text
stringlengths
0
4.32k
কারন, পাখিটিকে আমি পালন করি, আমি ওকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসি। অনেক কষ্ট করে বোল শিখাচ্ছি, ভাষা শিখাচ্ছি। তাই সেদিন খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে এসেছিলো সে রাতে। কিন্তু পাখিটি জানে না সে কথা।
এখনো ভালবাসা বুঝতে পারেনা ও। আমি ওকে সব শিখাবো। ভালবাসা কাকে বলে, হৃদয়ের ব্যথা কি- আমি কথা দিয়েছি পাখিটিকে আমি সব শিখাবো। অনেক সাধের পাখি আমার, চেয়েছি ওকে আমার মতো বড় করে তুলবো। আমার রূপ ওকে দিবো।
আমার হৃদয়ের এক টুকরো মাংশ ওকে দিবো। তার বিনিময়ে কিছু চাই না ওর কাছে। শুধু চাই ওর ভালবাসা। আমার পাশে এসে বসা। তারপর একদিন পাখিটি উড়িয়ে দিবো শুন্য আকাশে আর আমি পথিক হয়ে চলে যাবো পথ বেয়ে শেষের পথে.
টিয়া
টিয়া (Parrot) Psittaciformes বর্গের অতি পরিচিত পাখি। এদের বড় মাথা ও বাঁকানো হুকের মতো ঠোঁট বৈশিষ্ট্যময়। এদের লেজ লম্বা। এরা মানুষের স্বর অনুকরণ করায় সক্ষম এবং এদের মধ্যে প্যারাকিট, লাভবার্ড ও বাজারিগার ও সেসঙ্গে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের ম্যাকাউ, আমাজান টিয়া, কাকাতুয়া ইত্যাদি পাখি রয়েছে। এদের জিহবা বেলুনাকার ও মাংসল। ফল ও বীজ খাওয়ার জন্য টিয়া ও এর স্বগোত্রীয়দের ঠোঁট মজবুত। বৃক্ষের শাখার ভিতর দিয়ে চলাচলের জন্য এরা কৌশলে এটিকে ব্যবহার করে। এদের পায়ের প্রথম ও চতুর্থ আঙুল পেছনমুখী। গাছে আরোহণের জন্য আঙুলের এক ধরনের অভিযোজন ঘটে থাকবে। এসব আঙুলের সাহায্যে এরা হাতের অনুরূপ খাদ্যবস্ত্তকে ধরে নিয়ে মুখে পুরতে পারে, যা অন্য কোনো প্রজাতির পাখিতে দেখা যায় না।অধিকাংশ প্রজাতির টিয়া গাছে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। ছোট আকারের পাখির প্রজাতিতে ১৬-১৯ এবং বড় প্রজাতিতে প্রায় ৩০ দিন ডিমে তা’ দেওয়া হয়। তা’ দেওয়ার পর ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয় তা সচরাচর অন্ধ থাকে। বাসায় বাচ্চারা দুই থেকে তিন মাস পিতামাতার যত্নে কাটায় এবং এসময় বাচ্চাদের ওগরানো খাবার খাওয়ানো হয়। দীর্ঘদিন পিতামাতার যত্নে থাকার সঙ্গে এদের মগজের আকার বড় হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কিত হতে পারে। বড় মগজ টিয়ার সহজে জটিল কৌশল শেখা ও শব্দধারণ করার ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
অনেক টিয়া ৫০ বছরেরও বেশি বাঁচে। মানুষ প্রথম যেসব টিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল সেগুলি ছিল ভারতীয় টিয়া। প্রায় ৩২৮ খ্রিস্টপূর্বে অ্যারিস্টটলের ছাত্র আলেকজান্ডার শিক্ষকের কাছে জীবিত টিয়া এনেছিলেন। আফ্রিকার গ্রে (gray) টিয়া কথা বলায় সবচেয়ে চৌকস, আমাজনের টিয়াও কথা বলে ভালো, যদিও এদের স্বর খুবই কর্কশ। টিয়ারা প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। খাঁচায় পোষমানা পাখি হিসেবে এরা সবসময়ই জনপ্রিয়। কারণ এরা মানুষকে বিনোদন দান করে, বেশ বুদ্ধিমান এবং ঠোঁট ও পায়ের সাহায্যে নানা ধরনের খেলা দেখায়। মাঝে মাঝে ফল ও শস্য ক্ষেতে ঝাঁক বেঁধে আসে। ফলে শস্য ও ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, এরা বহু আগাছার বীজ ধ্বংস করে। খাঁচায় পোষার জন্য টিয়া রপ্তানি একটি লাভজনক বাণিজ্য।
উষ্ণমন্ডলীয় ও অর্ধ-উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলসমূহে প্রায় ৩৫০টি প্রজাতির অধিকাংশ টিয়া বাস করে, কয়েকটি আছে ভারত ও মধ্য আফ্রিকায়। বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির মধ্যে চন্দনা অতি বিপন্ন।
বিড়াল
আমি শয়নগৃহে, চারপায়ীর উপর বসিয়া, হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছিলাম। একটু মিট্ মিট্ করিয়া ক্ষুদ্র আলো জ্বলিতেছে-দেয়ালের উপর চঞ্চল ছায়া, প্রেতবৎ নাচিতেছে। আহার প্রস্তুত হয় নাই-এজন্য হুঁকা হাতে, নিমীলিতলোচনে আমি ভাবিতেছিলাম যে, আমি যদি নেপোলিয়ন্ হইতাম, তবে ওয়াটার্লু জিতিতে পারিতাম কি না। এমত সময়ে একটি ক্ষুদ্র শব্দ হইল, মেও!
