content
stringlengths 0
129k
|
---|
পাকদন্ডীর পথ অতিক্রম করে শেষমেষ আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছালাম
|
অলোক বাবুকে আমরা অবশ্য পাকদন্ডীর আগেই বিদায় জানিয়েছিলাম
|
ব্যাগগুলো রতন দা আগেই লোক দিয়ে এনে রেখেছিল তাই এসেই স্নান ,খাওয়া সেরে শুতে বেশী দেরি হয়নি কিন্তু রাত অনেক হওয়ায় ও ক্লান্ত থাকার জন্য বাঙ্গলোটা ভালো করে ঘুরে দেখতে পারিনি তবে বাঙ্গলোটি যে বেশ বড় তা আন্দাজ করতে পারলাম
|
দুটো বড় বড় শোয়ার ঘর
|
যার মধ্যে একটিতে আমার থাকার ব্যবস্থা আর অপরটিতে সম্রাটের
|
তাছাড়া ও একটা বৈঠকখানা ,একটা খাবার ঘর ,পেছনে ইঁদারা সামনে বাড়ান্দা লাগোয়া উঠান
|
এখানে সকাল হয় না সকাল আসে
|
অনেক শিশির ভেজা পাহাড়ি পথ পেড়িয়ে ,স্বর্ণ অলঙ্কার পরে আসে
|
খাটে শুয়ে ঘরের টালির ছাদের ফাঁক থেকে আসা আলোর ছটা আর পাখির কলরবে বেশ লাগছিল
|
প্রকৃতির এইরূপে আগমনের সাক্ষি হইনি আগে কোনদিন
|
এই আনন্দিত প্রানতরঙ্গের মাঝে আমি বাইরে এসে উঠানে দাঁড়ালাম,ঘড়িতে দেখলাম তখন বাজে ৬:৩০ সম্রাট তখনও ঘুমাচ্ছে ,এরই মধ্যে রতনদা এসে চায়ের জন্য জিজ্ঞেস করে গেছে
|
আসলে রতনদা এই বাঙ্গলোটির , প্রায় ৩০ বছর এখানেই আছেন
|
শুনেছি ভালো পরিবারের লোক,আগে নাকি বেশ প্রতিপত্তিও ছিল কিন্ত সবই লটারি আর ধারে হারিয়েছন
|
বয়সে আমার থেকে ১৬ কিংবা ১৭ বছরের বড় হবেন
|
তার সঙ্গে আমার পরিচয় অবশ্য সেই ছোট থেকে
|
বাবার সঙ্গে প্রায়শই দেখা করতে আসতেন আমাদের বাড়িতে
|
কিছুক্ষনের মধ্যেই রতনদা হাজির
|
চায়ের কাপ আমাকে ধরিয়ে জিজ্ঞেস করল "কালকে রাত্রে কোন অসুবিধা হয়েনি তো তোমাদের ?"
|
আমি উত্তর দিলাম "না না কোন অসুবিধা হয়নি "
|
রতন দা - " তা তোমার বন্ধু কোথায়? ঘুমচ্ছে নাকি"
|
আমি উত্তরে বললাম "হ্যা
|
আসলে গতকাল অনেকক্ষন জার্নি হয়েছে তো তাই ক্লান্ত হয়ে পরেছে
|
" সেটা ঠিক
|
কলকাতা থেকে আসা এখানে সত্যিই কষ্টসাধ্য তা বাবা এখন কেমন আছে এখনও চাকরি করছেন না রিটায়ার করেছেন?"
