text
stringlengths 0
4.32k
|
---|
যখন খাবে তখনই তাঁর |
করবে গুণ গান |
তেঁতুল |
তেঁতুল বা তিন্তিড়ী এর বৈজ্ঞানিক নাম: Tamarindus indica, ইংরেজি নাম: Melanesian papeda এটি Fabaceae পরিবারের Tamarindus গণের অন্তর্ভুক্ত টক জাতীয় ফলের গাছ। এটি একপ্রকার টক ফল বিশেষ। |
তেঁতুল বৃহৎ ও সুদৃশ্য চিরসবুজ বৃক্ষ। এগাছ প্রায় ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের শীর্ষ ছাউনি অনেক এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। তেঁতুল সম্ভবত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকার আদিবাসী, তবে ভারতীয় উপমহাদেশে এত দিন ধরেই এর চাষ করা হচ্ছে যে এটি কখনও কখনও সেখানে আদিবাসী গাছ বলে জানা গেছে।[৫] এটি আফ্রিকার স্থানীয় অঞ্চলে সুদান, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া এবং তানজানিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে বনে জন্মায়। আরবে এটি ওমান, বিশেষত ধোফার, যেখানে এটি পাহাড়ের সমুদ্রমুখী ঢালুতে বেড়ে ওঠে বর্ধমান বনে পাওয়া যায়। এটি সম্ভবত হাজার হাজার বছর পূর্বে মানব পরিবহন এবং চাষাবাদের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় পৌঁছেছিল।পাকা তেঁতুল টক-মিষ্টি হয়ে থাকে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যাসিড, চিনি, ভিটামিন বি, এবং ফলে সাধারণত না দেখা গেলেও এতে আছে ক্যালসিয়াম।উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার তাৎক্ষণিকভাবে উপশম হয় কাঁচা অথবা পাঁকা তেঁতুল খেলে। |
তেঁতুলে টারটারিক এসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে।[৮][৯] পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। রক্তে কোলস্টেরল কমানোর কাজে আধুনিককালে তেঁতুল ব্যবহার হচ্ছে। জরে ভোগা রোগীর জর কমানোর জন্য এ ফল ব্যবহৃত হয়।[১০] এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস(skeletal fluorosis) রোগের প্রকোপ হ্রাস করতেও এটি ব্যবহৃত হয়। পাকা তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে সকালে শুধু পানি খেলে হাত-পায়ের জ্বালা কমে |
বেদানা |
বেদানা, আনার বা ডালিম এর বৈজ্ঞানিক নাম: Punica granatum। এটি Lythraceae পরিবারের Punica গণের অন্তর্ভুক্ত ফলের গাছ।এটি একরকমের ফল । এর ইংরেজি নাম পমেগ্রেনেট (pomegranate)। হিন্দুস্তানি, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার (انار) বলা হয়। কুর্দি ভাষায় হিনার এবং আজারবাইজানি ভাষায় একে নার বলা হয়। সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় দারিম। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলি খাওয়া হয় ।এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। [১] স্পেনীয়রা ১৭৬৯ সালে ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে বেদানা নিয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ও এরিজোনায় এর চাষ হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমে জন্মে।[২] দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি জন্মে। |
ভারতের একটি বাজারে বেদানা |
বর্তমানে এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুস্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং ক্রান্তীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে ডালিম হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল রক্তস্রাবনাশক। |
১. রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত কার্যকরী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে গেলে বা কেঁটে রক্তপাত হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে। |
২. হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্তঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়। আঘাত, পলিপ বা কোনো কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। |
৩. আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভলো ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভালো। |
৪. ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোনো স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভালো কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু’প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়। |
৫. গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোনো কোনো মহিলার একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দূর হয়। |
৬. ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমিনাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগে। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। |
৭. শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। |
