content
stringlengths
0
129k
দুই. আশুরার দিনে কেবলমাত্র একটি রোজা পালনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তার সাথে অন্য একটি রোজার মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি করা
যেমনিকরে এককভাবে জুমুআরা দিন রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে
এটি আল্লামা খাত্তাবি ও অন্যান্যদের মত
তিন. দশ তারিখের রোজার ক্ষেত্রে চন্দ্র গণনায় ত্রুটি হয়ে ভুলে পতিত হবার আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে
হতে পারে গণনায় নয় তারিখ কিন্তু বাস্তবে তা দশ তারিখ
এর মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী তাৎপর্য হচ্ছে, আহলে কিতাবের বিরোধিতা করা
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদিসে আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন
যেমন আশুরা প্রসঙ্গে নবীজী বলেছেন,
{ لَئِنْ عِشْتُ إلَى قَابِلٍ لاَصُومَنَّ التَّاسِعَ }
আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব
{ আল-ফতোয়াল কোবরা, খন্ড:৬}
আল্লামা ইবন হাজার রহ.
{ لئن بقيت إلى قابل لأصومن التاسع }
আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখ রোজা রাখব
হাদিসের তা'লিকে বলেছেন,
নবীজীর নয় তারিখে রোজা রাখার সংকল্প ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে, তিনি কেবল নয় তারিখে রোজার রাখার সংকল্প করেছেন বরং তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দশ তারিখের রোজার সাথে নয় তারিখের রোজাকে সংযুক্ত করা
সাবধানতা বশত: কিংবা ইহুদি খ্রিষ্টানদের বিরোধিতার জন্য
এটিই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত
সহিহ মুসলিমের কতিপয় বর্ণনা এদিকেই ইংগিত করে
{ফাতহুল বারি:৪/২৪৫}
শুধু দশ তারিখ রোজা রাখার বিধান
শায়খুল ইসলাম বলেন, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা আর আশুরার একটিমাত্র রোজা মাকরূহ হবে না
{আল-ফাতাওয়াল কোবরা: ৫ম খন্ড}
ইবনু হাজার হায়সামী রচিত তুহফাতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে, আশুরা উপলক্ষে দশ তারিখ কেবল একটি রোজা রাখাতে কোনো দোষ নেই
{তয় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু'}
নির্ধারিত দিনটি শনি কিংবা জুমুআ বার হলেও আশুরার রোজা রাখা হবে
কেবলমাত্র জুমুআর দিনকে নফল রোজার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ, অনুরূপভাবে ফরজ রোজা ব্যতীত শনিবার রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে
তবে নিম্নের যে কোনো পদ্ধতির অনুকূলে রাখা হলে আর মাকরূহ হবে না
যেমন ঐ দুই দিনের সাথে মিলিয়ে আরো একদিন করে রোজা রাখা
দিনটি অনুমোদিত অভ্যাসের অনুকূলে পড়ে যাওয়া যেমন একদিন রোজা রাখা একদিন ইফতার করা
মান্নত কিংবা কাজার রোজা হওয়া
অথবা শরিয়ত রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছে এমন তারিখে ঐ দিনদ্বয় পড়ে যাওয়া যেমন আরাফা কিংবা আশুরার দিন...
{তুহফাতুল মুহতাজ, ৩য় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু', মুশকিলুল আছার, ২য় খন্ড, বাবু সওমি য়াওমিস সাবতি}
আল্লামা বাহুতি রহ. বলেন, শুধুমাত্র শনিবারকে রোজা রাখার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ
কারণ এ প্রসঙ্গে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
{ لا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إلّا فِيمَا اُفْتُرِضَ عَلَيْكُمْ }
ফরজ রোজা ব্যতীত তোমরা কেবল শনিবার রোজা রাখবে না
{বর্ণনায় আহমাদ ও হাকেম}
তাছাড়া শনিবারকে ইহুদিরা খুব সম্মান করে, অনেক বড় করে দেখে, তাই সেদিন রোজা রাখলে তাদের তাশাব্বুহ তথা সাদৃশ্যাবলম্বন হয়ে যাবে...
