content
stringlengths
0
129k
মৃত স্বামীর ঘড়ি তার হাতে
সাধারণ, জিন্স ফতুয়া, আর পায়ে বেল্টসহ স্যান্ডেল পরে মাথায় পাতলা চাদর বা ওড়না পেঁচিয়ে চলে রেহানা
রেহানা ডায়াবেটিক, তাকে ইনসুলিন নিতে হয়, ডায়াবেটিক পেশেন্ট এর মতোই তার এংজাইটি, ডিপ্রেশন, স্ট্রেস হয়
তার একটু বেশি শীত করে
রেহানা ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, যখনই সুযোগ পায় টেবিলে একটু মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে নেয়
রেহানা হঠাৎ হঠাৎ চমকে যায়, কাঁধ কিছুটা নুইয়ে হাঁটে এবং দাঁড়ায়
সামান্য দরজা না খুললে অস্থির হয়ে প্যানিক করতে থাকে রেহানা
তার ভেতরের অসহায়ত্ব, ক্লান্তি, একাকিত্ব,নানান দায়িত্বের ভার, নিজের পরীক্ষার দুশ্চিন্তা তার চোখে মুখে নাকে ফুটে ওঠে
রেহানার ইচ্ছে ছিলো টেবিল টেনিস খেলার, কিন্তু সে হতে পারেনি
শৈশব-কৈশোরেই ভেঙে গেছে তার নানান স্বপ্ন, যেমনটা আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মেয়েরই যায়
রেহানা বেদনা যাপন করে, সেই বেদনাদায়ক জীবনে একমাত্র দুশ্চিন্তা এবং একমাত্র আনন্দ তার শিশু সন্তান ইমু
রেহানা পরীক্ষক হিসেবে কঠোর, কারণ শিক্ষক হিসেবে, পরীক্ষক হিসেবে সে বিশ্বাস করে, যে শিক্ষার্থীদের হাতে কিছুদিন পর মানুষের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব থাকবে, তাদের নকল করতে দেয়া একটা ভয়াবহ অন্যায়
পরীক্ষা হলের মাঝেই সে লুকিয়ে তার মেয়ের খোঁজ নেয়, ভাই রনি তাকে ঠিকমতো আনতে গেলো কিনা সেটার খোঁজ নেয়, বিরক্ত হয়, মেজাজ খারাপ করে
রেহানার রোল মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়ে যায়
তাই ফোনে মায়ের সাথে চিবিয়ে কথা বলা রেহানা, সিনিয়র কাওকে দেখে, ফোন নামিয়ে নরম সুরে সালাম দেয়, কথার উত্তর দেয়, এবং পর মুহূর্তেই আবার চোয়াল কঠিন করে মায়ের সাথে কথা বলে
পরীক্ষার হলে আরেকটা কথা বললে হল থেকে বের করে দিতে চাওয়া ছাত্রীটি যখন হন্তদন্ত হয়ে শিক্ষকের রুম থেকে বের হয়, তখন সেই শিক্ষার্থীকেই রেহানা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়
মুহূর্তেই রেহানা মা থেকে শুধু নারী রোলে চলে যায়
বাড়ি ফেরার তাড়া ভুলে সে অ্যানির পাশে থাকে
রেহানা নিজ গরজে ছাত্রীর রুমে যায়, তাকে বোঝানোর জন্য, এমনকি রেহানা নিজে ভিক্টিম সেজে আরেফিনের নামে রিপোর্ট করে
সে অন্য সকল মেয়ে, যারা যারা আবারও এরকম যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারে তাদেরও বাঁচাতে চায়
তার নিজের জীবনেও হয়তো এমন ঘটেছিলো অতীতে
আর আরেফিনের নোংরা স্পর্শ, দৃষ্টির শিকার তো রেহানা নিজেও
তাই অ্যানির জন্য মিথ্যে রিপোর্ট করতেও সে পিছপা হয় না
কারণ রেহানা বিশ্বাস করে, এটা শুধু তার বা অ্যানির বিষয় নয়
এটা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে একটা লড়াই
রেহানা মরিয়ম নূর মুভিটিতে বেশ কয়েকটি দৃশ্য আমাকে ছুঁয়ে গেছে
এর মধ্যে অ্যানির রুমে, শুয়ে থাকা অ্যানির হাত ধরে বসে থাকা রেহানা আর চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকা ইমু যেন আমাদের সমাজেরই নারীর শৈশব কৈশোর আর যৌবনের প্রতিচ্ছবি
