content
stringlengths
0
129k
পাবদা মাছ চাষে সফলতা
পাবদা মাছ চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি বাজিমাত করেছেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরিয়া গ্রামের মাছ চাষি রিগান হোসেন
৫টি পুকুরে চাষ করেন পাবদা মাছ
প্রতি বছর শুধুমাত্র পাঙ্গাস মাছ ভারতে রফতানি করে আয় করেন ৪০ লাখ টাকা
তার দেখাদেখি এখন এলাকার অনেকেই মাছ চাষে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন বলে জানান রিগান
জানা যায়, রিগান হোসেন রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১২ সালে মাস্টার্স শেষ করেছেন
তারপর কুমিল্লায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন
পরে তিনি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি মাছ চাষে মনোযোগ দেন
২০১৪ সালে নিজ অর্থে গড়ে তোলেন মৎস্য আড়ত
যেখান থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো শুরু করেন
শুরুতে খুব একটা সফলতা না পেলেও ছাড়েননি ব্যবসা
আঁকড়ে ধরে ছিলেন দীর্ঘ ছয় বছর
তারপর হঠাৎ একদিন ভাবলেন, কীভাবে দেশের বাইরে দেশীয় প্রজাতির মাছ রফতানি করা যায়
যেই ভাবনা সেই কাজ
২০১৯ সালে শুরুকরেন পাবদা মাছ রফতানি
তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি
শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬০০ মেট্রিক টন পাবদা মাছ বিভিন্ন দেশে রফতানি করেছেন
সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটরডেমের ছাত্র নিহত
বর্তমানে ভারতে রফতানি অব্যাহত রয়েছে
তার এখানে কর্মসংস্থান ২০ জনের তরুণের
বিভিন্ন বেসরকারি হ্যাচারি থেকে খামারিরা পোনা সংগ্রহ করে আনেন
পরে সেগুলো পুকুরে মিশ্র ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়
সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দেড় লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়
পুকুরপাড় থেকেই গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়
সঙ্গে পানির পরিবেশ ঠিক রাখতে পুকুরে রাখা হয় অন্য জাতের মাছ
মৎস্য বিভাগ জানায়, সাধারণত মার্চের শুরুতে পুকুরে পাবদা পোনা ছাড়া হয় এবং ছয় মাস পর থেকে তা সংগ্রহের উপযোগী হয়
রফতানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় পাবদা খামারিরা লাভবান হচ্ছেন
উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ পাবদা
চলনবিল এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুস্বাদু পাবদা মাছের চাষ
খুব অল্প সময়ে বেকার যুবকরা এ মাছ চাষ করে নিজের পরিবারের অভাব দূর করছেন
অন্যদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সুস্বাদু এ মাছ এখন রফতানিহচ্ছে ভারতে
খুব অল্প চাষির মধ্য দিয়ে শুরু হলেও এখন জেলায় পাবদাচাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫০ জনে
তাদের মধ্যে সফল একজন হলেন রিগান
মাছচাষী রিগ্যান জানান, প্রথমে আমার মৎস্য আড়ত ছিল, এখনো আছে
আড়ত শুরু করার পর থেকে মাছগুলো যেত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়
একদিন ভাবলাম চলনবিলে পাবদা মাছ উৎপাদিত হচ্ছে, এ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু
দেশের বাইরে কীভাবে এ মাছ রফতানি করা যায়
তখন যাদের এলসি করা আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ২০১৯ সালে প্রথম চালান পাঠাই
পর্যায়ক্রমে ৬০০ মেট্রিক টনের ওপরে পাবদা রফতানি করেছি
লাভ ও খরচ বিষয়ে রিগান জানান, এখন সপ্তাহের পাঁচ দিন ৫ মেট্রিক টনের ওপরে পাবদা রফতানি হচ্ছে
যা এখন শুধু ভারতে যাচ্ছে
এর আগে ২০১৯ সালে চায়না, সৌদি আরবেও গিয়েছে
প্রতিদিন ৫ মেট্রিক টন পাবদা পাঠাতে তার খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা
মাসিক আয় ৫ লাখ টাকা
বার্ষিক আয় হয় খরচ বাদ দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওষুধ ও মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন পাবদা চাষে লাভ করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে
বাজারে অন্যান্য মাছের তুলনায় দাম কম হওয়ায় সব শ্রেণির মানুষ পাবদা মাছ কিনতে পারছে
তরুণদের এসএমই ঋণ দিয়ে মাছ চাষে আগ্রহী করতে সরকার উদ্যোগ নিলে দেশে কর্মস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন
দামে তুলনামূলক সস্তা ও বাজারে চাহিদার পাশাপাশি উৎপাদন ও উৎপাদন ব্যয় কম থাকায় বর্তমানে জেলার সিংড়ায় পাবদা মাছ চাষিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে
পাবদা রফতানিকারক মো. রিগান জানান, প্রতি বছর চলনবিল এলাকা থেকে ৫০০-৬০০ মেট্রিক টন পাবদা বিভিন্ন জেলা ও ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে
পচনশীল পণ্য হলেও এ মাছ প্রায় এক সপ্তাহ ভালো থাকে
এ কারণে প্যাকেটজাত হয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভালোভাবেই চলে যায়
তিনি আরও জানান, রপ্তানিকারকদের কোথাও চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় না
খুব সহজে গাড়ি জেলায় জেলায় যায়
এ কৃতিত্ব আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও সিংড়ার এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের
শুল্ক কমানোর পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হলে পাবদা মাছ শুধু ভারতেই না, বিশ্বের আরো অনেক দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে
সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লাহ ওয়ালিউল্লাহ জানান, কৃষির যে কোনো সেক্টরের তুলনায় পাবদা চাষ লাভজনক
এ চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগিতা করা হচ্ছে
রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় পাবদা খামারিরা দিনদিন লাভবান হচ্ছেন
24./ কামরুল
পরবর্তী খবর
চলনবিলের পথে পথে ভাসমান হাঁসের খামার
২১ নভেম্বর, ২০২১ ২০:০৩ ২২৩ প্রিন্ট করুন
নাটোর প্রতিনিধি
ভাসমান হাঁসের খামার
চলনবিলে প্রবেশ করলেই পথে পথে চোখে পড়বে ভাসমান হাঁসের খামার
এক সময় বর্ষাকালে বানের পানি এলে জাল বুনন আর মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত চলনবিল এলাকার মানুষের মধ্যে
তবে নানা কারণে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না চলনবিলে
তাই এখানকার অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে
পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটছে দুর্বিষহ জীবন
এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে গিয়ে কিছু মানুষ সন্ধান পেয়েছে বিলে হাঁস পালনের মতো লাভজনক পেশার
ফলে সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা
চলনবিলে হাঁস পালনের সব থেকে বড় সুবিধা বিলে পানি থাকা অবধি প্রায় ছয় মাস হাঁসের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় শামুক, ঝিনুকসহ জলে বাস করা নানান প্রাণী
এতে হাঁস পালনে খরচ কমে
বাড়ে লাভের পরিমাণ
সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বছরের পুরো সময় অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে এসব পরিবারের ছেলেরা
অভিষেক ম্যাচে খেলতে নেমে আঘাতে হাসপাতালে ক্রিকেটার
বাবাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা, আটক ৫
মাঠে ঢুকে পড়া সেই মোস্তাফিজের ভক্তের ৭ দিন রিমাণ্ড চায় পুলিশ
মূলত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই মিটছে সংসারের খরচপাতি
চলছে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা
কমছে ঋণের বোঝাও
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বা এ ধরনের খামার গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা স্থানীয়দের
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে চলনবিলে ছোট বড় প্রায় ৪৫১টি খামার রয়েছে
এর মধ্যে রাজহাঁসের খামার অর্ধেক
হাঁস পালনকারীরা পাতিহাঁস এবং রাজহাঁস উভয় প্রকারের হাঁস পালন করে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে
এসব খামারে হাঁস আছে দেড় লাখেরও বেশি
আবার স্থানীয় পরিবারগুলোও পালন করছে প্রায় ৭-৮ লাখ হাঁস
এতে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি বেড়েছে আয়
পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও
বিলে উচ্ছিষ্ট বোরো ধান ও শামুক হাঁসের প্রধান খাদ্য এবং অল্প টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা সফল হওয়ায় বর্তমানে পুরুষরাই বিকল্প পেশা ও বেকারত্ব দূর করার জন্য অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছে
সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে হাঁসের খামারগুলোতে দেখা যায়, সকাল হলেই খামারিরা হাঁস নিয়ে রওনা দেন বিলের পানিতে
সন্ধ্যার আগে আবার ফিরে আসে খামারে
কেউ আবার পানিতেই জালের ঘের করে হাঁসের খামার করেছেন
চলনবিলের খামারি হাসমত আলী জানান, তিনি ৩০০টি হাঁস পালন করেন
সকালে হাঁসগুলো বিলে চলে যায়
সারাদিন শামুক-ঝিনুক খায়
তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন
পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় করছেন তিনি
চলনবিলের আরেক খামারি আজগর আলী জানান, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন