content
stringlengths 0
129k
|
---|
সাথী বাচ্চারা ছুটে গিয়ে হালিমাকে খবর দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে |
তিনি ছুটে এসে দেখেন যে, মুহাম্মাদ মলিন মুখে দাড়িয়ে আছে [৫] |
হালিমা তাকে বুকে তুলে বাড়ীতে এনে সেবাযত্ন করতে থাকেন |
এই অলৌকিক ঘটনায় হালীমা ভীত হয়ে পড়েন এবং একদিন তাঁকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যান |
তখন তার বয়স ছয় বছর |
আমেনার ইয়াছরিব গমন ও মৃত্যুবরণ: |
প্রাণাধিক সন্তানকে কাছে পেয়ে আমেনা তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর কবর যেয়ারত করার মনস্থ করেন |
শ্বশুর আব্দুল মুত্তালিব সব ব্যবস্থা করে দেন |
সে মতে পুত্র মুহাম্মাদ ও পরিচারিকা উম্মে আয়মনকে নিয়ে তিনি মক্কা হ'তে ৫০০ কিঃ মিঃ দূরে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন |
অতঃপর যথাসময়ে মদীনায় পৌছে নাবেগা আল-জাদী পরিবারের গোরস্থানে স্বামীর কবর যেয়ারত করেন |
অতঃপর সেখানে এক মাস বিশ্রাম নেন |
এরপর পুনরায় মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন |
কিন্তু কিছু দূর এসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও আবওয়া নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন |
উম্মে আয়মন শিশু মুহাম্মাদকে মক্কায় নিয়ে আসেন |
এভাবে জন্ম থেকে পিতৃহারা ইয়াতীম মুহাম্মাদ মাত্র ৬ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে পুনরায় ইয়াতীম হলেন |
দাদার স্নেহনীড়ে মুহাম্মাদ: |
ইয়াতীম মুহাম্মাদ এবার এলেন প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিবের স্নেহনীড়ে |
আব্দুল মুত্ত্বালিব নিজেও ছিলেন জন্ম থেকে ইয়াতীম |
পিতা কুরায়েশ নেতা হাশেম ফিলিস্তিনের গাযায় মৃত্যুবরণ করলে তিনি ১০ বছর পর্যন্ত তিনি ইয়াছরিবে তার মায়ের কাছে প্রতিপালিত হন |
ব্যপারটা ছিল এই যে, ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় যাওয়ার পথে হাশেম ইয়াছরিবে জনৈকা সালমা বিনতে আমরের সাথে বিবাহিত হন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন |
অতঃপর তিনি সিরিয়া গমন করেন ও ফিলিস্তিনের গাযায় মৃত্যুবরণ করেন |
তাঁর এই বিয়ে ও সন্তান জন্মের খবর মক্কার অভিভাবকরা জানতেন না |
১০ বছর পর তার জন্মের খবর জানতে পেরে চাচা কুরায়েশ নেতা মুত্ত্বালিব বিন আবদে মানাফ তাকে মক্কায় নিয়ে আসেন |
লোকেরা তাকে মুত্ত্বালিবের কৃতদাশ মনে করে তাকে 'আব্দুল মুত্ত্বালিব্ִ বলেছিল |
সেই থেকেই তিনি উক্ত নামে পরিচিত হন |
যদিও তার আসল নাম ছিল 'শায়বাহ্ִ অর্থ 'সাদা চুল্ִ |
কারন জন্ম থেকেই তার মাথার চুল ছিল সাদা |
সেই শিশুকালের ইয়াতীম আব্দুল মুত্ত্বালিব আজ বৃদ্ধ বয়সে নিজ ইয়াতীম পৌত্রের অভিভাবক হন |
কিন্তু এ স্নেহনীড় বেশী দিন স্থায়ী হয়নি |
মাত্র দু'বছর পরে শিশু বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব ৮২ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন |
ফলে তাঁর অছিয়ত অনুযায়ী আপন চাচা আবু ত্বালিব তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং আমৃত্যু প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি ভাতিজার অভিভাবক হিসেবে জীবনপাত করেন |
শিশু মুহাম্মাদের কিছু বরকতমণ্ডিত নিদর্শন: |
(১) হালীমা সা'দিয়াহ বলেন, ক্ষুধা-তৃষ্ঞায় আমার বুকের দুধ শুকিয়ে গিয়েছিল |
বাহন মাদী গাধাটির অবস্থাও ছিল তদ্রুপ |
কেননা এই সময় আরব ভূমিতে দুর্ভিক্ষের বছর চলছিল |
ফলে বেশী অর্থ পাবে না বলে ইয়াতীম মুহাম্মাদকে কেউ নিতে চাচ্ছিল না |
অবশেষে আমি তাকে নিতে সম্মত হলাম |
