content
stringlengths 0
129k
|
---|
সেই হিসেবে এ বিষয়ে অল্প সময়ে কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হল |
হাদীসের কোন গ্রহণযোগ্য কিতাবে আজানের সময় আঙ্গুল চুমু খাওয়া ও চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন কথা বর্ণিত হয়নি |
আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা যেসব কিতাব থেকে উক্ত মাসআলাটির প্রমাণ পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন, তা মূলত কয়েকটি |
কানযুল ইবাদ |
ফাতাওয়ায়ে সূফিয়া |
কুহুস্তানী রহঃ এর লিখা জামেউর রূমূজ |
কিতাবুল ফিরদাউস |
মূল উৎস এ ৪টি গ্রন্থ |
যে ৪ কিতাবের রেফারেন্সে তা আনা হয়েছে, ফাতাওয়া শামী, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আলবাহরুর রায়েক এবং জালালাইনের হাশিয়ায় |
তাহলে মূল উৎস কিন্তু ৪টিই থাকছে |
পরবর্তী কিতাব তথা ফাতাওয়া শামী, মারাকিল ফালাহ ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ হওয়া মানে আলাদা হয়ে যাওয়া নয় |
বরং মূল প্রমাণ্য উক্ত কয়েকটি কিতাবই থাকে |
এবার আমরা দেখবো উপরোক্ত কিতাবগুলোতে বর্ণিত সব কথাই কি গ্রহণযোগ্য? নাকি তাহকীক করতে হবে? |
কানযুল ইবাদ |
كنز العباد، في شرح الأوراد |
يعني: أوراد الشيخ، الأجل، محيي السنة: شهاب الدين السهروردي. |
والشرح:لبعض المشايخ.في مجلد.منقول من: كتب الفتاوى، والواقعات. |
وهو: شرح فارسي: بقوله.لعلي بن أحمد الغوري، الساكن بخطة: كره. |
কানযুল ইবাদ ফী শরহিল আওরাদ অর্থাৎ আওরাদুশ শায়খুল আজল মুহিউস সুন্নাহ শিহাবুদ্দীন আসসাহরাওয়ার্দীর ওযীফা এবং মালফুজাত কোন বুযুর্গ ব্যক্তি লিখেছেন |
যা ফাতাওয়ার কিতাব ও জীবনী গ্রন্থ থেকে নেয়া |
এক খন্ডে প্রকাশিত |
এটি ফার্সি ভাষায় আলী বিন আহমাদ আলগুরীর অনুবাদে প্রকাশিত |
যিনি খাত্তা এলাকার বাসিন্দা |
[কাশফুজ জুনুন-২/১৫১৭] |
এই হল, কানযুল ইবাদ কিতাবের হালাত |
কোন বুযুর্গ লিখেছেন? কোন উৎসমূল থেকে তা সংগ্রহ করেছেন? তার কিছুই জানা নেই |
এমন একটি মাজহূল গ্রন্থে উদ্ধৃত বিষয় কি করে মুস্তাহাবের মত শরয়ী বিধানের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে? |
ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ |
আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী রহঃ বলেনঃ |
((الفتاوي الصوفيّة)) لفضل الله [بن] محمد بن أيوب، تلميذ ((جامع المضمرات)) كما نقله صاحب ((الكشف)) عن البِرْكِليّ أنّه قال: إنّها ليست من الكتب المعتبرة، فلا يجوزُ العمل بما فيها إلا إذا علمَ موافقتها للأصول. |
"জামেউল মুজমারাত" গ্রন্থ প্রণেতার ছাত্র ফযল বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব এর কিতাব "ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ" সম্পর্কে "কাশফুজ জুনুন" প্রণেতা বিরকিলিই এর বরাতে উল্লেখ করেছেনঃ নিশ্চয় এটি [ফাতাওয়া সুফিয়্যাহ] কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব নয় |
তাই এর মাঝে থাকা যেসব বিষয় উসূলে শরীয়তের সাথে না মিলে, এমন কথার উপর আমল করা যাবে না |
[মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৫১, কাশফুজ জুনুন-২/১২২৫] |
কুহুস্তানী |
والقُهُسْتَانِيُّ كجارفِ سيل، وحاطب ليل خصوصاً واستناده إلى كتب الزاهديّ المعتزليّ. انتهى |
আল্লামা শামী রহঃ বলেনঃ কুহুস্তানী হল, স্রোতে ভেসে যাওয়া এবং অন্ধকারে লাকড়ি সংগ্রহকারী |
বিশেষ করে তিনি যখনি যাহেদ মু'তাজিলীর কিতাব থেকে কোন কথা গ্রহণ করে |
[তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যাহ-২/৩২৪, মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮] |
মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ কুহুস্তানী সম্পর্কে বলেনঃ |
