content
stringlengths 0
129k
|
---|
প্রশ্ন: স্যাটায়ার বা বক্রোক্তি আপনার লেখার একটা বৈশিষ্ট
|
আপনার কি মনে হয় না এতে লেখার সিরিয়াসনেস কমে যায়? স্যাটায়ার বা হাস্যরসাশ্রিত বা হিউমারাস লেখা কি কখনও সিরিয়াস সাহিত্য হতে পারে?
|
উত্তর: তোমার কথা ঠিক ধরলে পৃথিবীর বহু সাহিত্য ফেলে দিতে হয়
|
'ডন কিহোটে' ( ) বা 'ট্রিস্ট্রাম স্ট্যান্ডি'-কে ফেলে দিতে হয়
|
মার্কেজের 'লাভ ইন দ্য টাইম অফ কোলেরা' পড়তে পড়তে পেটে খিল ধরে যায়
|
তা এটা কি সাহিত্য নয়? বঙ্কিমচন্দ্রের 'মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত' বা 'কমলাকান্তের দপ্তর' কি সাহিত্য নয়? শরৎচন্দ্রের 'শ্রীকান্ত'তে ব্যাঙ্গ-হাস্যরস ছড়িয়ে আছে
|
প্রমথ চৌধুরীর ছোটগল্প হাস্যরসে উজ্জ্বল
|
আর ত্রৈলোক্যনাথ ও রাজশেখর বসু? বাংলা সাহিত্যে তাদের মত হিউমারাস লেখন কজন আছে! তারা কি সাহিত্যিক নন?
|
সিরিয়াস লেখা হাস্যরস বর্জিত, এই ধরণের কথা সাহিত্য সম্পর্কে ভুল ধারণার থেকে জন্ম নেয়
|
এই ভাবনার জন্য দায়ী শরৎচন্দ্র পরবর্তি লেখকরা
|
সিরিয়াস সাহিত্য মানে রসকসহীন এক ধরণের বস্তু, এই কথা প্রচার করলেন তাঁরা
|
প্রশ্ন: আপনার সব লেখাই উত্তম পুরুষে (ফার্স্ট পার্সন) লেখা? অনেকেই মনে করেন উত্তম পুরুষে কোনও বড় লেখা লেখা যায় না
|
একমাত্র তৃতীয় পরুষেই তা সম্ভব
|
এ বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
|
উত্তর: পৃথিবীর বহু বিখ্যাত ও মোটা উপন্যাস উত্তম পুরুষে লেখা: ডেভিড কপারফিল্ড, ট্রিস্ট্রাম স্ট্যান্ডি, নোটস ফ্রম আণ্ডারগ্রাউণ্ড, শ্রীকান্ত
|
তাই তোমার এই প্রশ্নটার কোনও মানে হয় না
|
প্রশ্ন: আপনি সরল বাক্যে ও সহজ ভাষায় লেখেন
|
এভাবে কি সাহিত্য গুণাণ্বিত লেখা সম্ভব? এতে লেখার ধার কমে যায় না? গভীরতা হারিয়ে যায় না? সিরিয়াস লেখা তো সিরিয়াস ভাবেই লিখতে হয়, তাই না?
