content
stringlengths 0
129k
|
---|
আমি পাগল? আধিভৌতিক ব্যাপারে আমার কৌতূহল তোমাদের কাছে আমাকে হাস্যকর করে তুলেছে, এই তো বলতে চাও?
|
তোমাকে হাস্যকর না করলেও, জবাব দিল রবিন, তোমার কাজকর্মকে যে হাস্যকর করেছে, এটা ঠিক
|
ভুরু কুঁচকে গেল কোরির
|
আরে বসো বসো, নিজের পাশে মাটিতে বিছানো ক্যানভাসে চাপড় দিল কিশোর
|
এই রবিন, বাজে কথা বোলো না তো
|
দেখি সরো, কোরিকে জায়গা দাও
|
বসো, কোরি
|
এত সুন্দর দিনটা রাগারাগি করে নষ্ট কোরো না
|
কিন্তু তাই বলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি সহ্য করব? মেজাজ দেখিয়ে ক্যানভাসের ওপর বসে পড়ল কোরি
|
সারাদিন ছিলে কোথায়? জানতে চাইল কিশোর
|
ঘুম থেকেই উঠেছি দেরি করে, ব্যাগ থেকে বড় একটা তোয়ালে টেনে বের করল কোরি
|
তারপর হোটেলের মধ্যে এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি করেছি খানিকক্ষণ
|
আন্ট জোয়ালিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি পারিনি
|
মেলবয়েস বললেন, লঞ্চ আসার সময় হলে গাড়ি নিয়ে ডকে যাবেন আন্টিকে নিয়ে আসতে
|
যদি আজকে আসেন
|
জায়গাটা কিন্তু ভারি সুন্দর! কিশোরের পাশে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল রবিন
|
. কোরি তখনও নানা জিনিস বের করছে
|
সানট্যান লোশনের শিশিটা বের করে রাখল একপাশে
|
সাঁতার কাটতে যাবে কেউ?
|
নাহ, মাথা নাড়ল কিশোর
|
আমার বসে থাকতেই ভাল লাগছে
|
মুসাকে গিয়ে বলো, তোমার সঙ্গে নামবে
|
দেখো, একটা পাখি, ওপর দিকে তাকিয়ে আছে রবিন
|
ইস, আমিও যদি ওরকম করে উড়তে পারতাম!
|
কোরি আর কিশোর দুজনেই মুখ তুলে তাকাল
|
ধূসর আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বড় একটা পাখি
|
বাজপাখি, কোরি বলল
|
এখানে বাজও আছে নাকি? পাখিটার সঙ্গে সঙ্গে নজর সরছে তার
|
চশমার কাঁচে ফ্যাকাসে নীল আকাশের প্রতিবিম্ব
|
মনে হয় না, কোরি বলল
|
পাখিটাকে বেমানান লাগছে এখানে
|
এই দ্বীপের সব কিছু রঙিন, ঝলমলে, সুন্দর
|
অন্য কোনখান থেকে উড়ে এসেছে হয়তো মাছের আশায়
|
ক্ষণিকের জন্যে মনে হলো বাজপাখির ডানায় ভর করে অবাঞ্ছিত- অশুভ কোন কিছু কালো ছায়া ফেলতে এসেছে দ্বীপের সাদা সৈকতে
|
ভাবনাটাকে জোর করে মন থেকে তাড়াল সে
|
পানিতে দাঁড়িয়ে আছে এখনও মুসা
|
ওদের দিকে পেছন করে
|
নীলচে সবুজ পানি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বালি
|
চিকচিক করছে রোদে
|
ওর ডানে ঢেউয়ে ক্রমাগত দোল খাচ্ছে নিচু একটা কাঠের ডকে বাধা দুটো ক্যানু
|
ওদের দুদিকে ধনুকের মত গোল হয়ে বেঁকে গেছে সৈকত
|
পেছনে বালির টিলার ওপরে রয়েছে হোটেলটা
|
সাদা দুর্গের মত বিছিয়ে থেকে যেন পাহারা দিচ্ছে সবকিছুকে
|
ডাইনিং রূমের বড় জানালার কাছে ঝিলিক দিচ্ছে বিকেলের সোনালি রোদ
|
বাড়িটার দুদিক থেকে শুরু হয়েছে
|
নীলচে-সবুজ
|
মৃদু বাতাসে সুগন্ধ ছড়িয়ে দুলছে যেন তার ঘোরে
|
উফ, বিশ্বাস করতে পারছি না আমি! দেখতে দেখতে বলে উঠল কোরি
|
এত সুন্দর
|
ভাল লাগছে অন্য কেউ নেই দেখে
|
স্বাধীনভাবে দ্বীপে ঘুরে বেড়াতে পারব আমরা
|
যা ইচ্ছে করতে পারব
|
হ্যাঁ, একমত হলো রবিন
|
আমার কাছে তো স্বর্গ মনে হচ্ছে
|
হাত বাড়িয়ে একমুঠো বালি তুলে নিয়ে ঝরঝর করে নিজের পায়ে
|
ছাড়তে লাগল কোরি
|
আজ যে আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন এজন্যে মিস্টার মেলবয়েসকে একটা ধন্যবাদ দেয়া দরকার
|
হ্যাঁ, খুব ভাল লোক
|
গায়ে জমিদারের রক্ত আছে দেখেই বোঝা যায়
|
কিন্তু উলফের ব্যাপারটা কি বলো তো? এরকম ভদ্র মালিকের ওরকম বুনো চাকর! উদ্ভট স্বভাব!