৮. অনেকের মতে এটাও বলা হয়ে থাকে যে ডালিম খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পায়। |
৯. ডালিম খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রাকৃতিক ইনসুলিন ডালিম ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।[৪] |
মূলত, ডালিম গাছ- ফল, ফলের খোসা, পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কোনোটাই ফেলনা নয়। আগাগোড়া মানুষের উপকারী। |
কমলা লেবু |
কমলা লেবু বা ম্যান্ডারিন কমলা ছোট সাইট্রাস জাতীয় গাছের রসালো ফল। কমলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Citrus reticulata (সাইট্রাস রেটিকুলাটা) । এটি রুটেসি পরিবারের সাইট্রাস গোত্রের। এটি কমলার স্বতন্ত্র প্রজাতিগুলোর একটি সদস্য হিসাবে বিবেচিত। [১] কমলা একটি জনপ্রিয় ফল। এটি সাধারণত সরাসরি খাওয়া হয় বা ফ্রুট সালাদে ব্যবহৃত হয়।[১] ট্যাঞ্জারিন হল কমলা রঙের সাইট্রাস জাতীয় ফলের একটি গুচ্ছ , যা ম্যান্ডারিন অরেঞ্জ বা কমলালেবুর কিছু সংকর ও অল্পকিছু পমেলোর সমন্বয়ে গঠিত। |
ম্যান্ডারিন সাধারণ গোলাকার কমলার (যেগুলো ম্যান্ডারিন-পমেলো এর সংকর) মতো নয়; এগুলো ছোট ও কমলাকার হয়। [১] এর স্বাদ কম টক এবং বেশি মিষ্টি ও কড়া বলে বিবেচিত হয়।[২] পাকা কমলা শক্ত থেকে সামান্য নরম, এর আকারের জন্য কিছুটা ভারি ও পাথুরে আবরণের খোসাযুক্ত হয়।খোসাটি চিকন,আলগা[১] ও অল্প সাদা মেসোকার্পযুক্ত[৩] হয়।তাই সহজেই খোসা ছাড়ানো ও কয়েকটি কোয়ায় আলাদা করা যায়।[১] হাইব্রিড জাত গুলোতে এই বৈশিষ্ট্যগুলো একটু কম মাত্রায় থাকে।কমলালেবু নরম আর ঠাণ্ডায় এরা সহজেই নষ্ট হয়।প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এটি উৎপাদন করা যায়।[১][২] |
জেনেটিক গবেষণায় অনুযায়ী, কমলালেবু প্রকৃত সাইট্রাস প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল; প্রজনন বা প্রাকৃতিক সংকরায়নের কারণে এটি অনেক হাইব্রিড সাইট্রাস জাতের পূর্বপুরুষ হয়ে উঠেছে। সিট্রন এবং পোমেলোর মতো এটিও বাণিজ্যিকভাবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হাইব্রিড জাতের কমলা লেবুর (যেমন মিষ্টি এবং টক কমলা, জাম্বুরা এবং অনেকজাতের লেবু এবং বাতাবিলেবু) একটি পূর্বপুরুষ । কমলালেবুকে অন্যান্য সাইট্রাস প্রজাতিগুলোর (যেমন মরুভূমির লেবুগাছ ও কুমকোয়াট) সাথেও সংকরায়ন করা হয়েছে।[৪] যদিও আদি কমলার জাতটি বেশি টক ছিল, পোমেলোর সাথে সংকরায়নের ফলে প্রাপ্ত সবচেয়ে বাণিজ্যিক কমলার জাতগুলো অনেক মিষ্টি হয়ে থাকে।সাইট্রাস রেটিকুলাটা নামটি লাতিন ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে রেটিকুলাটা কথাটির অর্থ "জালযুক্ত"। [৬] ম্যান্ডারিন কমলা নামটি আবার এসেছে সুইডিশ ফল মান্ডারিন আপেলসিন (যার অর্থ চীনা আপেল)-এর নাম থেকে, আঠারো শতকে এটি প্রথম প্রত্যায়িত হয়। ম্যান্ডারাইন শব্দটি এই ফলের ফরাসি নাম থেকে প্রাপ্ত। যদিও ম্যান্ডারিন উপাধিটি ব্যবহারের প্রকৃত কারণ স্পষ্ট নয়। তবে এটি ম্যান্ডারিনের বিশিষ্টজনদের পরিহিত কিছু হলুদ বর্ণের পোশাকের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।সাইট্রাস রেটিকুলাটা বা কমলালেবু একটি মাঝারি আকারের গাছ,যা উচ্চতায় ৭.৬ মিটার (২৫ ফু) হয়ে থাকে। [১][৬] গাছটির কাণ্ড এবং প্রধান শাখাগুলোতে কাঁটা থাকে।[১] পাতা চকচকে, সবুজ আর অবশ্যই ছোট।[১] পত্রবৃন্তগুলো ছোট, প্রায় ডানাবিহীন বা সামান্য ডানাযুক্ত।[১] ফুলগুলো এককভাবে বা ছোট ছোট গুচ্ছে পত্রকক্ষে জন্মায়।[১] সাইট্রাসজাতীয় গাছে সাধারণত স্ব-পরাগায়নশীল (একই ফুলের মধ্যে পরাগ স্থানান্তর করতে কেবল একটি মৌমাছির প্রয়োজন হয়) অথবা পার্থেনোকার্পিক (পরাগায়নের প্রয়োজন হয় না বলে বীজবিহীন হয়, যেমন স্যাটসুমা ) হয়। একটি পরিপক্ব কমলালেবু গাছ ৭৯ কিলোগ্রাম (১৭৫ পা) পর্যন্ত ফল দিতে পারে।কমলা লেবুগুলো ছোট এবং আকারে ৪০–৮০ মিলিমিটার (১.৬–৩.১ ইঞ্চি) হয় । [১] এগুলোর রঙ কমলা, হলুদাভ-কমলা বা লালচে-কমলা। [২] খোসা চিকন এবং সহজেই ছাড়ানো যায়।[১] অন্যান্য সাইট্রাস ফলের তুলনায় কমলা লেবুর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল এর খোসা সহজেই ছাড়ানো যায়।[২] অন্যান্য সাইট্রাস ফলের মতোই এটির এন্ডোকার্প (অন্তঃস্থ শাঁস )কে কয়েক অংশে পৃথক করা হয়;এ ক্ষেত্রে কমলা লেবু প্রচুর পরিমাণে লম্বা কোষ নিয়ে গঠিত হয়।[১] এই ফলগুলি বীজবিহীন হতে পারে বা তাতে অল্প সংখ্যক বীজ থাকতে পারে। কমলা লেবু স্বাদে মিষ্টি এবং পুরো খাওয়া যায় বা চেপে রস বের করে খাওয়া যায়।২০১৯ সালে,কমলা লেবুর বৈশ্বিক উৎপাদন (ট্যাঞ্জারিন, ম্যান্ডারিন, ক্লিমেনটাইন, স্যাটসুমাস কমলা একত্রে; FAOSTAT এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ) ছিল ৩৫.৪ মিলিয়ন টন, বৈশ্বিক মোট পরিমাণের (টেবিল) ৫৬% উৎপাদন করে শীর্ষে ছিল চীন । ২০১৯ সালে স্পেন, তুরস্ক, মরক্কো এবং মিশর প্রত্যেক দেশেই এক মিলিয়ন টনেরও বেশি করে কমলা লেবু উৎপাদিত হয়েছে।