ফেমিনিস্ট লেন্সের ইন্টারসেকশনালিটি () অন্তঃবিভাগীয়তার একটা বড় চিত্র, পরিচালক মুভিটিতে তুলে ধরেছেন
সেখানে ডাক্তার হওয়ার পরও রেহানা একজন সিংগেল মাদার হিসেবে অন্য অভিভাবকদের কাছে, বাচ্চার স্কুলের শিক্ষকদের কাছে ব্যর্থ অভিভাবক, যিনি সন্তানের খেয়াল রাখেন না
রেহানা নিজের কাছে নিজে একজন অপরাধী মা, কারণ ইমুর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ সে দিতে পারে না
আবার এই রেহানাই ছোট ভাই এর উপর হুকুম চালায়, কারণ তার হাত খরচ সে দেয়, মায়ের সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে, কারণ তার আয়ে সংসার চলে
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম নারী হলেও রেহানার জন্য তিনি কিছুই করতে পারেন না
তিনি প্রিন্সিপাল, কিন্তু তিনি নারী, শুধু নারীই নন, তিনি একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, তিনি আপোস করে কৌশল করে টিকে থাকাকে প্রাধান্য দেন
রেহানার প্রতি কোন সমানুভূতি না দেখিয়ে তিনি তার নিজের পারিবারিক গল্প জুড়ে দেন
রেহানাকে অবিশ্বাস করেন, যেটার আশঙ্কা শুরুতেই অ্যানি করেছিলো
অ্যানি রেহানার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, রেহানা সেটা সহ্য করতে না পেরে অ্যানির গালেই চড় কষিয়ে দেয়
অনেক অনেক পুঞ্জীভূত রাগ ক্ষোভ হতাশা আর বেদনা নিয়ে রেহানা চিৎকার করে , তার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলাপসিবল গেট আটকে দিলে ক্রমাগত গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকে তার ছোট ইমুর কাছে যাবার জন্য
রেহানার এমন আগ্রাসন, বা ছোট্ট ইমুর চিমটি কাটা ছেলে সহপাঠীর হাত কামড়ে দেয়াটা বারবার নিরবে পীড়ন সহ্য করার পর হঠাৎ একটা আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া মনে হয়
মুভির শেষ দৃশ্যে ইমুকে দেখে আমার বুক ভেঙে গেছে
আমি ভাবছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম , এতটুকু শিশু এতো অসাধারণ কাজ কীভাবে করলো! সহপাঠীর হাতে কামড় দেয়ার জন্য স্যরি না বললে ইমুকে পারফর্ম করতে দিবে না স্কুল, এই কথাটা রেহানা ইমুকে বলতে পারেনি
ইমু শুধু জানে মা না করছে
কেন করছে তা সে জানে না
রেহানা ইমুকে আটকে দেয়, এবং নিজের দমবন্ধ করা জীবন, এংজাইটি, বন্ধ ঘরে আটকে পড়ে অনবরত দরজায় দুম দুম করে আঘাত করার ট্রমা সে ইমুর মধ্যে ট্রান্সফার করে দেয়
এই মুভি দেখার জন্য বাংলাদেশের মাত্র গুটি কয়েক লোক মানসিকভাবে প্রস্তুত
বাদ বাকি যারা আছেন তারা ওই কলাপ্সিবল গেইট আটকে 'রিজাইন রিজাইন' বলে চিৎকার করা স্টুডেন্ট যারা রেহানাকে মাথা খারাপ, মাথায় সমস্যা আছে বলতে বলতে তার মুখে পানি ছুঁড়ে মারে, তাদের দলের
তারা ওই নেমপ্লেটে রেহানার নামের উপর লিখে রাখা দলের
যথেষ্ট সমানুভূতিশীল না হলে রেহানাকে বোঝা সম্ভব না
রেহানা মরিয়ম নূর দেখে যে অনুভূতি তৈরি হয় তা সকলের পক্ষে সহ্য করা কঠিন
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই মুভিটি তৈরির জন্য
