content
stringlengths
0
129k
করবার সাধ্য নেই জেনেও
মিটিমিটি আলো জ্বেলে ঝুলে আছি,
ডুবে আছি অন্ধকারে
লেখকের সকল লেখা
লেখকের সাম্প্রতিক পোষ্ট
প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে পার্থক্য
মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যাকান্ডের বিচার কতদূর ?
এই লজ্জা কার ?
সাকিবের মেয়ের ছবিতে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য
কবে মুক্ত হবেন সাংবাদিক কাজল ?
কু ঝিক ঝিক
পুরু দেব নবী মুহাম্মদ কর্তৃক আরবের কবি-শিল্পী হত্যার ইতিহাস
কাঁকন মজুমদার আইন করে ধর্মনিরপেক্ষতা হয়না, দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন দরকার...
মিথুন এখন আমার অনেক সাহস
আত্মঘাতী চাঁদের বুড়ি - এক
_ আত্মঘাতী চাঁদের বুড়ি - এক
মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বিপ্লব !!!
রুব আল খালির দাবেরী, লায়লা আর জাররা কাহিনি [পর্ব : ৫, শেষ পর্ব]
: ধর্ষণের মনস্তত্ত্ব না বোঝা জাস্টিস
স্পর্শ হায়দার বিপ্লব !!!
মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জল ভালুকের রহস্য
প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, ইস্টিশন কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনভাবেই দায়ী নন
লেখকের এবং মন্তব্যকারীর লেখায় অথবা প্রোফাইলে পরিষ্কারভাবে লাইসেন্স প্রসঙ্গে কোন উল্লেখ না থাকলেও স্ব-স্ব লেখার এবং মন্তব্যের সর্বস্বত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারী কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে
লেখকের বা মন্তব্যকারীর অনুমতি বা সূত্রোল্লেখ বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার ব্যতিরেকে লেখার বা মন্তব্যের আংশিক বা পূর্ণ অংশ কোন ধরনের মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, নতুন অধ্যায়ে দেশ : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বগুড়ায় এতিম ও দুস্থ শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ভারতের সংসদ ভবনে হঠাৎ আগুন দেশে ফিরল নারী ক্রিকেট দল মাইলস ছাড়লেন শাফিন আহমেদ করোনার চিকিৎসায় অনুমোদন পেলো প্রথম ট্যাবলেট শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ টুইটারের সিইওর পদত্যাগ ষষ্ঠী থেকে দশমীর পূজার সাজ 'বন্ধন সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ' বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত খালেদাকে বিদেশে পাঠাতে আইন নয়, বাধা সরকার: ফখরুল
টস জিতে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে স্কটল্যান্ড
প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:২১
প্রিন্ট করুন
টস জিতে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে স্কটল্যান্ড
অনলাইন ডেস্ক
স্কটল্যান্ডের সামনে দারুণ সুযোগ
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভের পথে অনেকটাই এগিয়ে দলটি
আজ (মঙ্গলবার) পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জিতলে সমীকরণে তাদের সম্ভাবনা থাকবে ভালোই
