text
stringlengths
0
4.32k
যদি গাছ লাগিয়ে বাসাবাড়ির ছাদগুলোকে একটুখানি সবুজ করা যায়, তাহলে শহরের তাপমাত্রা কমে আসবে। ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে পারে।
এমনটাই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। একটা সবজির গাছ তিন মাসের জন্য তিনজনের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। শহরগুলোতে ফাঁকা জায়গা কম। সেজন্য নতুন বাড়ির অন্তত ২৫ শতাংশ ছাদে বাগান করা উচিত। শুধু পরিবেশগত দিকই নয়, ছাদ বাগানে বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়ারা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হতে পারেন। শখের পাশাপাশি বাণিজ্যিক দিক মাথায় রেখে অনেকেই ছাদে বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। আড়াই কাঠার বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বছরে ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। বাংলাদেশের আছে মাত্র ১৭.৫ ভাগ। দিন দিন তা কমে আসছে। শুধু রোহিঙ্গাদের বসবাস করতে দিয়ে ৪ হাজার একর জায়গার বনভূমি উজাড় হয়েছে।
গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবহাওয়ার আচরণ বদলে গেছে। গরমের সময় ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডার সময় গরম পড়ে। কৃষি উৎপাদন হ্্রাস পেয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। বই পড়া উৎসবের মতো গাছ লাগানোরও উৎসব হতে পারে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ উৎসবের আয়োজন করতে পারে।
চীনের চংকিং শহরের শিক্ষার্থীদের বছরে একবার গ্রামে পাঠানো হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তখন ১০০টি করে বৃক্ষরোপণ করে। গাছ, মা, মাটির সঙ্গে তাদের সর্ম্পক উন্নত করে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় তো বটেই, ব্যক্তি পর্যায়েও গাছ লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের আশপাশে থাকা অনেক গাছপালা, উদ্ভিদ বা তরুলতা নানা ঔষধি কাজে বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
অনেকেই এসব গাছের ব্যবহার জানেন না। এ কারণে ঘরের আশপাশে, অযত্নে, অবহেলায় এসব গাছ বেড়ে উঠছে। আবার সংরক্ষণের অভাবে অনেক গাছ ও উদ্ভিদ এখন হারিয়ে যেতেও বসেছে। কিছু কিছু গাছ আছে যে গুলি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কাজ লাগে। যেমন-
মেন্দা : এই গাছটি বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে চাপাইত্তা, কারজুকি, রতন, খারাজুরা নামেও পরিচিতি রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো পেটের সমস্যা, রক্ত-আমাশা হলে এই পাতা বেটে পানিতে মিশিয়ে দুইবেলা খাওয়ানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে মেন্দা পাতা। এই গাছের বাকল ও পাতা উভয়ই ব্যবহার করা হয়।
ভাট ফুল বা বনজুই: কৃমি নিরাময় এবং ডায়রিয়া সারাতে কাজ করে এই পাতা। কাচা হলুদের সঙ্গে এই পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। যাদের চর্ম রোগ রয়েছে, তারা এই ফুলের রস মালিশ করলে উপকার পাবেন।
নিম : ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকে নিমের পাতা শুকিয়ে ছোট ছোট ট্যাবলেট বানিয়ে সকাল বিকেল খেয়ে থাকেন। এছাড়া বহুকাল থেকে চিকেন পক্স, চামড়ার অ্যালার্জির মতো সমস্যায় নিমের পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পোকা মাকড়ের কামড়ে ক্ষত হলে, সেখানে নিম আর হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। দাঁতের ব্যথার জন্য নিমের ডালের রস ব্যবহার করা যায়।
তুলসী : তুলসীর পাতা নানা ওষুধি গুণসম্পন্ন। সর্দিজনিত রোগে এই গাছটির পাতা খাওয়া হয়। অনেকে চায়ের সঙ্গে ভিজিয়েও এই পাতা খান। কারও কারও মতে, তুলসী পাতা ভেজে ঘি দিয়ে নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
চিরতা : এটি অনেক স্থানে কালমেঘ নামেও পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই পাতা উপকারী। পাতাগুলো গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাবেন। পেট খারাপ, ডায়রিয়া, জ্বর ও বাত ব্যথার ক্ষেত্রে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে এই পাতার গুঁড়া খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
পাথরকুচি : জ্বর ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় পাথরকুচির পাতা বেটে খেলে উপকার মেলে। চামড়ার অ্যালার্জির জন্যও এটি বেটে ব্যবহার করা যায়। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় পাথরকুচির পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
কেশরাজ বা কালোকেশী : উপমহাদেশে বহুকাল ধরেই চুলের যত্নে এই গুল্মজাতীয় গাছটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে।
