document_id
stringlengths 36
36
| text
stringlengths 253
70.2k
|
---|---|
0bff109f-eedc-43cc-a83b-3c0ff0dca67b | দেড় কোটি টাকা ফেরত চাওয়ায় বিয়ানীবাজারের ব্যবসায়ী খুন
সপরিবারে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ব্যবসায়ী সইবন আহমদ (৫০)। তাকে সপরিবারে আমেরিকায় পাঠানোর জন্য দেড় কোটি টাকা নেন সিলেট শহরের গাড়ি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। কিন্তু জানুয়ারি মাসে আমেরিকায় পাঠানোর মেয়াদ অতিবাহিত হলে টাকার জন্য জাকিরকে চাপ দেন সইবন।
বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) টাকা ফেরত প্রদানের জন্য তাকে সিলেট শহরে ফোন করে নেয়া হয়। টাকা আনতে আমেরিকা যাওয়ার বদলে তাকে চিরতরে পরপারে পাঠিয়ে দেয় ঘাতকরা। এমন তথ্য জানান বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল মুন্সী। তার দাবি, সইবন হত্যাকাণ্ডে ঢাকার এক আদম ব্যবসায়ীও জড়িত রয়েছেন।
এদিকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জাকির হোসেন (৩৩) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে বিয়ানীবাজার উপজেলার খশির সড়কভাংনী এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ সিলেটের আখালিয়া এলাকার সামছ উদ্দিনের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মাইক্রো (নং ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৫১১৯) জব্দ করে। গ্রেপ্তারকৃত জাকির সামছ উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশের দাবি, ওই মাইক্রোতে করে নিহত সইবনের মরদেহ বিয়ানীবাজারের গাছতলা এলাকায় এনে ফেলে দেয়া হয়েছে। জব্দ করা ওই মাইক্রোতে রক্তের জমাট বাঁধা চিহ্ন রয়েছে।
অপরদিকে ব্যবসায়ী সইবন হত্যায় পুলিশ জাকিরের শাশুড়ি সুলতানা (৪৭), স্ত্রী রিপা (২৬) ও পিতা সামছ উদ্দিনকে (৬০) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, গ্রেপ্তারকৃত জাকির এবং নিহত ব্যবসায়ী সইবনের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের জের ধরে তাদের মধ্যে আমেরিকা পাঠানোর চুক্তি হয়। হত্যাকাণ্ডে পেশাদার খুনিরা জড়িত বলে তিনি জানান।
নিহতের ভাগ্নে নুরুজ্জামান জানান, আমার মামা সইবন আহমদের পরিবার সহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবারকে আমেরিকা পাঠানোর জন্য জাকিরকে টাকা দেয়া হয়। টাকার পরিমাণ দেড় কোটি টাকার উপরে হবে। তিনি বলেন, আমেরিকা যাওয়ার জন্য নির্ধারিত টাকায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর কিছু টাকা অগ্রিম নেয়া হত। এভাবে বেশ কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে নেয়া অগ্রিম টাকার পুরোটাই জাকিরের হাতে তুলে দেয়া হয়।
নুরুজ্জামান দাবি করেন, জাকির গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি পার্টসের ব্যবসাও করে। সিলেট নগরীর দরগা গেইটে তার একটি নিজস্ব গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান আছে। তিনি বলেন, আমেরিকান দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তার সাথে জাকিরের যোগাযোগ আছে বলে সে গল্পগুজব করতো। তবে জাকিরের শ্বশুর আফতাব আলী আমেরিকায় বৈধভাবে বসবাস করেন। তিনিও নাকি আমেরিকায় লোক নেয়ার ব্যবসায় জড়িত আছেন।
তদন্ত সূত্র জানায়, টাকা ফেরত পাওয়ার কথা শুনে সইবন আহমদ একটি ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে বৃহস্পতিবার সিলেট পৌঁছান। বিকাল ৪টার দিকে তিনি বিয়ানীবাজার শহর থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের গাছতলা এলাকা থেকে পৌরশহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সইবন আহমদের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তি বড়লেখা উপজেলার ইটাউরী গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের দাসগ্রাম এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এখানকার জামান প্লাজায় আবরণী ফ্যাশন নামক দুটি কাপড়ের দোকান রয়েছে তার।
এদিকে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার (২৮ এপ্রিল) বিয়ানীবাজার পৌরশহরে মানববন্ধন ও শোকযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে তিনটি বিপণী বিতান বন্ধ রাখা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। |
d03f1220-d888-4b31-b65c-31b53f2eba0b | বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ভাসছে সিলেট
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর শুরু হতে বাকি মাত্র ১৯ দিন। এরপরই ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে পরিচিত ফুটবলের বিশ্ব লড়াই শুরু হবে সুদূর রাশিয়ায়। অবশ্য এর আগেই বিশ্বকাপের দেশ রাশিয়ার থেকে সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ বাংলাদেশ মেতেছে বিশ্বকাপ উৎসবে; সঙ্গী হয়েছে উত্তেজনা।
ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী দেশের মতো বাংলাদেশেও ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা, উন্মাদনা আর আগ্রহ সীমাহীন। হাজার মাইল দূরের খেলাগুলো টিভিতে দেখার অপেক্ষায় দেশের কোটি মানুষ সাথে সিলেটে লাখো সমর্থক।
লাল-হলুদ কার্ড, ফাউল-পেনাল্টি, কর্নার-অফসাইড আর হার-জিত নিয়ে মাঠে যেমন উত্তেজনা থাকবে ঠিক যারা টিভিতে খেলা দেখবে তাদের মধ্যেও কম উত্তেজনা থাকবে না। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে আনন্দিত হতে যাচ্ছে সিলেটের সমর্থক-ভক্তরা। বিশ্বকাপ নিয়ে সমর্থকদের কেউ কেউ মেতেছেন তর্ক যুদ্ধে।
ইতোমধ্যে সিলেট নগরী ও তার আশেপাশের এলাকার সমর্থকরা কিনতে শুরু করেছেন যার যার পছন্দের দেশের পতাকা। আবার কেউ কেউ এরই মধ্যে নিজেদের বাসাবাড়ির ছাদে লাগিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশে পতাকা। এদিকে নিজ দলকে সমর্থন জানানোর জন্য শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীরা।
পতাকার সাথে সাথে অনেকেই কিনছেন তার পছন্দের দলের জার্সি। তেমনি একজন খায়রুল আলম। তিনি আর্জেন্টাইন সমর্থক। প্রিয় দলের জার্সি কেনার সময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, এইমাত্র আর্জেন্টিনা দলের পতাকা ১৫০ টাকা দিয়ে কিনলাম। এখন এসেছি প্রিয় এ দলের জার্সি কিনতে।
তিনি বলেন, প্রিয় দলের জার্সি পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার মধ্যে। এজন্য যার যেমন বাজেট, তেমনই কিনতে পারছেন সকলে।
এদিকে বন্দরবাজারে বাবার সাথে পতাকা কিনতে আসা ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া ব্রাজিলের ক্ষুদে সমর্থক রাহুল পাল বলে, আমি ব্রাজিল দলের সাপোর্টার। আমি বাবার সাথে ব্রাজিলের সবচেয়ে সুন্দর পতাকাটা কিনতে এসেছি। সে তার মনের দৃঢ় বিশ্বাস থেকে বলে উঠে এবার আমার ব্রাজিলই চ্যাম্পিয়ন হবে।
এমন সমর্থকদের এ আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তুলতে বন্দর বাজারের নির্ধারিত স্থান থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার অলিগলিতে পতাকা ফেরি করছেন বিক্রেতারা। হকাররা হাঁক দিয়ে বিক্রি করছেন বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণকারী দল গুলোর পতাকা।
সিলেটের নগরীর বন্দর পয়েন্টে পতাকা বিক্রেতা এজাজ মিয়া জানান, আমি অনেক বছর ধরেই এ ব্যবসা করে আসছি। সব মৌসুমেই আমি পতাকা বিক্রি করি। তবে ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রত্যেক বারই পতাকা বিক্রি বাড়ে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ পিস পতাকা বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা। এদিকে বন্দরের হকার মার্কেট এলাকায় পতাকা তৈরির কাজও চলছে সমান তালে। কাইয়ুম নামের এক দর্জির দোকানী জানান, প্রতিদিন কত পতাকা বানাচ্ছি, তার সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব নয়। একদিকে বানাচ্ছি। আর অন্য দিকে বিক্রি করছি। যেমন বিক্রি হচ্ছে শহরে তার থেকেও বেশি যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে।
অন্য এক ব্যবসায়ী মোতালিব মিয়া বলেন, এখন দোকানে বিক্রির জন্য ছোট পতাকা বানাতে ব্যস্ত আমরা। তবে গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী বড় মাপের পতাকাও তৈরি করছি।
তিনি আরো জানান, ভালই ব্যবসা হচ্ছে। প্রত্যেকদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পতাকা বিক্রি করতে পারছি।
এছাড়াও ইতিমধ্যে প্রিয় ফুটবল দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে পথে বেড়োতে শুরু করেছেন অসংখ্য সমর্থক। প্রিয় ফুটবল দলের সমর্থন নিয়ে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে প্রীতি-বিভক্তি। চলছে খেলা উপভোগের জন্য রাত জেগে অপেক্ষা আর বিশ্লেষণ।
এদিকে বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে ওয়েব দুনিয়াতেও বেড়েছে বাড়তি উত্তেজনা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা তৈরি করেছেন অসংখ্য গ্রুপ আর পেজ। পেজগুলোতে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত আপডেটও। জানিয়ে দেয়া হচ্ছে দলগুলোর নানা ধরনের খবরা খবর। পোস্ট করা হচ্ছে ছবি।
শুধু পতাকা ও জার্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই নগরীর ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবল খেলা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি উপভোগ করার জন্য অনেকে টেলিভিশন ক্রয় ও মেরামত করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ফুটবল বিশ্বকাপে নিজের দেশ না খেললেও প্রিয় দলকে সমর্থনে কোন সমর্থই রাখছেন না কমতি। |
e1f4091c-da4f-4216-b365-ab0fc8c61df4 | উন্নয়নের স্বার্থে টেবিল ঘড়িতে ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন : এড. জুবায়ের
আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনে সিলেট নাগরিক ফোরাম মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন- আমাদের আবেগ অনুভুতির পুরোটা জুড়েই পূণ্যভুমি সিলেট। সৌহাদ্র সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্ঠান্ত সিলেটে ৩০ জুলাই নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবেনা। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে সিলেটবাসীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হয়েও সিলেট বিভিন্ন দিক থেকে আজো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তার কেবলই সৎ,যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বের অভাবেই। দীর্ঘ মেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে সিলেটকে শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা মজলুম, আমাদের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হয়েছে। তবুও আমরা ইনসাফ ও নীতি থেকে একচুলও সরে যাইনি। ৩০ জুলাই নির্বাচনে মজলুমের পক্ষে, ইনসাফ ও উন্নয়নের প্রতীক টেবিল ঘড়িতে ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন। আমাদের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হলে দাতঁ ভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
তিনি শনিবার আসন্ন সিসিক নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি মার্কার সমর্থনে নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
সিলেট নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে, সদস্য সচিব মো: ফখরুল ইসলাম ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল ড. মোবারক হোসাইন, লেবারপার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা জহুরুল হক, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, ২০ দলীয় জোট সিলেট মহানগর সদস্য সচিব ও এডভোকেট জুবায়েরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, এনডিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, জাগপার মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান আহমদ লিটন, নেজামে ইসলাম পার্টি জেলা সভাপতি ক্বারী আবু ইউসুফ চৌধুরী, বিজেপি জেলা সদস্য সচিব ডা: একেএম নুরুল আম্বিয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা: হাবীবুর রহমান, ২০ দলীয় জোট সিলেট জেলা সদস্য সচিব ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, সিলেট জেলা উত্তরের সেক্রেটারী মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল সালাম আল মাদানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শাকুর, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক জামশেদ আলম সরকার ও সিলেট মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন- সিলেট নগরীতে পরিবর্তনের স্লোগান উঠেছে। এই পরিবর্তন সৎ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে নগরবাসী একজন প্রকৃত খাদেম পাবেন। যার নেতৃত্বে সিলেট হবে বিশ্বমানের নগরী।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন- সিলেট হচ্ছে সকল সফল আন্দোলনের সুতিকাগার। এখানে অতীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরণ বিরোধী আন্দোলন সহ বিভিন্ন আন্দোলনে সিলেটবাসীর রয়েছে গৌরবোজ্জল ভুমিকা। আপনাদের সামনে আরো একটি আন্দোলন এসেছে আর সেটা হচ্ছে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে মজলুমের পক্ষে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে টেবিল ঘড়ি মার্কায় বিজয়ী করার আন্দোলন। সিলেটে তারাই বিজয়ী হওয়ার অধিকার রাখে, যারা পুলিশ-গুলীকে ভয় না করে নিজেদের ভোটকেন্দ্র রক্ষায় জীবন দিতে পারে। ৩০ জুলাই সিলেটবাসী জীবন দিয়ে হলেও নিজেদের অধিকার রক্ষা করবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল ড. মোবারক হোসাইন বলেন- বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সফল কেন্দ্রীয় সভাপতি, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের রুপকার এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে সিলেট সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সুর্যোদয় হবে। আর টেবিল ঘড়ির বিজয় নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র হলে ছাত্র সমাজকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। |
e99907b4-ec62-4d4b-aeeb-95dfb75b4caa | সকল অন্যায়ের বিচারের ভার নগরবাসীকেই দিলাম: আরিফ
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘সিলেট নগরের মানুষের প্রতি আমার অগাধ আস্থা। তারা যে কাউকে যেমন বুকে টেনে নিতে পারেন তেমনি আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে দিতে পারেন। গত ৫ বছর আমার ওপর যে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে এবং আমার কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তার বিচারের ভার আমি নগরবাসীর ওপরই ছেড়ে দিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনকে বানচাল করা যাবে না। সিলেটের মানুষ অন্যায় সহ্য করে না। আপামর জনতা যদি ষড়যন্ত্রের বিষয় টের পেয়ে যায় তবে ষড়যন্ত্রকারীরা পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।’ তিনি প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার আহবান জানান।
শনিবার (২৮ জুলাই) সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ দিনের গণসংযোগে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ১১টায় তিনি নগরীর ঝেরঝেরিপাড়া এবং মিরাবাজার আবাসিক এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বত:ষ্ফ’র্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন।
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে সদ্যবিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার কর্মী সমর্থক প্রচার চালাতে পারছে না। তারা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ এ অবস্থায় নগরবাসীকে সোচ্চার ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নগরের মানুষই আমার বড় ভরসা। পুণ্যভুমি সিলেটে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না এখানকার মানুষ এ বিশ্বাস আমার আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নোংরামি পছন্দ করি না, অপপ্রচারে বিশ্বাস করি না। যারা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব বলছে তাদেরকে ব্যালেটের মাধ্যমে নগরবাসী সমুচিত জবাব দেবেন বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’
আরিফুল হক চৌধুরী আরো বলেন, দয়া করে সিলেটের মাটিকে কলংকিত করার চেষ্টা করবেন না। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পূণ্যভূমি সিলেটে অন্যায় করে ধ্বংস হয়ে গেছে এমন উদাহরণ ভুরিভুরি আছে। এ পূণ্যভূমি অন্যায়, অবিচার কখনো সহ্য করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তারপরও কেউ যদি কোনো অপচেষ্টা চালালে তার পরিণতি কোনভাবেই শুভ হবে না। এই নগরীর মানুষের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করবে না। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন, আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।’ আরিফুল হক চৌধুরী সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় সচেতন থাকার জন্য সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি আহবান জানান।
দুপুরে আরিফুল হক চৌধুরী দরগাহ মাদরাসায় আলেম উলামা এবং মাদরাসার ছাত্রদের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাবেক এমপি মাওলানা এডভোকেট শাহিনূর পাশা চৌধুরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আলেম উলামার সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক। আলেম উলামাদেরকে আমি অনেক ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। তারা ও আমাকে অনেক ভালোবাসেন। তাঁদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ আমাকে একবার কাউন্সিলর এবং একবার মেয়র হিসেবে বিজয়ী করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন।
মতবিনিময় সভায় আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন মাদরাসার মুহাদ্দিস মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী।
আরিফুল হকের প্রচার সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নগরীর ঝেরঝেরিপাড়া ও মিরাবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, মহানগর খেলাফত মজলিস-এর সহ সভাপতি আব্দুল হান্নান তাপাদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক, ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহমান, আম্বরখানা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কুতুবুর রহমান চৌধুরী, করিমুল্লাহ মার্কেটের সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক কাওছার আহমদ।
এছাড়া গণসংযোগকালে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট এবং অঙ্গ সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। |
34265519-977e-4141-8f58-db18202d2bf8 | রাত পোহালেই ৩ সিটিতে ভোট
রাজশাহী বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও বলছে নানা শঙ্কার কথা। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগেরও অন্ত নেই। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। দিন শেষে রাত পোহালেই সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে উত্তেজনা আছে। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ‘অভিজ্ঞতায়’ ভোট কারচুপির শঙ্কা করছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থীরা। গ্রেফতার, হয়রানি, ভয়ভীতি দেখানোর ও অভিযোগ করেছে বিএনপির প্রার্থীরা। শনিবার প্রচারনার শেষ দিনে বরিশালে বিএনপি প্রার্থীদের মাঠে নামতেই দেয়নি প্রশাসন, এমন অভিযোগও রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সব প্রত্যাখ্যান করে বলছে, ভোট উৎসব হবে নগরে। জনগণ ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে।
সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন তিন সিটি নির্বাচনের দিকে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনগুলো কেমন হয়, তা নিয়ে নানা রকম আলোচনা আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে সংসদ নির্বাচনের আগে এটি দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরীক্ষাও হতে পারে। বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা এ নির্বাচনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে। পশ্চিমা দেশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও দাতা দেশগুলো তিন সিটির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি বলতে গেলে ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার থেকে তিন সিটিতে ৪৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মাঠে নেমেছে। শহরগুলোর সর্বত্র চলছে র্যাবের টহল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে গণসংযোগ। যানবাহন চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। আগামীকাল নির্বাচনী এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনী সামগ্রী আনার কাজও প্রায় শেষ। আজ হবে বিলিবণ্টন।
নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে জয়ী হতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শেষ মুহূর্তের রণকৌশল তৈরিতে ব্যস্ত। তিন সিটিতে বিগত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার সবকটিতে জিততে মরিয়া আওয়ামী লীগ। বিএনপি জয়ের ধারাবাহিকতায় থাকতে চায়। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা বলছেন তারা।
বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন তথ্যের ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে আইসিটি আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। সিলেটে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কামরানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া।
ভোটের আগে আর নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলে থানা এবং ভোটের দিন কেন্দ্র ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
বরিশালে বিএনপি প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগে ঈদের খুশির মতো নির্বাচন হতো, এখন চোখের জলে নির্বাচন হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলাল বলেন, এই নির্বাচন ঘিরে নগরীতে উৎসব কাজ করছে।
নানা ঘটনা-রটনার মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের ১৮ দিনের নির্বাচনী প্রচার শেষ হয় গতকাল। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টার আগে থেকেই বন্ধ থাকবে সবধরনের প্রচার ও সভা-সমাবেশ। সে হিসেবে গতকাল ছিল নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। আর শেষ দিনেই প্রচারে মুখর ছিল তিন মহানগর। অলিগলিতে বেজেছে প্রচার মাইক। মেয়র-কাউন্সিলরপ্রার্থীদের কর্মীরা সকাল থেকেই লিফলেট হাতে নামেন রাস্তায়। সব দলের প্রার্থী এদিন ব্যাপক শোডাউন করেছেন। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করেছে দলগুলো।
বরিশালে আওয়ামী লীগের গণমিছিল, মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি: গতকাল শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ। শেষ দিনে সাত মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়রপ্রার্থী পরিকল্পনা করে ভোটার আকৃষ্টের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে নগরীর ৩০ ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হয় সর্বশেষ উঠান বৈঠক স্থল নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে।
অন্যদিকে বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বর থেকে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনায় ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে সমালোচনা করে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান ইসি নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
কামরানের পক্ষে এমপি এহিয়ার গণসংযোগ: সিলেটে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কামরানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। শনিবার বেলা ১টার দিকে নগরীর তালতলা এলাকায় কামরানের পক্ষে লিফলেট বিলি করতে তাকে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলার আহ্বায়ক এটিইউ তাজ রহমান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উছমান আলী চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের অংশ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে কামরানকে সমর্থনের কথা জানান তিনি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানতে চাইলে এহিয়া জানান, আমি দলের পক্ষ থেকে বদরউদ্দিন আহমেদকে সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। সেখান থেকে বের হলে কর্মীরা আমার হাতে কয়েকটি লিফলেট দিয়ে বিলি করার অনুরোধ করেন। তখন আমি কয়েক জনের হাতে লিফলেট তুলে প্রচারের উদ্বোধন করে দিই। তিনি বলেন, আমি এমপি হিসেবে লিফলেট বিতরণ করিনি এবং সংবাদ সম্মেলন করিনি। আমি মহানগর জাপার আহ্বাক হিসেবে দুটি লিফলেট ভোটারদের হাতে দিয়েছি।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা জানান, নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী সংসদ সদস্য এবং সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর আগেও দুইজন সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিকে শোকজ করা হয়েছিল।
রাজশাহীতে আইসিটি আইনে দুই মামলা
বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন তথ্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে দুটি মামলা করা হয়েছে। বোয়লিয়া থানায় দায়ের করা মামলা দুটির বাদী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার রাতে দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে আসামি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পাথরঘাটা শাখার সভাপতি হাসান আল বাকের মেসাল এবং অপর মামলার আসামি বদিউজ্জামান সাহেদ।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমানুল্লাহ জানান, মামলার আবেদন দুটি তিনি পেয়েছেন। এ বিষয়ে নির্বাচনী আইনে মামলা রেকর্ডের প্রস্তুতি চলছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশালে সবার দৃষ্টি ১১ ইভিএম কেন্দ্রে
নির্বাচনে ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ওই ১১ কেন্দ্রের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আর ওই ১১টি ভোটকেন্দ্রের প্রতি যেমন সবার দৃষ্টি, তেমনি প্রথমবারের মতো নতুন পদ্ধতিতে ভোটপ্রদানের বিষয়টিকে ওই কেন্দ্রগুলোর ভোটারদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করছে।
বরিশাল সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রের দূরত্ব, ওয়ার্ডে শিক্ষিতের হারসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এ ওয়ার্ডগুলোয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। |
f1bf7bca-6b80-47b1-bd5a-fd1b7b86d1ad | সিলেটে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের সমীকরণ
সিলেট সিটি করপোরেশনে কাল ভোট। এরই মধ্যে ভোটের মাঠের নানা সমীকরণ পাল্টে যেতে শুরু করেছে। দল-জোট ও রাজনৈতিক মহলে ভোটের সমীকরণ নিয়ে শেষ মুহূর্তেও নানা হিসাব-নিকাশ চলছে।
ভোট উৎসবের কথা বলা হলেও ভোটারদের চেয়ে প্রার্থী ও দলীয় কর্মীদের মধ্যেই তা বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সরব হলেও ভোটাররা যেন নীরব। ভোটের হিসাব-নিকাশ নিয়ে কথা বলতেও তাঁরা সতর্ক।
সিলেটের রাজনৈতিক মহলের মতে, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সদ্য সাবেক মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মধ্যে। নির্বাচনের মাঠে নামার পর থেকেই তাঁরা দুজন প্রথমে দলীয় কোন্দল-বিভেদ দূর করা এবং জোটগত ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা তৈরির চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছেন।
• ‘সংখ্যালঘু’ ও শ্বশুরবাড়ি ফ্যাক্টর
• কামরানকে সমর্থন জাপা ও ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশের
• অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরাও নির্বাচনে কামরানের পক্ষে মাঠে
• জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলনের বাইরে হেফাজতের ভালো প্রভাব
রাজনৈতিক মহলের মতে, সিলেট সিটির গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল নিজ দলের একটি অংশের সমর্থন না পাওয়া। কথিত আছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। এবার আর সেই অবস্থা নেই। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা নির্বাচনে কামরানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। দলের পক্ষ থেকে পাঁচ মনোনয়ন-প্রত্যাশীও কামরানের পক্ষে মাঠে আছেন। অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাই একসঙ্গে মাঠে আছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, কামরানের নির্বাচনের বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এর মধ্যে আন্তরিকতারও ঘাটতি নেই।
গতকাল শনিবার মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে কামরানকে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এ টি ইউ তাজ রহমান এই ঘোষণা দেন। সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখানে জাতীয় পার্টি কোনো কার্যক্রমে ছিল না। ২০০১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর দুই মেয়াদে মেয়র প্রার্থী দিলেও এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো মেয়র প্রার্থী দেয়নি।
এদিকে ওই দিন বিকেলে মিজবাউর রহমান চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ইসলামি ঐক্যজোট বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, দলটির আরেকাংশ রয়েছে আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে।
বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। দলের ‘উচ্চপর্যায়ের চাপে’ ১৯ জুলাই তিনি আরিফুলের সমর্থনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তারিখে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে তাঁর নাম ও প্রতীক থাকছে। নির্বাচনে আরিফুল হককে সমর্থনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে সিলেটের ভোটের মাঠে আর দেখা যাচ্ছে না সেলিমকে।
বদরুজ্জামান সেলিম সমর্থন করলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এখনো মাঠে আছেন। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন। নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নানা দেনদরবার হলেও তা সফল হয়নি। এটা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও রয়েছে। কথিত আছে, সরকারি দলের যোগসাজশে জামায়াত মাঠে রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে এসে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জামায়াতকে নির্বাচন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। এর জবাবে জামায়াতের প্রার্থী বলেন, ভোটের আগে বিএনপি প্রার্থী সরে দাঁড়াবেন বলে তাঁর আশা।
সিলেটে নিজেদের ভোটব্যাংক প্রসঙ্গে জামায়াত নেতাদের মূল্যায়ন হলো, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে তাঁদের প্রার্থী ৫০ হাজারের বেশি ভোট পাবেন। আর বিএনপির নেতাদের ধারণা, জামায়াত যা-ই বলুক, দলটির ভোট ১৫ হাজার ছাড়াবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের ধারণা, সিলেট শহরে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোট রয়েছে জামায়াতের।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সিলেট শহরের পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, দরগাহ মহল্লা, সোবহানীঘাট, মীরাবাজারসহ কিছু এলাকায় জামায়াতের প্রভাব রয়েছে। তবে দলটির বড় ভোটব্যাংক নেই। গত সিটি নির্বাচনে জামায়াতের চারজন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে জয়ী হন। এ অবস্থায় জামায়াত বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর ভোটে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। বরং বিএনপির একটি বড় অংশের বিশ্বাস, জামায়াত না থাকায় তাদের জন্য ভালো হয়েছে। সিলেটের প্রায় এক লাখ সংখ্যালঘু ভোটের একটি বড় অংশ আরিফুলের পক্ষে যাবে বলে তাদের ধারণা। জামায়াত তাদের সঙ্গে থাকলে এই ভোটে প্রভাব পড়ত।
বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের ভোটের দিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের দৃষ্টি রয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিএনপি ও জামায়াতের ভোট নিয়ে নানা অঙ্ক কষছেন। কারণ, জামায়াত ভালো ভোট পেলে তা বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হকের জন্য ঝুঁকি বাড়বে। এতে সুবিধা হবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের। এ ছাড়া সিলেটে জামায়াতের সঙ্গে কামরানের সুসম্পর্ক রয়েছে—সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন প্রচার রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী থাকায় তাদের ভোট অন্যদের বাক্স যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রার্থীদের প্রচারে উৎসবের নগর এখন সিলেট। প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রার্থীদের প্রচারে উৎসবের নগর এখন সিলেট। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনকে বাদ দিলে এখানে হেফাজতের ভালো প্রভাব আছে বলে জানা গেছে। আগের কয়েকটি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আঞ্জুমানে আল ইসলাহ, খেলাফত মজলিশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো সংগঠনের মোটামুটি প্রভাব আছে। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এসব দলের ভোটের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। এবারের নির্বাচনেও এসব ভোট বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এসব দলের ভোটারদের কাছে টানতে নেতাদের কাজে লাগাচ্ছেন প্রধান দুই প্রার্থী। সিলেটের পরিচিত ও প্রভাবশালী আলেম ও ইমামদেরও ভোটে কাজে লাগাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন কামরান-আরিফুল।
ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোট
সিলেটের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটারদের একটি বড় অংশ মনে করে, ভোটের লড়াইয়ে প্রায় এক লাখ সংখ্যালঘু ভোট একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয় নিয়ে সচেতন এসব ভোটারও। তাঁরা প্রকাশ্যে কোনো কিছু না বললেও উন্নয়নের দিকে জোর দিচ্ছেন। শহরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরী রাজবাড়ী, শিবগঞ্জ, আম্বরখানা, মাছিমপুর মণিপুরীপাড়ায় বিভিন্ন শ্রেণির ‘সংখ্যালঘু’ ভোটারের সঙ্গ কথা বলে জানা গেছে, শ্মশানঘাট উন্নয়ন, মন্দির উন্নয়ন ও জননিরাপত্তার বিষয়ে যিনি অগ্রাধিকার দেবেন, তাঁরা তাঁকে ভোট দেবেন।
শ্বশুরবাড়ি ফ্যাক্টর
এবারের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রায় ৪০-৪৫ হাজার ভোট বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এসব ভোটারকে নিজেদের পক্ষে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন দুই প্রার্থী। ধারণা করা হচ্ছে, এ ভোট ভাগাভাগি হবে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই কারণকে ‘শ্বশুরবাড়ি ফ্যাক্টর’ হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। কারণ, প্রধান দুই প্রার্থীর শ্বশুরবাড়ি বৃহত্তর এই অঞ্চলে। নিজেদের অঞ্চলের ভোটারদের স্বামীর পক্ষে টানতে সচেষ্ট রয়েছেন দুই প্রার্থীর স্ত্রী।
বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানের বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ময়তা গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সিলেটে আছেন। আর আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামা হকের বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ শহরের নওমহালে। বিয়ের পর ১৯৯১ সাল থেকে সিলেটেই তাঁর বসবাস। সিলেটের প্রথম দুই নির্বাচনে এই ভোটব্যাংকের দখল ছিল কামরানের হাতে। গত নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হয়ে সেই একচ্ছত্র ভোটব্যাংকে ভাগ বসান। এবারও এই ভোটের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই প্রার্থীর স্ত্রী মাঠে রয়েছেন।
ভোটের রাজনীতির বাইরে শঙ্কা
ভোটের রাজনীতির বাইরে শঙ্কা ভোটের পরিবেশ নিয়ে। ভোটারদের মূল ভয় পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে। ইতিমধ্যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যে চারটি মামলায় বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঘরবাড়িছাড়া।
আরিফুল হক চৌধুরী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলেছেন। গত শুক্রবার রাতে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, নির্বাচনের মাঠে যতই চাপ আসুক, হামলা-মামলা ও হুমকি আসুক, মাঠ ছাড়বেন না। দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা প্রসঙ্গে আরিফুল হক বলেন, ‘সবাইকে এত হয়রানি করছেন কেন। আপনারা বললে আমি সবাইকে নিয়ে কারাগারে হাজির হয়ে যাব।’
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি অতি উৎসাহী মহল কাজ করছে বলে আরিফুল হক মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, সরকারকেও স্যাবোটাজ করার চেষ্টা হচ্ছে। আরিফুল হক বলেন, স্থানীয় এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে জাতীয় নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়বে। সেটা দেশের জন্য ভালো হবে না।
এ ধরনের শঙ্কার ভেতরেও মানুষের মধ্যে আশাবাদ রয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কথা বলে বোঝা গেল, সবাই চান শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। সম্প্রীতির শহর সিলেটের সম্প্রীতি নষ্ট হতে দিতে চান না তারা। সাধারণ মানুষ মনে করেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয়ে যাবে না। এখানে প্রধান যে দুই প্রার্থী তাঁর দুজনই নগরবাসীর পরিচিত। তাঁদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত হোক, এটাই চান সবাই।
নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, জনগণই ভোটের প্রধান হিসাব-নিকাশ নির্ধারণ করেন। তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে জনপ্রিয় প্রতিনিধিই নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। প্রথম আলো |
ae66fc61-02a9-4b16-a9f8-83068b796880 | দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিঁথি……..
রয়েল সিলেট ডেস্ক:: শ্রীকান্ত আচার্য, শান্তনু মৈত্র, কৌশিকী চক্রবর্তী, মোনালী ঠাকুর ও পণ্ডিত তন্ময় বোসের মতো সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা জি বাংলার সারে গামাপার বিচারক। বাংলাদেশের অবন্তী দেব সিঁথির গানে মুগ্ধ হয়ে সবাই আসন ছেড়ে দাড়ালেন। সিঁথি যা গাইতে পারেন তা শিষও বাজাতে পারেন। বিচারক প্যানেল এটি পরখ করতে বাশি বাজাতে বললেন একজনকে। বাশির সুরে গান সিথি অবলীলায় শিষ বাজিয়ে গেয়ে যাচ্ছিলেন। বাশিতে যে সুরই হচ্ছে সিথি শিষ দিয়ে যাচ্ছিলেন। জ্বলে উঠল গীটার। অনুষ্ঠানের সোনালী মুহূর্তে রুপ নিল। বিচারকদের চোখ ছানাবড়া। একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন। একজন তো মঞ্চে এসে অভিবাদনই জানিয়ে গেলেন। পন্ডিত তন্ময় বোস সিঁথিকে নতুন নাম দেন ‘ শিষ পিয়া’। আরেক বিচারকের সাথে শিষের মাধ্যমে সাওয়াল জবাবও করেন। সেই বিচারক মুগ্ধ হয়ে বলেন,‘ শিষ পিয়া জিন্দাবাদ’।
দেশের বাইরে রিয়েলেটি শো প্রতিযোগিতায় এমন মুহূর্তকে ক্যারিয়ারের সেরা ঘটনাই মনে করছেন সিঁথি,‘ এটা আমার স্বল্প ক্যারিয়ারে অনেক বড় প্রাপ্তি। বিজ্ঞ বিচারকদের এমন ভালোবাসা আমাকে গানের প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছে।’ জি বাংলায় সিঁথির অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর দুই বাংলায় বেশ আলোড়ন পড়েছে। সিঁথির পারফরম্যান্সের ভিডিও লক্ষাধিকবার ভিউ হয়েছে। কলকাতার উদীয়মান শিল্পি শুভঙ্কর পান্ডা বলেন,‘ অবন্তীর পারফরম্যান্স দেখে কলকাতা শহরে অনেকেই এখন শিষ বাজানোর চেষ্টা করছে।’ সিথি এখন প্রতিযোগিতায় ৩২ জনের মধ্যে রয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের ল্যাবরেটরীতেই দিনের বেশি সময় চলে যায়। সিথি অবশ্য নিজেই পরীক্ষাগার বানিয়েছেন। সুরের সাথে কাপ ও শিষের দারুণ রসায়ন করেছেন। মিরপুরে সিথির বাসাই ছোটখাটো একটা ল্যাবরেটরীই। নানা রংয়ের কাপ ও সঙ্গীতের যন্ত্রপাতি।
জামালপুর মধ্যবিত্ত পরিবারে সিঁথির জন্ম। বাবা অদিত কুমার দেব জামালপুর জর্জ কোটে চাকরি করতেন। জামালপুর সরকারী বাংলোতেই সিঁথির শৈশব-কৈশোর কেটেছে। বাবা-মা ছিলেন সংস্কৃতিমনা। তিন বোনের মধ্যে সিথি মেঝ। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য উৎসাহ দিতেন। সিঁথির বড় বোন সুশান্ত দেব কানুর কাছে গান শিখতেন। সিঁথিও যেতেন সাথে। ওস্তাদ সুশান্ত দেব কানু যখন বড় বোনকে গান শেখানোর সময়ই মৌলিক বিষয়গুলো রপ্ত করেন। বড় বোনের ভুলগুলো তিনিই শুধরে দিতেন। পরে এক সময় ওস্তাদ কানু সিঁথিকে গান তুলে দিয়ে বলতেন বড় বোনকে শেখাতে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক জামালপুরেই। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে ছেলেদের শিষ শুনেছেন অনেক। ছেলেদের মনে না ধরলেও শিষ বেশ মনে ধরেছিল তার। সেই শিষকে বেশ সাধনার মাধ্যমে গানে ফুটিয়ে তুলেন। দুবাই, আমেরিকায় বাংলা প্রবাসীদের অনুষ্ঠানের কনসার্টে শিষ বাজিয়ে গান করেছেন।
সম্প্রতি শিষের সাথে কাপ সং যুক্ত করে নতুন ধারা এনেছেন। ইউটিউব থেকে কাপ সং রপ্ত করেছেন।
বাবার মৃত্যু ও আরো কিছু ঘটনায় ২০০৬ সালের পর কিছু দিন বিরতি ছিল গানে। ২০১০ এর পর থেকে আবার গানে সরব হন। ২০১২ সালে এনটিভি ক্লোজ আপ ওয়ানে সেরা দশে থাকার পরই মূলত আলোচনায় আসেন। টিভি শো, বিভিন্ন কনসার্টে নিয়মিত গান করে চলছেন।
রসায়ন বিভাগের বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম খুব কাছ থেকে দেখছেন সিঁথিকে। তার দৃষ্টিতে বান্ধবী সিঁথি গায়িকা সিঁথির চেয়ে অনেক বড়,‘ ওর এতো জনপ্রিয়তা ও ভক্ত। কিন্তু ও খুবই সাধারণ। সময় পেলেই বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় মাতে। বিন্দুমাত্র তারকাখ্যাতি ভর করে না ওর উপর। মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। ’ একই রকম মন্তব্য বান্ধবী কাজী সায়েমার,‘ ও খুবই পরিশ্রমী ও মেধাবী। পড়াশোনা, বাসা, গান, বন্ধুদের আড্ডা সবই করত। শুধু গানে নয় নাচেও দারুণ সিঁথি। ’ গানের মতো নাচে নিয়মিত নন সিঁথি। নাচটা পেশাদার নয়। ঘনিষ্ঠ কোনো অনুষ্ঠানে শখের বশেই নাচেন।
সোনরাগাও বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করতেন। জি বাংলার এই অনুষ্টানের জন্য শিক্ষকতা ছেড়েছেন। গান দিয়েই ভবিষ্যত করতে চান। ইউটিউব ও প্লে ব্যাক সঙ্গীতে তার ঝোক। |
2c6b262a-7b6d-4f9c-92de-0863d078262a | সোমবার টেক জায়ান্ট অ্যাপলের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন শুরু হয়েছিল চিরাচরিত কায়দায়। প্রথমেই বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক ও অন্য নির্বাহীরা। তাদের বক্তব্যেই নয়া কিছু সফটওয়্যার ও ফিচারের কথা উঠে আসে। তবে আইফোনের দিকেই ফোকাস ছিল বেশি। অ্যাপলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রেইগ ফেডেরিঘি উন্মোচন করলেন অপারেটিং সিস্টেম আইওএস-এর ১২তম সংস্করণ। এই বছরের শেষ নাগাদ গ্রাহকরা এই সর্বশেষ সংস্করণের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন।
যেসব ডিভাইসে ইতিমধ্যে আইওএস ১১ চলছে, তারা বিনামূল্যেই আইওএস ১২-এ আপগ্রেড করে নিতে পারবেন।
ফেডেরিঘি বলেছেন, আইওএস ১২ আপগ্রেডে তাদের মূল নজর ছিল গতি (স্পিড) ও পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করার দিকে। তবে এর বাইরেও বেশ কয়েকটি নতুন ফিচার ও অ্যাপ এই আপগ্রেডে থাকবে বলে জানান তিনি। টাইম ম্যাগাজিনের এমন ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার বাছাই করেছে।
স্ক্রিনটাইম ও ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মুড
অ্যাপলের নতুন স্ক্রিনটাইম অ্যাপে ব্যবহারকারী দেখতে পাবেন তিনি কত বেশি তার আইফোন ব্যবহার করেন। কোন অ্যাপ তিনি বেশি ব্যবহার করেন। তারা আরো দেখতে পাবেন, কোন অ্যাপের কারণে তারা ফোন হাতে নেন বেশি। কিছু বিশেষ অ্যাপ ব্যবহারের সময়সীমা বেঁধে দিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। পিতামাতাও সন্তানের জন্য এই সময়সীমা বেঁধে দিতে পারবেন। ফেডেরিঘি বলেন, ‘আমরা মনে করি এই ফিচার অনেক মানুষের জন্য উপকারী হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য। অনেক পরিবার একটা ভারসাম্য পাবে বলে মনে করি আমরা।’
আইফোনের নতুন ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মুড চালু করলে রাতের বেলা বা কোনো বিশেষ জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নোটিফিকেশনের আওয়াজ বন্ধ থাকবে। এই দুইটি নতুন ফিচারকেই ভাবা হচ্ছে অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ নিরসনে অ্যাপলের পদক্ষেপ হিসেবে।
সিরি শর্টকাটস
নতুন সিরি শর্টকাটস অ্যাপের মাধ্যমে আইফোন ব্যবহারকারীরা নিজের মতো করে সিরি অ্যাপকে নির্দেশনা দিতে পারবেন। ধরুন, আপনি রাস্তার ট্রাফিক কেমন, সেই আপডেট জানাতে সিরিকে নির্দেশনা দিয়ে রাখলেন। অথবা আপনি চান, ‘সিরি, আই অ্যাম গোয়িং হোম’ বললেই যাতে আপনার প্রিয় গানটি বেজে উঠে। এই শর্টকাটগুলো আপনি রেখে দিতে পারবেন বারবার ব্যবহারের জন্য।
অ্যানিমোজি ও মেমোজি
নতুন আপগ্রেডে কোয়ালা, টি-রেক্স সহ বেশ কয়েকটি অ্যানিমেটেড অ্যানিমোজি থাকবে। এছাড়া ব্যবহারকারীরা নিজের মতো করেও অ্যানিমোজি বানাতে পারবেন। একে বলা হচ্ছে মেমোজি। এসব বার্তা আদান-প্রদানে ব্যবহার করা যাবে।
গ্রুপ ফেসটাইম
অ্যাপলের ফেইসটাইম অ্যাপে এই প্রথমবারের মতো একই সঙ্গে দুইজনের বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলা যাবে। একে বলা হচ্ছে ‘গ্রুপ ফেইসটাইম’। এই ফিচারের মাধ্যমে একই আলাপনে সর্বোচ্চ ৩২ জন থাকতে পারবেন। কথা বলার পাশাপাশি ব্যবহারকারীরা মেমোজি ও অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার করা যাবে।
মেজার
অ্যাপলের নতুন অ্যাপ মেজার-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ফার্নিচার, ফ্রেম বা এই ধরনের জিনিসের আকার মাপতে পারবেন। যারা ঘরে-বাইরে বিভিন্ন টুল বা ছোট ছোট জিনিস বানাতে পছন্দ করেন, তাদের এই অ্যাপ কাজে লাগবে।
গুগল ম্যাপ ও ওয়েজ আসছে কারপ্লেতে
ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহার করতে অ্যাপলের রয়েছে নিজস্ব ইন্টারফেস। এর নাম কারপ্লে। গাড়িচালনার সময় এই ইন্টারফেস ব্যবহার করা যায়। প্রথমবারের মতো কারপ্লেতে এখন থেকে তৃতীয় পক্ষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ যেমন গুগল ম্যাপ ও ওয়েজ ব্যবহার করা যাবে। |
2028482c-8e3a-48c2-afd5-10bdd222c804 | বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে জয় তুলে নিয়েছিল ২০০৯ সালে। এরপর অবশ্য বিদেশের মাটিতে হতাশাই হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গী। মাঝে এক দুটি জয় ও ড্র এলেও টেস্টে নিজেদের প্রমাণ করতে এখনো ব্যর্থ টাইগাররা। আগামী পাঁচ বছর আরো অনেক টেস্টই খেলতে হবে দেশের বাইরে। সেই মিশন শুরু হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আজ প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে অ্যান্টিগাতে। প্রায় ১০ মাস পর বিদেশের মাটিতে সাদা পোশাকে মাঠে নামবে সাকিব আল হাসানের দল। শেষ সফরটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য সাকিবের জন্য অন্য অনুপ্রেরণার জায়গা। কারণ ২০০৯-এ প্রথম টেস্টেই দল থেকে ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। এরপর সাকিবই ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। তার হাত ধরেই এসেছিল ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। এবারো অভিজ্ঞ দল নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় সাকিব। সেই সঙ্গে টাইগারদের নতুন কোচ স্টিভ রোডসের মিশন শুরু হচ্ছে টেস্টের কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়ে। দেশ ছাড়ার আগে কোচ অবশ্য ঘোষণা দিয়েছেন সিরিজ জয় দিয়েই শুরু করতে চান তিনি।
অ্যান্টিগায় প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটে বলে দারুণ করেছিল বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সাকিবও ফিফটি হাঁকিয়েছেন। তবে এ সিরিজটি সাকিবের নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জও। আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর আলোচনা-সামালোচনার ঝড় ওঠে তার নেতৃত্ব নিয়ে। তাই সাকিবের উপর আলাদা চোখ থাকবে বিসিবির। গত অক্টোবরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাকিব ছিলেন বিশ্রামে। ৬ মাস টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন না জানিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিসিবির কাছে ছুটি চেয়েছিলেন। যদিও বিসিবি তাকে শুধু ওই সিরিজের জন্যই ছুটি মঞ্জুর করেছিল। এরপর দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ইনজুরির কারণে টেস্ট খেলতে পারেননি তিনি। সাকিব শেষ টেস্ট খেলেছেন সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বলতে গেলে প্রায় ১১ মাস পর তিনি সাদা পোশাকে মাঠে নামবেন। সাকিব ছাড়াও দলে রয়েছেন স্পেশালিস্ট স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ক্যারিবীয়ান পেস সহায়ক উইকেটে দলের বড় শক্তি মোস্তাফিজুর রহমানই নেই। তিনি ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছেন দল থেকে। তবে বাকি চার পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি, শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা অবু জায়েদ রাহী প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ করেছেন। তাই তাদের উপর আস্থা রাখছে বাংলাদেশ দল। তবে আজ চার পেসার নিয়ে মাঠে নামবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। রাহীর অভিষেক হতে পারে বলেই জানা গেছে।
ব্যাটিংয়ে তামিম, সাকিব ছাড়াও মুশফিকুর রহীম, মমিনুল হক সৌরভ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই দলের অন্যতম ভরসা। এ পাঁচজনকে দলের ব্যাটিংয়ের হাল ধরতে হবে। মুশফিকরা টেস্ট খেলার মধ্যে থাকলেও অধিনায়কের লম্বা বিরতি থেকে ফেরা কিছুটা হলেও প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও সাকিবের যোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। |
551e32a8-d7be-4c38-8ee4-7464f2e6da84 | দিনে টানা ১৪ ঘণ্টা কাজ। কখনো এর চেয়েও বেশি। অফিসে পদস্থ কর্মকর্তাকে খুশি করা চাই। বাড়ির কাজ সুনিপুণ হতে ‘শত হাতে’ কাজ করা চাই। পরীক্ষায় ভালো করতে বেশি বেশি পড়া চাই। এমন মাত্রাতিরিক্ত কাজ করতে করতে কেউ হাঁপিয়ে ওঠেন। কেউ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কেউ উপায় খোঁজেন একটু দম ফেলার।
সেই উপায় খুঁজতে গিয়ে এমন কাজে ডুবে থাকা বা থাকতে বাধ্য হওয়া মানুষেরা অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে ‘জেলে’ ঢুকছেন। কথাটা শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এমন ঘটনাই ঘটছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে কয়েদিদের মতো থাকার জন্য আলাদা কক্ষ আছে। সেই কক্ষ থাকে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। আলাদা ইউনিফর্ম আছে। ফোনও নেওয়া যায় না। জেনে শুনে এমন যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে সেই ‘কারাগারে’ ঢুকছেন অনেকে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্ম আসক্ত মানুষদের জন্য দেশটির রাজধানী সিউল থেকে দুই ঘণ্টা দূরত্বে পাহাড়ি এলাকা হোংচিউনে কারাগারের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে অবসাদ ও দুশ্চিন্তা মুক্তি কেন্দ্র ‘প্রিজন ইনসাইড মি’। ২০০৮ সালে এটা চালু হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত মানুষ সেখানে থেকেছেন। এর মধ্যে অফিস কর্মী, গৃহবধূ, কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন। ১৩ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রও সেখানে থেকেছিল।
সেখানে প্রতিটি কক্ষে একটি করে জানালা আছে। কক্ষের মেঝে কাঠের। একটি ছোট টেবিল আছে। তাতে একটি ডায়েরি, চা খাওয়ার সরঞ্জাম, যোগ ব্যায়ামের ম্যাট রয়েছে। কেউ আতঙ্ক বোধ করলে বা কোনো প্রয়োজনে সাহায্যের দরকার হলে বেল দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। দরজা বাইরে থেকে সব সময় বন্ধ থাকলেও ভেতর থেকে কীভাবে খোলা যায় তা শিখিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এমন এক ‘জেলখানা’ খোলার কারণ কী? জানা যাক সেই তথ্য।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় কেওয়ান ইয়ং-সুক নামে এক আইনজীবী প্রচণ্ড কাজের চাপে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। ছয় মাস তিনি প্রতি সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে যান। তাঁর অবস্থা এমন হয়েছিল প্রায় প্রতিদিন তাঁর মনে হতো তিনি আসলে মুক্ত জীবনে নেই। তিনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় আছেন। হয়তো কারাগারের জীবনও তাঁর এ অবস্থা থেকে ভালো।
তাঁর এক বন্ধু ছিলেন কারারক্ষী। সেই বন্ধুকে এ কথা জানাতেই তিনি জানান, সত্যিকারের জেলে এসে কিছুদিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে থাকার জন্য অনুমতি নিতে নানা হ্যাপা সামলাতে হবে। সেখান থেকেই কেওয়ানের ভাবনা আসে জেলের মতো একটা কিছু তৈরি করা যেখানে কাজের চাপে অতিষ্ঠ লোকজন শান্তি খুঁজে পাবেন, অবসাদ থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
২০০৮ সালে এই ‘জেলখানা’ খোলার পর সেখানে দুদণ্ড শান্তি খুঁজতে এসেছেন অনেকে। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের ২০ ঘণ্টা একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। কেউ ফোনও ব্যবহার করতে পারেন না।
কানাডার সিবিসি নিউজে বলা হয়েছে, অটোপার্টস প্রকৌশলী সুক-ওয়ান ক্যাং (৫৭) অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে এই ‘কারাগারে’ ছিলেন। সেখানে ২৮টি কক্ষ রয়েছে। একেটি রুমের আয়তন পাঁচ মিটার বা প্রায় ৫৪ বর্গফুট। সুক-ওয়ান যে কক্ষে থাকতেন তার নম্বর ছিল ২০৭। কক্ষে প্রবেশের আগে তিনি ফোন জমা দিয়ে দেন। নির্দিষ্ট পোশাক গাঢ় নীল শার্ট ও ঢিলা পায়জামা গায়ে থাকতেন। কক্ষের মেঝেতেই ঘুমিয়েছেন। কক্ষের দরজার নিচ দিয়ে তাঁকে খাবার দেওয়া হতো। কক্ষের ভেতরে একটি কর্নারে ছিল টয়লেট।
৩৫টি দেশের অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন সংগঠনের (ওইসিডি) তথ্য অনুসারে, এশিয়ার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার লোকজন সবচেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। মেক্সিকোর পরই দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান। দেশটির লোকজন বছরে ২ হাজার ৬৯ কর্মঘণ্টা কাজ করেন। যেখানে ওইসিডিভুক্ত অন্য দেশগুলোতে বছরে গড়ে ১ হাজার ৭৬৪ কর্মঘণ্টা কাজ করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করা এবং দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অবসাদমুক্তি কেন্দ্রে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রকৌশলী ক্যাং জানান, তিনি সিউলে কিয়া ও হুন্দাই গাড়ি তৈরির কারখানায় সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করেছেন। অতিরিক্ত কাজের চাপের ক্লান্তি থেকে মুক্ত হতে ‘প্রিজন ইনসাইড মি’তে ছিলেন। তিনি যখন সেখানে ছিলেন, তখন সেখানে তাঁর মতো আরও ১৪ জন ছিলেন। তিনি সাত দিন ছিলেন। এর জন্য তাঁকে ব্যয় করতে হয়েছে কোরীয় মুদ্রায় ৫০ লাখ ওয়ান (প্রায় ৩৭ হাজার টাকা)। সাত দিন পর তিনি খুব ফুরফুরে লাগছিল তাঁর। বললেন, ‘আমি খুব তরতাজা বোধ করছিলাম। মনটা হালকা লাগছিল।’ এ নিয়ে তিনি তিনবার সেখানে থেকেছেন বলে জানান।
বাইরের দুনিয়া থেকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকে সেখানে ক্যাংয়ের মতো নিজেকে উপলব্ধি করতে পারেন। অনেকে কক্ষে একাকী হওয়ার পর আবেগে কান্নাকাটি করেন। তাঁরা একধরনের স্বাধীনতা বোধ করেন।
‘প্রিজন ইনসাইড মি’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জি-হিয়াং নোহ (প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী কেওয়ান ইয়ং-সুকের স্ত্রী) বলেন, ‘এখানে একাকী বন্দী রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এটা কারাগার নয়। আসল কারাগার হচ্ছে এর বাইরের দুনিয়া।’
দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্রাতিরিক্ত কাজ এখন একটি উদ্বেগের বিষয়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিউলের খ্যাতনামা শ্রম আইনজীবী বংসু জাংয়ের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বয়স ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব অতিরিক্ত কাজ করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, ‘এখানে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ও পদস্থ কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা করার সংস্কৃতি রয়েছে। কর্মীরা তাঁর বসের কাছে বিশ্বস্ত থাকতে চান। তাই তাঁরা বস যা বলেন তা অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করেন।’
কয়েক দশক আগেও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কঠোর পরিশ্রম করাকে জরুরি বলে ধরা হতো দেশটিতে। সেটাই এখন রীতিমতো উৎপাতে পরিণত হয়েছে। সন্তান জন্ম দেওয়ার হার কমে যাওয়া এবং উদ্বেগজনকভাবে আত্মহত্যার হার বাড়ার মতো সামাজিক ব্যাধির জন্য এই অতিরিক্ত কাজ করার প্রবণতাকে দায়ী করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের বিষয়টি এতটাই উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন ‘বিশ্রাম নেওয়া অধিকার’ শীর্ষক প্রচারাভিযান শুরু করেছেন গত বছর থেকে। এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে, সপ্তাহে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৬৮ ঘণ্টা থেকে ৫২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা। চূড়ান্ত আইনে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি এবং ওভারটাইমের ব্যাপারটি কীভাবে থাকবে, তা নিয়ে রাজনীতিকদের মধ্যে দর-কষাকষি ও বিতর্ক চলছে।
‘প্রিজন ইনসাইড মি’-এর প্রতিষ্ঠাতা কেওয়ান ইয়ং-সুক বলেন, ‘আমি ভাবতাম, আমি যদি সঙ্গী ছাড়া একা বন্দী থাকতে পারতাম, তাহলে ভালো থাকতাম। অন্তত সেখানে কোনো মানুষ থাকত না, আমার খোঁজের জন্য ফোনগুলো বেজে চলত না, ধূমপান বা মদ্যপান থাকত না। এমন এক কারাগারেই হয়তো শান্তি খুঁজে পেতাম।’
এমন এক কারাগারে যেতে না পারায় নিজের ভাবনা থেকেই কারাগারের আদলে তৈরি করেছেন ‘প্রিজন ইনসাইড মি’। হ্যাপিনেস ফ্যাক্টরি নামে একটি অলাভজনক সংস্থা এটি পরিচালনা করছে। এটা তৈরিতে ব্যয় হয়েছে তিন বিলিয়ন ওয়ান (প্রায় ২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা)। ব্যয়ের বেশির ভাগই নিজস্ব অর্থায়ন। বাকিটা এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থসহায়তা থেকে। |
e1b13fe8-34a8-4580-b33e-68aaa5f1c39e | যত রোমাঞ্চ, নাটকীয়তার কেন্দ্র এখন বিশ্বকাপ ফুটবল। এ নিয়েই সব উন্মাদনা, পাড়ায়-মহল্লায় আড্ডা, তর্কের ধুম। কে কাকে হারালে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে, কে টিকে থাকবে আর কে নেবে বিদায়—সবাই যখন এই সমীকরণে ব্যস্ত, তাহনিক নূররা তখন অন্য সমীকরণ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে বুঁদ হয়ে আছে একদল কিশোর। ঢাকার লালমাটিয়াতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সবকিছু ঠিক থাকলে ৫ জুলাই ছয় কিশোর চড়বে রোমানিয়াগামী বিমানে। একদিকে যখন চলছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবল, অন্যদিকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। এ যেন গণিতেরই বিশ্বকাপ! ১১৬টি দেশের ৬১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে এই লড়াইয়ে।
তাহনিকের মতো ছয় শিক্ষার্থীর দেখা মিলল বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজিত আইএমও ক্যাম্পে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ৫৯তম আসর বসছে রোমানিয়ার ক্লজ-নেপোকা শহরে। সেই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে দলের ছয় সদস্যের নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। অলিম্পিয়াড কমিটি ও দলের কোচের অনুমতি নিয়ে আমরা ঘুরে আসি আইএমও ক্যাম্প থেকে।
ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশাল সাদা বোর্ড, যেখানে দেখা যায় নানা আকারের বৃত্ত আর রম্বসের কাটাকুটি। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী জয়দীপ সাহাকে দেখা গেল মনোযোগসহকারে বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। কী করছ? জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘দুপুর থেকে চেষ্টা করছি বৃত্ত আর রম্বসকে এক লাইনে আনতে। কয়েকবার পেরেছি, আর কত উপায়ে অঙ্কের সমাধান করা যায়, ভাবছি।’ সমাধানের পরও সমাধান খুঁজতে হয়, এভাবেই কাটছে বাংলাদেশ গণিত দলের সময়।
বাংলাদেশ দলের সদস্যরা হলো আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী (ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম), রাহুল সাহা (ঢাকা কলেজ, ঢাকা), জয়দীপ সাহা (নটর ডেম কলেজ, ঢাকা), তামজিদ মোর্শেদ (নটর ডেম কলেজ, ঢাকা), তাহনিক নূর (নটর ডেম কলেজ, ঢাকা) ও সৌমিত্র দাস (পুলিশ লাইনস হাইস্কুল, ফরিদপুর)। এই ছয় প্রতিযোগীর দলনেতা হিসেবে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার এবং উপদলনেতা বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান যাবেন রোমানিয়ায়।
চলতি বছরের আইএমওর জন্য বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যদের নির্বাচনের লক্ষ্যে ৩৫টি শহরে আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। আঞ্চলিক গণিত উৎসবের বিজয়ী ১ হাজার ৩০০ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় গণিত উৎসব। সেই জাতীয় উৎসবের সেরা ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্দশ বাংলাদেশ জাতীয় গণিত ক্যাম্প। জাতীয় গণিত ক্যাম্প, এশিয়া প্যাসিফিক গণিত অলিম্পিয়াড (এপিএমও) ও আইএমও নির্বাচনী ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ দল। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় ৫৯তম আইএমওর জন্য ছয়জনের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
ক্যাম্পের আরেক রুমে দেখা যায় দলের তিন অভিজ্ঞ সদস্যকে, যারা আগেও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল। আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী, রাহুল সাহা ও তামজিদ মোর্শেদ দলের পুরোনো সদস্য। জাওয়াদ বলে, ‘আগেরবারের চেয়ে এবারের প্রস্তুতি বেশ ভালো। আমি গতবার তিনটি প্রশ্নে সাতে সাত পেয়েছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বাকি তিনটি প্রশ্নে যেন আরও ভালো করি, সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’
ক্যাম্পে দেখা মিলল আগে গণিত অলিম্পিয়াডে পদকজয়ী দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে—আসিফ–ই–ইলাহী ও সাজিদ আখতার । দুজন এখন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছুটিতে দেশে এসেই চলে এসেছেন গণিতের ক্যাম্পে। এবারের প্রতিযোগীদের প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করছেন তারা। আসিফ বলেন, ‘আমরা কীভাবে আইএমওর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তা নতুনদের জানাতে ক্যাম্পে এসেছি। গণিত অলিম্পিয়াডে সমাধান আর উত্তর খোঁজার চেয়ে সমাধান করার প্রক্রিয়ায় কীভাবে সৃজনশীলতা আনা যায়, এ ব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।’
জয়দীপ সাহা, তাহনিক নূর ও সৌমিত্র দাস দলে এবারই প্রথম। সৌমিত্র বলে, ‘প্রথমবার দেশের বাইরে যাচ্ছি বলে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করছি। নিশ্চয়ই অনেক দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় হবে।’ রাহুল সাহা ও তামজিদ মোর্শেদকে দেখা গেল কল্পনায় ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচে কে জিতবে, এই নিয়ে অঙ্ক কষতে। রীতিমতো ছক কেটে, ভেনচিত্র দিয়ে দুজনে নিজ নিজ যুক্তিকে শাণ দিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি। কত নতুনত্বে বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান করা যায়, তা নিয়ে মধ্যরাত অবধি চলে প্রস্তুতি। মধ্যরাতেও দেখা যায় টিমটিমে আলোতে কেউ খাতায় কাটাকুটি করছে আর একটু দূরে টেলিভিশনে নির্বাকভাবে চলছে ইংল্যান্ড বনাম বেলজিয়ামের খেলা। গণিতপ্রিয় এই ছেলেগুলোর কাছে গণিতের খেলাই তো ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’! |
b6bef8f5-3bd0-4043-a5b7-a31821f3fe50 | - পণ্য রপ্তানি
- লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮১।
- রপ্তানি আয় ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলার।
সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছর পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের। সেবার প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ২২ শতাংশ বা ৮৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার কম হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, বরাবরের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানির কারণেই সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা বজায় আছে। বিদায়ী অর্থবছরের মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। কয়েক মাস আগেও মোট পণ্য রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৮১ বা ৮২ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
সব মিলিয়ে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার আয় হয়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার মানে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর তার আগের বারের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ২৪৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছর পোশাক রপ্তানিতে ভয়াবহ ধস নামে। সেবার পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। সেই হিসাবে পোশাক রপ্তানি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ আছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের বেশ কয়েকজন শিল্পমালিক।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বিভিন্ন সময় বলেছে, আমাদের কারখানাগুলো নিরাপদ ও কমপ্লায়েন্ট। ফলে আমাদের ভাবমূর্তি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, সেটি দূর হয়েছে। ক্রেতাদেরও আস্থা ফিরেছে। তা ছাড়া সারা বিশ্বের মধ্যে আমরা মান ও সময়মতো পণ্য সরবরাহে বর্তমানে অদ্বিতীয়। সে জন্য পোশাক রপ্তানি ভালো অবস্থায় রয়েছে।’
ইপিবির হিসাবে, বিদায়ী অর্থবছরে ১০৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রপ্তানি হওয়া ১২৩ কোটি ডলারের চেয়ে ১২ শতাংশ কম। বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৩৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ শতাংশ কম রপ্তানি আয় হয়েছে। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্পকারখানা সরিয়ে নেওয়ার কারণে রপ্তানিতে তার কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের শিল্পমালিকেরা।
এদিকে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি থেকে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ১৫ কোটি ডলারের কাঁচা পাট, ৬৪ কোটি ডলারের পাটের সুতা, ১২ কোটি ডলারের পাটের বস্তা ও ৬ কোটি ডলারের অন্যান্য পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৬৭ কোটি ডলার কৃষিজাত পণ্য, ৫০ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য ও ৩৫ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। |
24032f4e-a94c-455c-9b94-b4535773fb48 | চীনের বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি কিনে নিয়েছে।
বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশের সুপরিচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ এর একশো ভাগ শেয়ারই কিনেছে আলিবাবা।
দারাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে পাকিস্তানে। এটি মূলত অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করে, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে পারে। দারাজ পরে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলংকা এবং নেপালেও তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।
এটির পেরেন্ট কোম্পানি ছিল রকেট ইন্টারনেট। জার্মান এই কোম্পানিটি মঙ্গলবার জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের পুরো ব্যবসাই তারা আলিবাবা’র কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে আলিবাবা’র মতো ইন্টারনেট জায়েন্টের প্রবেশ নিয়ে অবশ্য স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ইক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলছেন, বাংলাদেশে যখন ইন্টারনেট স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো মাত্র বেড়ে উঠতে শুরু করেছে, তখন এরকম বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাতে পারছেন না। কারণ এতে করে স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর বিকাশ ব্যাহত হবে।
উল্লেখ্য দারাজ ছাড়া বাংলাদেশে অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ইন্টারনেট কোম্পানির মধ্যে আছে বিক্রয় ডট কম, আজকের ডিল এবং ফুড পান্ডা। বাংলাদেশ ই-কমার্স এসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ৭৩০।
শমী কায়সার বলেন, ইক্যাবের তরফ থেকে তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন যেন কোন বাইরের কোম্পানি বাংলাদেশের কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে না পারে।
৫১ শতাংশ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার যেন দেশীয় মালিকানায় থাকে।
ইক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ অবশ্য এটিকে অতটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ায় ই-কমার্সের বিকাশ ঘটছে বেশ দ্রুত গতিতে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে ঢুকতে আগ্রহী হবে আলিবাবা বা আমাজনের মত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলি।
রাজীব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স যেভাবে বাড়ছে ২০২০ সাল নাগাদ এটি আট হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হবে।তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে লেনদেন হয়েছে ৭০০ কোটি টাকার। ২০১৬ সালে এটি ছিল এক হাজার কোটি টাকা। গত বছর ব্যবসা হয়েছে ১৭০০ কোটি টাকার।
রাজীব আহমেদ বলছেন, দারাজ কিনে নেয়ার মাধ্যমে আলিবাবা এখন রাতারাতি দক্ষিণ এশিয়ায় ই-কমার্সে এক নম্বর স্থানে পৌঁছে গেল।
তিনি বলেন, ভারতে আমাজন আগে থেকেই শক্ত অবস্থানে আছে। কিন্তু ভারত-চীন বৈরি সম্পর্কের কারণেই হয়তো আলিবাবা সেখানে ঢুকতে পারছিল না।
দক্ষিণ এশিয়ার বাজার দখলের জন্য আলিবাবা এবং আমাজনের মধ্যে বড় লড়াইয়ের শুরু হিসেবে দেখছেন তিনি এই ঘটনাকে।
তার মতে, আলিবাবা’র মতো প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশে ঢোকে, সেটি ই-কমার্সের ব্যাপারে ভোক্তাদের মধ্য আস্থা তৈরি করতে পারবে।
“আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে মানুষের সেরকম বিশ্বাস বা আস্থা তৈরি হয়নি। শতকরা আশিভাগ ক্ষেত্রেই পেমেন্ট হয় ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতিতে। বাইরের বড় কোম্পানিগুলো তাদের প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে এখানে ই-কমার্সের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। এবং এ ব্যাপারে ভোক্তাদের আস্থাও বাড়িয়ে দিতে পারে।”
সূত্রঃ বিবিসি |
0f394c12-fcc2-4833-9f27-b110715880de | বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই, আর কোনো দিন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবেও না।’
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কোনো দলকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ করছে না। তাই অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি না করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট নেই। তাই অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন না। উত্তেজনা সৃষ্টি না করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আইনের শাসনের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়ার এই মামলা চলেছে। ২০০৮ সালের জুলাই থেকে মামলা রুজু করার পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা চলেছে। খালেদা জিয়া বা বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কথা যারা বলে তারা আইনের শাসনে বিশ্বাসী না, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারাহ বেগম কবরীর সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়, হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি মোবারক আলী শিকদার, সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। |
9f2c7595-2307-4205-a304-04985dea08de | ৪.০৮। আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। প্রকৌশলে পড়ার খুব ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু স্বপ্নের বুয়েটে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পেলাম না। কীভাবে, কেন, জানি না; সায়েন্সে পড়ার ইচ্ছাটাই চলে গেল। বিষয় পরিবর্তন করতে চাইলাম। আমার মতো মফস্বল এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের পর ঢাকায় পড়তে যাওয়ার একটা হিড়িক পড়ে যায়। মনে হয় যেন ঢাকা শহরে না পড়লে এলাকায় আর মুখ দেখানো যাবে না! আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। আমি রাজশাহী যেতে চাইনি। যা-ই হোক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বি ইউনিট, অর্থাৎ আইন অনুষদের ফরম তোলা হয়েছিল। পরীক্ষা দিলাম। খুব যে আগ্রহ ছিল তা না।
কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর সবার মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রশংসা শুনে শুনে নিজের মনের মধ্যেও সেখানে পড়ার একটা ইচ্ছা তৈরি হলো। ভাইভার ফল প্রকাশের পর দেখলাম, আমি সুযোগ পেয়েছি একটা নতুন বিভাগে—আইন ও ভূমি প্রশাসন। শুরুতে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম এখানে তো নিশ্চয়ই শুধু ভূমি নিয়ে পড়ানো হবে। আমার বোধ হয় আর বিচারক হওয়া হবে না।
ভুল ভাঙল প্রথম ক্লাসের পরই।
আইন অনুষদে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন এই বিভাগ খোলা হয়েছে, যার নাম ‘আইন ও ভূমি প্রশাসন’। যত দূর জানি, আমাদের দেশে জুডিশিয়াল সেকশনে যেসব মামলা হয়ে থাকে তার মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগই হয় জমিজমা-সংক্রান্ত। এটি মাথায় রেখেই ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগটি খোলা হয়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনাই নয়, বিভিন্ন আইনের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা কমিউনিটি রিসার্চও করে থাকি। এটি আমাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, উপভোগ্যও বটে। এর ফলে আমরা বিভিন্ন আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে পারছি, পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতাও বাড়ছে। আমরা তাঁদের আইন সম্পর্কে সচেতন করতে পারছি।
একটা নতুন বিভাগের পথচলা শুরুর দিকে মসৃণ হয় না। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান যে ভীষণ আন্তরিক শিক্ষক পেয়েছি। শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে তাঁরা যেভাবে আমাদের উৎসাহিত করেন, সেটা অনেক বড় পাওয়া। আমাদের যেভাবে পড়ানো হয়েছে, আমার বিশ্বাস, আমাদের ব্যাচের ছেলেমেয়েরা পাস করে বের হয়ে দেশের আইন সমাজে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
আমরা ছিলাম আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচ। এবার চতুর্থ ব্যাচে ভর্তি হবে আরও কিছু নতুন মুখ (আসনসংখ্যা মাত্র ৫০)। নতুনদের জন্য শুভকামনা রইল।
রিদওয়ান অনিন্দ্য
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় |
ad294d18-9fa6-4fa2-bf36-de5f030b4533 | যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো নিয়ে জোট গঠনের জোর তৎপরতা চালাচ্ছে চীন। এর অংশ হিসেবে চলতি মাসে আরও পরের দিকে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় এক সম্মেলনে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি প্রদানে ইইউকে চাপও দেওয়া হচ্ছে। তবে চীনের এ পদক্ষেপ বাধার মুখে পড়ছে। ইউরোপের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইইউ, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে ইস্পাত আমদানিতে ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। ইউরোপ থেকে গাড়ি আমদানির ওপরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি চীনা পণ্যের ওপরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন। এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয় ইইউ ও চীন।
চীনের বেইজিংয়ে ১৬-১৭ জুলাই সিনো-ইউরোপীয় সম্মেলন সামনে রেখে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসসহ বিভিন্ন স্থানে ইইউর নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকে দুই অর্থনৈতিক শক্তিধরের মধ্যে একটি জোট গঠন এবং ব্যবসায়িক সুযোগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে বেশি করে চীনা বাজার গড়ার প্রস্তাব দেন তাঁরা। বৈঠকে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হি ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ইও ছিলেন।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীন ও ইইউর যৌথ পদক্ষেপ শুরু করার একটি প্রস্তাবও রয়েছে। তবে ইইউর পাঁচ কর্মকর্তা ও কূটনীতিক বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য গোষ্ঠী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে গিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে জোট বাঁধার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এরপরও সিনো-ইউরোপীয় সম্মেলন থেকে একটি ন্যায়সংগত ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হতে পারে। ঘোষণাপত্রে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থায় উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা এবং ডব্লিউটিওর আধুনিকীকরণ একটি কর্ম কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হি বলেন, আসন্ন সম্মেলনে প্রথমবারের মতো কিছু পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন, যেটি ইউরোপীয় বিনিয়োগ মুক্ত করতে পারে। ওই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং ও ইইউর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ইইউকে কাছে টানার অংশ হিসেবে চীনের গণমাধ্যমগুলোয় প্রচার হচ্ছে, ইইউ চীনের পাশে রয়েছে। যদিও দক্ষিণ চীন সাগর ও বাণিজ্য বিতর্কে মতভেদের কারণে ২০১৬ ও ১৭ সালে আগের দুই সম্মেলন শেষ হয় বিবৃতি ছাড়াই।
একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ইইউকে পাশে চায় চীন। আমরা এটা করতে চাই না এবং আমরা তাদের সেটা জানিয়েছি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেইজিং সম্মেলনের এই রকম উদ্দেশ্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে বুধবার চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ায় এক মতামতে বলা হয়েছে, ‘চীন ও ইইউকে হাতে হাত রেখে বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ রোখা উচিত। চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলো প্রকৃত অংশীদার। তারা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মুক্তবাণিজ্য একটি শক্তিশালী পন্থা। |
c06db1c9-fc01-4b92-894e-afe322ef4b56 | জার্মানি, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল ও স্পেনের বিদায়ে অনেকটাই বিবর্ণ রাশিয়া বিশ্বকাপ। ধীরে ধীরে ফুটবল ভক্তদের উন্মাদনাও অনেকটা ঝিমিয়ে এসেছে। তবে ব্রাজিল এখনো এ বিশ্বকাপের প্রাণ হয়ে রয়েছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে শেষ ষোলতে ২-০ গোলে জয় নিয়ে শিরোপার পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল ব্রাজিল। বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের ফুটবল উচ্ছ্বাসও বেঁচে রয়েছে ব্রাজিলকে ঘিরেই। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মনে করেন সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা ব্রাজিল খেলতে পারে ফাইনাল।
তিনি বলেন, দেখেন প্রায় সব বড় দলই বিদায় নিয়েছে। তবে এখনো ব্রাজিল টিকে রয়েছে। তারা সব দিক থেকে দারুণ ফুটবল খেলছে। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের চারটি ম্যাচ দেখেন ব্রাজিল কিন্তু গোল খেয়েছে মাত্র একটা। তার মানে ওদের ডিফেন্স অসাধারণ। বেলজিয়াম যে খুব সহজ প্রতিপক্ষ হবে তা নয়। ওরাও দারুণ খেলছে। তবে এখন ব্রাজিলের এই ডিফেন্স ভেঙে কতোটা সফল হবে- সেটি দেখার বিষয়। আমি মনে করি এ আসরে ব্রাজিলের সম্ভাবনা অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যে কোনো দলের জন্য ব্রাজিল কঠিন প্রতিপক্ষ।
ক্লাব ফুটবলের বড় প্রভাব
রাশিয়া বিশ্বকাপকে জামাল ভূঁইয়া দেখছেন অঘটনের আসর হিসেবে। কারণ বড় দলগুলোর বিদায় ছিল করুণ। এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, বিশ্বের যতগুলো বড় দল রয়েছে তাদের তারকা ফুটবলারা পৃথিবীর বিভিন্ন ক্লাবে খেলে। এটাতে কি হয়েছে ওদের শক্তি সামর্থ্যগুলো এখন সবার জানা। বিশেষ করে এবার ছোট দলগুলো কিন্তু সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করে এসেছে। যে কারণে দেখেন ওরা রক্ষণ ভাগ শক্তিশালী রেখেছে। আর বড় দলের তারকাদের মার্ক করে রেখেছে যেন সুযোগ বেশি না পায়। আবার দেখেন আর্জেন্টিনা মেসি, মাসচেরানো, ডি. মারিয়া ও আর কয়েক জন ছাড়া বেশির ভাগই খেলোয়াড়ই বিশ্বের কোন ক্লাবে খেলে না। পর্তুগালেরও একই অবস্থা।
জার্মানি-স্পেনের করুণ বিদায়
এ বিশ্বকাপে জার্মান ও স্পেনের বিদায় ছিল সবচেয়ে করুণ। তাদের এমন ধসের কারণ হিসেবে জামাল ভূঁইয়া বলেন, জার্মানির ফর্ম এবার তেমন ভালো ছিলো না। তারা যে দল হিসেবে খেলে সেটিই এবার ছিল অদৃশ্য। বড় বড় তারকাদের মধ্যে সমন্বয়টা ছিল একেবারেই কম। যে কারেণ প্রথম রাউন্ডেই তাদের ফিরতে হয়েছে বাজে ভাবে। এছাড়া স্পেনের কথা বলেন! লাতিন ফুটবলের সৌন্দর্যই ওরা। ওদের ফুটবল খেলা দেখে মানুষ মুগ্ধ। কিন্তু ধিরে ধিরে ওদের কৌশলগুলো সবাই বুঝতে পেরেছে। স্পেন কিন্তু বেশি গোল করে খেলে না। ওদের এ কৌশলগুলো এতোটাই ওপেন সিক্রেট যে, সব দলই তাদের আটকানোর কৌশল বের করে নিয়েছে।
দলের কারণেই মেসি-রোনালদোর হতাশা
রাশিয়া বিশ্বকাপে একই রাতে বিদায় নিয়েছেন ফুটবল বিশ্বের দুই মহাতারকা। তাদের এ করুণ বিদায়ের জন্য বাংলাদেশের অধিনায়ক দায়ি করছেন দলকে। তিনি বলেন, সেমি ও রোনালদোর বিদায়ের একটাই কারণ তাদের ‘দল’। আর্জেন্টিনাতো মেসির সঙ্গে তাও ডি মারিয়া, আগুয়েরা, হিগুয়েনরা ছিল। কিন্তু রোনালদোকে কে সাপোর্ট করেছে বলেন? তবে রোনালদো বিশ্বকাপে মেসির চেয়ে এগিয়ে ছিল। ৪ গোল করেছে। একাই দলকে জিতিয়েছে।
নতুন কোনো দলের বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ
এবার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হবে কোন দল! অনেকের ধারণা নতুন কোন দলের হাতেই উঠবে শিরোপা। কিন্তু জামাল ভূঁইয়া মনে করেন নতুন কোনো দল নয় বিশ্বকাপের ট্রফি উঠতে পারে পুরনোদের হাতেই। তিনি বলেন, আমার মনে হয়না নতুন কোন দল শিরোপা নিবে। আমি মনে করি ব্রাজিল, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের দারুণ সম্ভাবনা আছে।
কুটিনহো-এমবাপ্পেতে মুগ্ধতা
মেসি, রোনালদো বিদায় নিয়েছেন। নেইমার এখনো নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। যদিও তার দল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছে। তবে তাদেরকে ছাড়াও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ব্রাজিলের কুটিনহোর উপরও এবারের স্পট লাইট রয়েছে বলেই জানালেন জামাল। তিনি বলেন, মেসি-রোনালদোর কথা বলে আর লাভ নেই। নেইমার যতোটা ভালো করার কথা ছিল এখনো ততোটা পারেননি। তবে এবারের স্পট লাইট যদি বলেন তাহলে আমি বলবো ব্রাজিলের কুটিনহো ও ফ্রান্সের এমবাপ্পের উপরই রয়েছে। সামনে আরো ম্যাচ আছে আশা করি দারুণ কিছুই উপহার দিবে তারা।
অনুলিখন: ইশতিয়াক পারভেজ |
65b07a45-4558-483a-befe-ae48fbae2a3c | হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় কেটে রাখা টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। এ ঘটনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে অন্য ব্যাংকের পাওনা হিসাবে ৮৯২ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই টাকার একটি অংশ ফেরত পেতেই সোনালী ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটি করেছে।
হল-মার্কের বড় এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাটি সোনালী ব্যাংকের রাজধানীর রূপসী বাংলা শাখায় সংঘটিত হয়েছিল। মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের কর্ণধার, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অন্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আল-আরাফাহ্, এবি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের আসামি করা হয়। মামলায় ৪১-৪৩ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বৈদেশিক মুদ্রানীতি এবং ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে।
গতকাল ঢাকার যুগ্ম জজ প্রথম আদালতে মামলাটি করে সোনালী ব্যাংক। মামলার নম্বর ২০। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী হোসনে আরা বেগম এ মামলা করেন। আর মামলাটি তদারকির দায়িত্বে আছেন রূপসী বাংলা শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবদুছ ছালাম।
মামলার পর সোনালী ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া ঋণপত্রের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। সোনালী ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা কেটে অন্য ব্যাংকগুলোকে দিয়েছে। তবে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, জালিয়াতি প্রমাণ হলে টাকা ফেরত দেবে অন্য ব্যাংকগুলো। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এমন আরও মামলা হবে। রায় পক্ষে এলে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ফেরত পাবে সোনালী ব্যাংক।
ব্যাংক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও তাদের হিসাব থেকে বিভিন্ন ব্যাংককে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার (৮৯২ কোটি টাকা) দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে নন-ফান্ডেড দায় তৈরি হওয়ায় অন্য ব্যাংকগুলোকে এসব অর্থ পরিশোধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকেই এ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সোনালী ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেই এসেছে এটা জালিয়াতি, তাই হিসাব থেকে টাকা কাটার সিদ্ধান্ত বেআইনি।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ৪১-৪৩ নম্বর বিবাদীরা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) জাল-জালিয়াতিপূর্ণ ঋণপত্র ও কথিত স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা অভিযোগ তদন্তাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ব্যাংকগুলোকে টাকা পরিশোধ করেছেন। গতকালের মামলায় আল-আরাফাহ্, এবি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাটি তদারকি করত, তাহলে এ দেশের সর্ববৃহৎ ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটত না। এরপরও তারা হিসাব থেকে টাকা কেটে অন্য ব্যাংককে পরিশোধ করেছে। এ জন্য তারা কেটে রাখা টাকা সুদসহ ফেরত দিতে বাধ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জালিয়াতির বিলের টাকা কেটে পরিশোধ না করার জন্য সোনালী ব্যাংক দফায় দফায় অনুরোধ করলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। সোনালী ব্যাংক এসব টাকা আদায়ে বিবাদীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামের মাধ্যমে টাকা আদায়ের অধিকার সংরক্ষণ করে।
মামলায় বলা হয়, একটি ট্রাকে করে চালানের মাধ্যমে ৩০ মেট্রিক টন সুতা পরিবহনের হিসাব দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। এতেই প্রমাণিত হয় পুরো প্রক্রিয়াটি জাল-জালিয়াতিপূর্ণ।
এতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৫ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাটি পরিদর্শন করে। এরপর তাদের বিশেষ পরিদর্শনে হল-মার্ক গ্রুপের ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। |
af51a123-2520-4eb7-b61e-d41d4713f401 | রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগেই ছড়াচ্ছে উত্তাপ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে। চলছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার তীব্র সমালোচনাও।
এদিকে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে গতকাল সোমবার তিন সিটিতে ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আজ মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ হবে। এরপর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। তবে প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় এই তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ভোটারদের মধ্যেও বিরাজ করছে ভিন্ন আমেজ। তবে সিলেটে জোটসঙ্গী জামায়াত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে বাগে আনতে পারেনি বিএনপি। ফলে সেখানে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের পাশাপাশি এই নির্বাচনে দৃষ্টি থাকবে বিএনপি আর জামায়াতের লড়াই নিয়ে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাসিক নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান দোলন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে আটজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনী মাঠে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২১৭ জন প্রার্থী লড়াই করবেন।
এদিকে, বিধি লঙ্ঘন করে প্রচার কার্যক্রমে একধাপ এগিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। বিধি লঙ্ঘন করে প্রথম দফায় প্রচারপত্র ছাপানোর কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এমনকি, বৃষ্টিতে ভিজে প্রচারপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা পোস্টার লেমিনেটিং করছেন।
দেখা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নওশের আলীর মালিকানাধীন নিউমার্কেট গৌরহাঙ্গা এলাকার বিকল্প অফসেট প্রেসে ছাপা হচ্ছে নৌকার পোস্টার ও হ্যান্ডবিল। সেখানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নৌকা প্রতীকের দেড় লাখ পোস্টার, এক লাখ লিফলেট এবং ১৫ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপার কাজ এখন প্রায় শেষপর্যায়ে। এ ছাড়া বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ৬০ হাজার পোস্টার, ১০ লাখ লিফলেট ও ৩ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপছে নগর ভবনসংলগ্ন গৌরহাঙ্গা গ্রেটাররোড এলাকার প্রভাত প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাকলিকেশন্সে।
নির্বাচনী বিধি মোতাবেক একজন মেয়র প্রার্থী সর্বসাকুল্যে ১৫ লাখ টাকা নির্বাচনী কাজে ব্যয় করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটানিঅং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। আর নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল নগরীর দুইজন প্রেস কর্মচারী ও একজন ডিজিটাল প্রেস মালিক জানান, এখন পর্যন্ত মেয়র পদের দুই প্রার্থীর যে অর্ডার আছে তাতে পোস্টার, হ্যান্ডবিল ছাপানো ও লেমেনেটিং এবং ডিজিটাল ব্যানার ও বাইন্ডিং কাজে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রতীক বরাদ্দের আগে মেয়র প্রার্থীদের প্রচারপত্রের পেছনেই এমন ব্যয় হওয়ায় বিধি মোতাবেক তারা কীভাবে নির্বাচন কাজ শেষ করবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী (কাঁঠাল) মো. হাবিবুর রহমান গতকাল জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের কাছে অনেকবার আচরণবিধি অমান্য করার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, নেবে বলেও মনে হয় না। কারণ নির্বাচন কমিশনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণেই বড় দুই দলের প্রার্থীরা একের পর এক বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। যে কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন হাবিবুর রহমান।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, প্রচারপত্র ছাপানো হলেও প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে না।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো কর্মকান্ড বিএনপি প্রার্থী বুলবুল করেননি। বিধি মেনেই প্রচারপত্র ছাপানো ও প্রচারকাজ পরিচালনা করা হবে। আমরা এগুলোর বিষয়ে নয়, চিন্তিত সরকারি দলের প্রার্থীর নিয়োগকৃত ক্যাডার ও প্রশাসনের হাত থেকে কীভাবে ভোট ডাকাতি ঠেকাব, তা নিয়ে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী আঞ্চলিক সমম্বয়কারী সুব্রত পাল বলেন, নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালিত হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলে কালোটাকার বিস্তার ঘটবে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। আচরণবিধি ভেঙে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে কমিশন।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমানের হাতে প্রত্যাহারের আবেদন তুলে দেন খেলাফত মজলিশের মেয়র প্রার্থী এ কে এম মাহবুব আলম। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে আটজন সরে দাঁড়িয়েছেন। বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান জানান, লিখিত আবেদনে ব্যক্তিগত কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করেছেন এ কে এম মাহবুব আলম। অন্যদিকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডের সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোননপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
এদিকে, খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের ঐক্য হলেও ভোটে জয় নিয়ে শঙ্কা আছে তার। তবে জনপ্রিয়তার ঝড় তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাদিক আবদুল্লাহ। জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের স্থানীয় নেতারা আলোচনায় বসে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্ধারিত দিনের আগেই বিষয়টি ফয়সালা করে ফেলেন। এরপরই খেলাফত মজলিসের মেয়র প্রার্থী এ কে এম মাহবুবুর রহমান তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, এটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সরোয়ার। যদিও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন, মাঝপথে সরে দাঁড়াবেন না। গতকাল বরিশাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সরোয়ার বলেন, ‘এখানে প্রধানমন্ত্রীর স্বজন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীর বাবা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী মর্যাদার ব্যক্তি। তাছাড়া খুলনা ও গাজীপুরে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে শঙ্কা থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কী করে, সেই বিষয়টি নিয়ে আমি শঙ্কিত।’
অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার কর্মদক্ষতা ও গুণে পুরো নগরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তি। তরুণ এই নেতার জনদরদী সব চিন্তা চেতনার প্রবর্তন ঘটেছে সম্প্রতি বরিশাল ইয়ূথ সোসাইটির নির্মিত ‘আমরাই গড়বো আগামীর বরিশাল’ শিরোনামে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ফ্যানপেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে। ওই ভিডিও ডকুমেন্টারির শুরুতেই বরিশালের প্রধান সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিত্রায়িত করা হয়। ভিডিও ডকুমেন্টারির শেষ দিকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আগামীর সমৃদ্ধ বরিশাল গড়ে তুলতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান করেছেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সর্বত্র ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সময়ের সঙ্গে ভিডিওটির ভিউয়ার্স ঝড়ের বেগে বেড়ে চলার পাশাপাশি অসংখ্য দর্শক সেটি উৎসাহের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিটি নির্বাচন উপলক্ষে দুই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনে নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন চারজন কাউন্সিলর প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগে গত রোববার আরো দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এরা হলেন ৮নং ওয়ার্ডের সিরাজ খান, ১৪নং ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম শামীম, ২০নং ওয়ার্ডের মিঠু তালুকদার, ২৫নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আফজাল উদ্দিন, ২১নং ওয়ার্ডের এনামুল হক ও ২৬নং ওয়ার্ডের খসরু আহমদ। মেয়র পদে রয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী, ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপির বিদ্রোহী বদরুজ্জামান সেলিম, সিপিবি-বাসদের আবু জাফর ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বতন্ত্র এহসানুল হক তাহের।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ করেছেন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল দুপুরে সিলেটে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামানের কাছে অভিযোগ করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।
আলিমুজ্জামান বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী মৌখিকভাবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১১৪০ ঘণ্টা, ১০ জুলাই, ২০১৮
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিএস |
9893bfa1-d739-4ac1-b9e7-f570b95edf69 | অনেক কারণেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সৌভাগ্যবান। কোনো বিতর্ক ছাড়াই সসম্মানে বঙ্গভবনে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছেন তিনি। শুধু তাই নয় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। তাঁর পূর্বসূরি আর কারো এই সৌভাগ্য হয়নি।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গত ২৭ বছরে যাঁরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাঁদেরকে নিয়ে এই লেখাটি। ১৯৭৫ সালের পর ১৫ বছর গণতন্ত্র না থাকায় সে সময় যাঁরা রাষ্ট্রপতি হয়েছে তাঁদেরকে আলোচনা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
আবদুল হামিদের পূর্বসূরিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। ২০০৬ সালের শেষে এসে বেশ কিছু বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে সংবিধানের তোয়াক্কা না করে তিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর কিছু একক ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত সংকটকে আরো গভীর করে। এর ফল হিসেবে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় যা প্রায় দুই বছর বলবৎ থাকে।
সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। কিন্তু, তিনি ১৯৯৬ সালে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৎকালীন সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে গভীর রাজনৈতিক সংকটের দিকে দেশকে ঠেলে দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের প্রজ্ঞায় সে যাত্রায় দেশ বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে রক্ষা পায়।
আব্দুর রহমান বিশ্বাসের উত্তরসূরি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তিনি এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যিনি সত্যকে সত্য বা মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। এরশাদের পতনের পর তিনি একবছর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর অধীনেই ১৯৯১ সালে দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা শুরু হয়। এরপর তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফিরে যান। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের শেষ দিকে এসে তাঁকেও রাজনৈতিক বিতর্কে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
গত ২৭ বছরের রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা ছিলেন একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি হওয়ার মাত্র সাত মাস পরই বঙ্গভবন ছাড়তে বাধ্য করা হয় শাহাবুদ্দিনের উত্তরসূরিকে। এর ফলেই পথ খুলে যায় ইয়াজউদ্দিন আহমেদের। জরুরি অবস্থায় নির্বাচন না হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার দুবছর পরও স্বপদে বহাল ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইয়াজউদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান। নির্বাচিত পঞ্চম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তাঁর মেয়াদের শেষ বছরে ২০১৩ সালের মার্চে মারা যান। এরপরই বঙ্গভবনের দরজা খুলে যায় সেসময়কার স্পিকার আবদুল হামিদের জন্য।
রাষ্ট্রপতির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ফেব্রুয়ারি মাসে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবে জাতীয় সংসদ। সংবিধানের ১২৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। সেই হিসাবে আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। এর ফলে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে হবে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আবদুল হামিদকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফের প্রার্থী করতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তেমনটি হলে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
তাঁর পুনর্নিবাচিত হওয়ার পথে সবকিছু ঠিক থাকলেও একটি কথা মনে রাখা দরকার যে আগের ২৭ বছরে যাঁরা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাঁরা সবাই সুষ্ঠু ও নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কিন্তু আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন এমন একটি সংসদের মাধ্যমে যা ২০১৪ সালে একটি একতরফা নির্বাচনের পর গঠিত হয়। এই সংসদের অর্ধেকের বেশি সদস্যই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।
পুনঃনির্বাচিত হলে ২০১৩ সালের সংকটের মতই আরেকটি সংকটের সাক্ষী হতে পারেন আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংঘাতময় জটিল একটি রাজনৈতিক পরিবেশে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে দেশকে রাজনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনার অনুরোধ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে সেসময় বিএনপি নেত্রীকে বলেছিলেন, “রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে রাষ্ট্রপতি ভূমিকা রাখতে পারেন কোন সরকারই এমন কোনো বিধান সংবিধানে যুক্ত করেনি।” সংকট নিরসনে তখন রাষ্ট্রপতির দিক থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
তিনি এমন সময় রাষ্ট্রপতি পদে পুনর্নিবাচিত হতে যাচ্ছেন যে সময়কে কোনোভাবেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা যায় না। ১৯৯০ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন শান্ত পরিস্থিতি দেখা যায়নি। গত দুই বছরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চালকের আসনে ছিল সরকার। বলা চলে রাজপথে তেমন কোনো আন্দোলনই হয়নি। বাছাই করা বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর কোনো কাজ করেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিপর্যস্ত বিএনপি পরের বছরের শুরুতে প্রায় টানা তিন মাস অবরোধ পালন করে। এই তিন মাসে দেশ নজিরবিহীন সংঘাতের মধ্য দিয়ে যায়। এরপর বিএনপি কোনো শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। গত দুই বছরে বিএনপি পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে দু-চারটি সমাবেশ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। খালেদা জিয়াসহ দলটির অনেক নেতাই এখন অগণিত মামলায় জর্জরিত।
পরবর্তী নির্বাচনকালীন সরকারের রূপ কেমন হবে এ বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় এখন রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। গত সংসদীয় নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বর্তমানের নীরবতাকে ঝড়ের পূর্বমুহূর্ত হিসেবে মনে করছেন। পরিস্থিতি সেরকম হলে আবারও রাষ্ট্রপতির কাছে সংকট নিরসনের অনুরোধ আসতে পারে।
তিনি যদি আবারও সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অপারগতা প্রকাশ করেন তাতে রাষ্ট্রপতি পদের প্রতি জনগণের আস্থায় চির ধরতে পারে। দেশ যখনই কোনো বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে তখনই উপায় খুঁজতে রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে থাকে দেশবাসী।
রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাজনৈতিক সংঘাত থেকে জনগণ ও সংবিধান রক্ষায় রাষ্ট্রপতি তাঁর নৈতিক কর্তৃত্বের ব্যবহার করতে পারেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও মানেন, নীতি নৈতিকতা ও অভিজ্ঞতায় উচ্চস্থানীয় একজন রাষ্ট্রপতি পরামর্শের মাধ্যমেও সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনেকখানি প্রভাবিত করতে পারেন। সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি।
পুনরায় নির্বাচিত হলে, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আগামী নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বিবাদমান রাজনৈতিক দুই শিবিরকেই প্রভাবিত করতে পারেন। তাঁর পরিষ্কার ভাবমূর্তি ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শক্তি হবে।
পুনঃনির্বাচিত হলে আবদুল হামিদ হবেন গণতন্ত্রের পথে পুনর্যাত্রা করা বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি। সব সংস্কৃতিতেই সাত সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এমনকি নানা ধর্মে এই সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তাই সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে তা দূর করতে জনগণ সপ্তম রাষ্ট্রপতির কাছে বিশেষ ভূমিকা প্রত্যাশা করতেই পারে। এমনটি হলে সত্যিই সৌভাগ্যবান হিসেবে বিবেচিত হবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
লেখকঃ সংবাদকর্মী
ভাষান্তর: আবু সাদিক ও রবাব রসাঁ
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ০৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ |
bbdf3b22-c7dd-4f88-bdd1-3d6fc3a3f083 | জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম নিয়েছিলেন বলেই বাঙালি জাতি হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, প্রতিষ্ঠা পায় লাল সবুজ পতাকার স্বপ্নের দেশ- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একইভাবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের মহান স্থপতির রক্তে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম না হলে বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতো না। বিশ্ব উন্নয়নের রোল হিসেবে পরিচিতি পেত না। সেই গণমানুষের নেত্রী, বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার, গণতন্ত্রের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭২তম শুভ জন্মদিন আজ।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ তনয় শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেছেন তিনি। তিনি আজ বিশ্বনেত্রী। বঙ্গবন্ধুর মতো তার চরিত্রে মানুষের প্রতি বিশ্বাস-ভালোবাসা, সততা, দক্ষতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার বিশেষ গুণ বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে ব্যক্তিজীবনে প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাদের দুই সন্তান- তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আন্তর্জাতিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
সরল সহজ সাদামাটা জীবনের অধিকারী শেখ হাসিনার গোটা জীবন নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম হচ্ছে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই বাঙালির অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে অগ্রণী সৈনিক। দূরদর্শিতার চিহ্ন যিনি ইতিমধ্যে রেখে চলেছেন সারা বিশ্বে। তিনি আজ বিশ্বনেত্রী। বঙ্গবন্ধুর মতো তার চরিত্রে মানুষের প্রতি বিশ্বাস-ভালোবাসা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার বিশেষ গুণ বিদ্যমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। এ হত্যাকাণ্ডের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। সে অবস্থার পরিবর্তন হয় ১৯৮১ সালের ১৭ মে। সেদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন সর্বস্বহারা শেখ হাসিনা। কাণ্ডারিবিহীন, দিগভ্রান্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সে সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন বলেই ঘাতকের বুলেট তাকে তখন স্পর্শ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ দেশের সব মানুষেরই ভরসা ছিল এই যে, একদিন ফিরবেন তিনি। পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে এগিয়ে নেবেন দলকে, সর্বোপরি দেশকে। বাংলা মায়ের সন্তান তিনি। ফিরে এলেন আবার সেই মায়েরই কোলে। তারপর থেকে বন্ধুর পথ চলা। পিছপা হননি কোনদিন।
শেখ হাসিনা যেন অদম্য, কেউ তাকে নিরস্ত করতে পারেনি অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রাম থেকে। দলকে শক্তিশালী করেন। মানুষের আস্থা অর্জন করেন। তারপর ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসা, ইতিহাস বিকৃতি হত্যার রাজনীতি অতিক্রম করে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে জনগণের রায়ে সরকারে আনেন। আবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ- এ যেন অন্য বাংলাদেশ, এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের পথে, মানুষ আবার বাঁচতে শেখে, স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হারানো হলে দলের নেতাকর্মীদের ওপর জোট সরকারের অত্যাচার নিযার্তন শুরু হয়, ২০০৪ সালের গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। সে হামলায় দলের নেতাকর্মীদের মানববর্ম শেখ হাসিনাকে প্রাণে বাঁচালেও আওয়ামী লীগ মহিলা সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দমে যাননি। বরাবরের মতোই শোককে শক্তিতে পরিণত করে জনগণের কল্যাণে নিজেকে রেখেছেন অটল ও দৃঢ়। নিজ মুখেই তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। বাবার মতো দেশের কল্যাণে আমিও রক্ত দিতে প্রস্তুত।’
মানুষের পাশে থেকে, অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবিচল থেকে শেখ হাসিনা গণমানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন, শত বাধা আসলেও অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথ ও সংগ্রামের পথ ছাড়েননি। কিন্তু তাকে রাজনীতি থেকে সরাতে এমনকি প্রাণ সংহার করতে চলেছে ষড়যন্ত্র। ১৯ বার তাকে হত্যার চেষ্ঠা করা হয়, বাংলার মানুষের ভালোবাসায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
২০০৭ এ নির্বাচন বন্ধ করে আসে সেনা-সর্মথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিনা কারণে সুধা সদন থেকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। সাব জেলে ১১ মাস আটকে রেখে ১১ জুন ২০০৮ সালে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে আবারও সরকারে আসে আওয়ামী লীগ। দেশ সামনের দিকে এগুতে থাকে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়, য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, বিচারের রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করতে চলছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। বিএনপি জামাত সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন বন্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তো রয়েছেই পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে। এমনকি আর্ন্তজাতিক মহল থেকে চাপ দেয়া হয় যাতে রায় কার্যকর না করা হয়- এ সবই তিনি সততার শক্তিতে সামাল দিয়েছেন। শেখ হাসিনাই পেরেছেন কঠিন চাপ উপেক্ষা করে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শুরু হয় হত্যা সহিংসতার নতুন খেলা- নির্বাচন বানচালের নামে শুরু হয় নিরীহ মানুষ হত্যা, পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস। বিএনপি ও জামাত নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নির্বাচনে না এসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, বাসে ট্রাকে রেলে আগুন দেয়, ঘুমন্ত শিশুকেও পুড়িয়ে মারে। অবরোধের নামে শুরু করেছিল রক্তের হোলি খেলা। বিএনপি জামাত জোট ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে প্রতিহত করতে ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালায় কিন্তু গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ ভোট দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পক্ষে রায় দেয়ায় ব্যর্থ হয় বিএনপি জামাতের সহিংসতা তাণ্ডব। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত আগামীর পথে হাঁটতে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। উন্নয়নের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিস্তৃত অঞ্চলে, মানুষের ঘরে ঘরে।
পিতার মতো হিমালয়সম আত্মবিশ্বাস তাকে শত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে শিখিয়েছে। যারা দেশে রাজনীতির নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চায় কিন্তু তিনি শক্তহাতে এদের দমনে সক্ষম হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতাই তার শক্তি। বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসে বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে সবদেশকে আহ্বানও জানিয়েছেন।
গণমানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা-সেজন্যই তিনি জনগণের মনজয়ী নেত্রী, আমাদের আস্থার ঠিকানা, উন্নয়নের বাতিঘর। মানুষ বিশ্বাস করে তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনাই পারবেন জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। তারই দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়ে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রত্যাশায় সমগ্র জাতি। তিনি নতুন আগামীর পথ রচনা করেছেন, দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে, শুধু মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াই নয় আমাদের সুদূর আগামীর ভিত্তি রচনা করেছেন, তাই ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশের ছবি এঁকে দিয়েছেন জাতির হৃদয়ে।
ড. মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুব্বর আমিনুল, সদস্য, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
6ce02b05-8f9f-464b-bdfd-1c4594c4337f | কিছুদিন আগে রুদ্র সাইফুলকে বলেছিলাম, ‘রুদ্র, এই সুদীর্ঘ পেশাগত জীবনে তো অনেক কিছুই দেখলাম, রইলাম অনেক কিছুর সঙ্গেও। এখন একটি কাজ যদি না করা হয়, তা হলে আমার বিবেক ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তুমি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি আর আমি বটবৃক্ষের মতো বিগত প্রায় সাতটি দশক এই গাঙ্গেয়বঙ্গের রাজনৈতিক স্রোতধারা অবলোকন করলাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পর এই ভূখ-ে যিনি সত্যিকারভাবে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই মানুষটিকে নিয়ে একটা সংকলন করতে হবে। আমাদের বিত্ত নেই বটে, কিন্তু চিত্ত তো আছে, আর হাতে আছে কলম। এসো রুদ্র, আমরা কিছু একটা করি।’
রুদ্র তার অসাধারণ কর্মদক্ষতা দিয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে সংকলনের সব আয়োজন সমাপ্ত করল এবং আমি মুগ্ধ হলাম এই বিশ্বাস থেকে যে, কত গভীর শ্রদ্ধাবোধ থাকলে কোনো দিকে না তাকিয়ে, এমনকি ব্যয়ের বিষয়টিও না ভেবে এই অতিশয় শ্রমসাধ্য কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ঠিক এই সময় শুরু হলো একটি অসাধারণ তথ্যচিত্র ‘হাসিনা অ্যা ডটারস টেল’। শুনলাম প্রেক্ষাগৃহগুলোর প্রতিটি শো জনাকীর্ণ। টিকিট সংগ্রহ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। সৌভাগ্যবশত টিকিট পেয়ে গেলাম। পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ। জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হওয়ার পর স্বল্প বিরতিতে শুরু হলো তথ্যচিত্রটি। ৭০ মিনিটের এই তথ্যচিত্র শুরু হওয়ার পর রুদ্ধশ্বাসে প্রতিটি দর্শক যেন আরও কিছু দেখতে চেয়েছে বলে মনে হলো। ছবি শেষ হলেও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিটি দর্শক হৃদয়তন্ত্রীতে অনুধাবিত হচ্ছে ভিন্নসুরে পান্নালাল ভট্টাচার্যের কালজয়ী মর্মভেদী ওই দুটি চরণ, ‘আমার সাধ না মিটিলো, আশা না পুরিল/ সকলই ফুরায়ে যায় মা…।’
হল থেকে বেরিয়ে আমরা চারজনই স্তব্ধ হয়ে রইলাম কিছু সময়, কেউ কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না। পর্দার নিঃশব্দ অশ্রুপাত যে এমন করে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, সেই সময় আমরা চারজনই যেন অনুভব করলাম। তথ্যচিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ করার মতো বোদ্ধা আমি নই। রবীন্দ্রনাথ সব সময় পণ্ডিতদের সেই চিরন্তন বিতর্ক ‘তৈলাধার পাত্র না পাত্রাধার তৈল’ নিয়ে কটাক্ষ করতেন। আমি অবশ্য শিল্পস্রষ্টা কিংবা শিল্পবিশ্লেষকও নই। নিতান্তই একজন অনুরাগীমাত্র। ভালো সৃষ্টি হলে আনন্দ অনুভব করি। সেই হিসেবে বলতে পারি ছবিটি দেখে আমি অপার আনন্দ অনুভব করেছি এটা যেমন সত্য, তেমনই শোকার্ত হয়েছি স্বজন হারানো দুই নারীর যন্ত্রণাবিদ্ধ স্মৃতিচারণে।
কবি নজরুল তার এক কবিতার শেষাংশে এই দুটি চরণ ব্যবহার করেছিলেন, ‘ভগবান তুমি চাহিতে পার কি/ ঐ দুটি নারী পানে/ জানি না তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে।’ আমার সুযোগ হয়েছে ওই দুজনের কাছ থেকেই খ–খ-ভাবে এই অভিজ্ঞতার কথা বিচ্ছিন্নভাবে শোনার। তাদের হয়তো মনে নাও থাকতে পারে, কিন্তু আমার মনে আছে। মনে আছে বিভিন্ন সময়ে যখন জাতির প্রিয়নেত্রী তার স্মৃতির ঝাঁপি থেকে কিছু কিছু রক্তময় ছবি তুলে ধরতেন, সুধা সদনের কোনো কক্ষে একবার, টুঙ্গিপাড়ায় তার বৈঠকখানায় একবার, একবার কানাডায় জামাতার বাসগৃহে। তখন মনে হয়েছে এত দাবাগ্নি হৃদয়ে বহন করেন কী করে তিনি! অথচ জাহান্নামের সেই আগুনে বসে তিনি কী করে হাসেন পুষ্পের হাসি? এই পরিস্থিতিতে তো কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করা।
শেখ রেহানার সঙ্গে কথা হয়েছে কয়েকবার। লন্ডনে তার বাসগৃহে গিয়ে শুনেছি মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা। কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে চেনা মানুষ অচেনা হয়ে যায়, কীভাবে ভালো মানুষের মুখোশ খসে গিয়ে বীভৎস ক্লেদাক্ত চেহারা বেরিয়ে পড়ে, তার বিবরণ শুনেছি তার মুখে। তিনি বলেছিলেন, ‘পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কাহিনি যেদিন শুনি তারপর থেকে এ পর্যন্ত আমার দুই চোখের পাতা আমি এক করতে পারিনি। চোখ বন্ধ করলেই যেন সার বেঁধে সামনে এসে দাঁড়ান বাবা, মা, কামাল ভাই, জামাল ভাই, আদরের রাসেল, দুইটা নতুন বউ তাদের হাতে মেহেদির রঙ নিয়ে।’ তিনি শুধু বারবার একটি প্রশ্নই করেছিলেন, ‘বলুন তো, কী দোষ ছিল আমার বাবার? দেশের স্বাধীনতার জন্য বছরের পর বছর তিনি জেল খেটেছেন, আমরা পিতার সান্নিধ্য বঞ্চিত থেকেছি বছরের পর বছর, এখানেই কি তার দোষ? এত অকৃতজ্ঞ হবে এই জাতিÑ ভাবতেও পারি না।’
হ্যাঁ, ওই তথ্যচিত্রটিতে দুই সহোদরার বিপন্নকালের অকপট বর্ণনা ছিল, যা স্পর্শ করেছে তাদের সবাইকেই যারা একবার তথ্যচিত্রটি দেখেছেন।
দুই
আমরা জাতি হিসেবে যেমন ভাগ্যবান, তেমনই হয়তো বা অকৃতজ্ঞ। আমরা ভাগ্যবান, কারণ আমাদের এমন একটি প্রতীক আছে, যা আমাদের জাতিগত অস্তিত্বকে সুনিশ্চিত করেছে। যিনি আজীবন প্রাণপাত করেছেন একটি জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, যিনি বারবার ফাঁসির দড়ির নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন একটি জাতিসত্তার আত্মপ্রকাশের প্রয়োজনেÑ আমরা ভাগ্যবান না হলে কি তেমন একটি হিমালয়সম প্রতীককে পেতাম! আমরা অকৃতজ্ঞ এই কারণে যে, এমন একজন মানুষকে এভাবে সপরিবারে বিনাশ করতে ঘাতকরা এতটুকু দ্বিধান্বিত হলো না এবং গোটা জাতি প্রতিবাদহীন হিসেবে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ অবলোকন করল। একটি জাতির এমন নির্লজ্জ আত্মসমর্পণের ইতিহাস কি আছে বিশ্বের কোথাও? সাদ্দাম হোসেন কিংবা গাদ্দাফির মতো নির্দয় স্বৈরাচারের পক্ষেও সে সময় তাদের সমর্থকরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিল, মাসের পার মাস, বছরের পর বছর জীবন পণ করে লড়াই করেছিল, কিন্তু আমাদের এখানে দেখা গেল বিশ্বাসঘাতকের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানারূপে নানা পরিচয়ে মুক্তিযুদ্ধের ন্যূনতম চিহ্ন নিঃশেষ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
শুধু ওই একবারই নয়, বারবারই ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন দৃঢ়প্রত্যয়ে ঘোষণা করলেন যে, তিনি দেশে ফিরবেনইÑ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ তিনি অবশ্যই গড়বেন, তারপর থেকে আবার সক্রিয় হয়ে উঠল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র। পঁচাত্তরে বিদেশেও কি শান্তিতে ছিলেন তারা? শুনেছি অনেকের কাছে, এমনকি দুই বোনের মুখ থেকেও। অদৃশ্য ঘাতক তাড়া করত তাদের। নিশ্চিন্তে পথে বেরোতে পারতেন না। এমনকি ভারতের মতো জায়গায়ও তাদের পরিচয় গোপন করে চলতে হতো। এ তথ্যটি তো তারা দুজনই বলেছেন ওই তথ্যচিত্রটিতে।
আরও একটি কারণে এই জাতি ভাগ্যবান যে, শেখ হাসিনা জাতির জনকের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য নির্ভয়ে পথ চলেছেন ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’ এই বিশ্বাসকে বুকে বহন করে। যদি তারা ঘাতকের লক্ষ্যবস্তুতে পড়ে যেতেন, তা হলে কক্ষচ্যুত হতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তদান, তিন লাখ মা-বোনের আর্তনাদ; মিথ্যে জয়যুক্ত হতো, নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত জাতির গর্বের পতাকা, জাতীয় সংগীত। সাধের এই ভূমিতে দেখা যেত পিশাচ ও হায়েনার প্রেতনৃত্য। তিনি যে সাহসের আলোকবর্তিকা বহন করে নিয়ে এসেছেন তার ফলেই একাত্তরের ঘাতকরা একে একে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছে, কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচে গেছে, শূন্য নিঃশেষ হয়ে পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের অর্জনের ভাণ্ডার। এই সাঁইত্রিশ বছরে অন্ততপক্ষে উনিশবার তাকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তার অদম্য প্রাণশক্তিকে পরাভূত করতে পারেনি।
আর অকৃতজ্ঞতার বিষয়টি অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে বলতে হয় এই কারণে যে, তার পর্বত-প্রমাণ সাফল্য যেখানে বাংলাদেশের সবকটি উন্নতির সূচক বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত করেছে, সেখানে সব অর্জন তীর্যকভাবে চিত্রিত করার অবিচল চেষ্টা করতে এতটুকু কুণ্ঠিত কিংবা লজ্জিত হচ্ছে না। একই সঙ্গে চলছে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার অপচেষ্টা, চলছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস এবং নির্মূল করার নির্মম ষড়যন্ত্র।
তিন
‘হাসিনা অ্যা ডটারস টেল’ তথ্যচিত্রটির ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার ভাষ্যে উঠে এসেছে সেই নির্বাসিত জীবন, সেই দুঃসময়, যখন দুজনেই প্রত্যক্ষ করেছেন মুখ ও মুখোশের রূপ। চেতনার রঙে চিনেছেন শত্রু এবং মিত্রের ব্যবধান। বঙ্গবন্ধুর এই দুই কন্যা আছেন বলেই যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এ সত্যটি অনুধাবন করতে দেশবাসীকে বোধহয় আর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
আবেদ খান : সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ |
24f6c78f-9ea3-40cb-b7d2-80d9f764b2da | নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় উপনীত হওয়ার জন্য ১৫১টি আসন প্রয়োজন। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে ১৫১টি আসন পাওয়া অর্থাৎ ম্যাজিক নাম্বার ১৫১। যেভাবেই হোক ১৫১টি আসন পেতেই হবে। এ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে। অর্থাৎ যাদের মনোনয়ন দিলে ১৫১টি আসন পাওয়া সম্ভব, তাদেরই মনোনয়ন দেবে। সে ক্ষেত্রে জয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দলগুলো মনোনয়ন দেবে। আর এটিই স্বাভাবিক রাজনীতি। বরাবরই রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য বিষয়টি নির্বাচনের প্রার্থিতা নির্ধারণের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তবে বিষয়টি শুধু আমাদের দেশেই নয়, পাক-ভারতীয় উপমহাদেশে বেশ আগে থেকেই রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির রেওয়াজ চালু রয়েছে। ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে অনেক অঞ্চলেই দেখা যায়, কারও দাদা এমপি ছিলেন, কারও বাবা মন্ত্রী ছিলেন অর্থাৎ পরিবারে অন্য সদস্যরা কোনো না কোনোভাবে রাজনীতিতে জড়িত। এমনকি ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে যুক্ত থাকার বিষয়টি রয়েছে। কাজেই এটি শুধু বাংলাদেশে নতুন এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। একটি বিষয় শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল— এবার নির্বাচনে অনেক নতুন মুখ দেখা যাবে। ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অনেক পরিবর্তন বলতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবর্তন করা আসলে কোনো দেশেই হয় না। পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভর্নমেন্ট যেখানেই আছে, সেখানেই প্রত্যেক নির্বাচনে ১০ থেকে ২০ শতাংশের বেশি প্রার্থীর পরিবর্তন দেখা যায় না।
একেবারে ১০০ শতাংশ কিংবা ৫০ শতাংশ পরিবর্তন কোথাও হয় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও তেমন পরিবর্তন হয়নি। এরই মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগের ২৩৩টি আসনের মধ্যে ৪৫টি আসনে নতুন মুখ আসছে। নতুন প্রার্থীর এ সংখ্যা যদি শেষ পর্যন্ত ৫০ জন হয়, তাহলে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে এ পরিবর্তন ঘটানো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং প্রশংসনীয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এবার সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। আওয়ামী লীগ একটি পুরানো রাজনৈতিক দল। কাজেই এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ব্যাপক কোনো এক্সপেরিমেন্টে যায়নি। এটি তাদের বিবেচনার মধ্যেই ছিল। কয়েকটি আসনে আমরা একাধিক প্রার্থী লক্ষ্য করছি। তবে এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কারণ নমিনেশন যখন যাচাই-বাছাই করা হবে, তখন কেউ ঋণখেলাপি, মামলাসহ আরও অনেক বিষয়ই সামনে চলে আসবে। এখন যারা প্রার্থীর সমর্থক এবং ভোটার, তারা হয়তো তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন না। যারা উচ্চ পদে থাকেন, নমিনেশন প্রত্যাশা করেন, অনেক সময় তাদের নানা সমস্যা থাকে। এতে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, তার মনোনয়ন টিকল না। সেজন্য অন্য একটি পথ বা অপশন খোলা রাখতে হয়। তবে এবার মনোনয়ন দেওয়া এবং পাওয়ার পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। নির্দিষ্ট দিন সকাল থেকে চিঠি দিয়ে প্রার্থীকে মনোনয়নের বিষয়টি জানানো হচ্ছে। অন্যান্যবার মনোনয়ন বঞ্চিতরা তাৎক্ষণিক সড়ক অবরোধ, হরতালসহ অনেক কিছু করেছে। কিন্তু এবার এরকম আলামত সীমিত। আর এবার এমন হওয়ার বেশি সুযোগও নেই। কারণ এবার দল থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার মনোনয়নপত্র বিক্রি করার যে হিড়িক আমরা লক্ষ্য করলাম, তাতে আগামীবার নির্বাচনে চিন্তা করতে হবে না। সব দল লোকবল নিয়ে এসে মনোনয়ন ক্রয় এবং পুরো বিষয়টি তথাকথিত উৎসবে পরিণত করে। আমরা কিছু লোক নির্বাচনকে উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করছি। আমি মনে করি, নির্বাচনের সঙ্গে উৎসব শব্দটি সংযুক্ত করা আপত্তিকর।
বলা হয়ে থাকে— নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। পৃথিবীর কোনো দেশেই নির্বাচন উৎসবমুখর হয় না। যেসব দেশে গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চা হয় যেমন— ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা— এসব দেশের অনেক মানুষ টেরও পান না কখন, কোথায়, কীভাবে নির্বাচন হয়। কিন্তু এখানে নির্বাচনকে উৎসব বলা হয়। কিন্তু বাঙালির উৎসব মানেই তো খাওয়া-দাওয়া, প্রচুর আতশবাজি, হৈ-হুল্লোড়, কনসার্ট, গানবাজনা ইত্যাদি। বাঙালির উৎসবে এগুলোই জড়িত। কিন্তু উৎসবের ওই অনুষঙ্গগুলো নির্বাচনে নিষিদ্ধ। নির্বাচনে কাউকে কিছু খাওয়ানো যাবে না, হৈ-হুল্লোড়, মাইক বাজানো, আতশবাজি করা যাবে না। তাহলে নির্বাচনকে কেন উৎসব বলা হচ্ছে? বরং আমরা উৎসব বলে নির্বাচনকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছি। নির্বাচন কোনো আবেগের বিষয় নয় বরং আমাদের উপলব্ধি করা উচিত, নির্বাচন খুবই ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান, জাতির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব, সুচিন্তিত মতামত প্রদান করব যে, আগামী পাঁচ বছর কে বা কারা কীভাবে রাষ্ট্র চালাবেন। কারা ক্ষমতায় থাকবেন? দেশের জন্য তারা আসলে কী করবেন? এজন্য আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ইশতেহার, উন্নয়ন সম্পর্কে ভোটারদের অবহিতকরণ। কারণ অনেক প্রার্থী আছেন, যাদের সম্পর্কে ভোটারদের কাছে কোনো তথ্য থাকে না। থাকলেও আংশিক তথ্য। তথ্য গ্রহণ করার সক্ষমতা ভোটারদের নেই। এখানেই ভোটারদের সাহায্য-সহযোগিতা করা দরকার। তা না করে বলা হচ্ছে নির্বাচন উৎসব! নির্বাচন উৎসব কেন হবে? উৎসবমুখর করা মানেই নির্বাচনে টাকা ব্যয় করা, হৈ-হুল্লোড় করা, ট্রাকে গানবাজনা ইত্যাদি। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের উচিত ঘোষণা দেওয়া— নির্বাচন কোনো উৎসব নয়। সবাই ভাবগাম্ভীর্য, সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিজ বিচার, বুদ্ধি, বিবেক ও বিবেচনার সঙ্গে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করবেন। বলা হয়ে থাকে, অনেকে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য নির্বাচন করেন। আমি যেহেতু বিষয়গুলো ভেতর থেকে দেখি, সর্বক্ষেত্রে বিষয়টি এক রকম নয়। সমাজে এমন অনেক লোক আছেন, যাদের টাকা-পয়সা এখন অনেক। তারা এখন সমাজ এবং এলাকার জন্য সত্যিকার অর্থেই কিছু করতে চান। অনেক কিছুই হয়তো তারা করেছেন।
কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, রাজনীতি ছাড়া মানুষের মঙ্গল বা কল্যাণ সাধন করা যাবে না। কারণ রাজনীতিই হলো দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বদলানোর একমাত্র উপায়। তবে এর বিপরীত ধারার অনেক লোকজনও রয়েছে। পার্লামেন্টারি গভর্নমেন্ট সিস্টেমে সরকার হচ্ছে রাজনৈতিক দলের অর্থাৎ রাজনৈতিক দলই সরকার। যদিও আমরা জানি গণতন্ত্রের সরকার জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এজন্য দলীয় ফোরামে যারা মনোনয়ন চাইবে, তাদের জন্য কিছু আইন করার দরকার ছিল। যারা যে দলের নমিনেশনের জন্য আবেদন করবেন, তারা স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী বা অন্য কোনোভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। কারণ দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক ব্যক্তি দলের দ্বারা উপকৃত হয়। আর কিছু না হোক, দল ক্ষমতায় ছিল— এটাই ভালো লাগার বিষয়। সে রাজনৈতিক দল থেকে যখন কেউ নমিনেশন চাইবেন, তখন তিনি সেই পার্টির লোক এবং তার জন্য কিছু বিষয় আইনের মধ্যে থাকা দরকার। যেমন আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির ১২ হাজার লোক নমিনেশন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, সেখান থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ জন নমিনেশন পাবেন। ওই ৩০০ জন্য ছাড়া বাকি আর কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। যদি প্রকৃত অর্থে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে হয়, তাহলে এমন আইন থাকা জরুরি। তবে এবার বিদ্রোহ শুরু হলে প্রথম দিন থেকেই এর ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যেত। এর আগে বিভিন্ন জায়গায় হরতাল, অবরোধ— যেগুলো আমরা লক্ষ্য করি। এবার এরকম হওয়ার সম্ভাবনা কম। নির্বাচনে বেশি লোকের আগ্রহ থাকে তখনই, যখন দেখা যায় খুব সহজে জয় পাওয়া যাবে, পাস করা যাবে। কিন্তু নির্বাচনে যখন ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ দেখবে, তখন কাউকে পাওয়া যাবে না। কারণ তখন অনেকের অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি সামনে চলে আসবে। কারণ নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। যদিও নির্বাচন কমিশন ২৫ লাখ টাকা খরচের আইন করেছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। কয়েকগুণ টাকা লেগে যায়। তখন অনেকে চিন্তা করবেন। বাংলাদেশে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ইতিহাস কী? বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ২২ বছরের ইতিহাসে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংখ্যা ১০ জন অতিক্রম করার কোনো ঘটনা নেই। যেখানে ভালো নির্বাচন তথা সব দলের অংশগ্রহণ থাকে তাহলেও পাঁচ থেকে সাতজনের বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী পাস করেন না। কাজেই এবার নির্বাচনে বিদ্রোহীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হওয়া দরকার যে, ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে পাস করার সম্ভাবনা নেই। এবারের নির্বাচন রাজনৈতিভাবে ব্যাপক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নানা পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ পরস্পর মুখোমুখি এবং শক্তিশালী। সেখানে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পাস করার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি মনে করি, এদের সংখ্যা এবার তিন থেকে চারজনের বেশি হবে না। সব মিলিয়ে এক শতাংশ। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিছু ঘটনা তো ঘটবেই। তারপরও আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো সবকিছু সমন্বয় করবে এবং করতেই হবে। তবে কিছু কিছু সমস্যা বা ঘটনা হয়তো থেকেই যাবে। নির্বাচনের মাধ্যমে মীমাংসা করতে হবে। যেমন বেশি সমস্যাযুক্ত আসন উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ যারা আছেন, সবাই দাঁড়াবে— যে পাস করতে পারে। সমাধান একটি বের হবেই। যারা আগে এমপি ছিলেন, তাদের আবার এমপি রাখার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি কী? তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়কে আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি, এবার উন্নয়নকে ফোকাস করা হবে।
অর্থাৎ দেশ এ অবস্থায় ছিল, ওই অবস্থা থেকে আমরা এ অবস্থানে নিয়ে এসেছি, আবার ক্ষমতায় গেলে আরও উন্নয়ন করা হবে। এগুলোই প্রধান বিষয়। উন্নয়ন তো হয়েছেই। অনেকটাই দৃশ্যমান। এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, কৃষিসহ নানা উন্নয়ন হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন দরকার। তারপরও একেবারে লক্ষ্যণীয় মাত্রায় অগ্রগতি আমাদের হয়েছে। যদি বলা হয়, স্থানীয় সরকারের এসব কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু এমপি ছাড়া স্থানীয় কোনো কাজ হয় না। স্থানীয় সরকারের কাছে জনগণ যা চায়, এমপির কাছেও তাই চায়। যেমন এলাকার পাকা রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ইত্যাদি। আমরা তাত্ত্বিকভাবে অনেক কথাই বলি; কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ নেই। এমপির কাজ কী? ঢাকায় বসে আইন প্রণয়ন করবেন। কিন্তু সাধারণ ভোটারের মাথায় এগুলো নেই। তারা এমপির কাছে চাচ্ছে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ইত্যাদি। আমাদের এখানে ঐতিহাসিকভাবে এমপিরা বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বরাদ্দ নিয়ে আসার সঙ্গে জড়িত। কয়েক বছর ধরে এলাকার উন্নয়ন কাজে প্রত্যেক এমপি বিশেষ বরাদ্দ পেয়ে আসছেন। সে ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের পুরোনোদের এবার এমপি রাখার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক হিসেবে বেশি কাজ করেছে। নমিনেশনে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে উন্নয়ন হয়েছে তাদের ফের উন্নয়নমূলক কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া। কাজেই এবার নির্বাচনে আরও বেশি রদবদল না হওয়ার কারণ এটাই। বর্তমানে দেশের সর্বময় কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে গেছে। ইসি যদি তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে সেটা তাদের ব্যর্থতা। তবে ইসির শব্দচয়নের মধ্যে বিরাট সমস্যা হয়েছে। সচিব কেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন বলতে গেলেন। বলতে হবে নির্বাচন যখন হয়, তখন পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ অনেকেই আছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা কোনো পক্ষ অবলম্বন করবেন না, কোনো ঘটনায় অংশগ্রহণ করবেন না। সে অর্থে মনে হয় তিনি এ কথা বলেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, আপনাদের কাজ হচ্ছে দেখা এবং রিপোর্ট করা। কিন্তু কোনো পক্ষপাতিত্ব করবেন না। এসব কথা বলতে গিয়ে মূর্তি শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অন্য শব্দ ব্যবহার করা যেত। ইভিএম সীমিত আকারে ব্যবহার করা হবে এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ ইভিএম নতুন নয়, এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে।
—অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় |
f8c5136e-b40b-4c13-be0f-569839913cba | দেশের চলমান দ্রুতগতির অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রক্রিয়া চলমান থেকে আগামী তিন বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
চলমান সরকারের মেয়াদ পূরণ ও আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আগামী ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হবে।
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ বলছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ ধরে রেখে গত একদশক ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। গত জুনে শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছে যায়। শেখ হাসিনা আশা করছেন, চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে এবং এই হার বাড়তেই থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন সব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি যে আবার নির্বাচিত হয়ে আসতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।’
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। এর পেছনে কাজ করেছে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা। এর মধ্যে তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদাহরণ দেন। বর্তমানে এই একশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১১টি অঞ্চল পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে এবং আরও ৭৯টি অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ বলছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। এর আগে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা ধরে রাখলেও ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি। বর্তমানে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাবন্দি থাকলেও দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও বিভিন্ন মতামত জরিপের ফলে উঠে এসেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়ে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতা ধরে রাখতে যাচ্ছে।
এদিকে, দেশের চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিদ্যুতের চাহিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারও বিদ্যুতের এই বাড়তি চাহিদা মোকাবিলার জন্য অব্যাহতভাবে পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে আগামী বছরই দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৭ হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এর ৫৮ শতাংশই আসছে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। কিন্তু বিভিন্ন গ্যাস কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের হার কমছে। এ কারণেই জ্বালানির চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ছাড়াও পারমাণবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের দিকে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে বলা হয়, ২০০৯ সালের শুরুতেই ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে উচ্চাভিলাষী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। এই সময়ের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে হয়েছে ১২১টি। এছাড়া, তিনি ক্ষমতায় আসার আগে দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছালেও তার দুই মেয়াদের শাসনামলের শেষ দিকে এসে এখন দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই দেশের শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে শেখ হাসিনার।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করছে রাশিয়া ও ভারত। শেখ হাসিনা বলেন, দুইটি রিয়্যাক্টরের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। ২০২৪ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাবে।
দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখনও উপযুক্ত স্থান খুঁজছি। সেক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হতে পারে বলে জানান তিনি। উপযুক্ত পাওয়া গেলে আসন্ন নির্বাচনের পর ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করা হবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে দ্বিতীয় এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আওতায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেশটি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অংশীদার হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৮শ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ২ হাজার ৪শ কোটি ডলার এবং যৌথ উদ্যোগের আওতায় আরও এক হাজার ২৬০ কোটি ডলার সহায়তার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২৫ শতাংশ মালিকানার অংশীদার হয়েছে চীন। চীনের সামরিক অস্ত্রেরও অন্যতম বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।
তবে ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে ‘সুসম্পর্কে’র ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ‘গ্রহণযোগ্য ও স্বস্তিকর’ প্রস্তাবকেই বিবেচনা করবে বাংলাদেশ, সেটা যে দেশেরই হোক না কেন।
গত বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘু প্রায় ৮ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয়দানের বিষয়টির নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি নাগরিক উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিলেন। তাদের আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশ সহমর্মিতা দেখিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি তখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা অনুধাবনের আহ্বান জানাই, জনগণ আমার সেই আহ্বানে আস্থা রেখেছে। এ বিষয়ে আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমি তাদের বলেছিলা, প্রয়োজন হলে আমরা আমাদের খাবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাব। জনগণ আমার কথায় আস্থা রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা তাদের খাদ্যের সংস্থান করেছি, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছি এবং তাদের নারী ও শিশুদের যত্ন নিয়েছি।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকেই তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার কথাও চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ অবস্থায় কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা। তবে বন্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে ভাসানচর রোহিঙ্গাদের জন্য কারাদ্বীপ হয়ে উঠবে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি চমৎকার একটি দ্বীপ। গৃহপালিত পশুপালনের জন্য স্থানীয় জনগণ এই দ্বীপ ব্যবহার করে থাকে। রোহিঙ্গারা বরং এই দ্বীপে আরও ভালোভাবে বাঁচতে পারবে। তাদের সন্তানেরা শিক্ষা পাবে, স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আমরা এরই মধ্যে একটি ওয়্যারহাউজ তৈরি করেছি, যেন সেখান থেকে তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পারি। বর্তমানে আমরা এক লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আবাসনের ব্যবস্থা করছি। তবে সেখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব।
কোনো রোহিঙ্গাকেই বলপূর্বক মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না বলে ফের নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সুরাহা করার জন্য অন্যান্য দেশ ও বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার কিভাবে তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে পারে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন এ বিষয়ে সমাধানের পথ বের করতে হবে। |
84d600e7-4eb8-42b5-ad75-9bad23b4d47b | পৃথিবীতে যত রকমের মেলা হতে পারে তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর মেলা হচ্ছে বইমেলা। আমার ধারণা পৃথিবীতে যত বইমেলা আছে তার মাঝে সবচেয়ে মধুর বইমেলা হচ্ছে আমাদের ফেব্রুয়ারি বইমেলা। কোনো কিছু না করে বইমেলার এক কোনায় চুপচাপ বসে থেকে শুধুমাত্র মেলার মানুষজনকে দেখে আমি আমার একটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারব! মেলায় গুরুগম্ভীর বয়স্ক মানুষ যায়, কমবয়সী তরুণ-তরুণী যায়, বাবা-মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যায়, প্রত্যেকের ভাবভঙ্গি চালচলন আলাদা! কেউ বই কেনে, কেউ বই দেখে, আবার কেউ শুধু ঘুরে বেড়ায়! এই অতি চমৎকার বইমেলাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে, আমি সিলেটে বসে আছি, লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপেক্ষা করছি কবে বইমেলায় যাব!