|
উত্তর: বাংলা ভাষায় তিন ধরণের বাক্য আছে: সরল, মিশ্র ও জটিল
|
জটিল বাক্যের চর্চা এদেশে বহুদিন হয়েছে
|
সে অর্থে সরল বাক্যের চর্চা হয়নি
|
সরল বাক্যের প্রতি আমার প্রথম অনুরাগ তৈরি হয় 'সহজ পাঠ' পড়তে গিয়ে
|
তারপর 'বর্ণ পরিচয়' পড়ে আমি মুগ্ধ হই
|
(এই দু'টি বইই শিশুদের অক্ষর পরিচয় করিয়ে দেবার বই
|
'সহজ পাঠ'-এর ছড়া ও গদ্যগুলি লেখেন রবীন্দ্রনাথ, ছবিগুলি আঁকেন নন্দলাল বসু
|
'বর্ণ পরিচয়'-এর লেখক বিদ্যাসাগর
|
) এই দু'টি বইয়ের প্রতিটা খণ্ডই আমি খুব মনযোগ সহকারে পড়েছি
|
সরল বাক্যের ছন্দে চমৎকৃত হয়েছি
|
তাতে সরল বাক্য দিয়ে এমন সব ছবি আঁকা হয়েছিল যা জটিল বাক্য দিয়ে করা সম্ভব নয়
|
আর পাতার পর পাতা সরল বাক্য লেখা সহজ নয়
|
আমি চেষ্টা করেছি সরল বাক্যেই আমার রাগ, দুঃখ, শোক, আনন্দ, একাতীত্ব প্রকাশ করতে
|
তাতে যদি কেউ ভাবে আমার লেখা সাহিত্য হয়েছে, ভাল
|
যদি ভাবে হয়নি, আমার কিছু করার নেই
|
আমার যেটা দেখার ছিল তা হল, আমি যা প্রকাশ করতে চাইছি তা প্রকাশ করতে পারছি কি না
|
আমি দেখেছিলাম, মানুষ সরল বাক্যে কথা বলে, সরল বাক্যে ভাবে
|
যে বাক্যে আমি ভাবছি, কথা বলছি, সেই বাক্যে আমি লিখতে পারব না কেন
|
তাকে তো অযথা জটিল করে লাভ নেই
|
আর এখন কজন লেখক জটিল বাক্যে লেখেন? বেকেটের কথা ধর
|
তার 'মলয়', 'ম্যালোনের মৃত্যু' ও 'নামহীন' (, , ') তো সরল বাক্যে লেখা, কিন্তু তার ভাব সরল নয়
|
আসল কথা হচ্ছে, ছন্দ জ্ঞান চাই
|
ছন্দ বোধ না থাকলে ভাল গদ্য লেখা যায় না
|
প্রশ্ন: শরৎচন্দ্র পরবর্তি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আপনি এত বীতশ্রুদ্ধ কেন?
|
উত্তর: তার কারণ শরৎচন্দ্রের পরে বাংলা সাহিত্যে কোনও পরিবর্তন আসেনি
|
একদল গ্রাম বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়ে রইল, আর এক দল শহরতলিতে আটকে গেল
|
এর বাইরে যে একটা আধুনিক শহর, সেখানে জীবনের বোধ যে বদলে যাচ্ছে সেটা কেউ ধরতেই পারল না, সেই গল্পটা নতুন ভাবে বলার চেষ্টা করল না
|
অথচ ঈশ্বর গুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ এরা একে অন্যের থেকে কত আলাদা তাদের নিজস্ব ফর্ম দ্বারা
|
শরৎচন্দ্রের পরে সেই ব্যাপারটা দেখা গেল না
|
সেই পুরনো ধ্যান ধারণা নিয়েই তারা লিখে গেল
|
ইউরোপীয় সাহিত্যে কিন্তু এটা হয়নি
|
ওখানকার উনবিংশ শতাব্দীর থেকে বিংশ শতাব্দীর সাহিত্য কত আলাদা
|
আমাদের এখানে এমনটা হল না
|
প্রশ্ন: প্রখ্যাত লেখক ও সমালোচক প্রমথ চৌধুরির একটি প্রবন্ধ আছে 'সাহিত্যে খেলা'
|
যার একটা সরল বক্তব্য হচ্ছে, সাহিত্য এক আনন্দউদ্যান
|
লেখক লিখতে আনন্দ পান
|
পাঠক পড়তে আনন্দ পান
|
জ্ঞান দেওয়া বা মানুষকে শিক্ষিত করা সাহিত্যের কাজ নয়
|
আপনি সেই মতের বহুল সমর্থনও করেছেন
|
এই প্রসঙ্গে জানতে চাই, আপনি কি জীবনবিমুখ? পলায়নকারী? জীবনের সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চান? লেখকের কি কোনও সামাজিক দায়িত্ব নেই?