কমলা লেবু সাধারণত খোসা ছাড়িয়ে তাজা অবস্থায় খাওয়া হয় বা সালাদ, ডেজার্ট ও প্রধান পদ হিসেবে খাবারে ব্যবহৃত হয়। [১] তাজা কমলা লেবুর রস এবং হিমায়িত কমলা লেবুর রস যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত প্রায়শই পাওয়া যায়। প্রতিটি কোয়ায় (কার্পেল) বীজের সংখ্যার অনেক পার্থক্য দেখা যায়।তাজা ছোলা, পুরো বা খোসার বাহিরের অংশ চেঁছে ব্যবহার করা হয় অথবা চেনপি (চীনা রান্নায় ব্যবহৃত একধরনের সিজনিং) হিসেবে শুকিয়ে ব্যবহার করা হয়। এটি রান্না, বেকিং, পানীয় বা ক্যান্ডির জন্য মশলা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১] তাজা খোসা থেকে প্রাপ্ত প্রয়োজনীয় তেল ক্যান্ডি, জেলটিন, আইসক্রিম, চ্যুইং গাম এবং বেকারি সামগ্রীতে ফ্লেভার যোগ করতে ব্যবহৃত হয়। [১] এটি লিকারে স্বাদ যোগ করতেও ব্যবহৃত হয়। [১] চাইনিজ রান্নায়, কমলা লেবুর খোসা বা চেনপি, মিষ্টি খাবার এবং সসে স্বাদ যুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়।বোতলজাত করার আগে কমলা লেবুগুলোর কোয়া থেকে সাদা আঁশ সরাতে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে বোতলজাত করা হয়; অন্যথায়, সেগুলো তেঁতো হয়ে যায়। কোয়াগুলোর খোসা ছাড়াতে একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। প্রথমে, কোয়াগুলোর আবরণকে আলগা করতে গরম পানিতে স্নান করানো হয়; তারপরে সেগুলোকে একটি লেই দ্রবণে স্নান করানো হয়; যা আলবেডো এবং আবরণগুলোর সার সংগ্রহ করে। অবশেষে, কোয়াগুলো বেশ কয়েকবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। কমলার কোয়াগুলো একেবারে সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়ে গেলে, কমলা লেবুগুলো যাতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে নষ্ট না হয় তাই সেগুলোকে তাপ প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে দিয়ে নেয়া হয়। কমলা লেবুগুলো তারপর বায়ুনিরোধী পাত্রে সিল করে প্যাক করা হয়। এতে এসকরবিক অ্যাসিডও যুক্ত করা হতে পারে।চীনা নববর্ষের সময়, কমলা লেবু /ট্যাঞ্জারিন / সাতসুমা কে প্রাচুর্য এবং সৌভাগ্য প্রথাগত প্রতীক বিবেচনা করা হয়। দুই সপ্তাহব্যাপী উদযাপনের সময় এগুলি প্রায়শই সাজসজ্জার বস্তু হিসাবে প্রদর্শিত হয় এবং বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও ব্যবসায়িক সহযোগীদের উপহার হিসাবে দেয়া হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিশেষত জাপান থেকে আসা কমলা লেবু হল কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার ক্রিসমাসের একটি ঐতিহ্য।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এগুলি সাধারণত ৫ বা ১০ পাউন্ডের বাক্সে ক্রয় করা হয়,[২] এবং এককভাবে নরম সবুজ কাগজে মুড়িয়ে ক্রিসমাস স্টকিংসেও দেওয়া হয়। ১৮৮০ এর দশক থেকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি অভিবাসীরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে নতুন বছরের জন্য উপহার হিসাবে জাপানি কমলা লেবু পাওয়া শুরু করে তখন থেকে এই প্রথাটি চলে আসছে। ঐতিহ্যটি অ-জাপানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এবং সারা দেশের পূর্ব দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে; প্রতি নভেম্বরে শস্য কাটার মৌসুমে, "কমলাগুলি ট্রেনে দ্রুত লোড করা হত এবং পরে রেলপথে পূর্ব দিকে প্রেরণ করা হত। 'অরেঞ্জ ট্রেনস' ― কমলা রঙ করা বগির ট্রেনগুলো জাপান থেকে ছুটির দিনের জন্য আবার কমলা লেবুর অপ্রতিরোধ্যভাবে ফিরে আসার কথা পথে সবাইকে জানিয়ে দিত। অনেকের কাছেই জাপানি মান্ডারিন কমলা লেবুর আগমন ছিল ছুটির মৌসুমের প্রকৃতভাবে শুরুর হওয়ার ইঙ্গিত।" [১২] এই জাপানি ঐতিহ্যটি ইউরোপীয় ঐতিহ্যের সাথে একীভূত হয়ে ক্রিসমাস স্টকিংসের সাথে সম্পর্কিত হয়ে যায়। বলা হয় যে, সেন্ট নিকোলাস তিনজন দরিদ্র মেয়ের স্টকিংসে সোনার মুদ্রা রেখেছিলেন যাতে তারা বিবাহ করার সামর্থ্য অর্জন করে। [১৩] কখনও কখনও গল্পটি সোনার ব্যাগের পরিবর্তে সোনার বল দিয়ে বলা হয়, আর তখন কমলালেবুগুলো এই সোনার বলগুলির জন্য প্রতীকী হয়ে দাঁড়ায় আর কানাডায় এটি সোনালি ফয়েলে মোড়ানো চকোলেট মুদ্রার সাথে ক্রিসমাস স্টকিংসে দেয়া হয় [১৩][১৪]। |
১৯ শতকের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাতসুমাও উৎপাদিত হত, তবে জাপান একটি বড় সরবরাহকারী হিসেবে রয়ে গিয়েছিল। [১৫] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সাথে শত্রুতার কারণে এই জাপানি কমলালেবুর মার্কিন আমদানি স্থগিত করা হয়েছিল।[১২] যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে রফতানির জন্য অনুমোদিত প্রথম জাপানি পণ্যগুলোর মধ্যে এগুলো ছিল অন্যতম, অবশিষ্ট শত্রুতার কারণে এই কমলালেবুগুলোকে "ম্যান্ডারিন" কমলা হিসাবে পুনরায় ব্র্যান্ডিং করা হয়।[১২] |
