হলেন শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর। এদের মধ্যে তাহসিন রিফাত নূরকে তাদের অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি দুইজন - শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন করোনাভাইরাস কীভাবে শরীরের ক্ষতি করে? সিনহা রাশেদ: যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সেনা ও পুলিশ প্রধান যা বললেন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলেন গুলিতে নিহত রাশেদের বোন কেন এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো চীনা অ্যাপ টিকটক পুলিশের গুলিতে যখন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন তখন সেখানে ছিলেন সাহেদুল ইসলাম সিফাত। সিফাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হচ্ছে, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সাথে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলা মাদকদ্রব্য আইনে। সে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবৈধ মাদক জাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট এবং গাঁজা যানবাহনে নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধ। শিপ্রা এবং সিফাতের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচী। অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিদে মদ, দেশীয় চোলাই মদ ও গাঁজা নিজ হেফাজতে রেখেছেন। পুলিশের ভাষ্য মতে, আত্মরক্ষার জন্য মেজর রাশেদ খানকে গুলি করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এরপর সেটি খুঁজতে পুলিশ রিসোর্টে যায়। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সে রিসোর্টে গিয়ে একটি কক্ষে শিপ্রা দেবনাথ এবং আরেকটি কক্ষে তাহসিন রিফাত নূরকে পাওয়া যায়। এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে, শিপ্রা দেবনাথের কক্ষ তল্লাশি করে সেখানে বিদেশি মদ, দেশি চোলাই মদ এবং গাঁজা পাওয়া যায়। পরিবার কী বলছে? শিপ্রা দেবনাথের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায়। তার বাবা-মা সেখানেই বসবাস করেন। ঢাকার রামপুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন শিপ্রা দেবনাথ। তার মা পূর্ণিমা দেবনাথ টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে জানান, গ্রেফতারের পর থেকে মেয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগাযোগ যোগাযোগ হয়নি। কক্সবাজারে অবস্থানরত তাদের পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেখানে একজন আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে। গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটি করা হয়েছে কি না সে সম্পর্কে কোন ধারণা নেই শিপ্রা দেবনাথের মায়ের। শিপ্রা দেবনাথের একমাত্র ভাই প্রান্ত দেবনাথ বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে টেলিফোনে তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, বছর খানেক আগে কোন এক বন্ধুর মাধ্যমে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সাথে পরিচয় হয় শিপ্রা দেবনাথের। দুজনেরই আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ডকুমেন্টারি তৈরি করা। অন্যদিকে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায়। ঢাকার মধুবাগ এলাকায় খালার বাসায় বসবাস করতেন তিনি। সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মা লন্ডনে বসবাস করেন। বাংলাদেশে তার নিকটাত্মীয় বলতে খালা এবং মামা। তার খালু মাসুম বিল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, গ্রেফতারের পরে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে মি. সিফাতের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তার খালু। জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রেফতারের পর একবার টেলিফোনে কথা বলা সম্ভব হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তার খালু মাসুম বিল্লাহ। মাসুম বিল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "দেখুন ওর সামনেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। ও প্রচণ্ড ট্রমার মধ্যে আছে।" শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত উভয়ের জন্য একজন আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে কক্সবাজারে। আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের অফিস থেকে জানানো হয়েছে উভয়ের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অথবা রবিবার জামিনের শুনানি হতে পারে।
পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদের সাথে থাকা শিক্ষার্থীরা কে কোথায়?
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণে অনেক মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে উঠে আসে সাম্প্রতিক এক জরিপে। শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস রয়েছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা কোন ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম রয়েছে তা মানা হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে বিধিমালা রয়েছে সেখানে বিস্তারিত বলা আছে কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে, কোন ধরনের শব্দের মাত্রা কেমন হবে। আর তা না মেনে চললে সাজার বিধানও রয়েছে। শব্দের মাত্রা যেমন হতে হবে বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। দিনে রাতে নির্মাণকাজ ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায় দিন নেই রাত নেই পাইলিং-এর কাজ, ইট ভাঙার যন্ত্র, সিমেন্ট মিক্সারের যথেচ্ছ ব্যাবহার হচ্ছে। সময় সম্পর্কে কোন বালাই নেই। বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা রয়েছে। তাতে বলা আছে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত নির্মাণকাজের এসব যন্ত্র চালানো যাবে না। আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের জন্য ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ঢাকা শহরে আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা বলে কিছু আসলে নেই। অন্তত বড় শহরগুলোতে অভিজ্ঞতা হল মধ্যরাত এমনকি সারা রাত জুড়ে নির্মাণকাজ চলে। কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে কিনা, শিশুদের পড়াশুনার ক্ষতি, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কষ্ট কোন কিছুই অসময়ে নির্মাণ কাজ থামাতে পারে না। আবদ্ধ কোন স্থানে শব্দ করলে শব্দ যাতে বাইরে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ভবনে কোন ধরনের নতুন কাজ, ড্রিল মেশিনের, অফিসের ডেকোরেশনে নিয়মিতই ভঙ্গ হচ্ছে এই নিয়ম। আরো পড়তে পারেন: আগামীর শহরে স্থপতিরা কীভাবে শব্দ দূষণ ঠেকাবেন? বধির হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশের শব্দ দূষণ 'শুধু বাজি কেন, আজানেও তো শব্দ দূষণ হয়' ট্রাফিক সিগন্যালে একসঙ্গে কয়েকশ গাড়ির হর্ন বাজানোকে শব্দ দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মাইক ও লাউড স্পিকারের ব্যবহার বাংলাদেশে মাইকের ব্যাবহার খুবই জনপ্রিয়। বেশ কিছুদিন যাবত লাউড স্পিকারও ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক সভা থেকে শুরু করে বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিকনিক সকল ক্ষেত্রে এর কানফাটানো শব্দ চলে। তবে আইনে শর্ত সাপেক্ষে এর অনুমতিও রয়েছে। খোলা জায়গায় বিয়ে, খেলাধুলা, কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোন ধরনের সভা, মেলা, যাত্রাগান ইত্যাদির ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা অতিক্রম করে - এমন যন্ত্র ব্যাবহার করা যাবে। তবে তার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় এই শব্দ করা যাবে না এবং রাত দশটার মধ্যে এসব অনুষ্ঠান অবশ্যই শেষ করে ফেলতে হবে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। পিকনিকের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত স্থানে মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে। তবে সকাল নটা থেকে বিকেল পাঁচটার পর্যন্ত। এছাড়া ফেরার পথে এগুলো বাজানো যাবে না। আর পিকনিক আয়োজন করতে হবে আবাসিক এলাকা থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দুরে। গাড়ির হর্নে রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে গেছে ঢাকায়। হর্ন বাজানো হর্ন বাজানো সম্ভবত বাংলাদেশে গাড়ি চালকদের বড় বদভ্যাস। ট্রাফিক সিগনাল ও জ্যামে আটকে থাকার সময় সামনে এগুনো যাবে না জেনেও হর্ন বাজান তারা। সামনে কেউ ধীর গতিতে চললে, পথচারীকে উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত হর্ন বাজানো হয়। যদিও বিধিমালায় বলা আছে কোন ধরনের মোটরযানে শব্দের মান অতিক্রমকারী হর্ন ব্যাবহার করা যাবে না। নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু গাড়ির হর্নে রীতিমতো বধিরতার হার বেড়ে গেছে ঢাকায়। কয়েক বছর আগে পরিবেশ অধিদফতরের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় শব্দের মাত্রা ১৩০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে গেছে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি। আর শব্দের মাত্রা এখন তার থেকে একটুও কমেছে সেটা বলার কোন উপায় নেই। শাস্তির যেসব বিধান রয়েছে আইন ভঙ্গ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা শব্দের উৎস যন্ত্রপাতি জব্দ করতে পারবেন। বিধিমালায় যেসব উল্লেখ করা রয়েছে তা পালনে ব্যর্থতাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। শব্দ দূষণে দোষী হিসেবে প্রমাণিত হলে প্রথম অপরাধের জন্য একমাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু ধরনের দণ্ডই প্রদান করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়ার কথা বলা রয়েছে। আপনি শব্দ দূষণের শিকার এমন মনে হলে টেলিফোনে, লিখিত অথবা মৌখিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন। পরিবেশ বিষয়ে আইনজীবীদের সংস্থা বেলার নির্বাহী কমিটির সদস্য বাহ্‌রীন খান বলছেন, "বাংলাদেশে যে পরিবেশ আদালত রয়েছে তাতে আছে তিন ধরনের আদালত। যার একটি হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। শুধুমাত্র এই কোর্টের মাধ্যমেই একটু কিছুর করার সুযোগ আমি দেখি। আর বাকি যে দুটো আদালত সেখানে শব্দ দূষণের অভিযোগে কোন মামলার নজির আমি এখনো পর্যন্ত দেখিনি।" কাছাকাছি সময়ে শব্দ দূষণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। আইন মানায় অনীহা কেন? বাহ্‌রীন খান বলছেন, "মানুষের আইন মানার অনীহা তখন তৈরি হয় যখন সে দেখে যে অপরাধ করলে, যেমন রাতের বেলা নির্মাণ কাজ করলে কোন কিছু হয় না। আইন প্রয়োগ না হওয়াটা যখন সমাজের মানুষ দেখতে পায় তখন তারা শব্দ দূষণ বা অন্য কোন অন্যায় করাটা স্বাভাবিক মনে করে।" একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "যেমন ঢাকায় ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে যখন কেউ প্রবেশ করে, সকল গাড়ির চালক কিন্তু সব নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাইরে গিয়ে একই বিষয় মেনে চলি না। কেন করি না?" "কারণ ক্যান্টনমেন্টে এলাকায় কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ হয় বলে মানুষের মধ্যে ভীতিটা তৈরি হয়েছে।" অন্যের সমস্যায় সম্মানের অভাব বাংলাদেশে শব্দ দূষণের জন্য রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে, শিল্পপতি সকলেই কমবেশি দায়ী বলে মনে করেন শব্দ দূষণ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এরকম সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মতিন। তিনি বলছেন, "অন্যের সমস্যার প্রতি আমাদের সম্মানের মারাত্মক অভাব রয়েছে। অন্যের সমস্যাকে সম্মান না করার কারণে একটি ছোট সমস্যা বড় সমস্যায় রূপ নিতে পারে সেটি বোঝা, আমাদের নাগরিকদের দায়িত্বশীলতার বোধ কম রয়েছে বলে আমি মনে করি। মানুষ চাইলেই সবকিছু পরিবর্তন করতে পারে।" তিনি মনে করেন, "সমাজের ড্রাইভিং সিটে রয়েছেন রাজনীতিবিদরা। আমার মতে তারাই এরকম সংস্কৃতি তৈরির জন্য দায়ী। সমাজের উপরের দিকের লোক, যারা শিল্পপতি, ধনীব্যক্তি, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক দিয়ে যারা ক্ষমতাশালী তারা যখন এধরনের শব্দ দূষণ ও পরিবেশের মতো বিষয়কে অগ্রাহ্য করেন তখন সাধারণ মানুষও সেটিই অনুসরণ করে।" হর্নের শব্দে আপনারও শ্রবণ শক্তি কমছে নাতো? শব্দ দূষণ শরীরের যেসব ক্ষতি করে লম্বা সময় অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকার কারণে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কান। নাক কান গলার রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মইনুল হাফিজ বলছেন, অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে দীর্ঘ দিন কাটালে শ্রবণ শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলছেন, "অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের নার্ভ ও রিসেপ্টর সেলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মানুষ ধীরে ধীরে শ্রবণ শক্তি হারাতে থাকে। কত ডেসিবল শব্দে আপনি কতটুকু সময় কাটাচ্ছেন তার উপর বিষয়টি নির্ভর করে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সাথেই সাথে কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোন ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে তাহলে তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।" তিনি বলছেন, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০'র উপরে গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। বছর কয়েক আগে পরিবেশ অধিদফতরের করা এক জরিপে উঠে এসেছে যে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে।
শব্দ দূষণ: কোন এলাকায়, দিনের কোন সময়ে শব্দের মাত্রা কেমন হবে
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষাগারে হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স অথচ সাত বছর আগে এর শুরুটা ছিল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে। সেই বিক্ষোভ পরবর্তীতে রুপ নেয় গৃহযুদ্ধে। এখন সেই যুদ্ধই পরিণত হয়েছে বিশ্বশক্তিদের নিজেদের মধ্যে প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধে। আরো পড়ুন: সিরিয়ায় হামলা: যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে? বিশ্লেষণ: এই হামলায় কী লাভ হলো পশ্চিমা দেশগুলোর সিরিয়া যুদ্ধ: কারা যুদ্ধ করছে? সিরিয়া যুদ্ধের কেন্দ্রে রয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। রাশিয়া ও ইরানের পাশাপাশি তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে কয়েকটি শক্তিশালী সশস্ত্র শিয়া জঙ্গী গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো তাদের ভাষায় "মধ্যপন্থী" বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সাহায্য করে এসেছে। আসাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দী কয়েকটি বিদ্রোহী দল। যাদের মধ্যে প্রধান জাইশ আল-ইসলাম ও আহরার আল-শাম। যুদ্ধে এই বিদ্রোহী দলগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সিরিয়ায় আসাদ সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ২০১১তে সরকারি বাহিনী সরে আসার পর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের বড় একটি অংশের দখল নেয় কুর্দি বিদ্রোহীরা। এই কুর্দি বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কুর্দিরা নিজেদের জন্য একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবীতে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের বিপক্ষেও যুদ্ধ করছে কুর্দিরা। আবার এই কুর্দিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করছে তুরস্ক। আর সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ও ইরাকে একসময় বিশাল জনপদ দখল করে রাখা ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের কাছে কোনো অঞ্চলের কর্তৃত্ব না থাকলেও তারা এখনও বড় একটি হুমকি। শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী ইরানের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র ও অর্থ জোগান দিচ্ছে সৌদি আরবও। শিয়া জঙ্গীগোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে ইরান। এই অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করতে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সম্প্রতি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। কিভাবে যুদ্ধ শুরু হলো সিরিয়ায়? ২০১১ তে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয় সিরিয়ার দক্ষিণের শহর 'ডেরা'য়। বিক্ষোভ শুরুর অনেক আগে থেকেই কর্মসংস্থানের অভাব, দুর্নীতির মত নানা কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছিল সিরিয়ায়। এই বিক্ষোভকে 'বিদেশী মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ' আখ্যা দেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। বিক্ষোভ দমন করতে আসাদ সরকারের বাহিনী অভিযান চালায় বিক্ষোভকারীদের ওপর। এই আন্দোলন বিরোধী অভিযান ছড়িয়ে পরলে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের জন্য আন্দোলন শুরু হয় পুরো দেশে। সিরিয়ার যুদ্ধে মারা গেছে লক্ষাধিক মানুষ পুরোদেশে দ্রুত অস্থিরতা ছড়িয়ে পরে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানও জোরদার হয়। বিদ্রোহীরা শুরুতে নিজেদের জীবন রক্ষার্থে অস্ত্রধারণ করে। পরে তার একত্রিত হয়ে নিজেদের এলাকার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। সহিংসতা ছড়িয়ে পরে সিরিয়াকে গৃহযুদ্ধের মুখে ফেলে দেয়। অন্যান্য দেশগুলো কেন সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে? প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দেয়ার পেছনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বন্ধুভাবাপন্ন দেশ। আসাদ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সিরিয়ার সাথে রাশিয়ার সন্ধি টিকে থাকবে না। আসাদ যু্দ্ধে পরাজিত হলে ভূমধ্যসাগরে সিরিয়ার তারতুস নৌঘাঁটিও হাতছাড়া হয়ে যাবে। আসাদকে সমর্থন দিয়ে এসেছে ইরানও। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন দিয়েছে ইরান। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্র বিভিন্ন সময় সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাশিয়ার বিমান সহায়তা আর ইরানের সেনা সমর্থনে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে। সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস নামের একটি প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বাহিনীর অধিকাংশই ছিল কুর্দিশ বাহিনী ওয়াইপিজি'র সদস্য। সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের বিতারিত করার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে এই বাহিনী। সিরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া লক্ষাধিক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। তবে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে তারা। ইসলামপন্থী জঙ্গীদের সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সিরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শরণার্থী গিয়েছে তুরস্কতে তুরস্ক মনে করে কুর্দিশ বিদ্রোহীদের উত্থান হলে ও তারা সার্বেভৗমত্ব পেলে তা তুরস্কের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। তারা কুর্দিশ বাহিনী ওয়াইপিজি'কে জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে এই ওয়াইপিজি যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট। এর ধারাবহিকতায় ন্যাটো'র সদস্য তুরস্ক এখন রাশিয়ার সাথে বন্ধুভাবাপন্ন। আর সিরিয়ার দক্ষিণে থাকা ইসরায়েলের প্রধান চিন্তা সিরিয়ার ভেতরে ইরানের শক্তিবৃদ্ধি। একইসাথে শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কাছে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহও চিন্তায় ফেলছে ইসরায়েলকে। সিরিয়ার কোন এলাকায় কার নিয়ন্ত্রণ মৃতের সংখ্যা কত? যুক্তরাজ্যভিত্তিক মনাবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজার্ভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৮'র মার্চ পর্যন্ত ৩৫৩,৯০০ মানুষ মারা গেছে সিরিয়ায়। যাদের মধ্যে ১০৬,০০০ জনই বেসামরিক। এর বাইরেও সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী নিখোঁজ রয়েছেন ৫৬,৯০০ জন। সংস্থাটির মতে আরও ১০০,০০ জনের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করা হয়নি। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: বিশ্লেষণ: এই হামলায় কী লাভ হলো পশ্চিমা দেশগুলোর সিরিয়ায় হামলা কি আন্তর্জাতিক আইনে বৈধ? পশ্চিমা ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর আসাদ এখন কোথায়?
কেমন ছিল সিরিয়া যুদ্ধের সাত বছর
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
গুগল আর্থে গাযার খুব কম রেজল্যুশনের ছবি দেয়া ফিলিস্তিনি অঞ্চল গাযার ওপর সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টির প্রতি আবারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গবেষকরা। কোন এলাকায় যখন এরকম হামলা হয়, তখন ঠিক কোথায় হামলাটি হয়েছে, বাড়িঘর কতটা ধ্বংস হয়েছে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- সেসব জানার জন্য গবেষকরা গুগল ম্যাপের ওপর অনেকখানি নির্ভর করেন। এর পাশাপাশি তারা অন্যান্য উন্মুক্ত সূত্র থেকে এবং প্রকাশ্যে যেসব তথ্য ইতোমধ্যে পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করেন। "আমরা যে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের কোন হাই-রেজল্যুশনের ছবি পাই না, সে কারণে আমাদের কাজ অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়," বলছিলেন সামির। উন্মুক্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তের কাজ করেন তিনি। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গাই গুগল আর্থে ঝাপসা করে রাখা। সেখানে স্যাটেলাইটে তোলা কম-রেজল্যুশনের ছবিই দেয়া আছে। কিন্তু স্যাটেলাইট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এর চেয়ে আরও অনেক হাই-রেজল্যুশনের ছবি পাওয়া যায়। গুগল আর্থের ছবিতে গাযার রাস্তায় এমনকি একটি গাড়ি পর্যন্ত দেখা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এর সঙ্গে তুলনা করলে, উত্তর কোরিয়ার মতো কঠোর গোপনীয়তার দেশের রাজধানী শহর পিয়ং ইয়ং পর্যন্ত গুগল আর্থে পরিষ্কার দেখা যায়। সেখানে রাস্তায় চলা গাড়ি তো বটেই, এমনকি রাস্তার প্রতিটি মানুষকে পর্যন্ত আলাদা করে দেখা সম্ভব। আরো পড়ুন: বামে গুগল আর্থে গাযার খুব কম রেজল্যুশনের ছবি। ডানে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং এর স্পষ্ট ভালো মানের সাম্প্রতিক ছবি। স্যাটেলাইটের এসব ছবি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ বা সংঘাতের খবর বা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে এসব ছবিতে যদি খুব স্পষ্টভাবে খুঁটিনাটি সবকিছু দেখা যায়, সেটি সামরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। ইসরায়েল এবং গাযার মধ্যে যে সর্বশেষ সংঘাত শুরু হয়েছে, সেখানে দুপক্ষ পরস্পরের দিকে বিভিন্ন ভবন এবং স্থাপনা লক্ষ্য করে যেসব বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, তদন্তকারীরা সেসব হামলার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছেন স্যাটেলাইটের ছবি দেখে। কিন্তু গুগল আর্থে গাযার বেশিরভাগ ছবি খুবই কম রেজল্যুশনের এবং ঝাপসা। বেলিংক্যাট নামের একটি সাইটের সাংবাদিক এরিক টোলার এক টুইটে লিখেছেন, "গুগল আর্থে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ছবি হচ্ছে ২০১৬ সালের এবং সেগুলো একেবারেই বাজে। আমি এলোপাথাড়ি সিরিয়ার কিছু গ্রামাঞ্চলের ওপর জুম করেছিলাম, সেখানে পর্যন্ত ২০১৬ সালের পর বিশটির বেশি ছবি দেয়া আছে, আর সমস্ত ছবি বেশ হাই-রেজল্যুশনের।" গুগল বলছে, তারা খুব ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর বেলায় নিয়মিতভাবেই নতুন ছবি যোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু গাযার বেলায় সেটা মোটেই করা হয়নি। উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি কি পাওয়া যায়? গত বছর পর্যন্ত ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের কী মানের স্যাটেলাইট ছবি মার্কিন কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ করতে পারবে, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিধিনিষেধ ছিল। মূলত ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এ সংক্রান্ত আইনটি করা হয়। কাইল-বিংগাম্যান অ্যামেন্ডমেন্ট (কেবিএ) নামের একটি আইনে এটি লেখা আছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাকাশ কর্মসূচির প্রধান আমনন হারারি গতবছর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, "আমরা সবসময় চাই আমাদের সবচেয়ে কম রেজল্যুশনের ছবি যেন দেয়া হয়। আমরা সবসময় চাই ছবিতে যেন আমাদের খুব পরিষ্কারভাবে দেখা না যায়, যেন একেবারে ঝাপসা দেখায়।" কেবিএ নামের আইনটির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনি এলাকার কেবল কম রেজল্যুশনের ছবিই বিক্রি করতে পারে, যার পিক্সেলের সাইজ কোনভাবেই দুই মিটারের (সাড়ে ছয় ফুট) কম হতে পারবে না। এর মানে হচ্ছে একটা গাড়ির সাইজের বস্তু ছবিতে কোনমতে ঠাহর করা যাবে মাত্র, এর বেশি নয়। সামরিক ঘাঁটিগুলোর ছবি ঝাপসা করে দেয়ার নজির বিরল কোন ঘটনা নয়। কিন্তু কেবিএ হচ্ছে এধরনের একমাত্র আইন, যার বলে একটি পুরো দেশকে ঝাপসা করে রাখা হয়েছে। এই আইনে কিন্তু কেবল ইসরায়েলের কথা বলা আছে, অথচ ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর বেলাতেও এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কোম্পানির বাইরে আরও অনেক কোম্পানি এখন স্যাটেলাইটে তোলা অতি উচ্চমানের ছবি সরবরাহ করতে পারে, যেমন ফরাসি কোম্পানি এয়ারবাস। এর ফলে বেশি রেজল্যুশনের ছবি বিক্রির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ছে। গত বছরের জুলাই মাসে কেবিএ নামের আইনটি বাতিল করা হয়, এবং এর ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সেদেশের কোম্পানিগুলোকে ইসরায়েল এবং ঐ অঞ্চলের বেশি রেজল্যুশনের ছবি সরবরাহ করতে দিচ্ছে (এখন প্রতিটি পিক্সেলের সাইজ ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছোট হতে পারবে, ফলে একজন মানুষের অবয়বও ছবিতে দেখা যাবে।) ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের স্যাটেলাইট ছবির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য সফল প্রচারণা চালান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং শিক্ষক মাইকেল ফ্রাডলি। তিনি জানান, তারা মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যই এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। "আমাদের প্রকল্পে আমরা একটা ধারাবাহিক তথ্য সূত্রের ওপর নির্ভর করতে চাইছিলাম। কাজেই অধিকৃত ফিলিস্তিনি এলাকার খুব উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি আমাদের দরকার ছিল, যা আমরা তুলনা করতে পারি সেই অঞ্চলের অন্য কোন এলাকার সঙ্গে।" তাহলে গাযার ছবি কেন এত ঝাপসা বিবিসি কথা বলেছে গুগল এবং অ্যাপলের সঙ্গে, যাদের ম্যাপিং অ্যাপে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি দেখা যায়। অ্যাপল বলেছে তারা শীঘ্রই তাদের ম্যাপ নতুন ৪০ সেন্টিমিটার রেজল্যুশনের ছবি দিয়ে আপডেট করবে। বামে: গুগল আর্থে গাযার হানাডি টাওয়ারের এখনকার ছবি। ডানে : হাই রেজল্যুশনের ছবিতে দেখা যাচ্ছে টাওয়ারটি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে গুগল জানিয়েছে, তাদের ছবিগুলো অনেক ধরনের সরবরাহকারীর কাছ থেকে আসে এবং "যখন বেশি রেজ্যুলেশনের ছবি পাওয়া যায়, তখন তারা তাদের ম্যাপে সেগুলো দেয়ার সুযোগ বিবেচনা করে।" তবে গুগল বলছে, এই মূহূর্তে এরকম ছবি শেয়ার করার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই। বেলিংক্যাট ওয়েবসাইটের একজন ওপেন-সোর্স অনুসন্ধানী গবেষক নিক ওয়াটার্স এ নিয়ে টুইটারে লিখেছেন, "বর্তমান ঘটনাবলীর গুরুত্ব বিবেচনা করে আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না, কেন এই এলাকার ছবিগুলো ইচ্ছে করে নিম্নমানের করে রাখা হবে।" এসব ছবি আসলে কারা তোলে? গুগল আর্থ বা অ্যাপল ম্যাপসের মতো প্ল্যাটফর্ম তাদের স্যাটেলাইট ছবির জন্য নির্ভর করে সেসব কোম্পানির ওপর, যারা এই স্যাটেলাইটগুলোর মালিক। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুটি কোম্পানি হচ্ছে ম্যাক্সার এবং প্ল্যানেট ল্যাবস। এই দুটি প্রতিষ্ঠান এখন ইসরায়েল এবং গাযার বেশ উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি সরবরাহ করছে। ম্যাক্সার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "মার্কিন আইনে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর ইসরায়েল এবং গাযার ছবি এখন শূন্য দশমিক ৪ মিটার (৪০ সেন্টিমিটার) রেজল্যুশনে সরবরাহ করা হচ্ছে।" আর প্ল্যানেট ল্যাবস জানিয়েছে, তারা এখন ৫০ সেন্টিমিটার রেজল্যুশনের ছবি সরবরাহ করে। কিন্তু যারা ওপেন-সোর্স বা উন্মুক্ত সূত্র থেকে সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান চালান, তারা খুব বেশি নির্ভর করেন বিনামূল্য ব্যবহার করা যায় এমন ম্যাপিং সফটওয়্যারগুলোর ওপর। কাজেই উচ্চ মাত্রার রেজ্যুলেশনের ছবি তারা চাইলেই সরাসরি পান না। বেশি রেজল্যুশনের ছবিতে কী জানা যায় স্যাটেলাইটে তোলা ছবি নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন বন উজাড় বা দাবানলের ওপর নজর রাখা। কিংবা বিশ্বের নানা প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ফাঁস করা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষকরা স্যাটেলাইট ছবির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যানেট ল্যাবসের সঙ্গে ২০১৭ সালে একত্রে কাজ করেছিলেন মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে কীভাবে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংস হয়েছে তা দেখাতে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রাম কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল তা স্যাটেলাইটের ছবিতে ধরা পড়ে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি তাদের সাহায্য করেছিল দুশোর বেশি রোহিঙ্গা গ্রাম কতটা ধ্বংস হয়েছে তা যাচাই করে দেখতে। তারা সামরিক বাহিনীর অভিযানের আগে এবং পরে ৪০ সেন্টিমিটার রেজল্যুশনের ছবি তুলনা করে কাজটি করেছিল। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামে সামরিক বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে বলে যেসব দাবি করেছিল, এসব ছবিতে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে কী ঘটছে তার ওপর নজর রাখার ক্ষেত্রেও স্যাটেলাইটে তোলা ছবি কাজে দিয়েছে। সেখানে উইঘুর মুসলিমদের 'নতুন করে শিক্ষা' দেয়ার জন্য যেসব কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, তা ধরা পড়েছিল এসব ছবিতে। ২০১৯ সালের এক স্যাটেলাইট ছবিতে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের হোটান এলাকায় উইঘুরদের জন্য তৈরি এক শিবির। কোথায় এসব শিবির তৈরি করা হয়েছে, এগুলো কত বড় এবং এসব শিবিরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য জানা গিয়েছিল স্যাাটেলাইটে তোলা এসব ছবি দিয়ে।
ফিলিস্তিন ইসরায়েল: গুগল ম্যাপে গাযার স্যাটেলাইট ছবি কেন ঝাপসা করে রাখা হয়েছে
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এবং ইসলামপন্থী দলগুলো ঢাকার রাজপথে ফ্রান্স-বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করে তাদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। ধর্মভিত্তিক ইস্যু ছাড়াও রাজনৈতিক অনেক বিষয় নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর একটা অবস্থান তৈরির চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবি তুলেছে ইসলামপন্থী কয়েকটি দল, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারকেই অস্বস্তিতে ফেলেছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এই পরিস্থিতি বড় দলগুলোকে চাপের মুখে ফেলছে। কিন্তু ২০২০ সালের বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থানের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে - অনেকেই সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করছেন। ঢাকায় বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ আরও পড়ুন: শূণ্যতার সুযোগ ইসলামপন্থী দলগুলো জনগণের মাঝে ছোট পরিসরে হলেও একটা নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে এবং এর ভিত্তিতেই দেশের প্রচলিত রাজনীতিতে তাদের একটা প্রভাব তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকে মনে করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছেন, ইসলামপন্থী দলগুলো এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিষয় নিয়েও কথা বলছে। এক্ষেত্রে তিনি ইসলামপন্থী দলগুলোর সম্প্রতি ফ্রান্সের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবির বিষয়টিকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন। অধ্যাপক চৌধুরী মনে করেন, দেশে রাজনৈতিক শূণ্যতার সুযোগ নিয়ে কট্টর ডানপন্থার উত্থান হচ্ছে। "বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক শূণ্যতা চলছে, সেটা সবাই জানেন," বলছেন তিনি, "যেখানেই রাজনৈতিক শূণ্যতা তৈরি হয়, সেখানেই উগ্রপন্থীদের উত্থান ঘটে, সেটা ডানপন্থী বলেন কিংবা বামপন্থী বলেন।" "বাংলাদেশে বামপন্থীদের তো সেরকম তৎপরতা নাই। এই ডানপন্থীদেরই তৎপরতা বেশি আছে গ্রামপর্যায়ে। সুতরাং ডানপন্থীরা শূণ্যতা পূরণের চেষ্টা করবে, তা স্বাভাবিক। এবং সেটাই তারা করছে। সেজন্য এরা শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়, অনেক রাজনৈতিক বিষয়েও বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছে।" রাজনৈতিক শূণ্যতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেছ। এর জেরে বিরোধী শিবিরের দূর্বলতা দৃশ্যমান। ইসলামপন্থী দলগুলো সেই শূণ্যতার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে বলে তারা মনে করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী শূণ্যতার ইস্যু: বড় দুই দল কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদল বিএনপি রাজনৈতিক শূণ্যতার বিষয়কে ব্যাখ্যা করেছে তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণেই উগ্রতা মাথা চাড়া দিচ্ছে। "এখানে এখন কথা বলার বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। ভিন্নমত হলেই তাকে নির্যাতন বা দমন করা হচ্ছে," বলেন মি. আলমগীর, "এই অবস্থা তৈরি করেছে সরকার। সরকারই সমাজকে সেদিকে ঠেলে দিচ্ছে।" তবে আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক খান মনে করেন, দেশে কোন রাজনৈতিক শূণ্যতা নেই এবং ইসলামপন্থীদের কোন উত্থান তারা দেখছেন না। জামায়াতের জায়গা নেবে তারা? অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর শূণ্য জায়গাও নেয়ার চেষ্টা করছে ইসলামপন্থী অন্য দলগুলো। "ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক এবং পীরদের দলগুলোর মুল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জামায়াতে ইসলামী। সেখানে জামায়াতের প্রকাশ্য তৎপরতা যেহেতু নাই, সেই খালি জায়গাও ইসলামী অন্য দলগুলো নেয়ার চেষ্টা করছে।" বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থী দলের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, জামায়তে ইসলামীই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে নেতৃত্ব ছিল। সেই অবস্থান কোনো মেরুকরণের দিকে এগুচ্ছে কিনা- সেটা বিএনপি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যদিও জামায়াতের নেতারা তাদের দূর্বলতা মানতে রাজি নন। তবে অন্য দলের তৎপরতার বিষয়েও তাদের কোন বক্তব্য নেই। জোট ও ভোটের রাজনীতি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-দুই দলের নেতারাই মনে করেন, ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতির প্রবণতা। জোটের রাজনীতি মেরুকরণ হয়ে আসছে দুই দলের নেতৃত্বেই। আর দুই দলই ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সাথে রাখার চেষ্টা করে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এখন যেহেতু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ এবং জোটের ব্যানার থাকলেও তৎপরতা নেই। সেজন্য ইসলামপন্থী দলগুলো নিজেরা একটা শক্তি হিসাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বলে তারা মনে করেন। তবে দুই জোটে থাকা ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, বড় দুই দলের জোট থেকে সহসাই বেরিয়ে আসার চিন্তা তাদের নেই। তারা মনে করেন, তাদের পৃথক অবস্থান নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য আরও সময় প্রয়োজন। তারা বলেছেন, তারা শক্তি সঞ্চয় করে জোটে থেকে বড় দলগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে এগুতে চাইছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খান বলেছেন, দেশে ইসলামপন্থীদের উত্থান হচ্ছে, এমন কথা ঠিক নয়।- ফাইল ছবি অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যদিও ইসলামপন্থীদের উত্থান হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন না। কিন্তু ইসলামপন্থী দলগুলো যে শক্তি সঞ্চয় করছে -সেটা আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকে স্বীকার করেন। সেজন্য তারা বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। আর বিএনপির পাল্টা অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "হেফাজতে ইসলামকে সরকার এবং আওয়ামী লীগই সবসময় সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং প্রশ্রয় দিয়েছে। তবে যখনই গণতন্ত্র থাকে না বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না, তখনই এমন বিষয়গুলো তৎপর হয়।" সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে যুক্তি দিতে গিয়ে মি: আলমগীর আরও বলেছেন, "ধর্ম বিশ্বাস করা আর ধর্মান্ধতাতো এক জিনিস নয়। এখানে ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এটা সচেতনভাবে করা হচ্ছে কিনা - তা বলতে পারবো না। তবে বিএনপি যেহেতু গণতান্ত্রিক শক্তি, সেজন্য তাদের নির্মূল করার চেষ্টা চালানো হয়। কারণ কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে যদি উগ্র কোন শক্তি থাকে, তাহলে তাদের সুবিধা হয়। বিশ্বে যেহেতু সন্ত্রাস এবং উগ্রতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার বিষয় আছে, সেখানে তারা সুবিধা পেতে পারে।" তবে আওয়ামী লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক খান বলেছেন, "হেফাজতে ইসলাম কোন রাজনৈতিক দল নয়। মাদ্রাসার শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সময় হেফাজতের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এখানে কোন রাজনীতি নেই।" "বিএনপিই উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেয়" বলে তিনি অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, তাদের নেতৃত্ব ইসলামপন্থীদলগুলোর সাথে কোন সংঘাতে যেতে চায় না। আর বিএনপির একাধিক সূত্র বলেছে, ইসলামপন্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধির পেছনে সরকারের ভূমিকা কি আছে এবং পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, এগুলো দলটি পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দাবি করলেও হেফাজতে ইসলাম যখন ২০১৩ সালের মে মাসে নাস্তিক ইস্যু তুলে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল, তখন বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদদের তাদের সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর হেফাজতের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিল। এর পেছনে দুই দলেরই রাজনৈতিক স্বার্থচিন্তা ছিল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকল্প শক্তি হবে কি? ইসলাম নিয়ে লেখক ও গবেষক ওসমান গণি বলেছেন, ইসলামপন্থী দলগুলো এখন বিএনপি বা অন্য কোন দলের বিকল্প হতে পারবে না। তিনি মনে করেন, ইসলামপন্থী দলগুলো ধর্মীয় ইস্যুতেই বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে বা কথা বলছে। "যেহেতু কোন ইস্যুতে কেউ যখন কথা বলছে না, তখন তুলনামূলক কম শক্তির বা তুলনামূলক কম সংগঠিত কেউ কথা বললেও তাতে জনসমর্থন চলে আসে। ইসলামপন্থী দলগুলোর ক্ষেত্রে এখন সেটাই হচ্ছে। সেই দলগুলোর মূল্যায়ন ইসলামপন্থী যে দলগুলো সাম্প্রতিক সময়ে নানা ইস্যুতে তৎপরতা চালাচ্ছে, এমন তিনটি দলের নেতারা বলেছেন, তারা শক্তি সঞ্চয় করছেন এবং সমাজে তাদের রাজনীতির প্রভাব পড়ছে বলে তারা মনে করেন। তারা বলেছেন, তাদের একটা ভাল অবস্থান তৈরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা এই অনুকুল পরিবেশ কাজে লাগিয়ে অবস্থান আরও শক্ত করার চেষ্টা করছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহ সভাপতি আব্দুর রব ইউসুফী বলছেন, রাজনৈতিক শূণ্যতা এখন রয়েছে। কিন্তু তারা সেটার সুযোগ নিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, "ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে আমরা রাজনৈতিক ব্যানারে না করে বিভিন্ন সংগঠনের নামে কর্মসূচি পালন করি। রাজনৈতিক ইস্যুতে সরকার আমাদেরকেও বাধা দেয়। আর অরাজনৈতিক বিষয়ে সরকার বাধা না দেয়ায় আমরা সেটা ইতিবাচক মনে করি। তবে সরকার হয়তো ইসলামপন্থীদের সাথে কোন সংঘাতে যেতে চাচ্ছে না। সেটাও আমরা মনে করি।" আরও দু'টি ইসলামপন্থী দলের দু'জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তারা তাদের শক্তি বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ভিন্নভাবে। তারা বলেছেন, রাজনৈতিক শূণ্যতার বিষয় এখন এসেছে। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে বলে তারা মনে করেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের জন্য বাংলাদেশিদের যাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ফলে ঐ দেশগুলোর সাথে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর একটা প্রভাব একেবারে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে পড়েছে। এছাড়া দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অবস্থান তৈরির সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটকেও তাদের শক্তি বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ হিসাবে দেখেন। সমপ্রতি ঢাকায় ইসলামপন্থী দলগুলোর বিক্ষোভ থেকে ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়েছিল। বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: ইউনিফর্মে হিজাব যুক্ত করলো নিউজিল্যান্ডের পুলিশ সাকিব আল হাসানের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে বিতর্কের ঢেউ এবার ভারতেও বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে সব ফি আদায় করা যাবেনা কীভাবে কর্মসূচি পালন করছে? ইসলামপন্থী দলগুলোর নেতাদের অনেকেই হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে আগেও ছিলেন এবং এখনও রয়েছেন। হেফাজত যেহেতু কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক একটা বড় সংগঠন হিসাবে অনেক আগেই অবস্থান করেছে। দলগুলোর নেতাদের অনেকে জানিয়েছেন, ধর্মীয় বড় কোন বিষয় এলে বা স্পর্শকাতর কোন কোন ইস্যুতে এই ইসলামপন্থী দলগুলো হেফাজতের ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এছাড়া ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন আছে, সেগুলোর ব্যানারও ব্যবহার করা হয়। তাতে তাদের জোটবদ্ধ শক্তি প্রদর্শনের একটা সুযোগ তারা পান। তারা তাদের দলীয় ব্যানারে ধর্ম অবমাননার বিষয়গুলো নিয়ে তৎপরতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন। লোকসমাগম লেখক ওসমান গণি বলছেন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং ইসলামপন্থী দলগুলো তাদের কর্মসূচিতে জমায়েতের ক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ধর্ম অবমাননা এবং ফ্রান্স ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ের কর্মসূচিগুলোতে সাধারণ মানুষেরও স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল বলে তিনি মনে করেন। সেটি স্বীকার করছেন ইসলামপন্থী নেতারা। একটি ইসলাপন্থী দলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের কর্মসূচিতে লোকসমাগমের জন্য তারা তাদের স্ব স্ব দল বা সংগঠনের সমর্থক মাদ্রাসার ওপর নির্ভর করেন। তবে কয়েক বছর ধরে জেলা-উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে তাদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে, এমন চিত্র তারা পাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ডানপন্থীদের শক্তি বাড়ছে, সেটা অস্বীকার না করে বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে বড় দলগুলোর উচিত নিজস্ব কৌশল ঠিক করা।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটছে যেসব কারণে
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট জাঁক শিরাক স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করে সংসদে আইন পাশ করেন। আইন ঠেকাতে প্যারিসে প্রচুর বিক্ষোভ ও সমাবেশে সামিল হন মুসলিম নারীরা হাতে ''আমার পছন্দ'' লেখা ব্যানার নিয়ে। ফরাসী সংসদে এই পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল সেসময় ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থী দল। তাদের যুক্তি ছিল স্কুলের ভেতর ধর্মকে আনা যাবে না। সংসদ স্কুল ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেবার পর মুসলিম ছাত্রীরা বলেছিল তাদের কাছে পড়ার বই আর হিজাব দুটোই তাদের পরিচয়ের অংশ। অনেক কিশোরী বলেছিল হিজাব তাদের শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাদের ব্যক্তিসত্ত্বার অংশ। স্কুলে ঢোকার পর তাকে সেটা খুলতে বাধ্য করা তার ব্যক্তিসত্ত্বার অপমান। আফ্রিকার সেনেগ্যলে জন্ম এনডেলা পে কিশোরী বয়সে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন তার বাবার কর্মসূত্রে। বিবিসিকে তিনি বলেন এই নিষেধাজ্ঞার গুরুতর প্রভাব পড়েছিল ফ্রান্সের মুসলিম মেয়েদের ওপর। "এই নিষেধাজ্ঞা ছিল শুধু মুসলিম মেয়েদের লক্ষ্য করে। সরকারিভাবে সরকারকে বলতে হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা তারা সব ধর্মের প্রতীকের ক্ষেত্রেই আনছে। কিন্তু দেখুন যারা স্কুল যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল তারা সবাই ছিল মুসলিম মেয়ে।" এনডেলা পে-র বাবা ছিলেন ফরাসী দূতাবাসের একজন কূটনীতিক। এনডেলা যখন প্যারিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন তিনি হিজাব পরতে শুরু করেন। তিনি বলেন সহপাঠী থেকে শুরু করে পথচারী নানা মানুষের তির্যক মন্তব্য তখন তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। "আফ্রিকান মেয়েরা যেভাবে মাথা ঢাকে প্রথম দিকে আমি সেভাবে মাথা ঢাকতাম। ওরা আমাকে দেখে বোঝেনি যে আমি হিজাব পরছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনরকম সমস্যার মুখে পড়তে চাইনি। কিন্তু পরে যখন আমি আরবী মেয়েদের মত করে হিজাব পরতে শুরু করি, তখন থেকে নানাধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। "কেন হিজাব পরছি- কেন নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছি না? এমন প্রশ্ন সবসময় শুনতে হতো। অনেকে এমনও বলতো যে- সৌদি আরবে চলে যাও। আরে- সৌদি তো আমার দেশ নয়, সেদেশের সাথে আমার কোনই যোগাযোগ নেই। একবার তো টিউব রেল স্টেশনে একজন আমার গায়ে থুতু ছুঁড়েছিল," বলেন এনডেলা। ফ্রান্সে জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষতা ফ্রান্সে গির্জা ও রাষ্ট্রকে পৃথক রাখার যে আইন ফরাসী ভাষায় 'লে-ল্যসিটে (laïcité)' নামে পরিচিত, সেটি প্রজাতন্ত্রটির ধর্মনিরপেক্ষতার মূল স্তম্ভ। দেশটির জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। যে নীতির মূল ভিত্তি হল বিভিন্ন আচরণ ও ধর্মের স্বাধীনতা এবং বিশ্বাস যাই হোক না কেন আইনের সামনে সমতা। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক মুসলিমের বাস ফ্রান্সে। ফলে দেশটির ৫০ লাখ মুসলিম নাগরিককে ফ্রান্স তার সমাজের অংশ করে নিতে কতটা সক্ষম সেটাই ছিল দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ নীতির জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। ফ্রান্সে ১৯৮০র দশকের শেষ দিক থেকে মুসলিম নারীদের হিজাব পরা দেশটিতে একটা বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম মেয়েদের স্কুলে হিজাব পরা উচিত কিনা এ নিয়ে তখন বড়ধরনের বিতর্ক দানা বাঁধছিল। হাতে গোণা কয়েকজন শিক্ষক শুরু করেছিলেন এই বিতর্ক। ফ্রান্সের কাউন্সিল অফ স্টেট অর্থাৎ যে প্রশাসনিক পরিষদ আইনি বিষয়ে সরকারের উপদেষ্টার কাজ করে, তাদের মত ছিল স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। বিদ্বেষের প্রকাশ ফ্রান্সে ১৯৯০এর শেষ নাগাদ মুসলিমদের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। মুসলিমদের পোশাক পরিচ্ছদ বা যা দিয়ে বাইরে থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে চিহ্ণিত করা যায়, তার প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেতে থাকে। এনডেলা বলেন এই বিতর্কে ইন্ধন জোগান রাজনীতিকরা ও মিডিয়া। আরও পড়তে পারেন: ১৯৯০এর দশকের শেষ দিক থেকে ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম ও তাদের জীবনাচরণের প্রতি বিদ্বেষ বাড়তে শুরু করে। "বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাজনীতিকরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গিয়ে মানুষকে বলতে শুরু করেন যে ইসলাম গোটা দেশের জন্য একটা ঝুঁকি হয়ে উঠছে। মুসলিম নারীরা শিশুদের সমতুল্য। নিজেদের ব্যাপারে তারা নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের জীবনের যে কোন সিদ্ধান্তের পেছনে থাকেন তাদের বাবা নয়ত ভাই। "আর মুসলিম পুরুষ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় যে তারা বহুগামী ও সহিংস। এটাই ছিল মুসলিমদের প্রতি মানুষের মনে একটা ভীতি তৈরির পথ। এক কথায় মুসলমানরা এবং ইসলাম ধর্ম দেশটির জন্য যে বিপদজনক মানুষের মনে সেই ধারণাটা গেঁথে দেয়া।" ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে ফরাসি সরকারের একটি কমিশন ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে স্কুলে হিজাব পরা এবং অন্যান্য ধর্মীয় পরিচয় বহন করা, যেমন ইহুদীদের টুপি এবং খ্রিস্টানদের ক্রুশচিহ্ণ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশ করে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট জাঁক শিরাক এবং তার ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থী দল ইউএমপি বা ইউনিয়ন ফর পপুলার মুভমেন্ট এই সুপারিশ সমর্থন করেন। মুসলিম মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ এনডেলা পে বলছিলেন তিনি তখন ৩০ বছরের এক মুসলিম মা- দুই কন্যাসন্তানের জননী। "আমি তাদের কথা ভাবছিলাম। মেয়েরা তখন বড় হচ্ছে, স্কুলে গেলে তারা হিজাব পরতে পারবে না! তাদের মনে কীধরনের প্রতিক্রিয়া হবে? আমি জানি না তারা বড় হয়ে কীভাবে জীবন গড়তে চাইবে? কিন্তু মা হিসাবে আমি চাইতাম তারা কী পরে স্কুলে যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার তাদের থাকুক।" বহু মুসলিম বাবা মা তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রন্ত হয়ে পড়েন তিনি বলেন হিজাব পরার কারণে কোন মেয়ের স্কুলে যাবার অধিকার রাষ্ট্র কেড়ে নিতে পারে না। আর সেটাই ঘটতে যাচ্ছে বলে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। অস্থির বোধ করতেন। তিনি বলেন তিনি বাচ্চাদের কখনও বলেননি যে তারা মুসলিম, অন্যদের থেকে আলাদা। লোকে তাদের কিছু বলতে পারে। সেজন্য মনকে প্রস্তুত রাখতে। "আমার মনে আছে - যখন আমরা বাজারে যাচ্ছি, আমার বড় মেয়ে একদিন বলল সে আমার মত হিজাব পরবে। সে সবসময় আমাকে অনুকরণ করতে চাইত। শুনে ওর বাবা বলল - না না তোমাকে পরতে হবে না। আমার স্বামীর মনে হয়েছিল- মেয়েকে হিজাব পরালে লোকে বলবে- দেখ বাবা জোর করে মেয়েকে হিজাব পরিয়েছে। কিন্তু অতটুকু মেয়েকে তো সেটা বলা যায় না। সে তো- আমি যা করি, সরল মনে সেটাই করতে চাইছে। আর আমরা ভাবছি লোকে কী বলবে! খুব কঠিন।" এই আইন মেয়েদের অবস্থা আরও নাজুক করে দিল, বলছেন এনডেলা পে। কারণ অনেক মা এ কারণে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিল। আন্দোলন ও প্রতিবাদ এনডেলা তার মুসলিম বান্ধবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। এই নিষেধাজ্ঞা যাতে তুলে নেয়া হয় তার জন্য তদ্বির বা আন্দোলনের পথে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। এই আইনের ওপর ভোটগ্রহণ ঠেকানোর জন্য করণীয় কী সে বিষয়ে বান্ধবীদের পরামর্শ চাইলেন। ফ্রান্সের স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বৈরুতে ফরাসী দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেন লেবাননের শিক্ষার্থীরা "আমার একজন বান্ধবী বললেন এই আইন বন্ধ করার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে সে রাতেই একটা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আমি চাইলে তাতে যোগ দিতে পারি। ঐ বৈঠকেই এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আমরা একটা জোট গড়ে তুললাম। গোষ্ঠীর নাম আমরা দিলাম সি-ই-পি-টি - যার অর্থ সবার জন্য স্কুল।" তাদের দলে ছিলেন শিক্ষিকা, নারীবাদী, এমনকি কিছু স্কুল ছাত্রীও, যারা হিজাব পরতো। শুধু মুসলিমরাই নন, অনেক অমুসলিম শিক্ষিকা, সুপরিচিত অমুসলিম নারী আন্দোলনকারী প্রথম থেকেই আন্দোলনে যোগ দিলেন। "আমি বলব জোটে মুসলিমদের থেকে অমুসলিমদের সংখ্যাই বেশি ছিল।" এই জোট প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিল। বিক্ষোভ হল পৃথিবীর অনেক দেশে। অনেক মুসলিম এনডেলা ও জোটের সদস্যদের সাথে মিছিলে শরিক হলেন। তারা যুক্তি দিলেন- সমস্যাটা হিজাবের নয়, সমস্যা হল, ফ্রান্স মেনে নিতে পারছে না যে তাদের দেশ এখন বহু ধর্ম, বর্ণ আর সংস্কৃতির দেশ হয়ে উঠছে। আন্দোলনে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীরা অনেকে বললেন তারা এই আইনের সাথে একমত নন, কেউ বললেন তারা ক্ষুব্ধ কারণ এটা বিভেদের আইন। কেউ মত দিলেন এটা শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি নয়, এই আইন পুরো ফরাসি সমাজের জন্য বিপদজনক। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বললেন এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে ফরাসি সমাজের অংশ করে নেবার বদলে তাদের দূরে ঠেলে দেবে, তারা নিজেদের একটা বলয় গড়ে তুলবে এবং তৈরি হবে আরও বেশি বিভেদ। বিক্ষোভ হয় পাকিস্তান সহ পৃথিবীর নানা দেশে আইন পাশ ফ্রান্সে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ সত্ত্বেও ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরাসি এমপিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এই আইন পাশ হয়ে যায়। ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষকশিক্ষিকারা এই আইন ব্যাপকভাবে সমর্থন করেন। মার্চ মাসে এই আইন সেনেটে অনুমোদন পায়, এবং আইন কার্যকর হয় সেপ্টেম্বর মাসে, স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শুরুর সময়ে। যেদিন সংসদে এই আইন আনা হয়, তখনও এনডেলা ও তার সহযোগী প্রতিবাদকারীরা সংসদ ভবনের বাইরে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ হবার ফলে মানুষের ধারণা হয় যে, আইনে দেশের সর্বত্র মুসলিম নারীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। "আমরা কখনও কখনও বৈঠক করতাম কফির দোকানে বসে। আমাদের মধ্যে আমরা দুতিনজন হিজাব পরতাম। দোকানে ঢোকার আগে আমাদের দোকানদার বলত হিজাব খুলে ঢুকতে। তাদের বোঝাতে আমাদের যুদ্ধ করতে হতো যে এই আইন শুধু স্কুলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ''সব জায়গায় আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল একইরকম। কফির দোকানে বলুন, মেট্রো রেলে বলুন, হিজাব পরলে লোকে চেয়ে থাকত, কেউ কেউ বলত নিজের দেশে ফিরে যাও। কেউ বলত-আইন বদলে গেছে -এখন হিজাব খুলে ফেল।" এনডেলা বলছেন বিষয়টা খুবই অপমানজনক ছিল: "হিজাব পরলেই আশপাশের মানুষ আইন দেখাতে আসত। এই আইনের কারণে সবাই মুসলিম নারীদের হেনস্থা করত।" অনেক স্কুল ছাত্রী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হিজাব পরে স্কুলে গেলে তাদের সরকারি স্কুল ব্যবস্থা থেকে বের করে দেয়া হয়। অনেকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয়, অনেকে আবার বাসায় লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অনেক মেয়ের শিক্ষাজীবন পুরো বিপর্যস্ত হয়ে যায়- বলছেন এনডেলা। ফ্রান্সের স্কুলে হিজাব বা অন্য ধর্মীয় প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করে দেশটির সংসদে আইন পাশ হয় ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১০ই ফেব্রুয়ারি সংসদের সেই অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী জঁ পিয়ের রাফারিন কালো অধ্যায় "আমার অনেক বান্ধবীকে দেখেছি তাদের মেয়েদের সরকারি স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে ধর্মীয় স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই টানাপোড়েন এসব কিশোরীর জন্য প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারণ হয়েছে। অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে।" স্কুল ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে এই জোটের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও তাদের মায়েদের হিজাব পরা বহাল রাখার আন্দোলনে এই জোট সফল হয়েছিল। স্কুলের ট্রিপে কোন মেয়ের সাথে তার মা যেতে চাইলে তারও হিজাব পরা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই জোটের দাবির মুখে ২০১৩ সালে ফ্রান্সের আইনি উপদেষ্টা পরিষদ বলে যে ছাত্রীর মায়েরা যা চান তাই পরতে পারবেন। এনডেলা মনে করেন ২০০৪ সালের ঐ বিতর্কিত আইন ফরাসি সমাজের জন্য একটা কালো অধ্যায়। "এই আইন ফ্রান্সে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল ফরাসি সমাজে মুসলিমদের জায়গা নেই। আপনি মুসলিম- ফ্রান্সে একথা মাথা উঁচু করে বলার পথ এই আইন বন্ধ করে দিয়েছিল।" এনডেলা পে এখন থাকেন লন্ডনে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ২০০৪এর পর থেকে ফ্রান্সে মুসলিমদের পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ হয়েছে। "বর্তমানে পরিস্থিতি ভাল হবার কোন লক্ষণ আমি দেখি না।" এনডেলা পে-র সাথে কথা বলেছেন বিবিসির ফারহানা হায়দার।
ইতিহাসের সাক্ষী: ফ্রান্সে যে মুসলিম বিদ্বেষের জেরে স্কুলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ হয়েছিল
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
ওসামা বিন লাদেন ঠিক ছয় বছর আগে দোসরা মে'র ঘটনা। দুপুরে ওবামা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা হোয়াইট হাউজে পৌঁছতে শুরু করেছিলেন। সবার নজর এড়াতে হিলারি ক্লিনটনের গাড়িটা 'ওয়েস্ট উইং'-এ সেদিন রাখা হয়নি, যেখানে সব সময়ে তাঁর গাড়িটা থাকত। জাতীয় নিরাপত্তা টিম হোয়াইট হাউজেই একটা 'যোগাযোগ কেন্দ্র' তৈরি করেছিল, যেটা অ্যাডমিরাল ম্যাকরাভেনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখছিল। অ্যাডমিরাল সেই সময়ে আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরে ছিলেন। ওই যোগাযোগ কেন্দ্রটার নাম দেওয়া হয়েছিল 'সিচুয়েশন রুম'। ওই ঘরের সঙ্গে সিআইএ'র সদর দপ্তর আর পেন্টাগনের অপারেশনস্‌ সেন্টারের ভিডিও সংযোগ করা ছিল। সিচুয়েশন রুমে জেনারেল জেমস কার্টরাইট সমস্ত ভিডিও চিত্রগুলোর ওপর নজর রাখছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সময় দুপুর ১টা ২২ মিনিটে সিআইএ'র প্রধান লিওন প্যানেটা অ্যাডমিরাল ম্যাকরাভেনকে আদেশ দিলেন, 'গো ইন দেয়ার অ্যান্ড গেট বিন লাদেন'। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে সেই সময়ে রাত এগারোটা বাজে। বিন লাদেনের গোটা পরিবার শুয়ে পড়েছিল। পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মধ্যে আধ ঘণ্টার সময়ের ব্যবধান। জালালাবাদ শহরে তখন বাজে সাড়ে দশটা। যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর 'সীল' দলের ২৩ জন সদস্য দু'টো ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে চড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। ওই দলে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত এক দোভাষীও ছিলেন, যাদের সেনাবাহিনীর ভাষায় 'টর্প' বলা হয়। 'কায়রো' নামের একটা কুকুরও সঙ্গে ছিল। তাকেও সীল টিমের অন্য সদস্যদের মতোই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ানো হয়েছিল। আধঘণ্টা পরে অর্থাৎ আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১১টায় দুটো ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার জালালাবাদ বিমানঘাঁটি থেকে পূর্ব দিকে পাকিস্তানের সীমানার দিকে রওনা হয়েছিল। ওসামা বিন লাদেনের ওপরে লেখা বহুল-পঠিত বই 'ম্যানহান্ট'-এর লেখক পিটার ব্যার্গেন লিখেছেন, "ওই দুটো হেলিকপ্টার থেকে খুব কম মাত্রায় তাপ নির্গত হচ্ছিল, আর ওই দুটোর 'টেল'-এ যে ব্লেড ছিল সেগুলোও এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে খুব কম আওয়াজ হয়। পাকিস্তানী রেডার যাতে ওই হেলিকপ্টার দুটোর অবস্থান ধরতে না পারে, সেজন্যই ওই সতর্কতা।" 'ন্যাপ অব দা আর্থ' ফরমেশনে, অর্থাৎ মাটির থেকে সামান্য কয়েক ফিট ওপর দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে হেলিকপ্টার দুটো উড়ছিল। ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল আমেরিকা। পাকিস্তানের সীমানা পেরুনোর পরে পেশাওয়ার থেকে উত্তরের দিকে ঘুরে যায় হেলিকপ্টার দুটো। অ্যাবোটাবাদে পৌঁছতে সময় লেগেছিল প্রায় দেড় ঘণ্টা। 'দ্য নিউইয়র্কার'-এ বিন লাদেনের ওপরে লেখা 'গেটিং বিন লাদেন' নামের একটি প্রতিবেদনে নিকোলস শিমিডিল লিখেছেন, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার দুটো উড়ে যাওয়ার ৪৫ মিনিট পরে ওই রানওয়ে থেকেই চারটে চিনুক হেলিকপ্টার উড়েছিল। দুটো হেলিকপ্টার পাকিস্তানের সীমানা পার হয়ে গিয়েছিল, আর দুটো সীমানার পাশেই অবতরণ করেছিল। এই চারটি হেলিকপ্টার পাঠানোর সিদ্ধান্তটা একেবারে শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয়েছিল কারণ প্রেসিডেন্ট ওবামা চেয়েছিলেন যে গোটা অপারেশনটা যদি তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী না হয়, তাহলেও যাতে আমেরিকান সৈনিকরা লড়াই করতে করতে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ঢুকে পড়তে পারে। ঠিক করা হয়েছিল, এই চারটে হেলিকপ্টার তখনই ব্যবহার করা হবে, যদি অপারেশনটা বড় কোনও গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে যায়। পাকিস্তানে নামার পরেও হেলিকপ্টারগুলোর ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়নি আর অপেক্ষা করার সময়েও সেগুলোর ব্লেডগুলো ঘুরছিল - যাতে প্রয়োজন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেগুলো আকাশে উড়তে পারে, লিখেছেন নিকোলস শিমিডিল। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো অ্যাবোটাবাদে ঢুকেছিল। কিন্তু যখনই পাইলট বিন লাদেনের বাসভবনের সামনে অবতরণ করার চেষ্টা করছিলেন, তখনই নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেন তিনি। খুব দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসছিল হেলিকপ্টারটা। আসলে, 'সীল' টিম যখন আমেরিকায় এই মিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন কম্পাউন্ডের চারদিকের দেওয়াল লোহা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিন লাদেনের আসল বাড়ির চারদিকে দেওয়ালটা ছিল কংক্রিটের। এই জন্যই হেলিকপ্টারের লেজটা দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায় আর ঘুরন্ত ব্লেডটা ভেঙ্গে যায়। অভিজ্ঞ পাইলট কায়দা করে হেলিকপ্টারটা নিচে নামিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু ওটা আর ওড়ার অবস্থায় ছিল না। তবে কোনও প্রাণহানি হয়নি। ওদিকে গোটা দৃশ্যটা তখন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে বসে দেখছিলেন সবাই। বিন লাদেনের বাসভবনের ওপরে ঘুরতে থাকা একটা ড্রোন গোটা ঘটনার ছবি হোয়াইট হাউজে পাঠাচ্ছিল। অ্যাডমিরাল ম্যাকরাভেন একদম স্বাভাবিক গলায় সিআইএ'র প্রধান প্যানেটাকে বলেছিলেন, "ডাইরেক্টর, আপনি যেমনটা দেখছেন, আমাদের একটা হেলিকপ্টার ওই বাড়িটার উঠোনে ভেঙ্গে পড়েছে। সেজন্য মিশনে সামান্য বদল ঘটাতে হচ্ছে। আমার ছেলেরা এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই তৈরি আছে। ওরা জানে ওদের কী করতে হবে।" একটা হেলিকপ্টার ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্য অন্য ব্ল্যাক হকের পাইলট ওপর থেকেই দেখেছিলেন। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের এ বাড়িতে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন প্ল্যান 'এ' অনুযায়ী দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটির লাদেনের শোয়ার ঘরের ছাদের ওপরে ঘোরার কথা ছিল। সেখানে থেকে দড়ি বেয়ে কয়েকজন 'সীল' নিচে নেমে ঘুমিয়ে থাকা বিন লাদেনকে আচমকা ধরে ফেলতে পারবে। কিন্তু নিচের অবস্থা দেখে পাইলট প্ল্যান 'বি' বেছে নিলেন । হেলিকপ্টারটিকে তিনি উঠোনের বাইরে ক্ষেতের মধ্যে নামালেন। উঠোনের চারদিকে নজর রাখার জন্য সীল সদস্যদের একটা ছোট দল, দোভাষী আর 'কায়রো' নামের কুকুরটা পাহারায় ছিল। কুকুরটিকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যাতে সে বাইরের কোন লোককে উঠোনের কাছাকাছি যেতে না দেয়। 'কায়রো'কে এই অপারেশনে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বেশীরভাগ মুসলমান কুকুরকে নাপাক বলে মনে করেন এবং এর থেকে দূরে থাকেন। ওদিকে বাড়ির দোতলায় বিন লাদেন তাঁর শোয়ার ঘরে নিরাপত্তা ব্যবস্থারই ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। ঘরের ভেতরটা যাতে বাইরে থেকে কোনভাবেই না দেখা যায়, সেজন্য জানলা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গিয়ে বাইরে কী হচ্ছে ,সেটা তিনি নিজেও দেখতে পেতেন না। 'সীল' টিমের সদস্যরা দোতলায় ওঠার সময়েই লাদেনের ২৩ বছর বয়সী ছেলে খালিদকে দেখতে পায়। সিঁড়িতেই গুলি করে মেরে ফেলা হয় তাঁকে। পিটার ব্যার্গেন লিখছেন, "লাদেনের শোওয়ার ঘরে একটা তাকের ওপরে কয়েকটা এ-কে ফরটি সেভেন ও মাকারোভ পিস্তল রাখা ছিল। কিন্তু বিন লাদেন সেদিকে না গিয়ে আগে লোহার দরজা খুলে দেখতে চেষ্টা করেছিলেন যে বাইরে কীসের শোরগোল হচ্ছে। একজন সীল সদস্য দেখে ফেলেন লাদেনকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে তিনি লাদেনের দিকে ধাওয়া করেন। মুহূর্তের মধ্যে লাদেন ঘুরে গিয়েছিলেন, কিন্তু তখনই বড় ভুল করেন তিনি। লোহার দরজাটা বন্ধ করেননি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই সীল সদস্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েন। লাদেনের স্ত্রী আমাল আরবি ভাষায় চিৎকার করে কিছু একটা বলে স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। আরেকজন 'সীল' সদস্য আমালের গোড়ালিতে গুলি করেন। বিন লাদেন কোনও প্রতিরোধ করেননি। একজন সীল সদস্য তার ওপরে 'ডাবল ট্যাপ' শট চালান। বিন লাদেনের বুক আর বাঁ চোখে গুলি লাগে। নিকোলস শিমিডিল লিখছেন, "একজন স্পেশাল অপারেশনস অফিসার আমাকে বলেছিলেন যে বিন লাদেনকে জীবন্ত ধরা অথবা নিজেদের হেফাজতে নেবার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। লাদেনকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্তটা ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়নি। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনসহ মার্কিন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিন লাদেনের বাড়িতে অভিযান হোয়াইট হাউজে বসে সরাসরি দেখেছেন। তবে আমেরিকান প্রশাসন মেনে নিয়েছিল যে যদি লাদেন প্রথমেই আত্মসমর্পণ করতেন, তাহলে তার ওপরে গুলি চালানো হতো না।" ওদিকে ঘটনাস্থল থেকে আসা অডিও ফিডে অ্যাডমিরাল ম্যাকরাভেন 'সীল' দলের সদস্যদের কাছ থেকে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলেন যে তাঁরা বলছেন 'জেরোনিমো'। অপারেশন সফল হলে এই কোড-ই ব্যবহার করার কথা ছিল। অ্যাডমিরাল সঙ্গে সঙ্গে হোয়াইট হাউজে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও বোঝা যাচ্ছিল না যে বিন লাদেন জীবিত না-কি মৃত। ম্যাকরাভেন সীল দলের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "ইজ হি এ-কি-য়া ( এনেমী কিল্ড ইন অ্যাকশন)"? কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উত্তর এসেছিল "রজার। জেরোনিমো এ-কি-য়া।" অ্যাডমিরাল সঙ্গে সঙ্গেই হোয়াইট হাউজকে সঙ্কেত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলে উঠেছিলেন, "উই গট হিম ... উই গট হিম।" ওদিকে সীল টিমের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ তখনও বাকি ছিল। ভেঙ্গে পড়া হেলিকপ্টারটাকে নষ্ট করে দিতে হবে, যাতে পাকিস্তানীরা ওটাতে ব্যবহার করা প্রযুক্তি ধরতে না পারে। একই সঙ্গে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে সুরক্ষিত অবস্থায় সে দেশের সীমানা পার হওয়াটাও জরুরী। পরে ন্যাশনাল কাউন্টার-টেরোরিজম সেন্টারের প্রধান মাইকেল লিটর বলেছিলেন, "পাকিস্তান যে কেন সঙ্গে সঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাল না, সেটা নিয়ে আমরা বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পাকিস্তানের স্ট্যান্ডার্ডে ওদের জবাব বেশ দেরীতেই এসেছিল।" পাকিস্তান অবশ্য দুটো এফ-১৬ বিমান পাঠিয়েছিল হেলিকপ্টারগুলোকে ধাওয়া করতে। কিন্তু মাইকেল লিটর জানতেন সেগুলো খুব একটা কিছু করতে পারবে না। পাকিস্তানের পাইলটদের রাতে বিমান চালানোর খুব একটা অভ্যাস নেই। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের এ বাড়িটি বেশ সুরক্ষিত ছিল মি. লিটর বলেছিলেন, "তবুও ওরা যদি চাইত তাহলে আমাদের কাছাকাছি চলে আসতে পারতো। কিন্তু ওরা আমাদের থেকেও বেশী নার্ভাস হয়ে পড়েছিল।" পিটার ব্যার্গেন লিখেছেন, "সীল টিমের সদস্যরা বিন লাদেনের মৃতদেহ সিঁড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নীচে নামিয়ে আনেন। গোটা সিঁড়িতে রক্ত পড়ছিল। বাকি সীল কমান্ডোরা বিন লাদেনের বাসভবনের কম্পিউটার, মোবাইল ফোন আর হার্ড ডিস্কগুলো একত্র করছিল যাতে সেগুলো পরীক্ষা করে আল কায়েদার কার্যপ্রণালী, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা - এসব জানা যায়।" লাদেনের মৃতদেহটা হেলিকপ্টারে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। একজন সীল সদস্য লাদেনের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সার্ভারে। চেহারা শনাক্ত করতে পারেন, এমন দু'জন বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটনে অপেক্ষা করছিলেন। পুরনো ছবির সঙ্গে তাঁরা চেহারাটা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা পরে বলেছিলেন, বিন লাদেনের ঘরে যে সময়টা সীল কমান্ডোরা কাটিয়েছিল, ওটাই তাঁর জীবনের দীর্ঘতম ৪০ মিনিট ছিল। হেলিকপ্টারগুলো ফেরার সময়ে জালালাবাদের দিকে সোজা পথটাই ধরেছিল। গতিও আগেরবারের থেকে অনেক বেশী ছিল। পাকিস্তানের সীমানা পেরনোর আগে সেগুলোতে জ্বালানিও ভরা হয়েছিল। তখনও প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘটনার ভিডিওগুলোর দিকে নজর রাখছিলেন। "আমাদের হেলিকপ্টারগুলো পাকিস্তানের সীমানা পার হলেই যেন আমাকে জানানো হয়", বলেছিলেন মি. ওবামা। স্থানীয় সময় রাত ২টা অর্থাৎ আমেরিকার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টার সময়ে জালালাবাদ বিমানঘাঁটিতে হেলিকপ্টারগুলো ফিরে আসে। আর গোটা অপারেশনটাতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। আফগানিস্তানে সিআইএ'র স্টেশন চিফ এবং অ্যাডমিরাল ম্যাকরাভেন লাদেনের মৃতদেহটা পরীক্ষা করেছিলেন। বিন লাদেনকে হত্যার পর সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া তাদের কাছে উচ্চতা মাপার কোনও ফিতে ছিল না, তাই দেহের উচ্চতা মাপা যাচ্ছিল না। লাদেনের ছয় ফুট চার ইঞ্চি শরীরের সমান লম্বা এক আমেরিকান সৈন্যকে মৃতদেহের পাশে শোয়ানো হয়েছিল। উচ্চতা মিলে যাওয়ার পরেই সকলে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে মৃতদেহটা বিন লাদেনেরই। ওদিকে হোয়াইট হাউজে লাদেনের ছবি সিচুয়েশন রুমে হাজির প্রত্যেককে দেখানো হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ওবামা খুব মন দিয়ে দেখেছিলেন ছবিটা। পরে জেনারেল ক্লিপার স্মৃতিরোমন্থন করে বলেছিলেন, "ছবিটা খুবই বীভৎস ছিল। কিন্তু আমাদের মনে কোনও সন্দেহ ছিল না যে ওটা ওসামা বিন লাদেনই ছিল।" আরো পড়ুন: দেশের ভেতরে বিনোদনের ব্যবস্থা করবে সৌদি আরব 'বাংলাদেশে স্বাধীন মতপ্রকাশ পুরোপুরি রুদ্ধ'
আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টা
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় সারা দেশ ঘুরে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, পাকিস্তান ভেঙে গিয়ে এক সময়ে যে নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্ম হবে দেশটির সূচনালগ্নেই তার ক্ষীণ কিছু আভাস পাওয়া গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কিছু প্রস্তুতিও হয়ে গিয়েছিল সেই সময়ে। হিন্দু মুসলিম এই দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ই অগাস্ট। এই জন্ম ছিল মূলত মুসলিম লীগের রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল। কিন্তু এর পরেই দেশটির রাজনীতিতে অভাবনীয় কিছু ঘটনা ঘটে যার একটি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি মুসলিম লীগের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। পাকিস্তানের জন্ম: লাহোর প্রস্তাব থেকে শুরু পাকিস্তানের জন্মের বীজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে গৃহীত লাহোর প্রস্তাবকে। এই প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অংশে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলো নিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নেতা এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক এই প্রস্তাবটি পেশ করেন। পরে এই লাহোর প্রস্তাব 'পাকিস্তান প্রস্তাব' হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মাত্র ছয় বছর পর ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিভাজন আরো স্পষ্ট হয়। মুসলিম এলাকায় মুসলিম লীগের প্রার্থী এবং হিন্দু এলাকায় কংগ্রেসের প্রার্থীরা জয়ী হয়। মূলত মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতেই মুসলমানরা দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সেসময় মুসলিম লীগকে ভোট দিয়েছিল। জওহরলাল নেহেরু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন। লর্ড মউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের জুন মাসে ঘোষণা করেন যে ব্রিটিশ সরকার দেশ বিভাগের নীতি মেনে নিয়েছে,এবং ১৪ই অগাস্ট তারা শাসনভার ছেড়ে দিলে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের। ভারতকে মাঝখানে রেখে পাকিস্তানের ছিল দুটো অংশ- পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পরের এক দশক ধরে পূর্ব পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল পূর্ব বাংলা। কিন্তু জন্মের পর থেকে একই দেশের এই দুটো অংশের মধ্যে বৈষম্য ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে। রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার 'আওয়ামী লীগ: উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০' গ্রন্থে লিখেছেন: "বাঙালি মুসলমান পরিচিত প্রতিবেশী হিন্দুর সঙ্গে এক রাষ্ট্রে বসবাস করবে না, এই লক্ষ্য নিয়ে অপরিচিত দূরবর্তী অঞ্চলের মুসলমানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পাকিস্তান বানাল। তবে মোহভঙ্গ হতে দেরি হলো না।" স্বপ্নভঙ্গ: এই পাকিস্তান আনলেন? মুসলিম লীগের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ঠিকই কিন্তু খুব শীঘ্রই পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি মুসলিম লীগের হাতছাড়া হয়ে গেল। সূচনা হলো নতুন এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "পাকিস্তান যে স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখা গেল যে সেই স্বপ্ন সুদূর পরাহত।" এর পরের কয়েক বছরে "মানুষ যে অবস্থার মধ্যে পড়লো সেই অবস্থা একাধিক কারণে অত্যন্ত সংকটাপন্ন ছিল। প্রায় দুর্ভিক্ষের অবস্থা হয়েছিল, অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছিল। আরেকটি হল রাষ্ট্রভাষার সমস্যা," বলেন মি. চৌধুরী। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য তখন থকেই অন্য এক পথ তৈরি হতে শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৭২ সালে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় তোলা ছবি) শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থে এরকম স্বপ্নভঙ্গের বহু ঘটনার উল্লেখ আছে। তার একটি এরকম: সেসময় মুসলিম লীগের নেতার নামে 'জিন্নাহ ফান্ড' নামে সরকার একটি ফান্ড খুলেছিল। তাতে যে যা পরে দান করার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও জোরপূর্বক টাকা তোলা শুরু হয়। শেখ মুজিব নৌকায় করে গোপালগঞ্জে যাওয়ার সময় মাঝির সাথে তার কথাবার্তা নিয়ে তিনি লিখেছেন, " নৌকা ছেড়ে দিয়ে আমাকে বলে, 'ভাইজান আপনি এখন এসেছেন, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। পাঁচজন লোক আমরা, হুকুম এসেছে পাঁচ টাকা দিতে হবে। দিনভর কোনদিন দুই টাকা, কোনোদিন আরও কম টাকা উপার্জন করি, বলেন তো পাঁচ টাকা কোথায় পাই? গতকাল আমার বাবার আমলের একটা পিতলা বদনা ছিল, তা চৌকিদার টাকার দায়ে কেড়ে নিয়ে গেছে।' এই কথা বলে কেঁদে ফেলল…শেষে বলে, 'পাকিস্তানের কথা তো আপনার কাছ থেকেই শুনেছিলাম, এই পাকিস্তান আনলেন!" ভাষা আন্দোলনের সূচনা পাকিস্তানের জন্মের আগে থেকেই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর রাষ্ট্রভাষাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার রাজনীতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এর কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাকিস্তানে মুসলিম লীগের কার্যকলাপে হতাশ হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম তরুণরা ততদিনে সংগঠিত হওয়া শুরু করেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি। আহবায়ক কমিটির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন। পাকিস্তানের গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ২৪শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেন উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোন ভাষা নয়। গবেষকরা বলছেন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে মানুষ মুসলিম লীগের প্রতি আরো বেশি বিরূপ হয়ে পড়ে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "জিন্নাহ সাহেবের ঘোষণায় মধ্যবিত্ত, যে মধ্যবিত্ত রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল, তারা দেখলো যে এরকম হলে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হবে। যারা উর্দু জানে তারা তাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে। আগে তারা কোনরকমে ইংরেজি শিখেছিল। এখন তাদেরকে উর্দু শিখতে হবে। ফলে মধ্যবিত্ত খুব হতাশ হয়ে পড়লো। এবং তখন থেকেই রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়ে গেল।" এই আন্দোলনের প্রথম ধাপটি ছিল সরকারি দল মুসলিম লীগের বিরোধী দল হিসেবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব। আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করলেও পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে তখনও পর্যন্ত ছিল দলটির একচেটিয়া দাপট। এর মধ্যে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আসাম থেকে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় চর ভাসানে দীর্ঘ সময় মুসলিম লীগের রাজনীতি করেছেন। এজন্য তিনি ভাসানী নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। মুসলিম লীগ সরকারের ভয়ভীতি ও নির্যাতন উপেক্ষা করে তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "মওলানা ভাসানী যে পাকিস্তান চেয়েছিলেন সেটা না পেয়ে তিনি আন্দোলনে নেমে পড়লেন এবং তাকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হল। তিনি সভাপতি হলেন।" নতুন দল গঠনের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পাকিস্তানের রাজধানী করাচীতে বসবাসরত পূর্ব বাংলার আরেক জনপ্রিয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং কলকাতা ফেরত যুবক শেখ মুজিবুর রহমান। উনিশ'শ উনপঞ্চাশ সালের ২৩শে জুন গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। আওয়ামী লীগ নামটি দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী যার অর্থ জনগণের মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগের অগ্রগণ্য অনেক নেতা নতুন দলে যোগ দেন। জেলে আটক থাকলেও শেখ মুজিব হলেন যুগ্ম সম্পাদক। রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, "জেলে আটক অবস্থায় দলের একটি উঁচু পদে তার নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে এটা অনুমান করা যায়, তাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হিসেবে মনে করা হতো।" আওয়ামী মুসলিম লীগ পরিচালনার ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন শেখ মুজিব। সোহরাওয়ার্দী তাকে খুব স্নেহ করতেন- পশ্চিম পাকিস্তানে গেলে তার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন, জামা কাপড় কিনে দিতেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী পূর্ব বাংলায় এলে শেখ মুজিব সব সময় তার সহযোগী হতেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। পাঁচ দশক পরে এই দলটির রাজনৈতিক নেতৃত্বে পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে জন্ম হয় বাংলাদেশের। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি মওলানা ভাসানী। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নতুন ধরনের রাজনীতির সূচনা ঘটে, উন্মেষ হয় ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির। "নতুন দলটি দুটো বিষয়কে ধারণ করলো: একটা হচ্ছে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিক্ষোভ, সেটা রাজনীতিকদের মধ্যে, আবার মধ্যবিত্তের মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হলো কারণ তারা দেখলো যে সরকার পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য তৈরি হয়েছে এবং সেখানে বাঙালির প্রতিনিধিত্ব নেই।" তিনি বলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ কতো দূর যাবে সেটা প্রথমে বোঝা যায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর দলটি অনেক দূর এগিয়ে গেল। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সময় ও পরে শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ সময় কারাগারে আটক ছিলেন। যখন জেল থেকে বের হয়ে এলেন তখন মওলানা ভাসানীসহ তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা জেলে বন্দী। এসময় তিনি সোহরাওয়ার্দীকে সাথে নিয়ে পূর্ব বাংলার জেলায় জেলায় ঘুরে সংগঠন গড়ে তুলেন। শেখ মুজিবুর রহমান তার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থে লিখেছেন: "এই সময় প্রায় প্রত্যেকটা মহকুমায় ও জেলায় আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে উঠেছে। শহীদ সাহেবের সভার পরে সমস্ত দেশে এক গণজাগরণ পড়ে গেল। জনসাধারণ মুসলিম লীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগ দলে যোগদান করতে শুরু করেছিল।" রাজনৈতিক ভাষ্যকার মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, "শেখ মুজিবের বয়স তখন ৩২ বছর। দেশের আনাচেকানাচে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে মেশা, কর্মী সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করা এবং প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী সংগঠনকে মাঠ-পর্যায়ে বিস্তৃত করার গুরুদায়িত্ব তাঁকেই বহন করতে হয়েছিল। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন দলের প্রাণপুরুষ।" ইত্তেফাকের প্রকাশনা: আওয়ামী মুসলিম লীগের 'মুখপত্র' পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইত্তেফাকের প্রকাশনা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ এক পর্যায়ে পত্রিকাটি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রধান প্রচারমাধ্যমে পরিণত হয়। আর কোন পত্রিকায় মুসলিম লীগের খবর প্রকাশিত না হলেও ঠাই পেত ইত্তেফাকের পাতায়। নবাবপুর রোড থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়, অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতো, এবং এক পর্যায়ে এটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৫১ সালে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পাদনায় আবার সাপ্তাহিক হিসেবে ছাপা হতে শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মওলানা ভাসানীর নাম ছাপা হতো। দৈনিক হিসেবে ইত্তেফাকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৩ সালে। তখন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মওলানা ভাসানীর নাম ছাপা বন্ধ হয়ে যায়। পত্রিকাটি চালানোর খরচ দিতেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আরো পড়তে পারেন: বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: শেখ মুজিবুর রহমান বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৪- এ কে ফজলুল হক বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৯- মওলানা ভাসানী বিবিসির জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ২০তম স্থানে সোহরাওয়ার্দী মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, "তিনি ইত্তেফাক চালাতেন। পশ্চিম পাকিস্তানে ওকালতি করে যত টাকা পেতেন এর একটা বড় অংক ইত্তেফাকের পেছনে খরচ করতেন।" পত্রিকাটি পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল যার চেয়ারম্যান ছিলেন সোহরাওয়ার্দী। শেখ মুজিবুর রহমানও ওই বোর্ডের সদস্য ছিলেন। পত্রিকাটি চলানোর ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি তার ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে দিতেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতাদের ওপর পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনের সংবাদ পত্রিকাটিতে নিয়মিত প্রকাশিত হতো যা আওয়ামী মুসলিম লীগকে একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করতে সাহায্য করে।উনিশ'শ বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন এবং আরো পরে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়েও ইত্তেফাকের ভূমিকা ছিল। ২১শে ফেব্রুয়ারি: মস্ত বড় পরিবর্তন পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হলেও তা উত্তাল হয়ে ওঠে ১৯৫২ সালে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ যাতে আওয়ামী মুসলিম লীগ ও মুসলিম ছাত্রলীগেরই প্রাধান্য ছিল। আন্দোলন দমন করতে ২০শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরদিন ২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারি আইন অমান্য করে মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায় এবং তাতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। এই ছবিতে মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখা যাচ্ছে ১৯৫৩ সালে খালি পায়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রভাত ফেরীতে অংশ নিতে। এই ঘটনায় পাকিস্তানের রাজনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ছিল দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তির ওপর তৈরি। তার প্রধান উপাদান ছিল ধর্ম। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন রাজনীতির ক্ষেত্রে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করলো। অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ। তার প্রধান উপাদান হল ধর্মনিরপেক্ষতা। ফলে বাঙালি মধ্যবিত্ত পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করলো। এটা ছিল মস্ত বড় পরিবর্তন।" ভাষা আন্দোলনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং এ কে ফজলুল হক এদের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। তখন মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিব তরুণ কর্মীদের সামনে চলে আসেন। যুক্তফ্রন্ট গঠন: মুসলিম লীগ ঠেকাও পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ১৯৫২ সালে। তার পর থেকেই নিশ্চিত হয়ে যায় যে অচিরেই পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখেই ১৯৫৩ সালে গড়ে ওঠে যুক্তফ্রন্ট। এই জোট গঠনে প্রধান ভূমিকা ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী এবং কৃষক শ্রমিক পার্টির প্রধান এ কে ফজলুল হকের। যুক্তফ্রন্টের সভাপতি হন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহওরাওয়ার্দী। পাকিস্তানের জন্মের পর রাজনীতিতে ছিলেন না ফজলুল হক। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এটর্নি জেনারেল) হিসেবে চাকরি করতেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং কিছু দিনের জন্য আওয়ামী মুসলিম লীগেও যোগ দান করেছিলেন। কিন্তু দলাদলির কারণে থাকতে পারেন নি। এসময় তিনি তার পুরনো দল কৃষক-প্রজা পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করে গঠন করেন কৃষক-শ্রমিক পার্টি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুবক শেখ মুজিবুর রহমান। সোহরাওয়ার্দী করাচীতে বসবাস করলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে এসে যুক্তফ্রন্টের সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। বাঙালিদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল। পাকিস্তান গণপরিষদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তিনি। পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা তাকে "ভারতের দালাল" বলে প্রচারণা চালিয়েছিল। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "প্রধানত এটা ছিল নির্বাচনী জোট। মুসলিম লীগকে ঠেকানোই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু তার ভেতরে মানুষের হতাশা, ক্ষোভ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এসব কিছু যুক্ত হলো। এর মধ্যে ছিল পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বিরোধিতাও।" একচেটিয়া বিজয়: মুসলিম ভোটারে উল্টো স্রোত নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্টের ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়। এই নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ২১ দফার যাতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পরিষ্কার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছিল। এতে আরো ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটি ঘোষণা। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন এই প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মওলানা ভাসানী। "তিনি মেহনতি মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন। কৃষক সমিতি, মৎস্যজীবী সমিতি, তাতই সমিতি, অটো রিকশা সমিতি এসব গঠন করেন। সংগঠিত করেন শ্রমিকদের।" "শেখ মুজিবের সাংগঠনিক ক্ষমতারও বড় ভূমিকা ছিল। চুয়ান্ন সালের নির্বাচনে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কর্মী হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ," বলেন মি. চৌধুরী। এসময় শেখ মুজিব এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিতে পরিণত হন। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে তিনি লিখেছেন: "আমার মনে আছে খুবই গরিব এক বৃদ্ধ মহিলা কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, শুনেছে এই পথে আমি যাব, আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললো, 'বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমায় একটু বসতে হবে।' আমি তার হাত ধরেই তার বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সাথে, আমাকে মাটিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমরা সামনে ধরে বললো, 'খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছুই নাই।' আমার চোখে পানি এল।" নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পায় যুক্তফ্রন্ট। ২৩৭টি মুসলিম আসনের এই জোটের প্রার্থীরা ২২৮টি আসনে জয়ী হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন। শেখ মুজিব লিখেছেন, "দুনিয়ার ইতিহাসে একটা ক্ষমতাসীন দলের এভাবে পরাজয়ের খবর কোনোদিন শোনা যায় নাই। বাঙালিরা রাজনীতির জ্ঞান রাখে এবং রাজনৈতিক চেতনাশীল। এবারও তারা তার প্রমাণ দিল।" ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়ের পর শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিচ্ছেন। তাঁকে শপথ পড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক। মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, "যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল গ্রামের মানুষের কাছে ফজলুল হকের জনপ্রিয়তা এবং পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের মতো একটি সংগঠিত রাজনৈতিক দল। এ কে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী একটি অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে প্রচারে নামার ফলে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়।" রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পেছনে আরো একটি কারণ ছিল দুর্ভিক্ষ ও বন্যা। কিন্তু এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন তৎপরতা মানুষের চোখে পড়েনি যা পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যে ব্যাপারে মানুষের চোখ খুলে দিয়েছিল। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ একচেটিয়া জয়লাভ করেছিল। সব মুসলিম ভোট তখন পাকিস্তানের পক্ষে পড়েছে। ওই নির্বাচনে মানুষ যেমন স্রোতের মতো গিয়ে ভোট দিয়েছে তেমনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনেও মানুষ স্রোতের মতো ভোট দিল। কিন্তু এবারের স্রোত গেল উল্টো দিকে। কারণ পাকিস্তান তাদের কিছুই দেয়নি। উর্দু রাষ্ট্রভাষা হয়ে যাবে এই ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করছিল।" পূর্ব পাকিস্তানে নতুন সরকার: জন্মেই হোচট নির্বাচনের পর যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হন এ কে ফজলুল হক। এই সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিবও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সরকার ৩রা এপ্রিল থেকে ৩০শে মে এই অল্প কিছু দিন স্থায়ী হয়েছিল। রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ফজলুল হক করাচীতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে সমস্ত ফ্লাইট ভারত হয়ে আসতো। ফেরার পথে তিনি কলকাতায় কয়েকদিন ছিলেন। সেখানে তিনি একটি জনসভায় ভাষণ দেন। বলেন পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গে আমাদের একই সংস্কৃতি একই ইতিহাস একই ঐতিহ্য। আমাদের আলাদা করে রাখা যাবে না। তখন তার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আনা হয় এবং পূর্ব বঙ্গের মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়।" এর পর ফজলুল হক গৃহবন্দী হন। শেখ মুজিবকে আটক করে আবার পাঠানো হয় জেলে। ভেঙে যায় যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন এ কে ফজলুল হক। মওলানা ভাসানী এসময় এক শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে ইউরোপে ছিলেন। তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কয়েক মাস বিদেশে অবস্থানের পর কলকাতায় কিছু দিন থেকে তিনি ফিরে যান ঢাকায়। উনিশ'শ পঞ্চান্ন সালের অক্টোবর মাসে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। মওলানা ভাসানী দলকে অসাম্প্রদায়িক করে তোলার জন্য এই প্রস্তাব দেন এবং কাউন্সিলররা তা সমর্থন করেন। মওলানা ভাসানী সভাপতি ও শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দলটি সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রিক হওয়ায় আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় শেখ মুজিবের হাতে। উনিশ'শ ছাপ্পান্ন সালে পাকিস্তানে নতুন সংবিধান চালু হলে পূর্ব বাংলার আনুষ্ঠানিক নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। সেবছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মোহাম্মদ আলী পদত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর: হক, ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী আর মুজিব, যে চার নেতা বদলে দিলেন ভারত-ভাগ পরবর্তী পূর্ব বাংলার রাজনীতি
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
রাশিয়া বিশ্বকাপের ১২টি স্টেডিয়াম আকারে রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। ফলে কিছু ক্ষেত্রে একটি ভেন্যু থেকে আরেকটির দূরত্ব কপালে চোখ তোলার মত। যেমন, বাল্টিক সাগরের উপকূলীয় শহর কালিনিনিগ্রাদের স্টেডিয়াম থেকে দূরের উরাল পর্বতের লাগোয়া ইয়েকাতেরিনাবার্গ স্টেডিয়ামের দূরত্ব ৩,০০০ কিলোমিটার। সেন্ট পিটাসবার্গ থেকে ফিস্টের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের দূরত্ব ২,৪০০ কিলোমিটার। সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটির ধারণা ক্ষমতা ৮১,০০০। মস্কোর আনকোরা লুঝনিকি স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়েছে চলতি বছরে। ১৪ই জুন এখানেই হবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ - রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যে। এর ৩১ দিন পর মস্কোর এই স্টেডিয়ামেই হবে ফাইনাল ম্যাচ। লুঝনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো লুঝনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো ধারণক্ষমতা : ৮১,০০৬ উদ্বোধন: ১৯৫৬ (তবে আগাপাশতলা সংস্কারের পর ২০১৮ সালে নতুন করে এটি চালু করা হয়েছে) জলবায়ু: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৮ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি (গ্রিনিচ মান সময়) + ৩ ঘণ্টা অবস্থান: রাশিয়ার রাজধানী মস্কো দেশের পশ্চিমাঞ্চলে মস্কোভা নদীর তীরে। স্টেডিয়ামটি নদীর একটি বাঁকে একটি বিশাল পার্কের মাঝে, মস্কোর কেন্দ্র থেকে ছয় কি.মি. পশ্চিমে। ইতিহাস: লুঝনিকি স্টেডিয়ামের প্রথম নাম ছিল কেন্দ্রীয় লেনিন স্টেডিয়াম। একই সাথে অনেক বিজয়ের মূহুর্ত এবং ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে মস্কোর এই স্টেডিয়ামটি। ১৯৫৫-৫৬ সালে মাত্র ৪৫০ দিনের মধ্যে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিক থেকে তৎকালীন সোভিয়েত স্কোয়াড ৭১টি পদক জিতে ফেরার পর দেশটির সরকার এই স্টেডিয়াম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই সময়ে এর ধারণ ক্ষমতা ছিল এক লাখের কিছু বেশি। ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকের প্রধান ভেন্যু ছিল এই স্টেডিয়াম। তার দু'বছর পর স্পার্টাক মস্কো এবং ডাচ ক্লাব এইচএফসি হার্লেমের মধ্যে ইউয়েফা কাপের (ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল কাপ প্রতিযোগিতা) এক ম্যাচের শেষ দিকে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় ৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। পরে ১৯৯০ এর দশকে স্টেডিয়ামটির ব্যাপক সংস্কার করে নতুন নাম রাখা হয় - লুঝনিকি। ১৯৯৯ সালে ইউয়েফা কাপের ফাইনাল এবং প্রায় ১০ বছর পর ২০০৮ সালে (ইউরোপিয়ান) চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনাল হয় এই স্টেডিয়ামে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ উপলক্ষে লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। দর্শক-স্ট্যান্ডকে দু'টো তলায় ভাগ করা হয়েছে। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক উঠিয়ে ফেলা হয়েছে, তবে বাইরের দিকটি অক্ষত রয়েছে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী এবং ফাইনাল ম্যাচ সহ সাতটি ম্যাচ হবে এখানে। গ্রুপ ম্যাচ : রাশিয়া-সৌদি আরব (বৃহস্পতিবার, জুন ১৪, জিএমটি ১৫:০০), জার্মানি-মেক্সিকো (রোববার, জুন ১৭, জিএমটি ১৫:০০), পর্তুগাল-মরক্কো (বুধবার, জুন ২০, জিএমটি ১২:০০), ডেনমার্ক-ফ্রান্স (মঙ্গলবার, জুন ২৬, জিএমটি ১৪:০০)। নক-আউট ম্যাচ: শেষ ১৬ - গ্রুপ বি জয়ী - গ্রুপ এ রানার আপ (রোববার, জুলাই ১, জিএমটি ১৪:০০), ২য় সেমি ফাইনাল (বুধবার, জুলাই ১১, জিএমটি ১৮:০০) ফাইনাল (রোববার, জুলাই ১৫, জিএমটি ১৫:০০) স্পার্টাক, মস্কো স্পার্টাক স্টেডিয়াম, মস্কো ধারণক্ষমতা : ৪৩, ২৯৮ উদ্বোধন: ২০১৪ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৩ ঘণ্টা অবস্থান: মস্কোর উত্তর-পশ্চিম ইতিহাস: সোভিয়েত/রাশিয়া ফুটবল লীগের ২২ বারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব স্পার্টাক মস্কোর স্থায়ী স্টেডিয়াম এটি। ২০১৪ সালে এটির উদ্বোধনের আগে স্পার্টাক মস্কো শহরের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে তাদের হোম-ম্যাচ খেলতো। মস্কোর তুশিনো এলাকায় সাবেক একটি বিমান ঘাঁটিতে স্পার্টাক স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছে। এখানে প্রথম ফুটবল ম্যাচ হয় ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে - স্পার্টাক মস্কো এবং সার্বিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেড ক্লাবের মধ্যে। গ্রুপ ম্যাচ: আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড (শনিবার, জুন ১৬, জিএমটি ১৩:০০), পোল্যান্ড-সেনেগাল (মঙ্গলবার, জুন ১৯, জিএমটি ১৫:০০), বেলজিয়াম-তিউনিসিয়া (শনিবার, জুন ২৩, জিএমটি ১২:০০), সার্বিয়া-ব্রাজিল (বুধবার, জুন ২৭, জিএমটি ১৮:০০)। নক-আউট ম্যাচ: শেষ ১৬ - গ্রুপ এইচ জয়ী - গ্রুপ জি রানার আপ (মঙ্গলবার, জুলাই ৩, জিএমটি ১৮:০০) নিঝনি নোভগোরোদ স্টেডিয়াম, নিঝনি নোভগোরোদ নিজনি নোভগোরোদ স্টেডিয়াম, নিজনি নোভগোরোদ ধারণক্ষমতা: ৪৫,৩৩১ উদ্বোধন: ২০১৮ জলবায়ু: সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ২৬৫ মাইল অবস্থান: নিজেগোরোদ ওব্লাস্ট অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র এই নিঝনি নোভগোরোদ শহরটি মস্কোর পূর্ব দিকে ভল্গা এবং ওকা নদীর মোহনায়। ইতিহাস: ভল্গা অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সাথে মিল রেখে নিঝনি নোভগোরোদ স্টেডিয়ামের নকশা করা হয়েছে। গোলাকার নকশায় ঘূর্ণায়মান বাতাস এবং পানির প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যায়। রাতের বেলা আলোয় ঝকমক করে স্টেডিয়ামটি। নিঝনি নোভগোরোদ শহরের যে জায়গাটিতে ভল্গা নদী ওকা নদীর সাথে মিশেছে তার পাশেই তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি। নির্মাণ শুরু হয় ২০১৫ সালে। বিশ্বকাপের পর স্থানীয় ফুটবল ক্লাব এফসি অলিম্পিয়েটস নিঝনি নোভগোরোদ এটির মালিকানা গ্রহণ করবে। গ্রুপ ম্যাচ : সুইডেন-দক্ষিণ কোরিয়া (সোমবার, জুন ১৮, জিএমটি ১২:০০), আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া (বৃহস্পতিবার, জুন ২১, জিএমটি ১৮:০০), ইংল্যান্ড-পানামা (রোববার, জুন ২৪, জিএমটি ১২:০০), সুইজারল্যান্ড-কোস্টারিকা (বুধবার, জুন ২৭, জিএমটি ১৮:০০)। নক আউট ম্যাচ : শেষ ১৬ - গ্রুপ ডি জয়ী বনাম গ্রুপ সি রানার-আপ (রোববার, জুলাই ১, জিএমটি ১৮:০০), কোয়ার্টার-ফাইনাল ১ (শুক্রবার, জুলাই ৬, জিএমটি ১৪:০০)। মোরদোভিয়া অ্যারেনা, সারানস্ক মোরদোভিয়া অ্যারেনা, সারানস্ক ধারণক্ষমতা: ৪৪,৪৪২ উদ্বোধন: ২০১৮ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৪০০ মাইল অবস্থান: মস্কোর দক্ষিণ-পূর্বে সারানস্ক শহরটি মোরদোভিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী শহর। শহরটি ভল্গা নদীর অববাহিকায় সারানস্ক এবং ইনসার নদীর মোহনায় অবস্থিত। ইতিহাস: বলা হচ্ছে এই স্টেডিয়ামটি ২০১৮ বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জমকালো। স্টেডিয়ামের বাইরের রং কমলা, লাল এবং সাদা। রাশিয়ার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে মোরদোভিয়ানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার হাজারতম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালে ইনসার নদীর পাড়ে স্টেডিয়ামটির কাজ শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে, বিশেষত তহবিলের অভাবে, নির্মাণ কাজে অনেক দেরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে এটি শেষ হয়। বিশ্বকাপের জন্য ধারণ ক্ষমতা ৪৫,০০০ করা হলেও পরে দোতলা স্ট্যান্ডের ওপর তলাটি ভেঙ্গে ফেলে ধারণ-ক্ষমতা করা হবে ২৮,০০০। রুশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব মোরদোভিয়া সারানস্কের হোম-স্টেডিয়াম হবে জমকালো এই ভেন্যু। গ্রুপ ম্যাচ: পেরু-ডেনমার্ক (শনিবার, জুন ১৬, জিএমটি ১৬:০০), কলম্বিয়া-জাপান (মঙ্গলবার, জুন ১৯, জিএমটি ১২:০০), ইরান-পর্তুগাল (সোমবার, জুন ২৫, জিএমটি ১৮:০০), পানামা- তিউনিসিয়া (বৃহস্পতিবার, জুন ২৮, জিএমটি ১৮:০০)। কাজান অ্যারেনা, কাজান কাজান অ্যারেনা ধারণক্ষমতা: ৪৪,৭৭৯ উদ্বোধন: ২০১৩ জলবায়ু : গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৪ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫৫ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৫১০ মাইল অবস্থান: তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী শহর কাজান মস্কোর পূর্বে । শহরটি ভল্গা এবং কাজানাকা নদীর মোহনায়। ইতিহাস: লন্ডনের ওয়েম্বলি এবং এমিরেটস স্টেডিয়ামটির নকশা যে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানটি করেছে, তারাই কাজানের স্টেডিয়ামের নকশা করেছে। ফলে লন্ডনের ঐ স্টেডিয়ামের স্থাপত্যের সাথে কাজান অ্যারেনার সাদৃশ্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হলেও এটি এখন স্থানীয় ফুটবল ক্লাব রুবিন কাজানের হোম-স্টেডিয়াম। গ্রুপ ম্যাচ: ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া (শনিবার, জুন ১৬, জিএমটি ১০:০০), ইরান-স্পেন (বুধবার জুন ২০, জিএমটি ১৮:০০), পোল্যান্ড-কলম্বিয়া (রোববার, জুন ২৪, জিএমটি ১৮:০০), দক্ষিণ কোরিয়া-জার্মানি (বুধবার, জুন ২৭, জিএমটি ১৪:০০)। নক-আউট ম্যাচ: শেষ ১৬ - গ্রুপ সি জয়ী বনাম গ্রুপ ডি রানার-আপ (শনিবার, জুন ৩০, জিএমটি ১৪:০০), কোয়ার্টার ফাইনাল ২ (শুক্রবার, জুলাই ৬, জিএমটি ১৮:০০)। সামারা অ্যারেনা, সামারা সামারা অ্যারেনা, সামারা ধারণক্ষমতা: ৪৪,৮০৭ উদ্বোধন: ২০১৮ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৬ ডিগ্রি, বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ টাইম জোন: জি এমটি + ৪ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৬৫৫ মাইল অবস্থান: রাশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ইউরোপীয় অংশে ভল্গা নদীর পূর্ব তীরের শহর সামারা। ইতিহাস : প্রথমে পরিকল্পনা হযেছিল স্টেডিয়ামটি হবে সামারার দক্ষিণে নদীর ভেতর প্রায় জনমানবহীন একটি দ্বীপে। পরে সমালোচনার মুখে এটি শহরের মূল এলাকার মধ্যে স্থানান্তর করা হয়। নভোযান এবং বিমান শিল্পের জন্য অঞ্চলটি বিখ্যাত। তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই স্টেডিয়ামের নকশা করা হয়েছে - দেখতে অনেকটা গম্বুজের মত - ইস্পাতের মত রং, রাতে আলোয় ঝলমল করে। বিশ্বকাপের পর এটির নাম বদলে রাখা হবে - কসমস অ্যারেনা। স্থানীয় ফুটবল ক্লাব ক্রাইলিয়া সোভেটভের হোম-গ্রাউন্ড হবে এটি। গ্রুপ ম্যাচ: কোস্টা রিকা-সার্বিয়া (রোববার জুন ১৭, জিএমটি ১২:০০), ডেনমার্ক-অস্ট্রেলিয়া (বৃহস্পতিবার, জুন ২১, জিএমটি ১২:০০), উরুগুয়ে-রাশিয়া (সোমবার, জুন ২৫, জিএমটি ১৪:০০), সেনেগাল-কলম্বিয়া (বৃহস্পতিবার, জুন ২৮, জিএমটি ১৪:০০)। নক-আউট: শেষ ১৬ - গ্রুপ ই জয়ী বনাম গ্রুপ এফ রানার-আপ (সোমবার, জুলাই ২, জিএমটি ১৪:০০), কোয়ার্টার ফাইনাল ৪ (শনিবার, জুলাই ৭, জিএমটি ১৮:০০) ইয়েকাতেরিনবার্গ অ্যারেনা, ইয়েকাতেরিনবার্গ ইয়েকাতেরিনবার্গ অ্যারেনা, ইয়েকাতেরিনবার্গ ধারণ-ক্ষমতা: ৩৫,৬৯৬ উদ্বোধন : ১৯৫৩ (অস্থায়ী গ্যালারি এবং ছাদ তৈরি হয়েছে ২০১৮ সালে) জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬৬ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৫ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ১,০৯০ মাইল অবস্থান: উরাল পর্বতের পাদদেশে এই শহরটি রাশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ভৌগলিকভাবে ইয়েকাতেরিনবার্গ ইউরোপ এবং এশিয়ার সীমান্তরেখায়। ইতিহাস: এটি বিশ্বকাপের একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে মূল মাঠের বাইরে অস্থায়ী দর্শক গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। ফিফার শর্ত রয়েছে - বিশ্বকাপের যে কোনো স্টেডিয়ামে অন্তত ৩৫,০০০ আসন থাকতে হবে। বিপদে পড়ে যান কর্তৃপক্ষ। পরে স্থপতিদের পরামর্শে দুই গোল-পোস্টের পেছনে মূল মাঠের কিনারে বাড়তি দুটি গ্যালারি নির্মাণ করা হয়। মূল স্টেডিয়ামটি তৈরি হয় ১৯৫৩ এবং ১৯৫৭ সালের মধ্যে। পরে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়। ‌এটি রুশ প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব উরাল একাতেরিনবার্গের হোম-গ্রাউন্ড। গ্রুপ ম্যাচ: মিশর-উরুগুয়ে (শুক্রবার, জুন ১৫, জিএমটি ১২:০০), ফ্রান্স-পেরু (বৃহস্পতিবার, জুন ২১, জিএমটি ১৫:০০), জাপান-সেনেগোল (রোববার, জুন ২৪, জিএমটি ১৫:০০), মেক্সিকো-সুইডেন (বুধবার, জুন ২৭, জিএমটি ১৪:০০)। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ ধারণক্ষমতা: ৬৮,১৩৪ উদ্বোধন: ২০১৭ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৪২৫ মাইল অবস্থান: নেভা নদীর তরে বাল্টিক সাগর উপকূলের এই শহরটি বিশ্বকাপের সর্ব-উত্তরের ভেন্যু। ইতিহাস: স্টেডিয়ামটির পুরনো নাম ক্রেস্তোভস্কি স্টেডিয়াম। জেনিথ অ্যারেনা নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। তবে বিশ্বকাপের জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম। কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৯ সালে। কিন্তু ফিফার শর্ত মানতে ডিজাইনের পরিবর্তন করায় কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে রুশ গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম তাদের স্পন্সরশীপ প্রত্যাহার করায় আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সেন্ট পিটার্সবার্গ নগর সরকারের ব্যয়ে ২০১৭ সালে স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫০ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু তার তিনগুণ বেশি খরচ হয়েছে। জাপানের টয়োটা স্টেডিয়ামের ধাঁচে নভোযানের আকৃতির মত এটির ডিজাইন। ছাদ খোলা-বন্ধ করা যায়। মাঠের পিচ অত্যাধুনিক - নড়া-চড়া করানো যায়। প্রযুক্তির দিক দিয়ে এটি বিশ্বের অন্যতম আধুনিক স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের পর এটি জেনিথ সেন্ট পিটার্সবার্গের হোম-স্টেডিয়াম হবে। গ্রুপ ম্যাচ: মরক্কো-ইরান (শুক্রবার, জুন ১৫, জিএমটি ১৫:০০), রাশিয়া-মিশর (মঙ্গলবার, জুন ১৯, জিএমটি ১৮:০০), ব্রাজিল-কোস্টারিকা (শুক্রবার জুন ২২, জিএমটি ১২:০০), নাইজেরিয়া-আর্জেন্টিনা (মঙ্গলবার, জুন ২৬, জিএমটি ১৮:০০)। নক-আউট: শেষ ১৬: গ্রুপ এফ জয়ী বনাম গ্রুপ ই রানার-আপ (মঙ্গলবার, জুলাই ৩, জিএমটি ১৪:০০), সেমি-ফাইনাল ১ (মঙ্গলবার, জুলাই ১০, জিএমটি ১৮:০০), তৃতীয় বনাম চতুর্থ প্লে-অফ (শনিবার, জুলাই ১৪, জিএমটি ১৪:০০)। কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম, কালিনিনগ্রাদ কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম, কালিনিনগ্রাদ ধারণ-ক্ষমতা : ৩৫,২১২ উদ্বোধন: ২০১৮ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ২ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৭৭০ মাইল অবস্থান: কালিনিনিগ্রাদ ওব্লাস্ট অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র এই শহরটি। অঞ্চলটি বাল্টিক সাগর তীরে পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার মাঝে একটি রুশ এলাকা। ইতিহাস: কালিনিনগ্রাদের আনকোরা নতুন স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে অনেকটা বায়ার্ন মিউনিখের অ্যালায়েঞ্জ অ্যারেনার আদলে। এটি নির্মাণে একের পর এক সমস্যা এবং বিলম্ব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অত্যাধুনিক একটি স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা করা হলেও পরে মাত্র ৩৫,০০০ আসনের একটি সাদামাটা স্টেডিয়াম তৈরি হয়। বিশ্বকাপের পরে আসন সংখ্যা ১০,০০০ কমিয়ে এটিকে রুশ দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব বাল্টিকা কালিনিন্রগাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। গ্রুপ ম্যাচ: ক্রোয়েশিয়া-নাইজেরিয়া (শনিবার, জুন ১৬, জিএমটি ১৯:০০) সার্বিয়া-সুইজারল্যান্ড (শুক্রবার, জুন ২২, জিএমটি ১৮:০০). স্পেন-মরক্কো (সোমবার, জুন ২৫, জিএমটি ১৮:০০) ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম (বৃহস্পতিবার, জুন ২৮, জিএমটি ১৮:০০)। ভলগোগ্রাদ অ্যারেনা, ভলগোগ্রাদ ভোল্গোগ্রাদ অ্যারেনা, ভোল্গোগ্রাদ ধারণ-ক্ষমতা: ৪৫,৫৬৮ উদ্বোধন: ২০১৮ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৬ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। টাইম জোন: জিএমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৫৮৫ মাইল অবস্থান: ভল্গা নদীর পাড়ে রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের এই শহরটি পূর্বের নাম স্টালিনগ্রাদ। ইতিহাস: ভলগোগ্রাদ অ্যারেনা বিশ্বকাপের জন্য তৈরি নতুন আরেকটি স্টেডিয়াম। ১৯৫৮ সালের পুরোনো একটি স্টেডিয়াম ভেঙ্গে এটি তৈরি করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের ছাদটি মোটা তার দিয়ে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যা দেখলে মনে হয় সাইকেলের চাকার স্পোক। বিশ্বকাপের জন্য তৈরি অন্যতম নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম এটি। বিশ্বকাপের পর অন্যতম শীর্ষ রুশ ক্লাব রোটোর ভলগোগ্রাদের হোম-গ্রাউন্ড হবে এই স্টেডিয়াম। গ্রুপ ম্যাচ: তিউনিসিয়া-ইংল্যান্ড (সোমবার, জুন ১৮, জিএমটি ১৮:০০), নাইজেরিয়া-আইসল্যান্ড (শুক্রবার, জুন ২২, জিএমটি ১৫:০০), সৌদি আরব-মিশর (সোমবার, জুন ২৫, জিএমটি ১৪:০০), জাপান-পোল্যান্ড (বৃহস্পতিবার, জুন ২৮, জিএমটি ১৪:০০)। রোস্তভ অ্যারেনা, রোস্তভ-অন-ডন রোস্তভ অ্যারেনা, রোস্তভ-অন-ডন ধারণ-ক্ষমতা: ৪৫,১৪৫ উদ্বোধন: ২০১৮ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্র ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৭ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ। টাইম জোন: জি এমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ৬৯০ মাইল অবস্থান: মস্কোর দক্ষিণে ডন নদীর তীরে এই শহরটি আজভ সাগর থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে। ইতিহাস: আরও একটি নতুন স্টেডিয়াম। ২০১৩ সালে নির্মাণ শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৮ সালে। মাটি খোঁড়ার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার অবিষ্ফোরিত বোমা পাওয়া গিয়েছিল এখানে। বিশ্বকাপের পর এর আসন সংখ্যা কমিয়ে ২৫,০০০ করা হবে। স্থানীয় ক্লাব এফসি রোস্তভের হোম-গ্রাউন্ড হবে এই মাঠ। গ্রুপ ম্যাচ: ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড (রোববার, জুন ১৭, জিএমটি ১৮:০০), উরুগুয়ে-সৌদি আরব (বুধবার, জুন ২০, জিএমটি ১৫:০০), দক্ষিণ কোরিয়া-মেক্সিকো (শনিবার, জুন ২৩, জিএমটি ১৫:০০), আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া (মঙ্গলবার, জুন ২৬, জিএমটি ১৮:০০) নক আউট: শেষ ১৬ - গ্রুপ জি জয়ী বনাম গ্রুপ এইচ রানার-আপ (সোমবার, জুলাই ২, জিএমটি ১৮:০০)। ফিশ্ট স্টেডিয়াম, সোচি ফিশ্ট স্টেডিয়াম, সোচি ধারণ-ক্ষমতা: ৪৭,৭০০ উদ্বোধন: ২০১৩ জলবায়ু: গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৮ ডিগ্রি। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। টাইম জোন: জি এমটি + ৩ ঘণ্টা মস্কো থেকে দূরত্ব: ১,০৪০ মাইল অবস্থান: কৃষ্ণ সাগরের তীরে ১৪০ কি.মি. দীর্ঘ এই শহরটি ইউরোপের দীর্ঘতম শহর। শহরের অন্যদিকে ককেসাস পর্বতমালা। ইতিহাস: ফিশ্ট স্টেডিয়ামটি ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে নির্মাণ করা হয়েছিল। দেখলে মনে হয় এটি যেন একটি বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের চূড়া। স্থানীয় ভাষায় ফিশ্ট শব্দের অর্থ 'সাদা মাথা।' সাগর এবং ক্রাসনায়া পলিনায়া পর্বতের সাথে যুক্ত করতে স্টেডিয়ামটির দুই প্রান্ত খোলা ছিল। কিন্তু ফিফার শর্ত অনুয়ায়ী খোলা প্রান্ত দুটো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রুপ ম্যাচ: পর্তুগাল-স্পেন (শুক্রবার, জুন ১৫, জিএমটি ১৮:০০), বেলজিয়াম-পানামা (সোমবার, জুন ১৮, জিএমটি ১৫:০০), জার্মানি-সুইডেন (শনিবার, জুন ২৩, জিএমটি ১৮:০০), অস্ট্রেলিয়া-পেরু (মঙ্গলবার, জুন ২৬, জিএমটি ১৪:০০)। নক-আউট: শেষ ১৬- গ্রুপ এ জয়ী বনাম গ্রুপ বি রানার-আপ) (শনিবার, জুন ৩০, জিএমটি ১৮:০০), কোয়ার্টার ফাইনাল ৩ (শনিবার, জুলাই ৭, জিএমটি ১৪:০০)। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: বিশ্বকাপ : রাশিয়ার গোলপোস্টের গোপন দুনিয়া সাড়ে তিন মাইল লম্বা জার্মান পতাকা বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস কি ফ্যাসিবাদী সংগঠন?
বিশ্বকাপ ২০১৮: এক নজরে জেনে নিন রাশিয়ার যেসব ভেন্যুতে খেলা হবে
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যার গান ও কবিতা যুগে যুগে বাঙালির জীবন সংগ্রাম ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করেছে। তিনি জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এক দরিদ্র পরিবারের দুখু মিয়া হয়ে। আর মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। মাঝে ৭৭ বছর জুড়ে ছিল সৃষ্টি ও সৃজনশীলতার এক বিশাল ইতিহাস। দাসত্বের শৃঙ্খলে বদ্ধ জাতিকে শোষণ ও উৎপীড়ন থেকে মুক্ত হবার ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, 'বল বীর বল উন্নত মম শির,...যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না -বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত!' কবি নজরুল ইসলাম সব ধর্মের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তাঁর একটি কবিতার বিখ্যাত একটি লাইন ছিল - 'মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।' পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম হয় ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে। বাবা ছিলেন কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহিদা খাতুন। বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম। দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মভিত্তিক। তাঁর ভবঘুরে বাল্যকাল আর তাঁর স্কুল শিক্ষা নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। অল্প বয়সে স্থানীয় মসজিদে তিনি মুয়াজ্জিনের কাজ করেছিলেন। কৈশোরে ভ্রাম্যমাণ নাটক দলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সাহিত্য, কবিতা ও নাটকের সঙ্গে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে বাল্যকালে খানসামা ও চায়ের দোকানে রুটি বানানোর কাজ করেছেন। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম তবে নজরুল গবেষক জিয়াদ আলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, তরুণ বয়সে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন নজরুল । "করাচিতে গিয়েছিলেন ১৯১৭ সালে। স্বাধীনতা সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষা থেকেই তিনি যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি যখন কলকাতা ফিরে গেলেন, তখন কিন্তু তাঁর মূল স্বপ্নই ছিল ভারতকে স্বাধীন করা। তিনি বহু লেখায় বলেছেন সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে হবে।" প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেনাবাহিনীর কাজ শেষ করে কলকাতায় ফেরার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন 'বিদ্রোহী' এবং 'ভাঙার গানের' মতো কবিতা এবং ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জাতীয়তবাদী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার জন্য বহুবার কারাবন্দী হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম। জেলে বন্দী অবস্থায় লিখেছিলেন 'রাজবন্দীর জবানবন্দী'। তাঁর এইসব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল প্রকট। সাংবাদিকতার মাধ্যমে এবং পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যকর্মে নজরুল শোষণের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। চুরুলিয়ায় কবি নজরুল ইসলামের জন্মভিটা যা এখন নজরুল অ্যাকাডেমি, তার পাশেই এই অনুষ্ঠান তৈরির সময় থাকতেন কবির এক ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী মাজহার হোসেন, যিনি সেসময় ছিলেন অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক। "নজরুল ছিলেন সব ধর্মীয় চেতনার ঊর্ধ্বে। অন্তরে তিনি না ছিলেন হিন্দু না ছিলেন মুসলিম। তাঁর একটি কথাতেই এটা ছিল পরিষ্কার- 'জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছো জুয়া'। তিনি সবার ঊর্ধ্বে ছিলেন মানবতার কবি। গোটা ভারতবর্ষেই তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি।" চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৯ সালে তবে নজরুল ইসলামের নাতি সাগর কাজী বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, তার বন্ধুবান্ধবরা নজরুল ইসলামকে মনের মন্দিরে বসিয়ে রেখেছেন। তারা মনে করেন নজরুল তাদের জন্য একজন পথের দিশারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামকে বর্ণনা করেছিলেন 'ছন্দ সরস্বতীর বরপুত্র' হিসাবে। অনেক বিশ্লেষক বলেন তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতা তাঁকে অমর করে রেখেছে। নজরুলের প্রতিভার যে দিকটা ছিল অনন্য সেটা হল তাঁর বিদ্রোহী চেতনার বহি:প্রকাশ- সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি সব কিছুর বিরুদ্ধেই বিদ্রোহে তিনি সোচ্চার হয়েছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সঙ্গীতে। গবেষক জিয়াদ আলি বলেছেন তিনি কিন্তু শুধু কবি ছিলেন না। তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার, গল্পকার, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মীও। "কখনও তিনি গান গাইছেন, কখনও পত্রিকা সম্পাদনা করছেন, কখনও রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছেন। নজরুল সম্ভবত ওই সময়ের প্রথম বাঙালি, যিনি বাংলার নবজাগরণের যে ঐতিহ্য সেটা ধারণ করেছিলেন এবং তার মধ্যে দিয়ে তিনি বাঙালিকে একটা শক্ত, সবল নতুন চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।" কলকাতায় অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায় বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত জীবন তাঁর সাহিত্যে বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। "নজরুল উঠে এসেছিলেন সমাজের অতি পেছিয়ে থাকা শ্রেণি থেকে। শুধু দারিদ্রই নয়, শিক্ষার অভাবের মধ্যে দিয়ে তিনি বড় হয়েছিলেন- প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে থেকে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাঁর জীবন কেটেছিল।" নজরুল সম্পর্কে একাধিক গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক মুস্তফা নুরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রতিকূলতায় ভরা ওই জীবনের মধ্যে দিয়েই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল। "তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ছিলেন নজরুল। যে পথ দিয়ে তিনি গেছেন, যে প্রকৃতিতে তিনি লালিত হয়েছেন, যে পারিপার্শ্বিকতায় তিনি বেড়ে উঠেছেন, সেগুলো তাঁর অজান্তেই তাঁর ওপরে ছাপ ফেলে গেছে। তারই বহি:প্রকাশ ঘটেছিল তাঁর গানে ও কবিতায়।" গবেষক জিয়াদ আলী বলেন: ''কথিত আছে কলকাতায় কলেজ স্ট্রিটে হ্যারিসন রোডের মুখে একটা রিক্সাওয়ালাকে তিনি একদিন রাত বারোটায় গিয়ে বলেছিলেন - এ্যাই তুই তো অনেককেই নিয়ে যাস্ রিক্সায় টেনে। ঠিক আছে আজ তুই রিক্সায় বোস্ আর আমি তোকে টেনে নিয়ে যাই।'' তাঁর সাহিত্যকর্মেও প্রাধান্য পেয়েছে মানুষের প্রতি তাঁর অসীম ভালবাসা আর মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। নজরুল জীবনীকার অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন নজরুল তাঁর ধূমকেতু পত্রিকায় কংগ্রেস স্বাধীনতা দাবি করার আগেই ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেছিলেন। "সেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথাও তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন।" রফিকুল ইসলাম মনে করেন ''বাঙালি ঐতিহ্যের প্রধান যে দুটি ধারা হিন্দু এবং মুসলিম, তার সমান্তরাল উপস্থিতি এবং মিশ্রণ ঘটেছিল নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মে, সঙ্গীত সৃষ্টিতে এবং জীবনাচরণে, যা আর কোন কবি সাহিত্যিকের মধ্যে আমি দেখিনি।" অধ্যাপক মুস্তফা নুরুল ইসলাম বলেন, "নজরুল যখন যুদ্ধ ফেরত কলকাতা শহরে এলেন, তখন তার ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছিল ভারতীয় উপমহাদেশে সেসময় আসা নতুন এক সাম্যবাদী চিন্তাচেতনার জোয়ার। সেই চিন্তাধারার মধ্যে ছিল নিচের তলার মানুষকে আপনজন ভাবতে শেখা। সাহিত্য যে শুধু এলিট বা শিক্ষিতদের জন্যই নয়, সেটা তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন।'' সাম্যবাদী চিন্তাচেতনা কাজী নজরুল ইসলামকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। নিচের তলার মানুষের তিনি ছিলেন খুবই নিকটজন। ''সেই যুগে একটা ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছিল- যেটা হল দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সমাজ বিপ্লবকে মেলানো। স্বদেশী আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিলেন তারা সমাজ বিপ্লবের কথা ভাবতেন না। কিন্তু এই বিপ্লব ছিল নজরুলের রক্তে,'' বলেছেন অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায়। অধ্যাপক মুস্তফা নুরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা নজরুল চেয়েছিলেন। "কিন্তু তিনি মনে করতেন এর পথে প্রধান বাধা সাম্প্রদায়িক সংঘাত। সেইজন্য তিনি দুর্গম গিরি কান্তার মরু গানে বলেছিলেন - হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কাণ্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার। উপমহাদেশের রাজনৈতিক নেতারা, প্রধান যে সমস্যা- সাম্প্রদায়িক সমস্যা সেইদিকে মনোনিবেশ করেননি বলেই ভারত টুকরো হয়েছে।" নবযুগ নামে একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে। অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এ.কে. ফজলুল হক। এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল ইসলাম নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। যে রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন যুগের জন্ম দিয়েছিলেন বলে বলা হয়, সেই রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই নজরুল বাংলা সাহিত্যে আরেকটা যুগের সূচনা করেছিলেন। ভারতে অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমিতে নজরুল ইসলাম নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। শিবনারায়ণ রায়ের মূল্যায়নে যারা সবকিছু ভেঙে নতুন করে গড়তে চাইছে তাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল নজরুল ইসলামের জ্বালাময়ী কবিতা - বিদ্রোহী। "সবকিছু ভেঙে নতুন করে গড়ার চেতনা প্রকাশ পেয়েছিল এই রচনায়। সেই কবিতা রাতারাতি তাঁকে একেবারে কেন্দ্রে বসিয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী আট দশ বছর ধরে তিনি যে সাম্যের গান গাইলেন, নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বললেন, কৃষক মজুরের দুঃখের কথা বললেন, কৃষক শ্রমিক পার্টির হয়ে কাজ করলেন- এ সমস্ত কিছুর মধ্যে দিয়ে তাঁর যে মন প্রকাশ পেল তা ছিল একেবারে আলাদা। এর মধ্যে কোন আভিজাত্য নেই। একেবারে নিচ থেকে ওঠা মানুষের গান। তাদের কথা। যারা দলিত, যারা অত্যাচারিত যাদের ভাষা ছিল না, নজরুলের কলমে তারা ভাষা খুঁজে পেল।" তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটকও রচনা করেছিলেন। বাংলা ভাষায় একটা নতুন প্রাণ নতুন তারুণ্য নিয়ে এসেছিলেন। সৃষ্টি করেছিলেন একটা নিজস্ব ভাষার, যে ভাষার মধ্যে তিনি দেশজ বাংলার সঙ্গে সফলভাবে ঘটিয়েছিলেন বহু আরবি ও ফারসি শব্দের সংমিশ্রণ। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা করেছিলেন এবং অধিকাংশ গানে নিজেই সুরারোপ করেছিলেন যেগুলো এখন "নজরুল গীতি" নামে বিশেষ জনপ্রিয়। গজল, রাগপ্রধান, কাব্যগীতি, উদ্দীপক গান, শ্যামাসঙ্গীত, ইসলামী গান বহু বিচিত্রধরনের গান তিনি রচনা করেছেন। রফিকুল ইসলামের মতে: "তিনি যেভাবে উত্তর ভারতীয় রাগসঙ্গীত এবং বাংলার লোকোসঙ্গীতকে মেলালেন, এর আগে যথার্থ অর্থে সেভাবে বাংলা গান রাগসঙ্গীতকে অনুসরণ করেনি। তার ছিল এই মিশ্রণের অসামান্য প্রতিভা- সাহিত্যে, সঙ্গীতে, রাজনীতিতে, সমাজনীতিতে সর্বত্র তিনি এই সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন।" শিষ্যদের সঙ্গীত শিক্ষা দিচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম। "এক হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যে তাঁর মত অসাম্প্রদায়িক কবি আর দেখা যায়নি। তাঁর পরিচয় ছিল মানুষ হিসাবে," বলেছেন অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায়। "ওঁনার লেখার মধ্যে কখনই তিনি হিন্দু না মুসলমান তা প্রবল হয়ে দেখা দেয়নি। বাংলা ভাষায় আমার জানা মতে তিনিই একমাত্র কবি যিনি সমানভাবে হিন্দু ও মুসলমানদের বিশ্বাসের কথা, তাদের জীবনাচরণের পদ্ধতির কথা, তাঁর কাব্য ও সাহিত্যের মধ্যে তুলে ধরেছিলেন।" মধ্যবয়সে এক দুরারোগ্য রোগে কবি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, "অসুস্থ হবার আগে ৪০এর দশকে তিনি যখন জাতীয়তাবাদী মুসলিম পত্রিকা দৈনিক নবযুগের প্রধান সম্পাদক ছিলেন তখন একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন 'বাঙালির বাংলা'। সেখানে তিনি লিখেছিলেন বাংলার সব শিশুকে, বালককে এই শিক্ষা দাও- এই মন্ত্র দাও যে বাংলা হচ্ছে বাঙালির- এখান থেকে রামাদের আর গামাদের অর্থাৎ মাড়োয়াড়ি আর পাঞ্জাবিদের বহিষ্কার করতে হবে এবং বলো -জয় বাংলার জয়। "সাম্প্রদায়িকতার দিনে, যুদ্ধের দিনে, দ্বিজাতি তত্ত্বের দিনে তিনি যেভাবে বাংলার জয়গান করে গেছেন এর কোন তুলনা বাংলা সাহিত্যে বিরল।" স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে সপরিবারে অসুস্থ নজরুল ইসলাম ঢাকায় চলে যান। ১৯৭৬ সালে ২৯শে অগাস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে কবির জীবনাবসান হয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকা
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে তৃতীয় স্থানে কাজী নজরুল ইসলাম-অসাম্প্রদায়িক মানবতার কবি
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
নির্যাতন বোঝায়, এরকম চিত্রকর্ম এরকম একজন নির্যাতনকারী অ্যান্ড্রু, যিনি চারিত্রিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন যখন তার সংসার ভেঙে যেতে বসেছিল। সঙ্গী এমা'র প্রতি তার ব্যবহার সবসময়ই অবমাননাকর ছিল। বেশ কয়েকবার এমাকে আহতও করেছিল অ্যান্ড্রু। অ্যান্ড্রু'র নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পর একসময় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। পরবর্তীতে এমা তাদের সন্তানদের ভরণপোষণে হিমশিম খান। কিছুদিন পর তাদের সন্তানদের সরিয়ে নেয়া হয় তাদের তত্বাবধান থেকে। আচরণ পরিবর্তন অ্যান্ড্রু'র সাথে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে নতুন করে যখন জীবন শুরু করার চিন্তা করে এমা, তখন তাকে এই বিষয়ে সহায়ক নানা ধরণের কোর্স করতে বলা হয়। অন্যদিকে অ্যান্ড্রুও একই ধরণের সহায়তা খুঁজছিলেন। এমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা বন্ধ করতে চাচ্ছিলেন তিনি - আর এবিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সাহায্যও খুঁজছিলেন। ঐসময় 'ফিনিক্স ডোমেস্টিক অ্যাবিউজ সার্ভিস' নামক সংস্থার খোঁজ পান তিনি, যারা এরকম নির্যাতনকারী পুরুষদের মানসিকতা ও আচরণ পরিবর্তনে সাহায্য করে থাকে। ফিনিক্সে সাত মাসের কোর্স শেষ করার পর অ্যান্ড্রুর মনে হতে থাকে যে তার আচরণের পরিণাম ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছেন তিনি। প্রতি সপ্তাহেই তাকে তার ব্যবহার নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হতো এবং তখন তাকে নিজের আচরণের মুখোমুখি করা হতো। কোর্সটিতে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয়, নানা ধরণের সমস্যার সমাধান করা এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হতো - যার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা প্রিয়জনদের ওপর তাদের ব্যবহারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করার চেষ্টা করতেন। "তখন আমি যে মানুষ ছিলাম, তা নিয়ে আমি মোটেও গর্বিত নই", বলেন অ্যান্ড্রু। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: যে ৫টি উপায়ে আপনি বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে পারেন বিএনপির সাথে অন্যদের 'ঐক্য' আটকে আছে যে কারণে 'ফিসফিসানি' ছেড়ে যখন সরব নারী সাংবাদিকরা বাংলাদেশে এখনও কি চিঠি লিখে মানুষ? যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন এমাও জানান যে অ্যান্ড্রু'র পরিবর্তন তার চোখে পরেছে। এমা বলেন, "সে অনেক বদলেছে। আমরা আগের চেয়ে বেশি কথা বলি, আর ও আগের চেয়ে বেশি শোনে।" তারা দুই বছরের জন্য আলাদা হলেও এখন একসাথে বসবাস করছেন। সন্তানদের ফিরে পেতে চেষ্টাও করে যাচ্ছেন তারা। ঐ কোর্সে অ্যান্ড্রুকে সাহায্য করেছিলেন লিডিয়া। তিনি জানান এরকম ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা জরুরি হয়ে পরে কারণ "নির্যাতনকারীর আচরণ শোধনের চেষ্টা না করা হলে সাধারণত সে আরেকজন শিকার" খুঁজে বের করে। "তখন তাদের পরবর্তী সম্পর্কটিতেও এধরণের জটিলতার সৃষ্টি হয়", বলেন লিডিয়া। সবাই কি সংশোধিত হয়? এ ধরণের কোর্স শেষে অধিকাংশ মানুষের আচরণগত সংশোধন হলেও সবার ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয় না। এরকম একটি কোর্স করার পর সারাহ'র (ছদ্মনাম) সঙ্গীর আচরণে কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে জানান তিনি। "উল্টো সে আরো বেশি বদরাগী হয়েছিল", বলেন সারাহ। কোর্স চলাকালীন এবং কোর্স শেষ হওয়ার পরেও বহুদিন চলেছিল সারাহ'র সঙ্গীর নির্যাতন। সারাহ মনে করেন নির্যাতনকারীদের মানসিকতা ও চরিত্র সংশোধনে এরকম কোর্স যথেষ্ট নয়। বছরের পর বছর পূর্ণাঙ্গ থেরাপি দিয়ে এরকম সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা প্রয়োজন। যুক্তরাজ্য প্রতিবছর আনুমানিক ৩ হাজার মানুষ এধরণের কোর্সে অংশ নেয় এবং এই সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। কিছু কোর্সে শুধুমাত্র নির্যাতনকারীকে নিয়ে কাজ করা হয়। আবার কিছু কোর্স সাজানো হয় নির্যাতনকারী ও তার সঙ্গী দু'জনের জন্যই। তবে কোন পদ্ধতিটি যে অধিক কার্যকর, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছেই। ২০ বছর ধরে শুধু নির্যাতনকারীদের জন্য তৈরি করা একটি কোর্স পরিচালনা করে আসছেন ডেনিস। তিনি বলেন যারা সংশোধিত হতে চায় তাদের সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত। "তবে কিছু মানুষ থাকবেই যারা কখনোই সংশোধিত হতে পারবে না এবং কখনো সংশোধিত হবেও না। তবে অনেকেই আছেন যারা আসলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে চান, এবং এই সুযোগটা তাদের প্রাপ্য", বলেন ডেনিস।
পারিবারিক জীবনে নারীর ওপর নির্যাতনকারী পুরুষ কি কখনো শুধরায়?