চাহিয়া দেখিলাম-হঠাৎ কিছু বুঝিতে পারিলাম না। প্রথমে মনে হইল, ওয়েলিংটন হঠাৎ বিড়ালত্ব প্রাপ্ত হইয়া, আমার নিকট আফিঙ্গ ভিক্ষা করিতে আসিয়াছে। প্রথম উদ্যমে, পাষাণবৎ কঠিন হইয়া, বলিব মনে করিলাম যে, ডিউক মহাশয়কে ইতিপূর্ব্বে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া গিয়াছে, এক্ষণে আর অতিরিক্ত পুরস্কার দেওয়া যাইতে পারে না। বিশেষ অপরিমিত লোভ ভাল নহে। ডিউক বলিল, মেও!
তখন চক্ষু চাহিয়া ভাল করিয়া দেখিলাম যে, ওয়েলিংটন নহে। একটি ক্ষুদ্র মার্জ্জার; প্রসন্ন আমার জন্য যে দুগ্ধ রাখিয়া গিয়াছিল, তাহা নিঃশেষ করিয়া উদরসাৎ করিয়াছে, আমি তখন ওয়াটার্লুর মাঠে ব্যুহ-রচনায় ব্যস্ত, অত দেখি নাই। এক্ষণে মার্জ্জারসুন্দরী, নির্জ্জাল দুগ্ধপানে পরিতৃপ্ত হইয়া আপন মনের সুখ এ জগতে প্রকটিত করিবার অভিপ্রায়ে, অতি মধুর স্বরে বলিতেছেন, মেও! বলিতে পারি না, বুঝি, তাহার ভিতর একটু ব্যঙ্গ ছিল; বুঝি, মার্জ্জার মনে মনে হাসিয়া আমার পানে চাহিয়া ভাবিতেছিল, “কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।” বুঝি সে মেও! শব্দে একটু মন বুঝিবার অভিপ্রায় ছিল। বুঝি বিড়ালের মনের ভাব, তোমার দুধ ত খাইয়া বসিয়া আছি-এখন বল কি?
