content
stringlengths
0
129k
পাইনবনে ডেকে উঠল কি একটা জানোয়ার
দীর্ঘ, বিষণ্ণ চিৎকার
তাদের সম্পর্কে বলুন না কিছু, অনুরোধ জানাল কোরি
শোনার জন্যে সামনে ঝুঁকে বসল
হ্যাঁ, বলুন না, রবিনও আগ্রহী হয়ে উঠল
আসলে কি ঘটেছিল গোস্ট লেনের সেই পুরানো প্রাসাদটাতে?
আমিও খুব বেশি কিছু জানি না, ব্যারন বললেন
আমার জন্মের বহু আগে ঘটেছিল সেসব ঘটনা
বালির ঢিবির ওপরে হোটেলটার দিকে তাকালেন তিনি
মিলার এলে ভাল হতো
এসব গল্প আমার চেয়ে ভাল বলতে পারত সে
আপনি যা পারেন বলুন, শোনার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে রবিন
পুড়ল কি করে বাড়িটা? রোজার মেলবয়েসের সম্পর্কে যা শোনা যায় সব কি সত্যি?
শব্দ করে হাসলেন ব্যারন
গ্লাসটা নামিয়ে রাখলেন চাদরে
সব কটা চোখ এখন তার দিকে
বাতাসে দুলে উঠে কাত হয়ে গেল মোমের শিখা
নিভু নিভু হলো, কিন্তু নিভল না
রবিনের দিকে তাকালেন ব্যারন, তুমি নিশ্চয় শুনেছ, ব্ল্যাক ফরেস্টে প্রথম যারা বসতি করেছিল তাদের একজন ছিলেন আমার গ্রেট-আঙ্কেল রোজার মেলবয়েস
বিরাট ধনী ছিলেন তিনি
কোথায় পেয়েছিলেন এত, টাকা কেউ জানে না
কোথা থেকে ব্ল্যাক ফরেস্টে গিয়েছিলেন তিনি, তা-ও জানে না কেউ
দেখতে তিনি কেমন ছিলেন? জিজ্ঞেস করল কোরি
আপনার মত?
তা-ও জানে না কেউ
আমাদের পরিবারের সবারই ছবি আছে, শুধু তাঁরটা বাদে
সেটাও আরেক রহস্য
গ্লাস তুলে চুমুক দিলেন তিনি
ঠোঁট চাটলেন
তারপর বললেন, বিশাল ওই প্রাসাদ শহর থেকে এতদূরে কেন বানালেন, সেটাও রহস্য
ব্ল্যাক ফরেস্টে তখনও আজকের মত শহর গড়ে ওঠেনি, ভাল কোন রাস্তা ছিল না
বনের মধ্যেই বাড়ি বানালেন তিনি
বাড়িতে যাওয়ার একটাই পথ ছিল, গাছপালার ভেতর দিয়ে সরু একটা রাস্তা
বাড়িটা বানানোর সময় শ্রমিকেরা
যাতায়াতের জন্যে নিজেরাই তৈরি করেছিল রাস্তাটা
গোপনীয়তা পছন্দ করতেন নাকি? জানতে চাইল কিশোর
নাঃ...অন্তত ব্ল্যাক ফরেস্টে আসার পর প্রথমদিকে তো নয়ই
বরং রোজার মেলবয়েস আর তার সুন্দরী স্ত্রী ভেরোনিকা ছিলেন শহরের প্রাণ
সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন
প্রায়ই বড় বড় পার্টি দিতেন
লোক গমগম করত বাড়িতে
মোমের আলোয় কমলা রঙ লাগছে ব্যারনের চেহারা
মেলবয়েসরা খুব বিখ্যাত ছিল তখন
লোকে পছন্দ করত তাদের
শহরটার জন্যে অনেক করেছে
লাইব্রেরির জন্যে টাকা দিয়েছেন রোজার মেলবয়েস, ব্ল্যাক ফরেস্টের প্রথম হাসপাতালটা তার করা
গ্লাসে চুমুক দেয়ার জন্যে থামলেন ব্যারন
কোরির দিকে তাকাল কিশোর
হতাশা দেখতে পেল ওর মুখে
যেন ভয়াবহ কোন ভূতের গল্প আশা করেছিল সে
রোজার আর ভেরোনিকার দুটো খুব সুন্দরী মেয়ে ছিল, ব্যারন বলতে লাগলেন আবার