|
" বাবা দুবছর হল রিটায়ার করেছেন
|
এখন আমার সঙ্গেই থাকে কলকাতায়
|
আসলে শরীরটাই বাবার ঠিক যাচ্ছে না প্রেসার, সুগার
|
সবই ধরা পরেছে
|
রতন দা অবাক "সে কি বল
|
আগে এত ফিট ছিলেন আর এখন এই অবস্থা
|
তুমি বরং এক কাজ করো বাবাকে নিয়ে কদিনের জন্য এখানে চলে আসো পুরনো লোক দেখলে মনটাও ভালো থাকবে আর এখানকার আবহাওয়ায় কিছুদিন কাটালে শরীরটাও একটু সুস্থ হবে
|
তুমি জানো কি না জানি না শিমূলতলাকে বলা হয় বিহারের সিমলা
|
ভারতের বিহার রাজ্যের জামুই জেলার ঝাঁঝা ব্লকের অন্তর্গত একটি গ্রাম এটি
|
আগেকার দিনে ডা্ক্তারের পরামর্শে স্বাস্থ্য ফেরাতে পশ্চিমের দেশে যাত্রা করত
|
পশ্চিমের দেশ বলতে শিমূলতলা,গিরিডি,মধুপুর,দেওগড় এইগুলো ই বোঝায়"
|
"হাঁ বাবার মুখে শুনেছি"
|
" ও যেটার জন্য আসা
|
তোমরা বেরোবে তো আজকে ?"রতদা জিজ্ঞেস করল
|
"হ্যাঁ বেরোবোতো নিশ্চয়ই , সময় বলতে আজকের দিনটাই তো"
|
"ঠিক আছে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
|
রতনদার এই উচ্ছাস দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম তবে এই দূর প্রদেশে একজন সাহায্যের পরিচিতকে পেয়ে বেশ ভালোই কাটছে এই ক্ষনিকের অবসর
|
রতনদা চলে গেল
|
আমি নিজের চা শেষ করে ঘরে ঢুকলাম, সম্রাট ততক্ষনে ঘুম থেকে উঠে গেছে কিন্তু ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি
|
কিছুক্ষন আড্ডা মারার পর দুজনেই প্রাতঃকর্ম সেরে , জলখাবার খেতে বেরিয়ে পরলাম
|
পাহাড়ের লাল রাঙ্গা পাথুরে পথের পাশে একটা ছোটটো দোকান
|
আমরা জলখাবার সারলাম
|
বাবার মুখে শুনেছিলাম এখানকার বিখ্যাত ছানা মুড়কির গল্প ,তাই সেই স্বাদের বাস্তবতা যাচাই করতে ট্রাই করলাম
|
প্রথমে দেখে ভক্তি না আসলেও মুখে দিতেই তার পূর্নাঙ্গ স্বাদ অনুভব করলাম
|
ছোট ছোট ছানার দানা ,এত ভালো খেতে হতে পারে তা এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না
|
ঠিক সকাল ১০:৩০ রতনদা গাড়ি নিয়ে হাজির
|
ততক্ষনে আমরা জলখাবার সেরে ফেলেছি
|
চট করে একটু গুছিয়ে রওয়ানা দিতে বেলা ১১:০০ হয়ে গেল
|
রতনদার কথা মত প্রথমে আমরা যাব রাজাকোঠি,তারপর লাট্টুপাহাড় ,হলদি ঝড়না আর শেষমেশ তেলেয়া বাজার হয়ে ফেরত
|
আমাদের ভ্রমনসুচি অনুযায়ী প্রথমে রাজকোঠি গিয়ে পৌছালাম আমরা
|
বিস্তির্ন ফাঁকা মাঠ মাঝে মাঝে গাছপালার জটলা ,ঠিক তার কেন্দ্রবিন্দুতে একটি পৌর রাজবাড়ি
|
প্রকান্ড রাজবাড়িটির অবস্থা এখন সংরক্ষন করার মতন
|
দেওয়ালে নানা জায়গায় শ্যওলা ধরা
|
প্রায় সর্বাঙ্গে পলিস্তারা খসে গিয়ে ইট বেরিয়ে এসেছে
|
মাথার ছাদ প্রায় নেই বললেই চলে
|
তবু চারিপাশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে বারবার তার কাছে টেনে আনবে
|
পশ্চিমপ্রান্তের মালভূমির ছোট ছোট পাহারগুলি নীল দিগন্ত রেখাটিকে ঢেকে দিয়েছে
|
এই দৃশ্য দেখে আমার মনে হল একেই হয়ত বলে ছবির মতন সুন্দর
|
লাট্টু পাহাড়ের চুড়াটিও স্পষ্ট দেখা যায় রাজবাড়ি থেকে
|
রাজবাড়িটির প্রকান্ড এই গঠন থেকে প্রায় ২০০গজ দূরে একটি ঝিলও দেখা যায়
|
এই অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমি গাড়ির ড্রাইভারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম "এই রাজবাড়ি কতদিন আগেকার?"
