content
stringlengths 0
129k
|
---|
সব মিলিয়ে এখানে ১টি অর্কিড ঘর, ৩টি ক্যাকটাস ঘর, ১টি পটিং ঘর, ২টি ছায়াঘর আছে |
কৃত্রিম সুরঙ্গ করে সেখানে নানা জাতের ফার্ণ লাগিয়েছিলেন নরেন্দ্র নারায়ণ |
সাইকিতে তিনি প্রায় ৪৫০ প্রজাতির উদ্ভিদের বিরল সম্ভার গড়ে তুলেছিলেন |
বাগানের হরেক বাহারের ফুল ও শৌখিন গাছপালা বিশেষ করে ক্যকটাসের সম্ভার দেখে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুখে মুখে রচনা করেনঃ |
''কাঁটায় আমার অপরাধ আছে |
দোষ নাহি মোর ফুলে |
কাঁটা থাক মোর, ওগো প্রিয়তম |
ফুল তুমি নিও তুলে |
নরেন্দ্র নারায়ণ ১৯৩৬ খ্রীঃ পর্যন্ত তিল তিল করে সাইকিকে নিজ হাতে গড়ে তোলেন |
কিন্তু দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ সংগ্রহের নেশা যে তখন তার তুঙ্গে |
তাই তিনি এর পরিধিকে আরো বৃদ্ধি করতে চাইলেন |
কিন্তু চাইলেই ত আর সব হয়ে যায় না, এর জন্য পর্যাপ্ত জমির প্রয়োজন |
তার বাড়ির উত্তর পাশেই রয়েছে লালমোহন সাহাদের বাগানবাড়ি |
২.২৫ একরের সেই বাগানবাড়ি তিনি খরিদ করে, নব উদ্যোমে নেমে পড়লেন বাগান বর্ধিতকরণের কাজে |
এই বাগানের নাম রাখলেন 'সিবিলী' - ফ্রিজিয়ার পৌরানিক কাহিণীর উর্বরতার দেবী হিসেবে যিনি আমাদের কাছে পরিচিত |
সিবিলী বাগানটি আয়তকার তবে এর উত্তর দিকের কোণার একটু অংশ কাটা |
এর দৈর্ঘ্য ১৩৬ মিটার ও প্রস্থ ৭৬ মিটার |
সিবিলীতে ঢুকতেই পথের দু'ধারের সারি সারি উদয়পদ্ম আপনাকে সাদর সম্ভাষণ জানাবে |
পথ ধরে সামনে এগোলেই পাবেন অ্যারোপয়জন, কাউফল, কণকচাঁপা, কণকসুধা, কপসিয়া, দেবকাঞ্চন, লতাজবা, স্কারলেট কর্ডিয়া ইত্যাদি গাছ |
সামনে এগোলে হাতের বায়ে একটি জলাধার আর ডানে সূর্যঘড়ি |
নরেন্দ্র নারায়ণ যখন সিবিলীর কাজ শুরু করেন তখন সেখানে ছিল একটি ডোবা ও এই সূর্যঘড়িটি |
সেই ডোবাকে কেন্দ্র করে প্রায় ১ বিঘা জমির উপর তিনি একটি মনোরম দিঘী খনন করলেন যা আমরা আজ শঙ্খনদ নামে চিনি |
শঙ্খনদ পুকুরের দু'ধারে শান বাঁধানো ঘাট রয়েছে |
সেখানে নানান জাতের জলজ উদ্ভিদেরও দেখা মিলবে |
পুকরের বায়ে কোণার দিকে মুচকুন্দ ও ডানে পোর্টল্যান্ডিয়া দেখতে পাবেন |
দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অ্যাম্পিথিয়েটারসহ একটি দোতলা অতিথিশালা আছে যার নাম 'জয় হাউজ' |
এর লোহার সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা যায়, সেখানে সামনের তিনদিক খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাগানের মনোরম দৃশ্য সত্যিই স্বর্গীয় |
আগেই বলেছিলাম, শঙ্খনদের বিপরীত দিকে পায়ে চলা পথের ডানপাশে আছে একটি সূর্য্য ঘড়ি |
সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সময় দেখা যায় এই ঘড়িতে |
আনুমানিক ৫,৫০০ বছর আগে মিশরীয় ও ব্যবলনীয় সভ্যতায় প্রাকৃতিক উপায়ে সময় দেখার মাধ্যম হিসেবে সূর্য্য ঘড়ির প্রচলন শুরু হয় |
সময় জানানোর পাশাপাশি বাগানের শোভাবর্ধনেও এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে |
এসেই যখন পড়লেন, আপনার ঘড়ির সময়টিও না হয় মিলিয়ে দেখলেন |