অতঃপর যখন তাকে বুকে রাখলাম, তখন সে এবং আমার গর্ভজাত সন্তান দু'জনে পেটভরে আমার বুকের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেল |
ওদিকে উটনীর পালান দুধে ভরে উঠল |
যার দুধ আমরা সবাই তৃপ্তির সাথে পান করলাম |
তখন আমার স্বামী হারেছ বললেন, "হালীমা! আল্লাহর শপথ! তুমি এক মহাভাগ্যবান সন্তান লাভ করেছ" |
তারপর বাড়ীতে ফিরে আসার পর দেখা গেল যে, আমাদের সেই দুর্বল মাদী গাধাটি এত তেযী হয়ে গেছে যে, কাফেলার সবাইকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যাচ্ছে |
যা দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল |
(২) বাড়ীতে ফিরে এসে দেখা গেল আমাদের রাখাল যে চারণভূমিতে পশুপাল নিয়ে যেত অন্যান্য রাখালরাও সেখানে পশুপাল নিয়ে যেত |
কিন্তু তাদের পশুপাল ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরত |
অথচ আমাদের পশুপাল পরিতৃপ্ত অবস্থায় এবং পালানে দুধভর্তি অবস্থায় বাড়ী ফিরত |
এভাবে প্রতিটি ব্যপারেই আমরা বরকত লক্ষ্য করলাম এবং আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এল |
(৩) কাবা চত্বরের যে নির্দিষ্ট স্থানটিতে দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব বসতেন, সেখানে তার জন্য নিএদিষ্ট আসনে কেউ বসতো না |
কিন্তু শিশু মুহাম্মাদ ছিলেন ব্যতিক্রম |
তিনি এসে সরাসরি দাদার আসনেই বসে পরতেন |
তার চাচারা তাকে সেখান থেকে নামিয়ে দিতে চাইলে দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব তাকে নিজের কাছেই বসাতেন ও গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলতেন, " আমারে বেটাকে ছেড়ে দাও |
আল্লাহর কসম! এর মধ্যে বিশেষ কিছু শুভ লক্ষণ আছে" |
(৪) দাদার মৃত্যুর পর শিশু মুহাম্মাদ চাচা আবু ত্বালিবের নিকটে লালিত-পালিত হন |
আবু ত্বালিব তখন কুরায়েশগণের সরদার |
বৃষ্টির অভাবে মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে |
লোকেরা এসে আবু ত্বালিবকে বলল, চলুন সবাই আল্লাহর নিকটে পানি প্রার্থনা করি |
আবু ত্বালিব শিশু মুহাম্মাদকেও সাথে নিলেন এবং কাবা গৃহের দেয়াল ঘেষে নিজের কাছে দাড় করিয়ে পানি প্রার্থনা করলেন |
এমন সময় আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেল |
অতঃপর মুষলধারে বৃষ্টি নেমে গেল |
কিছুক্ষণের মধ্যেই সব ভরে উঠলো |
তৃষিত মক্কায় আনন্দের বন্যা বয়ে গেল |
এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে মুগ্ধ-বিষ্মিত আবু ত্বালিব ভাতিজার প্রশংসায় বলেন, "শুভ্র দর্শন (মুহাম্মাদ) যার চেহারার অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়ে থাকে |
সে যে ইয়াতীমদের আশ্রয়্স্থল ও বিধবাদের রক্ষক" |
কিশোর মুহাম্মাদ: |
১২ বছর বয়সে চাচার সাথে ব্যবসা উপলক্ষ্যে সর্বপ্রথম সিরিয়া গমন করেন |
সেখানে জারজীস অরফে বুহায়রা নামক জনৈক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাহেব অর্থাৎ খৃষ্টান পাদ্রীর সাথে সাক্ষাৎ হ'লে তিনি মক্কার কাফেলাকে গভীর অতিথেয়তায় আপ্যায়িত করেন এবং কিশোর মুহাম্মাদের হাত ধরে কাফেলা নেতা আবু ত্বালেবকে বলেন, "েই বালক হ'ল বিশ্ব জাহানের নেতা, একে আল্লাহ বিশ্ব চরাচরের রহমত হিসেবে প্রেরণ করবেন" |
আবু ত্বালেব বললেন, কিভাবে আপনি এই কথা বুঝলেন? তিনি বললেন, গিরিপথের অপর প্রান্ত থেকে যখন আপনাদের কাফেলা দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল, তখন আমি খেয়াল করলাম যে, সেখানে এমন কোন প্রস্তরখণ্ড বা বৃক্ষ ছিল না যে এই বালককে সিজদা করেনি |
আর নবী ব্যতীত এরা কাউকে সিজদা করে না |