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
রোয়ান্ডায় গণহত্যার শিকার কয়েকজনের ছবি। সতর্কবার্তা: এই নিবন্ধে থাকা ছবিগুলো অনেকের কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। কীভাবে ওই গণহত্যা শুরু হয়েছিল? রোয়ান্ডার বাসিন্দাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই হুতু, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে টুটসিরা দেশটির শাসন ক্ষমতায় ছিল। ১৯৫৯ সালে টুটসি রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে হুতুরা। তখন হাজার হাজার টুটসি প্রতিবেশী যেসব দেশে পালিয়ে যায়, তার মধ্যে রয়েছে উগান্ডাও। আরো পড়তে পারেন: আগুনে মাদ্রাসা ছাত্রীর 'শরীরের ৮০ ভাগই পুড়ে গেছে' সবচেয়ে ধনী ৭ নারী: কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন পুরনো ঢাকাকে যেভাবে নতুন করতে চায় সরকার যে পোস্টারটি পাকিস্তানে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে রোয়ান্ডার গণহত্যার শিকার হয়েছে আট লাখ মানুষ। নির্বাসিত টুটসির একটি দল বিদ্রোহী একটি বাহিনী গঠন করে যার নাম দেয়া হয় রোয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (আরপিএফ)। ওই বাহিনী ১৯৯০ সালে রোয়ান্ডায় অভিযান শুরু করে এবং ১৯৯৩ সালে শান্তি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকে। ১৯৯৪ সালের ৮ই এপ্রিল রাতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানা এবং বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিয়েন নটারিয়ামিনা, যাদের দুজনেই হুতু সম্প্রদায়ের, বহনকারী বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। ওই বিমানে থাকা সব যাত্রী মারা যান। এই ঘটনার জন্য আরপিএফকে দায়ী করে হুতু চরমপন্থীরা এবং খুব তাড়াতাড়ি মানব হত্যার একটি সুপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ শুরু করে। আরপিএফের দাবি ছিল, ওই বিমানটিকে গুলি করেছে হুতুরাই, যাতে তারা গণহত্যার একটি অজুহাত তৈরি করতে পারে। হুতু মিলিশিয়ারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেশিরভাগ মানুষকে হত্যা করেছে। কীভাবে গণহত্যা করা হয়েছে? অতি সতর্কতার সঙ্গে বিরোধী পক্ষের সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা মিলিশিয়াদের হাতে তুলে দেয়া হয়, এবং তারা গিয়ে তাদের সবাইকে পরিবারের সদস্যদের সহ হত্যা করে। তখন প্রতিবেশীরা প্রতিবেশীদের হত্যা করেছে। এমনকি অনেক হুতু স্বামী তাদের টুটসি স্ত্রীদের হত্যা করেছে, কারণ তাদের দাবি, না হলে তাদের হত্যা করা হতো। সেই সময় প্রত্যেকের পরিচয় পত্রে গোত্রের নাম উল্লেখ থাকতো। রোয়ান্ডায় অসংখ্য মানুষের কোন খোঁজ মেলেনি। ফলে মিলিশিয়ারা রোড ব্লক বসিয়ে পরিচয় পত্র যাচাই করতো এবং টুটসিদের হত্যা করতো। বেশিরভাগ সময় এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে ধারালো ম্যাচেটি (ধারালো ছুরির মতো) দিয়ে, রোয়ান্ডায় যা প্রায় সবার ঘরেই থাকে। হাজার হাজার টুটসি নারীকে আটক করে যৌন দাসী করা হয়। সংখ্যালঘু টুটসিরা হামলার শিকার হয়েছে কেন এটা এত পাশবিক হয়ে উঠেছিল? রোয়ান্ডার সমাজ সবসময়েই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, যার প্রশাসনিক কাঠামোকে অনেকটা পিরামিডের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে সরকারের উঁচু মহল থেকে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হয়। তখনকার সরকারি দল, এমআরএনডির একটি যুব শাখা ছিল - যাদের বলা হয় ইন্টেরাহামায়ি - যারা পরবর্তীতে মিলিশিয়ায় রূপ নেয় এবং যারা বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। টানা একশো দিন ধরে চলেছে রোয়ান্ডায় গণহত্যা স্থানীয় গ্রুপগুলোর হাতে অস্ত্র এবং হিট-লিস্ট তুলে দেয়া হয়, যারা ভালোভাবে জানতো যে এসব মানুষকে কোথায় পাওয়া যাবে। হুতু চরমপন্থীরা একটি বেতার কেন্দ্র স্থাপন করে, যার নাম ছিল আরটিএলএম। ওই বেতার কেন্দ্র এবং পত্রিকার মাধ্যমে বিদ্বেষ মূলক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হতো, মানুষজনকে 'তেলাপোকা' হত্যা করার জন্য বলা হতো, যার মানে টুটসিদের হত্যা করা বোঝানো হতো। যেসব নামী ব্যক্তিদের হত্যা করা হবে, তাদের নাম ওই রেডিওতে পড়ে শোনানো হতো। এমনকি চার্চের যাজক এবং নানদের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে, যাদের শিকার অনেক মানুষ সেসব চার্চে আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিলেন। ১০০ দিনের হত্যাযজ্ঞে আট লাখ টুটসি আর প্রগতিশীল হুতুদের হত্যা করা হয়। গণহত্যার সময় বাড়িতে বাড়িতে লেখা থাকতো যে, এর বাসিন্দারা কি হুতু নাকি টুটসি কেউ কি ওই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল? রোয়ান্ডায় জাতিসংঘ এবং বেলজিয়ামের সৈন্য ছিল, কিন্তু গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ মিশনকে কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। একবছর আগেই সোমালিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা নিহত হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর কোন আফ্রিকান জাতির লড়াইয়ের মধ্যে ঢুকতে রাজী ছিল না। দশজন বেলজিয়ান সৈনিক নিহত হওয়ার পর বেলজিয়ামের সব সৈন্য এবং জাতিসংঘের বেশিরভাগ সৈনিককে রোয়ান্ডা থেকে সরিয়ে আনা হয়। অভিযোগ আছে যে, গণহত্যা থামাতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। হুতু সরকারের বন্ধু ফরাসিরা তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য একটি বিশেষ সেনাদল পাঠায়। তারা পরবর্তীতে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করলেও অভিযোগ রয়েছে যে, ওই এলাকায় গণহত্যা বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। রোয়ান্ডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট পল কাগামে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, তারা গণ হত্যাকারীদের মদদ দিয়েছে, যদিও প্যারিস ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উগান্ডার সহায়তায় রোয়ান্ডার ক্ষমতা দখল করে টুটসি বিদ্রোহী বাহিনী। কীভাবে এর শেষ হয়েছিল? সুসংগঠিত বাহিনী আরপিএফ উগান্ডার সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্রমেই রোয়ান্ডার বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। ১৯৯৪ সালের ৪ঠা জুলাই এই বাহিনী রাজধানী কিগালির উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু করে। তখন প্রতিহিংসার ভয়ে প্রায় ২০ লাখ হুতু-যাদের মধ্যে বেসামরিক লোকজন এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িতরাও ছিল- সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় আশ্রয় নেয়। তখন দেশটির নাম ছিল জায়ার। অনেকে প্রতিবেশী তানজানিয়া এবং বুরুন্ডিতে আশ্রয় নেয়। টুটসিরা দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোয় পালিয়ে যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর আরপিএফ যোদ্ধারা হাজার হাজার বেসামরিক হুতু বাসিন্দাকে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে কঙ্গোয় মিলিশিয়াদের ধরতে অভিযান চালানোর সময় আরো অনেক মানুষকে হত্যা করে। তবে আরপিএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কঙ্গোয় যারা আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, তাদের সহায়তার বেশিরভাগই হুতু মিলিশিয়াদের হাতে পড়েছে। রোয়ান্ডার গণহত্যার জের ধরে এখনো কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে লড়াই চলছে। কঙ্গোর ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? কঙ্গোর সেনাবাহিনী আর হুতু মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে যে বাহিনীগুলো যুদ্ধ করছিল, তাদের সহায়তা করতে শুরু করে রোয়ান্ডার বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আরপিএফ। রোয়ান্ডার সহায়তা পুষ্ট বিদ্রোহীরা কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসায় অভিযান শুরু করে এবং মোবুতু সেসে সেকো সরকারকে উৎখাত করে লরেন্ট কাবিলাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় বসানো হয়। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট হুতু মিলিশিয়াদের দমনে ঢিলেমি করায় নতুন আরেকটি যুদ্ধের শুরু হয়, যাতে জড়িয়ে পড়ে ছয়টি দেশ। বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী খনিজ সম্পদ পূর্ণ দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য লড়াই শুরু করে। ২০০৩ সাল পর্যন্ত চলা ওই লড়াইয়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়। এখনো রোয়ান্ডা সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি সশস্ত্র বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। গণহত্যার পর রোয়ান্ডার কারাগারগুলোয় ছিল ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী। কারো কি বিচার হয়েছে? আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০০২ সালে, যার অনেক আগে রোয়ান্ডার গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফলে এজন্য দায়ীদের বিচার করতে পারবে না এই আদালত। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ওই হত্যাযজ্ঞের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিচারের জন্য তানজানিয়ার শহর আরুশায় একটি আদালত স্থাপন করে যার নাম 'রোয়ান্ডার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত'। লম্বা এবং ব্যয়বহুল বিচারের পর গণহত্যার জন্য এ পর্যন্ত ৯৩জনের বিচার হয়েছে, যাদের অনেকেই ছিলেন হুতু সরকারের আমলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তাদের সবাই হুতু সম্প্রদায়ের। রোয়ান্ডার একটি সামাজিক আদালত গণহত্যায় অভিযুক্ত লক্ষাধিক ব্যক্তির বিচার দ্রুত করার জন্য রোয়ান্ডা সামাজিক আদালত তৈরি করে, যার নাম গাসাসা। সংবাদদাতারা বলছেন, বিচার শুরু হওয়ার আগেই অন্তত ১০ হাজার অভিযুক্ত কারাগারে মারা গেছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার গাসাসা আদালত বসেছে। সাধারণত বাজার বা কোন গাছের নীচে এসব আদালত বসে, যারা প্রায় ১২ লাখ মামলার বিচার করার চেষ্টা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্য বের করা, বিচার এবং পুনর্মিলন ঘটানো। রোয়ান্ডান ভাষায় গাসাসা মানে হচ্ছে একত্রে বাসা এবং আলোচনা করা। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার শহর হিসাবে কিগালির নাম রয়েছে রোয়ান্ডার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? ছোট্ট ও বিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনের জন্য অভিনন্দন পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট কাগামে। তার নীতির কারণে দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। তিনি রোয়ান্ডাকে একটি প্রযুক্তিগত কেন্দ্র বানানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজেও টুইটারে সক্রিয়। তবে তার সমালোচকরা বলেন, তিনি বিরোধিতা সহ্য করতে পারেন না। দেশে বিদেশে তার বেশ কয়েকজন বিরোধী অপ্রত্যাশিতভাবে মারা গেছেন। গণহত্যার বিষয়টি এখনো রোয়ান্ডায় খুবই সংবেদনশীল একটি বিষয় এবং জাতি বা গোত্র নিয়ে কথা বলা বেআইনি। ২০১৭ সালে বিপুল ভোটে তৃতীয় বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন প্রেসিডেন্ট পল কাগামে (মাঝে) সরকার বলছে, বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা ছড়ানো বন্ধ করা এবং রক্তপাত বন্ধ করাই এর উদ্দেশ্য, যদিও অনেকে বলেন এর ফলে আসলে সঠিক পুনর্মিলন হচ্ছে না। মি. কাগামের বেশ কয়েকজন সমালোচকের বিরুদ্ধে গোত্রগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, তাদের কোণঠাসা করার জন্যই এসব অভিযোগ। ২০১৭ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যে নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৯৮.৬৩ শতাংশ ভোট।
রোয়ান্ডা গণহত্যা: ১০০ দিনে যেভাবে ৮ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন।
ইতালির বিপক্ষে ম্যাচজয়ী গোল এবং বিশ্বকাপে নিজের ১৭তম গোলটি করার পরে বুটে চুমু খাচ্ছেন মার্তাা। ফ্রান্সে চলছে নারী ফুটবল বিশ্বকাপের আসর এবং দলগুলোর মধ্যে এখন চলছে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াই। এই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল, তবে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড করেছেন ব্রাজিলের নারী ফুটবলার মার্তা। পুরুষদের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডের মালিক মিরোস্লাভ ক্লোসাকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ফ্রান্সে চলমান নারী ফুটবল বিশ্বকাপে গত মঙ্গলবার যখন ইতালির গোলকিপার লরা গিলানিকে বোকা বানিয়ে ১৭তম গোলটি করেন তারপর থেকে সামাজিক মাধ্যমে তার ভূয়সী প্রশংসা শুরু হয়ে যায়। নারী ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে তিনি নিজেকে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন কিন্তু ইতালির বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের পর এটাই প্রমাণ হয় যে এবার এই রেকর্ডের অধিকারী পুরুষ ফুটবলার জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসাকে ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। ক্লোসা ২০০২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চারটি আসরে করেছিলেন মোট ১৬টি গোল। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ক্লোসা। কিন্তু দুজনের মধ্যে এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ অনেক সমর্থকদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করেছে এবং রাজনৈতিক শুদ্ধতার অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি হচ্ছে, পুরুষদের বিশ্বকাপ নারীদের টুর্নামেন্টের চেয়ে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ, কারণ যেহেতু সেখানে অনেক বেশি দল এবং বহু দশকের বিনিয়োগ এবং পেশাদারিত্ব রয়েছে সেখানে। গড় গোলের হিসাব মিরোস্লাভ ক্লোজা জার্মানির হয়ে দারুণ রেকর্ড করেন। দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলের মালিক তিনি। ১৩৭ ম্যাচ খেলে ৭১ গোল করেন তিনি যার গড় প্রতি খেলায় ০.৫১। বিশ্বকাপে তার 'সুইট সিক্সটিন' এ পৌঁছাতে ২৪টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। যার ফলে টুর্নামেন্টে তার গোল গড় দাঁড়ায় ০.৬৬। ২০১৬ সালে জার্মান এই খেলোয়াড় অবসর নেন। ব্রাজিলে বিশ্বকাপ জয়ের পর ক্লোসা এবং তার সন্তানদের ক্যামেরার সামনে পোজ মার্তার জন্য নতুন ব্রাজিলের এই নারী ফুটবলারের ১৩৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১১৯ গোলের অনানুষ্ঠানিক রেকর্ড রয়েছে-ব্রাজিলের ফুটবল কনফেডারেশন নারী দলের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। প্রতি ম্যাচে গড়ে তার গোল পরিসংখ্যান ০.৮৮। অধিকাংশ ফুটবল পরিসংখ্যান সাইট যারা মূলত বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এবং প্রীতি ম্যাচের তথ্য সংরক্ষণ করছে যেখানে ৬১ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৩৪। তাহলে তার ম্যাচ প্রতি গড় অনেক নিচে অর্থাৎ ০.৫৫। ফ্রান্স বিশ্বকাপ মার্তার জন্য পঞ্চম আসর। তার ১৭ গোল ২০টি ম্যাচ থেকে এসেছে যার গড় রেট প্রতি ম্যাচে ০.৮৫। ক্লোসা হচ্ছেন পুরুষদের বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় খেলোয়াড় যিনি অন্তত চারটি বিশ্বকাপের আসরে গোল করার নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। আর মার্তা এক্ষেত্রে অনন্য, কেননা তিনি হচ্ছেন একমাত্র যে কিনা পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করেছেন। ব্রাজিলের হয়ে ৫টি বিশ্বকাপে দলের প্রায় ৪০% গোল করেছেন মার্তা। টুর্নামেন্ট জয় ক্লোসা হয়তো একটি কৃতিত্বের জন্য গর্ব করতে পারেন: তিনি ব্রাজিলে জার্মানির ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একজন সদস্য ছিলেন। মার্তা কখনোই এই শিরোপা তুলে ধরতে পারেননি যদিও ২০০৭ সালে ব্রাজিল শিরোপার খুব কাছ গিয়েও জয় করতে পারেনি জার্মানির কাছে ফাইনালে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে -যদিও দুটো অলিম্পিক রৌপ্য মেডাল ঝুলিতে রয়েছে। দলে প্রভাব জার্মান কিংবদন্তী ক্লোসা যিনি 'পোচার' ধরনের খেলোয়াড়দের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ, যে স্ট্রাইকার যেকোনো পরিস্থিতিতে গোল বের করে আনতে পারেন। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের সতীর্থদের সেভাবে সাহায্য করতে পারেননি: ক্লোসা বিশ্বকাপে গোল তৈরিতে সহায়তা করেছেন পাঁচবারের মতো। মার্তাও একই সংখ্যক গোল তৈরি সুযোগ করে দিয়েছেন সতীর্থদের। কিন্তু দলের ভেতরে সবোর্চ্চ গোলদাতা এবং মুল প্লেমেকার হিসেবে তার প্রভাব বিশাল। ক্লোসার অংশ নেয়া চারটি বিশ্বকাপে জার্মানি ৬২টি গোল করে। আর ২০০৩ সালে মার্তার বিশ্বকাপের আসরে অভিষেক হওয়ার পর থেকে ৪৫টি গোল করেছে তার দল ব্রাজিল। তার মানে হল, নিজ দলের গোল এবং সহায়তার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ব্যাপকভাবে জড়িত। প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য পুরুষদের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের তুলনায় নারীদের আসর বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে পিছিয়ে আছে এবং অনেক দেশে তা নানা প্রতিকূলতার শিকার, যেমন ব্রাজিল ও ইংল্যান্ডের মতো দেশে নারীদের ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল বহু দশক নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৯১ সালে প্রথম মেয়েদের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়, যা ছিল মূল পুরুষদের বিশ্বকাপের ৬১ বছর পরের ঘটনা। দেশে দেশে এই খেলার অর্থায়ন এবং উন্নতির তারতম্য রয়েছে এবং বিষয়টি পুরুষদের খেলার সাথে মেয়েদের ফুটবলের ঐতিহাসিকভাবে বিশাল এক গুণগত বৈষম্য তৈরি করেছে ।যদিও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা সমান। ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির স্পোর্ট ইকনোমিকস, ফিন্যান্স এবং ম্যানেজমেন্টের লেকচারার ডক্টর নিকোলাস স্কেলস, ১৯৯০ সাল থেকে নারী এবং পুরুষ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর বিশ্লেষণ করে আসছেন প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য খুঁজে বের করতে। ১৯৯০ সালের পুরুষ ফুটবলের টুর্নামেন্ট এবং ১৯৯১ সালের নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের সম্পূর্ণ ভিন্ন মূল্যবোধ ছিল: ৯০% পুরুষদের এবং ৬৪ %ছিল নারীদের জন্য। যাইহোক, এই চিত্র ২০১৪ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে খুবই আলাদা: ৮৭% পুরুষদের জন্য এবং ৮১ % নারীদের জন্য। "আমার গবেষণার ফলাফল দেখাচ্ছে যে, ঐতিহাসিকভাবে নারীদের বিশ্বকাপ সবসময়ই পুরুষদের তুলনায় কম ভারসাম্যপূর্ণ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই বৈষম্য যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। চলতি বিশ্বকাপের মাধ্যমে নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপ আসরে খেললেন মার্তা প্রতিপক্ষের দক্ষতা এটা হয়তো সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়: কখন একটি গোল সবচেয়ে মূল্যবান? এর উত্তর নির্ভর করবে অনেক গুলো বিষয়ের ওপর যার মধ্যে আছে সময়, ফলাফল এবং প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার বিষয়। মিরোস্লাভ ক্লোসার সমালোচকরা উদাহরণ হিসেবে ২০০২ বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের কথা স্মরণ করবেন নিশ্চয়ই, যে ম্যাচে ৮-০ গোলের ব্যবধানে জিতেছিল জার্মানি। এবং সেই টুর্নামেন্টে তার বাকি দুটি গোল এসেছিল আয়ারল্যান্ড এবং ক্যামেরুনের মত দলের বিপক্ষে। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি জার্মানির জয়ে ভূমিকা রেখেছেন যেমন নক-আউট পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে (২০০৬ এবং ২০১০), ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০১০) এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে (২০১৪)। কিন্তু নারীদের খেলায় মার্তাও অনেকগুলো টুর্নামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর দেশগুলোর বিপক্ষে গোল করেছেন, যে দলটি এ পর্যন্ত প্রতিটি নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে যদিও ফ্রান্সের কাছে হেরে গেছে ব্রাজিল। ছয়বারের মত ফিফা বিশ্বসেরা পুরস্কার জয় করেছেন মার্তা যা এই ক্যাটাগরিতে যেকোন পুরুষ ফটবলারের চেয়ে বেশি। তবে কোনও কোনও বিশ্লেষক ক্লোসা এবং মার্তার তুলনাকে সহজভাবে নিচ্ছেন না। শিক্ষক স্কেলস বলেন, "আমি মার্তা এবং ক্লোসার এই তুলনার সমর্থক নই, কারণ তাদের দুজনের মদ্যে এই তুলনা সত্যিকারেই কঠিন। খেলাগুলোর সংখ্যা এবং পিচের ওপর সময় অতিবাহিত হওয়ার বিষয়টি আরও বিশদভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, খেলাগুলো ভারসাম্যপূর্ণ ছিল কিনা এবং বিভিন্ন খেলায় কখন গোলগুলো হয়েছে সেসবও পর্যবেক্ষণ করতে হবে"। তবে এই নিবন্ধের জন্য এসব বিষয় বিজ্ঞানসম্মতভাবে যাচাই করা সম্ভব নয় কিন্তু একটি দিকে মার্তা এগিয়ে ক্লোসার দিক থেকে, সেটি হল ব্যক্তিগত সম্মাননা প্রাপ্তি। কখনোই বিশ্বকাপ জয় করতে না পারলেও, ছয়বার বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মার্তা। তবে ক্লোসা যেটা কখনোই পারেননি।একদিকে ক্রিকেট প্রেমীরা যেখানে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে মাতোয়ারা, ঠিক সেসময়ই ফুটবল বিশ্বের সমর্থকরা মগ্ন ফিফা নারী ফুটবল বিশ্বকাপের একেকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচ নিয়ে। ফ্রান্সে চলছে নারী ফুটবল বিশ্বকাপের আসর এবং দলগুলোর মধ্যে এখন চলছে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াই।
ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৯: যে কারণে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার চেয়েও এগিয়ে গেলেন ব্রাজিলের নারী ফুটবলার মার্তা
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন।