বাসক পাতা : ঠান্ডার জন্য, ফুসফুসের নানা সমস্যায় বাসক পাতার রস ফুটিয়ে সেই রস বা পানি খাওয়ানো হয়। বৈজ্ঞানিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, শ্বাসনালীর সমস্যায় লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বাসকের রস। তবে বেশি পরিমাণে খেলে বমি ভাব হতে পারে।
অর্জুন : এই গাছের মূল, ছাল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও ফুল ঔষধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। হৃদরোগ, বুকে ব্যথার জন্য অর্জুনের ছাল গুঁড়ো করে খেতে পারেন। মচকে গেলে বা হাড়ে চিড় ধরলে রসুনের সঙ্গে মিশিয়ে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
জবা : পেট খারাপের জন্য জবা গাছের পাতা ও ফুল গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। জন্ডিসের জন্য এই পাতার জুস খাওয়া হয়। এছাড়া এই ফুলের রস নারীরা মাসিক ও স্রাবজনিত সমস্যার জন্য খেয়ে থাকেন।
লজ্জাবতী : অনেকে একে লাজুক লতা বা অঞ্জলিকারিকাও বলে থাকেন। এই গাছের শেকড় বেটে গুড়ো করে ডায়রিয়ার জন্য খাওয়া হয়ে থাকে। এই পাতা ঘা-পাঁচড়া নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। গাছের পাতা ও ফুল বেটে শরীরের ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া আমাশয়, হাত-পায় জ্বলুনির জন্য অনেকে লজ্জাবতী গাছের মিশ্রণ ব্যবহার করেন।
দূর্বা ঘাস : মাঠে, ঘাটে, রাস্তার এই ঘাস অবাধে জন্মালেও অনেকেরই এর ঔষধি গুণের কথা জানা নেই। রক্তক্ষরণ, আঘাতজনিত কেটে যাওয়া, চর্ম রোগে এই ঘাসের রস অনেক উপকারী। কোথাও কেটে গেলে এই পাতার রস লাগালে রক্তপাত তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়।
থানকুনি : বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি ঔষধি গাছ থানকুনি পাতা। যেকোনো পেটের ওষুধের জন্য থানকুনি পাতা কার্যকরী। এটা পাতা বেটে রস বা ভর্তা করে খাওয়া হয়। এই পাতা হজম শক্তি বাড়ায়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুল পড়া কমায়, ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
সজনে : উচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের বিভিন্ন ওষুধে সজনে পাতা ও ফল ব্যবহার হয়। সজনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কাচা রসুনের সঙ্গে সজনে গাছের পাতা একসাথে মিলিয়ে খেয়ে বাতের ব্যথা উপশম হয়। এছাড়া এই গাছের পাতা ও ফল অনেক পুষ্টিকারক বলে গবেষণায় দেখা গেছে। রুচি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই গাছের পাতা সহায়তা করে।
খেজুর পরিবেশবান্ধব, স্থানসাশ্রয়ী একটি বৃক্ষ প্রজাতি। এ প্রজাতি দুর্যোগ প্রতিরোধী বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে খামারির আর্থিক লাভ ও স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত বেশ সুপ্রাচীন। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং মৌসুমি কর্মসংস্থানে খেজুর গাছের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে বাংলাদেশের সর্বত্রই খেজুর রস, খেজুর গুড় দারিদ্র্য বিমোচনসহ বাঙালি সাংস্কৃতিতে রসঘন আমেজ লক্ষ করা যায়।
১. বৃক্ষ পরিবেশ প্রকৃতি : বাংলাদেশের মাটি ও কোমল প্রকৃতি খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড়, খেতের আইল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে। তবে নদীর তীর, আংশিক লবণাক্ত এলাকা, বরেন্দ্র এলাকাসহ চরাঞ্চলেও জন্মে। বাংলাদেশের সব জেলা বিশেষ করে বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে খেজুর গাছ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ করা হয়। যশোর ও ফরিদপুর দেশের সর্বাধিক খেজুর রস ও খেজুর গুড় উৎপন্ন অঞ্চল।
২. বৈজ্ঞানিক পরিচয় ও বিস্তৃৃতি : খেজুর বৃক্ষ একবীজপত্রী আবৃতবীজী উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম Wild Date Palm, Silver Date Palm, Indian Wild Palm আঞ্চলিক নাম খাজুর, খেজুর ও খাইজুর। উদ্ভিদ তাত্ত্বিক পরিচয়Phoenix sylvestris (Roxb.) এবং অ্যারাসি (Arecaceae) বা তালগোত্রের সদস্য। এ পরিবারের একটি গণ phoenix । এই গণের অন্য কয়েকটি চেনা গাছ খুদি খেজুর (Phoenix acaulis) ও হেতাল (Phoenix paludosa) ।