এমন এক লড়াইয়ে টসভাগ্যও সহায় হয়েছে স্কটিশদের
আল আমেরাতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছেন স্কটল্যান্ড অধিনায়ক কাইল কোয়েতজার
স্কটল্যান্ড একাদশ
কাইল কোয়েতজার (অধিনায়ক), জর্জ মুনসে, ম্যাথিউ ক্রস, রিচি বেরিংটন, কলাম ম্যাকলিয়ড, ম্যাথিউ লিস্ক, ক্রিস গ্রিভস, মার্ক ওয়াট, জসুয়া ড্যাভে, অ্যালিসডায়ের ইভানস, ব্র্যাড হোয়েল
পাপুয়া নিউগিনি একাদশ
টনি উরা, লেগা সিয়াকা, আসাদ ভালা (অধিনায়ক), চার্লস আমিনি, সেসে বাউ, নরমান ভানুয়া, সিমন আতাইকিপলিন ডর্জিয়া, চাদ সোপের, কাবুয়া মোরেয়া, নোসাইনা পোকানা
ব্লগবকানি দেবায়ন চৌধুরী যদি আরেকবার নতুন করে সবকিছু শুরু করার সুযোগ থাকত, কঠিন কঠিন উপপাদ্য করতাম মন দিয়ে
টেস্ট পেপারের সব এক্সট্রা... আরেকটু নম্বর
17, 20200
জীবনারণ্যের দিনরাত্রি
আমরা, অর্থাৎ ৮০র দশকের শৈশব পেরোনো বাচ্চারা দূরদর্শনের শনিবারের বিকেলে বাংলা ছবির কল্যাণে, জয়শলমীরের মরু প্রান্তর কি বেনারসে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো গোয়ে
6, 20200
সবুজ সন্ধান
এক পশলা জমা জলেই ছোট্ট খোকার নৌকাভাসানোর নাছোড় প্রয়াস.. চারপাশ কংক্রিটে না মুড়ে, দিন না ওদের একটু ঘাসফুল,মেঠো ফড়িং,বুনোপাখি, ছোট্ট শামুক, বুড়োকচ্ছপ আ
যে মা'কে আমাদের নৃতত্ত্ববিদরা আর ক'দিনের মধ্যেই খুঁজে ফিরবেন শামসুর রাহমানের কবিতায় (কেননা তা বাদে এই মায়ের প্রতিকৃতি আর কোথাও রইবে না 'উন্নয়ন আর ক্ষমতায়নের' বাঁধভাঙা জোয়ারে), সেই মায়ের প্রচ্ছায়া কোনও কোনও গাঢ়তর দুর্বল মুহূর্তে আমাকে অশ্রুবিদ্ধ করে
জেন্ডার সমতার ইচ্ছাকৃত জটিল সমীকরণ নিয়ে বসলে শামসুর রাহমানের আঁকা এই মায়ের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, কেউ তো অবশ্যই বলতে পারেন পুরুষতন্ত্রের পিছুটান আর মাদকতা মেশানো উল্লাস রয়েছে তাতে
কিন্তু মানুষকে লুপ্ত নাশপাতির ঘ্রাণ বরাবরই মুগ্ধ করে, রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদের সৌগন্ধে যত সামন্ত্রতান্ত্রিকতার প্রচ্ছায়াই গবেষকরা দেখুন না কেন, শেষ পর্যন্ত নগ্ন নির্জন হাতের স্পর্শই মানুষকে গুড়িয়ে দেয় ভেতর থেকে
কতদিন যে আমি কখনও আমার মাকে কোনও গান গাইতে শুনিনি পড়তে পড়তে ভেতর থেকে শূন্য হয়ে গেছি, কতদিন যে মা'কে দেখি প্রতিদিন ধ্যানী প্রদক্ষিণে/ ছায়াবৃতা আপন সংসারে মন্ত্রের মতো মনে করতে করতে শপথ নিয়েছি নিজের জগতকে মা'র মতো সীমিত করে তার ভেতরেই অসীম হয়ে ওঠার মতো একাগ্রতার দীক্ষা নিতে... ততদিনই ব্যর্থতার ঝাপট এসে নিক্ষিপ্ত করেছে ফের শূন্যতার মধ্যে
সেই অনন্ত ব্যর্থতার শিখরে দাঁড়িয়ে অবনত চোখে আবারও চোখ মেলতে হয়েছে শামসুর রাহমানেরই কবিতায়,- দেখি, পাওয়া যায় কী না একাগ্রতার কোনও উৎস! তিনি মা'কে দেখি
আজো দেখি কী এক মায়ায়/ পাখি তার হাত থেকে স্নেহের খাবার খেয়ে যায়/ দু'বেলা আবেগ ভরে
... লিখতে লিখতে আমাদের ছুঁড়ে দেন এক প্রতীকী অক্ষমতার মধ্যে
সেই অক্ষমতা প্রতিদিন অনুভব করি আমি