বিএনপির চার জন সংসদ সদস্য সোমবার শপথ নেন হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের সময়সীমা শেষ হওয়ার ঠিক আগেন মুহূর্তে দলটির অবস্থান একেবারে উল্টোদিকে ঘুরেছে বলে নেতাদের অনেকে মনে করছেন। সোমবার বিকেলে বিএনপি'র নির্বাচিতদের চার জন শপথ নেয়ার পর তাঁরা বলেন যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই তাঁরা শপথ নিয়েছেন। এর পর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তখন তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন। কিন্তু মাত্র একদিন আগেও বিএনপি শপথ না নেয়ার আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা তুলে ধরেছিল। এমনকি তাদের নির্বাচিতদের কেউ শপথ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করাসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি আদালত পর্যন্ত যাওয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। কারাগারে খালেদা জিয়ার একবছর: কী বলছে বিএনপি? প্যারোল ও জামিনের মধ্যে পার্থক্য কী? গত ৩০শে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে যারা বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথমে ঠাকুরগাঁ-৩ আসনের জাহিদুর রহমান গত বৃহস্পতিবার যখন শপথ গ্রহণ করেন, তখন খুব দ্রুতই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল - বস্তুত পরদিনই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে হঠাৎ কেন সরে এলো, এই প্রশ্নেই এখন আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিএনপি মহাসচিব দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন কেন এই অবস্থান বদল? সংসদে যোগ দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে সংসদে কথা বলার সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংসদ ও রাজপথের সংগ্রামকে যুগপৎভাবে চালিয়ে যাওয়াকে তারা যৌক্তিক মনে করেছেন। তিনি মনে করেন, আজকে যা হবে, কালকে ঠিক তা-ই হবে এমন কোন কথা নেই, ফলে অবস্থার প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতেই পারে। তিনি এও বলেছেন যে 'গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে এবং কৌশলগত কারণে' তাদের দল এখন নতুন অবস্থান নিয়েছে। তবে কৌশলগত কারণ সম্পর্কে তিনি কোন ব্যাখ্যা দেননি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির যে বৈঠকে নির্বাচিত এমপিদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে শপথ গ্রহণ নিয়ে তাদের দল ভিন্ন ধরণের একটা সংকটের দিকে এগুচ্ছিল, আর সেজন্যই অনেকটা বাধ্য হয়ে দল অবস্থান বদল করেছে। তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিএনপি থেকে নির্বাচিত মাত্র ছয় জনের মধ্যে দলটির মহাসচিব মি. আলমগীর ছাড়া পাঁচ জনই শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার জন্য নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁরা এমন শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন যে কোনভাবেই তাদের ঠেকানো সম্ভব ছিল না। ফলে সেখানে নেতৃত্বের ব্যর্থতার প্রশ্ন আসে। একই সাথে বিএনপির এই সিনিয়র নেতারা বড় বিষয় হিসেবে যা উল্লেখ করেছেন, তাহলো - ছয় জনের পাঁচজনই যখন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদে যেতে পারেন, তখন তাদের দল থেকে বহিষ্কারের পর আইনগত লড়াইয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। কিন্তু তাঁরা বিএনপির সদস্য হিসেবেই সংসদে থাকবেন। সেই প্রেক্ষাপটে তাদের ওপর বিএনপির দলীয় কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এটিকেই দলটির নেতৃত্ব ভিন্ন ধরণের সংকট হিসেবে দেখেছেন। ফলে তাদের ঠেকানোর জন্য দলের নেতৃত্বের সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন বিএনপি ওই সদস্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করতে চায়নি। আর সেজন্য বিএনপি শেষপর্যন্ত তাদের সদস্যদের সংসদে যাওয়ার বিষয়টিকে অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া, বিএনপির সিনিয়র ওই নেতারা আরও জানিয়েছেন যে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও একটা চাপ ছিল। ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি: সমঝোতা হচ্ছে? মি. আলমগীর যদিও বলেছেন যে তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবির সাথে সংসদে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই, তবে সংসদে যোগ দেয়া পাঁচজনের মধ্যে হারুনুর রশীদ প্রথম দিনেই অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে তাদের সংসদে অংশ নেয়ার বিনিময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন। এই ইস্যুতে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি-না, এমন একটা গুঞ্জনও উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা এই বিষয়ে উদ্ধৃত হতে একেবারেই আগ্রহী নন। তবে নাম প্রকাশ ন করার শর্তে একজন সিনিয়র নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, এটি তারা বিশ্বাস করেন। কিন্তু কোনো সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, সেটাও তারা দেখাতে চান না - এতে তাদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি হবে বলে দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন। তাদের বক্তব্য হলো, বিএনপি নেত্রী প্যারোলে বা কোন শর্তে নয়, বরং আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাবেন, এটি তারা তাদের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের দেখাতে চান। আইনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তাঁরা এখন সংসদের ভিতরে এবং বাইরে দলের একটা সক্রিয় অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। অন্যদিকে, সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে, সোমবার দুপুরে, ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মি. আলমগীর খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বেশ আবেগপ্রবণ বক্তব্য দেন। "আমি নিজে দেখেছি তাকে। তিনি এখন বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, তাকে সাহায্য করতে হয়। তিনি হাঁটতে পারেন না, খেতে পারেন না। তাঁর শরীর একদম ভালো নেই" - এমন ছিল বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিএনপি কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিলো? এই প্রশ্নে দলটিতে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে বলে মনে হচ্ছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। তবে দলটির অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা মনে করেন, এতদিন শপথ না নেয়ার কঠোর অবস্থান তুলে ধরার পর দল একেবারে উল্টোদিকে ঘুরেছে, যা মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা প্রভাব ফেলবে। তাদের মতে, পানি অনেক ঘোলা না করে বেশ আগে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। আর বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর এবং সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় দলটির নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, হঠাৎ দলের এই সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বেশ অবাক হয়েছেন। দলে কী প্রভাবফেলবে? বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন যে সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়টি দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে নতুন করে এক ধরণের হতাশা তৈরি করতে পারে বলে তাদের ধারণা। তাঁরা মনে করেন, দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি মাঠ-পর্যায়ের নেতাদের একটা নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিতে পারে, যদিও নির্বাচিতরা তাদের নির্বাচনী এলাকার মানুষের চাওয়া বা চাপের বিষয়কে শপথ গ্রহণ করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন দলের কাছে। কিন্তু বিএনপির নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল গণফোরামের নির্বাচিত দু'জন সংসদ সদস্য যখন শপথ নিয়েছিলেন, তখন বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিল। এ নিয়ে এমনকি জোটে টানাপোড়েনও দেখা দিয়েছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এছাড়া, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বহু বৈঠক হয়েছিল এই ইস্যুতে। সব বৈঠকেই সংসদে না যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে ওই কমিটির একাধিক সদস্য বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে যে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে সংসদে যাওয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূলের একটি বড় অংশের অবস্থান ছিল। তাঁরা মনে করেন, হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে মানুষের মধ্যেও তাদের দল ভাবমূর্তির একটা সংকটে পড়বে। শেষমুহুর্তে যেহেতু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে, ফলে দলে ভিন্নমত থাকলেও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার কিছু নেই বলেও মনে করছেন ভিন্নমত পোষণকারী নেতাদের অনেকেই। তবে এরপরও দলে একটা নেতিবাচক প্রভাব বা চাপা ক্ষোভ থেকে যাবে এবং তা কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময় লাগবে বলে বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করছেন। দলের ভিতরের ক্ষোভ কিভাবে সামাল দেবে বিএনপি বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, সংসদে যারা গেছেন, তাদের এখন অধিবেশনে দলীয় ইস্যুগুলো নিয়ে জোরালো অবস্থান নিতে হবে এবং সেই বার্তাই তাদের দেয়া হয়েছে। সংসদের বাইরেও দলটি এখন রাজপথের কর্মসূচি অব্যাহত রেখে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার চেষ্টা চালাবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এভাবে যদি একটা অবস্থান তুলে ধরা যায়, তখন দলের ভিতরে বিতর্ক বা ক্ষোভ - সবকিছুর অবসান হবে বলে নেতৃত্ব মনে করছে। তবে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হলে তখন দলে আবার স্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে। ফলে এখন সংসদের ভেতরে এবং বাইরে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়কেই একমাত্র ইস্যু হিসেবে নেয়ার চিন্তা দলটির নেতৃত্বের একটা অংশে রয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কবে শপথ নেবেন? মি. আলমগীর নিজে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে বিএনপিতে তাঁর ঘনিষ্ট একজন নেতা জানিয়েছেন, নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মি. আলমগীর একাই নির্বাচিত হয়েছেন, ফলে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনেকে তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারও কারও সাথে তাঁর টানাপোড়েনও সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির সব সদস্যই শপথ নেয়ার বিপক্ষে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। ফলে এখন সংসদে যাওয়ায় মি. আলমগীরের সাথে তাদের সেই টানাপোড়েন বাড়তে পারে। দলটির আরেকজন নেতা বলেছেন, যেহেতু মি. আলমগীর দলের পক্ষে এতদিন কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে আসছিলেন, ফলে এখন তিনিও একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন। তিনি বলেন, দলের স্রোতের বিপরীতে সংসদে গিয়ে যে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন হবে, সেটা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েও তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ওই নেতা জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তারেক রহমানের হলেও মি. আলমগীর তাদের দু'একজন নেতাকে জানিয়েছেন যে, বিষয়টাতে তাঁর ব্যক্তিগতভাবেও সিদ্ধান্ত নেয়ার একটা বিষয় আছে। আর সে কারণেই এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: জার্সি বিতর্ক: 'আইসিসির জন্যই লাল বাদ দিতে হয়েছে' বাংলাদেশের রাজধানী কি ঢাকার বাইরে নিতে হবে? ২০০ বছরে প্রথম সিংহাসন ছাড়ছেন কোন জাপান সম্রাট
সংসদে বিএনপি: যে সংকট এড়াতে তারেক রহমানের হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন।
ইন্দিরা গান্ধী। ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর শহরের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর বেশ কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তবে বেশিরভাগ স্মৃতিই আনন্দের নয়। এই শহরেই তার বাবা জওহরলাল নেহরু প্রথমবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারপরেই ১৯৬৪ সালের মে মাসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনী প্রচারে এই শহরেই ইন্দিরা গান্ধীর দিকে একটা পাথর ছোঁড়া হয়েছিল, যাতে তার নাক ফেটে গিয়েছিল। সেই ভুবনেশ্বর শহরেই ১৯৮৪ সালের ৩০শে অক্টোবর জীবনের শেষ ভাষণটা দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। প্রতিটা ভাষণের মতোই ওই ভাষণও লিখে দিয়েছিলেন মিসেস গান্ধীর মিডিয়া উপদেষ্টা এইচ ওয়াই শারদা প্রসাদ। কিন্তু ভাষণ দিতে দিতে হঠাৎই লেখা বয়ান থেকে সরে গিয়ে নিজের মতো বলতে শুরু করেন ইন্দিরা। তার বলার ধরনও পাল্টে গিয়েছিল সেদিন। তিনি বলেছিলেন, "আমি আজ এখানে রয়েছি। কাল নাও থাকতে পারি। এটা নিয়ে ভাবি না যে আমি থাকলাম কী না। অনেকদিন বেঁচেছি। আর আমার গর্ব আছে যে আমি পুরো জীবনটাই দেশের মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে পেরেছি বলে। আর শেষ নিশ্বাসটা নেওয়া পর্যন্ত আমি সেটাই করে যাব। আর যেদিন মরে যাব, আমার রক্তের প্রতিটা ফোঁটা ভারতকে আরও মজবুত করার কাজে লাগবে।" কখনও কখনও বোধহয় শব্দের মাধ্যমেই নিয়তি ভবিষ্যতের একটা ইশারা দিয়ে দেয়। ভাষণের শেষে যখন মিসেস গান্ধী রাজ্যপালের আবাস রাজভবনে ফিরেছেন, তখন রাজ্যপাল বিশ্বম্ভরনাথ পান্ডে তাকে বলেছিলেন, "একটা রক্তাক্ত মৃত্যুর কথা বলে আপনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন।" "আমি যা বলেছি, তা নিজের মনের কথা। এটা আমি বিশ্বাস করি," জবাব দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সেই রাতেই দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। খুব ক্লান্ত ছিলেন। সারা রাত প্রায় ঘুমান নি। দুই পুত্রের সাথে ইন্দিরা গান্ধী। পাশের ঘরে সোনিয়া গান্ধী ঘুমচ্ছিলেন। ভোর প্রায় চারটে নাগাদ শরীরটা খারাপ লাগছিল সোনিয়ার। বাথরুমের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে ওষুধও রাখা থাকত। সোনিয়া গান্ধী নিজের বই 'রাজীব'-এ লিখেছেন, "উনিও আমার পেছন পেছন বাথরুমে চলে এসেছিলেন। ওষুধটা খুঁজে দিয়ে বলেছিলেন, শরীর বেশী খারাপ লাগলে যেন একটা আওয়াজ দিই। উনি জেগেই আছেন।" সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। কালো পাড় দেওয়া একটা গেরুয়া রঙের শাড়ি পড়েছিলেন মিসেস গান্ধী সেদিন। দিনের প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্টটা ছিল পিটার উস্তিনভের সঙ্গে। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর ওপরে একটা তথ্যচিত্র বানাচ্ছিলেন সেই সময়ে। আগের দিন ওড়িশা সফরের সময়েও তিনি শুটিং করেছিলেন। দুপুরে মিসেস গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জেমস ক্যালিঘান আর মিজোরামের এক নেতার সঙ্গে। সন্ধেবেলায় ব্রিটেনের রাজকুমারী অ্যানের সম্মানে একটা ডিনার দেওয়ার কথা ছিল মিসেস গান্ধীর। তৈরি হয়েই ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসেছিলেন তিনি। দুটো পাউরুটি টোস্ট, কিছুটা সিরিয়াল, মুসাম্বির জুস আর ডিম ছিল সেদিনের ব্রেকফাস্টে। জলখাবারের পরেই মেকআপ ম্যান তার মুখে সামান্য পাউডার আর ব্লাশার লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তখনই হাজির হন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার কে পি মাথুর। রোজ ওই সময়েই মিসেস গান্ধীকে পরীক্ষা করতে যেতেন তিনি। ভেতরে ডেকে নিয়েছিলেন ডাক্তার মাথুরকে। হাসতে হাসতে বলেছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান কী রকম অতিরিক্ত মেকআপ করেন, যখন ৮০ বছর বয়সেও তার মাথার বেশির ভাগ চুল কালোই রয়েছে। তথ্যচিত্র নির্মাতা পিটার উস্তিনভ। আরো পড়তে পারেন: যেভাবে কেটেছিল দিল্লিতে শেখ হাসিনার সেই দিনগুলো যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো শেখ মুজিবকে ওসামা বিন লাদেনের জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টা ঘড়িতে যখন ন'টা বেজে দশ মিনিট, ইন্দিরা গান্ধী বাইরে বের হলেন। বেশ রোদ ঝলমলে দিনটা। তবুও রোদ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আড়াল করতে সেপাই নারায়ণ সিং একটা কালো ছাতা নিয়ে পাশে পাশে হাঁটছিলেন। কয়েক পা পেছনেই ছিলেন ব্যক্তিগত সচিব আর কে ধাওয়ান আর তারও পেছনে ছিলেন ব্যক্তিগত পরিচারক নাথু রাম। সকলের পেছনে আসছিলেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার, সাব ইন্সপেক্টর রামেশ্বর দয়াল। ঠিক সেই সময়েই সামনে দিয়ে এক কর্মচারী হাতে একটা চায়ের সেট নিয়ে পেরিয়ে গিয়েছিলেন। ওই চায়ের সেটে তথ্যচিত্র নির্মাতা পিটার উস্তিনভকে চা দেওয়া হয়েছিল। ওই কর্মচারীকে ডেকে ইন্দিরা বলেছিলেন মি. উস্তিনভের জন্য যেন অন্য আরেকটা চায়ের সেট বার করা হয়। বাসভবনের লাগোয়া দপ্তর ছিল আকবর রোডে। দুটি ভবনের মধ্যে যাতায়াতের একটা রাস্তা ছিল। সেই গেটের সামনে পৌঁছে ইন্দিরা গান্ধী তার সচিব আর কে ধাওয়ানের সঙ্গে কথা বলছিলেন। মি. ধাওয়ান তাকে বলছিলেন যে ইন্দিরার নির্দেশমতো ইয়েমেন সফররত রাষ্ট্রপতি গিয়ানী জৈল সিংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি সন্ধ্যে সাতটার মধ্যেই দিল্লি চলে আসেন। পালাম বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে রিসিভ করে সময়মতো যাতে রাজকুমারী অ্যানের ভোজসভায় পৌঁছাতে পারেন ইন্দিরা, সেই জন্যই ওই নির্দেশ। হঠাৎই পাশে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মী বিয়ন্ত সিং রিভলবার বার করে ইন্দিরা গান্ধীর দিকে গুলি চালায়। প্রথম গুলিটা পেটে লেগেছিল। ইন্দিরা গান্ধী ডান হাতটা ওপরে তুলেছিলেন গুলি থেকে বাঁচতে। তখন একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে বিয়ন্ত সিং আরও দুবার গুলি চালায়। সে-দুটো গুলি তার বুকে আর কোমরে লাগে। ওই জায়গার ঠিক পাঁচ ফুট দূরে নিজের টমসন অটোমেটিক কার্বাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সতবন্ত সিং। ইন্দিরা গান্ধী। আরো পড়তে পারেন: একাত্তরে পরাজয়ের আগের দিনগুলোতে ইয়াহিয়া খান জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক জীবনের কিছু অজানা কথা সাদ্দামের ফাঁসির সময়ে কেঁদেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যরা ইন্দিরা গান্ধীকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে সতবন্ত বোধহয় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল। স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই বিয়ন্ত চিৎকার করে সতবন্তকে বলে 'গুলি চালাও।' সতবন্ত সঙ্গে সঙ্গে নিজের কার্বাইন থেকে চেম্বারে থাকা ২৫টা গুলিই ইন্দিরা গান্ধীর শরীরে গেঁথে দিয়েছিল। বিয়ন্ত সিং প্রথম গুলিটা চালানোর পরে প্রায় ২৫ সেকেন্ড কেটে গিয়েছিল ততক্ষণে। নিরাপত্তা কর্মীরা ওই সময়টায় কোনও প্রতিক্রিয়া দেখান নি, এতটাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন সবাই। তারপরে সতবন্ত সিং গুলি চালাতে শুরু করতেই একদম পিছনে থাকা নিরাপত্তা অফিসার রামেশ্বর দয়াল দৌড়ে এগিয়ে আসেন। সতবন্ত তখন একনাগাড়ে গুলি চালিয়ে যাচ্ছেন। মি. দয়ালের উরু আর পায়েও গুলি লাগে। সেখানেই পড়ে যান তিনি। ইন্দিরা গান্ধীর আশপাশে থাকা অন্য কর্মচারীরা ততক্ষণে একে অন্যকে চিৎকার করে নির্দেশ দিচ্ছেন। ওদিকে এক নম্বর আকবর রোডের ভবন থেকে পুলিশ অফিসার দিনেশ কুমার ভাট এগিয়ে আসছিলেন শোরগোল শুনে। বিয়ন্ত সিং আর সতবন্ত সিং তখনই নিজেদের অস্ত্র মাটিতে ফেলে দিয়েছে। বিয়ন্ত বলেছিল, "আমাদের যা করার ছিল, সেটা করেছি। এবার তোমাদের যা করার করো।" ইন্দিরার আরেক কর্মচারী নারায়ণ সিং সামনে লাফিয়ে পড়ে বিয়ন্ত সিংকে মাটিতে ফেলে দেন। পাশের গার্ডরুম থেকে বেরিয়ে আসা ভারত- তিব্বত সীমান্ত পুলিশ বা আই টি বি পির কয়েকজন সদস্য দৌড়ে এগিয়ে এসে সতবন্ত সিংকেও ঘিরে ফেলে। সবসময়ে একটা অ্যাম্বুলেন্স রাখা থাকত ওখানে। ঘটনাচক্রে সেদিনই অ্যাম্বুলেন্সের চালক কাজে আসেন নি। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মাখনলাল ফোতেদার চিৎকার করে গাড়ি বার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মাটিতে পড়ে থাকা ইন্দিরাকে ধরাধরি করে সাদা অ্যাম্বাসেডর গাড়ির পিছনের আসনে রাখেন আর কে ধাওয়ান আর নিরাপত্তা কর্মী দিনেশ ভাট। ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি। সামনের আসনে, ড্রাইভারের পাশে চেপে বসে পড়েন মি. ধাওয়ান আর মি. ফোতেদার। গাড়ি যেই চলতে শুরু করেছে, সোনিয়া গান্ধী খালি পায়ে, ড্রেসিং গাউন পরে 'মাম্মি, মাম্মি' বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে আসেন। ইন্দিরা গান্ধীকে ওই অবস্থায় দেখে সোনিয়া গান্ধীও গাড়ির পিছনের আসনে চেপে পড়েন। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল ইন্দিরা গান্ধীর শরীর। সোনিয়া তার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেন। খুব জোরে গাড়িটা 'এইমস' বা অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সের দিকে এগোতে থাকে। চার কিলোমিটার রাস্তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই পেরিয়ে যায়। সোনিয়া গান্ধীর ড্রেসিং গাউনটা ততক্ষণে ইন্দিরা গান্ধীর রক্তে পুরো ভিজে গেছে। ওই গাড়িটা 'এইমস'এ ঢুকেছিল ন'টা ৩২ মিনিটে। ইন্দিরা গান্ধীর রক্তের গ্রুপ ছিল ও নেগেটিভ। ওই গ্রুপের যথেষ্ট রক্ত মজুত ছিল হাসপাতালে। কিন্তু সফদরজং রোডের বাসভবন থেকে কেউ ফোন করে হাসপাতালে খবরও দেয় নি যে ইন্দিরা গান্ধীকে গুরুতর আহত অবস্থায় এইমস-এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জরুরী বিভাগের দরজা খুলে গাড়ি থেকে ইন্দিরা গান্ধীকে নামাতে মিনিট তিনেক সময় লেগেছিল। কিন্তু সেখানে তখন কোনও স্ট্রেচার নেই। কোনওরকমে একটা স্ট্রেচার যোগাড় করা গিয়েছিল। গাড়ি থেকে তাকে নামানোর সময়ে ওই অবস্থা দেখে সেখানে হাজির ডাক্তাররা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তার ব্যক্তিগত সচিব আর কে ধাওয়ান। ফোন করে সিনিয়র কার্ডিয়োলজিস্টদের খবর দেওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডাক্তার গুলেরিয়া, ডাক্তার এম এম কাপুর আর ডাক্তার এস বালারাম ওখানে পৌঁছে যান। ইসিজি করা হয়েছিল, কিন্তু তার নাড়ীর স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। চোখ স্থির হয়ে গিয়েছিল। বোঝাই যাচ্ছিল যে মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। একজন চিকিৎসক মুখের ভেতর দিয়ে একটা নল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যাতে ফুসফুস পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে। মস্তিষ্কটা চালু রাখা সবথেকে প্রয়োজন ছিল তখন। ৮০ বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীকে। শরীরে যে পরিমাণ রক্ত থাকে, এটা ছিল তার প্রায় ৫ গুণ। ডাক্তার গুলেরিয়া বলছেন, "আমি তো দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম যে উনি আর নেই। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইসিজি করতে হয়েছিল। তারপরে আমি ওখানে হাজির স্বাস্থ্যমন্ত্রী শঙ্করানন্দকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এখন কী করণীয়? ঘোষণা করে দেব আমরা যে উনি মৃত? তিনি না বলেছিলেন। তখন আমরা মিসেস গান্ধীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই।" চিকিৎসকরা 'হার্ট এন্ড লাং মেশিন' লাগিয়েছিলেন ইন্দিরার শরীরে। ধীরে ধীরে তার শরীরে রক্তের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি থেকে কমে ৩১ ডিগ্রি হয়ে গেল। তিনি যে আর নেই, সেটা সকলেই বুঝতে পারছিল, কিন্তু তবুও 'এইমস'এর আটতলার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। চিকিৎসকেরা দেখেছিলেন যে যকৃতের ডানদিকের অংশটা গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বৃহদান্ত্রের বাইরের অংশটা ফুটো হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্রেরও। ফুসফুসের একদিকে গুলি লেগেছিল আর পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল গুলির আঘাতে। তবে হৃৎপিণ্ডতে কোনও ক্ষতি হয় নি। দেহরক্ষীদের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর, দুপুর দুটো ২৩ মিনিটে ইন্দিরা গান্ধীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি প্রচারমাধ্যমে সেই ঘোষণা করা হয়েছিল সন্ধ্যা ছ'টার সময়ে। ইন্দিরা গান্ধীর শেষকৃত্য। ইন্দিরা গান্ধীর জীবনীকার ইন্দর মালহোত্রা বলছেন, গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে মিসেস গান্ধীর ওপরে এরকম একটা হামলা হতে পারে। তারা সুপারিশ পাঠিয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রীর আবাস থেকে সব শিখ নিরাপত্তা-কর্মীদের যেন সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সেই ফাইল যখন ইন্দিরা গান্ধীর টেবিলে পৌঁছায়, তখন ভীষণ রেগে গিয়ে তিনি নোট লিখেছিলেন, "আরন্ট উই সেকুলার?" অর্থাৎ, "আমরা না ধর্মনিরপেক্ষ দেশ?" এরপরে ঠিক করা হয়েছিল যে একসঙ্গে দু'জন শিখ নিরাপত্তা-কর্মীকে প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি ডিউটি দেওয়া হবে না। ৩১শে অক্টোবর সতবন্ত সিং বলেছিল যে তার পেট খারাপ। তাই তাকে শৌচালয়ের কাছাকাছি যেন ডিউটি দেওয়া হয়। এইভাবেই বিয়ন্ত আর সতবন্ত সিংকে একই জায়গায় ডিউটি দেওয়া হয়েছিল। যার পরিণতিতে স্বর্ণ মন্দিরে সেনা অপারেশন - 'অপারেশন ব্লুস্টার'এর বদলা নিয়েছিল তারা প্রধানমন্ত্রীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ড: যেভাবে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল দুই দেহরক্ষী