সিবিলীতে আরও যে সমস্ত গাছ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ অশোক (রাজ, স্বর্ণ), আফ্রিকান টিউলিপ (রদ্র পলাশ), আমাজন লিলি, ইয়ক্কা, এলাচি ফুল, কদম, কণকসুধা, ক্যানেঙ্গা, ক্যামেলিয়া, কৃষ্ণ বট, কেয়া, গড়শিঙ্গা, চালতা, ছায়াতরু, ঝুমকো লতা, নীল শাপলা, পাথিফুল, পান্থপাদম, পারুল, মাধবী, লুকলুকি, শতমূলী, সাদা অপরাজিতা ইত্যাদি |
এছাড়া এখানে সব মিলে ১টি ক্যামেলিয়া ঘর, ১টি অর্কিড ঘর ও ১টি চারাগাছের ভান্ডার/ঘর আছে |
বলধা গার্ডেন |
আমরা জানলাম যে, নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী তার বাড়ির দু'টি অংশে বাগান করেছিলেন |
বাগানদ্বয়ের মাঝখান দিয়ে সোজা যে রাস্তাটি চলে গেছে সেটা - নবাব স্ট্রীট |
এই দু'অংশেরই একটি করে নামও তিনি দিয়েছিলেন |
কিন্তু এই বাগানের নাম তিনি 'বলধা গার্ডেন' দেননি |
যেহেতু তিনি বলধার জমিদার ছিলেন সেহেতু এক সময় বাগান দুটিকে একত্রে 'বলধা গার্ডেন' নামে ডাকা হতে থাকে |
দু'টি বাগানের মোট জমির পরিমান ৩.৮ একর |
সাইকি অংশটি সিবিলী থেকে ছোট |
এখানে ৮৭টি উদ্ভিদ পরিবারভূক্ত, ৩৩৯টি জেনারের ৬৭২ প্রজাতির, প্রায় ২৫,০০০ গাছের নমুনা আছে |
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এখানে রোপন করা হয় |
প্রায় ৫০টি দেশ থেকে এসব গাছ সংগ্রহ করা হয় |
এর মধ্যে শ্রীলংকা, জাপান, জাভা, আফ্রিকা, মাদাগাসকার, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া উল্লেখযোগ্য |
সংগৃহীত এইসব গাছসমূহকে মোট ৭টি বিভাগে ভাগ করা যায়, যেমনঃ অর্কিড, ক্যাকটাস, গ্রীনহাউজের গাছপালা, জলজ, গোলাপ, শিলালগ্ন প্রজাতি ও দেওয়াল লতা, বৃক্ষশালা ও বিবিধ |
এখানে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য গাছের একটি তালিকা আগ্রহী পাঠকদের জন্য নিম্নে প্রদত্ত হলঃ |
অক্রকারপাস ঘৃতকাঞ্চন বুদ্ধ নারিকেল |
অঞ্জন চালতা ব্রণস ফেলসিয়া |
অশোক (রাজ, স্বর্ণ) জুঁই বহেরা |
আফ্রিকান টিউলিপ (রদ্র পলাশ) জাভা আপেল ভেউয়া |
আমাজন লিলি জামরুল ভূর্জপত্র |
ইয়ক্কা ঝুমকো লতা ম্যগনোলিয়া |
এ্যামহাস্টিয়া টিউলিপ মাধবী |
এলাচি ফুল টগর মহুয়া |
উভারিয়া ট্যাবুইবিয়া রাংগা |
ওলিয়া ডেরিস রুপেলিয়া |
কোকো তেঁতুল (মিষ্টি) রাবার |
কাঁঠাল তাল গাছ লুকলুকি |
কর্ডিয়া ধূপগাছ লতাজবা |
কদম নাগলিঙ্গম শতমূলী |
কণকচাপা নীলপদ্ম শারদমল্লিকা |
কণকসুধা নীলমনিলতা সোনালী বাঁশ |
ক্যানেঙ্গা নীল শাপলা সুপারী |
ক্যান্ডল পাথিফুল সফেদা |
ক্যামেলিয়া পজোকার্পাস সাদা অপরাজিতা |
কামরাঙ্গা পোর্টল্যান্ডিয়া সাদা শিমুল |
কর্পূর প্যাপিরাস স্যালিক্স |
কৃষ্ণবট পারুল হরিতকি |
কেয়া ফণিমনসা হলুদ শাপলা |
খেঁজুর বাওবাব হিং |
গড়শিঙ্গা ব্রাউনিয়া |
ঘৃতকুমারী বোতল পাম |
বর্তমানে এখানে ৯৫০টি দূর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে, যার মধ্যে ৩০০ টি গাছ অতি বিরল প্রজাতি হিসাবে স্বীকৃত |
এছাড়াও ৭০ প্রজাতির ক্যকটাস, ২০০ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে |
গোলাপের বাহারী সমাহারের কারণে গোলাপ বাগানটি এক সময় উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিল |
আরো আছে লতা, গুল্ম, শোভাবর্ধক গাছগাছালি ও ঔষধি গাছের সম্ভার |
এখানে এমন অনেক গাছ আছে যা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই |
ভিনদেশী/বিচিত্র প্রজাতির গাছের সংগ্রহের তালিকা বিবেচনায় নিলে সম্ভবত বলধা গার্ডেন দেশের সবচেয়ে সম্মৃদ্ধ উদ্যান |
সাইকি অংশটিতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত |
শুধু গবেষকরা গবেষণার কাজে এখানে প্রবেশের অনুমতি পান কারণ এখানে এমন কিছু সংবেদনশীল গাছ আছে যা মানুষের সমাগম/চলাচলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে |
সিবিলী অংশ দর্শণার্থীদের জন্য উম্মুক্ত |
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখান থেকে অনেক দূষ্প্রাপ্য গাছ ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে |
এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির গোলাপ ছিল |
এখন অনেকগুলো নেই |
বাওবাব, সুপার পাইন কিংবা প্যাপিরাস গাছটি আর এখানে দেখা যাবে না |
রুদ্র পলাশ গাছটি কয়েক বছর আগে ঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে |
জীবণচক্র পূর্ণ করায় শতবর্ষী সুগার পাম গাছটি মরে গেছে |
চন্দন গাছের একমাত্র গাছটিও যাব যাব অবস্থা |
আর এসব হারিয়ে যাবেই না বা কেনো? গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে নামফলক লাগালে গাছের যে ক্ষতি হয় তা ত একটা অবুঝ শিশুও বোঝে, হয়ত আমরা বড়রা তা বুঝি না! আসলে ১৯৪০ খ্রীঃ নরেন্দ্র নারায়ণের একমাত্র ছেলে নৃপেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী 'কালচার'-এ যেদিন নিজ শয়নকক্ষে খুন হন, মুলতঃ সেদিন থেকেই রুদ্ধ হয়ে যায় বাগানের সামনে চলার পথ |
১৩ আগষ্ট ১৯৪৩ খ্রীঃ নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পুত্র শোক ও বার্ধক্যজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হন |
তিনি ও তার ছেলে উভয়ই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সিবিলী অংশে |
জয় হাউজ ও শঙ্খনিধি পুকুরের সামনে পায়ে চলা পথের ডান পাশে নরেন্দ্র নারায়ণের সমাধি আর পুকুরের বায়ে নৃপেন্দ্র নারায়ণের সমাধি দেখতে পাবেন |
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নরেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যুর পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে বলধা গার্ডেন |
ক্ষণিকের তরে থমকে যায় এর গতি |
এরপর অমিতলাল আচার্যের উপর বর্তায় বাগানের দেখভালের দায়িত্ব |
তাতেও রক্ষা হয় না, শুরু হয় বাগানের করূণ পরিনতি |
যদিও এই সময় কলকাতা হাই কোর্ট একটি ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাগান দেখভালের দায়িত্ব নেয় তবুও ১৯৪৭ খ্রীঃ দেশভাগের পর বাগানের অবক্ষয় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি |
বাগানটি প্রায় পরিত্যাক্ত হয়ে যাবার উপক্রম হলে ১৯৫১ খ্রীঃ থেকে ১৯৬২ খ্রীঃ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার কোর্ট অব ওয়ার্ডসকে তত্ত্বাবধানের জন্য নিয়োগ করে |
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.