পোর্ট অফ জাপান থেকে ভ্যাঙ্কুভার, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (কানাডা)-এর সমুদ্রবন্দরে কমলা লেবুর প্রথম ব্যাচের সরবরাহটিকে, স্যান্টা ক্লজ এবং জাপানি নর্তকীদের―ঐতিহ্যগত কিমোনো পরা তরুণীদের[১৬]― সম্মিলনে একটি উৎসবের সঙ্গে অভিবাদন জানানো হয়।[১৪] |
ঐতিহাসিকভাবে, উত্তর আমেরিকায় ক্রিসমাস ফল হিসেবে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ অংশ ছিল ড্যানচিস জাতের কমলা লেবু, তবে এখন প্রায়শই এটি হাইব্রিড হয়ে থাকে।কানাডিয়ান সাহিত্যে, বিশেষত মন্ট্রিল নিয়ে গ্যাব্রিয়েল রয়ের উপন্যাস, দ্য টিন ফ্লুটে , দরিদ্র লাকাসে পরিবারের মৃতপ্রায় পুত্রের জন্য মান্ডারিন কমলালেবুকে বিলাসিতার স্পর্শ হিসাবে চিত্রায়িত করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে উপন্যাসটির কাহিনী বুনন করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সিনক্লেয়ার রসের ১৯৪২ সালের উপন্যাস, এস ফর মি অ্যান্ড মাই হাউস এবং তাঁর ১৯৩৯ সালের ছোট গল্প কর্নেট অ্যাট নাইট এ ম্যান্ডারিন কমলালেবুর কথা উল্লেখ রয়েছে।কমলা লেবু আদি সাইট্রাসের মূল ট্যাক্সার মধ্য থেকে একটি এবং এটি পূর্ব এশিয়ার দক্ষিণ চীন এবং জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিকশিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। [৫][১৯] উত্তর এবং দক্ষিণ ন্যানলিং পর্বতমালায় কমপক্ষে দু'বার কমলালেবু চাষ করা হয়েছে বলে মনে হয়। এখনও সেখানে বুনো কমলা লেবু পাওয়া যায়,পাশাপাশি ডওক্সিয়ান মান্ডারাইনস (কখনও কখনও এই প্রজাতির নাম সিট্রাস ডওসিয়ানেন্সিস ও বলা হয় ) ও ঐতিহ্যগতভাবে 'মংশান ওয়াইল্ড মান্ডারিনস' নামে পরিচিত গোত্রের― মঙ্গশান অঞ্চলের বুনো মান্ডারিন-জাতীয় ফলের জেনেরিক গ্রুপিং যাতে সত্যিকারের মান্ডারিন এবং জিনগতভাবে-স্বতন্ত্র ও কেবল দূর-সম্পর্কিত মংশনায়গান উভয়ই অন্তর্ভুক্ত― কিছু সদস্যও পাওয়া যায়। বুনো কমলা লেবুগুলো সহজাত কমলা লেবুতে পাওয়া ইনট্রোগ্রেসড পোমেলো (সি.ম্যাক্সিমা ) ডিএনএ থেকে আলাদা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তবে এটিতে ইছাং পেপেদা থেকে স্বল্প পরিমাণে (~ ১.৮%) ইনট্রোগ্রেশন ঘটেছে, যা একই অঞ্চলের বন্য পরিবেশে বেড়ে ওঠে। [২০] |
ন্যানলিং পর্বতমালা কমলা লেবুর উত্তর এবং দক্ষিণী জেনেটিক গুচ্ছগুলোরও আবাস যেগুলোতে অনুরূপ বন্য জাতগুলোর তুলনায় ফলের মধ্যে একই পরিমাণে শর্করা রয়েছে তবে প্রশংসনীয়ভাবে (কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ ভাগে) সাইট্রিক অ্যাসিডের নিম্ন পরিমাণ রয়েছে। এই গুচ্ছগুলোতে পোমেলো ইনট্রোগ্রেশনের বিভিন্ন নমুনা দেখা যায়, এদের সংখ্যার আলাদা আলাদা ইতিহাস রয়েছে এবং উত্তর ও দক্ষিণ দুটি চাষকৃত স্বতন্ত্র বন্য কমলা লেবুর জাতের সাথে সর্বাধিক ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকার দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। [২০] চাষ করা সমস্ত পরীক্ষিত জাতগুলোকে এই দুটি জেনেটিক গুচ্ছের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল। তাতে উত্তরাঞ্চলীয় চাষের বিভিন্ন জাত যেমন নানফেংগিমিজু, কিশু এবং সাতসুমার মতো বিভিন্ন প্রজাতি থেকে প্রাপ্ত বড়, লাল রঙের ফল উৎপাদিত হয়েছে; আর উইলোলিফ, ড্যান্সি, সুনকি, ক্লিওপেট্রা, কিং, পঙ্কন, এবং অন্যান্য ছোট, হলুদাভ-ফল দক্ষিণাঞ্চলীয় গুচ্ছ থেকে পাওয়া গেছে।[২০] |
তানাকা শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি উইলোলিফ ম্যান্ডারিন(সি. ডেলিসিওসা),সাতসুমা(সি. ঊনশিউ),ট্যাঞ্জারিন(সি. ট্যাঞ্জেরিনা) এর মতো স্বতন্ত্র নাম দিয়ে অসংখ্য প্রজাতির মধ্যে দেশী কমলা লেবু এবং অনুরূপ ফলকে আলাদা করেছে। সুইগংল সিস্টেমের অধীনে, এগুলি একটি প্রজাতির বা সাইট্রাস রেটিকুলা এর বিভিন্ন জাত হিসাবে বিবেচিত হয়। [২১] হডসন তাদের বিভিন্ন উপগোষ্ঠী হিসাবে উপস্থাপন করেন: সাধারণ সাতসুমা (সি. রেটিকুলাটা), কিং (সি. নোবিলিস), ভূমধ্যসাগরীয় (উইলোলিফ), ছোট ফলের (সি ইন্ডিকা, সি. টাচিবানা এবং সি. রেশনি), এবং বিভিন্ন ম্যান্ডারিন হাইব্রিড। [২২] |