বলি কি? আমি ত ঠিক করিতে পারিলাম না। দুধ আমার বাপেরও নয়। দুধ মঙ্গলার, দুহিয়াছে প্রসন্ন। অতএব সে দুগ্ধে আমারও যে অধিকার, বিড়ালেরও তাই; সুতরাং রাগ করিতে পারি না। তবে চিরাগত একটি প্রথা আছে যে, বিড়ালে দুধ খাইয়া গেলে, তাহাকে তাড়াইয়া মারিতে যাইতে হয়। আমি যে সেই চিরাগত প্রথার অবমাননা করিয়া মনুষ্যকুলে কুলাঙ্গার স্বরূপ পরিচিত হইব, ইহাও বাঞ্ছনীয় নহে। কি জানি, এই মার্জ্জারী যদি স্বজাতি-মণ্ডলে কমলাকান্তকে কাপুরুষ বলিয়া উপহাস করে? অতএব পুরুষের ন্যায় আচরণ করাই বিধেয়। ইহা স্থির করিয়া, সকাতরচিত্তে, হস্ত হইতে হুঁকা নামাইয়া, অনেক অনুসন্ধানে এক ভগ্ন যষ্টি আবিষ্কৃত করিয়া সগর্ব্বে মার্জ্জারী প্রতি ধাবমান হইলাম।
মার্জ্জারী কমলাকান্তকে চিনিত; সে যষ্টি দেখিয়া বিশেষ ভীত হওয়ার কোন লক্ষণ প্রকাশ করিল না। কেবল আমার মুখপানে চাহিয়া হাই তুলিয়া, একটু সরিয়া বসিল। বলিল, মেও! প্রশ্ন বুঝিতে পারিয়া যষ্টি ত্যাগ করিয়া পুনরপি শয্যায় আসিয়া হুঁকা লইলাম। তখন দিব্যকর্ণ প্রাপ্ত হইয়া, মার্জ্জারের বক্তব্যসকল বুঝিতে পারিলাম।
বুঝিলাম যে, বিড়াল বলিতেছে, “মারপিট কেন? স্থির হইয়া হুঁকা হাতে করিয়া, একটু বিচার করিয়া দেখ দেখি? এ সংসারে ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস, সকলই তোমরা খাইবে, আমরা কিছু পাইব না কেন? তোমরা মনুষ্য, আমরা বিড়াল, প্রভেদ কি? তোমাদের ক্ষুৎপিপাসা আছে-আমাদের কি নাই? তোমরা খাও, আমাদের আপত্তি নাই; কিন্তু আমরা খাইলেই তোমরা কোন্ শাস্ত্রানুসারে ঠেঙ্গা লাঠি লইয়া মারিতে আইস, তাহা আমি বহু অনুসন্ধানে পাইলাম না। তোমরা আমার কাছে কিছু উপদেশ গ্রহণ কর। বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না। তোমাদের বিদ্যালয়সকল দেখিয়া আমার বোধ হয়, তোমরা এত দিনে এ কথাটি বুঝিতে পারিয়াছ।
“দেখ, শয্যাশায়ী মনুষ্য! ধর্ম্ম কি? পরোপকারই পরম ধর্ম্ম। এই দুগ্ধটুকু পান করিয়া আমার পরম উপকার হইয়াছে। তোমার আহরিত দুগ্ধে এই পরোপকার সিদ্ধ হইল-অতএব তুমি সেই পরম ধর্ম্মের ফলভাগী-আমি চুরিই করি, আর যাই করি, আমি তোমার ধর্ম্মসঞ্চয়ের মূলীভূত কারণ। অতএব আমাকে প্রহার না করিয়া, আমার প্রশংসা কর। আমি তোমার ধর্ম্মের সহায়।
“দেখ, আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পাইলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া উঠেন, তাঁহারা অনেক চোর অপেক্ষাও অধার্ম্মিক। তাঁহাদের চুরি করিবার প্রয়োজন নাই বলিয়াই চুরি করেন না। কিন্তু তাঁহাদের প্রয়োজনাতীত ধন থাকিতেও চোরের প্রতি যে মুখ তুলিয়া চাহেন না, ইহাতেই চোরে চুরি করে। অধর্ম্ম চোরের নহে-চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম্ম কৃপণ ধনীর। চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী। চোরের দণ্ড হয়; চুরির মূল যে কৃপণ, তাহার দণ্ড হয় না কেন?
“দেখ, আমি প্রাচীরে প্রাচীরে মেও মেও করিয়া বেড়াই, কেহ আমাকে মাছের কাঁটাখানাও ফেলিয়া দেয় না। মাছের কাঁটা, পাতের ভাত, নর্দমায় ফেলিয়া দেয়, জলে ফেলিয়া দেয়, তথাপি আমাকে ডাকিয়া দেয় না। তোমাদের পেট ভরা, আমার পেটের ক্ষুধা কি প্রকারে জানিবে! হায়! দরিদ্রের জন্য ব্যথিত হইলে তোমাদের কি কিছু অগৌরব আছে? আমার মত দরিদ্রের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া, লজ্জার কথা সন্দেহ নাই। যে কখন অন্ধকে মুষ্টি-ভিক্ষা দেয় না, সেও একটা বড় রাজা, ফাঁপরে পড়িলে রাত্রে ঘুমায় না-সকলেই পরের ব্যথায় ব্যথিত হইতে রাজি। তবে ছোটলোকের দুঃখে কাতর! ছি! কে হইবে?