গতবার বইমেলায় গিয়ে অবিশ্য আমার এক ধরনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বাচ্চা-কাচ্চার জন্য বই লিখি বলে আমাকে এক সময় প্রচুর অটোগ্রাফ দিতে হতো। কমবয়সী ছেলেমেয়েরা বই নিয়ে ভিড় করে আসত। এখনো ভিড় করে আসে, কিন্তু তাদের হাতে এখন প্রায় সময়েই কোনো বই নেই, তার বদলে আছে একটা স্মার্ট ফোন! সেই ফোন দিয়ে তারা সেলফি তুলতে থাকে! সেলফি বা ছবি তোলার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু বইমেলায় বইয়ের ওপর অটোগ্রাফ না নিয়ে শুধু একটা সেলফি তুলে সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলে আমি একটু অস্বস্তি বোধ করি। এই সোস্যাল নেটওয়ার্ক বা ফেসবুকের যুগেও আমি সাংঘাতিকভাবে বইপন্থি মানুষ। যতই দিন যাচ্ছে আমি ততই বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে একটা মানুষকে পরিপূর্ণ হতে হলে তাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে।
আমার ধারণা মানুষ আর পশুপাখির মাঝে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে মানুষ বিমূর্ত চিন্তা করতে পারে, পশুপাখি পারে না। যত রকম বিমূর্ত চিন্তা আছে তার মাঝে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে বই পড়া। কাজেই কেউ যেন মনে না করে বই পড়াটি শুধু এক ধরনের বিনোদন, এটি তার থেকেও অনেক বড় একটি ব্যাপার। আমাদের একমাত্র সম্পদ হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কটি। সেই মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ব্যায়াম হতে পারে বই পড়া। মস্তিষ্ককে শানিত করার এর থেকে কার্যকর আর কিছু হতে পারে না। সোস্যাল নেটওয়ার্ক জাতীয় আপদের প্রবল আক্রমণের সামনে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ হতে পারে বই। তাই আমার মনে হয় রীতিমতো যুদ্ধ করে হলেও আমাদের সবাইকে বইয়ের জগতে নিয়ে যেতে হবে। সেই জন্য ফেব্রুয়ারির বইমেলা দেখে আমি এত উত্তেজিত হয়ে যাই।
দুই.
এবারের বইমেলায় আমার জন্য একটা অত্যন্ত চমকপ্রদ ব্যাপার ঘটেছে। সেটা হচ্ছে, সায়েন্স ফিকশন ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেয়া! দিন দশেক আগে আমি কলকাতা গিয়েছিলাম। সেখানে খুব জাঁকজমক করে কলকাতা লিট ফেস্টিভেল হয়। সেখান থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পরাবাস্তব লেখার জন্য। মঞ্চে আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পাশে বসেছিলাম সেটি আমার জন্য অনেক বড় একটি অভিজ্ঞতা। সেখানে আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশান লেখালেখি নিয়ে জানতে চেয়েছিল। আমি অনেক জোর গলায় বলে এসেছি বাংলাদেশের পাঠক নিশ্চয়ই সায়েন্স ফিকশান পড়তে খুব পছন্দ করে, কারণ আমাদের দেশে অনেক সায়েন্স ফিকশান লেখক। শুধু তাই নয় তারা একটা সোসাইটি করেছেন এবং বইমেলায় তারা র্যালি করে গিয়ে দল বেঁধে একসঙ্গে সায়েন্স ফিকশান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন!
তবে কলকাতার মানুষকে যেটা বলিনি, সেটা হচ্ছে দেশের সাহিত্যের মূল ধারার মানুষরা সায়েন্স ফিকশানকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। সবাই ধরেই নেয় সাহিত্যের কিছু সম্ভ্রান্ত এলাকা আছে যারা সেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে পারে তারাই প্রকৃত সাহিত্যিক! অন্যরা লেখক, দলিল লেখক কিংবা সায়েন্স ফিকশান লেখকের মাঝে বড় কোনো পার্থক্য নেই। আজকাল অনেক রকম সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই একজন প্রবীণ এবং একজন নবীন লেখক নেয়া হয়। নবীন লেখকদের বেলায় কখনো একজন সায়েন্স ফিকশান লেখককে বেছে নিতে দেখিনি! যদিও অনেকেই আছেন যারা খুব চমৎকার লেখেন।
এ রকম একটা অবস্থায় যদি হঠাৎ করে আবিষ্কার করি বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার সায়েন্স ফিকশান ক্যাটাগরিতে দেয়া হয়েছে তাহলে অবশ্যই আনন্দিত হওয়ার কারণ আছে। মনে হচ্ছে সাহিত্যের জগতটা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা ছিল, শুধুমাত্র সম্ভ্রান্ত কিছু মানুষ সেখানে যেতে পারত, হঠাৎ করে কাঁটাতার তুলে দিয়ে সেখানে অন্যদেরও ঢুকতে দেয়া হয়েছে! সায়েন্স ফিকশান লেখক ঢুকেছেন তাদের পিছু পিছু ভৌতিক গল্প লেখকরা ঢুকে যাবেন, তার পিছু পিছু রহস্য উপন্যাসের লেখক এবং সবার শেষে শিশু সাহিত্যিকরা!
এই বছর সায়েন্স ফিকশানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মোশতাক আহমেদ, তাকে আমি অনেকদিন থেকে চিনি! চেনা মানুষ পুরস্কার পেলে আনন্দ বেশি হয়। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশদের অবদান নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, বইটির নাম ‘নক্ষত্রের রাজারবাগ’। মোশতাক আহমেদ আমাকে অনুরোধ করেছিলেন বইটির মোড়ক উন্মোচন করে দিতে এবং আমি আনন্দের সঙ্গে রাজি হয়েছিলাম। কোনো একটা কারণে নির্দিষ্ট সময়ে মোশতাক আহমেদ জরুরি কাজে আটকা পড়ে গেলেন এবং বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হলো না। আমি সেদিনই ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছি।
পরদিন ভোরে আমি অফিসে গিয়েছি, গিয়ে দেখি মোশতাক আহমেদ আমার অফিসের সামনে অপেক্ষা করছেন। তার হাতে রঙিন কাগজে মোড়ানো একটি বই। আমাকে বললেন বইটির মোড়ক উন্মোচন করানোর জন্য তিনি রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছেন! তিনি ঠিক করেছিলেন আমাকে দিয়ে মোড়ক উন্মোচন করাবেন, কাজেই সেটি তিনি করে ছাড়বেন। আমি সব সময়ই দেখে এসেছি মোড়ক উন্মোচন হয় দশজনের সামনে রীতিমতো একটা আনন্দঘন অনুষ্ঠান। কিন্তু ‘নক্ষত্রের রাজারবাগ’ মোড়ক উন্মোচনটি হলো আমার অফিসে। আমি আর মোশতাক আহমেদ ছাড়া কেউ নেই। আমি মোড়কটি উন্মোচন করলাম, তিনি আমার হাতে বইটি তুলে দিয়ে তক্ষুনি ছুটলেন ঢাকা। আমার জীবনে এর চাইতে বিচিত্র মোড়ক উন্মোচন আর কখনো হয়নি, মনে হয় আর কখনো হবে না। ২০১২ সালে এই বইটি যখন কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিল তখন আমার চাইতে বেশি খুশি মনে হয় আর কেউ হয়নি।
তিন.
আমি প্রতি বছরই ভাবি বইমেলার আগে আমি কয়েকজন নতুন লেখকের বই নিয়ে কিছু লিখব কিন্তু কখনো সেটি ঠিক করে করতে পারিনি। এই বছরেও সেটি করা হলো না কারণ মেলার আগে নতুন লেখকের বইগুলো খুঁজে পড়তে পারিনি। বইটি পড়া হয়নি কিন্তু বইমেলায় গিয়ে যে বইটি কিনব বলে ঠিক করে রেখেছি সেই বইটি নিয়ে দুয়েকটি লাইন অন্তত লিখি।
দুই বছর আগে একজন মা আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছিল। তার শিশু সন্তানটি কোনো একটি রক্তজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। অপ্রতিরোধ্য শোকে দিশাহারা হয়ে সেই মা শিশুটির শেষ কয়েকটি দিনের কথা লিখে আমাকে অনুরোধ করেছিল যদি সম্ভব হয় তাহলে আমি যেন এই ধরনের শিশুদের নিয়ে কিছু একটা লিখি। একজন লেখক যখন কোনো গল্প বা উপন্যাস লিখে সেটি পড়ে অনেক সময়েই আমরা ব্যাকুল হয়ে যাই, কখনো কখনো সেই কাল্পনিক চরিত্রের দুঃখ কষ্টে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু বইপড়া শেষ হলে আমরা চোখ মুছে হাসি মুখে নিজের কাজে ফিরে যাই কারণ আমরা জানি আমাদের দুঃখটা সত্যিকারের দুঃখ নয় কারণ চরিত্রগুলো কাল্পনিক।
কিন্তু একজন মা যখন তার শিশু সন্তানের জীবনের শেষ মুহূর্তের ঘটনাগুলো গভীর মমতা দিয়ে লিখে পাঠান সেটি পড়ে চোখ মুছে আবার হাসি মুখে নিজের কাজে ফিরে যাওয়া যায় না। কারণ চরিত্রগুলো কাল্পনিক নয়, তারা সত্যি। বুকের ভেতর কোথায় জানি ব্যথা টন টন করতে থাকে।
আমি এ রকম মৃত্যু পথযাত্রী কিন্তু প্রাণোচ্ছল হাসিখুশি একটি শিশুকে নিয়ে লিখতে পারব বলে মনে হয় না। তাই আমি ভাবছিলাম মা’টিকে চিঠি লিখে বলব তোমার এই অচিন্তনীয় কষ্টের কথাটুকু তুমি নিজেই কষ্ট করে লিখো। তোমার মতো অন্য যারা আছে তারা হয়তো তোমার লেখাটি থেকেই সান্ত¡না পাবে। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করার আগেই সেই কমবয়সী মা আমাকে লিখে জানালো সে বুকে পাথর বেঁধে কাহিনীটি লিখেছে। সে একা নয় তার মতো আরো যারা দুর্ভাগা মা রয়েছেন তারাও লিখেছেন। এই বইটি দিয়ে তারা এ রকম অসহায় মাদের সঙ্গে একটা যোগসূত্র তৈরি করতে চাইছে যেন শেষ মুহূর্তে তাদের সন্তানরা সত্যিকার চিকিৎসা পেতে পারে, সম্ভব হলে শিশুটিকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।
বইমেলায় গিয়ে আমি বইটি কিনব। বইটির নাম ‘ওরা নেই ওরা আছে’। শোকাতুর মায়ের নাম সায়মা সাফিজ সুমী। প্রকাশকের নাম সখী প্রকাশন।
চার.
এই বছর বইমেলায় গিয়ে আমি আরো একটি বই সংগ্রহ করব কিন্তু আমি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত সেই বইটি আমি নেড়েচেড়ে দেখব, চোখ বুলাবে কিন্তু পড়ার সাহস পাব না। বইটির নাম ‘বীরাঙ্গনা রচনা সমগ্র’, লেখিকার নাম সুরমা জাহিদ, প্রকাশকের নাম অন্বেষা। সুরমা জাহিদ এবারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এর চাইতে যথার্থ পুরস্কার আর কিছু হতে পারে কি না আমার জানা নেই।
সুরমা জাহিদের জন্ম ১৯৭০ সালে, একাত্তরে তিনি একজন অবোধ শিশু ছিলেন তারপরও একাত্তর সালের বীরাঙ্গনাদের জন্য তার ভেতরে এক ধরনের গভীর মমতা রয়েছে। সেই মমতা এবং ভালোবাসায় তিনি বীরাঙ্গানাদের নিয়ে সাতটি বই লিখেছেন। সেই বইগুলোকে সংকলিত করে পঞ্চান্নটি ভিন্ন ভিন্ন জেলার মোট ৩৬১ জন বীরাঙ্গনাকে নিয়ে ‘বীরাঙ্গনা রচনা সমগ্র’ বইটি দাঁড় করেছেন। একদিকে মানুষের নিষ্ঠুরতার অন্যদিকে নারীদের দুঃখ কষ্ট এবং বেদনার ইতিহাসের এর চাইতে বড় কোনো দলিল আছে বলে আমার জানা নেই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার আছে। সেখানে আমরা সুরমা জাহিদের বীরাঙ্গনাদের ওপর লেখা বইগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের যে কোনো ইতিহাস আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি কিন্তু তারপরও সুরমা জাহিদের লেখা এই বইগুলো আমি পড়তে পারি না। বুকের ভেতর এক ধরনের রক্তক্ষরণ হয়। তারপরও আমি হৃদয়ের রক্তক্ষরণের এই বইটি বইমেলা থেকে সংগ্রহ করব।
পাঁচ.
বইমেলা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি এবারে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে লিখি। সেটি হচ্ছে নতুন লেখক এবং তাদের প্রকাশিত বই। আমি মোটেও জানতাম না যে আমাদের বইমেলায় নতুন লেখকরা যে বই প্রকাশ করেন সেই বইগুলো তারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে ছাপান। বিষয়টি জানার পর আমি প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাকে জানিয়েছেন বইমেলায় প্রকাশিত শতকরা সত্তর থেকে আশি ভাগ বই না কি এরকম। নিজের পকেটের টাকায় ছাপানো বই। অন্যরা বলেছেন সংখ্যাটি নাকি আরো বড়।
যদি একজন লেখক নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কোনো একজন প্রকাশককে দিয়ে তার বই বের করেন তাহলে সেই প্রকাশককে ‘প্রকাশক’ বলা যাবে না, তাকে ‘মুদ্রক’ বা এই ধরনের কিছু বলতে হবে। প্রকাশক তিনি, যিনি কোনো একজন লেখক গবেষকের কাজটুকু নিজের দায়িত্বে পাঠকদের সামনে তুলে ধরবেন। সেই কাজটুকু করার জন্য তার যদি অর্থের প্রয়োজন হয় সেই অর্থটুকু প্রকাশকের নিজের জোগাড় করতে হবে। যদি প্রকাশকের সেই অর্থ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে প্রকাশনার বিষয়টি তার জন্য নয়- তাকে অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিতে হবে।
ঠিক একইভাবে নতুন লেখকের জন্যও বলতে হবে যদি কোনো লেখক নিজের পকেটের টাকা দিয়ে একটা বই প্রকাশ করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে তার বইটি এখনো প্রকাশের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। কেউ যদি সত্যি সত্যি লেখালেখি করতে চায় তাহলে তাকে কোনোভাবেই নিজের টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করা চলবে না। এটি এক ধরনের অসম্মান। একজন সত্যিকারের লেখক কোনোভাবেই নিজেকে অসম্মানিত করতে পারে না।
নতুন লেখকদের সব সময়েই বলতে শোনা যায় তারা নতুন লেখক বলে কেউ তাদের লেখা ছাপতে চায় না। এই অভিযোগটি অনেক পুরনো, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেটি মানতে রাজি ছিলেন না। তার বন্ধুদের বলেছিলেন অভিযোগটি সত্যি নয়, ভালো লেখা হলেই ছাপা হবে। শুধু তাই না বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে একেবারেই অপরিচিত নতুন লেখক হিসেবে তিনি ‘অতসী মামী’ নামে একটি গল্প লেখে সেই সময়কার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ম্যাগাজিন ছাপিয়েছিলেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো উদাহরণ আমাদের দেশেও অনেক আছে। সবচেয়ে বড় কথা- এখন যারা প্রতিষ্ঠিত লেখক তারা সবাই এক সময় নতুন লেখক ছিলেন, অপরিচিত লেখক ছিলেন। কাজেই নতুন লেখককে কেউ গুরুত্ব দেয় না সেই অভিযোগটি আমি শুনতে রাজি নই।
এখন ইন্টারনেট এবং ব্লুগ আছে, কাজেই নতুন লেখকরা সেখানে লেখালেখি করতে পারেন। সেখানে বুঝতে পারবেন তার লেখালেখি কতটুকু মানসম্মত হয়েছে। যদি লেখক হিসেবে তার একটা পরিচিতি হয় তখন প্রকাশকরা আনন্দের সঙ্গে তার বই ছাপাতে রাজি হবেন।
আমি মনে করি প্রতিষ্ঠিত লেখক, বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক তাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদের সব সময় ভালো তরুণ লেখকের খোঁজ করতে হবে। যদি কাউকে খুঁজে পান তাকে দশজনের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। বইমেলার আগেই যদি এই কাজটি করা যেত তাহলে আরো ভালো হতো। নতুন ভালো লেখকরা অনুপ্রেরণা পেতেন, উৎসাহ পেতেন।
আমাদের এত সুন্দর একটা বইমেলা সেটা শুধু বই ছাপানোর মাঝে আটকে থাকবে সেটা তো হতে পারে না, পাঠক প্রকাশক লেখক মিলে বইমেলায় সত্যিকারের যে উদ্দেশ্য সেটাকেও তো সত্যি করে তুলতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ০৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস |
e48f9fdf-9f2e-4a16-b4eb-d85b24b78117 | দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রিটেইল চেইন হিসেবে সম্প্রতি গ্লোবাল গ্যাপের সদস্যপদ লাভ করেছে ‘স্বপ্ন’। স্টোরে বিক্রি হওয়া মাছ-মাংসের নিরাপত্তা মানদণ্ড নিশ্চিত করায় এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সার্টিফিকেশন সংস্থা আলকিউমাসের কাছ থেকেও এইচএসিসিপি সনদ পায় দেশের সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইনটি। সম্প্রতি এসব নিয়ে কথা বলেছেন এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড তথা স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। বুয়েটে প্রকৌশল বিদ্যা পড়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে রিটেইলিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন তিনি। সম্প্রতি এমআইটি থেকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর পেয়েছেন আরেকটি সনদ। দেশে কাজ করেছেন বাটা সু, টেট্রাপ্যাক, অটবির মতো প্রতিষ্ঠানে। ২০১২ সালে স্বপ্নর দায়িত্ব নেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহফুজ উল্লাহ বাবু
সম্প্রতি আপনারা গ্লোবাল গ্যাপের সদস্যপদ পেয়েছেন। বিস্তারিত জানাবেন?
গ্লোবাল গ্যাপ একটি আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন সংস্থা। তারা বিশ্বজুড়ে নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে উৎসাহিত করে। ওয়ালমার্ট, হোলফুড, টেসকো, আলডির মতো রিটেইল চেইনগুলো তাদের সদস্য। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রিটেইল চেইন হিসেবে ‘স্বপ্ন’ তাদের নির্দেশিত মানদণ্ড অনুসরণ শুরু করে। এক মাস আগে গ্লোবাল গ্যাপের সিইওর কাছ থেকে আমরা সনদটি গ্রহণ করি।
গ্লোবাল গ্যাপ কৃষি উৎপাদনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নিশ্চয়তা চায়। প্রথমত. চাষাবাদে মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে না, দ্বিতীয়ত. কীটনাশকের ব্যবহার মাত্রা ছাড়াচ্ছে না। তৃতীয়ত. নির্দিষ্ট পিএইচআই (প্রি হারভেস্টিং ইন্টারভেল) মানা হচ্ছে। পিএইচআইয়ের বিষয়টি অনেকটা এ রকম— ধরুন, একটি বাগানে বা ক্ষেতে সর্বশেষ রাসায়নিক ব্যবহার করা হলো ১০ তারিখে। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলেন, ৭-১০ দিন অপেক্ষা করলে সে শাকসবজি বা ফলে রাসায়নিকের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। অর্থাৎ ২০ তারিখের আগে সেখান থেকে হারভেস্ট করা যাবে না। গ্লোবাল গ্যাপ তার অনুসারীদের এমন খুঁটিনাটি সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয় এবং তা মানা হচ্ছে কিনা সেগুলো পর্যালোচনা করে।
স্বপ্ন গ্লোবাল গ্যাপের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচির আওতায় দেশে এখন পর্যন্ত ৭৮ জন চাষীকে এ পদ্ধতির নিরাপদ চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। এর মধ্যে ২৫ জন কৃষক এরই মধ্যে স্বপ্নর আউটলেটগুলোয় তাদের কৃষিপণ্য সরবরাহ শুরু করেছেন। নিরাপদ এ কৃষিপণ্যগুলোর জন্য আমরা নতুন ব্র্যান্ড ‘শুদ্ধ’ চালু করেছি। সব কমপ্লায়েন্স মেনে উৎপাদন করতে গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফায়েড কৃষকদের খরচ অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়। আমাদের সচেতন ক্রেতারা সানন্দে সেটি পরিশোধ করছেন।
এইচএসিসিপি সার্টিফিকেশন সম্পর্কে জানাবেন?
নিশ্চয়ই। এ বিষয়গুলোয় জনসচেতনতা বাড়ানো খুবই দরকার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেকটি আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন সংস্থা আলকিউমাস। তারা খাদ্যপণ্যের বাইরেও অনেক কিছুর নিরাপত্তা মানদণ্ড নিয়ে কাজ করে। আমাদের বিভিন্ন স্টোরে বিক্রি হওয়া তাজা খাদ্যপণ্যের উৎস, সরবরাহ ব্যবস্থা, কোটা-বাছা, সংরক্ষণ ইত্যাদি প্রতিটি স্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা একটি স্বীকৃতি দিয়েছে, যার অর্থ আমাদের মাছ-মাংস এইচএসিসিপি মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের কাছ থেকে শিখে আমাদের নির্দিষ্ট টিম প্রতিদিন সব স্টোরে সংশ্লিষ্ট সব কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে।
এত বড় দেশে, এত বড় বাজারে মাত্র ২৫ জন কৃষকের সম্পৃক্ততা?
ঠিকই বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে হাতেগোনা কিছু মানুষ হয়তো নিরাপদ কৃষি ও খাদ্যপণ্য ভোগের সুযোগ পাচ্ছে। বাকিরা, আমরা প্রায় সবাই প্রতিদিন অনেক অনিরাপদ খাবারের সঙ্গে একটু একটু করে বিষ গ্রহণ করছি। ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন মরণব্যাধির বিস্তার বাড়ছে।
এ থেকে বাঁচার দুটি উপায় রয়েছে— প্রথমত. সনাতন পদ্ধতির অর্গানিক ফার্মিং, যেটি আবার সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যোৎপাদনে সক্ষম নয়। দ্বিতীয়টি হলো আধুনিক কৃষি। তবে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার শর্তগুলো পরিপালন করে। একটি ব্যাপক জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের রিটেইল চেইন হিসেবে আমরা দ্বিতীয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের স্টোরগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩৫ হাজার পরিবারের নিত্য কেনাকাটা হয়।
আমরা জানি, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা। এখন অবস্থা এমন হয়ে গেছে, আমাদের শুধু ‘খাদ্য’ বললে চলছে না। খাদ্য গ্রহণ অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন আমাদের বলা উচিত, বিশুদ্ধ খাদ্যই মানুষের সবচেয়ে বড় মৌলিক চাহিদা। ন্যায্যমূল্যে দেশের সব মানুষের মুখে বিশুদ্ধ খাবার তুলে দিতে হবে। দেখুন, আমাদের পরিবারের শিশুরা আজ যা খাচ্ছে, সেটিই তার আগামীর হেলথ প্রোফাইল গড়ে দিচ্ছে।
এটা ঠিক যে, এত মানুষের দেশে গ্লোবাল গ্যাপ প্রকল্পে মাত্র ২৫ জন কমপ্লায়েন্ট কৃষক কোনো সংখ্যাই নয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, এটি একটি শুভ সূচনা। ‘শুদ্ধ’ ব্র্যান্ডের জন্য আমরা দেশজুড়ে অন্তত এক হাজার গ্লোবাল গ্যাপ কমপ্লায়েন্ট কৃষকের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যাচ্ছি। তাহলে অন্তত আমাদের সব স্টোরে নিরাপদ কৃষিপণ্যগুলো পাঠানো যাবে। আশা করতেই পারি, এরপর একসময় হাজার থেকে লাখ হবে, লাখ থেকে মিলিয়ন হবে। দেশের অন্য বিপণনকারীরাও কমপ্লায়েন্ট কৃষি আর কৃষকদের খোঁজ করবেন।
গ্লোবাল গ্যাপের সিইওর সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাতে আমরা তাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে তারা আমাদের দেশে কয়েকশ গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফায়েড ট্রেইনার তৈরি করে দেয়। আমাদের পাইলট প্রকল্পের কৃষকদের প্রশিক্ষণে বিদেশী ট্রেইনার আনতে হয়েছিল। স্থানীয় প্রশিক্ষকরা সারা দেশের আনাচে-কানাচে কৃষকদের মধ্যে কাজ করলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাবে। উদ্যোগটি স্বপ্নর নেয়া হলেও এর সুফল প্রত্যেকেই পাবে। যে কৃষকরা গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফায়েড ফার্মিং করবেন, তারা বিশ্বের যেকোনো গ্লোবাল গ্যাপ মেম্বার রিটেইল স্টোরে সরাসরি রফতানি করার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
সাধারণ কৃষিপণ্য আর শুদ্ধ ব্র্যান্ডের পণ্যের দামের তফাত কেমন?
দামের কিছুটা পার্থক্য থাকবেই। নন কমপ্লায়েন্ট কৃষকের কাছ থেকে আসা সাধারণ যে পটোলগুলোর জন্য আপনি ৪০ টাকা দাম দিচ্ছেন, সেটি ‘শুদ্ধ’ হলে তার জন্য আর ১০ টাকা বেশি দেবেন না?
এটুকু বলতে পারি, স্টোরে আমরা শুদ্ধ কৃষিপণ্যের জন্য যে দামটুকু বেশি রাখছি, সেটি নেহাতই খরচের পার্থক্য। নিছক ব্র্যান্ডিং করে এখান থেকে অস্বাভাবিক মুনাফার কোনো পরিকল্পনা আমরা করিনি। আমাদের যে ক্রেতারা স্বপ্নর আউটলেটগুলোয় শুদ্ধ ব্র্যান্ডের পণ্য খোঁজেন, তারাও এমনটি বিশ্বাস করছেন বলেই আমার ধারণা।
আপনাদের স্টোরে ‘স্বপ্ন’ ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য দেখছি আমরা। এগুলো সম্পর্কে জানাবেন?
প্রাইভেট লেভেল ব্র্যান্ডিং নামে আমাদের একটি বিভাগ নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো ডেভেলপ করছে। মানই তাদের মূল এজেন্ডা। পাশাপাশি দামটা সবার নাগালে রাখারও একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে তারা। তাদের সাপোর্ট দেয়ার জন্য আমরা টিমে বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ, রসায়নবিদদের নিয়োগ দিচ্ছি।
‘স্বপ্ন’ ব্র্যান্ডের আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত পণ্য চালু হয়েছে। এর মধ্যে বেকারি ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, মসলাদি, কিচেন কেয়ার ও বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য অন্যতম। এক-দেড় বছরের মধ্যে আশা করছি স্বপ্ন ব্র্যান্ডের দুই শতাধিক পণ্য স্টোরগুলোয় পাওয়া যাবে।
বেকারি পণ্যগুলো পরখ করলেই আপনারা মানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ পাবেন। পাউরুটি বা বিস্কুটগুলো খালি পেটে খেলেও কোনো অস্বস্তিকর ঢেকুর আসবে না, পেটে গ্যাস হবে না। কারণ এগুলোয় সেরা মানের উপাদান ব্যবহার করা হয়। বিস্কুটে আমরা ভেজিটেবল অয়েল না দিয়ে মাখন ব্যবহার করি। এ কারণে দামটা একটু বেশি পড়ছে। তবে বাড়িতে আমাদের শিশুরাও নিরাপদে এগুলো খাচ্ছে।
আপনারা কি নিজেরা পণ্যগুলো উৎপাদন করছেন? না অন্যদের কাছ থেকে কিনছেন?
আমরা পরীক্ষিত থার্ড পার্টি দিয়ে কন্ট্রাক্ট প্রডাকশন করছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কঠোর স্পেসিফিকেশন, স্ট্যান্ডার্ড ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিশ্চিত করা হচ্ছে।
আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে এরই মধ্যে একাধিক কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তারা বিশ্বমানের কারখানা করেছেন। মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের টিম মেম্বারদের কাউকে না কাউকে আপনি সবসময়ই সেখানে পাবেন।
এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের ফিন্যান্সিয়াল আপডেট কী?
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরে স্বপ্নর বিক্রি ৩ শতাংশ বেড়ে ৯১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিপরীতে কস্ট অব গুডস সোল্ড ২ শতাংশ কমে বিক্রির ৭৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এক বছরের ব্যবধানে মোট মুনাফা (গ্রস প্রফিট+অন্যান্য আয়) ২৪ শতাংশ বেড়ে ২০৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গ্রস প্রফিট মার্জিন এখন ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। পরিচালন মুনাফা করা সম্ভব হয়নি। তবে পরিচালন ব্যয় বিক্রির ২৬ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখতে সক্ষম হয়েছি আমরা। সব মিলিয়ে পরিচালন লোকসান আগের বছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কমে ৩৭ কোটির ঘরে নেমে এসেছে, যা বিক্রির ৪ দশমিক ১ শতাংশ মাত্র। গেল হিসাব বছরে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ফিন্যান্সিয়াল কস্ট; এক বছরের ব্যবধানে যেটি ২৮ শতাংশ বেড়ে ৯২ কোটি টাকায় উঠে গেছে।
আমি আত্মবিশ্বাসী, খরচ নিয়ন্ত্রণ আর গ্রস মার্জিন বাড়িয়ে স্বপ্ন পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে দ্রুতই পরিচালন মুনাফার স্থায়ী ধারায় চলে আসবে। এরপর শুধু ফিন্যান্সিয়াল কস্টটুকু অ্যাড্রেস করলেই চলবে। আমি মনে করি, ফিন্যান্সিয়াল রিস্ট্রাকচারিংই এর সবচেয়ে ভালো উপায়।
ফিন্যান্সিয়াল রিস্ট্রাকচারিং নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা হয়েছে কি? হলে সেটি শেয়ার করবেন?
সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে মূল কোম্পানির পর্ষদ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছে। বিভিন্ন বিদেশী গ্রুপ স্বপ্নর অংশীদার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এর মধ্যে ইউরোপীয় একটি রিটেইল জায়ান্টের সঙ্গে যোগযোগ তাত্পর্যপূর্ণ। আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার মতো কোনো কংক্রিট আপডেট এখনো আমার হাতে আসেনি। সূত্র-বণিক বার্তা।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৬৫০ ঘণ্টা, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিএস |
d9d0c494-56ac-4b86-a958-9390b2683ca9 | আবারও তীরে এসে তরী ডুবলো। আবারও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল হলো বাংলাদেশ। সব হচ্ছে, শুধু শিরোপাটাই অধরা থেকে যাচ্ছে। এ নিয়ে ৬টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে পুড়তে হলো স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। তীরে এসে তরী ডোবাটা ঠিক আছে। কিন্তু এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে স্বপ্নভঙ্গের বেদনার কথাটা ঠিক যায় না। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, এশিয়া কাপের শুরুতে কেউ কি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে? তাই বাংলাদেশের অর্জন অন্তত আমার স্বপ্নের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। একটা সময় ছিল আমরা সম্মানজনক পরাজয়ের জন্য খেলতাম। সেদিন অনেক আগেই ইতিহাস হয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ যেই হোক, এখন আমরা সব ম্যাচ জেতার জন্য খেলি। তবুও এশিয়া কাপের ফাইনালে আমাদের ছেলেরা যা করেছে, তা আমাদের গর্বিত করে। এমন পরাজয়ে যে কেউ গর্ব করবে। তীরে এসে তরী ডুবেছে। কিন্তু সে জন্য উজান ঢেলে তরীকে তীর পর্যন্ত আনতে তো হয়েছে।
উজান ঢেলে কেন? কারণ বাংলাদেশের ঘোষিত প্রতিপক্ষ ভারত হলেও আসলে বাংলাদেশকে লড়তে হয়েছে ইনজুরি, ফিটনেস, গরম, ভেন্যু, শ্রান্তি, আইসিসি, এসিসি, থার্ড আম্পায়ারের বিরুদ্ধেও।
আপনারা বলতে পারেন ভেন্যু, গরম, শ্রান্তি এগুলো তো অজুহাত; ভারতেরও নিশ্চয়ই এই সমস্যা হয়নি। না হয়নি, হলেও কম হয়েছে। টুর্নামেন্টের ফিকশ্চারটা একটু দেখে আসুন, তাহলেই বুঝবেন আমাদের আসল লড়াইটা কোথায়। গ্রুপ, সুপার ফোর ও ফাইনাল মিলে ভারত ৬টি ম্যাচ খেলেছে। ৬টিই দুবাইয়ে। ভাববেন না এটা কাকতালীয়। ভারতীয় দলের আবদারেই এটা করা হয়েছে।
গ্রুপের ম্যাচ দুটি দুবাইতেই হবে এটা ভারত নিশ্চিত করতে পেরেছিল আগেই। দুবাই পৌছে তারা জানিয়ে দিল, তারা দুবাইয়ের বাইরে যাবে না। তাদের আবদার মেটাতে গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ হওয়ার আগেই সুপার ফোরের ফিকশ্চার চূড়ান্ত হয়ে যায়। চূড়ান্ত মানে ভারতের ম্যাচগুলো সব দুবাইয়ে রেখে বাকি দলগুলোর নাম বসানো হয়েছে। আর ভারতের এই অন্যায় আবদার মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশকে ৩টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে আবুধাবিতে। পার্থক্যটা ধরতে পারছেন? দুবাই আর আবুধাবীর দূরত্ব দেড় থেকে দুই ঘণ্টার ড্রাইভ। এই তীব্র গরমে খেলার দিন প্রায় চার ঘণ্টা রাস্তায় থাকলে যে কোনো মানুষের জীবনীশক্তি ফুরিয়ে যায়। বিশেষ করে প্রতিবার খেলা শেষে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে রুমে ফিরতে হয়েছে গভীর রাতে।
ফাইনালের আগে দুই দলের ম্যাচ দেখুন। ভারত ২৫ তারিখে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপ্রয়োজনীয় ম্যাচে টাই করে হাওয়া লাগিয়ে দুবাইয়ে ঘুরে বেরাচ্ছিল। আর বাংলাদেশকে ২৬ তারিখ আবুধাবিতে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমিফাইনালে জীবন মরণ লড়াই করতে হয়েছে। সেখান থেকে দুবাইয়ের হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত চারটা। ক্লান্ত-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে একদিন পরেই ফাইনাল খেলতে নামতে হয়েছে ফুরফুরে, তরতাজা ভারতের বিপক্ষে। সবাই তো মানুষ, রোবট নয়। এটা কেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো?
বলছিলাম প্রতিপক্ষ আইসিসি, এসিসির কথা। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হারাতে ভারতের অন্তত দুবার আম্পায়ারের সাহায্য লেগেছিল। ভারত বড় দেশ। ক্রিকেট বাণিজ্যের ঘরবসতি সেখানে, তাই নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতেই। ভারত যা বলে, যেভাবে বলে; তাই শুনতে হয় আয়োজকদের। আসলে এত নাটক না করে আইসিসি বা এসিসি ভারতকে আগাম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেই পারে।
এবারও ফাইনালে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি হলো। ওপেনার লিটন দাস দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বড় সংগ্রহের দিকে। তাকে কোনোভাবে ঠেকাতে না পেরে থার্ড আম্পায়ার রড টাকারের কাছে হাত পাতলো ভারত। আর ভারত কিছু চাইলে না করার সাধ্য ক্রিকেট বিশ্বে কারো নেই। স্ট্যাম্পিংএর আবেদনটি অনেকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলেন, জুম করে দেখলেন থার্ড আম্পায়ার। তার মানে তার ডাউট ছিল। আর ডাউট থাকলে বেনিফিট ব্যাটসম্যান পাবে, এটা ক্রিকেটের আদি কথা। আমার ধারণা রড টাকার চক্ষুলজ্জার কারণে এতবার দেখেছেন। আউট দিতে হবে, এটা পূর্ব নির্ধারিত। লিটন দাসের আউটের পর ক্রিকেটে আর বেনিফিট অব ডাউট বলে কোনো টার্ম রাখা উচিত নয়। এখন থেকে বলতে হবে, কোনো ডাউট থাকলে বেনিফিট সবসময় ভারত পাবে।
যদিও ভারতের ব্যাটসম্যান সঞ্জয় মাঞ্জরেকারও মনে করেন এই বেনিফিটটা লিটনেরই পাওয়া উচিত ছিল। সেখানেই তো খেলা শেষ। লিটন থাকলে রান ২৬০/২৭০ হতে পারতো। তাহলে আর ভারত দৌড়ে পারতো না। অবশ্য লিটন আর মিরাজের প্রায় ৬ গড়ে ১২০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ দেখে তো ৩০০ রানও অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ করতে পেরেছিল মাত্র ২২২। কিন্তু এই স্বল্প পুজি নিয়ে শেষ বল পর্যন্ত লড়তে পারে শুধু বীরেরাই। সেই বীর বাঙালির প্রতি নতমস্তক কুর্নিশ আর হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা।
অবশ্য এই ২২২এ আটকে যাওয়ার দায় পুরোটা রড টাকারের ওপর দিলে অন্যায় হবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদেরও নিতে হবে। যেদিন আমাদের টপ অর্ডার কলাপ্স করে, সেদিন মিডল অর্ডার বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু ওপেনিং ভালো হলে মিডল অর্ডারকে ব্লু হোয়েল গেমসে মাততে হবে কেন? সন্দেহ নেই এবারের টুর্নামেন্টের বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। রিয়াদও সবসময় নির্ভরতার প্রতীক। মুশফিককে খেলার মাঝপথে নেমেই ছক্কা মারতে যেতে হবে। এটাকে আত্মহত্যা ছাড়া আর কী বলা যায়? আর রিয়াদ সবসময় ভায়রা ভাইকে অনুসরণ করেন। এই দুজনের ছক্কা মারার চেষ্টা আগেও আমাদের হতাশায় পুড়িয়েছে। এটা ঠিক দুজনের ছক্কা হলে বাংলাদেশ ঠিকই ৩০০এর বন্দরে নোঙ্গর করতো। তবে মুশফিক আউট হয়েছেন ২৭তম ওভারে, আর রিয়াদ ৩৩তম। ছক্কা মারার জন্য প্রচুর সময় ছিল হাতে। তবুও সব ম্যাচ তো আর মুশফিক-রিয়াদ জেতাবেন না।
২২২ ডিফেন্ড করার মত বোলিং শক্তি বাংলাদেশের ছিল না। তবুও যে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছে, সেটা যে কাউকে গর্বিত করবে। এমন পরাজয়ে চোখে পানি আসে, কিন্তু মন খারাপ হয় না। মাশরাফি বলেছেন, তারা হৃদয় দিয়ে খেলেছেন। তাতেই এশিয়া কাপ জিততে পারেনি তো কী হয়েছে, মাশরাফিরা কোটি মানুষের হৃদয় জিতে নিয়েছে।
ফাইনালে পরাজয়কেও এত মহিমমান্বিত করছি কেউ কেউ অবাক হতে পারেন। তবে যারা শুরু থেকে এশিয়া কাপ ফলো করছেন, তারা আশা করি একটুও অবাক হবেন না। এবার বাংলাদেশ এশিয়া কাপে গিয়েছিল দুর্ভাগ্যকে সঙ্গী করে। আনফিট সাকিবকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আরব আমিরাতে। দেশের কথা ভেবে তিনি গিয়েছিলেনও। কিন্তু তার ফল ভালো হয়নি। বাংলাদেশ অধিনায়ক যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে মহা গুরুত্বপূর্ণ অঘোষিত সেমিফাইনালে টস করতে নেমেছিলেন, সাকিব তখন দেশে ফেরার বিমান ধরতে ছুটছেন।
সাকিবের নিউইয়র্কে যাওয়ার কথা ছিল আঙ্গুলের অপারেশনের জন্য। কিন্তু অবস্থা এতটাই থারাপ ছিল, তাকে ঢাকার অ্যাপোলোতেই ভর্তি হতে হয়। ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে যখন শুনি আরেকটু দেরি হলেই সাকিবের মহামূল্যবান হাতটাই ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারতো। সাকিব কিন্তু যেতে চাননি। অতীত আচরণের কারণে হয়তো সাকিবের কথা বোর্ড বিশ্বাস করেনি বা সাকিব অভিমান থেকে তাদের ভুল ভাঙ্গাতে চাননি।
এশিয়া কাপ অবশ্যই গুরুত্বপুর্ণ টুর্নামেন্ট। কিন্তু তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাকিবের সুস্থতা। ব্যথা নিয়ে খেলতে নামায় তার আঙ্গুলের বা হাতের বড় কোনো ক্ষতি হতে পারতো। সোনার ডিম পাড়া হাসটাকে যেন লোভে পড়ে জবাই করে না ফেলি। প্রথম ম্যাচের শুরুতেই আঙ্গুলে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তামিমকে। শেষে নেমে এক হাতে এক বল ঠেকিয়ে ঢুকে গেছেন ক্রিকেট রূপকথায়।
তামিমের বীরত্বগাঁথাকে জয়ে পরিণত করেন মুশফিক। দলকে অপ্রতিরোধ্য মনোবল দিয়ে তামিমকেও ফিরে আসতে হয় দেশে। প্রথম ম্যাচের নায়ক মুশফিক খেলতে নেমেছিলেন পেইনকিলার খেয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও জয়ের নায়ক সেই মুশফিক। তবে সেদিনও তিনি পুরো ফিট ছিলেন না।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙ্গুলে ব্যথা পেয়েছেন সবার অনুপ্রেরণা মাশরাফি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারের নায়ক মুস্তাফিজও পুরো ওভার বল করার মত ফিট ছিলেন না। এতগুলো প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই বাংলাদেশকে ফাইনালে যেতে হয়েছে। ফাইনাল খেলতে হয়েছে তিনজন ম্যাচ উইনার ছাড়া। তামিম তো আছেনই, সাকিব মানেই তো সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা বোলার। আর এই তিনজনের অভাব আমরা ফিল করেছি হাড়ে হাড়ে।
সাকিব না থাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হয়েছে ৪ জন বোলার নিয়ে। ফাইনালে নাটকীয় শেষ ওভার করতে হয়েছে পার্টটাইম বোলার রিয়াদকে।
আমার আফসোস আরো কম। কারণ প্রথম ম্যাচে তামিম যে বীরত্বগাঁথা রচনা করে গেছেন, তাতে তখনই বলেছিলাম, এই টুর্নামেন্ট থেকে আমার আর কিছু চাইবার নেই। আমি সেদিনই এশিয়া কাপ জয়ের আনন্দ পেয়েছি। তামিম যেন সুকান্তের কবিতা মাঠে অনুবাদ করেছেন- ‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’।
ফাইনালের আগের দিন ঠিক এই কথাটাই বলেছেন মাশরাফি, ‘তামিম যখন ভাঙা আঙুল নিয়ে মাঠে নেমেছে, তখনই আমি এশিয়া কাপ জিতে গেছি।’ একদম একমত। এ কারণেই আমার দুঃখ নেই। এমন একটি ভাঙাচোরা দল নিয়ে মাশরাফি যে শেষ বল পর্যন্ত লড়েছেন, এটা কেবল মাশরাফি বলেই সম্ভব।
সাকিব-তামিম ছাড়াই ভারতের নাকের পানি, চোখের পানি এক করে ফেলতে পারা অবশ্যই গৌরবের। তার মানে আমাদের সামর্থ্যের সীমা আরো অনেকদূর। এশিয়া কাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন প্রস্তুত হতে হবে বিশ্বকাপের জন্য। আরো বড় অর্জনের হাতছানি সামনে। সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফির হাতে একটা ট্রফি না থাকলে সেটা ক্রিকেটের প্রতিই অবিচার হবে।
প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ। |
509b0573-302e-4145-ad89-b4bc4215a5c2 | আমরা একটা কথা জানি এবং মানি ইংরেজি ‘মানি’ মানে টাকা, আর বাংলায় ‘মানী’ মানে সম্মানসম্পন্ন মানুষ। কিন্তু আজকাল ওই ইংরেজি ‘মানি’ই হয়ে উঠেছে বাংলায় ‘মানী’ হয়ে ওঠার মূল। কিন্তু ‘মানি’ নয় ‘মানী’ হয়ে সমাজের যোগ্য অবস্থানে সবাই পৌঁছাক এটাই কিন্তু আমরা চাই। সে জন্যেই বলে, ‘ধনে নয়, মানে নয়, খ্যাতিতেও নয়, কর্মেই পাই মানুষের পরিচয়’। কারণ অর্থই হচ্ছে এক অর্থে অনর্থের মূল। কার চরিত্র কেমন, কার মেধা কতটুকু আর কার কত টাকা তা কিন্তু চেহারা দেখে বোঝা যায় না। আচার-আচরণই বলে দেয় কে কোন প্রকৃতির।
আকার-আকৃতির ওপরও কিন্তু এ প্রকৃতি নির্ভর করে না। আমরা অনেক সময়ই নির্বোধকে গরু-ছাগল-গাধা, চালাককে শিয়াল পণ্ডিত, অস্থিরতাকে বানরের সঙ্গে তুলনা করি। এভাবে মানুষের নানা ক্রিয়া-কর্মের সঙ্গে প্রাণীর তুলনা করলেও, জানি এরা উপকারী প্রাণী। এদের কারও কারও মধ্যে কিন্তু শিল্পবোধও আছে। দেশি-বিদেশি অনেক সাফারি পার্ক, ইকোপার্ক, সার্কাসে গেলে আমরা দেখতে পাই কী অসাধারণ ভঙ্গিতে এসব প্রাণী চমৎকার সব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। হাতি, বাঘ, ভালুুক, ঘোড়া এসব প্রাণী তো সার্কাসের মূল আকর্ষণ। বলা যায় মহাতারকা। দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে এসব প্রদর্শনী উপভোগ করেন। ইত্যাদিতে আমরা বিভিন্ন সময় এসব পশুপাখির চরিত্র তুলে ধরে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি। নানা-নাতির কথাই ধরা যাক।
একবার নানার সঙ্গে চিড়িয়াখানায় গিয়ে বিভিন্ন পশুপাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে নাতি পশুপাখি সম্পর্কে নানাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। যেমন জিরাফের খাঁচার সামনে এসে হঠাৎ প্রশ্ন করে,- ‘আচ্ছা নানা কও তো জিরাফের গলাটা এত লম্বা কেন?’
নানা ধমক দিয়ে ওঠেন,- ‘তাতে তোর অসুবিধা কি’?
কোনো অসুবিধা নাই। তবে বলছিলাম কি, জিরাফের গলাটা লম্বা ঠিকই কিন্তু কোনো গলাবাজি নাই।
এরা কি আর মানুষ যে গলাবাজি করবে?
এইটাই তো চিন্তা করতাছি, মানুষ এতটুক একটা গলা লইয়া কী পরিমাণ গলাবাজি করে আর তাগো গলা যদি জিরাফের মতো লম্বা হইতো তাইলে অবস্থাটা কী হইতো চিন্তা করছো?
‘আমি এতো চিন্তা করতে পারুম না, চল।’ নানা বিরক্ত হয়ে নাতিকে টেনে নিয়ে বাঘের খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বাঘ দেখিয়ে নানা বলেন, ‘দেখছোস এইডা হইলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর ঐডা হইলো সিংহের খাঁচা- দুইটাই খুব তেজি আর হিংস্র প্রাণী। সেই জন্য ওগো খাঁচাটাও খুব মজবুত কইরা বানাইছে।’
‘কিন্তু নানা এরা কি মানুষের চাইতেও হিংস্র?’ নাতির প্রশ্ন
কিয়ের লগে কিয়ের তুলনা। আরে মাইনষের কি এত বড় বড় দাঁত আর নখ আছে?
তা নাই কিন্তু এই বাঘ-সিংহ শুনছি ক্ষিধা না লাগলে শিকার করে না। কিন্তু পত্রপত্রিকায় যে এত কোপাকুপি আর খুনাখুনির খবর দেহ তা কি বাঘ-সিংহে করে না মাইনষে করে? তুমিই কও তো কারা বেশি হিংস্র?
নাতির প্রশ্ন শুনে নানা আবার ধমক দিয়ে ওঠেন, ‘আহ্হারে হঠাৎ এই খুনখারাপি লইয়া কী শুরু করলি? চল তো চল-’
নানা-নাতি এবারে গণ্ডারের খাঁচার সামনে যায়। গণ্ডার দেখিয়ে নাতির প্রশ্ন,-
আচ্ছা নানা গণ্ডারের চামড়া বলে মোটা?
‘হঃ’। নানা নাতির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে।
কিন্তু আমাগো দেশে অনেক মানুষ আছে হেগো চামড়াতো গণ্ডারের চাইতেও মোটা। গণ্ডারের তো খবর হইতে কয়েক দিন লাগে কিন্তু ঐসব মাইনষেরে তো বছর বছর ধইরা কইলেও হুঁশ হয় না। তারপর এই যে রাস্তাঘাটের কথাই ধর। নিয়ম মাইনা পথচলার ব্যাপারে চালক আর পথচারীগো কতভাবে বলা হইতাছে, তারা কি নিয়ম মানতেছে? মানতেছে না। তাগো কী কইবা? নাতির কথায় নানা কোনো উত্তর খুঁজে পান না। বিব্রতবোধ করেন।
‘বুঝছি তোরে লইয়া আর ঘোরা যাইবো না, চল’। এবার নানা বেশ রেগেই নাতিকে টেনে-হিঁচড়ে চিড়িয়াখানা থেকে বের করে নিয়ে যান।
শুধু নানা-নাতিই নয়, পশুপাখি নিয়ে উপদেশ দিতে গিয়ে একবার এক শিক্ষকই বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণিবিদ্যায় পড়াশোনা করেছেন ওই শিক্ষক। শিক্ষকতাও করছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। তাই ক্লাসে পড়ালেখা করার পাশাপাশি সবাইকে প্রাণিজগৎ সম্পর্কে সচেতন করা বিশেষ করে কোন প্রাণী বা পশুর কী নাম, কোন প্রাণী প্রকৃতিতে কী কাজে লাগে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের অবদান, পশু হত্যা বন্ধ, বন্দীদশা থেকে পাখি মুক্ত করা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পশুপাখির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিয়মিত উপদেশও দেন। সেই উপদেশই আবার নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, নানা জনে-নানা মনে, নানা খানে, নানা কানে, নানান অর্থ বা অনর্থ ঘটায়। যেমনটি ঘটেছে এই শিক্ষকের ক্ষেত্রেও। একদিন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ সেখানে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আগমন। ঢুকেই তিনি শিক্ষককে প্রশ্ন করলেন,-‘মাস্টার সাহেব আজ কী পড়াচ্ছেন?’
হঠাৎ প্রধান শিক্ষককে এভাবে শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে দেখে অবাক হলেন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের সামনে প্রশ্ন করায়ও কিছুটা বিব্রতবোধ করছিলেন। তারপর বিনয়ের সঙ্গে জবাব দিলেন,-‘ওদের ক্লাসের পড়া শেষ। তাই আমি অন্য বিষয় নিয়ে-বিশেষ করে চারিত্রিক উৎকর্ষতা, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, অসততা দূর এসব বিষয় নিয়ে একটু কথা বলছিলাম।’
সেটা ভালো কিন্তু আমি রিপোর্ট পেলাম আপনি নাকি বিভিন্ন পশুপাখির উদাহরণ দিয়ে ওদের উপদেশ দেন।
জী স্যার।
এটা তো ঠিক নয়।
আপনি কি শুনেছেন জানি না-তবে আমি ওদের চরিত্র গঠনের জন্য যে কথাগুলো বলি সেটা খারাপ নয়। আপনি অনুমতি দিলে একটু বলি শোনেন-
বলেন-
আমি এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বিড়াল যেমন অতি সন্তর্পণে ইঁদুর ধরে আমি ওদেরকে তেমনি কৌশলে জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বলি। আমি ওদের জীবনের সমস্যা লাঘবে বাঘের মতো গর্জে উঠতে বলি। সিংহের মতো সাহসী হতে বলি। অশ্বের মতো বেগবান হতে বলি। উটের মতো কষ্টসহিষ্ণু হতে বলি। পিঁপড়ার মতো পরিশ্রমী হতে বলি। গরুর মতো পরোপকারী হতে বলি। একাগ্রচিত্ত হতে বলি বকের মতো। একতাবদ্ধ হতে বলি কাঁচকি মাছের মতো আর সঞ্চয়ী হতে বলি মৌমাছির মতো।
প্রধান শিক্ষক দ্বিমত করে বললেন,-‘আপনি যাই বলেন এটা ঠিক মানতে পারছি না। মানুষের আচরণ দিয়েও তো এসব নৈতিকতার উদাহরণ আপনি দিতে পারেন?’
শিক্ষক বললেন, ‘হ্যাঁ দেই-বলি মানুষ মাত্রই ভুল করে।’
প্রধান শিক্ষক তখন বলে ওঠেন,-‘কেন? বিদ্যাসাগরের মতো মাতৃভক্ত হও, হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মতো দানশীল হও, মাদার তেরেসার মতো মানুষের সেবা কর-এসবও তো বলতে পারেন?’
