content
stringlengths
0
129k
পরদিন সকালে নাস্তার পর আবার কাজে লাগল ওরা
দেয়াল ঘেঁষে রাখা মঞ্চটাতে ওঠা দরকার
ছাতের ঠিক নিচে দেয়ালে দশ বর্গফুটমত জায়গার রঙ ঘষতে হবে
কিন্তু সবাই একসঙ্গে উঠতে পারবে না ওটাতে
মাত্র দুজনের জায়গা হয়
মুসা বলল, আমি আর রবিন উঠে ঘষতে থাকি
আমাদের হাত ধরে গেলে তোমরা দুজন উঠো
খালি খালি বসে থাকব? কিশোর বলল
মঞ্চের পাশে একটা মই ঠেস দিয়ে তাতে উঠে কাজ করা যায়
কোরি গেছে তার আন্টিকে ফোন করতে
একটা ইলেকট্রিক স্যান্ডার দিয়েছে আজ উলফ
হাতে ঘষার চেয়ে এটা দিয়ে ঘষা অনেক সহজ
অনেক দ্রুত অনেক বেশি জায়গা ঘষা যায় যন্ত্রটা দিয়ে
যথেষ্ট ভারী
অন্য তিনজনের চেয়ে সহজে তুলে ধরে রাখতে পারবে মুসা, কারণ তার গায়ে শক্তি বেশি
সুতরাং ওটা নিয়ে মঞ্চে উঠে পড়ল সে
রবিন উঠল তার পাশে
মঞ্চটার অবস্থা বিশেষ সুবিধের লাগছে না আমার
নড়ছে, দেখছ? দুলছে
ভেঙে পড়বে না তো?
রবিনের সন্দেহটাকে গুরুত্ব দিল না মুসা
স্যান্ডার ঠেসে ধরতে গেল দেয়ালে
এই সময় ফিরে এল কোরি
মুখ থমথমে
পেয়েছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর
রিং হচ্ছিল ঠিকই
কেউ ধরল না
ভায়োলা আন্টি নাহয় হাসপাতালে গেছে
কিন্তু আন্ট জোয়ালিন?
রোজার মেলবয়েস কি বললেন? শোরটাউনে যাবেন?
ঠোঁট ওল্টাল কোরি, জানি না
ফোন রেখে তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম
কোথাও খুঁজে পেলাম না
স্যান্ডারটা দেয়ালে ঠেসে ধরল মুসা
বিকট শব্দ করে রঙ তুলতে লাগল যন্ত্রটা
পাশে দাঁড়িয়ে টেনে টেনে দেয়ালের কাগজ ছিঁড়তে শুরু করল মুসা
যন্ত্র দিয়ে কাজ করার ফলে বাতাসে রঙের কণা এত বেশি উড়ছে, শাস নিতে কষ্ট হতে লাগল দুজনের
ব্যাপারটা লক্ষ করে একটা আলমারি থেকে গিয়ে দুটো মাস্ক বের করে আনল কিশোর
হাত লম্বা করে বাড়িয়ে দিল রবিনের হাতে
একটা নিজে রেখে আরেকটা মুসাকে দিল রবিন
কাজ করতে করতে পাশে সরে গেল মুসা
দুলে উঠল মঞ্চ
কাত হয়ে যাচ্ছে একপাশে
চিৎকার করে উঠল রবিন, আরি, পড়ে যাচ্ছে তো!
ঠেকানো গেল না কোনমতে
মড়মড় করে ভেঙে পড়ল মঞ্চ
মুসার হাত থেকে স্যান্ডারটা উড়ে গিয়ে পড়ল কিশোরের পায়ের কাছে
আরেকটু হলে তার পা-টা হেঁচত
মেঝেতে পড়ে গেল মুসা আর রবিন
দৌড়ে এল কোরি আর কিশোর
কোনমতে উঠে বসল রবিন
হাতে মুঠো করে ধরা রয়েছে এখনও একটুকরো কাগজ
দেয়ালের দিকে চোখ পড়তে চিৎকার করে উঠল, আরে দেখো দেখো! একটা দরজা!