|
উত্তর: সাহিত্যে সমাজের কথা উঠে আসবে, মাটির গন্ধ থাকবে, এসব বামপন্থীদের কথা
|
সাহিত্য সম্পর্কে এই ধারণা ভুল
|
শুধু কৃষকের কথাই জীবনের কথা, আর শহুরে মধ্যবিত্ত মানুষের লড়াইয়ের কথা জীবনের কথা নয়? 'ডন কিহোটে'তে কোন সমাজ জীবনের কথা আছে? এই মাপকাঠি ধরলে কালিদাসও জীবনবিমুখ
|
আর সামাজিক দায়িত্ব লেখকের কেন, সকলেরই আছে
|
যে কোন সমাজবদ্ধ মানুষেরই সামাজিক দায়িত্ব আছে
|
আর সাহিত্য এক ধরণের খেলা তো বটেই
|
তবে সেটা হা-ডু-ডু খেলা নয়
|
শব্দ নিয়ে, ভাষা নিয়ে, ফর্ম নিয়ে খেলা
|
জয়েসের 'ইউলিসিস', 'ফিনেগান্স ওয়েক', বা 'ডন কিহোটে', 'ট্রিস্ট্রাম স্ট্যান্ডি' - সব এক একটা খেলা
|
এখন এই খেলা ক'জন বুঝবে সেই ভেবে তো সাহিত্য করা যায় না
|
বুঝলে বুঝবে, না বুঝলে না বুঝবে
|
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের রসিক সবাই না, তাতে কী আর করা যাবে!
|
প্রশ্ন: যারা লেখক হতে চান তাদের জন্য আপনি কী উপদেশ দিতে চান?
|
উত্তর: যারা লেখক হতে চান তাদের প্রথম কাজ হল, দেশ-বিদেশের সাহিত্য নিবিড় ভাবে পাঠ করা
|
দ্বিতীয় কাজ হল, লেখা
|
কীভাবে লিখব সেটা ভাবা
|
কিভাবে লিখলে আরও জীবন্ত ভাবে প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাবা
|
আর লিখতে হবে মন-প্রাণ দিয়ে
|
কোথায় ছাপা হবে, বই বের হবে, এসব না ভেবে শুধু লেখার জন্য লেখা
|
লিখতে আনন্দ পাওয়াটাই মূল কথা
|
সাক্ষাৎকার নেওয়ার তারিখ: ২৮ জানুয়ারি, ২০২০
|
ইন্দ্রজিৎ ঘোষ
|
কবি, গদ্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক
|
জন্ম নদিয়া, বেড়ে ওঠা কলকাতা, আপাতত ঠিকানা দিল্লি
|
বিধিবদ্ধ পড়াশোনা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে
|
পেশা লেখালিখি, ভিডিও তৈরি ও অনুবাদ
|
: রমানাথ রায়, সাক্ষাৎকার
|
এটি ইমেল করুনএটি ব্লগ করুন!-এ শেয়ার করুন-এ শেয়ার করুন এ শেয়ার করুন
|
৪টি মন্তব্য:
|
২০ মার্চ, ২০২১ ১:৩৪
|
.. .. ..
|
উত্তরমুছুন
|
ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ২৫ মার্চ, ২০২১ ১১:৪১
|
অনেক ধন্যবাদ!
|
২৭ মার্চ, ২০২১ ৪:১৮
|
...
|
উত্তরমুছুন
|
ইন্দ্রজিৎ ঘোষ ২৭ মার্চ, ২০২১ ২:৪৩
|
এ লেখাটার প্রকাশ রমানাথ বাবু দেখে যেতে পারলেন না!
|
মন্তব্য যুক্ত করুন
|
আরও লোড করুন...
|
নবীনতর পোস্ট পুরাতন পোস্ট হোম
|
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.