জেনেটিক বিশ্লেষণ, কমলা লেবুগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ বৈচিত্র্য সংকরায়নে কারণে হওয়ার ফলে কমলা লেবুর একটি একক প্রজাতির প্রতিনিধিত্বকারী হওয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[৪] টাচিবানা কমলা সহ জিনগতভাবে খাঁটি কিছু সংখ্যক জাত রয়েছে, তালোন সেগুলো পৃথক উপ্রজাতি,সিট্রাস রেটিকুলাট টাচীবানা হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট বিভক্ত হওয়ার বিষয়টি নির্ণয় করেছিলেন[৪] এবং ওয়াং খুজে পেয়েছিলেন যে এগুলো বিভক্ত হওয়ার আগে বন্য ম্যান্ডারিন বংশের শাখা থেকে দুটি চাষকৃত গুচ্ছকে জন্ম দিয়েছিল। সান চু শা মান্ডারিন[৪][১৯] এবং নানফেংমিজু [২৩] এর মতো অন্য জাতগুলোর প্রাথমিক জিনগত বৈশিষ্ট্য চিত্রায়ন অনুসারে সেগুলো খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়েছিল, তবে ওয়াং শনাক্ত করেছিলেন যে সমস্ত পরীক্ষিত মান্ডারিনে কেবল দৃশ্যমান ইঞ্চাং পেপেদা ইনট্রোগ্রেশনই পাওয়া যায়নি বরং চাষকৃত ম্যান্ডারিনের স্বতন্ত্র পোমেলো ডিএনএ(DNA)ও পাওয়া গিয়েছে। [২০] প্রাথমিক সংকরায়নের পরে, সীমিত পোমেলোর অংশের সাথে মান্ডারিন উৎপাদন করার জন্য প্রাথমিক মান্ডারিন-পোমেলো হাইব্রিডগুলি ব্যাকক্রসিংয়ের মাধ্যমে চাষ করা হত,[৪] যা উত্তর ও দক্ষিণের চাষের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়।[২০] সুনকি ও ক্লিওপেট্রা ম্যান্ডারিন সহ একটি 'অম্লীয়' গুচ্ছ রয়েছে যাকে তেমনই পূর্বে খাঁটি বলে মনে করা হত তবে যেহেতু এতে ইনট্রোগ্রেসড পোমেলো ডিএনএ এর ক্ষুদ্র অংশ রয়েছে তাই তা এত তিক্ত যে তা ভোজ্য নয়, তবে এটি মূলত কলম হিসাবে এবং রসের জন্য উৎপাদন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।[৪][২১] কিছু ট্যাঞ্জারিন, সাতসুমা এবং কিং ম্যান্ডারিন সহ কমলা লেবুর আরও একটি গুচ্ছে, পোমেলোর বড় অবদান দেখা যায় এবং সীমিত-পোমেলো সংকরগুলিকে মিষ্টি কমলা বা পোমেলোর সাথে আবারও ক্রসিং করা হয়, এবং একইভাবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকক্রসিং করে, পোমেলো ইনট্রোগ্রেশনের মাঝারি থেকে উচ্চ স্তরবিশিষ্ট জাত চাষ করা হয়।[৪] এভাবে হাইব্রিড কমলা লেবুগুলি ক্লিমেনটাইন, মিষ্টি এবং টক কমলা এবং জাম্বুরার সাথে পোমেলোর অবদানের ধারাবাহিকতায় মধ্যে দিয়ে যায়।[১৯] কমলা লেবুগুলো এবং তাদের সংকর জাতগুলো বিভিন্ন নামে বিক্রি করা হয়। ওলিট্রাট এট ইত্যাদির জিনোম ভিত্তিক প্রজাতির শ্রেণীবিন্যাসে কেবল খাঁটি মান্ডারিনই সি. রেটিকুলাটার অধীনে পড়ে, যখন পোমেলোর মিশ্রণ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় তখন তাদের সি .আওরেন্টিয়ামের জাত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় |
লেবু |
লেবু (সাইট্রাস লিমন ) মূলত রুটেসি পরিবারের ছোট চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। এটি দক্ষিণ এশিয়া সাধারণত, উত্তর পূর্ব ভারতের একটি স্থানীয় গাছ। |
এই গাছের উপবৃত্তাকার হলুদ ফলটি সারা বিশ্বে রান্নার কাজ এবং রান্নার কাজ ছাড়াও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়; মূলত এটির রসের জন্য। এটির রস রান্না ও পরিষ্কারের উভয় কাজেই ব্যবহার করা হয়। [১] লেবুর শাঁস এবং খোসাও রান্না এবং বেকিংয়ে ব্যবহৃত হয়। লেবুর রসে প্রায় ২.২ পিএইচ এর প্রায় ৫% থেকে ৬% সাইট্রিক অ্যাসিড, যার কারণে এটি টক স্বাদযুক্ত হয়। লেবুর রস টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় এটিকে পানীয় এবং খাবার, যেমন লেবুর শরবত এবং 'লেবু মেরিংয়ে পাইয়ের' মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে লেবুকে "হঁজি" বলে। নোয়াখালীতে লেবুকে "কাগজী" বলে।লেবুর উৎপত্তি অজানা, যদিও লেবু আসামে (উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি অঞ্চল), উত্তর বার্মা বা চীনে প্রথম জন্মেছিল বলে ধারণা করা হয়।[১] একটি জিনোমিক গবেষণায়, এটি টক কমলা ও সাইট্রনের মধ্যে একটি সংকর বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[২] [৩] |
খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর পরে, প্রাচীন রোমের সময়কালে, দক্ষিণ ইতালির নিকট হয়ে লেবু ইউরোপে প্রবেশ করে। [১] তবে সেগুলো ব্যাপকভাবে চাষ করা হত না। পরে পারস্য, তারপরে ইরাক ও মিশরে ৭০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে লেবুর প্রচলন করা হয়। সাহিত্যে সর্বপ্রথম লেবুর বর্ণনা পাওয়া যায় আরবি ভাষায় লিখিত একটি প্রবন্ধে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের বাগানগুলোতে লেবু গাছকে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে লাগানো হত। ১০০০-১১৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটি আরব ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। স্পেনের আন্দালুসিয়ায় লেবু ও বাতাবিলেবু গাছের চাষ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ ইবনে আল-আওওয়ামের দ্বাদশ শতাব্দীর কৃষি বিষয়ক বই বুক অন এগ্রিকালচারে প্রকাশিত হয়েছে। [৪] |
পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের জেনোভায় প্রথম লেবুর পর্যাপ্ত চাষ শুরু হয়। পরে ১৪৯৩ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিস্প্যানিওলায় তাঁর ভ্রমণে লেবুর বীজ নিয়ে আসলে আমেরিকায় লেবুর প্রচলন ঘটে। স্প্যানিশ বিজয় পুরো বিশ্ব জুড়ে লেবুর বীজ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। এটি মূলত একটি শোভাবর্ধক উদ্ভিদ এবং ওষুধের জন্য ব্যবহৃত হত। [১] উনিশ শতকে ফ্লোরিডা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্রমবর্ধমানভাবে লেবু রোপণ করা হয়। |
