content
stringlengths
0
129k
আর প্রভুর একত্ব ঘোষণা করা
প্রভুর মাহাত্ম্য বিরাটত্ব ও প্রাধান্যকে স্বীকার করে নেয়া
এক কথায় শিরক পরিহার করে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়া
সব মানুষের একই ঘোষণা মক্কা-মদিনার সারা আকাশ ও বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে
সে এক অভাবিত দৃশ্য
এক অচিন্তনীয় পরিবেশ
সব মানুষ তার প্রভুর কাছে হাজিরা দিতে পাগলপারা
প্রভুর ইচ্ছামত শিরক থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার ঘোষণা
সারা দুনিয়ার প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব রাব্বুল আলামিনের
এতে আর কারো শরিকানা নেই এ ঘোষণা দিতে থাকে বারবার
এটিই হলো হজের তালবিয়ার মৌলিকত্ব
হাজী সাহেবগণ দীর্ঘ সফরে মহানবী (সা)-এর স্মৃতিবিজড়িত মক্কা-মদিনা শরীফে সময় অতিবাহিত করেন, তাই মক্কা ও মদিনার সংক্ষিপ্ত ধারণা জানা দরকার
পবিত্র মক্কা আল্ মুকাররামাহ
পবিত্র মক্কা নগরী পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্বোৎকৃষ্ট বরকতময় জমিন তাতে কোন সন্দেহ নেই
দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্থাপনা এ পবিত্র মক্কা শরীফেই
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী "নিশ্চয়ই মানবমণ্ডলীর হেদায়াতের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্মিত হয়েছে তা পবিত্র বরকতময় মক্কা শরীফে অবস্থিত
" (সূরা আলে ইমরান : ৯৬)
পবিত্র মক্কায় অবস্থিত ঐ পবিত্র কা'বা ঘরে এক রাকায়াত নামাজ অন্য স্থানে এক লক্ষ রাকায়াত নামাজের সমান
মক্কা শরীফের মর্যাদা এত বেশি যে সেখানে কোন গাছপালা কাটা, পশু শিকার করা, ঝগড়া-বিবাদ সবই নিষিদ্ধ
মক্কা শহরের উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ
১. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে পূর্ব দিকে কাসাসিয়া (একে গাসাসিয়াও বলে), সুকুল লাইল, তায়েফ রোড, মিনা ইত্যাদি
২. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আযিযিয়াহ, মুযদালিফাহ, আরাফাত, তায়েফ রোড
৩. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে উত্তর-পূর্ব কোণে শি'বে আমের, মাআবদাহ, ফয়সলিয়াহ, জাবালে নূর বা হেরা পাহাড়
৪. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে উত্তরে শামিয়াহ, কারারাহ, আল-নাকা, সোলায়মানিয়া, হাজুন, জুমেজাহ, ওতায়বিয়াহ, ওয়াদি জলিল
৫. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে জারওয়াল যাহের, তানঈম, যাহরাহ, নোযাহ, রাবেতা আলমে ইসলামীর কেন্দ্রীয় দফতর
৬. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে পশ্চিমে শোবেকা, হাররাতুল বাব, হিন্দাওইয়াহ
৭. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে তান্দুবাই, রোসাইফা
৮. কা'বা ঘর বা মসজিদে হারাম থেকে দক্ষিণে মেসফালাহ, জিয়াদ, জাবালে সাওর (সাওর পাহাড়)
মক্কা শরীফরে বিভিন্ন নাম
পবিত্র মক্কা নগরীর অনেক নাম রয়েছে এবং সেগুলোর নামকরণেরও বিভিন্ন কারণ আছে
এর মধ্যে বেশি প্রসিদ্ধ নামসমূহ হচ্ছে : ১. মক্কা ও ২. বাক্কা ৩. উম্মুল কুরা ইত্যাদি
মক্কা শরীফের মর্যাদা
মক্কা শরীফের অনেক মর্যাদা রয়েছে