وقال على القاري المكيّ في رسالتِه: ((شم العوارض في ذم الروافض)): لقد صدقَ عصامُ الدين في حقّ القُهُسْتَانِيّ أنّه لم يكن من تلاميذ شيخ الإسلام الهَرَوي، لا من أعاليهم، ولا من أدانيهم، وإنّما كان دلاّل الكتب في زمانه، ولا كان يُعرف بالفقه وغيره بين أقرانه، ويؤيّدُه أنّه يجمعَ في ((شرحِه)) هذا بين الغث والسمين، والصحيح والضعيف من غير تحقيق وتدقيق، فهو كحاطب الليل، الجامعِ بين الرطب واليابس في الليل. انتهى. |
মোল্লা আলী কারী আলমক্কী তার রিসালা "শাম্মুল আওয়ারিজ ফী জাম্মির রাওয়াফিজ" নামক গ্রন্থে লিখেনঃ ইসামুদ্দীন সাহেব কুহুস্তানীর বিষয়ে হক কথা বলেছেনঃ যে, তিনি আসলে শাইখুল ইসলাম আলহারওয়ী এর বড় ছোট কোন ছাত্রের মাঝেই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না |
বরং তিনি তার সময়কালে [ফিরাক্বে বাতিলার] কিতাবের দালাল ছিলেন |
তিনি তার সময়কালে ফিক্বহ বা অন্য কোন বিষয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন না |
[ইমামুদ্দীন সাহেবের কথাটি] এ বিষয়টি আরো শক্তিশালী করে তার এই শরহে মুখতাসারুল বিকায়া [অর্থাৎ জামিউর রূমূজ] কিতাবে তাহকীক ছাড়াই গলত, সহীহ, সঠিক বেঠিক সব ধরণের কথা একত্রিত করা দেখে |
তিনি যেন রাত্রের ঐ লাকড়ি একত্রকারীর মত, যে রাতের অন্ধকারে ভিজা শুকনা সব ধরণের লাকড়ি সংগ্রহ করে যায় |
[মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮] |
এসব কথা জানার পরও কুহুস্তানী কিতাবের রেফারেন্স কিভাবে উপস্থাপন করে বিদআতি বন্ধুরা? অথচ এ বিষয়ে কোন বিশুদ্ধ হাদীসের টিকিটিও পাওয়া যায় না |
ফাতাওয়া শামী লেখকের মন্তব্যঃ |
ইবনে আবেদীন শামী রহঃ আঙ্গুল চুমু খাওয়া সংক্রান্ত দলীল কানযুল ইবাদ, ফাতাওয়া সুফিয়া, কুহুস্তানী এবং বাহরুর রায়েকের উদ্ধৃতিতে নকল করার পর উল্লেখ করেনঃ |
وَذَكَرَ ذَلِكَ الْجِرَاحِيُّ وَأَطَالَ، ثُمَّ قَالَ: وَلَمْ يَصِحَّ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ كُلِّ هَذَا شَيْءٌ. |
এসব জিরাহী ও উল্লেখ করেছেন ও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, তারপর লিখেনঃ এসবের [আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে লাগানো] কোন দলীলই মারফূ নয় |
[ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৭০] |
আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে মোছার কথাগুলো যেমন ইবনে আবেদীন রহঃ উল্লেখ করছেন, তেমনি শেষে এসবের কোনটিই যে বিশুদ্ধ নয়, তাও উল্লেখ করে দিয়ে তিনি তার অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছেন |
তারপরও ইমাম শামী রহঃ উক্ত কাজের প্রবক্তা বলা কতটা খিয়ানত তা ভাবা যায়? |
জালালাইনের হাশিয়ার মন্তব্য |
ويكره تقبيل الظفرين ووضعهما على العينين لانه لم يرد فيه والذى ورد فيه ليس بصحيح (تعليقات جديدة حاشية جلالين-357 |
আঙ্গুলের নখ চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো মাকরূহ |
কেননা, এর কোন প্রমাণ নেই |
আর যেসব বর্ণনা এর স্বপক্ষে পেশ করা হয়, এর কোন কোনটিই সঠিক নয় |
[জালালাইনের হাশিয়া-৩৫৭] |
কিতাবুল ফিরদাউস এবং আলমাকাসিদুল হাসানাহ! |
আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা সবচে' বেশি দলীল দিতে দেখা যায় আল্লামা সাখাবী রহঃ এর কিতাব "আলমাকাসিদুল হাসানাহ ফী বায়ানি কাছিরিম মিনাল আহাদীসিল মুশতাহারাহ আলাল আলছিনাহ" নামক গ্রন্থ থেকে |
অথচ উক্ত কিতাবে যদিও অনেক বর্ণনা এ প্রসঙ্গে আনা হয়েছে |
কিন্তু কোনটিই সংকলক ইমাম সাখাবী সহীহ বলেননি |
বরং প্রতিটি বর্ণনাকেই অগ্রহণযোগ্য বলেছেন |
ذَكَرَهُ الدَّيْلَمِيُّ فِي الْفِرْدَوْسِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، ولا يصح |
দায়লামী ফিরদাউস নামক কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ মুআজ্জিনের মুখ থেকে "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" শুনে হুবহু তা বললেন |
তারপর শাহাদত আঙ্গুলের ভিতরের অংশে চুমু খেলেন এবং উভয় চোখ মাসাহ করলেন |
এ কর্ম দেখে রাসূল সাঃ বললেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর অনূরূপ কাজ করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর অপরিহার্য |
আল্লামা সাখাবী বলেনঃ এ বর্ণনা সহীহ নয় |
[মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪০-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯] |
বর্ণনা আনার পর পরই আল্লামা সাখাবী রহঃ এর "বর্ণনাটি সহীহ নয়" বলে দেয়ার মাধ্যমে পরিস্কার এটি জাল |
জাল বলার পরও উক্ত বর্ণনা দলীল হিসেবে কিভাবে পেশ করা হয়? |
وكذا ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه "موجبات الرحمة وعزائم المغفرة" بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا، |
প্রথম বর্ণনার মত এটিও বিশুদ্ধ নয় যে, যা সূফী আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আবী বকর ইয়ামানী স্বীয় কিতাব "মুজিবাতুর রহমাহ ওয়া আজায়িমুল মাগফিরাহ" এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ থেকে সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান |
বর্ণনাটি হল, হযরত খিজির আঃ থেকে বর্ণিত |
যে ব্যক্তি মুআজ্জিনকে "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বলবে "মারহাবান বিহাবীবী ওয়া কুররাতা আইনী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম |
তারপর তার উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে চুমু খাবে, এবং তা রাখবে দুই চোখে, সে ব্যক্তির চোখ কখনো পীড়িত হবে না |
[মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯] |
আশা করি কিছু বলার প্রয়োজন নেই |
আল্লামা সাখাবী যেখানে মানুষের মুখে প্রচলিত হাদীসের আলোচনায় এমন একটি বর্ণনা এনে, তা বিশুদ্ধ নয়, এতে প্রচুর অপরিচিত ব্যক্তি আছে এবং তাতে রয়েছে সূত্রবিচ্ছিন্নতা, এসব কিছু বলার পরও উক্ত কিতাবের নামে এ বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা কত বড় প্রতারণা ভাবা যায়? |
এরপর আল্লামা সাখাবী রহঃ আরো ৬/৭টি বর্ণনা তার আলমাকাসিদুল হাসানাহ গ্রন্থে এনেছেন |
আনার পর পরিশেষে তিনি এসব বর্ণনা বিষয়ে মন্তব্য করেনঃ |
ولا يصح في المرفوع من كل هذا شيء. |
এখানের কোন বর্ণনাই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয় |
[আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, প্রকাশনী দারুল কুতুব, বাইরুত] |
"হাদীসে মারফূ" দ্বারা প্রমাণিত নয় মানে কী? |
বিদআতি বন্ধুরা ইমাম সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য "হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়" দ্বারা সাধারণ লোকদের একটি ধোঁকা দিয়ে থাকেন |
সেটি হল এই যে, তারা বলেন "ইমাম সাখাবীর মত হল, এসব বিষয় মারফূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কিন্তু মাকতূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত |
এটি একটি জলজ্যান্ত প্রতারণা |
মূলত ইমাম সাখাবী রহঃ এর উক্ত কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উক্ত বিষয় মূলত কোন প্রকার হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয় |
পুরোটাই বানোয়াট |
যা পরিস্কার হয়ে যায় "আলমাকাসিদুল হাসানাহ" গ্রন্থের উক্ত কথাটির টিকা দেখলেই |
টিকায় মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলআজহারী আলগুমারী লিখেনঃ |
وحكى الخطاب في شرح مختصره خليل حكاية أخرى غير ما هنا، وتوسع في ذلك، ولا يصح شيء من هذا في المرفوع كما قال المؤلف، بل كله مختلق موضوع. [ط الخانجي |
খাত্তাব শরহে মুখতাছারাহ খলীল নামক গ্রন্থে এখানে উদ্ধৃত হয়নি এমন আরেকটি ঘটনা নকল করেছেন |
আর তিনি এ বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন |
অথচ এর মাঝের কোনটিই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং সব ক'টিই হল মনগড়া ও বানোয়াট |
[তা'লীকে আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১-৪৪২, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলগুমারী] |
মোল্লা আলী কারী রহঃ এর মন্তব্যঃ |
Subsets and Splits
No saved queries yet
Save your SQL queries to embed, download, and access them later. Queries will appear here once saved.