৩. খেজুর বৃক্ষস্বরূপ : শাখা-প্রশাখাবিহীন একক কা-যুক্ত ব্যতিক্রমধর্মী খেজুর গাছ। কাণ্ডটি সরল ও গোলাকার। একটি কাণ্ডই একাকি বেড়ে ওঠে এমন দৃশ্য বৃক্ষের ক্ষেত্রে খুব কম দেখা যায়। গাছের ট্রাংক বেশ মজবুত ও গোলগাল। কা-ের শীর্ষভাগ যা সদা পত্র শোভিত লাবনি মাথি বেশ দৃষ্টিনন্দন। রস আহরণের জন্য খেজুর গাছ বছরে ন্যূনতম একবার কাটা হয় এবং গোলগাল রাখা প্রয়োজন হয়। শীত ঋতুতে উদ্ভিদ জগতে এ নেমে আসে এক প্রাণহীন রসহীন বিবর্ণতার ছায়া তখন খেজুর গাছ রসের বারতা নিয়ে আসে। ফাগুনে প্রকৃতিতে খেজুর ফুল ফোটে। প্রকৃতির দান এর ফুল বিন্যাস যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতঋতুতে খেজুুরমাথিতে মুচি (পুষ্পমঞ্জরি) আসে। খেজুর ফুল ভিন্নবাসী, পুষ্পমঞ্জরি দেখে পুরুষ ও স্ত্রী গাছ চিহ্নিত করা যায়। শুধু স্ত্রী গাছে ফুল ও ফল ধরে পুং গাছে নয়। পুং পুষ্পমঞ্জরি খাটো, স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরি লম্বা ও ফুলের বর্ণ সাদা। খেজুর ফুল শক্ত মোচা থেকে বের হয়। মোচা থেকে ফুল ফোটা এক অপার মহিমা, মনে হয় কোথা থেকে কোন ফুলপরি কণ্টাকীর্ণ গাছের মাথিতে মন্ত্র দিয়ে ফুল ফুটিয়েছে। খেজুরের মুচিতে এক ধরনের সাদা উপাদান, যা পরাগরেণুর সুবাস।
৪. বহু গুণে গুণী খেজুর বৃক্ষ : খেজুরের বহুল ব্যবহার নিয়ে বর্ণনার শেষ নেই। রস দিয়ে নানা রকম পিঠা, পায়েস, গুড়, কুটির শিল্প, আয় ও কর্মসংস্থান হয়। সার্বিক বিবেচনায় খেজুর সমধিক গুরুত্ববহ একটি প্রজাতি।
খেজুর ফলের পুষ্টি উপাদান : এই উদ্ভিদ মানবদেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ। খেজুর ফল ফাইবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা খেজুর ফলের মধ্যে ১৮.০ গ্রাম জলীয় অংশ, মোট খনিজ পদার্থ ১.৭ গ্রাম, ৩.৯ গ্রাম আঁশ, ৩২৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২.২ গ্রাম আমিষ, ০.৬ গ্রাম চর্বি, ৭৭.৫ গ্রাম শর্করা, ৬৩ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ এবং অল্প পরিমাণ ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা, পুষ্টিকর এবং উপাদেয়। খেজুর রসে অ্যাসপারটিক এসিড, নাইট্রিক এসিড এবং থায়ামিন বিদ্যমান।
খেজুর রস : শীত ঋতু এলেই গ্রামীণ সংস্কৃতিতে খেজুর রসের কথা মনে পড়ে। ফোঁটা ফোঁটা সঞ্চিত রস নির্গত হবে চোং দিয়ে। হাঁড়িতে জমে রসের ফোঁটা। এভাবে একটি গাছ দৈনিক গড়ে ৫-৬ লিটার রস দিয়ে থাক। কথিত আছে ‘খালি কলসি রেখে দিলে ভরে যায় রসে, সেই রসে দিয়ে জ্বাল মন ভরে সুবাসে’। আবার গাভীর সাথে তুলনায় বলা হয় ‘মাইট্যা গোয়াল কাঠের গাই-বাছুর ছাড়া দুধ পাই’। কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস, মন মাতানো ঘ্রাণ শহরে বিরল। শীতের সাকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি। কবির ভাষায়, ‘এমন শীতলমিষ্টি কোথা আছে নীর? পান মাত্র তৃষিতের জুড়ায় শরীর’। তাই এ গাছকে অনেকে শখের বসে ‘মধুবৃক্ষ’ বলে থাকে।
খেজুর রসের পায়েশ : খেজুর রস দিয়ে তৈরি নানা রকমের পায়েশ, ক্ষির খেতে খুবই মজা। খেজুরের রস ও পিঠার সাস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। রস দিয়ে হরেক রকম পিঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। খেজুর পিঠা ও রসের নানা রেসিপি শিরনি-পায়েস, ঘনরসে চিতৈ পিঠা, খেজুর গুড়-নারকেল মিশ্রণে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
খেজুর রস থেকে গুড় : খেজুরের গুড় তৈরি করতে হলে এক ধরনের বিশেষ জ্ঞান থাকা চাই। খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা একটি শিল্প। রসের সাথে জ্বাল দেয়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খেজুরের ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়, বেশ সুস্বাদু ও সুপরিচিত। গাছে নলি দেয়ার প্রথম দিকের রস থেকে তৈরি গুড়কে নলেন গুড় বলে। পাটালি গুড়ের কদর এখনও বিদ্যমান। গুড় বিক্রির অর্থনৈতিক উপযোগিতা রয়েছে। পরিকল্পিত উপায়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে খেজুর গুড় রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পাটালি গুড় ও কোচড় ভরা মুড়ি প্রচলিত ও পরিচিত দৃশ্য, খেতে ভারি মজা। দুপুরে খেজুরের ভিড় গুড় আজকালের প্রজন্মের কাছে অচেনা এ মধুর স্মৃতি। খেজুরের গুড়ের চিনি সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। খেজুরের গুড় থেকে তৈরি বাদামি-চিনির স্বাদ ও ঘ্রাণ বেশ স¦াতন্ত্র্যম-িত।
খেজুর বৃক্ষ ও কুটির শিল্প : কুটির শিল্পে খেজুরের পাতার ব্যাপক ব্যবহার ও কদর রয়েছে। খেজুর পাতা দ্বারা তৈরি করা রকমারি হাত পাখা, লছমি, ঝাড়–, ঝুড়ি, থলে, ছিকা ও নানা রকম খেলনা এখনও অতি সমাদৃত। খেজুর পাতার পাটির কদর ঘরে ঘরে। খেজুর পাতা দিয়ে নকশি পিঠা করা হয়। কুমোড়দের শীত মৌসুমে খেজুরের রস ধারণ করার হাঁড়ি তৈরির হিড়িক বাড়ায়।
খেজুর বৃক্ষ ও ভেষজ গুণাগুণ : সর্দি-কাশি নিরাময়ে খেজুর ফল উপাদেয়। খেজুরের পাতা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে থাকে। হৃদরোগ, জ্বর ও উদরের সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর। গাছের শিকড় দাঁত ও মাড়ির প্রদাহ নিবারণে ব্যবহৃত হয়। রস মুখে রুচি আনে।