নাম ভূমিকায় অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধনকে আমি আজীবন শ্রদ্ধা করে যাবো তার অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের জন্য
তিনি একজন অসাধারণ গুণী অভিনয় শিল্পী
ছোট্ট ইমুর চরিত্রে অভিনয় করা জায়মাসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা সকল অভিনয় শিল্পী চমৎকার কাজ করেছেন
তাদের সকলের প্রতি রইলো আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
অভিনন্দন রেহানা মরিয়ম নূর টিম
লেখক-প্রমা ইসরাত
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী
শেয়ার করুন:
: আজমেরি হক বাঁধন, উইমেন চ্যাপ্টার, নারীবাদ ও সিনেমা, প্রমা ইসরাত, বেদনার নীল চোখে দেখা রেহানা মরিয়ম নূর: আমার ভাবনা
নারীর আইডেন্টিটি এবং আইডেন্টিটি ক্রাইসিস
বোরকা-হিজাব বনাম বিকিনি সংস্কৃতি: একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া
সর্বশেষ প্রকাশিত
খবরাখবর ফিচারড নিউজ
বোরকা-হিজাব বনাম বিকিনি সংস্কৃতি: একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া
নভেম্বর ২৪, ২০২১, ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ
উইমেন চ্যাপ্টার
আন্দোলনে নারী ফিচারড নিউজ
বেদনার নীল চোখে দেখা রেহানা মরিয়ম নূর: আমার ভাবনা
নভেম্বর ২২, ২০২১, ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ
উইমেন চ্যাপ্টার
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ফিচারড নিউজ
নারীর আইডেন্টিটি এবং আইডেন্টিটি ক্রাইসিস
নভেম্বর ২১, ২০২১, ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ
উইমেন চ্যাপ্টার
ইডিটর'স পিক
এক সুতোর ওপরে ঝুলে থাকে যে জীবন!
নভেম্বর ২০, ২০২১, ৫:৫১ অপরাহ্ণ
উইমেন চ্যাপ্টার
সর্বাধিক পঠিত
অস্থির সময়ের অস্থির বাইপ্রোডাক্ট যখন 'সন্তান'
বেদনার নীল চোখে দেখা রেহানা মরিয়ম নূর: আমার ভাবনা
আমরা যারা একলা থাকি-৪২
প্রসঙ্গ সেক্স চ্যাট: মেয়েরা মুখ খুলুন প্লিজ
বোরকা-হিজাব বনাম বিকিনি সংস্কৃতি: একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া
অন্যান্য গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের সম্পর্কে
বা পরিবর্তনে নারী
লেখালেখি হতে পারে আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার - এই নীতিকে সামনে রেখেই বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নারী বিষয়ক প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল
:
-:
লেখা পাঠানোর ঠিকানা:
আপনার লেখা পোর্টালেপ্রকাশ করতে চাইলে বিনা সংকোচে পাঠিয়ে দিন [ ] ইমেইলে| লেখার সাথে একটি প্রকাশযোগ্য ছবি থাকলে ভাল হয়| লেখা পাঠানোর পরে দয়া করে অপেক্ষা করবেন, প্রকাশযোগ্য সকল লেখা পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে| ধন্যবাদ|
ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের চোটে উইন্ডিজ স্কোয়াডে জায়গা করে নিল আকিল হোসেন- , , বাজি লাইভ
লাইভ স্কোর
ম্যাচ প্রেডিকশন
ম্যাচ হাইলাইটস
আজকের ট্রেন্ডিং
, , বাজি লাইভ
লাইভ স্কোর
ম্যাচ প্রেডিকশন