এতদ্ব্যতীত 'মোহরে নবুঅত্ִ দেখে আমি তাকে চিনতে পেরেছি, যা তার স্কন্ধদেশের নীচে ছোট্ট ফলের আকৃতিতে উচু হয়ে আছে |
আমাদের ধর্মগ্রন্থে আখেরী নবীর এসব আলামত সম্পর্কে আমরা আগেই জেনেছি |
অতএব হে আবু ত্বালেব! আপনি সত্বর একে মক্কায় পাঠিয়ে দিন |
নইলে ইহুদীরা জানতে পারলে ওকে মেরে ফেলতে পারে |
অতঃপর চাচা তাকে কিছু গোলামের সাথে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন |
তরুণ মুহাম্মাদ: |
তিনি যখন পনের কিংবা বিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন ফিজার যুদ্ধ শুরু হয় |
এই যুদ্ধে একপক্ষে ছিল কুরায়েশ ও তাদের মিত্র বনু কিনানাহ এবং অপর পক্ষে ছিল ক্বায়েস আয়লান |
যুদ্ধে কুরায়েশ পক্ষের জয় হয় |
কিন্তু এ যুদ্ধের ফলে সম্মানিত মাস (যে মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ) এবং কাবার পবিত্রতা নষ্ট হয় বলে একে 'হারবুল ফিজার্ִ বা দুষ্টদের যুদ্ধ বলা হয় |
তরুণ মুহাম্মাদ এই যুদ্ধে চাচাদের তীর যোগান দেবার কাজে সহায়তা করেন |
উল্লেখ্য যে, ফিজার যুদ্ধ মোট চারবার হয় |
প্রথমটি ছিল কিনানাহ ও হাওয়াযেন গোত্রের মধ্যে |
দ্বিতীয়টি ছিল কুরায়েশ ও হাওয়াযেন এর মধ্যে |
তৃতীয়টি ছিল কিনানাহ ও হাওয়াযেন এর মধ্যে এবং সর্বশেষ ও চতুর্থটি ছিল কুরায়েশ ও কিনানাহ মিলিতভাবে ক্বায়েস আয়লানের বিরুদ্ধে |
'হিলফুল ফুযূল্ִ' বা 'কল্যাণকামীদের সংঘ': |
ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখে দয়াশীল মুহাম্মাদের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া হয় |
যাতে এইরুপ ধ্বংসলীলা আর না ঘটে, সেজন্য তিনি গভির চিন্তায় মগ্ন হলেন |
এই সময় হঠাৎ একটি ঘটনা ঘটে যায় |
যুবায়েদ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি ব্যবস্যা উপলক্ষ্যে মক্কায় এসে অন্যতম কুরায়েশ নেতা আছ বিন ওয়ায়েল এর নিকটে মালামাল বিক্রয় করেন |
কিন্তু তিনি মূল্য পরিশোধ না করে মাল আটকে রাখেন |
তখন লোকটি অন্য সব নেতাদের কাছে সাহায্য চাইলে কেউ এগিয়ে আসেনি |
ফলে তিনি আবু কুবায়েস পাহাড়ে উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে হৃদয় বিদারক কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন |
রাসূলের চাচা যুবায়ের বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এই আওয়ায শুনে ছুটে যান এবং ঘটনা অবহিত হয়ে তিনি অন্যান্য গোত্র প্রধানদের নিকট গমন করেন |
এই সময় তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ বিন জাদআন তায়মীর গৃহে বনু হাশেম, বনু মুত্ত্বালিব, বনু আসাদ, বনু যোহরা, বনু তামীম প্রভৃতি গোত্র প্রধানদের দেকে বৈঠক করেন |
উক্ত বৈঠকে রাসূলের দাদা ও নানার গোত্র সহ পাচটি গোত্র যোগদান করে |
বৈঠকে তরুণ মুহাম্মাদ কতগুলি কল্যাণমূলক প্রস্তাব পেশ করেন, যা নেতৃবৃন্দের প্রশংসা অর্জন করে এবং চাচা যোবায়েরের দৃঢ় সমর্থনে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে চারটি প্রস্তাব গৃহীত হয় |
মুলতঃ ভাতিজা মুহাম্মাদ ছিলেন উক্ত কল্যাণচিন্তার উদ্ভাবক এবং পিতৃব্য যোবায়ের ছিলেন তার প্রথম ও প্রধান সমর্থক |
চুক্তিগুলো ছিল- |
(১) আমরা সমাজ থেকে অশান্তি দূর করব (২) মুসাফিরদের হেফাযত করব (৩) দুর্বল ও গরিবদের সাহায্য করব (৪) যালেমদের প্রতিরোধ করব |
হরবুল ফিজারের পরে যুলক্বাদাহর নিষিদ্ধ মাসে আল্লাহর নামে এই চুক্তি সম্পাদিত হয় |
এই চুক্তি সম্পাদনের পরপরই তারা আছ বিন ওয়ায়েল এর কাছে যান এবং তার নিকট থেকে উক্ত মযলুম যুবায়দী ব্যবসায়ীর প্রাপ্য হক বুঝে দেন |
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.