শিক্ষকের উত্তর,-‘পারি স্যার কিন্তু এখনকার মাতৃভক্তি তো মাকে বৃদ্ধ বয়সে ওল্ডহোমে রেখে আসা, দান করা হচ্ছে টিভি ক্যামেরার সামনে ছবি তোলার জন্য, আর মানবসেবার নামে তো আত্মসেবাই করে প্রায় সবাই। স্যার উদাহরণ দেওয়ার মতো মানুষের সংখ্যা ইদানীং খুবই কম। মানুষের মান যে কীসের সমান সেটাই বুঝতে পারি না।
সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা পড়ে এসেছি, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’, পড়েছি-‘সবার উপরে মানুষ সত্য’, জেনেছি-‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের হাতেই জগতের কল্যাণের ভার’, গান হিসেবে শুনেছি, ‘মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য’, কিন্তু সব ভুলে আর্থ-সামাজিক কারণে সেই মানুষই আজ হয়ে পড়েছে স্বার্থপর। আত্মস্বার্থ, ব্যক্তি লোভ কেড়ে নিয়েছে মানুষের মানবিক গুণ-মানব জন্মের শ্রেষ্ঠত্ব-সার্থকতা কিন্তু আশার কথা হলো মানব সত্তা ও মানবিক গুণের কখনই মৃত্যু হয় না।
অনেক জাগতিক স্বার্থের নিচে তা চাপা পড়ে থাকলেও তাকে জাগিয়ে তোলা যায়। মহানুভূতি ও সহানুভূতিতে জেগে উঠতে পারে মানুষ, নিজেকে করতে পারে মানবসেবায় উৎসর্গ। আর তবেই তো সে মানুষ।
প্রসঙ্গক্রমে ছোটবেলায় পড়া আর একটি কবিতার কথা উল্লেখ করে শেষ করব এই লেখা, যার বিষয়বস্তু ছিল-‘যেদিন তুমি পৃথিবীতে এসেছিলে, সেদিন তুমি একাই কেঁদেছিলে আর সবাই হেসেছিল আনন্দে। জগতে এমন কাজ করতে হবে-যাতে তুমি হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করতে পার আর সবাই তোমার মৃত্যুতে তোমার জন্য শোকে আকুল হয়ে কাঁদে’। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নকর্মী। |
482c2bf6-102b-4b64-bd89-2fb64375edd4 | নির্বাচন আসছে, তাই রাজনৈতিক দলগুলো এখন অনেক খাটাখাটুনি করে তাদের দলের নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করবে। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই নির্বাচনি ইশতেহারে আমি দেখতে চাই এরকম দশটি বিষয়ের কথা বলতে, তাহলে আমার তালিকাটি হবে এ রকম:
১। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ: সবার আগে আমি চাইবো, সব রাজনৈতিক দল যেন তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে খুবই স্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলে। এই দেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের কথা বলে রাজাকার কমান্ডারদের একবার ক্ষমতায় আসতে দেখে আমি ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ’ কথাটির ব্যাপারে অনেক স্পর্শকাতর হয়ে গেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মুখ থেকে এই কথাটি খুব স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হতে না শুনলে আমি স্বস্তি অনুভব করি না। একাত্তর সালে আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি যারা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার, তারাই একদিন এই দেশের মন্ত্রী হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে আর কখনও যেন এ রকম কিছু ঘটতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ে তোলা হবে বলা হলে আসলে অনেক কিছু বলা হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝে যাই, আমরা সব ধর্ম, সব বর্ণ, সমাজের সব স্তরের মানুষকে নিয়ে একটা আধুনিক দেশ গড়ে তোলার কথা বলছি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাই, আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক দেশের কথা বলছি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি। সেজন্য এই তালিকার প্রথম বিষয়টি সবসময়েই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ।
২। বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় কোনটি জিজ্ঞেস করা হলে অনেক ঘটনার কথা উঠে আসবে, যার একটি হচ্ছে ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম নির্বাসন দেওয়া। ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়ে গেছে কিন্তু তার স্মৃতিটুকুও যেন এই দেশে না থাকে, তার জন্যে সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে। রেডিও টেলিভিশনে তার নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বড় হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কথা না জেনেই। অথচ এই মানুষটি ও বাংলাদেশ আসলে সমার্থক। আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধু এই দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদি তার জন্ম না হতো, আমরা সম্ভবত বাংলাদেশটিকে পেতাম না। বেঁচে থাকতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, কিন্তু এখন তিনি আর কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, সারা বাংলাদেশের সব মানুষের নেতা।
কাজেই আমি চাই, এই দেশের সব রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্বীকার করবে। অকৃতজ্ঞ মানুষকে আমরা ঘেন্না করি, তার থেকে শত হাত দূরে থাকি। ঠিক একই কারণে অকৃতজ্ঞ রাজনৈতিক দলের জন্যে সেটা অন্যরকম হবে কেন? তাদের কাছে অন্যেরা কে কী আশা করে আমি জানি না, ব্যক্তিগতভাবে আমি অকৃতজ্ঞ রাজনৈতিক দলের কাছে কিছুই আশা করতে পারি না।
৩। অসাম্প্রদায়িক: বাংলাদেশ গত দশ বছরে অনেক অগ্রসর হয়েছে। সংখ্যা দিয়ে বিচার করতে চাইলে বলা যায় জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ, মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১৭৫২ ডলার, দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ২২ শতাংশ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তৈরি করা পদ্মা ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে গেছে ৬০ শতাংশ। বিদেশি পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা দেখানোর জন্য খুবই ব্যস্ত, তারা প্রায় সময়েই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের রগরগে চটুল তথ্য দিয়ে হেড লাইন করে থাকে। সে রকম একটি সাপ্তাহিকী দ্য ইকনোমিস্ট পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অবশ্যই দেশের উন্নয়ন দেখে সবাই খুশি। আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, চাইলেই অনেক দ্রুত দেশকে উন্নত করে ফেলতে পারবো।
কিন্তু আমাদের সমস্ত আনন্দ ও উৎসাহ মাঝে মাঝেই ছোট একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা দেখে পুরোপুরি ম্লান হয়ে যায়। যত সময় যাবে, আমাদের হৃদয়ের প্রসারতা তত বাড়ার কথা, আমাদের তত উদার হওয়ার কথা। কিন্তু যখন দেখি, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কমেনি বরং বেড়েছে, তখন আমরা খুবই অসহায় বোধ করি। আমি সবসময়েই বলে এসেছি, একটা দেশ ভালো চলছে না খারাপ চলছে, সেটি জানার জন্য বড় বড় গবেষণা করতে হয় না। সেমিনার কিংবা গোল টেবিল বৈঠক করতে হয় না। দেশের একজন সংখ্যা লঘু কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয়। তারা যদি বলে, দেশটি ভালো চলছে, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি আসলেই ভালো চলছে। যদি তারা প্রশ্নের উত্তর ‘না’ দিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি ভালো চলছে না। এই দেশে এখনও মানুষে মানুষে বিভাজন রয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগে আমি দলিত শিশুদের একটি সমাবেশে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি ফুটফুটে শিশুদের কাছে শুনেছিলাম, তারা সেই এলাকায় অস্পৃশ্য। পানি খাওয়ার জন্য একটা গ্লাসকে পর্যন্ত তারা স্পর্শ করতে পারে না।
কাজেই আমি চাইবো, নির্বাচনি ইশতেহারে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে, দেশের সব মানুষের ভেতর থেকে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা দূর করে সবাইকে নিয়ে আধুনিক একটা বাংলাদেশ তৈরি করা হবে।
৪। নারী-পুরুষ সমতা: আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি কী,আমি সব সময়েই তার উত্তরে বলে থাকি যে, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, এখানে সবক্ষেত্রে ছেলেরা এবং মেয়েরা সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলগুলোয় বরং মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের লেখাপড়ার মান ভালো। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যখন বইপড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, সেখানে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক মেয়েদের খেলাতেও মেয়েরা অনেক ভালো করছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে দেখা যায়, ছেলেদের সংখ্যা থেকে মেয়েদের সংখ্যা কম। কারণ তখন বাবা-মায়েদের ধারণা হয় ভালো একটা পাত্র দেখে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলা দরকার। মেয়েরা যে শুধু লেখাপড়ার সব জায়গায় আছে তা নয়, গার্মেন্টস শ্রমিক প্রায় সবাই মেয়ে এবং তারা আমাদের অর্থনীতিটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে ক্যারিয়ার বলে একটা নিষ্ঠুর শব্দ আছে। যেকোনও পর্যায়েই এই ক্যারিয়ারের প্রতিযোগিতায় পুরুষের কাছে মেয়েরা হেরে যায়। কারণ, যখন ক্যারিয়ার গড়ার সময়, সেটি সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়, সন্তানকে বড় করার সময়। পুরুষ মানুষ অনেক কিছু করতে পারলেও সন্তান জন্ম দিতে পারে না। সন্তানের মা হতে পারে না।
কাজেই রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে নারীদের এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। যেখানে মেয়েরা কাজ করে, সেখানে চমৎকার ডে কেয়ার গড়ে তুলতে পারে। সেটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিই হোক আর বিশ্ববিদ্যালয়ই হোক। যদি মায়েরা জানে তার শিশু সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার একটা জায়গা আছে, তাহলে তাদের জীবনটাই অন্যরকম হয়ে যেতে পারে। নির্বাচনকালীন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে একটা শব্দ খুবই জনপ্রিয় হয়েছে, তাহলে পুরুষ ও নারীর ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ব্যাপারে কেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না? মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার বেলায় বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। তাহলে মায়েদের কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার বেলায় আমাদের দেশ কেন এগিয়ে থাকবে না?
কাজেই নির্বাচনি ইশতেহারে আমি নারী পুরুষের মাঝে সমতা আনার জন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝ থেকে এরকম একটি অঙ্গীকার দেখতে চাই।
৫। জ্ঞানভিত্তিক দেশ: প্রথম যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছিল, তখন অনেকেই ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়েছিল এবং বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি। কিন্তু এখন মোটামুটি সবাই বিষয়টা গ্রহণ করেছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে উদ্যোগ নেওয়ার কারণে অনেক কিছু ঘটেছে, যেটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঘটা সম্ভব ছিল না। যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হয়, তখন দেশের মানুষের কথা আলাদাভাবে বলা হয় না,কিন্তু যদি এর পরের ধাপ হিসেবে আমরা জ্ঞানভিত্তিক দেশের কথা বলি, তখন কিন্তু আমরা দেশের মানুষের কথা বলি। আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সব মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ কোটি। যদি তাদের সবাইকে ঠিকভাবে লেখাপড়া করানো যায়, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে, সে রকম দেশ আর কয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে? আমরা সবাই দেখেছি, এই দেশের একেবারে সাধারণ মানুষটিও কিন্তু লেখাপড়ার গুরুত্বটি ধরতে পেরেছে। লেখাপড়ার মান নিয়ে আমরা এখনও সন্তুষ্ট নই কিন্তু যদি লেখাপড়ার মানটুকু বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে জোর দিয়ে বলা যাবে, আমাদের দেশটিকে জ্ঞানভিত্তিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে সব উপাদান আছে।
দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এখনও এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের শরীরের ঘাম। তাদের পাশে যদি মেধা নিয়ে নতুন প্রজন্ম দাঁড়াতে শুরু করে, তাহলেই আমরা জ্ঞানভিত্তিক দেশের স্বপ্নে পা দিতে শুরু করবো। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আশা করতেই পারি, তারা আমাদের দেশকে জ্ঞানভিত্তিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাবে।
৬। শিক্ষায় জিডিপির চার শতাংশ: বাংলাদেশ ডাকার সম্মেলনে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ খরচ করবে শিক্ষায়। এখন বাংলাদেশ খরচ করছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকেও কম। আমি সব সময়েই বলে থাকি, লেখাপড়ার পেছনে এত কম টাকা খরচ করে পৃথিবীর আর কোনও দেশ এত ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করানোর কথা চিন্তাও করতে পারবে না! আমরা ইচ্ছা করলে তো দাবি করতেই পারি যে, যতটুকু অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ততটুকু খরচ করতে হবে কিন্তু তাহলে হয়তো আমাদের দাবিটা কেউ বিশ্বাস করবে না। এই মুহূর্তেও যেটুকু খরচ করা হচ্ছে, তার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি কেমন করে চাই?
তাই আমার মনে হয়, আমরা আপাতত নির্বাচনি ইশতেহারের জন্য জিডিপির চার শতাংশ চাইতে পারি! যারা বাজেট করেন, তাদের বিশ্বাস করতে হবে লেখাপড়ার পেছনে যদি একটাকাও বাড়তি খরচ করা হয়, তাহলে সেটারও একটা ফল পাওয়া যায়। তার কারণ লেখাপড়ার পেছনে যে টাকা খরচ করা সেটি মোটেও খরচ নয়, সেটি হচ্ছে বিনিয়োগ।
৭। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা: কেন সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া উচিত, সেটি নিশ্চয়ই নতুন করে কাউকে বোঝাতে হবে না। ভর্তি পরীক্ষার নামে ছেলে মেয়েদের এমন একটি নিষ্ঠুরতার ভেতর দিয়ে নেওয়া হয়, যেটি রীতিমতো অবিশ্বাস্য। রাষ্ট্রপতি সেটি লক্ষ্য করেছেন এবং একাধিকবার সব ভাইস চ্যান্সেলরকে ডেকে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। গত বছর সেটি নেওয়া সম্ভব হয়নি,আমি ভেবেছিলাম এই বছর নিশ্চয়ই সেটি হবে। কিন্তু আমি সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছি যে, এই বছরেও কেউ এটি নিয়ে কথা বলছে না! সত্যি কথা বলতে কী, এই বছর অবস্থা আগের থেকে খারাপ। আগে যে পরীক্ষাটি একবার নেওয়া হয়েছে, প্রশ্নফাঁস হওয়ার কারণে এবার সেই পরীক্ষা দুই বার নিতে হয়েছে। কেমন করে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করবো, জানি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অঙ্গীকার এই দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং তাদের বাব-মা একবাক্যে লুফে নেবে।
কাজেই নির্বাচনি ইশতেহারে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অঙ্গীকার করে তরুণ প্রজন্মকে খুব সহজে উৎসাহী করা সম্ভব বলে আমি মনে করি!
৮। সাইকেল লেন: বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। বিশেষ করে যারা ঢাকা শহরের বাইরে থাকে, তারা যদি ঢাকায় একে একবার ট্রাফিক জ্যামের যন্ত্রণাটা অনুভব করে তাহলে সাধারণত তার ঢাকা আসার সাধ জন্মের মতো মিটে যায়। ঢাকা শহরে নানা মিটিংয়ের জন্যে আমাকে প্রায়ই আসতে হয়, আমি একটা বিচিত্র বিষয় আবিষ্কার করেছি। ঢাকা শহরে কোথাও আমি সময়মতো যেতে পারি না।
বেশি সময় হাতে নিয়ে রওনা দেওয়ার পরও ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারি না কিংবা বেশি সময় হাতে নিয়ে রওনা দেওয়ার কারণে অনেক আগে পৌঁছে গিয়ে সময় কাটানোর জন্যে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাই। সোজা কথায় বলা যায়, কতটুকু দূরত্ব কত সময়ে পৌঁছানো যাবে, সে দুটির মাঝে কোনও সম্পর্ক নেই। এ কারণে ঢাকার মানুষজনের যে কী পরিমাণ সময় নষ্ট হয়, তার কোনও হিসাব নেই। সেই সময়টাকে যদি টাকা দিয়ে বিবেচনা করা যায়, আমার ধারণা তাহলে আমরা প্রতি মাসে একটা করে পদ্মা ব্রিজ তৈরি করে ফেলতে পারবো।
আমার ধারণা, এর একতা খুব সহজ সমাধান আছে, সেটা হচ্ছে সাইকেলে যাতায়াত করা। আমাদের নতুন একটা আধুনিক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যারা ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সাইকেলে যেতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। শুধু তাই না, স্কুলের অনেক ছেলে-মেয়েও সাইকেলে করে স্কুলে যাবে। এখন যেতে পারে না শুধু একটি কারণে, সেটা হচ্ছে ব্যাপারটা মোটেও নিরাপদ নয়। যে রাস্তায় দৈত্যের মতো বড় বড় বাস-ট্রাক একজনের সঙ্গে আরেকজন প্রতিযোগিতা করে ছুটে যাচ্ছে, সেই রাস্তায় কে সাইকেলে যেতে সাহস পাবে? কিন্তু যদি রাস্তার এক পাশে ছোট একটি লেন তৈরি করে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হয়, তাহলে সবাই সেই পথে যেতে পারবে। আমার এই কথাগুলো মোটেও আজগুবি কথাবার্তা নয়। পৃথিবীর অনেক বড় শহরে সাইকেল যাত্রীদের জন্যে আলাদা পথের ব্যবস্থা করে রাখা আছে। আজকাল শুধু যে সাইকেলের পথ তৈরি হয়েছে তা নয়, সাইকেল ভাড়া করার জন্যে একটু পরে পরে সারি সারি সাইকেল রাখা আছে, কাউকে আর সাইকেল কিনতেও হয় না।
তাই আমি মনে করি নির্বাচনি ইশতেহারে যদি সব বড় বড় শহরে সাইকেলের আলাদা লেন তৈরি করে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়, নতুন প্রজন্ম অনেক আগ্রহ নিয়ে সেটি গ্রহণ করবে।
৯। সোশাল নেটওয়ার্কের অভিশাপ থেকে মুক্তি: আমি এখন যেটা বলতে চাইছি, সেটি সবাই মানতে রাজি হবেন কিনা আমি জানি না, কিন্তু আমি যেহেতু আমার নিজের পছন্দের কথা বলছি অন্যেরা রাজি না হলেও খুব ক্ষতি নেই।
আমি জানি না, সবাই এটি লক্ষ করেছে কিনা, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে একটা মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, যে পরিবর্তনটি ভালো নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা সাংঘাতিকভাবে কমে এসেছে। এটি শুধু যে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ঘটেছে তা নয়, সারা পৃথিবীর সব দেশের ছাত্রছাত্রীদের বেলায়ও ঘটেছে। এর কারণটিও এখন আর কারও অজানা নয়, সেটা হচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নামক বিষয়টির প্রতি আসক্তি। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, সারা পৃথিবীটি এখন দুটি জগতে ভাগ হয়ে গেছে, একটি হচ্ছে রক্তমাংসের বাস্তব জগৎ, আরেকটি ইন্টারনেটের পরাবাস্তব জগৎ। ইন্টারনেটের জগতে একেবারে তুলকালাম ঘটে যাচ্ছে কিন্তু বাস্তব জগতের কেউ সেটি সম্পর্কে কিছু জানে না, সেটি এখন এমন কিছু বিচিত্র ব্যাপার নয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত না থেকে আক্ষরিক অর্থে এক মুহূর্ত থাকতে পারে না, সেরকম মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। সাধারণ মানুষজন হয়তো খুব বেশি জানে না কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি জগতের বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে, যেগুলো হয়তো আমরা নিজেরাই জানি না। তথ্য এখন সোনার চেয়েও দামি এবং আমরা না জেনে আমাদের সমস্ত তথ্যভাণ্ডার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছি। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে যেটি ফ্যি সার্ভিস মনে হচ্ছে, সেটি যে ফ্রি নয় এবং একবার আমাদের ভালো করে হাতে পেয়ে নিলে হঠাৎ করে গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, আমাজন বা আপেলের মতো বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলো যে আমাদের সর্বস্ব সুদে-আসলে তুলে নেবে না, আমরা সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারি না।
সারা পৃথিবীতে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা কোথায় আছি এবং কোথায় যাবো, সেটি কেউ ভালো করে জানে না। কিন্তু বোঝার আগে আমরা হয়তো আবিষ্কার করবো, আমরা অন্যের হাতের পুতুল হয়ে বসে আছি।
তাই আমি চাই নির্বাচনি ইশতেহারে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকুক। পরিবর্তনশীল এই নাজুক পৃথিবীতে পৃথিবীর বড় বড় তথ্য প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের পুরোপুরি কব্জা করে ফেলার আগে আমাদের যেন নিজেদের রক্ষা করার একটা পথ খোলা থাকে। সেই সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আসক্ত ছেলে-মেয়েদের রক্তমাংসের জগতে ফিরিয়ে আনার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে।
১০। বাক-স্বাধীনতা: আমি জানি বাক-স্বাধীনতা কথাটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ অনেকবার দেখেছি ঠিক কোথায় বাকস্বাধীনতা খিস্তি খেউড় গালাগাল হয়ে যাচ্ছে, সেটা অনেকেই জানে না। সামনা-সামনি অনেকেই একে অন্যকে গালমন্দ করে না কিন্তু ইন্টারনেটের পরাবাস্তব জগতে খুব সহজেই একজন অন্যজনকে তুলোধূনা করে ফেলে। এই সবের পরেও আমি মনে করি, একজনের বাক-স্বাধীনতা থাকুক, বাড়াবাড়ি করে ফেললে সেটাকে প্রতিবাদ করার ব্যবস্থা থাকুক কিন্তু মন খুলে কথা বলা নিয়ে সবার ভেতরে যতি একটা আতঙ্ক কাজ করে তাহলে সেটি ভালো কথা নয়।
আমার মনে হয় আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ৫৭ ধারাটি সবার মাঝে এক ধরনের ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটে খিস্তি খেউড় হয়তো কমেছে কিন্তু অনেক জায়গায়ই মানুষ তাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানাতে ভয় পেতে শুরু করেছে। এটি আমরা কখনো চাই না। ৫৭ ধারার বাক্যগুলো খুবই ঢিলেঢালা ইচ্ছে করলেই যেকোনও মানুষের যেকোনও কথাকে ব্যবসার করে তাকে বিপদে ফেলে দেওয়া যাবে।
তাই আমি মনে করি নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা বাক-স্বাধীনতা নিয়ে আরেকটু গুছিয়ে তৈরি করা একটি প্রস্তাব আশা করতে পারি।
এই হচ্ছে নির্বাচনি ইশতেহারে আমি কী দেখতে চাই, সেরকম দশটি বিষয়ের তালিকা। দেখাই যাচ্ছে এটি কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ নয় এবং আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামাই ঘুরেফিরে সেগুলোই এসেছে। কিন্তু ক্ষতি কী? এটাই তো বাক-স্বাধীনতা আমার যেটা বলতে ইচ্ছে করছে সেটা বলছি! সবাইকে সেটা শুনতে হবে কিংবা বিশ্বাস করতে হবে কে বলেছে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় |
955bf825-47be-4e58-bc56-9351f6e41e68 | ফুলবাড়ী উপজেলা দিনাজপুর জেলা তথা বাংলাদেশের একটি অন্যতম উপজেলা। এখানে অনেক জ্ঞানী গুনী লোক বাস করেন। এখনও এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন প্রয়োজন। তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগনের দোরগোড়ায় সরকারী বেসরকারী সেবা দ্রুত পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফুলবাড়ী উপজেলা অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে।
সমন্বিত উদ্দোগের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, সন্ত্রাসমুক্ত, উন্নয়নমুখী আলোকিত ফুলবাড়ী গড়াই আমাদের সকলের লক্ষ্য। |
7ca22b40-7da9-45b3-a4f5-dc212c94a8a3 | দিনাজপুর জেলা সদর হতে ৪০ কি.মি পবে ফুলবাড়ী উপজেলা এর উওরে পাবতীপুর দক্ষিনে বিরামপুর ,পুব দক্সিণে নবাবগনজ উপজেলা ও পশ্চিমে ভারত সীমান্ত। ফুলবাড়ী উপজেলার আয়তন ২২৯.৫৫ বর্গকিমি:। ৭ টি েইউনিয়ন ও ৭৮ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। দিনাজপুর ঢাকা হাইওয়ে সংলগ্ন ফুলবাড়ী উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ বানিজ্য কেন্দ্র। এ উপচেলার অতিনিকটে বড়পুকুরিয়া কয়লখিনি ও মধ্যপড়িা কঠিন শিলাখনি অবস্থিত। দিন দিন ফুলবাড়ীর গুরূত্ব আরও বাড়ছে। |
f00922f3-6ef3-4495-bb43-c110342a11b2 | পরিষদ তহবিল বহির্ভূত ব্যয়ের ক্ষমতা প্রদান সংক্রান্ত।
ট্যাক্স, রেইটস, টোলস এবং ফিস আরোপের প্রস্তাব।
উপজেলা পরিষদের বার্ষিক বাজেট, বার্ষিক হিসাব বিবরণী ও সংশোধিত বাজেট।
উপজেলা পরিষদের ব্যয়ের অডিট।
পাঁচসালা ও বিভিন্ন মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করা।
পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং উক্ত দপ্তরের কাজ-কর্ম সমূহের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করা।
পরিষদ কর্তৃক কাজ বাস্তবায়নের বিভিন্ন চুক্তি প্রক্রিয়াকরণ।
বিভিন্ন কমিটি ও উপ-কমিটি গঠন।
উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা অবস্থা পর্যালোচনা।
উপজেলার ত্রাণ ও পূণর্বাসন কাজ পর্যালোচনা।
উপজেলা পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়নতব্য কাজের প্ল্যান এবং এস্টিমেট অনুমোদন।
বাস্তবায়িত সকল ধরণের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পর্যালোচনা।
জনস্বার্থ সংশিস্নষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি।
নাগরিক সেবাঃউপজেলা পরিষদ মূলতঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং অন্যান্য অফিস যেমন উপজেলা শিক্ষাঅফিস, উপজেলা কৃষি অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর, উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ইত্যাদি অফিসের মাধ্যমে প্রায় সকল ধরণের নাগরিক সেবা দিয়ে থাকে। |
b69f85e5-0db1-4860-b834-5b7503f974a0 | অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান , এমপি
মাননীয় মন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৫৩ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের নাম জামগ্রাম। বাবা মোবারক হোসেন এবং মা শাহেদা খাতুন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি “ফিজার” নামেই সমধিক পরিচিত যা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বলয়ে একটি সুপরিচিত এবং আস্থাভাজন ব্যক্তিত্বের নাম ।
একটি অরাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা সত্ত্বেও, মোস্তাফিজুর রহমান অত্যন্ত অল্প বয়সে, ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং এগারো দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তার দর্শন এবং উদ্দেশ্যের প্রতি গভীর দায়িত্বশীলতার কারণে, তিনি কৃতিত্বের সাথে সুজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং ফুলবাড়ি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মোস্তাফিজুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা (এফ.এফ) হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, এবং সেক্টর-৭ এর অধীনে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে লড়াই করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগ -এর জেলা সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর ১৯৭৩ সালে তিনি ফুলবাড়ি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ফুলবাড়ী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জি.এস ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ১৯৮৬ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
একজন অত্যন্ত প্রবীণ এবং অক্লান্ত কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য হন এবং দলের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ফুলবাড়ি থানা আওয়ামী লীগ এর- সাংগঠনিক সম্পাদকও নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ -এর সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি কাউন্সিলের মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ -এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বগুণে তিনি পরপর তিনবার জেলা আওয়ামী লীগ -এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২১ বছর উক্ত পদে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগ -এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ -এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান -এর বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সে কারণে ১৩ অক্টোবর ১৯৭৫ সালে তাঁকে সেনা হেফাজতে নিয়ে একমাস হয় আটক রাখা হয়। গনতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তাঁকে ১৯৯০ সালে জেলে প্রেরণ করা হয়।
জনাব মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মত নির্বাচনী এলাকা ১০, দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ি- পার্বতীপুর) থেকে জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে একাদিক্রমে আরও পাঁচবার (১৯৯০,১৯৯৬,২০০১,২০০৮ এবং ২০১৪) তিনি মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং সাহসী নেতৃত্বের গুণে জনগণ তাঁকে পরপর ছয়বার এই পদে নির্বাচিত করেন। তিনি ২০০৯ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ও দায়িত্ব পালন করেন।পরবর্তীতে ৩১ জুলাই ২০০৯ থেকে ২১ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে অদ্যাবধী এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৫ বছর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং ১০ বছর পাবলিক অ্যাকাউন্টস্ কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।
অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান জাতিসংঘের ৫৪তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড,জার্মানী, ভারত, মালয়েশিয়া এবং ইউএসএ -সহ বিভিন্ন দেশে কর্মশালা এবং সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৭৯ সালে রাজিনা রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ফারহানা রহমান এবং ফারজানা রহমান নামে দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।
ছবি
সংযুক্তি
সংযুক্তি (একাধিক) |
c85a47dd-a392-48de-be9e-a9ed68849bd0 | ফুলবাড়ী উপজেলা দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৪১ কিঃ মিঃ দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। উপজেলাটির উত্তরে পার্বতীপুর এবং চিরিরবন্দর উপজেলা, দক্ষিণে বিরামপুর উপজেলা, পূর্বে নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত।
এককালে ফুলবাড়ী ছিলো একটি দূর্গনগরী। একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিলো নগর ও জনবসতি। সেইপ্রাচীনকালের নগরীর রেশ ও ক্রমধারায় নতুন আধুনিক শহর ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু দুর্গটির কোনো চিহ্ন আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে শহরের হাট বাজার ও ব্যবসাকেন্দ্র প্রাচীন দুর্গের অভ্যন্তরেই গড়ে উঠেছে।
ফুলবাড়ী শহরের পাশ দিয়ে পুরাতন যমুনা নদী এখনও বহমান। দিনাজপুরের দিক থেকে ফুলবাড়ী শহরে প্রবেশ করতেই নদিটির উপর একটি পুরাতন ব্রীজ দিনাজপুর-ফুলবাড়ী পাকা সড়কটিকে যুক্ত করেছে । ব্রীজটি অতিপুরাতুন হওয়ায় ব্রীজের সংলগ্ন দক্ষিন পার্শ্বে আরেকটি ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে । এব্রীজটির উপর দিয়ে বর্তমানে যান বাহন চলাচল করছে। |
6627958e-4287-4612-ad04-1c548ab71b77 | ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ ভবন। এটি একটি দ্বিতল ভবন। ভবনের তৃতীয় তলার কাজ চলছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৪১ কিঃ মিঃ দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। উপজেলাটির উত্তরে পার্বতীপুর এবং চিরিরবন্দর উপজেলা, দক্ষিণে বিরামপুর উপজেলা, পূর্বে নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত।
এককালে ফুলবাড়ী ছিলো একটি দূর্গনগরী, একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিলো নগর ও জনবসতি। সেইপ্রচীনকালের নগরীর রেশ ও ক্রমধারায় নতুন আধুনিক শহর ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু দুর্গটির কোনো চিহ্ন আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে শহরের হাট বাজার ও ব্যবসাকেন্দ্র প্রাচীন দুর্গের অভ্যন্তরেই গড়ে উঠেছে।
জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রাচীন আমলে এই অঞ্চলে প্রচুর ফুলের বাগান ছিল। ফুলের বাগানের আধিক্যের কারণে এই জায়গাটির নাম ফুলবাড়ী হয়েছে।
ফুলবাড়ী শহরের পাশ দিয়ে পুরাতন যমুনা নদী এখনও বহমান। দিনাজপুরের দিক থেকে শহরে প্রবেশ করতেই নদীটির উপর একটি পুরাতন ব্রীজ প্রায় পূর্ব-পশ্চিমে দিনাজপুর-ফুলবাড়ী পাকা সড়কটিকে যুক্ত করেছে। সেতুটির পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষে উত্তর দক্ষিণে ২০০ গজ দীর্ঘ দুর্গটির পশ্চিম দেয়ালের অস্ত্বিত্ব রয়েছে। পরিখাবেষ্টিত অভ্যন্তরীণ দেয়ালের সামান্য রেশ কোথাও থাকলেও হাট বাজার ও জনতার চাপে তা বর্তমানে অদৃশ্য। |
5e1751f0-808a-4406-be3c-506e869bfa98 | প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সবুজের সমারোহে আমাদের এই দেশ । নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত, সবুজ বনভূমি সব মিলে এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া কোন স্বর্গভূমি । কিন্তু কালের চক্রে সেই অপরূপ সৌন্দর্য কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধটুকু, নগর সভ্যতার কোলাহল আর ধোঁয়ার বিষাক্ত ছোবলে মুক্ত আকাশ-বাতাস ঢেকে ফেলছে। হাঁফিয়ে উঠছে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষগুলো, হারিয়ে ফেলছি আমরা আমাদের স্বাভাবিক সুস্থতা । একটুখানি স্বস্তি ও প্রশান্তির ছায়া দেওয়ার প্রত্যাশায় উত্তর জনপদের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রকৃতিপ্রেমী কিছু মানুাষের দ্বারা ভিন্ন আঙ্গিকে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান।
ফুলবাড়ী উপজেলার কাঁটাবাড়ী মহল্লায় কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান অবস্থিত । এখানে কুমারেরা মাটি দিয়ে হাড়ি-পাতিল, বিভিন্ন রকম খেলনা, পশু-পাখি, ফল-মূল, ইত্যাদি তৈরী করে। তাদের হাতের মাটির বানানো এই কারুকার্য সকলকে মুগ্ধ করে তোলে। এইসব মাটির তৈরী সামগ্রী শিশুদের এবং মেয়েদের অনেক শখের খেলনা হিসাবে ব্যবহিত হয়। এমনকি মেয়েরা এইসব সামগ্রী দিয়ে সুন্দর করে ঘর সাজায়। এসব রং-বেরংগের বিভিন্ন রকমের খেলনা শিশুদের কাছে লোভনীয় করে তোলে । তারা কুটির শিল্পের হাড়ীপাতিল ও খেলনা বিভিন গ্রাম্যমেলায়, শহর ও হাট বাজারে কেনা বেচা করে । এ শিল্পের উপর নির্ভর করে তারা দীর্ঘদিন থেকে জীবিকা র্নিবাহ করে আসছে। |
968a37be-0d70-47a7-a7d8-b3d2576fdae7 | দিনাজপুর জেলা সদর থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে করতোয়া নদীর তীরে ঘোড়াঘাট উপজেলা অবস্থিত। ২০.১৪ থেকে ২৬.৩৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৮৬ থেকে ৮৯.১৯ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এর ভৌগলিক অবস্থান। ত্রিভুজাকার আকৃতরি মতো এই উপজেলার মোট ভূমির পরিমাণ ৩৬,৭৩৮ একর। আয়তস ৫৭.৩৭ বর্গমাইল। প্রাচীনকালে ঘোড়াঘাট কোন রাজার অধীনের শাসিত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। জানা যায়, মহাভারতীয় যুগ ( ৫ হাজার বছর আগে) এই ক্ষুদ্র জনপদ মৎস দেশের অধীনে ছিল। তাছাড়া এ উপজেলায় মৌর্য যুগ, গুপ্ত শাসন, পাল শাসন, সেন আমল, তুর্কী শাসন, সুলতানী আমল, পাঠান আমল, মোগল শাসন, নবাবী আমল, ইংরেজ শাসনাধীনে ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এ অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীনে আসে। বহুপীর, দরবেশ, আলেম, ধর্মপ্রচারক, যোদ্ধা, জ্ঞানীগুণী ও নানা পেশার মানুষের আগমণে সমৃদ্ধ হয়ে পড়ে এ ঘোড়াঘাট উপজেলা। উল্লেখ্য মধ্যযুগে এখানকার দূর্গে অনেক ঘোড়া ছিল। ঘোড়াগুলোকে নিয়মিত গোসল করানো হতো ঘাটে। তা থেকে এ স্থানের নাম ঘোড়াঘাট হয়েছে বলে সময়ের ধারণা। ঘোড়াঘাট প্রাচীন জনপদ হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পুরাকীর্তি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। এ উপজেলায় ঐতিহাসকি স্থান ও প্রত্নতত্ত্বেরমধ্যে ঘোড়াঘাট দূর্গ, বারপাইকের গড়, বেলোয়া, দামোদরপর, সুরা মসজিদ ওবিভিন্ন পীর আওলিয়ার মাজার উল্লেখ যোগ্য।
এ উপজেলায় ১১৫টি মৌজা, ১৪৩ টি গ্রাম আছে। আছে বুলাকীপুর, সিংড়া, পালশা, ঘোড়াঘাট নামে ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ঘেড়াঘাট নামে একটি পৌরসভা। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ মুসলমান, ১৫ ভাগ উপজাতি আর আদিবাসী এবং অবশিষ্ঠ ১০ ভাগ হিন্দু ও খ্রিষ্টান। বসবাসকারীদের মধ্য আছে কীছু নৃ তাত্ত্বিক জনগোষ্টি। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতোই ঘোড়াঘাটে তংকালীন সরকার ওপাকিস্থানী সেনবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথমে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ও এ উপজেলায়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। পদচারনায় মুখর এই উপজেলা।
বর্তমানে অত্র উপজেলায় গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দিনে দিনে আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে এ উপেজলা।
পালাবদলে অতীত সভ্যতার পরিচয় বাহী অধিকাংশ স্থাপনা আজ নিশ্চিহ্নের পথে। আর এ উপজেলার অতীত ইতিহাস বর্তমান সময়ের উপজেলার সাবির্ক কাঠামো তুলে ধরার প্রেক্ষাপটে ওয়েবসাইটিতে বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে ঘোড়াঘাট উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিেশ্বর যে কোন প্রান্ত থেকে মানুষ ওয়েবের মাধ্যমে দেখতে পাবে এই ঘোড়াঘাট উপজেলাকে। উন্নত যোগাযোগের উপরে নির্ভর করে উন্নয়ন। আর যোগাযোগ ব্যবস্তাকে উন্নত করতে বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনাদের তথা দেশের উন্নয়নে যদি ক্ষুদ্রতম অবদান রাখে তাহলে আমাদের এ ওয়েবে পোর্টাল সার্থক বলে বিবেচিত হবে। |
f07009ad-b69b-4c5d-8e7e-e229f78dadd6 | ঘোড়াঘাট উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ওসংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত, অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে। এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ঘোড়াঘাট সভ্যতা বহুপ্রাচীন। এই এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এর ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে দেদীপ্যমান। এছাড়াও এ এলাকায় কিছুক্ষুদ্র জাতিসত্বা বসবাস করে যাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে।সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ঘোড়াঘাট অবদানও অনস্বীকার্য। |
b1289fd5-fce8-499d-a2d9-cd58e47e0256 | খেলাধুলা ও বিনোদন :
সনাতনী খেলার মধ্যে- হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, বৌ-ছিঃ ,কুৎকুৎ, দড়িখেলা, মার্বেলখেলা, কড়িখেলা, চেংকিপান্টু, নোনতা, কানামাছি, ষোলপ্যাত, কাউয়া কাক, দৌড়ঝাঁপ, পাতাখেলা, লাঠিখেলা, উল্লেখযোগ্য। জনপ্রিয় খেলার মধ্যে ফুটবল, ব্যাটমিন্টন, ভলিবল, কেরামবোর্ড, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলার নাম করা যায়। ইদানীং সনাতন খেলা প্রায় উঠে গেছে। এখন আধুনিক খেলার প্রতি সব মানুষের দৃষ্টি। মূল ঘোড়াঘাটের চৌরাস্তা মোড়ের পশ্চিম ধারে বড় একটি ফুটবল খেলার মাঠ আছে। খেলোযাড়দের উন্নয়নের জন্য উপজেলায় একটি ক্রীড়া উন্নয়ন সংস্থা আছে। এই সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। |
58043e5f-f233-49e6-8784-42a6b65ddfb6 | উপজেলা নির্বাহী অফিসার-এর মাসিক কর্মসূচিসমূহঃ
১.উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন।
২.উপজেলার GO-NGO ও মাসিক সমন্বয় সভা।
৩.উপজেলার আইন শৃংখলা কমিটির সভা।
৪.উপজেলার খাস জমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত সভা।
৫.উপজেলার মাসিক রাজস্ব সভা।
৬.উপজেলার আশ্রয়ণ, আদর্শগ্রাম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভা।
৭.উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দর্শন।
৮.জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ের মাসিক সভায় এবং অন্যান্য সভায় অংশগ্রহণ। |
4a057a54-f126-4dfd-920d-1bd64c7b3f1c | ঐতিহ্য মন্ডিত দিনাজপুরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজ্যারম্ভের সূচনায় সৃষ্ট আদি জেলা শহরগুলির অন্যতম পুরাতন শহর দিনাজপুর। পলাশী যুদ্ধের আট বছর পর ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সেনাবাহিনীকর্তৃক অত্র এলাকা বিজিত হয়। ফলে নবাবী শাসনের অবসানের সঙ্গে পতন হয় সাবেক রাজধানী ঘোড়াঘাট নগরের। তারপর থেকে গড়ে উঠতে শুরু করে দিনাজপুর শহর।
দিনাজপুর গেজেটিয়ারের মতে ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে জেলা শাসনের জন্য দিনাজপুরে স্বতন্ত্রস্থায়ী কালেক্টরেট স্থাপিত হয়। তার পূর্ব পর্যন্ত দিনাজপুর-রংপুর যুক্ত
কালেক্টরেট ছিল। রাজসেরেস্তা থেকে নথিপত্র প্রত্যাহার করে জিলা স্কুলেরপুরাতন ভবনটিতে (সম্প্রতি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে) আদি কালেক্টর অফিস স্থাপিতহয়। জেলা স্কুল হওয়ার পূর্বে ভবনটি রাজকাচারী ছিল। তখন কালেক্টর ছিলেন মি.ম্যারিওয়েট। রাজা ছিলেন রাজবংশের নাবালক উত্তরাধিকারী রাজা রাধানাথ।
১৭৬৫খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি মিঃ কোট্রিল ঘোড়াঘাটের শেষ মুসলিম ফৌজদার করমআলী খানকে পরাজিত করে এই অঞ্চলে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এ অঞ্চলেপ্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ইংরেজরা ১৭৮৬ সালে নতুন জেলা গঠন করে এবং ১৭৯৩সালে দিনাজপুরে নবসৃষ্ট জেলার দপ্তর স্থাপন করে। দিনাজপুরের কালেক্টর মিঃএইচ জে হ্যাচ (১৭৮৬-১৭৯৩ পর্যন্ত কালেক্টর ছিলেন) এর আমলে এখানের প্রথমনিজস্ব কালেক্টরেট ভবন নির্মিত হয় বর্তমান বাহাদুর বাজারস্থ গোলকুঠিবাড়ীতে। দিনাজপুরে ইংরেজ শাসন ও জেলা কালেক্টরেট নির্মিত হওয়ায় এবং সেইসঙ্গে সুবিন্যস্ত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় তখন থেকে আধুনিক জেলাশহরটির গড়ন শুরু হয় রাজাদের দেয়া কয়েকটি মৌজার উপর। রাজবাড়ী থেকে সমস্তনথিপত্র প্রত্যাহার করে গোলকুঠি ভবনে স্থাপন করা হয়। মুগল আমলের ঘোড়াঘাটনগর তখন সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়। নবস্থাপিত দিনাজপুর শহর জেলা শাসনেরকেন্দ্র ও সবকিছুর কর্মস্থলে পরিণত হতে শুরু করে। ১৮৩৩ থেকে ১৮৭০ সালপর্যন্ত দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যেঅন্তর্ভুক্ত হয়।
১৮০০হইতে ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দিনাজপুরের অনেক বড় বড় এষ্টেট পূর্ণিয়া, রংপুর এবং রাজশাহী জেলার সাথে যুক্ত হয়। ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে এর একটি সুবিস্তৃতঅংশ বগুড়া ও মালদহ জেলার সাথে যুক্ত করার আগ পর্যন্ত আর কোন রদবদল হয় নাই।১৮৬৪-১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুরের খট্রা নামক একটি বিশাল পরগণাকে বগুড়াজেলার সাথে এবং ১৮৬৮-১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে এর আরো একটি বড় অংশ বগুড়া ও মালদহজেলার সাথে যুক্ত করা হয়। ১৮৯৭-১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মহাদেবপুর থানা রাজশাহীতেস্থানান্তরিত হয়। দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত আর কোন রদবদল হয়নি।
১৯৪৭সালের ১৪ আগষ্ট ভারতবর্ষে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি আলাদা রাষ্ট্রজন্মলাভ করে। ঐ সময় রাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুসারে এই জেলার দশটি থানা ভারতশাসিত পশ্চিম বাংলা প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গঠনকরে। অপরদিকে পশ্চিম বাংলার জলপাইগুঁড়ি জেলা হতে তেতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ ও পাটগ্রাম থানা পাঁচটি দিনাজপুরের সাথে যুক্ত হয়। পাটগ্রাম থানাশাসনকার্যের সুবিধার্থে পরবর্তীতে রংপুর জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সমসাময়িকসময়ে জেলার দক্ষিণ অংশের ধামইর, পোরশা ও পত্নিতলা থানা তিনটি তৎকালীনরাজশাহীর নওগাঁ মহকুমার সাথে যুক্ত করা হয়।
সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে দিনাজপুরের দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় পরিণত হয়। |
d49851f4-d620-4019-ae4d-19156946c922 | সড়ক পথই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। উপজেলায় সামান্য নদী পথ আছে। মোট রাসত্দার দৈঘর্্য ৩৩০ কিঃ মিঃ। তন্মধ্যে পাকা রাসত্দা ৬২ কিঃ মিঃ এবং অবশিষ্ট ২৬৮ কিঃ মি কাঁচা রাসত্দা। উপজেলা সদরের সাথে চার ইউনিয়নের সড়ক পথেই যোগাযোগ বিদ্যমান। পাকা রাসত্দা হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-ফুলবাড়ী, ঘোড়াঘাট-হিলি, ঘোড়াঘাট-পাঁচবিবি ও ঘোড়াঘাট-পলাশবাড়ী পাকা রাসত্দা উলেস্নখ যোগ্য। রাসত্দাগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর উপর ১৯৯৬ সালে নির্মিত বেইলী ব্রিজটি ঘোড়াঘাটবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে। বর্তমানে উপজেলার সকল রাসত্দায় কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, মোটরসাইকেল, সাইকেল, গরম্নর গাড়ি, রিঙ্া, ভ্যান প্রভৃতি যানবাহন চলাচল করে। তবে গ্রামীণ কাঁচা রাসত্দাগুলো বর্ষাকালে কর্দমাক্ত হয়। এতে চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়। তারপরেও আগের চেয়ে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। অনেক রাসত্দার দু-ধারে নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করার ফলে রাসত্দায় ছায়া বৃদ্ধি ও শোভা বর্ধন করছে। কিন্তু সমপ্রতি রাসত্দার দু'ধারে রোপিত গাছ অননুমোদিত ভাবে কর্তন করছে এক শ্রেণীর অসাধু লোক। |
053c88f4-9381-41ef-b002-3e0ca4a68dfd | সড়ক পথই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। উপজেলায় সামান্য নদী পথ আছে। মোট রাসত্দার দৈঘর্্য ৩৩০ কিঃ মিঃ। তন্মধ্যে পাকা রাসত্দা ৬২ কিঃ মিঃ এবং অবশিষ্ট ২৬৮ কিঃ মি কাঁচা রাসত্দা। উপজেলা সদরের সাথে চার ইউনিয়নের সড়ক পথেই যোগাযোগ বিদ্যমান। পাকা রাসত্দা হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-ফুলবাড়ী, ঘোড়াঘাট-হিলি, ঘোড়াঘাট-পাঁচবিবি ও ঘোড়াঘাট-পলাশবাড়ী পাকা রাসত্দা উলেস্নখ যোগ্য। রাসত্দাগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর উপর ১৯৯৬ সালে নির্মিত বেইলী ব্রিজটি ঘোড়াঘাটবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে। বর্তমানে উপজেলার সকল রাসত্দায় কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, মোটরসাইকেল, সাইকেল, গরম্নর গাড়ি, রিঙ্া, ভ্যান প্রভৃতি যানবাহন চলাচল করে। তবে গ্রামীণ কাঁচা রাসত্দাগুলো বর্ষাকালে কর্দমাক্ত হয়। এতে চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়। তারপরেও আগের চেয়ে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। অনেক রাসত্দার দু-ধারে নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করার ফলে রাসত্দায় ছায়া বৃদ্ধি ও শোভা বর্ধন করছে। কিন্তু সমপ্রতি রাসত্দার দু'ধারে রোপিত গাছ অননুমোদিত ভাবে কর্তন করছে এক শ্রেণীর অসাধু লোক। |
9782c401-9c6c-49cf-8193-df9a3574808a | উন্নতধানের জাত
গোটাপৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যার প্রধান খাদ্য ভাত। সে কারণে ফসল হিসেবে ধানকেনিয়ে বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনার অন্ত নেই। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকেএসে ধান গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়। ধানের গাছকেখর্বাকৃতি করে দেয়ার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়বিজ্ঞানীদের সে প্রচেষ্টা দারুণভাবে সফল হয়। গত চার দশক ধরে বিশ্বের বার্ষিক ধানের উৎপাদন ২৫২ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ৬০০ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে।উচ্চফলনশীল, সার সংবেদনশীল, আধা খর্বাকৃতির ধান জাতের সাথে উপযুক্ত উৎপাদনপ্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে বিধায় ধানের উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।আগামী ২০২৫ সন নাগাদ বর্ধিত চাহিদা মেটানোর লক্ষে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবেশতকরা ২৫ ভাগ। সে লক্ষ্য অর্জনে বিজ্ঞানীরা এখনই ব্যাপক পরিকল্পনা শুরুকরেছেন। শুরু করেছেন নতুন নতুন ধানের জাত উৎপাদনের কর্মকাণ্ড। ধানের উফশীইনব্রেড জাত এবং হাইব্রিড জাতের পর নতুন কি সম্ভাবনা বিজ্ঞানীরা সৃষ্টিকরতে চান সেটি আজ দেখার বিষয়।
উফশী ধান
গত শতাব্দীরষাটের দশকে ধানের জাত উন্নয়নে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটিয়েছিলেন উদ্ভিদপ্রজননবিদগণ। খাটো জাতের এক ধানের সাথে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করাঅনেকগুলো লম্বা জাতের ধানের সংকরায়ন করা হলো। অতঃপর শুরু হলো খর্বাকৃতিরউচ্চফলনশীল ধানের জাত নির্বাচনের কাজ। এ ধরনের গবেষণা গোড়াতে জাপানে আরভারতে শুরু করা হলেও আমাদের আবাদি শ্রেণীর ধানে সাফল্য আসলো আন্তর্জাতিকধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তথা ফিলিপাইনের ইরিতে। বিজ্ঞানের এ কর্মকাণ্ডেরকারণে ধান গাছের ফলনশীলতার আশ্চর্য রকম পরিবর্তন ঘটে গেল। নতুন জাতেরগাছগুলো খর্বাকৃতির হয়ে গেল। সার, সেচ প্রয়োগ আর আধুনিক ব্যবস্থাপনার পূর্ণসুফল এরা ভোগ কতে পারলে দেশী জাতের ধানের মতো এরা ঢলে পড়লো না। এদের পাতাখাড়া প্রকৃতির হওয়ায় পাতায় দু’পাশেই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চললো। ফলেএদের শিষ বড় হলো, শিষে বেশি করে ফুল ধরলো, অধিক সংখ্যাক ফুল ফলে পরিণত হলো।এ কারণে এসব জাতের ফলন বেড়ে গেল। এভাবে পাওয়া গেল সে সময়ের বিখ্যাত আই আর৮, আই আর ২০ এসব জাত। এরই ফলশ্র্বতিতে বাংলাদেশেও খর্বাকৃতির ধানের জাতউদ্ভাবন করা হলো। এসব জাতকে কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে এসব উচ্চফলনশীল (উফশী)জাত বিস্তৃতি লাভ করলো। এসব আধুনিক জাতের মাধ্যমে ধানের ফলন উল্লেখযোগ্যরকম বেড়ে গেল।
হাইব্রিড ধান
বিজ্ঞানীরা কেবলউফশী জাত নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না। পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিরপ্রেক্ষাপটে আরো অধিক ফলনশীল ধানের জাত সৃষ্টি করা আবশ্যক হয়ে পড়লো। এবারআর সনাতন জাত সৃষ্টি করার কর্মকাণ্ড নয়। দুটি ধানের জাতের মধ্যে সংকরায়নকরে হাইব্রিড জাত সৃষ্টির চেষ্টা শুরু হলো। হাইব্রিড ধান উফশী ধান অপেক্ষাওকমপক্ষে শতকরা ১৫ ভাগ অধিক ফলন দেয় বলে চীন দেশে শুরু হলো হাইব্রিড জাতউদ্ভাবনের জন্য জোর গবেষণা। ধানে একটি ফুলে পরাগায়ন ঘটালে পাওয়া যায় একটিমাত্র ফল বা বীজ। ফলে বিকল্প কোনো কৌশলের সন্ধান করলেন বিজ্ঞানীরা। ধানেরবুনো এক আত্মীয়ের মধ্যে পাওয়া গেল পুংবন্ধ্যা স্বভাব। বুনো ধানের এস্বভাবটি সংকরায়ন পদ্ধতিতে নিয়ে আসা হলো আবাদি ধানের জাতগুলোতে। অবস্থাটাএমন দাঁড়ালো যে, সব গাছই হয়ে গেল স্ত্রী গাছ। ফলে পাশে রোপণ করে দেয়া হলোপুর্বষ গাছ। পুর্বষ গাছের পরাগরেণু স্ত্রী গাছের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিতহওয়ায় সহজেই তৈরি করা সম্ভব হলো ধানে হাইব্রিড বীজ। অতঃপর বিজ্ঞানীরা একৌশলকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করলেন নানা রকম হাইব্রিড জাত। চীন দেশে ব্যাপকসাফল্য নিয়ে আসলো হাইব্রিড জাত উৎপাদন প্রযুক্তি । ধানের ফলন বেড়ে গেলশতকরা ১৫-৫০ ভাগ পর্যন্ত। এ কৌশল ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে গেল চীনের সীমানাপেরিয়ে ভিয়েতনাম, ভারত, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশসহ আরো কিছু দেশে । ধানের ফলনবৃদ্ধিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করলো হাইব্রিড ধানের জাত।
সুপার রাইস
খর্বাকৃতিরবা আধা-খর্বাকৃতির উফশী ধানের উদ্ভাবনের ফলে বিজ্ঞানীরা আর এক দাপ এগিয়েযাওয়ার উদ্যোগ নিলেন। বিভিন্ন ধানের জাতের এ কাঙিত বৈশিষ্ট্য একটি জাতেসন্নিবেশন করতে চাইলেন বিজ্ঞানীরা। এর জন্য তারা বাছাই করে নিলেন একটি বাদুটি উত্তম জাত। এদেরকে সংকরায়ন করলেন বহু সংখ্যক জাতের সাথে ধাপে ধাপে যেনঅন্য সব জাতের উত্তম বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায় একটি ধানের জাতে। এর জন্যধানের আদর্শ একটি জাতের রূপকল্পও দাঁড় করিয়ে নিলেন তারা। এভাবে এ নিয়ে চললোসংকরায়ন আর বাছাই কর্মসূচি। এভাবে পাওয়া কিছু সম্ভাবনাময় বংশধর থেকেপরিবেশানুগ এবং উপযোগী গাছ বাছাই করে নেয়ার লক্ষে কিছু বীজ পাঠানো হলো ধানউৎপাদনকারী নানা দেশের গবেষকদের কাছে।
সুপাররাইসের সাফল্য বিজ্ঞানীরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হলেন। এর কারণও একাধিক। একটিউত্তম জাত অনেক জাতের একাধিক বৈশিষ্ট্য সংযোজন করে উত্তম জাতের ফল আরোবৃদ্ধি করার বিষয়টি বেশ জটিল। উত্তম জাতে সংযোজিত নানা জাতের উত্তমবৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি দু’একটি করে খারাপ বৈশিষ্ট্যের জিনও এতে সংযোজিত হলো।ফলে এ মাত্রায় ফলন বাড়াবে বলে আশা করা হয়েছিল ফলন সে রকম বাড়েনি। তাছাড়াসনাতন সংকরায়ন পদ্ধতিতে কাঙিত জিন সন্নিবেশিত হলো কিনা কিংবা হলেও এরমাত্রা কতটুকু তা জানা প্রায় ক্ষেত্রেই অসম্ভব থেকে গেল। ফলে সুপার রাইসনিয়ে যে স্বপ্ন ছিল তা আর বাস্তবে রূপ লাভ করলো না। কিন্তু সুপার রাইসেরস্বপ্ন মুছে গেল বিজ্ঞানীদের মন থেকে তা কিন্তু নয়। জিন প্রযুক্তির বিকাশ ওপ্রসার সে স্বপ্নকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার পথ সৃষ্টি করলো।
গ্রিন সুপার রাইস
এটিবিজ্ঞানীদের আর এক স্বপ্নের ধান। আর এক সবুজ বিপ্লবের লক্ষে এক দলবিজ্ঞানী শুরু করেছেন নতুন এ ধান সৃষ্টির গবেষণা । মূলত এ গবেষণার নেতৃত্বদিচ্ছেন এক দল চীনা বিজ্ঞানী। এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে চাইনিজ একাডেমিঅব এগ্রিকালচারাল সাইন্সেন্স এ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা। এর সাথে রয়েছেচাইনিজ ৬টি বিখ্যাত সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানসহ চীনের অতিরিক্ত৯টি বিভিন্ন আঞ্চলিক ধান প্রজনন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এর প্রকল্পেরঅংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেশনাল রাইস রিসার্চইনস্টিটিউট (ইরি), আফ্রিকান রাইস সেন্টার (ওয়ার্ডা) এবং এশিয়ার বেশ ক’টিদেশের জাতীয় কৃষি গবেষণা ও সমপ্রসারণ সিস্টেম সাথে রয়েছে চীনের ৫টিপ্রাইভেট বীজ কোম্পানি।
সুপার রাইসের মতো নানা রকম ধানের জাত থেকেবৈশিষ্ট্য একটি জাতে নিয়ে আসার লক্ষে এখানেও কাজ চলছে। তবে সনাতন পদ্ধতিতেসংকরায়ন করে উত্তম বৈশিষ্ট্যাবলীর জন্য অপেক্ষা করার কৌশলই কেবল এখানেনিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। বরং সুনির্দিষ্ট কোনো জিন একটি নির্দিষ্ট জাত থেকেকোনো জাতে আনা হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য অন্য এক রকম নতুন প্রজনন পদ্ধতিব্যবহার করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিটির নাম মার্কার সহায়ক নির্বাচন ((marker assisted selection) সংক্ষেপে এক সধং ও বলা হয়। নির্দিষ্ট উঘঅ অংশ চিহ্নিতকরার মাধ্যমে নির্দিষ্ট জিনকে শনাক্ত করার এটি একটি নতুন ভিত্তিক নির্বাচনপদ্ধতি। এ পদ্ধতির প্রধান সুবিধা এই যে, মার্কার উঘঅ এর সাথে কোনোগুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যেমন : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কীটপতঙ্গ প্রতিরোধক্ষমতা কিংবা কোনো গুণগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন শক্তভাবে সংযুক্তথাকলে বহুসংখ্যক চারা থেকে উঘঅ নিয়ে নির্দিষ্ট উঘঅ টিকে শনাক্ত করারমাধ্যমে পরোক্ষভাবে নির্দিষ্ট বেশিষ্ট্যের উপস্থিতি সহজেই নির্ণয় করা যায়।অল্প সময়ে বহুসংখ্যক চারা গাছ মাঠে জন্মাবার আগেই এভাবে প্রয়োজনীয় গাছটিকেচেনা সম্ভবপর হয়।