পাখি,- মুক্তি কিংবা স্বাধীনতার অনন্য প্রতীক বলে যাকে সম্ভবত সেই অনাদীকাল থেকেই ভাবতে শিখেছে মানুষ, সেই প্রতীককে তিনি দেখেন এবং তাঁর সঙ্গে আমরাও দেখি উড়ে এসে বসতে আপন সংসারে ছায়াবৃতা মায়ের হাতে এবং আমরা সীমার বৃত্তে অসীম সে হাতের তালুবন্দি পাখির সঙ্গে প্রত্যক্ষ করি নিজেদের অক্ষমতাও,- কেননা বেড়ে ওঠার স্পর্ধায় স্পর্ধিত আমরা পাখির মতো অনায়াসে আর ফিরে এসে বসতে পারি না আমাদের উৎসে
হয়ত আমাদের এই না-ফিরতে পারার অক্ষমতাই আসলে আমাদের মুক্তিকে খণ্ডিত করে রেখেছে, আমাদের স্বাধীনতার অনাবিল আস্বাদ থেকে দূরে রেখেছে
শামসুর রাহমান এক সমগ্রতার মধ্যে দিয়েও অকস্মাৎ সেই খণ্ডিত হওয়ার অনুভবে নিয়ে যান আমাদের এবং তারপর যোগান প্রত্যাবর্তনের সমূহ প্রণোদনা
সাধারণত আমরা বাঙালি মধ্যবিত্তরা মুখে রাজাউজির মারি, সততার পরাকাষ্ঠা দেখাই; কিন্তু যখন সত্যি সত্যি রাজাউজিরের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রয়োজন হয়, যখন সততার পরাকাষ্ঠা দেখানোর প্রয়োজন হয় তখন আমাদের খুঁজে পাওয়া যায় না
কিন্তু শামসুর রাহমান সেরকম বদ্ধ জলে আস্ফালন দেখান না, শাদা চোখে মনে হয় তাঁকে পলায়নপর, কেননা সবার সঙ্গে তিনি অযথাই গলা মেলান না, তাঁকে এ দেশে একটি সংগঠিত তো বটেই অসংগঠিত গোষ্ঠীর ক্ষুব্ধবিক্ষুব্ধ মানুষেরা বিভিন্ন সময়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালান সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে
অথচ যখন দরকার হয় তখন এই রাজাউজির মারা মানুষদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তু এই 'মেরুদণ্ডহীন' মানুষ হিসেবে পরিচিত মধ্যবিত্ত মানুষটিই উঠে দাঁড়ান, আমরা দেখি মেরুদণ্ড প্রকৃতার্থে কতটা ঋজু করা যায় এবং আমরা শিখি নিজেদেরও দ্বিধাহীনভাবে প্রতিবাদী করে তুলতে
নির্ঝঞ্ঝাট কিন্তু আত্মসমালোচিত মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্যে তিনি নিজের গোত্রে সমালোচিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন
আমাদের মনে আছে, তিনি পদত্যাগ করেছিলেন সেই ২০০১-এর অক্টোবরে, মৌলবাদবিরোধী একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংগঠনের দায়িত্ব থেকে এবং বলেছিলেন, চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচনেরও আগে প্রয়োজন আমাদের নিজেদেরই আত্মসমালোচনা করার
তাঁকে হত্যাচেষ্টার মামলা আপনাআপনি খারিজ হয়ে গেছে, কেননা উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর উত্তরাধিকারদের জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়াতে চান নি
এ সবই সাধারণ মানুষের মতো চাওয়া, এই আকাক্ষার পরিব্যপ্তিই তাঁকে নিয়ে গেছে এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে
রাজরোষের মুখে কেউ মহাকবি ফেরদৌসের পরিণতি পায়, শামসুর রাহমান বরাবর সেরকম পরিণতি পেয়েছেন
আমরা চর্বিত চর্বনে তাঁকে অপবাদ দিতে পারি, তিনিই তো শামসুর রাহমানের মনোনীত কবিতা শিরোনামে এরশাদের কবিতা ছাপিয়েছিলেন
কিন্তু সে সত্যের চেয়েও তো অসীম ক্ষমতাধর এই সত্য,- মানুষ যখন প্রতিবাদের সম্মিলিত অনুভব প্রকাশের জন্যে একটি স্বরের প্রত্যাশা করছিল তখন তিনিই সেরকম স্বর হয়ে উঠতে পেরেছিলেন, লিখেছিলেন বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়