১৭৪৭ সালে জেমস লিন্ডের স্কার্ভিতে ভুগতে থাকা নাবিকদের উপর করা গবেষণাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ডায়েটে লেবুর রস যুক্ত করা হয়, যদিও ভিটামিন সি তখনও ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসাবে পরিচিত ছিল না। [১] [৫] |
মধ্যপ্রাচ্য lemon (লেবু) শব্দটির উৎস হতে পারে। [১] শব্দটি আরবি laymūn বা līmūn এবং ফার্সি līmūn থেকে প্রাচীন ফরাসি ভাষায় limon হয়ে তারপর ইতালিয়ান limone হয়;এটি সাইট্রাস জাতীয় ফলের জাতিগত নাম, যার একটি একজাতীয় সংস্কৃত নাম (nimbu, "লেবু ")। 'বনি ব্রাই' জাতের লেবু , আবদ্ধ মসৃণ, পাতলা খোসাযুক্ত এবং বীজবিহীন। [৭] এগুলির বেশিরভাগই আমেরিকার সান দিয়েগো কাউন্টিতে জন্মে। [৮] |
'ইউরেকা' জাতটি বছরব্যাপী এবং প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত পায়। এটি সুপারমার্কেটে প্রচলিত লেবু, [৯] সারা বছর জুড়ে একসাথে ফল ও ফুল উৎপাদন হওয়ার কারণে এটি 'ফোর সিজনস' ( কোয়াটর সায়সনস) নামেও পরিচিত। বাসাবাড়িতেও এই জাতের লেবুর গাছ পাওয়া যায়। [১০] বৈচিত্র্যময় সবুজ এবং হলুদ রঙের খোসার গোলাপী শাঁসের ইউরেকা জাতের লেবুও আছে। [১১] |
লিসবন লেবুর সাথে ইউরেকা এবং সুপারমার্কেটে অন্যান্য প্রচলিত লেবুর খুব মিল। এটি ইউরেকা জাতটির চেয়ে মসৃণ, খোসা পাতলা এবং এর বীজ কম থাকে বা থাকে না। সাধারণত এটিতে ইউরেকা জাতটির চেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। [১২] [১৩] |
'ফেমিনেলো সেন্ট টেরেসা' বা 'সোরেরেন্টো' [১৪] হল ইতালির স্থানীয় লেবুর একটি জাত। এই লেবুর খোসার উপরের অংশ তেলে ভরপুর। ঐতিহ্যগতভাবে এই জাতটি লিমোনসেলো তৈরিতে ব্যবহৃত । |
'ইয়েন বেন' হল লেবুর একটি অস্ট্রেলিয়ান জাত।লেবু ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস, যা ১০০ গ্রাম রেফারেন্স পরিমাণে (টেবিল) দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৬৪% সরবরাহ করে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি পরিমাণে কম থাকে। |
লেবুতে পলিফেনলস, টের্পেনস এবং ট্যানিন সহ অসংখ্য ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। [১৬] লেবুর রসে বাতাবিলেবুর রসের চেয়ে কিছুটা বেশি সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে (প্রায় ৪৭ গ্রাম/লিটার)। লেবুর রসে জাম্বুরার রসের প্রায় দ্বিগুণ এবং কমলার রসের প্রায় পাঁচগুণ বেশি সাইট্রিক এসিড পাওয়া ।লেবুর রস, বহিরাবরণ এবং খোসা বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানীয়তে ব্যবহৃত হয়। মারমালেড, লেবু দই এবং লেবু লিকার তৈরি করতে লেবুর সব অংশ ব্যবহৃত হয়। লেবু টুকরা এবং লেবুর খোসা খাবার এবং পানীয়ের গার্নিশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। লেবুর খোসার উপরের অংশ বা ফলের খোসার উপরের অংশ ঝাঁঝরি করে পাওয়া অংশ বেকড করা পণ্য, পুডিং, ভাত এবং অন্যান্য খাবারের স্বাদ যোগ করতে ব্যবহৃত হয়।লেবুর রস শরবত, কোমল পানীয় এবং ককটেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি মাছ মেরিনেড করার জন্য ব্যবহৃত হয়,এটির অ্যাসিড মাছের অ্যামাইনো যৌগগুলোকে অনুদ্বায়ী অ্যামোনিয়াম লবণে রূপান্তর করার মাধ্যমে নিরপেক্ষ করে। এটির অ্যাসিড মাংসের শক্ত কোলাজেন ফাইবারকে আংশিক হাইড্রোলাইজ করে এটিকে কোমল করে তোলে। [১৮] যুক্তরাজ্যে, বিশেষত শ্রোভ মঙ্গলবারে, প্যানকেকে প্রায়শই লেবুর রস ব্যবহার করা হয়, । |
লেবুর রস কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেগুলো কেটে রাখলে বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয় এবং বাদামী হয়ে যায় (এনজাইমেটিক ব্রাউনিং ) সেগুলোর ক্ষেত্রে স্বল্প-মেয়াদী প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় যেমন: আপেল, কলা এবং অ্যাভোকাডো। কারণ এর অ্যাসিড এনজাইমগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট করে ।মরোক্কোতে লেবুগুলি বয়াম বা নুনের পিপায় সংরক্ষণ করা হয়। লবণ খোসা ভেদ করে, সেটাকে নরম করে এবং তাদের ঠিক রাখে করে যাতে তারা প্রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী হয়। [১৯] সংরক্ষিত লেবুগুলো বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহৃত হয়। সিসিলিয়ান, ইতালিয়ান, গ্রীক এবং ফরাসি খাবারগুলিতেও সংরক্ষণ করা লেবু পাওয়া যেতে পারে। |
