content
stringlengths
0
129k
ব্যারন মিলার ডি মেলবয়েস, রাইফেলে ভর দিয়ে কিছুটা সামনে ঝুঁকে কুঁজো হয়ে দাঁড়ালেন তিনি
গলাটা তার ভাই রোজারের মত গমগমে হলেও অতটা মসৃণ নয়
আচরণ ভদ্র তো নয়ই, বুনো
চেহারা এক, অথচ দুই ভাইয়ের মধ্যে অত অমিল হয় কি করে?-ভাবল কিশোর
বলল, আমরা বেড়াতে এসেছি এখানে
আমি আর আমার তিন বন্ধু
থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করে দিচ্ছি
মিলারের দৃষ্টির সামনে অস্বস্তি বোধ করছে সে
শুনেছি, কিছুতেই সহজ হচ্ছেন না ভদ্রলোক
রাইফেলটাকে লাঠির মত ব্যবহার করে হেঁটে গেলেন জানালার কাছে
বাইরে তাকিয়ে রইলেন
উজ্জ্বল, রোদে আরও স্পষ্ট দেখা গেল তার পোশাকগুলো
অতিরিক্ত কুঁচকানো আর ময়লা
রোজার বলেছেন, তাঁর ভাই বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন
কেন এই বিষণ্ণতা? আলাপ জমানোর জন্যে বলল কিশোর, দিনটা খুব সুন্দর, তাই না? জায়গাটাও দারুণ আপনাদের
মই থেকে নামবে কি নামবে না সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে
কোথায় সুন্দর? বিরক্তকণ্ঠে প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন মিলার
প্রচণ্ড গরম! সাগরের দিকে তাকিয়ে থেকে নল ধরে ধীরে ধীরে ঘোরাচ্ছেন রাইফেলটা
ঘরের মধ্যে গরম
জবাব দিলেন না মিলার
অস্বস্তি আরও বাড়ল কিশোরের
ইচ্ছে করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন তিনি যাতে সহজ হতে না পারে সে? মুসারা এত দেরি করছে কেন?
তোমার বন্ধুরা কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন মিলার
কাজ করতে করতে ঘেমে গেছিল, পানি খেতে গেছে
আমি এই কোণাটা শেষ করে যাব, হাত তুলে দেখাল কিশোর
দেখার জন্যে ঘুরলেন না মিলার
বিষণ্ণকণ্ঠে বললেন, জায়গাটা অতিরিক্ত চুপচাপ
এতবড় জায়গা
মাত্র পাঁচ-সাতজন লোক
তার কথাটা মনে হয় পছন্দ হলো না মিলারের
মুখটাকে বিকৃত করে ঘনঘন রাইফেল ঠুকতে লাগলেন মেঝেতে
এগিয়ে আসতে শুরু করলেন
মইয়ের কাছে
ভয় পেয়ে গেল কিশোর
মই থেকে টান মেরে ফেলে দেবেন না তো?
কিন্তু মইয়ের ফুটখানেক দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি
এক পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে সশব্দে নাক ঝাড়লেন, গোফ মুছলেন, রুমালটাকে দলা পাকিয়ে ভরে রাখলেন আরেক পকেটে
কিশোরের দিকে চোখ তুলে বললেন, মন দিয়ে কাজ করো
হ্যা করছি... ভয়ে ভয়ে বলল কিশোর
কি বললে আবার খেপে যান
আমার ভাইকে দেখেছ?
সকালে নাস্তা খেতেও আসেননি
হু! ওর সঙ্গে কথা ছিল
ঠিক আছে, আমার সঙ্গে দেখা হলে তাকে বলব আপনি খুঁজছিলেন
মন দিয়ে কাজ করো! হ্যাঁ, ভাল কথা, তোমরা কি পার্টিতে যোগ দিতে এসেছ নাকি?
পার্টি! চমকে গেল কিশোর
মোচড় দিয়ে উঠল পেটের মধ্যে
গতরাতের মহিলার কথা মনে পড়ল-প্লীজ, তোমার পায়ে ধরি, পাটি দিয়ো না! কেন মানা করছিল মহিলা? পার্টিকে এত ভয় কেন তার?
কিসের পার্টি? জানতে চাইল কিশোর
কর্কশ কণ্ঠে মিলার বললেন, থেকে যাও
পার্টিতে যোগ দিতে হবে তোমাদের
পালানোর চেষ্টা কোরো না
সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ল ওরা রবিনের মাথা ধরেছে
কোরির গা ম্যাজম্যাজ করছে কথাই বলতে পারল না কোনমতে খাওয়া শেষ করে ঘরে চলে গেল দুজনে
এত তাড়াতাড়ি শুতে যেতে ইচ্ছে করছে না কিশোরের
মুসারও না
ডাইনিং রূমে বসে রইল ওরা
মিলারকে কি সত্যি পাগল মনে হয়েছে তোমার, কিশোর? জিজ্ঞেস করল মুসা
পাগল কিনা জানি না, তবে আচরণ কেমন অদ্ভুত
সেজন্যেই কোরি ভাবছে, ও ভূত
যা খুশি ভাবুকগে
কারও আচরণ অদ্ভুত হলেই সে ভূত হয়ে যায় না
ভুলে যাচ্ছ কেন, মিলার বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন
আন্ট জোয়ালিনের ব্যাপারটা কি বলো তো? কোরি নাকি একবারও যোগাযোগ করতে পারেনি তাঁর সঙ্গে?
এটাও আমার কাছে রহস্যময় লাগছে
একটা মুহূর্ত চুপ করে রইল কিশোর
চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল, বাইরে একটু ঘুরে আসিগে
রঙের মধ্যে শ্বাস নিতে নিতে মাথাটা গরম হয়ে গেছে
মুসাও বেরোল ওর সঙ্গে
হাঁটতে হাঁটতে চলে এল চন্দ্রালোকিত সৈকতে
অপূর্ব দৃশ্য
হলদে আলোয় ঝলমল করছে বালি
তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ভাঁজগুলোকে কালচে দেখাচ্ছে
কি পরিষ্কার আলো দেখো, মুগ্ধকণ্ঠে বলল কিশোর
সব স্পষ্ট
স্যান্ডেল খুলে বালিতে পা রেখে দেখো
খুব আরাম লাগে
পানির কিনারে এসে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর
ফিরে তাকাল হোটেলের দিকে
বালির ঢালের লম্বা ঘাসগুলোতে ঢেউ তুলছে বাতাস
মনে হচ্ছে ওগুলোও তরল পদার্থ
চাঁদের আলো সবকিছুকেই কেমন অন্য রকম করে তুলেছে
ডকের দিকে একটা খসখস শব্দ হলো
পই করে ঘুরে তাকাল সে
ডকের ওপরে ছোট্ট পাথরের টিলার কাছে হয়েছে শব্দটা
কিসের শব্দ? মুসাও শুনতে পেয়েছে
কেউ নজর রাখছে নাকি? চলো তো দেখি
আমার ভয় করছে
ভূতের ভয়?
সবদিকে নজর থাকে ওদের
নিজে অদৃশ্য থেকে সবখানে হাজির হতে পারে একমাত্র ওরাই..
চলো তো দেখি
বালির ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল কিশোর
নিচে কেউ থাকলে এখান থেকে দেখা যাবে
কিন্তু অনেকখানি উঠেও কাউকে দেখতে পেল না
কোন শব্দও নেই
কেবল তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ছলাৎছল আর ঢেউয়ের মধ্যে বয়ে যাওয়া বাতাসের কানাকানি
ক্লান্ত লাগছে
হাঁটতে আর ভাল লাগছে না
হোটেলে ফিরে চলল