চোখ তুলে তাকাল বাকি তিনজন
দেয়ালের গায়ে যেখান থেকে কাগজ ছিঁড়েছে রবিন, সেখানে একটা দরজার খানিকটা দেখা যাচ্ছে
এগিয়ে গেল কিশোর
টান দিয়ে নিচের দিকের বাকি কাগজটুকু ছিঁড়ে ফেলল
বেরিয়ে পড়ল পুরো দরজাটা
বিড়বিড় করে বলল, দরজা ঢেকে দিয়েছিল কেন? আশ্চর্য!
সরো! সরো ওটার কাছ থেকে! চিৎকার করে উঠল কোরি
আমি পড়েছি, ভূতের উপদ্রব ঠেকানোর জন্যে ভূতুড়ে ঘর কিংবা সুড়ঙ্গের দরজা এ ভাবে ফুলআকা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়
তাহলে নাকি ওসব দরজা দিয়ে
আর বেরোতে পারে না ভূত
রসুনের মালা ড্রাকুলার মত ভূতকে ঠেকায় শুনেছি, কিন্তু ফুলআঁকা কাগজ দরজাটার দিকে এগিয়ে গেল কিশোর
দেখো, আমি তোমাকে মানা করছি! সাবধান করল কোরি
যেয়ো না! বের করে এনো না ভূতটাকে...
চকচকে মসৃণ কাঠের দরজাটার একপাশে ফ্রেমে বাঁধাই একটা ছোট ছবি ঝোলানো
মঞ্চের আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিল
সেটাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেই কোণা ধরে সামান্য সরাতে বেরিয়ে পড়ল দরজার নব
হাসি ফুটল কিশোরের মুখে
নব ধরে মোচড় দিতে খুলে গেল দরজার পাল্লা
কোরির দিকে ফিরে তাকাল সে
হাসি ছড়িয়ে পড়েছে মুখে
ঢুকো না! কোরির দুচোখে ভয়
আমি এখনও বলছি, ভাল চাইলে বন্ধ করে দাও ওই দরজা!
মুসার দিকে তাকাল কিশোর
হ্যাঁ-না কিছু বলল না মুসা
কোরির ভয়টা তার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে
ঢোকা উচিত কিনা বুঝতে পারছে না
রবিন বলল, খুলেই যখন গেছে, চলো দেখি কি আছে?
ওর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার দিয়ে ফড়ফড় করে বেরিয়ে এল কি যেন
লাফ দিয়ে সরে গেল কোরি
মুসা হতভম্ব
জানালার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল রবিন, বাদুড়
ওই জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল
হাসতে হাসতেই বলল, কোরি, ভ্যাম্পায়ার নয়, শিওর থাকতে পারো
দিনে বেরোয় না ভ্যাম্পায়ারেরা
সূর্য ডোবার আগে বেরোতে পারে না
ইয়ার্কি মেরো না! ঝাঁঝিয়ে উঠল কোরি
যখন পড়বে ভূতের খপ্পরে তখন বুঝবে মজা!
যত ভয়ই পাক, কিশোর, রবিন আর মুসাও যখন ঢুকে গেল ভেতরে, আগ্রহ এবং কৌতূহল কোনটাই ঠেকাতে না পেরে কোরিও ঢুকে পড়ল ওদের পেছনে
অন্ধকারে আবার কিচকিচ করে উঠল কয়েকটা জীব
ফড়ফড় করতে লাগল মাথার ওপর
চামচিকে আর ছোট জাতের বাদুড়ে বোঝাই হয়ে
আছে জায়গাটা
বাদুড় আমার সাংঘাতিক ভয় লাগে, অন্ধকারে ফিসফিস করে বলল কোরি
মাকড়সা আর তেলাপোকাকেও
শুয়াপোকাকে ভয় লাগে না? হেসে জিজ্ঞেস করল রবিন
বড় কালো কালো শুয়াপোকা? লম্বা লম্বা কাটার মত লোম, কিলবিল করে
মাগো! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল কোরি