শুরুতে আলোচনা করা যাক কি বুঝানো হচ্ছে ‘গ্রিনসুপার রাইস’ শব্দ তিনটি দিয়ে। অল্প উপকরণ নির্ভর উচ্চফলনশীল এবং অধিক ফলনবিশিষ্ট রোগ এবং কীটপতঙ্গ সহিষ্ণু ধান জাতকেই গ্রিন সুপার রাইস বলা হচ্ছে।এসব ধান গাছের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হবে যেন এরা কম পানিতে উত্তমফলন দিতে সৰম হয়। অর্থাৎ স্থানীয় ধানের জাতের পানি সাশ্রয়ী বৈশিষ্ট্যসংযোজন করে এরকম ধান গাছ পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া পানি ও খাদ্যোপাদানে সর্বোচ্চব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারলে এরা পানি ও পুষ্টি উপাদান সাশ্রয়ী হয়েউঠতে পারে। এছাড়া এসব জাতগুলোর কোনো কোনোটা হবে খরা সহিষ্ণু, লবণাক্ততাবা ৰারকত্বসহিষ্ণু; কোনো কোনোটা আবার হবে নানারকম রোগ সহিষ্ণু; কোনোকোনোটা এক বা একাধিক কীট প্রতিরোধী; কোনো কোনো জাতে থাকবে এক বা একাধিকবৈশিষ্ট্য যা একে ‘গ্রিন’ তথা অক্ষত অর্থাৎ সবুজ রাখতে সহায়ক হবে এবং এরাউচ্চফলনশীল হবে। সনাতন পশ্চাৎ সংকরায়ন পদ্ধতি আর আধুনিক আণবিক প্রজননপদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে উচ্চফলনশীল জাতগুলোতে সন্নিবেশন করা হবে এক একটি জিন।পাশাপাশি এদের ব্যবস্থাপনার কৌশলসমূহও উদ্ভাবন করা হবে। এভাবে সৃষ্ট জাতেরশতকরা ৭০ ভাগ হবে হাইব্রিড প্রকৃতির আর শতকরা ৩০ ভাগ হবে ইনব্রেড জাত।এভাবে উৎপন্ন প্রাথমিক পর্যায়ের লাইনগুলো পৌঁছানো হবে এশিয়া ও আফ্রিকার১৯টি দেশ ও অঞ্চলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষর জন্য। লক্ষ্য হবে এসব লাইনথেকে এলাকা ভিত্তিক কাঙিত ও প্রয়োজনীয় লাইনকে বাছাই করে নতুন জাত হিসেবেঅবমুক্ত করা। কয়েকটি ধাপে এ কাজটি সম্পন্ন করতে চান বিজ্ঞানীরা। প্রথমধাপটি হলো তিন বছরের। এ সময়ের মধ্যে উদ্ভাবিত ১৫টি উৎকৃষ্ট লাইন চলে যাবেজাতীয় ফলন পরীক্ষার লক্ষে অভিষ্ট দেশগুলোতে। এসব নির্বাচিত আফ্রিকানদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- নাইজেরিয়া, রোয়ান্ডা, তাঞ্জানিয়া, মালে, সেনেগাল, লাইবেরিয়া, মোজাম্বিক এবং উগান্ডা। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেরয়েছে- লাওস, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম। দক্ষিণ এশিয়ার তিনটিদেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান। এছাড়া রয়েছে চীনের৪টি দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল যথা- মিচুয়াম, গোয়াঙি, ইউন্নাম এবং গোইজোও।দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার এসব অঞ্চলের ধানের ফলনশতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি করা। চীন সরকার এবং বিল ও মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনেরঅর্থায়নে চলছে এ বিশাল গবেষণা কার্যক্রম।
এবার গ্রিন সুপার রাইসসৃষ্টির লক্ষ্য বেশ কিছু ভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিলেন বিজ্ঞানীরা। একটি দু’টিউন্নত জাত নয় বরং বেশ কয়েকটি উন্নত জাতকে নেয়া হয়েছে ভিত্তি জাত হিসেবে।অধিক সংখ্যক উন্নত জাতকে ভিত্তি জাত হিসেবে নেয়া এ প্রকল্পের একটি বিশেষবৈশিষ্ট্য। কোনো জাতটি অন্য সব জাতের সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে উত্তম বংশধরতৈরি করবে তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। ফলে অনেক বছর ধরে এ নিয়েপরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেয়ে অনেক উত্তম জাত নিয়ে একই সময়ে নানামুখীপরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তাতে একদিকে যেমন সময় বাঁচবেতেমনি নানা সংকরায়ন সংযোগ থেকে কাঙিত বংশধর পাওয়ার সুযোগও বেড়ে যাবে। অধিকসংখ্যক উন্নত জাত বাছাই করার আর একটি কারণ হলো এই যে, কোনো একটি জাত হয়তোঅল্প ক’টি জাতের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সক্ষম হবে এবং অন্য আর একটি জাত হয়তোঅন্য কয়েকটি জাতের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সক্ষম হতে পারে। বিভিন্ন জাতের সাথেসংকরায়নের পর উত্তম বংশধর সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে উন্নত জাতগুলোর মধ্যেপার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। সময় নষ্ট না করে সে পার্থক্যটাকে একই সময়েকাজে লাগানো এ প্রকল্পের আর একটি বৈশিষ্ট্য। এর জন্য অবশ্য দক্ষ অনেকসংখ্যক উদ্ভিদ প্রজননবিদের প্রয়োজন হবে। চীনে এরকম প্রজননবিদের সংখ্যা বিশহাজারের মতো। আর প্রকল্পের মূল কারিগর হিসেবে কাজ করছেন বেশ ক’জন চীনাবিশ্বখ্যাত উদ্ভিদ প্রজননবিদ। তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার আণবিক বংশগতিবিদ্যাতথা জিন প্রযুক্তিতেও বেশ দক্ষ। এ প্রকল্পের আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলোএকটি উত্তম জাতে সব উত্তম জিনের সমাহার নয় বরং বেশ কয়েকটি উত্তম জাতে ভিন্নভিন্ন রকম উত্তম বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনের সমাবেশ ঘটানো। এতে একইসময়ে নানা উত্তম বৈশিষ্ট্য সংবলিত অনেক রকমের ধানের সম্ভাবনাময় বংশধর পাওয়াযাবে।
চীন দেশ ধানের জন্মভূমির একটি। ফলে এখানে রয়েছেবৈচিত্র্যপূর্ণ ধানের জাত। চীনের জাতীয় জিন ব্যাংকে জমা রয়েছে ৩৪২০০০ ধানেরজাতের বীজ। রয়েছে কম্পিউটার ভিত্তিক এদের নানা তথ্য। এসব সংরক্ষিত ধানেরজাত থেকে ৫০০ রকমের বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধানের জাতের সাথে সংকরায়ন করা হবে৪৬টি ধানের উত্তম জাত। ধানের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ জিন আবিষ্কার করা হয়েছে।এসব জিনকে সন্নিবেশন করা হচ্ছে উন্নত জাতগুলোতে। ইতোমধ্যে নানা রকম সংকরায়নকর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত ফার্স্ট জেনারেশন লাইন সরবরাহ করা হয়েছে এশিয়া এবংআফ্রিকার দেশগুলোতে। বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাককে এরকম লাইন সরবরাহকরেছে চীনা বিজ্ঞানীরা। ব্র্যাকের বিজ্ঞানীরা এদেশের বিভিন্ন রকম এলাকায়এসব লাইন জন্মিয়ে চেষ্টা করবে উত্তম লাইনগুলোকে বাছাই করে নেয়ার। আর এ রকমলাইন পেলে এদের বীজ বর্ধন করে পাওয়া সম্ভব হবে কাঙিত জাত।
বাংলাদেশধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদেরও কিছু লাইন সরবরাহ করেছে চীনাবিজ্ঞানীরা। এসব লাইনের মধ্যে সম্ভাবনাময় উচ্চফলনশীল লাইন পেলে তা সরাসরিনতুন জাত সৃষ্ট করতে পারে। অথবা এ ধরনের লাইনের উত্তম বৈশিষ্ট্য আমাদেরদেশের প্রচলিত জাতগুলোতে স্থানান্তর করা যেতে পারে। তবে ফার্স্ট জেনারেশনএসব লাইন নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়াও কঠিন। এরা কোনো লাইনের চূড়ান্ত রূপনয়। তাছাড়া এদের নিয়ে কোন বড় ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়নি।
গমের জাত
জাত পরিচিতিঃ
বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী ও প্রতিভা রয়েছে। তাছাড়া সৌরভ (বারি গম-১৯) ও গৌরব (বারি গম-২০) নামে ২টি উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত অনুমোদিত হয়েছে।
কাঞ্চনঃ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক ইউপি-৩০১ এবং সি-৩০৬ এর মধ্যে সংকরায়ণ করে কাঞ্চন জাত উদ্ভাবন করা হয়। এ জাত ১৯৮৩ সালে অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের নিশান পাতা খাড়া। শীষ বের হতে ৬০-৬৮ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৩৫-৪০টি দানা থাকে। দানা সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। অন্যান্য জাতের তুলনায় দানা আকারে বড়। চারা আবস্থায় প্রাথমিক কুঁশি মাটির উপরে অবস্থান করে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৬-১১২ দিন সময় লাগে। এ জাতটি দীর্ঘ সময় ধরে চাষাবাদ হচ্ছে। বর্তমানে পাতার মরিচা দাগ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জাতটির ফলন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৩.৫-৪.৬ টন ফলন হয়। জাতটি দেশের সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী। বর্তমানে সারা দেশে কাঞ্চন গম খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় কাঞ্চন গমের আবাদ হচ্ছে।
আকবরঃ
আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (CIMMYT) মেক্সিকোতে ও টোবারী নামাক ২টি জাতের মধ্যে সংকরায়ণের পর একটি কৌলিক সারি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে বাছায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতটি আকবর নামে ১৯৮৩ সালে অসুমোদিত হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। পাতা কিছুটা হেলানো। নিশান পাতা খুবই চওড়া ও লম্বা। শীষ বের হতে ৫০-৫৫ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৭-৪২ গ্রাম। পাতার গোড়ায় সাদা অরিকল থাকে। ফসল বোনা থেকে কাটা পর্যন্ত ১০৩-১০৮ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.৫ টন হয়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় এ জাতের ফলন বেশী হয়। তবে আকবর জাতের গম দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও চাষের জন্য উপযোগী।
অঘ্রাণীঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র, মেক্সিকো হতে সনোরা/পি ৪১৬০ ই/ইনিয়া কৌলিক সারিটি ১৯৮২ সালে বাছাইকরণ নার্সারীর মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৯৮৭ সালে অঘ্রাণী নামে তা অনুমোদন লাভ করে। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি, কুশির সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা কিছুটা হেলানো, নিশান পাতা বড়। গাছের পাতা ও কান্ডে পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু লক্ষ্য করা যায়। শীষ বের হতে ৫৫-৬০ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানার রং সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৮-৪২ গ্রাম। পাতার গোড়ায় বেগুনি অরিকল থাকে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৩-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন হয়। জাতটি পাতার দাগ (ব্লাইট রোগ সহনশীল)। দেরীতে বপনের জন্য অঘ্রাণী জাতের গম বিশেষভাবে উপযোগী।
প্রতিভাঃ
থাইল্যান্ড হতে ১৯৮২ সালে প্রেরিত বাছাইকরণ নার্সারীতে কে-ইউ ১২ নামক একটি কৌলিক সারি বাংলাদেশে বাছায় করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা প্রতিভা নামে অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৮৫-৯৫ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের নিশান পাতা খাড়া। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা ও প্রতি শীষে ৩৫-৪৫ টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে বড় ও হাজার দানার ওজন ৪২-৪৮ গ্রাম। ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৫-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৮-৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। গমের প্রতিভা জাত পাতার মরিচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।প্রতিভা জাতের গম দেশের সকল অঞ্চলে চাষ করা যায়।
সৌরভঃ
আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে নেকোজারী ও ভেরী জাতের মধ্যে সংকরায়ণকৃত একটি কৌলিক সারি ১৯৮৯ সালে এদেশে এনে বাছাই করা হয় যা ১৯৯৮ সালে সৌরভ (বারি গম-১৯) নামে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা চওড়া, হেলানো ও গাঢ় সবুজ। নিশান পাতা চওড়া ও হেলানো। নিশান পাতার নীচের তলে মোমের মতো পাতলা আবরন থাকে। কান্ড মোটা ও শক্ত, ঝড় বৃষ্টিতে হেলে পড়ে না। নীচের গ্লুমের ঠোঁট বড়, প্রায় ৫ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৮টি, দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে আবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫-৪.৫ টন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী। সৌরভ গম দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী।
গৌরভঃ
আন্তর্জতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে টুরাকো ও চিলেরো জাতের মধ্যে সংকরায়ণকৃত একটি কৌলিক সারি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। খুব উৎপাদনশীল জাত হিসেবে সারিটি বাছায় করা হয় যা ১৯৯৮ সালে গৌরব (বারি গম-২০) নামে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গাছের উচ্চতা ৯০-১০২ সেমি। কুশি ৫-৬টি। পাতা গাঢ় সবুজ। নিশান পাতা খাড়া, সরু ও ইষৎ মোড়ানো। নীচের গ্লুমের ঠোঁট ছোট প্রায় ২ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, অগ্রভাগ সরু। প্রতি শীষে ৪৫-৫০টি দানা থাকে। দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৮ গ্রাম। জীবনকাল ১০০-১০৮ দিন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৬-৪.৮ টন ফলন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। এ জাতটি তাপ সহিষ তাই দেরীতে বপন করলে ভাল ফলন দেয়। বর্তমানে গম জাতসমূহের তুলনায় এ জাত ১০-১২ ভাগ বেশী ফলন দেয়। |
a74209d1-6012-493a-bb09-fff42ce9275b | ঘোড়াঘাট উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
ঘোড়াঘাট নিঃসন্দেহে একটি প্রাচীন জনপদ- ইতিহাসের নানা সুত্র থেকে সে তথ্য অবগত হওয়া যায়। মহাকালের অমোঘ নিয়মে সময়ের পট পরিবর্তন ও রাজনৈতিক উত্থান পতনের দরুণঅতীতের অনেক ইতিবৃত্ত হারিয়ে গেছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে লিখিত হয়নি এখানকার কোন অতীত বৃত্তামত্ম। বিচ্ছিন্ন কিছু তথ্য ও বিবরণী সরকারি জেলা গেজেটিয়ারে পাওয়া যায়। স্থানীয় ইতিহাস লিখনের ক্ষেত্রে তা যৎসামান্য মাত্র। যে সম লেখক প্রতিবেদক ঘোড়াঘাট এলাকা পরিদর্শক করে প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করে গেছেন তা ইতিহাস লেখনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। জনশ্রম্নতিনির্ভর কিছু ঘটনা পাওয়া যায় যার সবটা ইতিহাস সম্মত নয়। সঠিক তথ্য ও উপাত্তের দুষ্প্রাপ্যাতার কারণেই ঘোড়াঘাটের অতীত বৃত্তান্ত অনেকটা তমসাচ্ছন্ন। তারপরেও নানা উৎস থেকে আহরিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ জনপদের ধারাবাহিক ইতিবৃত্ত সর্ম্পকেই কিছুটা ধারণা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে এই আলোচ্য অধ্যায়ে।
প্রাচীনকালে ঘোড়াঘাট কোন রাজার অধীনে শাসিত হয়েছে সঠিকভাবে তা জানা যায় না। তবে মহাভারতীয যুগে ( ৫ হাজার বছর আগে) এই ক্ষুদ্র জনপদে মৎস্যদেশের অধীনে ছিল। মৎস্য দেশের রাজধানী ছিল ঘোড়াঘাট থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে ‘বিরাট’ নামক জায়গায়। বিরাট রাজার ঘোড়াঘাট আবল ছিল আলোচ্য ঘোড়াঘাটে। মহাভারতের কাহিনীতে বলা হয়েছে , রাজা বিরাটের রাজ সভায় পঞ্চ পান্ডবেরা দ্রৌপদীসহ ছদ্দবেশে ১২ বছর নির্বাসনের এক বছর অজ্ঞাত বাস করেছেন।১ পান্ডব গণ ছদ্মবেশে রাজা বিরাটের রাজবাড়িতে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। তাদের চালচলনের সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে। রাজা তাদের আচরণে মুগ্ধ হন এবং পরবর্তীতে কৌরবদের সাথে যুদ্ধ পান্ডবদের পক্ষে রাজা বিরাট অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যদিও সে যুদ্ধে রাজাবিরাট ও তৎপুত্র উত্তর মারা যান। যুদ্ধের পরে মৎস্যদেশের চরম ভাগ্যবিপর্যয় দেখা দেয়। পরবর্তীতে কে এই জনপদের রাজা হন তা জানা যায় না ইতিহাস কিংবা অন্য কোন বিবরনী থেকে।
ধারনা করা যায়, ঘোড়াঘাটের দক্ষিণে বোগদহ-সাহেবঞ্জ ও তার আশেপাশের এলাকায় একটি জনপদ ছিল। সেখানকার মাটির গভীরে প্রাচীন সমাজ সভ্যতার পরিচয়বাহী দীঘি-পুকুর, দালান-বাড়ি ও বৌদ্ধকীর্তির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। স্থানটি নরেঙ্গা রাজার রাজধানী ছিল বলে কোন কোন বিবরনী পাওয়া যায়।২খুব সম্ভব বিরাট রাজার পতনের পরে ঘোড়াঘাট এই নরেঙ্গা রাজ্যের অধীনে শাসিত হয়েছে। তবে সে শাসনের বিশদ কোন বিবরণ নেই। এখনো ঐ স্থানটি নরেঙ্গাবাদ নামেই খ্যাত। সেখানে উক্ত নামে একটি ডাকঘরও আছে। বর্তমানে ঐ স্থানটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন। ঘোড়াঘাট -গোবিন্দগঞ্জ পাকা রার উভয় পাশে বড় বড় দীঘি পুকুর। পথিকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে। দীঘিগুলোই এখন প্রাচীন সমাজ সভ্যতার স্বাক্ষী।
মৌর্য যুগঃ ( খ্রিঃ পূর্ব ৩২৪-১৮৫)
প্রাচীন ভারতবর্ষে ৬টি ভুক্তির মধ্যে পৌন্ড্রবর্ধন ভুক্তি একটি। ভুক্তি হলো তৎকালীন প্রদেশ সমতুল্য একটি বৃহৎ জনপদ। এই ভুক্তির কেন্দ্রস্থল ছিল বতমান বগুড়ার মহাস্থান গড়ে। এখান থেকেই মৌর্য সম্রাট অশোকের একটি শাসনলিপি প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধারণা পোষণ করেছেন ইতিহাসবিদগণ। মৌর্য শাসনলিপি প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধারনা পোষণ করেছেন ইতিহাসবীদ গণ। মৌর্য শাসনকালে ঘোড়াঘাট পৌন্ডবর্ধন ভুক্তির অধীনে শাসিত হয়েছে এটা নিশ্চিত। করতোয়া নদীকেন্দ্রিক প্রাচীন কিরাদীয় সভ্যতার দুটি প্রধান কেন্দ্রের মধ্যে মহাস্থান গড়ের পরেই ছিল ঘোড়াঘাট ও তৎসন্নিহিত এলাকা। খুব সম্ভব এ অঞ্চলে কিরাদ ও নিষাদ জাতির লোকদের প্রাধান্য ছিল তৎকালে। তাদের হাতেই ঘোড়াঘাট এলাকাসমেত আশেপাশের এলাকার কৃষি কাজের সূচনা হয়। মৌর্য সম্রাট অশোকের সময় বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয়বাহী একাধিক মঠ, বিহার ও স্ত্তপ-এর সন্ধান পাওয়া গেছে পৌন্ড্রবর্ধন সীমানার মধ্যে। আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে, ঘোড়াঘাটের দক্ষিণে সাহেবগঞ্জ এলাকার মাটির গভীরে প্রাচীন সভ্যতার পরিচয়বাহী নগরের অস্থিত্ব এখনো বিদ্যমান।৩ এ সভ্যতার নিদেশন মৌর্য আমলের আগের বলে দাবি করা যায়। ঘোড়াঘাট মৌর্যযুগে পৌন্ড্রবর্ধনের একটি গুরম্নত্বপূর্ণ এলাকা ছিল, যা পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের শাসনাধীনে চলে যায়।
গুপ্ত শাসন: (খ্রিঃ ৩য়- ৬৩৮ পর্যমত্ম)
মৌর্য শাসনের পরে শুরম্ন হয় গুপ্ত শাসন। তিনশত বছরের অধিক সময় গুপ্তশাসন বহাল ছিল। গুপ্তরাজারা ভাগিরথী নদীর পূর্ব দিকে রাজ্য বিসত্মার নজর দেন তৃতীয় শতাব্দীর পরে। তার আগে ভগিরথী নদী ডিঙ্গিয়ে যারা এ অঞ্চলে আসতো প্রায়শ্চিত্ত না করে তাদের সমাজে নেয়া হতোনা। কিন্তু আধিপত্য বিসত্মারের ক্ষেত্রে ঐ প্রথা বা নিয়ম বেশী দিন টিকে থাকেনি। গুপ্ত রাজারাও ভাগিরথী নদীর পূর্বাঞ্চলে রাজ্য বিসত্মারে মনোযোগী হন। তাদের রাজ্য বিসত্মারের ধারাবাহিকতায় গুপ্ত রাজাদের বেশ কয়েকজন রাজা এ অঞ্চল শাসন করেছেন। তাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। গুপ্ত যুগের শেষের দিকে পৌন্ডবর্ধন ভূক্তির ৩ টি বিষয়ের সন্ধান পাওয়া পাশ দিয়ে প্রবাহিত ‘কাটা যমুনা’ নদীর পশ্চিম তীর ছিল কোটিবর্ষ বিষয়ের পূর্ব সীমানা।এর কেন্দ্রস্থল ছিল পশ্চিম বঙ্গের গঙ্গারামপুর থানায় । প্রাচীন কোটিবর্ষ বিষয়ের সীমানার মধ্যে দামোদপুর নামে একটি স্থানের পরিচয় পাওয়া যায়(ফুলবাড়ি রেল স্টেশন থেকে ১৩ কি.মি. পশ্চিমে।) আর একই নদীর পূর্বতীর থেকে পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর পশ্চিম সীমানা পর্যমত্ম ছিল পঞ্চনগরী বিষয়ের সীমানা। বর্তমান ফুলবাড়ি ,বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হিলিসহ ঘোড়াঘাট ছিল দূর অতীতে পঞ্চনগরী বিষয়ের সীমানাভূক্ত ছোট প্রাচীন জনপদ। কারণ, ঘোড়াঘাটের সীমানার দামোদপুর নামে দ্বিতীয় আর একটি প্রাচীন জনপদ আছে। যা দক্ষিণ দামোদরপুর গুপ্তবংশীয় রাজা তৃতীয় কুমার গুপ্তের পুত্র দামোদর গুপ্তের সাক্ষ্য বহন করছে। উভয় জায়গায় পুরাতন দিঘী-পুকুরের অসিত্মত্ব এখনো রয়েছে। ঘোড়াঘাটের দামোদরপুরে আজ পর্যমত্ম কোন গুপ্তবংশীয় রাজার তাম্রলিপি আবিস্কার না হলেও ১৯১৫ সালে ফুলবাড়ীর দামোদরপুর থেকে ৫টি তাম্রলিপি আবিস্কার হয়েছে ।৪ পাঁচটি তাম্রলিপির একটি দামোদর গুপ্ত কর্তৃক ২১৪ গুপ্ত সনে (৫৪৩ খ্রি:) উৎকীর্ণ । এটি কোটিবর্ষ নগরীর সচিবালয় থেকে জারি হয়েছে। ঐ সময় পৌন্ডবর্ধন ভূক্তির ভূক্ত্যপরিক বা প্রদেশপাল ছিলেন মহারাজ দেবভট্টরক।
এখানে উলেস্নখ্য, পলাশবৃন্দকে বিষয়ের কেন্দ্রস্থল বর্তমান গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বলে কোন কোন গবেষক ধারণা করেন।৫ গুপ্ত সম্রাটদের শাসনাকালে পৌন্ড্রবর্ধন ভুক্তির সীমানা উত্তরে হিমালয় পর্বতের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে পদ্মাতীর পর্যন্ত বিসত্মৃত ছিল।৬ সে হিসেবে পলাশবাড়ী ও ঘোড়াঘাট উলেস্নখিত সীমানার মধ্যেই ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। তখন হয়তো ঘোড়াঘাটের দামোদরপুরে গুপ্তরাজাদের একটি স্থানীয় ছোট শাসন কেন্দ্র ছিল যা পরবর্তীকালে গুরম্নত্ব হারিয়ে ফেললে অন্যত্র প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে ওঠে। দামোদরপুরের একাধিক দীঘির উচ পাহাড় এখানো পথিকদের মনে নানা কৌতুহল সৃষ্টি করে । বর্তমানে বুলাকীপুর ইউনিয়নের একবটি মৌজা এই দামোদরপুর। সেখানে প্রায় কাছাকাছি ৪/৬ টি দীঘি আছে। এখানো দীঘিগুলো আশেপাশে বসত গড়ে ওঠেনি।
প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য ১৯৩০ সালের হিলির বৈগ্রাম থেকে প্রথম কুমার গুপ্তের যে তাম্রলিপি আবিষ্কার হয়েছে তাতে পলাশবৃন্দক ও পুরাণবৃন্দকহরি স্থানের নাম পাওয়া যায়। আলোচ্য ঘোড়াঘাটের আশেপাশে পালশা ও শ্রীহবিহারী নামে দুটি মৌজা আছে। উভয় স্থানে পুরাকীর্তির চিহ্ন বিদ্যমান। খুব সম্ভব তাম্রলিপির পলাশ বৃন্দক ও পুরাণবৃন্দকহরি নামের অপভ্রংশ। সেই গুপ্ত রাজাদের শাসনাকালে এতদাঞ্চলে গড়ে ওঠা বৌদ্ধকীর্তি সমূহ ধ্বংস হয় গুপ্তবংশীয় রাজা শশাংঙ্খের আমলে। ৫৯৩-৬৩৮ খ্রিঃ পর্যমত্ম রাজা শশাংকের রাজত্বকাল। তার রাজধানী ছিল বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণে। তার রাজ্য গৌড় রাজ্য বলে পরিচিত ছিল এবং তিনি বৌদ্ধ বিদ্বেষী ছিলেন। তার অত্যাচারে ঘোড়াঘাটের আশেপাশে গড়ে ওঠা বৌদ্ধকীর্তিসমূহ ধ্বংস হয়ে যায়। তার অত্যাচারেই ঘোড়াঘাটের দক্ষিণে বোগদহ সাহেবগঞ্জ এলাকার ( বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার অমত্মর্গত) বৌদ্ধ সভ্যতার পরিচয়বাহী নগর ও উপাসনালসমূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সমসাময়িক কালে বৌদ্ধধর্ম অনুযায়ী কামরুপের রাজা ভাস্করবর্মা কনৌজ অধিপিতি হর্ষবর্ধনের সাথে মিত্রতাসুত্রে আবদ্ধ হয়ে উত্তর দিক থেকে গৌড়রাজা আক্রমণ করে। ৬৩৮ খ্রিঃ এর যুদ্ধে গৌড়রাজ শশাংক পরাজিত ও নিহত হয়। কিছু দিনের জন্য সমুদয় পৌন্ড্রবর্ধন অঞ্চল ভাস্করবর্মার শাসনাধীনে চলে যায়। বলতে গেলে গুপ্তদের শাসন এখান থেকেই শেষ হয়।
পাল শাসনঃ (৭৫৫-১১৭৫ খ্রিঃ)
পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল ছিলেন গুপ্তদের অধীনস্থ একজন সামমত্ম রাজা। তার জয়স্কন্দবর বা রাজধানী ছিল ঘোড়াঘাট এর পলস্নরাজ নামক স্থানে।৭ সেখানে নগর, দূর্গ, দীঘিপুকুর ও মন্দিরাদি ছিল সুসজ্জিত। এখনও ঘোড়াঘাটের পালশা, গোপালপুর, পলস্নরাজ, বেলওয়া সেই পাল রাজাদের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। পালরা ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় ৪০০ বছর। পালরাজা গোপাল মাৎস্যন্যায় যুগের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে কতিপয় আমত্য ও ছোট রাজাদের পরামর্শে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পরে গুপ্ত দের প্রশাসনিক ও রাজস্ব এলাকাকে অক্ষুন্ন রেখে প্রথম দিকে পৌন্ডবর্ধন নগরীতেই রাজ্যর কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তোলেন রাজধানী। সেখানে রাজধানী হলেও ঘোড়াঘাট তার পার্শ্ববর্তী জনরম্নপে শাসিত হয়েছে সুদীর্ঘকাল। পালদের এলাকা বরেন্দ্র ভূমিকে জনক ভূ হিসেবে দাবি করতেন। অথ্যাৎ পিতৃভূমি। ঘোড়াঘাটের মোট ভূমির প্রায় ৬৫ ভাগ লাল বরেন্দ্র ভূমি। প্রথম রাজা গোপালের মৃত্যুর পরে পুত্র ধর্মপাল ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তার সময় পাল রাজ্যের যেমন বিসত্মৃতি ঘটে তেমনি বৌদ্ধ ধর্মেরও বেশ উন্নতি হয়। তিনি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বিক্রমশীলা বৌদ্ধ বিহার ও কুমিলস্না জেলার ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।৮
পালযুগের যে সমসত্ম কীর্তি ঘোড়াঘাট উপজেলা সীমানায় রয়েছে সে সব স্থানের নাম একটু আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে। তার মধ্যে ঘোড়াঘাটের পালশা ইউনিয়নের বেলওয়া গ্রামে প্রাপ্ত ২ টি তাম্র লিপি বেশ তাৎপর্যময়। ১৯৪৬ সালে বামনদীঘির দক্ষিণপাড়ে বসবাসকারী খাড়ে সাঁওতালের উঠোন থেকে চুলা খনন কালে দেড় ফুট মাটির নিচে ২ টি তাম্রলিপি আবিষ্কার হয়। তার একটি ছিল রাজা মহীপালের ( ৯৮৮-১০৩৮ খ্রিঃ ) এবং অপরটি ছিল পৌত্র তৃতীয় বিগ্রহ পাল এর (১০৫৫-১০৭০ খ্রিঃ )। প্রথম মহিপালের তাম্রলিপি দ্বারা তার পঞ্চম বিষয়ের অমত্মর্গত পুন্ডলিকা দূতক এর মাধ্যমে পৌন্ডবর্ধন ভুক্তির অমত্মঃপাতি পঞ্চনগরী বিষয়ের অমর্ত্মগত পুন্ডরিকা মন্ডলিস্থ ফাণিতবীথির অধীন ৩ খানা গ্রাম দান করেন। দান গ্রহণ কারী ছিলেন হসিত্মদাস গোত্রের ব্রাহ্মণ জীবথর শর্মা এবং দানের কিছু অংশ ছিল গণেশ্বর সমেত গ্রাম পুস্করিনীর জন্য এবং এ প্রতিষ্ঠানের বিগ্রহের নাম ছিল গণেশ্বর। দ্বিতীয় তাম্রশাসন দ্বারা মহারাজা তৃতীয় বিগ্রহপাল কর্তৃক শ্রীত্রিলোচন নাম দূতক এর মাধ্যমে পৌন্ডবর্ধন ভুক্তির অসিত্মপাতি ফাণিতবীথি বিষয়ের অমত্মর্গত পুন্ডরিক ন্ডলের অধীনে বেলওয়া ও তাম্রলিপিতে উলেস্নখিত ঘোড়াঘাটের চকবয়রা ও বেলওয়া ( বেলস্নাবা )- গ্রাম দুটি যে পাল আমলে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রথম মহীপালের তাম্রশাসনে যে লক্ষ্ণীন্দর দূতক এর নাম উলেস্নখ আছে সেই সুত্র ধরেই এ অঞ্চল বহুল প্রচার লাভ করেছে ‘ বেহুলা লখীন্দরের’ উপাখ্যান। ঐ সময় ঘোড়াঘাটের উত্তরে নবাবগঞ্জ থানা সীমানায় মাহমুদপুর ইউনিয়নের চকজুনিদের পালদের একটি টাকশাল ছিল মর্মে জানা যায়। ১০ঐ স্থানটি বেহুলার বাসর ঘর নামে অবহিত। খুব সম্ভব বেলওয়া নামক স্থানে পালদের পুন্ডরিকা মন্ডলের সাথে নবাবগঞ্জের ছোট শাসন কেন্দ্রের সর্ম্পক ছিল যা উপরে বর্ণিত তাম্রলিপির পাঠ থেকে জানা যায়। তৎকালে এ অঞ্চল হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্টি ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও বসবাস করতো বলে ঐ দুটি তামশাসন আমাদেরকে জানিয়ে দেয়। চকজুনিদ এলাকার পাল আমলের একাধিক নির্দশনের ধ্বংসাবশেষ এখানো বিদ্যমান। ২০০৭ সালে সেখানকার কালাদূর্গীর ধাপ (ঢিপি) আংশিক খননের পরে সেটি বৌদ্ধকীর্তি বলে চিহ্নিত হয়েছে।
সেন আমলঃ ( ১১৬২-১২০৩ খ্রিঃ)
সেনগণ সম্ভবত চালুক্য রাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে বঙ্গদেশে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলের প্রথমে বসবাস আরম্ভ করেন। প্রথম দিকে তারা পালদের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন । পাল বংশের দূর্বলতার সুযোগে একাদশ শতাব্দীতে সামমত্ম সেন ও তার পুত্র হেমমত্ম সেন পশ্চিমবঙ্গে একটি ক্ষুদ্র রাজ্য স্থাপন করেন।১৫ সেন রাজারা হলেন সামমত্ম সেন, হেমমত্ম সেন, বিজয় সেন, বলস্নাল সেন, লক্ষণ সেন, পুত্র বিশ্বরম্নপ সেন ও কেশব সেন সহ ৭ জন রাজা। তাদের রাজধানী ছিল গৌড়ের লক্ষ্ণণাবতীতে। রাজা বিজয় সেনের মৃত্যুর পরে (১১৫৮) খ্রিঃ বৌদ্ধ ও হিন্দু নাগরিকগণ সেন শাসনে চরম অত্যাচারে জীবন বাঁচাতে চীন, তিববত, নেপাল, প্রভৃতি দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে সময় ঘোড়াঘাট অঞ্চলের বৌদ্ধকীর্তি সমূহ পরিত্যক্ত হয়। লক্ষ্ণণ সেনের সময় তার রাজ্যের পূর্ব সীমানা পূর্বদিকে ( কামরম্নপের অংশ ব্যতীত ) ঘোড়াঘাট সহ ঢাকার সোনারগাঁ পর্যমত্ম বিসত্মৃত ছিল। ঘোড়াঘাটের উত্তরে চতরা হাট এলাকার রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার অমত্মর্গত নীলগড় কামরম্নপ রাজ্যের সীমানা ভুক্ত ছিল। সেখানে সেন বংশীয় রাজাদের আধিপত্য অটুট ছিল। সেন শাসনামলে কামরম্নপের রাজ্যভুক্ত রঙ্গপুরের দক্ষিনাঞ্চল ( চতরা হাট) সেন শাসন মুক্ত ছিল। যাহোক রাজা লক্ষ্ণনসেন এর রাজত্বের শেষ দিকে ১২০৩ খ্রিঃ মুসলিম তুর্কী বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন ব্খতিয়ার খলজী মাত্র ১৭ জন ঘোড়াসওয়ার সমেত অতর্কীতে নুদীয় নগরী আক্রমণ করে রাজা লক্ষন সেনকে পূর্ববঙ্গে বিতাড়ন করে বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রথম মুসলিম রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন।
তুর্কী শাসনঃ ( ১২০৩-১২২৭ খ্রিঃ)
তুর্কী বীর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন-বখতিয়ার খলজি ১২০৩ খ্রিঃ বরেন্দ্র বিজয়ের পরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন গৌড়ের লক্ষ্ণণাবতীতে (লাখনেসŠতি) । বিজিত অঞ্চলে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে ৩টি বিভাগে ভাগ করে তিন জন শীর্ষস্থানীয় আমীরকে স্থানীয় শাসনকর্তা ( মুকতা) হিসেবে প্রেরণ করেন। তখনকার দিনে প্রশাসনিক এই বিভাগগুলো ইকতা এবং ইকতার শাসনকর্তা নামে অভিহিত ছিল। ইকতাগুলো হলো লাখনৌতি, গঙ্গাতীর ও বরসৌলা। শেষোক্ত ‘বরসৌলা’ আইন ই- আকবরীতে সরকার ঘোড়াঘাটের অমত্মর্গত বরসৌলা এর সর্ম্পক থাকতে পারে বলে বর্ণিত হয়েছে।১৬ ঘোড়াঘাটের উত্তরে নবাবগঞ্জ এর ভাদুরিয়া বাজার থেকে আনুমানিক ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে রাসত্মার ধারে বড়শৌলা নামে একটি গ্রাম আছে। গ্রামের আশেপাশে দীঘি পুকুর সহ কিছু পুরাকীর্তির চিহ্ন নজরে পড়ে। খুবসম্ভব বীরশালা ( সেনানিবাস) থেকে বরশৌলা নামটি উৎপত্তি ( যদিও এটি কোন মৌজা নয়) এই বরশৌলায় বখতিয়ার এর পূর্বাঞ্চলীয় ইকতা ছিল বলে অনুমান করা যায়। এই স্থান থেকে উত্তর পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে ( ভাদুরিয়ার উত্তরে) প্রাচীন হরিনাথপুর দূর্গের অবস্থান । এই দূর্গের পূর্ব দিকেই বখতিয়ারের ইকতা ছিল বলে তা স্থানের নাম ও আশেপাশের পুরাকীর্তির দৃষ্টে অনুমান করা যায়। বখতিয়ারের বিজিত অঞ্চলের পূর্ব সীমানা যে করতোয়া নদী পর্যমত্ম বিসত্মৃত ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। এই বরশৌলা ইকতার উত্তর সীমানা নির্দেশ করা যায় নবাবগঞ্জ থানার উত্তর পূর্ব সীমানায় ভোটারপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঘিরনাই নদী। ঘিরনাইয়ের উত্তরপাড়ে বর্তমান রংপুর জেলার অন্তর্গত হলেও অতীতে কামরুপ রাজ্যের সীমানাভুক্ত ছিল। সমগ্র পাবর্তীপুর , নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, ফুলবাড়ী, হাকিমপুর (কাটাযমুনার পূর্বপাড়) , ঘোড়াঘাট এবং পাঁচবিবি থেকে পূর্বদিকে শেলর্ষ ( বগুড়া) পরগণার অংশ বিশেষ নিয়ে বরশৌলা ইকতার সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল বলে অনুমান করা যায়। যার কেন্দ্রস্থল ঘোড়াঘাট এর উপকণ্ঠে বড়শৌলায় ছিল। এখান থেকেই সমগ্র ইকতা। এই ইকতার প্রথম শাসকর্তা ছিলেন বখতিয়ার খলজির অন্যতম আমীর আলীমর্দান খলজি। তার সময়ে এ স্থান মর্দান কোট নামেই খ্যাত থাকলেও পরে ঘোড়াঘাট হিসেবেই সমধিক পরিচয় লাভ করে। বরশৌলা গ্রামের উত্তর পশ্চিম দিকে এবং পূর্ব দিকে কানাগাড়ী এলাকার বড় দীঘির চতুপাশে যে বিসত্মীর্ণ জমি রয়েছে সেখানেই আলীমর্দান খলজীর সেনা ছাউনি ছিল এমনটা অনুমান করা যায়। যেহেতু ইকতার কেন্ত্র কোথায় ছিল তা এখনো সঠিকভাবে চিহ্নিত হয়নি ইতিহাসের পাতায়। তাই এখানে ইকতা থাকার পক্ষে সম্ভাব্য স্থান নির্দেশ করা যায়।
ধারণা , কামতা রাজার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যই এখানে ইকতার কেন্দ্র গড়ে তোলা হয। নিশ্চয় ঐ সময় ঘোড়াঘাটের গুরম্নত্ব সমর কৌশলীরা বুঝতে পেরেছিরেন। উলেস্নখ্য ঘোড়াঘাটের দক্ষিণ- পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর পূর্বপাড়ে দশম শতাব্দীতে গড়ে উঠা বর্ধনকোট নগরীর কেন্দ্রস্থল ছিল গোবিন্দগঞ্জে। এটা কামরম্নপের সীমানাভুক্ত একটি জনপদ। কামরম্নপ রাজ্যের দ্বিতীয় আর একটি জনপদ ছিল ঘোড়াঘাটের কয়েক মাইল উত্তরে রংপুরের পীরগঞ্জ থানার চতরাহাটে। যা কামত্মদুয়ার নামে খ্যাত। এ ছাড়াও পূর্ববঙ্গে লক্ষ্ণণসেনের আক্রমণ ঠেকাতে সীমামত্ম এলাকা ঘোড়াঘাটে আলীমর্দান খলজি একটি দূর্গ স্থাপন করেন।১৭ তবকাতে নাসিরীয় ভাষ্য মতে ১২০৫ সালে বখতিয়ার খলজি তিববত আভিযানে বের হন ১০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে। তার বাহিনী বিশাল খরস্রোতা করতোয়া নদীর তীর ধরে ১০ দিনের পথ অতিক্রম করে কামরম্নপ সীমানায় পৌছে যায়। ১২০৬ সালে বখতিয়ার তিববত অভিযানে ব্যর্থ হন এবং বহু যোদ্ধা হারিয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় দেবকোটে ফিরেযান। এর কয়েক দিন পরেই বরসৌলা ইকতার আমীর আলী মর্দান খলজির হাতে বখতিয়ার খলাজি নিহত হন। পরবর্তী আমীর গণ ১২২৭ খ্রিঃ পর্যন্ত তুর্কী শাসন পরিচালনা করেন। এর পরে কত দিন পর্যন্ত ঘোড়াঘাট অঞ্চলে তুর্কীশাসন বহাল ছিল তা অজ্ঞাত।
এখানে উলেস্নখ্য, তুর্কীশাসনের ফলে ঘোড়াঘাট বা বরসৌলা ইকতায় মুসলমান যোদ্ধা ও কর্মচারির আগমন ঘটেছিল নিশ্চয়। তারা সেনাচৌকির আশেপাশেই থাকতো। মুসলিম সুলতানাৎ প্রতিষ্ঠা হওয়ার দরম্নণ নানা পেশার লোক তথা পীর, দরবেশ, আলেম, মওলানা ব্যবসায়ী ও ধর্মপ্রচারকদের আগমন ঘটে এ অঞ্চলে। তাদের মেহনতে এই অমুসলিম এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজ চলতে থাকে। ইসলাম প্রচারের এই ধারাবাহিকতা পরবর্তী সুলতানী আমলেও অব্যাহত ছিল। নও মুসলিমদের ধর্মীয় জ্ঞান দানের জন্য স্থানে স্থানে মসজিদ, মক্তব্য, মাদ্রাসা ও খানকা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়।১৮ এখানে ওখানে গড়ে ওঠে মুসলিম বসত। ফারিসত্মার ভাষ্য মতে বখতিয়ার খলজী রঙ্গপুর দখল করে সেখানে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাসের এ কথা মেনে নিলে রঙ্গপুর বরসৌলা (ঘোড়াঘাট) ইকতার মধ্যে ছিল কোনই সন্দেহ নেই।
সুলতানী আমলঃ (১২২৭-১৫৩৮ খ্রিঃ)
সুলতানী আমলে প্রায় ৪৫ জনের বেশি সংখ্যক সুলতান ঘোড়াঘাট অঞ্চলসহ বঙ্গ শাসন করেন। এরি মধ্যে বঙ্গ কখনো দিলস্নীর অধীনে আবার কখনো স্বাধীনভাবে শাসিত হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ১২৫৫ সালে লক্ষ্ণণাবর্তীর তৎকালীন শাসনকর্তা মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন ইউজবক (মঘিসউদ্দিন ইউজবক) ঘোড়াঘাটের করতোয়া নদী পার হয়েই কামরূপ রাজ্য আক্রমণ করেন। ১২৫৭ সালের এই অফিযানে তিনি বিপর্যয়ের সম্মুখিত হন।১৯ পরবর্তী সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ এর সময় (১৪৩৫-১৪৫৯ খ্রিঃ) দিনাজপুর ভূ-ভাগের ঘোড়াঘাট অঞ্চল নাসিরাবাদ নামে পরিচিত লাভ করে। সেখানে তার একটি টাকশাল ছিল।২০ এর পরে নাসিরম্নদ্দীনের পুত্র সুলতান রম্নকনউদ্দিন বরবক শাহ ১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রিঃ পর্যমত্ম রাজত্ব করেন। তার সময়ে ঘোড়াঘাটে পূর্ব-উত্তর দিকে কামরূপের কামেশ্বর পদবীধারী রাজাদের আধিপত্য বজায় ছিল। প্রকাশ থাকে যে, এক সময় রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর তথা গোটা উত্তর বঙ্গই ঘোড়াঘাট নামে অভিহিত হতো। ( শেরপুরের ইতিহাস, অধ্যক্ষ মোঃ রোস্তম আলী) ১৯৯৯, পৃষ্টা- ১৫
কামরূপ রাজ্যের সীমামত্ম এলাকার প্রজাগণ নদী পার হয়ে ঘোড়াঘাট এলাকায় প্রবেশ করে ফসল ও জান মালের ক্ষতি সাধন করতো। এমন অবস্থা দমনের উদ্দেশ্যে গৌড়ের সুলতান রম্নকনউদ্দিন বরবক শাহ সেনাপতি ইসমাইল গাজীকে ঘোড়াঘাট অঞ্চলে প্রেরণ করেন। প্রথম দিকে নওগাঁর মাহিসমেত্মাষের যুদ্ধে গাজী পরিজিত হয়ে দ্রম্নত সটকে পড়েন এবং ১২ জন পাইক নিয়ে ঘোড়াঘাট অঞ্চলে প্রবেশ করেন। এখানে তিনি প্রাচীন পরিত্যক্ত একটি গড়ে ১২ জন পাইক সহ অবস্থান করেন। এই বার পাইক থাকার কারণেই স্থানটির নাম বারপাইকের গড় হয়েছে। পরে সুযোগ বুঝে চতরাহাটের ‘নীলগড়ে’ বসবাসরত রাজা কামেশ্বরের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আরো জানা যায়, ঘোড়াঘাটের পশ্চিমে ডুগডুগী মোকাম থেকে যুদ্ধের ডুগডুগি বেজে উঠেছিল। এ জন্য পরবর্তী সময়ে সে স্থান ডুগডুগি মোকাম নামে পরিচিত হয়।২১ এখানেই পাইকপাড়া নামে এই মৌজা আছে। যুদ্ধের পাইক সেখানে থাকতেন বলে এ নামকরণ হয়েছে। যাহোক ১৪৬০ সারে কামরূপের আংশিক বিজিত হয়েছিল গাজীর দ্বারা। গাজীই সর্বপ্রথম কৃতিত্বের অধিকারী যিনি কামরূপ-রঙ্গপুরের সেনবংশীয় রাজা কামেশ্বরকে পরাজিত করে প্রাচীন রঙ্গপুরকে মুসলিম সুলতানাতের অধীনে আনেন। ইসলাম প্রচারের যে ধারা বখতিয়ারের আমলে শুরম্ন হয় অনেকটা পূর্ণতা পায় শাহ ইসমাইল গাজীর আমলে। একই সাথে তিনি বিজিত অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তার চেষ্টায় কামরূপ ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে ইসলামের বাণী প্রচারিত হয়। তার ধর্মানুরাগ, আচরণ ও কর্তব্য কাজে নব দীক্ষিত মুসলমানরা নব জীবনের সন্ধান পান। ক্রমে গাজীর সুনাম চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘোড়াঘাট দুর্গের অধিনায়ক ভান্দুসী রায় ঈর্ষান্বিত হন এবং সুলতানের আগে গিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক উক্তি করেন যে, গাজী কামরূপের পরাজিত রাজার সাথে আতাত করে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন।২২ সুলতান এ সংবাদ আবগত হয়ে গাজীকে ধৃত করে শিরোচ্ছেদ করেন। গাজীর খন্ডিত মসত্মক গৌড়ে সুলতানের দরবারে আনীত হয়। পরে সুলতান ভান্দুসী রায়ের ষড়যন্ত্র অবগত হয়ে গভীর অনুশোচনা করেন এবং শাহী সমাধি ক্ষেত্রে দাফনের ব্যবস্থা করেন। রংপুর, দিনাজপুর ও উড়িষ্যায় শাহ ইসমাইল গাজীর স্মৃতি বিজড়িত দরগাহ ও মাজার আছে। এর মধ্যে ঘোড়াঘাটের সাহেবগঞ্জ মৌজায় পাকা রাসত্মার পশ্চিম ধারে ইসমাইল গাজীর একটি সমাধি আছে। এ ছাড়াও চতরাহাটের উপকন্ঠে কাঁটাদুয়ারে প্রধান সমাদি, পীরগঞ্জের বড়দরগা, পীরগাছার বড় দরগাহ ও উগিষ্যার গড় মান্দারণে ইসমাইল গাজীর সমাধি ও দরগাহ আছে। সুলতান রম্নকনউদ্দিন সমগ্র দিনাজপুর সহ গৌড়রাজ্য শাসন করে ১৪৭৬ খ্রিঃ মারা যান। এর পরে শুরম্নহয় হোসেন শাহী শাসন। তবে সেনবংশীয় রাজা নীলাম্বর কামতা রাজ্যের শাসক ছিলেন এ সময়। তার আমলে ঘোড়াঘাট ও রংপুরের একাধিক প্রতিরক্ষামূলক দুর্গ নির্মাণ কিংবা সংস্কার করা হয়েছিল।
১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিঃ পর্যমত্ম আলাউদ্দিন হোসেন শাহ গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি সমগ্র বাংলার বাইরেও আধিপত্য বিসত্মার করেছিলেন। হোসেন শাহ এর আমলে দিনাজপুর জেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরবর্তী কিছু এলাকা কামতা রাজ্যের অধীনে ছিল। তার রাজাছিলেন কামতেশ্বর উপাধিধারী সেন বংশীয় রাজারা। তাদের দক্ষিণাঞ্চলী রাজধানী ছিল ঘোড়াঘাটের কয়েক মাইল উত্তরে চতরাহাটের উপকন্ঠে নীলগড়ে। জানা যায়, এই ঘোড়াঘাট থেকেই হোসেন শাহ আসাম অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। তিনি কামতেশ্বর রাজা নীলাম্বরকে পরিজিত (১৪৯৩ সালে) করে ঐসমসত্ম এলাকা গৌড়রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করেন। যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন পুত্র নশরত শাহ। হোসেন শাহ কুড়িগ্রাম জেলার ভিতরবন্দ এলাকা দখল করে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন ৯১২ হিঃ ২২ জমাদিউল আউয়াল (১৫০৬ খ্রিঃ) তারিখে। তিনি কাটাদুয়ারে শাহ ইসমাইল গাজীর মাজার সংস্কার করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন। ঘোড়াঘাটের পশ্চিম উত্তরে (হিলি রোডে) সহরগাছি মৌজায় একটি বড় দীঘির পাড়ে অবস্থিত সুরা মসজিদটি আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এর আমলে নির্মিত বলে গবেষকদের ধারনা। এই সুলতানের আমলে খুরাসান অঞ্চলের তুরাবর্তী বংশের কাকশাল গোত্রের লোকজন এসে ঘোড়াঘাটে আবাসস্থল গড়ে তোলেন। সুলতান তাদেরকে এ অঞ্চলে জায়গীর প্রদান করে কামরূপ রাজ্যের যে কোন আক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন। সে সময় বরবক শাহ কর্তৃক নির্মিত দুর্গের সংস্কার সাধন করেছিলেন তিনি।২৩ এই সময় থেকেই ঘোড়াঘাটে কাকশাল গোত্রের লোকজনের প্রধান্য লাভ করে।
হোসেন শাহ গৌড়ে থাকলেও তিনি একডালা দুর্গ ও ছোট পাড়ুয়াতে সময় সময় অবস্থান করতেন। এই একডালা দুর্গের অবস্থান পাঁচবিবির কসবা নামক স্থানে। ছোট পাড়ুয়ার অবস্থান ঘোড়াঘাট থেকে ১৫ মাইল পশ্চিমে বলিহারি বা বলাহার গ্রাম। পালশা ইউনিয়নের পুড়ইল গ্রাটিকেই অতীতের পাড়ুয়া নামে আমারা অভিহিত করতে পারি। যেহুতু ঐ দুটি ঐতিহাসিক স্থান এখনো নির্ণিত হয়নি। হোসেন শাহের পরে পুত্র নশরত শাহ সিংহাসনে বসেন ১৫১৯ সালে। তার আমলে ঘোড়াঘাট শহরের সংস্কার সাধিত হয় এবং তার নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করেন নশরতাবাদ। সেখানে একটি টাকশাল স্থাপিত হয়। এই নশরতাবাদ টাকশাল থেকে ৯২৪ হিজরীতে মুদ্রা জারি হয়েছিল। খুবসম্ভব এ টাকশাল ছিল ঘোড়ঘাটের লালদহ বিলের মধ্যখানের স্থলভাগের উপরে। দঃ জয়বেদপুর মেওজায় চর্তুদিকে পরিখা বেষ্টিত এক ভূখন্ড এখনো দৃষ্টিগোচর হয়। এমন সুরক্ষিত স্থানেই টাকশাল থাকা সম্ভব। নশরত শাহ এর আমলে আসাম আভিযান সাফল্যমন্ডিত হয় এবং আসামের রাঙ্গামাটি নামক স্থানে একটি ফৌজদার স্থাপিত হয়।২৪ রাঙ্গামাটি বিজিত হওয়ার ফলে বিশাল এক ভূখন্ড নশরত শাহ এর শাসনাধীনে আসে। ১৫৩২ সারে নশরত শাহ মারা গেলে পুত্র ফিরোজ শাহ সিংহাসন লাভ করেন। তিনিও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। তার চাচা গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ ক্ষমতা দখল করেন। তার আমলেও ঘোড়াঘাটের নশরতাবাদ টাকশাল অটুট ছিল। ১৫৩৮ সালে পাঠান বীর শেরখান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেন। এ সময় থেকেই বঙ্গে পাঠান রাজত্বের সূচনা হয়। ঘোড়াঘাট অঞ্চল পাঠানদের শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে পরবর্তী মোগল যুগ পর্যন্ত টিকে ছিল।
বলতে গেলে ঐ সময়ে ঘোড়াঘাট থেকেই পাঠানরা উত্তরে রংপুর, কামরূপ, আসাম ও ঢাকা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। যখন যে এলাকা দখলে এসেছে সেখান পাঠানরা জায়গীরদারী নিয়ে সলতানের পক্ষে কাজ করেছেন। গড়ে তুলেছেন মুসলিম স্থাপনা। ঐ সমস্ত এলাকায় ইসলাম প্রচারের কাজে পীর দরবেশ গণ দিবা রাত্রি পরিশ্রম করে গেছেন।
পাঠান আমলঃ (১৫৩৯-১৫৭৬ খ্রিঃ)
১৫৪০ সালে কনৌজের যুদ্ধে মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে পরাজিত করে শেরখান দিল্লীর মসনদে আরোহণ করেন। এর আগে তিনি শেরগড় দুর্গ অধিকার করে শেরশাহ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তখন বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন খিজির খান। বাংলা ছিল দিল্লীর অধীন। শেরশাহ শাসনতান্ত্রিক সুবিধার জন্য সমগ্র বাংলাকে ২৪টি শিক ও ৭৮৭ টি মহালে/পরগণায় (ছোট শাসন কেন্দ্র) বিভক্ত করেন। শিকগুলো সরকার নামেই পরিচিত ছিল। ১৫৩৮-৫৬ সালের মধ্যে বগুড়ার শেরপুরে একটি শিক ছিল। শিক এর শাসনকর্তা শিকদার নামে পরিচিত। পরে এ স্থান শেরপুর মুর্চা বা সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়।২৫ সামসাময়িককালে গৌড়ের পূর্ব দিকে ঘোড়াঘাট একটি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে বিশেষ শুরুত্ব লাভ করে। উভয় স্থান করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। সুলতানী আমলে আগত কাকশাল ও পাঠনদের চেষ্টায় সমৃদ্ধ শালী জনপদে পরিণত হয় ঘোড়াঘাট। গৌড়ের একাধিক পাঠান সুলতান কামতা রাজ্যের আক্রমণ থেকে রাষ্ট্রের প্রান্তসীমা রক্ষার জন্যে কতকগুলো পাঠান সরদারকে ঘোড়াঘাটে জায়গীর প্রদান করেন। শেরশাহের মৃত্যুর পরে তার পুত্র ও কয়েক জন সুর উপাধিধারী শাসকের নাম অবগত হওয়া যায় ইতিহাস থেকে। ঐ সময়ে পার্শ্ববর্তী কামরূপরাজ্যের রাজাদের শ্যেন দৃষ্টি এ অঞ্চলের উপরে পড়ে। ঘোড়াঘাট থেকেই তা প্রতিহত করা হয়। ঐ সময়ের কোন নিদর্শন ঘোড়াঘাটের কোথাও টিকে নেই। এর পরে করবানী বংশের শাসন শুরু হয়। কররানী বংশের শাসকদের সাথে মোগলদের সর্ম্পকের অবনতি ঘটে। এতে উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫৭৬ সালের ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে দাউদখান কররানীর পতন ঘটে। মোগল শক্তির পক্ষ্যে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন সেনাপতি মুমিন খান। এ জন্য তিনি আকবরের নিকট থেকে খানে খানন উপাধি লাভ করেন। পাঠান শক্তির পতন শুরু হলেও ঘোড়াঘাট, শেরপুর পাবনার চাটমোহর এলাকাতে তাদের কর্তৃত্ব বহাল ছিল অনেক দিন। মোগল অভিযান প্রতিহত করার লক্ষ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পাঠান দলপতিদের আক্রমণ অব্যাহত ছিল।
মোগল শাসনঃ (১৫৭৬-১৭২৭ খ্রিঃ)
সম্রাট বাবর মোগল সাম্রাজ্যের গোড়া পত্তন করলেও তার সময়ে রাজ্যের বিস্তৃতি ও স্থায়ীত্ব হয়নি। এর সামান্য উন্নতি লক্ষ্য করা যায় তার পুত্র হুমায়ুনের সময়ে। হুমায়ুনের মৃত্যুর পরে তার একমাত্র নাবালক পুত্র আকবর সিংহাসনের আরোহণ করেন। অল্প বয়স্ক আকবরের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বৈরাম খাঁ। ১৫৭৬ খ্রিঃ রাজমহলের যুদ্ধের পরে বঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ বিজয়ের দিকে দৃষ্টি পড়ে সম্রাট আকবরের। এ অভিযানের বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পূর্ব বাংলার ১২ ভূঁইয়া নামক জোট শক্ত |
3c547781-c031-4cfb-9284-32c639d68f85 | মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন। যেমনঃ-
(১) বিনামূল্যে বই বিতরণঃ২০১০ খ্রিঃ হইতে সরকার মাধ্যমিক স্তরে (স্কুল ও মাদ্রাসায়) বিনামূল্যে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করিয়াছে।
(২) কর্মকর্তা নিয়োগঃশিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিদর্শন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান, বিদ্যালয় ভিত্তিক মূল্যায়ন(SBA) সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে আঞ্চলিক অফিস, জেলা শিক্ষা অফিসে গবেষণা কর্মকর্তা ও সহকারী পরিদর্শক এবং উপজেলায় উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নিয়োগ প্রদান করা হইয়াছে।
(৩) প্রশিক্ষণঃশিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য TQI-SEP প্রকল্পের অর্থায়নে সারাদেশব্যাপী শিক্ষকদের CPD-1, CPD-2 ও ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হইতেছে।
(৪) মা সমাবেশঃবিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের অনুপস্থিতি হ্রাস, ঝরেপড়া প্রতিরোধ এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে স্কুল ভিত্তিক মা সমাবেশ শুরু করা হইয়াছে।
(৫) সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিঃ২০১০ খ্রিঃ এসএসসি পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে শুরু হইয়াছে। ২০১১ খ্রিঃ দাখিল পর্যায়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরু হইবে। এই বিষয়ে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা হইয়াছে।
(৬) সেকেন্ডারী এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (SESDP) :
সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিদ্যালয় ভিত্তিক মূল্যায়ন, কৃতিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রভৃতি এই প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এই প্রকল্প কাজ করছে। জেলা ও উপজেলায় উক্ত প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ বিদ্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করছেন।পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন, এছাড়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তথ্য সংরক্ষন, আদান প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। |
92fc53c9-3174-4fed-b4f1-75a66802fe2e | উপরে বর্ণিত পাকা কবরের স্থান থেকে আনুমানিক ৪০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পাকা রাসত্মার পশ্চিম ধারে সামান্য টিলা সদৃশ একটি জায়গা আছে। এর পশ্চিম ধারে ঢালু স্থানে পাশাপাশি দুটি সমাধি রয়েছে। সমাধি দুটির দক্ষিণ ধারে পরিখা বা ছোট পুকুরের মতো গর্তবিশেষ দেখা যায়। যাহোক, পাকিস্থানের আমলের প্রথম দিকে স্থানটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গল পরিস্কারকালে এই সমাধি দুটি দৃষ্টিগোচর হয়। দক্ষিণ দিকের সমাধিটি শাহ ইসমাইল গাজীর বলে মাজারের খাদেমসূত্রে জানা যায়। দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। সমাধি দুটি ইটের প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। এরূপ জনশ্রম্নতি আছে বহু দিন যাবত মাজারটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। এই জঙ্গলের ভিতর মাজারের পাশে দিন রাত একটি বাঘ পাহারা দিতো। এ বাঘ কারো ক্ষতি করতো না। স্থানীয় লোকেরা মানতি দ্রব্যাদি নিয়ে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে বাঘটি দূরে সরে যেতো। আরো জানা যায়, এ মাজারের অসম্মান হলে বড় ধরণের ক্ষতি বা দুর্ঘটনা ঘটতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মি.এস,কে ঘোষ কোন রকম সম্মান দেখানো ছাড়াই মাজারের পাশ দিয়ে মোটর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। তবে তিনি জীবনে বেঁচে গেছেন। মাজারকে অসম্মান করা হয়েছে এটা তিনি বুঝতে পেরে প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ নিজ অর্থে মাজারটি পাকা করে দেন। ১৯৯৫ সাল পর্যমত্ম মি. ঘোষের বাঁধানো স্থাপত্য কাঠামোটি অটুট ছিল। তার পরে একধিকবার সংস্কার করা হয। বর্তমানে সেখানে একজন নিয়মিত খাদেম আছেন যিনি মাজারের খেদমত করে থাকেন। উক্ত মাজারে এখনো জিয়ারত ও সম্মান দেখানো হয়। অতি সম্প্রতি সেখানে একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
রিশালাতুস সুহাদা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই ইসমাইল গাজী গৌড়ের সুলতান রম্নকনউদ্দিন বরবক শাহ এর (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রিঃ) প্রধান সেনাপতি ছিলেন। পার্শ্ববর্তী কামরূপ রাজ্যের অত্যাচার দমনের উদ্দেশ্যে গৌড় থেকে শাহ ইসমাইল গাজী কিছু সৈন্য সমামত্মসহ ঘোড়াঘাট এলাকায় আসেন। পথে দিনাজপুরের (বর্তমান নওগাঁ) সমেত্মাষ নামক স্থানে কাসেত্মশ্বর/কামেশ্বর রাজার সাথে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়ে মাত্র ১২ জন পাইকসহ ঘোড়াঘাটের বারপাইকের গড়ে আশ্রয় গ্রহন করেন এবং ধ্যান মগ্ন হন । উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলেন । এর কিছু দিন পরে সুযোগ এসে গেল । উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হলো । এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে রাজা যুদ্ধ না করে গৌড়ের সুলতানের বশ্যতা মেনে নেন । এতে গাজীর বিজয় সূচিত হয় । কিন্তু ঘোড়াঘাট দুর্গের অধিনায়ক ভান্দুসী রায়ের চক্রামেত্মর কারনে সুলতানের নির্দেশে গাজীর শিরোচ্ছেদ করা হয় (১৪৭৪ খ্রি .) কাটাঁদুয়ারে । গাজীর ধড়ের একটি অংশ সমাধিস্থ করা হয় ঘোড়াঘাটে । আলোচ্য সমাধিটি সেই সেনাপতি শাহ ইসমাইল গাজীর । আগের চেয়ে মাজার ও তৎসংলগ্ন স্থানের বেশ উন্নতি হয়েছে এখন
ঘোড়াঘাট থানা ভবন থেকে ২ কিলোমিটার উত্তর দিকে শহরগাছী মৌজা। মৌজার মোট জমি ১৭৩ একর। ১৯৭৪ সালে লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪৫ জন। সেখানে বেশ কয়েক ঘর আদিবাসী সাঁওতালের বসত আছে। থানা ভবনের পাশ দিয়ে একটি সরম্ন পাকা রাসত্মা এঁকেবেঁকে চলে গেছে উত্তরে দিকে । ঝোপঝাড় পার হয়ে একটু উত্তরে গেলেই ঘোড়াঘাটের বিখ্যাত পীর ও কাজী সদরম্নদ্দিন সাহেবের মাজার এলাকা। প্রথমেই দেখা যাবে কাজী সদরম্নদ্দিনের (রহঃ) এর ১২ দুয়ারী প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। তার উত্তরে আছে (৩৫ গজ দুরে) সমাধিস্থ এবং সমাধির উত্তর ধারে আছে মোঘল আমলে নির্মিত সৌন্দর্যমন্ডিত একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এই স্থানের উত্তর-পূর্ব দিকে আনুমানিক ১০০ গজ দূর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে করতোয়া নদী। কাজী সাহেবের বাসভবনের পূর্ব পাশে দু-এক ঘর সাঁওতালের বসত আছে। তারা অনেক দিন ধরে এখানে বাস করছেন। বলতে গেলে অনেকটা জনমানবহীন এই স্থানে একা এলে গা শিউরে উঠবে। অথচ এক সময় এই স্থান ছিল কোট- কাচারীর মতো সরগরম।
(ক) ১২ দুয়ারী প্রসাদঃ বারদুয়ারী বাস স্থান থেকে ৩০ গজ উত্তর দিকে কাজী সাহেবের মাজার। সামনের দিকে প্রবেশ পথ, তাতে আছে কাঁটাতারের বেড়া, কোথাও কোথাও অনুচ্চ প্রাচীর আছে। জনমানবহীন জায়গা। এখানে এক এলে ভয় লাগে। অনেক গুলো লম্বা লম্বা সমাধি মাজারের পূর্বধারে রয়েছে। সমাধিগুলো কার সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। এই মাজারে একজন বয়োবৃদ্ধ খাদেম আছেন। তিনি জানান, এই কবরগুলো মাজারের খাদেমদের। দীর্ঘ দিন মাজারের খেদমত করে যে যখন মারা গেছেন তখন তার সমাধি এখানেই দেয়া হয়েছে।
দেওয়ান গাজীর মাজার
সিংড়া ইউনিয়নের অমত্মর্গত বিরাহিমপুর কাচারীর ৫০ গজ পূর্ব- উত্তর দিকে এবং বার পাইকেরগড়ের পশ্চিমে মইলা নদীর তীরে বটগাছের নিচে একজন গরীবের মাজার আছে। এটি দেওয়ান গাজীর মাজার বলে খ্যাত। আগে এখানে প্রাচীন ইটের স্ত্তপ ছিল। পাকিসত্মান আমলে এই স্ত্তপ পরিস্কার কালে এখানে একটি মাজারের অসিত্মত্ব আবিস্কার হয়। শাহ ইসমাইল গাজীর কোন অনুচরের মাজার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কারণ ইসমাইল গাজী ১২ জন পাইক সমেত এখানকার পার্শ্ববতী গড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরই একজনের মাজার বলে অনুমিত। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকের কাছেই এ মাজার একটি পূন্যভূমি। একই ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম ধারে একজন পীর সাহেবের সমাধি আছে। তার নাম পীর সাহেব আব্দুল কাদের।
পাঁচ পীরের দরগাহ
উপজেলার পালশা ইউনিয়নের অমত্মর্গত প্রাচীন দীঘিপুকুর ও আদিবাসী সমৃদ্ধ গ্রাম বেলোয়া। এখানকার ছয়ঘাটি দীঘির উত্তর ধারে দুই বিঘার মতো উচু একটি স্থানে পাঁচটি সমাধির মতো স্থান পরিলক্ষিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এটি পাঁচ পীরের দরগা বা মাজার। মেজর শের ইউলর মানচিত্রে স্থানটি ‘‘ পানি পীর সাহেবি পুকুর’’ নামে উলেস্নখ করা হয়েছে। মুলত এটি পাঁচ পীরের পুকুর। এখানকার ভাতছালা গ্রামের বশির সরকার এখান থেকে পিতলের একটি আসা পান বলে বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থে উলেস্নখ আছে। উক্ত আসার মাথা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। মধ্যভাগে বাঘের মাথার ছবি এবং অন্য দুই ভাগে মাছের প্রতিকৃতি অংকিত ছিল। মধ্যভাগে কালেমা তৈয়বা, মোহাম্মাদ মোসত্মফা (সঃ) এর পাক আমলের শেষের দিকে দিনাজপুরের ডিসি মহোদয় সংগ্রহ করে দিনাজপুর মিউজিয়ামের সংরক্ষণের জন্য জমা দেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেখান থেকে আসাটি হারিয়ে যায়।
মাওলানা নুর উদ্দিন (রহ)’র মাজার
ঘোড়াঘাট- কামদিয়া রাসত্মার পাশে সাবেক মহুয়ার বাগ নামক স্থানে পাকা রাসত্মার পাশে মাজারটি অবস্থিত। মাজার কেন্দ্রিক সাবেক স্থাপনা অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। কালে কটাক্ষ উপেক্ষা করে কেবল মাজারটি টিকে আছে। এমন কি মাজারের ঘর টিও নষ্ট হয়ে গেছে। জানা যায় মওলানা নূরউদ্দিন ঘোড়াঘাটে সম্রামত্ম মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই তিনি লেখাপড়া শিখে ইসলাম প্রচার ও শিক্ষা বিসত্মারে মনোযোগী হন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, সাধক শাস্ত্রজ্ঞ আলেম ও ইসলাম প্রচারক ছিলেন। আরো জানা যায়, তিনি অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। তার ওয়াজ শোনার জন্য সভাস্থলে দলে দলে লোকজন আগমন করতো। তার মৃত্যর পরে এখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তার কাম্যত সর্ম্পকে এখনো অনেকে কথা শোনা যায়। আপদ বিপদে আত্বানা লাভ ও রম্নহানা ফায়েজ হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে অনেক লোক মাজার জিয়ারত আগমন করেন।