তবে শুক্র বা শনিবার যদি কোনো ব্যক্তির অনুস্মৃত অভ্যাসের আওতায় পড়ে যায় তাহলে আর মাকরূহ হবে না
যেমন এক ব্যক্তি নিয়মিত আরাফা ও আশুরার রোজা পালন করে আর সেই আরাফা কিংবা আশুরার দিন শনি কিংবা শুক্রবার দিন সংঘটিত হল তাহলে সে ব্যক্তির জন্য উক্ত শুক্র কিংবা শনিবার রোজা রাখা মাকরূহ হবে না
কেননা এসব ক্ষেত্রে অভ্যাসকে বিবেচনায় রাখা হয়...
{কাশ্শাফুল কান্না', ২য় খন্ড, বাবু সওমিত তাতাব্বু'}
মাসের শুরু অস্পষ্ট হয়ে গেলে করণীয় কি?
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, মাসের শুরু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে কিংবা সেটি অস্পষ্ট হয়ে গেলে সে মাসে আশুরার রোজা তিনদিন রাখা হবে
আর এমনটি করা হবে কেবল নয় ও দশ তারিখের রোজাকে নিশ্চিত করার জন্য
{আল-মুগনি লি ইবনে কোদামাহ, ৩য় খন্ড, সিয়ামু আশুরা}
সুতরাং যে ব্যক্তি মুহররম মাসের আগমণ সম্বন্ধে বুঝতে পারেনি এবং সে দশ তারিখের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে ইচ্ছুক তাহলে সে নিয়মমত জিল হজ্জকে ত্রিশ দিন গণনা করবে
অত:পর নয় ও দশ তারিখ রোজা রাখবে
আর যে ব্যক্তি নয় তারিখের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইবে সে আট, নয় ও দশ তারিখ মোট তিন দিন রোজা রাখবে
( এখন যদি জিল হজ্জ মাস নাকেস অর্থাৎ ত্রিশ দিন থেকে কম হয় তাহলে সে নিশ্চিত তাসুআ ও আশুরার রোজা রাখতে সক্ষম হবে) তবে এখানে মনে রাখা দরকার, আশুরার রোজা কিন্তু মুস্তাহাব ফরজ নয়
তাই লোকদেরকে রমজান ও শাওয়াল মাসের মত মুহররম মাসের চাঁদ তালাশ করার নির্দেশ দেয়া হবে না
আশুরার রোজা কোন ধরনের পাপের জন্য কাফ্ফারা?
ইমাম নববি রহ. বলেন, আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহের কাফ্ফারা
অর্থাৎ এ রোজার কারণে মহান আল্লাহ কবিরা নয় বরং (পূর্ববর্তী একবছরের) যাবতীয় সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন
এর পর তিনি বলেন, আরাফার রোজা দুই বছরের (গুনাহের জন্য) কাফ্ফারা, আশুরার রোজা এক বছরের জন্য কাফ্ফারা, যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে... হাদিসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব আমল তার গুনাহের কাফ্ফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার সগিরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন
আর যদি সগিরা-কবিরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান করা হবে, তার দরজাত বুলন্দ করা হবে
আর আমলনামায় যদি শুধু কবিরা গুনাহ থাকে সগিরা নয় তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কবিরা গুনাহসমূহ হালকা করা হবে
{আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব, ষষ্ঠ খন্ড, সওমু য়াওমি আরাফা}
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, পবিত্রতা অর্জন, সালাত, রমজান, আরাফা ও আশুরার রোজা ইত্যাদি কেবল সগিরা গুনাহসমূহের কাফ্ফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল সগিরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়
{আল-ফাতাওয়াল কোবরা, ৫ম খন্ড}
রোজার সাওয়াব দেখে প্রতারিত হওয়া চলবে না
আরাফা কিংবা আশুরার রোজার উপর নির্ভর করে অনেক বিভ্রান্ত লোক ধোঁকায় পড়ে যায়
আত্ম প্রতারিত হয়