নাসায়ী, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ আব্দুল্লাহ বিন আদি বিন হামরা থেকে বর্ণনা করেছেন : রাসূল (সা)-কে মক্কায় সওয়ারির ওপর আরোহণ করা অবস্থায় মক্কাকে লক্ষ্য করে বলতে শুনেছি, "আল্লাহর শপথ, তুমি আল্লাহর জমিনের মধ্যে আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ, যদি আমাকে তোমার কাছ থেকে বের করে দেয়া না হতো তাহলে আমি কিছুতেই বের হতাম না
হাদিস শরীফে আরো এসেছেN রাসূল (সা) হাযওয়ারা নামক বাজারে বলেছিলেনN "হে মক্কা আল্লাহর শপথ, তুমি আল্লাহর উত্তম জমিন এবং আল্লাহর প্রিয় শহর
যদি তোমার কওম আমাকে তোমার কাছ থেকে বিতাড়িত না করত তাহলে আমি কখনও অন্যত্র বাস করতাম না
" (সুনানে তিরমিযি ১২-৩৩)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, "তুমি মক্কা কতই না ভাল এবং আমার নিকট কতই না প্রিয়
যদি তোমার লোকেরা আমাকে বের করে না দিত তাহলে আমি তোমার থেকে দূরে অন্য কোথাও বাস করতাম না
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেনN "আল্লাহ কা'বা শরীফকে সম্মানিত ঘর এবং মানুষের টিকে থাকার কারণ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন
" (সূরা মায়েদা : ৯৭)
পবিত্র মক্কা নগরীর বিবরণ, ফজিলত বর্ণনা করা এ সংক্ষিপ্ত লিখনিতে সম্ভব নয়
দুনিয়ার সকল মুসলিমের অন্তর পবিত্র মক্কার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত
হযরত ইবরাহিম (আ)-এর দোয়া যথার্থই "হে আল্লাহ আপনি জনগণের আত্মাকে মক্কা শরীফের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন
" (সূরা ইবরাহিম : ৩৭)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের অন্তরকে মক্কা শরীফ ও কা'বা শরীফের প্রতি আকৃষ্ট করার মাধ্যমে মসজিদের সহিত আমাদের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের তৌফিক দিন
মসজিদে নব্বীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মহানবী (সা) মদিনায় হিজরত করে পবিত্র মসজিদে নববী নির্মাণ করেন
পথে বনি সালেম পল্লীতে জুমাবার জুমাার সালাত পড়েন এবং জুমা শেষে তিনি রওনা করেন
তাঁর উট মসজিদে নব্বীর বর্তমান স্থানে এসে বসে পড়ে
এই স্থানটি ছিল খেজুর শুকানোর স্থান ও উট-বকরীর আস্তাবল
দুইজন ইয়াতিম শিশু ছিল ঐ জায়গার মালিক
রাসূলুল্লাহ (সা) ১০টি সোনার দিনারের বিনিময়ে ঐ সম্পত্তি কিনেন এবং হজরত আবু বকরকে মূল্য পরিশোধ করার আদেশ দেন
ঐ জমিনে খেজুর গাছ ও মুশরিকদের কবর ছিল এবং এক অংশ ছিল নিচু
তাতে বৃষ্টির পানি জমে থাকত
তিনি খেজুর গাছ কেটে ফেলেন এবং কবরের হাড়-গোড় বের করে অন্যত্র পুঁতে ফেলার নির্দেশ দেন
নিম্নাংশ ভরাট করেন
১২ দিন পর্যন্ত তিনি খালি স্থানে নামাজ পড়েন
তারপর মসজিদ তৈরি করেন
তিনি এবং মোহাজের, আনসার ও সাহাবায়ে কেরাম মিলে মসজিদ তৈরি করেন
আম্মার বিন ইয়াসার (রা) ছিলেন মসজিদের প্রধান রাজমিস্ত্রি, ইঞ্জিয়ার ও নির্মাণ কৌশলী
রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং নিজেও সাহাবায়ে কেরামের সাথে ইট-পাথর বহন করেন
তিনি নিজ হাতে একটি পাথর দিয়ে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন
মসজিদের ভিত্তিতে পাথর, দেয়ালে ইট, চালে খেজুর পাতা ও সুঘ্রাণ এজখের ঘাস এবং খুঁটিতে খেজুর গাছ ব্যবহার করা হয়
সৌদি আরবের আবহাওয়া অনেক গরম বিধায় চালের ওপর কাঁদা মাটির প্রলেপ দেয়া হয় ঠাণ্ডার জন্য
একবার বৃষ্টির পানিতে মসজিদের মেঝে কর্দমাক্ত হয়ে যায়
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) এর কপাল ও দাড়ি মোবারকে কাদা লাগে
সাহাবায়ে কেরাম মেঝেতে পাথরের নুড়ি বিছিয়ে দেন
প্রথম হিজরি সনে নির্মিত মসজিদের আয়তন ছিল ৭০ ' ৬০ গজ বা ৮৫০.৫ বর্গমিটার
উচ্চতা ছিল ২.৯ মিটার
সপ্তম হিজরিতে খায়বার বিজয়ের পর ক্রমবর্ধমান মুসল্লির সঙ্কুলানের জন্য মসজিদকে সম্প্রসারিত করা হয়
তখন এর আয়তন দাঁড়ায় ১০০ ' ১০০ গজ অর্থাৎ ২০২৫ বর্গমিটার এবং ছাদ ৭ গজ উঁচু করা হয়
রাসূলুল্লাহ (সা) এর সময়ের মসজিদের সীমানা এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে
তুর্কি খলিফাগণ সেখানে লিখে রেখেছেন
"এটাই হলো মহানবী (সা) এর সময়কাল মসজিদের সীমানা
এ সময় মসজিদের ৩টি দরজা ছিল
মসজিদের ভেতর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে, রাওদাহ বা 'বেহেশতের বাগান' নামক জায়গাটি
রাওদাহর দৈর্ঘ্য ২২ মিটার ও প্রস্থ ১৫ মিটার
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্য স্থান হচ্ছে বেহেশতের বাগান
" (বুখারী ও মুসলিম) এই জায়গায় ইবাদত ও এতেকাফের ফজিলত ও সওয়াব অনেক বেশি
বিভিন্ন সময় মসজিদে নব্বীর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়
যাঁরা সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেছেন, তাঁরা হলেন, (১) রাসূলুল্লাহ (স) (২) হজরত ওমর (রা) (৩) হজরত ওসমান (রা) (৪) ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক (৫) খলিফা মাহদী (৬) আশরাফ কায়েতবায় (৭) সুলতান আব্দুল মজিদ (৮) বাদশাহ আব্দুল আযীয (৯) বাদশাহ ফয়সল বিন আব্দুল আযীয (১০) বাদশাহ খালেদ বিন আব্দুল আযীয এবং (১১) বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আযীয
বর্তমানে মসজিদের আয়তন হচ্ছে, ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার
মসজিদের ভেতরে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার মুসল্লি, ছাদের ওপর ৯০ হাজার মুসল্লি এবং আঙিনায় মোট ২ লক্ষ ৫০ হাজার মুসল্লি একই সময়ে নামায আদায় করতে পারেন
বর্তমান সম্প্রসারিত আঙিনাসহ প্রায় ২০ লক্ষ মুসল্লি একই জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারেন
মসজিদে কেন্দ্রীয়ভাবে এয়ারকন্ডিশনের ব্যবস্থা আছে
ফলে গরমের সময় মুসল্লিদের কষ্ট করতে হয় না
আবার সকল মুসল্লি যেহেতু ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারেন না তাই ২৭টি গম্বুজ সরানোর জন্য শক্তিশালী মেশিন বসানো আছে
তার পাশাপাশি ৮টি ফোল্ডিং ছাতার সাহায্যে মাঝে মাঝে অক্সিজেন, বাতাস যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা হয়
এতে ১০টি মিনার, ৮টি ফোল্ডিং ছাতা ও ২৭টি গম্বুজ আছে
এতে ৭টি প্রবেশপথ ও ৮২টি দরজা আছে
মহানবী (সা) এর হুজরাহ মোবারকেই মহানবী (সা) এর পবিত্র দেহ মোবারক শায়িত আছেন
তাঁর কবরটি লোহার জালি দ্বারা আবৃত এবং কবরের চার পাশে সীসা ঢালাই করে কবর মজবুত করা হয়েছে
দুষ্কৃতকারীরা কয়েকবার লাশ মোবারক চুরির উদ্যোগ নেয়ায় ঐ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে
মহানবী (সা) এর পার্শ্বেই রয়েছে তার দুই সাহাবীর কবর
তাঁরা হলেন হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রা)
চতুর্থ কবরের স্থানটি আজ পর্যন্ত খালি পড়ে আছে
কথিত আছে হযরত আয়িশা (রা) কে সেখানে দাফন করার কথা ছিল
কিন্তু তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধে হযরত আলী (রা)-এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় ভুল বুঝতে পেরে সেখানে তার দাফন না করার জন্য অসিয়ত করেন
তাই আজো ও তা খালি রাখা আছে