“দেখ, যদি অমুক শিরোমণি, কি অমুক ন্যায়ালঙ্কার আসিয়া তোমার দুধটুকু খাইয়া যাইতেন, তবে তুমি কি তাঁহাকে ঠেঙ্গা লইয়া মারিতে আসিতে? বরং যোড়হাত করিয়া বলিতে, আর একটু কি আনিয়া দিব? তবে আমার বেলা লাঠি কেন? তুমি বলিবে, তাঁহারা অতি পণ্ডিত, বড় মান্য লোক। পণ্ডিত বা মান্য বলিয়া কি আমার অপেক্ষা তাঁহাদের ক্ষুধা বেশী? তা ত নয়-তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ-দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না। যে খাইতে বলিলে বিরক্ত হয়, তাহার জন্য ভোজের আয়োজন কর-আর যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহ্বানেই তোমার অন্ন খাইয়া ফেলে, চোর বলিয়া তাহার দণ্ড কর-ছি! ছি!
“দেখ, আমাদিগের দশা দেখ, দেখ প্রাচীরে প্রাচীরে, প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে, প্রাসাদে, প্রাসাদে, মেও মেও করিয়া আমরা চারি দিক্ দৃষ্টি করিতেছি-কেহ আমাদিগকে মাছের কাঁটাখানা ফেলিয়া দেয় না। যদি কেহ তোমাদের সোহাগের বিড়াল হইতে পারিল-গৃহমার্জ্জার হইয়া বৃদ্ধের নিকট যুবতী ভার্য্যার সহোদর, বা মূর্খ ধনীর কাছে সতরঞ্চ খেলওয়ারের স্থানীয় হইয়া থাকিতে পারিল-তবেই তাহার পুষ্টি। তাহার লেজ ফুলে, গায়ে লোম হয়, এবং তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়া, অনেক মার্জ্জার কবি হইয়া পড়ে।
“আর, আমাদিগের দশা দেখ-আহারাভাবে উদর কৃশ, অস্থি পরিদৃশ্যমান, লাঙ্গুল বিনত, দাঁত বাহির হইয়াছে-জিহ্বা ঝুলিয়া পড়িয়াছে-অবিরত আহারাভাবে ডাকিতেছি, ‘মেও! মেও! খাইতে পাই না!’- আমাদের কালো চামড়া দেখিয়া ঘৃণা করিও না! এ পৃথিবীর মৎস্য মাংসে আমাদের কিছু অধিকার আছে। খাইতে দাও-নহিলে চুরি করিব। আমাদের কৃষ্ণ চর্ম্ম, শুষ্ক মুখ, ক্ষীণ সকরুণ মেও মেও শুনিয়া তোমাদিগের কি দুঃখ হয় না? চোরের দণ্ড আছে, নির্দ্দয়তার কি দণ্ড নাই? দরিদ্রের আহার সংগ্রহের দণ্ড আছে, ধনীর কার্পণ্যের দণ্ড নাই কেন? তুমি কমলাকান্ত, দূরদর্শী, কেন না আফিংখোর, তুমিও কি দেখিতে পাও না যে, ধনীর দোষেই দরিদ্র চোর হয়? পাঁচ শত দরিদ্রকে বঞ্চিত করিয়া একজনে পাঁচ শত লোকের আহার্য্য সংগ্রহ করিবে কেন? যদি করিল, তবে সে তাহার খাইয়া যাহা বাহিয়া পড়ে, তাহা দরিদ্রকে দিবে না কেন? যদি না দেয়, তবে দরিদ্র অবশ্য তাহার নিকট হইতে চুরি করিবে’; কেন না, অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আইসে নাই।”
আমি আর সহ্য করিতে না পারিয়া বলিলাম, “থাম! থাম মার্জ্জারপণ্ডিত! তোমার কথাগুলি ভারি সোশিয়ালিষ্টিক্! সমাজবিশৃঙ্খলার মূল! যদি যাহার যত ক্ষমতা, সে তত ধনসঞ্চয় করিতে না পায়, অথবা সঞ্চয় করিয়া চোরের জ্বালায় নির্ব্বিঘ্নে ভোগ করিতে না পায়, তবে কেহ আর ধনসঞ্চয়ে যত্ন করিবে না। তাহাতে সমাজের ধনবৃদ্ধি হইবে না।”
মার্জ্জার বলিল, “না হইলে ত আমার কি? সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধনবৃদ্ধি। ধনীর ধনবৃদ্ধি না হইলে দরিদ্রের কি ক্ষতি?”