সেই ভাষা আন্দোলন থেকে এ দেশের প্রতিটি আন্দোলনে এরকম শিল্পিত হয়ে আর কে স্পন্দন জাগাতে পেরেছে? একুশ বাঙালির মনোজগতে ভাঙনের পদধ্বনি শুনিয়েছিল আর সত্তরের মহাপ্লাবন শুনিয়েছিল সর্বস্তরব্যাপী ভাঙনের আগমণী, সেই ভাঙনের কালপঞ্জীও তৈরি করেন তিনি, লেখেন দুর্গত এলাকা প্রত্যাগত মৌলানা ভাসানীর কথা,- ...রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু,/যেন মহা-প্লাবনের পর নূহের গভীর মুখ/ সহযাত্রীদের মধ্যে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি/ উত্তুরে হাওয়ায় ওড়ে
...' এবং 'সবাই দেখলো চেনা পল্টন নিমেষে অতিশয়/ কর্দমাক্ত হয়ে যায়, ঝুলছে সবার কাঁধে লাশ
/ আমরা সবাই লাশ, বুঝি-বা অত্যন্ত রাগী কোনো/ ভৌতিক কৃষক নিজে সাধের আপনকার ক্ষেত/ চকিতে করেছে ধ্বংস, পড়ে আছে নষ্ট শস্যকণা
... ধবধবে একটি পাঞ্জাবি দিয়ে বিক্ষিপ্ত বে-আব্রু লাশ ঢেকে দেয়ার জন্যে ব্যাকুল এই শিল্পিত ভাসানী থেকে শুরু করে আসাদের শার্ট কোথায় তিনি অনুপস্থিত? তিনি লিখেছেন বন্দি শিবির থেকে এবং তারপরও থেমে যান নি
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ তো তিনি এমন সময়েই লিখেছেন যখন আমরা আবারও সংগ্রাম শুরু করেছি আমাদের সেই পুরানো শত্রুদের সঙ্গে, সে শত্রুর কেউ মৌলবাদের ধ্বজাধারী, কেউ সামরিকতন্ত্রের লেবাসপরিহিত
যে প্রাতিষ্ঠানিকতায় তাঁর বসবাস, তা থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি দ্বিধা করেন না প্রয়োজনে
যেমন করেন নি বাংলা একাডেমীর সভাপতি পদ কিংবা নির্মূল কমিটির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে
মাওসেতুং-এর মতো বিপ্লবী নন তিনি, কিন্তু তাঁর জীবনের এই ব্যবহারিক দিক স্মরণ করিয়ে দেয় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে মাও-য়ের বেছে নেয়া ব্যক্তিগত দৃষ্টান্ত
রাজনীতি থেকে দূ
রে থেকেছেন তিনি; কিন্তু রাজনীতির সাংস্কৃতিক আকরকে স্বচ্ছতোয়া রাখতে তাঁর এই নিজেকে অতিক্রম করে ওঠা আমাদের বার বার বিস্মিত করেছে
যে রাজনৈতিক কালপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতিগত চেতনা অর্জন করতে থাকে, স্বাধীনতার সংগ্রাম রচিত হতে থাকে, স্বাধীনতাও আসে, আবার সে স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এই রাজনৈতিক কালপ্রবাহকে তিনি রাজনীতির বৃত্ত থেকে টেনে বের করে এনেছেন এবং শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার মধ্যেও সেই রাজনৈতিক কালপ্রবাহকে পরিভ্রমণ করতে শিখিয়েছেন
এভাবে দেখতে গেলে, হয়ত কথাটা শুনতে খারাপ লাগবে কিন্তু একেবারে নির্জলা সত্য, রবীন্দ্রনাথ যেমন বেঁচে থাকবেন বাংলা ভাষার শেষ দিন অবধি, তেমনি শামসুর রাহমানও বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের সমান বয়সী হয়ে
বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে তিনি মধ্যবিত্তের খোলস ঝেঁড়ে ফেলে অচেনা এক মানুষ হয়ে উঠেছেন রাজাউজির বধ করা সব মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীদের স্তম্ভিত করে দিয়ে এবং একটি বিশাল ক্রমসম্প্রসারিত শ্রেণীর প্রতিটি মধ্যবিত্তকে এভাবে শক্তি যুগিয়েছেন অচেনা এক প্রতিবাদী মধ্যবিত্ত হয়ে ওঠার,- যে প্রতিবাদী মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ পাওয়া যায় একমাত্র ফরাসী বিপ্লবের মধ্যবিত্তের মধ্যে
আর তাঁর ব্যক্তিক সারা জীবনের আত্মসমালোচনা তো তিনিই করেছেন কখনও আত্মকথনে, কখনও কবিতাতে
দুঃস্বপ্নে একদিন সেরকম কবিতা যাতে তিনি ছিঁড়েখুঁড়ে দেখান নিজের শ্রেণীঅবস্থান এবং দুঃসময়ে মুখোমুখির মধ্যে দিয়ে আমাদের নিয়ে যান তাঁর আত্মপীড়নের বোধিসত্ত্বায়
তাঁর ভেতরে ঘুমন্ত এক মানুষের ক্রন্দন শুনি আমরা, বাচ্চু তুমি, বাচ্চু তুই, চলে যাও চলে যা সেখানে/ ছেচল্লিশ মাহুৎটুলীর খোলা ছাদে
আমি ব্যস্ত, বড়ো ব্যস্ত,/ এখন তোমার সঙ্গে, তোর সঙ্গে বাক্যালাপ করার মতন/ একটুও সময় নেই
কেন তুই মিছেমিছি এখানে দাঁড়িয়ে/ কষ্ট পাবি বল?' নিজেকে চেনান তিনি, উজাড় মাইফেলের প্রেত ঘুরি হা-হা বারান্দায়
/ এখন আমিও খুব সহজে ঠকাতে পারি, বন্ধুর নিন্দায়/ জোর মেতে উঠতে লাগে না দু-মিনিটও, কখনো-বা/ আত্মীয়ের মৃত্যু-কামনায় কাটে বেলা, পরস্ত্রীর/ স্তনে মুখ রাখার সময় বেমালুম ভুলে থাকি/ গৃহিণীকে
আমাকে ভীষণ ঘেন্না করছিস, না রে?/ এখন এইতো আমি
চিনতিস তুই যাকে সে আমার/ মধ্য থেকে উঠে/ বিষম সুদূর ধু-ধু অন্তরালে চ'লে গেছে
তুইও যা, চ'লে যা
নিজেকে ছাপিয়ে উঠতে না পারলে কি সম্ভব নিজের কৈশোরক নামের কাছে এই আত্মক্রন্দনের মধ্যে দিয়ে নিজেকেই সমালোচিত করা? এমনকি এখন তো পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে তাঁর আত্মকথা, সেখানে অনেকখানেই আছে এমন সব স্বীকারোক্তি, পাবলো নেরুদার আত্মকথায় যা আছে জন্যে আমরা বা আমাদের বন্ধুরা যৌবনে নেরুদার বন্দনা করেছি
যা কিছু ঈর্ষার বা সন্দেহের, সমালোচনার বা ধিক্কারের তা কেবল সমকালের মানুষকে পীড়িত করে, ক্রুদ্ধ করে; সমকাল ছাপিয়ে ভবিষ্যতের খাতায় তার ঠাঁই হয় টীকা বা টিপ্পনী হিসেবে, তুলনামূলক মূল্যায়নের উপাদান হিসেবে
শামসুর রাহমানের তাঁর আত্মকথনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে জীবৎকালেই মীমাংসিত করে রেখে যাচ্ছেন, দেখি তিনি নিজেকেই নিজে ছিঁড়েখুঁড়ে এইসব বলছেন:
...লুকাবো না, সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে ভালো লাগলো
প্রথম দিকে ঘোরের মধ্যে কাটলো, কিন্তু বেশ কিছু সময় কাটার পর, কোনো কোনো সমস্যা, বিশেষ করে মাইনে বাড়াবার তাগিদে আমি ক্রমাগত উৎপীড়িত হ'তে লাগলাম
.. তবে কেউ কেউ বলতে পারেন, অফিসের মোটরকারে সওয়ার হয়ে নানা জায়গায় চলে যাওয়া, প্রায়শ বিভিন্ন জমকালো নৈশ পার্টিতে সময় কাটানো তো তোফা ব্যাপার
কিন্তু কিছুকাল পর এগুলো কেমন ফাঁপা, ফাঁকা মনে হয়
আবার এমন অভ্যাস হয়ে যায় যে, সহজে সেই আকর্ষণীয় চক্র থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল
আমিও রীতিমতো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম নৈশ আসরে
.. প্রেসিডেন্ট এরশাদ শুধু হাতে রাইফেল তুলে নেননি, পদ্য লেখার কলমও তুলে নিতেন অবসর মুহূর্তে