খেজুর বৃক্ষ ও জ্বালানি কাঠ : খেজুর গাছ গ্রামীণ পরিবারের জ্বালানি দেয়। গৃহের নানা কাজে যেমন তক্তা, আড়া, খুঁটি তৈরি ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। খেজুর কাঠ আঁশযুক্ত বলে এর দাহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই গ্রামগঞ্জে খেজুর লাকড়ির সমাদর রয়েছে।
খেজুর বৃক্ষ ও উপজাতি সম্প্রদায় : খেজুর রস বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রিয় পানীয়, বাড়তি শক্তির জোগান দেয়। শীতকাল তাদের কাছে বেশ স্মৃতিঘন। নতুন চাল আর গাঁজনকৃত খেজুর রস বিশেষ এক ধরনের আনন্দের আয়োজন, মানসিক তৃপ্তি। খেজুর গাছ খরা সহ্য করে বিধায় বরেন্দ্র অঞ্চলে খেজুর গাছের চাষ প্রচলন বেশ লক্ষণীয়।
খেজুর বৃক্ষ ও গাছি সম্প্রদায় : ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটিতে যাবো, এই হলো খেজুর বৃক্ষকে কেন্দ্র করে তৈরি গাছি সম্প্রদায়ের বুলি। তাদের শিউলিও বলা হয়। এরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। তাই শীতকালে গাছিদের কদর বেড়ে যায়, তারা দিনভর মহাব্যস্ত থাকেন। গাছিরা খেজুর গাছ তোলা-চাছার জন্য দা, চোং বা নলি, কাঠি, দড়ি, ভাঁড় ইত্যাদি জোগাড় করার জন্য ব্যস্ত থাকেন। শীতকালে গাছিদের কর্মসংস্থান হয়। একজন গাছি দৈনিক ৫০টি গাছ কাটতে পারেন।
খেজুর রস ও সামাজিক সম্পর্ক : এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে বেড়াতে গেলেও সাথে রস বা গুড় নিয়ে যেতে দেখা যায়। খেজুরের মুচিতে এক ধরনের সাদা পাউডার জাতীয় পদার্থ থাকে, যা মুখে মাখে, শিশুরা নানা খেলায় মেতে ওঠে।
৫. খেজুর কবিতা ও প্রবচনের ফল : বৃক্ষ প্রেমিক জীবনানন্দের ভাষায় সহসাই মূর্ত হয়েছে, বসেছে বালিকা খর্জ্জুরছায়ে নীল দরিয়ার কূলে। বাংলার রূপ কবিতায় সফিনাজ নূরুন্নাহারের ভাষায় মায়ের হাতের রসের পিঠা, মধুর মতো খেজুর মিঠা। তাই মনে পড়ে মায়ের কথা, মনে পড়ে মামা বাড়ি বেড়ানোর স্মৃতিকথা। আবার খেজুর গাছ নিয়ে নানা ধরনের প্রবচন, কবিতা গাঁথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটি খেজুর গাছ পাইয়া, লোভে কাটে বাঙালে আগা থুইয়া গোড়া কাটে রস নাহি মিলে। ও তার আগডালেতে থাকে রস রসিক বিনে কে জানে। নিত্যনতুন বেরোয় রস খেলে তা ফুরায় না, প্রেমের গাছের রসের হাঁড়ি পাতল যে জনা। সাধারণ গিরস্থ চাষা জ্বাল দেতে না পায় দিশা, হাইলাদের পাইলে তারে করে মিঠাই ম-া খানা। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কথামালা, অলি-গাঁও বলি-গাঁও জলী ধান চষে, করে গুড় পাটালি খাজুরের রসে। মামুয়ে পাড়ৈন চিরল পাতা মামীয়ে রান্ধেন ভাত, কান্দিও না গো সোনামামী মামু তোমার বাপ। খেজুর গাছ নিয়ে ঘুমপাড়ানি ছড়া, ছুট ছুট (ছোট) খাজুর গাছ, এই নিয়ে খেজুরার বার দ্যাশ (দেশ), এই খাজুর পাকিব, খেজুরার মা কাটিব, ও রসুন খালা গো, খেজুরার মায়েক বুজাও (বোঝাও) গো না কাটে না যেন। রাজশাহী অঞ্চলের লোকজ কথা, আমি ভাই একলা খেজুর গাছের বাকলা। খেজুর গাছ নড়ে চড়ে তীর ধনুকে বাড়ি পড়ে।
লোকজ জ্ঞান ও অপ্রচলিত ব্যবহার : কাঁচা খেজুরের বীজ পানের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামে নারীরা অপরিপক্ব খেজুর বিচি পানের সাথে সুপারির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। খেজুরের আঁটি দিয়ে শৈশবের গর্তখেলার কথা আজও মনে পড়ে। খেজুরতলায় ঝরে পড়া পাকা খেজুর কুড়াতে গিয়েছি শৈশবে কত গদ গদ। খেজুর কাঁটা বন্যপ্রাণীর হাত থেকে ফসল রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। নতুন বেয়াইর সাথে খেজুর কাঁটার ব্যবহার সম্পর্কিত ছড়া বেশ মজার হাসি তামাশার খোরাক দিত। বেয়াইরে বসতে দেবো কি? খেজুর কাঁটার মরা বুনাইছি, বেয়াইর বসতে লজ্জা কি? অমন মরায় বেয়াই বসেনি? খেজুরের মাথি খাওয়া একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি, নরম ও কোমল সুমিষ্ট খেজুর মাথি পুষ্টিজ্ঞান।
খেজুর ও সেরা স্থান : খেজুর গাছকে কেন্দ্র করে অনেক নান্দনিক নাম শহর-বন্দরে প্রচলিত যেমন খেজুরতলা, খেজুরবাগান, খেজুুরবাড়িয়া, শিবচরের খাজুর গ্রাম। ঢাকার খেজুরবাগান একটি প্রতিষ্ঠিত নাম।
খেজুর ও পাখির খাদ্যাবাস : শীতের সময় খেজুর গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দে প্রকৃতি প্রাণ পায়। খেজুর গাছ পাখির প্রিয় আবাস। পাখিরা এখানে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে ও নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে। খেজুর গাছে বাবুই ও চড়–ই বাসা বানায়, বাচ্চা তুলে। কাঠঠোকরা, ঘুঘু ও চড়–ই খেজুর গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, সাদা গলা মুনিয়া খেজুর গাছের মাথায় বাসা করে। শালিক, ঘুঘু, কাক, কোকিল, ময়না, মৌটুসি নরম ফল খায়।