আমি বুঝাইয়া বলিলাম যে, “সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই।” বিড়াল রাগ করিয়া বলিল যে, “আমি যদি খাইতে না পাইলাম, তবে সমাজের উন্নতি লইয়া কি করিব?”
বিড়ালকে বুঝান দায় হইল। যে বিচারক বা নৈয়ায়িক, কস্মিন্, কালে কেহ তাহাকে কিছু বুঝাইতে পারে না। এ মার্জ্জার সুবিচারক, এবং সুতার্কিকও বটে, সুতরাং না বুঝিবার পক্ষে ইহার অধিকার আছে। অতএব ইহার উপর রাগ না করিয়া বলিলাম, “সমাজের উন্নতিতে দরিদ্রের প্রয়োজন না থাকিলে না থাকিতে পারে, কিন্তু ধনীদিগের বিশেষ প্রয়োজন, অতএব চোরের দণ্ডবিধান কর্ত্তব্য।”
মার্জ্জারী মহাশয়া বলিলেন, “চোরকে ফাঁসি দাও, তাহাতেও আমার আপত্তি নাই, কিন্তু তাহার সঙ্গে আর একটি নিয়ম কর। যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন, তিনি আগে তিন দিবস উপবাস করিবেন। তাহাতে যদি তাঁহার চুরি করিয়া খাইতে ইচ্ছা না করে, তবে তিনি স্বচ্ছন্দে চোরকে ফাঁসি দিবেন। তুমি আমাকে মারিতে লাঠি তুলিয়াছিলে, তুমি অদ্য হইতে তিন দিবস উপবাস করিয়া দেখ। তুমি যদি ইতিমধ্যে নসীরাম বাবুর ভাণ্ডারঘরে ধরা না পড়, তবে আমাকে ঠেঙ্গাইয়া মারিও, আমি আপত্তি করবি না।”
বিজ্ঞ লোকের মত এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে। আমি সেই প্রথানুসারে মার্জ্জারকে বলিলাম যে, “এ সকল অতি নীতিবিরুদ্ধ কথা, ইহার আন্দোলনেও পাপ আছে। তুমি এ সকল দুশ্চিন্তা পরিত্যাগ করিয়া ধর্ম্মাচরণে মন দাও। তুমি যদি চাহ, তবে পাঠার্থে তোমাকে আমি নিউমান ও পার্করের গ্রন্থ দিতে পারি। আর কমলাকান্তের দপ্তর পড়িলেও কিছু উপকার হইতে পারে-আর কিছু হউক বা না হউক, আফিঙ্গের অসীম মহিমা বুঝিতে পারিবে। এক্ষণে স্বস্থানে গমন কর, প্রসন্ন কাল কিছু ছানা দিবে বলিয়াছে, জলযোগের সময় আসিও, উভয় ভাগ করিয়া খাইব। অদ্য আর কাহারও হাঁড়ি খাইও না; বরং ক্ষুধায় যদি নিতান্ত অধীরা হও, তবে পুনর্ব্বার আসিও, এক সরিষাভোর আফিঙ্গ দিব।”
মার্জ্জার বলিল, “আফিঙ্গের বিশেষ প্রয়োজন নাই, তবে হাঁড়ি খাওয়ার কথা, ক্ষুধানুসারে বিবেচনা করা যাইবে।”
মার্জ্জার বিদায় হইল। একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড় আনন্দ হইল!
