content
stringlengths
0
129k
নাক গুঁজে প্যান্টিনের ঘ্রাণ নিক আমার মোহময় চুলে
ও আমার ওম হোক
ওর ফিরে আসাই তো আমি চেয়েছি এতটা বছর
ওকে সানন্দে এক্সেপ্ট করা উচিত
আমি খুব শান্তস্বরে বললাম,
কেন এসেছ বিভাস?
আসব কেন সুজাতা? আমি ছিলাম
কোথায় ছিলে? আমি দেখলাম না কেন?
কেন তোমার মধ্যে
একটা দিন কল্পনা কর তো, যেদিন আমাকে তুমি ভাব না
আর ভেবে কি হবে?
ফয়সাল কোথায়?
গাজীপুর, অফিসে গিয়েছে
সুজাতা তুমিও আমার আদর্শ ছেড়ে দিলে?
কি হবে? এদেশে কমিউনিস্টরা কিছু কিছু হত্যাযজ্ঞ ছাড়া কি করতে পেরেছে?
চেষ্টা করে দেখেছ?
তুমিও তো চেষ্টা করেছিলে, কি লাভ হলো? সমাজকে একচুল পরিমান বদলাতে পেরেছ? বরং তোমাকেও মরতে হয়েছে
আমাকে কে মেরেছে তুমি জান?
তবুও তার সাথেই ঘর করছ?
হ্যাঁ করছি
কারণ নইলে তোমার মতই আমাকে মরতে হবে
বাহ্! বলিহারি তোমাকে সুজাতা
ঘর প্রকম্পিত করে ও হাসছে
এতক্ষণে আমার মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় শিরশিরিয়ে উঠল
দুজনের সংসার
ফয়সালের আসতে রাত হবে
কাজের মেয়েটা ছুটিতে
ফয়সাল চেয়েছিল বাসায় অনেক পিওন আর্দালি থাকুক
আমিই চাইনি
ভীড় ভাল লাগে না
ফয়সালকে ফোন করলে হয়ত চলে আসবে
কিন্তু ওকে ফোন করতে ইচ্ছে করছে না
খুব প্রয়োজন ছাড়া ফোন করিও না
ফয়সালই দিনে কয়েকবার খোঁজ নেয়
সেটা ভালবাসায় নয়, আমার অবস্থান জানার জন্য
আমার সম্পর্কে নোংরা চিন্তা ওর মগজে কিলবিল করে
আর সেটা মাঝে মধ্যেই সামনে এসে বমির মত উগরে দেয়
আমার নির্লিপ্ততা ওর মেজাজকে শতভাগ উস্কে দেবার বড় অস্ত্র
আমি সেই অস্ত্র প্রয়োগ করি
ও নিস্ফল আক্রোশে বোতলের ছিপি খুলে বসে
আমিও ঠোঁটে পরিতৃপ্তির কর্পোরেট হাসি ঝুলিয়ে ঘুমুতে চলে যাই
কিন্তু শুয়ে থাকি, ঘুমাই না
বিভাস আমাকে চৌদ্দটি বছর ঠিকমত ঘুমুতে দেয়নি
ফয়সাল বেশ পরে আমাদের দলে যোগ দিয়েছিল
একসাথে পড়ার সুবাদে বিভাস আমি দুজনই ওর বন্ধু
বিভাস খুব গোপনে সদস্য সংগ্রহ করত
তখন তত্বাবধায়ক সরকারের আমল
চারদিকে ধরপাকড় আর ভাঙ্গাভাঙ্গি চলছে
অনেক পীড়াপীড়িতে বিভাস ফয়সালকে একদিন সূত্রাপুরে মিটিং এ নিয়েছিল
সেখানেই ফয়সাল সদস্য হিসেবে যোগ দেয়
কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলাম আসলে ওর নিজস্ব কোন আইডোলজি ছিল না
ওই দলে আসার একমাত্র কারন আমি