খেজুর গাছ কৃষি বন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি : সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এ গাছ রেললাইন ও বসতবাড়ির ফটকে বেশ দৃষ্টিনন্দন। বরেন্দ্র অঞ্চলে খেজুর গাছ বেশ লক্ষণীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। গ্রাম বাংলার মেঠো পথের দুইপাশে তাকালে চোখে পড়বে সারি সারি খেজুর গাছ। রাস্তার দুই ধারে, আবাদি জমিতে, ক্ষেতের আইলে সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ জন্মেœ যা কৃষি বন বলে পরিচিত। দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি জমিতে বাণিজ্যিক খেজুর গাছ আবাদ একটি উত্তম পেশা বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহীতে কৃষি জমিতে খেজুর গাছ সফলতার দ্বার উন্মুক্ত করছে। এ গাছের সাথে সখ্য রয়েছে এমন সবজি প্রজাতি গাছআলু, লাউ, ধুন্দুল, লালশাক, সরিষা, বেগুন ইত্যাদি। একটি খেজুর গাছ ১০-১৫ বছরে ফল দেয়। প্রাকৃতিক অথবা চারা বা বীজ বপনের মাধ্যমে খেজুর গাছ জন্মে। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হয় এবং ১০-১৫ দিনে বীজ অংকুরিত হয়। প্রতি কেজিতে ১৩০০-১৫০০টি বীজ পাওয়া যায়। রস আহরণের জন্য গাছ ব্যবস্থাপনা গোছ-গাছ রাখা প্রয়োজন হয়। তাই কথায় বলা হয় খেজুর বাড়ে কোপে। খেজুর গাছের পাতা ও মাথি মাঝে মধ্যে কেটে-ছেঁটে গাছের গোল-গাল গড়ন ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হয়। গাছ বছরে ন্যূনতম একবার কাটা হয়, শোভিত ও বেশ দৃষ্টিনন্দন রূপ দেয়া হয়।
৬. উৎপাদন, বাজার ও কর্মসংস্থান : প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাংলাদেশে ১২০০৬ হেক্টর জমিতে মোট ৮১৫৮৩ মে. টন খেজুর উৎপাদিত হয়েছে। খেজুর উৎপাদনের শীর্ষ জেলাগুলো হলোÑ যশোর, ফরিদপুর, রাজশাহী ও নাটোর। প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুর রস বেশ সস্তা ও পুষ্টিকর। একটি গাছ দৈনিক গড়ে ৫-৬ লিটার রস দেয়। একটি গাছ থেকে প্রতি মৌসুমে গড়ে ২৫-৩০ কেজি গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি গুড়ের মূল্য ৫০-৬০ টাকা। ২০০ খেজুর গাছ আছে এমন পরিবার পুরো বছরের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একবিঘা জমিতে প্রায় ১ থেকে ১৫০ গাছ রোপণ করা সম্ভব। ১টি প্রতিবেদনে দেখা যায় বাঘা উপজেলায় চাষিরা প্রতি বছর ৮-১০ কোটি টাকা আয় করেন খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করে। খেজুর ফল বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
খেজুর গুড়ের বাজার : শীত মৌসুমে গুড় তৈরি বেশ বড় পেশা। সারা দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গুড় ব্যবসায়ী গুড় বিপণন ও পরিবহনের সাথে যুক্ত থাকে। এ সময় গুড় বিপণন নিয়ে রব-রব পরিস্থিতি তৈরি হয়। গ্রামীণ হাটবাজারে প্রান্তিক মানুষ নগদ কিছু অর্থ কামিয়ে নেয়। বাংলাদেশে যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চলে সর্বাধিক খেজুর রস ও গুড় উৎপন্ন হয়। বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী অঞ্চল গুড় ও পাটালি করা হয়। বেনাপোল-শার্শা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। মাদারীপুরেও বৃহৎ বাজার বসে। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে বেশ রস উৎপন্ন হয়।
আরবের খেজুর : আরবের প্রধান ফল খেজুর। এ বৃক্ষ মহিমা নিয়ে সূরা আন্’আ-ম্, আয়াত-৯৯-১০০ নাজিল হয়েছে। যার অর্থÑ ‘এবং তিনি খেজুরের মোচা হতে ফলের থোকা থোকা বানাইয়াছেন, যাহা বোঝার ভরে নুইয়া পড়ে। এই গাছগুলো যখন ফলধারণ করে তখন উহাদের ফল বাহির হওয়া ও উহার পাকিয়া যাওয়ার আবস্থাটা একটু সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাইয়া দেখিও। এই সব জিনিসের সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিহীত রহিয়াছে তাহাদের জন্য যাহারা ঈমান আনে’। তাই আরবি খেজুরের প্রতি আমাদের দুর্বলতা প্রবল।
তবে আমাদের দেশের খেজুর এবং আরবের খেজুর ফলের মধ্যে বেশ তারতম্য রয়েছে। আমাদের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর আর সৌদি আরবের খেজুর ফল উৎপাদননির্ভর। তাই আমাদের দেশে আরবি খেজুর তথা বেহেশতি ফল চাষের কথা বলা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে মোতালেব মিয়ার সৌদি খেজুর চাষের সাফল্যের কথা বলা যায়। তিনি সৌদি খেজুর চাষে একটা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছেন কঠিন সাধনা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে। দেশবাসীর জন্য মোতালেব মিয়া তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
৭. খেজুুর ও হারানো সংস্কৃতি : কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাস রসের মাস। রস আহরণে গাছ তৈরি করার ধুম পড়ে এসময়। গাছিদের গ্রামীণ জনপদে এখন কম দেখা যায়, পেশা ছাড়ছেন অনেক গাছি সম্প্রদায়। খেজুর রস বিক্রির চিত্র এখন আর দেখা যায় না। গাছিদের স্বার্থ ও আগ্রহ ধরে রাখা দরকার। এই উদ্ভিদের উৎকর্ষ সাধন এবং সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের মৌলিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