আপনার বিড়ালের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের তালিকা
বিড়াল মূলত মাংসাশী প্রাণী। তাই বিড়ালের খাবারে প্রাণী প্রোটিন অর্থাৎ গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাছ ইত্যাদি থাকা জরুরি এবং অবশ্যই খাবারটি সেদ্ধ হতে হবে কারন কাঁচা মাছ, মাংসে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা বিড়ালের অনেক রোগের কারন হতে পারে। আজকাল প্রক্রিয়াজাত করা মাছ ও মাংস প্যাকেটে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায় যা Wet Food এবং Canned Food নামে পরিচিত।এই খাবারে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমনঃ ভাত ১০ভাগের বেশি মেশানো উচিৎ নয়।
Dry Food অর্থাৎ শুকনো খাবার যা কিনতে পাওয়া যায় তাতে মূলত প্রচুর পরিমানে প্রাণী প্রোটিন ও অল্প পরিমানে উদ্ভিদ প্রোটিন থাকে। Dry food বিড়ালের জন্য ক্ষতিকারক নয় যদি খাবারটি উচ্চ মানের হয় এবং সাথে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ানো যায়। এই খাবারে শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট মেশানো থাকে।একটি বিড়ালের খাবার এবং পরিমান নির্ভর করে তার বয়স এবং ওজনের উপর। এছাড়া Indoor অথবা Outdoor বিড়াল কিনা, Spayed অথবা Neutered কিনা , কি পরিমান খেতে পারে এসব বিষয়ের ওপরও খাবারের পরিমান নির্ভর করে। New York এর Animal Medical Center অনুযায়ী, একটি সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ৩-৪ কেজি ওজনের বিড়ালের প্রতিদিন ২৪০ ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ৬০-৬৫ ক্যালোরি প্রয়োজন।
Dry Food এ প্রতি এক কাপ খাবারে ৩০০ ক্যালোরি (ব্র্যান্ড অনুযায়ী ক্যালোরি কম বেশি হতে পারে, কতটুকু ক্যালোরি থাকে তা প্যাকেটের গায়ে সঠিক ভাবে লেখা থাকে) থাকে এবং ৮৫ গ্রামের Canned Food এ ২৫০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। Dry Food হলে ২ কাপ এবং Canned Food হলে ৮৫ গ্রামের প্যাকেট দিতে হবে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমান কম বেশি করা যাবে.বিড়ালকে প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ানো ভালো। একটি প্রাপ্তবয়স্ক (১বছরের বড় হলে) বিড়ালকে দিনে দুই বেলা খাবার দেয়া উচিৎ। বেশিরভাগ মানুষ সকালে এবং রাতে বিড়ালকে খেতে দেয় অর্থাৎ ১০-১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর। তবে যদি কম করে খায় তাহলে ৩ বার দেওয়া যেতে পারে। Dry Food পরিমানে বেশি হলে বিড়াল পরে খেতে পারে কিন্তু Wet Food এবং Canned Food হলে পরিমান অনুযায়ী দিতে হবে, অবশিষ্ট খাবার সরিয়ে ফেলতে হবে কারন দীর্ঘক্ষণ রেখে দেওয়া খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তা খেলে ডাইরিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিঃদ্রঃ অতিরিক্ত ওজনের বিড়ালকে Dry Food না খাওয়ানো ভাল কারন এতে ওজন আরও বেড়ে যেতে পারে। Dry Food এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি খাওয়ানো জরুরী।
বিড়াল ( ফেলিস ক্যাটাস) একটি গার্হস্থ্য প্রজাতি বা ছোট মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী।এটি ফেলিডা পরিবারের একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি এবং প্রায়শই এটি পরিবারের বন্য সদস্যদের থেকে পৃথক করার জন্য গার্হস্থ্য বিড়াল হিসেবে পরিচিত।একটি বিড়াল, হয় ঘরের বিড়াল, খামারের বিড়াল বা ফেরাল বিড়াল হতে পারে; বনবিড়াল অবাধে মানুষের যোগাযোগ পরিসীমা এড়িয়ে চলে। গার্হস্থ্য বিড়ালদের সাহচর্য এবং তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী শিকারের দক্ষতার জন্য মানুষ এদেরকে মূল্যবান বলে মনে করে। বিভিন্ন বিড়াল নিবন্ধনকারীর মাধ্যমে এযাবৎ বিড়ালের স্বীকৃত ষাটের অধিক স্বীকৃত বিড়ালের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায়।