বিভাসকে টেক্কা দিয়ে আমাকে জিতে নিতে চেয়েছিল
মাত্র কয়েকদিনেই আমার আর বিভাসের মধ্যে ও আড় কাঠির মত বেরিয়ার হয়ে দেখা দিল
হয়ত আমরা দুজনে রিক্সায় বুড়িগঙ্গা ব্রিজ পার হবার প্ল্যান করেছি ও আচমকা হাজির হয়ে প্ল্যান ভেস্তে দিতে লাগলো
বাপের গাড়ী নিয়ে হুটহাট লিফট দিতে চলে আসতে লাগলো
আমাদের গম্ভীর কোন রাজনৈতিক আলাপের মাঝে ক্রিকেট বা সিনেমার হালকা কোন গল্প ঢুকিয়ে ফেলত অনায়াসে
বিভাস প্রথম প্রথম চুপ থাকলেও ক্রমেই বিরক্ত হয়ে উঠেছিল
ফয়সালের সাথে খুব রূঢ় আচরণ করত
আমি ওকে থামাতে চাইলে কতদিন রেগেমেগে আমাকে ফেলে চলে গিয়েছে
আশ্চর্য, ফয়সাল কিছুই মনে করত না
বিভাসের রাগকে ছেলেমানুষি বলে হেসে উড়িয়ে দিত
কি ভীষণ চতুর ছিল ফয়সাল
যেটা অনেক পরে বুঝেছি
দক্ষিণ বঙ্গে একটা গোপন মিটিং এ গিয়েছিল বিভাস
ঝিনাইদহের মহেশপুরে
পুলিশ জেনে গিয়েছিল খবর
যেদিন ধরল সেদিনই এনকাউন্টার
ফয়সাল খুব নির্বিকারভাবে আমাকে বিভাসের মৃত্যু খবর দিল
ফয়সালই যে পুলিশকে জানিয়েছিল সেটা আমি বিয়ের অনেক পরে জানতে পারি
কিন্তু মানুষ বোধ হয় নিজেকেই সব থেকে বেশি ভালবাসে
ফয়সালকে ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছু করতে পারিনি
মাথা ব্যথাটা আবার বেড়েছে
অনেকক্ষণ ধরে বিভাসের অস্তিত্ব বুঝতে পারছি না
আমি ব্যাকুল হয়ে ডাকি,
বিভাস আছ? এই বিভাস?
কোন সাড়া নেই
ও কি চলে গেল?
ভাবতেই শূন্য চর জেগে ওঠে চোখের কোণে
খুব অস্থির হয়ে উঠি আমি
ঘরের পর ঘর বদলাই
কোথাও নেই
বিভাস, বিভাস বলে পাগলের মত চিৎকার করি
একসময় ঝরঝর করে কেঁদে ফেলি
বারান্দা বেয়ে মৃদু এক ঝোঁক হাওয়া আসে
আমার শরীর বুলিয়ে দেয়
কানের কাছে এসে চুপিচুপি বলে,
আমি আছি সু
আমি আরও জোরে কাঁদি
আদর করে ও যে আমাকে সু বলে ডাকতো, সেটা ভুলে গিয়েছিলাম
বিভাস আমি তোমাকে দেখতে চাই
চেষ্টা করলেই দেখতে পাবে
খুব গভীরভাবে তাকাও, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে
আমি সোজাসুজি তাকাই
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে
চোখের পাতা পড়ে না
বিভাস, আমার সেই বিভাস! এই ব্ল্যাক শার্ট পরেই তো সেদিন ঝিনাইদহে গিয়েছিল
যাবার সময় শুধু বলেছিল, সাবধানে থেকো
আমি বিশ্বাস করতে পারি না
এসবকিছু স্বপ্নে ঘটছে না তো? ওর হাত ধরি, নাক টিপে দেই, চুল ধরে টানি