উপসংহার : বৈরী জলবায়ু ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে এসব প্রজাতির ওপর প্রভাব পড়ছে। ভাটির দেশে এ উদ্ভিদ প্রজাতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এই উদ্ভিদ অত্যধিক লবণ পরিবেশে ও দীর্ঘ খরা পরিবেশে আশানুরূপ রস দিতে পারে না। নদীর পাড়, রাস্তার প্রান্তে প্রজাতি দেখা যায় না। বসতবাড়িতে খেজুর গাছের আধিক্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আশার কথা, বন বিভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুর গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, এই উদ্ভিদের উৎকর্ষ সাধন এবং সংরক্ষণের জন্য নানা ধরনের মৌলিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বেশি রস দেয় এ রকম প্রজাতি শনাক্তকরণ ও তা কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা দরকার। বারি জার্মপ্লাজম সেন্টার এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। নার্সারিতে খেজুর চারা উৎপাদন অত্যাবশ্যকীয় বলে মনে করি। দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত নার্সারিতে খেজুর চারা উৎপাদন করে চাষ বৃদ্ধি করা যায়। বাঁধ, গ্রামীণ বন, পাকা সড়ক, রেললাইনের ধারে, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতের ধারে খেজুর চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। নান্দনিক গাছের সমন্বয়ে ব্যাণিজ্যিকভিত্তিক উদ্ভিদ উদ্যান তৈরি হতে পারে, যা মানুষকে আকর্ষণ করবে। পরিকল্পিত উপায়ে পতিত ও প্রান্তিক জমিতে গাছ রোপণ করলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে গুড় রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবনের জন্য গাছ
মানুষ পৃথিবীতে আসার আগেই বৃক্ষের সৃষ্টি হয়। আদিকাল থেকেই মানুষ ও প্রাণিকুল তাদের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক সভ্যতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাপ পড়েছে বৃক্ষের ওপর। বিলুপ্ত হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল। এর প্রতিক্রিয়ায় দেখা দিচ্ছে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। হুমকিতে পড়ছে আমাদের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও মানবজাতি। বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষায় যে পরিমাণ বৃক্ষরাজি থাকা দরকার সে পরিমাণ না থাকায় বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, মরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এতে সর্বাধিক হুমকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মতো উপকূলবর্তী বদ্বীপগুলো।
পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বৃক্ষরাজি অনেক কম। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যেমন পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি, বসতবাড়ি বনায়ন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফলদ-বনজ-ভেষজ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, ফলদ বৃক্ষমেলা প্রভৃতি। বৃক্ষরোপণ আন্দোলন বেগবান করতে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রসংলগ্ন মাঠে প্রতি বছর চলে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা। মেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্টল থেকে সব ধরনের গাছের চারাই সংগ্রহ করা যায়। পাশাপাশি পাওয়া যায় নানা উপকরণ ও সেবা। এছাড়া দেশের সব জায়গায় নার্সারি থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করা যায়। পানি দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর গাছ লাগানো যায়। তবে বর্ষাকালে গাছ লাগানো ভালো।
বর্ষাকাল গাছের চারা লাগানোর উৎকৃষ্ট সময়। সাধারণত উর্বর, নিষ্কাশনযোগ্য ও উঁচু স্থানে গাছের চারা রোপণ করা উত্তম। বসতবাড়ির দক্ষিণ পাশে রোদ ও আলোর জন্য ছোট এবং কম ঝোপালো গাছ যেমন সুপারি, নারকেল, নিম, সজনে, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম গাছ লাগানো যেতে পারে। তবে উত্তর পাশে বড় ও উঁচু গাছপালা থাকলে ঝড়-তুফান প্রতিরোধ হয়। তাই এখানে আম, কাঁঠাল, জাম, মেহগনি, সেগুন, বাঁশ ইত্যাদি গাছ রোপণ করা ভালো। আবার বসতবাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে মাঝারি উঁচু গাছ, যেমন কুল, সফেদা, আম্রপালি, লিচু, খেজুর, তাল, আতা, বেল, পেয়ারা প্রভৃতি লাগালে সারা দিন বসতবাড়ির আঙিনায় আলো পাওয়া যায়।