এমনকি অনেককে বলতে শোনা যায়, আশুরার রোজার কারণে পূর্ণ এক বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে গিয়েছে
বাকি থাকল আরাফার রোজা, তো সেটি সাওয়াবের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, এ আত্ম প্রবঞ্চিত-বিভ্রান্ত লোকটি বুঝল না যে, রমজানের রোজা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আরাফা ও আশুরার রোজার চেয়ে বহু গুণে বড় ও অধিক সাওয়াব যোগ্য ইবাদত
আর এগুলো মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফ্ফারা তখনই হয় যদি কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়
সুতরাং এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান এবং এক জুমুআ থেকে পরবর্তী জুমুআ, মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের জন্য কাফ্ফারা তখনই হবে যখন কবিরা গুনাহ ত্যাগ করা হবে
উভয়বিধ কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেই কেবল সগিরা গুনাহ মাফ হবে
আবার কিছু বিভ্রান্ত লোক আছে, যারা ধারণা করে, তাদের নেক আমল বদ আমল থেকে বেশি
কারণ তারা গুনাহের ভিত্তিতে নিজেদের হিসাব নেয় না
এবং পাপাচার গণনায় আনে না
যদি কখনো কোনো নেক আমল সম্পাদন করে তখন কেবল তাই সংরক্ষণ করে
এরা সেসব লোকদের ন্যায় যারা মুখে মুখে ইস্তেগফার করে অথবা দিনে একশত বার তাসবিহ পাঠ করে অত:পর মুসলমানদের গিবত ও সম্মান বিনষ্টের কাজে লেগে যায়
সারা দিন আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কাজে অতিবাহিত করে
এসব লোক তাসবিহ তাহলিলের ফজিলত সম্বন্ধে খুব ফিকির করে
কিন্তু তার মাধ্যমে সংঘটিত অন্যায় ও পাপকর্মের প্রতি মোটেই দৃষ্টিপাত করে না
এটিতো কেবলই ধোঁকা ও আত্ম প্রতারণা
{আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, খন্ড ১৩, গুরুর}
রমজানের কাজা অনাদায়ি থাকা অবস্থায় আশুরার রোজার হুকুম কি?
রমজানের কাজা আদায় না করে নফল রোজা রাখা যাবে কিনা এ ব্যাপারে ওলামাদের মাঝে এখতেলাফ আছে
হানাফিদের নিকট জায়েয
কেননা রমজানের কাজা সম্পন্ন করা তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াজিব নয়
বিলম্বে সম্পন্ন করার অবকাশ আছে
শাফেয়ি ও মালেকিদের নিকটও জায়েয তবে মাকরূহ হবে
কারণ এতে ওয়াজিব আদায় বিলম্বিত হয়
আল্লামা দুসূকি রহ. বলেন, মান্নত, কাজা ও কাফ্ফারা জাতীয় ওয়াজিব রোজা অনাদায়ি রেখে নফল রোজা পালন করা মাকরূহ
সে নফল রোজাটি গাইরে মুআক্কাদাহ হোক কিংবা মুআক্কাদাহ যেমন আশুরা, জিল হজ্জের নয় তারিখের রোজা ইত্যাদি
হাম্বলি ইমামগণের মতে রমজানের কাজা আদায় করার পূর্বে নফল রোজা পালন করা হারাম
এমতাবস্থায় কেউ নফল রোজা রাখলে সহিহ হবে না এমনকি পরবর্তীতে কাজা আদায় করার মত পর্যাপ্ত সময় থাকলেও
বরং আগে ফরজ আদায় করতে হবে
{ আল-মওসুআ আল-ফিকহিয়্যাহ, খন্ড ২৮, সওমুত তাতাব্বু'}
সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, রমজানের পরপরই বিলম্ব না করে কাজা সম্পন্ন করে নেওয়া
যাতে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই আরাফা ও আশুরার রোজা পালনের সুযোগ পাওয়া যায়
কেউ যদি আরাফা ও আশুরার রোজায় কাজা আদায়ের নিয়ত করে -এবং এ নিয়ত রাত্র হতেই করে- তাহলে সেটি তার জন্য যথেষ্ট হবে
অর্থাৎ তার কাজা আদায় হয়ে যাবে
আল্লাহর করুণা অনেক বিশাল
আশুরায় উদযাপিত কিছু বেদআত