খন্দকার বদরে আরেফিন (রহঃ) র মাজার
ঘোড়াঘাট বাজারের কেন্দ্রস্থল থা্না ভবনের পূর্ব দিকে মসজিদের পাশে মাজারটি অবস্থিত। তিনি ঘোড়াঘাটেই জন্ম গ্রহন করেন। এখানেই শিক্ষা লাভ করেন বলে জানা যায়। তার পিতৃ পরিচয় জানা না গেলেও তিনি একজন নামকরা আলেম, পীর, উন্নত ব্যক্তিতব সম্পন্ন মানুষ, নীতিবান, শিক্ষানুরাগী রম্নপে সমাজে পরিচিতি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তার নিজস্ব বাসভবনে আশে পাশে সে সময় গড়ে উঠেছিল মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ। তার ওফাত লাভের পরে এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। সমাধিটি ৭ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট প্রস্থ। সমাধির পশ্চিম পাশেই কয়েক খন্ড কালো পাথর পড়ে আছে। এখনো তার মাজারে প্রতিদিন জিয়ারত হয়। মাজারের পাশেই রয়েছে আধুনিক সুরম্য একটি মসজিদ। তাকে স্মরনীয় করে রাখার লক্ষ্যেই ‘বদরে আরেফিন, নামে ঘোড়াঘাট একটি ফিলিং স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে।
দেওয়ান পীরের মাজার
উপজেলার পশ্চিম দিকে পালশা ইউনিয়নের অমর্ত্মগত ডুগডুগী মোকাম নামক বাজারে দেওয়ান পীর সাহেবের মাজার অবস্থিত। এ মাজারে সমাহিত ব্যক্তির আগমন সর্ম্পকে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এ মাজারকে যথেষ্ট মান্য করেন। প্রকৃত নাম অজ্ঞাত। সাধারনের মাঝে দেওয়ান পীর বলেই পরিচিত।
শাহ দরিয়া বোখারী (রহ.)র মাজার
ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর ত্রিমোহনী ঘাটের পশ্চিম ধারে চৌখন্ডি মৌজার প্রাচীযন ঈদগাহ মাঠের অভ্যমত্মরে প্রায় ৩০ টির মতো সমাধি আছে। সমাধিগুলোর একটি শাহ দরিয়া বোখারীর মাজার। ঘোড়াঘাট চারমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে পাকা রাসত্মার শেষ প্রামেত্ম গিয়ে উত্তর দিকে তাকালে বাঁশঝাড়ের কিনারে প্রাচীন ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। ঈদগাহ মাঠের চর্তুপাশ পাকা প্রাচীর আছে। দক্ষিণ দিকে আছে প্রধান ফটক। তাতে লেখা আছে দরিয়া বোখারী (রহ,) র মাজার। দরিয়া বোখারীর প্রকৃত পরিচয় জানা যায় না। তিনি শাহ সুজার আমলে প্রথম দিকে বোখারা থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আগমণ করেন বলে জনশ্রম্নতি আছে। তিনি এখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ মাদ্রাসায় তিন শতাধিক ছাত্রের আবাসিক সুবিধা ছিল। মধ্যযুগের ঘোড়াঘাট সরকার এর বিখ্যাত সাধক কবি হেয়াত মামুদের ১৭৫৮ সালে রচিত ‘আম্বিয়া বাণী’ পুঁথিতে শাহ দরিয়া বোখারী (রহ) এর বন্দনার উলেস্নখ পাওয়া যায়।
ছবি |
a3b7e153-3976-4bb4-b7c3-196dba4e0e7c | সড়ক পথই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। উপজেলায় সামান্য নদী পথ আছে। মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৩০ কিঃ মিঃ। তন্মধ্যে পাকা রাস্তা ৬২ কিঃ মিঃ এবং অবশিষ্ট ২৬৮ কিঃ মি কাঁচা রাস্তা। উপজেলা সদরের সাথে চার ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান। পাকা রাস্তা হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-ফুলবাড়ী, ঘোড়াঘাট-হিলি, ঘোড়াঘাট-পাঁচবিবি ও ঘোড়াঘাট-পলাশবাড়ী পাকা রাস্তা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে রাণীগঞ্জ – বুলাকীপুর, রাণীগঞ্জ- ডুগডুগীহাট উল্লেখযোগ্য। রাস্তাগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর উপর ১৯৯৬ সারে নির্মিত বেইলী ব্রিজটি ঘোড়াঘাটবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে। বর্তমানে উপজেলার সকল রাস্তায় কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, মোটরসাইকেল, সাইকেল, গরুরগাড়ি, রিক্সা, ভ্যান প্রকৃতি যানবাহন চলাচল করে। তবে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাগুলো বর্ষাকালে কর্দমাক্ত হয়। এতে চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়। তারপরেও আগের চেয়ে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। অনেক রাস্তার দু-ধারে নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করার ফলে রাস্তায় ছায়া বৃদ্ধি ও শোভা বর্ধন করছে। আর অত্র উপজেলায় বিভিন্ন রুটে বাস, কোচ সহ অনেক যানবাহন চলাচল করে। |
8fd1dafc-51d3-4c0c-bd79-69a1d6fe9532 | ১৭৬৫খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি মিঃ কোট্রিল ঘোড়াঘাটের শেষ মুসলিম ফৌজদার করমআলী খানকে পরাজিত করে এই অঞ্চলে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এ অঞ্চলেপ্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ইংরেজরা ১৭৮৬ সালে নতুন জেলা গঠন করে এবং ১৭৯৩সালে দিনাজপুরে নবসৃষ্ট জেলার দপ্তর স্থাপন করে। দিনাজপুরের কালেক্টর মিঃএইচ জে হ্যাচ (১৭৮৬-১৭৯৩ পর্যন্ত কালেক্টর ছিলেন) এর আমলে এখানের প্রথমনিজস্ব কালেক্টরেট ভবন নির্মিত হয় বর্তমান বাহাদুর বাজারস্থ গোলকুঠিবাড়ীতে। দিনাজপুরে ইংরেজ শাসন ও জেলা কালেক্টরেট নির্মিত হওয়ায় এবং সেইসঙ্গে সুবিন্যস্ত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় তখন থেকে আধুনিক জেলাশহরটির গড়ন শুরু হয় রাজাদের দেয়া কয়েকটি মৌজার উপর। রাজবাড়ী থেকে সমস্তনথিপত্র প্রত্যাহার করে গোলকুঠি ভবনে স্থাপন করা হয়। মুগল আমলের ঘোড়াঘাটনগর তখন সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়। নবস্থাপিত দিনাজপুর শহর জেলা শাসনেরকেন্দ্র ও সবকিছুর কর্মস্থলে পরিণত হতে শুরু করে। ১৮৩৩ থেকে ১৮৭০ সালপর্যন্ত দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যেঅন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন মনোরম ও নিরিবিলি স্থানে অবস্থিত। |
f541cc4d-2cda-4ca4-832d-67e69f21faaa | ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্নপ্রাচুর্য
ঘোড়াঘাট প্রাচীন জনপদ হওয়ায় এর বিভিন্ন স্থানে পুরাকীর্তি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। এ উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে- ঘোড়াঘাট দুর্গ, বারপাইকের গড়, বেলোয়া, পল্লরাজ, দামোদরপুর, সুরা মসজিদ, শাহ ইসমাইল গাজী (র)’র মাজার, শাহ দরিয়া বোখারী (র)’ মাজার, কাজী সদরুদ্দীন (র)’র মাজার ও বাসভবন উল্লেখযোগ্য। এগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো-
ঘোড়াঘাট দুর্গ
উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ মৌজায় ঘোড়াঘাট দুর্গের অবস্থান। দুর্গের পূর্বধারঘেঁষেই প্রবাহিত করতোয়া নদী এবং পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর দিকে (লাগোয়া) পরিখা দ্বারা বেষ্টিত। সুলতানী আমলের আগে এ দুর্গের ভিত প্রতিষ্টিত হলেও মোগল আমলে এসে এ চরম উন্নতি সাধিত হয়। উত্তরবঙ্গের মধ্যে এটি একটি মাঝারী ধরণের মাটির দুর্গ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় অনেক গবেষকের গ্রন্থে। কানিংহামের মতে- ঘোড়াঘাট শহরের আয়তন ছিল উত্তর-দক্ষিণে ১০ মাইল ও প্রস্থে ২ মাইল। আ.কা.মো. যাকারিয়া সাহেবের বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থের তথ্য মতে আলোচ্য দুর্গটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ও পূর্ব পশ্চিম দেয়ালের দৈঘ্য অনুরূপ, উত্তর দেয়াল আধা মাইল এবং দক্ষিণ দেয়াল প্রায় এক মাইল লম্বা। ধারণা, এই সীমানা কেবল দুর্গের কেন্দ্রের। বিশেষ করে দক্ষিণ দিকে আরো প্রলম্বিত ছিল। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম ধারে যে পরিখা দেখা যায় তা প্রায় ৬০ ফুট চওড়া। পশ্চিম দেয়ালের উত্তরাংশে দুর্গের প্রধান প্রবেশ পথ ছিল। প্রধান প্রবেশ পথ থেকে ৪০০ গজ দক্ষিণ- পূর্ব দিকে দুর্গের দ্বিতীয় আন্তদেয়ালের গুরু। এর পাশেই ছিল ফৌজদার ভবন। তাচাড়াও দুর্গবেষ্টনীর প্রধান অংশে ছিল প্রশাসনিক ভবন, সেনা ছাউনী, সামরিক কর্মচারিদের বাসভবন, মসজিদ ও মাদ্রাসা। এখন শুধু পরিক্ষার উপরে ৮/১০ ফুট উঁচু লালমাটির প্রাচীর আছে যেগুলো পথিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাটির প্রাচীরের উপরে এখন আগাছা জন্মেছে।
সম্রাট আকবরের আমলে এই দুর্গে ৯০০ আশ্বারোহী, ৫০টি হাতি ও ৩২,৬০০ পদাতিক সৈন্যের স্থান সংকুলান হতো। দুর্গের অভ্যন্তর ভাগে পশ্চিম দিকে (পাকা সড়কের ধারে) ফৌজদার ভবনের কাছাকাছি জায়গায় একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ, মসজিদের পশ্চিম ধারে পুরাতন জরাজীর্ণ কবর ও মসজিদের সামনে একটি ৮ কোণী ইদারা এবং দক্ষিণ পাশে লাগোয়া গোলাকার আর একটি পরিত্যাক্ত ইদারা দৃষ্টিগোচর হয়। অধূনা স্থানটি মাজারপাড়া বলে পরিচিত। জঙ্গলে ঢাকা এই স্থানটি ২০০৭ সালে পরিস্কার করা হয়। এখন দুর্গের ভূমির উপরে বৃক্ষ রোপণের কাজ চলছে।
(ক) মসজিদঃদুর্গনগরীর অভ্যন্তরে ধ্বংসপ্রাপ্ত সমজিদটি ঘোড়াঘাট মসজিদ বলেই পরিচিত। এর দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ২২ ফুট। কার্নিস পর্যন্ত উচ্চতা ১৪ ফুট প্রায়। সামনে ৩ দরজা, উপরে ৩ গম্বুজ। চারকোণায় ৪টি মিনার ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। উত্তর দিকের গম্বুজ ও দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। দেয়ালে পুরুত্ব ৪০ ইঞ্চির মতো। সমগ্র ইমারতের পলেস্টার খুলে পড়েছে। ভিতরে ৩ কাতার নামাজীর স্থান সংকুলান হতো। এক সময় এ মসজিদটি অত্যন্ত সৌন্দর্য মন্ডিত ছিল। বুকানন হেমিল্টনের দেয়া তথ্য মতে, আলোচ্য মসজিদটি নবাব আলীবর্দী খানের আমলে ১১৫৩ হিজরীতে (১৭৪০ খ্রিঃ) মোহাম্মদ সালেহের পুত্র ও মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র জয়নাল আবেদীন মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই জয়নাল আবেদীন ঘোড়াঘাট দুর্গের ফৌজদার ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য দুর্গের দক্ষিণ পূর্ব দিকে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর আমলে নির্মিত দ্বিতীয়আর একটি সমজিদের ধ্বংসাবশেষ চাম্পাতলী থেকে আবিস্কৃত হয়েছে। ঐ মসজিদের শিলালিপিটি বগুড়া যাদুঘরে রক্ষিত আছে বলে বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ধারণা, সেনানিবাসের মধ্যে থাকা আলোচ্য মসজিদটিতে ফৌজদার ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করতেন।
(খ) ইদারাঃমসজিদের সামনে ৮ কোণী (প্রায় ১২ ফুট বেড়) একটি পাকা ইদারা আছে। আবার একই মসজিদের দক্ষিণ ধারে লাগোয়া আর একটি ইদারা আছে। এটি গোলাকার। এর উপরের মুখ এখন সমতল ভূমির সমান। মুখের ব্যাস প্রায় ৬ ফুট। ধারণা, এই ইদারা দুটির পানি নামাজীদের অজুর জন্য ব্যবহার হতো। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ভিতরে পানি নেই, প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
(গ) পাকা কবরঃউপরে বর্ণিত দ্বিতীয় ইদারার পশ্চিম পাশে পাকা সড়কের ধারে মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লাগানো একটি পাকা কবরের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বাঁধানো কবরের কিছু অংশের ইট খুলে পড়েছে। কবরটি কার তা জানা যায় না। এই কবরের আশেপাশে আরো কিছু কবরের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তবে সেগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে অনেক আগেই। অধূনা স্থানটি ‘মাজারপাড়া’ বলে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। ২০০৮ সারে স্থানটি পরিদর্শনকালে মসজিদেরপাশে একটি সাইনবোর্ডে তা লেখা রয়েছে। সেই সোথে জঙ্গলে ঢাকা সমুদয় স্থানটি পরিস্কার করা হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হওয়া সত্ত্বেও দেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কোন সাইনবোর্ড সেখানে দেয়া হয়নি। দৈনিক শত শত বাসযাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই পরিত্যক্ত ও প্রাচীন নিদর্শনটি। এখানে উল্লেখ্য, এ সমাধি থেকে ১ কিঃ মিঃ পূর্ব দিকে নদীর ধারে চম্পাতলী নাম স্থানে বাঁধানো ঘাট ও উঁচু একটি ঢিবি এখানো দৃষ্টিগোচর হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এ স্থানকে পুঁথি সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট গাজী কালু ও চম্পাবতীর স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শন বলে মনে করেন।
শাহ ইসমাইল গাজীর মাজার
উপরে বর্ণিত পাকা কবরের স্থান থেকে আনুমানিক ৪০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পাকা রাস্তার পশ্চিম ধারে সামান্য টিলা সদৃশ একটি জায়গা আছে। এর পশ্চিম ধারে ঢালু স্থানে পাশাপাশি দুটি সমাধি রয়েছে। সমাধি দুটির দক্ষিণ ধারে পরিখা বা ছোট পুকুরের মতো গর্তবিশেষ দেকা যায়। যাহোক, পাকিস্তানন আমলের প্রথম দিকে স্থানটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গল পরিস্কারকালে এই সমাধি দুটি দৃষ্টিগোচর হয়। দক্ষিণ দিকের সমাধিটি শাহ ইসমাইল গাজীর বলে মাজারের খাদেমসূত্রে জানা যায়। দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। সমাধি দুটি ইটের প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। এরূপ জনশ্রুতি আছে বহু দিন যাবত মাজারটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। এই জঙ্গলের ভিতর মাজারের পাশে দিন রাত একটি বাঘ পাহারা দিতো। এ বাঘ কারো ক্ষতি করতো না। স্থানীয় লোকেরা মানতি দ্রব্যাদি নিয়ে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে বাঘটি দূরে সরে যেতো। আরো জানা যায়, এ মাজারের অসম্মান হলে বড় ধরণের ক্ষতি বা দুঘটনা ঘটতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মি.এস,কে ঘোষ কোন রকম সম্মান দেখানো ছাড়াই মাজারের পাশ দিয়ে মোটর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। তবে তিনি জীবনে বেঁচে গেছেন। মাজারকে অসম্মান করা হয়েছে এটা তিনি বুঝতে পেরে প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ নিজ অর্থে মাজারটি পাকা করে দেন।৪১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মি. ঘোষের বাঁধানো স্থাপত্য কাঠামোটি অটুট ছিল। তার পরে একধিকবার সংস্কার করা হয। বর্তমানে সেখানে একজন নিয়মিত খাদেম আছেন যিনি মাজারের খেদমত করে থাকেন। উক্ত মাজারে এখনো জিয়ারত ও সম্মান দেখানো হয়। অতি সম্প্রতি সেখানে একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
রিশালাতুস সুহাদা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই ইসমাইল গাজী গৌড়ের সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ এর (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রিঃ) প্রধান সেনাপতি ছিলেন। পার্শ্ববর্তী কামরূপ রাজ্যের অত্যাচার দমনের উদ্দেশ্যে গৌড় থেকে শাহ ইসমাইর গাজী কিছু সৈন্য সমান্তসহ ঘোড়াঘাট এলাকায় আসেন। পথে দিানজপুরের (বর্তমান নওগাঁ) সন্তোষ নামক স্থানে কান্তেশ্বর/কামেশ্বর রাজার সাথে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়ে মাত্র ১২ জন পাইকসহ ঘোড়াঘাটের বারপাইকের গড়ে আশ্রয় গ্রহন করেন এবং ধ্যান মগ্ন হন । উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলেন । এর কিছু দিন পরে সুযোগ এসে গেল । উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হলো । এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে রাজা যুদ্ধ না করে গৌড়ের সুলতানের বশ্যতা মেনে নেন । এতে গাজীর বিজয় সূচিত হয় । কিন্তু ঘোড়াঘাট দুর্গের অধিনায়ক ভান্দুসী রায়ের চক্রান্তের কারনে সুলতানের নির্দেশে গাজীর শিরোচ্ছেদ করা হয় (১৪৭৪ খ্রি .) কাটাঁদুয়ারে । গাজীর ধড়ের একটি অংশ সমাধিস্থ করা হয় ঘোড়াঘাটে । আলোচ্য সমাধিটি সেই সেনাপতি শাহ ইসমাইল গাজীর । আগের চেয়ে মাজার ও তৎসংলগ্ন স্থানের বেশ উন্নতি হয়েছে এখন । ( বিস্তারিত দেখুন ব্যক্তিত্ব অধ্যায়ে শাহ ইসমাইল গাজী অংশে ) ।
বারপাইকের গড়
উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ঘোড়াঘাট-রানীগঞ্জ রোডের উপর বিরাহিমপুর কাচারী । কাচারীর পূর্ব ধারেই মইলা ( মরা করতোয়া ) নদী বেষ্টিত ত্রিভূজাকৃতি স্থলভাগ লক্ষ্য করা যায় । নাম বারপাইকের গড় । মৌজার নামও বারপাইকের গড় , মেŠজার মোট জমি ৩৯৩.৬০ একর ৫। ঘোড়াঘাট দুর্গ থেকে এস্থানের দূরত্ব উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১০কিলোমিটার । এখানে প্রাচীনকালে একটি দুর্গ ছির তার প্রমাণ মিলে ইতিহাস থেকে । গড়ের জমির পরিমাণ ৭৬.২৭ একর৬। নদীর স্রোত ঘেষে গড়ের চর্তুদিকে ৪০ ফুট প্রশস্ত ও ৮/১০ফুট উঁচু মাটির প্রাচীর আছে । বর্তমানে মাটির প্রাচীরের উঁচ্চতা আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। গড়ের চর্তুপাশে যে নদী / পরিখা আছে তার প্রশস্ততা পূর্ব দিকে ৫০ ফুট এবং পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে ১২০ ফুট , গভীরতার কারনে খরা মৌসুমেও পানি থাকে । স্থানটি বড় গড় ও ছোট গড় দুটি অংশে এখন বিভক্ত । গড়ের ধারে প্রাচীন সামধির পাশেই আছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ড ।
আলোচ্য গড়টি কোন আমলে সৃষ্টি তা সঠিক ভাবে জানা যায় না । তবে গৌড়ের সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ-এর আমলে (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রি.) তার সেনাপতি শাহ ইসমাইল গাজী ১২ জন পাইকস এই দুর্গে আশ্রয় গ্রহন করেছিলেন । ভাগিনেয় মুহাম্মাদ শাহের উপর দুর্গ রক্ষার ভার দিয়ে গাজী উত্তরে চতরাহাটের কাছে জলমোকাম নামক স্থানে চলে যান । ১২ জন পাইক থাকার কারনে আলোচ্য দুর্গটির নাম বারপাইকের গড় হয়৭। তার আগে এটি কোন নামে পরিচিত ছিল জানা যায় না । ধারনা , এই গড়টি পাঠান আমলের আগে নির্মিত হয়েছিলু খুবসম্ভব কামরূপ কামতা রাজ্যের আক্রমন প্রতিহত করার লক্ষ্যে । রাজা নীলাম্বরের সময়ে দুর্গটি নির্মিত বলে কোচবিহারের ইতিহাসে ইঙ্গিত রয়েছে । কিন্তু গড়টি ঐ রাজার আমলেরও আগের বলে অনুমতি । যাহোক, মুসলিম শাসন আমলে দুর্গটি ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে থাকে । এর পরিবর্তে ঘোড়াঘাট দুর্গ প্রাধান্য লাভ করে । ক্রমে স্থানটি জঙ্গলকীর্ণ ও দুর্গম হয়ে পড়ে । পাকিস্তান আমলে স্থানীয় সাঁওতাল ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য করে তোলে । বিরাহিমপুর থেকে গড়ে পারাপারের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো আছে । দিনাজপুর জেলার গেজেটীয়ার ( ১৯৯১ সনে মুদ্রিত ) থেকে আরো জানা যায় , প্রাচীনকালে গড়ের ভিতরে একটি অট্ট্রালিকা ছিল , বৃটিশ আমলেও তার সামান্য অস্তিত্ব ছিল । এখন সামান্য উঁচু মাটির ঢিবি দৃষ্টিগোচর হয় । সরেজমিনে বাস্তবাবস্থা দৃষ্টে নিশ্চিতভাবে বলা যায় , অতীতে এটা একটা সুরক্ষিত দুর্গ ছিল । গড়ের পূর্ব ধারে একজন মুসলমান পীরের মাজার আছে । সেটি দেওয়ান পীরের মাজার বা অচীন পীরের মাজার বলে স্থানীয়রা জানেন । তিনি কোথাকার লোক এবং কী তার পরিচয় সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়না। স্থানীয মুসলমান হিন্দু বাসিন্দারা এ মাজারকে যথেষ্ট ইজ্জত করে এবং সিন্নী মানত করে থাকে । এই গড়কে কেন্দ্র করে নানা জনশ্রুতি স্থানীয়ভাবে প্রচার লাভ করেছে ।
বেলোয়ার প্রাচীন কীর্তি
উপজেলার পশ্চিম দিকে পালশা ইউনিয়নের অন্তগর্ত দীঘি-পুকুর সমৃদ্ধ বেলেয়া একটি প্রাচীন গ্রাম । মৌজার মোট জমির পরিমাণ ১৩৫৫.৪৮ একর । জনশ্রুতি আছে, এই গ্রামে বেহুলার পিতা বাসো বানিয়ার বাড়ি ছিল । বেহুলারা ছিল সাত বোন । তারা সাতটি দীঘিতে গোসল করতো । তাই তাদের পিতা সাত বোনের জন্য পৃথক সাতটি দীঘি খনন করে দেন । দীঘিগুলোর নামও বেশ চমৎকার । যেমন- নয়ন দীঘি, মন্ডলের দীঘি, বামন দীঘি, আন্ধোয়া দীঘি, কোদাল ধোয়া দীঘি ও ছয়ঘাটি প্রভূতি । আলোচ্য গ্রামে সাতটি দীঘি ছাড়া ও প্রায় ৪০ টি অধিক ছোট বড় দীঘির অস্তিত্ব আছে । এইসব দৃষ্টে ধারনা করা যায়, প্রাচীনকালে এখানে একটি জনপদ ছিল যা মহাকালের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে গেছে । এখানে একটি দুর্গ ছিল এমন বর্ণনাও পাওয়া যায় কোন কোন লেখকের লেখায় । উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রত্যেকটি দীঘির উঁচু পাড়ে সাঁওতাল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বসত গড়ে উঠতে শুরু করেছে ।
(ক) নয়ন দীঘি:বেলোয়ার সবচেয়ে বড় দীঘির নাম নয়নদীঘি । এটি উত্তর-দক্ষিণে ৭০০ গজ দৈর্ঘ্য ও পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ গজ প্রস্থ । পাড় বেশ উঁচু । বিশাল এ দীঘিতে সারা বছর পানি থাকে । এই দীঘি থেকে পাকিস্তান আমলে (১৯৭১ সালের আগে ) বড় একটি পাথরের মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল । সেটি এখন কোথায় আছে তা জানা যায় না । এই দীঘির পূর্ব ধারে লাগোয়া আরো ৩/৪ টি ছোট ছোট দীঘি আছে । এখন মন্ডলের দীঘিটিই দৃষ্টিগোচর হয় ।উভয় দীঘির মাঝের উচুুুুঁ ভূমির উপর দিয়ে গ্রাম্যপথ রচিত হয়েছে।
(খ)আন্ধেয়া দীঘি: নয়ন দীঘি থেকে সোজা ১ সাইল পূর্ব দিকে বামন দীঘি অবস্থিত। এই দীঘির দক্ষিণে প্রায় পাশাপাশি অবস্থিত ৩টি দীঘির মধ্যে একটি মাঝারী ধরনের দীঘি আছে-নাম আন্ধেয়া ধীঘি। এর আয়তন ২৫০´১৫০ গজ। এতেও সারা বছর পানি থাকে । পাড় উঁচু-পাড়ে নতুন বসত গড়ে উঠতে শুরু করেছে।
(গ) বামন দীঘি:আন্ধেয়া দীঘির উত্তর পশ্চিম কোণে খনিত বড় দীঘিটির নাম বামন দীঘি । এর আয়তন ৬০০´৩০০ গহজ । এর পাড়গুলো ১৫ ফুট উঁচু্ । এখন অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। জেলা পরিষদের রাস্তা থেকে এই দীঘির উত্তর অংশের পার দেখা যায়। এই দীঘির ১০০ গজ দক্ষিণে ঢোলচৌধুরীর দীঘির কাছাকাছি স্থানে একটি বেশ আয়তাকার উঁচু ভূমি আছে। এর অভ্যন্তরে প্রাচীন অট্রা্লিকার ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান । ১৯৪৬ সালে বামনদীঘির দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিম অংশে খাড়ে সাঁওতাল বাড়ির উঠোন থেকে চুলা খননের সময় দের ফুট মাটির গভীরে পাল আমলের ২টি তাম্রালিপি আবিস্কার হয় । এ তাম্রলিপিগুলো খারে সাঁওতাল পেলেও পরে তা সরকারি লোকের মাধ্যমে বগুড়া জাদুঘরে জমাদেয়া হয় সংরক্ষণের জন্য। ৮
(ঘ) ছয়ঘাটি দীঘি: আন্ধেয়া দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিমের বড় দীঘিটি ছয়ঘাটি দীঘি নামে খ্যাত । এর আয়তন ৬৫০´৩৫০ গজ । এর পাড়গুলো প্রায় ২০ফুট উঁচু । এখন অনেকটা কমে গেছে । দীঘির পূূর্ব পাড়ে ২টি, পশ্চিম পাড়ে ২টি এবং উত্তর পাড়ে ১টি ও দক্ষিণ পাড়ে ১টি মোট ৬টি বাঁধান ঘাট আছে। ছয়ঘাট থাকায় এর নাম ছয়ঘাটি হয়েছে। বেহুলা এই দীঘিতে স্নান করতেন বলে জনশ্রুতি আছে। এই দীঘির উত্তর পারে একটি স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট সামান্য উঁচু ভূমি আছে । স্থানটিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি অট্রা্লিকার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায় । মেজর শেরউলের মান চিত্রে স্থানটি পানিপীরের (পাঁচপীরের) আস্তানা বা দরগা বলে বর্ণিত হয়েছে । পার্শ্ববর্তী ভাতশালা গ্রামের বশির সরকার এখান থেকে পাকিস্থান আমলের শেষ দিকে ২ ফুটের সামান্য লম্বা একটি পিতলের আসা পেয়েছিলেন। তাতে পাঁচ জন বরহিনা সম্প্রদায়ের ফকিরের নাম খোদিত ছিল। বশির সরকারের ছোট ভায়ের নিকট থেকে দিনাজপুরের তৎকালীন ডিসি মহোদয় জনাব আ. কা. মো. জাকারিয়া জাকারিয়া সাহেব আসাটি নিয়ে দিনাজপুর যাদুঘরে সংরক্ষনের জন্য জমা দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেটি হারিয়ে গেছে বলে তিনি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ৯
পল্লরাজ
পাল ও রাজ দুটি শব্দের মিলনে পল্লরাজ শব্দ। ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের একটি প্রাচীন স্থান। ঘোড়াঘাট দূর্গ থেকে এ স্থানটি প্রায় ৫ কি মি উত্তর পশ্চিম দিকে এবং বেলোয়া থেকে ৩ কি মি পূর্ব দিকে অবস্থিথ। প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুলে পুকর, ঢিবি ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ এক প্রাচীন স্থান। বাংলাদেশ প্রত্মসম্পদ সন্থ থেকে জানা যায় পাল বংশের প্রথম নৃপতি গোপাল গৌড়ের সিংহাসন অধিকারের পূর্বে ছোট সামন্ত রাজা হিসেবে এখানে তার জয়স্কন্দাবার বা রাজধানী গড়ে তুলেছির। এখান থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে তিগগৌড়অধিপতি হয়েছিলেন বলে প্রবল জনশ্রুতি আছে।১০
দামোদর পুর
বুলাকীপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ও প্রাচীন জনপদ দামোদরপুর। মৌজার মোট জমির রিমাণ ৫২৩.৩৬ একর।১১রানীগঞ্জ থেকে ভাদুরিযা গামী রাস্তার কানাগাড়ী বাজারের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে এবং বেলোয়ার প্রাচীন কীর্তিবাহী স্থান থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে দামোদরপুর অবস্থিত। বেশ কয়েকটি প্রাচীন জলাশয় ও ৪/৫ টি মাটির ঢিবি আছে এখানে। অনেক গবেষক এ স্থানটিকে দামোদরপর নামেই চিহ্নিত করেছে।
সুরা মসজিদ
ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চৌগাছা মৌজায় (হিলি রোড) প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থিত। ঘোড়াঘাট উপজেলা কেন্দ্র থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে পাকা রাস্তার উত্তর ধারে ৩৫০-২০০ গজ আয়তন বিশিষ্ট বিশাল একটি পাড়ওয়ালা দীঘির দক্ষিণ ধারে আলোচ্য মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটি জনহীন এক জনপদের নীরব সাক্ষী। এর নাম নিয়ে আছে নানা কথা কেউ বলেন সৌর মসজিদ , কেউ বলেন সুরা মসজিদ , আবার কেউ বলে শাহ সুজা মসজিদ। সুর শব্দের অর্থ অপদেবতা বা জ্বীন। স্থানীয় মুরুববীরা জানান, এক রাতের মধ্যে জ্বীনেরা এটি নির্মাণ করে দেন, তাই এর নাম সুরা মসজিদ হয়েছে। সৌর শব্দের অর্থ আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে যা ঘটে বা হয় তাই গায়েবী। অর্থাৎ গায়েবী ভাবেই মসজিদটি নির্মীত হয়েছে। আবার অনেকে বলেন- মোগল আমলে বাংলার নবাব সুজা এটি নির্মাণ করে দেন বলে এর নাম শাহ সুজা মসজিদ হয়েছে। এমন ধরণের আরো অনেক কথা লোকমুখে শোনা যায়। বাস্তবে শাহ সুজার ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। মসজিদের নামকরণ ও নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে উপরে উল্লেখিত কোন তথ্য সঠিক বলে মেনে নেয়া যায় না। কারণ , যে ক্ষেত্রে মসজিদের শিলালিপি বা প্রমাণ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে নির্মাণশৈলী বা স্থাপত্য কাঠামো নির্মাণকাল নির্ধারণে একটি অনুসঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে আলোচ্য মসজিদের শিলালিপি নেই। তাই গঠনশৈলীর উপর ভিত্তি করেই সম্ভাব্য নির্মাণকাল বের করা যায়। আলোচ্য মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪০ ফুট এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৬ ফুট। চার ফুট উচু মজবুত প্লাটফর্মের উপর মসজিরদর কাঠামো গড়ে উঠেছে। প্রধান কক্ষের আয়তন ভিতরে ১৬´১৬ ফুট। প্রধান কক্ষের সাথে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। মসজিদের বাইরের দিবে দেয়ালে গায়ে ছোট ছোট খোপকাটা টেরাকোটা অলংকরণ ইমারতের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও লতাজাতীয়াভিনব নকশায় বাইরের দেয়াল সুসজ্জিত যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক দানী এটিকে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর আমলে নির্মিত বলে অনুমান করেন। ১২আলোচ্য এই মসজিদটি সুলতানী আমলে ( ১৪৯৩-১৫১৮) খ্রিষ্ঠাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। ১৩
কাজী সদরুদ্দিন (রহ)’র বাস ভবন, সমাধি ও সমজিদ
ঘোড়াঘাট থানা ভবন থেকে ২ কিলোমিটার উত্তর দিকে শহরগাছী মৌজা। মৌজার মোট জমি ১৭৩ একর। ১৯৭৪ সালে লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪৫ জন। সেখানে বেশ কয়েক ঘর আদিবাসী সাঁওতালের বসত আছে। থানা ভবনের পাশ দিয়ে একটি সরু পাকা রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে উত্তরে দিকে । ঝোপঝাড় পার হয়ে একটু উত্তরে গেলেই ঘোড়াঘাটের বিখ্যাত পীর ও কাজী সদরুদ্দিন সাহেরে মাজার এলাকা। প্রথমেই দেখা যাবে কাজী সদরুদ্দিনের (রহঃ) এর ১২ দুয়ারী প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। তার উত্তরে আছে (৩৫ গজ দুরে) সমাধিস্থ এবং সমাধির উত্তর ধারে আছে মোঘল আমলে নির্মিত সৌন্দর্যমন্ডিত একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এই স্থানের উত্তর-পূর্ব দিকে আনুমানিক ১০০ গজ দূর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে করতোয়া নদী। কাজী সাহেবের বাসভবনের পূর্ব পাশে দু-এক ঘর সাঁওতালের বসত আছে। তারা অনেক দিন ধরে এখানে বাস করছেন। বলতে গেলে অনেকটা জনমানবহীন এই স্থানে একা এলে গা শিউরে উঠবে। অথচ এক সময় এই স্থান ছিল কোট- কাচারীর মতো সরগরম।
(ক) ১২ দুয়ারী প্রসাদঃবারদুয়ারী বাস স্থান থেকে ৩০ গজ উত্তর দিকে কাজী সাহেবের মাজার। সামনের দিকে প্রবেশ পথ, তাতে আছে কাঁটাতারের বেড়া, কোথাও কোথাও অনুচ্চ প্রাচীর আছে। জনমানবহীন জায়গা। এখানে এক এলে ভয় লাগে। অনেক গুলো লম্বা লম্বা সমাধি মাজারের পূর্বধারে রয়েছে। সমাধিগুলো কার সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। এই মাজারে একজন বয়োবৃদ্ধ খাদেম আছেন। তিনি জানান, এই কবরগুলো মাজারের খাদেমদের। দীর্ঘ দিন মাজারের খেদমত করে যে যখন মারা গেছেন তখন তার সমাধি এখানেই দেয়া হয়েছে।
দেওয়ান গাজীর মাজার
সিংগা ইউনিয়নের অন্তর্গত বিরাহিমপুর কাচারীর ৫০ গজ পূর্ব- উত্তর দিকে এবং বার পাইকেরগড়ের পশ্চিমে মইলা নদীর তীরে বটগাছের নিচে একজন গরীবের মাজার আছে। এটি দেওয়ান গাজীর মাজার বলে খ্যাত। আগে এখানে প্রাচীন ইটের স্ত্তপ ছিল। পাকিস্তান আমলে এই স্ত্তপ পরিস্কার কালে এখানে একটি মাজারের অস্তিত্ব আবিস্কার হয়। শাহ ইসমাইল গাজীর কোন অনুচরের মাজার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কারণ ইসমাইল গাজী ১২ জন পাইক সমেত এখানকার পার্শ্ববতী গড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরই একজনের মাজার বলে অনুমিত। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকের কাছেই এ মাজার একটি পূন্যভূমি। একই ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম ধারে একজন পীর সাহেবের সমাধি আছে। তার নাম পীর সাহেব আব্দুল কাদের।
পাঁচ পীরের দরগাহ
উপজেলার পালশা ইউনিয়নের অন্তর্গত প্রাচীন দীঘিপুকুর ও আদিবাসী সমৃদ্ধ গ্রাম বেলোয়া। এখানকার ছয়ঘাটি দীঘির উত্তর ধারে দুই বিঘার মতো উচু একটি স্থানে পাঁচটি সমাধির মতো স্থান পরিলক্ষিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এটি পাঁচ পীরের দরগা বা মাজার। মেজর শের ইউলর মানচিত্রে স্থানটি ‘‘ পানি পীর সাহেবকি পুকুর’’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। মুলত এটি পাঁচ পীরের পুকুর। এখানকার ভাতছালা গ্রামের বশির সরকার এখান থেকে পিতলের একটি আসা পান বলে বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। উক্ত আসার মাথা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। মধ্যভাগে বাঘের মাথার ছবি এবং অন্য দুই ভাগে মাছের প্রতিকৃতি অংকিত ছিল। মধ্যভাগে কালেমা তৈয়বা, মোহাম্মাদ মোস্তফা (স) এর পাক আমেলের শেষের দিকে দিনাজপুরের ডিসি মহোদয় সংগ্রহ করে দিনাজপুর মিউজিয়ামের সংরক্ষণের জন্য জমা দেন। কিন্তু ১৯৭১ সারে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেখান থেকে আসাটি হারিয়ে যায়।
মাওলানা নুর উদ্দিন (রহ)’র মাজার
ঘোড়াঘাট- কামদিয়া রাস্তার পাশে সাবেক মহুয়ার বাগ নামক স্থানে পাকা রাস্তার পাশে মাজারটি অবস্থি। মাজার কেন্দ্রিক সাবেক স্থাপন অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। কালে কটাক্ষ উপেক্ষা করে কেবল মাজারটি টিকে আছে। এমন কি মাজারের ঘরটিও নষ্ট হয়ে গেছে। জানা যায় মওলানা নূরউদ্দিন ঘোড়াঘাটে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই তিনি লেখাপড়া শিখে ইসলাম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি এখাধারে শিক্ষাবিদ, সাধক শাস্ত্রজ্ঞ আলেম ও ইসলাম প্রচারক ছিলেন। আরো জানা যায়, তিনি অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। তার ওয়াজ শোনার জন্য সভাস্থরে দলে দলে লোকজন আগমন করতো। তার ওঢাত সাভের পরে এখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তার কাম্যত সর্ম্পকে এখনো অনেকে কথা শোনা যায়। আপদ বিপদে আত্বানা লাভ ও রুহানা ফায়েজ হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে অনেক লোক মাজার জিয়ারত আগমন করেন।
খন্দকার বদরে আরেফিন (রহঃ) র মাজার
ঘোড়াঘাট বাজারের কেন্দ্রস্থল থা্না ভবনের পূর্ব দিকে মসজিদের পাশে মাজারটি অবস্থিত। তিনি ঘোড়াঘাটেই জন্ম গ্রহন করেন। এখানেই শিক্ষা লাভ করেন বলে জানা যায়। তার পিতৃ পরিচয় জানা না গেলেও তিনি একজন নামকরা আলেম, পীর, উন্নত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ, নীতিবান, শিক্ষাগুরুরুপে সমাজে পরিচিতি ও শ্রদ্ধার পাএ ছিলেন। তার নিজস্ব বাসভবনে আশে পাশে সে সময় গড়ে উঠেছিল মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ। তার ওফাত লাভের পরে এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। সমাধিটি ৭ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট প্রস্থ। সমাধির পশ্চিম পাশেই কয়েক খন্ড কালো পাথর পড়ে আছে। এখনো তার মাজারে প্রতিদিন জিয়ারত হয়। মাজারের পাশেই রয়েছে আধুনিক সুরম্য একটি মসজিদ। তাকে স্মরনীয় করে রাখার লক্ষ্যে ‘বদরে আরেফিন, নামে ঘোড়াঘাট একটি ফিলিং স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে।
দেওয়ান পীরের মাজার
উপজেলার পশ্চিম দিকে পালশা ইউনিয়নের অর্ন্তগত ডুগডুগী মোকাম নামক বাজারে দেওয়ান পীর সাহেবের মাজার অবস্থিত। এ মাজারে সমাহত ব্যক্তির আগমন সর্ম্পকে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এ মাজারকে যথেষ্ট মান্য করেন। প্রকৃত নাম অজ্ঞাত। সাধারনের মাঝে দেওয়ান পীর বলেই পরিচিত।
শাহ দরিয়া বোখারী (রহ.)র মাজার
ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর ত্রিমোহনী ঘাটের পশ্চিম ধারে চৌখন্ডি মৌজার প্রাচীযন ঈদগাহ মাঠের অভ্যন্তরে প্রায় ৩০ টির মতো সমাধি আছে। সমাধিগুলোর একটি শাহ দরিয়া বোখারীর মাজার। ঘোড়াঘাট চারমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে পাকা রাস্তার শেষ প্রান্তে গিয়ে উত্তর দিকে তাকালে বাঁশঝাড়ের কিনারে প্রাচীন ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। ঈদগাহ মাঠের চর্তুপাশ পাকা প্রাচীর আছে। দক্ষিণ দিকে আছে প্রধান ফটক। তাতে লেখা আছে দরিয়া বোখারী (রহ,) র মাজার। দরিয়া বোখারীর প্রকৃত পরিচয় জানা যায় না। তিনি শাহ সুজার আমলে প্রথম দিকে বোখারা থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আগমণ করেন বলে জনশ্রুতি আছে। তিনি এখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ মাদ্রাসায় তিন শতাধিক ছাত্রে আবাসিক সুবিধা ছিল। মধ্যযুগের ঘোড়াঘাট সরকার এর বিখ্যাত সাধক কবি হেয়াত মামুদের ১৭৫৮ সালে রচিত ‘আম্বিয়া বাণী’ পুঁথিতে শাহ দরিয়া বোখারী (রহ) এর বন্দনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
ঋষিঘাট মন্দির
হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য প্রাচীন কাল থেকেই আধুনিক কাল পর্যন্ত তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত এই মন্দির। সিংড়া ইউনিযনের বিরাহিমপুর বাজারের একটু দক্ষিণ এসে পূর্ব দিকে আঁকাবাঁকা পথে যেতে হয় ঋষিঘাটে। করতোয়া নদীর তীরে ঋষিঘাট মৌজায় মন্দিরটি অবস্থিত বলে এর নাম ঋষিঘাট মন্দির হয়েছে। কোন ঋষি এই ঘাট দিয়ে পার হয়েছিলেন তার নাম অজ্ঞাত। অতীতে এখানে দুটি মন্দির নির্মান করে দিয়েছিলেন একজন ভূস্বামী। সাবেক মন্দির অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। এখন চূড়াওয়ালা প্রদক্ষিণ পথ যুক্ত চারকোণী পাকা মন্দির তোলা হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের ১০মী তিথিতে এখানে বারুনী স্নান হয়। এ উপলক্ষ্যে মেলা বসে। হিন্দু নর-নারীদের বেশ সমাগম হয় এখানে। |
d4be4a0b-0add-4cd6-b2f1-428d64b910da | ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্নপ্রাচুর্য
ঘোড়াঘাট প্রাচীন জনপদ হওয়ায় এর বিভিন্ন স্থানে পুরাকীর্তি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। এ উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান ও প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে- ঘোড়াঘাট দুর্গ, বারপাইকের গড়, বেলোয়া, পল্লরাজ, দামোদরপুর, সুরা মসজিদ, শাহ ইসমাইল গাজী (র)’র মাজার, শাহ দরিয়া বোখারী (র)’ মাজার, কাজী সদরুদ্দীন (র)’র মাজার ও বাসভবন উল্লেখযোগ্য। এগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো-
ঘোড়াঘাট দুর্গ
উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ মৌজায় ঘোড়াঘাট দুর্গের অবস্থান। দুর্গের পূর্বধারঘেঁষেই প্রবাহিত করতোয়া নদী এবং পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর দিকে (লাগোয়া) পরিখা দ্বারা বেষ্টিত। সুলতানী আমলের আগে এ দুর্গের ভিত প্রতিষ্টিত হলেও মোগল আমলে এসে এ চরম উন্নতি সাধিত হয়। উত্তরবঙ্গের মধ্যে এটি একটি মাঝারী ধরণের মাটির দুর্গ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় অনেক গবেষকের গ্রন্থে। কানিংহামের মতে- ঘোড়াঘাট শহরের আয়তন ছিল উত্তর-দক্ষিণে ১০ মাইল ও প্রস্থে ২ মাইল। আ.কা.মো. যাকারিয়া সাহেবের বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থের তথ্য মতে আলোচ্য দুর্গটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ও পূর্ব পশ্চিম দেয়ালের দৈঘ্য অনুরূপ, উত্তর দেয়াল আধা মাইল এবং দক্ষিণ দেয়াল প্রায় এক মাইল লম্বা। ধারণা, এই সীমানা কেবল দুর্গের কেন্দ্রের। বিশেষ করে দক্ষিণ দিকে আরো প্রলম্বিত ছিল। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম ধারে যে পরিখা দেখা যায় তা প্রায় ৬০ ফুট চওড়া। পশ্চিম দেয়ালের উত্তরাংশে দুর্গের প্রধান প্রবেশ পথ ছিল। প্রধান প্রবেশ পথ থেকে ৪০০ গজ দক্ষিণ- পূর্ব দিকে দুর্গের দ্বিতীয় আন্তদেয়ালের গুরু। এর পাশেই ছিল ফৌজদার ভবন। তাচাড়াও দুর্গবেষ্টনীর প্রধান অংশে ছিল প্রশাসনিক ভবন, সেনা ছাউনী, সামরিক কর্মচারিদের বাসভবন, মসজিদ ও মাদ্রাসা। এখন শুধু পরিক্ষার উপরে ৮/১০ ফুট উঁচু লালমাটির প্রাচীর আছে যেগুলো পথিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাটির প্রাচীরের উপরে এখন আগাছা জন্মেছে।
সম্রাট আকবরের আমলে এই দুর্গে ৯০০ আশ্বারোহী, ৫০টি হাতি ও ৩২,৬০০ পদাতিক সৈন্যের স্থান সংকুলান হতো। দুর্গের অভ্যন্তর ভাগে পশ্চিম দিকে (পাকা সড়কের ধারে) ফৌজদার ভবনের কাছাকাছি জায়গায় একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ, মসজিদের পশ্চিম ধারে পুরাতন জরাজীর্ণ কবর ও মসজিদের সামনে একটি ৮ কোণী ইদারা এবং দক্ষিণ পাশে লাগোয়া গোলাকার আর একটি পরিত্যাক্ত ইদারা দৃষ্টিগোচর হয়। অধূনা স্থানটি মাজারপাড়া বলে পরিচিত। জঙ্গলে ঢাকা এই স্থানটি ২০০৭ সালে পরিস্কার করা হয়। এখন দুর্গের ভূমির উপরে বৃক্ষ রোপণের কাজ চলছে।
(ক) মসজিদঃদুর্গনগরীর অভ্যন্তরে ধ্বংসপ্রাপ্ত সমজিদটি ঘোড়াঘাট মসজিদ বলেই পরিচিত। এর দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ২২ ফুট। কার্নিস পর্যন্ত উচ্চতা ১৪ ফুট প্রায়। সামনে ৩ দরজা, উপরে ৩ গম্বুজ। চারকোণায় ৪টি মিনার ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। উত্তর দিকের গম্বুজ ও দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। দেয়ালে পুরুত্ব ৪০ ইঞ্চির মতো। সমগ্র ইমারতের পলেস্টার খুলে পড়েছে। ভিতরে ৩ কাতার নামাজীর স্থান সংকুলান হতো। এক সময় এ মসজিদটি অত্যন্ত সৌন্দর্য মন্ডিত ছিল। বুকানন হেমিল্টনের দেয়া তথ্য মতে, আলোচ্য মসজিদটি নবাব আলীবর্দী খানের আমলে ১১৫৩ হিজরীতে (১৭৪০ খ্রিঃ) মোহাম্মদ সালেহের পুত্র ও মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র জয়নাল আবেদীন মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই জয়নাল আবেদীন ঘোড়াঘাট দুর্গের ফৌজদার ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য দুর্গের দক্ষিণ পূর্ব দিকে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর আমলে নির্মিত দ্বিতীয়আর একটি সমজিদের ধ্বংসাবশেষ চাম্পাতলী থেকে আবিস্কৃত হয়েছে। ঐ মসজিদের শিলালিপিটি বগুড়া যাদুঘরে রক্ষিত আছে বলে বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ধারণা, সেনানিবাসের মধ্যে থাকা আলোচ্য মসজিদটিতে ফৌজদার ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করতেন।
(খ) ইদারাঃমসজিদের সামনে ৮ কোণী (প্রায় ১২ ফুট বেড়) একটি পাকা ইদারা আছে। আবার একই মসজিদের দক্ষিণ ধারে লাগোয়া আর একটি ইদারা আছে। এটি গোলাকার। এর উপরের মুখ এখন সমতল ভূমির সমান। মুখের ব্যাস প্রায় ৬ ফুট। ধারণা, এই ইদারা দুটির পানি নামাজীদের অজুর জন্য ব্যবহার হতো। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ভিতরে পানি নেই, প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
(গ) পাকা কবরঃউপরে বর্ণিত দ্বিতীয় ইদারার পশ্চিম পাশে পাকা সড়কের ধারে মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লাগানো একটি পাকা কবরের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বাঁধানো কবরের কিছু অংশের ইট খুলে পড়েছে। কবরটি কার তা জানা যায় না। এই কবরের আশেপাশে আরো কিছু কবরের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তবে সেগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে অনেক আগেই। অধূনা স্থানটি ‘মাজারপাড়া’ বলে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। ২০০৮ সারে স্থানটি পরিদর্শনকালে মসজিদেরপাশে একটি সাইনবোর্ডে তা লেখা রয়েছে। সেই সোথে জঙ্গলে ঢাকা সমুদয় স্থানটি পরিস্কার করা হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হওয়া সত্ত্বেও দেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কোন সাইনবোর্ড সেখানে দেয়া হয়নি। দৈনিক শত শত বাসযাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই পরিত্যক্ত ও প্রাচীন নিদর্শনটি। এখানে উল্লেখ্য, এ সমাধি থেকে ১ কিঃ মিঃ পূর্ব দিকে নদীর ধারে চম্পাতলী নাম স্থানে বাঁধানো ঘাট ও উঁচু একটি ঢিবি এখানো দৃষ্টিগোচর হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এ স্থানকে পুঁথি সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট গাজী কালু ও চম্পাবতীর স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শন বলে মনে করেন।
শাহ ইসমাইল গাজীর মাজার
উপরে বর্ণিত পাকা কবরের স্থান থেকে আনুমানিক ৪০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পাকা রাস্তার পশ্চিম ধারে সামান্য টিলা সদৃশ একটি জায়গা আছে। এর পশ্চিম ধারে ঢালু স্থানে পাশাপাশি দুটি সমাধি রয়েছে। সমাধি দুটির দক্ষিণ ধারে পরিখা বা ছোট পুকুরের মতো গর্তবিশেষ দেকা যায়। যাহোক, পাকিস্তানন আমলের প্রথম দিকে স্থানটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জঙ্গল পরিস্কারকালে এই সমাধি দুটি দৃষ্টিগোচর হয়। দক্ষিণ দিকের সমাধিটি শাহ ইসমাইল গাজীর বলে মাজারের খাদেমসূত্রে জানা যায়। দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। সমাধি দুটি ইটের প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। এরূপ জনশ্রুতি আছে বহু দিন যাবত মাজারটি জঙ্গলে ঢাকা ছিল। এই জঙ্গলের ভিতর মাজারের পাশে দিন রাত একটি বাঘ পাহারা দিতো। এ বাঘ কারো ক্ষতি করতো না। স্থানীয় লোকেরা মানতি দ্রব্যাদি নিয়ে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে বাঘটি দূরে সরে যেতো। আরো জানা যায়, এ মাজারের অসম্মান হলে বড় ধরণের ক্ষতি বা দুঘটনা ঘটতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মি.এস,কে ঘোষ কোন রকম সম্মান দেখানো ছাড়াই মাজারের পাশ দিয়ে মোটর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। তবে তিনি জীবনে বেঁচে গেছেন। মাজারকে অসম্মান করা হয়েছে এটা তিনি বুঝতে পেরে প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ নিজ অর্থে মাজারটি পাকা করে দেন।৪১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মি. ঘোষের বাঁধানো স্থাপত্য কাঠামোটি অটুট ছিল। তার পরে একধিকবার সংস্কার করা হয। বর্তমানে সেখানে একজন নিয়মিত খাদেম আছেন যিনি মাজারের খেদমত করে থাকেন। উক্ত মাজারে এখনো জিয়ারত ও সম্মান দেখানো হয়। অতি সম্প্রতি সেখানে একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
রিশালাতুস সুহাদা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এই ইসমাইল গাজী গৌড়ের সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ এর (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রিঃ) প্রধান সেনাপতি ছিলেন। পার্শ্ববর্তী কামরূপ রাজ্যের অত্যাচার দমনের উদ্দেশ্যে গৌড় থেকে শাহ ইসমাইর গাজী কিছু সৈন্য সমান্তসহ ঘোড়াঘাট এলাকায় আসেন। পথে দিানজপুরের (বর্তমান নওগাঁ) সন্তোষ নামক স্থানে কান্তেশ্বর/কামেশ্বর রাজার সাথে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়ে মাত্র ১২ জন পাইকসহ ঘোড়াঘাটের বারপাইকের গড়ে আশ্রয় গ্রহন করেন এবং ধ্যান মগ্ন হন । উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলেন । এর কিছু দিন পরে সুযোগ এসে গেল । উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হলো । এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে রাজা যুদ্ধ না করে গৌড়ের সুলতানের বশ্যতা মেনে নেন । এতে গাজীর বিজয় সূচিত হয় । কিন্তু ঘোড়াঘাট দুর্গের অধিনায়ক ভান্দুসী রায়ের চক্রান্তের কারনে সুলতানের নির্দেশে গাজীর শিরোচ্ছেদ করা হয় (১৪৭৪ খ্রি .) কাটাঁদুয়ারে । গাজীর ধড়ের একটি অংশ সমাধিস্থ করা হয় ঘোড়াঘাটে । আলোচ্য সমাধিটি সেই সেনাপতি শাহ ইসমাইল গাজীর । আগের চেয়ে মাজার ও তৎসংলগ্ন স্থানের বেশ উন্নতি হয়েছে এখন । ( বিস্তারিত দেখুন ব্যক্তিত্ব অধ্যায়ে শাহ ইসমাইল গাজী অংশে ) ।
বারপাইকের গড়
উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ঘোড়াঘাট-রানীগঞ্জ রোডের উপর বিরাহিমপুর কাচারী । কাচারীর পূর্ব ধারেই মইলা ( মরা করতোয়া ) নদী বেষ্টিত ত্রিভূজাকৃতি স্থলভাগ লক্ষ্য করা যায় । নাম বারপাইকের গড় । মৌজার নামও বারপাইকের গড় , মেŠজার মোট জমি ৩৯৩.৬০ একর ৫। ঘোড়াঘাট দুর্গ থেকে এস্থানের দূরত্ব উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১০কিলোমিটার । এখানে প্রাচীনকালে একটি দুর্গ ছির তার প্রমাণ মিলে ইতিহাস থেকে । গড়ের জমির পরিমাণ ৭৬.২৭ একর৬। নদীর স্রোত ঘেষে গড়ের চর্তুদিকে ৪০ ফুট প্রশস্ত ও ৮/১০ফুট উঁচু মাটির প্রাচীর আছে । বর্তমানে মাটির প্রাচীরের উঁচ্চতা আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। গড়ের চর্তুপাশে যে নদী / পরিখা আছে তার প্রশস্ততা পূর্ব দিকে ৫০ ফুট এবং পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে ১২০ ফুট , গভীরতার কারনে খরা মৌসুমেও পানি থাকে । স্থানটি বড় গড় ও ছোট গড় দুটি অংশে এখন বিভক্ত । গড়ের ধারে প্রাচীন সামধির পাশেই আছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ড ।
আলোচ্য গড়টি কোন আমলে সৃষ্টি তা সঠিক ভাবে জানা যায় না । তবে গৌড়ের সুলতান রুকনউদ্দিন বরবক শাহ-এর আমলে (১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রি.) তার সেনাপতি শাহ ইসমাইল গাজী ১২ জন পাইকস এই দুর্গে আশ্রয় গ্রহন করেছিলেন । ভাগিনেয় মুহাম্মাদ শাহের উপর দুর্গ রক্ষার ভার দিয়ে গাজী উত্তরে চতরাহাটের কাছে জলমোকাম নামক স্থানে চলে যান । ১২ জন পাইক থাকার কারনে আলোচ্য দুর্গটির নাম বারপাইকের গড় হয়৭। তার আগে এটি কোন নামে পরিচিত ছিল জানা যায় না । ধারনা , এই গড়টি পাঠান আমলের আগে নির্মিত হয়েছিলু খুবসম্ভব কামরূপ কামতা রাজ্যের আক্রমন প্রতিহত করার লক্ষ্যে । রাজা নীলাম্বরের সময়ে দুর্গটি নির্মিত বলে কোচবিহারের ইতিহাসে ইঙ্গিত রয়েছে । কিন্তু গড়টি ঐ রাজার আমলেরও আগের বলে অনুমতি । যাহোক, মুসলিম শাসন আমলে দুর্গটি ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে থাকে । এর পরিবর্তে ঘোড়াঘাট দুর্গ প্রাধান্য লাভ করে । ক্রমে স্থানটি জঙ্গলকীর্ণ ও দুর্গম হয়ে পড়ে । পাকিস্তান আমলে স্থানীয় সাঁওতাল ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য করে তোলে । বিরাহিমপুর থেকে গড়ে পারাপারের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো আছে । দিনাজপুর জেলার গেজেটীয়ার ( ১৯৯১ সনে মুদ্রিত ) থেকে আরো জানা যায় , প্রাচীনকালে গড়ের ভিতরে একটি অট্ট্রালিকা ছিল , বৃটিশ আমলেও তার সামান্য অস্তিত্ব ছিল । এখন সামান্য উঁচু মাটির ঢিবি দৃষ্টিগোচর হয় । সরেজমিনে বাস্তবাবস্থা দৃষ্টে নিশ্চিতভাবে বলা যায় , অতীতে এটা একটা সুরক্ষিত দুর্গ ছিল । গড়ের পূর্ব ধারে একজন মুসলমান পীরের মাজার আছে । সেটি দেওয়ান পীরের মাজার বা অচীন পীরের মাজার বলে স্থানীয়রা জানেন । তিনি কোথাকার লোক এবং কী তার পরিচয় সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়না। স্থানীয মুসলমান হিন্দু বাসিন্দারা এ মাজারকে যথেষ্ট ইজ্জত করে এবং সিন্নী মানত করে থাকে । এই গড়কে কেন্দ্র করে নানা জনশ্রুতি স্থানীয়ভাবে প্রচার লাভ করেছে ।
বেলোয়ার প্রাচীন কীর্তি
উপজেলার পশ্চিম দিকে পালশা ইউনিয়নের অন্তগর্ত দীঘি-পুকুর সমৃদ্ধ বেলেয়া একটি প্রাচীন গ্রাম । মৌজার মোট জমির পরিমাণ ১৩৫৫.৪৮ একর । জনশ্রুতি আছে, এই গ্রামে বেহুলার পিতা বাসো বানিয়ার বাড়ি ছিল । বেহুলারা ছিল সাত বোন । তারা সাতটি দীঘিতে গোসল করতো । তাই তাদের পিতা সাত বোনের জন্য পৃথক সাতটি দীঘি খনন করে দেন । দীঘিগুলোর নামও বেশ চমৎকার । যেমন- নয়ন দীঘি, মন্ডলের দীঘি, বামন দীঘি, আন্ধোয়া দীঘি, কোদাল ধোয়া দীঘি ও ছয়ঘাটি প্রভূতি । আলোচ্য গ্রামে সাতটি দীঘি ছাড়া ও প্রায় ৪০ টি অধিক ছোট বড় দীঘির অস্তিত্ব আছে । এইসব দৃষ্টে ধারনা করা যায়, প্রাচীনকালে এখানে একটি জনপদ ছিল যা মহাকালের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে গেছে । এখানে একটি দুর্গ ছিল এমন বর্ণনাও পাওয়া যায় কোন কোন লেখকের লেখায় । উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রত্যেকটি দীঘির উঁচু পাড়ে সাঁওতাল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বসত গড়ে উঠতে শুরু করেছে ।
(ক) নয়ন দীঘি:বেলোয়ার সবচেয়ে বড় দীঘির নাম নয়নদীঘি । এটি উত্তর-দক্ষিণে ৭০০ গজ দৈর্ঘ্য ও পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ গজ প্রস্থ । পাড় বেশ উঁচু । বিশাল এ দীঘিতে সারা বছর পানি থাকে । এই দীঘি থেকে পাকিস্তান আমলে (১৯৭১ সালের আগে ) বড় একটি পাথরের মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল । সেটি এখন কোথায় আছে তা জানা যায় না । এই দীঘির পূর্ব ধারে লাগোয়া আরো ৩/৪ টি ছোট ছোট দীঘি আছে । এখন মন্ডলের দীঘিটিই দৃষ্টিগোচর হয় ।উভয় দীঘির মাঝের উচুুুুঁ ভূমির উপর দিয়ে গ্রাম্যপথ রচিত হয়েছে।
(খ)আন্ধেয়া দীঘি: নয়ন দীঘি থেকে সোজা ১ সাইল পূর্ব দিকে বামন দীঘি অবস্থিত। এই দীঘির দক্ষিণে প্রায় পাশাপাশি অবস্থিত ৩টি দীঘির মধ্যে একটি মাঝারী ধরনের দীঘি আছে-নাম আন্ধেয়া ধীঘি। এর আয়তন ২৫০´১৫০ গজ। এতেও সারা বছর পানি থাকে । পাড় উঁচু-পাড়ে নতুন বসত গড়ে উঠতে শুরু করেছে।
(গ) বামন দীঘি:আন্ধেয়া দীঘির উত্তর পশ্চিম কোণে খনিত বড় দীঘিটির নাম বামন দীঘি । এর আয়তন ৬০০´৩০০ গহজ । এর পাড়গুলো ১৫ ফুট উঁচু্ । এখন অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। জেলা পরিষদের রাস্তা থেকে এই দীঘির উত্তর অংশের পার দেখা যায়। এই দীঘির ১০০ গজ দক্ষিণে ঢোলচৌধুরীর দীঘির কাছাকাছি স্থানে একটি বেশ আয়তাকার উঁচু ভূমি আছে। এর অভ্যন্তরে প্রাচীন অট্রা্লিকার ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান । ১৯৪৬ সালে বামনদীঘির দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিম অংশে খাড়ে সাঁওতাল বাড়ির উঠোন থেকে চুলা খননের সময় দের ফুট মাটির গভীরে পাল আমলের ২টি তাম্রালিপি আবিস্কার হয় । এ তাম্রলিপিগুলো খারে সাঁওতাল পেলেও পরে তা সরকারি লোকের মাধ্যমে বগুড়া জাদুঘরে জমাদেয়া হয় সংরক্ষণের জন্য। ৮
(ঘ) ছয়ঘাটি দীঘি: আন্ধেয়া দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিমের বড় দীঘিটি ছয়ঘাটি দীঘি নামে খ্যাত । এর আয়তন ৬৫০´৩৫০ গজ । এর পাড়গুলো প্রায় ২০ফুট উঁচু । এখন অনেকটা কমে গেছে । দীঘির পূূর্ব পাড়ে ২টি, পশ্চিম পাড়ে ২টি এবং উত্তর পাড়ে ১টি ও দক্ষিণ পাড়ে ১টি মোট ৬টি বাঁধান ঘাট আছে। ছয়ঘাট থাকায় এর নাম ছয়ঘাটি হয়েছে। বেহুলা এই দীঘিতে স্নান করতেন বলে জনশ্রুতি আছে। এই দীঘির উত্তর পারে একটি স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট সামান্য উঁচু ভূমি আছে । স্থানটিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি অট্রা্লিকার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায় । মেজর শেরউলের মান চিত্রে স্থানটি পানিপীরের (পাঁচপীরের) আস্তানা বা দরগা বলে বর্ণিত হয়েছে । পার্শ্ববর্তী ভাতশালা গ্রামের বশির সরকার এখান থেকে পাকিস্থান আমলের শেষ দিকে ২ ফুটের সামান্য লম্বা একটি পিতলের আসা পেয়েছিলেন। তাতে পাঁচ জন বরহিনা সম্প্রদায়ের ফকিরের নাম খোদিত ছিল। বশির সরকারের ছোট ভায়ের নিকট থেকে দিনাজপুরের তৎকালীন ডিসি মহোদয় জনাব আ. কা. মো. জাকারিয়া জাকারিয়া সাহেব আসাটি নিয়ে দিনাজপুর যাদুঘরে সংরক্ষনের জন্য জমা দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেটি হারিয়ে গেছে বলে তিনি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ৯
পল্লরাজ
পাল ও রাজ দুটি শব্দের মিলনে পল্লরাজ শব্দ। ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের একটি প্রাচীন স্থান। ঘোড়াঘাট দূর্গ থেকে এ স্থানটি প্রায় ৫ কি মি উত্তর পশ্চিম দিকে এবং বেলোয়া থেকে ৩ কি মি পূর্ব দিকে অবস্থিথ। প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুলে পুকর, ঢিবি ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ এক প্রাচীন স্থান। বাংলাদেশ প্রত্মসম্পদ সন্থ থেকে জানা যায় পাল বংশের প্রথম নৃপতি গোপাল গৌড়ের সিংহাসন অধিকারের পূর্বে ছোট সামন্ত রাজা হিসেবে এখানে তার জয়স্কন্দাবার বা রাজধানী গড়ে তুলেছির। এখান থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে তিগগৌড়অধিপতি হয়েছিলেন বলে প্রবল জনশ্রুতি আছে।১০
দামোদর পুর
বুলাকীপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ও প্রাচীন জনপদ দামোদরপুর। মৌজার মোট জমির রিমাণ ৫২৩.৩৬ একর।১১রানীগঞ্জ থেকে ভাদুরিযা গামী রাস্তার কানাগাড়ী বাজারের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে এবং বেলোয়ার প্রাচীন কীর্তিবাহী স্থান থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে দামোদরপুর অবস্থিত। বেশ কয়েকটি প্রাচীন জলাশয় ও ৪/৫ টি মাটির ঢিবি আছে এখানে। অনেক গবেষক এ স্থানটিকে দামোদরপর নামেই চিহ্নিত করেছে।
সুরা মসজিদ
ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চৌগাছা মৌজায় (হিলি রোড) প্রাচীন এ মসজিদটি অবস্থিত। ঘোড়াঘাট উপজেলা কেন্দ্র থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে পাকা রাস্তার উত্তর ধারে ৩৫০-২০০ গজ আয়তন বিশিষ্ট বিশাল একটি পাড়ওয়ালা দীঘির দক্ষিণ ধারে আলোচ্য মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটি জনহীন এক জনপদের নীরব সাক্ষী। এর নাম নিয়ে আছে নানা কথা কেউ বলেন সৌর মসজিদ , কেউ বলেন সুরা মসজিদ , আবার কেউ বলে শাহ সুজা মসজিদ। সুর শব্দের অর্থ অপদেবতা বা জ্বীন। স্থানীয় মুরুববীরা জানান, এক রাতের মধ্যে জ্বীনেরা এটি নির্মাণ করে দেন, তাই এর নাম সুরা মসজিদ হয়েছে। সৌর শব্দের অর্থ আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে যা ঘটে বা হয় তাই গায়েবী। অর্থাৎ গায়েবী ভাবেই মসজিদটি নির্মীত হয়েছে। আবার অনেকে বলেন- মোগল আমলে বাংলার নবাব সুজা এটি নির্মাণ করে দেন বলে এর নাম শাহ সুজা মসজিদ হয়েছে। এমন ধরণের আরো অনেক কথা লোকমুখে শোনা যায়। বাস্তবে শাহ সুজার ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। মসজিদের নামকরণ ও নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে উপরে উল্লেখিত কোন তথ্য সঠিক বলে মেনে নেয়া যায় না। কারণ , যে ক্ষেত্রে মসজিদের শিলালিপি বা প্রমাণ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে নির্মাণশৈলী বা স্থাপত্য কাঠামো নির্মাণকাল নির্ধারণে একটি অনুসঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। এ ক্ষেত্রে আলোচ্য মসজিদের শিলালিপি নেই। তাই গঠনশৈলীর উপর ভিত্তি করেই সম্ভাব্য নির্মাণকাল বের করা যায়। আলোচ্য মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪০ ফুট এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৬ ফুট। চার ফুট উচু মজবুত প্লাটফর্মের উপর মসজিরদর কাঠামো গড়ে উঠেছে। প্রধান কক্ষের আয়তন ভিতরে ১৬´১৬ ফুট। প্রধান কক্ষের সাথে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। মসজিদের বাইরের দিবে দেয়ালে গায়ে ছোট ছোট খোপকাটা টেরাকোটা অলংকরণ ইমারতের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও লতাজাতীয়াভিনব নকশায় বাইরের দেয়াল সুসজ্জিত যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক দানী এটিকে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর আমলে নির্মিত বলে অনুমান করেন। ১২আলোচ্য এই মসজিদটি সুলতানী আমলে ( ১৪৯৩-১৫১৮) খ্রিষ্ঠাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। ১৩
কাজী সদরুদ্দিন (রহ)’র বাস ভবন, সমাধি ও সমজিদ
ঘোড়াঘাট থানা ভবন থেকে ২ কিলোমিটার উত্তর দিকে শহরগাছী মৌজা। মৌজার মোট জমি ১৭৩ একর। ১৯৭৪ সালে লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪৫ জন। সেখানে বেশ কয়েক ঘর আদিবাসী সাঁওতালের বসত আছে। থানা ভবনের পাশ দিয়ে একটি সরু পাকা রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে উত্তরে দিকে । ঝোপঝাড় পার হয়ে একটু উত্তরে গেলেই ঘোড়াঘাটের বিখ্যাত পীর ও কাজী সদরুদ্দিন সাহেরে মাজার এলাকা। প্রথমেই দেখা যাবে কাজী সদরুদ্দিনের (রহঃ) এর ১২ দুয়ারী প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। তার উত্তরে আছে (৩৫ গজ দুরে) সমাধিস্থ এবং সমাধির উত্তর ধারে আছে মোঘল আমলে নির্মিত সৌন্দর্যমন্ডিত একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এই স্থানের উত্তর-পূর্ব দিকে আনুমানিক ১০০ গজ দূর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে করতোয়া নদী। কাজী সাহেবের বাসভবনের পূর্ব পাশে দু-এক ঘর সাঁওতালের বসত আছে। তারা অনেক দিন ধরে এখানে বাস করছেন। বলতে গেলে অনেকটা জনমানবহীন এই স্থানে একা এলে গা শিউরে উঠবে। অথচ এক সময় এই স্থান ছিল কোট- কাচারীর মতো সরগরম।
(ক) ১২ দুয়ারী প্রসাদঃবারদুয়ারী বাস স্থান থেকে ৩০ গজ উত্তর দিকে কাজী সাহেবের মাজার। সামনের দিকে প্রবেশ পথ, তাতে আছে কাঁটাতারের বেড়া, কোথাও কোথাও অনুচ্চ প্রাচীর আছে। জনমানবহীন জায়গা। এখানে এক এলে ভয় লাগে। অনেক গুলো লম্বা লম্বা সমাধি মাজারের পূর্বধারে রয়েছে। সমাধিগুলো কার সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। এই মাজারে একজন বয়োবৃদ্ধ খাদেম আছেন। তিনি জানান, এই কবরগুলো মাজারের খাদেমদের। দীর্ঘ দিন মাজারের খেদমত করে যে যখন মারা গেছেন তখন তার সমাধি এখানেই দেয়া হয়েছে।
দেওয়ান গাজীর মাজার
সিংগা ইউনিয়নের অন্তর্গত বিরাহিমপুর কাচারীর ৫০ গজ পূর্ব- উত্তর দিকে এবং বার পাইকেরগড়ের পশ্চিমে মইলা নদীর তীরে বটগাছের নিচে একজন গরীবের মাজার আছে। এটি দেওয়ান গাজীর মাজার বলে খ্যাত। আগে এখানে প্রাচীন ইটের স্ত্তপ ছিল। পাকিস্তান আমলে এই স্ত্তপ পরিস্কার কালে এখানে একটি মাজারের অস্তিত্ব আবিস্কার হয়। শাহ ইসমাইল গাজীর কোন অনুচরের মাজার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কারণ ইসমাইল গাজী ১২ জন পাইক সমেত এখানকার পার্শ্ববতী গড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরই একজনের মাজার বলে অনুমিত। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকের কাছেই এ মাজার একটি পূন্যভূমি। একই ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম ধারে একজন পীর সাহেবের সমাধি আছে। তার নাম পীর সাহেব আব্দুল কাদের।
পাঁচ পীরের দরগাহ
উপজেলার পালশা ইউনিয়নের অন্তর্গত প্রাচীন দীঘিপুকুর ও আদিবাসী সমৃদ্ধ গ্রাম বেলোয়া। এখানকার ছয়ঘাটি দীঘির উত্তর ধারে দুই বিঘার মতো উচু একটি স্থানে পাঁচটি সমাধির মতো স্থান পরিলক্ষিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এটি পাঁচ পীরের দরগা বা মাজার। মেজর শের ইউলর মানচিত্রে স্থানটি ‘‘ পানি পীর সাহেবকি পুকুর’’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। মুলত এটি পাঁচ পীরের পুকুর। এখানকার ভাতছালা গ্রামের বশির সরকার এখান থেকে পিতলের একটি আসা পান বলে বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। উক্ত আসার মাথা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। মধ্যভাগে বাঘের মাথার ছবি এবং অন্য দুই ভাগে মাছের প্রতিকৃতি অংকিত ছিল। মধ্যভাগে কালেমা তৈয়বা, মোহাম্মাদ মোস্তফা (স) এর পাক আমেলের শেষের দিকে দিনাজপুরের ডিসি মহোদয় সংগ্রহ করে দিনাজপুর মিউজিয়ামের সংরক্ষণের জন্য জমা দেন। কিন্তু ১৯৭১ সারে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেখান থেকে আসাটি হারিয়ে যায়।
মাওলানা নুর উদ্দিন (রহ)’র মাজার
ঘোড়াঘাট- কামদিয়া রাস্তার পাশে সাবেক মহুয়ার বাগ নামক স্থানে পাকা রাস্তার পাশে মাজারটি অবস্থি। মাজার কেন্দ্রিক সাবেক স্থাপন অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। কালে কটাক্ষ উপেক্ষা করে কেবল মাজারটি টিকে আছে। এমন কি মাজারের ঘরটিও নষ্ট হয়ে গেছে। জানা যায় মওলানা নূরউদ্দিন ঘোড়াঘাটে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই তিনি লেখাপড়া শিখে ইসলাম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি এখাধারে শিক্ষাবিদ, সাধক শাস্ত্রজ্ঞ আলেম ও ইসলাম প্রচারক ছিলেন। আরো জানা যায়, তিনি অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। তার ওয়াজ শোনার জন্য সভাস্থরে দলে দলে লোকজন আগমন করতো। তার ওঢাত সাভের পরে এখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তার কাম্যত সর্ম্পকে এখনো অনেকে কথা শোনা যায়। আপদ বিপদে আত্বানা লাভ ও রুহানা ফায়েজ হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে অনেক লোক মাজার জিয়ারত আগমন করেন।
খন্দকার বদরে আরেফিন (রহঃ) র মাজার
ঘোড়াঘাট বাজারের কেন্দ্রস্থল থা্না ভবনের পূর্ব দিকে মসজিদের পাশে মাজারটি অবস্থিত। তিনি ঘোড়াঘাটেই জন্ম গ্রহন করেন। এখানেই শিক্ষা লাভ করেন বলে জানা যায়। তার পিতৃ পরিচয় জানা না গেলেও তিনি একজন নামকরা আলেম, পীর, উন্নত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ, নীতিবান, শিক্ষাগুরুরুপে সমাজে পরিচিতি ও শ্রদ্ধার পাএ ছিলেন। তার নিজস্ব বাসভবনে আশে পাশে সে সময় গড়ে উঠেছিল মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকাহ। তার ওফাত লাভের পরে এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। সমাধিটি ৭ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট প্রস্থ। সমাধির পশ্চিম পাশেই কয়েক খন্ড কালো পাথর পড়ে আছে। এখনো তার মাজারে প্রতিদিন জিয়ারত হয়। মাজারের পাশেই রয়েছে আধুনিক সুরম্য একটি মসজিদ। তাকে স্মরনীয় করে রাখার লক্ষ্যে ‘বদরে আরেফিন, নামে ঘোড়াঘাট একটি ফিলিং স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে।
দেওয়ান পীরের মাজার
উপজেলার পশ্চিম দিকে পালশা ইউনিয়নের অর্ন্তগত ডুগডুগী মোকাম নামক বাজারে দেওয়ান পীর সাহেবের মাজার অবস্থিত। এ মাজারে সমাহত ব্যক্তির আগমন সর্ম্পকে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এ মাজারকে যথেষ্ট মান্য করেন। প্রকৃত নাম অজ্ঞাত। সাধারনের মাঝে দেওয়ান পীর বলেই পরিচিত।
শাহ দরিয়া বোখারী (রহ.)র মাজার
ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর ত্রিমোহনী ঘাটের পশ্চিম ধারে চৌখন্ডি মৌজার প্রাচীযন ঈদগাহ মাঠের অভ্যন্তরে প্রায় ৩০ টির মতো সমাধি আছে। সমাধিগুলোর একটি শাহ দরিয়া বোখারীর মাজার। ঘোড়াঘাট চারমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে পাকা রাস্তার শেষ প্রান্তে গিয়ে উত্তর দিকে তাকালে বাঁশঝাড়ের কিনারে প্রাচীন ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। ঈদগাহ মাঠের চর্তুপাশ পাকা প্রাচীর আছে। দক্ষিণ দিকে আছে প্রধান ফটক। তাতে লেখা আছে দরিয়া বোখারী (রহ,) র মাজার। দরিয়া বোখারীর প্রকৃত পরিচয় জানা যায় না। তিনি শাহ সুজার আমলে প্রথম দিকে বোখারা থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আগমণ করেন বলে জনশ্রুতি আছে। তিনি এখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ মাদ্রাসায় তিন শতাধিক ছাত্রে আবাসিক সুবিধা ছিল। মধ্যযুগের ঘোড়াঘাট সরকার এর বিখ্যাত সাধক কবি হেয়াত মামুদের ১৭৫৮ সালে রচিত ‘আম্বিয়া বাণী’ পুঁথিতে শাহ দরিয়া বোখারী (রহ) এর বন্দনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
ঋষিঘাট মন্দির
হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য প্রাচীন কাল থেকেই আধুনিক কাল পর্যন্ত তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত এই মন্দির। সিংড়া ইউনিযনের বিরাহিমপুর বাজারের একটু দক্ষিণ এসে পূর্ব দিকে আঁকাবাঁকা পথে যেতে হয় ঋষিঘাটে। করতোয়া নদীর তীরে ঋষিঘাট মৌজায় মন্দিরটি অবস্থিত বলে এর নাম ঋষিঘাট মন্দির হয়েছে। কোন ঋষি এই ঘাট দিয়ে পার হয়েছিলেন তার নাম অজ্ঞাত। অতীতে এখানে দুটি মন্দির নির্মান করে দিয়েছিলেন একজন ভূস্বামী। সাবেক মন্দির অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। এখন চূড়াওয়ালা প্রদক্ষিণ পথ যুক্ত চারকোণী পাকা মন্দির তোলা হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের ১০মী তিথিতে এখানে বারুনী স্নান হয়। এ উপলক্ষ্যে মেলা বসে। হিন্দু নর-নারীদের বেশ সমাগম হয় এখানে। |
51fc30d9-ccca-4db8-b338-f098e632e953 | সড়ক পথই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। উপজেলায় সামান্য নদী পথ আছে। মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৩০ কিঃ মিঃ। তন্মধ্যে পাকা রাস্তা ৬২ কিঃ মিঃ এবং অবশিষ্ট ২৬৮ কিঃ মি কাঁচা রাস্তা। উপজেলা সদরের সাথে চার ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান। পাকা রাস্তা হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-ফুলবাড়ী, ঘোড়াঘাট-হিলি, ঘোড়াঘাট-পাঁচবিবি ও ঘোড়াঘাট-পলাশবাড়ী পাকা রাস্তা উল্লেখযোগ্য। রাস্তাগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করেছে। ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর উপর ১৯৯৬ সারে নির্মিত বেইলী ব্রিজটি ঘোড়াঘাটবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে। বর্তমানে উপজেলার সকল রাস্তায় কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, মোটরসাইকেল, সাইকেল, গরুরগাড়ি, রিক্সা, ভ্যান প্রকৃতি যানবাহন চলাচল করে। তবে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাগুলো বর্ষাকালে কর্দমাক্ত হয়। এতে চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়। তারপরেও আগের চেয়ে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। অনেক রাস্তার দু-ধারে নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করার ফলে রাস্তায় ছায়া বৃদ্ধি ও শোভা বর্ধন করছে। কিন্তু সম্প্রতি রাস্তার দু’ধারে রোপিত গাছ অননুমোদিত ভাবে কর্তন করছে এক শ্রেণীর অসাধু লোক। |
5fa02790-2f38-43b5-b982-fc5ad2ea691b | শাহ ইসমাইল গাজী :
ঘোড়াঘাটের মাটি খুড়ে যে ক’জন পূন্যাত্মার পদভারে ধন্য হয়েছে তাদের মধ্যে শাহ ইসমাইল গাজী একজন। ঘোড়াঘাট দূর্গের পশ্চিম ধারে সাহেবগঞ্জ মৌজায় তাঁর মাজার অবস্থিত। গোবিন্দগঞ্জুফুলবাড়ী সহাসড়ক এই মাজারের পাশ দিয়ে গন্তব্যে চলে গেছে। গাজীকে জড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে বহু কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে। তার সর্ম্পকে যতটুকু জানা যায়, তা হলো শাহ ইসমাইল গাজী একাধারে ছিলেন মক্কার নবী বংশের সন্তান, গৌড়ের সুলতান রুকুনউদ্দিন বরবক শাহ এর প্রধান সেনাপতি। ঘোড়াঘাট কামরুপ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারক ও আধ্যাত্ববাদী সাধক পুরুষ।
জানা যায়, দিনি পবিত্র মক্কা নগরে নবী বংশে জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক ১৪৩০ সালের দিকে। যৌবনে তিনি ধার্মিক ছিলেন ও ধর্ম উপদেশ দান করতেন। তার ওস্তাদের ছোট ভাই মওলানা কমলউদ্দিন কোরান শরীফ তেলাওয়াতকালে পাঠ করেন-‘‘ধর্মযুদ্ধে জীবন দাতাদের উচ্চ পুরুস্কার আছে আল্লাহতালার কাছে। এই আয়াত শোনার পরে ধর্মযোদ্ধা হওয়ার বাসনা তার মনে উদয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২০ জন যোদ্ধা/ সাথী নিয়ে তিনি পারস্য হয়ে এলন হিন্দুস্তান। অনেক কায়ক্রেশ সহ্য করে গৌড়ের সুলতান রুকনউ&&দ্দন বরবক শাহ এর দরবারে পৌছেন তিনি। বরবক শাহ ১৪৫৯-১৪৭৬ খ্রিঃ পর্যন্ত গৌড় রাজ্য শাসন করেছিলেন। সুলতানের দরবারে কাচরির আবেদন জানালে সুলতান তাকে শর্তসাপেক্ষে চাকরি দিতে রাজী হন। শর্তটি ছিল সেখানকার ছটিয়া পটিয়া নদীতে একটি মজবুত বাঁধ দিতে হবে যাতে বন্যার সময় সেখানকার প্রজারা ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। সুলতানের কথায় শাহ ইসমাইল গাজী সম্মত হলেন এবং তার সঙ্গীদের নিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দিলেন। কিছু দিনের মধ্যে সেখানে তিনি একটি মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে দিয়ে সুলতানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। অতঃপর সুলতানের সেনাবাহিনীতে তার ও সহযোগীদের চাকরি হয়। ইতোমধ্য গড় মান্দারণের রাজা গজপতি সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এই বিদ্রোহ দমনের জন্য শাহ ইসমাইল এর নেতৃত্বে যুদ্ধাভিযান প্রেরিত হয়। যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন। সুলতান এতে খুশি হয়ে তাকে গাজী উপাধি দান করেন এবঙ প্রধান সেনাপতিরূপে পদোন্নতি দেন। এরপরে ঘোড়াঘাট এলাকায় কামরূপ রাজ্যের প্রজাদের উৎপাত দমনের জন্য গাজীর নেতৃত্বে দ্বিতীয় আর একটি অভিযান প্রেরিত হয়। দিনাজপুরের সন্তোষ (নওগাঁ) নামক স্থানে গাজীর সাথে কামরূপ রাজার সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে গাজী বহু সৈন্য হারিয়ে মাত্র ১২ জন পাইক নিয়ে সরে পড়েন। পরে ঘোড়াঘাটের বারপাইকের গড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তার ভাগিনেয় মোহাম্মদ শাহকে দুর্গ/গড়ের কর্তৃত্ব গিয়ে তিনি জলমোকাম নামক স্থানে (চতরাহাটের নিকট) গিয়ে ধ্যানমগ্ন হন।
সে সময়ে দক্ষিণ- পশ্চিম কামরূপ অঞ্চলের করতোয়া নদীর তীরবর্তী এলাকার শাসক ছিলেন খেন বংশীয় রাজা। কামেশ্বের বা কান্তেশ্বর নামে এই বংশের রাজারা পরিচিত ছিলেন। ঐ বংশের রাজাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজধানী ছিল রংপুর জেলাধীন পীরগঞ্জ থানার অন্তর্গত বড়বিলা পরগণার নীলগড়ে। রাজা যুদ্ধ না করে সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করতে রাজী নয়। এর পরেই রাজা একাধিক রাতে কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখেন, যার করণ কারণ খুঁজে অস্থির হন। শেষটায় বুঝতে পারলেন, শাহ ইসমাইল গাজীর এই কাজ। রাজা কামেশ্বর সাধক পুরুষ গাজীর সাথে যুদ্ধ না করা সমীচীন মনে করে সুলতানের বশ্যতা স্বীকার করে যুদ্ধের বিষয়টি আপোষ করেন। এর পরে গাজী, গৌড়ের সুলতানের কাছে কামরূপ অঞ্চল বিজয়ের সু-সংবাদ প্রেরণ করেন। সুলতান এই সংবাদ পেয়ে অত্যন্ত খুশি হন।
এদিকে গাজী নিবিঘ্নে কামরূপ রাজ্যের অভ্যন্তরে ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ঐ সময়ে গৌড় রাজ্যের অন্তর্গত ঘোড়াঘাটের দুর্গাধিপতি ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভান্দুসী রায়। গাজীর জনপ্রিয়তা ও রাজার প্রিয় ভাজন হওয়ার সংবাদে তিনি ঈর্ষান্বিত হন। ভান্দুসী রায় গৌড়ে গিয়ে গাজীর বিরুদ্ধে সুলতানের দরবারে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা লাগায় যে, সুলতানকে অস্বীকারপূর্বক গাজী রাজার সাথে আতাত করে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ কথা শোনার পরে সুলতান গাজীর উপর নাখোশ হন এবং তার শিরোচ্ছেদ করার নিদেশ দেন। সুলতানের নিদেশ পেয়ে কয়েক জন যোদ্ধা গৌড় থেকে ঘোড়াঘাট অঞ্চলে আসেন। ঐ সময়ে গাজী অনেক শিষ্যসমেত রংপুরের পীরগাছা এলাকার (বর্তমানে) বড় দরগায় ইসলাম প্রচার নিয়োজিত ছিলেন। সুলতানের যোদ্ধঅলঅ সেখানে তাকে ঘেরাও করেন এবং কাঁটাদুয়ারে আনতে থাকেন। পার্শ্ববর্তী রঙপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার ইসমাইল পুর মৌজায় (বিশ্ব রোডের ধারে) বড় দরগা নামক স্থানে গাজীর দ্বিতীয় একটি আখড়া ছিল। এখান থেকে তিনি উত্তরে মিঠাপুকুর ও কামরূপ এলাকায় ইসলাম প্রচার করতেন ।এই বড় দরগা থেকে গাজীকে সিয়ে যাওয়া হয় পীরগঞ্জ থানার ভিতর দিয়ে দক্ষিণে (১.৪ কিলোমিটার ) দারিয়াপুরে । সেখানে গাজীর হাত বান্ধা হয় এবং সুলতানের ফরমান পাঠ করানো হয়।
পরবর্তীকালে হাতবান্ধা থেকে স্থানটির নাম হাতিবান্ধা হয়েছে। সেখানে খান রাজাদের একটি দুর্গ ছিল। গাজী কর্তৃক বিজিত হওয়া পরে সেখানে মুসরিম কৃষ্টির সূত্রপাত হয়। এখনো সেখানে ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ, ৩টি প্রাচীন সমাধি ও বিশাল একটি জলাশয় আছে। যাহোক ধৃত গাজীকে সুলতানের ফরমান পড়ে শুনানো হয়। ফরমানের নির্দেশনা প্রতি কাজী শ্রদ্ধা জানান। অতঃপর গাজীকে নিয়ে যাওয়া হয় চতরাহাটের উপকন্ঠে কাটাদুয়ারে (চতরাহাটের দক্ষিণে)। ঐতিহাসিক রকম্যানের হতে ১৪৭৪ খ্রিঃ এর ৪ঠা জানুযারী (১৪ শাবান, ৮৭৮ হিজরী) আছরের নামাজের পরে গাজীর শিরোচ্ছেদ করা হয়। তার মন্তক ঘোড়াঘাটের উপর দিয়ে গৌড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটে। গৌড়ে সুলতানের দরবারে ঘটনাক্রমে ভান্দুসী রায়ের ষড়যন্ত্র অন্মোচিত হয়। সুলতান নিজের ভুল বুঝতে পেরে গভীর অনুশোচন করেন এবং গাজীর কর্তিত মন্তক শাহী কবরস্থানে সমাধিস্থ করার নির্দেশ দেন। পরে সুলতান স্বপত্নীক কাটাদুয়ারে এসে (যেখানে ধড় সমাধিস্থ করা হয়) গাজীর সমাধি জিয়ারত করেন এবঙ অনেক ভূমি মাজারের হেফাজত ও খেদমত জন্য লাখেরাজ করে দেন। ১৫ উঁটু ও ১.৫০ একর জমিজুড়ে গাজীর মাজার চত্বর, যা এখানো জিয়ারত হয়।
শিরোচ্ছেদের পর একধিক স্থানে গাজীর মাজার ও দরগা গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানা যায়।
কবির সাকের মাহমুদঃ কবি সাকের মাহমুদ ছিলেন কবি হেয়াত মামুদের সমসাময়িক কবি। তৎকালীন সরকার ঘোড়াঘাট এর অধীনে বর্ধনকুঠির জমিদার রাজ কবি ছিলেন তিনি। তার জন্ম আনুমানিক ১৭৪৯-৫০ সালের মধ্যে বর্তমান গাইবান্ধা জেলার আদিয়াখালি রিফাইতপুর গ্রামে। পিতা শেখ মামুদ।
করম আলী খাঁ :
সরকার ঘোড়াঘাটের শেখ মোগল ফৌজদর ছিলেন করম আলী খান। জন্ম মর্শিদাবাদে, নবাব আলীবর্দী খানের পরিবারে ১৭৩৬ সালের ৩১ অক্টোবর। তাঁর পিতা নবাবের মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৭৪৮ খ্রিঃ ঘোড়াঘাটের দায়িত্ব পালন করেন। জানা যায় তিনি মোজাফ্ফর নামা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
মাওলানা আব্দুল কাদেরঃ
বুলাকীপুর ইউনিয়নের উদয়ধূল গ্রামের বাসিন্দা। জন্ম পাশ্ববর্তী উপজেলার হলাইজানা গ্রামে ১৯০৭ সালে শরীফ মুসলমান পরিবারে। |
50ecf03e-2405-4805-8616-ecd2e993afd3 | খতিয়ান কী ?
--মৌজা ভিত্তিক এক বা একাদিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরন সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।
সি,এস রেকর্ড কী ?
--সি,এস হল ক্যাডাস্টাল সার্ভে। আমাদের দেশে জেলা ভিত্তিক প্রথম যে নক্সা ও ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাকে সি,এস রেকর্ড বলা হয়।
এস এ রেকর্ড কী ?
--সরকার কর্তৃক ১৯৫০ সনে জমিদারি অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন জারি করার পর যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তাকে এস,এ খতিয়ান বলা হয়।
নামজারী কী ?
--উত্তরাধিকার বা ক্রয় সূত্রে বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন জমিতে কেউ নতুন মালিক হলে তার নাম খতিয়ানভূক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলে।
জমা খারিজ কী ?
--জমা খারিজ অর্থ যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বন্টনের কারনে মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নুতন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলা হয়।
পর্চা কী ?
--ভূমি জরিপকালে প্রস্তুতকৃত খসরা খতিয়ান যে অনুলিপি তসদিক বা সত্যায়নের পূর্বে ভূমি মালিকের নিকট বিলি করা হয় তাকে মাঠ পর্চা বলে। রাজস্ব অফিসার কর্তৃক পর্চা সত্যায়িত বা তসদিক হওয়ার পর আপত্তি এবং আপিল শোনানির শেষে খতিয়ান চুরান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর ইহার অনুলিপিকে পর্চা বলা হয়।
তফসিল কী ?
--তফসিল অর্থ জমির পরিচিতিমূলক বিস্তারিত বিবরন। কোন জমির পরিচয় প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মৌজার নাম, খতিয়ান নং, দাগ নং, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমান ইত্যাদি তথ্য সমৃদ্ধ বিবরনকে তফসিল বলে।
মৌজা কী ?
--ক্যাডষ্টাল জরিপের সময় প্রতি থানা এলাকাকে অনোকগুলো এককে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি একক এর ক্রমিক নং দিয়ে চিহ্নিত করে জরিপ করা হয়েছে। থানা এলাকার এরুপ প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে। এক বা একাদিক গ্রাম বা পাড়া নিয়ে একটি মৌজা ঘঠিত হয়।
খাজনা কী ?
--ভূমি ব্যবহারের জন্য প্রজার নিকট থেকে সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে ভুমি কর আদায় করে তাকে ভুমির খাজনা বলা হয়।
ওয়াকফ কী ?
--ইসলামি বিধান মোতাবেক মুসলিম ভূমি মালিক কর্তৃক ধর্মীয় ও সমাজ কল্যানমুলক প্রতিষ্ঠানের ব্যায় ভার বহন করার উদ্দেশ্যে কোন সম্পত্তি দান করাকে ওয়াকফ বলে।
মোতওয়াল্লী কী ?
--ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান যিনি করেন তাকে মোতওয়াল্লী বলে।মোতওয়াল্লী ওয়াকফ প্রশাষকের অনুমতি ব্যতিত ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন না।
ওয়রিশ কী ?
--ওয়ারিশ অর্থ ধর্মীয় বিধানের আওতায় উত্তরাধিকারী। কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলে আইনের বিধান অনুযায়ী তার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্নীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে ওয়ারিশ বলা হয়।
ফারায়েজ কী ?
--ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।
খাস জমি কী ?
--ভূমি মন্ত্রনালয়ের আওতাধিন যে জমি সরকারের পক্ষে কালেক্টর তত্ত্বাবধান করেন এমন জমিকে খাস জমি বলে।
কবুলিয়ত কী ?
--সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহন করে খাজনা প্রদানের যে অংঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।
দাগ নং কী ?
--মৌজায় প্রত্যেক ভূমি মালিকের জমি আলাদাভাবে বা জমির শ্রেনী ভিত্তিক প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সিমানা খুটি বা আইল দিয়ে স্বরজমিনে আলাদাভাবে প্রদর্শন করা হয়। মৌজা নক্সায় প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে জমি চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রদত্ত্ব নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে।
ছুট দাগ কী ?
--ভূমি জরিপের প্রাথমিক পর্যায়ে নক্সা প্রস্তুত বা সংশোধনের সময় নক্সার প্রত্যেকটি ভূ-খন্ডের ক্রমিক নাম্বার দেওয়ার সময় যে ক্রমিক নাম্বার ভূলক্রমে বাদ পরে যায় অথবা প্রাথমিক পর্যায়ের পরে দুটি ভূমি খন্ড একত্রিত হওয়ার কারনে যে ক্রমিক নাম্বার বাদ দিতে হয় তাকে ছুট দাগ বলা হয়।
চান্দিনা ভিটি কী ?
--হাট বাজারের স্থায়ী বা অস্থায়ী দোকান অংশের অকৃষি প্রজা স্বত্ত্য এলাকাকে চান্দিনা ভিটি বলা হয়।
অগ্রক্রয়াধিকার কী ?
--অগ্রক্রয়াধিকার অর্থ সম্পত্ত্বি ক্রয় করার ক্ষেত্রে আইনানুগভাবে অন্যান্য ক্রেতার তুলনায় অগ্রাধিকার প্রাপ্যতার বিধান। কোন কৃষি জমির মালিক বা অংশিদার কোন আগন্তুকের নিকট তার অংশ বা জমি বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করলে অন্য অংশিদার কর্তৃক দলিলে বর্নিত মূল্য সহ অতিরিক্ত ১০% অর্থ বিক্রি বা অবহিত হওয়ার ৪ মাসের মধ্যে আদালতে জমা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জমি ক্রয় করার আইনানুগ অধিকারকে অগ্রক্রয়াধিকার বলা হয়।
আমিন কী ?
--ভূমি জরিপের মধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তুত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলা হত।
সিকস্তি কী ?
--নদী ভাংঙ্গনে জমি পানিতে বিলিন হয়ে যাওয়াকে সিকস্তি বলা হয়। সিকস্তি জমি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়স্তি হলে সিকস্তি হওয়ার প্রাককালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন, তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।
পয়স্তি কী ?
--নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়স্তি বলা হয়।
নাল জমি কী ?
--সমতল ২ বা ৩ ফসলি আবাদি জমিকে নাল জমি বলা হয়।
দেবোত্তর সম্পত্তি কী ?
--হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির আয়োজন, ব্যাবস্থাপনা ও সু-সম্পন্ন করার ব্যয় ভার নির্বাহের লক্ষ্যে উৎসর্গকৃত ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি সম্পত্তি বলা হয়।
দাখিলা কী ?
--ভূমি মালিকের নিকট হতে ভূমি কর আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফরমে (ফরম নং-১০৭৭) ভূমিকর আদায়ের প্রমানপত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলে।
ডি,সি,আর কী ?
--ভূমি কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফরমে (ফরম নং-২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে ডি,সি,আর বলে।
দলিল কী ?
--যে কোন লিখিত বিবরনি যা ভবিষ্যতে আদালতে স্বাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিষ্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করেন তাকে সাধারনভাবে দলিল বলে।
কিস্তোয়ার কী ?
--ভূমি জরিপকালে চতুর্ভূজ ও মোরব্বা প্রস্তুত করারপর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভূমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নক্সা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।
খানাপুরি কী ?
--জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরণ করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে। |
5c0c6bef-d682-4674-9b14-b323b0aa239c | প্রস্তাবনা সংক্রান্ত তথ্য
এ উপজেলায় ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত প্রতি বছরই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জনসাধারণের জবীনমান উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপের আওতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোন না কোন সহযোগিতা করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ঋণ প্রদান, গরু ক্রয় করে প্রদান, ছাগল ক্রয় করে প্রদান, ভ্যান গাড়ী প্রদান, অটোভ্যান প্রদান, অটোরিক্সা প্রদান, মৎস্য চাষে অর্থ প্রদান ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য।
কিন্তু তাদের অসচেতনতা ও অশিক্ষার কারনে কোনটিই স্থায়ী হয়নি এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়নি অথবা সরকারের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। কারণ, তারা নিজেদের তৈরি হাড়িয়া, চোলাইমদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যে আবালবৃদ্ধবনিতা আসক্ত এবং তারা এতোই অসচেতন যে, শিক্ষা গ্রহণ করতেও আগ্রহী নয়। এমনকি তারা ঘরের চালের টিন বিক্রয় করেও নেশা করে থাকে।
এমতাবস্থায়, কিভাবে তাদের টেকসই উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা যায়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাদের জন্য তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।
বিঃদ্রঃ এ জাতীয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান দেশে এটিই প্রথম।
পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাবটি অনুমোদন ও বাস্তবায়নে বরাদ্দ প্রদান করা হলে “বঙ্গবন্ধু তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারখানা” স্থাপন করা হয়। বর্তমানে প্রথম পর্যায়ে ২০টি তাঁত স্থাপন করা হয়েছে এবং স্থানীয় সহযোগিতায় ১০টি তাতেঁর কাচামাল ক্রয় করে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন শুরু হয়েছে।
প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ আত্বকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নারীরা পারিবারিক কাজ কর্মের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারখানাটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়ন ও দেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। |
ee048955-6cf1-426b-b4f6-20ddc8eb1d8f | ঘোড়াঘাট উপজেলার পাম বাগানটি বগুড়া-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এই উপজেলার নুরজাহানপুর গ্রামে জনাব কাজী কাদের মোঞ্জুর ও জনাব কাজী নাসির মঈদ অনেকশখকরেপামবাগানকরেছেন। উভয়ের পিতা- মৃতঃ কাজী মুহিত, গ্রামঃ নুরজাহানপুর, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। উক্ত পাম বাগানটি চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর মৌজার এস,এ ৫০,৫৬ ও ৫৭ খতিয়ানভূক্ত ৮৯০ দাগের ১০.৪৯ একর জমির উপর অবস্থিত।এই পাম বাগানে প্রায় ১৪০০ পাম গাছ রয়েছে। দীর্ঘদিন পরিচর্যায়ফলে পামগাছগুলোবেশবড়হয়েউঠেছে।বেশিভাগগাছেখেজুরেরমতোথোকাথোকাপামফলও ধরেছে।এতে পাম বাগানের কর্তৃপক্ষ অনেক খুশি। ব্যক্তিগত উদ্যেগ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় পাম বাগানটি অচিরেই “শিশু স্বর্গ” নামে একটি পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে রুপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে পাম বাগানটি সকলের জন্য একটি অনাবিল আনন্দের পিকনিক স্থান হিসেবে গড়ে উঠবে। |
fb4ecb4d-26bd-4a58-9e49-b695a38b4ea6 | পরিষদ তহবিল বহির্ভূত ব্যয়ের ক্ষমতা প্রদান সংক্রান্ত।
ট্যাক্স, রেইটস, টোলস এবং ফিস আরোপের প্রস্তাব।
উপজেলা পরিষদের বার্ষিক বাজেট, বার্ষিক হিসাব বিবরণী ও সংশোধিত বাজেট।
উপজেলা পরিষদের ব্যয়ের অডিট।
পাঁচসালা ও বিভিন্ন মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করা।
পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং উক্ত দপ্তরের কাজ-কর্ম সমূহের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করা।
পরিষদ কর্তৃক কাজ বাস্তবায়নের বিভিন্ন চুক্তি প্রক্রিয়াকরণ।
বিভিন্ন কমিটি ও উপ-কমিটি গঠন।
উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা অবস্থা পর্যালোচনা।
উপজেলার ত্রাণ ও পূণর্বাসন কাজ পর্যালোচনা।
উপজেলা পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়নতব্য কাজের প্ল্যান এবং এস্টিমেট অনুমোদন।
বাস্তবায়িত সকল ধরণের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পর্যালোচনা।
জনস্বার্থ সংশিস্নষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি।
নাগরিক সেবাঃউপজেলা পরিষদ মূলতঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং অন্যান্য অফিস যেমন উপজেলা শিক্ষাঅফিস, উপজেলা কৃষি অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর, উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ইত্যাদি অফিসের মাধ্যমে প্রায় সকল ধরণের নাগরিক সেবা দিয়ে থাকে। |
44aec12c-f3f4-458d-bf04-3e19a3a443a9 | হাকিমপুর উপজেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
তখনো ভারত বর্ষ বিভক্ত হয় নাই । মুর্শিদাবাদের জমিদার মিনা কুমারী তাহার জমিদার অন্তর্গত একটি নাম তার বালুরঘাট । মিনা কুমারী ছিলেন ধনবতী –বিশাল সম্পদশালীনী । কিন্তু উহা রক্ষনা বেক্ষনের জন্য তাহার জনবল ছিল অপ্রতুল । তাই তিনি তাহার কিছু সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে মনস্থ করিলেন । গদাধর মন্ডল উঠতি ধনশালী । বহুদিনের বাসনা জমিদার হইবেন। সুযোগ ও আসিল দর পত্তনি হিসাবে মিনা কুমারীর নিকট হইতে তিনি ক্রয় করিলেন বালুঘাট থানার ৬টি মৌজা হাকিমপুর, ধরন্দা, মাকুরমুড়া, খোর্দ্দা-মাহসুল ,বাসুদেবপুর ও আপ্তর । এসব কিছু তখন ছিল বগুড়া জেলার অধীন ।
গদাঘরমন্ডল নি:সন্তান হওয়ায় তাহার মৃত্যুর পর ভাতুস্পুত্র বেনী মাধব দাস একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পত্তির মালিক হন। বেণী মাধব দাসের কোন সন্তান না থাকায় তাহার মৃত্যুর পর তদীয় স্ত্রী কুঞ্জবালা দাস্যা জমিদারী প্রাপ্ত হন এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহাদের একমাত্র কন্যা বিধুবালা সরকার উক্ত সম্পত্তির মালিক হন।
ভারতবর্ষ বিভক্ত হইল । জমিদারী প্রথাও উচ্ছেদ হইল । আর বালুরঘাট থানাও দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া দুই দেশের অন্তর্ভুক্ত হইল। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভুক্ত এই অঞ্চলটি পার্শ্ববর্তী থানা নবাবগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হইয়া বগুড়া হইতে দিনাজপুর জেলার অধীন চলিয়া আসিল । একে তো সীমান্ত এলাকা তার উপর থানা সদর হইতে দুর ট্রেন ডাকাতি , গ্রামে গঞ্জে চুরি ডাকাতি প্রভৃতি অরাজকতায় জন জীবন অতিষ্ঠ। প্রয়োজন দেখা দিল একটি পুলিশ ফাঁড়ীর তধানীন্তন পাক হিলি বাজারস্থ জনাব শফি মন্ডল সাহেবের চালকল গুদামে স্থাপিত হইল একটি পুলিশ ফাঁড়ী ।
১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ হাকিমপুর ইতিহাসে এক স্মরনীয় ঘটনা । তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই দিনে বোয়ালদাড়, আলীহাট, খট্টামাধবপাড়া ও বিরামপুর সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর থানা ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ২ টি ইউনিয়ন যথা হিলি-হাকিমপুর ও কাটলা সুষ্টির মাধ্যমে এই থানায় মোট ৬টি ইউনিয়ন হয়।
১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদার বিধুবালা সরকারের নিকট হইতে তাহার বাসভবন সহ মোট ২৭৫একর ৫৮৬৯.২০ টাকায় ক্রয় করেন এবং সেখানে থানার অফিস স্থানান্তরিত হয়। সৃষ্টির মুহুর্তে থানাটি মোটামুটি বড় থানা হিসাবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে এই থানার ২ টি ইউনিয়ন কাটলা ও বিরামপুর নবগঠিত থানা বিরামপুরের অন্তভুক্ত হয়। ফলে উপজেলাটি বর্তমানে ৪ টি ইউনিয়ন লইয়া গঠিত । এই উপ জেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা উত্তর পশ্চিমে নবগঠিত বিরামপুর উপজেলা দক্ষিনে পাচবিবি উপজেলা পূর্বে ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে পশ্চিম বংগের অন্তর ভুক্ত হিলি থানা ।.
বর্তমান হাকিমপুর উপজেলা ৬৯ টি মৌজায় বিভক্ত । এই উপজেলায় বৈগ্রাম মৌজায় একটি বহু প্রাচীন বৌদ্ধ্য মন্দিরের ধংসাবশেষ আছে। ছাতনী মৌজায় রইয়াছে একটি প্রাচীন মসজিদের ধংসাবশেষ । একটি গীর্জার ধংসাবশেষ দেখা যায় লক্ষিকোল মৌজায় । অবিভক্ত ভারতে অত্র হাকিমপুর উপজেলা ধানের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল । এই এলাকায় ততকালে সবচেয়ে বড় আকারের ধান ভাংগানোর বয়লার মিল সহ বর্তমানে মোট ১৭ টি (সতের ) ধান ভাংগানের মিল আছে।
এই এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত। কোথাও কোথাও উচু অঞ্চল এখনো দেখা যায় । অধিকাংশ লোকই কৃষি জীবি। কৃষি ক্ষেত্রে ধান উতপাদনের উপযোগীতা সবচাইতে সব বেশী । । আদি অধিবাসী গণ কৃষিকেই প্রধান হিসাবে এখনও টিকাইয়া রাখিয়াছেন । এই উপজেলার মধ্য দিয়া তুলশী গঙ্গা ও যমুনা নদীর শাখা প্রশাখা বহমান ।
এই উপজেলাই মোট ৬ ছয় মাইল ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যবর্তী সিমান্ত এলাকা । এই সিমান্ত এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক চেক পোষ্ট অবস্থিত , যাহার নাম হিলি চেক পোষ্ট । বছরে প্রায় ৭-৮ হাজার লোক এই পথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়ত করে। |
3ceabb27-aa80-41a9-89f2-dae638d97b19 | হাকিমপুর উপজেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
তখনো ভারত বর্ষ বিভক্ত হয় নাই । মুর্শিদাবাদের জমিদার মিনা কুমারী তাহার জমিদার অন্তর্গত একটি নাম তার বালুরঘাট । মিনা কুমারী ছিলেন ধনবতী –বিশাল সম্পদশালীনী । কিন্তু উহা রক্ষনা বেক্ষনের জন্য তাহার জনবল ছিল অপ্রতুল । তাই তিনি তাহার কিছু সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে মনস্থ করিলেন । গদাধর মন্ডল উঠতি ধনশালী । বহুদিনের বাসনা জমিদার হইবেন। সুযোগ ও আসিল দর পত্তনি হিসাবে মিনা কুমারীর নিকট হইতে তিনি ক্রয় করিলেন বালুঘাট থানার ৬টি মৌজা হাকিমপুর, ধরন্দা, মাকুরমুড়া, খোর্দ্দা-মাহসুল ,বাসুদেবপুর ও আপ্তর । এসব কিছু তখন ছিল বগুড়া জেলার অধীন ।
গদাঘরমন্ডল নি:সন্তান হওয়ায় তাহার মৃত্যুর পর ভাতুস্পুত্র বেনী মাধব দাস একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পত্তির মালিক হন। বেণী মাধব দাসের কোন সন্তান না থাকায় তাহার মৃত্যুর পর তদীয় স্ত্রী কুঞ্জবালা দাস্যা জমিদারী প্রাপ্ত হন এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহাদের একমাত্র কন্যা বিধুবালা সরকার উক্ত সম্পত্তির মালিক হন।
ভারতবর্ষ বিভক্ত হইল । জমিদারী প্রথাও উচ্ছেদ হইল । আর বালুরঘাট থানাও দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া দুই দেশের অন্তর্ভুক্ত হইল। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভুক্ত এই অঞ্চলটি পার্শ্ববর্তী থানা নবাবগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হইয়া বগুড়া হইতে দিনাজপুর জেলার অধীন চলিয়া আসিল । একে তো সীমান্ত এলাকা তার উপর থানা সদর হইতে দুর ট্রেন ডাকাতি , গ্রামে গঞ্জে চুরি ডাকাতি প্রভৃতি অরাজকতায় জন জীবন অতিষ্ঠ। প্রয়োজন দেখা দিল একটি পুলিশ ফাঁড়ীর তধানীন্তন পাক হিলি বাজারস্থ জনাব শফি মন্ডল সাহেবের চালকল গুদামে স্থাপিত হইল একটি পুলিশ ফাঁড়ী ।
১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ হাকিমপুর ইতিহাসে এক স্মরনীয় ঘটনা । তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই দিনে বোয়ালদাড়, আলীহাট, খট্টামাধবপাড়া ও বিরামপুর সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর থানা ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ২ টি ইউনিয়ন যথা হিলি-হাকিমপুর ও কাটলা সুষ্টির মাধ্যমে এই থানায় মোট ৬টি ইউনিয়ন হয়।
১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদার বিধুবালা সরকারের নিকট হইতে তাহার বাসভবন সহ মোট ২৭৫একর ৫৮৬৯.২০ টাকায় ক্রয় করেন এবং সেখানে থানার অফিস স্থানান্তরিত হয়। সৃষ্টির মুহুর্তে থানাটি মোটামুটি বড় থানা হিসাবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে এই থানার ২ টি ইউনিয়ন কাটলা ও বিরামপুর নবগঠিত থানা বিরামপুরের অন্তভুক্ত হয়। ফলে উপজেলাটি বর্তমানে ৪ টি ইউনিয়ন লইয়া গঠিত । এই উপ জেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা উত্তর পশ্চিমে নবগঠিত বিরামপুর উপজেলা দক্ষিনে পাচবিবি উপজেলা পূর্বে ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে পশ্চিম বংগের অন্তর ভুক্ত হিলি থানা ।.
বর্তমান হাকিমপুর উপজেলা ৬৯ টি মৌজায় বিভক্ত । এই উপজেলায় বৈগ্রাম মৌজায় একটি বহু প্রাচীন বৌদ্ধ্য মন্দিরের ধংসাবশেষ আছে। ছাতনী মৌজায় রইয়াছে একটি প্রাচীন মসজিদের ধংসাবশেষ । একটি গীর্জার ধংসাবশেষ দেখা যায় লক্ষিকোল মৌজায় । অবিভক্ত ভারতে অত্র হাকিমপুর উপজেলা ধানের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল । এই এলাকায় ততকালে সবচেয়ে বড় আকারের ধান ভাংগানোর বয়লার মিল সহ বর্তমানে মোট ১৭ টি (সতের ) ধান ভাংগানের মিল আছে।
এই এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত। কোথাও কোথাও উচু অঞ্চল এখনো দেখা যায় । অধিকাংশ লোকই কৃষি জীবি। কৃষি ক্ষেত্রে ধান উতপাদনের উপযোগীতা সবচাইতে সব বেশী । । আদি অধিবাসী গণ কৃষিকেই প্রধান হিসাবে এখনও টিকাইয়া রাখিয়াছেন । এই উপজেলার মধ্য দিয়া তুলশী গঙ্গা ও যমুনা নদীর শাখা প্রশাখা বহমান ।
এই উপজেলাই মোট ৬ ছয় মাইল ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যবর্তী সিমান্ত এলাকা । এই সিমান্ত এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক চেক পোষ্ট অবস্থিত , যাহার নাম হিলি চেক পোষ্ট । বছরে প্রায় ৭-৮ হাজার লোক এই পথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়ত করে। |
260ec475-ba9d-4bf2-88dd-154547c335aa | দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার মানুষের মধ্যে খেলাধূলার প্রতি অসীম আগ্রহ রয়েছে। এখানে স্থানীয় প্রশাসনও খেলাধূলার বিস্তৃতি ঘটাতে সব সময় সচেষ্ট। ফলে বিভিন্ন সময় আন্তঃ উপজেলা টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফলে এ উপজেলার বিশেষ করে ছাত্র সমাজ খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ পায়, যা একটি সুস্থ্য জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলায় এখানকার মাঠগুলো মুখরিত থাকে। |
402fb1fb-563a-4f31-bc90-767adbd49998 | উপজেলা নির্বাহী অফিসার-এর মাসিক কর্মসূচিসমূহঃ
১.উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন।
২.উপজেলার GO-NGO ও মাসিক সমন্বয় সভা।
৩.উপজেলার আইন শৃংখলা কমিটির সভা।
৪.উপজেলার খাস জমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত সভা।
৫.উপজেলার মাসিক রাজস্ব সভা।
৬.উপজেলার আশ্রয়ণ, আদর্শগ্রাম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভা।
৭.উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দর্শন।
৮.জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ের মাসিক সভায় এবং অন্যান্য সভায় অংশগ্রহণ। |
a8e0e87f-67e2-445a-859d-86b27e267914 | আলীহাট ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের তুলশি গঙ্গা নদীর উপর ব্রীজ টি অবস্থিত । বৈকালের নাতি শীতল আবহাওয়ার গ্রামের ছেলে মেয়েরা সেখানে এক মনোরম পরিবেশ তৈরী করে এবং প্রতি বছর এখানে মেলা বসে। এবং এই মেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক দর্শনার্থী আসে এবং মেলাকে প্রান্তবন্ত করে তোলে। এই ব্রীজটি হাকিমপুর সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার। হাকিমপুর থেকে বাস, সিএনজি, অটো-রিক্স করে যাওয়া যায়। |
4a0f0025-014a-45a0-8121-b31d1136d0ac | কাহারোল উপজেলার পটভূমিঃ
কাহারোল উপজেলা দিনাজপুর জেলার অধীনে গঠিত ছোট একটি উপজেলা যা বৃটিশ শাসন আমলে ১৯১৫ সালে থানা হিসেবেগঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলা ঘোষিত হয়। এ উপজেলা মোট ৬টি ইউনিয়ন, ১৫৩টি মৌজা, ১৫২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতিহাস জানা যায় নাই। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এখানে অনেকদিন আগে ‘‘কাহার’’ নামে একটি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করত। তারা সন্ধ্যে বেলায় একত্রে গান করত যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘‘রোল’’ বলা হতো। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ‘কাহার’ এবং ‘রোল’ এই দু’টি শব্দ থেকে উদ্ভব হয়েছে কাহারোল উপজেলার নাম। |
178ad2d0-0bf2-408d-93c7-c1b435c4e49d | কাহারোল উপজেলার পটভূমিঃ
কাহারোল উপজেলা দিনাজপুর জেলার অধীনে গঠিত ছোট একটি উপজেলা যা বৃটিশ শাসন আমলে ১৯১৫ সালে থানা হিসেবেগঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলা ঘোষিত হয়। এ উপজেলা মোট ৬টি ইউনিয়ন, ১৫৩টি মৌজা, ১৫২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতিহাস জানা যায় নাই। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এখানে অনেকদিন আগে ‘‘কাহার’’ নামে একটি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করত। তারা সন্ধ্যে বেলায় একত্রে গান করত যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘‘রোল’’ বলা হতো। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ‘কাহার’ এবং ‘রোল’ এই দু’টি শব্দ থেকে উদ্ভব হয়েছে কাহারোল উপজেলার নাম। |
8ae0dc6a-675b-41cc-b7ca-ccf706b54d1f | কাহারোল উপজেলা দিনাজপুর জেলার অধীনে গঠিত ছোট একটি উপজেলা যা বৃটিশ শাসন আমলে ১৯১৫ সালে থানা হিসেবেগঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলা ঘোষিত হয়। এ উপজেলা মোট ৬টি ইউনিয়ন, ১৫৩টি মৌজা, ১৫২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতিহাস জানা যায় নাই। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এখানে অনেকদিন আগে ‘‘কাহার’’ নামে একটি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করত। তারা সন্ধ্যে বেলায় একত্রে গান করত যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘‘রোল’’ বলা হতো। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ‘কাহার’ এবং ‘রোল’ এই দু’টি শব্দ থেকে উদ্ভব হয়েছে কাহারোল উপজেলার নাম। |
a08e2470-bf1a-4539-8ee9-44f412a2751f | কাহারোল উপজেলাটি দিনাজপুর জেলার একটি অবহেলিত উপজেলা। কিন্তু এখানে ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, মাঠ ভরা শস্যের ছড়াছড়ি। উপজেলাটি আকারে ছোট হলেও সব ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করে।
মুসলমানরা মসজিদ, হিন্দুরা মন্দিরে উপাসনা করে। ধর্মের নামে গোড়ামী খুব একটা দেখা যায় না। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সহ-অবস্থান করে শান্তিতে বসবাস করে যা সমাজে সহণশীলতার সাক্ষ্য বহণ করে।
সকল মানুষের ভাষা বাংলা হলেও এ অঞ্চলের কথ্য বাংলার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন ‘‘মুই খাভে নাউ’’ অর্থাৎ আমি ভাত খাব না। এখানে ‘মুই’(আমি) শব্দটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্য বাংলার সাথে সংগতি রক্ষা করেছে। ‘খাভে’(খাব) শব্দটি খাব শব্দের ‘ব’ বর্ণটি বর্ণচ্যুত হয়ে ‘ভ’ বর্ণে রূপ নিয়ে এখানকার আঞ্চলিক কথ্য ভাষার রূপটি পরিগ্রহ হয়েছে। আর ‘নাউ’ শব্দটি শুদ্ধ ‘না’ শব্দের সাথে অতিরিক্ত ‘উ’ বর্ণটি যুক্ত হয়ে কথ্য বাংলার রূপটি এ অঞ্চলের আপন সত্ত্বার আবহমান কাল ধরে বাহন হয়ে চলে আসছে। |
d4680ca2-242f-437a-89f0-00b1afe91b67 | দিনাজপুর জেলার অন্তগত কাহারোল উপজেলার ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে সবস্তরের মানুষের মধ্যে খেলাধূলার প্রতি অসীম আগ্রহ রয়েছে। এখানে স্থানীয় প্রশাসনও খেলাধূলার বিস্তৃতি ঘটাতে সব সময় সচেষ্ট। ফলে বিভিন্ন সময় আন্তঃ উপজেলা টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফলে এ উপজেলার বিশেষ করে ছাত্র সমাজ খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ পায়, যা একটি সুস্থ্য জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মত কাহারোল উপজেলার অদিবাসীগণ খেলা প্রিয়। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলায় এখানকার মাঠগুলো সবসময় মুখরিত থাকে। কান্তজির মন্দির, নয়াবাদ মসজিদ, উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত ছোট শিশুপার্ক, লেক, পূনর্ভবা ও ঢেপা নদী বিনোদনের অন্যতম স্থান। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সমগ্র কাহারোল বিনোদনের এক তীর্থভূমিতে পরিণত হয়। |
0c9ee6b5-84ef-4f51-92ce-88bd445fb98f | এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। জেলা শহরের সঙ্গে ২টি প্রধান রাস্তা পাকা যাহা বাস ও টেম্পু দিয়ে যাতায়াত করা যায়। উপজেলা থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের রাস্তাগুলো পাকা যাহা সহজেই যোগাযোগ করা যায়। ইহা ছাড়া মাইক্রোবাস, রিক্রা্, ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। এখানে ১টি সাব পোষ্ট অফিস আছে। ১টি টেলিফোন অফিস সহ অন্যান্য মোবাইল ফোনের টাওয়ার রয়েছে। যাহার মাধ্যমে সমগ্র দেশ ও বিদেশে যোগাযোগ করা যায়। কাঁচা সড়ক দিয়ে প্রতিটি গ্রামে যাতায়াত করা যায়। |
11b93c70-f22d-4156-9c52-f1fa11fc3a3f | কাহারোল উপজেলাটি রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। দিনাজপুর জেলা সদর হতে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ২৩ কি:মি: দূরত্বে উপজেলাটি অবস্থিত। এখানে বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কান্তজীউ মন্দির (কান্তনগর মন্দির) ও ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ অবস্থিত। দিনাজপুর জেলা সদর হতে কাহারোল উপজেলায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বাস ও টেম্পু ব্যবহার করা হয়। রাস্তা পাকা হওয়ায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগে। |
8129fb15-1179-4d43-86a5-8daa7599e6c7 | কাহারোল উপজেলাটি রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। দিনাজপুর জেলা সদর হতে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ২৩ কি:মি: দূরত্বে উপজেলাটি অবস্থিত। এখানে বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কান্তজীউ মন্দির (কান্তনগর মন্দির) ও ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ অবস্থিত। দিনাজপুর জেলা সদর হতে কাহারোল উপজেলায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বাস ও টেম্পু ব্যবহার করা হয়। রাস্তা পাকা হওয়ায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগে। |
fab8b851-2559-4692-a54f-3b304aa3a0c9 | উপজেলা নির্বাহী অফিসার-এর মাসিক কর্মসূচিসমূহঃ
১.উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন।
২.উপজেলার GO-NGO ও মাসিক সমন্বয় সভা।
৩.উপজেলার আইন শৃংখলা কমিটির সভা।
৪.উপজেলার খাস জমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত সভা।
৫.উপজেলার মাসিক রাজস্ব সভা।
৬.উপজেলার আশ্রয়ণ, আদর্শগ্রাম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভা।
৭.উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দর্শন।
৮.জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বিষয়ের মাসিক সভায় এবং অন্যান্য সভায় অংশগ্রহণ। |
03807f86-5a77-4ffa-bffb-8a253b3ef6c2 | কাহারোল উপজেলাটি দিনাজপুর জেলা সদর হতে প্রায় ২৩ কি:মি: উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এখানে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো স্থলপথ। যদিও উপজেলার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে পুনর্ভবা নদী। স্থলপথে বাস, টেম্পু, ভটভটি প্রভৃতি যানবাহনের মাধ্যমে দিনাজপুর সদর হতে অত্র উপজেলায় যাতায়াত করা সম্ভব। তবে সর্ম্পূর্ণ রাস্তা পাঁকা হওয়ায় বাসযোগে মোটামুটি এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়।এছাড়াও পূর্ব-উত্তর দিকে বীরগঞ্জ উপজেলার হাইওয়ে হয়েও বীরগঞ্জ হতে প্রায় ১০ কি:মি: পাঁকা রাস্তা অতিক্রম করে অত্র উপজেলায় পৌঁছানো সম্ভব। আর উপজেলার অভ্যন্তরে যোগাযোগের জন্য 'ভ্যান' যানটি ব্যবহার করা হয়, যেটি এই এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বাহন। এছাড়াও আধুনিকায়নের ফলে চার্জার ব্যাটারী চালিত অটো ভাড়ায় পাওয়া যায়।
সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই সকাল হতে রাত ৭:৩০ টা পর্যন্ত দিনাজপুর জেলা সদরে যোগাযোগের জন্য যানবাহন পাওয়া যায়। |
618bec9f-0b10-44c0-acb8-2eb1f5600793 | শাখার নাম
কার্যাবলী
গোপনীয় শাখা
১. উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রেরণ।
২. বাল্যবিবাহ, যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ।
৩. যে কোন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কার্যাবলী।
৫. আইন-শৃংখলা রক্ষা।
হিসাব শাখা
১. পেনশন/পারিবারিক পেনশন।
২. বেতন এবং বিভিন্ন ভাতাদি।
৩. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, সদস্যা এবং গ্রাম পুলিশদের বেতন ভাতা।
৪. আন্ত: বিভাগীয় বিষয়াবলী (আর্থিক ও প্রশাসনিক)
সাধারন শাখা
১. বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠান।
২. নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বিষয়ক।
৩. হাট-বাজার ইজারা।
৪. উন্নয়নমূলক কার্যক্রম।
৫. এন,জি,ও কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও তথ্যাবলী সংরক্ষণ।
৬. আশ্রয়ন, আদর্শগ্রাম সংক্রান্ত।
৭. সারের মজুদ, সরবরাহ ও বিপণন সংক্রান্ত।
৮. বিভিন্ন সনদ ও প্রত্যয়নপত্র প্রদান, সাক্ষর ও প্রতিস্বাক্ষর।
৯. স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন।
১০. জন্ম নিবন্ধন।
সার্টিফিকেট শাখা
১. সার্টিফিকেট দায়ের ও নিস্পত্তি।
২. সার্টিফিকেট মামলার নকল সরবরাহ।
ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখা
১. জরুরী ত্রাণ।
২. টি,আর; কাবিখা; কাবিটা; ভি,জি,এফ ও ঝুঁকিহ্রাস সংক্রান্ত।
৩. দুঃস্থ ও অসহায়দের সহায়তা। |
6e353e76-1b6b-4fa2-891b-e3a37651e972 | কাহারোল উপজেলা দিনাজপুর জেলার অধীনে গঠিত ছোট একটি উপজেলা যা বৃটিশ শাসন আমলে ১৯১৫ সালে থানা হিসেবেগঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলা ঘোষিত হয়। এ উপজেলা মোট ৬টি ইউনিয়ন, ১৫৩টি মৌজা, ১৫২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতিহাস জানা যায় নাই। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এখানে অনেকদিন আগে ‘‘কাহার’’ নামে একটি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করত। তারা সন্ধ্যে বেলায় একত্রে গান করত যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘‘রোল’’ বলা হতো। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ‘কাহার’ এবং ‘রোল’ এই দু’টি শব্দ থেকে উদ্ভব হয়েছে কাহারোল উপজেলার নাম।
কাহারোল উপজেলাটি দিনাজপুর জেলার একটি অবহেলিত উপজেলা। কিন্তু এখানে ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, মাঠ ভরা শস্যের ছড়াছড়ি। উপজেলাটি আকারে ছোট হলেও সব ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করে।
মুসলমানরা মসজিদ, হিন্দুরা মন্দিরে উপাসনা করে। ধর্মের নামে গোড়ামী খুব একটা দেখা যায় না। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সহ-অবস্থান করে শান্তিতে বসবাস করে যা সমাজে সহণশীলতার সাক্ষ্য বহণ করে।
সকল মানুষের ভাষা বাংলা হলেও এ অঞ্চলের কথ্য বাংলার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন ‘‘মুই খাভে নাউ’’ অর্থাৎ আমি ভাত খাব না। এখানে ‘মুই’(আমি) শব্দটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্য বাংলার সাথে সংগতি রক্ষা করেছে। ‘খাভে’(খাব) শব্দটি খাব শব্দের ‘ব’ বর্ণটি বর্ণচ্যুত হয়ে ‘ভ’ বর্ণে রূপ নিয়ে এখানকার আঞ্চলিক কথ্য ভাষার রূপটি পরিগ্রহ হয়েছে। আর ‘নাউ’ শব্দটি শুদ্ধ ‘না’ শব্দের সাথে অতিরিক্ত ‘উ’ বর্ণটি যুক্ত হয়ে কথ্য বাংলার রূপটি এ অঞ্চলের আপন সত্ত্বার আবহমান কাল ধরে বাহন হয়ে চলে আসছে। |
06bf7323-ea79-4915-b049-ca4c87ea8181 | প্রশ্ন
উত্তর
১. জি ডি কী এবং কেন ?