বসতবাড়িতে গাছ লাগানো নিয়ে বেশকিছু খনার বচন প্রচলিত রয়েছে। যেমন উঠান ভরা লাউ শসা, খনা বলে লক্ষ্মীর দশা। হাত বিশেক করি ফাঁক আম-কাঁঠাল পুঁতে রাখ। নারিকেল বারো হাত সুপারি আট, এর থেকে ঘন হলে তখনই কাট। পুবে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ, উত্তরে কলা, দক্ষিণে খোলা।
এছাড়া বিভিন্ন অফিস, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় শোভাবর্ধনকারী ও ছায়া প্রদানকারী গাছ, যেমন কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, পলাশ, সোনালু, জারুল, বকুল, নাগেশ্বর, বকফুল, নারকেল, পাম, দেবদারু, ঝাউ প্রভৃতি গাছ লাগানো যায়। তবে হাটবাজারেও ছায়া প্রদানকারী গাছ, যেমন বট-পাকুড়, কৃষ্ণচূড়া প্রভৃতি লাগানো ভালো। পতিত জমিতে যেকোনো গাছই লাগানো যায়। বাঁধ, মহাসড়ক বা রেললাইনের পাশে দেবদারু, সেগুন, মেহগনি, শিশু, ইপিলইপিল, বাবলা, কড়ই, অর্জুন, হরীতকী, নিম, নারকেল, সুপারি, খেজুর, তাল প্রভৃতি গাছ লাগানো উত্তম। নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে এমন গাছ যেমন মান্দার, জারুল, হিজল, ছাতিম, বরুণ, অর্জুন, করচ, পিটালী, কদম, বাঁশ, বেঁত প্রভৃতি গাছ লাগাতে হবে। চর এলাকায় বাবলা, ঝাউ, কড়ই, জারুল, বাইন কাঁকড়া, গরান প্রভৃতি গাছ লাগানো যায়। পাহাড়ি এলাকায় গর্জন, গামারি, সেগুন, শিলকড়ই, চাপালিশ, তেলশুর, কাজুবাদাম, কমলালেবু প্রভৃতি গাছ লাগানো উত্তম।
গাছ লাগানোর জন্য সতেজ, সবল, রোগমুক্ত, সোজা, কম শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট চারা নির্বাচন করতে হবে। নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহের পর কয়েক দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে চারাকে হার্ডেনিং করে নিতে হবে। এতে চারা গাছ মরে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। গাছভেদে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারাগাছ রোপণ করতে হবে। গাছের চারা রোপণের আগে মাটি গর্ত করে জৈবসার দিয়ে মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। চারার পলিথিন ব্যাগ অপসারণ করে আলতোভাবে গোড়ার মাটির চাকাসহ সোজা করে বসিয়ে দিতে হবে। তারপর চারার চারপাশে ফাঁকা জায়গায় প্রথমে ওপরের উর্বর মাটি এবং পরে নিচের মাটি দিয়ে ভালোভাবে পূরণ করে দিতে হবে। চারা লাগিয়ে শক্ত খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। চারপাশে বাঁশের খাঁচা দিয়ে বেড়া দিতে হবে। চারার গোড়ায় প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। মাটির আর্দ্রতা রক্ষায় গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে খড়কুটো বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কোনো কারণে চারাগাছ মারা গেলে দ্রুত নতুন চারা ওই গর্তে রোপণ করতে হবে। সাধারণত বছরে দুবার বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়ায় সুষম সার দিতে হয়। সার দেয়ার পর পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া গাছের মৃত ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। এছাড়া রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কথায় আছে, যে দেশে নাই তরু, সেই দেশটা হয় মরু। একটি গাছ ৫০ বছরে যে উপাদান ও সেবা দিয়ে থাকে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। একটি গাছ এক বছরে ১০টি এসির সমপরিমাণ শীততাপ তৈরি করে, ৭৫০ গ্যালন বৃষ্টির পানি শোষণ করে, ৬০ পাউন্ড ক্ষতিকর গ্যাস বাতাস থেকে শুষে নেয়। একটি বড় গাছ দিনে ১০০ গ্যালন পানি বাতাসে ছেড়ে দেয়। এক হেক্টর সবুজ ভূমির উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ চলাকালে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং ৬৫০ কেজি অক্সিজেন দান করে। এছাড়া বৃক্ষরাজি ৮৯-৯০ ভাগ শব্দ শোষণ করে দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। নিমগাছের শব্দ শোষণক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বৃক্ষরাজি আবহাওয়ার তাপমাত্রা হ্রাস করে, বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ায় ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। তাই পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। নগরীতে বাড়ির ছাদে পরিকল্পিতভাবে ছাদবাগান করা যায়। এছাড়া আপনার ঘরের ভেতরে শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগাতে পারেন। টবে গাছ লাগিয়ে ঘরে রাখুন, জানবেন একটি জীবন্ত সাথী সর্বদা আপনাকে দেখছে। গাছের আরেক নাম জীবন। গাছ আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ, জ্বালানি, অর্থ সর্বোপরি জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয়। একটি গাছ কাটার আগে একবার ভেবে দেখুন তো গাছটির কতটুকু যত্ন আপনি করেছেন বা এ রকম কয়টা গাছ আপনি লাগিয়েছেন। তাই একটি গাছ কাটার আগে অন্তত তিনটি গাছের চারা রোপণ করুন।
