content
stringlengths 0
129k
|
---|
শিখছি দিবারাত্র
|
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
|
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
|
শিখছি সে সব কৌতূহলে,
|
নেই দ্বিধা লেশমাত্র
|
মহামারী এই করোনা থেকে কি শেখার কিছু নেই ? প্রতিটি দেশ, সমাজ ও প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মতো করে এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে
|
কিন্তু একজন ঈমানদার এর থেকে কী শিখতে পারে - আমরা জেনে নিতে পারি এভাবে--
|
করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে জীবনের ক্ষুদ্রতা ও ক্ষয়িষ্ণুতা
|
আমাদের সামনে এই জীবন্ত সত্য তুলে ধরেছে যে মিছে এই জীবন, রংধনুর সাতরং
|
দুনিয়ার জীবন দেখতে খুবই সুন্দর
|
দুনিয়াপ্রেমী সে সৌন্দর্য হৃদয় দিয়ে অবলোকন করে
|
ফলে সে এ জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে
|
মনে করে, সে নিজেই জীবনের মালিক! আকস্মিকভাবে সুন্দর জীবন তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়
|
তৈরি করা হয় তার ও জীবনের মাঝে সুবিশাল অভেদ্য প্রাচীর
|
মহান আল্লাহ দুনিয়ার জীবনে ক্ষুদ্রতা এভাবে তুলে ধরেছেন : পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত বৃষ্টির মতো, যা আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি, অতঃপর তা দিয়ে জমিনে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, আর মানুষ ও জীবজন্তু তা আহার করে থাকে
|
তারপর ভূমি যখন শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং এর (জমিনের) মালিকরা মনে করে এসব তাদের আয়ত্তাধীন, তখন রাতে বা দিনে আমার নির্দেশ এসে পড়ে
|
তারপর আমি তা এমনভাবে নির্মূল করে দিই, যেন গতকালও তার অস্তিত্ব ছিল না
|
' (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৪)
|
করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে, মানুষ শিল্পে, শিক্ষায়, শক্তিতে, সমরাস্ত্রে, বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে যতই উন্নতি লাভ করুক না কেন, সব কিছু মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের সামনে তুচ্ছ, তুচ্ছ এবং তুচ্ছ
|
ইরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং সেগুলোর অনুরূপ পৃথিবীও
|
এগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ, যাতে তারা বুঝতে পারে যে আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সব কিছু পরিবেষ্টন করে আছেন
|
' (সুরা : তালাক, আয়াত : ১২)
|
করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার জন্য যেভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয়, তেমনি সামাজিক অপরাধ যথা খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি এবং কুফর, শিরক, বেদআত সহ পাপের ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে ' হোম কোয়ারেন্টিনে' রাখতে হবে
|
অতীতে এর সর্বোত্তম নজির দেখা যায় আসহাবে কাহাফের ঘটনায়----
|
একদল যুবক নিজের ঈমান ও বিশ্বাস টিকিয়ে রাখার জন্য গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন
|
সেখানে এক দীর্ঘ ঘুমে তাঁরা ৩০৯ বছর পার করেছেন
|
বলা যায়, এটি ছিল দীর্ঘতম ' হোম কোয়ারেন্টিন'
|
তাঁদের ঘটনা নিয়ে পবিত্র কোরআনে একটি সুরা নাজিল হয়েছে
|
সুরাটির নাম হলো সুরা কাহাফ
|
মৃত্যু মানবজীবনের অনিবার্য নিয়তি ও পরিণতি
|
জীবমাত্র মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এ সত্য অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই
|
আর করোনাভাইরাস এই নির্মম সত্যকে আমাদের সামনে আরো জীবন্ত, আরো অনিবার্য করে তুলেছে যে, যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে
|
তাই মৃত্যুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকা উচিত
|
অসিয়তনামা লিখে রাখা সুন্নত
|
প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে রাখা চাই
|
নিজের সব কাজ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন
|
ইরশাদ হয়েছে, ' বলে দাও, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করো, সেই মৃত্যু তোমাদের সঙ্গে অবশ্যই সাক্ষাৎ করবে
|
' (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ৮)
|
করোনাভাইরাস মুসলমানদের অজুর ইহলৌকিক উপকার চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে
|
অজু অন্যতম ইবাদত
|
পরকালে অজুর অঙ্গগুলো দীপ্তমান হয়ে উঠবে এ কথা হাদিসে আছে
|
কিন্তু এই ভাইরাসের সময় যেভাবে হাত ধোয়ার প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে, তাতে অজুর ইহলৌকিক উপকারিতার কথা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার
|
দেখুন, একজন মুসলমান প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার অজু করে
|
প্রতিবার অজুতে তিনবার করে হাত কব্জি পর্যন্ত এবং তিনবার করে কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হয়
|
এতে প্রতি অজুতে ছয়বার হাত ধৌত করতে হয়
|