মেয়েদের অসম্ভব পছন্দ করতেন রোজার
আর দশটা মেয়ের মত লেখাপড়া শেখার জন্যে স্কুলে যেতে দেননি ওদের
বাড়িতে টিচার রেখে দিয়েছিলেন
যা চাইত ওরা, দিয়ে দিতেন তিনি
কোন কিছুতেই না করতেন না
এক বছর এক মেয়ের জন্মদিনে ইউরোপ থেকে সমস্ত জন্তু-জানোয়ার সহ একটা আস্ত সার্কাস পার্টি ভাড়া করে নিয়ে এসেছিলেন তিনি
খাইছে! বলে উঠল মুসা
অ্যাই, বাধা দিয়ো না তো! অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল কোরি
আমার গ্রেট-আঙ্কেল মনে করেছিলেন, এত টাকা আছে যখন, জীবনটা বুঝি সুখেই কেটে যাবে, সাগরের কালো পানির দিকে তাকিয়ে বললেন
কণ্ঠে বিষাদের ছোঁয়া
কিন্তু তা আর কাটল না
একদিন বনে খেলতে গিয়ে আর ফিরে এল না তাঁর দুই মেয়ে
রাতেই খোঁজাখুজি করা হলো
পাওয়া গেল না ওদের
পরদিন সকালেও না
সাত দিন পর বনের মধ্যে পাওয়া গেল ওদের লাশ
শরীরের মাংস আছে, কিন্তু হাড় নেই
অদ্ভুত উপায়ে আস্ত বের করে নেয়া হয়েছে কঙ্কালটা
তা কি করে সম্ভব? বলে উঠল কিশোর
আমি জানি না
লোকে তো তাই বলে
খুনীকে ধরতে পেরেছিল পুলিশ? কোরি জিজ্ঞেস করল
আমি বলতে পারব না
পুলিশকে ওকাজ করার জন্যে আদৌ ডাকা হয়েছিল, তাই বা কে জানে, রহস্যময় কণ্ঠে জবাব দিলেন ব্যারন
ওই ঘটনার পর থেকে আলো নিভে গেল প্রাসাদের
রাতে আর বাড়ির জানালায় আলো জ্বলতে দেখত না কেউ
সব বদলে গেল
ভেরোনিকাকে আর কোনদিন শহরে দেখা যায়নি
লোকে বলে, পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলেন নাকি তিনি
সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকতেন
কখনও বেরোতেন না
রাতের বেলা বাড়ির কাছে কেউ গেলে শুনতে পেত অদ্ভুত সব চিত্তার, চেঁচামেচি
তাদের ধারণা ভেরোনিকার ঘর থেকে আসত
আর মেলবয়েস? তার যেন জীবনটাই থেমে গিয়েছিল
সমস্ত টাকা খুইয়ে ফেললেন তিনি
দামী দামী সমস্ত ছবি, জিনিসপত্র সব নীলামে উঠল, ঠেলা গাড়িতে ভরে নিয়ে যাওয়া হলো
তাকেও এরপর আর কোনদিন শহরে দেখা যায়নি
তারপর একদিন রহস্যময় ভাবে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল বাড়িটা
মেলবয়েসই পুড়িয়েছিলেন নাকি? জানতে চাইল কোরি
তা-ও জানি না
আসল ঘটনাটা কি ঘটেছিল, কেউ জানে বলে মনে হয় না
সবই অনুমান
কেউ বলে পাগল হয়ে গিয়ে ভেরোনিকা আগুন দিয়েছিলেন বাড়িতে
কেউ বলে মেলবয়েস নিজেই দিয়েছিলেন
অভিশপ্ত বাড়িসহ নিজেকে শেষ করে দেয়ার জন্যে
ওই বাড়ির সবচেয়ে কাছে যে বাড়িটা ছিল, মেলবয়েসদের প্রতিবেশী, সে তার ডায়রিতে লিখে গেছে
সেরাতে কি ঘটেছিল প্রাসাদে
লেখাটা আমি পড়েছি
রাত দুপুরে নাকি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠেছিল প্রাসাদে