স্নেক:
গাছের নাম স্নেক হলেও সাপ বা এই সংক্রান্ত কোনো বৈশিষ্ট্যই এই গাছের নেই। অনেক পরিবেশবিদ বলেন, যদি কারও বাসায় একটি গাছ কেনা হয় তাহলে যেন সেই একটি গাছ হয় স্নেক। যেকোনো নার্সারিতে বর্তমানে স্নেক গাছ পাওয়া যায়। প্রায় অনেক ধরনের স্নেক গাছের ধরন আছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী আপনি যেকোনোটি বাছাই করে নিতে পারেন। এই গাছের যত্ন নেওয়া খুব সহজ। মাটি একেবারে শুঁকিয়ে গেলেই পানি দিবেন। মনে রাখবেন পানি কম দিলে এই গাছের তেমন কষ্ট হবে না, তবে বেশি দিলে গাছ মারাও যেতে পারে।
অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরা এমন এক প্রকার গাছ যা আপনার বাসায় থাকলে আপনি অনেক রকমের সুবিধা পাবেন। হাত পুড়ে গেলে, ত্বকে সানবার্ন হলে অথবা যেকোনো ইরিটেশনেই অ্যালোভেরা হতে পারে আপনার সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। কেন না অ্যালোভেরাতে আছে কুলিং কিছু উপাদান যা তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে মুক্তি দেবে ইরিটেশন থেকে। আর অ্যালোভেরা গাছের তেমন যত্নের প্রয়োজন নেই। পানি কম দেবেন, কেবল মাটি শুঁকিয়ে গেলে পানি দিতে পারেন।
স্পাইডার:
এই গাছটি আপনার রুমের জানালার পাশে অথবা রুমের কোণায় ঝুলিয়ে রাখলে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখাবে। কারণ স্পাইডার গাছ থেকে ছোট ছোট বেবি স্পাইডার গাছ ঝুলে পড়ে যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। তবে ডেস্ক কিংবা কোনো তাকেও এই গাছ বেশ ভালো লাগে। আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই আপনার রুমে একটি স্পাইডার গাছ রাখুন। এই গাছের অনেক রকমের ভ্যারিয়েশন রয়েছে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বাছাই করে নিন যেকোনটি।
পোথোস (মানি প্লান্ট):
পোথোস খুব পরিচিত একটি গাছ তবে এই গাছের ১০-১২টি ধরনের মধ্যে গোল্ডেন পোথোস সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই গাছকে অনেকেই মানি প্লান্ট বলে চেনেন। পানি ও মাটিতে এই গাছ বেঁচে থাকতে পারে বলে এই গাছের পরিচিতি আরও বেশি। এই গাছের পাতার সাহায্যে খুব সহজে নতুন গাছ পাওয়া সম্ভব। চোখ-কান খোলা রাখলে অনেক মাঠে বা বাড়ির আঙ্গিনায় আপনি পেয়ে যাবেন গোল্ডেন পোথোস। সেখান থেকে মাত্র কয়েকটি ডাল নিয়ে আসলেই আপনি ফ্রি ফ্রি পেয়ে যাবেন একগুচ্ছ সবুজ! তাছাড়া নার্সারিতেও খুব কম দামেই এই মানি প্লান্ট বা গোল্ডেন পোথোস পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে গোল্ডেন পোথোস, নিওন পোথোস, মার্বেল কুইন পোথোস, স্নো কুইন পোথোসসহ আরও কয়েক ধরনের পোথস পাওয়া যায়। তবে গোল্ডেন পোথোস সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য। নতুন বাগানি হলে এই গাছটি থাকবে আপনার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।
কয়েন প্লান্ট:
কয়েন প্লান্ট খুব পরিচিত বাংলাদেশি একটি গাছ। তবে বিদেশে এর অনেক রকমের ভ্যারিয়েশন রয়েছে। এই গাছের তালিকায় সবচেয়ে কম মূল্যে আপনি পাবেন এই কয়েন গাছ। এই গাছটি খুব অন্ধকার রুম হলে আপনার না রাখাই ভালো। কেন না এই গাছের জন্য চাই উজ্জ্বল আলো আর পর্যাপ্ত পানি। আপনি এই গাছে পানি না দিলেই এই গাছের অনেক বেশি রাগ হবে এবং তার ফলাফল আপনি নিজেই দেখতে পারবেন। বেশি পানিতে যেহেতু এই গাছের কোনো সমস্যা নেই, তাই এই গাছে প্রতিদিন পানি দেবার চেষ্টা করবেন। দক্ষিণের জানালা কিংবা বারান্দার জন্য এই গাছ উপযুক্ত স্থান।
পিস লিলি:
এত সময় ধরে কেবল আমি পাতা জাতীয় গাছের কথাই বলছি। আপনাদের মনে হতে পারে বাসার ভেতর কি কোনো ফুলের গাছ হয় না? উত্তর হবে হ্যাঁ, কেন না পিস লিলি একটি ফুলের গাছ পাশাপাশি এই গাছটি আপনার রুমেই আপনি রাখতে পারবেন। পিস লিলির সাদা ফুল দেখলেই বুঝতে পারবেন কেন গাছের এই নামকরণ। এই পিস লিলি গাছের দাম কিছুটা বেশি অন্যান্য গাছের তুলনায়। তবে এর সৌন্দর্য ও অন্য সব গুণাবলি এই গাছকে অমূল্য করে তোলে। তাই সেরা গাছের তালিকায় পিস লিলি তো থাকতেই হবে। পিস লিলি কিছুটা বড় সাইজের গাছ তাই রুমের কোণায় কিংবা ডেস্কের পাশে এই গাছটি রাখলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। রুমে কিছুটা আলো আসলে ভালো এই গাছের ফুলের জন্য।
অ্যাংলোনিমা:
কেবল সবুজ গাছ নিয়েই কেন কথা হবে! ফুলের মতো গাছের অনেক রঙ আছে। অ্যাংলোনিমা সেই গাছেরই উদাহরণ। কেন না লাল ও গোলাপী ছাড়াও বিভিন্ন রঙের অ্যাংলোনিমা গাছ নার্সারিতে পাওয়া যায়। এই গাছের গোড়া থেকেই অনেক শাখা বের হয়ে ঝোপালো একটা গাছ হয় যা আপনার সবুজ বাগানে নিয়ে আসবে সুন্দর বৈচিত্র্য। এই গাছেও মাটি শুকিয়ে গেলেই কেবল পানি দিবেন। পাতাবাহার গাছ যদি ঘরে আনতে চান তাহলে অ্যাংলোনিমা পছন্দ করতে পারেন নিঃসন্দেহে।