আর দিনে পাঁচবার অজু করা হলে মোট ৩০ বার হাত ধৌত করতে হয়
|
আর এভাবে হাত ধৌত করতে পদ্ধতিগতভাবে মুসলমানদের ইসলামী শরিয়াতের পক্ষ থেকে ' বাধ্য' করা হয়েছে
|
আবার রাতে ঘুমানোর আগে অজু করার নির্দেশনা রয়েছে
|
সেখানে ছয়বার হাত ধৌত করতে হয়
|
আর ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুত নামাজের জন্য অজু করতে হয়
|
সেখানে ছয়বার হাত ধৌত করতে হয়
|
ফরজ ও নফল নামাজের বাইরে সব সময় অজুর সঙ্গে থাকা মুস্তাহাব
|
আর একজন মানুষ প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার প্রাকৃতিক কাজ সারে
|
এ ছাড়া নানা কারণে অজু ভেঙে যেতে পারে
|
সব মিলিয়ে যদি আরো পাঁচবার অজু করা হয়, তাহলে কমপক্ষে ১২ বার অজু করা হয়
|
তাহলে একজন মুসলমান যথাযথভাবে ইসলামের বিধান মেনে চললে তাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭২ বার হাত ধৌত করতে হয়
|
তা ছাড়া খাবার গ্রহণের আগে, মিসওয়াক করার আগে, ঘুম থেকে ওঠার পর হাত ধৌত করা সুন্নত
|
আর হ্যাঁ, যে ব্যক্তি এভাবে হাত ধৌত করে, সে আল্লাহর ইচ্ছায় বহু ভাইরাস ও জীবাণু থেকে বেঁচে থাকতে পারে
|
করোনাভাইরাস আমাদের পরকালের নির্মম বাস্তবতা শিখিয়েছে
|
পরকালে সন্তান তার মা-বাবাকে, বন্ধু তার বন্ধুকে ভুলে যাবে
|
সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে
|
আর এই ভাইরাসও দূরে যাওয়া ও দূরে থাকার সর্বাত্মক নির্দেশনা দেয়
|
এর সঙ্গে কোরআনের এই আয়াতগুলো মিলিয়ে দেখুন : ' সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে, এবং তার মা-বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও সন্তান থেকে
|
সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা, যা তাদের নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে
|
' (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৪-৩৭)
|
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক ব্যবহারে জোর দেয়া হয়
|
এই মাস্ক থেকে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য শিক্ষার উপাদান আছে
|
নারীরা শিখতে পারে যে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য যেভাবে মাস্ক পরা হয়, ব্যাভিচার ও অশ্লীলতার মতো সামাজিক ভাইরাসরোধে পর্দার বিকল্প নেই
|
আর পুরুষরা এই মাস্ক থেকে এটা শিখতে পারে যে যেখানে-সেখানে মুখের ব্যবহার করা যাবে না
|
মুখের লাগামহীন ব্যবহার নিষিদ্ধ
|
বর্তমানে কাশির শিষ্টাচার বলে একটা কথা প্রচলিত হয়েছে
|
ইউরোপ ও আধুনিক শিক্ষিত লোকেরা হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার বলতে ' স্যরি, এক্সকিউজ মি' ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত ছিল
|
কিন্তু মুখে হাত দেয়ার বিষয়ে পনেরো'শ বছর আগে মহানবী (সা.) শিখিয়েছেন
|
তিনি বলেছেন, হাই-হাঁচি দিলে মুখে হাত দেবে
|
পানি খাওয়ার সময় মুখ পানি থেকে দূরে সরিয়ে শ্বাস নেবে
|
করোনাভাইরাস মুসলমানদের মধ্যে নতুনভাবে এই চিন্তার উদ্রেক করে যে অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থ্যতার সময়কে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি
|
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,'এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে নিয়ামতের বিষয়ে মানুষ ধোঁকার মধ্যে থাকে
|
তা হচ্ছে, সুস্থ্যতা আর অবসর
|
' (বুখারি, হাদিস নং : ৬৪১২)
|
করোনাভাইরাস সহ প্রতিবছর যেসব বিপদ ও বিপর্যয় নেমে আসে, তা মুসলমানদের তাওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে, নিজেকে শুধরে নিতে ও সতর্ক হতে নির্দেশ দেয়
|
ইরশাদ হয়েছে,
|
' তারা কি দেখে না যে তাদের প্রতিবছর একবার বা দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয় ? এরপরও তারা তাওবা করে না, উপদেশ গ্রহণ করে না! (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৬)
|
কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন---
|
"তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো
|
'এই আকাশ আমার'
|
কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা
|
সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,
|
'ফুল তুই আমার'
|
তবু ফুল থাকবে নীরব নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে
|
জ্যোৎস্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,
|
তোমার বলার অধিকার আছে, 'এ জ্যোৎস্না আমার'
|
কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর
|
সচেতন হোন, নিজে সাবধান থাকুন, অন্যকে সাবধান থাকতে বলুন
|
কাজে চিন্তায় আচরণে মানবিক হোন
|
মনে রাখবেন মানবিকতাই আপনার মনে শান্তির বারি বর্ষণ করতে পারে
|
অর্থ নয়, বিত্ত নয়, ক্ষমতা নয়
|
করোনা দিনে প্রার্থনা করি আর যেন কেউ নতুন করে আক্রান্ত না হন, প্রার্থনা করি রোগমুক্ত নতুন দিনের
|
70@.
|
ইসলাম টপ নিউজ
|
Subsets and Splits
No community queries yet
The top public SQL queries from the community will appear here once available.