বিড়াল শারীরবিদ্যায় অন্যান্য ফেলিড প্রজাতির মতোই: এদের শক্তিশালী নমনীয় শরীর, দ্রুত প্রতিফলন, তীক্ষ্ণ দাঁত এবং প্রত্যাহারযোগ্য নখর রয়েছে যা ছোট শিকারকে হত্যা করার জন্য অভিযোজিত। রাত্রীকালে এদের দৃষ্টি এবং ঘ্রাণশক্তি বোধ ভালভাবে বিকশিত হয়। বিড়ালের যোগাযোগের মধ্যে বিভিন্ন কণ্ঠস্বর যেমন মেয়াও, গরগর আওয়াজ করা, ট্রিলিং, হিসিং, গর্জন এবং গ্রন্টিং এর পাশাপাশি বিড়াল-নির্দিষ্ট শারীরিক ভাষা রয়েছে। যদিও বিড়াল একটি সামাজিক প্রজাতি, এরা নির্জন শিকারী। শিকারী হিসাবে, এটি ক্রেপাসকুলার, অর্থাৎ ভোরে এবং সন্ধ্যায় সর্বাধিক সক্রিয়। এটি মানুষের কানের জন্য খুব ক্ষীণ বা খুব উচ্চ কম্পাঙ্ক শুনতে পারে, যেমন ইঁদুর এবং অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সৃষ্ট শব্দ। এরা ফেরোমন নিঃসৃত ও উপলব্ধি করেতে পারে।
স্ত্রী গৃহপালিত বিড়ালদের বসন্ত থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত বিড়ালছানা থাকতে পারে, লিটারের আকার প্রায়শই দুই থেকে পাঁচটি বিড়ালছানা হতে পারে।গৃহপালিত বিড়ালদের প্রজনন করা হয় এবং বিভিন্ন দেশে এই ঘটনায় রেজিস্টার্ড বংশোদ্ভূত বিড়াল হিসাবে দেখানো হয়, বিড়াল প্রেমী অভিনব যা একটি শখ হিসাবে পরিচিত। বিড়ালদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ স্পে এবং নিউটারিং দ্বারা কৃত্রীম্ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তবে তাদের বিস্তার এবং পোষা প্রাণী পরিত্যাগের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রচুর সংখ্যক বন্য বিড়াল দেখা দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ পাখি, স্তন্যপায়ী এবং সরীসৃপ প্রজাতির বিলুপ্তিতে অবদান রাখছে।
দীর্ঘকাল ধরে এটি মনে করা হয়েছিল যে প্রাচীন মিশরে বিড়াল পালন শুরু হয়েছিল, যেখানে খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সাল থেকে বিড়ালদের পূজা করা হত, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব এবং জেনেটিক্সের সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলি দেখিয়েছে যে ৭৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পশ্চিম এশিয়ায় বিড়াল গৃহপালিত হয়েছিল।
২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে আনুমানিক ২২০ মিলিয়ন মালিকানাধীন এবং ৪৮০ মিলিয়ন বিপথগামী বিড়াল ছিল। ২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় পোষা প্রাণীর মধ্যে গৃহপালিত বিড়াল ছিল, যেখানে ৯৫.৬ মিলিয়ন বিড়ালের মালিকানা ছিল, এবং প্রায় ৪২ মিলিয়ন পরিবারে অন্তত একটি করে পোষা বিড়াল ছিল। যুক্তরাজ্যে, ২৬% প্রাপ্তবয়স্কদের একটি করে বিড়াল রয়েছে, যার আনুমানিক জনসংখ্যা ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী ১০.৯ মিলিয়ন পোষা বিড়াল রয়েছে।
আদরের বিড়াল ছানা
বিড়াল ছানার নরম গায়ে
বুলিয়ে দিলাম হাত।
আদর পেয়ে নুয়ে পড়ে
মাথা করে কাত
গলায় তার হাত দিলে
মুখ করে হা
পা গুলো উপর তুলে
করে ধিনতা
সাদা চোখে নীল আভায়
দেখি তার গোঁফ
আলত করে টানতে গেলে
দিয়ে ওঠে ঝোঁক
পা ধরে তার টানি যখন
বস্তার মত যায়।
এনা জোরে হোঁচট দিলে
ছুটে সে পালায়
খানিক দূরে গিয়ে সে
করে মিউ মিউ
কাছে ডাকলে ফিরে আসে
জুড়ায় তখন জিউ
বিড়াল
সারাদিন একটা বিড়ালের সঙ্গে ঘুরে-ফিরে কেবলই আমার দেখা হয়
গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতরে, বাদামী পাতার ভিড়ে;
কোথাও কয়েক টুকরো মাছের কাঁটার সফলতার পর
তারপর শাদা মাটির কঙ্কালের ভিতর
নিজের হৃদয়কে নিয়ে মৌমাছির মতে নিমগ্ন হ’য়ে আছে দেখি;
কিন্তু তবুও তারপর কৃষ্ণচূড়ার গায়ে নখ আঁচড়াচ্ছে,