|
"মালুম নেই সাব তব শুনা হ্যায় বর্দ্ধমান কা রাজা বানায় থা
|
পর ইয়ে লাট্টু পাহাড় মে সুটিং ভী হুয়াথা
|
" পরে রতন দার কাছে জেনে ছিলাম "সত্যজিৎ রায়ের সূর্যডোবা"
|
সোজা লাট্টু পাহাড়ের দিকে হাঁটা দিলাম
|
পাহাড়ের গায়ে বাধানো সিঁড়ি, তার পাশে পাথরের চাই
|
উঠতে বেশ সুবিধাই হল
|
চুড়াতে উঠতেই অনুভব করলাম চড়া রোদ
|
তার স্বর্ণরেখায় চারিদক যেন ঝলসে যাচ্ছে
|
দূর দুরান্ত সবুজে ঢাকা পাহারের পদস্থল, এক আলাদাই অনুভূতি সঞ্চার করছে
|
তবে বেশিক্ষন থাকা গেল না ওখানে কারন সময় কম তবে দেখার অনেককিছু
|
এরপর সোজা গিয়ে উঠলাম হলদী ঝর্ণা যা শিমূলতলা থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে
|
এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এক কথায় অসাধারণ
|
লোকে বলে এই ঝর্ণার জলে জাদু আছে
|
এর জল খেলে শুধু ক্ষিদে বাড়ে না,এর জলে অনেক রোগ ও সেরে যায়
|
পাহাড়ের পাথুরে খাতে বয়ে চলেছে এই মৃদু ঝর্ণা
|
এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ঘড়ির কাটা এগিয়ে গেছে তা বুঝতেই পারিনি
|
ঘড়িতে যখন চোখ পড়ল তখন বেলা তিনটে
|
খিদেতে পেট ফেটে যাচ্ছে
|
তাই সোজা গাড়ি নিয়ে ঢুকলাম তেলেয়া বাজার
|
বেলা ৩:৩০ আমরা পৌছালাম
|
হোটেল বলতে একটা মাত্র খোলা
|
সেখানেই গিয়ে ঢুকলাম
|
খাওয়া শেষ করতে বাজল বেলা ৪:১৫
|
এখানে দেখার বিশেষ কিছু নেই
|
এতদূর অঞ্চলের এটাই একটা বড় বাজার
|
প্রায় সন্দ্ধে হয়ে এসেছে
|
দূর থেকে ভেসে আসছে মাদলের সুর আর পাকা মহূয়ার গন্ধ
|
৫:০০ বাজলো যখন আমরা বাঙ্গলোয় ফিরে এলাম
|
রাতের খাবারের অবশ্য চিন্তা নেই রতনদাই ....
|
তাই দুজনে গল্প করে বাকিটা সময় কাটাব ভেবে বসলাম সামনের বারান্দায়
|
বেশ কনকনে ঠান্ডা
|
টিমটিমে আলো
|
পাশাপাশি দুটো চেয়ারে আমি আর সম্রাট
|
শহরের কোলাহল থেকে দূরে এই প্রান্তরে আজ যেন দুজনের কারো আর সেরকম ইচ্ছাই নেই গল্প করার
|
বাইরের নিকষ কালো অন্দ্ধকারে ঝিঝি পোকার ডাক আর নিস্তব্ধতায়
|
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.