মূল্যবান যে কোন জিনিস হারালে যেমন-সার্টিফিকেট, দলিল, লাইসেন্স, পাসপোর্ট, মূল্যবান রশিদ, চেকবই, এটিএম বাক্রেডিট স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ইত্যাদি। অথবা কোন প্রকার হুমকি পেলে বাহুমকির আশংকা থাকলে কিংবা কেউ নিখোঁজ হলেও জিডি করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎসাধারণত যেসব ক্ষেত্রে মামলা হয়না সেসব ক্ষেত্রেই থানায় জিডি করা যায়। জিডিকরার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নতুন করে হারানো কাগজ তুলতে হলেও জিডিরকপির প্রয়োজন হয়।
২.জি ডি কোথায় করতে হয় ?
জি ডি থাণায় করতে হয়।জিডি করার ক্ষেত্রেসাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বাঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করতে হয় ।
৩.জি ডি কত কপি করতে হয় ?
থানায় গিয়ে জিডি করলে আপনাকে দুটি কপি করতে হবে। আবেদনের দ্বিতীয় কপিতে জিডি নম্বর, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিললাগিয়ে আপনাকে দেওয়া হবে এবং জিডিটি নথিভুক্ত হবে। কপিটি আপনি নিজের জন্যসংরক্ষণ করবেন।
৪.জি ডি পরবর্তীতে কি হয় ?
জিডি হওয়ার পর তা কর্তব্যরত কর্মকর্তা থানার ওসির কাছেপাঠাবেন। জিডিটি যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে হয়, তবে থানা কর্তৃপক্ষসঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে এবং গৃহীতব্যবস্থা পুনরায় আবেদনকারীকে অবহিত করা হবে।
৫.পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটকী ?
কোন ব্যক্তি সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত করে যে সার্টিফিকেট প্রদান করে তাকে পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটবলে।
৬.পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটকেন প্রয়োজন হয় ?
বিভিন্ন প্রয়োজনেই আমাদের ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’- এরপ্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।যেমন- বিদেশে যাওয়ার জন্য, চাকুরীর ক্ষেত্রে
৭.পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটনিতে কি কি কাগজ প্রয়োজন ?
পাঁচশত (৫০০/=) টাকার ট্রেজারী চালান,পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
৮. এফ আই আর কী ?
First information report (FIR) -কোন ব্যক্তি থাণায় এসে অভিযোগ করলে সেটা যখন নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ করা হয় তখন তাকে FIR বলে।
৯. এজাহার কী ?
কোন ব্যক্তি থাণায় এসে যে লিখিত অভিযোগ করে সেটাকে এজাহার বলা হয় । |
162e3f7a-11c8-4856-b559-ed9e50ae4b73 | খানসামা উপজেলার সম্পূর্ণ পশ্চিম সীমানা জুড়ে ঐতিহ্যবাহী আত্রাই নদী প্রবাহিত হয়েছে।এ জনপদটির বিকাশ ঘটেছে আত্রাই নদীকে কেন্দ্র করে। এ ছাড়া এ উপজেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হচ্ছে ইছামতি, বেলান নদী ও ভূল্লী নদী।উপজেলার স্বল্পসংখ্যক মৎস্যজীবি মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ এ নদীগুলো থেকে মৎস্য শিকারের মাধ্যমে করে থাকে।এ ছাড়া কৃষি নির্ভর এ জনপদে সেচ কাজে নদী গুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। |
9deda1c9-b785-469a-8c63-36d9cc802a9d | আবহমান কাল থেকেই খানসামা উপজেলায় খেলাধুলার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।ফুটবল এ উপজেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা।আন্তঃউপজেলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় খানসামা উপজেলা ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন,২০১১সালে রানার আপ,২০১২সালে পুনরায় চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও ভলিবল, ক্রিকেট, কাবাডি, লাঠিখেলা, প্রভৃতি খেলাধূলার চর্চা আছে। শীতকালে বুড়াখাঁ পীরের মেলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা ।এ ছাড়া বৈশাখী মেলা,বিভিন্ন পূজা পার্বনের সময় বারোয়ারী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। |
9158272b-232b-4151-ad62-90b46c22effc | খানসামা উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড মূলতঃ কৃষিজ পণ্য ও কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যে এ উপজেলার রসুন,লিচু,করল্লা,পটল সারাদেশে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। বিভিন্ন হাট বাজারে আলু, করল্লা, পটল, লিচু, রসুন, পেয়াজ, ভূট্টা প্রভৃতি বেচাকেনা হয়।মূলতঃ এ উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এই বেচাকেনাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। পাকেরহাট, কাচিনিয়াহাটি, রামকলাহাট এ এলাকার উল্লেখযোগ্য ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। |
9c7763dd-271a-4070-8210-5abf967ba8fb | বালাপাড়া মন্দির
নীলকুঠি মন্দির
মাষ্টার পাড়া মন্দির
কালিতলা মন্দির
চরনকালি মন্দির
দাসপাড়া মন্দির
বাজার মন্দির
ফরিদাবাদ মন্দির
বৈরাগী পাড়া মন্দির
তাতি পাড়া মন্দির
বামনপাড়া মন্দির
কাশিম নগর মন্দির
বাদশা বাজার মন্দির
জেলেপাড়া মন্দির
৩ নং আংগারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ
কালীতলা অষ্টপ্রহর।
নীলার ডাঙ্গা হরিবাসর।
নীলার ডাঙ্গা পুজা মন্ডব।
জোতিষ মাস্টার পাড়া পুজা মন্ডব।
ভাদু শাহ পাড়া পুজা মন্ডব।
জটুশাহ পাড়া কালী মন্দির ও দুর্গা মন্ডব।
বাবুর হাট দুর্গা মন্ডব।
ঝাপুরা বট অষ্টপ্রহর।
চৌদ্দহাত কালী মন্ডব।
ঝাপুরা বট কালী মন্ডব।
জীবন মাস্টার পাড়া দূর্গা মন্ডব।
মাছুয়া পাড়া দূর্গা মন্ডব।
ঝাপুরা বট দূর্গা মন্ডব।
বেনু পাড়া দূর্গা মন্ডব।
মঙ্গুলু শাহ পাড়া হেলা বটতলী দূর্গা মন্ডব।
ঘুগুর ডাঙ্গা দূর্গা মন্ডব।
তেরম্ন তলী দূর্গা মন্ডব।
জীবন মাস্টার পাড়া অষ্টপ্রহর।
মাছুয়া পাড়া অষ্টপ্রহর।
জেলে পাড়া মন্ডব ঘর।
গরম্নহাটি পুজা মন্ডব।
মহাদেব বাবু পুজা মন্ডব।
বুড়ির থান হরিবাসর।
কালীতলা হরিবাসর।
কালীতলা দুর্গা মন্দির।
শ্রী বটতলী দুর্গা মন্দির।
মধু সরকার পাড়া দুর্গা মন্দির।
ওকরা বাড়ী পানুয়া পাড়া দুর্গা মন্ডব।
আদিবাসি পাড়া রামকৃষ্ণ হরি মন্দির।
আশ্রম পাড়া মন্দির।
কালি মন্দির শাহাপাড়া।
রবিসাধূ পাড়া মন্দির।
যুগী পাড়া মন্দির।
বটতলা কালী মন্দির।
পশ্চিম আঙ্গারপাড়া কালী মন্দির। |
fd18a343-400c-42fa-9fdb-965e8a04ef33 | খানসামা উপজেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির চর্চার দিক দিয়ে আবহমানকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী। এ উপজেলার সংস্কৃতিমনা লোকজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জনগণকে বিনোদন প্রদান করেছে। খানসামা উপজেলায় আদিকাল থেকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আদিবাসী বসবাস করে আসছে এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই আদিবাসীরা সবসময় একটি স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে এসেছে। একসময় পাকেরহাট নামক স্থানে একটি কালচারাল একাডেমী উপজেলার সাংস্কৃতিক বিকাশে বেশ ভূমিকা রেখেছে।বর্তমানে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর গঠণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং ঐতিহ্যগত আচার অনুষ্ঠানদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, এখানকার মানুষ শিল্প সংস্কৃতির প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী । পহেলা বৈশাখ,চৈত্রসংক্রান্তি,বর্ষাবরণ,পহেলা ফাল্গুন,নবান্ন পালন,আদিবাসীদের(সাঁওতালদের) ৩০ শে জুনের হুল উৎসব,হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বনের সময়,মুসলমানদের ঈদ উৎযাপনের সময় এ উপজেলায় বেশ উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ঢাঁক,ঢোল,কাসর,তোরংগ,বাঁশী এ এলাকার বেশ জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র।
মেলা-পার্বনঃ
বহু প্রাচীনকাল থেকে খানসামার বুড়াখাঁ পীরের মেলাটি বেশ বিখ্যাত। এ গ্রাম্য মেলাতে উন্নতজাতের গবাদি পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা ও যাত্রা থিয়েটার, সার্কাসের মাধ্যমে লোক বিনোদনের সমারোহপূর্ণ আয়োজন থাকত। একালেও তা অব্যাহতরয়েছে। |
4493b01d-9a37-4478-9a18-ff2ba7e1c303 | খানসামা উপজেলার নামকরণের পিছনে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।তবে কথিত আছে যে,অত্র খানসামা উপজেলায় বৃটিশ আমলে একজন ইংরেজ কায্যপলক্ষে বসবাস করতেন। সেই ইংরেজ সাহেবের একজন খানসামা বা চাকর ছিলেন। পরবর্তীতে সেই খানসামার প্রচেষ্টায় অত্র এলাকায় একটি হাট গড়ে উঠে। উক্ত হাটটি তার নাম অনুসারে রাখা হয় খানসামা। সেই অনুসারে অত্র উজেলার নামকরন ১৮৯১ ইং সালের ২১শে জানুয়ারী খানসামা করা হয়। এই তথ্য ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার ভূমি ও ইমারত কোঠা রেজিষ্টার ফাইলে পাওয়া যায়।১২/১২/১৯৮২ খ্রিঃ তারিখ জনাব তুষার কান্তি বড়ুয়া প্রথম উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন। |
5c1c3db0-a2f8-44bb-a8fc-935396f958f8 | খানসামা উপজেলায় মূলত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি।এখানে কোন খনিজ সম্পদ নেই। তবে পুকুর,নদী,খাল,বিল,নালা সমূহে নানা রকম দেশী মাছ পাওয়া যায়।স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট প্রকাশ করে এমন কোন বনজ সম্পদ এ উপজেলায় নেই।করল্লা,রসুন,লিচু,ধান,পটল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় এ উপজেলায়।সম্প্রতি আগ্রা নামক স্থানে এক প্রকার লৌহ আকরিকের স্তুপ পাওয়া গিয়েছে।বিএমডি এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখছে। |
78aed582-df72-4ff1-916a-f5be45f2b0d4 | খানসামা উপজেলার আয়তন ১৭৯.৭২ বর্গ কিলোমিটার। উপজেলাটি ২৫ডিগ্রী ৪৭" উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬ডিগ্রী ০১"উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ডিগ্রী৪২" পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৮ডিগ্রী৫১"পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত। উপজেলাটির উত্তরে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলারদিনাজপুর সদর উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলার নীলফামারী সদর উপজেলা ও পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা ও কাহারোল উপজেলা অবস্থিত ।
অত্র খানসামা উপজেলায় বৃটিশ আমলে একজন ইংরেজ কায্যপলক্ষে বসবাস করতেন। সেই ইংরেজ সাহেবের একজন খানসামা বা চাকর ছিলেন। পরবর্তীতে সেই খানসামার প্রচেষ্টায় অত্র এলাকায় একটি হাট গড়ে উঠে। উক্ত হাটটি তার নাম অনুসারে রাখা হয় খানসামা। সেই অনুসারে অত্র উজেলার নামকরন ১৮৯১ ইং সালের ২১শে জানুয়ারী খানসামা করা হয়। এই তথ্য ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার ভূমি ও ইমারত কোঠা রেজিষ্টার ফাইলে পাওয়া যায়। |
e9422abe-b3b0-4765-a84d-becf3b81d885 | ১।মাসিক সাধারণ সভা ও অন্যান্ন সকল কমিটির সভা পরিচালনা সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং বাস্তবায়নে কাজ করণ।
২। গ্রাম্য আদালত পরিচালনা
৩।সালিশী পরিষদ পরিচালনা এবং বিজ্ঞ আদালতের প্রাপ্ত মোকদ্দমা তদন্ত ও বিচার করণ।
৪। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কমিটির সভা পরিচালনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫। তথ্য ও সেবা কেন্দ্র প্রতিদিন খোলা রেখে জনসাধারণকে নানামুখি সেবা প্রদান।
৬। সর্ব সাধারণকে বিভিন্ন প্রকার সনদ প্রদান
৭। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করণ ও সনদ বিতরণ
৮। বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা, প্রতিবন্ধীভাতাভোগী নির্বচন করা।
৯। ভিজিডি খাদ্যশষ্য বিতরণ
১০। কেন্দীয় সরকারের নির্দেশনা পালন ও বিভিন্ন প্রকার তথ্য প্রেরণ।
১১। বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প বাস্তবায়ন
১২। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশ রণপাহাড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ
১৩। অবৈধ মাদকদ্রব্যের উপর নিয়ন্ত্রণ চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মূলক কার্যক্রম।
১৪। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, পশুপালন-কৃত্তিম প্রজনন, বৃক্ষরোপন,খেলাধুলা পরিচালনা, বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবস পালন। এছাড়া জনস্বার্থে সকল কার্যাদি পরিচালনা। |
c0075cc1-b8ea-4562-a61e-cc73309d898b | পার্বতীপুর উত্তরবঙ্গ তথা রংপুর বিভাগের একটি ঐতিয্যবাহী ওসুপ্রাচীণ জনপদ। ভৌগলিক অবস্থান, ভূ-খন্ডের বৈচিত্রতা, অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ন স্থাপনার সমাহার সবকিছু মিলিয়ে এ উপজেলাটি দিনাজপুর জেলা তথা এ অঞ্চলে স্বকীয় স্থান করে নিয়েছে। এ উপজেলার জন সাধারনের সার্বিক উন্নয়ন, তথ্য সেবা প্রদান, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণ সর্বোপরিতথ্যপ্রযুক্তিরসর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে জনগনণের দোরগোড়ায় সরকারী ওবে-সরকারী সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে পার্বতীপুর ওয়েব পোর্টাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ও গণমুখী, আলোকিত উপজেলা গড়ে তোলার প্রয়াসে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই- এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
মো: রাহেনুল ইসসলাম
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
পার্বতীপুর, দিনাজপুর। |
855af70e-e9e1-430e-ab01-f890494ea27f | বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে রেল পথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু , অন্যতম বৃহত্তর রেলওয়ে জংশন ও কারখানার গৌরব এবং খনিজ সম্পদে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় উপজেলটির নাম পার্বতীপুর। পার্বতীপুর নামকরণের তথ্যভিত্তিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে কেউ কেউ বলেন সুপ্রাচীনকালে হিন্দু অধ্যুষিত এই স্থানে ধুমধামের সাধে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পুজা পার্বন অনষ্ঠিত হতো ।এই ধর্মেরই এক দেবতা ‘‘পার্বতী’’ নাম অনুসারে এ স্থানের নাম পার্বতীপুর হয়। আবার এ ধরনের প্রবাদও চালু আছে যে, খোলাহাটির সন্নিকটে রাজা কিচকের অপূর্ব সুন্দরী মেযে ছিল যার নাম পায়রাবতী । পায়রাবতী বাল্য বিধাব ছিল । গড়ের অনতি দুরে ডিমালী নামক দীঘিতে দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহুত হবার পর তার শস্নীলতাহানী হয় । অতপর পায়রাবতী মনের দুখে ডিমালী দীঘির জলে আত্নহত্যা করে । এই আত্নহত্যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে এ স্থানের নাম নাকি পার্বতীপুর হয় । তবে এসব কিংবদমত্মী, প্রবাদ বা জনশ্রম্নতি সমর্থিত নামকরনের পাশ্চাত্যে কোন ঐতিহাসিক সত্যতা নেই । |
0d40b772-b053-4d37-b536-d5940c1f51cc | প্রশ্ন
উত্তর
১. জি ডি কী এবং কেন ?
মূল্যবান যে কোন জিনিস হারালে যেমন-সার্টিফিকেট, দলিল, লাইসেন্স, পাসপোর্ট, মূল্যবান রশিদ, চেকবই, এটিএম বাক্রেডিট স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ইত্যাদি। অথবা কোন প্রকার হুমকি পেলে বাহুমকির আশংকা থাকলে কিংবা কেউ নিখোঁজ হলেও জিডি করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎসাধারণত যেসব ক্ষেত্রে মামলা হয়না সেসব ক্ষেত্রেই থানায় জিডি করা যায়। জিডিকরার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নতুন করে হারানো কাগজ তুলতে হলেও জিডিরকপির প্রয়োজন হয়।
২.জি ডি কোথায় করতে হয় ?
জি ডি থাণায় করতে হয়।জিডি করার ক্ষেত্রেসাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বাঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করতে হয় ।
৩.জি ডি কত কপি করতে হয় ?
থানায় গিয়ে জিডি করলে আপনাকে দুটি কপি করতে হবে। আবেদনের দ্বিতীয় কপিতে জিডি নম্বর, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিললাগিয়ে আপনাকে দেওয়া হবে এবং জিডিটি নথিভুক্ত হবে। কপিটি আপনি নিজের জন্যসংরক্ষণ করবেন।
৪.জি ডি পরবর্তীতে কি হয় ?
জিডি হওয়ার পর তা কর্তব্যরত কর্মকর্তা থানার ওসির কাছেপাঠাবেন। জিডিটি যদি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে হয়, তবে থানা কর্তৃপক্ষসঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে এবং গৃহীতব্যবস্থা পুনরায় আবেদনকারীকে অবহিত করা হবে।
৫.পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটকী ?
কোন ব্যক্তি সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত করে যে সার্টিফিকেট প্রদান করে তাকে পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটবলে।
৬.পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটকেন প্রয়োজন হয় ?
বিভিন্ন প্রয়োজনেই আমাদের ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’- এরপ্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।যেমন- বিদেশে যাওয়ার জন্য, চাকুরীর ক্ষেত্রে
৭.পুলিশক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটনিতে কি কি কাগজ প্রয়োজন ?
পাঁচশত (৫০০/=) টাকার ট্রেজারী চালান,পাসপোর্টের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
৮. এফ আই আর কী ?
First information report (FIR) -কোন ব্যক্তি থাণায় এসে অভিযোগ করলে সেটা যখন নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ করা হয় তখন তাকে FIR বলে।
৯. এজাহার কী ?
কোন ব্যক্তি থাণায় এসে যে লিখিত অভিযোগ করে সেটাকে এজাহার বলা হয় ।
ছবি
সংযুক্তিজিজ্ঞাসা.doc |
da8d76b8-0664-45aa-bf3e-cd186197de49 | মৌলিক তথ্যাবলী, উপজেলা ভুমি অফিস, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
১। (ক) উপজেলার আয়তন ঃ ৩৯৫.১০ বর্গ কিলোমিটার।
(খ) ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সংখ্যা ঃ ১০টি।
(গ) পৌর ভুমি অফিসের সংখ্যা ঃ ১টি।
(ঘ) মৌজার সংখ্যা ঃ ১৫৬টি।
(ঙ) মোট জমির পরিমান ঃ ৯৭৬৬১.৪১৯ একর।
২। (ক) অর্পিত সম্পত্তির পরিমান ঃ ৪০৩.৯৫ একর।
(খ) ইজারাকৃত অর্পিত সম্পত্তির পরিমান ঃ ২৮৪.৭৪ একর।
(গ) ইজারা বর্হিভূত অর্পিত সম্পত্তির পরিমান ঃ ১৯৯.২১ একর।
(ঘ) অর্পিত সম্পত্তির সেলামীর দাবী ঃ ৮৪১৭৬৪.০০ টাকা
৩। (ক) পরিত্যাক্ত সম্পত্তির পরিমান ঃ ২৭৯.৫৪ একর।
(খ) ইজারাকৃত পরিত্যাক্ত সম্পত্তির পরিমান ঃ ৬৪.৯৫৫০ একর।
(গ) ইজারা বর্হিভূত পরিত্যাক্ত সম্পত্তির পরিমানঃ ২১৫.১৮ একর।
(ঘ) পরিত্যাক্ত সম্পত্তির সেলামীর দাবী ঃ ১৫৫৮০০.০০ টাকা
৪। (ক) খাস সম্পত্তির পরিমান ঃ ১০৯১.২৮৫ একর।
(খ) বন্দোবস্তযোগ্য খাস সম্পত্তির পরিমান ঃ ৭২৬.১৪ একর।
(গ) বন্দোবস্তকৃত খাস সম্পত্তির পরিমান ঃ ৬৩৪.৯২৫ একর।
(ঘ) বন্দোবস্ত অপেক্ষায় খাস সম্পত্তির পরিমান ঃ ৯১.৯৫৫ একর।
৫। আবাসন প্রকল্পে সংখ্যা ঃ ৮টি
বাস্তবায়ন ঃ ৩টি
প্রক্রিয়াধীন ঃ ৫টি
৬। আশ্রয়ন প্রকল্পে সংখ্যা ঃ ৭টি
বাস্তবায়ন ঃ ৭টি
প্রক্রিয়াধীন ঃ ---
৭। আর্দশ গ্রাম প্রকল্পে সংখ্যা ঃ ৮টি
বাস্তবায়ন ঃ ৩টি
প্রক্রিয়াধীন ঃ ৫টি
ছবি |
88133909-414b-42f3-8e62-c62559fafdc9 | মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন।
যেমনঃ-
(১) বিনামূল্যে বই বিতরণঃ২০১০ খ্রিঃ হইতে সরকার মাধ্যমিক স্তরে (স্কুল ও মাদ্রাসায়) বিনামূল্যে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করিয়াছে।
(২) কর্মকর্তা নিয়োগঃশিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিদর্শন, প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান, বিদ্যালয় ভিত্তিক মূল্যায়ন(SBA) সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে আঞ্চলিক অফিস, জেলা শিক্ষা অফিসে গবেষণা কর্মকর্তা ও সহকারী পরিদর্শক এবং উপজেলায় উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নিয়োগ প্রদান করা হইয়াছে।
(৩) প্রশিক্ষণঃশিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য TQI-SEP প্রকল্পের অর্থায়নে সারাদেশব্যাপী শিক্ষকদের CPD-1, CPD-2 ও ক্লাষ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হইতেছে।
(৪) মা সমাবেশঃবিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের অনুপস্থিতি হ্রাস, ঝরেপড়া প্রতিরোধ এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে স্কুল ভিত্তিক মা সমাবেশ শুরু করা হইয়াছে।
(৫) সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিঃ২০১০ খ্রিঃ এসএসসি পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে শুরু হইয়াছে। ২০১১ খ্রিঃ দাখিল পর্যায়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরু হইবে। এই বিষয়ে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা হইয়াছে।
(৬) সেকেন্ডারী এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (SESDP) :
সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিদ্যালয় ভিত্তিক মূল্যায়ন, কৃতিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রভৃতি এই প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এই প্রকল্প কাজ করছে। জেলা ও উপজেলায় উক্ত প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ বিদ্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করছেন।পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন, এছাড়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তথ্য সংরক্ষন, আদান প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন।
ছবি |
e336a6c6-edac-4db0-8c3e-b5e9081bd541 | উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তিনি উপজেলা পর্যায়ে সরকারের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করেন:
১। জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা।
২। উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়নমূলক কাজের সমন্বয় সাধন করা।
৩। উপজেলা পর্যায়ে সমন্বিত কর্মসূচী প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহায়তা করা।
৪। আবশ্যক ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা প্রয়োগের ব্যবস্থা করা।
৫। অধ:স্তন অফিসারের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লিখা।
৬। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্থদের নিরাপদ স্থানে আনয়ন করা এবং ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা।
৮। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল পরিচালনা করা।
৯। উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী,ইউপি চেয়ারম্যান/সদস্য/সচিবগণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
১০। উপজেলা পর্যায়ে সকল সরকারি আদেশ/নির্দেশ প্রতিপালন করা।
১১। অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন।
১২। এলজিএসপির কাজের প্রকল্প অনুমোদন ও তদারকি করা।
১৩। উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করা।
১৪। উপজেলাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন করা ।
১৫। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা।
১৬। ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা।
১৭। পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা।
১৮। বিভন্ন সময়ে প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।
১৯। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে ভ্রামান্যমান আদালত পরিচালনা করা।
২০। সরকারের গুচছগ্রাম ও আশ্রয়ণ/আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমিহীনদের পূর্নবাসন করা। |
04168c78-6413-4d75-990f-a1dc568928c0 | ফুটবল জাদুকর সামাদের ষ্মৃতিসৌধ পার্বতীপুর বদ্ধভূমি
পার্বতীপুর উপজেলার খ্যাতনামা খুটবল খেলোয়ার ছিলেন আঃ সামাদ । সারাদেশে তার নাম-ডাক ছিল প্রচুর । শোনা যায় তিনি ফুটবল যেভাবে খেলতে চাইতেন সেভাবেই খেলতে পারতেন । তাইতে সবাই তাকে ফুটবল যাদুকর বলে ডাকতেন । পার্বতীপুর উপজেলার কালীবাড়ী নামক স্থানের ৩০০ মিটার পশ্চিমে তিনি শায়িত আছেন । সেখানে তার কবর স্থান ।
পার্বতীপুর উপজেলার পার্বতীপুর-দিনাজপুর রেললাইনের পাশ্বে পাবলিক স্কুলের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত। এই বদ্ধ ভুমিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নাম না জানা শতশত মুক্তিযোদ্ধাকে কবর দেয়া হয়েছে। |
f726f947-96ef-40aa-93df-ebe92631fb19 | দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার ৩নং রামপুর ইউনিয়নে পার্বতীপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক সংলগ্ন কেন্দ্রিয় লোকোমোটিভ কারখানাটি অবস্থিত । তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে একদল দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা পুরাতন ইঞ্জিন মেরামত, নতুন ইঞ্জিন তৈরী, রেলওয়ে বগি তৈরি সহ অনেক যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় । বাংলাদেশে মাত্র ২টি রেলওয়ে কারখানা রয়েছে। পার্বতীপুর কেন্দ্রিয় লোকোমোটিভ কারখানাটি তার মধ্যে অন্যতম। মনোরম পরিবেশে পার্বতীপুর কেন্দ্রিয় লোকোমোটিভ কারখানাটি অবস্থিত । বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল এর সমস্ত রেলওয়ে বগি, ইঞ্জিন মেরামত সহ যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ এখানেই করা হয়। এখানে প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন।
১। ট্রেনযোগে পার্বতীপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে নেমে অটোবাইক, রিক্সা/ভ্যান যোগে যাওয়া যায়। এটি
পার্বতীপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উত্তর দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত ।
২। বাসযোগে পার্বতীপুর কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনালে নেমে অটোবাইক, রিক্সা/ভ্যান যোগে যাওয়া যায় ।
পার্বতীপুর কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল থেকে উত্তর দিকে প্রায় ১ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। |
2f03f721-9164-460e-8d64-db38e8b9e093 | জরিপ কার্য়ক্রমের বিভিন্ন স্তরের নাম, সেবার বিবরণ, ভূমি মালিকের করণীয়, ও সেবা প্রদানে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারি
১। বিজ্ঞপ্তি: ভূমি জরিপ আরম্ভের পূর্বে ১৯৫০ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪(১) ধারা এবং বঙ্গীয় জরিপ আইনের ০৩ ধারায় ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে ...........অফিসার কর্তৃক ....... আইনে ৫,৭ ধারার নোটিশ প্রদান। জরিপ শুরুর পূর্বে মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপনসহ ব্যাপক জনসংযোগ করা হয়। এসময় ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ জমির আইল/ সীমানা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। জমির মালিকানায় সমস্ত দলিল/ কাগজপত্র হালনাগাদ অবস্থায় কাছে রাখতে হবে।
২। ট্রাভার্স : কোন মৌজার নকশা সম্পূর্ণ নতুন করে প্রস্তুত করতে মৌজায় যে কাঠামো স্থাপন করা হয় সেটাই ট্রাভার্স। অতঃপর পি ৭০ সিটের মাধ্যমে মৌজার নতুন নকশা প্রস্ত্তত করা হয়। কোন মৌজার পুরোনো নকশা অর্থাৎ ব্লু-প্রিন্ট সিটের উপর জরিপ করার ক্ষেত্রে ট্রাভার্স করা হয় না। ট্রাভার্স পরিচালনা করেন একজন সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে একদল জরিপ কর্মচারী।
৩। কিস্তোয়ার : এই স্তরে আমিনদল প্রতি খন্ড জমির পরিমাপ করে তা মৌজা নকশায় প্রতিফলিত করে নতুন নকসা অংকনের মাধ্যমে কিস্তোয়ার সম্পন্ন করে অথবা ব্লু-প্রিন্টে পুরোনো নকশা সংশোধন করেন। এ স্তরের কাজ একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার(কানুনগো) এ তত্বাবধানে আমিনদল করে থাকেন।
৪। খানাপুরী : কিস্তোয়ার স্তরে অঙ্কিত নকশার প্রত্যেকটি দাগের জমিতে উপস্থিত হয়ে আমিনদল জমির দাগ নম্বর প্রদান করেন এবং মালিকের রেকর্ড, দলিলপত্র ও দখল যাচাই করে মালিকের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য খতিয়ানে লিপিবদ্ধ (খানাপুরী) করেন। এ স্তরে ভূমি মালিকদের কাজ হচ্ছে আমিনদলকে জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।এ স্তরের কাজ একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার(কানুনগো) এর তত্বাবধানে আমিনদল করে থাকেন।
৫। বুঝারত : অর্থ জমি বুঝিয়ে দেয়া। এ স্তরে আমিনদল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খাতিয়ান বা পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ (বুঝারত) করা হয়, যা মাঠ পর্চা নামে পরিচিত। পর্চা বিতরণের তারিখ নোটিশ/ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার/ এলাকায় মাইকিং-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। ভূমি মালিকগণ প্রাপ্ত পর্চার সঠিকতা যাচাই করে কোনরূপ সংশোধন বা পরিবর্তন আবশ্যক হলে নির্দিষ্ট (Dispute) ফরম পূরণ করে তা আমিনের নিকট জমা দেবেন। একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার( কানুনগো) হল্কা অফিসার হিসাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের শুনানির মাধ্যমে দ্রুত ঐসকল বিবাদ-নিস্পত্তি করবেন।
৬।খানাপুরী ও বুঝারত : যখন কোন মৌজা ট্রাভার্স এবং কিস্তোয়ারের মাধ্যমে ব্লু-প্রিন্ট সীটে জরিপ করা হয় সে সময় উপরে বর্ণিত খানাপুরী ও বুঝারত স্তরের কাজ একসাথে করা হয়। সরদার আমিন/হল্কা অফিসার বা কানুনগো/ক্যাডাস্ট্রাল সার্কেল অফিসার।
৭।তসদিক বা এটাস্টেশন : ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদিত হয় তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদন করেন একজন কানুনগো বা রাজস্ব অফিসার। জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি যাচাই করে প্রতিটি বুঝারত খতিয়ান সত্যায়ন করা হয়। এ স্তরেও ভূমি মালিকগণ পর্চা ও নকশার কোন সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে বিবাদ (Dispute) দাখিল করতে পারেন এবং উপযুক্ত প্রমান উপস্থাপন করে তা সংশোধনের সুযোগ নিতে পারেন। তসদিককৃত পর্চা জমির মালিকানায় প্রাথমিক আইনগত ভিত্তি (primary Legal Document) হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এ স্তরের কাজটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮। খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ও আপত্তি দায়েরঃ তসদিকের পর জমির প্রণীত রেকর্ড সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য ৩০ দিন উম্মুক্ত রাখা হয়। এর সময়কাল উল্লেখপূর্বক ক্যাম্প অফিস হতে বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়। ভূমি মালিকগণের নামের অদ্যাক্ষর অনুযায়ী খতিয়ান বা পর্চা বর্ণনাক্রমিক ক্রমবিন্যাস করে খতিয়ানে নতুন নম্বর অর্থাৎ ডিপি নম্বরটি সংগ্রহের জন্য ও ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ পর্চাসহ খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হয়। ডিপিতে প্রকাশিত খতিয়ান সম্পর্কে কারো কোন আপত্তি বা দাবি থাকলে সরকার ১০ (দশ) টাকার কোর্ট ফি দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩০ বিধি অনুযায়ী আপত্তি দায়ের করা যাবে। তসদিক অফিসার/ খসড়া প্রকাশনা অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন (উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার)
৯। আপত্তি শুনানীঃ ডিপি চলাকালে গৃহীত আপত্তি মামলাসমূহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে নিস্পত্তি করা হয়। পক্ষগণ নিজে অথবা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ নিজ দাবি আপত্তি অফিসারের নিকট উপস্থাপন করতে পারেন। আপত্তি অফিসার পক্ষগণকে শুনানী দিয়ে, রায় কেস নথিতে লিপিবদ্ধ করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন এবং সিদ্ধান্তের আলোকে খতিয়ান বা রেকর্ড প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবেন। আপত্তি অফিসার/ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার
১০। আপীল শুনানীঃ আপত্তির রায়ে সংক্ষুদ্ধ পক্ষ ৩১ বিধিতে আপীল দায়ের করতে পারেন। নির্ধারিত কোর্ট ফি এবং কার্টিজ পেপারসহ সেটেলমেন্ট অফিসার বরাবর আবেদন দাখিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আপত্তি মামলার রায়ের ঐ নকলসহ আপীল দায়ের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে আপীল নিস্পত্তি করা হয়। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার/ চার্জ অফিসার, জোলাল সেটেলমেন্ট অফিসার |
4a1c9145-3a6f-4c84-9f96-66854f654a30 | জরিপ কার্য়ক্রমের বিভিন্ন স্তরের নাম, সেবার বিবরণ, ভূমি মালিকের করণীয়, ও সেবা প্রদানে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারি
১। বিজ্ঞপ্তি: ভূমি জরিপ আরম্ভের পূর্বে ১৯৫০ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪(১) ধারা এবং বঙ্গীয় জরিপ আইনের ০৩ ধারায় ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে ...........অফিসার কর্তৃক ....... আইনে ৫,৭ ধারার নোটিশ প্রদান। জরিপ শুরুর পূর্বে মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপনসহ ব্যাপক জনসংযোগ করা হয়। এসময় ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ জমির আইল/ সীমানা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। জমির মালিকানায় সমস্ত দলিল/ কাগজপত্র হালনাগাদ অবস্থায় কাছে রাখতে হবে।
২। ট্রাভার্স : কোন মৌজার নকশা সম্পূর্ণ নতুন করে প্রস্তুত করতে মৌজায় যে কাঠামো স্থাপন করা হয় সেটাই ট্রাভার্স। অতঃপর পি ৭০ সিটের মাধ্যমে মৌজার নতুন নকশা প্রস্ত্তত করা হয়। কোন মৌজার পুরোনো নকশা অর্থাৎ ব্লু-প্রিন্ট সিটের উপর জরিপ করার ক্ষেত্রে ট্রাভার্স করা হয় না। ট্রাভার্স পরিচালনা করেন একজন সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে একদল জরিপ কর্মচারী।
৩। কিস্তোয়ার : এই স্তরে আমিনদল প্রতি খন্ড জমির পরিমাপ করে তা মৌজা নকশায় প্রতিফলিত করে নতুন নকসা অংকনের মাধ্যমে কিস্তোয়ার সম্পন্ন করে অথবা ব্লু-প্রিন্টে পুরোনো নকশা সংশোধন করেন। এ স্তরের কাজ একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার(কানুনগো) এ তত্বাবধানে আমিনদল করে থাকেন।
৪। খানাপুরী : কিস্তোয়ার স্তরে অঙ্কিত নকশার প্রত্যেকটি দাগের জমিতে উপস্থিত হয়ে আমিনদল জমির দাগ নম্বর প্রদান করেন এবং মালিকের রেকর্ড, দলিলপত্র ও দখল যাচাই করে মালিকের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য খতিয়ানে লিপিবদ্ধ (খানাপুরী) করেন। এ স্তরে ভূমি মালিকদের কাজ হচ্ছে আমিনদলকে জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।এ স্তরের কাজ একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার(কানুনগো) এর তত্বাবধানে আমিনদল করে থাকেন।
৫। বুঝারত : অর্থ জমি বুঝিয়ে দেয়া। এ স্তরে আমিনদল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খাতিয়ান বা পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ (বুঝারত) করা হয়, যা মাঠ পর্চা নামে পরিচিত। পর্চা বিতরণের তারিখ নোটিশ/ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার/ এলাকায় মাইকিং-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। ভূমি মালিকগণ প্রাপ্ত পর্চার সঠিকতা যাচাই করে কোনরূপ সংশোধন বা পরিবর্তন আবশ্যক হলে নির্দিষ্ট (Dispute) ফরম পূরণ করে তা আমিনের নিকট জমা দেবেন। একজন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার( কানুনগো) হল্কা অফিসার হিসাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের শুনানির মাধ্যমে দ্রুত ঐসকল বিবাদ-নিস্পত্তি করবেন।
৬।খানাপুরী ও বুঝারত : যখন কোন মৌজা ট্রাভার্স এবং কিস্তোয়ারের মাধ্যমে ব্লু-প্রিন্ট সীটে জরিপ করা হয় সে সময় উপরে বর্ণিত খানাপুরী ও বুঝারত স্তরের কাজ একসাথে করা হয়। সরদার আমিন/হল্কা অফিসার বা কানুনগো/ক্যাডাস্ট্রাল সার্কেল অফিসার।
৭।তসদিক বা এটাস্টেশন : ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদিত হয় তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদন করেন একজন কানুনগো বা রাজস্ব অফিসার। জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি যাচাই করে প্রতিটি বুঝারত খতিয়ান সত্যায়ন করা হয়। এ স্তরেও ভূমি মালিকগণ পর্চা ও নকশার কোন সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে বিবাদ (Dispute) দাখিল করতে পারেন এবং উপযুক্ত প্রমান উপস্থাপন করে তা সংশোধনের সুযোগ নিতে পারেন। তসদিককৃত পর্চা জমির মালিকানায় প্রাথমিক আইনগত ভিত্তি (primary Legal Document) হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এ স্তরের কাজটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮। খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ও আপত্তি দায়েরঃ তসদিকের পর জমির প্রণীত রেকর্ড সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য ৩০ দিন উম্মুক্ত রাখা হয়। এর সময়কাল উল্লেখপূর্বক ক্যাম্প অফিস হতে বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়। ভূমি মালিকগণের নামের অদ্যাক্ষর অনুযায়ী খতিয়ান বা পর্চা বর্ণনাক্রমিক ক্রমবিন্যাস করে খতিয়ানে নতুন নম্বর অর্থাৎ ডিপি নম্বরটি সংগ্রহের জন্য ও ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ পর্চাসহ খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হয়। ডিপিতে প্রকাশিত খতিয়ান সম্পর্কে কারো কোন আপত্তি বা দাবি থাকলে সরকার ১০ (দশ) টাকার কোর্ট ফি দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩০ বিধি অনুযায়ী আপত্তি দায়ের করা যাবে। তসদিক অফিসার/ খসড়া প্রকাশনা অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন (উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার)
৯। আপত্তি শুনানীঃ ডিপি চলাকালে গৃহীত আপত্তি মামলাসমূহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে নিস্পত্তি করা হয়। পক্ষগণ নিজে অথবা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ নিজ দাবি আপত্তি অফিসারের নিকট উপস্থাপন করতে পারেন। আপত্তি অফিসার পক্ষগণকে শুনানী দিয়ে, রায় কেস নথিতে লিপিবদ্ধ করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন এবং সিদ্ধান্তের আলোকে খতিয়ান বা রেকর্ড প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবেন। আপত্তি অফিসার/ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার
১০। আপীল শুনানীঃ আপত্তির রায়ে সংক্ষুদ্ধ পক্ষ ৩১ বিধিতে আপীল দায়ের করতে পারেন। নির্ধারিত কোর্ট ফি এবং কার্টিজ পেপারসহ সেটেলমেন্ট অফিসার বরাবর আবেদন দাখিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আপত্তি মামলার রায়ের ঐ নকলসহ আপীল দায়ের করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহন করে আপীল নিস্পত্তি করা হয়। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার/ চার্জ অফিসার, জোলাল সেটেলমেন্ট অফিসার |
7dcec68d-6414-44bf-a791-c719a4c1f38c | তামাদি ও আপীল নিষ্পত্তি:
Ø আপত্তি কেসের রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ পক্ষ ১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩১ বিধিতে আপীল কেস দায়ের করতে পারেন।
Ø ৩০ দিন সময় অতিক্রান্ত হলে তামাদি দোষে দুষ্ট হবে।
Ø তামাদি হলে সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শানো সাপেক্ষে সেটেলমেন্ট অফিসার এর অনুকূলে তামাদি মওকুফের দরখাস্ত দায়ের করা যায়।
Ø সাধারণত তিনটি কারণে তামাদি মওকুফযোগ্য হতে পারে।
Ø ক) ভূমি মালিক বিদেশে অবস্থান করলে,
Ø খ) হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে, ও
Ø গ) কারাগারে অন্তরীন থাকলে।
Ø আপত্তি কেসের ন্যায় আপীল কেসের নোটিশ পেলে নোটিশের তারিখ অনুযায়ী ভুমি মালিককে আপীল অফিসারের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে কাগজপত্র ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে হয়।
Ø আপিল কেসের রায়ের নকল কপি সংগ্রহ করা যায়্।
মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি (অতিঃ সচিব)
মহাপরিচালক
100000 |
96d1b4e9-409a-4206-a9ad-51c3c1d23430 | দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে online.forms.gov.bd ওয়েবসাইটের "সাধারণ আবেদন" - এর মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে বাংলাদেশের নাগরিকগন অনলাইন সেবা পেতে পারেন । ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য রাখতে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
আবেদনের ধাপ সমূহঃ আপনি মোট ৫ টি ধাপ অতিক্রম করে আবেদন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রেরন করতে পারেন ।
প্রথম ধাপঃ এখানে "সাধারণ আবেদন"-এর নির্দেশনাবলি পাবেন ।
দ্বিতীয় ধাপঃ আবেদনের “ফরম” পাবেন ।
০১। প্রাপক অফিস বাছাই করুনঃ আফিসের ধরণ বাছাই করুন - অধিদপ্তর । বাছাই করুন - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, এক্ষেত্রে ”ভূমি” শব্দটি কম্পোজ করলে সহজে সাজেশন হিসাবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পেয়ে যাবেন ।
০২। বরাবর - এর ৩টি ঘর ব্যবহার করে , প্রথম ঘরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদবী , দ্বিতীয় ঘরে - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, তৃতীয় ঘরে - তেজগাঁও, ঢাকা -১২০৮। লিখতে হবে ।
০৩। সংক্ষেপে ও সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষয় লিখতে হবে ।
০৪। আবেদন পত্রের ০১ থেকে ১০ পর্যন্ত ঘর গুলো পূরণ করতে হবে ।
০৫। আবেদন পত্রের ১০ নম্বর ঘরে ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ লিখতে হবে । অর্থাৎ আপনি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে যে সেবাটি পেতে চান বা আপনার বক্তব্যটি উল্লেখ করুন । আপনার বক্তব্যের শেষে আপনার ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করুন । প্রয়োজনে এই ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করা হবে । ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ ঘরে আপনার ই-মেইল এড্রেস না দিলে , ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র পাবেন না । উল্লেখ্য, ই-মেইল ঘরে ছাড়াও , অতিরিক্তভাবে এই ঘরে ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করতে হবে ।
তৃতীয় ধাপঃ আবেদন পত্রের সাথে কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সংযুক্তি দিতে চাইলে, এই ধাপে সংযু্ক্ত করতে হবে । সংযুক্তি সমূহ আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে । এছাড়া , আপনার ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি সংযু্ক্ত করতে পারেন এই ধাপে । সংযুুক্তি প্রদানের পূর্বে সফট ফাইলটির একটি উপযুক্ত নামকরণ করে নিন ।
চতুর্থ ধাপঃ পেমেন্ট । বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে ।
পঞ্চম ধাপঃ আবেদনটি প্রেরণ করুন । আবেদন প্রেরণের পর ‘আবেদন গ্রহন নম্বর’ সম্বলিত একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন । এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে পারবেন।
মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি (অতিঃ সচিব)
মহাপরিচালক
100000 |
ed5b5eee-0d84-4e59-83d7-40f2aa74128d | দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে online.forms.gov.bd ওয়েবসাইটের "সাধারণ আবেদন" - এর মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে বাংলাদেশের নাগরিকগন অনলাইন সেবা পেতে পারেন । ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য রাখতে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
আবেদনের ধাপ সমূহঃ আপনি মোট ৫ টি ধাপ অতিক্রম করে আবেদন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রেরন করতে পারেন ।
প্রথম ধাপঃ এখানে "সাধারণ আবেদন"-এর নির্দেশনাবলি পাবেন ।
দ্বিতীয় ধাপঃ আবেদনের “ফরম” পাবেন ।
০১। প্রাপক অফিস বাছাই করুনঃ আফিসের ধরণ বাছাই করুন - অধিদপ্তর । বাছাই করুন - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, এক্ষেত্রে ”ভূমি” শব্দটি কম্পোজ করলে সহজে সাজেশন হিসাবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পেয়ে যাবেন ।
০২। বরাবর - এর ৩টি ঘর ব্যবহার করে , প্রথম ঘরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদবী , দ্বিতীয় ঘরে - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, তৃতীয় ঘরে - তেজগাঁও, ঢাকা -১২০৮। লিখতে হবে ।
০৩। সংক্ষেপে ও সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষয় লিখতে হবে ।
০৪। আবেদন পত্রের ০১ থেকে ১০ পর্যন্ত ঘর গুলো পূরণ করতে হবে ।
০৫। আবেদন পত্রের ১০ নম্বর ঘরে ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ লিখতে হবে । অর্থাৎ আপনি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে যে সেবাটি পেতে চান বা আপনার বক্তব্যটি উল্লেখ করুন । আপনার বক্তব্যের শেষে আপনার ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করুন । প্রয়োজনে এই ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করা হবে । ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ ঘরে আপনার ই-মেইল এড্রেস না দিলে , ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র পাবেন না । উল্লেখ্য, ই-মেইল ঘরে ছাড়াও , অতিরিক্তভাবে এই ঘরে ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করতে হবে ।
তৃতীয় ধাপঃ আবেদন পত্রের সাথে কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সংযুক্তি দিতে চাইলে, এই ধাপে সংযু্ক্ত করতে হবে । সংযুক্তি সমূহ আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে । এছাড়া , আপনার ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি সংযু্ক্ত করতে পারেন এই ধাপে । সংযুুক্তি প্রদানের পূর্বে সফট ফাইলটির একটি উপযুক্ত নামকরণ করে নিন ।
চতুর্থ ধাপঃ পেমেন্ট । বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে ।
পঞ্চম ধাপঃ আবেদনটি প্রেরণ করুন । আবেদন প্রেরণের পর ‘আবেদন গ্রহন নম্বর’ সম্বলিত একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন । এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে পারবেন।
মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি (অতিঃ সচিব)
মহাপরিচালক
100000 |
fed012c8-ae5b-40ce-a970-a84e053b7f3b | দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে online.forms.gov.bd ওয়েবসাইটের "সাধারণ আবেদন" - এর মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে বাংলাদেশের নাগরিকগন অনলাইন সেবা পেতে পারেন । ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য রাখতে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
আবেদনের ধাপ সমূহঃ আপনি মোট ৫ টি ধাপ অতিক্রম করে আবেদন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রেরন করতে পারেন ।
প্রথম ধাপঃ এখানে "সাধারণ আবেদন"-এর নির্দেশনাবলি পাবেন ।
দ্বিতীয় ধাপঃ আবেদনের “ফরম” পাবেন ।
০১। প্রাপক অফিস বাছাই করুনঃ আফিসের ধরণ বাছাই করুন - অধিদপ্তর । বাছাই করুন - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, এক্ষেত্রে ”ভূমি” শব্দটি কম্পোজ করলে সহজে সাজেশন হিসাবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পেয়ে যাবেন ।
০২। বরাবর - এর ৩টি ঘর ব্যবহার করে , প্রথম ঘরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদবী , দ্বিতীয় ঘরে - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, তৃতীয় ঘরে - তেজগাঁও, ঢাকা -১২০৮। লিখতে হবে ।
০৩। সংক্ষেপে ও সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষয় লিখতে হবে ।
০৪। আবেদন পত্রের ০১ থেকে ১০ পর্যন্ত ঘর গুলো পূরণ করতে হবে ।
০৫। আবেদন পত্রের ১০ নম্বর ঘরে ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ লিখতে হবে । অর্থাৎ আপনি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে যে সেবাটি পেতে চান বা আপনার বক্তব্যটি উল্লেখ করুন । আপনার বক্তব্যের শেষে আপনার ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করুন । প্রয়োজনে এই ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করা হবে । ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ ঘরে আপনার ই-মেইল এড্রেস না দিলে , ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র পাবেন না । উল্লেখ্য, ই-মেইল ঘরে ছাড়াও , অতিরিক্তভাবে এই ঘরে ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করতে হবে ।
তৃতীয় ধাপঃ আবেদন পত্রের সাথে কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সংযুক্তি দিতে চাইলে, এই ধাপে সংযু্ক্ত করতে হবে । সংযুক্তি সমূহ আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে । এছাড়া , আপনার ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি সংযু্ক্ত করতে পারেন এই ধাপে । সংযুুক্তি প্রদানের পূর্বে সফট ফাইলটির একটি উপযুক্ত নামকরণ করে নিন ।
চতুর্থ ধাপঃ পেমেন্ট । বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে ।
পঞ্চম ধাপঃ আবেদনটি প্রেরণ করুন । আবেদন প্রেরণের পর ‘আবেদন গ্রহন নম্বর’ সম্বলিত একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন । এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে পারবেন।
মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি (অতিঃ সচিব)
মহাপরিচালক
100000 |
c14b350b-db24-430b-beb5-61815b1c83e3 | দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে online.forms.gov.bd ওয়েবসাইটের "সাধারণ আবেদন" - এর মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে বাংলাদেশের নাগরিকগন অনলাইন সেবা পেতে পারেন । ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য রাখতে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
আবেদনের ধাপ সমূহঃ আপনি মোট ৫ টি ধাপ অতিক্রম করে আবেদন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রেরন করতে পারেন ।
প্রথম ধাপঃ এখানে "সাধারণ আবেদন"-এর নির্দেশনাবলি পাবেন ।
দ্বিতীয় ধাপঃ আবেদনের “ফরম” পাবেন ।
০১। প্রাপক অফিস বাছাই করুনঃ আফিসের ধরণ বাছাই করুন - অধিদপ্তর । বাছাই করুন - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, এক্ষেত্রে ”ভূমি” শব্দটি কম্পোজ করলে সহজে সাজেশন হিসাবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পেয়ে যাবেন ।
০২। বরাবর - এর ৩টি ঘর ব্যবহার করে , প্রথম ঘরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদবী , দ্বিতীয় ঘরে - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, তৃতীয় ঘরে - তেজগাঁও, ঢাকা -১২০৮। লিখতে হবে ।
০৩। সংক্ষেপে ও সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষয় লিখতে হবে ।
০৪। আবেদন পত্রের ০১ থেকে ১০ পর্যন্ত ঘর গুলো পূরণ করতে হবে ।
০৫। আবেদন পত্রের ১০ নম্বর ঘরে ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ লিখতে হবে । অর্থাৎ আপনি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে যে সেবাটি পেতে চান বা আপনার বক্তব্যটি উল্লেখ করুন । আপনার বক্তব্যের শেষে আপনার ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করুন । প্রয়োজনে এই ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করা হবে । ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ ঘরে আপনার ই-মেইল এড্রেস না দিলে , ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র পাবেন না । উল্লেখ্য, ই-মেইল ঘরে ছাড়াও , অতিরিক্তভাবে এই ঘরে ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করতে হবে ।
তৃতীয় ধাপঃ আবেদন পত্রের সাথে কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সংযুক্তি দিতে চাইলে, এই ধাপে সংযু্ক্ত করতে হবে । সংযুক্তি সমূহ আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে । এছাড়া , আপনার ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি সংযু্ক্ত করতে পারেন এই ধাপে । সংযুুক্তি প্রদানের পূর্বে সফট ফাইলটির একটি উপযুক্ত নামকরণ করে নিন ।
চতুর্থ ধাপঃ পেমেন্ট । বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে ।
পঞ্চম ধাপঃ আবেদনটি প্রেরণ করুন । আবেদন প্রেরণের পর ‘আবেদন গ্রহন নম্বর’ সম্বলিত একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন । এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে পারবেন।
মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি (অতিঃ সচিব)
মহাপরিচালক
100000 |
f8d0f7b0-a584-4f4f-8f1b-7dda9fbe222e | দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে online.forms.gov.bd ওয়েবসাইটের "সাধারণ আবেদন" - এর মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে বাংলাদেশের নাগরিকগন অনলাইন সেবা পেতে পারেন । ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য রাখতে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
আবেদনের ধাপ সমূহঃ আপনি মোট ৫ টি ধাপ অতিক্রম করে আবেদন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রেরন করতে পারেন ।
প্রথম ধাপঃ এখানে "সাধারণ আবেদন"-এর নির্দেশনাবলি পাবেন ।
দ্বিতীয় ধাপঃ আবেদনের “ফরম” পাবেন ।
০১। প্রাপক অফিস বাছাই করুনঃ আফিসের ধরণ বাছাই করুন - অধিদপ্তর । বাছাই করুন - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, এক্ষেত্রে ”ভূমি” শব্দটি কম্পোজ করলে সহজে সাজেশন হিসাবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পেয়ে যাবেন ।
০২। বরাবর - এর ৩টি ঘর ব্যবহার করে , প্রথম ঘরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদবী , দ্বিতীয় ঘরে - ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, তৃতীয় ঘরে - তেজগাঁও, ঢাকা -১২০৮। লিখতে হবে ।
০৩। সংক্ষেপে ও সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষয় লিখতে হবে ।
০৪। আবেদন পত্রের ০১ থেকে ১০ পর্যন্ত ঘর গুলো পূরণ করতে হবে ।
০৫। আবেদন পত্রের ১০ নম্বর ঘরে ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ লিখতে হবে । অর্থাৎ আপনি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে যে সেবাটি পেতে চান বা আপনার বক্তব্যটি উল্লেখ করুন । আপনার বক্তব্যের শেষে আপনার ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করুন । প্রয়োজনে এই ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করা হবে । ”আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ “ ঘরে আপনার ই-মেইল এড্রেস না দিলে , ই-মেইলের মাধ্যমে পত্র পাবেন না । উল্লেখ্য, ই-মেইল ঘরে ছাড়াও , অতিরিক্তভাবে এই ঘরে ই-মেইল এড্রেস উল্লেখ করতে হবে ।
তৃতীয় ধাপঃ আবেদন পত্রের সাথে কোন সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সংযুক্তি দিতে চাইলে, এই ধাপে সংযু্ক্ত করতে হবে । সংযুক্তি সমূহ আপনার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে । এছাড়া , আপনার ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি সংযু্ক্ত করতে পারেন এই ধাপে । সংযুুক্তি প্রদানের পূর্বে সফট ফাইলটির একটি উপযুক্ত নামকরণ করে নিন ।
চতুর্থ ধাপঃ পেমেন্ট । বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে ।
পঞ্চম ধাপঃ আবেদনটি প্রেরণ করুন । আবেদন প্রেরণের পর ‘আবেদন গ্রহন নম্বর’ সম্বলিত একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন । এটি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করে এই নম্বরটি দিয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে পারবেন।
মোঃ তসলীমুল ইসলাম এনডিসি (অতিঃ সচিব)
মহাপরিচালক
100000 |
Subsets and Splits