পেকটিন তৈরিতেও খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।পেকটিন হল একধরনের পলিস্যাকারাইড যা জেলিং এজেন্ট এবং স্ট্যাবিলাইজার হিসাবে খাবার বা অন্যান্য পণ্যে ব্যবহৃত হয়।লেবুর খোসার তেলযুক্ত কোষ থেকে লেবুর তেল বের করা হয়। একটি মেশিনে কোষগুলিকে ভাঙা হয় এবং সব তেল বের করে আনতে পানির স্প্রে ব্যবহার করা হয় ।সেন্ট্রিফিউগেশন এর মাধ্যমে তেল জলের মিশ্রণটি ফিল্টার করে তেল আলাদা করা হয়।লেবু গাছের পাতা চা তৈরি করতে এবং রান্না করা মাংস ও সামুদ্রিক খাবার প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।লেবুর বেড়ে উঠতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ৭ °সে (৪৫ °ফা) থাকা প্রয়োজন, তাই তারা সারাবছর উষ্ণ জলবায়ুতে শক্ত থাকে না, তবে তারা পরিণত হওয়ার সাথে সাথে শক্ত হয়ে ওঠে। [২৯] সাইট্রাস জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে লম্বা ডালটি উপর থেকে কেটে কেটে গাছটিকে ঝোপের মতো বৃদ্ধি পেতে দিতে হয় এবং অন্তত বেশি লতাপাতা যুক্ত ডালগুলো ছাঁটাই করতে হয়। পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে সবচেয়ে সতেজভাবে বর্ধনশীল অংশগুলোর আগা ভেঙে দিলে তা গাছটি অনেক বেশি আচ্ছাদিত হয়ে বেড়ে ওঠানিশ্চিত করে। যেহেতু পরিপক্ব গাছে অযাচিত, দ্রুত বর্ধনশীল ছোট ছোট কচি ডাল বেড়ে উঠতে পারে ("ওয়াটার শুট" নামেও পরিচিত), তাই সেগুলো গাছের নীচের বা মাঝের মূল শাখা থেকে তুলে ফেলা হয়। |
রঙ-ভিত্তিক সহানুভূতিমূলক যাদুর ফলস্বরূপ লেবু গাছের কাছে প্রস্রাব করার প্রথাটি [৩০] [৩১] [৩২] চালু হয়ে পারে থাকতে পারে। |
যুক্তরাজ্যের "মায়ার" [৩৩] এবং "ভ্যারিগাটা" [৩৪] জাত দুটির চাষাবাদে রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির অ্যাওয়ার্ড গার্ডেন মেরিট অর্জিত হয়েছে (২০১৭ সালে নিশ্চিতকৃত )। |
কামরাঙ্গা |
কামরাঙ্গা এর বৈজ্ঞানিক নাম: Averrhoa carambola Linn, ইংরেজি নাম: Chinese gooseberry বা Carambola। এটি Oxalidacea পরিবারের Averrhoa গণের অন্তর্ভুক্ত ফলের গাছ। এর উৎপত্তিস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।কামরাঙ্গা একটি চিরসবুজ ছোট মাঝারি আকৃতির গাছের টকমিষ্টি ফল। গাছ ১৫-২৫ ফুট লম্বা হয়। ঘন ডাল পালা আচ্ছাদিত, পাতা যৌগিক, ১-৩ ইঞ্চি লম্বা। বাকল মসৃন কালো রং এর। ফল ৩-৬ ইঞ্চি ব্যাসের এবং ভাজযুক্ত। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ। কামরাঙ্গা টক স্বাদযুক্ত বা টকমিষ্টি হতে পারে। কোন কোন গাছে একাধিকবার বা সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন এ ও সি এর ভাল উৎস। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়।পুরো ফলটাই খাওয়া যায়, পাতলা ত্বকসহ। ফল কচকচে ও রসালো। ফলে আঁশ নেই এবং এর প্রকৃতি অনেকটা আঙুরের মত। কামরাঙ্গা পাকার পর পরই খেতে সবচেয়ে ভাল; যখন হলদেটে রঙ ধারণ করে। এর বাদামী কিনারাগুলো কিছুটা শক্ত এবং কষ ভাব যুক্ত। ফল পাকার ঠিক আগেই পাড়া হয় এবং ঘরে রাখলে হলুদ রঙ ধরে। যদিও এতে মিষ্টতা বাড়েনা। বেশি পেকে গেলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।[২][৩] পাকা কামরাঙ্গা অনেক সময় রান্না করেও খাওয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়াতে আপেল ও চিনি দিয়ে রান্না করার চল আছে। চীনে মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে সবজি হিসেবে রান্না করা হয়, আচার বানানো হয়। জ্যামাইকাতে কামরাঙ্গা শুকিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে। [৪] হাওয়াই ও ভারতে কামরাঙ্গার রস দিয়ে শরবত বানানো হয়।কামরাঙা বেশি খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। যাদের কিডনি ভাল, স্বাভাবিক পরিমাণে কামরাঙ্গা খেলে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু অনেকদিন ধরে বেশি কামরাঙ্গা খেলে কিডনি বিকল হতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তারা যদি অল্প পরিমাণ কামরাঙ্গা বা রস বা একটি বা কয়েক টুকরা কামরাঙ্গা খায়, তাহলে কিডনি বিকল হয়ে যায় |
বৃক্ষ |
বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়: কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কাণ্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুধাবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয়।[১] কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার[২] থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত।[৩] আবার কিছু লেখক গাছের কাণ্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি।[৪]; অন্যান্য কাষ্ঠবহুল বৃক্ষ, যারা এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না, যেমন শাখান্বিত প্রধান কাণ্ড অথবা ছোট আকৃতির গাছকে গুল্ম বলা হয়। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় বৃক্ষ দীর্ঘজীবী হয, কোন কোন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।[৫] |
