content
stringlengths
0
129k
গাছগুলো যেন আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠছে
আকাশি, মালাকানা, মিনজিরি
মিনজিরিটাকে দিনের বেলাতেই ভয় লাগে
আর রাতের এই সময় যেন সে প্রাণ ফিরে পায়
মনে হচ্ছে সুমিতকে এক্ষুণি পিছু টেনে ধরবে
সুমিত ত্বরিত বেগে একবার পেছেনে ফেরে
না গাছটি এখনও ঝাঁপিয়ে পড়েনি
যথাস্থানে দাঁড়িয়ে আছে
কিন্তু মনের ভেতর শুধু কু ডাকছে
কি জানি কি হয়!
ঠিক এই সময়ে ছাতিমের পাগলপারা ঘ্রাণটা নাকে মুখে ঝামটা মারল
এত তীব্র যে মগজের ভেতর রি রি করে ওঠে
সুমিতের এমন কড়া ঘ্রাণ পছন্দ নয়
সে আরেকটু কোমল, হালকা ঘ্রাণ পছন্দ করে
মনোগিরির টিলাটা কাছাকাছি চলে এসেছে সে
গর্জন গাছের সারির ফাঁক দিয়ে গর্জনটিলার বাড়িগুলো চোখে পড়ছে
এখন আর কোন বাড়িতে আলো জ্বলছে না
সবাই ঘুমে বিভোর
কিন্তু একটা খোলের শব্দ যেন বুকের ভেতর ঘা মারছে
কলজের বোটা খসিয়ে দেবে মনে হচ্ছে
খোলের শব্দ ভেসে আসছে
অদ্ভুত মাদকতা আছে বোলে
শরীরের ভেতর থেকে থেকে কী যেন করে
মোচড়াতে থাকে
মাদকতা ছড়ায়
শব্দটা আসছে গর্জনটিলা থেকে
মধু খোল বাজায়
দিন নেই, রাত নেই সুযোগ পেলে ছেলেটা খোলে হাত ঠুকে
ওকে খোল টানে
শালার পুত, তোর গলায় খোল বেঁধে ঢ্যাবার পানিতে চুবিয়ে মাইরতে পারলে ভালো হতো
এই ধরনের একটা কথা বুঝি বুধু বলেছিল
কেউ কেউ বলে মধুর মাথায় সমস্যা আছে
কি সমস্যা? সে কথা কেউ সহজে বলে না
তবে বুধু দিয়েছিল ভিন্ন তথ্য
বলে ছেলেটা একটা মেয়েকে ভালোবাসত
সেই মেয়েটা ওকে ফেলে চলে যাবার পর ওর এই অবস্থা
তবে বয়োবৃদ্ধ বলরাম সরকার বলেন ভিন্ন কথা
তিনি বলেন, কালি পুজোর রাতে খোল বাজাতে গিয়ে মধু খেই হারিয়ে ফেলেছিল
তারপর ওর মরণ দশা
আর কয়েক মিনিট দেরি করলেই ওর প্রাণবায়ু বেরিয়ে যেত
কিন্তু ওর ভাগ্য ভালো
হঠাৎ ছেলেটা সম্বিৎ ফিরে পায়
আর তার হাত আবার কাজ করতে থাকে
সে হাতে জাদু খেলতে থাকে
আর খোলের ভেতর থেকে অদ্ভুত মাতম বেরিয়ে আসে
ওর খোলের বোল শুনলে বুকের ভেতর হৃদপি-টা লাফাতে থাকে
সেই থেকে কি যেন অলৌকিক স্পর্শে মধুর অবস্থা এমন
এখন ওকে পাক্কা ওস্তাদ মানতে হবে
খোলের ওপর ওর আঙুলের খেলা দেখার জন্য অনেকে ভিড় জমায়
তবে সে যার তার সামনে টোকা দেয় না
রাত গভীর হলে ওর খোলের বোল বাজতে থাকে
নিশিরাত শোনে ওর খোল
অনেকেই বলে নিশিরাতে অন্য কেউ থাকে ওর সঙ্গে খোলের বোল শুনতে
অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ উঁকি দিয়েছিল
তারা নাকি ভয়ও পেয়েছে
তাই যারা জানে, তারা এখন কেউ মাথা ঘামায় না ওর ব্যাপারে
ওর খোল বাজতে থাকে সবাই ঘুমিয়ে গেলে
ওর খোল জাদু খেলে রাত নিশুতি হলে
চরাচর নিস্তব্ধ হয়ে ওর খোল শোনে
সুমিত ধেত্তেরি বলে উড়িয়ে দিয়েছিল
যত্তোসব আজগুব কথা
এমনধারা হয় নাকি! তারপর নিজেই একদিন বুধুকে নিয়ে গিয়েছিল যাচাই করতে
বুধু সব কিছু বুজিয়ে বলল
বলল, সাহেব এইসেছে তোর খোল বাজনা শুইনবে
কিন্তু মধু মনে হয় পাত্তা দিল না
সুমিতের ইচ্ছে হচ্ছিল পাছার ওপরে বেত দিয়ে দু'ঘা লাগায়
আদিখ্যেতা পছন্দ হচ্ছিল না
যত্তোসব বলে মনে মনে বিরক্ত হলো
কিন্তু বাস্তবে ধৈর্য ধরল সে
অবশেষে সেই অদ্ভুত বাদন শুনল
কিছু একটা ভর করে যেন ওর ওপর
অন্যজগতে চলে যায়
পুরোটাই অলৌকিক মনে হয়
হাতের আঙুলগুলোতে কি যেন একটা ঝড় বয়ে গেল
দেখে গা শিউরে উঠল সুমিতের
শুধু ভাবল, ওর আলাদা একটা শক্তি আছে নিশ্চয়ই!
প্রথম যেদিন মহুয়ার সঙ্গে দেখা হলো সেদিনটির কথা মনে পড়ল সুমিতের
অনার্যকন্যার পাকা গমের মতো রং
ব্যতিক্রম নাকটা চ্যাপ্টা
চোখ দুটো বড় নয়
তাতে শুধু হালকা করে কাজল টানা
শরীরে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস
কথা বললে চোখ নাচে
সুমিতের ভালো লেগে গেল
বাংলোতে যদিও তার কাজের লোক ছিল, তারপরও মহুয়া আসত
সবার সামনেই আসত
কিন্তু কেউ কখনও মহুয়াকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি
শুধু বুধুই তাকে প্রথম সতর্ক করে
মহুয়ার সঙ্গে মিশতে নিষেধ করে
সুমিতের মাথা গরম হয়ে উঠেছিল
ভেবেছিল বুধুকে কড়া করে কিছু বলবে
কিন্তু নিষেধ করল মহুয়া
বলল, বাবু উয়াকে কিছু নাই বলিস
সুমিত আশ্চর্য হলো
কেন, ওকে কিছু বলবে না! ও কি? বাঘ, না ভাল্লুক?
মহুয়া বলল, উয়ে তুকে বাঁইচতে দিবে লাই
উয়ে খুব খারাপ আছে
সেই থেকে সুমিত বুধুকে এড়িয়েই চলত
কিন্তু বুধুটা কেমন যেন আঠার মতো তার পেছনে লেগে আছে
যে কোন কিছুতেই সন্দেহ হলে সে পেছনে ফেরে