|
সকালে নাস্তা দেয়ার সময় মুখটাকে কিরকম করে রেখেছিল দেখেছ? একেবারে মরা চিংড়ি
|
ওর সমস্যাটা কি? কাল রাতে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে চাইল কেন আমাদের?
|
ভূত আছে ইঙ্গিত দিল, কোরি বলল, কিন্তু খোলাসা করল না কিছুই
|
আমার তো মনে হলো অন্য ইঙ্গিত দিয়েছে, কিশোর বলল
|
বুঝতে পারলাম না
|
কিন্তু আমার বিশ্বাস, ভূতের কথাই বলেছে
|
এই দ্বীপে ভূত থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়
|
সাড়ে তিনশো বছর আগে সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে এসে এখানে আস্তানা গেড়েছে মানুষ
|
খুনখারাপি হয়েছে প্রচুর
|
প্রেতাত্মা
|
থাকতেই পারে
|
শোরটাউনের আশেপাশে যত পুরানো বাড়ি, সরাইখানা, দুর্গ আর হোটেল আছে, সবগুলোতে ভূতের বদনাম
|
আমার মনে হয় না
|
মিথ্যে কথা বলেছে উলফ, কিংবা আমাদের শুধু শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছে
|
কিছু না থাকলে আমাদের সাবধান করতে আসত না
|
আচমকা উঠে দাঁড়াল কোরি
|
কি হলো? জানতে চাইল রবিন
|
একটা জিনিস ফেলে এসেছি
|
জবাব না দিয়ে হাঁটতে শুরু করল কোরি
|
দ্রুত হেঁটে চলল হোটলের দিকে
|
সেদিকে তাকিয়ে মন্তব্য করল রবিন, উলফের মত কোরিও আরেকটা উদ্ভটা চরিত্র...
|
আস্তে! শুনতে পেলে আবার রেগে যাবে
|
ওর সঙ্গে জিনার স্বভাবের অনেক মিল, তাই না?
|
জবাব দিল না কিশোর
|
সেদিন বিকেলে আকাশটাকে রক্তের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে পাইন বনের আড়ালে যখন অস্ত গেল সূর্য, আকাশে দেখা দিল রূপালী চাঁদ, সৈকতে ফিরে এল
|
ফুরফুরে বাতাস শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে
|
ইস্, কি একখান সূর্যাস্ত! আবার বালিতে গড়িয়ে পড়ল রবিন
|
এভাবে গড়াগড়ি করার নেশা হয়ে গেছে যেন তার
|
আকাশের দিকে চোখ
|
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে মুসা আর কিশোর
|
সাগরের পানিতে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখছে
|
আমার কি মনে হচ্ছে জানো? স্বপ্নিল হয়ে উঠেছে কিশোরের সুন্দর দুটো চোখ
|
কোন স্বপ্নের জগতে পৌঁছে গেছি!
|
কোরির হাতে ডোরাকাটা একটা চাদর
|
এই, ধরো তো একটু, চাদরটা বিছাই
|
চাদর বিছাতে ওকে সাহায্য করল কিশোর
|
দুই কোণে দুটো বড় পিকনিক বাস্কেট চাপা দিয়ে দিল যাতে বাতাসে উড়তে না পারে
|
চাদরের ওপর বসে পড়ে একটা বাস্কেটের দিকে হাত বাড়াল মুসা, খিদে পেয়ে গেছে আমার
|
কি দিয়েছে উলফ?
|
উম..দাঁড়াও, অনুমান করতে দাও আমাকে, কোরি বলল, কি হতে পারে? টিউনা মাছের স্যান্ডউইচ?.
|
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.