বৃক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং এদের পত্রপল্লবের নিচে আবহাওয়া-সুরক্ষিত বাস্তুসংস্থান তৈরি করে। বৃক্ষ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ল্যান্ডস্কেপিং ও কৃষির উপাদানো বটে, যার কারণ হল তাদের সৌন্দর্যগত আবেদন ও বিভিন্ন ধরনের ফল। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ঘরবাড়ি তৈরি সহ নানান কাঠামো তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৪,০০০ কোটি গাছ ছিল, প্রতি মানুষে প্রায় ৬১ টি।বৃক্ষ উদ্ভিদের অনেক বর্গ ও গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। বৃক্ষ বিভিন্ন রকম গড়ন প্রকার, পাতার রকমফের এবং আকৃতি, বাকলের বৈশিষ্ট এবং প্রজনন অঙ্গের বৈচিত্র প্রদর্শন করে। |
উদ্ভিদের বৃক্ষরূপটি পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়ায় উদ্ভব হয়েছে, যা একে সমান্তরাল বিবর্তনের একটি চিরায়ত উদাহরণে পরিণত করেছে। পৃথিবীতে প্রায় ১,০০,০০০ প্রজাতির বৃক্ষ আছে, যা মোট উদ্ভিদ প্রজাতির ২৫%।[৭] অধিকাংশ বৃক্ষ প্রজাতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মে যার অধিকাংশই এখনো উদ্ভিদবিদরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি, যার ফলে প্রজাতি বৈশিষ্ট ও সীমা সম্বন্ধে এখনো আমরা খুব অল্পই জানতে পেরেছি।[৮] |
প্রাচীনতম বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে ট্রি ফার্ণ, হর্সটেইল এবং লাইকোফাইট, যারা কার্বোনিফেরাস যুগে উদ্ভূত হয়েছিল; ট্রি ফার্ণ এখনো তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, কিন্তু এখনকার হর্সটেইল এবং লাইকোফাইটরা আর বৃক্ষ রূপে নেই।পরবর্তীতে ট্রায়াসিক যুগে কনিফেরাস, জিংকগো, সাইকাড এবং অন্যান্য নগ্নবীজীর আবির্ভাব ঘটে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ক্রেটাসাস যুগে জন্ম নেয় পুষ্পক উদ্ভিদ। বর্তমানে বেশিরভাগ বৃক্ষ প্রজাতিই সপুষ্পক (আবৃতবীজী) এবং কনিফার।বৃক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ হল মূল, কাণ্ড, ডালপালা, বাকল, ফুল, ফল এবং পাতা। বৃক্ষকাণ্ড মূলত সাহায্যকারী ও পরিবহন কলা জাইলেম ও ফ্লোয়েম দ্বারা গঠিত। কাষ্ঠ জাইলেম কোষে তৈরি, বাকল তৈরি ফ্লোয়েম ও অন্যান্য অন্যান্য বহিঃস্থ ভাস্কুলার ক্যাম্বিয়াম টিস্যুতে। কাণ্ডের ব্যাস বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বৃক্ষকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়: এক্সোজেনাস ও এন্ডোজেনাস। বেশিরভাগ বৃক্ষই (সব কনিফার এবং প্রায় সব বৃহৎপত্রী বৃক্ষ) এক্সোজেনাস, এদের কাণ্ডের বাইরের দিকে নতুন নতুন কাষ্ঠের সৃষ্টি হবার মাধ্যমে এদের বৃদ্ধি ঘটে। এন্ডোজেনাস বৃক্ষে (যেমন পাম এবং ড্রাগন গাছ ইত্যাদি) ভেতরের দিকে নতুন অংশাদি তৈরির কারণে বৃদ্ধি ঘটে। |
সেগুন |
সেগুন (ইংরেজি: Teak) হল নিরক্ষীয় ও ক্রান্তিয় অঞ্চলের এক প্রজাতির গাছ এবং এ গাছের কাঠ । এর বৈজ্ঞানিক নাম Tectona grandis ।[১] এ গাছের কাঠ বেশ শক্ত হয় এবং আসবাবপত্র বানাতে সেগুন কাঠের ব্যবহার সমাদৃত । সেগুন গাছ একটি বৃহৎ পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ যা শক্তকাঠের মিশ্রবনভূমিতে বেশি দেখা যায় । সেগুন গাছের ফুল আকারে ছোট, রং সাদা এবং সুগন্ধ যুক্ত আর এর পাতা আকারে বড় এবং পেছন দিকে ছোট আঁশ থাকে ।সেগুন একটি বৃহদাকার পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ যা উচ্চতায় ৪০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কান্ডগুলো ধূসর বা ধূসর–বাদামি রংয়ের। পাতাগুলো অনেকটা ডিম্বাকার এবং মাঝে বেশ চওড়া, দৈর্ঘ্যে ১৫–৪৫ সে.মি. (৫.৯–১৭.৭ ইঞ্চি) এবং প্রস্থে ৮–২৩ সে.মি. (৩.১–৯.১ ইঞ্চি)। পাতাগুলো শক্ত বোটার দ্বারা কান্ডের সাথে যুক্ত থাকে এবং বোটা গুলো দৈর্ঘ্যে ২–৪ সে.মি. (০.৮–১.৬ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। পাতার প্রান্তগুলো সমান ।[২] |
সুগন্ধি সাদা ফুল গুলো ২৫–৪০ সে.মি. লম্বা আর ৩০ সে.মি. ছড়ানো গুচ্ছের মধ্যে জুন থেকে আগস্ট মাসে ফুটে থাকে [৩]। ফল গুলো পরিপক্ব হয়ে অক্টোবর - নভেম্বর মাসে গাছ থেকে ঝরে পড়ে । একটি ফলে মাত্র একটি বীজ থাকে । বীজ থেকে চারা গজানোর জন্য বীজকে বারবার পানিতে ভেজান ও রোদে শুকানোর দরকার হয় ।সেগুন গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, বিশেষত: ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া । তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে এ গাছ পাওয়া যায় ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয় যার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশকসমূহ । পৃথিবীর মোট সেগুন কাঠের যোগানের একতৃতীয়াংশই আসে মায়ানমার থেকে। |
মেন্দা |
এই গাছটি বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে চাপাইত্তা, কারজুকি, রতন, খারাজুরা নামেও পরিচিতি রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো পেটের পীড়া, রক্ত-আমাশা হলে পাতা বেটে পানিতে মিশিয়ে দুইবেলা খাওয়া হয়। ড. তাহমিনা হক বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। |