content
stringlengths
0
129k
রেগে রেগে কথা বলছেন কারও সঙ্গে
তর্ক করছেন
কিশোর অনুমান করল, এটা ব্যারনের ঘর
করিডরের শুরুতে প্রথম ঘর
পাশে চওড়া সিঁড়ি নেমে গেছে
মেইন লবি আর হোটেলের অফিসে যাওয়া যায় ওটা দিয়ে
শোনো! যা বলি শোনো! চিৎকার করে উঠলেন ব্যারন
না, আমি শুনব না! সমান তেজে জবাব দিল আরেকটা কণ্ঠ
মহিলা কণ্ঠ
বিস্ময়ে নিচের চোয়াল ঝুলে পড়তে লাগল কিশোরের
প্লীজ, আমার একটা কথা রাখো! কাঁদতে শুরু করল মহিলা, তোমার পায়ে ধরি, পার্টি দিয়ো না! প্লীজ, দিয়ো না!
দরজার বাইরে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিশোর
কিন্তু আর কিছু শোনা গেল না
কি নিয়ে তর্ক করছে ওরা? কিসের পার্টি? মহিলাটি কে?
ঘরের মধ্যে পায়ের শব্দ শোনা গেল
দরজার দিকে এগিয়ে আসছে
চট করে ওখান থেকে সরে এসে হলওয়ে ধরে দৌড় দিল কিশোর
যে-ই বেরোক, তার চোখে পড়তে চায় না
সুন্দর, ঠাণ্ডা একটা সকাল
ডাইনিং রূমের বিশাল জানালা দিয়ে সোনালি রোদ এসে ছড়িয়ে পড়েছে ঘরের ভেতর
আকাশের রঙ ঘন নীল
নাস্তা খেতে খেতে গতরাতের কথা সঙ্গীদের জানাল কিশোর
হু, মাথা দুলিয়ে বলল কোরি, আমার কথা তাহলে বিশ্বাস হচ্ছে এতক্ষণে
বিশ্বাস কাল রাতেই করেছি, কিশোর বলল
কিন্তু যাকে দেখেছ সে ভূত নয়, রক্তমাংসের জলজ্যান্ত একজন মানুষ, যে কথা বলে, তর্ক করতে পারে
মহিলাটি কে সেটাই ভাবছি এখন
ব্যারনের রাধুনী হতে পারে, রবিন বলল, মনিকা
না, মনিকা নয়
ব্যারন বলেছেন শুক্রবারের আগে আসবে না সে
ওটা ভূত ছাড়া আর কেউ নয়, জোর দিয়ে বলল কোরি
হতে পারে বহুকাল আগে মেলবয়েসদের কারও স্ত্রী ছিল ওই মহিলা
অপঘাতে মরে ভূত হয়েছেরাত দুপুরে এসে ব্যারনের সঙ্গে তর্ক জুড়েছে
উলফ এসে ঢুকল ডাইনিং রূমে
মুখ সেই একই রকম গোমড়া
হাতে একটা লাল রঙের টুলবক্স
ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করল
কাজ শুরু করতে চাও?
কোরি জিজ্ঞেস করল, উলফ, হোটেলে কোন মহিলা আছে?
প্রশ্নটা অবাক করল উলফকে
মুখটাকে এমন করে ফেলল যেন বোলতায় কামড়ে দিয়েছে
দ্রুত সামলে নিয়ে বলল, না, নেই
ব্যারনের সঙ্গে কোন মহিলা দেখা করতে এসেছে?
চোখ দেখেই বোঝা গেল এসব প্রশ্নে খুব বিরক্ত হচ্ছে উলফ
না, কেউ দেখা করতে আসেনি
রলিন মারা যাওয়ার পর আর কোন মহিলা ঢোকেনি
ব্যারনের ঘরে
রলিন ছিল তার স্ত্রী
টুলবক্সটা নিয়ে ঘরের পেছনের অংশে চলে গেল উলফ
কিশোরের দিকে তাকাল কোরি
চোখে বিস্ময়
কিন্তু প্রসঙ্গটা নিয়ে আলোচনা করা গেল না
এখন কাজের সময়
এখান থেকে কাজ শুরু করবে তোমরা, দেয়াল জুড়ে থাকা লাইটহাউজের বিশাল একটা পেইন্টিং সরাল উলফ
ওয়ালপেপার সরাবে
সিরিশ দিয়ে ঘষে মসৃণ করবে
সারাটা সকাল কাজ করল ওরা
পুরানো বাদামী রঙ ঘষে ঘষে তুলল
গরম হয়ে উঠেছে ঘরটা
মেঝেতে ছড়িয়ে আছে বাদামী রঙের শুকনো কণা
বাতাসেও উড়ছে
ঘামে আঠা হয়ে গেছে শরীর
উলফ ঠিকই বলেছে-পরিশ্রমের কাজ
সাগরের নোনা হাওয়া কাঠের অনেক গভীরে ঢুকিয়ে দিয়েছে রঙ, তোলা খুব মুশকিল
সাড়ে এগারোটা নাগাদ কোরি বলল, একটা কোক খাওয়া দরকার
আন্টিকেও ফোন করতে হবে
ও মই থেকে লাফ দিয়ে নেমে এল মুসা
কোরির সঙ্গে সঙ্গে এগোল
ওদের পেছনে গেল রবিন
কিশোর বলল, তোমরা যাও
আমি এটুকু শেষ করে আসি
কথা বলতে বলতে যাচ্ছে তিনজনে
রান্নাঘরে ঢুকে যেতে আর শোনা গেল না
মইয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কাজে মন দিল কিশোর
সিরিশ দিয়ে ঘষতে ঘষতে হাতের পেশী ব্যথা হয়ে গেছে
কিন্তু থামল না
দশ কি পনেরো মিনিট পর কানে এল পদশব্দ
মুসারা নিশ্চয় ফিরে এসেছে
ফিরে তাকিয়েই স্থির হয়ে গেল কিশোরের হাত
মুসারা নয়
অবিকল ব্যারনের মত দেখতে একজন অপরিচিত লোক এসে দাঁড়িয়েছেন
সাদা চুল, সাদা গোঁফ
কিন্তু ব্যারনের মত হাসিখুশি নন, বরং উল্টো
পোশাকও পরিচ্ছন্ন নয়
কানা জলদস্যুদের মত এক চোখ কালো কাপড়ে ঢাকা
পরনে ঢোলা জিনস
প্যান্টের হাটুতে দাগ
সাফারি জ্যাকেট
অসংখ্য পকেট তার
কাগজ, কলম, রুমাল আর নানা
রকম জিনিসে উঁচু হয়ে আছে সেগুলো
ডান হাতে একটা হান্টিং রাইফেল
নল ধরে বাটটা ঠেকিয়ে রেখেছেন মেঝেতে
ভয়ানক বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে রাইফেলটাকে লাঠির মত ব্যবহার করে কাঠের মেঝেতে ঠুকঠুক শব্দ তুলে এগিয়ে এলেন কিশোরের দিকে
হাই, হাসিমুখে বলল কিশোর
জবাবে ঘোৎ করে উঠলেন তিনি
কালো একটা চোখ মেলে তাকিয়ে
রইলেন কিশোরের দিকে
আমি কিশোর পাশা
আশা করল নিজের পরিচয় দেবেন ভদ্রলোক
দিলেন না দেখে জিজ্ঞেস করল, আপনি নিশ্চয় মিলার মেলবয়েস?