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
পাকিস্তান সেনাপ্রধান জে. কামার রশীদ বাজওয়া ফলে, পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার রশীদ বাজওয়া যখন বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে নিরাপত্তা সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানে "অতীতের বিরোধকে কবর দিয়ে" ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রীতির কথা বললেন, "শান্তিপূর্ণ উপায়ে" কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানের কথা বললেন - স্বভাবতই তা অনেকের নজর কেড়েছে। জেনারেল বাজওয়াই শুধু নয়, তার আগের দিন ঐ একই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ভারতের সাথে তার দেশের সাথে শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, আঞ্চলিক শান্তি থাকলেই ভারত মধ্য এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রী খান এবং সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার কথার প্রতিধ্বনি করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীও। ইসলামাবাদের ঐ নিরাপত্তা সম্মেলনে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পর তার ভাষণে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের সরকার ভারতের সাথে "বিরোধের বদলে সহাবস্থান এবং সহযোগিতার" সম্পর্কে ইচ্ছুক। আরো পড়তে পারেন: ভারত-পাকিস্তানের সামরিক শক্তির পার্থক্য কতটা? উত্তেজনা-সংঘাতের পর কাশ্মীরের সর্বশেষ যে অবস্থা ভারতের স্বার্থে পাকিস্তান-বিরোধী ভুয়া প্রচারণা ও একজন মৃত অধ্যাপক 'পাকিস্তান - ভারত পরমাণু যুদ্ধ ২০২৫ সালে' জঙ্গী মদতের যে সব অভিযোগকে ঘিরে ফের সংঘাতে ভারত-পাকিস্তান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ নিয়ে খুবই ক্ষিপ্ত তিনি 'অতীততে কবর দিয়ে দুই দেশের উচিৎ সামনে তাকানো' তবে প্রধান নজর পড়েছে জেনারেল বাজওয়ার বক্তব্যের দিকে। তার ভাষণে ভারত নিয়ে অনেক কথা ছিল। "দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ায় মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে এই দুই অঞ্চলের সমৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজ লাগাতে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত এই দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরোধে সেই সম্ভাবনা জিম্মি হয়ে রয়েছে।" জেনারেল বাজওয়া স্বীকার করেন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে বৈরিতার মূলে রয়েছে কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ। "কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি অতীততে কবর দিয়ে দুই দেশের উচিৎ সামনে তাকানো।" তিনি বলেন - কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হলে উপমহাদেশের শান্তি এবং বোঝাপড়া "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বোলচালের ঝুঁকিতে থেকে যাবে।" জেনারেল বাজওয়া বলেন, ভারতের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তানের এই নীতিগত সিদ্ধান্তের পেছনে "কোনো চাপ নেই" বরঞ্চ রয়েছে "বাস্তব যুক্তি"। কেন এখন এই অলিভ ব্রাঞ্চ? পাকিস্তানের মহা-ক্ষমতাধর সেনাপ্রধানের এই ভাষণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানে শুরু হয়েছে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ - কেন জেনারেল বাজওয়া এখন ভারতের উদ্দেশ্যে জলপাইয়ের ডাল (অলিভ ব্রাঞ্চ) নাড়াচ্ছেন ? তার কথায় কতটুকু ভরসা করা যায়? ভারতের বিজেপি সরকার কতটা সাড়া দেবে? তাদের মনোভাব কী? কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার পাহারায় এক পাকিস্তানি সৈন্য লন্ডনে সোয়াস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির গবেষক এবং পাকিস্তান রাজনীতির বিশ্লেষক ড. আয়েশা সিদ্দিকা বিবিসি বাংলাকে বলেন, পাকিস্তান সেনাপ্রধান এবং ক্ষমতাসীন সরকারের এসব ইঙ্গিতের টার্গেট ভারত যতটা তার চেয়ে বেশি আমেরিকা। "আর এই বার্তার পেছনে সবচেয়ে প্রধান যে তাড়না তা হলো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক তাড়না।" ড. সিদ্দিকা বলেন, "পাকিস্তান বুঝতে পারছে যে, আমেরিকার প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের নীতিতে তারা অনুপস্থিত। ভারত সেখানে মধ্যমণি। সেটা অবশ্যই পাকিস্তানের বড় মাথাব্যথা।" "সেজন্য খেয়াল করবেন - জেনারেল বাজওয়া বলেছেন চীনের সাথে তাদের অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) অর্থ এই নয় যে পাকিস্তান শুধু সেটির ওপরই ভরসা করছে।" পাকিস্তান সেনাপ্রধান বৃহস্পতিবার বলেছেন যদিও আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সিপিইসি এখন পাকিস্তানের বড় অগ্রাধিকার, কিন্তু "শুধু সিপিইসির কাঁচ দিয়ে পাকিস্তানকে দেখা ঠিক নয়।" ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস নতুন নয় ড. সিদ্দিকা বলেন, চীন পাকিস্তানের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে ৪৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে ঠিকই কিন্তু তার সবটাই দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, নগদ কোনো অর্থ নয়। ঋণের এই টাকা শোধ দেওয়া নিয়েও এক ধরণের উদ্বেগ রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের নগদ অর্থের সঙ্কট বেড়েছে। সম্পর্ক চটে যাওয়ায় ইউএই, সৌদি আরব তাদের ঋণের টাকা ফেরত চাইছে। আমেরিকার কাছ থেকে যে নগদ অর্থ আসতো তাতেও ঘাটতি পড়েছে। ড. সিদ্দিকা বলছেন, "যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও অত্যন্ত প্রয়োজন পাকিস্তানের। আইএমএফের টাকা নিতেও আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠতা দরকার। পশ্চিমা বিনিয়োগের জন্য এখনও আমেরিকার সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক। চীন সম্প্রতি পাকিস্তানের তৈরি পোশাকের জন্য বাজার খুলে দিয়েছে, কিন্তু এখনও পাকিস্তানের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।" তাছাড়া, তিনি বলেন, সম্পর্ক ভালো হলে ভারতের বিশাল বাজারও পাকিস্তানের জন্য বিরাট সুযোগ তৈরি করবে। ভারত কতটা ইচ্ছুক? কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার পাকিস্তানের সাথে বিরোধ মেটাতে কতটা ইচ্ছুক? জেনারেল বাজওয়ার কথার ওপরই বা তারা কতটা ভরসা করতে পারে? ড. আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যে জেনারেল বাজওয়া কি তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার কথা বলছেন নাকি পাকিস্তানের সেনা নেতৃত্বের বৃহত্তর অংশের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন। ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের এক বড় কারণ কাশ্মীর "জেনারেল বাজওয়ার চাকরির মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। তাছাড়া পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডাররা কি চাইছেন বা এমনকি কর্নেল র‌্যাঙ্কের মধ্য-সারির সেনা অফিসাররা কি চাইছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। তারা কাশ্মীরের কোন ধরনের সমাধান দেখতে চান তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।" ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার মূলে রয়েছে কাশ্মীর। মোদী সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের পর সেই বৈরিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাহলে জেনারেল বাজওয়া কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের যে কথা বলছেন তা কীভাবে হতে পারে? ড.আয়েশা সিদ্দিকা মনে করেন, জেনারেল বাজওয়ার হাতে কাশ্মীর নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশাররফের ফর্মুলার পুনরুত্থান করা ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প নেই। "ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত অংশে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে জেনারেল মুশাররফের সাথে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। জেনারেল কায়ানি (তৎকালীন পাকিস্তান সেনাপ্রধান) সেই বোঝাপড়া নস্যাৎ করে দেন।" কাশ্মীর বিভক্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা বা এল ও সি দিয়ে ড. সিদ্দিকা বলেন, ভারত কাশ্মীরের সমাধানে ইচ্ছুক কারণ চীনের সাথে বিরোধ বাড়ায় কাশ্মীর সীমান্তে চাপ কমলে তা তাদের স্বার্থের পক্ষে যাবে। কিন্তু, তিনি বলেন, "পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে, রাজনীতিকদের মধ্যে কাশ্মীরের সমাধান নিয়ে ঐক্যমত্য কতটা - সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।" সে কারণেই ড. সিদ্দিকা মনে করেন, ভারত বা আমেরিকা জে. বাজওয়ার কথায় উৎসাহিত বোধ করলেও তারা হয়ত এখন বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। 'বল এখন ভারতের কোর্টে' পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাভেদ জব্বার বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্য একবারে নতুন কিছু নয়। "জেনারেলের বক্তব্যকে এমনভাবে বিশ্লেষণ করা উচিৎ হবে না যে ভারতের বর্তমান হিন্দুত্বাবাদী সরকারের আগ্রাসনবাদী আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাকিস্তানের সন্দেহ ঘুচে গেছে।“ তিনি বলেন, পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা নিরসনে ভারতের ওপরও চাপ রয়েছে বাইডেন সরকারের। "পাকিস্তান সবসময় ভারতের সাথে শর্তহীন আলোচনা চেয়েছে। সরাসরি বলেছে, পর্দার অন্তরালেও বলেছে। জেনারেল বাজওয়া তার পুনরাবৃত্তি করলেন। বল এখন ভারতের কোর্টে।" আরো খবর: 'তলাবিহীন ঝুড়ি' থেকে যেভাবে উন্নয়শীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ আকরাম খানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুললেন সাকিব আল হাসান মোদীকে কটাক্ষ করার অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ে কিশোর আটক জামালগঞ্জে মামুনুল হকের মাহফিল আটকে দিলো প্রশাসন
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার রশীদ বাজওয়া ভারতকে হঠাৎ কেন 'অলিভ ব্রাঞ্চ' দেখালেন ?
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন।
ভারতে প্রথম জীবন রক্ষাকারী বোন কাভ্যিয়া সোলাঙ্কি। কাভ্যিয়া সোলাঙ্কির জন্ম ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। এবছরের মার্চ মাসে, তার বয়স যখন দেড় বছর, তার দেহ থেকে অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে সেটা তার সাত বছর বয়সী বড় ভাই অভিজিৎ-এর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। অভিজিৎ থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছিল। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি দেখা দেয় যার ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায়। একারণে অভিজিৎকে প্রচুর রক্ত দিতে হতো। "২০/২২ দিন পর পর তাকে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত দেওয়ার দরকার হতো। তার বয়স ছয় বছরে পৌঁছানোর আগেই তাকে ৮০ বার রক্ত দেওয়া হয়," বলেন তার পিতা সাহদেভসিন সোলাঙ্কি। এই পরিবারটি থাকে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সবচেয়ে বড় শহর আহমেদাবাদে। তিনি বলেন, "আমার বড় কন্যার পর অভিজিৎ-এর জন্ম হয়। আমরা খুব সুখী একটা পরিবার ছিলাম। তার বয়স যখন মাত্র ১০ মাস তখন আমরা জানতে পারলাম যে সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমরা সবাই ভেঙে পড়লাম। সে খুব দুর্বল ছিল। তার রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ করতো না এবং এর ফলে সে প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়তো।" "আর যখন আমি জানতে পারলাম যে এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই তখন আমার কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে গেল," বলেন. মি সোলাঙ্কি। যেভাবে শুরু কী কারণে তার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে সেটা বোঝার জন্য তিনি এই অসুখের ওপর প্রচুর লেখাপড়া করতে শুরু করেন। একই সঙ্গে এর কী ধরনের চিকিৎসা আছে সেটা জানতেও তিনি মোটামুটি গবেষণা চালান এবং এবিষয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন এই রোগ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য একটি চিকিৎসা আছে আর সেটি হলো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। তখন তিনি এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিতে লাগলেন। কিন্তু সমস্যা হলো এই পরিবারের আরো যারা সদস্য আছে তাদের কারো অস্থিমজ্জার সঙ্গে অভিজিৎ-এর অস্থিমজ্জা ম্যাচ করছিল না। এমনকি তার বড় বোনের সাথেও মিল পাওয়া গেল না। অভিজিৎ-কে ২০/২২ দিন পর পর রক্ত দিতে হতো। অভিজিৎ এর পিতা ২০১৭ সালে একটি লেখা পড়েন যেখানে "জীবন রক্ষাকারী ভাই বোনের" কথা বলা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে কারো শরীরে অঙ্গ, কোষ বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য উপযোগী করে ওই ব্যক্তির ভাই কিম্বা বোনের জন্ম দেওয়ার কথা এবং তাদেরকে "জীবন রক্ষাকারী ভাই বোন" বলা হয়। তখন তিনি এবিষয়ে আরো বেশি কৌতূহলী হন এবং পরে ভারতের একজন প্রখ্যাত ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. মনীষ ব্যাঙ্কারের শরণাপন্ন হলেন। সন্তান অভিজিৎ-এর চিকিৎসার জন্য থ্যালাসেমিয়া-মুক্ত ভ্রূণ তৈরির জন্য তিনি তখন ওই চিকিৎসককে চাপ দিতে লাগলেন। মি. সোলাঙ্কি বলেন, তারা "জীবন রক্ষাকারী ভাই বোন" জন্ম দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন কারণ তাদের কাছে এছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। কাভ্যিয়ার জন্ম একটি হাসপাতাল থেকে সোলাঙ্কির পরিবারকে বলা হলো যে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য ম্যাচ করে এরকম একটি টিস্যুর সন্ধান তারা পেয়েছেন, তবে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে। এর পেছনে খরচও পড়বে খুব বেশি- ৫০ লাখ থেকে এক কোটি রুপি। এছাড়াও দাতা যেহেতু অভিজিৎ-এর কোন আত্মীয় নয় সেকারণে তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বিজ্ঞানের যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাভ্যিয়াকে জন্ম দেওয়া হয়েছে তাকে বলা হয় প্রি-ইমপ্ল্যানটেশন জেনেটিক ডায়াগনোসিস। এই পদ্ধতিতে প্রথমে ভ্রূণ পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তাতে কোন রোগ আছে কিনা, থাকলে এর জন্য দায়ী জিনটিকে শনাক্ত করে তার ত্রুটি সংশোধন করা হয়। মি. সোলাঙ্কি বলেছেন, কাভ্যিয়াকে তিনি এখন সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। আরো পড়তে পারেন: রক্ত দেয়ার আগেই জেনে নিন কিছু জরুরি তথ্য জিন সম্পাদনা কি বদলে দেবে ভবিষ্যতের মানব শিশুকে জিনগত পরিবর্তন-ঘটানো মানবশিশু তৈরি করা কি উচিত? চীনে মায়ের গর্ভস্থ শিশুর জিন পাল্টে দেয়ার দাবি ভারতে এই প্রযুক্তিটি গত কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই প্রথম এর সাহায্যে সেদেশে "জীবন রক্ষাকারী বোন" এর জন্ম দেওয়া হলো। ড. ব্যাঙ্কার বলেছেন, ভ্রূণ তৈরি করা, স্ক্রিনিং করা এবং অভিজিৎ-এর সঙ্গে সেটি ম্যাচ করে কিনা - এসব পরীক্ষা করে দেখতে তার ছয় মাসের মতো সময় লেগেছিল। তার পর সব কিছু যখন ঠিকঠাক মতো হলো তখন সেই ভ্রূণ স্থাপন করা হলো মাতৃগর্ভে। জন্মের পরে "কাভ্যিয়ার জন্মের পর আমাদেরকে আরো ১৬ থেকে ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হলো যাতে তার ওজন বেড়ে ১০/১২ কেজি হয়। তার পর এই মার্চ মাসে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হলো। তার পর আমরা আরো কয়েকমাস অপেক্ষা করলাম অভিজিৎ-এর শরীর কাভ্যিয়ার অস্থিমজ্জা গ্রহণ করেছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য," তিনি বলেন। মি. সোলাঙ্কি বলেন, "প্রতিস্থাপনের পর সাত মাস চলে গেছে এবং এর পর অভিজিৎকে আর কোন রক্ত দিতে হয়নি।" "সম্প্রতি আমরা তার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছি। তার হিমোগ্লোবিন এখন ১১ এর উপরে। ডাক্তাররা বলেছেন ও সুস্থ হয়ে গেছে।" অভিজিৎ-এর শরীরে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের অপারেশনটি করেছেন ড. দীপা ত্রিভেদি। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, প্রতিস্থাপনের পর কাভ্যিয়ার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। ফলে তার শরীরের যেখান থেকে অস্থিমজ্জা নেওয়া হয়েছিল সেখানে কয়েকদিনের জন্য ব্যথা ছিল। কিন্তু এখন সেটা পুরোপুরি সেরে উঠেছে।" "কাভ্যিয়া ও অভিজিৎ- তারা দুজনেই এখন পুরোপুরি সুস্থ," বলেন তিনি। মি. সোলাঙ্কি বলেছেন, কাভ্যিয়ার আবির্ভাব তাদের জীবন আমূল বদলে দিয়েছে। "অন্য ছেলেমেয়েদের চেয়ে আমরা এখন ওকে বেশি ভালবাসি। সে শুধু আমাদের সন্তান নয়, সে আমাদের পরিবারের একজন জীবন রক্ষাকারীও। আমরা তার কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো।" প্রথম জীবন রক্ষাকারী ভাই এরকম জীবন রক্ষাকারী ভাই কিম্বা বোন জন্ম দেওয়ার ঘটনা প্রথম ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রে, ২০ বছর আগে। তার নাম ছিল অ্যাডাম ন্যাশ। ছয় বছর বয়সী বোনের চিকিৎসার জন্য তাকে জন্ম দেওয়া হয়েছিল। তার বোন ফ্যানকোনি এনিমিয়া নামের একটি দুরারোগ্য অসুখে ভুগছিল। এটি একটি জেনেটিক রোগ। ভারতে চার কোটিরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। সেসময় অ্যাডাম ন্যাশকে জন্ম দেওয়ার ঘটনা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল আসলেই কি তার জন্ম প্রত্যাশিত ছিল নাকি শুধু তার বোনকে বাঁচানোর জন্য "চিকিৎসা সামগ্রী" হিসেবে তাকে জন্ম দেওয়া হয়েছে। তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন এই প্রযুক্তি কি শেষ পর্যন্ত "আরো উন্নত মানব" কিম্বা নিজেদের চাহিদা ও পছন্দ মতো "ডিজাইনার শিশু" তৈরির প্রচেষ্টায় পর্যবসিত হয় কিনা। পরে ২০১০ সালে ব্রিটেনেও যখন এরকম জীবন রক্ষাকারী এক শিশুর জন্ম দেওয়া হয় তখন আবারও এই বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কাভ্যিয়ার জন্মের পর এখন ভারতেও সেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। নৈতিকতার বিতর্ক "এর নীতি নৈতিকতা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক চলছে। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট বলেছেন, শুধুমাত্র আপনি লাভবান হবেন সেজন্য কাউকে ব্যবহার করা উচিত নয়," বলেন প্রফেসর জন ইভান্স, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক তিনি। মানব জিন সম্পাদনার নীতি নৈতিকতা বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ইভান্স। "পিতামাতার উদ্দেশ্য কী সেটা আমাদের দেখতে হবে। আপনি কি আপনার অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার জন্য তাকে জন্ম দিতে চান? যদি তাই হয়, তাহলে একজন শিশুর অনুমতি ছাড়াই তাকে আপনি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন," বলেন তিনি। প্রফেসর জন ইভান্স বলেন, জীবন রক্ষাকারী এই শিশুটিকে কী কাজে ব্যবহার করা হবে সেই প্রশ্নও উঠবে। "একটি দিক হচ্ছে- মাতৃ-জঠরে ভ্রূণের নাভির সঙ্গে মায়ের ফুলের সংযোজক নালী থেকে কোষ সংগ্রহ করা হয়, আবার আরেকটি দিক হচ্ছে- কোন অঙ্গ নেওয়ার জন্যও এধরনের শিশুর জন্ম দেওয়া হয়। অস্থিমজ্জা সংগ্রহের বিষয়টি এর মাঝামাঝি পর্যায়ে পড়ে- এমন নয় যে এখানে কোন ঝুঁকি নেই কিন্তু এটা আবার অঙ্গ নেওয়ার মতো ক্ষতিকর কিছু নয়। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হলে অনেক সময় দাতার স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে," বলেন প্রফেসর ইভান্স। তবে তার মতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো- এর শেষ কোথায়? "এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি জায়গা এবং এর সীমা বেঁধে দেওয়াও খুব কঠিন। হয়তো অস্থিমজ্জার জন্য এরকম জীবন রক্ষাকারী ভাই কিম্বা বোনের জন্ম দেওয়া হলো কিন্তু এটা কি সেখানেই থেমে যাবে? এর ফলে যে মানুষের বর্তমান জিনে পরিবর্তন ঘটানো হবে না সেটা কে নিশ্চিত করবে?" তিনি বলেন, ব্রিটেনে এবিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে যেখান থেকে জেনেটিক পরিবর্তনের জন্য অনুমোদন নিতে হয়। ফলে সেখানে এই ঝুঁকি এড়ানোর একটা উপায় আছে। "কিন্তু ভারতে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুব একটা শক্তিশালী নয়। এবং এটা হচ্ছে প্যান্ডোরার বক্স খুলে দেওয়ার মতো বিষয়," বলেছেন সাংবাদিক ও লেখক নমিতা ভান্ডারে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বার বার রক্ত দিতে হয়। "সোলাঙ্কি পরিবার ঠিক কাজ করেছে কিনা আমি সেটা বিচার করতে চাই না। এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে পিতা মাতা হিসেবেও আমিও হয়তো ঠিক এই কাজটাই করতাম।" "কিন্তু আমাদের যা প্রয়োজন তা হচ্ছে এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কাঠামো। অন্তত এবিষয়ে বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসার সঙ্গে যেসব পেশাজীবী জড়িত কিম্বা শিশুর অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন শুধু তাদের মধ্যে নয়, এই বিতর্কে সবার অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। এরকম কোন বিতর্ক ছাড়াই এই শিশুটির জন্ম দেওয়া হয়েছে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী করে সবার নজর এড়িয়ে গেল?" মিস ভাণ্ডারের প্রশ্ন। নৈতিকতার বিষয়ে শিশুটির পরিবার কাভ্যিয়া ও অভিজিৎ-এর পিতা মি. সোলাঙ্কি, যিনি গুজরাট সরকারের একজন কর্মকর্তা, বলেছেন, "বাইরের কোন ব্যক্তির তার পরিবারকে বিচার করা ঠিক নয়।" "আমাদের পরিবারের পরিস্থিতি এরকম। কোন একটা কাজের পেছনে লোকজনের উদ্দেশ্য কী সেটা আপনাকে দেখতে হবে। আমাকে বিচার করার আগে নিজেকে আমার স্থানে বসিয়ে দেখুন," বলেন তিনি। "সব পিতামাতা সুস্থ সন্তান চায় এবং আপনি যদি আপনার সন্তান সুস্থ করে তুলতে চান সেখানে অনৈতিকতার কিছু নেই। মানুষ নানা কারণে সন্তান নেয়- কেউ নেয় সন্তান তাদের ব্যবসা দেখাশোনা করবে এই কারণে, কেউ নেয় একারণে যে তাদের সন্তান পরিবারের নাম বহন করবে, আবার কেউ একমাত্র সন্তানকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যেও আরো একটি সন্তান নিয়ে থাকে।" ড. ব্যাঙ্কার বলেন, "প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যদি রোগমুক্ত শিশুর জন্ম দিতে পারি তাহলে আমরা কেন সেটা করবো না?" "যে দুটো মৌলিক বিষয় ভারতে নিশ্চিত করতে হবে তা হলো এর নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধনের ব্যবস্থা। কেউ একজন এর অপব্যবহার করতে পারে এই কারণে প্রযুক্তির ব্যবহার আমরা অস্বীকার করতে পারি না," বলছেন ড. ব্যাঙ্কার। ভারতে কোন শিশুর ডাউন্স সিন্ড্রোম আছে কিনা অর্থাৎ তার কোষে ক্রোমোজোমের ত্রুটি আছে কিনা সেটি ওই শিশুর জন্মের আগেই স্ক্রিনিং করে দেখা হয় ১৯৭০ এর দশক থেকে। ড. ব্যাঙ্কার বলেন, জিন-এলিমিনেশন প্রায় সেরকমই এক প্রযুক্তি। এর উদ্দেশ্য হলো পরবর্তী প্রজন্মের জিন থেকে সেই ত্রুটি দূর করা। তিনি বলেন, সোলাঙ্কির ক্ষেত্রে তারা যেটা করেছেন তা "একবার করার মতো একটি প্রক্রিয়া এবং এতে ঝুঁকিও অনেক কম।" তিনি বলেন, ফলাফলই নির্ধারণ করে দেয় যে প্রক্রিয়ায় এটি করা হয়েছে সেটি ঠিক ছিল কীনা। "এই চিকিৎসার আগে অভিজিৎ-এর ২৫ থেকে ৩০ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল, এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে, ফলে এখন সে স্বাভাবিক গড় আয়ু পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে।" ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশে যোগ হল নতুন প্রযুক্তি
জিন সম্পাদনা: ভারতে একটি শিশুর জন্ম দিয়ে যেভাবে তার ভাইকে থ্যালাসেমিয়া থেকে মুক্ত করা হল